অবতরণিকা [অংশ] – প্ৰথম সংস্করণ
নারী সম্ভবত মহাজগতের সবচেয়ে আলোচিত প্রাণী : কথাটি ভার্জিনিয়া উলফের, যিনি নিজের বা নারীর জন্যে একটি নিজস্ব কক্ষ চেয়েছিলেন, কিন্তু পান নি। ওই আলোচনায় অংশ নিয়েছে প্রতিপক্ষের সবাই; শুধু যার সম্পর্কে আলোচনা, সে-ই বিশেষ সুযোগ পায় নি অংশ নেয়ার। প্রতিপক্ষটির নাম পুরুষ, নিজের বানানো অলীক বিধাতার পার্থিব প্রতিনিধি; আর পুরুষমাত্রই প্রতিভাবান, তার বিধাতার চেয়েও প্রতিভাদীপ্ত;–অন্ধ ও বধির, লম্পট ও ঋষি, পাপী ও প্রেরিতপুরুষ, দালাল ও দার্শনিক, কবি ও কামুক, বালক ও বৈজ্ঞানিক, অর্থাৎ পুরুষপ্রজাতির সবাই অংশ নিয়েছে নারী সম্পর্কে অন্তত একটি শ্লোক রচনায়। ওই সব শ্লোক অশ্লীল আবর্জনার মতো। প্রতিপক্ষ কখনো কারো মূল্য বা অধিকার স্বীকার করে না; এমনকি অস্তিত্বই স্বীকার করে না অনেক সময়। তাই পুরুষেরা নারী সম্পর্কে কয়েক হাজার বছরে রচনা করেছে যে-সব শ্লোক-বিধি-বিধান, তার সবটাই সন্দেহজনক ও আপত্তিকর। পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে, ক’রে রেখেছে দাসী; তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো কখনো স্তব করে দেবীরূপে। পুরুষ এমন প্ৰাণী, যার নিন্দায় সামান্য সত্য থাকতে পারে; তবে তার স্তব সুপরিকল্পিত প্রতারণা। পুরুষ সাধারণত প্রতারণাই ক’রে এসেছে নারীকে; তবে উনিশশতক থেকে একগোত্র পুরুষ লড়াই করেছেন নারীর পক্ষে।
পুরুষ নারীকে সাজিয়েছে অসংখ্য কুৎসিত অভিধায়; তাকে বন্দী করার জন্যে তৈরি করেছে। পরিবার, সমাজ, ও রাষ্ট্র; উদ্ভাবন করেছে ঈশ্বর, নিয়ে এসেছে প্রেরিতপুরুষ; লিখেছে ধর্মগ্রন্থ, অজস্র দর্শন, কাব্য, মহাকাব্য; সৃষ্টি করেছে বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ও আরো অসংখ্য শাস্ত্ৰ। এতো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয় নি কোনো সেনাবাহিনী। এর কারণ পুরুষের যৌথচেতনায় মহাজাগতিক ভীতির মতো বিরাজ করে নারী। তাই নারীর কোনো স্বাধীনতা স্বীকার করে নি পুরুষ। পুরুষ এমন এক সভ্যতা গড়ে তুলেছে, যা নারীকে সম্পূর্ণ বন্দী করতে না পারলে ধ্বংস হয়ে যাবে ব’লে পুরুষের ভয় রয়েছে। এর নাম পিতৃতান্ত্রিক, বা পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা। পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতার প্রথম শোষকশ্রেণী পুরুষ, প্রথম শোষিতশ্রেণী নারী। এ-সভ্যতার সব কেন্দ্ৰেই রয়েছ পুরুষ। পুরুষ একে সৃষ্টি করেছে তার স্বার্থে ও স্বপ্ন অনুসারে, এবং কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে। পুরুষতন্ত্রের সৌরলোকের সূর্য পুরুষ; নারী অন্ধকার। পুরুষ সব কিছু তৈরি করেছে নিজের কাঠামোতে;- তার বিধাতা পুরুষ, প্রেরিতপুরুষ পুরুষ, প্রথম সৃষ্টি পুরুষ; নারী ওই পুরুষের সংখ্যাতিরিক্ত অস্থিতে তৈরি পুতুল। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় পুরুষ মুখ্য, নারী গৌণ; পুরুষ শরীর, নারী ছায়া; পুরুষ প্ৰভু, নারী দাসী; পুরুষ ব্ৰাহ্মণ, নারী শূদ্রী। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা পুরুষের জয়গানে ও নারীর নিন্দায় মুখরিত। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় শয়তানের চেয়েও বেশি নিন্দিত নারী; শয়তান পুরুষ ব’লে তার জন্যেও গোপন দরদ রয়েছে পুরুষের, কিন্তু কোনো মায়া নেই নারীর জন্যে।
পৃথিবীতে শুধু নারীই শোষিত নয়, অধিকাংশ পুরুষও এখনো শৃঙ্খলিত ও শোষিত। তবে শোষিতশৃঙ্খলিত নারী ও পুরুষের মধ্যে রয়েছে মৌলিক পার্থক্য : সব শ্রেণীর পুরুষ বন্দী ও শোষিত নয়, কিন্তু সব শ্রেণীর নারীই বন্দী ও শোষিত। নারীশোষণে বুর্জোয়া ও সর্বহারায় কোনো পার্থক্য নেই; বুর্জোয়া পুরুষ শুধু সর্বহারা শ্রেণীটিকে শোষণ করে না, শোষণ করে তার নিজের শ্রেণীর নারীকেও; আর সর্বহারা পুরুষ নিজে শোষিত হয়েও অন্যকে শোষণ করতে দ্বিধা করে না, সে শোষণ করে নিজের শ্রেণীর নারীকে। বিত্তবান শ্রেণীর নারী পরগাছার পরগাছা, বিত্তহীন শ্রেণীর নারী দাসের দাসী। শোষণে সব শ্রেণীর পুরুষ অভিন্ন; শোষণে মিল রয়েছে মার্কিন কোটিপতির সাথে বিকলাঙ্গ বাঙালি ভিখিরির, তারা উভয়েই পুরুষ, মানবপজাতির রত্ন। নারীমাত্রই দ্বিগুণ শোষিত। মাওসেতুং আর গিনির সেকো তোরের দুটি উক্তি উল্লেখযোগ্য। মাও বলেছেন, ‘বিপ্লবের আগে চীনের পুরুষদের বইতে হতো সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, ও সাম্রাজ্যবাদের তিনটি পর্বত, আর চীনের নারীদের বইতে হতো চারটি পর্বত–চতুর্থটি পুরুষ।‘ সেকো তোরে তীব্র ভাষায় বলেছেন, গিনির নারীরা ‘ক্রীতদাসের ক্রীতদাসী [দ্ৰ নিউল্যান্ড (১৯৭৯, ১১১)]। ওই নারীরা গিনীয় ও ফরাশি উভয় জাতের পুরুষদের দ্বারাই শোষিত। নারীর প্ৰভু ও শোষক সব পুরুষ; অন্ধও নারীর শোষক, উন্মাদও নারীর প্রভু। পুরুষতন্ত্র সমস্ত জাতিধৰ্মবৰ্ণশ্রেণী অতিক্রম ক’রে যায়। কোনো বিশেষ সামাজিক শ্রেণী নারীর শোষক নয় ব’লে, পুরুষতন্ত্রই যেহেতু নারীর শোষক, তাই সামাজিক বিপ্লবের ফলে পুরুষ মুক্তি পেলেও নারী মুক্তি পায় না, নারীকে মুক্তি দেযা হয় না। ফরাশি বিপ্লব ভুলে যায় নারীর কথা; সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা প্রযোজ্য হয় শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে; আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও কিছু দিনের মধ্যেই তার সব প্রতিশ্রুতি ভুলে নারীকে জড়ায় পুরুষতন্ত্রের শেকলে–সৰ্বাহারার একনায়কত্বে একনায়কত্ব করে পুরুষতন্ত্র। তাই নারীই এখন বিশুদ্ধ শোষিত ও সর্বহারী। তার ন্যূনতম যা দরকার, তা হচ্ছে মুক্তি।
পুরুষতন্ত্র নারীকে নিয়োগ করেছে একরাশ ভূমিকায় বা দায়িত্বে। নারীকে নিয়োগ করেছে কন্যা, মাতা, গৃহিণীর ভূমিকায়; এবং তাকে দেখতে চায় সুকন্যা, সুমাতা, সুগৃহিণীরূপে। কোনো নিম্নপদকে অসার মহিমা দিতে হ’লে পদগুলোকে সুভাষিত করতে হয়; পুরুষতন্ত্ৰও নারীর ভূমিকাগুলোকে সুভাষিত করেছে, সেগুলোর সাথে জড়িয়ে দিয়েছে বড়ো বড়ো ভাব। তবে ওই ভূমিকাগুলোর গৃঢ় তাৎপর্য একটি শব্দেই প্রকাশ পায় : শব্দটি দাসী। এ-অঞ্চলে দেবী শব্দটি দাসীরই সুভাষণ। পুরুষতন্ত্র শুধু বলপ্রয়োগ ক’রে অধীনে রাখতে চায় নি নারীকে, তাকে স্তবস্তৃতিও পান করিয়েছে। পুরুষ কখনো মনে করে নি যে তার জীবনের সার্থকতা পুত্র, পিতা, গৃহস্থ হওয়াতেই; বরং এ-ভূমিকাগুলো পেরিয়ে যাওয়াকেই মনে করেছে পৌরুষ; কিন্তু নারীর সার্থকতা নির্দেশ করেছে কয়েকটি তুচ্ছ ভূমিকা পালনে। পুরুষ নারীকে গৃহে বন্দী করেছে, তাকে সতীত্ব শিখিয়েছে, সতীত্বকে নারীর জীবনের মুকুট করে তুলেছে, যদিও লাম্পট্যকেই ক’রে তুলেছে নিজের গৌরব। পুরুষ উদ্ভাবন করেছে নারী সম্পর্কে একটি বড়ো মিথ্যা, যাকে সে বলেছে চিরন্তনী নারী। তাকে বলেছে দেবী, শাশ্বতী, কল্যাণী, গৃহলক্ষ্মী, অর্ধেক কল্পনা; কিন্তু পুরুষ চেয়েছে ‘চিরন্তনী দাসী’। পশ্চিমে নারীরা শোষিত, তবে মানুষ-পুরুষ দ্বারা শোষিত; আমাদের অঞ্চলে নারীরা শোষিত পশু-পুরুষ দ্বারা। এখানে পুরুষেরা পশুরই গোত্রীয়, তাই বঙ্গীয়, ভারতীয়, আর পূর্বাঞ্চলীয় নারীরা যে-শোষণপীড়নের শিকার হয়েছে, পশ্চিমের নারীরা তা কল্পনাও করতে পারবে না। বাঙলায় নারীরা এখনো পশুদের দাসী। পশ্চিমে নারীমুক্তির যে-আন্দোলন চলছে, তার ঢেউ এখানে এসে এখনো ভালোভাবে লাগে নি। উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে বাঙলায় নারীদের শিক্ষার যে-ধারা শুরু হয়, তার উদ্দেশ্য নারীকে স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত করা নয়, তার লক্ষ্য উন্নতজাতের স্ত্রী বা শয্যাসঙ্গিনী উৎপাদন। নারীশিক্ষাও প্ৰভু পুরুষেরই স্বার্থে। বিবাহ এখানে নারীদের পেশা। বাঙলাদেশে যারা নারীদের কল্যাণ চান, তারা মনে করেন নারীর কল্যাণ শুভবিবাহে, সুখী গৃহে; স্বামীর একটি মাংসল পুতুল হওয়াকেই তারা মনে করেন নারীজীবনের সার্থকতা। স্বামী যদি ভাতকাপড় দেয়, তার ওপর দেয় লিপষ্টিক নখপালিশ ইত্যাদি, এবং আর বিয়ে না করে, করলেও অনুমতি নিয়ে করে, বা তালাক না দিয়ে চার স্ত্রীকেই দেখে ‘সমান চোখে’, তাহলেই নারীকল্যাণপিপাসুরা পরিতৃপ্ত, ও তাদের আন্দোলন সফল ভেবে ধন্য বোধ করেন। তাঁরা আসলে পুরুষতন্ত্রের শিকার; তারা নারীকে দেখতে চান সচ্ছল দাসীরূপে। নারীর জন্যে এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু হ’তে পারে না। তারা মানুষ হিশেবে নারীর অধিকার আদায্যের আন্দোলন করেন না, তাদের আন্দোলন হচ্ছে স্বামীতন্ত্রের কাছে স্ত্রীতন্ত্রের আবেদননিবেদন। বিয়ে, স্বামী, সন্তান, গৃহ, সুখ, প্ৰেম মধুর বাজে কথা; এগুলোতে নারীর মুক্তি নেই, এগুলোতেই বন্দী নারী। পশ্চিমের নারীবাদীরা প্রত্যাখ্যান করেছে এসব। নারীবাদীরা পশ্চিমের পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতাকে দিয়েছে একটা বড়ো নাড়া, ও বদলে দিয়েছে অনেকটা, যদিও তাদের চূড়ান্ত সাফল্য আজো সুদূরে। পুরুষতন্ত্রের মতো কয়েক হাজার বছরের একটি বড়ো রকমের চক্রান্তকে, পীড়ন যন্ত্রকে, দু-চার দশকে, বা দু-এক শতকে নিক্রিয় ক’রে দেয়া অসম্ভব।
পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার বয়স কয়েক সহস্ৰক; কিন্তু পৃথিবী ও মানবপ্রজাতি, যদি কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, টিকে থাকবে আরো কয়েক কোটি বছর। তাই পুরুষতন্ত্রই শাশ্বত ও সভ্যতার ভবিষ্যৎ, এটা ভাবার কারণ নেই। বাঙলাদেশের এক অবরুদ্ধ সুলতানা নারীস্থানের বা নারী তন্ত্রের যে-স্বপ্ন দেখেছিলো, তা যে ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে না, বা নারীপুরুষের সাম্যভিত্তিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে না, এমন ধারণা অযৌক্তিক। পশ্চিমের নারীবাদীরা গত চার দশকে, সিমোন দ্য বোভোয়ার-এর দ্বিতীয় লিঙ্গ-এর (১৯৪৯) প্রকাশকাল থেকে, নারীবিষয়ক যে-সব গ্রন্থ লিখেছেন, সেগুলোর অসাধারণত্ব স্বীকার না করে উপায় নেই। তাদের ব্যাখ্যা, ভাষ্য, প্ৰস্তাব মেধাপ্রতিভা, ও সাহসের উজ্জ্বল উদাহরণ। নারী সম্পর্কে তাদের মূল বক্তব্য এখনো আমাদের এখানে এসে পৌঁছে নি; বা মধ্যযুগের অধিবাসী আমরা এখনো এতোটা সাহসী হতে পারি নি যে তাদের বক্তব্য নিৰ্ভয়ে পেশ করবো। পুরুষতন্ত্রের নানা রকম পুলিশ এখানে নানাভাবে সক্রিয়। নারীবাদের ঠিক সংবাদ আমরা পাই নি, তবে বিকৃত সংবাদ পেয়েছি অনেক; এবং এখানকার পুরুষতন্ত্র একথা প্রচার করতে সফল হয়েছে যে নারীবাদ হচ্ছে বিকার। নারী-অধিকারবাদীরাও এখানে নারীবাদের কথা শুনলে ভয় পান, নিজেদের নারীবাদী বলতে নববধুর মতো লজ্জা বোধ করেন। তাদের কাছে নারীবাদী এক কামুক নারী, যার কাজ পুরুষ থেকে পুরুষে ছোটা। এটা সত্যের চরম অপলাপ, নারীবাদের বিরুদ্ধে পুরুষতন্ত্রের অশ্লীল অপপ্রচার। যিনি নারীপুরুষের সাম্যে ও সমান অধিকারে বিশ্বাস করেন, তিনিই নারীবাদী। আমাদের নারী-অধিকারবাদীরা নারীর অধিকারের চেয়ে স্ত্রীর অধিকার নিয়েই বেশি ব্যস্ত, তাঁরা স্ত্রীবাদী বা ভদ্রমহিলাবাদী। আমাদের অঞ্চলের দুটি গোত্র–হিন্দু ও মুসলমান–পুরুষতন্ত্রের প্রচণ্ড পুরোধা। পশ্চিমের নারীবাদীরা খুব ভদ্র মহিলা নন, তিরষ্কারকে আর তারা পুরুষতন্ত্রের একচেটে সম্পত্তি বলে মনে করেন না; তাই তাঁরা নিয়মিতভাবে তিরষ্কার করেন পুরুষদের। এক জাতের পুরুষদের তাঁরা বলেন মেল শভিনিষ্ট পিগ বা আত্মম্ভরী পুংশুয়োর বা পুংগর্বী শুয়োর, আমাদের অঞ্চলে সামাজিক, রাজনীতিক, আর্থ, ধর্মীয় কারণে পুংগর্বীদেরই প্রাধান্য। তাই নারীবাদ যে এখানে নারীর মতোই নিষিদ্ধ থাকবে, এটা স্বাভাবিক । আমি এ-বইতে প্ৰকাশ করতে চেয়েছি নারীবাদীদের মূল বক্তব্য ও প্রস্তাবগুলো; বাঙলা ভাষা ও বাঙলাদেশের নারীদের পরিচয় থাকা দরকার এর সাথে।
বইটি লেখার জন্যে আমি নির্ভর করেছি। বহু বিদেশি বইয়ের ওপর। অনেক বই থেকে সরাসরি নিয়েছি : দ্য বোভোয়ার ও কেইট মিলেটির কাছে আমি বিশেষ ঋণী। তথ্যবিশ্লেষণের উৎস নির্দেশ করেছি। ব্যাপকভাবেই, তবে বইটিকে উৎসনির্দেশভারক্লান্ত না করার কথাও মনে রেখেছি। ব্যবহার করেছি উৎসনির্দেশের সাম্প্রতিক রীতি, পাদটীকার বদলে বইয়েয় শরীরেই নির্দেশ করা হয়েছে উৎস। যেমন : [দ্র দ্য বোভোয়ার (১৯৪৯, ৫৪০)] বোঝায় সিমোন দ্য বোভোয়ারের ১৯৪৯-এ প্রকাশিত বইয়ের ৫৪০ পৃষ্ঠায় মিলবে তথ্য বা বিশ্লেষণটি; এবং ওই বই সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যাবে রচনাপঞ্জিতে। এ-বইয়ে গ্রন্থনাম ছাপা হয়েছে বাঁকা অক্ষরে, আর প্রবন্ধ, গল্প, কবিতার নাম ছাপা হয়েছে একক উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে। নারীর অর্ধেকের বেশি ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিলো সাপ্তাহিক পূর্বাভাস, ও খবরের কাগজ-এ।
নারীর প্রকাশ যে-সাড়া জাগিয়েছে, তা আমাকে অভিভূত করেছে। ১৯৯২-এর একুশের বইমেলায় এক সপ্তাহে এর প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে যায়; বহু পাঠক বইটি সংগ্ৰহ করতে এসে হতাশ হযে ফিরেছেন। বইটিতে সম্ভবত প্ৰকাশ পেয়েছে তাদের মনের কথা, ঘোষিত হয়েছে তাঁদের ইশতেহার।
হুমায়ুন আজাদ