০৩. অনুমতি

তৃতীয় পরিচ্ছেদ
অনুমতি

তারপর?

ধনঞ্জয় বলিলেন— যখন সত্যই বুঝতে পারলাম ইনি শঙ্কর সিং নয়, তখন মন নিরাশায় ভরে গেল। শঙ্কর সিংকে ধরেছি মনে করে যেমন আনন্দ হয়েছিল, ঠিক অনুরূপ বিষাদে বুক অন্ধকার হয়ে গেল। সাতদিনের মধ্যে সারা ভারতবর্ষ খুঁজে একটি লোককে ধরবার চেষ্টা যে আমার কত বড় পাগলামি তা বুঝতে পারলাম। সত্যিই তো! শঙ্কর সিং যদি কলকাতায় না এসে দিল্লী কিম্বা বোম্বাই গিয়ে থাকেন? যদি তিনি অপেক্ষাকৃত অজ্ঞাত কোনো স্থানে লুকিয়ে থাকেন তাহলে তাকে ধরব কি করে? তিনি যে কলকাতায় এসেছেন এ খবর মিথ্যাও তো হতে পারে।

কিন্তু এ কয়দিনের মধ্যে যদি কুমারকে খুঁজে না পাই তাহলে উপায়? হঠাৎ একটা চিন্তা আমার মাথায় খেলে গেল। কুমারকে যতদিন না পাই ততদিন আর কোনো লোককে শঙ্কর সিং সাজিয়ে কি কাজ চলে না? এই যে বাঙ্গালী যুবাপুরুষটি তলোয়ার খেলছেন এঁকে যদি বিদ্যুৎ চমকের মত এই চিন্তা আমার মাথায় জ্বলে উঠল।

স্থির হয়ে ভাববার জন্য আমি সেক্রেটারি সাহেবের ঘরে এসে বসলাম। তিনি আমার বিচলিত অবস্থা দেখে যত্ন করে বসালেন এবং নানাপ্রকার আলাপে আমাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে লাগলেন। বাস্তবিক এই বাবুটির মত প্রকৃত সজ্জন আমি খুব কম দেখেছি।

আমার মাথায় কিন্তু এই সর্বগ্রাসী চিন্তা আগুনের মত জ্বলতেই লাগল। কি উপায়! কি উপায়! শেষে উদিত সিংয়ের কূটবুদ্ধিই জয়ী হবে! আর আমি রাজার কাজে চুল পাকিয়ে শেষে এই চব্বিশ বছরের ছোঁড়ার কাছে বাজিমাৎ হয়ে মুখে কালি মেখে দেশে ফিরে যাব! দেশে ফিরে গিয়ে মুখ দেখাব কি করে? আর সব সহ্য হবে, কিন্তু উদিত সিং আর ময়ূরবাহনের বাঁকা বিদ্রূপভরা হাসি আমার সহ্য হবে না।

ক্রমে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেল, আমি সেক্রেটারিবাবুর ঘরে বসে ভাবতেই লাগলাম। তিনিও আমায় নিজের চিন্তায় মগ্ন দেখে কাজকর্মে মন দিলেন। তারপর যখন ভেবে আর কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না, এমন সময় ইনি তলোয়ার খেলা শেষ করে অন্যান্য কয়েকজন লোকের সঙ্গে গল্প করতে করতে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

আর ভাবতে পারলাম না। মনে করলাম, নিয়তির মনে যা আছে তা যখন হবেই এবং ঝি রাজ্যটাকে বাজি ধরে যখন জুয়া খেলতেই বসেছি, তখন একবার ভাল করেই জুয়া খেলব। সর্বস্ব হারানোই যদি ভাগ্যে থাকে তবে খেলার উত্তেজনা থেকে বঞ্চিত হই কেন? না খেললেও সেই হারতেই হবে!–সেক্রেটারিবাবুর কাছ থেকে ওঁর ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

তারপর এখানে এসে যখন এই ছবিখানার ওপর চোখ পড়ল তখন বুঝলাম যে আমি নিয়তির হাতের খেলার পুতুল মাত্র; আমি যদি না আসতাম নিয়তি কান ধরে আমাকে এখানে টেনে আনত। বাবুজি, এ দুনিয়াটা একটা সতরঞ্চের ছক, দেড় শতাব্দী আগে সুদূর মধ্যভারতের এক খেলোয়াড় যে চাল দিয়েছিলেন, আজ তার পাল্টা চাল দেবার জন্যে আপনার ডাক পড়েছে। এ ডাক অমান্য করবার উপায় নেই— এ খেলা খেলতেই হবে। এই নিয়তির বিধান।

ধনঞ্জয় ক্ষেত্রী মৌন হইলেন। প্রায় পাঁচমিনিট কাল ঘরের মধ্যে স্তব্ধতা বিরাজ করিতে লাগিল। তারপর হঠাৎ গৌরীশঙ্কর উচ্চ হাসিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। বলিল— আমি রাজী। রাজা হবার সুযোগ জীবনে একবার বই দুবার আসে না, অতএব এ সুযোগ ছাড়া যেতে পারে না। ভগবান যখন রাজকুমারের মত চেহারাটা ভুল করে দিয়ে ফেলেছেন, তখন দিনকতক রাজত্ব করে নেওয়া যাক। দাদা, কি বল?

শিবশঙ্কর বলিলেন— না ভেবে-চিন্তে কোনো কথা বলা ঠিক নয়। রাজা হবার বিপদও তো আছে। এই রকম একটা অদ্ভুত প্রস্তাবে খামকা রাজী না হয়ে অগ্রপশ্চাৎ ভেবে দেখা উচিত।

গৌরী হাসিয়া বলিল— দাদা, কথাটা নেহাৎ লোলচর্ম বৃদ্ধের মত হল। মুর্তিমান রোমান্স আমাদের বাড়ি বয়ে এসে চেয়ারে আমাদের মুখ চেয়ে বসে আছেন, আর আমরা কিনা অগ্রপশ্চাৎ ভেবে সময় নষ্ট করব?

—যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে।
তুই যে পারিস কাঁটাগাছের উচ্চ ডালের পরে পুচ্ছ নাচাতে!

শিবশঙ্কর ঈষৎ অধীর কণ্ঠে বলিলেন–পুচ্ছ নাচাতে পারলেও সে কাজটা সব সময় শোভন এবং রুচিসঙ্গত নয়। গৌরী, তুই চুপ করে বস, আমি এঁকে গোটাকয়েক কথা জিজ্ঞাসা করি। ধনঞ্জয়ের দিকে ফিরিয়া বলিলেন–দেখুন, আমার ভাই রাজা-রাজড়ার চালচলন রীতিনীতি কিছু জানেন না, সুতরাং রাজা সাজতে গেলে তাঁর ধরা পড়বার সম্ভাবনা খুব বেশী।

ধনঞ্জয় বলিলেন— সম্ভাবনা একেবারে নেই তা বলতে পারি না; তবে আমি যতক্ষণ সঙ্গে থাকব ততক্ষণ নেই।

শিবশঙ্কর বলিলেন— দ্বিতীয়ত ঝি দেশের প্রচলিত ভাষা ওঁর জানা নেই। এ একটা মস্ত আপত্তি।

ধনঞ্জয় বলিলেন— আমরা উপস্থিত যে ভাষায় কথা কইছি, তাই ঝিন্দের প্রচলিত ভাষা; এ ভাষায় আপনার ভাই তো চমৎকার কথা বলেন।

শিবশঙ্কর বলিলেন–তা যেন হল। কিন্তু ধরুন, কোনো কারণে আমার ভাই যদি জাল রাজা বলে ধরা পড়েন, তখন তো তাঁর বিপদ হতে পারে।

ধনঞ্জয় ঈষৎ চিন্তা করিয়া বলিলেন— বিপদের আশঙ্কা আছে অবশ্যই। কিন্তু বাবুসাব, বিপদের ভয়ে যদি চুপ করে বসে থাকতে হয় তাহলে তো কোনো কাজই করা চলে না।

শিবশঙ্কর পুনশ্চ বলিলেন—প্রাণের আশঙ্কাও থাকতে পারে?

ধনঞ্জয় ঘাড় নাড়িয়া ঈষৎ ব্যঙ্গের সুরে কহিলেন— তা থাকতে পারে বৈকি।

আমি আমার ভাইকে যেতে দিতে পারি না।

ধনঞ্জয় আস্তে আস্তে চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার ওষ্ঠাধর বিদ্রূপের হাসিতে বাঁকা হইয়া উঠিল; বলিলেন–তবে কি বুঝব বাঙ্গালী জাতটা সত্যই ভীরু! এ নিন্দা আমি অনেকের মুখে শুনেছি বটে কিন্তু এতদিন বিশ্বাস করিনি।

শিবশঙ্করের মুখ লাল হইয়া উঠিল, বলিলেন–সখ করে পরের বিপদ ঘাড়ে না নেওয়া ভীরুতা নয়।

ধনঞ্জয় বলিলেন— সব বিপদ থেকে নিজের প্রাণটুকু সাবধানে বাঁচিয়ে চলা সুবুদ্ধির কাজ হতে পারে, সাহসের কাজ নয় বাবুজি।

শিবশঙ্কর বলিলেন–আমি তর্ক করতে চাই না। আপনার এ প্রস্তাবে আমার মত নেই।

ধনঞ্জয় গৌরীর দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন— আপনারও কি এই মত?

গৌরী মিনতির চক্ষে একবার দাদার দিকে চাহিল— কোনো উত্তর দিল না।

ধনঞ্জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন—অন্য কোনো প্রদেশের—মারাঠী কি গুজরাটী যুবককে যদি এ প্রস্তাব করতাম, সে এক মুহূর্ত বিলম্ব করত না। আর আপনারা দেওয়ান কালীশঙ্করের বংশধর! যাক–আমার আর কিছু বলবার নেই।

শিবশঙ্কর উঠিয়া ঘরময় পায়চারি করিতে লাগিলেন। তারপর ফিরিয়া আসিয়া ধনঞ্জয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বলিলেন–আমাদের পূর্বপুরুষ কালীশঙ্করের সম্বন্ধে আপনি অনেক কথা জানেন এই ইঙ্গিত কয়েকবার করেছেন। শেষ বয়সে তিনি খুন হয়েছিলেন এ খবর আপনার জানা আছে কি?

খুন হয়েছিলেন?

হ্যাঁ। আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে আপনারই দেশের কোনো লোক তাঁকে খুন করিয়েছিল।

তার কোনো প্রমাণ আছে কি?

প্রমাণ কিছু নেই। শুধু একখানা ছোরা আছে যা দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছিল।

শুধু একখানা ছোরা?

হ্যাঁ।

ছোরাখানা একবার দেখতে পারি কি?

চাবি দিয়া টেবলের দেরাজ খুলিয়া শিবশঙ্কর একটা গহনার বাক্সের মত চ্যাপ্টা ধরনের মখমলের বাক্স বাহির করিলেন। তারপর সেটা খুলিয়া মখমলের খাঁজকাটা আসনের উপর হইতে সাবধানে ছুরিখানা তুলিয়া ধনঞ্জয়ের হাতে দিলেন। ঝকঝকে ধারালো প্রায় পনের ইঞ্চি লম্বা ভোজালীর মত ঈষৎ বাঁকা বিচিত্র গঠনের ছুরি— কোথাও মলিনতা বা মরিচার একটু চিহ্ন নাই। সোনার মুঠ এবং ইস্পাতের ফলা যেন বিদ্যুতের আলোয় হাসিয়া উঠিল।

ধনঞ্জয় গভীর মনঃসংযোগে ছোরাখানা উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার লোহার মত মুখ যেন আরো কঠিন হইয়া উঠিল। কিছুক্ষণ পরে গলাটা পরিষ্কার করিয়া তিনি নিম্নস্বরে বলিলেন–এতদিনে কালীশঙ্করের জীবনের ইতিহাস আমার কাছে সম্পূর্ণ হল। এই উপসংহারটুকুই আমি জানতাম না বাবুজি।

তারপর ছোরাখানা তুলিয়া ধরিয়া বলিলেন–এ ছোরা কার জানেন? ঝিন্ রাজবংশের। বংশের আদিপুরুষ স্মরজিৎ সিংহের আমল থেকে এ ছুরি রাজবংশের দণ্ড মুকুটের মত মহামূল্য সম্পত্তি বলে চলে আসছিল। তারপর হঠাৎ শতবর্ষ পূর্বে ছুরিখানা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ  ছুরি যে আপনার বংশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তা বোধ হয় একজন ছাড়া আর কেউ জানত না। ছুরির মুঠের উপর কতকগুলি অক্ষর খোদাই করা আছে— পড়তে পারেন কি?

শিবশঙ্কর বলিলেন— না, আমি অনেক চেষ্টা করেও পড়তে পারিনি।

ধনঞ্জয় বলিলেন— এ অক্ষরগুলি প্রাচীন সৌরসেনী ভাষায় লেখা। এর অর্থ হচ্ছে যে আমার বংশে কলঙ্কারোপ করবে এই ছুরি তার জন্য।

শিবশঙ্কর ছুরিখানা নিজের হাতে লইয়া লেখাগুলি পরীক্ষা করিতে করিতে অন্যমনস্কে বলিলেন— হতেও পারে— হতেও পারে। তারপর?

ধনঞ্জয় বলিলেন–তারপর আর কিছু নেই। এই ছুরি একদিন যে রক্তে রাঙা হয়ে উঠেছিল, সেই রক্ত আপনাদের শরীরে বইছে। সেই রক্ত আজ আপনাদের ডাকছে ঝিন্দে যাবার জন্য। আপনারা শুনতে পাচ্ছেন না? আশ্চর্য!

গৌরীশঙ্কর বলিয়া উঠিল— আমি শুনতে পাচ্ছি।–দাদা, অনুমতি দাও আমি যাব।

শিবশঙ্কর অত্যন্ত বিচলিত হইয়া বলিলেন–কিন্তু কিন্তু-অজানা দেশ কতরকম বিপদ—

গৌরী বলিল—আমি ছেলেমানুষ নই। তুমি মন খুলে অনুমতি দাও, কোনো বিপদ হবে না।

শিবশঙ্কর বলিলেন— তা না হয়–কিন্তু—

ধনঞ্জয়ের মুখের বাঁকা বিদ্রূপ আরও ক্ষুরধার হইয়া উঠিল। গৌরী ছুরিখানা টেবলের উপর হইতে তুলিয়া লইয়া তীক্ষকণ্ঠে বলিল–দাদা, ফের যদি সর্দার আমাদের ভীরু বলবার অবকাশ পায়, তাহলে এই ছুরি দিয়ে আমি একটা বিশ্রী কাণ্ড করে ফেলব। বারবার ভীরু অপবাদ আমার সহ্য হবে না।

শিবশঙ্কর চেয়ারে বসিয়া পড়িলেন। কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়া বসিয়া থাকিয়া হঠাৎ দাঁড়াইয়া উঠিয়া বলিলেন– আচ্ছা যা—আমি অনুমতি দিলাম। তারপর ধনঞ্জয়ের দিকে ফিরিয়া বলিলেন— দেখুন, আমরা এই বাঙালী জাতটা, যতক্ষণ মাথা ঠাণ্ডা থাকে ততক্ষণ সহজে ঘর থেকে বার হই না—পাছে রাস্তায় কুকুরে কামড়ায় কিম্বা গাড়ি চাপা পড়ি; কিন্তু একবার রক্ত গরম হলে আর রক্ষে নেই, তখন একলাফে একেবারে দুঃসাহসিকতার চরম সীমায় পৌঁছে যাই। ছুরিখানা গৌরীর হাত হইতে লইয়া বলিলেন–এর ওপর ঝিন্দের রাজার আর কোনো অধিকার নেই। রক্তের দাম দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষ একে কিনে নিয়েছেন; এ ছুরি আমাদের বংশের। সুতরাং আমি এ ছুরি হাতে নিয়ে বলতে পারি-যে আমার বংশে কলঙ্কারোপ করবে, এ ছুরি তার জন্য। সাবধান সদর ধনঞ্জয়! ভীরু বলে যেন আমার বংশে কলঙ্কারোপ করবেন না। বলিয়া সহাস্যে ধনঞ্জয়ের মুখের দিকে চাহিলেন।

ধনঞ্জয় দ্রুত আসিয়া দুই হাতে দুই ভায়ের হাত ধরিলেন, উচ্ছ্বসিতকণ্ঠে বলিলেন— আমি জানতাম আমি জানতাম বাবুজি। কালীশঙ্কর রাওয়ের বংশধর কখনো ভীরু হতে পারে না।

রাত্রে আহারাদির পর দুই ভাই এবং অচলা পুনরায় লাইব্রেরি ঘরে আসিয়া বসিলেন। গৌরী এবং শিবশঙ্কর দুইজনেই অন্যমনস্ক—অনেকক্ষণ কোনো কথা হইল না। শেষে অচলা বলিল— কি হল তোমাদের? মুখে একটি কথা নেই—এত ভাবছ কি?

শিবশঙ্কর চেয়ারে নড়িয়া চড়িয়া বসিয়া বলিলেন—গৌরী কাল বিদেশে যাচ্ছে।

অচলা বলিল——কৈ আগে তো কিছু শুনিনি, কখন ঠিক করলে?

গৌরী বলিল— আজই। আবার কিছুদিন ঘুরে আসা যাক বৌদি।

অচলা বলিল—সত্যিই ঘটকের ভয়ে পালাচ্ছ নাকি ঠাকুরপো?

গৌরী হাসিয়া বলিল— না গো না। এবার দেখো না, তুমি যা চাও তাই একটা ধরে নিয়ে আসব। আর তা যদি নিতান্তই না পারি, অন্তত নিজে সশরীরে ফিরে আসবই।

অচলা শঙ্কিত হইয়া বলিল–ও কি কথা ঠাকুরপো। কোথায় যাচ্ছ ঠিক করে বল।

গৌরী বলিল— বলবার উপায় নেই বৌদি—প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ফিরে এসে যদি পারি বলব। ততদিন আমাদের ঘরের অচলা লক্ষ্মীটির মত ধৈর্য ধরে থেকো।

অচলার চোখে জল আসিয়া পড়িল, সে চোখ মুছিয়া বলিল— কি কাজে যাচ্ছ তুমিই জান; আমার কিন্তু বড্ড ভয় করছে তোমাদের কথা শুনে।

গৌরী বলিল— এই দেখ! একেবারে কান্না? এই জন্যই শাস্ত্রে বলেছে-নারী নদীবৎ— স্রেফ জল। তোমাদের নিংড়োলে কতখানি করে জল বেরোয় বল তো বৌদি?

অচলা উত্তর দিল না। গৌরীর জোর করিয়া পরিহাসের চেষ্টা অন্য দুইজনের আশঙ্কা-ভারাক্রান্ত মনে কোথাও আশ্রয় না পাইয়া যেন ঘরের আবহাওয়াকে আরও মুহ্যমান করিয়া তুলিল।

অনেকক্ষণ পরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শিবশঙ্কর বলিলেন–রাত হল, গৌরী, শুগে যা। কালীশঙ্করের ইতিহাস যদি কিছু পাস্-নোট করে নি। আর এই ছুরিখানাও তুই সঙ্গে রাখ। বলিয়া দেরাজ হইতে আবার ছোরাটা বাহির করিয়া গৌরীর হাতে দিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *