নায়কের পূর্বরাগ
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
তড়িত বরণী, হরিণ নয়নী,
দেখিনু আঙ্গিরা মাঝে।
কিবা বা দিঞা, অমিয়া ছানিয়া,
গড়িল কোন বা রাজে।।
সই! কিবা সে সুন্দর রূপ।
চাহিতে চাহিতে, পশি গেল চিতে,
বড়ই রসের কূপ।।
সোণার কটোরি, কুচযুগ গিরি,
কনক মন্দির লাগে।
তাহার উপরেম চুড়াটি বনালে,
সে আর অধিক ভাগে।।
কে এমন কারিগর, বানাইল ঘর,
দেখিতে নারিনু তারে।
দেখিতে পাইতুঁ, শিরোপা করিতুঁ,
এমতি মন যে করে।।
হৃদয়ে আছিল, বেকত হইল,
দেখিতে পাইনু সে।
ঐছন মন্দিরে, শয়ন করে যে,
সে মেনে নাগর কে।।
হিয়ার মালা, যৌবনের ডালা,
পসারী পসারল যেন।
চাকুতে কাটিয়াম চাক যে করিয়া,
তাহাতে বসাইল হেন।।
অধর সুধা, পড়িতে জুদা,
দশন মুকুতা শশী।
চণ্ডীদাসে কয়, ও কথা কি হয়,
মরম কহিলে বটে।
আর কার কাছে, কহ যদি পাছে,
তবে যে কুৎসা রটে।।
——————-
“হরিণ নয়নী, দেখিনু আঙ্গিরা মাঝে”—“তরুণী হরিণী, রাই দেখিনু আঙ্গিনা মাঝে” পাঠও আছে।
দিঞা – দিয়া। চুড়া – চুচুক। পাইতুঁ – পাইতাম। করিতুঁ – করিতাম। বেকত – ব্যক্ত। পসারল – বিস্তার করিল। জুদা – পৃথক; আলাহিদা।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
নবীন কিশোরী, মেঘের বিজুরি,
চমকি চলিয়া গেল।
সঙ্গের সঙ্গিনী, সকল কামিনী,
ততহি উদয় ভেল।।
সই! জনমিয়া দেখি নাই হেন নারী।
ভঙ্গিম রঙ্গিম, ঘন সে চাহনি,
গলে যে মোতিম হারি।।
অঙ্গের সৌরভে, ভ্রমরা ধাওয়ে,
ঝঙ্কার করয়ে যাই।
অঙ্গের বসন, ঘুচায় কখন,
কখন ঝাঁপয়ে তাও।।
মনের সহিতে, মরম কৌতুকে,
সখীর কান্দেতে বাহু।
হাসির চাহনি, দেখাল কামিনী,
পরান হারানু তহু।।
হাসির চাহনি, দেখাল কামিনী,
পরান হারানু তহু।।
চলন ভঙ্গী, অতি সুরঙ্গী,
চাপটিলে জীবন মোর।
অঙ্গুলির আগে, চাঁদ যে ঝলকে,
পড়িছে উছলি জোর।।
চাহে যাহা পানে, বধয়ে পরাণে,
দারুন চাহনি তার।
হিয়ার ভিতরে, পাঁজর কাটিয়ে,
বিঁধিল বাণ যে মার।।
জর জর হিয়া, রহিল পড়িয়া,
চেতন নহিল মোর।
চণ্ডীদাসে কয়, ব্যাধি সমাধি নয়,
দেখিয়া হইনু ভোর।।
——————-
বিজুরি – বিজলী। ভেল – হইল। হারি – মুক্তাহার। ঝাঁপয়ে – আবৃত করে। তহু – তাহাতে। সমাধি – শেষ।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। শ্রীগান্ধার ।।
বদন সুন্দর, যেন শশধর
উদিত গগনে হয়।
ছটার ঝলকে, পরাণ চমকে,
তিমিরে লাগয়ে ভয়।।
নয়ান চাহনি, বিভঙ্গী সে যনি,
তিখিণী তিখিণী শর।
দেখিয়া অন্তর, উপজিল ডর,
মদন পাইল ডর।।
সই! কে বলে কুচযুগ বেল।
সোণার গুলি, শোভয়ে ভালি,
যুবক বধিতে শেল।।
আজানু লম্বিত, করিবর শুণ্ডিত,
কনক ভুজ যে সাজে।
হেরিয়া মদন, গেল সে সদন,
মুখ না তুলিল লাহে।।
মাঝা ডিম্বুর, সিংহিনী আকার,
নিতম্ব বিমান চাক।
চরণ কমলয়ে, ভ্রমরা বুলয়ে,
চৌদিকে বেড়িয়া ঝাঁক।।
অঙ্গুলির মাঝে, যাবক সাজে,
মিহির শোভিত জনু।
চণ্ডীদাসে কয়, কি জানি কি হয়,
লখিতে নারিনু তনু।।
——————-
যনি – যেন। তিখিণী – তীক্ষ্ণ। ভালি – ভাল। সদন – গৃহ, যাবক – আলতা। মিহির – সূর্য্য।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। শ্রীগান্ধার ।।
একে যে সুন্দরী কনক পুতলী,
খঞ্জন লোচন তার।
বদন কমলে, ভ্রমরা বুলয়ে,
তিমিত কেশের ধার।।
সই! নবীন বালিকা সেহ!
দেব উপজিল, দেখিতে না পাইল,
সুমতি না দিল সেহ।।
নজরে নজরে, পরাণে পরাণে,
ধৈরজ উঠাইল যে।
সঙ্গে কেহ নাই, শুনহ ভাই,
কাহারে সুধাবে কে।।
দন্তটি যে, দাড়িম্ব বীজে,
ওষ্ঠ বিম্বক শোভা।
দেখিয়া জুলুফে, মদন কুলুফে,
মন যে হইল লোভা।।
গলায় মাল, শোভিছে ভাল,
তাম্বুল বদনে তার।
চর্ব্বিত চর্ব্বণে, পড়িছে বদনে,
শোভিত পিন্ধন ধার।।
চণ্ডীদাস বলে, গিয়াছিল জলে,
আইল পরাণ ঘরে।
রাজার ঝিয়ারি, সুন্দরী নারী,
তুমি কি করিবে তারে।।
——————-
সেহ – সে। চর্ব্বিত – পানের পিক।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
পথে জড়াজড়ি, দেখিনু নাগরী,
সখীর সহিত যার।
সকল অঙ্গ, মদন তরঙ্গ,
হসিত বদনে চায়।।
সই! কেমন মোহিনী সেহ।
যদি সহায় পাই, এমনি হয়,
তা সহ করি যে লেহ।।
ললিত আকার, মুকুতা হার,
শোভিত দেখিনু ভাল।
যেন তারাগণ, উদিত গগন,
চাঁদেরে বেড়িয়া জাল।।
কুচ যে মণ্ডলি, কনক কটোরি,
বনালে কেমন ধাতা।
হাসির রাশি, মনে খুসি,
দান করে যদি দাতা।।
চণ্ডীদাস কহে, যদি দান নহে,
কি জানি মাগিবা তায়।
যে ধন মাগয়ে, তাহা না পাইয়ে,
অপযশঃ রহি যায়।।
——————-
লেহ – প্রীতি। “ললিত আকার, মুকুতা হার”—বিভিন্ন পাঠ—“নীল মুকুতা, হার বেকতা।”—পদকল্পতরু।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
বেলি অসকালে, দেখিনু ভালে,
পথেতে যাইতে সে।
জুড়ায় কেবল, নয়ন যুগল,
চিনিতে নারিনু কেন।।
সই! রূপ কে চাহিতে পারে।
অঙ্গের আভা, বসন শোভা,
পাসরিতে নারি তারে।।
বাম অঙ্গুলিতে, মুকুর সহিতে,
কনক কটোরি হাতে।
সীঁতার সিন্দুর, নয়ানে কাজর,
মুকুতা শোভিত নথে।।
নীল সাড়ী, মোহন কারী,
উছলিতে দেখি পাশ।
কি আর পরাণে, সোঁপিনু চরণে,
দাস করি মনে আশ।।
কুচযুগ গিরি, কনক কটোরি,
শোভিত হিয়ার মাঝে।
ধীরে ধীরে যায়, চমকিয়ে চায়,
ঘন না চাহে লোক লাজে।।
কিবা সে ভঙ্গিমা, নাহিক উপমা,
চলন মন্থর গতি।
কোন ভাগ্যবানে, পাঞাছে কি দানে,
ভজিয়া সে উমাপতি।।
চণ্ডীদাসে কয়, মূরতি এ নয়,
বধিতে রসিক জানে।
অমিয়া ছানিয়া, যতন করিয়া,
গড়িল সে অনুমানে।।
——————-
বেলি অসকালে – বেলা অবসানে। বসন – (বিভিন্ন পাঠ—“বরণ”)। মুকুর – দর্পণ। নথে – (বিভিন্ন পাঠ—“মাথে”)। নাহিক – (বিভিন্ন পাঠ—“কি দিব”)।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
চম্পক বরণী, বয়সে তরুণী,
হাসিতে অমিয়া ধারা।
সুচিত্র বেণী, দুলিছে যনি,
কপিলা চামর পারা।
সখি যাইতে দেখিনু ঘাটে।
জগত মোহিনী, হরিণ নয়নী,
ভানুর ঝিয়ারি বটে।। ধ্রু ।।
হিয়া জর জর, খসিল পাঁজর,
এমতি করিল বটে।
চলল কামিনী, বঙ্কিম চাহনি,
বিঁধিল পরাণ তটে।।
না পাই সমাধি, কি হইল বেয়াধি,
মরম কহিব কারে।
চণ্ডীদাসে কয়, ব্যাধি সমাধি হয়,
পাইবে যবে তারে।।
——————-
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। ধানশী ।। (স্নান কালে)
সজনি ও ধনী কে কহ বটে।
গোরোচনা গৌরী, নবীন কিশোরী,
নাহিতে দেখিনু ঘাটে।।
শুনহে পরাণ, সুবল সাঙ্গাতি,
কো ধনী মাজিছে গা।
যমুনার তীরে, বসি তার নীরে,
পায়ের উপরে পা।।
অঙ্গের বসন, কৈরাছে আসন,
আলাঞা দিয়াছে বেণী।
উচ কুচ মূলে, হেম হার দোলে,
সুমেরু শিখর জানি।।
সিনিয়া উঠিতে, নিতম্ব তটীতে,
পড়েছে চিকুর রাশি।
কাঁদিয়ে আঁধার, কলঙ্ক চাঁদার,
শরন লইল আসি।
কিবা সে দুগুলি, শঙ্খঝলমলি,
সরু সরু শশীকলা।
সাঁজেতে উদয়, সুধু সুধাময়,
দেখিয়ে হইনু ভোলা।।
চলে নীল শাড়ী, নিঙ্গাড়ি নিঙ্গাড়ি,
পরাণ সহিত মোর।
সেই হৈতে মোর, হিয়া নহে থির,
মনমথ জ্বরে ভোর।।
কহে চণ্ডীদাসে, বাশুলি আদেশে,
শুনহে নাগর চন্দা।
সে যে বৃষভানু রাজার নন্দিনী,
নাম বিনোদিনী রাধা।।
——————-
গোরোচনা – গোমস্তকলব্ধ পীতদ্রব্য বিশেষ। এখানে পীতবর্ণা গোরী পাঠও আছে। কৈরাছে – করিয়াছে। আলাঞা – এলাইয়া। সিনিয়া – স্নান করিয়া। সাঁজেতে – সন্ধ্যার সময়। ভোলা – (বিভিন্ন পাঠ—“ভোরা”।)
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
থির বিজুরি, বদন গৌরী,
পেখনু ঘাটের কূলে।
কানড়া ছাঁদে, কবরী বান্ধে,
নবমল্লিকার মালে।।
সই মরম কহিনু তোরে।
আড় নয়নে, ঈষৎ হাসিয়া,
আকুল করিল মোরে।।
ফুলের গেড়ুয়া লুফিয়া ধরয়ে,
সঘনে দেখায়ে পাশ।
উচু কুচ যুগ, বসন ঘুচায়ে,
মুচকি মুচকি হাস।।
চরণ কমলে, মল্ল-তাড়ল
সুন্দর যাবক রেখা।
কহে চণ্ডীদাসে, হৃদয় উল্লাসে,
পুন কি হইবে দেখা।।
——————-
থির – স্থির। বদন – (বিভিন্ন পাঠ—“বরণ”)। পেখনু – দেখিনু। কানড়া – কানড় সাপ যে প্রকার কুণ্ডুলী করিয়া থাকে সেই রূপ ভাবে। গেড়ুয়া – (হিন্দি) স্তবক। মল্ল-তাড়ল – মল বিশেষ। পশ্চিম দেশীয় কামিনীগণ চরণে অধুনাতন পরিয়া থাকে। যাবক – আলতা।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। কামোদ ।।
সখীগণ সঙ্গে, যায় কত রঙ্গে
যমুনা সিনান করি।
অঙ্গের সৌরভে, ভ্রমরা ধাবয়ে
ঝঙ্কার করয়ে ফিরি।।
নানা আভরণ, মণির কিরণ,
সহজে মলিন লাগে।
নবীন কিশোরী, বরণ বিজুরী,
সদাই মনেতে জাগে।।
সই সে নব রমণী কে।
চকিতে হেরিয়া, জ্বলত এ হিয়া,
ধরিতে নারি এ দে।।
পুন না হেরিলে, না রহে জীবন,
তোমারে কহিনু দড়।
কহে চণ্ডীদাস, পুরাহ লালস,
নাগর আতুর বড়।।
—————-
দে—দেহ। দড়—দৃঢ়। লালস—অভিলাস। আতুর—কাতর।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
কাঞ্চন বরণী, কে বটে সে ধনী,
ধীরে ধীরে চলি যায়।
হাসির ঠমকে, চপলা চমকে,
নীল শাড়ী শোভে গায়।।
দেখিতে বদন, মোহিত মদন,
নাসাতে দুলিছে দুল।
সুবিশাল আঁখি, মানস ভাবিয়া,
ছুটিছে মরাল কুল।।
আঁখি তারা দুটী, বিরলে বসিয়া,
সৃজন করেছে বিধি।
নীল পদ্ম ভাবি, লুবধ ভ্রমরা,
ছুটিতেছে নিরবধি।।
কিবা দন্ত ভাঁতি, মুকুতার পাঁতি,
জিনিয়া কুন্দক কুঁড়ি।
সীঁথায় সিন্দুর, জিনিয়া অরুণ,
কাণে কর্ণবালা ঢেঁড়ি।।
শ্রীফল যুগল, জিনি কুচযুগ,
পাতলা কাঁচলি তাহে।
তাহার উপর, মনিময় হার,
উপমা কহিব কাহে।।
কেশরী জিনি, কৃশ মাঝা খানি,
মুঠে করি যায় ধরা।
গজ কুম্ভ জিনি, নিতম্ব বলনি,
উরু করি-কর পারা।।
চরণ যুগল, জিনিয়া কমল,
আলতা রঞ্জিত তায়।
মধু মন তাহে, কাহে না ভুলব,
মদন মূরছা পায়।।
কাহার নন্দিনী, কাহার রমণী,
গোকুলে এমন কে।
কোণ পুণ্য ফলে, বল বল সখা,
সে রামা পাইল সে।।
চণ্ডীদাস বলে, ভেব না ভেব না,
ওহে শ্যাম গুণমণি।
তুমি সে তাহার, সরবস ধন,
তোমারি আছে সে ধনী।।
——————-
চপলা – বিদ্যুৎ। মানস – সরোবর। মঝু- আমার। কাহে – কেন।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। আশাবরী ।।
রমণীর মণি, পেখনু আপনি,
ভূষণ সহিত গায়।
দেখিতে দেখিতে, বিজুলি ঝলকে,
ধৈরজে ধৈরজ যায়।।
সই! চাহনি মোহনী থোর।
মরমে বান্ধিনু, হেরিয়া ভুলিনু,
রূপের নাহিক ওর।।
বসন খসয়ে, অঙ্গুলি চাপয়ে,
কর করেছে থুইয়া।
দেখিয়া লোভয়ে, মদন ক্ষোভয়ে,
কেমনে ধরিবে হিয়া।।
বদন ছাঁদ, কামের ফাঁদ,
ঝুরিয়া ঝুরিয়া কান্দে।
কেশের আগ, চুম্বয়ে টাগ,
ফিরিয়া ফিরিয়া বান্ধে।।
জলের কান্ধারে, কেশের আন্ধারে,
সাপিনী লাগয়ে মোয়।
কেমনে কামিনী, আছয়ে আপনি,
এমন সাপিনী থোয়।।
দশন কাঁতি, মুকুতা পাঁতি,
হাস উগারয়ে শশী।
পরাণ পুতলি, হইনু পাগলি,
মরমে রহিল পশি।।
শূন যে হিয়া, রহিয়া পড়িয়া,
বস্তু রহল তায়।
চণ্ডীদাসে কয়, পুন দেখা হয়,
তবে সে পরাণ বয়।।
——————-
বসন খসয়ে, অঙ্গুলি চাপয়ে, কর করেছে থুইয়া – হাতের উপর হাত রাখিয়া। টাগ – জঙ্ঘা। কান্ধারে – তীরে। কাঁতি – কান্তি। উগারয়ে – উদ্গীরণ করে। শুন – শূন্য।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। তুড়ি ।।
কনক বরণ, কিয়ে দরপণ,
নিছনি দিয়ে যে তার।
কপালে ললিত, চাঁদ শোভিত,
সিন্দূর অরুণ আর।।
সই! কিবা সে মধুর হাসি।
হিয়ার ভিতর পাঁজর কাটিয়া,
মরমে রহল পশি।।
গলার উপর, মণিময় হার,
গগন মণ্ডল হেরু।
কুচ যুগ গিরি, কনক গাগরী,
উলটি পড়ল মেরু।।
গুরু সে উরুতে, লম্বিত কেশ,
হেরি যে সুন্দর ভার।
বহিয়া দুকুল বরণের ফুল,
জলদ শোভিত ধার।।
কহে চণ্ডীদাসে, বাশুলী আদেশে,
হেরিয়ে নখের কোণে।
জনম সফলে, যমুনার কূলে,
মিলারল কোন্ জনে।।
——————-
নিছনি – উপমা। মধুর — বিভিন্ন পাঠ—“মুখের”। গলার উপর, মণিময় হার, গগন মণ্ডল হেরু – গলার উপরিস্থিত মণিময়হার বক্ষে পতিত হওয়াতে গগণ মণ্ডলের ন্যায় বোধ হইতেছে। বক্ষ গগণ; মণিশ্রেণী তারকাবলী। হেরু—দেখাইতেছেন। মেরু – সুমেরু পর্ব্বত।
বিভিন্ন পাঠঃ
উরু সে উরুতে, লম্বিত কেশ,
হেরিয়ে সুন্দর ভার।
চরণের ফুল, হেরিয়া দুকুল,
জলদ শোভিত ধার।।
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ ।। সুহই ।।
হেদোলা সুন্দরি, প্রেমের আগরি,
শুনহ নাগর কথা।
নিকুঞ্জে আসিয়া, তোহারি লাগিয়া,
কান্দিয়া আকুল তথা।।
রাই রাই করি, ফুকরি ফুকরি,
পড়ই ভূমিরতলে।
ধরি মোর করে, কহয়ে কাতরে,
কেমন সে ধনী মিলে।।
রাই অতএ আইনু আমি।
কানুর পীরিতি, যতেক আরতি,
যাইলে জানিবা তুমি।।
প্রেম অমিয়া, বাঢ়াও উহারে,
তোমারে কে করে বাধা।
চণ্ডীদাসে বলে, রাখি কুল শীল,
পুরাহ মনের সাধা।।
——————-
অতএ – অতএব। যতেক – যত। আরতি আশক্তি।