০৩. দি এ্যাপোথেসিস অব ওয়াশিংটন

২১ অধ্যায়

দি এ্যাপোথেসিস অব ওয়াশিংটন- একটা ৪,৬৬৪ বর্গফুট এলাকায় বিস্তৃত একটা ফ্রেসকো যা ক্যাপিটল রোটানডার পুরো চাঁদোয়া জুড়ে রয়েছে- ১৮৬৫ সালে কন্সস্ট্যানটিনো ব্রুমিডি কাজটা শেষ করেন।

ক্যাপিটলের মাইকেলেঞ্জেলো নামে পরিচিত ব্রুমিডির সাথে ক্যাপিটল রোটানডার সম্পর্ককে মাইকেলেঞ্জেলোর সিসটিন চ্যাপেলের সাথে তুলনা করা চলে, দুজনেই ঘরের সবচেয়ে বিশাল ক্যানভাসে ফ্রেসকো এঁকেছিলেন- ছাদে। মাইকেলেঞ্জেলোর মতই, ব্রুমিডি ভ্যাটিক্যানের অভ্যন্তরে তার কিছু নিখুঁত কাজ রেখে গেছেন। ব্রুমিডি অবশ্য ১৮৫২ সালে আমেরিকায় অভিবাসন করেন, ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় মন্দির পরিত্যাগ করেন নতুন মন্দিরের জন্য, ইউ.এস ক্যাপিটল, যা আজ তার প্রতিভার ঝলকে উদ্ভাসিত- ব্রুমিডি করিডোরের ট্রোম্পে ইওলি থেকে শুরু করে ভাইস-প্রেসিডেন্টের কামরার ছাদের অলঙ্করণ। এবং এরপরেও ক্যাপিটল রোটানডার উপরে ভেসে থাকা অতিকায় চিত্রকল্পটিকেই অধিকাংশ ঐতিহাসিক ব্রুমিডির শ্রেষ্ঠ কাজ বলে অভিহিত করেন।

রবার্ট ল্যাংডন মাথার উপরে পুরো ছাদ জুড়ে বিস্তৃত অতিকায় ফ্রেসকোটার দিকে তাকায়। এই ফ্রেসকোর অদ্ভুত চিত্রকল্প দেখে বিস্ময়ে তার ছাত্রদের চোয়াল ঝুলে পড়াটা সে উপভোগই করে কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে একটা দুঃস্বপ্নের ভিতরে বন্দি বলে মনে হয় যার মানে সে এখনও বুঝে উঠতে পারেনি।

ডিরেকটর সাটো কোমড়ে হাত দিয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে অনেক উপরের ছাদের দিকে তাকিয়ে কুটি করে রয়েছে। ল্যাংডন বুঝতে পারে তাদের জাতির কেন্দ্রস্থলে এই ছবিটা প্রথমবার দেখে অনেকের যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তারটাও ব্যত্যয় না।

ষোল আনা বিভ্রান্তি।

তুমি একা নও, ল্যাংডন ভাবে। অধিকাংশ মানুষের কাছেই, দি এ্যাপোথেসিস অব জর্জ ওয়াশিংটন, অদ্ভুত থেকে অদ্ভুততর হয়ে উঠে তারা যত বেশি সময় এর দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝের প্যানেলে ওটা জর্জ ওয়াশিংটন, ল্যাংডন, গম্বুজের মাঝে ১৮০ ফিট উপরে দেখিয়ে বলে। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন তার পরণে সাদা আলখাল্লা, চারপাশে তেরজন কুমারী এবং মেঘে করে মরণশীল মানুষের উপরে ভেসে উঠছে। তার রূপান্তরের মাহেন্দ্রক্ষণ…তার দেবত্ব অর্জন।

সাটো আর এনডারসন নির্বাক তাকিয়ে থাকে।

কাছেই, ল্যাংডন বলতে থাকে, আপনি অদ্ভুত, কালের বিচারে বেমানান অবয়বের একটা ধারা দেখতে পাবেন: প্রাচীন দেবতারা আমাদের পিতৃপুরুষকে উচ্চকোটির জ্ঞান উপহার দিচ্ছে। সেখানে চিত্রিত মিনার্ভা প্রযুক্তির প্রণোদনা দিচ্ছে আমাদের জাতির মহান উদ্ভাবন কুশলীদের-বেন ফ্রাঙ্কলিন, রবার্ট ফুলটন, স্যামুয়েল মোর্স। ল্যাংডন একে একে তাদের চিহ্নিত করে দেখায়। আর তাদের মাথার উপরে ভালকান আমাদের বাস্পীয় ইঞ্জিন বানাতে সহায়তা। করছে। তাদের পাশেই নেপচুন ট্রান্সঅতলান্তিক কেবল কিভাবে বিছাতে হবে হাতেকলমে দেখাচ্ছে। তার পাশে সেরেস, অন্নের দেবী আমাদের সিরিয়াল শব্দ তার থেকেই এসেছে; সে চাষী ম্যাক করমিকের সাথে বসে আছে, কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য এই দেশকে শস্য উৎপাদনে দেশকে শীর্ষস্থানে নিয়ে গিয়েছে। চিত্রকর্মটাতে খোলাখুলিভাবেই আমাদের পিতৃপুরুষদের দেবতাদের কাছ থেকে মহান জ্ঞান গ্রহণ করার বিষয়টা দেখান হয়েছে। সে এবার মাথা নীচু করে সাটোর দিকে তাকায়। জ্ঞানই শক্তি, আর সঠিক জ্ঞান মানুষকে অলৌকিক, প্রায় দেবতাদের মত কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে।

সাটো মাথা নামিয়ে ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে ঘাড়ের পেছনটা চুলকায়। ফোনের লাইন বিছান থেকে দেবতায় রূপান্তর অবাস্তর একটা কল্পনা।

আধুনিক মানুষের কাছে সম্ভবত, ল্যাংডন উত্তর দেয়। কিন্তু জর্জ ওয়াশিংটন যদি জানত যে আমরা এমন একটা জাতিতে পরিণত হয়েছি যারা সমুদ্রের অপর পাড়ে কথা বলার ক্ষমতা রাখে, শব্দের গতিতে আঁকাশ দাপিয়ে বেড়ায় এবং চাঁদে গমন করেছে, তিনি ধরেই নিতেন আমরা দেবতায় পরিণত হয়েছি, অলৌকিক কাজ করতে সক্ষম। সে একটু চুপ করে। ভবিষ্যবাদী আর্থার সিক্লার্কের ভাষায়, যথেষ্ঠ মাত্রার উচ্চকোটির প্রযুক্তিকে ইন্দ্রজাল থেকে আলাদা করা অসম্ভব।

সাটো ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে, গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। সে হাতটার দিকে তাকায়, তারপরে প্রসারিত তর্জনীর দিক অনুসরণ করে গম্বুজের ভিতরে তাকায়। প্রফেসর, তোমাকে বলা হয়েছিল, পিটার তোমাকে পথ দেখাবে। সেটা কি সত্যি।

হ্যাঁ, ম্যাম, কিন্তু–

চীফ, ল্যাংডনের দিক থেকে ঘুরতে থাকার ফাঁকে সে বলে, উপরের ছবিটা কি আমরা আরেকটু কাছ থেকে দেখতে পারি?

এনডারসন মাথা নাড়ে। গম্বুজের ভিতরে চারপাশ দিয়ে একটা সংকীর্ণ পথ রয়েছে।

শিল্পকর্মের ঠিক নীচে দৃশ্যমান খুদে রেলিংটা উপরের দিকে তাকিয়ে ল্যাংডন দেখতে পায় এবং অনুভব করে তার শরীরটা শক্ত হয়ে গেছে। ওপরে যাবার কোন দরকার নেই। কদাচিত মানুষের পায়ের ছাপ পরা ঐ ক্যাটওয়াকে

এর আগেও তার একবার হাঁটার অভিজ্ঞতা হয়েছিল এক ইউ.এস সিনেটর আর। তার স্ত্রীর মেহমান হিসাবে এসে আর সেবার সে প্রায় জ্ঞান হারাতে বসেছিল। জায়গাটার উচ্চতা আর বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির কারণে।

কোন দরকার নেই? সাটো প্রতিবাদ করে জানতে চায়। প্রফেসর, আমরা এমন একজন মানুষের পাল্লায় পড়েছি যে বিশ্বাস করে এই ঘরে একটা সিংহদ্বারের অস্তিত্ব রয়েছে যা তাকে দেবত্ব অর্জনে সহায়তা করবে; আমাদের মাথার উপরে একটা ফ্রেসকো আছে যেখানে একজন মরণশীল মানুষের রূপান্তর প্রতিকীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে; আর আমাদের সামনে পড়ে আছে একটা হাত যেটা সোজা উপরের দিকে ঐ চিত্রকর্মের দিকে ইঙ্গিত করছে। মনে হয় সব কিছুই চাইছে আমরা যেন উপরে যাই।

আসলে, এনডারসন উপরের দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদ করে বলে, অনেক মানুষ এটার কথা জানে না কিন্তু গম্বুজটায় একটা ষড়ভূজাকৃতি আড়া বা

পেটিকো রয়েছে যা সিংহদ্বারের মতই অবারিত হয় এবং সেখান থেকে আপনি নীচে উঁকি দিয়ে দেখতে পারেন আর

এক সেকেণ্ড অপেক্ষা কর, ল্যাংডন বলে, তুমি আসল কারণটাই ভুলে যাচ্ছে। আমাদের এই উজবুকটা যা খুঁজছে সেটা অলঙ্কারিক অর্থে না আক্ষরিক অর্থে সিংহদ্বার- একটা প্রবেশ পথ যার কোন অস্তিত্ব নেই। সে যখন বলেছে, পিটার পথ প্রদর্শন করবে, রূপক অর্থে কথাটা সে বলেছে। এই নির্দেশিত হাতের ভঙ্গি-বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনী উপরের দিকে নির্দেশিত- প্রাচীন রহস্যের একটা বহুল আলোচিত প্রতীক, পৃথিবী জুড়ে বিদ্যমান প্রাচীন চিত্রকলায় বহুবার অঙ্কিত হয়েছে। এই একই ভঙ্গি লিওনার্ডো দা ভিঞ্চির সবচেয়ে বিখ্যাত তিনটা সংকেতাবদ্ধ চিত্রকর্মে রয়েছে- দি লাস্ট সাপার, এ্যাডোরেশন অব দি মেজাই, এবং সেন্ট জন দি ব্যাপ্টিস্ট। ঈশ্বরের সাথে মানুষের মরমী সংশ্লিষ্টতার প্রতীক। এটা। যতটা উপরে ততটাই নীচে। উন্মাদটার বিচিত্র শব্দ চয়ন এখন অনেকটাই প্রাসঙ্গিক মনে হয়।

আমি এটা কখনও দেখিনি, সাটো বলে।

তাহলে ইএসপিএন দেখো, ল্যাংডন ভাবে, পেশাদার খেলোয়াড়দের প্রতিবার টাচডাউন বা হোমরান করার পরে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আঁকাশের দিকে নির্দেশ করা দেখে সে সবসময়েই আমোদিত হয়। সে চিন্তা করে তাদের ভিতরে কতজন লোক জানে তারা খ্রিস্ট-পূর্ব জামানার একটা মরমী প্রথা বজায় রেখে চলেছে উপরের মরমী শক্তিকে স্বীকৃতি জানাবার মাধ্যমে, যা মুহূর্তের জন্য তাদের ঈশ্বরের অলৌকিক কর্ম সাধনের প্রতিভূতে রূপান্তরিত করে।

যদি কোন কাজে আসে, ল্যাংডন বলে, তো বলি, পিটারের হাতটাই রোটানডায় এমন ভঙ্গি করা প্রথম হাত না।

সাটো এমন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় যেন কোন পাগলকে দেখছে। আমাকে মাফ করবেন?

ল্যাংডন তার ব্ল্যাকবেরীটা দেখায়। গুগল জর্জ ওয়াশিংটন জিউস।

অনিশ্চিত ভঙ্গিতে সাটো টাইপ শুরু করে। এনডারসন তার দিকে সামান্য এগিয়ে যায়, কৌতূহলী চোখে তার কাঁধের উপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।

ল্যাংডন বলতে থাকে, এই রোটানডায় এক সময়ে জর্জ ওয়াশিংটনের বুক খোলা একটা বিশাল ভাস্কর্য ছিল…তাকে দেবতা হিসাবে উপস্থাপন করে। সর্বদেবতার মন্দিরে জিউস যেমন ভঙ্গিতে বসে ছিল ঠিক সেই একই ভঙ্গিতে, খোলা বুক বের হয়ে আছে, বাম হাতে আঁকড়ে আছে একটা তরবারি আর ডান হাত তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রসারিত করে বাড়িয়ে রাখা।

সাটো অনলাইনে আপাতভাবে মনে হয় একটা ছবি খুঁজে পেয়েছে, কারণ এনডারসন বিহ্বল ভঙ্গিতে তার ব্ল্যাকবেরীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দাঁড়াও, ওটাই জর্জ ওয়াশিংটন?

হ্যাঁ, ল্যাংডন বলে, জিউসের ভঙ্গিতে উপবিষ্ট।

তার হাতের দিকে তাকাও,সাটোর কাঁধের উপর দিয়ে তাকিয়ে থেকে এনডারসন বলে। ঠিক মিসলোমনের হাতের মত করেই তার ডান হাত রয়েছে।

আমি আগেই বলেছি, ল্যাংডন ভাবে, পিটারের হাতই প্রথম এমন অঙ্গভঙ্গি করে এই ঘরে আবির্ভূত হয়নি। রোটানডায় হোরাশিও গ্রীনোঘের তৈরী জর্জ ওয়াশিংটনের নগ্ন ভাস্কর্য প্রথম উন্মোচিত হয়, তখন অনেকেই টিপ্পনী কেটে বলেছিল জর্জ আঁকাশের দিকে থাবা বাড়িয়ে বেপরোয়া ভাবে তার হারিয়ে যাওয়া কাপড় খুঁজছে। আমেরিকানদের ধর্মীয় আদর্শ বদলে গেলে, অবশ্য ঠাট্টাই বিতর্কে রূপান্তরিত হয় আর ভাস্কর্যটাকে সরিয়ে নিয়ে পূর্বদিকের বাগানের ভিতরে একটা আচ্ছাদনের নীচে রেখে দেয়া হয়। বর্তমানে ভাস্কর্যটা আমেরিকান ইতিহাসের স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরে রয়েছে, সেখানে আজ যারা ভাস্কর্যটা দেখে তারা ভাবতেও পারবে না তারা এমন একটা সময়ের শেষ বেঁচে থাকা স্মারকটা দেখছে যখন এই দেশের জনক ইউ.এস ক্যাপিটলের উপরে দেবতা হিসাবে তাকিয়ে থাকত…ঠিক জিউস যেভাবে সর্বদেবতার মন্দিরে তাকিয়ে থাকত।

সাটো তার ব্ল্যাকবেরীতে কাউকে ফোন করে, বোঝাই যায় সে তার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগের মোক্ষম সময় হিসাবে একে বিবেচনা করছে। তোমারা কি জানতে পারলে? সে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে। আচ্ছা…সে এবার সরাসরি ল্যাংডনের দিকে তাকায়, তারপরে পিটারের হাতের দিকে। তুমি নিশ্চিত? সে আরো কিছুক্ষণ কথা শোনে। ঠিক আছে, ধন্যবাদ। সে ফোনকলটা কেটে, ল্যাংডনের দিকে তাকায়। আমার সহকারী কিছু অনুসন্ধান চালিয়ে তোমার তথাকথিত রহস্যময়তার হাতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছে, সেই সাথে তুমি যা যা বলেছে: পাঁচ আঙ্গুলের পাঁচটা চিহ্ন- তারা, সূর্য, চাবি, মুকুট আর লণ্ঠন- সেই সাথে সে এটাও বলেছে গোপন জ্ঞান জানতে প্রাচীন আমন্ত্রণ এভাবেই এই হাতের মাধ্যমে দেয়া হত।

আমি বর্তে গেলাম, ল্যাংডন শাদামাটা কণ্ঠে বলে।

কোন কারণ নেই, সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে আমরা একটা কানা গলির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি যতক্ষণ না তুমি যা এখনও আমাদের বলনি সেটা বলছো।

ম্যাম?

সাটো তার দিকে এগিয়ে আসে। প্রফেসর, আমরা বৃত্তের আবার শুরুতে এসে দাঁড়িয়েছি। তুমি এমন কিছুই বলনি যা আমার সহকর্মীরা আমাকে বলতে পারত না। আর তাই আমি তোমাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করছি। আজরাতে তোমাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে? কেন তোমাকে এত খাতির করছে? এমন কি আছে যেটা কেবল তুমি একাই জানো?।

আমরা এসব প্যাচাল একবার শেষ করেছি,ল্যাংডনের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। আমি জানিনা আহাম্মকটা কেন মনে করছে আমি কিছু জানি।

ল্যাংডন আরেকটু হলেই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল সে যে আজ রাতে ক্যাপিটলে এসেছে এটা সাটো কার কাছে শুনেছে, কিন্তু সেটাও তাদের ভিতরে আলোচিত হয়েছে। সাটো মুখ খুলবে না। আমি যদি পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানতাম, সে সাটোকে বলে, আমি তোমাকে বলতাম। কিন্তু আমি জানি না। প্রথাগতভাবে রহস্যময়তার হাত একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে পাঠান। আর তারপরে, সামান্য সময় অতিবাহিত হলে হাতের সাথে কি করণীয় তার একটা তালিকা পাঠান হয়…মন্দিরে প্রবেশে পথ নির্দেশনা, দীক্ষাগুরুর নাম যে তোমাকে কিছু একটা শেখাবে! কিন্তু এই লোকটা আমাদের কেবল পাঁচটা উল্কি পাঠিয়েছে! বড়জোর- ল্যাংডন মাঝপথে থেমে যায়।

সাটো তার দিকে তাকা। কি মনে পড়েছে?

ল্যাংডন চকিতে হাতটার দিকে তাকায়। পাঁচটা উল্কি। সে এখন বুঝতে পারে যে সে যা বলছে সেটা বোধহয় পুরোপুরি সত্য না।

প্রফেসর? সাটো তাগাদা দেয়।

ল্যাংডন বীভৎস বস্তুটার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়। পিটার পথ দেখাবে। আগে আমার মনে হয়েছিল এই লোকটা পিটারের কব্জিতে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে গেছে- কোন ম্যাপ, চিঠি বা নির্দেশাবলী।

সে দেয়নি, এনডারসন বলে। তুমি দেখতেই পাচ্ছো বাকী তিনটা আঙ্গুল খুব শক্ত করে কিছু আঁকড়ে নেই।

তুমি ঠিক বলেছো, ল্যাংডন বলে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে…সে ঝুঁকে নীচু হয় পিটারের তিন আঙ্গুলের নীচে ঢেকে থাকা পিটারের তালু দেখতে চেষ্টা করে। হয়ত কাগজে কিছু লেখা না।

উল্কি করা? এনডারসন জানতে চায়।

ল্যাংডন মাথা নাড়ে।

তালুতে তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ? সাটো জানতে চায়।

ল্যাংডন আর নীচু হয়, আলগা করে বাঁকান আঙ্গুলের নীচে দেখতে চেষ্টা করে। আমি দেখছি না, কোণটা বড্ড বেকায়দা-

ওহ, ঈশ্বরের দোহাই, সাটো তার দিকে এগিয়ে এসে বলে। আঙ্গুলগুলো খুলেই দেখ না!

এনডারসন তার সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ায়। ম্যাম! ফরেনসিকের জন্য আমাদের অপেক্ষা করাটাই সঙ্গত হবে—

আমি উত্তর চাই, তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সাটো বলে। সে নীচু হয়ে ল্যাংডনকে ছাড়িয়ে হাতটার দিকে এগিয়ে যায়।

ল্যাংডন দাঁড়িয়ে পড়ে চোখে অবিশ্বাস নিয়ে দেখে সাটো পকেট থেকে একটা কলম বের করে সাবধানে সেটা বাকান আঙ্গুলের নীচে ঢুকিয়ে দেয় তারপরে এক এক করে সে তিনটা আঙ্গুলই সোজা করে যতক্ষণ না হাতটা পুরোটা খুলে সম্পূর্ণ তালু দৃশ্যমান হয়।

সে নীচু থেকেই ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। প্রফেসর, আরো একবার দেখছি তোমার কথাই ঠিক।

.

২২ অধ্যায়

লাইব্রেরীতে পায়চারি করার ফাঁকে ক্যাথরিন সলোমন তার ল্যাব কোটের হাতা গুটিয়ে ঘড়ি দেখে। অপেক্ষা করতে অভ্যস্থ এমন ভদ্রমহিলাদের দলে সে পড়ে না কিন্তু এই মুহূর্তে তার মনে হয় পুরো পৃথিবীটাই যেন থমকে আছে। সে ত্রিশের অনুসন্ধানী মাকড়সার শিকারের ফলাফলের প্রতিক্ষা করছে, সে তার ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে, আর তারচেয়েও বিশ্রী ব্যাপার যে লোকটার কারণে এই পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে তার ফোনের জন্য দেখা যাচ্ছে সে অপেক্ষা করছে।

লোকটা যদি কথাগুলো না বলত, সে ভাবে। ক্যাথরিন সাধারনত নতুন সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানী এবং এই লোকটার সাথে যদিও আজ দুপুরেই তার প্রথম দেখা হয়েছে, মুহূর্তের ভিতরেই সে তার বিশ্বাস অর্জন করেছে। পুরোপুরি।

রবিবার দুপুরের পরে সাপ্তাহিক বৈজ্ঞানিক জানালগুলোতে চোখ বোলার চিরাচরিত অভ্যেসমত যে যখন সময় কাটাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই দুপুরবেলা লোকটার প্রথম ফোন আসে।

মিস.সলোমন, অদ্ভুত একটা ভাসাভাসা কণ্ঠস্বর জানতে চায়। আমি ড. ক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডন। আপনার ভাইয়ের সম্বন্ধে আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই? আমাকে মাফ করবেন, কে বলছিলেন? সে জানতে চায়। আর আমার ব্যক্তিগত সেলফোনের নাম্বারই বা থোকা তুমি কোথাথেকে পেলে?

ড.  ক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডন।

ক্যাথরিন নাম শুনে চিনতে পারে না।

লোকটা গলা পরিষ্কার করে ভাবটা এমন যেন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে। আমায় মাফ করবেন, মি. সলোমন। আমি ভেবেছিলাম আপনার ভাই আমার কথা আপনাকে বলেছে। আমি তার চিকিৎসক। আপনার নাম্বার তার আপদকালীন যোগাযোগের তালিকায় আছে।

ক্যাথরিনের হৃৎপিণ্ড চমকে উঠে। আপদকালীন যোগাযোগ। কোন অসুবিধা হয়েছে?

না…আমার মনে হয় না, লোকটা আশ্বস্ত করে বলে। আজ সকালে আপনার ভাইয়ের আসবার কথা ছিল আর আমি আমার কাছে তার যে নাম্বার আছে সেগুলোতে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। আগে থেকে না জানিয়ে সে কখনও সাক্ষাৎকার বাতিল করেনি, আমি তাই সামান্য উদ্বিগ্নবোধ করছিলাম আরকি। আমি আপনাকে ফোন করতে চাইনি কিন্তু ভাবলাম-

না, না ঠিক আছে, আপনার সৌজন্যতায় আমি খুশীই হয়েছি। ক্যাথরিন তখনও ডাক্তারের নামটা মিলাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। গতকাল সকালের পরে আর আমার ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি, কিন্তু সে সম্ভবত তার সেল চালু করতেই ভুলে গেছে। ক্যাথরিন সম্প্রতি তাকে একটা নতুন আইফোন দিয়েছে আর সে ফোনটা কিভাবে কাজ করে সেটার জানার জন্য এখনও সময় করে উঠতে পারেনি।

আপনি একজন ডাক্তার বললেন? সে জিজ্ঞেস করে। পিটার কি কোন ..অসুখের কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে।

অপরপ্রান্ত কথাটা বিবেচনা করছে এমন সময় নেয়। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত কিন্তু বুঝতে পারছি আপনাকে ফোন করে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পেশাগত ভুলটা করে ফেলেছি। আপনার ভাই আমাকে বলেছিল আপনি জানেন যে তিনি আমার সাথে দেখা করেন কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা মোটেই সেরকম নয়।

ভাইয়া তার ডাক্তারের কাছে মিথ্যে বলেছে? ক্যাথরিনের উদ্বিগ্নতার পারা চড়তে শুরু করে। সে কি অসুস্থ?।

মি. সোমন আমি দুঃখিত কিন্তু ডাক্তার-রোগীর গোপনীয়তার সনদ আমাকে আপনার ভাইয়ের অবস্থা আলোচনা করতে বিব্রত করছে আর সে আমার রোগী এটা স্বীকার করেই আমি আপনাকে অনেক কিছু বলে বসেছি। আমি এখন রাখছি কিন্তু আপনার সাথে যদি তার কথা হয় তবে তাকে বলবেন আমাকে ফোন করতে তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারব।

দাঁড়ান! ক্যাথরিন চেঁচিয়ে উঠে। আমাকে কেবল বলেন পিটারের কি হয়েছে?

ড. অ্যাবাড্ডনকে সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলতে শোনা যায়, বোঝাই যায় নিজের ভুলের কারণে নিজের উপরেই সে রেগে উঠেছে। মি সলোমন আমি আপনার কণ্ঠস্বর থেকে বুঝতে পারছি আপনি উদ্বিগ্ন আর আমিও আপনার কোন দোষ দেখিনা। আমি নিশ্চিত আপনার ভাই ভাল আছেন। সে গতকালই আমার চেম্বারে এসেছিল।

গতকাল? এবং আজ তার আবার যাবার কথা ছিল? ব্যাপারটা জরুরী মনে হচ্ছে।

লোকটা শ্বাস ফেলার ভারী শব্দ শোনা যায়। আমি পরামর্শ দেবো তার বিষয়ে আলোচনার আগে তাকে আরো একটু সময় দেয়া উচিত আমাদের

আমি এখুনি আপনার চেম্বারে আসছি, দরজার দিকে হাটা শুরু করে ক্যাথরিন বলে। আপনার চেম্বারটা কোথায়?

নিরবতা।

ডক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডন? ক্যাথরিন ঝাঁঝিয়ে উঠে। আমি নিজে খুঁজে বের করবো না আপনি আমাকে সে কষ্ট থেকে বাঁচিয়ে দেবেন। যেটাই হোক আমি আসছি আপনার চেম্বারে।

ডাক্তার চুপ করে থাকে। আমি যদি আপনার সাথে দেখা করি তাহলে কি, আমি আপনার ভাইকে আমার ভুলের কথাটা ব্যাখ্যা করা পর্যন্ত আপনি চুপ করে থাকবেন?

ঠিক আছে।

ধন্যবাদ। আমার চেম্বার ক্যালোরামা হাইটসে। সে তাকে একটা ঠিকানা দেয়।

বিশ মিনিট পরে ক্যাথরিনকে ক্যালোরামা হাইটসের চওড়া সড়কে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। সে ইতিমধ্যে তার ভাইয়ের সবগুলো নাম্বারে ফোন করে দেখেছে সে একটাও ধরছে না। সে তার ভাইয়ের গতিবিধি নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন না কিন্তু সে গোপনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করছে এটা জানার পরে…ব্যাপারটা স্বাভাবিক থাকে না।

ক্যাথরিন শেষ পর্যন্ত যখন ঠিকানাটা খুঁজে পায়, সে সামান্য বিভ্রান্ত হয়ে ভবনটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এখানে ডাক্তারের চেম্বার?

তার সামনে অবস্থিত বিশাল অট্টালিকার চারপাশ ঢালাই লোহার বেষ্টনী, ইলেকট্রিক ক্যামেরা আর সবুজ উদ্যান শোভিত। সে দ্বিতীয়বারের মত ঠিকানা মিলিয়ে দেখার জন্য গাড়ির গতি কমালে, সিকিউরিটি ক্যামেরাগুলোর একটা তার দিকে ঘুরে এবং গেটটা আপনি থেকে খুলে যায়। দ্বিধান্বিতচিত্তে ক্যাথরিন গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করায় এবং ছয়টা গাড়ি রাখার মত একটা গ্যারেজ আর একটা স্ট্রেচ লিমোর পাশে নিজের গাড়িটা এনে থামায়।

এই লোক কেমনতর ডাক্তার?

সে গাড়ি থেকে নামলে, ম্যানসনের সামনের দরজা খুলে যায় এবং অভিজাত দেখতে এক লোক সেখানে এসে দাঁড়ায়। সে সুদর্শন, চোখে পড়ার মত লম্বা, এবং সে যতটা মনে করেছিল তার চেয়ে অল্প বয়সী। যদিও তার আঁচরণ আর অভিব্যক্তিতে বয়স্ক লোকের জ্ঞান বিকিরিত হয়। নিখুঁতছাটের একটা স্যুট আর টাই লোকটার পরণে আর তার মাথা ভর্তি সোনালী চুল নিখুঁত করে আঁচড়ানো।

মিস.সলোমন আমি ড. ক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডন, সে বলে, কেমন নাকি সুরের চাপা তার কণ্ঠস্বর। তারা করমর্দন করলে সে টের পায় ডাক্তারের ত্বক মসৃণ আর যথেষ্ট যত্ন নেয়া হয়।

 ক্যাথরিন সলোমন, তার তুকের দিক থেকে অনেক কষ্টে চোখ সরিয়ে। নিয়ে সে বলে, যা অস্বাভাবিক ধরণের মসৃণ আর তামাটে বর্ণের। সে কি মেকআপ নিয়েছে।

বাসার সুন্দর করে সাজান ফয়ারে প্রবেশ করলে ক্যাথরিন টের পায় তার ভিতরে অস্থিরতা বাড়ছে। ভিতরে কোথাও থেকে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মূৰ্ছনা ভেসে আসে আর কেমন যেন ধূপ পোড়াবার গন্ধ। সুন্দর পরিবেশ, সে বলে, যদিও আমি আশা করেছিলাম…একটা অফিসের পরিবেশ।

আমি ভাগ্যবান আমাকে বাড়ির বাইরেই কাজ করতে হয়। লোকটা তাকে বসার ঘরে নিয়ে আসে দেখা যায় সেখানে আগুন জ্বলছে। আরাম করে বসেন। আমি মাত্র চায়ের পানি চড়িয়েছি। আমি সেটা নামিয়ে আসছি তারপরে আমরা কথা বলব। সে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায় এবং ভিতরে প্রবেশ করে।

ক্যাথরিন সলোমন বসে না। মেয়েদের অর্ন্তজ্ঞান একটা জোরাল প্রবৃত্তি যার উপরে সে ভরসা করতে শিখেছে এবং এই স্থানের কিছু একটা তার গায়ে শিরশির অনুভূতির সৃষ্টি করছে। তার দেখা কোন ডাক্তারের অফিসের সাথে এই জায়গাটার একেবারেই কোন মিল নেই। এ্যান্টিক দিয়ে সাজান বসার জায়গার দেয়ালে ধ্রুপদী চিত্রকর্ম ঝুলছে, বিচিত্র পৌরাণিক থিমে আঁকা ছবিগুলো। সুখ সৌন্দৰ্য্যদায়িনী তিন দেবী-বোনের ছবি আঁকা একটা বিশাল ক্যানভাসের সামনে সে এসে দাঁড়ায় যাদের নগ্ন দেহ দর্শনীয়ভাবে বিচিত্র রঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মাইকেল পার্কসের আসল তৈলচিত্র ওটা। তাকে আগাম জানান না দিয়ে ড. অ্যাবাড্ডন আবার হাজির হয়েছে তার হাতের ট্রেতে রাখা চায়ের কাপ থেকে দেয়া উঠছে। আমি মনে করেছিলাম আমরা আগুনের পাশে বসব? সে তাকে বসার ঘরের ভিতরে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে এবং এক স্থানে বসতে দেয়। বিচলিতবোধ করার কোন কারণ নেই।

আমি নাভাস নই, ক্যাথরিন একটু দ্রুতই উত্তরটা দেয়।

সে তার দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করা একটা হাসি হাসে। আসলে আমার কাজই হল মানুষ কখন নাভাস বোধ করে সেটা জানা।

আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না?

আমি একজন চর্চাকারী সাইক্রিয়াটিস্ট, মিস.সলোমন। সেটাই আমার পেশা। আমি প্রায় এক বছর আপনার ভাইয়ের চিকিৎসা করছি। আমি তার থেরাপিস্ট।

ক্যাথরিন কথা না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আমার ভাই থেরাপি নিচ্ছে?

রোগীরা অনেক সময়েই তাদের থেরাপির কথা নিজের ভিতরেই রাখতে চায়, লোকটা বলে। আপনাকে ফোন করে আমি ভুল করেছি, নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমি কেবল এটুকুই বলতে পারি আপনার ভাই আমাকে ভুল তথ্য দিয়েছিল।

আমি. ..আমার কোন ধারণাই নেই।

আমি ক্ষমা চাইছি যদি আপনাকে সন্ত্রস্ত করে থাকি, সে অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে। আমি লক্ষ্য করেছি আমাদের দেখা হওয়ার পর থেকেই আপনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, এবং হ্যাঁ আমি মেকআপ নেই। সে নিজের ত্বক স্পর্শ করে তাকে লাজুক দেখায়। আমার ত্বকের সমস্যা আছে, যা আমি ঢেকে রাখতে পছন্দ করি। আমার স্ত্রী সাধারনত আমার মেকআপের বিষয়টা দেখে কিন্তু সে যখন বাসায় থাকে না তখন আমাকেই আনাড়ি হাতে কাজ চালাতে হয়।

ক্যাথরিন কোন মতে মাথা নাড়ে, কথা বলার মত অবস্থায় সে নেই।

আর এই সুন্দর চুল…সে নিজের সোনালী চুলের গোছা স্পর্শ করে বলে। পরচুলা। আমার ত্বকের সংক্রমন মাথার খুলিতেও ছড়িয়েছে আর ডুবন্ত জাহাজ থেকে পালাবার মত করে মাথার সব চুল পালিয়েছে। সে কাঁধ ঝাঁকায়। আমি দুঃখিত সুন্দর থাকার অহমিকা আমার ভিতরে বিদ্যমান।

আপাত দৃষ্টিতে আমারটা হল রুক্ষতা,ক্যাথরিন এবার বলে।

একেবারেই না। ড. আবানের হাসিটায় জড়তা কেটে যাবার সন্ধি প্রস্তাব। আমরা শুরু করতে পারি? সাথে চা হলে মন্দ হয়না।

তারা আগুনের সামনে বসে থাকে আর অ্যাবাড্ডন পাত্রে চা ঢেলে দেয়। আপনার ভাই আমাকে এই চক্রে ফাঁসিয়েছে আমাদের সেশনের সময় আমরা বারবার চা পান করি। তার ভাষ্যমতে সলোমনরা চা-খোর।

পারিবারিক ঐতিহ্য, ক্যাথরিন বলে। কালো, একদম।

তারা নিজ নিজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পরবর্তী কয়েক মিনিট এটাসেটা নিয়ে আলাপ করে, কিন্তু ক্যাথরিন তার ভাইয়ের কথা জানতে উদগ্রীব হয়ে আছে। আমার ভাই আপনার কাছে কেন এসেছে? সে জানতে চায়। আর আমাকে কেন সে কথা বলেনি। বলতে দ্বিধা নেই, পিটার তার জীবনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই মানসিক চাপ আর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে- অল্প বয়সে বাবা হারিয়েছে এবং তারপরে পাঁচ বছরের ব্যবধানে মা আর নিজের একমাত্র ছেলেকে কবর দিয়েছে। তারপরেও পিটার সবসময়েই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়েছে।

ড. অ্যাবাড্ডন তার কাপে একটা চুমুক দেয়। আপনার ভাই আমার কাছে এসেছে কারণ সে আমাকে বিশ্বাস করে। সাধারণ ডাক্তার রোগীর বাইরে একটা বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। ফায়ারপ্লেসের পাশে রাখা একটা বাঁধান ডকুমেন্টের দিকে সে ইঙ্গিত করে। জিনিসটা দেখতে ডিপ্লোমার মত যতক্ষন না ক্যাথরিন দু মাথা বিশিষ্ট ফিনিক্স খুঁজে পায়।

আপনি একজন ম্যানস? একেবারে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী।

আমি আর পিটার ভাইই বলতে পারেন আমাদের।

আপনি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু যে কারণে আপনাকে তেত্রিশতম ডিগ্রীতে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে।

ঠিক তা নয়, সে বলে। আমি উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল অর্থে বৈভবের মালিক হয়েছি আর ম্যাসন দাঁতব্য সংস্থায় বিপুল অর্থ দান করেছি।

ক্যাথরিন এবার বুঝতে পারে পিটার কেন এই তরুণ ডাক্তারকে বিশ্বাস করে। একজন ম্যাসন যে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের অধিকারী, মানবতা আর প্রাচীন রহস্যের প্রতি আগ্রহী?

প্রথমে যা মনে হয়েছিল ড. অ্যাবাড্ডন আর তার ভাইয়ের ভিতরে তারচেয়েও বেশি মিল রয়েছে।

আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম কেন আমার ভাই আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছে, সে বলে, সে কেন আপনাকে বেছে নিয়েছে সেটা বোঝাতে চাইনি।

আমি বলতে চেয়েছি সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে তাকে কেন আসতে হয়েছে?

ড. অ্যাবান হাসে। হ্যাঁ, আমি জানি। আমি আসলে ভদ্রভাবে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম। আলোচনা করার মত কোন বিষয় না। সে একটু চুপ করে থাকে। অবশ্য আমি কিঞ্চিত বিভ্রান্ত হয়েছি যে পিটার আমাদের আলোচনার কথা আপনাকে বলেনি দেখে, বিশেষ করে সেটা যখন আপনার গবেষণার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আমার গবেষণা? ক্যাথরিনের মাথা টলে উঠে। ভাইয়া আমার গবেষণার কথা বাইরের লোকের সাথে আলাপ করেছে?

সম্প্রতি আপনার ভাই আমার কাছে এসেছিল গবেষণাগারে আপনার সাফল্যের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে একজন পেশাদারের মতামত নিতে আমার কাছে এসেছিলেন।

চা আরেকটু হলে ক্যাথরিনের গলায় আটকে যেত। সত্যি? আমি. ..তাজ্জব হলাম, সে কোনমতে ব্যাপারটা সামলায়। পিটার কি ভাবছে? আমার কাজের বিষয়ে সে মানসিক চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করেছে? তাদের নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী ক্যাথরিনের কাজের বিষয়ে কারো সাথে আলোচনা করা যাবে না। তারচেয়েও বড় কথা গোপনীয়তার বিষয়ে তার ভাই বেশি সচেতন।

আপনি দেখছি জানেন না মিস,সলোমন যে আপনার ভাই আপনার গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হলে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তিত ছিলেন। পৃথিবী জুড়ে একটা ব্যাপক ধরনের দার্শনিক দোলাচাল তিনি দেখেছেন…মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

বুঝেছি, ক্যাথরিন বলে, তার চায়ের কাপ এবার সামান্য কাঁপতে শুরু করেছে।

আমরা যেসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি তার সবগুলোই গুরুত্বের দাবীদার: জীবনের মহান রহস্য শেষপর্যন্ত প্রকাশিত হলে মানুষের অবস্থার কি হবে? আমরা যেসব বিশ্বাসের উপরে গ্রহণ করেছি কি হবে যখন…প্রত্যক্ষভাবে তাকে ঘটনা বলে প্রমাণিত করা যাবে? বা মিথ হিসাবে নাকচ হবে? একজন। তর্কের খাতিরে বলতেই পারে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর না দেয়াই ভাল।

ক্যাথরিন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না, কিন্তু তারপরেও সে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমি আশা করি আপনি কিছু মনে করবেন না ড. অ্যাবাডড়ন কিন্তু আমি আমার কাজের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করতে চাই না। খুব শীঘ্রই কিছু প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার নেই। আরো কিছুদিন আমার আবিষ্কার গবেষণাগারের সেফে নিরাপদে আটকান থাকবে।

কৌতূহলকর, উঅ্যাবাড্ডন চেয়ারে হেলান দিয়ে চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে যায়। সে যাই হোক, আমি আপনার ভাইকে আজ আবার আসতে বলেছিলাম কারণ গতকাল সে সামান্য ভেঙে পড়েছিল। এমন যখন হয় তখন আমি চাই আমার রোগীরা।

ভেঙে পড়েছিল? ক্যাথরিনের বুক ধকধক করতে শুরু করে। ভেঙে পড়া বলতে যা বোঝায় সেই রকম? সে কল্পনা করতে পারে না তার ভাই কোন বিষয়ে ভেঙে পড়েছে।

অ্যাবাড়ন কোমল হাত বাড়িয়ে সান্তনা দেয়। প্লিজ, আমি বুঝতে পারছি আমি আপনাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছি। আমি দুঃখিত। এই অদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমি বুঝতে পারছি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনার কেমন লাগছে।

আমি জানি না আমি কি বা কিসের অধিকারী, ক্যাথরিন বলে, আমার ভাইই আমার একমাত্র পরিবার। আমার চেয়ে ভাল তাকে কেউ জানে না, তো আপনি যদি আমাকে বলেন ঠিক কি হয়েছে আমি হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারব। আমরা সবাই একটা জিনিস চাই- পিটারের মঙ্গল।

ড. অ্যাবাড্ডন অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে তারপরে ধীরে ধীরে মাথা নাড়তে আরম্ভ করে যেন ক্যাথরিনের কথায় যুক্তি আছে। অবশেষে সে কথা বলে। মিস,সলোমন, রেকর্ডের খাতিরে বলে রাখছি, আমি যদি এই তথ্য আপনার সাথে ভাগাভাগি করতে চাই আমি সেটা করবো কেবল এই জন্য যে আমি মনে করি আপনার অন্তজ্ঞান আমাকে সহায়তা করবে আপনার ভাইয়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।

অবশ্যই।

অ্যাবাড্ডন সামনে ঝুঁকে আসে, কুনুই হাটুর উপরে রাখে। আমি যতদিন আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলছি আমি তাকে একটা অপরাধবোধের সাথে লড়তে দেখেছি। আমি তাকে কখনও চাপ দেইনি কারণ সেজন্য সে আমার কাছে আসেনি। আর তারপরে গতকাল অনেকগুলো কারণে আমি তাকে শেষপর্যন্ত এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। অ্যাবাড্ডন তার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে। আপনার ভাই, অপ্রত্যাশিত আর নাটকীয়ভঙ্গিতে নিজের ভেতরের কথা বলতে শুরু করে। সে আমাকে এমন সব কথা বলে যা আমি শুনব বলে আশা করিনি…আপনার মা মারা যাবার রাতের কথাও সে আমাকে বলেছে।

বড়দিনের আগে প্রায় দশবছর হয়ে এল। সে আমার হাতে মারা যায়।

সে আমাকে বলেছে বাসায় একটা ডাকাতির সময়ে আপনাদের মা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন? এক লোক কিছু একটার খোঁজে বাসার ভিতরে প্রবেশ করেছিল যে বিশ্বাস করতে আপনার ভাই সেটা লুকিয়ে রেখেছে?

ঠিক আছে।

অ্যাবানের চোখ তাকে যাচাই করতে চেষ্টা করে। আপনার ভাই বলেছে সে লোকটাকে গুলি করে মেরেছিল?

হ্যাঁ।

অ্যাবাড্ডন তার চিবুক নাড়ে। আপনার কি মনে আছে সেই অনাহুত প্রবেশকারী ঠিক কিসের খোঁজে আপনাদের বাসায় প্রবেশ করেছিল?

ক্যাথরিন গত দশ বছর ধরে সেই স্মৃতি ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে এসেছে। হ্যাঁ, তার দাবী খুবই নির্দিষ্ট ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমরা কেউই তার কথার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারিনি। তার দাবী কখনও আমাদের কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়নি।

বেশ, আপনার ভাই ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন।

কি? ক্যাথরিন সোজা হয়ে বসে।

অন্তত তার গতকাল বলা গল্প অনুসারে, পিটার খুব ভাল করেই জানত অনুপ্রবেশকারী কি খুঁজছে। এবং আপনার ভাই সেটা হস্তান্তর করতে চায়নি বলেই না বোঝার ভান করেছিল।

সেটা অসম্ভব। পিটারের পক্ষে কোন মতেই জানা সম্ভব না সেই লোকটা যা চেয়েছিল। তার দাবীর কোন অর্থ হয় না।

কৌতূহলোদ্দীপক। ড. অবাড্ডন থেমে কিছু নোট লেখে। আমি যা বলেছি, পিটার আমাকে বলেছে সে জানত। আপনার ভাই বিশ্বাস করে সে যদি অনুপ্রবেশকারীর সাথে সহযোগিতা করত তাহলে আপনার মা হয়ত আজও বেঁচে থাকতেন। আর এই সিদ্ধান্তটাই তার সব অপরাধবোধের মূলে।

ক্যাথরিন মাথা নাড়ে। সেটা অসম্ভব ব্যাপার…

অ্যাবাড্ডন হাল ছেড়ে দেয়, তাকে বিব্রত দেখায়। মিস.সলোমন আপনার সাথে কথা বলে উপকার হয়েছে। আমি যা ভয় করেছিলাম, বাস্তবতার সাথে আপাত দৃষ্টিতে আপনার ভাইয়ের একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। আমাকে স্বীকার করতেই হবে, আমি এই ভয়টাই করছিলাম। আর সেজন্যই আমি তাকে আজ আবার আসতে বলেছিলাম। বিপর্যস্ত স্মৃতির সাথে সম্পকিত এসব অলীক ধারণার পর্ব সাধারন একটা ঘটনা।

ক্যাথরিন আবার মাথা নাড়ে। ড. অ্যাবাড্ডন পিটার মতিভ্রমের অনেক উর্ধ্বে।

আমি মানছি, কেবল…

কেবল কি?

কেবল তার সেই আক্রমনের ঘটনাটা কেবল সূচনা ছিল…একটা বিশাল আর সুদূর বিস্তারী গল্পের খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ।

ক্যাথরিন তার চেয়ারে বসা অবস্থায় সামনে ঝুঁকে আসে। পিটার আর কি বলেছে?

অ্যাবাড্ডনের মুখে একটা বিষ হাসি ফুটে উঠে। মিস সালোমন আগে আমি একটা প্রশ্ন করি। আপনার ভাই কি কখনও আপনার সাথে আলোচনা করেছে ওয়াশিংটন ডিসিতে কি লুকান আছে বলে সে বিশ্বাস করে…বা একটা বিশাল গুপ্তধন রক্ষা করার ব্যাপারে সে কি ভূমিকা পালন করছে বলে বিশ্বাস করে…হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন জ্ঞান।

ক্যাথরিনের চোয়াল ঝুলে পড়ে। তুমি কিসের কথা বলছো?

ড. অ্যাাবাড্ডন একটা বিশাল নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চেয়ারে দেহের ভর ছেড়ে। দেয়। ক্যাথরিন আমি তোমাকে যা বলতে যাচ্ছি সেটা একটু বিহ্বলকর। সে চুপ করে আবার তার চোখে চোখ রাখে। কিন্তু আমার অনেক উপকার হবে যদি বিষয়টা সম্পর্কে তুমি সামান্য কিছুও যদি জান তবে আমাকে বলো। সে তার চায়ের কাপটা নেয়। আরেক কাপ চা?

.

২৩ অধ্যায়

আরেকটা উক্তি। ল্যাংডন পিটারের খোলা তালুর পাশে উদ্বিগ্নচিত্তে উবু হয়ে বসে এবং নিপ্রাণ বাঁকান আঙ্গুলের নীচে লুকিয়ে থাকা সাতটা খুদে প্রতীক মনোযোগ দিয়ে দেখে।

IIIX885

সংখ্যা বলে মনে হচ্ছে, ল্যাংডন বিস্মিত কণ্ঠে বলে। অবশ্য আমি চিনতে পারিনি।

প্রথমটা একটা রোমান সংখ্যাবাচক চিহ্ন, এনডারসন বলে।

আসলে, আমার কিন্তু তা মনে হয় না, ল্যাংডন তাকে শুধরে দেয়। রোমান I-I-I-X সংখ্যা বলে কিছু নেই। এটা রোমান হলে লেখা হত V-I I

বাকীটা কি বলে মনে হয়? সাটো জানতে চায়।

আমি ঠিক নিশ্চিত বলতে পারছি না। তবে মনে হয় আরবী হরফে আট আট-পাঁচ লেখা।

আরবী? এনডারসন জিজ্ঞেস করে। স্বাভাবিক সংখ্যা বলেই তো মনে হচ্ছে।

আমাদের স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো আসলে আরবী থেকে নেয়া। এই বিষয়টা ছাত্রদের এতবার পরিষ্কার করে বোঝাতে হয় যে ল্যাংডন একটা লেকচার শীটই প্রস্তুত করেছে গোড়ার দিকের মধ্যপ্রাচ্য সংস্কৃতির বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির উপরে, যার ভিতরে একটা আমাদের আধুনিক গণনা ব্যবস্থা, রোমান পদ্ধতির চেয়ে তাদের গণনা পদ্ধতির সুবিধার ভিতরে অন্যতম একক-দশকের স্থান নির্দেশনা আর শুণ্যের আবিষ্কার। অবশ্য ল্যাংডন এই লেকচারটা সবসময়েই একটা বিষয় মনে করিয়ে দিয়ে শেষ করে যে আরব সংস্কৃতি মানব সভ্যতাকে আরেকটা শব্দ দিয়েছে আল-কূহল- হার্ভাডের নবাগতদের সবচেয়ে পছন্দের পানীয়- যাকে আজ সবাই এ্যালকোহল হিসাবে চেনে।

ল্যাংডন উল্কিগুলো ভাল করে দেখে, বিভ্রান্ত বোধ করে। আমি আট-আট পাঁচ সম্পর্কে একেবারেই কোন ধারণা করতে পারছি না। রেকটিলাইনার লিখন পদ্ধতি একেবারেই অচেনা। ওগুলো কোনমতেই সংখ্যা হতে পারে না।

তাহলে ঘোড়ার ডিমগুলো কি? সাটো ক্ষেপে উঠে।

আমি বলতে পারছি না। পুরো উল্কিটাই দেখতে প্রায়…রুনিক।

মানে কি? সাটো জিজ্ঞেস করে।

রুনিক বর্ণমালা কেবল কেবল সরলরেখা দ্বারা লেখা হয়। তাদের অক্ষরগুলোকে বলে রানস আর প্রায়শই পাথরে লেখার জন্য ব্যবহৃত হয় কারণ। বাঁক খোদাই করা বেশ কঠিন কাজ।

এগুলো যদি রানসই হয়, সাটো বলে, তাহলে তাদের মানে বল?

ল্যাংডন অপারগতার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। তার জ্ঞান একেবারেই মামুলি রুনিক অক্ষর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ- ফুটহার্ক- তৃতীয় খ্রিস্টাব্দের টিউটোনিক ব্যবস্থা, কিন্তু এটা ফুটহার্ক-এ লেখা হয়নি। সত্যি কথা বলতে আমি নিশ্চিতও না যে। এগুলো আসলেই রানস। একজন বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করতে হবে। কয়েক ডজন বিভিন্ন ধরণ আছে- হালসিঙ, ম্যানক্স, দি ডটেড স্টানগনার

পিটার সলোমন একজন ম্যাসন, তাই নয় কি সে?

ল্যাংডন জোরে মাথা নাড়ে। হ্যাঁ, কিন্তু এর সাথে সেটার কি সম্পর্ক? সে। এখন উঠে দাঁড়িয়েছে এবং ক্ষুদে মহিলার মাথার কাছে স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে আছে।

তুমিই বল আমাকে। তুমি বললে রুনিক অক্ষর পাথরে খোদাই করার সময় ব্যবহৃত হয় আর আমি যা জানি সত্যিকারের ফ্রিম্যাসনরা ছিল পাথরের। কারিগর। আমি এটা বলছি কারণ আমার অফিসকে আমি যখন পিটার সলোমন আর রহস্যময়তার হাতের ভিতরে সম্পর্ক বের করতে নেট সার্চ দিতে বলেছিলাম তখন এই একটা লিঙ্ক বিশেষভাবে বারবার উপস্থাপিত হয়েছে। সে চুপ করে যেন তার অনুসন্ধানের গুরুত্ব বোঝাতে চাইছে। দি ম্যাসনস।

ল্যাংডন সশব্দে শ্বাস ছাড়ে, ছাত্রদের যে কথাটা সে প্রায়ই বলে সেটা সাটোকে বলা থেকে বহুকষ্টে নিজেকে বিরত রাখে: গুগল অনুসন্ধান এর কোন প্রতিশব্দ না। আজকাল পৃথিবীব্যাপী, বিশাল কিওয়ার্ড সার্চের জামানায় মনে হবে সবকিছুই বাকী সবকিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট। পৃথিবী জটপাকান তথ্যের। একটা বিশাল মাকড়সার জালে পরিণত হচ্ছে আর দিন দিন তার ঘনত্ব বেড়েই। চলেছে।

ল্যাংডন গলার স্বর সংযত রাখে। তোমার স্টাফের সার্চে ম্যাসন আসতেই পারে এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই। পিটার সলোমন আর যে কোন দুর্বোধ্য বিষয়ের ভিতরে ম্যাসনরা হল নিশ্চিত লিঙ্ক।

হ্যাঁ, সাটো বলে, আজ সন্ধ্যাবেলা আমার বিস্মিত হবার সেটা আরেকটা কারণ যে তুমি এখনও ম্যাসনদের কথা উল্লেখই করনি। বিশেষ করে তুমি যখন দিক্ষিত কয়েকজনের দ্বারা সংরক্ষিত গোপন জ্ঞান নিয়ে কথা বলছে। কেমন। একটা ম্যাসনিক ব্যাপার, তাই না?

ঠিক তাই…এবং একই সাথে রোজিসিয়ান, ক্যাবালিস্টিক, অ্যালামাডিয়ান আর অন্যসব গোপন সংস্থার সাথেও মিলে।

কিন্তু পিটার সলোমন একজন ম্যাসন খুবই শক্তিশালী ম্যাসন, নিঃসন্দেহে। ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে ম্যাসনরা রেগে যেতে পারে যদি আমরা তাদের গোপন ব্যাপার নিয়ে এভাবে আলোচনা করি। ঈশ্বরের দিব্যি তারা তাদের গোপনীয়তা দারুণ ভালবাসে।

ল্যাংডন তার কণ্ঠে অবিশ্বাস ঠিকই ধরতে পারে এবং সে আর তাতে ঘৃতাহুতি দিতে চায় না। ম্যাসনদের সম্পর্কে কিছু জানতে হলে আপনি একজন ম্যাসনকে সে বিষয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে ভাল করবেন।

আসলেই, সাটো বলে, আমি বিশ্বাস করতে পারি এমন কাউকেই জিজ্ঞেস করতে চাইছি।

ল্যাংডনের কাছে তার মন্তব্য একাধারে আক্রমণাত্মক আর মূর্খের মত শোনায়। কেবল জানানর জন্য বলছি ম্যাম, ম্যাসনদের পুরো দর্শনটাই সততা আর একতার উপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। আপনি একজন ম্যাসনের চেয়ে বিশ্বস্ত লোক খুব কমই খুঁজে পাবেন।

আমি ঠিক বিপরীতটা বিশ্বাস করার মত প্রমাণ চারপাশে দেখতে পাচ্ছি।

সাটোর প্রতি ল্যাংডনের ভক্তি শ্রদ্ধা প্রতি মুহূর্তে আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে। সে ম্যাসনদের রূপকাশ্রয়ী আইকোনগ্রাফি আর সিম্বলিজমের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে বহুবছর ধরে লিখে আসছে আর সে কারণেই ভাল করেই জানে পৃথিবীতে খুব কম সংস্থাই তাদের মত ভুল বোঝার আর হিংসার শিকার হয়েছে। শয়তানের আরাধনা থেকে শুরু করে পৃথিবীব্যাপী একক সরকার স্থাপনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে নিয়মিত অভিযুক্ত ম্যাসনদের একটা নীতি হল সমালোচকদের সমালোচনার কোন জবাব না দেয়া, আর যা সহজবোধ্য কারণেই তাদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

যাই হোক, সাটোর কণ্ঠে ব্যাঙ্গ স্পষ্ট ফুটে উঠে, মি. ল্যাংডন আমরা আবার সেই গ্যাড়াকলেই এসে পড়লাম। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে হয় কিছু আপনার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে বা…কিছু আপনি আমাকে এখনও বলছেন না। আমরা যে গাড়লটার পাল্লায় পড়েছি সে নিজে বলেছে পিটার সলোমন নির্দিষ্ট করে আপনাকেই মনোনীত করেছে। কথা শেষ করে সে শীতল দৃষ্টিতে। ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার মনে হয় আলোচনার স্থান সিআইএ সদরদপ্তরে নিয়ে যাবার সময় হয়েছে। ভাগ্য হয়ত আমাদের প্রতি সেখানে আরেকটু সদয় হবে।

ল্যাংডন হয় সাটোর হুমকি বুঝতেই পারে না বা পাত্তা দেয় না। সে এইমাত্র এমন একটা কথা বলেছে যা শুনে ল্যাংডনের অন্য কিছু একটা মনে পড়েছে। পিটার সলোমন তোমাকে নির্বাচিত করেছে। মন্তব্যটা আর ম্যাসনদের উল্লেখ একসাথে ল্যাংডনের মনে অদ্ভুত একটা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সে পিটারের আঙ্গুলের ম্যাসনিক আংটিটার দিকে তাকায়। আংটিটা পিটারের খুব পছন্দের একটা বস্তু- সলোমন পরিবারের পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত সম্পত্তি যাতে দুই মাথাবিশিষ্ট ফিনিক্স খোদিত রয়েছে-ম্যাসনিক জ্ঞানর সর্বোচ্চ মরমীবাদী প্রতিক। আলো পড়ে সোনা চিকচিক করছে, একটা অপ্রত্যাশিত স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়।

ল্যাংডন চমকে উঠে পিটারের বন্দিকর্তার আতঙ্কজনক ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর তার মনে পড়ে: এখনও তুমি কিছু বুঝতে পারনি, তাই না? কেন তোমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে?

এখন, আতঙ্কিত এক মুহূর্তে, ল্যাংডনের চিন্তাধারা লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পায় আর দুর্বোধ্যতার কুয়াশা নিমেষে অপসারিত হয়।

মুহূর্তের ভিতরে ল্যাংডনের কাছে নিজের ভূমিকা পরিষ্কার হয়ে যায়।

.

দশ মাইল দূরে, স্যুইটল্যাণ্ড পার্কওয়ে ধরে দক্ষিণে অগ্রসরমান মাল’আখ গাড়ির পাশের সীট থেকে একটা বিশেষ গুঞ্জন শুনতে পায়। পিটার সলোমনের আইফোন, আজ যা একটা শক্তিশালী অনুষঙ্গ হিসাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। ভিজুয়াল কলার আইডিতে কালো চুলের মধ্য-বয়সী এক আকর্ষণীয় মহিলার ছবি ভেসে উঠে।

ইনকামিং কল-ক্যাথরিন সলোমন

মাল’আখ হাসে, কলটা উপেক্ষা করে সে। নিয়তি আমাকে নিকটে টেনে নিচ্ছে।

ক্যাথরিন সলোমনকে সে তার বাড়ি আজ কেবল একটা উদ্দেশ্যেই নিয়ে এসেছিল- জানতে যে তার কাছে এমন কোন তথ্য আছে কিনা যা তার কাজে। আসতে পারে…সম্ভবত কোন পারিবারিক রহস্য যা যা মাল’আখকে তার কাঙ্খিত বস্তু সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। স্পষ্টতই, ক্যাথরিনের ভাই সে এত বছর ধরে যা আগলে আসছে সে সম্বন্ধে কিছুই বলেনি।

অবশ্য মাল’আখ ক্যাথরিনের কাছ থেকে অন্য একটা বিষয় জানতে পেরেছে। এমন একটা কিছু যা আজ বেচারীর জীবন কয়েক ঘন্টা বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্যাথরিন স্বীকার করেছে তার যাবতীয় গবেষণার ফলাফল ল্যাবের লকারে রাখা আছে।

আমাকে ওটা ধ্বংস করতে হবে।

ক্যাথরিনের গবেষণা এবারে একটা নতুন মাত্রার উন্মেষ ঘটাতে চলেছে এবং সেটা উন্মুক্ত হলে বা তাতে সামান্য ফাটলের সৃষ্টি হলেও বাকিগুলো আপনা থেকে ঘটতে আরম্ভ করবে। সবকিছু বদলে যাওয়া তখন কেবল সময়ের ব্যাপার। আমি সেটা ঘটতে দিতে পারি না। পৃথিবী যেমন আছে তেমনই থাকতে হবে ..অজ্ঞতার অন্ধকারে ভেসে চলা।

আইফোন বিপ করতে বোঝা যায় ক্যাথরিন একটা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে। মাল’আখ সেটা শোনে।

পিটার আমি আবার ফোন করলাম। ক্যাথরিনের কণ্ঠে উদ্বেগ পরিষ্কার বোঝা যায়। তুমি কোথায়? আমি এখনও ড. অ্যাবানের সাথে আমার আলোচনার ব্যাপারটা ভুলতে পারছি না…আর আমি উদ্বিগ্ন। সবকিছু ঠিক আছেতো? দয়া করে ফোনের উত্তর দিও। আমি ল্যাবেই আছি।

ভয়েসমেল শেষ।

মাল’আখ আবার হাসে। ক্যাথরিনের উচিত ভাইয়ের বদলে নিজের সম্পর্কে বেশি চিন্তা করা। সুইটল্যান্ড পার্কওয়ে থেকে সে সিলভার হিল রোডে উঠে আসে। মাইলখানেক পরেই, অন্ধকারের মাঝে সে এসএমএসসির আবছা অবয়ব তার ডানদিকে রাস্তার পাশে গাছের আড়ালে ফুটে থাকতে দেখে। পুরো কমাউণ্ড ক্ষুরের মত ধারাল রেজর-ওয়্যার ফেল দিয়ে ঘেরা।

একটা নিরাপদ ভবন। মাল’আখ আপন মনেই ফিচেল হাসি হাসে। আমি ভিতরের এমন একজনকে চিনি যে আমাকে গেট খুলে দেবে।

.

২৪ অধ্যায়

পুরো বিষয়টা একটা বিশাল ঢেউয়ের মত ল্যাংডনকে আপুত করে প্রকাশিত হয়।

আমি জানি আমি কেন এখানে এসেছি।

রোটানডার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে, ল্যাংডনের মনে হয় সে উল্টোদিকে ঘুরে ঝেড়ে একটা দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়…পিটারের হাত, চকচক করতে থাকা সোনার আংটি, সাটো আর এণ্ডারসনের সন্দিহান চোখের সামনে থেকে। এসব কিছুই না। করে, সে মৃতবৎ দাঁড়িয়ে থাকে, তার কাঁধে ঝুলে থাকা চামড়ার ডেব্যাগটা আঁকড়ে। আমাকে এখান থেকে বের হতেই হবে।

কয়েক বছর আগে কেমব্রিজের, এক শীতের সকালের স্মৃতি মনে পড়তে তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে। সকাল ছয়টার সময়ে কথা, হার্ভাড পুলে তার প্রাত্যহিক কৃত্য সেরে বরাবরের মতই সে ক্লাশে প্রবেশ করছিল। চৌকাঠ অতিক্রম করতে চকের গুড়ো আর স্টিমহিটের পরিচিত গন্ধ তাকে স্বাগত জানায়। দুটো ধাপ অতিক্রম করে নিজের ডেস্কের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে সে থমকে থেমে দাঁড়ায়।

একটা অবয়ব সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে- ঈগলের মত তীক্ষ্ণ মুখাবয়বে রাজকীয় ধুসর চোখের সম্রান্ত চেহারার এক ভদ্রলোক তার জন্য সেখানে অপেক্ষা করছে।

পিটার? ল্যাংডন চমকে উঠে তাকিয়ে বলে।

মৃদু আলোকিত ক্লাশরুম পিটারের হাসিতে যেন উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। সুপ্রভাত, রবার্ট। আমাকে দেখে অবাক হয়েছে? মৃদু কোমল কণ্ঠস্বরে শক্তির ঝলক ঠিকই টের পাওয়া যায়।

ল্যাংডন দ্রুত এগিয়ে এসে বন্ধুকে আন্তরিক আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে। ইয়েলের নীল অভিজাত রক্ত ক্রিমসন ক্যাম্পাসে ভোরের আগে কি মনে করে?

শত্রু ব্যুহের অভ্যন্তরে গোপন অভিযান, সলোমন হেসে বলে। সে ল্যাংডনের সুগঠিত কোমড়ের দিকে ইঙ্গিতে দেখায়। সাতারে কাজ হচ্ছে দেখা যায়। তোমার স্বাস্থ্য অনেক ভাল হয়েছে।

সবকিছুই কেবল তোমাকে মনে করিয়ে দিতে যে তোমার বয়স হচ্ছে, ল্যাংডন পাল্টা খোঁচা দিয়ে বলে। পিটার তোমাকে দেখে সত্যিই খুশী হয়েছি। কি খবর বল?

ব্যবসার কাজে এদিকে এসেছিলাম, ফাঁকা ক্লাশের দিকে তাকিয়ে সে উত্তর দেয়। রবার্ট এভাবে জানান না দিয়ে আসবার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত, কিন্তু আমার হাতে সময় বেশি নেই। আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইতে এসেছি…ব্যক্তিগতভাবে। একটা কথা দিতে হবে।

সেটাই প্রথম। ল্যাংডন অবাক হয়েছিল তার মত মামুলি কলেজের শিক্ষক যে লোকটার সবকিছু আছে তার জন্য কি করতে পারে? তুমি যা বলবে, যে লোকটা তাকে এতকিছু দিয়েছে তার জন্য কিছু করতে পারার সুযোগ পেয়ে সে কৃতজ্ঞ বোধ করে বিশেষ করে পিটারের সৌভাগ্যের সাথে যখন এত বিষাদময়। ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে, সে বলে।

সলোমন তার কণ্ঠস্বর নীচু করে। আমি আশা করছিলাম তুমি আমার হয়ে একটা জিনিষের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।

ল্যাংডন চোখ পাকায়। আশা করি তুমি হারকিউলিসকে আমার কাছে গছাতে চাইছে না। ল্যাংডন একবার পিটার কাজের জন্য বাইরে গেলে তার। দেড়শ পাউণ্ডের ভীম ম্যাস্টিফের দেখভাল করতে রাজি হয়েছিল। ল্যাংডনের কাছে থাকার সময়ে বেচারার বাড়িতে তার রেখে আসা চামড়ার চিবানর খেলনার কথা মনে করে মন খারাপ হলে সে ল্যাংডনের স্টাডিতে একটা বিকল্প খুঁজে বের করেছিল- ষোল শতকের হস্তলিখিত আর অলঙ্কৃত চামড়া দিয়ে বাঁধান বাইবেল। ব্যাটা নচ্ছাড় তাতেও সন্তুষ্ট বলে মনে হয়নি।

আমি জানি। আমি এখনও ওটার আরেকটা কপি খুঁজছি, অপ্রতিভ হেসে পিটার বলে।

বাদ দাও। আমি খুশীই হয়েছি প্রভুর মহিমা হারকিউলিস পর্যন্ত বুঝেছে দেখে।

সলোমনও হাসে কিন্তু তাকে অন্যমনস্ক দেখায়। রবার্ট আমি যে জন্য এত সকালে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি সেটা হল আমি চাই আমার কাছে অসম্ভব মূল্যবান এমন কিছু একটার উপরে তুমি খেয়াল রাখবে। আমি বহুদিন আগে উত্তরাধিকারসূত্রে সেটা পেয়েছি, কিন্তু আজকাল আমার অফিসে বা বাসায় কোথাও সেটা রেখে শান্তি পাচ্ছি না।

ল্যাংডন সাথে সাথে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। পিটার সলোমনের কাছে দারুণ মূল্যবান কোন কিছু মানে রাজার খাজনা খালি হয়ে যাবার মত বিষয়। সেফ ডিপোজিট বক্সে রাখলেই ল্যাঠা চুকে যায়? আমেরিকার অর্ধেক ব্যাংকেই তোমার পরিবারের শেয়ার রয়েছে, না?

ব্যাংকের কর্মচারী আর লিখিত থাকবে তাহলে বিষয়টা। আমি একজন বিশ্বস্ত বন্ধু খুঁজছি। আর আমি জানি তুমি গোপনীয়তা রক্ষা করতে জান। সে পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে সেটা ল্যাংডনের দিকে এগিয়ে দেয়।

ঘটনার নাটকীয় দেখে ল্যাংডন আরো কিছু চিত্তাকর্ষক বিষয় আশা করেছিল। প্যাকেটটা একটা ছোট বর্গাকার বাক্স, ধুসর হয়ে আসা বাদামী কাগজে মোড়ান, প্রায় তিন ইঞ্চি হবে, আর সুতলি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। প্যাকেটটার আঁকৃতি আর ওজন দেখে মনে হয় ভেতরে ধাতব কিছু অথবা পাথর রয়েছে। এটা কি? ল্যাংডন বাক্সটা হাতে নিয়ে ঘুরাতে দেখে সুতার বাঁধনটা মোম দিয়ে সিল করা, অনেকটা প্রাচীন অধ্যাদেশের মত। সিলটা একটা দুই মাথা বিশিষ্ট ফিনিক্সের যার বুকে ৩৩ সংখ্যাটা খোদাই করা- ফ্রিম্যাসনারীর সর্বোচ্চ ডিগ্রীর সনাতন প্রতীক।

সত্যি, পিটার, ল্যাংডন বলে, ধীরে ধীরে কান পর্যন্ত প্রসারিত একটা হাসি তার মুখে ফুটে উঠে। তুমি ম্যাসনিক লজের যজ্ঞের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাস্টার, পোপ নও। হাতের আংটি দিয়ে প্যাকেট সীল করা শুরু করেছো?

সলোমন তার হাতের আংটির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসে। রবার্ট, প্যাকেটটা আমি সীল করিনি। আমার গ্রেট-গ্রাণ্ডফাদার করেছে তাও প্রায় শতবর্ষ পূর্বে।

ল্যাংডন দ্রুত মাথা তুলে তাকায়। কি?

সলোমন তার আংটিটা দেখায়। এই ম্যাসনিক আংটিটা তার। এরপরে এটা পেয়েছিল আমার ঠাকুরদা, তারপরে আমার বাবা…শেষ পর্যন্ত এটা আমার হাতে এসেছে।

ল্যাংডন প্যাকেটটা তুলে ধরে। তোমার গ্রেট-গ্রাণ্ডফাদার প্রায় শতবর্ষ পূর্বে এটা সীল করেছে এবং তারপরে আর কেউ এটা খুলেনি?

ঠিক বলেছো।

কিন্তু…কেন?

সলোমন হাসে। কারণ সময় হয়নি।

ল্যাংডন তাকিয়ে থাকে। কিসের জন্য সময়?

রবার্ট আমি জানি আমার কথা তোমার কাছে অদ্ভুত মনে হবে, কিন্তু যতকম জানবে ততই তোমার জন্য মঙ্গল। প্যাকেটটা কেবল নিরাপদ স্থানে রেখে দাও আর কাউকে বলোনা যে আমি এটা তোমাকে দিয়েছি।

ল্যাংডন তার গুরুর চোখে কৌতুকের আভাস খুঁজতে চেষ্টা করে। নাটকীয়তার প্রতি একটা দূর্বলতা আছে সলোমনের এবং ল্যাংডন ভাবে সে কি কোন নাটক করছে। পিটার তুমি নিশ্চিত যে এটা কোন চালাকি না যাতে আমি মনে করি যে কোন ধরনের প্রাচীন ম্যাসনিক রহস্যের রক্ষক আমাকে করা হয়েছে যাতে আমি কৌতূহলী হয়ে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেই?

ম্যাসনরা কখনও কাউকে ভর্তি করেনা, তুমি ভাল করেই জান। আর তাছাড়া তুমি আমাকে আগেই বলেছে যে তুমি যোগদিতে ইচ্ছুক না।

কথাটা সত্যি। ম্যাসনিক দর্শন আর সিম্বলিজমের প্রতি তার যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে কিন্তু তারপরেও সে দীক্ষা না নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; সঙ্রে গোপনীয়তা রক্ষার শপথ তাকে ছাত্রদের সাথে ফ্রিম্যাসনারী নিয়ে আলাপ করতে বাধা দেবে। ঠিক একই কারণে সক্রেটিস ইসিনিয়ান মিস্ট্রিরীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

ল্যাংডনের এখন যখন সেই রহস্যময় ছোট বাক্সটা আর তার খুদে ম্যাসনিক সীলের কথা মনে পড়ে, তখন তার এটাও মনে পড়ে সে মোক্ষম প্রশ্নটা জিজ্ঞেস

করে পারেনি। তোমার কোন ম্যাসনিক ভাইয়ের কাছে গচ্ছিত রাখলে ভাল হত না?

আমার কেবল এটাই বলার আছে যে আমার কেন জানি মনে হয়েছে ব্রাদারহুডের বাইরে এটা বেশি সুরক্ষিত থাকবে। আর একটা কথা বাক্সটার আঁকার যেন তোমাকে কখনও বোকা না বানায়। আমার বাবা আমাকে যা বলেছে তা যদি ঠিক হয়ে থাকে তবে অসম্ভব শক্তিশালী ক্ষমতা এটা ধারন করছে। সে চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। কোন রকমের তালিসমান হবে।

সে কি তালিসমানের কথা বললো? সংজ্ঞা অনুযায়ী তালিসমান এক ধরণের বস্তু যার যাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। সনাতন ধারণা অনুসারে তালিসমান ব্যবহৃত হয় ভাগ্য ফেরাতে, অশুভ আত্মার প্রভাব নষ্ট করতে বা প্রাচীন কৃত্যানুষ্ঠানের উপাচার হিসাবে। পিটার তুমি জান মধা যুগে তালিসমানের চল উঠে গিয়েছে, ঠিক?

পিটার ল্যাংডনের কাঁধে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করে। আমি জানি ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে। আমি তোমাকে অনেকদিন ধরে চিনি এবং একাডেমিক হিসাবে তোমার সংশয়ী মনোভাব তোমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আর একই সাথে সেটা তোমার সবচেয়ে বড় দূর্বলতাও বটে। আমি তোমাকে এতটা অন্তত চিনি যাতে আমি জানি তুমি সেই কাতারের লোকদের ভিতরে পড় না যাদের আমি বিশ্বাস …কেবল আস্থা রাখতে পারি। আমি তাই তোমাকে বলছি আস্থা রাখতে যখন আমি বলেছি এটা শক্তিশালী তালিসমান। আমাকে বলা হয়েছে এটা যার কাছে থাকবে সে বিশৃঙ্খলতার মাঝে শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষমতা লাভ করবে।

ল্যাংডন কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলার ধারণা ম্যাসনদের অন্যতম মহান স্বত:সিদ্ধ। ordo ab cha০. যাই হোক, তারপরেও একটা তালিসমান কোন শক্তির বিকিরন ঘটাবে ধারণাটাই অবাস্তব দাবী, বিশৃঙ্খলার মাঝে শৃঙ্খলার ধারণা না হয় বাদই দিলাম।

এই তালিসমান, সলোমন বলতে থাকে, ভুল হাতে পরলে বিপজ্জনক হতে পারে আর দুর্ভাগ্যবশত আমার বিশ্বাস করার সঙ্গত কারণ আছে শক্তিশালী লোকেরা এটা আমার কাছ থেকে চুরি করতে চায়। তার চোখের দৃষ্টিতে এমন একাগ্রতা ল্যাংডন আগে কখনও দেখেনি। আমি চাই তুমি আমার জন্য আপাতত এটা নিরাপদে রাখবে। তুমি করতে পারবে এটা?

সেই রাতে, ল্যাংডন তার কিচেনের টেবিলে প্যাকেজটা রেখে একাকী বসে ছিল এবং কল্পনা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল ভিতরে কি থাকতে পারে। শেষে, সে ব্যাপারটাকে পিটারের আরেকটা খামখেয়ালীপনা বলে ধরে নিয়ে তার লাইব্রেরীর দেয়াল সেফে সেটা তুলে রাখে, একটা সময়ে সে বাক্সটার কথা ভুলেই যায়।

এসবই…আজ সকালের আগ পর্যন্ত।

দক্ষিণী বাচনভঙ্গির সেই লোকটার ফোন কল।

ওহ প্রফেসর আমি প্রায় ভুলে বসেছিলাম! ডি.সিতে তার ভ্রমণের বিষয়ে খুটিনাটি তথ্য জানাবার পরে সহকারী বলেছিল। আরেকটা বিষয়ে, মি. সলোমন অনুরোধ জানিয়েছেন।

হ্যাঁ? ল্যাংডন বলে, তার মনে ততক্ষণে আশু লেকচারের খসড়া তৈরী শুরু হয়ে গেছে।

মি সলোমন আপনার জন্য একটা নোট রেখেছেন। লোকটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে নোটটা পড়তে শুরু করে যেন পিটারের লেখনভঙ্গি সে তাকে পৌঁছে দিতে চায়। অনুগ্রহ করে রবার্টকে বহু বছর আগে আমি তাকে যে ছোট বাক্সটা রাখতে দিয়েছিলাম…সেটা আনতে বলবে। লোকটা থামে। আপনি কি এর মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পেরেছেন?

ল্যাংডন এতগুলো বছর তার সেফে পড়ে থাকা ছোট বাক্সটার কথা মনে করে চমকে উঠে। আসলে, বুঝেছি। আমি বুঝেছি পিটার কি বলতে চেয়েছে।

আর আপনি সেটা নিয়ে আসবেন?

অবশ্যই। পিটারকে বলো আমি নিয়ে আসব।

চমৎকার। সহকারীকে ভারমুক্ত মনে হয়। আজ রাতের বক্তৃতা যেন আপনি উপভোগ করেন। খোদা ভরসা।

বাড়ি থেকে বের হবার আগে ল্যাংডন মনে করে সেফ থেকে বাক্সটা বের করে তার কাঁধের ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছিল।

আর এখন সে ইউ.এস ক্যাপিটলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কেবল একটা বিষয়ে সে নিশ্চিত বোধ করছে। ল্যাংডন তাকে কিভাবে হতাশ করেছে সেটা জানতে পারলে পিটার সলোমন আতঙ্কিত হয়ে উঠবে।

.

২৫ অধ্যায়

হায় ঈশ্বর, ক্যাথরিনই ঠিক। বরাবরের মত।

ত্রিস ডান তার সামনের জমা দেয়ালের দিকে অনুসন্ধানী-মাকড়সার ফলাফল ভেসে উঠতে দেখলে সেদিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার মনে সন্দেহ ছিল সার্চে আদৌ কোন ফলাফল পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে, কিন্তু বস্তুত পক্ষে তার সামনে এখন সে এখন ডজনখানেক হিট দেখতে পায়। আরও আসছে।

একটা এন্ট্রি বেশ কার্যকরী বলে প্রতিয়মান হয়।

ত্রিস ঘুরে লাইব্রেরীর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে। ক্যাথরিন? তোমার এসে এটা একবার দেখা উচিত?

কয়েক বছর হল ত্রিস এধরণের সার্চ-স্পাইডার পরিচালনা করছে এবং আজরাতের ফলাফল তাকে চমকে দেয়। কয়েক বছর আগে, এই সার্চ নিষ্ফলা প্রতিপন্ন হত। এখন, অবশ্য, সার্চযোগ্য ডিজিটাল মেটেরিয়াল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সেখানে যে কেউ আক্ষরিক অর্থেই যেকোন কিছু খুঁজে পেতে পারে। অবিশ্বাস্য হল আজকের কি-ওয়ার্ডের একটা সে আগে কখনও শোনেনি…এবং সার্চে সেটাও পাওয়া গেছে।

ক্যাথরিন কন্ট্রোল-রুমের দরজা দিয়ে ঝড়ের বেগে ভিতরে প্রবেশ করে। তুমি কি খুঁজে পেয়েছো?

প্রার্থীদের একটা দল। ত্রিস তার সামনের প্লাজমা দেয়ালের দিকে ইঙ্গিত করে। এইসব ডকুমেন্টে তোমার কি-ওয়ার্ড রয়েছে ভার্বাটিম।

ক্যাথরিন কানের পেছনে চুল গুঁজে রাখে এবং তালিকা দেখতে শুরু করে।

তুমি বেশি উত্তেজিত হবার আগে, ত্রিস যোগ করে, আমি বলে দেই তুমি যা খুঁজছো এসব ডকুমেন্ট সেই কাতারে পড়ে না। আমরা কৃষ্ণ গহ্বর যাকে বলি এগুলো অনেকটা সেই জিনিস। ফাঁইলের সাইজ দেখলেই বুঝবে। অবিশ্বাস্য ধরণের বিশাল। এগুলো অনেকটা কোটি কোটি ই-মেইল, অসংক্ষেপিত বিশ্বকোষ সমগ্র, বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা গ্লোবাল ম্যাসেজ বোর্ড আর এমন অনেক কিছুর কমপ্রেসড আঁকাইভ। তাদের আঁকৃতি আর বিষয় বৈচিত্রের কারণে, এসব ফাঁইলে এত বেশি সম্ভাব্য কি-ওয়ার্ড রয়েছে যে কোন সার্চ ইঞ্জিনের সংস্পর্শে আসলেই তারা ঢুকে পড়ে।

ক্যাথরিন তালিকার প্রথম দিকে থাকা একটা এন্ট্রি নির্দেশ করে। এটা কেমন মনে হয়?

ত্রিস হাসে। ক্যাথরিন তার চেয়ে একধাপ এগিয়ে, তালিকায় থাকা ছোট ফাইল সাইজের একমাত্র ফাইলটা সে সনাক্ত করেছে। চোখও বাবা। আসলে এটাই এখন পর্যন্ত একমাত্র বাবাজি। বস্তুত পক্ষে ঐ ফাইলটা এত ছোট যে এক পাতা কি সামান্য বেশি হবে।

খোলো ওটা। ক্যাথরিনের কণ্ঠে ব্যগ্রতা ফুটে উঠে।

ত্রিস কল্পনাও করতে পারে না এক পাতার একটা ডকুমেন্টে ক্যাথরিনের সব অদ্ভুত সার্চ স্ট্রিও রয়েছে। তাছাড়া, সে ক্লিক করার পরে ডকুমেন্ট খুলতে, মূল শব্দাংশগুলো…স্ফটিকের মত ঝকঝকে এবং সহজেই চোখে পড়ে।

প্লাজমা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ক্যাথরিন পায়চারি করে। এই ডকুমেন্টা…সম্পাদনা করা হয়েছে।

ত্রিস সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ে। ডিজিটাইজড টেক্সটের দুনিয়ায় স্বাগতম।

ডিজিটাইজড ডকুমেন্ট অফার করার সময়ে স্বয়ংক্রিয় সম্পাদনা একটা স্ট্যাণ্ডার্ড গ্র্যাকটিসে পরিণত হয়েছে। সার্ভারের ভিতরে সম্পাদনা একটা পদ্ধতি যেখানে ইউজারকে সার্ভার পুরো টেক্সট সার্চ করতে দেয় কিন্তু তারপরে কেবল সামান্য অংশ উন্মোচিত করে অনেকটা উসকে দেবার মত- ঐ টেক্সটে কেবল অনুরোধকৃত কি-ওয়ার্ডগুলো দেখা যায়। টেক্সটের বেশিরভাগ অংশ এড়িয়ে গিয়ে সাভার কপিরাইটের বাধা এড়িয়ে যায় এবং ইউজারকে একটা কৌতূহলকর সংবাদ পাঠায়: তুমি যা খুঁজছ সেই তথ্য আমার কাছে আছে, কিন্তু তুমি যদি বাকীটা চাও তবে সেটা তোমাকে আমার কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।

দেখতেই পাচ্ছ, কেটে ছাড়খার করে দেয়া টেক্সটের মাঝে স্ক্রল করার ফাঁকে, ত্রিস বলে, ডকুমেন্টটায় তোমার সব কি-ওয়ার্ড রয়েছে।

সম্পাদনার দিকে ক্যাথরিন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

ত্রিস এক মিনিট অপেক্ষা করে তারপরে পাতার শুরুতে স্ক্রল করে আসে। ক্যাথরিনের প্রতিটা মূল শব্দাংশ বড় হরফে নীচে দাগ দেয়া এবং সাথে সামান্য আগ্রহ জাগানিয়া বাক্যাংশ অনুরোধকৃত শব্দাংশের দুপাশের শব্দ দুটো কেবল দেখা যায়।

———————–

———————–

—–ভূগর্ভস্থ গোপন স্থান যেখানে

———————–

———————–

———————–

—- ওয়াশিংটন ডি.সির কোথাও, যার সমন্বয়কারী

———————–

———-একটা প্রাচীন সিংহদ্বার খুঁজে পাওয়া যা

———————–

———————–

———————–

——সতর্ক করে দেয় পিরামিডে বিপজ্জনক—

———————–

———————–

এই খোদাই করা সিম্বলিয়নের পাঠোদ্ধার—-

———————–

———————–

———————–

ত্রিস বুঝতে পারে না এই ডেকুমেন্টটা কি বোঝাতে চাইছে। আর ঘোড়ার ডিমের সিম্বলন মানে কি?

ক্যাথরিন আগ্রহের সাথে স্ক্রিনের কাছে এগিয়ে আসে। এই ডকুমেন্টটা কোথা থেকে এসেছে? কে লিখেছে এটা?

ত্রিস ততক্ষণে সেটা বের করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমাকে একটু সময় দাও। আমি দাবড়ে সোর্স বের করা যায় কিনা দেখছি?

আমি জানতে চাই কে লিখেছে এটা, ক্যাথরিন নিজের কথা পুনরাবৃত্তি করে, তার কণ্ঠস্বরে আবেগ স্পষ্ট বোঝা যায়। আমি বাকীটা দেখতে চাই।

আমি চেষ্টা করছি, ত্রিস বলে, যদিও ক্যাথরিনের কণ্ঠের তীক্ষ্ণতায় সে রীতিমত চমকে উঠেছে।

অবাক করার মত ব্যাপার হল, ফাইলটার লোকেশন চিরাচরিত ওয়েব ঠিকানা প্রকাশ না করে কেবল সংখ্যাবাচক ইন্টারনেট প্রটোকল ঠিকানা দেখায়। আমি আইপি আনমাস্ক করতে পারব না, ত্রিস বলে। ডোমেইন নাম আসছে না। দাঁড়াও। সে তার টার্মিনাল উইনডে বড় করে। আমি দেখি ট্ৰেসরুট রান করে দেখি।

ত্রিস পরপর কমাণ্ড টাইপ করে যায় তার কন্ট্রোল রুমের মেশিন আর এই ডকুমেন্টটা যে মেশিনে স্টোর করা আছে তার ভিতরে বিদ্যমান সবগুলো হপস পিঙ করতে।

ট্রেসিং হচ্ছে, কমাণ্ড এক্সিকিউটের কি চাপ দিয়ে সে বলে।

ট্রেসাররুটস অসম্ভব দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং প্রায় সাথে সাথে প্রাজমা ওয়ালে নেটওয়ার্ক ডিভাইসের একটা লম্বা তালিকা ভেসে উঠে। ত্রিস স্ক্যান ডাইন করে…আরও নীচে…রাউটার আর সুইচের পাথের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যায় যা তার মেশিনকে সংযোগ করেছে…

কি হল ব্যাপারটা? ডকুমেন্টের সাভারে পৌঁছাবার আগেই তার ট্রেসার থেমে যায়। কোন অজানা কারণে, তার পিঙ, কোন একটা নেটওয়ার্কে হিট করে বাউন্স ব্যাক করার বদলে সেটা তাকে বেমালুম হজম করে ফেলে। মনে হচ্ছে আমার ট্রেসরুট আটকে দেয়া হয়েছে, ত্রিস বলে। এটা কি আদৌ সম্ভব?

আবার রান করে দেখো?

ত্রিস আরেকটা ট্রেসাররুট শুরু করে এবং এবারও একই ফলাফল আসে। নোউপ। কানা গলি। মনে হচ্ছে ডকুমেন্টটা এমন একটা সার্ভারে রয়েছে যেটাকে ট্রেস করা সম্ভব না। কানা গলির আগের শেষ কয়েকটা হপসের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি, অবশ্য তোমাকে বলতে পারি, যে এটা ডি.সির আশেপাশে কোথাও অবস্থিত।

তুমি ঠাট্টা করছে।

অবাক হবার কিছু নেই, ত্রিস বলে। এইসব স্পাইডার ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে বৃত্তাকারে ছড়ায়, যার মানে প্রথম ফলগুলো সবসময়েই স্থানীয় হবে। তাছাড়া, তোমার একটা সার্চ স্ট্রিঙ ছিল ওয়াশিংটন ডিসি।

এবার একটা কে হতে পারে সার্চ দিলে কেমন হয়?ক্যাথরিন সাথে সাথে বলে উঠে। তাহলে কি আমরা এই ডোমেইনটা কার সেটা জানতে পারব না?

একটু নিঃসঙ্গ, তবে আইডিয়া খারাপ না। ত্রিস নেভিগেট করে হু ইজ ডাটাবেসে আসে এবং আইপির জন্য সার্চ রান করায়, আশা করে আসল ডোমেইন নামের সাথে দুর্বোধ্য সংখ্যা মিলে যাবে। তার হতাশা ছাপিয়ে এবার কৌতূহল বাড়তে শুরু করে। এই ডকুমেন্টটা কার কাছে আছে? হু ইজএর ফলাফল দ্রুত ভেসে উঠে, কোন ম্যাচ দেখায় না এবং ক্রিস হাত উপরে তুলে পরাজয় মেনে নেয়। ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে এই আইপি ঠিকানার কোন অস্তি ত্বই নেই। আমি এর সম্পর্কে কোন তথ্য বের করতে পারলাম না।

আইপিটার অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আছে। সেখানে অবস্থিত একটা ডকুমেন্ট আমরা এখনই সার্চ করেছি?

সত্যি। আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে যার কাছে এই ডকুমেন্টটা আছে সে নিজের পরিচয় কাউকে জানাতে রাজি নয়। আমি বুঝতে পারছি না তোমাকে কি বলা উচিত। সিস্টেম ট্রেস করাতে আমি খুব একটা পারদর্শী না এবং তুমি যদি হ্যাকিং-এ দক্ষ কাউকে ডেকে না আন, আমার দৌড় এ পর্যন্তই।

তুমি এমন কাউকে চেনো?

ত্রিস ঘাড় ঘুড়িয়ে তার বসের দিকে তাকায়। ক্যাথরিন আমি ঠাট্টা করছিলাম। কাজটা খুব একটা ভাল হবে না।

কিন্তু কাজটা করা সম্ভব? সে তার ঘড়ি দেখে।

উম, হ্যাঁ…সবসময়ে। টেকনিক্যালি কাজটা খুব সোজা।

তুমি কাকে চেনো?

হ্যাকারস? ত্রিস নার্ভাসভাবে হাসে। ধর আমার পুরানো কাজের অর্ধেক লোক।

বিশ্বস্ত কেউ আছে?

সে কি সিরিয়াস? ত্রিস দেখতে পায় ক্যাথরিন ডেড সিরিয়াস। বেশ, হ্যাঁ, সে দ্রুত বলে। আমি একজনকে চিনি যাকে আমরা ডাকতে পারি। সে আমাদের সিস্টেম সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ছিল- ভয়াবহ কম্পিউটার গিক। সে আমার সাথে ডেট করতে আগ্রহী ছিল, ব্যাপারটা বিরক্তিকর ছিল, কিন্তু ভাল লোক আর আমি তাকে বিশ্বাস করি। সে ফ্রিলান্স কাজও করে।

সে কি ব্যাপারটা গোপন রাখতে পারবে?

সে একজন হ্যাকার। অবশ্যই সে গোপনীয়তা বজায় রাখবে। সেটাই তার কাজ। কিন্তু একটা কথা হাজার ডলারের নীচে সে তার একটা আঙ্গুলও নাড়াবে না–

ডাক তাকে। টাকা দ্বিগুন করে বল দ্রুত কাজটা করতে হবে।

ক্রিস বুঝতে পারে না কোন বিষয়টা তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে-ক্যাথরিন সলোমনকে হ্যাকারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া…নাকি লোকটা ডাকতে যে আজও বিশ্বাস করতে পারে না লালচুলের বেঁটে, মোটা মেটাসিস্টেম এ্যানালিস্ট তার রোমান্টিক অভিপ্রায় নাকচ করতে পারে। তুমি নিশ্চিত এ বিষয়ে?

লাইব্রেরীর ফোনটা ব্যবহার কর, ক্যাথরিন বলে। ওটার নাম্বার ব্লকড। আর অবশ্যই আমার নাম ব্যবহার করবে না।

ঠিক আছে। সে দরজা লক্ষ্য করে হাঁটা দেয় কিন্তু ক্যাথরিনের আইফোন গুন করে উঠতে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাগ্য সহায় হলে, ইনকামিং টেক্সট ম্যাসেজের তথ্য হয়ত ত্রিসকে বিরক্তিকর কাজ করা থেকে রেহাই দেবে। ক্যাথরিন তার ল্যাব কোটের পকেট হাতড়ে আইফোন বের করে স্ক্রিনে চোখ রাখা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে।

আইফোনের স্ক্রিনের নামটা দেখে ক্যাথরিন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
অবশেষে।

পিটার সলোমন

আমার ভাইয়ের কাছ থেকে একটা টেক্সট ম্যাসেজ, ত্রিশের দিকে তাকিয়ে সে বলে।

ত্রিসকে আশাবাদী দেখায়। হ্যাকারকে ডাকবার আগে…আমরা হয়ত তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারব?

ক্যাথরিন জমা দেয়ালে ভেসে থাকা সম্পাদিত ডকুমেন্টটার দিকে তাকায় এবং উঅ্যাবাড্ডনের কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। ডি.সিতে যেটা লুকান রয়েছে বলে তোমার ভাই বিশ্বাস করে…সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব। কি বিশ্বাস করা উচিত ক্যাথরিনের সে বোধটাই গুলিয়ে গেছে এবং এই ডকুমেন্টটায় সেই সুদূর প্রসারী ধারণা সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেছে যার বিষয়ে তার ভাই আপাত দৃষ্টিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

ক্যাথরিন তার মাথা নাড়ে। আমি জানতে চাই কে এটা লিখেছে এবং সেটা কোথায় অবস্থিত। ফোন কর।

ভ্রু কুচকে ত্রিস দরজার দিকে হাঁটা দেয়।

তার ভাই ড. অ্যাবাজ্জনকে যা বলেছে তার রহস্য এই ডকুমেন্টটা ব্যাখ্যা করতে পারে বা না পারে, আজ অন্তত একটা রহস্যের সমাধান হয়েছে। তার ভাই অবশেষে ক্যাথরিনের দেয়া আইফোনের টেক্সট-ম্যাসেজিং ফিচার ব্যবহার করতে শিখেছে।

আর মিডিয়াকে খবর দাও, ত্রিসকে পেছন থেকে ক্যাথরিন বলে। মহান পিটার সলোমন এইমাত্র তার প্রথম টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।

এসএমএসসির উল্টোদিকে একটা স্ট্রিপ-মল পার্কিং লটে, মাল’আখ তার লিমোর পাশে দাঁড়িয়ে, হাতপায়ের জড়তা কাটায় আর ফোন কলটার জন্য। অপেক্ষা করে যা সে জানে আসবেই। বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়েছে এবং মেঘের আড়াল থেকে শীতের চাঁদ উঁকি দেয়। এই একই চাঁদ তিন মাস আগে তার দীক্ষার। সময়ে দি হাউজ অব দি টেম্পলের কাঁচের শার্সির ভিতর দিয়ে মাল’আখকে আলোকিত করেছিল।

আজ রাতে পৃথিবী অন্যরকম দেখাচ্ছে।

সে যখন অপেক্ষা করছে তখন তার পাকস্থলী আবার প্রতিবাদ জানায়। তার দুই-দিনব্যাপী উপপিস, যদিও অস্বস্তিকর, তার প্রস্তুতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন রীতিই এমন। সময় হয়ে এসেছে সব ধরণের শারীরিক অস্বস্তি গুরুত্ব হারাবে।

রাতের শীতল বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে মাল’আখ দেখে অনেকটা বক্রাঘাতপূর্বক ভাগ্য তাকে সরাসরি একটা ক্ষুদ্র চার্চের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে, সে মুচকি হাসে। এখানে স্টার্লিং ডেন্টাল আর একটা মিনিমার্টের মাঝে একটা গির্জা অবস্থিত।

লর্ডস হাউস অব গ্লোরী।

মাল’আখ জানালার দিকে তাকায়, যেখানে চার্চের মতবাদগত বক্তব্য খানিকটা চোখে পড়ে: আমরা বিশ্বাস করি যে পবিত্র সত্তা জেসাস ক্রাইস্টে জন্ম দিয়েছিলেন এবং কুমারী মেরীর গর্ভে তিনি জাত এবং সত্যিকারের মানুষ আর ঈশ্বর উভয়ই ছিলেন।

মাল’আখ হাসে। হ্যাঁ, জেসাস আসলেই দুটোই-মানুষ এবং ঈশ্বর- কিন্তু কুমারী মাতার গর্ভে জন্ম দেবত্ব লাভের পূর্বশর্ত নয়। ব্যাপারটা এভাবে ঘটে না।

রাতের বাতাসের স্তব্ধতা একটা সেলফোনের বেজে উঠার শব্দে খানখান হয়ে, তার নাড়ীর গতি বাড়িয়ে দেয়। যে ফোনটা এখন বাজছে সেটা মাল আখের নিজের গতকাল কেনা একটা সস্তা ব্যবহারের পরে ফেলে দেয়ার মত একটা সেলফোন। কলার আইড়ি দেখে বোঝা যায় এই ফোনটার জন্যই সে অপেক্ষা করছিল।

একটা স্থানীয় কল, সিলভার হিল রোডের উল্টোদিকে গাছের মাথার উপরে চাঁদের মৃদু আলোয় উঁচুনীচু ছাদের রেখার দিকে তাকিয়ে, মাল’আখ ভাবে। বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনীর সাহায্যে টুসকি দিয়ে মাল’আখ ফোনটা খুলে।

ড. অ্যাবাড্ডন বলছি, গলার কণ্ঠ গাঢ় করে সে বলে।

ক্যাথরিন বলছি, ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠ ভেসে আসে। অবশেষে ভাইয়ের কাছ থেকে ম্যাসেজ পেয়েছি।

ওহ, যাক চিন্তা মুক্ত হলাম। কেমন আছে সে?

এই মুহূর্তে সে আমার ল্যাবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে, ক্যাথরিন জানায়। বস্তুত পক্ষে সে আপনাকেও আসবার পরামর্শ দিয়েছে।

আমি দুঃখিত, মাল’আখ ইতস্তত করার ভান করে। আপনার, ল্যাবে?

সে নিশ্চয়ই আপনাকে ভীষণ বিশ্বাস করে। সে আগে কখনও কাউকে এখানে আসবার আমন্ত্রণ জানায়নি।

আমার মনে হয় সে ভেবেছে একবার আসলে আমাদের আলোচনায় বোধহয় সাহায্য হবে, কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা অনাহূত প্রবেশের মত মনে হচ্ছে।

আমার ভাই যদি বলে তোমাকে স্বাগতম, তাইলে তোমাকে স্বাগতম। আর তাছাড়া সে বলেছে তোমাদের বলার মত অনেক কথা জমা হয়েছে আর কি হচ্ছে সেটার মূল পর্যন্ত জানতে আমার ভালই লাগবে।

বেশ তাহলে কি আর করা যাবে। আপনাদের এই ল্যাবটা ঠিক কোথায় অবস্থিত?

স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম সাপোর্ট সেন্টারে। আপনি জানেন সেটা কোথায়?

না, কমপ্লেক্সটার পার্কিং লটের দিকে তাকিয়ে থেকে, মাল’আখ অবলীলাক্রমে বলে। আমি আসলে এই মুহূর্তে গাড়িতে আছি আর এটাতে একটা গাইডেন্স সিস্টেম রয়েছে। ঠিকানাটা কি?

বিয়াল্লিশ-দুই- দশ সিলভার হিল রোড।

ঠিক আছে, একটু অপেক্ষা করেন। আমি টাইপ করে নেই। মাল’আখ দশ সেকেণ্ড অপেক্ষা করে তারপরে বলে, আহ সুসংবাদ, মনে হচ্ছে আমি যতটা মনে করেছিলাম তারচেয়ে কাছেই আছি। জিপিএস বলছে আমি দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছি।

দারুণ। আমি সিকিউরিটিকে বলছি যে আপনি আসছেন।

ধন্যবাদ।

শীঘ্রই আপনার সাথে দেখা হচ্ছে বলে আশা করছি।

সস্তা ফোনটা পকেটস্থ করে মাল’আখ এসএমএসসির দিকে তাকায়। আমি কি হ্যাঁংলার মত আমন্ত্রণ নিলাম? হেসে উঠে, সে পিটার সলোমনের আইফোনটা বের করে এবং কয়েক মিনিট আগে ক্যাথরিনকে পাঠান মেসেজটা আবার দেখে।

তোমার মেসেজ পেয়েছি। সব ঠিক আছে। সারাদিন ব্যাস্ত ছিলাম। উঅ্যাবাক্সনের সাথে দেখা করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তাকে আগে থেকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে দুঃখিত। লম্বা ঘটনা। আমি ম্যাবে আসছি। যদি এমন হয় তো উঃস্রাব্যজ্ঞনকে আমাদের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ কর। আমি তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি এবং তোমাদের দুজনের সাথে অনেক কথা আছে।- পিটার।

বিস্মিত হবার কিছু নেই, ক্যাথরিনের কাছ থেকে একটা ইনকামিং মেসেজ পিটারের আইফোনে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়।

পিটার মেসেজ করতে শিখেছে বলে শুভেচ্ছা রইল! তুমি ভাল আছ শুনে স্বস্তি পেলাম। ড. অ্যাবার সাথে কথা হয়েছে আর সে ল্যাবে আসছে। শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা হবে বলে আশা করছি।–ক্যাথরিন

সলোমনের আইফোনটা মুঠোয় নিয়ে মাল’আখ তার লিমোজিনের পাশে উবু হয়ে বসে পেভমেন্ট আর সামনের চাকার মাঝে সেটাকে নিখুঁত করে স্থাপন করে। ফোনটা মাল’আখকের ভালই কাজে এসেছে…কিন্তু এখন সময় হয়েছে বেমালুম গায়েব হবার। সে চালকের আসনে বসে, গাড়িটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় যতক্ষণ না আইফোনটা গুঁড়িয়ে যাবার একটা তীক্ষ্ণ শব্দ নীচ থেকে ভেসে আসে।

মাল’আখ গাড়িটা পুনরায় পার্ক করে এবং দূরের এসএমএসসির আবছা অবয়বের দিকে তাকিয়ে থাকে। দশ মিনিট। প্রায় ত্রিস মিলিয়ন গুপ্তধনে সমৃদ্ধ পিটার সলোমনের বিশাল ওয়্যারহাউজ, কিন্তু মাল’আখ আজ এখানে এসেছে তার ভিতরে কেবল দুটোকে ধ্বংস করতে।

ক্যাথরিন সলোমনের পুরো গবেষণা।

এবং খোদ ক্যাথরিন সলোমনকে।

.

২৬ অধ্যায়

প্রফেসর ল্যাংডন, সাটো বলে। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভূত দেখেছেন। আপনি সুস্থ আছেনতো?

ল্যাংডন তার ডেব্যাগটা কাঁধের উপরে উঁচু করে ধরে এবং তার উপরের ফ্ল্যাপটা খুলে ভেতরে হাত দেয়, যেন এভাবেই সে তার বহন করে আনা বর্গাকার প্যাকেটটা ভালমত লুকিয়ে রাখতে পারবে। সে বুঝতে পারে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমি. ..আমি আসলে পিটারকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ। করছি।

সাটো মাথা কাত করে আড় চোখে তার দিকে তাকায়।

সলোমন বিশ্বাস করে তাকে যে প্যাকেজটা রাখতে দিয়েছিল আজ রাতে সাটোর সংশ্লিষ্টতার সাথে এটা জড়িত থাকতে পারে মনে করেই ল্যাংডনের ভিতরে একটা সতর্কবোধ কাজ করতে শুরু করে। পিটার ল্যাংডনকে সতর্ক করে দিয়েছিল: শক্তিশালী লোকেরা এটা চুরি করতে চায়। ভুল লোকের হাতে পড়লে এটা মারাত্মক দুযোর্গ ডেকে আনবে। ল্যাংডন বুঝতে পারে না একটা তালিসমান রয়েছে এমন একটা ছোট বাক্স সিআইএ কেন কুক্ষিগত করতে চাইবে…বা সেই তালিসমানটাই কি হতে পারে। Ordo ab chao?।

সাটো সামনে এগিয়ে আসে, তার কালো চোখে প্রশ্ন ফুটে উঠেছে। আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা এইমাত্র বুঝতে পেরেছো?

ল্যাংডন টের পায় সে ভেতরে ভেতরে ঘামতে শুরু করেছে। না, ঠিক তা নয়।

তোমার মনে কি ঘুরছে?

আমি কেবল…ল্যাংডন ইতস্তত করে, বুঝতে পারে না তার কি বলা উচিত। তার ব্যাগের ভিতরে থাকা ছোট প্যাকেটটার কথা স্বীকার করার কোন ইচ্ছা তার নেই, এবং সাটো যদি তাকে সিআইএ সদর দপ্তরে নিয়ে যায় তবে পথে নিশ্চিতভাবেই তার ব্যাগে তল্লাশি চালান হবে। আসলে…সে কথা প্রসঙ্গে বলছে এমন কণ্ঠে বলে, পিটারের হাতের উল্কি সম্বন্ধে আমার মাথায় আরেকটা ধারণা এসেছে।

সাটোর অভিব্যক্তি থেকে কিছুই বোঝা যায় না। হ্যাঁ? সে এবার এণ্ডারসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যে এই মাত্র সদ্য এসে পৌঁছান ফরেনসিক দলকে নিয়ে এগিয়ে আসছে।

ল্যাংডন ঢোক গিলে কাটা হাতটার পাশে উবু হয়ে বসে, মনে মনে চিন্তার ঝড় তুলে দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করে এবার নতুন কি গল্প তাদের বলবে। রবার্ট তুমি একজন শিক্ষক প্রত্যুৎপন্নতা কাজে লাগাও! সে সাতটা খুদে প্রতিকের দিকে শেষ বারের মত তাকায়, কোন ধরণের প্রেরণার আশায়।

IIIX885

কিছু না। একেবারে সাদা পাতা।

তার মনে রক্ষিত প্রতাঁকের বিশ্বকোষের স্মৃতির মাঝে ল্যাংডন হাতড়াতে থাকে, সে কেবল একটা উপায়ই খুঁজে পায় বলার মত। বিষয়টা তার প্রথমে একবার মনে হয়েছিল, কিন্তু মনে হয়েছিল কাজ হবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে যে করেই হোক তার সময় কেনা নিয়ে কথা।

বেশ, সে শুরু করে, একজন মিস্বলোজিস্টের কাছে সে সিম্বল বা কোডের পাঠোদ্ধারে ভুল পথে চালিত হচ্ছে সেটা বোঝার প্রথম সংকেত যখন সে কয়েকটা সিম্বলিক ভাষা ব্যবহার করে প্রতাঁকের মর্মোদ্ধার করতে প্রয়াস নেয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমি যখন বলেছিলাম এটা রোমান আর আরবী, সেটা ছিল অনেকটা নভীসের মত বিশ্লেষণ কারণ আমি একের অধিক সিম্বলিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলাম। রোমান আর রুনিকের ক্ষেত্রেই একই কথা খাটে।

সাটো হাত ভাঁজ করে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে যেন বলে, চালিয়ে যাও।

সাধারণত, যোগাযোগ একটা ভাষা ব্যবহার করে করা হয়, একাধিক ভাষা ব্যবহৃত হয় না, আর তাই একজন সিম্বলজিস্টের প্রথম কাজই হল একটা সুষম সিম্ববলিক সিস্টেম খুঁজে বের করা যা পুরো ভাষ্যে আরোপ করা যাবে।

আর তুমি এখন এখানে একটা ভাষা খুঁজে পেয়েছো?

বেশ, হ্যাঁ…এবং না। অ্যাম্বিগ্রামের ঘূর্ণায়মান সমতা সম্পর্কে ল্যাংডনের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে যে কখনও কখনও একাধিক কোণ থেকে সিম্বল তার অর্থ পরিগ্রহ করতে পারে। আর এই ক্ষেত্রে তার মনে হয়েছে সাতটা খুদে প্রতীককে একই ভাষায় আপতিত করার আসলেই একটা উপায়। রয়েছে। আমরা যদি কব্জিটা সামান্য নাড়াই তবে ভাষাটা সঙ্গতিপূর্ন হতে পারে। আতঙ্কিত করার মত বিষয় হল, ল্যাংডন এখন যে কাজটা করতে চলেছে পিটারের বন্দিকর্তা ইতিমধ্যেই প্রাচীন হার্মেটিক পরিভাষায় তার সাথে কথা বলার সময়ে পরামর্শ দিয়েছিল। যতটা উপরে ততটাই নীচে।

পিটারের হাত কাঠের যে ভিত্তিটার উপরে স্থাপিত সেটা স্পর্শ করার সময়ে ল্যাংডন তার ঘাড়ে একটা শিরশিরে অনুভূতি টের পায়। ধীরে ধীরে, সে ভিত্তিটা উল্টো করে ফলে পিটারের খুলে থাকা আঙ্গুলগুলো এখন নীচের দিক নির্দেশ করছে।

তালুর প্রতীকগুলো নিমেষে নিজেদের বদলে ফেলে।

588XIII

এই কোণ থেকে, ল্যাংডন বলে, X-I-I-I একটা অর্থবিশিষ্ট রোমান সংখ্যায় পরিণত হয়েছে- তের। তারচেয়েও বড় কথা, বাকী প্রতীকগুলোকে রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করে পাঠোদ্ধার করা যায়- SBB. ল্যাংডন ভেবেছিল তার পাঠোদ্ধার ভাবলেশহীন কাঁধ ঝাঁকানির জন্ম দেবে, কিন্তু এণ্ডারসনের অভিব্যক্তি সাথে সাথে বদলে যায়।

এসবিবি? চীফ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চায়।

সাটো এবার এণ্ডারসনের দিকে তাকায়। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে ক্যাপিটল ভবনে এটা একটা পরিচিত সংখ্যাবাচক সিস্টেম।

এনডারসনকে ফ্যাকাশে দেখায়। ঠিক তাই।

সাটো ক্রুর হাসি হেসে এণ্ডারসনের উদ্দেশ্যে মাথা নাড়ে। চীফ, আমার সাথে একটু চলেন, আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা আছে।

ডিরেকটর সাটো এনডারসনকে শ্রবণসীমার বাইরে নিয়ে গেলে, ল্যাংডন ভূস্থ লোকের মত একলা দাঁড়িয়ে থাকে। এ কোন মুসিবতের ভিতরে এসে পড়লাম, হচ্ছেটা কি? আর এসবিবি ১৩ এর মানেটাই বা কি?

চীফ এনডারসন ভাবে আজ রাতটা আর কি কি খেল দেখাতে পারে। হাতটা বলছে এসবিবি ১৩? সে বেকুব হয়ে যায় যে বাইরের কেউ এসবিবির কথা জানে…এসবিবি ১৩এর কথা না বাদই দেয়া গেল। পিটার সলোমনের তর্জনী, তাদের প্রথমে যেমন মনে হয়েছিল উপরের দিকে, সেদিকে না…বরং ঠিক তার উল্টো দিকে নির্দেশ করছে।

টমাস জেফারসনের ব্রোঞ্জের মূর্তির কাছে একটা নিভৃত কোণে সাটো। এনডারসনকে নিয়ে আসে। চীফ, সে বলে, আমার বিশ্বাস এসবিবি ১৩ ঠিক কোথায় অবস্থিত সেটা তুমি জানো?

অবশ্যই।

তুমি কি জান ভেতরে কি আছে?

না, না দেখে বলা সম্ভব না। বহু দশক ধরে এলাকাটা ব্যবহৃত হয় না।

বেশ, তুমি সেটা তাহলে খুলছে আজরাতে।

নিজের ভবনে তাকে কি করতে হবে সেটা অন্য কেউ বলে দেয়াতে এনডারসনকে স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট দেখায়। ম্যাম, সেটা সমস্যাসঙ্কুল হতে পারে। আমাকে প্রথমে অ্যাসাইনমেন্ট রোস্টার দেখতে হবে। আপনি হয়ত জানেন, নীচের লেভেলের বেশিরভাগই প্রাইভেট অফিস বা গুদামঘর, আর সিকিউরিটি প্রটোকল প্রাইভেট স্থাপণার

এসবিবি ১৩ তুমি আমার জন্য খুলে দিবে, সাটো বলে। বা আমি ওএসকে খবর দেব তারা একটা দল পাঠাবে হাতুড়ি শাবল দিয়ে।

এনডারসন অনেকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তারপরে রেডিও বের করে ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসে। এনডারসন বলছি। এসবিবি ১৩ খোলার জন্য আমার সাহায্য প্রয়োজন। পাঁচ মিনিটের ভিতরে সেখানে কেউ আমার সাথে দেখা কর।

রেডিওতে যে কণ্ঠটা ভেসে আসে সেটা স্পষ্টতই বিভ্রান্ত। চীফ, আরেকবার নিশ্চিত করবেন, আপনি এসবিবি বলেছেন?

ঠিক তাই। এসবিবি। দ্রুত সেখানে কাউকে পাঠাও। এবং আমাদের ফ্লাশলাইট লাগবে।

সে তার রেডিও বন্ধ করে বেল্টে গুঁজে রাখে। সাটো তার কাছে এসে আর নীচু কণ্ঠে কথা বললে এণ্ডারসনের হৃৎপিণ্ড পাগলা ঘোড়ার মত দৌড়াতে শুরু করে।

চীফ, সময় বড় কম, সে ফিসফিস করে বলে, আর আমি চাই আপনি আমাদের নীচে এসবিবি ১৩ তে যতদ্রুত সম্ভব নিয়ে চলেন।

হ্যাঁ, ম্যাম।

আমি আপনার কাছে আরেকটা জিনিস চাই।

তালা ভাঙা আর অনধিকার প্রবেশ ছাড়া আরও কিছু? এণ্ডারসনের প্রতিবাদ করার মত শক্তি আর অবশিষ্ট নেই, এবং তারপরেও সে এটা ঠিকই খেয়াল করেছে পিটারের হাত রোটানডায় খুঁজে পাবার কয়েক মিনিটের ভিতরে ডিরেকটর সাটো এসে হাজির হয়েছে এবং এখন সে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউ.এস ক্যাপিটলের প্রাইভেট সেকশনে প্রবেশ করতে চাইছে। আজরাতের সব ঘটনার চেয়ে সে এগিয়ে আছে আসলে ঠিক এগিয়ে না মনে হচ্ছে সেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।

সে ঘরের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা প্রফেসরকে দেখায়। ল্যাংডনের কাঁধের ঐ ডাফল ব্যাগটা?

এনডারসন সেদিকে তাকায়। ওটা আবার কি করলো?

আমি ধরে নিচ্ছি তোমার স্টাফরা ল্যাংডন ভিতরে ঢোকার সময়ে ঐ ব্যাগটা এক্স-রে করেছিল?

অবশ্যই। সব ব্যাগই এক্স-রে করা হয়।

আমি সেই এক্স-রেটা দেখতে চাই। আমি জানতে চাই ঐ ব্যাগটায় কি আছে।

সারা সন্ধ্যা ল্যাংডনের কাঁধে থাকা ব্যাগটার দিকে এনভারসন তাকায়। কিন্তু…তাকে জিজ্ঞেস করলেই ব্যাপারটা অনেক সহজ হয় না?

আমার অনুরোধের কোন অংশটা বুঝতে অসুবিধা হয়েছে?

এনডারসন আবার তার রেডিও বের করে সাটোর অনুরোধটা পুনরাবৃত্তি করে। সাটো তাকে নিজের ব্ল্যাকবেরীর ঠিকানা দেয় এবং অনুরোধ করে যে তার দল এক্স-রেটা সনাক্ত করা মাত্র সেটা তাকে ই-মেইল করে দেবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এনডারসন তার কথামত কাজ করে।

ফরেনসিক দল এবার কাটা হাতটা ক্যাপিটল পুলিশের জন্য সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে কিন্তু সাটো ল্যাঙ্গলিতে তার সহকর্মীদের কাছে সেটা সরাসরি পৌঁছে দিতে বলে। এবার আর এণ্ডারসনের প্রতিবাদ করতেও ইচ্ছা করে না। একটা ক্ষুদে জাপানীজ স্টিমরোলার তাকে ছিবড়ে দিয়েছে।

এবং আমি ঐ আংটিটা চাই, সাটো ফরেনসিক দলকে বলে।

দল প্রধানকে দেখে মনে হয় সে প্রশ্ন করবে কিন্তু কি মনে হতে সে চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করে। পিটারের আঙ্গুল থেকে সে আংটিটা খুলে এবং সেটা একটা পরিষ্কার নমুনা সংগ্রহের প্যাকেটে রেখে, সাটোকে দেয়। প্যাকেটটা নিজের জ্যাকেট পকেটে রেখে সে ল্যাংডনের দিকে তাকায়।

প্রফেসর, আমরা যাচ্ছি। নিজের জিনিসপত্র নিয়ে এসো।

আমরা কোথায় যাচ্ছি? ল্যাংডন জানতে চায়।

মি. এনডারসনকে কেবল অনুসরণ কর।

হ্যাঁ, এনডারসন ভাবে, এবং আমাকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ কর। ক্যাপিটলের এসবিবি অংশটা খুব কমই ব্যবহৃত হয়। এখানে আসতে হলে, ভূগর্ভস্থ ক্রিপ্টের নীচে প্রোথিত আঁটসাঁট গলিপথ আর ক্ষুদে কামরার একটা গোলকধাঁধা অতিক্রম করতে হয়। আব্রাহাম লিঙ্কনের ছোট ছেলে, ট্যাড একবার এখানে পথ হারিয়ে প্রায় মরতে বসেছিল। এণ্ডারসনের মনে হতে শুরু করে সাটো যদি পারে তবে রবার্ট ল্যাংডনেরও একই হাল হবে।

.

২৭ অধ্যায়

সিস্টেম সিকিউরিটি এনালিস্ট মার্ক জুবিয়ানিস সবসময়ে নিজের একসাথে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে গর্ব বোধ করে। এই মুহূর্তে সে তার ফুটনের সামনে বসে রয়েছে, সামনে রাখা একটা টিভি রিমোট, একটা কর্ডলেস ফোন, একটা ল্যাপটপ, একটা পিডিএ, একটা বিশাল পাত্র ভর্তি পাইরেটস বুটি। মিউট করা রেডস্কীনের খেলার দিকে এক চোখ অন্য চোখ নিজের ল্যাপটপে রেখে জুবিয়ানিস তার ব্লটুথে এমন এক মহিলার সাথে কথা বলছে যার সাথে গত এক বছর তার আলাপ হয়নি।

প্লে-অফ খেলার রাতে ত্রিস ডান ছাড়া আর কে ফোন করার কথা চিন্তা করবে।

আরো একবার নিজের সামাজিকতা পরোয়া না করার মনোবৃত্তির পরাকাষ্ঠা দৈখিয়ে তার প্রাক্তন সহকর্মী রেডস্কীনের খেলার সময়েই তার সাথে আলাপ করতে আর একটা সাহায্যের জন্য সে ফোন করেছে। পুরানো দিনের স্মৃতির রোমন্থন করে এবং তার রসিকতা সে কেমন মিস করে বলে ত্রিস সরাসরি কাজের কথায় আসে: সে একটা হিডেন আইপি এড্রেস আনমাস্ক করতে চাইছে, ডি.সির কোন সুরক্ষিত সাভারে যা সম্ভবত আছে। সাভারে একটা ছোট টেক্সট ডকুমেন্ট আছে আর সে সেটা দেখতে চায়…বা নিদেন পক্ষে ডকুমেন্টটা কার হতে পারে সে বিষয়ে কোন তথ্য।

ঠিক লোক, কিন্তু সময়টা বেয়াড়া সে তাকে বলে। ত্রিস তখন তার উদ্দেশ্যে নিজের শ্রেষ্ঠ ছেলেভুলান উক্তি বর্ষণ শুরু করে যার অধিকাংশই সত্যি, এবং অ্যাবিয়ানিস কিছু বুঝে উঠার আগে দেখে সে নিজের ল্যাপটপে একটা অদ্ভুত দর্শন আইপি-অ্যাড্রেড টাইপ করছে।

জুবিয়ানিস নাম্বারটার দিকে একবার তাকায় এবং সাথে সাথে অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করে। ত্রিস, এই আইপির ফরম্যাটটা ফাঙ্কি। এটা এমন একটা প্রটোকলে লেখা হয়েছে যা এখনও সাধারণের মাঝে প্রচলিত করা হয়নি। এটা সম্ভবত সামরিক বা সরকারী প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।

সামরিক? ত্রিস হেসে ফেলে। বিশ্বাস কর, আমি এই মাত্র একটা সম্পাদিত ডকুমেন্ট এখান থেকে নামিয়েছি আর সেটা মোটেই সামরিক না।

জুবিয়ানিস তার টার্মিনাল উইনডো টেনে বড় করে নিয়ে এইটা ট্রেসারুট চেষ্টা করে। তুমি বললে তোমার ট্রেসাররুট শহীদ হয়েছে?

হ্যাঁ। দুবার। একই হপে।

আমারটাও। সে এবার একটা ডায়াগনস্টিক প্রোব বের করে সেটা লঞ্চ করে। আর এই আইপির প্রতি এত আগ্রহ কেন?

আমি একটা ডেলিগেটর রান করিয়েছিলাম যা এই আইপিতে একটা সার্চ ইঞ্জিন ট্র্যাপ করে এবং একটা সম্পাদিত ডকুমেন্ট নামায়। আমি বাকী ডকুমেন্টটা দেখতে আগ্রহী। আমি তাদের সেজন্য টাকা দিতেও রাজি ছিলাম কিন্তু বুঝতেই পারছি না আইপিটা কার বা কিভাবে এ্যাকসেস করতে হবে।

জুবিয়ানিস ভ্রু কুচকে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। তুমি এ বিষয়ে নিশ্চিত? আমি এই মুহূর্তে একটা ডায়াগনিস্টিক রান করছি আর এর ফায়ারওয়ালের কোডিং দেখে মনে হচ্ছে…ব্যাপারটা সাধারণ না।

আরে সেজন্যই তোমাকে এত মোটা টাকা দেবো বলেছি।

জুবিয়ানিস এক মুহূর্ত ভাবে। তারা তাকে এত সহজ একটা কাজের তুলনায় বেশ মোটা টাকা দেবার কথা বলেছে। ত্রিস, একটা প্রশ্ন। তুমি এটার পেছনে এমন খেপে উঠেছো কেন?

ত্রিস চুপ করে থাকে। আমি আমার এক বন্ধুর জন্য কাজটা করছি।

বেশ ভাল বন্ধু স্বীকার করতেই হবে।

হ্যাঁ, মেয়েটা খুব ভাল।

জুবিয়ানিস হেসে উঠে কিন্তু চুপ করে থাকে কিছু বলে না। আমি জানতাম।

দেখো, ত্রিশের কণ্ঠস্বর অধৈৰ্য্য হয়ে উঠে। তুমি কি এই আইপি কে আনমাস্ক করতে পারবে বলে মনে কর? হ্যাঁ বা না?

হ্যাঁ, আমি একে নাঙা করতে পারব। এবং হ্যাঁ, আমি এটাও জানি তুমি আমাকে ঢাকের বায়ার মত ব্যবহার করছে।

কতক্ষণ সময় লাগবে?

বেশিক্ষণ না, টাইপ করার ফাঁকে সে কথা বলে। দশ মিনিটের ভিতরে আমি তাদের নেটওয়ার্কের কোন মেশিনে ঢুকতে পারব। আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি।

আমি খুব খুশী হব তাহলে। যাইহোক কেমন চলছে তোমার দিনকাল?

এতক্ষণে বেটীর সময় হল? ঈশ্বরের দিব্যি ত্রিস তুমি আমাকে প্লে-অফের দিনে একটা কাজের জন্য ফোন করে এখন আবার গ্যাজাতে চাইছো? তুমি কি চাও এই আইপিটা আমি হ্যাক করি নাকি চাও না?

ধন্যবাদ মার্ক, আমি এটাই শুনতে চাইছিলাম। আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকব।

পনের মিনিট। জুবিয়ানিস ফোনটা রেখে, তার পাইরেটস বুটি ভর্তি পাত্রটায় একটা খাবলা দেয় আর খেলার মিউট অফ করে।

মেয়েরা পারেও।

.

২৮ অধ্যায়

তারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

ক্যাপিটলের ভূগর্ভে ল্যাংডন, সাটো আর এণ্ডারসনের সাথে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে যেতে যেতে ভাবে, সে টের পায় প্রতিটা নিম্নমুখী পদক্ষেপ তার হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। রোটানডার পশ্চিমের পোর্টিকো দিয়ে তারা তাদের যাত্রা শুরু করে, একটা মার্বেলের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামে, তারপরে উল্টো দিকে হেঁটে রোটানডার মেঝের ঠিক নীচে অবস্থিত বিখ্যাত চেম্বারে একটা প্রশস্ত দরজার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে।

দি ক্যাপিটল ক্রিপট।

জায়গাটার বাতাস কেমন ভারী হয়ে আছে, এবং ক্লাসট্রোফোবিয়ার প্রকোপ ল্যাংডন ইতিমধ্যে টের পেতে শুরু করেছে। ক্রিপটের নীচু ছাদ এবং মেঝেতে স্থাপিত মৃদু আলোয় মাথার উপরের ভারী পাথরের মেঝে সাপোর্ট দেবার জন্য। প্রয়োজনীয় চল্লিশটা ডরিক কলামের মোটাসোটা ঘের হয়ে রয়েছে। শান্ত হও, রবার্ট।

এই দিকে, কথাটা বলেই এনডারসন প্রশস্ত বৃত্তাকার জায়গাটায় বাম। দিকে কোণাকোণি হাঁটতে শুরু করে।

একটাই যা বাচোয়া, এই ক্রিপটে কোন মৃতদেহ নেই। তার বদলে এখানে। রয়েছে কয়েকটা মূর্তি, ক্যাপিটলের একটা মডেল, একটা নীচু গুদামঘর যেখানে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শবাধার রাখতে ব্যবহৃত কাঠের অস্থায়ী মঞ্চ রাখা আছে। পুরো দলটা দ্রুত এগিয়ে যায়, মেঝের কেন্দ্রে স্থাপিত চারদিক নির্দেশক মার্বেলের কম্পাসের দিকে একবারও কেউ তাকায় না, এখানেই এক সময়ে অণিবান শিখা জ্বলত।

এনডারসনকে দেখে মনে হয় তার তাড়া আছে এবং সাটো আবারও কানে ব্ল্যাকবেরী নিয়ে হাটছে। ল্যাংডন শুনেছে, সেলুলার সার্ভিস জোরাল করে ভবনের চারকোণে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ক্যাপিটল ভবনে প্রতিদিন যে শত শত সরকারী ফোন করা হয় তাদের সাপোর্ট দিতে।

আড়াআড়িভাবে ক্রিপট অতিক্রম করে, দলটা একটা মৃদু আলোকিত ফয়ারে প্রবেশ করে, এবং তারপরে পরপর জট পাকিয়ে থাকা হলওয়ের আর কানাগলির একটা জটিল বিন্যাসের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলে। প্রতিটা প্যাসেজের মুখে নম্বর দেয়া দরজা লাগান আছে, প্রতিটায় একটা করে সনাক্তকারী নম্বর রয়েছে। সাপের মত একেঁবেঁকে যাবার সময়ে ল্যাংডন দরজার নম্বরগুলো পড়ে।

এস১৫৪…এস১৫৩…এস১৫২…

দরজাগুলোর পিছনে কি আছে সে সম্বন্ধে তার কোন ধারণাই নেই, কিন্তু একটা বিষয় এখন অন্তত পরিষ্কার- পিটার সলোমনের তালুতে অঙ্কিত উল্কির মানে।

ইউ.এস ক্যাপিটল ভবনের গর্ভে কোথাও এসবিবি১৩ বলে একটা নম্বরযুক্ত দরজা রয়েছে।

এইসব কিসের দরজা? ডেব্যাগটা পাজরের কাছে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ল্যাংডন জানতে চায় এবং মনে মনে ভাবে সলোমনের ক্ষুদে প্যাকেটটার সাথে এসবিবি১৩ খচিত দরজার কি এমন সম্পর্ক থাকতে পারে।

অফিস আর গুদামঘর, এনডারসন বলে। প্রাইভেট অফিস এবং গুদাম, সাটোর দিকে তাকিয়ে সে যোগ করে।

সাটো তার ব্ল্যাকবেরী থেকে এদিকে তাকায়ও না।

তাদের দেখতে কেমন ছোট লাগছে, ল্যাংডন বলে।

বেশীরভাগই মহিমান্বিত ক্লজেট, কিন্তু এগুলো এখনও ডি.সির সবচেয়ে কাঙ্খিত রিয়েল এস্টেট। আসল ক্যাপিটলের এটাই মূল জায়গা এবং পুরাতন সিনেট চেম্বার আমাদের ঠিক দুই তলা উপরে।

এবং এসবিবি১৩? ল্যাংডন জানতে চায়। সেটা কার অফিস?

কারও না। এসবিবি একটা ব্যক্তিগত গুদামঘর, এবং বলতেই হবে আমি বিভ্রান্তবোধ করছি কিভাবে-।

চীফ এনডারসন, ব্ল্যাকবেরী থেকে চোখ না তুলেই সাটো কথা থামিয়ে দেয়। দয়া করে আমাদের কেবল সেখানে নিয়ে চলুন।

এনডারসন তার চোয়াল শক্ত করে এবং তাদের নিরবে বিশাল গোলকধাঁধাঁ এবং হাইব্রিড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটির মত দেখতে জায়গাটার মাঝ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় প্রতিটা দেয়ালেই সামনে পেছনে দিক নির্দেশিত চিহ্ন রয়েছে, আপাতভাবে এই হলওয়ের বিন্যাসে নির্দিষ্ট অফিস ব্লক সনাক্ত করার জন্য।

এস১৪২ থেকে এস১৫২…

এসটি১ থেকে এসটি৭০…

এইচ১ থেকে এইচ১৬৬ এবং এইচটি ১ থেকে এইচটি৬৭…

ল্যাংডনের যথেষ্ট সন্দেই আছে সে এখান থেকে একা বের হতে পারবে কিনা সে বিষয়ে। এই জায়গাটা একটা ভুলভুলাইয়া। এতক্ষণে সে কেবল একটা বিষয় বুঝতে পেরেছে অফিসের নাম্বার হয় এস অথবা এইচ দিয়ে শুরু হয় নির্ভর করে সেটা সিনেটের দিকে না হাউজের দিকে অবস্থিত। এসটি আর এইচটি দিয়ে শুরু হওয়া এলাকাগুলো আপাতভাবে এক লেভেলে যা এনডারসন টেরেস লেভেল বলে অভিহিত করে।

এসবিবির এখনও কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।

অবশেষে তারা কি-কার্ড এন্ট্রিবক্স সম্বলিত স্টিলের ভারী সিকিউরিটি দরজার সামনে এসে হাজির হয়।

এসবি লেভেল

ল্যাংডন টের পায় তারা কাছাকাছি এসে পড়েছে।

এনডারসন তার কি কার্ড বের করতে গিয়ে ইতস্তত করে, সাটোর দাবী পূরণ করতে গিয়ে স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়েছে।

চীফ, সাটো ধমক লাগায়। সারা রাত এখানে বসে থাকার মত সময় আমাদের হাতে নেই।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও এনডারসন কি কার্ড প্রবেশ করায়। স্টিলের দরজাটার লক খুলে যায়। সে ধাক্কা দিয়ে সেটা খুলে এবং পেছনের ফয়ারে প্রবেশ করে। ভারী দরজাটা তাদের পেছনে ক্লিক শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়।

ল্যাংডন বলতে পারবে না সে ফয়ারে কি দেখবে বলে আশা করেছিল কিন্তু সে সামনে যা দেখে আর যাই হোক সেটা দেখবে বলে আশা করেনি। নীচের দিকে নেমে যাওয়া একটা সিঁড়ির দিকে সে তাকিয়ে রয়েছে। আরো নীচে? থমকে দাঁড়িয়ে সে বলে। ক্রিপটের নীচে আরেকটা লেভেল আছে?

হ্যাঁ, এনডারসন বলে। এসবি মানে সিনেট বেসমেন্ট।

ল্যাংডন গুঙিয়ে উঠে। চমৎকার।

.

২৯ অধ্যায়

এসএমএসসির গাছপালায় ঢাকা পথ দিয়ে এগিয়ে আসা হেডলাইটের আলো গত এক ঘন্টায় গার্ডের দেখা প্রথম গাড়ি। দায়িত্বসহকারে, সে তার পোর্টেবল টিভির শব্দ কমিয়ে দেয় এবং কাউন্টারের নীচে তার স্ন্যাকস ঢুকিয়ে রাখে। আর সময় পেল না। রেডস্কীন মাত্র তাদের ওপেনিং ড্রাইভ শেষ করেছে আর সে চায়না সেটা মিস করতে।

গাড়িটা আরও কাছে আসলে সে তার সামনে রাখা নোটপ্যাডে লেখা নামটা দেখে নেয়।

ড. ক্রিস্টোফার অ্যাবাউড়ন।

ক্যাথরিন সলোমন মাত্র ফোন করে এই আসন্ন অতিথির আগমনের খবর সিকিউরিটিকে দিয়েছে। গার্ডের কোন ধারণা নেই এই ডক্টর কে হতে পারে সে বিষয়ে, কিন্তু নিঃসন্দেহে বেশ সফল ডাক্তার; একটা কালো স্ট্রেচ লিমোজিনে করে সে এসেছে। গার্ডহাউজের পাশে লম্বা, ঝকঝকে বাহনটা গড়িয়ে এসে থামে, এবং চালকের আসনের কালো কাঁচ নিঃশব্দে নেমে যায়।

শুভ সন্ধ্যা, শোফার তার টুপি নামিয়ে বলে। চালক একজন শক্তিশালী গড়নের মানুষ যার মাথা কামান। সে তার রেডিওতে ফুটবল খেলা শুনছিল। আমি মিস.ক্যাথরিন সলোমনের কাছে ডক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডনকে নিয়ে এসেছি?

গার্ড মাথা নাড়ে। অনুগ্রহ করে সনাক্তকারী কাগজ দেখান।

শোফারকে বিস্মিত দেখায়। আমি দুঃখিত, মিস.সলোমন কি আগে থেকে খবর দেননি?

গার্ড মাথা নাড়ে, চোরাচোখে একবার টিভির দিকে তাকায়। আমাকে তারপরেও দর্শনার্থীর পরিচয়পত্র স্ক্যান করে লগবুকে তুলে রাখতে হবে। দুঃখিত, বাধ্যবাধকতা। আমাকে ডক্টরের পরিচয়পত্র দেখতে হবে।

কোন সমস্যা নেই। শোফার পিছনে ঘুরে এবং ফ্যাসফেসে কণ্ঠে প্রাইভেসী স্ক্রিনের ভিতর দিয়ে কথা বলে। সে যখন কথা বলছে, গার্ড তখন আরেকবার টিভির দিকে তাকায়। রেডস্কীন এখন আবার হাডল থেকে বেরিয়ে আসছে এবং সে আশা করে পরবর্তী খেলা শুরু হবার আগেই এই লিমোর ভিতরে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা শেষ হবে।

শোফার আবার সামনে তাকায় এবং পরিচয়পত্রটা বাড়িয়ে ধরে যা সে আপাতদৃষ্টিতে প্রাইভেসী স্ক্রিনের ভিতর দিয়ে মাত্র গ্রহণ করেছে।

গার্ড কার্ডটা নিয়ে দ্রুত সেটা তার সিস্টেমে স্ক্যান করে নেয়। দেখা যায় সেটা ক্যালোরামা হাইটসের জনৈক ক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডনের ডি.সির ড্রাইভিং লাইসেন্স। ছবিতে নীল ব্লেজার, নেকটাই আর স্যাটিনের পকেট রুমাল রয়েছে এমন সোনালী চুলের এক সুদর্শন ভদ্রলোককে দেখা যায়। ডিএমভিতে পকেট রুমাল পড়ে কে ছবি তোলে?

একটা অস্পষ্ট উল্লাস টিভিসেট থেকে ভেসে আসে, এবং গার্ড ঘাড় ঘুরিয়ে কেবল দেখতে পায় রেডস্কীনের একজন খেলোয়াড় এণ্ড জোনে নাচছে, তার আঙ্গুল আঁকাশের দিকে মুখ করা। আমি মিস করলাম, গার্ড আক্ষেপ করে বলে আবার জানালার কাছে ফিরে আসে।

ঠিক আছে, শোফারকে লাইসেন্সটা ফিরিয়ে দিয়ে সে বলে। তুমি এখন ভিতরে যেতে পার।

লিমো সামনে এগিয়ে গেলে গার্ড আবার টিভিসেটের কাছে ফিরে আসে, মনে মনে প্রার্থনা করে যেন রিপ্লে দেখায়।

.

বাঁকান ড্রাইভ ওয়ে দিয়ে মাল’আখ তার লিমো চালিয়ে নিয়ে আসবার সময়ে সে না হেসে থাকতে পারে না। পিটার সলোমনের গোপন জাদুঘরে অনায়াসে প্রবেশ করা গিয়েছে। আরও মজার বিষয়, আজরাতে দ্বিতীয়বার সে গত চব্বিশ ঘন্টার ভিতরে সলোমনদের ব্যক্তিগত স্থানে অনধিকার প্রবেশ করেছে। গতরাতে সে সলোমনের বাসায় অনুরূপ একটা দর্শন দিয়েছিল।

পোটোম্যাকে যদিও পিটার সলোমনের একটা অসাধারণ বাগানবাড়ি রয়েছে, সে বেশিরভাগ সময় শহরের ডরচেস্টার আর্মসে অবস্থিত এক্সকুসিভ পেন্টহাউজ এপার্টমেন্টেই কাটায়। তার বাসা, অধিকাংশ অতি-ধনবানদের মতই, একটা যথার্থ দূর্গ। উঁচু দেয়াল, গেটে প্রহরী। দর্শনার্থীদের তালিকা। নিরাপদ ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা।

মাল’আখ এই একই লিমোজিন ভবনটার গার্ডহাউজের কাছে নিয়ে গিয়ে কামান মাথা থেকে শোফারের টুপি খুলে এবং ঘোষণা করে, আমি ড. ক্রিস্টোফার অ্যাবাজ্জনকে নিয়ে এসেছি। মি. পিটার সলোমনের তিনি একজন আমন্ত্রিত অতিথি। মাল’আখ এমন করে কথাটা বলে যেন সে ডিউক অব ইয়র্ককের আগমন ঘোষণা করছে।

গার্ড লগবই দেখে এবং তারপরে অ্যাবাড্ডনের পরিচয়পত্র। হা, আমি দেখেছি মি. সলোমন উঅ্যাবাড্ডনের জন্য প্রতিক্ষা করছেন। সে একটা বোতামে চাপ দিলে দরজা খুলে যায়। মি. সলোমন পেন্টহাউজে থাকেন। ডানদিকের শেষ লিফটটা আপনার অতিথিকে ব্যবহার করতে বলবেন। ওটাই কেবল উপরে যায়।

ধন্যবাদ। মাল’আখ আবার তার টুপিটা মাথায় দেয় এবং ভিতরে প্রবেশ করে।

সে গ্যারেজের ভিতরে ঢোকার সময়ে সিকিউরিটি ক্যামেরা খুঁজতে থাকে। কিছুনেই। আপাতদৃষ্টিতে, এখানে যারা থাকে তারা সে ধরণের লোক না যারা অন্যের গাড়িতে জোর করে প্রবেশ করবে বা সেই ধরণের লোকও না যারা নজরদারি পছন্দ করে।

লিফটের কাছে একটা অন্ধকার জায়গায় মাল’আখ পার্ক করে, ড্রাইভার আর যাত্রী বসার স্থানের মধ্যবর্তী ডিভাইডার নীচু করে এবং খোলা জায়গাটা দিয়ে পিছলে লিমোর পেছনের অংশে চলে আসে। পিছনে আসবার পরে সে শোফারের টুপিটা ফেলে সোনালী চুলের পরচুলাটা পরে নেয়। জ্যাকেট আর টাই ঠিক করে আয়নাতে শেষবারের মত দেখে নেয় যে মেকআপ ঠিক আছে কিনা। মাল’আখ কোন সুযোগ দিতে চায় না। আজ রাতে না।

আমি অনেক দিন এর জন্য অপেক্ষা করেছি।

মুহূর্ত পরে, মাল’আখ ব্যক্তিগত লিফটে প্রবেশ করে। ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা নিরব আর সাবলীল। দরজা খুলতে সে নিজেকে একটা মার্জিত, ব্যক্তিগত ফয়ারে দেখতে পায়। তার হোস্ট তার জন্য অপেক্ষা করছে।

স্বাগতম, ড,অ্যাবাড্ডন।

মাল’আখ লোকটার বিখ্যাত ধুসর চোখের দিকে তাকায় এবং অনুভব করে তার হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে। মি. সলোমন, আমার সাথে দেখা করতে রাজি হওয়ার জন্য আমি খুশী হয়েছি।

আমাকে পিটার বললেই খুশী হব। দুজনে করমর্দন করে। মাল’আখ বুড়ো লোকটার করতল আঁকড়ে ধরতে, সলোমনের হাতে সে সোনার ম্যাসনিক আংটি দেখতে পায়, এই একই হাত একসময়ে মাল’আখের দিকে পিস্তল তাক করেছিল। মাল’আখের অতীত থেকে একটা গুঞ্জন ভেসে আসে। তুমি যদি ট্রিগার চাপো, আমি তোমাকে আজীবন তাড়া করে বেড়াব।

অনুগ্রহ করে ভিতরে আসেন, সলোমন বলেন, মাল’আখকে একটা মার্জিতভাবে সাজান বসার ঘরে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসেন যার বিস্তৃত জানালা থেকে ওয়াশিংটনের বিহ্বল করা আঁকাশরেখা দেখা যায়।

আমি কি চা ফোঁটার গন্ধ পাচ্ছি? মাল’আখ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে।

সলোমনকে বিস্মিত দেখায়। আমার বাবা-মা সবসময়ে অতিথিকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করতো। আমি তাদের রীতি বজায় রেখেছি। সে মাল’আখকে বসার ঘরে নিয়ে আসে যেখানে আগুনের সামনে পুরো চায়ের সরঞ্জাম সাজান রয়েছে। ক্রিম আর সুগার?

না কালো, ধন্যবাদ।

সলোমনকে আবারও বিস্মিত দেখায়। একজন বিশুদ্ধবাদী। সে দুজনের জন্য এককাপ করে কালো চা ঢালে। আপনি বলেছেন যে আপনি আমার সাথে স্পর্শকাতর কোন বিষয়ে আলাপ করতে চান এবং কেবল আমার সাথেই আলোচনা করবেন।

ধন্যবাদ। আমাকে সময় দেয়ায় আমি খুশী হয়েছি।

তুমি আর আমি এখন ম্যাসনিক ভাই। আমাদের ভিতরে একটা বন্ধন কাজ করছে। বলো আমি কিভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি।

প্রথমে কয়েক মাস আগে তেত্রিস-তম ডিগ্রীর সম্মানে ভূষিত করার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ব্যাপারটা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

আমি কৃতজ্ঞ কিন্তু জেনো যে সেটা কেবল আমার একার সিদ্ধান্ত ছিল না। সুপ্রিম কাউন্সিলের ভোটে বিষয়টার নিষ্পত্তি হয়েছে।

অবশ্যই, মাল আখের সন্দেহ পিটার সলোমন সম্ভবত তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন কিন্তু অন্যসব কিছুর মতই ম্যাসনদের ভিতরেও, টাকাই ক্ষমতা। মাল’আখ তার নিজের লজে বত্রিশ-তম ডিগ্রী লাভ করার পরে কেবল একমাস অপেক্ষা করে তারপরেই ম্যাসনিক গ্রাণ্ড লজের নামে পরিচালিত দাঁতব্যপ্রতিষ্ঠানে মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের ডোনেশন দেয়। অনুরোধ ছাড়াই নিঃস্বার্থতার এমন দান, মাল’আখ যেমন মনে করেছিল, অভিজাত তেত্রিশ-তম ডিগ্রী লাভের জন্য তাকে দ্রুত আমন্ত্রণ এনে দেয়। এবং আমি এখনও কোন রহস্য জানতে পারিনি।

বর্ষপ্রাচীন গুঞ্জন ছাড়া- সবকিছু তেত্রিশ-তম ডিগ্রীতে প্রকাশ পায় মাল’আখ নতুন কিছু, তার যাত্রার জন্য গুরুত্ববহ প্রমাণিত হতে পারে এমন কিছুই সে জানেনি। ফ্রিম্যাসনারীর ইনার সার্কেলের ভিতরে কার্যত দেখা যায় আরেকটা ক্ষুদ্র সার্কেল রয়েছে…বৃত্ত যা দেখার জন্য মাল’আখকে বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে, যদি সে কখনও দেখতে পায়। তার দীক্ষার অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে। সেই টেম্পল রুমের ভেতরে আসলেই অনন্য কিছু একটা ঘটেছে এবং সেটা মাল’আখকে তাদের সবার ভিতরে শক্তিশালী করে তুলেছে। আমি আর তোমাদের নিয়ম মানতে বাধ্য নই।

আপনার কি মনে পড়ে, চায়ে চুমুক দেবার ফাঁকে মাল’আখ বলে, আমার সাথে বহুবছর আগে আপনার দেখা হয়েছিল।

সলোমনকে বিস্মিত দেখায়। সত্যি? আমার মনে পড়ছে না।

অনেকদিন আগের কথা সেটা। আর ক্রিস্টোফার অ্যাবাড্ডন আমার আসল নাম না।

আমি দুঃখিত। কিন্তু আমি বোধহয় সত্যিই বুড়ো হচ্ছি। আমাকে স্মরণ করান আমি কিভাবে আপনাকে চিনি?

পৃথিবীতে সে সবচেয়ে বেশি যাকে ঘৃণা করে তার দিকে তাকিয়ে মাল’আখ শেষবারের মত একবার হাসে। ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক যে আপনি মনে করতে পারছেন না।

সাপের মত ছোবল মারার ভঙ্গিতে মাল’আখ তার পকেট থেকে একটা ছোট ডিভাইস বের করে এবং বাইরের দিকে প্রসারিত করে সেটা দিয়ে লোকটার বুকে

সজোরে ধাক্কা দেয়। নীল আলোর একটা ঝলকানি দেখা যায়, স্টান-গান ডিসচার্চের তীক্ষ্ণ হিসহিস শব্দ এবং পিটার সলোমনের দেহে এক মিলিয়ন ভোল্টের বিদ্যুত প্রবাহিত হতে শাসরোধের আওয়াজ। তার চোখ বড়বড় হয়ে উঠে এবং নির্জীবের মত বেচারা চেয়ারে এলিয়ে পড়ে। মাল’আখ এবার উঠে লোকটার মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়, আহত শিকার খাবার আগে সিংহের অভিব্যক্তির মত সে তারিয়ে তারিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করে।

সলোমনের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, দম নেবার জন্য সে হাসফাস করে।

মাল’আখ তার ভিকটিমের চোখে ভয় দেখতে পায় এবং ভাবে মহান পিটার সলোমনকে কখনও ভয়ে গুটিয়ে যেতে কতজন লোক দেখেছে। মাল’আখ দৃশ্যটা বেশ কয়েক সেকেণ্ড রসিয়ে রসিয়ে দেখে। চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দেয়, লোকটার দম ফিরে পাবার জন্য অপেক্ষা করে।

সলোমন কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কথা বলতে চেষ্টা করে। কে-কেন? অবশেষে সে কোনমতে বলতে পারে।

তোমার কি মনে হয়? মাল’আখ ধমকে উঠে জিজ্ঞেস করে। সলোমনকে আসলেই হতবিহ্বল দেখায়। তুমি টাকা…চাও?

টাকা? মাল’আখ হেসে উঠে এবং চায়ের কাপে আবার চুমুক দেয়। আমি ম্যাসনদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়েছি; সম্পদের কোন প্রয়োজন নেই আমার। আমি এসেছি জ্ঞানের জন্য এবং সে আমাকে প্ৰাচুৰ্য্য দিতে চায়।

তাহলে কি…চাও তুমি?

তুমি একটা সিক্রেট জানো। আজরাতে তুমি সেটা আমার সাথে ভাগ করে নেবে।

সলোমন চেষ্টা করে চিবুক উঁচু করতে যাতে সে মাল’আখের চোখের দিকে তাকাতে পারে। আমি জানিনা…বুঝতে পারছি না।

আর কোন মিথ্যা কথা না! মাল’আখ হিসহিস করে উঠে পঙ্গু লোকটার একদম কাছে এগিয়ে যায়। আমি জানি এখানে ওয়াশিংটনে কি লুকান রয়েছে।

সলোমনের ধুসর চোখে অবজ্ঞা ফুটে উঠে। আমি জানি না তুমি কিসের কথা বলছো!

মাল’আখ আরেকটা চুমুক দেয় চায়ে এবং কাপটা একটা কোস্টারের উপরে নামিয়ে রাখে। তুমি দশ বছর আগে তোমার মায়ের মৃত্যুর রাতেও আমাকে এই একই কথাগুলো বলেছিলে।

সলোমনের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে উঠে। তুমি. ..?

তার মারা যাবার কোন দরকার ছিল না। আমি যা চেয়েছিলাম তা যদি তুমি আমাকে দিতে…

বুড়ো লোকটার মুখ বেকেচুরে মনে পড়ার একটা আতঙ্কিত মুখোশে পরিণত হয়….এবং সেই সাথে অবিশ্বাস।

আমি তোমাকে সতর্ক করেছিলাম, মাল’আখ বলে, তুমি যদি ট্রিগারে চাপ দাও তবে আমি আজীবন তোমাকে তাড়া করে ফিরব।

কিন্তু তুমি তো–

মাল’আখ আবার সামনে ধেয়ে আসে এবং টিজারটা সলোমনের বুকে আবার চেপে ধরে। নীল আলোর আরেকটা ঝলসানি দেখা যায় আর সলোমন একেবারে নিস্তেজ হয়ে যায়।

মাল’আখ টিজারটা পকেটে রেখে শান্ত ভঙ্গিতে চা শেষ করে। তার কাজ শেষ হতে সে মনোগ্রাম আঁকা লিনেনের ন্যাপকিনে ঠোঁট মুছে এবং তার ভিকটিমের দিকে তাকায়। আমরা কি এবার যেতে পারি?

সলোমনের শরীর নিস্তেজ কিন্তু তার চোখ খোলা এবং তাতে ভাষা আছে। মাল’আখ ঝুঁকে আসে এবং লোকটার কানে ফিসফিস করে বলে। আমি তোমায় এমন একটা স্থানে নিয়ে যাব যেখানে কেবল সত্য টিকে থাকে।

আর কোন কথা না বলে, মাল’আখ মনোগ্রাম করা লিনেনের ন্যাপকিনটা মুড়িয়ে নিয়ে সলোমনের মুখে গুঁজে দেয়। তারপরে সে তার নিস্তেজ দেহটা নিজের চওড়া কাঁধে তুলে নেয় এবং ব্যক্তিগত লিফটের দিকে রওয়ানা দেয়। বের হবার সময়ে সে সলোমনের আইফোন আর চাবির গোছা হলঘর থেকে তুলে নেয়।

আজ রাতে তুমি তোমার সব সিক্রেট আমাকে বলবে, মাল’আখ ভাবে। বিশেষ করে বহু বছর আগে কেন আমাকে মৃত মনে করে ফেলে গিয়েছিলে।

.

৩০ অধ্যায়

এসবি লেভেল

সিনেট বেসমেন্ট

রবার্ট ল্যাংডনের ক্লাসট্রোফোবিয়া তাদের নীচে অবতরণের প্রতিটা তড়িৎ পদক্ষেপের সাথে তাকে আরও ভাল করে চেপে ধরে। তারা ভবনটা আসল ভিত্তির গভীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে বাতাস ভারী হয়ে উঠে এবং মনে হয়। বায়ুপ্রবাহের কোন অস্তিত্বই নেই। এখানে নীচের দেয়ালগুলো পাথর আর হলুদ ইটের অসম বিন্যাসে তৈরী।

হাঁটার মাঝেই ডিরেকটর সাটো তার ব্ল্যাকবেরীকে টাইট করতে থাকে। ল্যাংডন তার আপাত রক্ষণশীল মনোভাবে একটা সংশয় আঁচ করতে পারে, কিন্তু অনুভূতিটা দ্রুত পারস্পরিক রূপ লাভ করে। সাটো এখনও তাকে বলেনি সে কিভাবে জেনেছে যে ল্যাংডন আজ রাতে এখানে উপস্থিত আছে। জাতীয় নিরাপত্তার একটা বিষয়? জাতীয় নিরাপত্তা আর প্রাচীন মরমীবাদের ভিতরে কোন যোগসূত্র খুঁজে পেতে তার আসলেই মাথা খারাপ হবার দশা হয়। তারপরে আবার, সে এই পরিস্থিতির কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।

পিটার সলোমন আমার কাছে একটা তালিসমান গচ্ছিত রেখেছে…এক বিভ্রান্ত উনাদ আমার সাথে চালাকি করে সেটা ক্যাপিটলে নিয়ে এসেছে এবং তার ইচ্ছা আমি সেটা ব্যবহার করে একটা রহস্যময় সিংহদ্বার অবারিত করি…সম্ভবত সেটা এসবিবি১৩ নামে একটা কক্ষে অবস্থিত।

কিছুই স্পষ্ট নয়।

তারা এগিয়ে যাবার সময়ে, ল্যাংডন তার মন থেকে পিটারের উল্কি করা, রহস্যময়তার হাতে রূপান্তরিত হওয়া হাতের ভয়াবহ চিত্র দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে। বীভৎস ছবিটার সাথে যোগ হয়েছে পিটারের কণ্ঠস্বর: প্রাচীন রহস্য রবার্ট আরো অনেক মিথের জন্ম দিয়েছে…কিন্তু তার মানে এই না যে তারা নিজেরা কাল্পনিক।

মরমীবাদী প্রতীক আর ইতিহাস নিয়ে আজীবন পড়াশুনো করা ল্যাংডন সবসময়েই প্রাচীন রহস্য আর তাদের রূপান্তরের প্রভবিষ্ণু প্রতিশ্রুতির ধারণা বৌদ্ধিকভাবে বুঝতে হিমশিম খেয়েছে।

এটা স্বীকার্য, ঐতিহাসিক নথিপত্রে অবিসংবাদী প্রমাণ রয়েছে যে পুরুষানুক্রমিকভাবে গোপন জ্ঞান হস্তান্তরিত হয়েছে আপাতভাবে যা প্রাচীন মিশরের রহস্যময়তার স্কুলের সৃষ্টি। এই জ্ঞান লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাবার পরে পুনরায় বেঁনেসাসের সময় ইউরোপে লক্ষ্য করা যায়, যেখানে অনেকের ভাষ্যমতে, ইউরোপের অগগণ্য বৈজ্ঞানিক চিন্তাশালার দেয়ালের অভ্যন্তরে একদল অভিজাত বৈজ্ঞানিকদের কাছে এটা গচ্ছিত রাখা হয়- দি রয়েল। সোসাইটি অব লণ্ডন-হেঁয়ালি করে যাকে বলা হত ইনভিজিবল কলেজ।

এই গোপন কলেজ অচিরেই বিশ্বের সবচেয়ে আলোকিত মনের ব্রেইন ট্রাস্টে পরিণত হয়। যাদের ভিতরে রয়েছেন আইজাক নিউটন, ফ্রান্সিস বেকন, রবার্ট বয়েল, এবং এমনকি বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন। বর্তমানে, আধুনিক সদস্যদের তালিকাও কম চিত্তাকর্ষক নয়- আইনস্টাইন, হকিং, বোর, এবং সেলসিয়াস। এইসব মহান মস্তিষ্ক মানুষের উপলব্ধিতে একটা প্রার্থিত অগ্রগতি এনেছে, অগ্রগতি, যা কারো কারো মতে, ইনভিজিবল কলেজে লুকান প্রাচীন। জ্ঞানর সংস্পর্শে আসবার কারণেই সম্ভব হয়েছে। ল্যাংডনের মনে হয় না এসব সত্যি, যদিও নিশ্চিতভাবে ঐ দেয়ালের অভ্যন্তরে অস্বাভাবিক পরিমাণে অতীন্দ্রিয় কাজ সংঘটিত হয়েছে।

১৯৩৬ সালে আইজাক নিউটনের গোপন কাগজ আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন এ্যালকেমী আর মরমীবাদী জ্ঞানর প্রতি নিউটনের বিপুল আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে আসলে পুরো দুনিয়া হতবাক হয়ে যায়। নিউটনের ব্যক্তিগত কাগজপত্রের ভিতরে ছিল রবার্ট বয়েলকে হাতে লেখা একটা চিঠি যেখানে তিনি বয়েলকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন তারা যে রহস্যময় জ্ঞান অর্জন করেছেন সে বিষয়ে গভীর নিরবতা বজায় রাখতে। এটা অন্যকে প্রদান করা যাবে না, নিউটন লিখেছিলেন, পৃথিবীর প্রভূত ক্ষতিসাধন ব্যতিরেকে।

এই অদ্ভুত সতর্কবাণীর অন্তনিহিত অর্থ নিয়ে আজও বিতর্কের শেষ হয়নি।

প্রফেসর, সাটো হঠাৎ তার ব্ল্যাকবেরী থেকে মুখ তুলে বলে, আপনি আজরাতে কেন এখানে এসেছেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবী সত্ত্বেও আপনি হয়ত পিটার সলোমনের আংটি সম্বন্ধে আমাদের কিছু জ্ঞান দিতে পারেন।

আমি চেষ্টা করতে পারি, ল্যাংডন মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে বলে।

ডিরেকটর নমুনা সংরক্ষণের ব্যাগটা বের করে ল্যাংডনের হাতে দেয়। তার আংটির প্রতীকগুলো সম্বন্ধে আমাকে বলেন।

নির্জন গলিপথ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ল্যাংডন তার পরিচিত আংটিটা পরীক্ষা করে দেখে। আংটির উপরিভাগে একটা দুই মাথা বিশিষ্ট ফিনিক্স একটা ব্যানার ধরে রয়েছে যাতে লেখা আছে ORDO AB CHAO, এবং তার বুকে ৩৩ সংখ্যাটা খোদাই করা। দুই মাথা বিশিষ্ট ফিনিক্স বুকে ৩৩ সংখ্যা খোদাই করার অর্থ ম্যাসনিক ডিগ্রীর সর্বোচ্চ মাত্রা। টেকনিক্যালি বলতে গেলে কেবল স্কটিশ রাইটেই গৌরবের প্রতীক এই ডিগ্রী বিদ্যমান। তারপরেও, এই কৃত্যানুষ্ঠান আর ম্যাসনিক ডিগ্রী একটা জটিল পরম্পরা যা আজ রাতে সাটোকে ব্যাখ্যা করার কোন ইচ্ছাই ল্যাংডনের নেই। তেত্রিশ-তম ডিগ্রী একটা অভিজাত স্মারক যা কেবল অতিমাত্রায় সফল একটা ক্ষুদ্র দলকেই দেয়া হয়ে থাকে। বাকী ডিগ্রীগুলো যেখানে পূর্ববর্তী ডিগ্রী সফলভাবে সম্পাদনের ফলে অর্জন করা সম্ভব তেত্রিশ-তম ডিগ্রীতে অভিষেক কিন্তু নিয়ন্ত্রিত। এটা কেবল আমন্ত্রণের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

তার মানে আপনি জানতেন পিটার সলোমন এই অভিজাত ইনার সার্কেলের একজন সদস্য।

অবশ্যই। সদস্যপদের কথা কেউ গোপন রাখে না।

আর সে তাদের নের্তৃস্থানীয় কর্মকর্তা?

বর্তমানে, হ্যাঁ। পিটার তেত্রিশ-তম ডিগ্রী সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধান, যা আমেরিকার স্কটিশ রাইটের পরিচালনাকারী পর্ষদ। ল্যাংডন তাদের সদর দপ্তরে যেতে খুবই পছন্দ করে- দি হাউজ অব দি টেম্পল- একটা ধ্রুপদী নিদর্শন যার প্রতীকি অলঙ্করণ স্কটল্যাণ্ডের রোজিলিন চ্যাপেলের সাথে তুলনীয়।

প্রফেসর, আপনি কি আংটির ব্যাণ্ডে খোদাই করা রয়েছে খেয়াল করেছেন? সেখানে এই বাক্যটা লেখা আছে সবকিছু তেত্রিশ-তম ডিগ্রীতে প্রকাশিত হয়।

ল্যাংডন মাথা নাড়ে। ম্যাসনিক প্রবাদের সবচেয়ে সাধারণ ধারণা।

আমার ধারণা এরমানে, যদি একজন ম্যাসন সর্বোচ্চ তেত্রিশ-তম ডিগ্রীতে অভিষিক্ত হয়, তাহলে বিশেষ কিছু একটা তার কাছে প্রকাশ পাবে।

হ্যাঁ, সেটাই প্রবাদ, কিন্তু সম্ভবত বাস্তবতা নয়। একটা ষড়যন্ত্রমূলক ধারণা সবসময়েই রয়েছে যে এই সর্বোচ্চ মাত্রার ম্যাসনারীতে নির্বাচিত কয়েকজনকে। মহান মরমী রহস্য রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। সত্যি বলতে, আমার সন্দেহ, ব্যাপারটা এরচেয়ে অনেক কম নাটকীয়।

পিটার সলোমন প্রায়ই মূল্যবান ম্যাসনিক রহস্যের অস্তিত্বের ব্যাপারে আঁকার ইঙ্গিত দিত, কিন্তু ল্যাংডনের সবসময়েই মনে হয়েছে ভ্রাতৃসক্সে যোগ দিতে তাকে উৎসাহিত করতেই তার এসব ছলাকলার উদ্দেশ্য ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, আজরাতের ঘটনাকে কোনক্রমেই হাসিঠাট্টার পর্যায়ে পড়ে না, ল্যাংডনের ব্যাগে রক্ষিত প্যাকেটটা পিটার যেমন গুরুত্বের সাথে রক্ষা করতে বলেছিল তাকে কোনক্রমেই হাল্কা করে দেখার অবকাশ নেই।

ল্যাংডন বিষণ্ণ দৃষ্টিতে পিটারের সোনার আংটি যে প্লাস্টিকের কন্টেনার ব্যাগে রয়েছে তাকায়। ডিরেকটর, সে জিজ্ঞেস করে, আমি এটা আমার কাছে রাখলে আপনি কি কিছু মনে করবেন?

সে তার দিকে তাকায়। কেন?

পিটারের কাছে আংটিটা অসম্ভব মূল্যবান ছিল আর আজরাতে আমি এটা তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই।

তাকে সন্দিহান দেখায়। আশা করি তুমি সে সুযোগ পাবে।

ধন্যবাদ। ল্যাংডন আংটিটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখে।

আরেকটা প্রশ্ন, তারা গোলকধাঁধার গভীরে প্রবেশ করতে থাকলে সাটো বলে। আমার সহকর্মীরা বললো, তেত্রিশ-তম ডিগ্রী আর সিংহদ্বারর ধারণাটা ম্যাসনারির সাথে খতিয়ে দেখার সময়ে তারা আক্ষরিক অর্থে একটা পিরামিড শতশত রেফারেন্স পেয়েছে?

এতে, অবাক হবার কিছুই নেই, ল্যাংডন বলে। পিরামিডের নির্মাতারাই আজকের আধুনিক স্টোনম্যাসনদের উত্তরপুরুষ, আর পিরামিডের সাথে মিশরীয় ধারণা, একটা সাধারণ ম্যাসনিক প্রতীক।

সেটা কি প্রতিভাত করছে?

পিরামিড সাধারণত জ্ঞানর রূপক উপস্থাপন। এই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রাচীন মানুষের বন্ধন ছিন্ন করার এবং উপরে স্বর্গের উদ্দেশ্যে, সোনালী সূর্যের উদ্দেশ্যে, এবং শেষপর্যন্ত আলোকময়তায় পরম উৎসের উদ্দেশ্যে আরোহনের একটা প্রতীক।

সে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে। অন্যকিছু না?

অন্যকিছু আরও? ল্যাংডন এইমাত্র ইতিহাসের সবচেয়ে অভিজাত প্রতাঁকের একটা বর্ণনা করেছে। একটা কাঠামো যার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে দেবতার পর্যায়ে উন্নীত করেছে।

আমার সহকর্মীদের ভাষ্য মতে, সে বলে, আজরাতের ঘটনার সাথে এখানের অনেক প্রাসঙ্গিক যোগসূত্র রয়েছে। তারা আমাকে বলেছে যে এই ওয়াশিংটনে একটা বিশেষ পিরামিডের অবস্থান সম্পর্কে জনপ্রিয় কিংবদন্তির প্রচলন আছে- পিরামিড যা নির্দিষ্ট করে ম্যাসন আর প্রাচীন রহস্যকে সম্পর্কিত করে?

ল্যাংডন এবার বুঝতে পারে সে কিসের কথা বলছে, এবং আরো সময় নষ্ট করার আগেই সে বিষয়টার ইতি ঘটাতে চায়। আমি কিংবদন্তিটার সাথে। পরিচিত, ডিরেকটর, পুরোটাই একটা কল্পনা। ম্যাসনিক পিরামিড ডি.সির সবচেয়ে প্রাচীন মিথ, সম্ভবত ইউনাইটেড স্টেটসের গ্রেট সীলের পিরামিড থেকে এর জন্ম হয়েছে।

আগে কেন আপনি এটা বলেননি?

ল্যাংডন কাঁধ ঝাঁকায়। বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই। আমি আগে যেমন বলেছি, এটা একটা মিথ। ম্যাসনদের সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলো মিথের ভিতরে একটা।

এবং এই বিশেষ মিথটা নির্দিষ্টভাবে প্রাচীন রহস্যের সাথে সম্পর্কিত?

অবশ্যই, অন্যান্য আরো অনেক যেমন রয়েছে। প্রাচীন রহস্য অগণিত কিংবদন্তির ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে যা ইতিহাসে টিকে আছে-দি অ্যালুব্রাডস, দি ইলুমিনাত্তি, দি রোজিসিয়ানস আর টেম্পলারদের মত গোপন অভিভাবকের দ্বারা সুরক্ষিত শক্তিশালী জ্ঞানর গল্প- তালিকার কোন শেষ নেই। এসবই প্রাচীন রহস্যের উপরে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে…আর মাসনিক পিরামিড কেবল এর একটা উদাহরণ।

আচ্ছা, বুঝেছি, সাটো বলে। আর এই কিংবদন্তির মূল বক্তব্যটা কি?

পরবর্তী কয়েক পা অগ্রসর হবার সময়ে ল্যাংডন বিষয়টা বিবেচনা করে এবং তারপরে উত্তর দেয়। বেশ ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করতে আমি খুব একটা পারদর্শী না, কিন্তু মিথোলজি সম্পর্কে আমি সামান্য জানি, এবং বেশির ভাগ ভাষ্যই অনেকটা এমন: প্রাচীন রহস্য-সময়ের হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান মানবজাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বলে সহস্র বছর ধরে বিবেচিত হয়ে এসেছে, এবং অন্যসব মূল্যবান সম্পদের মত, এটাকেই সতর্কতার সাথে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। দীক্ষাপ্রাপ্ত জ্ঞানী যারা এই জ্ঞানর সত্যিকারের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা এর অমিত সম্ভাবনাকে ভয় পেতে শিখেছে। তারা জানে এই জ্ঞান যদি অদীক্ষিতের হাতে পড়ে, তবে তার ফলাফল মারাত্মক হতে পারে; আমরা আগেই যেমন বলেছি শক্তিশালী অনুষঙ্গ মঙ্গল বা অমঙ্গল উভয় রূপই পরিগ্রহ করতে পারে। আর তাই প্রাচীন রহস্যকে আর মানব সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত রাখতে, শুরুর দিকের অনুশীলনকারীরা গোপন ভ্রাতৃসদ্য গড়ে তোলেন। এইসব ভ্রাতুসঙ্,ে তারা যথাযথভাবে দীক্ষিতের সাথেই কেবল তাদের এই জ্ঞান তারা ভাগ করে নেন, জ্ঞানের আলোক বর্তিকা এক প্রাজ্ঞ থেকে অন্য প্রাজ্ঞের কাছে ছড়িয়ে দেন। অনেকে বিশ্বাস করে আমরা পেছনের দিকে তাকিয়ে এই রহস্য যারা আয়ত্ত করেছিল তাদের ঐতিহাসিক উপাদান দেখতে পাব…জাদুকর, শামান আর উপশমকারীদের ভিতরে।

এবং ম্যাসনিক পিরামিড, সাটো জানতে চায়। এটা কিভাবে এর সাথে খাপ খায়?

বেশ, ল্যাংডন পাশে থাকার জন্য দ্রুত পা চালিয়ে বলে, এখানেই ইতিহাস আর মিথ একসাথে মিশতে শুরু করেছে। কোন কোন ভাষ্য মতে, ইউরোপে যোড়শ শতাব্দি নাগাদ, এইসব গোপন ভ্রাতৃসদ্য প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল, বেশির ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়েছিল ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে। বলা হয়ে থাকে, ফ্রিম্যাসনরাই প্রাচীন রহস্যের শেষ টিকে থাকা অভিভাবক। সঙ্গত কারণেই, পূর্বসূরীদের ন্যায় তাদের ভ্রাতৃসও যদি একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তাহলে প্রাচীন রহস্য ও জ্ঞান চিরতরে হারিয়ে যাবে।

আর পিরামিড? সাটো আবার জিজ্ঞেস করে।

ল্যাংডন সেখানেই আসছে। ম্যাসনিক পিরামিডের কিংবদন্তি খুব সাধারণ। এর বক্তব্য হল এই যে ম্যাসনরা, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই মহান জ্ঞান সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করতে একটা সুরক্ষিত দূর্গে সেটা লুকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ল্যাংডন তার গল্পের ঝুড়ি হাতড়াতে থাকে। আমি আবারও বলছি, পুরোটাই কিন্তু কাল্পনিক, কিন্তু বলা হয়ে থাকে ম্যাসনরা। পুরানো পৃথিবী থেকে নতুন পৃথিবীতে তাদের গোপন জ্ঞান বহন করে নিয়ে আসে- এখানে এই আমেরিকায় একটা ভূখণ্ড যা তাদের আশা ছিল ধর্মীয় স্বেচ্ছাচারের উর্ধ্বে থাকবে। এবং এখানে তারা একটা দুর্ভেদ্য দূর্গ গড়ে তুলে

লুক্কায়িত পিরামিড- প্রাচীন জ্ঞান সুরক্ষিত রাখতে নির্মিত যতদিন না পুরো মানবজাতি এই জ্ঞানর অমিত শক্তি উপলব্ধি করার যোগ্য না হয়। মিথ অনুসারে, ম্যাসনরা তাদের পিরামিডের শীর্ষে মুকুটের মত একটা ঝকঝকে খাঁটি সোনার ক্যাপস্টোন রেখেছিল যা তার অভ্যন্তরে রক্ষিত সম্পদের প্রতীক- প্রাচীন জ্ঞান মানবজাতিকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সক্ষম করে তুলবে। এ্যাপোথেসিস, বা রূপান্তর।

দারুণ গল্প একটা, যাহোক, সাটো বলে।

হ্যাঁ। ম্যাসনরা নানাবিধ উদ্ভট কিংবদন্তির শিকার।

তুমি নিশ্চয়ই এমন কোন পিরামিডের অস্তিত্বে বিশ্বাস কর না।

অবশ্যই না, ল্যাংডন উত্তর দেয়। এমন কোন সাথিপত্র বা নজির নেই যা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে আমাদের পূর্বপুরুষরা আমেরিকায় কোন পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন, বিশেষ করে ডি.সির কাছে। একটা আস্ত পিরামিড লুকিয়ে রাখা খুবই কঠিন ব্যাপার, বিশেষ করে সর্বকালে হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান ধারণ করার মত বড় একটা পিরামিড।

কিংবদন্তি, ল্যাংডনের যতদূর মনে পড়ে, ম্যাসনিক পিরামিডের অভ্যন্তরে কি থাকতে পারে সে সম্বন্ধে কখনও ব্যাখ্যা করেনি- প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, অকাল্ট রচনাবলী, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, নাকি আরও রহস্যময় কোনকিছু- কিন্তু কিংবদন্তি একটা বিষয়ে পরিষ্কার বলে দিয়েছে ভিতরের মূল্যবান তথ্য সুপ্রযুক্ত প্রতাঁকে রূপান্তরিত করে রাখা হয়েছে…কেবল মাত্র শ্রেষ্ঠ দীক্ষিত আত্মার কাছেই তা বোধগম্য হবে।

যাইহোক, ল্যাংডন বলে, এই গল্পটাকে আমরা সিম্বলজিস্টরা আদিরূপের সঙ্কর বলে অভিহিত করে থাকি। অন্যসব ধ্রুপদী কিংবদন্তির মিশ্রণ, জনপ্রিয় পূরাণ থেকে এত কিছু উপাদান এতে প্রবেশ করান হয়েছে যে। এটা কেবল কাল্পনিক নির্মাণই হতে পারে…ঐতিহাসিক ঘটনা নয়।

আদিরূপের শঙ্কর যখন ল্যাংডন তার ছাত্রদের পড়ায়, সে পরীর গল্পের উদাহরণ ব্যবহার করে, পুরুষানুক্রমে যা কথিত হচ্ছে এবং সময়ের সাথে সাথে বাহুল্য যোগ হচ্ছে, একে অন্যের কাছ থেকে এতবেশী উপাদান যোগ করেছে যে তারা ঘরোয়া নৈতিকতার গল্পে পরিণত হয়েছে একই প্রতীকি উপাদান নিয়ে কুমারী সুন্দরী, সুদর্শন রাজকুমার, দুর্ভেদ্য দূর্গ এবং শক্তিশালী জাদুকর। রূপকথার গল্পের আঙ্গিকে বাচ্চাদের মাঝে ভাল বনাম মন্দ এর আদ্যকালীন লড়াইয়ের ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়: মার্লিন বনাম মর্গান লি ফে, সেন্ট জর্জের সাথে ড্রাগনের যুদ্ধ, ডেভিডের সাথে গোলাইয়াথের, স্নেহোয়াইটের সাথে জাদুকরের, এবং এমনকি লিউক স্কাইওয়াকারের মরণপণ যুদ্ধ ডার্থ ভ্যাডারের সাথে।

একটা বাঁক ঘোরার সময়ে সাটো মাথা চুলকাতে থাকে, এবং এনডারসনকে অনুসরণ করে নিম্নমুখী সিঁড়ির একটা ছোট বিস্তার অতিক্রম করে। আমাকে একটা কথা বল। আমি যদি ভুল না করে থাকি, পিরামিডকে একসময়ে মরমী সিংহদ্বার বলে বিবেচনা করা হত যার ভিতর দিয়ে মৃত ফারাও দেবত্ব অর্জন করবে, তাই নয় কি?

সত্যি।

সাটো থমকে দাঁড়িয়ে ল্যাংডনের হাত ধরে তার দিকে তাকায়, চোখের দষ্টিতে বিস্ময় আর অবিশ্বাসের মিশেল। তুমি বলছো পিটার সলোমনের। বন্দিকর্তা তোমাকে একটা লুকান সিংহদ্বার খুঁজে বের করতে বলেছে এবং তোমার একবারও মনে হয়নি যে এটা এই কিংবদন্তির ম্যাসনিক পিরামিডের কথা সে বলছে?

যে নামেই অভিহিত কর, ম্যাসনিক পিরামিড একটা রূপকথা। পুরোপুরি কাল্পনিক।

সাটো তার পাশে ঘেষে আসে এবং ল্যাংডন তার নিঃশ্বাসে সিগারেটের গন্ধ। পায়। প্রফেসর আমি এ বিষয়ে আপনার মনোভাব বুঝতে পারছি, কিন্তু আমার অনুসন্ধানের খাতিরে, সমান্তরালটা অস্বীকার করা কঠিন। সিংহদ্বার যা গোপন। জ্ঞানের ক্ষেত্র উন্মুক্ত করবে? আমার শুনে যা মনে হয়েছে, তা হল, পিটার সলোমনের বন্দিকর্তা দাবী করেছে তুমি একলাই সেটা খুলতে সক্ষম।

বেশ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

তুমি কি বিশ্বাস কর সেটা আমি থোড়াই কেয়ার করি। তুমি কি বিশ্বাস কর তারও নিকুচি করছি, তোমাকে একটা জিনিস মানতেই হবে এই লোকটা বিশ্বাস করে যে মাসনিক পিরামিড একটা বাস্তবতা।

লোকটা উন্মাদ! সে হয়ত বিশ্বাস করে যে এসবিবি১৩ অতিকায় ভূগর্ভস্থ পিরামিডের প্রবেশদ্বার যেখানে প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান সঞ্চিত রয়েছে।

সাটো একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তার দৃষ্টিতে ক্রোধ টগবগ করছে। আমি আজ রাতে যে বিপর্যয় মোকাবেলা করছি সেটা কোন রূপকথা না, প্রফেসর। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, পুরোটাই ষোল আনা খাঁটি।

একটা শীতল নিরবতা তাদের মাঝে বিরাজ করে।

ম্যাম? এনডারসন অবশেষে, ইশারায় দশ ফিট দূরে আরেকটা সুরক্ষিত দরজা দেখিয়ে বলে। আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি, যদি আপনারা এখনও সামনে যেতে চান।

সাটো অবশেষে ল্যাংডনের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে, এনডারসনকে এগোতে বলে।

নিরাপদ দরজাটা অতিক্রম করে তারা নিরাপত্তা চীফকে অনুসরণ করলে, পেছনে একটা সরু গলিপথে এসে উপনীত হয়। ল্যাংডন ডানে বামে তাকায়। এটা আবার কেমন রসিকতা।

তার দেখা সবচেয়ে দীর্ঘতম হলওয়ে বা সংযোগ স্থাপক পথে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *