1 of 3

০৩।৬ তৃতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক

ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : দিক্ষু আত্মরক্ষা
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সাগ্নয়ো হেতয় প্রভৃতি ছন্দ : জগতী ]

যেহস্যাং স্থ প্রাচ্যাং দিশি হেতয়ো নাম দেবাস্তেষাং বো অগ্নিরিষবঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি ব্ৰত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা। ১। যেহস্যাং স্থ দক্ষিণায়াং দিশ্যবিষ্যবো নাম দেবাস্তেষাং বঃ কাম ইষবঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি দ্রুত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা ॥ ২॥ যেহস্যাং স্থ প্রতীচ্যাং বৈরজা নাম দেবাস্তেষাং ব আপ ইষবঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি ক্ৰত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা ॥ ৩ যেইস্যাং ছোদীচ্যাং দিশি প্রবিধ্যন্তো নাম দেবাস্তেষাং বো বাত ইষবঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি ক্ৰত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা ॥ ৪৷ যেহস্যাং স্থ বায়াং দিশি নিলিম্পা নাম দেবাস্তেষাং ব ওষধীরিষৰঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি ক্ৰত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা ॥ ৫৷৷ যেহস্যাং হোধ্বায়াং দিশ্যবস্বন্তো নাম দেবাস্তেষাং বো বৃহস্পতিরিষবঃ। তে নো মৃড়ত তে নোহধি ক্ৰত তেভ্যো বো নমস্তেভ্যো বঃ স্বাহা ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে গন্ধর্বগণ! তোমরা দান ইত্যাদি গুণসমূহে যুক্ত আছো। তোমরা আমাদের পূর্ব দিকে হেতয় নামধারী হয়ে উপদ্ৰবকারীদের নাশক রূপে নিবাস করে থাকো। তোমাদের বাণ অগ্নির ন্যায় তীক্ষ্ণ। তোমরা আমাদের রক্ষাকরণে সমর্থ। অতএব আমাদের সুখ প্রদান করো। আমাদের শত্ৰু সৰ্প-বৃশ্চিক ইত্যাদিকে বিনাশ করো। এবং অধিক অধিক ভাবে বলো–এরা (অর্থাৎ আমরা) আমাদের (অর্থাৎ তোমাদের)। তোমাদের উদ্দেশে প্রণাম জ্ঞাপন করছি। তোমরা আমাদের এই আহুতি প্রাপ্ত হও। ১৷

হে গন্ধর্ববর্গ! তোমরা আমাদের দক্ষিণ দিকে অবস্যব নামধারী হয়ে পালনেচ্ছু রূপে নিবাস করে থাকো। তোমাদের বান আমাদের ইচ্ছাকে পূর্ণ-করণে সমর্থ। তোমরা আমাদের সুখ প্রদান করো। তোমাদের উদ্দেশে প্রণাম জ্ঞাপন করছি। তোমরা আমাদের এই আহুতি প্রাপ্ত হও। ২।

হে গন্ধর্বরূপী দেবতাগণ! তোমরা আমাদের পশ্চিম দিকে বৈরাজ নামধারী হয়ে অন্নপ্রদাতা রূপে নিবাস করে থাকো। বৃষ্টির জল হলো তোমাদের বাণ। তোমরা আমাদের রক্ষা-করণে সমর্থ। অতএব তোমরা আমাদের সুখ প্রদান করো। আমরা তোমাদের উদ্দেশে প্রণাম নিবেদন করছি। তোমরা আমাদের এই আহুতি প্রাপ্ত হও ৷ ৩৷৷

হে দান ইত্যাদি গুণসম্পন্ন গন্ধর্বগণ! তোমরা প্রবিধ্যন্ত নামধারী হয়ে আমাদের শত্রুবর্গকে তাড়নাকারী রূপে আমাদের উত্তর দিকে অবস্থান করে থাকো। তোমাদের বাণ বায়ুর ন্যায় বেগবান্। তোমরা আমাদের রক্ষা-করণে সমর্থ। অতএব আমাদের সুখ প্রদান করো। তোমাদের উদ্দেশে আমরা প্রণাম জ্ঞাপন করছি। তোমরা আমাদের এই আহুতি গ্রহণ করো। ৪

হে দেবতাগণ! তোমরা নিলিম্পা নামধারী হয়ে সর্বথা লিপ্ত রূপে এই নিম্ন দিকে অবস্থান করে থাকো। ধান্য, যব, বৃক্ষ, গুল্ম ইত্যাদি ঔষধিসমূহই তোমাদের বাণ। তোমরা আমাদের রক্ষাকরণে সমর্থ। অতএব আমাদের সুখ প্রদান করো। তোমাদের উদ্দেশে আমরা প্রণাম জ্ঞাপন করছি। তোমরা আমাদের এই আহুতি গ্রহণ করো। ৫।

 হে অবস্বন্ত নামক রক্ষকরূপী দেবতাগণ! তোমরা আমাদের উধ্বদিকে বাস করে থাকো। মন্ত্রের দেবতা (বা অধিপতি) বৃহস্পতি তোমাদের বাণ। তোমরা আমাদের রক্ষা-করণে সমর্থ। অতএব। আমাদের সুখী করো। নমস্কার যুক্ত এই ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা সম্পন্ন হবিঃ তোমাদের নিমিত্ত অর্পিত হচ্ছে, তোমরা তা গ্রহণ করো। ৬।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ষষ্ঠেনুবাকে ষট্‌ সূক্তনি। তত্র যে অস্যাম্ স্থ ইত্যাভ্যাং সূক্তাভ্যা স্বসেনায়া ও উৎসাহজননকর্মণি প্রত্চং প্রতিদিশং উপস্থানং কুর্যাৎ.তথা আভ্যাং সূক্তাভ্যাং স্বস্ত্যয়নকর্মণি আজ্যপালাশাদি ত্রয়োদশ দ্রব্যাণি জুহুয়াৎ।…তথা চ সর্পবৃশ্চিকাদিভয়নিবৃত্তিকামং গৃহক্ষেত্রাদিযু সিকতা অভিমন্ত্র পরিতঃ প্রকিয়েৎ। তথা (আভ্যং) সূক্তাভ্যাং তৃণমালাং সম্পাত্য গৃহনগরাদিদ্বারে বধীয়াৎ। তথা আভ্যাং গোময়ং অভিমন্ত্র তস্য গৃহে বিসর্জনং দ্বারি নিখননং অগ্নৌ হোমং (চ) কুর্যাৎ।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ১সূ)।

টীকা— আপন সৈন্যবর্গকে যুদ্ধে উৎসাহজনন কর্মে ষষ্ঠ অনুবাকের ছয়টি সূক্তের মধ্যে এই প্রথম সূক্তটি বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। স্বস্তয়ন কর্মে এই সূক্তমন্ত্রগুলির দ্বারা আজ্যপলাশ ইত্যাদি ত্রয়োদশ দ্রব্য সহকারে হোম করণীয়। সেইরকম সর্প-বৃশ্চিক ইত্যাদির ভয় নিবৃত্তির কামনায় গৃহক্ষেত্রের চারিদিকে এই সুক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত:সিকতা বিক্ষিপ্ত করা কর্তব্য। এই সূক্তের দ্বারা তৃণমালা অভিমন্ত্রিত করে গৃহ নগর ইত্যাদির দ্বারে (প্রবেশ পথের সম্মুখে) বন্ধন করণীয়। এই সূক্তমন্ত্রে গোময় অভিমন্ত্রিত করে গৃহে বিক্ষেপণ, দ্বারদেশে নিখনন ও অগ্নিহোম করণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : শত্রুনিবারণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : প্রাচী, অগ্নি প্রভৃতি ছন্দ : অষ্টি, পঞ্চপদা]

প্রাচী দিগগ্নিরধিপতিরসিতো রক্ষিতাদিত্যা ইষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। যোহম্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মস্তং বো জম্ভে দধঃ ॥১॥ দক্ষিণা দিগিদ্ৰোহধিপতিস্তিরশ্চিরাজী রক্ষিতা পিতরঃ ইষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। যোহম্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মস্তং বো জম্ভে দঃ ॥ ২॥ প্রতীচী দিগ বরুণোহধিপতিঃ পৃদাকূ রক্ষিতান্নমিষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। যোহম্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মস্তং বো জম্ভে দঃ ॥ ৩ উদীচী দিক সোমোহধিপতিঃ স্বজো রক্ষিতাশনিরিষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। যোহম্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধুঃ ॥ ৪৷৷ ধ্রুবা দিগ বিষ্ণুরধিপতিঃ কল্মষগ্রীবো রক্ষিতা বীরুধ ইষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। যোহশ্ম দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মস্তং বো জম্ভে দাঃ ॥৫৷ ঊর্ধ্বা দিগ বৃহস্পতিরধিপতিঃ শ্বিত্রো রক্ষিতা বর্ষমিষবঃ। তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু। মোহশ্মন্ দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মস্তং বো জম্ভে দপ্তঃ ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –পূর্ব দিক আমাদের প্রতি কৃপাশালিনী হোক। সেই দিকের অধিস্বামী হলেন অগ্নি এবং জগৎসংসারের রক্ষার নিমিত্ত সেই দিকে নিবাসকারী হয়ে আছে কৃষ্ণকায় সর্প; ধাতা অৰ্মা ইত্যাদি অদিতির পুত্রগণ সেই দিকের বাণ বা আয়ুধস্বরূপ; অগ্নি ইত্যাদি, অদিতি ইত্যাদি সকলের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। আমাদের এই নমস্কার তাদের সকলকে প্রসন্ন করুক। হে অগ্নি প্রমুখ দেবতাগণ! আমাদের পীড়াদানকারী শত্রুকে তোমাদের জম্ভে (অর্থাৎ উন্মুক্ত মুখবিবরস্থায়ী দন্তে) নিক্ষেপ করছি। তাকে ভক্ষণ করো ৷ ১।

 দক্ষিণ দিক আমাদের নিমিত্ত কল্যাণময়ী হোক। সেই দিকের অধিস্বামী হলেন ইন্দ্র এবং দিক-রক্ষক হয়ে আছে তির্যকরূপী সর্প; সেখানকার দুষ্ট-নাশক বাণরূপ হলেন পিতৃদেব; এঁদের সকলকে নমস্কার। আমাদের এই নমস্কার তাদের সকলকে হর্ষিত করুক। যে আমাদের শত্রুতা করে এবং আমরা যাকে বিদ্বেষ করি, তাকে তোমাদের জম্ভে (দন্তে) ভক্ষণার্থ নিক্ষেপ করছি। ২।

পশ্চিম দিক আমাদের প্রতি অনুগ্রহ-করণশালিনী হোক। সেই দিকের অধিস্বামী হলেন বরুণ; রক্ষক পৃদাকু নামক কুৎসিত শব্দকারী সর্প; ধান-যব ইত্যাদিরূপ অন্ন তার বাণ। এঁদের সকলকে নমস্কার। আমাদের এই নমস্কার এঁদের সকলকে প্রসন্ন করুক। যে আমাদের সাথে বৈরিতা করে এবং আমরা যার বৈরিতা করি, তাকে আমরা তোমাদের জম্ভে ভক্ষণার্থ অর্পণ করছি ৷ ৩৷৷

 উত্তর দিক আমাদের প্রতি অনুগ্রহশালিনী হোক। সেই দিকের অধিপতি হলেন সোম, স্বয়ং উৎপন্ন স্বজ নামক সর্প হলো রক্ষক এবং দুষ্টকে শমন-করণশালী অশনিই তার বাণ। এঁদের সকলকে নমস্কার। এই নমস্কার এঁদের সকলকে প্রসন্ন করুক। যে আমাদের প্রতি শত্রুতাচরণ করে এবং আমরা যার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, তাকে তোমাদের জম্ভে ভক্ষণের নিমিত্ত নিক্ষেপ করছি। ৪।

 যে নিম্ন দিক ধ্রুব নামে প্রসিদ্ধ, সে আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি করুক। এই দিকের অধিপতি হলেন বিষ্ণু। কল্মষগ্রীব নামে কৃষ্ণবর্ণের গ্রীবাশালী সর্প এর রক্ষক এবং ঔষধিই তার বাণ। এঁদের সকলকে নমস্কার করছি। এই নমস্কার এঁদের সকলকে প্রসন্ন করুক। আমরা যার বিদ্বেষী এবং যে আমাদের বিদ্বেষ করে, তাকে আমরা তোমাদের জম্ভে (দন্তে) নিক্ষেপ করছি। তোমরা তাকে ভক্ষণ করো ৷৷ ৫

 উপরে স্থিত যে দিক, তা আমাদের অভিলাষ-পূরণকারিণী হোক। সেই দিকের অধিপতি হলেন বৃহস্পতি, রক্ষক হলো শিত্র নামক শ্বেতবর্ণশালী সর্প, এবং তার বাণ বা আয়ুধ হলো দুষ্টকে নিগ্রহকারী বৃষ্টির জল। আমরা এই সকলের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করছি। এই নমস্কার এঁদের সকলকে প্রসন্ন করুক। আমরা যার সাথে শত্রুতা করে থাকি এবং আমাদের সাথে যে শত্রুতা করে, তাকে ভক্ষণের নিমিত্ত তোমাদের জম্ভে নিক্ষেপ করছি। ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –প্রাচী দিক ইতি সূক্তস্য পূর্বসূক্তেন সহ স্বসেনোৎসাহজনন কর্মণি স্বস্ত্যয়নকর্মাদৌ চ বিনিয়োগোভিহিতঃ।..ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ২সূ)।

টীকা — এই সূক্তমন্ত্রগুলি পূর্ববর্তী সূক্তের সাথে আপন সৈন্যগণের উৎসাহজনন কর্মে ও স্বস্তয়নকর্মে বিনিয়োগ হয়।..ইত্যাদি ৷ (৩কা, ৬অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পশুপোষণম

[ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : যামিনী ছন্দ : অনুষ্টুপ, ককুভ, ত্রিষ্টুপ]

 একৈকয়ৈষা সৃষ্ট্যা সং বভূব যত্র গা অসৃজন্ত ভূতকৃতো বিশ্বরূপা। যত্র বিজায়তে যমিন্যপর্তুঃ সা পশূ ক্ষিণাতি রিফতী রুশতী ॥১ এষা পশূন্যসং ক্ষিতি ক্ৰব্যাদ ভূত্বা ব্যদ্বরী। উতৈনাং ব্ৰহ্মণে দদ্যাৎ তথা স্যোনা শিবা স্যাৎ ॥ ২॥ শিবা ভব পুরুষেভ্যো গোভ্যা অভ্যেঃ শিবা। শিবাস্মৈ সর্বস্মৈ ক্ষেত্রায় শিবা ন ইহৈধি ॥ ৩৷৷ ইহ পুষ্টিরিহ রস ইহ সহস্রসাতমা ভব। পশূন্ যমিনি পোষয় ॥ ৪৷৷ যা সুহাদঃ সুকৃত মদন্তি বিহায় রোগং তন্বঃ স্বায়াঃ। তং লোকং যমিন্যভিসংবভূব সা নো মা হিংসীৎ পুরুষান্ পশূংশ্চ ॥ ৫॥ যা সুহাদাং সুকৃতামগ্নিহোত্রহুতাং যত্র লোকঃ।তং লোকং যমিন্যভিসংবভূব সা নো মা হিংসীৎ পুরুষা পশূংশ্চ। ৬।

 বঙ্গানুবাদ –পৃথিবী ইত্যাদির আদি রচয়িতা ভূতকৃৎ নামক ঋষিগণ একটি একটি করে অনেক বর্ণশালিনী গো-ইত্যাদি সৃষ্টি করেন। এক এক বারে একটি করে সন্তান জাত হওয়া রূপ শুভসৃষ্টি সম্পর্কিত এই বিধান বিধাতারই রচনা। এই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট বীজ (বীর্য) ও রজের দ্বারা যদি কোন গাভী যমজ সন্তান উৎপন্ন করে, তবে তা যজমানের গো-ইত্যাদি পশুসমূহের ক্ষয় এবং চোর, সিংহ ইত্যাদির দ্বারা নাশের কারণ হয়ে থাকে। ১।

এই যমজ-সন্তান-প্রসবকারিনী গাভী তেমন ভাবেই নাশক হয়ে ওঠে (অর্থাৎ পরিগণিত হয়), যেমন মাংসভক্ষক জীব হয়ে থাকে। সেই অভিচার ইত্যাদির সন্তাপপ্রদ ফলের কারণে যজমানের গাভীগুলি হিংসার কারণ হয়ে ওঠে। এইরকম গাভী ব্রাহ্মণকে দান করলে তবে সে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে সৌভাগ্যবতী হয়ে থাকে। ২।

হে যমজ-বৎস-প্রসবকারিণী ধেনু! তুমি মনুষ্যকে সুখী করণশালিনী হও; অপর গাভী ও অশ্বের পক্ষেও সুখের হেতুভূতা হও। যজমানের সকল শস্যক্ষেত্রের নিমিত্তও সুখদায়িনী হও ৩

এই গৃহে গো-ইত্যাদি ধন পুষ্ট হোক, দুগ্ধ ঘৃত ইত্যাদি বৃদ্ধিপাপ্ত হোক। হে যমজ বৎসবতী মাতা! তুমি এই যজমানের পশুসমূহকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করাও এবং যজমানকে সহস্র ধন প্রদান করো। ৪

যে লোকে সুন্দর হৃদয়সম্পন্ন ও উত্তম কর্মশালী পুরুষগণ স্বস্থ (অর্থাৎ নিরুদ্বিগ্ন) ও প্রসন্ন হয়ে থাকে, সেখানে যদি যমজ-বস-প্রসবিনী গাভী সম্মুখে আগত হয়ে যায়, তবু সে যেন আমাদের মনুষ্য ও পশুগণের হিংসক না হয়। ৫।

যে লোকে সুন্দর হৃদয়শালী, শোভন জ্ঞানসম্পন্ন এবং সুকর্মকুশল মনুষ্যগণ যজ্ঞ ইত্যাদি শ্ৰেষ্ঠ কর্ম সাধন করে থাকেন, সেই স্থানে যমসূ (যমজ বৎস-প্রসবিত্রী) ধেনু যদি আগতা হয় তবে সে যেন আমাদের মনুষ্য ও পশুগণের বিনাশ না। করে ৷ ৬ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— একৈকয়ৈষা সৃষ্ট্যা ইত্যনেন গবাশ্বাগদভীমানুষীণাং যমলজননে অদ্ভুতে তন্ত্যর্থং আজ্যং হুত্বা মাতৃপুত্ৰয়োমূরি সম্পাতং আনীয় উদপাত্রে উত্তরসম্পাতং কৃত্বা তেনোদকেন আচমনং প্রোক্ষণং চ কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি। ….ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ৩সূ)।

টীকা –গাভী, অশ্বা, গর্দভী ও মনুষ্য-স্ত্রীগণের গর্ভে যমজ-সন্তানের জন্ম হলে তার শান্তির নিমিত্ত এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা আজ্যাতি প্রদান করে মাতা ও পুত্রের মস্তকে সম্পাত আনয়ন পূর্বক জলপাত্রে উত্তর সম্পাত করে সেই জলের দ্বারা আচমন ও পোক্ষণ করণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : অবিঃ

 [ঋষি : উদ্দালক দেবতা : অবি, কাম, ভূমি ছন্দ : পংক্তি, অনুষ্টুপ]

যদ রাজানো বিভজন্ত ইষ্টাপূর্তস্য যোড়শং যমস্যামী সভ্যসদঃ। অবিস্তস্মাৎ প্র মুঞ্চতি দত্তঃ শিতিপাৎ স্বধা ॥১॥ সর্বান্ কামান্ পূরয়ত্যাভবন প্রভব ভব.. আকুতিতোহবিদর্ডঃ শিতিপাদ্যোপ দস্যতি ॥ ২॥ যো দদাতি শিতিপাদমবিং লোকেন সংমিত। স নাকমভ্যাবোহতি যত্র শুল্কো ন ক্রিয়তে অবলেন বলীয়সে ৷ ৩৷৷ পঞ্চাপূপং শিতিপাদমবিং লোকেন সংমিত। প্রদাতোপ জীবতি পিতৃণাং লোকেহক্ষিত। ৪পঞ্চাপূপং শিতিপাদমবিং লোকেন সংমিত। প্রদাতোপ জীবতি সূর্যামাসয়োরক্ষিতম্ ॥ ৫ইরেব নোপ দস্যতি সমুদ্র ইব পয়ো মহৎ। দেবৌ সবাসিনাবিধ শিতিপান্নোপ দস্যতি ॥ ৬৷৷ ক ইদং বম্মা অদাৎ কামঃ কামায়াদাৎ। কামো দাতা কামঃ প্রতিগ্রহীতা কামঃ সমুদ্রমা বিবেশ। কামেন ত্ব প্রতি গৃহ্নামি কামৈতৎ তে। ৭৷৷ ভূমি প্রতি গৃহ্বাত্বন্তরিক্ষমিদং মহৎ। মাহং প্রাণেন মাত্মনা মা প্রজয়া প্রতিগৃহ্যবি রাধিষি ॥ ৮৷৷

 বঙ্গানুবাদ –আকাশের ঐ দক্ষিণদিকে দৃশ্যমান যমের সভাসঙ্গণ হলেন পাপীবর্গকে দণ্ড দানকারী তথা ধর্মাত্মাগণের উপর কৃপা বর্ষণশীল। এঁরা ইষ্টাপূর্ত কর্মের অধিস্বামী, অর্থাৎ শ্রুতি অনুসারী যজ্ঞ ইত্যাদি (ইষ্ট) কর্মে তথা স্মৃতি অনুসারী তড়াগ-কূপ ইত্যাদি (পূর্ত) কর্মে ঘটে যাওয়া পাপকে পুণ্য হতে পৃথক করে থাকেন ॥১॥

এঁরা যজ্ঞকে সকল দিক হতে বৃদ্ধি করণশালী এবং– ফলদানে সমর্থ। এঁরা আমাদের সকল অভিলাষকে পূর্ণ করে থাকেন। (যজ্ঞে) প্রদত্ত এই অবি কখনও ক্ষয়পাপ্ত হয় না ॥ ২

যে যজমান সকল ফলদানশীল এই মেষকে প্রদান করেন, তিনি দুঃখরহিত স্বর্গের ভাগী হয়ে থাকেন। সেই লোকে দুর্বল ব্যক্তিদের পক্ষে সবলদের মানতে হয় না ॥ ৩৷৷

যে পশুর চারটি পদে ও নাভিতে পাঁচটি অপূপ (পিষ্টক) রাখা হয়, সেই প্রঞ্চ-অপূপযুক্ত শ্বেতপাদ মেষের দাতা বসু ইত্যাদি পিতৃলোকে গমন করে অক্ষয় ফল ভোগ করেন ॥৪॥

 যে পশুর (অর্থাৎ মেষের) চারটি পদে এবং নাভির উপর পাঁচটি অপূপ রক্ষিত হয়, সেই পঞ্চ অপূপযুক্ত শ্বেতপাদশালী মেষের দাতা সূর্য-চন্দ্র লোকে গমন করে অক্ষয় ফল ভোগ করেন ॥৫।

শ্বেত-পদশালী, যজ্ঞে দানকৃত মেষের কখনও ক্ষয় হয় না। যেমন সমুদ্রের গহন জল এবং সাথে অবস্থানকারী অশ্বিদ্বয়ের ক্ষয় হয় না, তেমনই এ-ও (অর্থাৎ এই মেষও) অক্ষয় হয়ে থাকে ৷ ৬ ৷৷

প্রজাপতিই দাতা, তিনিই গ্রহী। পারলৌকিক ফলাকাঙ্ক্ষী দানদাতা তথা ইহলৌকিক ফলাভিলাষী প্রতিগ্রহীতা, উভয়ই কামাত্মা। অতএব কামই কামকে প্রদান করেছিল; এইরকমে আত্মাকে পৃথক রাখায় প্রতিগ্রহে দোষ লাগে না। ৭৷

হে দানযোগ্য দ্রব্য! পৃথিবী ও অন্তরিক্ষ তোমাকে গ্রহণ করুক। আমি প্রতিগ্রহের দোষের দ্বারা প্রাণকে হারিয়ে বসবো না এবং পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি হতে বিচ্ছিন্ন হবো না ॥ ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –য রাজানঃ ইতি পঞ্চর্চেন ও দনসবে কর্মণি পশ্ববয়বেষু পঞ্চাপূপনিধানং নিরুপ্তহবিরভিমৰ্শনাদিকং চ কুর্যাৎ। তথা চ সূত্রং।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ৪সূ)।

টীকা— এই সূক্তের প্রথম পাঁচটি মন্ত্রের দ্বারা ওদনসবের কর্মে পশুর অবয়বে পাঁচটি অপূপ স্থাপন ও নিরুপ্ত হবির অভিমৰ্শন ইত্যাদি করণীয়। অবশিষ্ট তিনটি মন্ত্রের দ্বারা দোষাবহ কিংবা সাধারণ প্রতিগ্রহ ও সেই সম্পর্কিত দ্রব্যসম্ভার অভিমন্ত্রণ পূর্বক গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ইত্যাদি ॥ (৩কা, ৬অ. ৪সূ)৷৷

.

পঞ্চম সূক্ত : সাংমনস্যম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সাংমনস্যম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, ত্রিষ্টুপ]

সহৃদয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃপোমি বঃ। অনন্যা অন্যমভি হত বৎসং জাতমিবাগ্না ॥ ১। অনুব্রতঃ পিতুঃ পুত্রো মাত্রা ভবতু সংমনাঃ। জায়া পত্যে মধুমতীং বাচং বদতু শন্তিম্ ॥ ২॥ মা ভ্রাতা ভ্রাতরং দ্বিক্ষন্মা স্বসারমুত স্বস্য। সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া ॥ ৩॥ যেন দেবা ন বিষন্তি নো চ বিদ্বিষতে মিথঃ। । তৎ কৃন্মো ব্ৰহ্ম বো গৃহে সংজ্ঞানং পুরুষেভ্যঃ ॥ ৪৷ জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্তঃ সধুরাশ্চরন্তঃ। অনন্যা অন্যস্মৈ বন্তু বদন্ত এত সস্ত্রীচীনা বঃ সংমনসস্কৃণোমি ॥ ৫॥ সমানী প্রপা সহ বোহন্নভাগঃ সমানে যোত্রে সহ বো যুনজিম। সমঞ্চোইগ্নিং সপষর্তারা নাভিমিবাভিতঃ ॥ ৬ সচীনা বঃ সমনসস্কৃণোম্যেকষ্টীন্তসংবননেন সর্বান্। দেবা ইবামৃতং রক্ষণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্তু ॥ ৭৷

 বঙ্গানুবাদ –হে বিবাদী পুরুষগণ! তোমাদের নিমিত্ত আমি বিদ্বেষভাব-দূরীকরণশালী, প্রীতিযুক্ত সাংমনস্য কর্ম করছি। গাভী যেমন আপন বৎসকে স্নেহ করে, তেমনই তোমরা পরস্পর ব্যবহার (আচরণ) করো। ১।

 পুত্র পিতার অনুগত হোক, মাতাও পুত্রের প্রতি অনুকূল মনঃসম্পন্না হোক, পত্নী পতির প্রতি প্রিয়বাদিনী হোক ৷ ২

(সম্পত্তির) অংশ-বিভাজনের নিমিত্ত ভ্রাতা যেন ভ্রাতার প্রতি মন্দ আচরণ না করে। ভগ্নী যেন ভ্রাতা বা ভগ্নীর প্রতি শত্রুতা না করে। এরা সকলে সমান কর্ম ও সমান গতিসম্পন্ন হয়ে মঙ্গলময় কথাবার্তা বলুক ॥ ৩॥

যে মন্ত্রবলের দ্বারা দেবতাগণ বিভিন্ন মতিসম্পন্ন হন না কিংবা পরস্পরের প্রতি বৈরভাবাপন্ন হয়ে থাকেন না, সেই সমানতার কারণরূপ মন্ত্রের সাথে সম্বন্ধিত সাংমনস্য কর্মকে আমি তোমাদের নিমিত্ত সাধিত করছি। ৪।

 তোমরা সমান মনঃসম্পন্ন হয়ে, সমান কার্যশালী হয়ে, জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ সকলের প্রতি সমান মনোযোগী হয়ে এবং পরস্পর শোভন বচনে প্রবৃত্ত হয়ে আগমন করো। হে মনুষ্যগণ! আমিও তোমাদের সমান কার্যে প্রবৃত্ত করছি ॥ ৫

হে সমানতাকাঙ্ক্ষী মনুষ্যগণ! তোমাদের ক্ষুধার অন্ন ও তৃষ্ণার জলের উপভোেগ সমান (বা একই রকম) হোক। আমি তোমাদের এক প্রেম-সূত্রে বন্ধন করছি। যেমন চক্রের অর বা কীলকগুলি (গোঁজগুলি) নাভিকে (অর্থাৎ মধ্যমণ্ডলকে) আশ্রয় করে থাকে, তেমনই তোমরা সকলে এক অগ্নির আশ্রয়ে অবস্থান পূর্বক তার সেবা করো ৷৷ ৬ ৷

আমি তোমাদের সমান মনঃসম্পন্ন করে দিয়ে একসাথে কর্ম সাধনে প্রবৃত্ত করছি; তোমাদের এক রকম অন্নের ভোক্তা করছি; এমন কর্মে আমি তোমাদের বশীভূত করছি। স্বর্গে এক সাথে অমৃত রক্ষাকারী ইন্দ্র প্রমুখ সকল দেবতাগণের মন যেমন একীভূত হয়ে শ্রেষ্ঠতা লাভ করে থাকে, সেই রকমে প্রাতে বা সন্ধ্যায়, সকল সময়, তোমাদের মন সমান ও শোভন-সুন্দর হয়ে থাকুক ॥৭॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সহৃদয়ং সাংমনস্য ইতি সূক্তেন সাংমনস্যকর্মণি গ্রামমধ্যে সম্পাতিতোদকুম্ভনিনয়নং তদ্বৎ সুরাকুম্ভনিনয়নং ত্রিবর্ষবৎসিকায়া গোঃ পিশিতানাং প্রাশনং সম্পতিতান্নপ্রাশনং সম্পাতিতসুরায়াঃ পায়নং তথাবিধপ্রপোদপায়নং চ কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ৫সূ)৷৷

টীকা –সাংমনস্য কর্মে এই সূক্তের বিনিয়োগ উপযুক্ত নির্দেশ অনুসারে করণীয় ॥(৩কা, ৬অ. ৫সূ)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

[ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : অগ্নি ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টপ, পংক্তি ]

বি দেবা জরসাবৃত বি ত্বমগ্নে অরাত্যা। ব্যহং সর্বেণ পাস্নানা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥১॥ ব্যার্তা পবমাননা বি শক্রঃ পাপকৃত্যয়া। ব্যহং সর্বেণ পাশ্মনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ ২॥ বি গ্রাম্যাঃ পশব আরণ্যৈৰ্যাপস্তৃষ্ণয়াসর। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ৷ ৩৷ বীহমে দ্যাবাপৃথিবী ইতো বি পন্থনো দিশংদিশম্। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥৪॥ ত্বষ্টা দুহিত্রে বহতুং যুনত্তীতীদং বিশ্বং ভুবনং বি যাতি। ব্যহং সর্বেণ পামনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ ৫॥ অগ্নিঃ প্রাণান্তসং দধাতি চন্দ্রঃ প্রাণেন সংহিতঃ। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ ৬। প্রাণেন বিশ্বততাবীৰ্ষং দেবাঃ সূর্যং সমৈরয়। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥৭॥ আয়ুষ্মতামায়ুষ্কৃতাং প্রাণেন জীব মা মৃথাঃ। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ ৮৷ প্রাণেন প্রাণতাং প্রাণেহৈব ভব মা মৃথাঃ। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ ৯৷ উদায়ুষা সমায়ুযোদোষধীনাং রসেন। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা। ১০ আ পর্জন্যস্য বৃষ্ট্যোদস্থামামৃতা বয়ম্।। ব্যহং সর্বেণ পাগনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা। ১১।

 বঙ্গানুবাদ –হে অশ্বিদ্বয়! এই উপনয়নসংস্কৃত মাণবককে (অর্থাৎ বালককে) আয়ু-হানি করণশালিনী বৃদ্ধাবস্থা বা জরা হতে দূরে রক্ষা করো। হে অগ্নি! তুমি একে অদানশীলতা ও শত্রুগণ হতে দূরে রক্ষা করো। আমি একে পাপ হতে বিযুক্ত (পৃথক) পূর্বক যক্ষ্মাব্যাধি হতে মুক্ত করছি এবং দীর্ঘ আয়ুষ্মন্ করে দিচ্ছি। ১।

 রোগের হেতুভূত উৎপন্ন দুঃখ হতে বায়ু একে রক্ষা করুন। ইন্দ্র একে পাপ হতে বিযুক্ত করুন। আমি একে রোগের কারণ রূপ পাপ হতে বিযুক্ত করে, যক্ষ্মা ব্যাধি হতে দূরে রক্ষিত করে, দীর্ঘ আয়ুষ্মন্ করে দিচ্ছি ॥ ২॥

সিংহ ইত্যাদি বন্য পশুসমূহ হতে গো-ইত্যাদি গ্রাম্য পশুগণ, যেমন স্বভাবতঃ বিযুক্ত হয়ে অবস্থান করে, জলাভাব জনিত কারণে পিপাসার্ত প্রাণীগণ হতে জল যেমন বিযুক্ত হয়ে থাকে, সেই রকমেই আমি এই ব্রহ্মচারীকে পাপ হতে বিযুক্ত করছি। একে ক্ষয়রোগ হত মুক্ত করে দীর্ঘ আয়ুর সাথে যুক্ত করে দিচ্ছি ৷ ৩৷৷

 এক দি হতে অপর দিকে গমনের পথ যেমন পৃথক-পৃথক হয়ে থাকে, আকাশ ও পৃথিবীও যেমন স্বভাবতঃ পৃথক পৃথক হয়ে থাকে, তেমনই আমি এই বালককেও স্বভাবতঃ পাপ হতে বিযুক্ত হয়ে অবস্থানশালী করে দিচ্ছি। যক্ষ্মা রোগ হতে বিযুক্ত করে একে দীর্ঘ আয়ুষ্মত্তা প্রদান করছি। ৪

ত্বষ্টা আপন কন্যার বিবাহের অবসরের পরে যে যৌতুক প্রেরণ করেন, সেগুলিকে নির্গমনের স্থান। ও দানের নিমিত্ত এই পৃথিবী ও অন্তরিক্ষ পরস্পর পৃথক হয়ে গিয়েছিল। সেই রকমে আমি এই নব স্ব যজ্ঞ সূত্রধারী মানবকে পাপ হতে পৃথক করে দিচ্ছি। একে যক্ষ্মা রোগ হতে পৃথক করে দীর্ঘায়ুম্মান করে দিচ্ছি ৷ ৫

ভুক্ত দ্রব্যকে পরিপাকশালী জঠরাগ্নি নেত্র ও প্রাণকে অন্নের রস প্রাপ্ত করান এবং তাদের আপন আপন কর্ম সাধনের সামর্থ্য দান করেন। ঐ রকমেই চন্দ্রমা প্রাণবায়ুর সাথে যুক্ত হয়ে অমৃতময় রসের দ্বারা আত্মাকে পোষিত করে থাকেন। আমি এই মাণবককে সকল পাপ হতে বিযুক্ত করে দিচ্ছি এবং একে যক্ষা রোগ হতে বিযুক্তকরণ পূর্বক দীর্ঘ আয়ুর সাথে যুক্ত করে দিচ্ছি। ৬।

 দেবগণ সূর্যকে প্রাণ রূপে প্রকট করেছিলেন। আমিও এমনইভাবে সূর্যকে এই বালকের আয়ু বৃদ্ধির নিমিত্ত স্থাপিত করছি। আমি একে সকল পাপ হতে বিযুক্ত করে দিচ্ছি এবং একে যক্ষ্মা হতে বিযুক্তকরণ পূর্বক দীর্ঘ আয়ুঃশালী করে দিচ্ছি। ৭।

আয়ুষ্মন্ পুরুষগণের দীর্ঘ আয়ুর দ্বারা এবং দেববর্গের চিরস্থায়ী প্রাণবায়ুর দ্বারা, হে উপনীত বালক! তুমি আপন প্রাণকে সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত ধারণ করো। আমি তোমাকে সকল পাপ হতে বিযুক্ত করে দিচ্ছি এবং ক্ষয় হতে রহিতকরণ পূর্বক দীর্ঘায়ু যুক্ত করে দিচ্ছি ॥ ৮।

হে বালক! শ্বাস-গ্রহণশীল সকল প্রাণীর শ্বাসের (অর্থাৎ প্রাণবায়ুর) সাথে তুমি শ্বাস গ্রহণ করো (অর্থাৎ প্রাণবায়ুকে ধারণ করে রাখো)। তুমি মৃত্যুপ্রাপ্ত না হয়ে এই লোকে অবস্থান করো। আমি তোমাকে সকল পাপ হতে বিযুক্ত করে দিচ্ছি এবং ক্ষয়রোগ হতে বিমুক্ত করে দীর্ঘায়ুষ্মন্ করছি ॥ ৯

আমরা আয়ুর শক্তিতেই মৃত্যু হতে জীবিত হয়ে থাকি (অর্থাৎ আয়ু থাকে বলেই বেঁচে থাকি), এবং তার দ্বারা এই লোকে বাস (বা অবস্থান) পূর্বক যব ধান্য ইত্যাদির আয়ুষ্কারক রসের দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হই। আমি তোমাকে (অর্থাৎ তুমি হেন মাণবককে) সকল রোগের জনক পাপ হতে পৃথক্ করে দিচ্ছি, তোমাকে ক্ষয়-রহিত করে দিচ্ছি এবং দীর্ঘায়ু সম্পন্ন করে দিচ্ছি। ১০।

 আমরা পর্জন্যদেবের বর্ষার জলের দ্বারা অমৃতত্ব লাভ করে উত্থান ও উপবেশন (ওঠাবসা) করে থাকি। এই বর্ষার জল সংসারের প্রাণভূত। হে উপবীতধারী ব্রহ্মচারী মাণবক! আমি তোমাকে সকল রোগের উৎপত্তির জনকপাপ হতে বিযুক্ত করে যক্ষ্মা-ব্যাধি হতেও বিযুক্ত করে দিচ্ছি। আমি তোমাকে দীর্ঘ আয়ুর সাথে সংযুক্ত করছি ॥ ১১

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ — বি দেবা জরসা ইতি সূক্তেন উপনয়নান্তরং আয়ুষ্কামস্য মাণবকস্য শরীরং আচার্যঃ অভিমন্ত্রয়েত। তথা চ কৌশিকসূত্রং।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ. ৬সূ)।

টীকা— এই সূক্ত মন্ত্রগুলির দ্বারা উপনয়নের পর মানবকের আয়ুষ্কামনার উদ্দেশে তার শরীর আচার্য কর্তৃক অভিমন্ত্রিত করণীয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ৬অ, ৬সূ)।

[ইতি তৃতীয়ং কাণ্ডং সমাপ্তম্]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *