০৩. ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে প্রস্তাবিত কিছু যুক্তি

তৃতীয় অধ্যায়– ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে প্রস্তাবিত কিছু যুক্তি

আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানেই ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপকের কোনো পদ থাকা উচিৎ নয়।
— টমাস জেফারসন।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে যুক্তিগুলো বহু শতাব্দী ধরেই বিধি হিসাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংকলন করেছেন ধর্মতত্ত্ববিদরা, পরবর্তীতে যেখানে সংযোজন করেছেন অন্যরা, এমনকি ভ্রান্ত ‘সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান’ এর ফেরীওয়ালারাও।

থমাস অ্যাকোয়াইনাস এর প্রমাণ সমূহ’

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে থমাস আকোয়াইনাস (১) (যে পাঁচটি প্রমাণ উপস্থাপনের এর দাবী করেছেন, আসলে তারা কিছুই প্রমাণ করে না এবং খুব সহজেই– (যদিও বলতে ইতস্ততবোধ করছি, বিশেষ করে তাঁর মতো এমন সুবিখ্যাত কারো যুক্তি)– এটিকে অন্তস্বারশূন্য প্রমাণ করা সম্ভব। প্রথম তিনটি মূলত একই বিষয়কে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বলা হয়েছে তাই এই তিনটি যুক্তি নিয়ে একসাথেই আলোচনা করা যেতে পারে। প্রত্যকটি মূলত ক্রমান্বয়ে এর পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার একটি অন্তহীন প্রক্রিয়া বা যাকে বলা হয় ‘ইনফিনিট রিগ্রেস’- যেখানে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর আরেকটি পূর্ববর্তী প্রশ্নের জন্ম দেয়। এভাবেই চলতে থাকে অন্তহীনভাবে অনন্তকাল।

১. আনমুভড মুভার বা স্থবির চালক বা চালিকা শক্তি: কোনো কিছুই সচল হতে পারেনা আগে যদি কোনো চালক না থাকে। যা ক্রমান্বয়ে পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার একটি অনন্ত প্রক্রিয়া দিকে নিয়ে যাবে আমাদের, যার থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়– সেটি হচ্ছে “ঈশ্বর’। কোনো না কোনো কিছুকে প্রথমে চালকের দ্বায়িত্ব নিতে হয়েছিল আর আমরা সেই প্রথম চালককে বলছি ‘ঈশ্বর’।

২. আনকসড কস বা পূর্বকারণহীন কারণ: কোনো কিছুই নিজে নিজে ঘটে না। প্রত্যেকটির পরিণতির একটি প্রাক কার্যকারণ আছে, এবং এভাবে আবারো সেই ক্রমান্বয়ে পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার একটি অনন্ত প্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হবে আমাদের। তাই এটাকে শেষ করতে হবে একটি প্রথম কারণ দিয়ে, যাকে আমরা বলছি “ঈশ্বর।

৩. কসমোলজিকাল আর্গুমেন্ট বা মহাজাগতিক যুক্তি: এমন কোনো একটা সময় অবশ্যই ছিল যখন কোনো ধরনের ভৌতপদার্থেরই অস্তিত্ব ছিল না। যেহেতু বর্তমানে ভৌতপদার্থের অস্তিত্ব আছে সেহেতু নিশ্চয়ই কোনো অভৌত কিছু ছিল যা বর্তমানে এসব কিছুর অস্তিত্বের কারণ, এবং সেই কোনো কিছুকে আমরা বলছি ‘ঈশ্বর।

এই তিনটি যুক্তিই নির্ভর করে আছে ক্রমান্বয়ে পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার ধারণা বা ইনফিনিট রিগ্রেসের উপরে এবং যেখানে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে সেই ক্রমান্বয়ে পশ্চাদগমনকে থামানো হয়। এই যুক্তির সমর্থনকারীরা সম্পূর্ণ অনায্যভাবে যে পূর্বধারণাটি পোষণ করেন, তা হলো, তাদের প্রস্তাবিত ‘ঈশ্বর এই পশ্চাদগমনশীল যুক্তি প্রক্রিয়ার আওতামুক্ত। এমন কি যদি আমরা কাল্পনিকভাবেও কোনো অসীম পশ্চাদগমনশীল একটি যুক্তি প্রক্রিয়ায় কাল্পনিকভাবে সৃষ্টিকরা একজন সমাপ্তকারীর অস্তিত্ব সংক্রান্ত সন্দেহজনক বিলাসিতাকে শুধুমাত্র প্রয়োজনের খাতিরে পশ্রয়ও দেই, সেক্ষেত্রেও কিন্তু কোনো কারণই নেই, সেই কাল্পনিক সমাপ্তকারীর উপর সেই সব গুণাবলীগুলো আরোপ করা, যা আমরা সাধারণত “ঈশ্বর’ সত্তার উপর আরোপ করে থাকি : যেমন, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞতা, দয়াশীলতা, সৃষ্টির সৃজনশীলতা, এছাড়াও মানুষের আরোপিত ক্ষমতার ব্যপারগুলোতো আছেই যেমন, প্রার্থনা শোনা, পাপের ক্ষমা করা এবং যে কারোরই গোপন গভীরতম চিন্তা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা রাখা। ঘটনাচক্রে যুক্তিবিদদের কিন্তু দৃষ্টি এড়ায়নি যে, সর্বশক্তিময়তা আর সর্বজ্ঞতা পরস্পর বিরুদ্ধ। যদি ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আগে থেকেই তার জানা আছে যে, তিনি কিভাবে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে হস্তক্ষেপ করবেন তার অসীম শক্তি দ্বারা। কিন্তু তার মানে, তিনি তার হস্তক্ষেপ কি হবে সেই সম্বন্ধে কোনো ভাবেই তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন না, এর অর্থ দাঁড়ায় তিনি আসলে সর্বশক্তিমান নন। কারেন ওয়েনস এই বুদ্ধিদীপ্ত আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধীতাকে সমপর্যায়ের একটি আকর্ষণীয় কবিতায় প্রকাশ করেছেন:

‘সর্বজ্ঞ ঈশ্বর কি পারেন, যিনি
ভবিষ্যত জানেন, তার
অসীম শক্তি দিয়ে
তার ভবিষ্যৎ মনকে বদলাতে?’

ক্রমান্বয়ে পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার অসীম প্রক্রিয়া আর কাল্পনিক ঈশ্বরকে দিয়ে সেটি শেষ করার কারণ হিসাবে ব্যবহার করার করার অসারতা প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি। বিষয়টা আরো অনেক মিতব্যয়ীতার মাধ্যমে করা যায়, যদি আমরা এর বদলে অন্য কিছু কল্পনা করে নেই, যেমন, ধরুন একটি বিগ ব্যাঙ্গ সিঙ্গুলারিটি’ অথবা অন্য কোনো ভৌত ধারণা যা এখনো হয়তো আমাদের অজানা। একে ঈশ্বর বলে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে এর সবচেয়ে ভালো পরিণতি হচ্ছে এর উপযোগিতাহীনতা এবং সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হলো, এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি ছলনা। এডওয়ার্ড লিয়ারের (২) ‘ক্রামববলিয়াস কাটলেট’ এর আবোল তাবোল অর্থহীন রেসিপি যেমন আমাদের আমন্ত্রণ জানায়: ‘কয়েক টুকরো গরুর মাংস যোগ করুন, এবার তাদের টুকরো টুকরো করে কাটুন, সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আকারের টুকরো করে, এরপর এদের আরো ছোট করে কাটার চেষ্টা করুন, আট কিংবা সম্ভব হলে আরো নয় বার’, কিছু পশ্চাদগমনশীল যুক্তি প্রক্রিয়া বা রিগ্রেস প্রাকৃতিকভাবেই একটি জায়গায় শেষ হয়। বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছিলেন, কি হতে পারে, যদি আমরা কোনো কিছুকে খুবই ক্ষুদ্রতম টুকরো করে কাটতে পারি, ধরুন, এক টুকরো সোনার খণ্ডকে ভাগ করতে থাকুন, প্রথমে দুইভাগ, তারপর ক্রমাগত ভাবে আরো ক্ষুদ্রতম কোনো সোনার খণ্ডাংশে। এক্ষেত্রে রিগ্রেস অবশ্যই নিঃসন্দেহে শেষ হবে অ্যাটম বা পরমাণুতে। সোনার টুকরার সম্ভাব্য সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশ হবে এর নিউক্লিয়াস, যেখানে উনআশিটি প্রোটোন আছে এবং এর চেয়ে কিছু বেশী সংখ্যক নিউট্রন আছে, যার চারপাশে ঘুরছে উনআশিটি ইলেক্ট্রন। কেউ যদি সোনাকে এর অ্যাটমের চেয়ে আরো ক্ষুদ্রতম অংশে কাটতে চান, সেখানে যা থাকবে, তা আর যাই হোক, সোনা নয়। পরমাণু বা অ্যাটম হচ্ছে ‘ক্রামববলিয়াস কাটলেট’ ধরনের কোনো রিগ্রেসের প্রাকৃতিক শেষ বিন্দু। সুতরাং এটি আদৌ স্পষ্ট না, ঈশ্বর কিভাবে আকোয়াইনাসের প্রস্তাবিত রিগ্রেসের প্রাকৃতিক শেষ বিন্দু হতে পারেন, হালকা ভাবে যদি বলি; আমরা পরে আরো বিস্তারিতভাবে বিষয়টি দেখবো। আপতত বরং আকোয়াইনাসের তালিকায় ফিরে যাই।

৪. ডিগ্রী বা মাত্রা থেকে যুক্তি বা আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিগ্রী: আমরা লক্ষ করি যে পৃথিবী প্রতিটি জিনিসই ভিন্ন। আমরা জানি যে একটা মাত্রা আছে সবকিছুরই, যেমন, ভালোত্নের এবং উৎকর্ষতার। কিন্তু আমরা সেই মাত্রা পরিমাপ বা বিচার করি, এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সর্বোচ্চ কোনো একটি চূড়ান্ত মাত্রাকে আদর্শ হিসাবে ধরে নিয়ে। মানুষ ভালো খারাপ দুটোই হতে পারে, সুতরাং চূড়ান্ত মাত্রার ভালোত্ব মানুষের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না; সেকারণে নিশ্চয়ই কোনো সৰ্বোচ্চর অস্তিত্ব আছে যা উৎকর্ষতার একটি চূড়ান্ত মানদণ্ড তৈরী করে, আমরা সেই চুড়ান্ত মানদণ্ডকে বলছি ঈশ্বর।

এটা কি কোনো যুক্তি হতে পারে? আপনি হয়তো বলতে পারেন, প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রে তাদের গায়ের দুর্গন্ধের বিভিন্ন মাত্রা আছে, কিন্তু আমরা সেই মাত্রা মাপতে পারি, শুধু একটি নিখুঁত সর্বোচ্চ মাত্রার দুর্গন্ধের একটি মানদণ্ডের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে। সুতরাং নিশ্চয়ই এমন কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে যা তুলনাহীনভাবে দুর্গন্ধযুক্ত এবং আমরা তাকে বলছি ঈশ্বর। অথবা তুলনা করা জন্য এখানে দুর্গন্ধ বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করুন না কেন, আপনি একই ভাবে এই ফাঁপা নির্বোধ কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারবেন।

৫. দি টেলিওলজিক্যাল বা পরমকারণবাদের যুক্তি বা ডিজাইন বা পরিকল্পনা থেকে যুক্তি বা আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন: এই পৃথিবীতে সবকিছু, বিশেষ করে জীবন আছে এমন সবকিছু, দেখলে দেখে মনে হয় যেন তাদেরকে কেউ না কেউ ডিজাইন বা পরিকল্পনা করে বানিয়েছে। যদি তাদের আসলেই ডিজাইন না করা হয়ে থাকে, এমন কোনো কিছুই কিন্তু আমাদের দেখে মনে হয় না তা ডিজাইন করা হয়েছে, সেকারণে অবশ্যই কোনো ডিজাইনার বা পরিকল্পকের অস্তিত্ব আছে এবং আমরা তাকে বলি ঈশ্বর (৩)। আকোয়াইনাস নিজেই একটি তীরের নিশানার দিকে ধাবমান হবার রুপক ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু মনে হয় আধুনিক হিট-সিকিং অ্যান্টি এয়ার ক্র্যাফট মিসাইলের বা তাপ-সন্ধানী বিমান ধ্বংসকারী ক্ষেপনাস্ত্র তার উদ্দেশ্যের সাথে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।

‘আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন’, তাঁর এই একটি মাত্র যুক্তি যা আজও হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং অনেকের কাছে এটি চূড়ান্ত ‘নকডাউন’ আর্গুমেন্ট বা তর্ক-জয়কারী যুক্তির মত। কেমব্রিজে আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র থাকাকালীন তরুণ চার্লস ডারউইনকেও (৪) একসময় এই যুক্তিটি আকর্ষণ করেছিল, যখন তিনি উইলিয়াম পেইলী’র (৫) ন্যাচারাল থিওলজী বইটি পড়েছিলেন। পেইলীর জন্য দুর্ভাগ্য,কারণ পরবর্তীতে পরিণত বয়সের ডারউইনই তার যুক্তিগুলোই সব বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। চার্লস ডারউইনের এই ‘আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন’ বা ডিজাইন থেকে নেয়া যুক্তিকে অযৌক্তিক প্রমাণ করে ধরাশায়ী করার উদাহরণটি ছাড়া সম্ভবত বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ কোনো যুক্তি দ্বারা কোনো লোকপ্রিয় বিশ্বাসের এমন ভয়াবহ পরাজয়ের নজির আর নেই। খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল ব্যপারটা। ডারউইনের কল্যাণে, এই উক্তিটি আর সত্য নয় যে, আমরা এমন কিছু জানিনা, ডিজাইন বা পরিকল্পনা করা হয়েছে, যদি না আসলেই তাদের পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন সষ্টি করতে পারে অসাধারণ ডিজাইন সমতুল্য উদাহরণ, কল্পনাতীত জটিলতা আর বিস্ময়কর সূক্ষ্মতা। এবং এই সব বিখ্যাত সিউডো-ডিজাইন (বা আপাত দৃষ্টিতে ডিজাইন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সুপরিকল্পিত কোনো ডিজাইন না) তালিকায় আছে স্নায়ুতন্ত্র, যে তন্ত্রের সামান্য কিছু অর্জনের মধ্যে যেমন আছে গোল সিকিং ( কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ভর) আচরণ, যা এমনকি ক্ষুদ্রতম পতঙ্গের মধ্যে, মনে হতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যকে নিশানা করে যাওয়া কোনো তীর অপেক্ষা আরো উন্নত জটিল তাপের উৎস খোঁজা (হিট সিকিং) ক্ষেপণাস্ত্রের মত। চতুর্থ অধ্যায়ে আমি আবারো এই আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইনে ফিরে আসবো।

অনটোলজিক্যাল (৬) যুক্তি এবং অন্যান্য এ প্রাইওরী বা পূর্ববর্তী জ্ঞান নির্ভর যুক্তিসমুহ (৭):

ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংক্রান্ত যুক্তিগুলো দুটো প্রধান ক্যাটেগরীতে ভাগ করা যায়, এ প্রাইওরী (a priori) এবং এ পোস্টেরিওরী (a posteriori)। টমাস আকোয়াইনাস এর পাঁচটি যুক্তি যেমন, এ পোস্টেরিওরী (যে জ্ঞানের উৎস কোনো প্রাকধারণার উপর না বরং অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষা নির্ভর), কারণ তাদের ভিত্তি পথিবী নানা বিষয় সম্বন্ধে সরাসরি পর্যবেক্ষণ; এ প্রাইওরী (যা অভিজ্ঞতা থেকে স্বাধীন, পূর্ববর্তী কোনো জ্ঞান নির্ভর) যুক্তিগুলোর মধ্যে বিখ্যাত, যেগুলো নির্ভর করে আছে আর্মচেয়ারে বসে যুক্তি প্রদান করার প্রক্রিয়ার উপর, সেটি হলো অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট, যা প্রস্তাব করেছিলেন ১০৭৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্টারবেরীর সেইন্ট আনসেল্ম (৮), এবং তারপর এটাকেই নানাভাবে বর্ণনা করেছেন পরবর্তীতে অগণিত দার্শনিকরা। আনসেন্মের যুক্তির একটি অদ্ভুত ব্যপার হলো, এটি মূলত মানুষের প্রতি নির্দেশিত না বরং ঈশ্বরের প্রতি (আপনি ভাবতেই পারেন এমন কোনো একটি সত্তা যিনি কিনা প্রার্থনা শোনার ক্ষমতা রাখেন, নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চয়ই তাকে বিশ্বাস করানোর কোনো প্রয়োজন পড়েনা)।

আনসেল্ম বলেছিলেন, এমন একটি সত্তার অস্তিত্ব আমাদের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব, যার চেয়ে মহান আর কোনো কিছুই ভাবা যায় না। এমনকি একজন নিরীশ্বরবাদীও এধরনের সর্বোচ্চ কোনো সত্তার কথা ভাবতে পারবেন, যদিও তিনি তার অস্তিত্ব স্বীকার করবেন না বাস্তব পৃথিবীতে। কিন্তু যুক্তিটা এরপর এভাবে মোড় নেয়.. কোনো একটি সত্তা যার আদৌ কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই, এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে, সেটি চূড়ান্ত বা চরমতম নিখুঁত হবার গুণাবলী সম্পন্ন হতে পারেনা। সুতরাং আমরা এখানে একটি অসঙ্গতি বা পরস্পরবিরোধীতা দেখতে পাচ্ছি এবং ….এভাবে ব্যাস হয়ে গেল.. ছু মন্তর ছু– ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে!

আমি বরং এই শিশুতোষ যুক্তিটাকে উপযুক্ত ভাষায়– তা হলো শিশুদের খেলার মাঠের ভাষাতে– বরং অনুবাদ করে দেই:

‘তোমার সাথে আমি বাজী রাখছি, আমি প্রমাণ করতে পিরবো যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। ‘আমিও বাজী রাখতে পারি যে, তুমি পারবে না। “ঠিক আছে, তাহলে, এমন কিছু একটা কল্পনা করো, যা সবচেয়ে বেশী নিখুঁত, নিখুঁত, নিখুঁত, যতটা সম্ভব নিখুঁত কোনো কিছুকে ভাবা যেতে পারে। “ঠিক আছে, ভাবলাম, এরপর’? ‘এখন বলো তো, এই যে সবচেয়ে নিখুঁত নিখুঁত নিখুঁত যে জিনিসটা তুমি ভেবেছো তা কি সত্যি? বাস্তবে কি তার কোনো অস্তিত্ব আছে? ‘না, নেই, এর অস্তিত্ব আছে শুধু আমার মনে। ‘কিন্তু এটা যদি বাস্তবে অস্তিত্ব আছে এমন কিছু হত, তাহলে এটা আরো বেশী নিখুঁততর হতো, কারণ সত্যি সত্যি বাস্তবে অস্তিত্ব আছে এমন কিছুর অবশ্যই কল্পনার কোনো তুচ্ছ জিনিসের চেয়ে আরো বেশী উত্তম হতে বাধ্য। সুতরাং আমি প্রমাণ করলাম যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। নুর নুরনী নুর নুর (শিশুতোষ শব্দমালা), সব নাস্তিকরা আসলে বোকা।

আমার কাল্পনিক এই গল্পে শিশু পণ্ডিতটি দিয়ে আমি জেনে শুনে ‘বোকা’ শব্দটি ব্যবহার করিয়েছি। আনসেন্স নিজেই সাম ১৪ (Psalm 14) এর প্রথম অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, ‘বোকারাই তাদের অন্তরে উচ্চারণ করেছে যে, কোনো ঈশ্বর নেই; এবং তিনি নিরীশ্বরবাদীদেরকে নির্বোধ (ল্যাটিন ভাষায় ইনসিপিয়েন্স) বলে সম্বোধন করার সাহস দেখিয়েছিলেন:

এভাবে এমনকি কোনো নির্বোধও বিশ্বাস করে যে, নিদেনপক্ষে এমন কোনো কিছু যা আমাদের বোধের জগতে বাস করে, অন্ততপক্ষে যার তুলনায় আরো বেশী মহান কোনো কিছুকেই ভাবা সম্ভব না। কারণ যখনই সে এটি শুনতে পারে, তখনই সে তা বুঝতে পারে। আর যেটা বোঝা সম্ভব হয়েছে, তা কেবল বোঝার ক্ষেত্রেই অস্তিত্বশীল। এবং নিশ্চিভাবে এমন কোনো কিছু, যার চেয়ে আর মহান কিছু ভাবা সম্ভব না, তা শুধু মাত্র আমাদের বোঝার জগতে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। কারণ ধরা যাক এটি শুধু আমাদের বোধের জগতে বাস করে তাহলে বাস্তবে এর অস্তিত্ব ধারণা করা সম্ভব, যা আরো মহত্ত্বর।

এভাবে কোনো শব্দমালাকে কৌশলে ব্যবহার করে বা লোগোম্যাশিষ্ট ছলচাতুরীর মাধ্যমে এধরনের বিশাল উপসংহারের দাবী কেউ করতে পারে, এই বিষয়টি আমাকে প্রথমত নান্দনিক দিক থেকে আহত করে। সুতরাং আমি অবশ্যই নির্বোধ’ শব্দটির অযথা ব্যবহার করা থেকে সতর্ক থাকবো। উল্লেখযোগ্যভাবে বাট্রান্ড রাসেল (অবশ্যই নির্বোধ নন) কিন্তু বলেছিলেন, ‘ভুলটা ঠিক কোথায় আছে সেটা খুঁজে বের করার চেয়ে এই যুক্তিটি (অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট) যে অবশ্যই ভুল এই সিদ্ধান্তে কিন্তু অপেক্ষাকৃত সহজেই পৌঁছানো যায়’; রাসেল নিজেই, তার তরুণ বয়সে, অল্পসময়ের জন্য এই যুক্তিটি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন:

আমার মনে আছে সেই বিশেষ মুহূর্তটার কথা; ১৮৯৪ সালের একদিন, ট্রিনিটি লেন দিয়ে যখন হাটছিলাম আমি তখন হঠাৎ করে এক ঝলকের জন্য যেন দেখতে পেলাম (কিংবা আমি মনে হয়েছিল দেখেছিলাম যে অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্টটা সঠিক। আমি বের হয়েছিলাম এক টিন তামাক কেনার জন্য; এবং ফেরার পথে আমি হঠাৎ করে সেটা উপরের দিকে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম: গ্রেট স্কট…অনকোলজিক্যাল যুক্তিটিতো সঠিক;

কিন্তু আমি ভাবছি, রাসেল এমন কিছু কেন বলেননিঃ গ্রেট স্কট, অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্টটি মনে হচ্ছে সম্ভবত সঠিক হতে পারে। কিন্তু ব্যপারটা একটু বেশী সহজ হয়ে গেল না যে, মহাবিশ্ব সম্বন্ধে এমন বিশাল একটি সত্য শুধুমাত্র এ ধরনের কোনো শব্দের খেলা থেকে কি আসতে পারে? আমি বরং এর অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, আপাত দৃষ্টিতে যেটা প্যারাডক্স, যেমন জেনোর প্যারাডক্স (৯); গ্রিকদের বেশ কষ্ট হয়েছে জেনোর প্যারাডক্সে দাবী করা ‘প্রমাণ’, যে অ্যাকিলিস কখনোই কচ্ছপটিকে দৌড়ে ধরতে পারবেনা, এই বিষয়টির আসল রহস্যটা বুঝতে। কিন্তু তাদের যথেষ্ট বোধশক্তি ছিল এর থেকে সেই উপসংহারটি না মেনে নিতে, যে অ্যাকিলিস আসলেই কচ্ছপটি ধরতে পারবে না। বরং তারা এর নাম দিয়েছিল প্যারাডক্স, এবং পরবর্তী প্রজন্মের গণিতজ্ঞদের জন্যে তারা অপেক্ষা করেছিল এর একটি ব্যাখ্যা দেবার জন্য। রাসেল নিজেও, অবশ্য, যে কোনো কারো চেয়ে কোনো অংশেই কম যোগ্য ছিলেন না, যে বুঝতে, কেন তামাকের টিনটি খুশীতে উপরে ছুঁড়ে মারা উচিৎ হবেনা, অ্যাকিলিস কচ্ছপটি ধরতে পারবে না সেই আনন্দে। তিনি কেন সেন্ট অ্যানসেল্ম এর যুক্তির ক্ষেত্রে একই সাবধানতা অবলম্বন করেননি? আমার মনে হয়, রাসেল ছিলেন অতিমাত্রার পক্ষপাতহীন একজন নিরীশ্বরবাদী, অতি উৎসাহী ছিলেন মোহভঙ্গের জন্য, যদি তার জন্য কোনো যুক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে (১০)। অথবা হয়তো এর উত্তর আছে রাসেলের ১৯৪৬ সালে নিজের একটি লেখায় অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্টকে অসার প্রমাণ করার বহুদিন পরে:

আসল প্রশ্নটি হলো, এমন কিছু কি আছে যা আমরা চিন্তা করতে পারি, এবং সেটি, শুধুমাত্র আমরা যে সেটি চিন্তা করতে পারছি, সেই সত্যের উপর ভিত্তি করে, আমাদের চিন্তার বাইরে তার অস্তিত্ব আছে বলে দেখাতে পারি? যে কোনো দার্শনিক হয়তো চাইবেন, হ্যাঁ বলতে, কারণ দার্শনিক এর কাজ পৃথিবী সম্বন্ধে কোনো কিছু বোঝা, তার চিন্তার মাধ্যমে, কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে নয়। যদি হ্যাঁ সঠিক উত্তর হয়ে থাকে, তাহলে বিশুদ্ধ চিন্তা আর অস্তিত্ব আছে এমন কিছুর মধ্যে একটা সেতুবন্ধন আছে। যদি না, তবে কোনো যোগসূত্র নেই।

আমার নিজের অনুভূতি,কিন্তু ঠিক এর বিপরীত, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গভীর সন্দেহ হত যে, কোনো যুক্তি কিভাবে বাস্তব পৃথিবী থেকে আহরিত সামান্যতম কোনো উপাত্ত ছাড়াই এ ধরনের একটি উপসংহারে পৌঁছাতে পারে। হয়ত এই বিষয়টি ইঙ্গিত করছে, আমি দার্শনিক না বরং একজন বিজ্ঞানী। বহু শতাব্দী ধরে দার্শনিকরা অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্টটি বেশ গুরুত্বর সাথে বিবেচনা করেছেন, এর পক্ষে এবং বিপক্ষে। নিরীশ্বরবাদী দার্শনিক জে. এল, ম্যাকি (১১) এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছিলেন তাঁর ‘দ্য মিরাকল অব থেইজম’ বইটিতে ( প্রশংসাসূচক অর্থেই বলছি, যখন আমি বলছি, যে আমরা কোনো দার্শনিককে প্রায়ই সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন, এমন একজন মানুষ হিসাবে যিনি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বা কমন সেন্সকে কোনো কিছুর উত্তর হিসাবে গ্রহন করেন না।

সবচেয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্টটিকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার কৃতিত্ব দেয়া হয়, দুইজন দার্শনিককে : ডেভিড হিউম (১২) এবং ইমানুয়েল কান্ট (১৩); কান্ট আনসেল্ম এর যুক্তির চালাকীর ফাঁদটা শনাক্ত করেছিলেন, অনেকটা যাদুকরদের কাপড়ের ভাজে রাখা লুকানো কার্ডের মতন; আনসেল্ম এর এই যুক্তিটির সবচেয়ে পিচ্ছিল অংশটি কান্টের মতে এর পিচ্ছিল প্রাক ধারণাটি: যে ‘অস্তিত্ব অনস্তিত্ব অপেক্ষা বেশী ‘পারফেক্ট’ বা ‘নিখুঁত। যুক্তরাষ্ট্রের দার্শনিক নরমান ম্যালকম (১৪) বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে: যে মতবাদ দাবী করছে অস্তিত্ব হলো ত্রুটিহীন, তা আসলেই খুব বেশী মাত্রায় অদ্ভুত, যেমন আপনি যদি বলেন, যে আমার ভবিষ্যৎ বাড়িটি অপেক্ষাকৃত বেশী ভালো হবে যদি সেটি ইনসুলেটেড বা আন্তরিত না হবার চেয়ে বরং ইনসুলেটেড হয়, এটির একটি অর্থ হয় এবং বাক্যটি সত্যতাও বহন করে; কিন্তু এর কি অর্থ হতে পারে, যদি বলা হয়, এটি একটি ভালো বাসা হবে, যদি এর অস্তিত্ব থাকে, কোনো অস্তিত্ব না থাকার চেয়ে? (১৫)। অষ্ট্রেলিয়ীয় দার্শনিক ডগলাস গাসকিঙ্গ (১৬), আনসেল্ম এর যুক্তিটা নিয়ে প্রহসনের প্যারোডি তৈরী করেছিলেন, যিনি বিষয়টি অবশ্য তার কোনো লেখায় লিপিবদ্ধ করেননি, তবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম গ্রে (১৮) সেটিকে পুননির্মান করেছিলেন এভাবে (আনসেন্স এর সমসাময়িক গাউনিলো (১৮) একই রকম একটি রিডাকটিও বা তার যুক্তির অসারতা প্রমাণ করেছিলেন):

১. এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, কল্পনাতীতভাবে অসাধারণ বিস্ময়কর একটি অর্জন।

২. আর কোনো একটি অর্জনের গুণগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে (ক) এর অন্তর্নিহিত গুণাবলী এবং (খ) এর স্রষ্টার যোগ্যতা বা ক্ষমতার একটি যৌথ ফসল।

৩. স্রষ্টার অক্ষমতা (বা প্রতিবন্ধীতা) যত বেশী হবে, ততই আকর্ষণীয় হবে সেই অর্জন।

 ৪. একজন স্রষ্টার জন্য সবচেয়ে বড় অক্ষমতা (বা প্রতিবন্ধীতা) হবে তার অস্তিত্বহীনতা।

৫. সুতরাং আমরা যদি ভাবি যে এই মহাবিশ্ব একজন অস্তিত্বশীল সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি, আমরা সেক্ষেত্রে আরো মহান একটি সত্তার কথা কল্পনা করতে পারি, যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তার নিজের কোনো অস্তিত্ব না রেখেই।

 ৬. সুতরাং অস্তিত্ব আছে এমন কোনো স্রষ্টা অবশ্যই। সবচেয়ে মহান হতে পারেনা, যার চেয়ে আর মহান কিছুই ভাবা সম্ভব না কারণ আরো বেশী শক্তিশালী এবং অবিশ্বাস্য স্রষ্টা হবে সেই ঈশ্বর, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব…

৭. ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

বলাবাহুল্য যে গাসকিঙ্গ কিন্তু আসলে প্রমাণ করেননি যে, ঈশ্বরের কোনো অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে আনসেল্মও প্রমাণ করতে পারেননি তার কোনো অস্তিত্ব আছে। পার্থক্য শুধু একটা, গাসকিঙ্গ বিষয়টি নিয়ে মজা করেছেন ইচ্ছাকৃতভাবে। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা নেই এই প্রশ্নটি যথেষ্ট বিশাল এবং শুধুমাত্র ‘দ্বান্দ্বিক ছলচাতুরী দিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে না। এবং আমি মনে করিনা ত্রুটিহীনতার সূচক হিসাবে অস্তিত্বের পিচ্ছিল ব্যবহার এই যুক্তির সবচেয়ে খারাপ অংশ। আমার ঠিক বিস্তারিত মনে নেই কিন্তু একবার ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকদের একটা সমাবেশে তাদের খানিকটা ঠাট্টা করেছিলাম, অনটোলজিক্যাল যুক্তি ব্যবহার করে শুকররাও উড়তে পারে তা প্রমাণ করে দেখিয়ে। তাদের মনে হয়েছিল, তারা মোডাল লজিকের(১৯) আশ্রয় নিতে পারেন আমাকে ভুল প্রমাণ করানোর জন্য।

ঈশ্বরের সপক্ষে প্রস্তাবিত অন্যান্য সব এ প্রাইওরী যুক্তির মতই, অনটোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট আমাকে আলডস হাক্সলীর (২০) ‘পয়েন্ট কাউন্টার পয়েন্ট’ বইয়ের এর সেই বৃদ্ধর কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে একটি গাণিতিক প্রমাণ আবিষ্কার করার দাবী করেছিলেন:

আপনারা তো সেই সুত্র জানেন, শূন্যের মান যদি m হয় তাহলে তা অসীমের সমান, যেখানে m হচ্ছে যে কোনো ধণাত্মক একটি সংখ্যা। বেশ, আমরা এই সমীকরণটিকে আরেকটু সরল করি না কেন, সমীকরণের দুই পাশে শূন্য দিয়ে গুণ করে। সেক্ষেত্রে আপনি পাচ্ছেন m যা অসীম এবং শূন্যের গুনফলের সমান। বা বলা যায়, একটি ধণাত্মক সংখ্যা অসীম এবং শূন্যের গুণফলের সমান। সেটা কি প্রমাণ করেনা একেবারে শূন্য থেকে কোনো অসীম শক্তিমান এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে পারেন? তাই কি প্রমাণ হচ্ছে না?

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দিদরো (২১) এনলাইটেন্টমেন্ট যুগের বিশ্বকোষ রচয়িতা এবং সুইস গণিতজ্ঞ ওয়িলার (২২) এর বিখ্যাত কাহিনী আদৌ ঘটেছিল কিনা সন্দেহ আছে। তবে প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, রুশ সম্রাজ্ঞী ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট, তাদের দুজনের মধ্যে একটি বিতর্কের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে ধার্মিক ওয়িলার নিরীশ্বরবাদী দিদোররাকে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে তার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন এভাবে: ‘(a+bn)/n =x সুতরাং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, উত্তর দিন! এই মিথ বা কাহিনীর মূল বিষয়টা হলো দিদরো যেহেতু গণিতজ্ঞ ছিলেন না সুতরাং সংশয় নিয়ে তিনি এই বিতর্কে আর অগ্রসর হননি। তবে বি. এইচ, ব্রাউন, অ্যামেরিক্যান। ম্যাথমেটিক্যাল মান্থলী (১৯৪২) তে উল্লেখ করেছিলেন, দিদোরো আসলে একজন বেশ দক্ষ গণিতজ্ঞও ছিলেন, এবং ইউলার এর ধরনের যুক্তিতে ধরাশায়ী হবার মত মানুষ তিনি ছিলেন না, ওয়িলার যা করেছিলেন তা সম্ভবত বলা যায় ‘ব্লাইন্ডিং উইথ সায়েন্স’ থেকে যুক্তি (এখানে গনিত) বা ভ্রান্ত কোনো যুক্তিকে টেকনিকাল বা কারিগরী কিছু শব্দ ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে সংশয়গ্রস্থ করা, কারণ তারা সেই টেকনিকাল শব্দগুলো বুঝবে না; ডেভিড মিলস, তার ‘অ্যাথিষ্ট ইউনিভার্স’ এ তার সাথে একজন ধর্মীয় সংগঠনের মুখপাত্রের রেডিও সাক্ষাৎকারের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছিলেন: যেখানে সেই ধর্মীয় মুখপাত্রটি ভর ও শক্তির অবিনশ্বরতার সুত্র বা ‘ল অব কনজারভেশন অব মাস-এনার্জি ব্যবহার করেছিলেন একটা অদ্ভুতভাবে অকার্যকর বিজ্ঞানের অন্ধ ধারণার যুক্তি প্রয়োগের কৌশল হিসাবে যেহেতু আমরা সবাই বস্তু আর শক্তি দিয়ে তৈরী, এই বৈজ্ঞানিক মৌলিক নীতিটি কি অনন্ত জীবনের প্রতি বিশ্বাসকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেয় না? আমি যেভাবে এর উত্তর দিতাম মিলস তার চেয়ে অনেক ভদ্র ভাবে এবং ধৈর্য সহকারে এর উত্তর দিয়েছিলেন, কারণ এই সাক্ষাৎকার গ্রহনকারী যা বলছিলেন, বোধগম্য ইংরেজীতে এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায় আমরা যখন মৃত্যুবরণ করবো, আমাদের শরীরের একটি পরমাণুও (এবং কোনো শক্তিও না) হারিয়ে যায় না। সেকারণে আমরা অমর।

এমনকি আমিও, আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন ছেলেমানুষী খেয়ালী ভাবনার মুখোমুখি হইনি। আমি যদিও আরো বিস্ময়কর সব প্রমাণ হিসাবে দাবী করা যুক্তিগুলো দেখেছি, যা সংগৃহীত আছে গডলেসগীক (২৩) নামের একটি ওয়েবসাইটে। যেখানে অত্যন্ত মজার একটি তালিকা আছে যার নাম ‘তিনশ’র বেশী প্রমাণ যে ঈশ্বর এর অস্তিত্ব আছে ‘; এখানে সেই তালিকা থেকে খুবই হাস্যকর আধা ডজন প্রমাণের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখ করা হলো, শুরু হয়েছে প্রমাণ নং ৩৬ দিয়ে:

৩৬. অসম্পূর্ণ ধ্বংস বা ইনকমপ্লিট ডিভাসস্টেশন থেকে যুক্তি: একটি প্লেন দুর্ঘটনা করার পর ১৪৩ জন বিমান আরোহী এবং বিমানের ক্র নিহন হন, কিন্তু একটি মাত্র শিশু বেঁচে যায়, যদিও তৃতীয় ডিগ্রীর পোড়া নিয়ে, সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

৩৭. সম্ভাব্য পৃথিবীদের বা পসিবল ওয়ার্ল্ডস থেকে আর্গুমেন্ট: যদি সব কিছু ভিন্ন হতো তবে সব কিছুই ভিন্ন হতো; সেটা ভালো হতো না। সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

৩৮. তীব্র ইচ্ছা শক্তি বা শিয়ার উইল থেকে আর্গুমেন্ট: আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি! আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি! আমি করি, আমি করি, আমি করি। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি! সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

৩৯, অবিশ্বাস থেকে আর্গুমেন্ট: বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষই খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করেনা, সেটাই শয়তানের ইচ্ছা। সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

৪০.মত্যু পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে আর্গুমেন্ট: ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিরীশ্বরবাদী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

৪১. ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল থেকে আর্গুমেন্ট: ঈশ্বর আপনাকে ভালবাসেন। আপনি কিভাবে তাকে বিশ্বাস করতে না পারার মত এত নির্মম হতে পারলেন? সুতরাং ঈশ্বর আছেন।

সৌন্দর্য থেকে নেয়া যুক্তি

কিছুক্ষন আগে উল্লেখ করা অ্যালডস হাক্সলীর উপন্যাসটিতে আরো একটি চরিত্র আছে, যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন গ্রামোফোনে বিটহোভেন (২৪) এর স্ট্রীং কোয়াট্রেট নং ১৫ ইন এ মাইনর (২৫) বাজিয়ে। শুনতে তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও, এটি কিন্তু বেশ জনপ্রিয় একটি যুক্তি। আমি গোনা বন্ধ করে দিয়েছি যে কতবার আমি এই প্রসঙ্গে কম বেশী শক্ত চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়েছিঃ বেশ, কেমন করে আপনি শেক্সপিয়ারকে ব্যাখ্যা করবেন? (এই বাক্যে আপনার আপনার পছন্দ মত শুবার্ট (২৬), মাইকেলেঞ্জেলো (২৭) ইত্যাদি যে কাউকে দিয়ে শেক্সপিয়ারকে (২৮) প্রতিস্থাপিত করতে পারেন); এই যুক্তি একই রকমই থাকবে, আমার আর সেটা ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এর পেছনের মূল যুক্তিটা কখনো সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি, আপনি যত বেশী ভাববেন ততই যুক্তিটির অসারতা স্পষ্ট হবে আপনার কাছে। কোনো সন্দেহ নেই বীটহোভেনের শেষের কোয়াট্রেটগুলো স্বর্গীয় সৌন্দর্য মন্ডিত এবং শেকসপিয়ারের সনেটগুলোও এর ব্যতিক্রম না। ঈশ্বর থাকা বা না থাকার উপর তাদের অসাধারণ সৌন্দর্যের কোনোই হের ফের হয়না। অবশ্যই তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেনা; তারা বিটহোভেন এবং শেক্সপিয়ারের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। একজন বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সম্ভবত বলেছিলেন, “আপনি যদি শোনার জন্য মোজার্টকে পান তাহলে আপনার ঈশ্বরকে কেন প্রয়োজন? ‘ডেজার্ট আইল্যান্ড ডিস্ক’ নামের একটি বিবিসি রেডিও শোতে আমি একবার অতিথি হয়েছিলাম; সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি কোনো মরুদ্বীপে আটকা পড়ে যাই একাকী তাহলে সেখানে নেবার জন্য আমাকে যে কোনো আটটা রেকর্ড পছন্দ করতে হবে। আমার পছন্দের মধ্যে ছিল বাখ (২৯) 47 St. Matthew’s Passion cca Mache dich mein Herze rein; আমার সাক্ষাৎকার গ্রহনকারী বুঝতে পারছিলেন না, আমি ধার্মিক না হয়েও কিভাবে ধর্মীয় সঙ্গীত পছন্দ করলাম। আপনি হয়ত তা অন্যভাবে বলতে পারেন এই একই কথা, কেন আপনি উদারিং হাইটস (৩০) পড়ে আনন্দ পাবেন, যখন কিনা ভালো করেই আপনার জানা আছে ক্যাথী কিংবা হিথক্লিফ চরিত্রগুলোর আসলেই বাস্তব কোনো অস্তিত্বই নেই?

আমার মনে হয় আমি আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে পারি এবং যেটা আসলে উল্লেখ করতেই হবে বিশেষ করে যখন ধর্মকে বিশেষ কোনো মহান সৃষ্টির জন্য কৃতিত্ব দেয়া হয়ে থাকে, যেমন, মাইকেলেঞ্জেলোর সিস্টিন চ্যাপেল (৩১) বা রাফায়েল (৩২) এর অ্যানানসিয়েশন (৩৩)। এমন কি বড় মাপের শিল্পীদেরও জীবন বাঁচাতে আয় করতে হয়। যেখানে কাজ পাওয়া যায় তাদের সেই সুযোগ নিতে হয়; আমার কোনো সন্দেহ নেই মাইকেলেঞ্জেলো বা রাফায়েল দুজনেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী, আর তাদের সময় শুধুমাত্র এটাই হবার সুযোগই ছিল, কিন্তু সেই সত্যটা প্রায় কাকতালীয় একটা ব্যপার, কারণ সে সময় বিপুল পরিমানে অর্থের মালিক ছিল শুধু চার্চই, তারাই তখন শিল্পের প্রধান সমঝদার ছিল। যদি ইতিহাস অন্যরকম হত, তাহলে মাইকেলেঞ্জেলো বিশাল বিজ্ঞান যাদুঘরের ছাদে কাজ করার কমিশন পেতেন; তিনি কি তখন তার সিস্টিন চ্যাপেলের মত অসাধারণ কাজ করতেন না সেখানে? দুঃখজনক ব্যপার আমরা কোনোদিনও বীটহোভেনের Mesozoic Symphony বা মোজার্ট (৩৪) এর The Expanding Universe নামের কোনো অপেরা শুনতে পারবো না। একইভাবে আমরা হাডিন (৩৫) এর Evolution Oratorio শোনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছি, কিন্তু তিনি আমাদের তার Creation শোনা থেকে বঞ্চিত করেননি। এই যুক্তিটাকে অন্যদিক থেকে দেখলে কেমন হয়; আমার স্ত্রী যে ভয়ঙ্কর সম্ভাবনাটার কথা প্রস্তাব করেছিল তা হলো, যদি শেক্সপিয়ার চার্চের জন্য কাজ করতে বাধ্য হতেন? আমরা নিঃসন্দেহে হ্যামলেট, কিং লিয়ার আর ম্যাকবেথ পেতাম না, আর এর বদলে কি পেতাম আমরা? স্বপ্ন তৈরী করতে পারে এমন কোনো কিছু, বেশ স্বপ্ন দেখে যান তাহলে।

মহান কোনো শিল্পকর্মকে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সাথে সংযুক্ত করে এমন যদি কোনো যৌক্তিক যুক্তি থাকে, সেটা কিন্তু এই যুক্তির প্রস্তাবকরা স্পষ্ট করে বলছেন না। শুধু ধরে নেয়া হয়েছে,এমনই হবার কথা বা স্বপ্রমাণিত কোনো একটি বিষয় হিসাবে। অবশ্যই সেটা না। হয়তো এটা আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইনের আরো একটি সংস্করণ হিসাবে দেখতে হবে: শুবার্টের সঙ্গীত প্রতিভার মস্তিস্ক নিজেই একটি অসম্ভাব্যতার বিস্ময়, এমন কি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের চোখের তুলনায়। অথবা আরো খারাপ অর্থে, এই যুক্তি কি তাহলে দাবী করছে, হয়তো প্রতিভাবানদের প্রতি ঈর্ষা– কি সাহস! অন্য একজন মানুষ কিভাবে এত সুন্দর সঙ্গীত/কবিতা/শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে, যখন আমি পারছি না? সুতরাং নিশ্চয়ই ঈশ্বরই এসব করছেন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া যুক্তি

আন্ডারগ্রাজুয়েট থাকাকালীন আমার সমকালীনদের মধ্যে অন্যতম একজন বুদ্ধিমান এবং বেশ প্রাপ্তবয়স্ক মানসিকতা সম্পন্ন সহপাঠী, যে আবার খুবই ধার্মিকও, একবার স্কটল্যান্ডের কোনো একটি দ্বীপে ক্যাম্পিং করতে গিয়েছিল, মাঝরাতে সে এবং তার বান্ধবী তাদের তাবুতে হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে উঠে, শয়তানের কণ্ঠস্বর শুনে, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী একেবারে শয়তানের গলার আওয়াজ, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই: সেই শব্দটি নিঃসন্দেহে ভীতিকারক কিংবা যাকে বলা যেতে ভয়ঙ্কর অশুভ; আমার এই বন্ধু কোনোদিনও ভুলতে পারেনি তার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতাটি। এবং এটাই অন্যতম একটি কারণ ছিল পরবর্তীতে তার পাদ্রী হিসাবে দীক্ষা নেবার জন্য। আমার তরুণ মনকে খুব নাড়া দিয়েছিল এই গল্পটি। পরে কোনো একসময় আমি এই গল্পটি প্রাণীবিজ্ঞানীদের একটি সমাবেশের এক পর্যায়ে, যখন তারা অক্সফোর্ড এর রোজ অ্যান্ড ক্রাউন ইনে অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে বলেছিলাম। এদের মধ্যে দুজন। ছিলেন অভিজ্ঞ পাখী বিশেষজ্ঞ, দুজনেই স্বশব্দে হেসে উঠেছিলেন কাহিনীটি শুনেই, এরপর আনন্দের সাথে তারা প্রায় একসাথে চিৎকার করে বলে উঠেন ‘ম্যাঙ্কস শিয়ারওয়াটার’! তাদের একজন আরো যোগ করেন, শয়তানের সাথে তুলনা করার মত চিৎকার এবং আওয়াজ এই প্রজাতির পাখিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, একারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ও বিভিন্ন ভাষায় এদের স্থানীয় নাম ‘ডেভিল বার্ড’ বা ‘শয়তান পাখি।

অনেক মানুষই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কারণ তারা বিশ্বাস করেন তারা তার একটি ভিশন বা স্বর্গীয় দৃশ্য দেখেছেন বা কোনো ফেরেশতা বা এঞ্জেল বা কোনো নীল কাপড় পরা কুমারী মাকে –তারা স্বচক্ষে দেখেছেন, অথবা ঈশ্বর তাদের মস্তিস্কের মধ্যে সরাসরি কথা বলেছেন। এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যুক্তি, তাদের কাছেই সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য, যারা দাবী করেন এই ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের আছে। কিন্তু বাকী সবার কাছে এবং যারা মনোবিজ্ঞান সমন্ধে কাজ চালানোর মত সামান্যতম জ্ঞান আছে, তাদের কাছে এই যুক্তির ভিত আদৌ মজবুত না সঙ্গত কারণেই।

আপনি বলছেন ঈশ্বরের ব্যপারে আপনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে? বেশ, কিছু মানুষ এর অভিজ্ঞতা আছে গোলাপী হাতির;কিন্তু ব্যপারটা আপনার কাছে হয়তো ব্যপারটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। পিটার সাটক্লিফ, কুখ্যাত ইয়র্কশায়ার রিপার বা সিরিয়াল খুনী, যে সুস্পষ্টভাবে দাবী করেছিল, সে নাকি যীশুর নির্দেশ শুনতে পেয়েছিলেন যে মহিলাদের হত্যা করতে হবে এবং এর জন্য তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছিল। জর্জ ডাবলিউ বুশ (৩৭) দাবী করেছিলেন, ঈশ্বর তাকে ইরাক আক্রমণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন (ব্যপারটা দুঃখজনক যে, ঈশ্বর তাকে নিশ্চিৎ করে সেই দিব্যজ্ঞান দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন যে, সেখানে তিনি ‘উইপন অব মাস ডোকশন’ খুঁজে পাবেন না)। মানসিক আশ্রমে অনেক ব্যক্তির দেখা মেলে যারা নিজেদের নেপোলিয়ন বা চার্লি চ্যাপলিন মনে করেন বা মনে করেন সারা পৃথিবী তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, কিংবা তারা তাদের চিন্তা আরেক জনের মস্তিস্কে সম্প্রচার করতে পারেন। আমরা তাদের কথা শুনি ঠিকই, কিন্তু গুরুত্ব। সহকারে তাদের অন্তস্থল থেকে উদ্ভব হওয়া এই দাবীগুলোতে বিবেচনা করিনা, কারণ এই ধরনের ধারণার সাথে খুব বেশী মানুষ সহমত পোষণ করেন না। ধর্মীয় অভিজ্ঞতার ব্যপারটা ভিন্ন কারণ এধরনের অভিজ্ঞতার দাবীদার মানুষের সংখ্যা অগণিত। সেকারণেই বলা যায় স্যাম হ্যারিস (৩৮) মোটেও অতিমাত্রায় নিরাশাবাদী অবস্থান নেননি যখন তার দি এণ্ড অব ফেইথ বইটিতে লিখেছিলেন:

যারা এমন অনেক ধরনের বিশ্বাস ধারণ করেন যার কিনা কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই, সেই সব মানুষদের ডাকার জন্য আমাদের কাছে একটা নাম আছে, তাদের এই বিশ্বাস যখন খুব বেশী মাত্রায় সর্বব্যাপী প্রচলিত হয়, তখন আমরা তার নাম দেই ধর্মীয় বিশ্বাস, কিন্তু সেটি না হলে,এদের সম্ভাব্য নাম জোটে উন্মাদ, মানসিক রোগাক্রান্ত কিংবা বিভ্রান্ত, স্পষ্টতই সংখ্যার হিসাবে সাথে মানসিক সুস্থতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। এবং তারপরও এটি শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা, যে আমদের সমাজ এই বিশ্বাসটিকেই স্বাভাবিক মনে করে থাকে, যে মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে, যিনি আপনার সব চিন্তা সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন। যদিও এটা মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ বিশ্বাস করা, যে তিনি আপনার সাথে যোগাযোগ করছেন, আপনার শোবার ঘরের জানালার কাঁচে বৃষ্টি ফোঁটার সাংকেতিক মোর্স কোড(৪০) ব্যবহার করে। এবং সেকারণেই যদিও ধর্মবিশ্বাসী মানুষ সাধারণত উন্মাদ না, তবে তাদের মূল বিশ্বাসগুলো অবশ্যই সেই লক্ষণ বহন করছে।

হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রমের ব্যপারটায় আমি পরে আবার আসবো অধ্যায় দশে। মানুষের মস্তিস্ক অতি অসাধারণ সিমুলেশন বা কাল্পনিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কোনো সফটওয়্যারের মত প্রোগ্রাম চালাতে পারদর্শী। আমাদের চোখ কিন্তু আমাদের মস্তিস্ককে কোনো বিশ্বস্ত হুবুহু আলোকচিত্র দেখায় না, যা আসলে চোখের সামনে বিদ্যমান বা সঠিক সেই চলমান দৃশ্য, যা ঠিক সেই সময়ই ঘটছে। আমাদের মস্তিস্ক যেটা করে তা হলো বিরামহীনভাবে সে হালনাগাদ বা আপডেটেড মডেল তৈরী করতে থাকে। অপটিক স্নায়ুপথে আসা অসংখ্য উপাত্ত আর সংকেত দিয়ে এটি হালনাগাদ হতে থাকে, তবে তা ঠিকই দৃশ্যের একটি মডেল তৈরী করে নেয়। অপটিক্যাল ইশন বা দৃষ্টি বিভ্রম আমাদের জন্য এ বিষয়টির একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত, প্রধান ধরনের দৃষ্টি বিভ্রম বা ইস্যুশন– যার একটি বিশেষ উদাহরণ হচ্ছে নেকার কিউব– উদ্ভব হবার কারণ ইন্দ্রিয়গুলো থেকে যে উপাত্ত আমাদের মস্তিস্ক ক্রমাগত পাচ্ছে তা আসলে বাস্তবতার দুটি আলাদা বা সমন্বয়যোগ্য বিকল্প মডেল (৪১)। মস্তিস্কের পক্ষে এই দুটির মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেবার জন্য স্বতন্ত্র কোনো ভিত্তি নেই, তাই সে পালাক্রমে এদের বেছে নেয়। আমরাও অভিজ্ঞতা লাভ করি একটি অন্তস্থ মডেল থেকে অন্য মডেলের মধ্যে ধারাবাহিক পালা পরিবর্তনের। যে ছবির দিকে তারিয়ে আছি বলে মনে করি আক্ষরিক অর্থে উল্টে যায় এবং রুপান্তরিত হয় সম্পূর্ণ অন্যকিছুতে।

চেহারা এবং কণ্ঠস্বর তৈরী করার সবচেয়ে বেশী দক্ষ ব্রেইনের সিমুলেশন সফটওয়্যার। আমার জানালার উপরই একটা আইনস্টাইনের প্লাস্টিক মুখোশ আছে; সামনে থেকে দেখলে, এটি একটি ঘন পূর্ণ মুখের মত মনে হয়,এটি বিস্ময়কর কিছু নয়,তবে যেটা বিস্ময়কর সেটা হল পেছন থেকে, ফাঁকা জায়গার দিক থেকে,তখনও এটিকে ঘন বা সলিড় একটি মুখের মত মন হয় এবং জিনিসটি বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের দেখার দৃষ্টিকোণ আর বোঝার অনুভুতিটিও আসলে খুব অদ্ভুত। দর্শক যখনই নাড়াচাড়া করছে মুখটাও যেন তা অনুসরণ করছে এবং এটি কিন্তু সেই দুর্বল, তেমন বেশী বিশ্বাসযোগ্য নয় এমন অর্থে, মোনা লিসার চোখ আপনাকে অনুসরণ করছে বিষয়টির মতই। এই ফাপা মুখোশটা যেন আসলেই তাকাচ্ছে, নাড়াচাড়া করছে। যারা এই দৃষ্টিবিভ্রমটি আগে দেখেননি তারা বেশ চমকে যাবেন। আরো বিস্ময়কর, যদি মুখোশটিকে একটি ধীরে ঘুর্ণায়মান কোনো টেবিলের উপর রাখা যায়, দেখা যায় এটি ঠিক সঠিক দিকেই তাকিয়ে আছে,যখন আপনি এটি ঘন বা পূর্ণ দিক থেকে দেখছেন, কিন্তু এটা যেন বিপরীত দিকে তাকায় যখন ফাপা দিকটা দৃষ্টির সামনে আসে। এর ফলাফলটা হচ্ছে যখন আপনি দেখবেন একপাশ থেকে অন্য পাশে এই দিক পরিবর্তন হচ্ছে, যেদিকটা আসছে অর্থাৎ কামিং সাইডটি, যে দিকটা চলে যাচ্ছে বা গোয়িং সাইডকে মনে হচ্ছে যে গ্রাস করে ফেলছে। এটি একটি অসাধারণ দৃষ্টি বিভ্রম, একটু ঝামেলা সহ্য করে দেখার যোগ্য এমন একটি বিষয়। কখনো কখনো আপনি বিস্ময়করভাবে কাছাকাছি চলে আসতে পারেন ফাপা মুখের কাছে এবং তারপরও আপনি দেখতে ব্যর্থ হতে পারেন, যে এটা আসলেই ফাপা কিনা? যখন আপনি দেখতে পাবেন, আবার তখন আরেকটি পরিবর্তন বা মডেলটির ফ্লিপ ঘটে যায়, যা আবার পরিবর্তনযোগ্য।

কেন এটা হচ্ছে? এই মুখোশ তৈরী করার মধ্যে কিন্তু কোনো কৌশল নেই। যে কোনো ফাপা মুখোশই এই কাজটা করতে পারে। যে দেখবে তার ব্রেইনেই এই চালাকীটা ঘটে। ভিতরের সিমুলেটিং সফটওয়্যার যা ডাটা পায়, যা ইঙ্গিত করে হয়তো তা একটি মুখের অস্তিত্ব, হয়তো এক জোড়া চোখ ছাড়া আর বেশী কিছু না, নাক বা একটি মুখ মোটামুটি যে জায়গায় তাদের থাকার কথা সেখানে। এধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু কু পাবার পর ব্রেইন তার বাকী কাজটা নিজেই করে নেয়। মুখের সিমুলেশন সফটওয়্যার কাজ শুরু করে এবং মুখের একটি সম্পূর্ণ সলিড বা ঘণ মডেল তৈরী করে, এমনকি যখন প্রকৃত বাস্তবতা যে দেখাচ্ছে চোখকে তা হলো মুখের ফাপা একটি মডেল। এই ভুল দিকে আবর্তনের বিভ্রমটা আসে কারণ ( কঠিন বিষয়টি, কিন্তু আপনি যদি সতর্ক হয়ে ব্যপারটি নিয়ে চিন্তা করেন আপনি এটা নিশ্চিৎ করতে পারবেন) বিপরীতমুখী আবর্তন হচ্ছে অপটিক্যাল বা চোখের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তগুলোর কোনো একটা বোধগম্য অর্থ করার একমাত্র উপায়, যখন ফাঁকা মুখোশ আবর্তনের সময় যে দেখছে তা মনে হবে ঘণ(৪২)। অনেকটা ঘুর্ণায়মান রাডার ডিশের সৃষ্ট মায়ার মত, যা আপনি এয়ারপোর্টে দেখে থাকবেন, মাঝে মাঝে যতক্ষণ না মস্তিস্ক রাডার ডিশটির সঠিক মডেল বদলে নেয়, আপনি একটি ভুল মডেলকে ঘুরতে দেখবেন ভুল দিকে তবে খুব আজব একটা বিভ্রান্তির সাথে।

আমি এটা উল্লেখ করলাম আমাদের মস্তিস্কের শক্তিশালী সিমুলেটিং সফটওয়্যার সম্বন্ধে একটি ধারণা দেবার জন্য। এটি বিশেষভাবে দক্ষ, ভিশন (কোনো দৃশ্য) বা ভিজিটেশন বা কারো আবির্ভাব সম্বন্ধে চূড়ান্তভাবে বিশ্বাসযোগ্য সত্যিকার একটি ধারণা দিতে। কোনো অশরীরি আত্মা বা ফেরেশতা বা একটি ভার্জিন মেরীর একটি কাল্পনিক উপস্থিতিকে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে সিমুলেট করা ক্ষমতা আমাদের মস্তিস্কের এই ধরনের কোনো উন্নত সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ছেলে খেলা মাত্র। একই জিনিসই আবার ঘটে মাঝে মাঝে কিছু শোনার ক্ষেত্রে। আমরা যখন কিছু শুনি এটি হুবুহু অবিকলভাবে আমাদের অডিটরী বা শ্রবণের স্নায়ু বহন করেনা, এই স্নায়ুটি শব্দ সংকেতগুলো আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয় না কোনো হাই-ফিডেলিটি ‘ব্যাঙ্গ অ্যাণ্ড ওলুফসেন’ এর সাউণ্ড সিস্টেমের মত। কোনো কিছু দেখার মতই আমাদের মস্তিস্ক শব্দের মডেল তৈরী করে, বিরামহীন ভাবে আসা অডিটরী স্নায়ু সংকেতের মাধ্যমে। সে কারণে যখন কোনো ট্রাম্পেট বাস্ট এর শব্দ শুনি আমরা একটি নোট হিসাবে, বিশুদ্ধ কোনো যৌগিক টোনের হারমনিকস হিসাবে না যা এর সাথে একটা চাপা গর্জন যোগ করে দেয়। কোনো ক্ল্যারিনেট যদি সেই একই নোট বাজায় তাহলে শুনতে কাঠের খানিকটা ভরাট আওয়াজ এবং একটি ওবোর আওয়াজ আরো সূতীক্ষ্ম কারণ বিভিন্ন নোটদের একটি হারমোনিকসের ভারসাম্য এটা নির্ধারন করে। আপনি যদি সতর্কতার সাথে সাইও সিনথেসাইজারের প্রত্যেকটা হারমনিকস আলাদা আলাদাভাবে বাজান, আপনার মস্তিস্ক কিছুক্ষণের জন্য এই শব্দগুলোকে বিশুদ্ধ টোনের একটি সংমিশ্রণ হিসাবে শুনতে পায়, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের মস্তিস্কের সিমুলেশন সফটওয়্যার ব্যপারটা ধরতে পারে এবং এরপর থেকে আমরা শুধুমাত্র একটি বিশুদ্ধ নোট,হয় ট্রাম্পেট বা ওবো, যাই হোক না কেন শুনতে পাই। আমাদের কথা বলার সময় উচ্চারিত স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ আমাদের মস্তিস্কের মধ্যে এভাবে তৈরী হয় এবং সুতরাং অন্য একটি পর্যায়ে, আরো উঁচু অর্ডারের ফোনেম এবং শব্দগুলোও তৈরী হয়।

শৈশবে, একবার আমি ‘ভুত-এর গলার আওয়াজ শুনেছিলাম: একটা পুরুষ কণ্ঠ, বিড়বিড় করে কি যেন বলছে, মনে হচ্ছে কিছু পড়ছে বা প্রার্থনা করছে; আমি প্রায় পুরোটাই, যদিও সবটা না, কি বলছিল, সেই শব্দগুলো বুঝতে পারছিলাম, আমার কাছে মনে হয়েছিল যা খুব স্বতন্ত্র একটি গম্ভীর কণ্ঠস্বর পুরোনো বাড়ীর যাজকদের ঘর বা প্রিস্ট হোল সম্বন্ধে আমাকে নানা গল্প বলা হয়েছিল। এবং এ জন্য আমি কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলাম; কিন্তু তারপরও কৌতূহলবশত শব্দটার উৎস খোঁজার জন্য আমি বিছানা থেকে উঠেছিলাম; যতই কাছে যাচ্ছিলাম, শব্দটার তীব্রতা বাড়ছিল এবং তারপর হঠাৎ করেই আমার মাথার মধ্যে এটি উল্টে গেল, আমি শব্দের আসল উৎসটা স্পষ্ট বোঝার মত অবশেষে যথেষ্ট কাছাকাছি পৌঁছালাম; দরজার চাবির ছিদ্র দিয়ে বাতাস দ্রুত আসা যাওয়ার করার প্রক্রিয়ায় শব্দটি তৈরী হচ্ছিল, এবং এটি যে শব্দ তৈরী করছিল তা আমার মস্তিস্কের সিমুলেশন সফটওয়্যারটি একটি মডেল তৈরী করে কোনো পুরুষের ভারট গলার কণ্ঠস্বরের কথামালায়। আমি যদি সহজে প্রভাবিত করা যায়, এমন শিশু হতাম, তাহলে সম্ভবত অস্পষ্ট অবোধ্য কথা শোনার বদলে হয়ত আমি শুনতে পেতাম সুনির্দিষ্ট শব্দ এবং এমন কি বাক্যগুলো। আর একইসাথে আমি যদি সহজে প্রভাবিত হবার মত এবং ধর্মীয়ভাবে প্রতিপালিত হতাম, আমি ভাবতাম, বাতাস কি বলছে।

অন্য আরেকটি ঘটনায়, প্রায় একই বয়স তখন আমার, আমি একটা দানবীয় আকারের মুখকে দেখেছিলাম, অবর্ণনীয় অশুভদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, সমুদ্রের পাশে একটা সাধারণ গ্রামের খুবই সাধারণ বাসার জানালা দিয়ে। একটু ভয় নিয়ে আমি সেই মুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকি, যতক্ষণ না পর্যন্ত খুব কাছাকাছি পৌঁছে বুঝতে পারি, আসলে এটি কি; কাকতলীয়ভাবে একটা অস্পষ্ট মুখের মত সজ্জা তৈরী করেছে জানালার পর্দাগুলো এলোমেলোভাবে ভাজ হয়ে। এই মুখ এবং তার অশুভ বলয়, একটি ভীত শিশুর মস্তিস্ক কল্পনা করে তৈরী করে নিয়েছে। সেপ্টেম্বর ১১,২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত টুইন টাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসা ধোয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে অনেক ধার্মিকই খোদ শয়তানের চেহারা আদল দেখতে পেয়েছিলেন: এই কুসংস্কারটি, যাকে উস্কে দিয়েছে একটি আলোকচিত্র, যা ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

কোনো মডেল তৈরী করার ব্যপারে মানুষের মস্তিস্ক অত্যন্ত দক্ষ। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখন একে বলি স্বপ্ন আর যখন জেগে থাকি, আমরা বলি কল্পনা বা যখন তারা খুবই বেশী স্পষ্ট, তখন বলি হ্যালুসিনেশন (ভ্রম); দশম অধ্যায়ে আমরা দেখবো, শিশুরা যাদের কাল্পনিক বন্ধু আছে, তারা তাদের স্পষ্টই দেখতে পায়, যেন আসলেই বাস্তব তাদের অস্তিত্ব আছে। আমরা যদি সরল বিশ্বাসপ্রবণ হয়ে থাকি, আমরা হ্যালুসিনেশন বা জেগে দেখা স্বপ্ন বা লুসিড স্বপ্নগুলোকে শনাক্ত করতে পারিনা, বিষয়টা আসলে কি, বরং আমরা দাবী করি আমরা কোনো ভুত দেখলাম বা শুনলাম বা কোনো ফেরেশতা, বা ঈশ্বর; অথবা, আমাদের বয়স যদি অল্প হয় এবং আমরা মহিলা ও ক্যাথলিক হই, সেক্ষেত্রে কুমারী মাতা মেরীকে। এধরনের কোনো ভিশন বা আপাত প্রকাশ অবশ্যই ভুত, ফেরেশতা, ঈশ্বর কিংবা কুমারীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করার জন্য শক্ত কোনো কারণ নয়। এর উপর আবার আছে সম্মিলিতভাবে বহু মানুষের এই সব দৃষ্টি বিভ্রম দেখার কাহিনী। পর্তুগালের ফাতিমায় ১৯১৭ সালে প্রায় সত্তর হাজার তীর্থ যাত্রী যেমন দাবী করে তারা সূর্য আকাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, উপস্থিত মানুষের জমায়েত এর উপর ভেঙ্গে পড়ছে দেখেছিল, এই গণ বিভ্রমটাকে বাতিল করা স্পষ্টতই কঠিন (৪৩)। খুব সহজ না কিন্তু ব্যাখ্যা করা কেমন করে সত্তর হাজার মানুষ একই হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টি বিভ্রমের স্বীকার হয়েছিলেন। কিন্তু এটা যে ঘটেছে সেটা মেনে নেয়া আরো কঠিন যে ফাতিমার বাইরে সারা পৃথিবীর দৃষ্টির অগোচরে এমন কিছু আসলেই ঘটেছিল। শুধু দেখাই না, সৌরজগতের সেই ভয়াবহ ধ্বংস অনুভব করা, যার প্রবল ত্বরণ গতি যথেষ্ট সবকিছুরই মহাশূন্যে ছিটকে পড়ার জন্য। ডেভিড হিউমের (৪৪) মিরাকল বা অতিপ্রাকৃত ঘটনার পিথি টেষ্টটি কথা মনে পড়ে যেতে বাধ্য ‘কোনো ধরনের স্বাক্ষ্যপ্রমাণই একটি মিরাকল বা দৈব বা অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট না, যদি না সেই স্বাক্ষ্যপ্রমাণ এমন কোনো প্রকৃতির হয়ে থাকে যে এর মিথ্যাভাষণ এটি যে সত্যকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারচেয়েও আরো বেশী অতিপ্রাকৃত হয়।

অসম্ভব মনে হতে পারে যে সত্তর হাজার মানুষ একই সাথে বিভ্রান্ত হয়েছিল বা তারা একই সাথে নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে এমন একটি গণমিথ্যার সৃষ্টি করতে পারে। সত্তর হাজার মানুষ সূর্যকে নাচতে দেখেছে এই বিষয়টি হয়তো ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে ভুল করেছে। অথবা তারা সবাই একই সাথে মরীচিকা দেখেছে (তাদের সবাইকে একসাথে সুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছিল, দৃষ্টি ক্ষমতার জন্য বিষয়টি নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা ছিল না); কিন্তু এই সব প্রায় অসম্ভব ব্যপারগুলো অনেক বেশী সম্ভাব্য এর বিকল্প ঘটনাটি থেকে: পৃথিবী হঠাৎ করে তার কক্ষপথে একদিকে বেঁকে যাওয়া এবং সৌরজগত ধ্বংস হবার ঘটনাটি, যা ফাতিমার বাইরে কেউ লক্ষ করেনি। আমি বোঝাতে চাইছি, পর্তুগাল তো পৃথিবী থেকে সেরকম বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ না (৪৫)। আসলেই ঈশ্বর এবং ধর্মীয়। অলৌকিক ঘটনাগুলোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে এর চেয়ে বেশী কিছু বলার প্রয়োজন আর নেই। আপনার যদি এধরনের কোনো অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, আপনি সম্ভবত সেটা সত্যি একটি ঘটনা এমন বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে পারেন। কিন্তু আপনার আশা করা উচিৎ না বাকী আমরা সবাই আপনার কথাই সত্য বলে ধরে নেব, বিশেষ করে যদি আমাদের মস্তিস্ক এবং এর শক্তিশালী কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে সামান্যতম কিছু ধারণাও থেকে থাকে।

স্ক্রিপচার বা ধর্মগ্রন্থ থেকে নেয়া যুক্তি

এখনও বেশ কিছু মানুষ আছেন যারা ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত প্রমাণের দ্বারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে প্ররোচিত হন। খুব প্রচলিত যে। যুক্তি, যার উৎস অনেকেই, যাদের মধ্যে অন্যতম সি, এস, লুইস (৪৬) ( যদিও তার পক্ষে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট বোঝা উচিৎ ছিল), যা দাবী করে, যেহেতু যীশু নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবী করেছেন, তিনি অবশ্যই হয় সঠিক অথবা একজন মিথ্যাবাদী পাগল: পাগল, খারাপ লোক বা ঈশ্বর; বা খানিকটা স্কুল অনুপ্রাস, উন্মাদ, মিথ্যাবাদী বা প্রভু (লুন্যাটিক, লায়ার বা লর্ড); যীশু যে এধরনের কোনো স্বর্গীয় পদমর্যাদা দাবী করেছিলেন তার সপক্ষে ঐতিহাসিক প্রমাণ খুব নগন্য। কিন্তু যদি যীশু যে এমন দাবী করেছিলেন তার প্রমাণ থাকে, আর সেই প্রমাণ জোরালো হয়, তাসত্ত্বে প্রস্তাবটি সংক্রান্ত এই ট্রাইলেমাটি বা ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব (তিনটি অপছন্দনীয় বক্তব্যর মধ্যে একটিকে বেছে নেবার দ্বন্দ্ব) হাস্যকরভাবে অপ্রতুল হতো। চতুর্থ সম্ভাবনা, যা এত স্পষ্ট যে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, তা হলো আসলেই যীশু ভুল করেছিলেন। সেই সাথে বহু মানুষও। যাই হোক না কেন আমি আগেও বলেছি, ঐতিহাসিকভাবে এমন কোনো ভালো প্রমাণ নেই যে যীশু আসলেই নিজেকে কখনো স্বর্গীয় ভেবেছিলেন।

কোনো একটি বিষয় সম্বন্ধে কিছু লেখা আছে, এই বিষয়টাই সেই সব মানুষদেরকে সহজেই প্ররোচিত করার জন্য যথেষ্ট, যারা কিনা সাধারণত এধরনের প্রশ্নের সাথে খুব একটা অভ্যস্ত না যেমন: কে লিখেছেন এটি এবং কখন? কেমন করে তারা জেনেছিলেন কি লিখতে হবে? তারা কি, তাদের সময়ে যা সত্য বোঝাতে চেয়েছেন, আর আমাদের সময়ে আমরা সেই সত্যটি নিয়ে যা ভাবছি, তারা কি আসলেই ঠিক সেটাই বলতে চেয়েছিলেন? তারা কি পক্ষপাতিত্ব মূক্ত পর্যবেক্ষক ছিলেন? বা তাদের নিজস্ব কিছু এজেণ্ডা বা উদ্দেশ্য ছিল, যা তাদের লেখার প্রকৃতি নির্ধারণ করেছিল? উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিজ্ঞ ধর্মতাত্ত্বিকরা নিঃসন্দেহে প্রমাণ জড়ো করেছেন যে গসপেল আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয় সেই সময়ের প্রকৃত বাস্তবতায় ইতিহাসে আসলেই কি ঘটেছিল তার বর্ণনা হিসাবে। সবকিছু লেখা হয়েছে যীশু মারা যাবার বহুদিন পরে এবং এমনকি পলের এপিষ্টল (৪৭) রচনার পরে, যেখানে আদৌ যীশুর জীবনে ঘটা পরবর্তীতে প্রস্তাবিত তথাকথিত ঘটনাগুলোর প্রায় কোনোটাই উল্লেখ করা হয়নি। এই সবগুলোরই অনুলিপি, পুনঅনুলিপি হয়েছে বহুবার ‘চাইনীজ হুইজপারস প্রজন্মের মত (৫ অধ্যায় দ্রষ্টব্য) ভ্রমপ্রবণ অনুলিপিকারকদের মাধ্যমে, যাদের ভুল না হওয়াটাই অস্বাভাবিক, আর তাদেরও নিজেদের ধর্মীয় এজেণ্ডাও আছে।

ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে রং চড়ানোর একটি ভালো উদাহরণ হলো বেথলেহেমে যীশুর হৃদয় স্পর্শ করা জন্মকাহিনী, এরপরই নিরীহ মানুষদের উপর পরিচালিত হেরডের ভয়াবহ নৃশংস গণহত্যার কাহিনী। যখন যীশুর মৃত্যুর বহু বছর পরে গসপেলগুলো সংকলিত হয়েছিল, কেউই জানতো না তার জন্ম আসলে কোথায় হয়েছে। কিন্তু ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত একটি প্রফেসি বা ভবিষ্যদ্বাণীর (Micah 5:2) উপর নির্ভর করে ইহুদী ধর্মমতাবলম্বীরা ধারণা করতেন তাদের বহু প্রতীক্ষিত মেসিয়া বা ত্রাণকর্তার জন্ম হবে বেথলেহেমে। এই ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে, জন (৪৮) এর গসপেল (৪৯) সুস্পষ্টভাবে মন্তব্য করেছিলেন যে, যীশুর অনুসারীরা অবাক হয়েছিলেন, তিনি বেথলেহেমে জন্ম নেননিঃ ‘অন্যরা বলেন, এই হচ্ছে যীশু খ্রিষ্ট। কিন্তু কেউ কেউ বলেছিল, খ্রিষ্টের কি গ্যালিলি থেকে আসার কথা? ধর্মগ্রন্থ কি বলেনি, ডেভিডের বীজেই খ্রিষ্টের জন্ম হবে, বেথলেহেম শহরে, যেখানে ডেভিড বসবাস করতেন।

ম্যাথিউ (৫০) এবং ল্যুক (৫১) যীশুর জন্ম সমস্যাটার সমাধান করেছিলেন ভিন্ন ভাবে, সর্বোপরি যীশুর যে অবশ্যই বেথলেহেমে জন্ম হয়েছে এই সিদ্ধান্ত নেবার মাধ্যমে; কিন্তু তারা দুজনই তাদের কাহিনীতে তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ন ভিন্ন পথে। ম্যাথিউ যেমন মেরী এবং জোসেফকে বেথলেহেমের বাসিন্দা বলেই উল্লেখ করেছেন, যীশুর জন্মের পর শুধু মাত্র তারা নাজারেথে বসবাস শুরু করেছিলেন এই বলে, সেটা মিসর থেকে ফেরার পর, যেখানে তারা রাজা হেরডের নিরীহ মানুষদের গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য পালিয়েছিলেন। কিন্তু লুক, এর ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ যীশুর জন্মের আগেই মেরী এবং জোসেফ এর বসবাস ছিল নাজারেথে, সুতরাং তিনি কিভাবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী মেলানোর জন্য তাদের সেই বিশেষ মুহূর্তে বেথলেহেমে নিয়ে আসবেন? এজন্য ল্যুক বললেন যে, যে সময় সাইরেনিয়াস (কিরিনিয়াস) সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন, সীজার অগাষ্টাস কর আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি সাম্রাজ্যব্যাপী আদম শুমারীর নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ ছিল প্রত্যেককে তাদের জন্ম যে শহরে শুমারীর জন্য সেখানে ফিরে যেতে হবে। জোসেফ ছিল আবার ডেভিডের বংশধারার, এবং সে কারণে তাকে ডেভিডের সেই শহরে যেতে হবে, যার নাম বেথলেহেম। এই সমাধানাটাকে অবশ্যই মনে হয়েছিল সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, এ এন উইলসন (৫২) তার ‘জীসাস’ এবং রবিন লেইন ফক্স (৫৩) তাঁর ‘দি আনঅথোরাইজড ভার্শন’ (এছাড়া আরো অনেক সূত্রে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন, ডেভিড, যদি তার অস্তিত্ব থেকে থাকে, তিনি বেঁচে ছিলেন মেরী এবং জোসেফের চেয়ে প্রায় ১০০০ বছর আগে। এছাড়া রোমানদের কি এমন কারণ ছিল, যার জন্য জোসেফকে তার হাজার বছর আগে দূর সম্পর্কের কোনো পূর্বপুরুষের শহরে আসতে হবে, এছাড়া তারা এমনটা চাইবেই বা কেন? অনেকটা যেমন শুমারীর ফর্মে আমার ক্ষেত্রে প্রয়োজন আছে নির্দিষ্ট করে বলা, অশৰী- দ্য- লা- জোউখ হচেছু আমার জন্ম শহর, যদি আমি আমার পূর্বপুরুষের প্রাচীন ইতিহাস ঘেটে আমি সেইনোর দ্য ডাকেইন অবধি যেতে পারি, যিনি সেই শহরে উইলিয়াম দ্য কনকেররের সাথে এসেছিলেন এবং সেখানে বসতি গড়েছিলেন।

এছাড়াও ল্যুক যাচাই না করে সেই সব ঘটনার বিবরণ দিয়ে সময়ের হিসাবেও গোলমাল করেছেন, যার সত্যতা ঐতিহাসিকরা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। গর্ভনর কিরিনিয়াসের সময় সত্যি একটি শুমারী হয়েছিল– একটি স্থানীয় শুমারী, সিজার অগাষ্টাসের ডিক্রি করা সম্রাজ্যব্যাপী কোনো শুমারী ছিল না সেটা, ল্যুকের বর্ণিত সময়েও সেটি হয়নি, সেটা হয়েছিল আরো অনেক পরে, ৬ খ্রিষ্টাব্দে, হেরোডের মৃত্যুর বহুদিন পর। লেন ফক্স উপসংহার টানেন এই বলে যে, ল্যুকের এর গল্প ঐতিহাসিকভাবেই অসম্ভব এবং অন্তর্গতভাবেই অসংলগ্ন, কিন্তু তিনি ল্যুকের সমস্যা এবং তার ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত মিকাহ এর ভবিষ্যদ্ববাণী পূর্ণ করার ঐকান্তিক ইচ্ছার সাথে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

ফ্রি ইনকোয়ারী পত্রিকাটির ডিসেম্বর, ২০০৪ সংখ্যায় টম ফ্লিন– এই অসাধারণ প্রত্রিকাটির সম্পাদক– এসব পাল্টা যুক্তি, এবং লোকপ্রিয় ক্রিসমাসের গল্পের কিছু অসংলগ্ন অংশ নিয়ে লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ সংকলন করেছিলেন; ফ্লিন নিজেও অনেক অসঙ্গতির তালিকা করেছিলেন ম্যাথিউ এবং ল্যুকের মধ্যে, শুধুমাত্র যে দুইজন ইভানজেলিস্ট বা ধর্মপ্রচারক, যারা শুধু যীশুর জন্ম নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন (৫৪)। রবার্ট গিলুলী দেখিয়েছেন, কেমন করে যীশু কিংবদন্তীর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো (৫৫): পূর্ব দিকের নক্ষত্র, কুমারী মার সন্তান প্রসব, সদ্যজাত শিশুর প্রতি রাজাবাদশাদের উপঢৌকন এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি, পুনরুত্থান বা রেজারেকশন, স্বর্গে আরোহন, একেবারে প্রত্যেকটি বিষয় ধার করা হয়েছে। ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং নিকট প্রাচ্যে প্রচলিত অন্যান্য নানা ধর্ম থেকে। ফ্লিনের প্রস্তাব ছিল, ইহুদী পাঠকদের সুবিধার লক্ষ্যে মেসিয়ানিক প্রফেসি বা ঈশ্বরের দুতের আবির্ভাব সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করার জন্য ম্যাথিউর (ডেভিডের বংশধর, বেথলেহেম এ জন্ম) ইচ্ছা মুখোমুখি হয় ইহুদী নয় এমন সমাজের জন্য খ্রিষ্ট ধর্মকে খাপ খাওয়ানোর জন্য ল্যুকের প্রচেষ্টার সাথে, সেজন্য প্যাগান হেলেনিষ্টিক (৫৬) ধর্মগুলোর নানা পছন্দের বিষয়গুলো (কুমারী মার সন্তান প্রসব, রাজাদের ভক্তি প্রদর্শন ইত্যাদি) যোগ করা হয়; এর ফলাফলে অসঙ্গতিগুলো খুবই সুস্পষ্ট, কিন্তু বিশ্বাসীরা এসব চিরন্তনভাবে উপেক্ষা করতে কখনো ভুল করেনি।

শিক্ষিত আর বোধসম্পন্ন খ্রিষ্ট ধর্মীদের অবশ্য বিষয়টি বোঝার জন্য আইরা গ্রেসউইনের (৫৭) এর মত কারো প্রয়োজন নেই: ‘বাইবেলে আমরা যা পড়তে বাধ্য হই/সেটা আসলে সেকরম নয়, কিন্তু বহু স্বল্প জানা খ্রিষ্টানরা আছেন, যারা বাইবেলের কথা অক্ষরে অক্ষরেই চূড়ান্ত সত্য হিসাবে মনে করেন- যারা বাইবেলকে এত গুরুত্বের সাথে গ্রহন করেন যে তাদের কাছে এটি ইতিহাসের আক্ষরিক এবং নির্ভুল রেকর্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং সেকারণে এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সমর্থনে মূল ভিত্তি রচনা করেছে। এই মানুষগুলো কি কখনো এই বইটা খুলে পড়েনি যা তারা আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণ সত্য বলে বিশ্বাস করেন? কেনই বা তারা লক্ষ করেননি এই সব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মত সুস্পষ্ট সব অসঙ্গতিগুলো? যারা এটিকে আক্ষরিক অর্থে সত্য বলে বিশ্বাস করেন তাদের কি চিন্তা হয়না যে, ম্যাথিউ জোসেফের বংশসূত্র রাজা ডেভিডের বংশের সাথে জোড়া লাগিয়েছেন মধ্যবর্তী ২৮ টি প্রজন্ম দিয়ে, যা ল্যুক করেছেন ৪১ টি প্রজন্ম দিয়ে? আরো খারাপ ব্যপার হলো, এই দুই তালিকায় নামের প্রায় কোনো পুনরাবৃত্তি নেই। কিন্তু যাই হোক না কেন, যদি যীশুর জন্ম আসলেই কুমারী মায়ের গর্ভে হয়, সেখানে জোসেফের বংশপরিচয়ই তো অপ্রাসঙ্গিক, এবং সেটা, যীশুর সপক্ষে, ওল্ড টেষ্টামেন্টের সেই ভবিষ্যদ্বাণী, ডেভিডের বংশে মেসিয়ার জন্ম হবে, সে বিষয়টি তো আর পূর্ণ করে না।

বার্ট এহরম্যান (৫৭), যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বাইবেল স্কলার, যার, ‘দ্য স্টোরী বিহাইন্ড হু চেঞ্জড দি নিউ টেষ্টামেন্ট অ্যান্ড হোয়াই’ শিরোনামে একটি বইয়ে উন্মোচন করেছেন, কি বিশাল অনিশ্চয়তা নিউ টেষ্টামেন্ট এর মূল বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে রেখেছে (৫৮)। এই বইয়ের ভূমিকায় অধ্যাপক এহরম্যান আবেগঘণভাবে বাইবেল বিশ্বাসী মৌলবাদী থেকে তার চিন্তাশীল সন্দেহবাদী হবার ব্যক্তিগত শিক্ষামূলক যাত্রার কথা উল্লেখ করেন। যে যাত্রা পরিচালিত হয়েছিল ধর্মগ্রন্থের বিশালাকার ভুলগুলো অনুধাবন করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি যখন আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পদমর্যাদায় ক্রমশ উপরে উঠছিলেন একেবারে তলানির মুডি বাইবেল ইন্সস্টিটিউট থেকে হুইটন কলেজের মাধ্যমে (এই তালিকার একটু উপরে, কিন্তু তারপরও বিলি গ্রাহামের(৫৯) আলমা ম্যাটার) সেখান থেকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, দুনিয়ার সেরাদের শীর্ষে, প্রতিটা ধাপে তাকে সতর্কবাণী শুনতে হয়েছে, ক্রমবর্ধমান প্রগতিশীলতার ধারায় তার গোঁড়া মৌলবাদী খ্রিষ্ট ধর্মীয় মানসিকতা বজায় রাখা সহজ হবে না। এবং সেটাই সত্য প্রমাণিত হলো, এবং আমরা তার পাঠকরা এর উপকার পেলাম। বাইবেল সমালোচনায় অন্যান্য যুগান্তকারী বইয়ের মধ্যে আছে রবিন লেন ফক্স এর দি আনঅথোরাইজড ভার্সন, যার কথা এর আগেই বলেছি। এবং জাক বার্লিনারল্লো (৬০) এর ‘দ্য সেকুলার বাইবেল: হোয়াই ননবিলিভারস মাস্ট টেক রেলিজিয়ন সিরিয়াসলি।

চারটি গসপেল যাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্যানন বা ধর্মগ্রন্থের জন্য কম বেশী আনুমানিকভাবেই অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বাছাই করা হয়েছে, তাদের বেশ অনেকগুলো, কমপক্ষে ডজনখানেক নমুনা থেকে, যেমন, গসপেল অব টমাস, পিটার, নিকোডেমাস, ফিলিপ, বার্থোলোমিউ এবং মেরী ম্যাগডালেন ইত্যাদি (৬১)। এই সব গসপেলদের কয়েকটি যারা সেই সময় পরিচিত ছিল অ্যাপোক্রিফা বা যার সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রাতিষ্ঠানিক চার্চ) হিসাবে, এই বাড়তি গসপেলগুলোর কথাই টমাস জেফারসন উল্লেখ করেছিলেন, তার ভাইপোর কাছে লেখা একটি চিঠিতে;

নিউ টেষ্টামেন্ট বলার সময়, আমি ভুলে গেছি উল্লেখ করতে যে, তোমরা উচিৎ হবে খ্রিষ্টের প্রত্যেকটি ইতিহাসই পড়ে দেখা। এমনকি সেগুলোও যেগুলো একটি কাউন্সিল অব একলসিয়াসটিক এর সদস্যরা আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এদের চিহ্নিত করেছেন সিউডো ইভানজেলিস্ট বা মিথ্যা ধর্ম প্রচারণা হিসাবে, বাকীদের যেমন তারা চিহ্নিত করেছেন ইভানজেলিস্ট হিসাবে; যেহেতু এই সব সিউডো ইভানজেলিস্টদের গসপেল অন্যদের মতই একই মাত্রায় আমাদের অনুপ্রাণিত করার। দাবী করছে, তাদের এই দাবীটাকে তোমার নিজস্ব যুক্তি দিয়েই বিচার করতে হবে, ঐসব একলেসিয়াসটিকদের প্রদত্ত যুক্তি দিয়েনা।

ঐসব একলেসিয়াসটিকদের দ্বারা যে গসপেলগুলো বাতিল হয়েছে, তার কারণ সম্ভবত অন্য চারটি ক্যানোনিক্যাল বা চার্চের গ্রহনযোগ্য গসপেলের কাহিনীর তুলনায় সেখানে এমন কিছু গল্প আছে যা বিব্রতকরভাবে ব্যাখ্যার অযোগ্য। টমাসের গসপেলে যেমন, যীশুর শৈশবের অসংখ্য ঘটনার বিবরণ আছে, যেখানে শিশু যীশু তার ম্যাজিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছেন নানা দুষ্টামীতে, যেমন, খেলার সাথীদের ছাগলে রুপান্তরিত করেছেন বা খেলাচ্ছলে কাদা মাটিকে রুপান্তরিত করেছেন চড়ুই পাখিতে, কিংবা তার বাবাকে কাঠের কাজে সাহায্য করেছে রহস্যজনকভাবে কাঠের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিয়ে (৬২)। বলা হবে কেউ এই ধরনের মোটা দাগের অলৌকিক কাহিনী বিশ্বাস করে না যা টমাসের গসপেলে আছে, কিন্তু কোনো কম বেশী বিশেষ কারণও কিন্তু নেই, চারটি ক্যানোনিক্যাল গসপেলকে বিশ্বাস করার জন্য। তাদের সবার পদমর্যাদাই কিংবদন্তীর রুপকথার মত, রাজা আর্থার এবং তার রাউন্ড টেবিলের নাইটদের গল্পের মত সন্দেহজনক তথ্যপূর্ণ এই চারটি ক্যানোনিক্যাল গসপেলের প্রত্যেকটির সিংহভাগ সংগৃহীত হয়েছে একটি সাধারণ উৎস থেকে, হয় মার্কের গসপেল বা প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া কোনো কাজ যার সবচেয়ে আদি উত্তরসূরী ছিলেন মার্ক; কেউ জানেনা কারা ছিলেন সেই চার ইভানজেলিস্ট, তবে তারা ব্যক্তিগতভাবে কেউই যীশুর সাথে সাক্ষাৎ করেননি। বেশীর ভাগ বিষয় যা তারা লিখেছেন তা কোনো অর্থেই ইতিহাসের সত্যভাষণের সামান্যতম প্রচেষ্ঠা না বরং যা শুধুমাত্র ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে ধার করে নতুন করে লেখা। কারণ গসপেল তৈরী কারকরা খুব ভক্তির সাথে বিশ্বাস করতেন যে যীশুর জীবন যেন ওল্ড টেষ্টামেন্টের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলে যায়। এমন কি একটা ঐতিহাসিক কেসও তৈরী করা সম্ভব, যদিও বেশীর ভাগ মানুষ তা সমর্থন করবেন না, তাহলো, যে যীশু বলে আসলে কারো কোনো অস্তিত্বই কোনোদিনও ছিলনা, বেশ কয়েকজন সেটা করেছেনও ইতিমধ্যে, এর মধ্যে অন্যতম যেমন, লণ্ডন বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক জি. এ. ওয়েলস (৬৩) তার বেশ কিছু বইয়ে, যেমন ‘ডিড জিসাস এক্সিষ্ট?

যদিও যীশুর সম্ভবত অস্তিত্ব ছিল, কোনো সন্মানজনক বাইবেল বিশেষজ্ঞরা কেউই সাধারণত নিউ টেষ্টামেন্ট (এবং অবশ্যই ওল্ড টেষ্টামেন্ট) ইতিহাসে আসলে কি ঘটেছিল তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো রেকর্ড হিসাবে হিসাবে গ্রহন করেন না, এবং আমিও আর বাইবেলকে কোনো ধরনের ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে প্রমাণ হিসাবে আর আলোচনায় আনবো না। তার পূর্বসূরি জন। অ্যাডামসকে লেখা চিঠিতে টমাস জেফারসনের দূরদৃষ্টিপূর্ণ মন্তব্য। ‘একদিন আসবে যখন সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের দ্বারা কুমারী মাতার গর্ভে যীশুর রহস্যময় জন্ম কাহিনী, জুপিটারের মস্তিস্কে মিনার্ভার সৃষ্টির মত রুপকথার সাথে একই শ্রেনীতে আলোচিত হবে।

ড্যান ব্রাউনের (৬৪) উপন্যাস ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ এবং এর উপর আশ্রিত চলচ্চিত্রটি, চার্চ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তুমূল বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের এই চলচ্চিত্রটি বয়কট করার জন্যও উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমন কি যেখানে এটি প্রদর্শিত হয়েছিল সেখানে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটি মনগড়া, বানানো, লেখকের কল্পনাপ্রসূত একটি কাহিনী। এই অর্থে, এটা ঠিক গসপেলের মতই। দ্য ভিঞ্চি কোড এবং গসপেল এর মধ্যে পার্থক্য শুধু, গসপেলগুলো হচ্ছে প্রাচীন কাহিনী আর দ্য ভিঞ্চি কোড হচ্ছে আধুনিক একটি কাহিনী।

শ্রদ্ধেয় ধার্মিক বিজ্ঞানীদের থেকে আসা যুক্তি

বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে প্রখ্যাত মানুষদের বিশাল একটি অংশ খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু তারা বিষয়টি জনস্বমক্ষে লুকিয়ে রাখেন, কারণ তারা তাদের রোজগার হারাতে চান না।– বাট্রাণ্ড রাসেল।

নিউটন (৬৫) ধার্মিক ছিলেন, আপনি কে বলুন তো, নিজেকে নিউটন, গ্যালিলেও (৬৬), কেপলার (৬৭) ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদিদের চাইতে কি উৎকৃষ্ট মনে করেন নিজেকে? যদি তাদের জন্য ঈশ্বর যথেষ্ট হতে পারে, আপনি নিজেকে ঠিক কি মনে করছেন?– এমনিতেই এটা নিজেই যথেষ্ট পরিমান বাজে একটা যুক্তি, তেমন কোনো কিছুই আসে যায় না যদিও, তারপরও কোনো কোনো ধর্মবাদীরা এমন কি এর সাথে ডারউইনের (৬৮) নাম যুক্ত করেছেন, যার বিরুদ্ধে স্থায়ী এবং সহজে প্রমাণ করা সম্ভব এমন একটি মিথ্যা গুজব প্রচলিত আছে যে, মৃত্যুশয্যায় তিনি নকি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন, বিষয়টি বিরতিহীনভাবে বার বার ফিরে আসে দুর্গন্ধের মত (৬৯); যখন থেকে এটি শুরু করেছিল জনৈক লেডি হোপ (৭০), যিনি একটা আবেগময় গল্প বুনেছিলেন এভাবে: অসুস্থ ডারউইন সন্ধ্যার আলোয় বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন, নিউ টেষ্টামেন্টের পাতা উল্টাচ্ছেন এবং স্বীকারোক্তি করছেন যে, বিবর্তন তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুল। এই অংশে আমি মূলত বিজ্ঞানীদের উপর মনোযোগ দেব, কারণটা– যা হয়ত কল্পনা করা- খুব বেশী কষ্টসাধ্য নয়, যারা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের ধর্ম প্রাণ হিসাবে জাহির করতে চান, তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীদের উদাহরণ দিতে পছন্দ করে থাকেন।

নিউটন সত্যিই নিজেকে ধার্মিক বলে দাবী করেছিলেন, আমার মনে হয়, প্রায় সবাই তেমনটি করেছিলেন উল্লেযোগ্যভাবে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত; এর কারণ এ সময়ের পর বাধ্যতামূলকভাবে ধর্ম বিশ্বাস প্রকাশের উপর সামজিক এবং আইনগত চাপ, এর পূর্ববর্তী শতাব্দীগুলোর তুলনায় বহুলাংশে শিথিল হয়ে পড়েছিল এবং ধর্ম পরিত্যাগের সপক্ষে বৈজ্ঞানিক সমর্থনও ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী। অবশ্যই এই সময়ের দুই দিকেই এর ব্যতিক্রম ছিল। এমনকি ডারউইনের আগেও, সবাই কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না, যেমন, জেমস হট (৭১) তার টু থাইজ্যান্ড ইয়ারস অব ডিসবিলিফ: ফেমাস পিপল উইথ দা কারেজ টু ডাউট’ বইয়ে দেখিয়েছেন এবং তেমনি অনেক প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডারউইনের পরেও তাদের ঈশ্বর বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি। কারো পক্ষেই খ্রিষ্টান হিসাবে মাইকেল ফ্যারাডের (৭২) ধর্মবিশ্বাসকে আন্তরিক না ভাবার কোনো অবকাশ নেই, এমনকি সেই সময়ের পরেও যখন তিনি নিশ্চয়ই ডারউইনের কাজ সম্বন্ধে অবশ্যই কিছু জানতেন। তিনি সান্ডেম্যানিয়ান সেক্টের সদস্য ছিলেন, যারা (অতীত অর্থে কারণ বর্তমানে তারা একরকম বিলুপ্ত) বাইবেলের আক্ষরিক ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী ছিলেন, এবং আচার অনুষ্ঠান করে তারা নতুন সদস্যদের পা ধুইয়ে দিতেন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা বোঝার জন্য লটারী করতেন। ১৮৬০ সালে ফ্যারাডে এই সেক্ট এর একজন গুরুজন বা এল্ডার হয়েছিলেন, যার একবছর আগেই অরিজিন অব স্পিসিস প্রকাশিত হয়েছিল এবং স্যান্ডেম্যানিয়ান হিসাবে ১৮৬৭ সালে মারা যান। পরীক্ষক ফ্যারাডের তাত্ত্বিক অপর পক্ষ, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (৭৩), একই মাত্রায় নিবেদিত প্রাণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তেমনি ছিলেন, উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ পদার্থবিদ্যার আরেক স্তম্ভ উইলিয়াম থমসন (৭৪), লর্ড কেলভিন, যিনি চেষ্টা করেছিলেন প্রমাণ করতে, যে সময়ের অভাবেই বিবর্তন সম্ভব না। এই মহান থার্মোডিনামিষ্ট এর পরিমিত ভুল সময়ের হিসাব অনুযায়ী, সূর্য হচ্ছে এক ধরনের আগুন, যা জ্বালানী পোড়াচ্ছে, যে জ্বালানী কয়েকশ মিলিয়ন বছরে শেষ হয়ে যাবে, কয়েক হাজার মিলিয়ন বছর নয়। কেলভিনের পারমাণবিক শক্তি সম্বন্ধে অবশ্যই কোনো ধারণা ছিল না। সন্তোষজনক ব্যপার হচ্ছে, ১৯০৩ সালে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন এর সভায়, সেই দ্বায়িত্ব পড়েছিল ডারউইনের দ্বিতীয় ছেলে, স্যার জর্জ ডারউইনের (৭৫) উপর, তার স্যার উপাধি না পাওয়া বাবার ধারণার সপক্ষে প্রমাণ হিসাবে মাদাম কুরীর রেডিয়াম আবিষ্কারের বিষয়টি তিনি ব্যবহার করেছিলেন তখনও জীবিত লর্ড কেলভিনের পৃথিবীর অতিবাহিত সময় পরিমাপকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য।

বিংশ শতাব্দী জুড়ে, ক্রমশ বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকরা, যারা নাকি ধর্ম বিশ্বাস প্রচার করেছেন, তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারা একেবারে দুর্লভ তা কিন্তু না। আমার সন্দেহ সাম্প্রতিককালের বেশীর ভাগ সে ধরনের বিজ্ঞানীরা আসলে আইনস্টাইনীয় অর্থেই কেবল ধার্মিক, যে প্রসঙ্গে আমি প্রথম অধ্যায়ে যুক্তি দিয়েছিলাম ধর্ম শব্দটির একটি অপব্যবহার হিসাবে। যাই হোক, অবশ্যই অনেক ভালো বিজ্ঞানীদের উদাহরণ আছে যারা আন্তরিকভাবেই প্রচলিত অর্থে ধার্মিক। সমসাময়িক ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনটি নাম প্রথমেই নজর কাড়ে, ডিকেন্সীয় উপন্যাসে বর্ণিত আইনজীবিদের কোনো ফার্মের উর্ধতন সহযোগীদের নামের সাথে পছন্দনীয় একটি সদৃশ্যতা সহ: পিকক (৭৬), স্ট্যানার্ড (৭৭) এবং পোলকিংহর্ন (৭৮)। এরা তিনজনই হয় টেম্পলটন পুরষ্কার জিতেছেন অথবা টেম্পলটন ফাউন্ডেশনের ট্রাষ্টি বোর্ডে আছেন। তাদের প্রত্যকের সাথে ব্যক্তিগত এবং জনসমক্ষে হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা পরও আমি বিস্মিত হয়েছি, বিস্ময়ের কারণ কিন্তু কোনো এক ধরনের মহাজাগতিক আইনপ্রণেতার উপর তাদের স্থাপিত বিশ্বাস না, বরং তাদের খ্রিষ্ট ধর্মের নানা বিস্তারিত বিষয়গুলোর প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখে: রেজারেকশন বা পুনরুত্থান, পাপের জন্য ক্ষমা ইত্যাদি নানা কিছু।

যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের সমতুল্য কিছু উদাহরণ আছে, যেমন ফ্রান্সিস কলিন্স (৭৯), মূল বা অফিসিয়াল হিউমান জিনোম প্রোজেক্ট এর যুক্তরাষ্ট্র অংশের প্রশাসনিক প্রধান (৮০)। কিন্তু ব্রিটেনের মতই, তারা চিহ্নিত দূর্লভ একটি ব্যতিক্রম হিসাবে, এবং তারা তাদের সহকর্মী এবং অ্যাকাডেমিক সমাজে কৌতুকময় বিস্ময়ের কারণ। ১৯৯৬ সালে, কেমব্রিজে ক্লেয়ারে তার পুরোনো কলেজের বাগানে আমি আমার বন্ধু হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্টের একজন প্রতিষ্ঠাতা প্রতিভা জিম ওয়াটসনের (৮১) সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম বিবিসি একটি প্রামাণ্য চিত্রের জন্য, যা আমি তৈরী করেছিলাম খোদ জেনেটিকস বিষয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রতিভা হিসাবে চিহ্নিত গ্রেগর মেন্ডেলকে (৮১) নিয়ে। অবশ্যই মেন্ডেল ধার্মিক ছিলেন, অগাষ্টানিয়ান অর্ডারের একজন মঙ্ক (যাজক/সন্ন্যাসী); কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেটা উনবিংশ শতাব্দী, যখন তরুণ মেন্ডেলের জন্য এই ধর্মযাজক হওয়াটাই সহজতম উপায় ছিল তার বিজ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য। তার জন্য এটি গবেষণা অনুদান বা রিসার্চ এ্যান্টের সমতুল্য। আমি ওয়াটসনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি। কি অনেক ধর্ম বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের চেনেন কিনা? তার উত্তর ছিল:

‘প্রকৃত পক্ষে একজনও না, কদাচিৎ কারো কারো সাথে দেখা হয়েছে, আমি বিব্রত বোধ করেছি (হাসি), তুমি তো জানো, ব্যক্তিগত বা গুপ্তভাবে পাওয়া কোনো সত্যকে যারা মেনে নেয়, তাদের আমি বিশ্বাস করতে পারিনা। মলিকুলার জেনেটিকস বিল্পবের ওয়াটসনের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ফ্রান্সিস ক্রিক (৮২) কেমব্রিজের চার্চিল কলেজে তার ফেলোশীপের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন কারণ একজন দাতার অনুরোধের প্রেক্ষিতে কলেজটির কর্তৃপক্ষ একটি চ্যাপেল বানানো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ক্লেয়ারে ওয়াটসনের সাক্ষাৎকারের সময় আমি সচেতনভাবে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি এবং ক্রিক এর থেকে ব্যাতিক্রম কিছু মানুষ কিন্তু বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত দেখেন না, কারণ তাদের দাবী বিজ্ঞান হচ্ছে কেমন করে কোনো কিছু কাজ করে এবং ধর্ম হচ্ছে এসব কিসের জন্য। ওয়াটসনের মন্তব্য: বেশ, আমি মনে করিনা আমরা কোনো কিছুর জন্য সষ্ট, আমরা বিবর্তনের একটি ফলাফল মাত্র। আপনি বলতে পারেন, তাহলে তো আপনার জীবন নিশ্চয়ই ভীষণ হতাশার, যদি আপনার জীবনের কোনো উদ্দেশ্য না থাকে। কিন্তু তখন আমি একটা ভালো দুপুরের খাওয়ার আশা করছিলাম। আমরা সেদিন চমৎকার একটি মধ্যাহ্ন ভোজনও করেছিলাম।

ধর্মীয় অ্যাপোলজিষ্ট বা সমর্থনকারীদের সত্যিকার অর্থে একজন খাঁটি প্রখ্যাত ধার্মিক বিজ্ঞানীকে খুঁজে করে বের করার চেষ্টার মধ্যে হতাশার সুস্পষ্ট, যা আসলেই খালি কলসীর তলে হাতড়ানোর মত ফাঁকার আওয়াজ তৈরী করে। যে একমাত্র ওয়েবসাইট আমি খুঁজে পেয়েছি, যারা দাবী করে নোবেল জয়ী খ্রিষ্টান বিজ্ঞানীদের তালিকা আছে বলে, তারা সেই তালিকায় কয়েক শত নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছয় জনের নাম উল্লেখ করেছে। এই ছয়জনের মধ্যে আবার চারজন নোবেল পুরষ্কারই পাননি আদৌ; এবং অন্তত একজন, আমি নিশ্চিভাবে জানি, অবিশ্বাসী, যিনি চার্চে যান শুধুমাত্র সামাজিক কারণে। বেনজামিন বেইট-হালাহমির আরো বেশী পদ্ধতিগত গবেষণা প্রমাণ করে যে, বিজ্ঞানে নোবেল জয়ীরা, এমন কি যারা সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমানে ধর্মবিশ্বাসহীনতার হার, তারা যে জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন, যখন তার সাথে তুলনা করা হয়, প্রতীয়মান হয় যে তা সুস্পষ্টভাবে বেশী (৮৩)। ১৯৯৮ সালে প্রথম সারির জার্নাল নেচার এ লারসন এবং হুইথাম তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, যে সব আমেরিকার বিজ্ঞানীদেরকে তাদের সহকর্মীরা বিশেষভাবে প্রতিভাবান হিসাবে গণ্য করেছেন এবং তাদের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব সায়েন্সর সদস্য নির্বাচিত করেছেন (ব্রিটেনের ফেলল অব রয়্যাল সোসাইটির সমতুল্য),তাদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ বিজ্ঞানী ব্যক্তিগত ঈশ্বরের ধারণায় বিশ্বাস করেন (৮৪)। এই বিশাল পরিমান নিরীশ্বরবাদীদের তুলনামূলক আধিক্যের প্রায় ঠিক বিপরীত চিত্রটা প্রকাশ পায় বৃহত্তর আমেরিকার জনগনের মধ্যে, যেখানে ৯০ শতাংশের অধিক মানুষ কোনো না কোনো একটি অতিপ্রাকৃত সত্তায় বিশ্বাস করেন। এই সংখ্যাটি অবশ্য মাঝামাঝি,খানিকটা কম প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের মধ্যে, যারা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমীর সদস্য নন। প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের নমুনার মতই ধর্ম বিশ্বাসীরা এখানেও সংখ্যা লঘু, কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম নাটকীয় পরিমান, প্রায় ৪০ শতাংশ। পুরোপুরিভাবে আমি যা আশা করেছিলাম, যুক্তরাষ্টের বিজ্ঞানীরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের জনগন অপেক্ষা কম ধর্মপরায়ন। এবং সবচেয়ে প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা বাকী সবার চেয়ে কম ধার্মিক। লক্ষ করার মত বিষয় হচ্ছে, বহত্তর আমেরিকার জনগোষ্ঠীর ধার্মিকতার একেবারে বিপরীত অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্টের বুদ্ধিজীবি সমাজের উপরের সারির নিরীশ্বরবাদীতা (৮৫)।

একটা হালকা মজার ব্যপার হচ্ছে, প্রথম সারির সৃষ্টিতত্ত্ববাদের ওয়েবসাইট ‘আনসারস ইন জেনেসিস’ এ লারসন এবং হুইথামের এই গবেষণাটি উল্লেখ করেছে, কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের যে কিছু গলদ থাকতে পারে সেটা প্রমাণ করার জন্য না বরং তাদের আভ্যন্তরীন সংগ্রামের একটি অস্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ধর্মীয় আত্মপক্ষ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে যারা দাবী করছে বিবর্তন ধর্মের সাথে কোনো সংঘর্ষ সৃষ্টি করছে না। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব সায়েন্স পুরোপুরিভাবে ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের দখলে’ এ ধরনের একটি শিরোনামে ‘আনসারস ইন জেনেসিস’, বেশ তৃপ্তি সহকারে নেচার পত্রিকার সম্পাদককে লেখা লারসন এবং হুইথামের চিঠিটির শেষ অনুচ্ছেদটির উদ্ধৃতি দেয়:

‘আমরা যখন আমাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য তৈরী করছি, ন্যাস (NAS বা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব সায়েন্স) একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে পাবলিক স্কুলগুলোতে বিবর্তন পড়ানোর জন্য উৎসাহ দিয়ে, যা দীর্ঘদিন ধরে বৈজ্ঞানিক সমাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গ্রুপের মধ্যে চলমান বিতর্কের কারণ। এই পুস্তিকাটি পাঠকদের আশ্বস্ত করে এই বলে :”ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এই প্রশ্নের ব্যপারে বিজ্ঞানের অবস্থান নিরপেক্ষ’; ন্যাস প্রেসিডেন্ট ব্রুস অ্যালবার্ট বলেন, এই অ্যাকাডেমীর অনেক বিখ্যাত সদস্য খুবই ধার্মিক ব্যক্তি, যারা বিবর্তনে বিশ্বাস করেন, এবং তাদের অনেকেই জীববিজ্ঞানী, তবে আমাদের এই জরিপ অন্য কথা বলছে।

অ্যালবার্ট, যে কেউ বুঝতে পারবেন, নোমা’কে (NOMA) মেনে নিয়েছেন, যে কারণে বিষয়টি আমি ২য় অধ্যায়ে আলোচনা করেছি, ‘দ্য নেভিল চেম্বারলেইন স্কুল অব ইভোল্যুশনিষ্ট অংশে। ‘অ্যানসারস ইন জেনেসিস’ এর আসলে ভিন্ন অ্যাজেণ্ডা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব সায়েন্স এর সমতুল্য ব্রিটেনে {এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য যেমন, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্থান এবং ইংরেজী ভাষী আফ্রিকা ইত্যাদি, আছে রয়্যাল সোসাইটি।এই বইটা যখন প্রেসে আমার সহকর্মী আর এলিজাবেথ কর্নওয়েল এবং মাইকেল স্টিরাট তখন রয়্যাল সোসাইটির ফেলোদের ধর্মীয় মতামত নিয়ে তাদের গবেষণাপত্রটি লিখছিলেন, লেখকদের পুরো উপসংহার প্রকাশিত হবে পরে যথাসময়ে, কিন্তু তারা আন্তরিকভাবে আমাকে অনুমতি দিয়েছেন প্রাথমিক ফলাফলটি এখানে প্রকাশ করার জন্য। তারা যে টুলটি ব্যবহার করেছিলেন মতামত পরিমাপ করতে, তাহলে লাইকার্ট টাইপ এর সাত পর্যায়ের একটি স্কেল। সব, ১০৭৪ জন রয়্যাল সোসাইটির ফেলোদের মধ্যে যাদের একটি ইমেইল আছে (অধিকাংশেরই তা ছিল তাদের উপর জরিপটি চালানো হয়, এবং প্রায় ২৩ শতাংশ এর উত্তর দেন (এ ধরনের গবেষণায় এটি বেশ বড় একটি সংখ্যা); তাদের কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা প্রস্তাব করা হয়। যেমন, আমি ব্যক্তিগত ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, অর্থাৎ যিনি প্রতিটি একক ব্যক্তির ব্যপারে খোঁজ খবর করেন, প্রার্থনা শোনেন এবং জবাব দেন, নানা ধরনের পাপ এবং খারাপ কাজের ব্যপারে নজর রাখেন এবং বিচার করেন, এ ধরনের প্রতিটি প্রস্তাবের জন্য অংশগ্রহনকারীদের ১ (সম্পূর্ণ ভিন্নমত) থেকে ৭ (সম্পূর্ণ একমত) পর্যন্ত একটি সংখ্যাকে বেছে নিতে বলা হয় তাদের মতামত অনুযায়ী। এই গবেষণার ফলাফলটি লারসন এবং হুইথামে স্টাডিটির ফলাফলের সাথে তুলনা করা কঠিন, কারণ তারা (লারসন এবং হুইথাম) তাদের অংশগ্রহনকারীদের ৩ পয়েন্টের একটি স্কেল দিয়েছিলেন, এটির মত ৭ পয়েন্ট স্কেল নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সার্বিক প্রবণতাটা কিন্তু ছিল একই রকম। রয়্যাল সোসাইটির ফেলোদের বিশাল একটি অংশ, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাবিদ বিজ্ঞানীদের মতই মাত্র ৩.৩ শতাংশ সদস্য মতামত দিয়েছন ব্যক্তিগত ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে তাদের জোরালো সমর্থনের (অর্থাৎ তারা এই স্কেলের ৭ পছন্দ করেছেন), অন্যদিকে ৭৮.৮ শতাংশ জোরালো ভাবে কোনো ব্যক্তিগত ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যপারে তাদের ভিন্নমত পোষণ করেছেন (বা তারা এই স্কেলের ১ পছন্দ করেছেন); আপনি যদি এই স্কেলে যারা ৬ এবং ৭ পছন্দ করেছে তাদের বিশ্বাসী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন এবং যারা ১ ও ২ পছন্দ করেছে তাদের অবিশ্বাসী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন, তাহলে ২১৩ জনের একটা বড় অংশ দেখা যাচ্ছে অবিশ্বাসী আর মাত্র ১২ জনকে দেখা যাচ্ছে বিশ্বাসী হিসাবে। লারসন এবং হুইথামের মত বা বেইট হালাহমী এবং আরজাইলের গবেষণায় বা কর্নওয়েল এবং স্টিরাট এর গবেষণায় যা প্রতীয়মান হয়েছে তাহলো যদিও সামান্য কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবণতা আছে অন্যান্য শাখার বিজ্ঞানীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃতভাবে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে নিরীশ্বরবাদী সংখ্যায় বেশী হবার ক্ষেত্রে। বিস্তারিত আরো কিছু এবং কৌতূহদ্দেীপক উপসংহার জানার জন্য তাদের গবেষণা প্রকাশ হলে পড়ে দেখতে পারেন আগ্রহীরা (৮৬)।

ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী বা রয়্যাল সোসাইটির প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের থেকে এবার অন্যদিকে নজর দেই, এমন কোনো কি প্রমাণ আছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে নিরীশ্ববাদীরা সাধারণত বেশী শিক্ষিত এবং বেশী মেধা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী থেকেই আসছে? বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, ধার্মিকতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ও আই কিউ বা বুদ্ধাঙ্কে মধ্যে পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক নিয়ে, মাইকেল শেরমার (৮৭) তার ‘হাউ উই বিলিভ: দ্য সার্চ ফর গড ইন অ্যান এজ অব সায়েন্স’ এ বর্ণনা দিয়েছেন একটি বড় আকারের সার্ভের যেখানে র‍্যানডোমভাবে বাছাই করা যুক্তরাষ্ট্রের জনগোষ্ঠী মাঝে গবেষণা করেছিলেন শেরমার এবং তার সহযোগী ফ্র্যাঙ্ক সুলোওয়ে; তাদের পাওয়া চমকপ্রদ সব ফলাফলের মধ্যে ছিল ধর্মপ্রিয়তার আসলেই ঋণাত্মক বা নেগেটিভ একটি সম্পর্ক আছে উচ্চশিক্ষার সাথে, অর্থাৎ ধার্মিকতা ক্রমশ কমতে থাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ার সাথে সাথে; উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের ধর্মপ্রীতি থাকার সম্ভাবনা সাধারণত কম। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহের এবং রাজনৈতিক উদারপন্থিতার (খুব জোরালো) সাথে ধার্মিকতারও ঋণাত্মক সম্পর্ক আছে। এর কোনোটাই বিস্ময়কর ফলাফল যেমন নয় তেনি, এই সত্যটা অবাক করে না যেমন পিতামাতা ধার্মিকতার সাথে সন্তানদের ধার্মিকতার ধনাত্মক একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজ-বিজ্ঞানীরা ব্রিটিশ শিশুদের উপর গবেষণায় দেখেছেন, শুধুমাত্র প্রতি ১২ জনে একজন তাদের পিতামাতার ধর্মবিশ্বাস থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারে।

স্পষ্টতই বিভিন্ন গবেষকদের পরিমাপের পদ্ধতিটি ভিন্ন, সুতরাং বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল পারস্পরিক তুলনা করা সহজসাধ্য কাজ নয়। মেটা-অ্যানালাইসিস হচ্ছে একটা পদ্ধতি, যেখানে গবেষকরা কোনো একটি বিষয়ে প্রকাশিত সবগুলো গবেষণাপত্র নিয়ে দেখেন কতগুলো গবেষণা একই রকম উপসংহারে পৌঁছেছে আর কতগুলোই বা ভিন্ন কোনো একটা উপসংহারে উপনীত হয়েছে। ধর্ম এবং আই কিউ এর উপর আমার জানা একমাত্র মেটা অ্যানালাইসিসটি প্রকাশ করেছিলেন পল বেল ২০০২ সালে মেনসা ম্যাগাজিনে (মেনসা হচ্ছে উচ্চ বুদ্ধাঙ্ক বা আই কিউ সম্পন্ন মানুষদের একটি সোসাইটি, এবং আশ্চর্য হবার কোনো কারণ নেই যে তাদের ম্যাগাজিন এমন কিছু বিষয়ে প্রবন্ধ ছাপায় যা তাদের। মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি করে) (৮৮)। বেল এর মতে, ১৯২৭ থেকে শুরু করে ৪৩ টা স্টাডি করা হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক নিয়ে। মাত্র চারটি ছাড়া বাকী সবকয়টি একটি বিপরীত সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছ। অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার স্তর যত বেশী হবে, সেই মানুষগুলোর ধার্মিক হবার সম্ভাবনা বা কোনো ধরনের ‘বিশ্বাস’ ধারণ করার সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে।

যে কোনো মেটা-অ্যানালাইসিস অবশ্যই অনেক কম সুনির্দিষ্ট হয়, এই বিষয়ে যে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্টাডির তুলনায় যেগুলো সাধারণত এই মেটা-অ্যানালাইসিসের অংশ হয়। এই ধরনের আরো বেশী স্টাডি হলে ভালো, এমনকি সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমীগুলো বা প্রধান প্রধান পুরষ্কারগুলোর বিজয়ীদের, যেমন নোবেল, ক্র্যাফুর্ড, ফিল্ড, কিয়োটো, কসমস এবং অন্যান্যগুলো, মধ্যে আরো গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। আমি আশা করছি এই বইটির ভবিষ্যৎ সংস্করণে সেই সব উপাত্তগুলো সংযুক্ত হবে। বর্তমান স্টাডিগুলোর থেকে যুক্তিসঙ্গত উপসংহার, জননন্দিত রোল মডেল,বিশেষ করে বিজ্ঞানীদের ব্যপারে ধর্মীয় পক্ষ সমর্থনকারীদের জন্য হয়ত তাদের স্বভাববিরুদ্ধভাবেই চুপ থাকাটাই মঙ্গলজনক।

পাসকালের বাজী

বিখ্যাত ফরাসী গণিতজ্ঞ ব্লেইজ পাসকাল (৮৯) মনে করতেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিপক্ষে যত বড়ই সম্ভাবনা থাকুক না কেন, তার চেয়ে অনেক বেশী খেসারত দিতে হবে, যদি এ বিষয়ে কোনো ধরনের ভুল অনুমান করা হয়; তাই ঈশ্বরে বিশ্বাস করাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক হবে, কারণ আপনি যদি সঠিক হন, আপনি অনন্ত সুখের অধিকারী হবেন এবং আর আপনি যদি ভুলও করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার কোনো ক্ষতিও হচ্ছেনা। কিন্তু অন্যদিকে যদি আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেন, এবং যদি দেখা যায় আপনার ধারণাটা ভুল, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য আছে অনন্ত নরক যন্ত্রণা, আবার আপনি যদি সঠিকও হন, সেক্ষেত্রে আপনার কিছু আসবে যাবে না। এরকম একটি উভয় সংকটে সিদ্ধান্ত নিতে কি খুব বেশী মাথা খাটাতে হবে? সুতরাং ঈশ্বরে বিশ্বাস করুন।

কিন্তু ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, এই যুক্তিটিতে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অদ্ভুত ব্যপার আছে। কোনো কিছুকে বিশ্বাস করাকে কিন্তু আপনি কোনো পলিসি বা নীতি হিসাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, নিদেনপক্ষে বিশ্বাস এমন কোনো কিছু না যে, আমি তা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি নিজের একটি ইচ্ছা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আমি চার্চে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং আমি নাইসিন ক্রিড (৯০) পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি, আমি বাইবেলের উপর হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি এই বলে যে, এর ভিতরের সব শব্দকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু এসব কোনো কিছুই আমাকে আসলে সেটাকে বিশ্বাস করাবে না, যদি আমি নিজে বিশ্বাস না করি। পাসকালের বাজী তাই শুধু ‘যুক্তি’ হতে পারে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার ভান করার ক্ষেত্রে। এবং যে। ঈশ্বরকে আপনি বিশ্বাস করছেন বলে দাবী করছেন, ভালো হয় সে যেন সর্বজ্ঞ ধরনের কোনো ঈশ্বর না হয়, এর ব্যতিক্রম হলে তার পক্ষে এই ছলনার ব্যপারটা সহজে ধরে ফেলার কথা। আপনি সিদ্ধান্ত নেবার মাধ্যমে কিছু বিশ্বাস করতে পারবেন এমন হাস্যকর ধারণাটিকে বেশ সুন্দর ভাবে ঠাট্টা করেছিলেন ডগলাস অ্যাডামস (৯১) তার ‘ডার্ক জেন্টলিস হলিস্টিক ডিটেকটিভ এজেন্সি’ বইটিতে, যেখানে আমাদের সাথে দেখা হয়, একটি রবোটিক ইলেক্ট্রিক পুরোহিতের সাথে, শ্রম কমানোর যে যন্ত্রটি আপনি কিনতে পারবেন, যে আপনার পক্ষ হয়ে আপনার বিশ্বাস করার কাজটি করে দেবে। এর ডিলাক্স মডেলটির বিজ্ঞাপন করা হয়েছে, “এরা সল্ট লেক সিটিতে আপনি যা কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না, এরা সেটা বিশ্বাস করতে সক্ষম।

যাই হোক, কিন্তু কেন, আমাদের এই ধারণাটাকে সহজে গ্রহন করতে হবে যে, আপনি যদি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চান, আপনাকে অবশ্যই একটা জিনিস করতে, তাহলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে? বিশ্বাস করার মধ্যে কি বিশেষত্ব আছে? ঈশ্বররের কি দয়াশীলতা বা উদারতা বা নম্রতাকে পুরস্কৃত করার কথা না? অথবা আন্তরিকতাকে? কি হবে, যদি ঈশ্বর, একজন বিজ্ঞানী, যিনি সতোর সাথে সত্যের অনুসন্ধানকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানবীয় গুণ বলে মনে করেন? আসলেই তো, এই মহাবিশ্বের ডিজাইনার হিসাবে যাকে দাবী করা হয়, তাকে নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক হতে হবে? বার্ট্রান্ড রাসেলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যদি তার মৃত্যুর পর তিনি যদি ঈশ্বরের মুখোমুখি হন, এবং ঈশ্বর যদি জানতে চান, কেন রাসেল তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না? রাসেলের উত্তর ছিলো (আমি বলবো প্রায় অমর মন্তব্য), যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না ঈশ্বর, যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না। ঈশ্বরের কি পাসকালের কাপুরুষোচিত সুবিধাবাদী বাজীর চেয়ে রাসেলকে তার সাহসী সন্দেহবাদিতার জন্য বেশী শ্রদ্ধা করার কথা না (বাদ দিলাম রাসেলের সেই সাহসী শান্তিবাদিতা, যার কারণে তাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কারাভোগ করতে হয়েছিল)? এবং যদিও আমাদের জানার উপায় নেই, ঈশ্বর কোনো দিকে সমর্থন দেবেন এবং জানার প্রয়োজন আসলে নেই পাসকালের বাজীর যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য। মনে রাখতে হবে আমরা একটা বাজির কথা বলছি এবং পাসকাল কিন্তু বাজীর সপক্ষে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ ছাড়া আর বেশী কিছু দাবী করেননি; আপনি কি বাজী রাখবেন যে ঈশ্বর অসৎভাবে ভান করা বিশ্বাসকে (বা এমনকি সৎভাবে করা বিশ্বাসকে) আন্তরিক সৎ সন্দেহবাদীতার চেয়ে বেশী মূল্য দেন? এবং তারপরও ধরুন, আপনি মারা যাবার পর যে, ঈশ্বরের মুখোমুখি হলেন দেখা গেল তিনি বাল (Baal) এবং তার পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াহয়ে (জিহোভা) থেকে কোনো অংশে কম হিংসুটে না। পাসকালের জন্য ভুল কোনো ঈশ্বরের উপর বাজি রাখার চেয়ে কোনো ধরনের উপর ঈশ্বরের উপর না বাজি রাখাটাই কি উত্তম না? সম্ভাব্য অসংখ্য ঈশ্বর, দেব বা দেবীদের যে কোনো কারোর উপর বাজি রাখতে পারার সম্ভাবনাটি পাসকালের পুরো যুক্তিটাকে কি প্রশ্নবিদ্ধ করে না? পাসকাল সম্ভবত ঠাট্টা করছিলেন, যখন তিনি তার বাজীর পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন, ঠিক যেমন আমি এখন ঠাট্টাচ্ছলে একে বর্জন করছি। কিন্তু আমার সাথে মানুষের দেখা হয়েছে, যেমন কোনো লেকচারের পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে, যারা খুবই গুরুত্বের সাথে পাসকালের এই বাজীকে দাবী করেছে ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি হিসাবে, সুতরাং একারণেই এটিকে খানিকটা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা ছিল।

সবশেষে, পাসকালের বাজীর ঠিক বিপরীত কোনো বাজীর সপক্ষে কি যুক্তি প্রস্তাব করা সম্ভব? ধরা যাক, আমরা মেনে নেই, ঈশ্বরের অস্তিত্বের আসলে খুব সামান্য পরিমান সম্ভাবনা আছে। তাসত্ত্বেও বলা যেতে পারে আপনি একটি উত্তম এবং পরিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারবেন তার অস্তিত্বের উপর বাজি রাখার চেয়ে তার অস্তিত্বহীনতার উপর বাজী রাখার মাধ্যমে এবং এভাবে আপনার মূল্যবান সময় তাকে উপাসনা করার পেছনে অপচয় না করে, তার জন্য আত্মত্যাগ না করে, বা তার জন্য যুদ্ধ করে বা মৃত্যুবরণ না করে ইত্যাদি। আমি এখানে এই প্রশ্নটা নিয়ে আর অগ্রসর হবো না, কিন্তু পাঠকরা মনে রাখতে পারেন বিশেষ করে যখন আমরা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার পালনের প্রক্রিয়ার কি ধরনের অশুভ পরিণতি হতে পারে সেই সংক্রান্ত পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আলোচনা করবো।

বায়েসিয়ান যুক্তিগুলো

আমার মনে হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার সবচয়ে আজব কেসটি আমি দেখেছি বায়েসিয়ান যুক্তির ব্যবহারে, সম্প্রতি স্টিফেন আনউইন (৯২) এই যুক্তিগুলো প্রস্তাব করেছেন তার ‘দি প্রোবাবিলিটি অব গড’ বইটিতে। আমি প্রথমে খানিকটা ইতস্তত বোধ করছিলাম এই যুক্তিগুলো এখানে যোগ করার কথা ভেবে। যা শুধুমাত্র দুর্বলই না, এবং বহুকাল আগে থেকেই অপেক্ষাকৃত কম শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে। যদিও আনউইনের বইটি উল্লেখযোগ্যভাবে সাংবাদিকদের নজর কেড়েছিল যখন ২০০৩ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এছাড়াও এই যুক্তিটি আমার বেশ কিছু আলোচনার সূত্র একত্র করার একটা সুযোগ দিয়েছে। তার লক্ষ্য নিয়ে আমার খানিকটা সহমর্মিতা আছে, কারণ ২ নং অধ্যায়ে আমি যুক্তি দিয়েছিলাম, ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিশ্বাস একটি বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস এবং অন্ততপক্ষে নীতিগতভাবে পরীক্ষাযযাগ্য। আনউইন কুইকজোটিক বা অতিমাত্রায় আদর্শবাদী বাস্তব জ্ঞান বর্জিত একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনাটির একটি সংখ্যাগত পরিমাপক রুপ দিতে, যা আসলেই হাস্যকর।

বইটির উপশিরোনামটি, ‘এ সিম্পল ক্যালকুলেশন দ্যাট প্রভস দ্য আল্টিমেট টুথ’, শেষ সংস্করণে প্রকাশকের সংযোজন তা স্পষ্ট বোঝা যায়, কারণ এই অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস আনউইনের মূল বইয়ের ভাষায় পাওয়া যায় না। বইটাকে বলা যায়, একটি হাউ টু ম্যানুয়্যাল, এক ধরনের বায়েস এর থিওরেম ফর ডামিস’ গোছের কিছু, যা কিনা হালকা বিদ্রুপাত্মক ভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টিকে একটি কেস স্টাডি হিসাবে ব্যবহার করেছে। আনউইন অনায়াসে একই ভাবে কোনো কাল্পনিক খুনকে টেষ্ট কেস স্টাডি ব্যবহার করতে পারতেন বায়েস এর থিওরেম বোঝাতে: গোয়েন্দা তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে নানা আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন; রিভলভারে আঙ্গুলের ছাপ ইঙ্গিত করছে, মিসেস পিকক এই হত্যাটি করেছেন। এখন এই সন্দেহটাকে গাণিতিকভাবে পরিমাপ করুন তার উপর একটি সম্ভাবনার সম্ভাব্য সংখ্যা দিয়ে। কিন্তু প্রফেসর ধুম (৯৩) এর উদ্দেশ্য ছিল মিসেস পিকককে দোষী হিসাবে ফাসানোর জন্য। সুতারাং এর আগের সম্ভাবনার পরিমাপের থেকে একটি সংখ্যা পরিমান হ্রাস করুন; ফরেনসিক প্রমাণ বলেছে শতকরা ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে, বেশ দূর থেকে রিভলভারটি থেকে নির্ভুল নিশানায় গুলি বের হবার, যা দাবী করছে হত্যাকারী সম্ভবত সামরিক প্রশিক্ষন প্রাপ্ত, সুতরাং কর্নেল মাষ্টার্ডকে নিয়ে আমাদের বাড়তি সন্দেহটাকে একটা সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করুন। দেখা যাচ্ছে রেভারেণ্ড গ্রিনেরই খুন করার সবচে সম্ভাব্য মোটিভ আছে (৯৫): সুতরাং তার ক্ষেত্রে আমাদের গাণিতিক সম্ভাবনার পরিমাপটা বাড়ানো হোক। কিন্তু লম্বা সোনালী যে চুলের নমুনা নিহতের পরণের জ্যাকেটে পাওয়া গেছে সেটা মিস স্কারলেটের এবং এভাবে আরো ..। এরকম সাবজেক্টিভ বা আত্মগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভাবনার নানা গাণিতিক পরিমাপ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মনে ঘুরপাক খেতে থাকে, বারবার নানা সম্ভাবনা তাকে নানা দিকে টেনে নেবার চেষ্টা করতে থাকে। বায়েস এর থিওরেম তাকে উপসংহারে উপনীত হতে সহায়তা করার কথা। এটি হচ্ছে গাণিতিক একটি ইঞ্জিন যা নানা সম্ভাব্য সংখ্যাকে যুক্ত করে একটি চূড়ান্ত রায় দেয়, যার আবার সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি সম্ভাবনার পরিমাপ আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে চূড়ান্ত সংখ্যাটি কতটুকু উত্তম হবে তা নির্ভর করবে ইঞ্জিনে ইনপুট করা মূল সংখ্যাগুলোর উপর। এগুলো সাধারণত আত্মগতভাবে বিচার করা বা সাবজেকটিভ এবং সে কারণে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সন্দেহগুলোও এই হিসাবে প্রবেশ করে। সেই GIGO নীতিও (Garbage in Garbage Out) (৯৫) এখানে প্রযোজ্য, এবং আনউইনের ঈশ্বর উদহারণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রযোজ্য বললে খুব বেশী লঘুকরণ করা হয়ে যায়।

আনউইন একজন ঝুঁকি ব্যস্থাপনা পরামর্শক যার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী পরিসংখ্যানের পদ্ধতির তুলনায় বিশেষ দূর্বলতা আছে বায়েসিয়ান পদ্ধতিতে উপসংহারে উপনীত হবার। তিনি বায়েসীয় থিওরেমটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কোনো হত্যাকাণ্ডের কেস স্টাডি না বরং সবচেয়ে বড় যে টেষ্ট কেস, ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়টিকে। তার পরিকল্পনা হলো সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা দিয়ে বিষয়টি শুরু করা, যা তিনি পরিমাপ করার চেষ্টা করেছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্ব উভয়ের শতকরা ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা দিয়ে। তারপর তিনি তালিকা করেছেন মোট ৬ টি ফ্যাক্ট এর যাদের এই বিষয়ের উপর প্রভাব থাকার সম্ভাবনা আছে, এবং প্রত্যেকটিকে একটি করে পরিমাপগত সংখ্যা ভাগ করে দেয়া হয়েছে, এবং এরপর সব সংখ্যাগুলোকে বায়েসীয় থিওরেম এর ইঞ্জিনে ইনপুট করার পর তিনি লক্ষ করেছেন কোনো সংখ্যাটি বের হয়ে আসে। সমস্যা হচ্ছে (আবার পুনরাবৃত্তি করছি) এই ৬ টি সংখ্যা যা প্রত্যেকটি নিয়ামক ফ্যাক্টের সাথে প্রদান করা হয়েছে তা আসলে পরিমাপ করা নয়, এটি সম্পূর্ণ ভাবে স্টিফেন আনউইনের ব্যক্তিগত বিচার বিবেচনার দ্বারা প্রদত্ত, যা এই অনুশীলনের খাতিরে সংখ্যায় রুপান্তরিত করা হয়েছে। এই ৬ টি বাস্তব তথ্য বা ফ্যাক্ট হচ্ছে:

১. আমাদের ভালোমন্দ বোঝার একটি ক্ষমতা আছে

২. মানুষ অনেক অশুভ কাজ করে (হিটলার, স্টালিন, সাদ্দাম হুসেইন)।

 ৩. প্রকৃতিও অশুভ কাজ করে (ভুমিকম্প, সুনামি, হারিকেন)

৪. ছোটখাট অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে (আমি আমার চাবি হারিয়ে ফেলেছিলাম এবং আবার তা আমি খুঁজে পেলাম)

 ৫. বড় মাপের অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে (যীশু তার মৃত্যুর পরে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিলেন)

৬, মানুষের নানা ধরনের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা আছে।

এইসব কিছুর অবশেষে যা প্রমাণ করে (আমার মতে, কোনো কিছুই না) তা হলো, দোদুল্যমান বায়েসীয় দৌড় যেখানে ঈশ্বর আগে থেকে বাজীতে এগিয়ে ছিলেন, খানিকটা পিছিয়ে পড়েন, তারপর আবার ধীরে ধীরে তার ৫০ শতাংশ জায়গায় ফিরে যান, যেখান থেকে তিনি শুরু করেছিলেন, অবশেষে শেষ পর্যন্ত তিনি আনউইনের হিসাব মতন ৬৭ শতাংশ সম্ভাবনা অর্জন করেন তার অস্তিতের সপক্ষে এখানে আনউইন সন্তুষ্ট হতে পারেননি বায়েসীয় ফলাফলের উপর, তার কাছে এই ৬৭ শতাংশ যথেষ্ট বেশী মনে হয়নি, সুতরাং তিনি একটা অদ্ভুত একটি ধাপের শরণাপন্ন হন, জরুরী ভাবে তিনি বিশ্বাস’কে এর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এই সম্ভাবনাকে নিয়ে যান ৯৫ শতাংশর কাছে। স্পষ্টত এটা মনে হতে পারে একটা ঠাট্টা, কিন্তু আসলে ঠিক এভাবেই তিনি কাজটি করেছেন; ঠিক কেন এভাবে কাজটি করেছেন সেটার ব্যাখ্যা আমি যদি দিতে পারতাম ভালো হতো, কিন্তু আসলে আমারও আর কিছুই বলার নেই এ বিষয়ে। এই ধরনের উদ্ভট দাবী আমি আগেও দেখেছি অন্য ক্ষেত্রে, যখন আমি ধার্মিক কিন্তু বুদ্ধিমান বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ করেছি তাদের বিশ্বাসের সপক্ষে তাদের যুক্তি ব্যাখা করার জন্য, বিশেষ করে তারা যখন নিজেরাই স্বীকার করেন তাদের বিশ্বাসের সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই: “আমি স্বীকার করছি কোন প্রমাণ নেই। এজন্য কারণ আছে কেন একটাকে ‘বিশ্বাস বা ফেইথ বলা হয়’ (এই শেষ বাক্যটি উচ্চারণ করা হয় প্রায় সুস্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে, আত্মপক্ষ সমর্থন মূলক এমন বক্তব্যর জন্য নুন্যতম অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইবার কোনো ধরনের নমনীয়তার চিহ্ন ছাড়াই)।

আশ্চর্যজনকভাবেই আনউইনের ৬ টি প্রস্তাবনার তালিকায় ডিজাইন থেকে যুক্তি নেই, এছাড়া আকোয়াইনাস এর পাঁচটি প্রমাণের একটিও এখানে নেই, এছাড়াও বাকী অনটোলজিক্যাল যুক্তিগুলোও নেই। এইসব যুক্তিগুলোর সাথে আনউইনের যুক্তির কোনো লেনদেন নেই এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা প্রশ্নে তার গাণিতিক পরিমাপে ক্ষেত্রে এদের সামান্য অবদান ও প্রভাব নেই। ভালো পরিসংখ্যানবিদের মতই তিনি এগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং ফাপা যুক্তি বলে এগুলো বাতিল করেছেন। আমি এজন্য তাকে প্রাপ্য স্বীকৃতি দেবো, যদিও তার ডিজাইন যুক্তি বাতিল করার কারণ আমার থেকে ভিন্ন। কিন্তু তার বায়েসীয় দরজা দিয়ে যে যুক্তিকে তিনি প্রবেশাধিকার দিয়েছেন, সেটাও একই রকম দুর্বল বলে আমার মনে হয়েছে। এটা বলার একমাত্র কারণ যে আত্মগত বা সাবজেকটিভ গাণিতিক সংখ্যা তিনি তার ফ্যাক্টদের উপর আরোপ করেছেন, কাজটা আমি করলে সেটি তার থেকে ভিন্ন। হত। কিন্তু সাবজেকটিভ জাজমেন্ট বা আত্মগত স্তরে বিচারিক ধারণা প্রয়োগে কার এত মাথাব্যাথা আছে? তার ধারণা আমাদের ভাল মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা আছে এই বিষয়টি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে জোরালো প্রমাণ এবং যেখানে আমি মনে করি বিষয়টা তাকে কোনো দিকেই সমর্থন করছে না, তার প্রাথমিক প্রাকধারণা থেকে (ঈশ্বরের অস্তিত্ব ৫০/৫০)। ৬ এবং অধ্যায় ৭ এ স্পষ্ট হবে যে একটি জোরালো কেস তৈরী করা যাবে যে, আমাদের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতার ব্যপারটায় আসলেই কোনো অতিপ্রাকৃত ঈশ্বরের কোনো স্পষ্ট যোগাযোগ নেই। যেমন বিটহেভেনের কোয়াট্রেট (৯৬) বোঝার জন্য, আমাদের এই ভালোমন্দ বোঝার অনুভূতিটা (অবশ্যই এর অর্থ এই অনুভূতিকে অনুগমন করার আমাদের প্রবণতাটি না) ঈশ্বর থাকলেও যেমন থাকতো না থাকলেও তেমনই থাকতো।

অন্যদিকে আনউইন অশুভের উপস্থিতি বিশ্বাস করেন, বিশেষ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন ভুমিকম্প, সুনামি ইত্যাদি ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিপরীত দিকেই জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখানে আনউইনের বিচার আমার বিচারের বীপরিতে অবস্থান নিয়েছে যা অনেক ধর্মতাত্ত্বিকেরও অস্বস্তির কারণ। থিওডিসি (৯৭) বা অশুভের উপস্থিতির মুখে স্বৰ্গীয় সত্তার উপস্থিতি এবং জয়ের প্রমাণ) বহু ধর্মতাত্ত্বিককের অনিদ্রার কারণ। প্রভাবশালী ‘অক্সফোর্ড কমপ্যানিয়ন টু ফিলোসফি’ এই অশুভ বিষয়গুলো উপস্থিতির সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন প্রচলিত ঈশ্বরবাদের সবচেয়ে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হিসাবে। কিন্তু এই যুক্তিটা শুধুমাত্র একজন “ভালো ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে মাত্র। এই ভালোমন্দ যাচাই করার ক্ষমতা ‘ঈশ্বর হাইপোথেসিসের কোনো অংশ না, শুধুমাত্র পছন্দনীয় একটি উপরি মাত্র।

স্পষ্টতই, ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন মানুষগুলো সাধারণত সবসময়ই কোনোটা আসলে সত্যি এবং কোনোটি তারা সত্যি বলে ভাবতে ভালোবাসেন, এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম। কিন্তু, অতিপ্রাকৃত বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বাস করে এমন খানিকটা বেশী শিক্ষিত বিশ্বাসীদের জন্য, এই অশুভ শক্তি সমস্যাটা অতিক্রম করা শিশুসুলভ সহজ একটি কাজ। সেক্ষেত্রে তাদের শুধুমাত্র একটি খারাপ ঈশ্বরকে কল্পনা করতে হবে, যেমন একজন ওল্ড টেষ্টামেন্টের পাতায় পাতায় বিরাজমান অথবা, আপনি যদি সেটা করতে পছন্দ না করেন, একটা আলাদা অশুভ দেবতাকে আবিষ্কার করুন, আর তার নাম দেন শয়তান বা স্যাটান, বিশ্বের যত অশুভ কাজের জন্য ভালো ঈশ্বরের সাথে তার মহাজাগতিক যুদ্ধের উপর এবার সব দোষ চাপিয়ে দিন। অথবা আরো বেশী অভিজাত সমাধান এমন ঈশ্বরের কল্পনা করুন, যার মানুষের দৈনন্দিন হাহাকার নিয়ে ব্যস্ত হবার চেয়ে আরো অনেক মহান কাজ করার আছে বা এমন একজন ঈশ্বর যিনি মানুষের কষ্ট সম্পর্কে নির্বিকার না, তবে তার কাছে, এই যন্ত্রণা সহ্য করার মানে হচ্ছে তার সুসংগঠিত, আইন মেনে চলা এই মহাবিশ্বে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি বা ফ্রি উইলের জন্য আমাদের মূল্য পরিশোধ করা। ধর্মতাত্ত্বিকদের দেখা যায় এইসব যুক্তিগুলো বিনা বাক্য ব্যয়ে তারা মেনে নিয়েছেন।

এ কারণেই যদি আমি নিজে আবার নতুন করে আনউইনের বায়েসীয় অনুশীলনটি করি,তাহলে অশুভ শক্তির উপস্থিতির সমস্যাটি কিংবা সামগ্রিকভাবে নৈতিকতার বিষয়টি আমাকে খুব বেশী পরিবর্তন করাবে না নাল হাইপোথিসিস থেকে, যে কোনো একটি দিকে (আনউইনের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থেকে। কিন্তু আমি এই প্রসঙ্গটি নিয়ে আর তর্ক করতে চাচ্ছি না কারণ কোনোভাবেই আমি ব্যক্তিগত মতামত নিয়ে উৎসাহ বোধ করতে পারিনা, সেটা আমার বা আনউইনের যার হোক না কেন।

এরচেয়ে অনেক শক্তিশালী যুক্তিটি হলো, যা কোনো ব্যক্তিগত অনুধাবন বা মতামতের উপর প্রতিষ্ঠিত না, এবং সেটা হলো ‘অসম্ভাব্যতা থেকে নেয়া যুক্তিটি। যা আমাদের আসলেই ৫০ শতাংশ অজ্ঞেয়বাদ থেকে নাটকীয়ভাবে দূরে নিয়ে যায়, অনেক ঈশ্বরবাদীদের চোখে যা চরম ঈশ্বরবাদী অবস্থানের প্রান্তে আমার দৃষ্টিতে চরম নিরীশ্বরবাদীতার প্রান্তে। আমি বিষয়টি বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি ইতিমধ্যে, আসলে পুরো বিতর্কটা একটা পরিচিত প্রশ্নের আশে পাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, “ঈশ্বরকে তাহলে কে সৃষ্টি করেছে?” যারা চিন্তা করতে পারেন, তারা ইতিমধ্যেই এর উত্তর নিজেরাই খুঁজে নিতে পেরেছেন। একজন পরিকল্পক বা ডিজাইনার ঈশ্বর, কোনো অর্গানাইজড কমপ্লেক্সিটি বা সংগঠিত জটিলতা আসলেই ব্যাখ্যা করতে পারেনা, কারণ কোনো ঈশ্বর, যিনি যথেষ্ট পরিমানে জটিল এমন কিছু ডিজাইন করতে পারেন, তার নিজের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম ব্যাখ্যার দাবী করে। ঈশ্বর এমন ক্রমান্বয়ে পূর্ববর্তী মতে ফিরে যাওয়ার একটি অনন্ত প্রক্রিয়ার বা রিগ্রেসের পরিস্থিতি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন, যেখান থেকে মুক্তি পাবার ব্যপারে তিনি আমাদের কোনো সাহায্য করতে অক্ষম। এই যুক্তিটা, পরবর্তী অধ্যায়ে আমি যা ব্যাখ্যা আরো করবো, দেখাচ্ছে যে ঈশ্বর, যদিও টেকনিক্যালি অপ্রমাণযোগ্য না, তবে অবশ্যই খুবই খুবই অসম্ভাব্য।

পাদটীকা

(১) থমাস অ্যাকোয়াইনাস (১২২৫-১২৭৪), ইতালীয় ডমিনিকান ফ্রায়ার বা যাজক ছিলেন (ক্যাথলিক), এবং তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক ছিলেন।

(২) এডওয়ার্ড লিয়ার (১৮১২-১৮৮৮) ইংরেজ শিল্পী, লেখক, বিশেষভাবে পরিচিত তার মজার ছড়ার জন্য।

(৩) আমি এখানে মনে না করে থাকতে পারছি না, একসাথে জ্যামিতি পড়ার সময় আমার এক স্কুল বন্ধুর ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির প্রমাণ হিসাবে এধরনের কিছু যুক্তির ব্যবহার: ত্রিভুজ এবিসি দেখতে সমবাহু ত্রিভুজের মত, সুতরাং …;

(৪) চার্লস রবার্ট ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) ইংলিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিক। বিবর্তন তত্ত্বে তার অবদানের জন্য সুপরিচিত।

 (৫) উইলিয়াম পেইলী (১৭৪৩-১৮০৫) ইংরেজ যাজক, ধর্মবাদী দার্শনিক এবং উপযযাগিতাবাদী। তিনি সুপরিচিত তার ন্যাচারাল থিওলজী’র জন্য যেখানে তিনি পরমকারণ বা টেলিওলজিকাল আর্গুমেন্টটি বিস্তারিত করেছিলেন।

(৬) অনটোলজী: মেটাফিজিক্স এর একটি শাখা যা অস্তিত্বের প্রকৃতি নিয়ে অধ্যয়ন করে।

(৭) এ প্রাইওরী এবং এ পোষ্টেরিওরী শব্দগুলো দর্শনে (এপিসটেমিওলজী) ব্যবহৃত হয় দুই ধরনের জ্ঞান, যথার্থতা এবং যুক্তিতর্কের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য। এ প্রাইওরী জ্ঞান বা যথার্থতা অভিজ্ঞতা থেকে স্বাধীন (যেমন সব কুমার পুরুষই অবিবাহিত); এ পোষ্টেরিওরী জ্ঞান ও যথার্থতা অভিজ্ঞতা কিংবা পরীক্ষামূলক প্রমাণের উপর নির্ভরশীল (যেমন কিছু অবিবাহিত কুমার পুরুষ আসলেই খুব সুখী);

(৮) সেইন্ট আনসেল্ম (১০৩৩-১১০৯), তাঁকে আনসেন্স অফ আকোষ্টাও নামে ডাকা হয়, একজন বেনডিক্টাইন যাজক, দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, ক্যান্টারবুরীর আর্চ বিশপ ছিলেন ১০৯৩ থেকে ১১০৯ অবধি।

(৯) জেনোর প্যারাডক্স (Zeno’s paradox) এর বিস্তারিত সবার ভালোই জানা আছে বিধায় আমি ফুটনোট ছাড়া এর আর পুনরাবৃত্তি করলাম না। সেখানে বলা হয়েছে যে, অ্যাকিলিস একটি কচ্ছপ থেকে দশগুণ জোরে দৌড়াতে পারে, সুতরাং সে কচ্ছপকে ১০০ গজ দূরত্ব সামনে থেকে দৌড় শুরু করার সুযোগ দিল। অ্যাকিলিস ১০০ গজ দৌড়ায় এবং কচ্ছপ এখন ১০ গজ আগে, অ্যাকিলিস ১০ গজ দৌড়ায় এবং কচ্ছপ ১ গজ আগে। অ্যাকিলিস আরো এক গজ দৌড়ায়, কচ্ছপ তখনও এক গজের ১০ ভাগের একভাগ আগে এবং এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকবে, সুতরাং অ্যাকিলিস কচ্ছপ কখনোই ধরতে পারবে না।

(১০) আমরা এমন কিছু বিষয় দেখতে পাই, ইদানীং দার্শনিক অ্যান্থনী ফ্লিউ এর বহুল প্রচারিত পুরানো মতবাদের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শনের ঘটনায়, যিনি তার বদ্ধ বয়সে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি কোনো এক ধরনের দৈবত্বের প্রতি তিনি বিশ্বাসীতে রুপান্তরিত হয়েছেন (যা সমস্ত ইন্টারনেট জুড়ে অতি উৎসাহের সাথে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে); অন্যদিকে রাসেল একজন মহান দার্শনিক, নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, হয়তো ফ্লিউর এই তথাকথিত রুপান্তরও টেম্পলটন পুরষ্কার অর্জন করতে পারে। সেদিকে তার যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ তার সেই কুখ্যাত সিদ্ধান্ত, ২০০৬ সালে ফিলিপ ই জনসন পুরস্কার (Phillip E. Johnson Award for Liberty and Truth) গ্রহন। প্রথম এই ফিলিপ ই. জনসন পুরষ্কার গ্রহন করেছিলেন ফিলিপ ই জনসন নিজেই, যে আইনজীবি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের বিখ্যাত ওয়েজ স্ট্রাটেজীর আবিষ্কার করেছিলেন। ফ্লিউ এই পুরষ্কারের দ্বিতীয় জয়ী। এই পুরষ্কারটি প্রদান করে বায়োলা– BIOLA বা the Bible Institute of Los Angeles; না ভেবে আসলে পারা যায় না, ফ্লিউ কি বুঝতে পেরেছেন যে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে? ভিক্টর স্টেনগার এর Flew flawed science, Free Inquiry 25: 2, 2005, 17-18; www. secularhumanism.org/ index.php? section= library & page= stenger_25_2 দেখুন।

(১১) জন লেসলী মেকি (১৯১৭-১৯৮১) অষ্ট্রেলীয় দার্শনিক, তার বিশেষ ক্ষেত্র ছিল মেটা এথিকস।

(১২) ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬), স্কটিশ দার্শনিক, পশ্চিমা দর্শনের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একজন দার্শনিক।

(১৩) ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) জার্মান দার্শনিক, আধুনিক দর্শনের কেন্দ্রীয় চরিত্র।

(১৪) নরমান ম্যালকম (১৯১১-১৯৯০) আমেরিকার দার্শনিক।

(১৫) http://www.iep.utm.edU/o/ont-arg.htm. Gasking’s proof is http://www.uq.edu.au/ pdwgrey/pubs/ gasking. html.

(১৬) ডগলাস গাসকিঙ: অষ্ট্রেলিয় দার্শনিক।

(১৭) উইলিয়াম গ্রে: অষ্ট্রেলিয় দার্শনিক।

(১৮) গাউনিলো অফ মারমুতিয়ের, একাদশ শতাব্দীর একজন বেনেডিক্টাইন যাজক, বিশেষভাবে পরিচিত সেইন্ট অ্যানসেল্ম এর ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিপক্ষে অনটোলজিকাল যুক্তি প্রস্তাব করেছিলেন।

(১৯) একটি মোডাল হচ্ছে কোনো অভিব্যক্তি বা প্রকাশ ( যেমন আবশ্যিকভাবে অথবা সম্ভবত) যা ব্যবহৃত হয় কোনো বিচারিক প্রক্রিয়ায় নেয়া সিদ্ধান্তর সত্যতার গুণাগুণ যাচাই করার জন্য। খুব সংকীর্ণ অর্থে বললে মোডাল লজিক হচ্ছে অভিব্যক্তি বা প্রকাশের ডিডাকটিভ (কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যুক্তির ব্যবহার) আচরণ নিয়ে অধ্যয়ন; যেমন ‘খুবই সম্ভাব্য যে..’ কিংবা ‘এটি অবশ্যই যে.., ডিডাকশন হচ্ছে এমন একটি যুক্তি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি এমন কিছু বক্তব্য দিয়ে শুরু করবেন (যাদের বলা হয় প্রেমিস) যাদের অনুমান করে ধরে নেয়া হয় সত্য বলে, তারপর আপনি নির্ধারণ করবেন, যদি এই বক্তব্যটি সত্যি হয় তাহলে আর কি কি সত্য হতে পারে। যেমন ধরুন, আপনি শুরু করলেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এই বক্তব্যটিকে সত্য হিসাবে ধরে নিয়ে, এরপর আপনি নির্ধারণ করুন এটি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আর কি কি বিষয় সত্য হতে পারে। আপনি শুরু করতে পারেন যেমন এমন কিছু ধারণা করে যে যদি আপনি চিন্তা করেন, আপনার অবশ্যই অস্তিত্ব আছে এবং এখান থেকে আপনার যুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করুন। গনিতে, আপনি কোনো স্বতঃসিদ্ধ কোনো ধারণা বা এক্সিওম নিয়ে শুরু করেন, এরপর আপনি নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন আর কি কি বিষয় সত্যি হতে পারে যদি এই এক্সিওমটি সত্যি হয়ে থাকে। ডিডাকশন প্রক্রিয়া ব্যবহার কওে আপনি আপনার উপসংহারের সপক্ষে চূড়ান্ত প্রমাণ দিতে পারে, যদি আপনার শুরুর বক্তব্য বা প্রেমিসগুলো সত্যি হয়ে থাকে। তবে যদি সেই প্রেমিসগুলো অপ্রমাণিত বা প্রমাণ অযোগ্য হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে শুধু কথার খাতিরে তাদের মানতে বাধ্য হতে হয় বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কিংবা বিষয়টি আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করার খাতিরে। অন্যদিকে ইনডাকশন যুক্তি প্রক্রিয়া আপনি শুরু করবেন কিছু উপাত্ত নিয়ে, তারপর আপনি নির্ধারণ করবেন, এই উপাত্ত থেকে আমরা কি কি সাধারণ উপসংহারে উপনীত হতে পারি। অন্যার্থে আপনি এক বা একাধিক তত্ত্ব প্রস্তাব করবেন যা এই উপাত্তগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারে। যেমন ধরুন আপনি উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখলেন যে কারো সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বহুগুনে বেড়ে যায় যদি অন্তত পিতামাতার একজনের সিজোফ্রেনিয়া থাকে। এখান থেকে আপনি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব করতে পারেন যে, সিজোফ্রেনিয়া রোগটি বংশগত হতে পারে। উপাত্ত যা বলছে সে অনুযায়ী এটি কিন্তু যুক্তিযুক্ত কোনো একটি হাইপোথিসিস সন্দেহ নেই। এখানে লক্ষ রাখতে হবে ইনডাকশন কিন্তু প্রমাণ করছে না তত্ত্বটি সঠিক। মাঝে মাঝে প্রায়শই বিকল্প তত্ত্বও থাকে যা সেই উপাত্তগুলো সমর্থন করতে পারে। যেমন, কোনো পিতামাতার কারো একজনের সিজোফ্রেনিক আচরণের প্রভাব শিশুটিকে সিজোফ্রেনিক রোগীতে রুপান্তরিত করতে পারে, এখানে জিনের কোনো ভূমিকা নেই। ইনডাকশন এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে তত্ত্বগুলো আসলেই উপাত্তগুলোর একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। শিশুদের সিজোফ্রেনিয়ার উপর পিতামাতার কোনো প্রভাব নেই এমন কোনো উপসংহার উপাত্ত সমর্থন করছে না, সুতরাং সেটি কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা হতে পারে না। কোনো কিছু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ডিডাকশন এবং ইনডাকশন শুধুমাত্র একা একাই যথেষ্ট নয়। যদিও ডিডাকশন চূড়ান্ত প্রমাণ দেয়, এটির সাথে বাস্তব পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ কিংবা গবেষণা বা পরীক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই, কোনো উপায় সেই প্রেমিস এর সত্যতা যাচাই করার। এবং ইনডাকশন যদিও পর্যবেক্ষণ নির্ভর, এটি কখনো কোনো একটি তত্ত্বকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে পারেনা। কোনো একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশ নির্ভর করে এই দুটি যৌক্তিক প্রক্রিয়ার ধীর সংশ্লেষণের মাধ্যমে।

(২০) অ্যালডস লিওনার্ড হাক্সলী (১৮৯৪-১৯৬৩), ব্রিটিশ লেখক।

(২১) দেনি দিদোরো (১৭১৩-১৭৮৪) ফরাসী দার্শনিক।

(২২) লিওনহার্ড ওয়িলার (Leonhard Euler) (১৭০৭-১৭৮৩) সুইস গণিতজ্ঞ,পদার্থবিদ।

(২৩) http://www.godlessgeeks. com/_LINKS/ GodProof.htm

(২৪) লুদভিগ ভন বিটহোভেন (১৭৭০-১৮২৭) জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরস্রষ্টা।

(২৫) heiliger Dankgesang

(২৬) ফ্রাঞ্জ শুবার্ট (১৭৯৭-১৮২৮) অষ্ট্ৰীয় সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরস্রষ্টা।

 (২৭) মাইকেলেঞ্জেলো দি লোদেভিচো বুওনারোক্তি সিমোনী (১৪৭৫-১৫৬৪) ইতালী উত্তর– রেনেসাঁ পর্বের ভাস্কর, স্থপতি।

(২৮) উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬), ইংরেজী ভাষার শ্রেষ্ঠতম লেখক, নাট্যকার।

(২৯) ইয়োহান সেবাস্টিয়ান বাখ (১৬৮৫-১৯৭৫০) জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরস্রষ্টা।

 (৩০) ইংলিশ লেখক ও কবি এমিলি ব্রন্টি (১৮১৮-১৮৪৮) লেখা একমাত্র প্রকাশিত উপন্যাস (১৮৪৫-১৮৪৬)।

(৩১) পোপের ভ্যাটিকান সিটি প্রাসাদে অবস্থিত একটি চ্যাপেল, এটি বিখ্যাত এর ছাদে মাইকেলেঞ্জেলো দি লাস্ট জাজমেন্ট এর ফ্রেস্কোর জন্য।

(৩২) রাফায়েলো সানজিনো দা উরবিননা (১৪৮৩-১৫২০) ইতালীয় শিল্পী, স্থপতি।

 (৩৩) রাফায়েল এর একটি শিল্পকর্ম (১৫০২), বর্তমানে ভ্যাটিকানে আছে।

(৩৪) ওলফগাঙ আমাদেউস মোৎসার্ট (১৭৫৬-১৭৯১) অষ্ট্ৰীয় সঙ্গীতজ্ঞ, সুরস্রষ্টা।

(৩৫) ফ্রাঞ্জ জোসেফ হাইডেন (১৭৩২-১৮০৯) জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ।

(৩৬) Manx shearwater (Puffinus puffinus), সামুদ্রিক একটি পাখি।

(৩৭) জর্জ ডাবলিউ বুশ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

(৩৮) স্যাম হ্যারিস (জন্ম ১৯৬৮), যুক্তরাষ্ট্রের লেখক, নিউরোসায়েন্টিষ্ট।

(৪০) মোর্স কোড হচ্ছে তথ্য আদান প্রদান করার একটি পদ্ধতি, যা অন-অফ শব্দ, বা আলো, বা সংক্ষিপ্ত শব্দ ব্যবহার করে, যা সরাসরি কোনো দক্ষ শ্রোতা বা পর্যবেক্ষক কোনো বিশেষ যন্ত্র ছাড়াই অনুবাদ করতে পারেন। অন্যতম আবিষ্কারক স্যামুয়েল এফ মোর্সের নামেই এর নামকরণ।

(৪১) ইলুশন বা বিভ্রমের পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রিচার্ড গ্রেগরী (Richard Gregory) তার বেশ কিছু বইয়ে, যেমন Gregory, R. L. (1997). Eye and Brain. Princeton: Princeton University Press.

(৪২) এই ব্যাখ্যাগুলোকে বিস্তারিত আলোচনা করার আমার নিজের প্রচেষ্টা আছে Unweaving the rainbow (R. Dawkins: 1998), 268-269)

(৪৩) http://www.sofc.org/Spirituality/s-of-fatima.htm

(৪৪) ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬) স্কটল্যাণ্ডে জন্ম নেয় প্রখ্যাত দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, প্রাবন্ধিক, অর্থনীতিবিদ। বিশেষভাবে পরিচিত তার র‍্যাডিক্যাল দার্শনিক এমপেরিসিজম ও স্কেপটিসিজমের জন্য।

(৪৫) যদিও আমার স্ত্রীর বাবা ও মা আসলেই প্যারিসে এমন একটি হোটেলে কিছুদিন ছিলেন, যার নাম, Hotel de L’Univers et du Portugal

(৪৬) ক্লাইভ স্টেপল লুইস (১৮৯৮-১৯৬৩) আইরিশ লেখক, অদীক্ষিত ধর্মতাত্ত্বিক, খ্রিষ্টীয় ধর্ম সমর্থনবাদী।

(৪৭) পলের এপিস্টল বা চিঠি হচ্ছে নিউ টেষ্টামেন্ট এর প্রথম ১৩টি বই,যার প্রথমেই পলের নাম আছে, এগুলো লিখিছিলেন পল দি অ্যাপোষ্টোল (৫-৬৩), যিনি প্রথম শতাব্দীতে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করেছিলেন।

 (৪৮) জন দি অ্যাপোষ্টোল (৬-১০০) যীশুর বারো জন অ্যাপোষ্টোল এর একজন।

(৪৯) গসপেল, যীশুর জীবন কাহিনীর বর্ণনা।

 (৫০) ম্যাথিউ গসপেল চারটি স্বীকৃত গসপেল এর একটি, নিউ টেষ্টামেন্ট এর প্রথম বই, এর সূত্র ম্যাথিউ দি অ্যাপোষ্টল, যীশুর বারো অ্যাপোষ্টলের একজন।

(৫১) স্যুকে গসপেলটি আকারে সবচেয়ে বড়, এটি সূত্র লিউক দি ইভানজেলিস্ট (মৃত্যু ৮৪), তিনি সম্ভবত পলের শিষ্য ছিলেন।

(৫২) অ্যান্ড্রু নরমান উইলসন (জন্ম ১৯৫০), সাংবাদিক,লেখক, অনুসন্ধানী জীবনী রচয়িতা হিসাবে তিনি সুপরিচিত।

 (৫৩) রবিন জেন লেন ফক্স (জন্ম ১৯৪৬): ইতিহাসবিদ।

(৫৪) Tom Flynn, Matthew vs. Luke’, Free Inquiry 25: 1, 2004, 34-45. (QC) Robert Gillooly, ‘Shedding light on the light of the world, Free Inquiry 25:1, 2004, 27-30.

 (৫৬) বহু ঈশ্বরবাদী গ্রীক ধর্ম।

(৫৬) আইরা গ্রেশউইন (১৮৯৬-১৯৮৩) আমেরিকার গীতিকার।

(৫৭) বার্ট এহরম্যান (জন্ম ১৯৫৫) নিউ টেষ্টামেন্ট বিশেষজ্ঞ।

 (৫৮) আমি বইটির সাবটাইটেল বা উপশিরোনামটি উল্লেখ করলাম, কারণ এই নামটার ব্যপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। লন্ডনের কন্টিনিউয়াম থেকে প্রকাশিত বইটার যে কপি আমার। কাছে আছে সেটা নাম Whose word is it? আমি এই সংস্করণের কোথাও দেখলাম না এটি, হার্পার সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রকাশিত সংস্করণটি মূলত একই, যেটা আমি দেখিনি, যার প্রধান শিরোনাম Misquoting Jesus; আমার ধারণা তারা একই বই; কিন্তু প্রকাশকরা এই ধরনের সংশয় কেন সৃষ্টি করেন?

(৫৯) উইলিয়াম গ্রাহাম (জন্ম ১৯১৮) আমেরিকার একজন ধর্মপ্রচারক।

(৬০) জাক বার্লিনারব্লাউ, ইতিহাদবিদ, যুক্তরাষ্ট্র

(৬১) Ehrman, B. D. (2003). Lost Christianities: The Battles for Scripture and the Faiths We Never Knew. Oxford: Oxford University Press. Ehrman, B. D. (2003). Lost Scriptures: Books that Did Not Make It into the New Testament.Oxford: Oxford University Press. Ehrman, B. D. (2006). Whose Word Is It? London: Continuum

(৬২) এ এন উইলসন, তার রচিত যীশুর জীবনকাহিনীতে, জোসেফ একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন এই তথ্যটিকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। গ্রীক শব্দ Tekton এর আসল অর্থ কার্পেন্টার বা কাঠমিস্ত্রি, কিন্তু এটি অনূদিত হয়েছে আরমায়িক শব্দ Naggar থেকে, যার অর্থ হতে পারে মিস্ত্রি এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। বাইবেলকে কলুষিত করেছে এমন বেশ কিছু ভুল শব্দানুবাদের মধ্যে এটি একটি। সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যেই ইসাইয়াহ (Isaiah) এর তরুণ রমনীর হিব্রু almah শব্দ থেকে গ্রীক শব্দ কুমারী (Parthenos) ভ্রান্ত অনুবাদ। খুব সহজেই ভুল হতে পারে (এ ধরনের ভুল কেমন করে হতে পারে সেটা বোঝার জন্য চিন্তা করুন ইংরেজী maid আর maiden); অনুবাদকের এই সামান্য একটু ভুল কিভাবে স্ফীত হয়ে যীশুর মা কুমারী ছিলেন বলে একটা বিশাল কাহিনী তৈরী করা হয়েছে। এ ধরনের আরেকটি কাহিনী কেবল এর সাথে তুলনা হতে পারে, সেটাও অনুবাদ বিভ্রাট এবং এর কেন্দ্রেও আছে কুমারী। ইবন ওয়ারাক এ বিষয়ে দারুণ মজার আলোচনা করেছিলেন, প্রত্যেকটি ইসলামী শহীদদের বিখ্যাত প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে তারা মৃত্যুর পর বেহেশতে ৭২ জন কুমারী পাবে উপহার হিসাবে, এখানে এই কুমারী শব্দটা একটি ভ্রান্ত অনুবাদ ‘স্ফটিক স্বচ্ছ সাদা আঙ্গুর’ শব্দটির। শুধু এই বিষয়টা যদি আরো বেশী মানুষ জানতো, কত নিরীহ আত্মঘাতী বোমাহামলাকারীর জীবন বাচতো? (ইবন ওয়ারাক, Virgins? What virgins? Free Inquiry 26:1,2006, 45-6);

(৬৩) জর্জ অ্যালবার্ট ওয়েলস (জন্ম ১৯২৮) ইংরেজ লেখক, জার্মান ভাষার অধ্যাপক, যীশুর অস্তিত্ব সংক্রান্ত তার বেশ কিছু বই আছে।

(৬৪) ড্যান ব্রাউন, আমেরিকার ঔপন্যাসিক।

(৬৫) আইজাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৬) ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ;

 (৬৬) গ্যালিলেও গ্যালিলেই (১৫৬৪-১৬৪২) ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী,গণিতজ্ঞ,প্রকৌশলী,জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

(৬৭) ইয়োহানেস কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) জার্মান গণিতজ্ঞ,জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

(৬৮) চার্লস ডারইউন (১৮০৯-১৮৮২) ইংরেজ প্রকৃতি বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন তত্ত্বেও প্রবক্তা।

(৬৯) এমন কি আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে মৃত্যুশয্যায় ধর্মে ফিরে আসার ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে। আসলে এটা ঘটেছে একঘেয়ে নিয়মিতভাবে। প্রতিটি পুনরাবৃত্তি সেই একই ভ্রমের ধোঁয়া তুলে যাচ্ছে, আমার সম্ভবত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে মরার সময় টেপরেকর্ডার এর ব্যবস্থা করতে হবে যেন আমার মরনোত্তর সন্মানটা বজায় থাকে; লালা ওয়ার্ড (রিচার্ড ডকিন্সের এর স্ত্রী) এর সাথে যোগ করেছেন: মৃত্যুশয্যা নিয়ে এত লাফালাফি কেন? নিজেকে যদি বিক্রি করতেই চাও তুমি, সময় থাকতে করা কি ভালো না, যাতে টেম্পলটন পুরষ্কারটি পাওয়া যায় আর দোষটা যদি বার্ধক্যের জরাগ্রস্থতার উপর চাপানো যায়।

(৭০) এলিজাবেথ কটন, লেডি হোপ নামে যিনি পরিচিত, ইংলিশ ধর্মপ্রচারক।

(৭১) জেমস হট, লেখক, সাংবাদিক।

(৭২) মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) ইংরেজ বিজ্ঞানী, যিনি তড়িৎ-চৌম্বকত্ব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

 (৭৩) জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯) স্কটিশ গানিতীক পদার্থবিজ্ঞানী, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম এর তাত্ত্বিক।

(৭৪) উইলিয়াম থমসন (লর্ড কেলভিন) (১৮২৪-১৯০৭) ব্রিটিশ গানিতীক পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী।

(৭৫) জর্জ ডারউইন (১৮৪৫-১৯১২) ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ, চার্লস ও এমা ডারউইনের ছেলে।

(৭৬) আর্থার রবার্ট পিকক (১৯২৪-২০০৬) ব্রিটিশ ধর্মতাত্ত্বিক ও প্রাণরসায়নবিদ।

(৭৭) রাসেল স্ট্যানার্ভ (জন্ম ১৯৩১) ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী।

(৭৮) জন পোলকিংহোম (জন্ম ১৯৩৬) ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী,ধর্মতাত্ত্বিক,যাজক।

(৭৯) ফ্রান্সিস সেলার্স কলিন্স (জন্ম ১৯৫০) চিকিৎসক জিনবিজ্ঞানী, হিউম্যান জীনোম প্রোজেক্ট এর পরিচালক, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর পরিচালক। আনঅফিসিয়াল হিউম্যান জীনোম প্রোজেক্ট এর সাথে মিলিয়ে ফেলা যাবেনা, যার নেতৃত্বে ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান (এবং ধার্মিক নন), সাহসী, যাকে বিজ্ঞানের বাক্কানিয়ার বা দুঃসাহসী অভিযাত্রী বলা হয়: ক্রেইগ ভেন্টার;

 (৮০) জেমস ডিউই ওয়াটসন (জন্ম ১৯২৮) যুক্তরাষ্ট্রের জিনবিজ্ঞানী, ১৯৫৩ সালে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স গঠনের আবিষ্কারক।

(৮১) গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) মিেরডিয়ার অগাষ্টিনিয়ান ধর্মযাজক এবং মঙ্ক, তার মৃত্যুর পর তিনি চিহ্নিত হয়েছিলেন জেনেটিক্স এর জনক হিসাবে। বংশগতির গুরুত্বপূর্ণ সূত্রের আবিষ্কারক।

(৮২) ফ্রান্সিস হ্যারী কম্পটন ক্রিক (১৯১৬-২০০৪) ব্রিটিশ জিনবিজ্ঞানী, জৈবপদার্থবিজ্ঞানী, ডিএনএ গঠন আবিষ্কারকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জেনেটিক কোড আবিষ্কারের ব্যপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

(৮৩) Beit-Hallahmi, B. and Argyle, M. (1997). The Psychology of Religious Behaviour, Belief and Experience. London: Routledge

 (৮৪) E. J. Larson and L. Witham, Leading scientists still reject God, Nature 394, 1998, 313

(৮৫) http://www.leaderu.com/ftissues/ft9610/reeves.html এখানে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় মতামতের ঐতিহাসিক প্রবণতা সম্বন্ধে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের ইতিহাসের অধ্যাপক টমাস সি রীভস এর একটি চমৎকার বিশ্লেষণ আছে। এ বিষয়ে রীভস এর প্রকাশিত গ্রন্থ: Reeves, T. c. (1996). The Empty Church: The Suicide of Liberal Christianity. New York: Simon & Schuster.

(৮৬) R. Elisabeth Cornwell and Michael Stirrat, manuscript in preparation, 2006.

 (৮৭) মাইকেল শেরমার ( জন্ম ১৯৫৪) লেখক, বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ; স্কেপটিকস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং স্কেপটিক ম্যাগাজিনের এর প্রধান সম্পাদক।

(৮৮) P. Bell, Would you believe it?, Mensa Magazine, Feb. 2002, 12-13

(৮৯) ব্লেইজ পাসকাল (১৬২৩-১৬৬২) ফরাসী গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী, দার্শনিক।

(৯০) নাইসিন ক্রিড: খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠানে বিশ্বাসের সপক্ষে যে শপথনামা পাঠ করানো হয়।

(৯১) ডগলাস অ্যাডামস: ব্রিটিশ লেখক।

 (৯২) স্টিফেন ডি. আনউইন, ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী

 (৯৩) বোর্ড গেম Cluedo (যুক্তরাজ্য) Clue ( উত্তর আমেরিকা) ‘র চরিত্র।

(৯৪) রেভারেণ্ড গ্রিন চরিত্রটি ব্রিটেনে বিক্রি হওয়া Cluedo খেলার একটি চরিত্র (ব্রিটেনেই খেলাটির উৎপত্তি), এছাড়া এটি পাওয়া যায় অষ্ট্রেলিয়া, নিউজীল্যান্ডে, ভারত এবং অন্যান্য ইংরেজী ভাষাভাষী দেশ, তবে উত্তর আমেরিকায় তার নাম হঠাৎ করে কিভাবে মিঃ গ্রিন হয়ে কেন তা অবশ্য জানা নেই।

(৯৫) অর্থাৎ যদি উপাত্ত সঠিক না থেকে বিশ্লেষণও সঠিক হয় না।

(৯৬) কোয়াট্রেট, চারটি বাদ্যযন্ত্র কিংবা কণ্ঠের কোন সঙ্গীত কম্পোজিশন।

(৯৭) Theodicy বা থিওডিসি, এর খুব সাধারণ অর্থে, একজন দয়ালু ঈশ্বর কিভাবে অশুভ নানা বিষয়কে অনুমতি দেন সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করে। থিওডিসি চেষ্টা করে অশুভ বিষয়গুলো উপস্থিতির সমস্যাটিকে একটি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান আর সবচেয়ে দয়ালু উপকারী ঈশ্বরের উপস্থিতির সাথে সমন্বয় করার। এটি দাবী করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব যৌক্তিকভাবে সম্ভব পৃথিবীতে বিদ্যমান নানা অশুভ উপস্থিতি ও তার কারণে সৃষ্ট সব দুর্দশা সত্ত্বেও। ১৭১০ এ গটফ্রিড লাইবনিজ থিওডিসি শব্দটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন।

 (৯৮) পরিসংখ্যানে নাল হাইপোথিসিস (Null hypothesis) শব্দটি সাধারণ বোঝায়, একটি সাধারণ প্রস্তাবনা বা শুরু কোনো অবস্থান যে দুটি পরিমাপ করার মত বিষয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বা দুটি গ্রুপের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নাল হাইপোথিসিসকে প্রত্যাখ্যান বা খণ্ডন করা মানে পরিসংখ্যানগতভাবে ভিত্তি আছে এমন কোনো উপসংহারে পৌঁছানো দুটি বিষয়ের মধ্য সম্পর্ক আছে ( যেমন কোনো একটি চিকিৎসা পদ্ধতির পরিমাপযোগ্য প্রভাব আছে), আর এটি বিজ্ঞানের আধুনিক অনুশীলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা কোনো একটি হাইপোথিসিসকে প্রত্যাখ্যান করার সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্দেশ করে দেয়। সাধারণত নাল হাইপোথিসিসকে সত্যি বলে মনে করা হয় যতক্ষণ না প্রমাণ ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত দেয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *