1 of 3

০৩।৫ তৃতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক

পঞ্চম অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : শান্তিঃ
[ঋষি : বশিষ্ঠ দেবতা : সবিতা ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]

যে অগ্নয়ো অস্বন্তর্ষে বৃত্রে যে পুরুষে যে অশ্বসু। য আবিবেশোষধীযো বনস্পতীংস্তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমতেৎ ॥১॥ যঃ সোমে অন্তর্ষো গোম্বন্তর্য আবিষ্টো বয়ঃসু যো মৃগেযু। য আবিবেশ দ্বিপদো যশ্চতুষ্পদস্তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমস্তৃৎ ॥ ২॥ য ইন্দ্রেণ সরথং যাতি দেবো বৈশ্বানর উত বিশ্বদাব্যঃ। যং জোহবীমি পৃতনাসু সাসহিং তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমতেৎ ॥ ৩৷৷ যো দেবো বিশ্বাদ যমু কামমাহুর্যং দাতারং প্রতিগৃহ্নমাহুঃ। যো ধীরঃ শক্রঃ পরিভূরদাভ্যস্তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমস্তৃত। ৪যং ত্বা হোতারং মনসাভি সংবিদুষ্ক্রয়োদশ ভৌবনাঃ পঞ্চ মানবাঃ। বর্চোধসে যশসে সূতাবতে তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমতেৎ ॥ ৫৷৷ উক্ষান্নায় বোন্নায় সোমপৃষ্ঠায় বেধসে। বৈশ্বানরজ্যেষ্ঠেভ্যস্তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমতেৎ ॥ ৬৷ দিবং পৃথিবীমন্বন্তরিক্ষং যে বিদ্যুতমনুসংচরন্তি। যে দিন্তর্ষে বাতে অন্তস্তেভ্যো অগ্নিভ্যো হুতমতেৎ ॥ ৭৷ হিরণ্যপাণিং সবিতারমিন্দ্রং বৃহস্পতিং বরুণং মিত্ৰমগ্নিম। বিশ্বান্ দেবানঙ্গিরসো হবামই ইমং ক্ৰব্যাদং শময়গ্নিম ॥ ৮ শান্তো অগ্নিঃ ক্ৰব্যাচ্ছান্তঃ পুরুষরেষণঃ। অথো যো বিশ্বদাব্যস্তং ক্ৰব্যাদমশীশমম ॥ ৯। যে পৰ্বৰ্তাঃ সোমপৃষ্ঠা আপ উত্তানশীবরীঃ। বাতঃ পর্জন্য আদগ্নিস্তে ক্ৰব্যাদমশীশমন্ ॥ ১০

বঙ্গানুবাদ –মেঘের মধ্যে যে বিদ্যুৎ রূপ অগ্নি আছেন এবং জলের মধ্যে যে বড়বানল ইত্যাদি অগ্নি আছেন, মনুষ্যের শরীরে বৈশ্বানর রূপে যে অগ্নি বাস করছেন, সূর্যকান্ত ইত্যাদি মণিসমূহে যে অগ্নি আছেন, তথা অন্য সকল প্রকার অগ্নিসমুদায়কে এই হবিঃ প্রাপ্ত (বা প্রদত্ত) হোক ॥১

যে অগ্নি সোমলতায় অমৃতময় রসের পরিপাকের নিমিত্ত প্রবিষ্ট হয়ে আছেন, যে অগ্নি গো-ইত্যাদি পশুগণের মধ্যে দুগ্ধকে পরিপক্ক করে তুলছেন, এবং যে অগ্নি পক্ষী, মনুষ্য, চতুষ্পদ প্রাণী ইত্যাদির মধ্যে বর্তমান, এই হবিঃ তাদের সকলকে প্রাপ্ত হোক ॥ ২॥

দান ইত্যাদি গুণসম্পন্ন যে অগ্নিদেব ইন্দ্রের সাথে রথগামী হয়ে থাকেন, যে অগ্নিদেব মনুষ্যগণের মধ্যে বৈশ্বানর রূপে বিরাজিত থাকেন, তথা দাবাগ্নি রূপেও যে অগ্নি অস্তিত্ববান্ এবং যে অগ্নিদেব সংগ্রামে শত্রুগণকে দমনকারী হয়ে যাকে, সেই সকল অগ্নিদেবের উদ্দেশে আমি এই স্তুতিমন্ত্র সহকারে হবিঃ প্রদান করছি। এই আহুতি (হবিঃ) তাদের সকলের প্রাপ্ত হোক৷৷ ৩৷৷

 বিশ্বকে গ্রাসকারী অগ্নিদেব, ইষ্টফলের দাতা, ধীমান, সকল কার্য সম্পন্নকারী, শত্ৰুসংহারক এই সকল প্রকারের অগ্নিদেব এই হবিঃ প্রাপ্ত হোক। ৪৷

যাতে প্রাণীগণ সত্তাধারী হয়ে থাকে, সেই সম্বৎসরের ত্রয়োদশ মাস ও পঞ্চ ঋতু যে অগ্নিদেবকে দেবাহ্বানকারী বলে জানে, সেই সত্যবাণী যুক্ত ও তার বিভূতি রূপ অগ্নিসমুহের উদ্দেশে এই হবিঃ প্রদত্ত হোক। ৫

বৃষভ যে অগ্নিদেবের হবিঃ রূপ অন্ন, সোম যাঁর পৃষ্ঠভাগের উপর অবস্থান করেন, যিনি সংসারের বিধায়ক এবং বৈশ্বানর রূপে যিনি জ্যেষ্ঠ, সেই অগ্নির নিমিত্ত প্রদত্ত এই হবিঃ তাদের প্রাপ্ত হোক৷ ৬ ৷৷

আকাশ, পৃথিবী ও অন্তরিক্ষলোকে প্রবিষ্ট হয়ে বিচরণশীল অগ্নি, মেঘে বিদ্যুৎ রূপে অধিষ্ঠিত অগ্নি তথা জ্যোতিশ্চক্রে বিচরণকারী অগ্নি এবং সকল দিকে বিরাজমান অগ্নি, সংসারের আশ্রয়ভূত অগ্নি–এই সকলকে এই হবিঃ সমর্পণ করছি। তাদের তা প্রাপ্ত হোক। ৭ ৷৷

স্তবকারীগণকে দানের নিমিত্ত, যাঁর হস্তে সুবর্ণ বিদ্যমান থাকে, সেই; সূর্য এবং ইন্দ্র, মিত্র, বরুন, অগ্নি–তাদের সকলকে এই হবিঃ প্রাপ্ত হোক। তারা এই ব্যাৎ (ক্রব্যাদ অর্থাৎ মাংসাশী) অগ্নিকে শমিত করণশালী হোন। ৮

মাংস ভক্ষক ক্ৰব্যাদ অগ্নি সূর্য ইত্যাদি দেবতাগণের কৃপায় শান্ত হোন; পুরুষের (অর্থাৎ মনুষ্যের) হিংসক অগ্নিও শান্ত হোক এবং সকলকে ভস্ম করণশালী দাবানলকে আমি শান্ত করে দিয়েছি। ৯।

 সোমকে ধারণকারী পর্বতসমূহ, ঊর্ধ্বমুখে শয়নকারী (উত্তানশায়ী) জলসমূহ, মেঘ ও বায়ু এই ক্ৰব্যাদ ইত্যাদি (ক্ষতিকারক) অগ্নিসমূহকে শান্ত করে দিয়েছে ৷৷ ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চমেনুবাকে পঞ্চ সুক্তানি। তত্র যে অগ্নয়ঃ ইতি প্রথমং সূক্তং। তত্র আদ্যাভিঃ সপ্তভিঃ ক্ৰব্যাদোপহতগৃহগোষ্ঠক্ষেত্রাদিশান্ত্যর্থং মণিধারণহোমাদিকর্মণি কুর্যাৎ। তানি চ সম্পাতিতপালাশবৃক্ষমনিবন্ধনং আজ্যহোমঃ পালাশসমিদাধানং পালাশেন উদঞ্চনেন উদকহোমঃ। পালাশ্যাং উদপাত্ৰাং যবান্ প্রক্ষিপ্য উদকসহিতযবহোমঃ। তথা অনেন দশর্চেন সর্বেণ সূক্তেন ক্ৰব্যাচ্ছমনে সদকং কাম্পীলসমিদ্বয়েন মথিত্বা তং মন্থং পালাশ্যা দা প্রত্চং জুহুয়াৎ। তথা বশাশমনকর্মণি অনেন সূক্তেন বশাং অভিমন্যু ব্রাহ্মণায় দদ্যাৎ। তথা চ কৌশিকঃ।…ইত্যাদি। (৩কা. ৫অ. ১সূ)।

 টীকা –পাঁচটি সূক্ত সমন্বিত পঞ্চম অনুবাকের এটি প্রথম সূক্ত। এই সূক্তের প্রথম সাতটি মন্ত্র ব্যাদে উপহত গৃহ, গোষ্ঠ, ক্ষেত্র ইত্যাদির শান্তির নিমিত্ত মণিধারণ ও হোম ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই মন্ত্রের দ্বারা পলাশবৃক্ষমণিবন্ধন, আজহোম, উদকহোম, উদকের সাথে যবহোম ইত্যাদি করণীয়। ক্রব্যাদাগ্নির শমনে এই দশটি ঋকের বিনিয়োগ উল্লিখিত হয়েছে। বশাশমন কর্মে এই সূক্তের দ্বারা বশাকে অভিমন্ত্রিত করে ব্রাহ্মণকে দান করা কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৩কা, ৫অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : বর্চপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : বশিষ্ঠ দেবতা : সকল দেবতা, বৃহস্পতিবৰ্চ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

হস্তিবৰ্চসং প্রথং বৃহদ যশো অদিত্য যৎ তন্বঃ সম্বল। তৎ সর্বে সমদুর্মহ্যমেদ বিশ্বে দেৰা অদিতিঃ সজোষাঃ ॥১॥ মিশ্চ বরুণশ্চেন্দ্রো রুদ্র চেততু। দেবাশ বিশ্বধায়সস্তে মাজ্ঞন্তু বচসা। ২। যেন হস্তী বচসা সম্বভূব যেন রাজা মনুষ্যেম্বস্বন্তঃ। যেন দেবা দেবতামগ্র আয় তেন মামদ্য বচসাগ্নে বস্বিনং কৃণু ৷ ৩৷৷ যৎ তে বর্চো জাতবেদো বৃহদ ভবত্যাহুতেঃ। যাবৎ সূর্যস্য বর্চ আসুরস্য চ হস্তিনঃ। তাবনো অশ্বিনা বর্চ আ ধত্তাং পুষ্করজা ॥ ৪৷৷ যাবচ্চতঃ প্রদিশশ্চক্ষুযাবৎ সমনুতে। তাবৎ সমৈত্বিন্দ্ৰিয়ং ময়ি তদ্ধস্তিবৰ্চসম ॥ ৫॥ হস্তী মৃগাণাং সুষদামতিষ্ঠাবান্ বভূব হি। তস্য ভগেন বৰ্চসাভি ষিঞ্চামি মামহম৷৷৬৷

বঙ্গানুবাদ –আমাতে হস্তীর মতো অপ্রধৃষ্ট তেজঃ প্রাপ্ত (বা সঞ্চারিত) হোক। দেবমাতা অদিতির দেহ হতে উৎপন্ন মহান তেজকে সকল দেবতা ও অদিতিও আমাকে প্রদান করুন। ১।

দিনের অভিমানী দেবতা মিত্র, রাত্রির অভিমানী দেবতা বরুণ, স্বর্গের রাজা (বা অধিপতি) ইন্দ্র এবং সংহারের দেবতা রুদ্র আমাকে তাদের কৃপার পাত্র বলে উপলব্ধি করুন। এই মিত্র ইত্যাদি দেবতা সংসারের পোষক। তারা আমাকে আমার অভিলষিত তেজে সম্পন্ন করুন। ২।

 যে তেজের দ্বারা মনুষ্যগণের মধ্যে রাজা তেজস্বী হয়ে থাকেন, যে তেজের দ্বারা জলে জীব তেজস্বী হয়ে থাকে, যে তেজের দ্বারা হস্তী বিশালকায় হয়ে থাকে, যে তেজের দ্বারা অন্তরীক্ষে যক্ষ-গন্ধর্ব ইত্যাদি দেব যোনিবর্গ যশস্বী হয়ে থাকে, যে তেজের দ্বারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণ দেবত্ব লাভ করেছিলেন, সেই তেজের দ্বারা, হে অগ্নি! আমাকে তেজস্বী করে দাও ৩

হে জাতবেদা (অর্থাৎ উৎপন্ন প্রাণিসমূহের জ্ঞাতা) ও হবিঃসমূহের দ্বারা আহূত-কৃত অগ্নিদেব! তোমার মধ্যে যত তেজ আছে, সূর্যের মধ্যে যত তেজ আছে, সেইতেজকে পদ্মমালায় সুশোভিত অশ্বিদ্বয় আমাতে ব্যাপ্ত করুন ॥৪॥

দর্শন-শক্তি সম্পন্ন নেত্র নক্ষত্র মণ্ডলের যতদূর পর্যন্ত স্থান দর্শন করতে পারে, চারিটি দিক যত পরিমিত স্থান ব্যাপ্ত হয়ে আছে, মহান্ ঐশ্বর্যশালী ইন্দ্রের তত পরিমাণ বৃহৎ চিহ্ন আমার প্রাপ্ত হোক এবং পূর্ব কথিত তেজও আমার প্রাপ্ত হোক। ৫।

হস্তী অধিক বলবান হওয়ায় বনে বিচরণশীল মৃগ ইত্যাদির উপর শাসনকারী হয়ে তাকে, সেই হস্তীর ভাগ্য রূপ তেজের দ্বারা আমি নিজেকে অভিসিঞ্চিত করছি ৷ ৬

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –হস্তিবৰ্চসং ইতি দ্বিতীয়সূক্তেন তেজস্কামো হস্তিদন্তং স্পৃষ্টা উপতিষ্ঠতে। তথা, হস্তিদন্তমনিং অনেন সম্পাত্য অভিমন্যু বধীয়াৎ …তথা অনেন সূক্তেন পুরোহিতো হস্তিনং অভিমন্যু রাজ্ঞে প্রাতঃ প্রাতঃ প্রযচ্ছে। তৎ উক্তং পরিশিষ্টে।…ইত্যাদি। (৩কা, ৫অ. ২সূ)।

টীকা –তেজস্কামী জন এই সূক্তমন্ত্র পাঠ পূর্বক হস্তিদন্ত স্পর্শ করে অবস্থিত থাকবেন এবং এই মন্ত্রের দ্বারা হস্তিদন্তমনি অভিমন্ত্রিত করে ধারন করবেন। পুরোহিত এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত হস্তী রাজাকে প্রদান করবেন। এছাড়া ব্রাহ্য নামক মহাশান্তি কর্মে হস্তীদন্তমণিবন্ধনে এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে।….ইত্যাদি ॥ (৩কা, ৫অ, ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : বীরপ্রসূতিঃ

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : যোনি ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]

যেন বেহ বভূবিথ নাশয়ামসি তৎ ত্বৎ। ইদং তদন্যত্র হৃদপ দূরে নি দসি৷ ১। আ তে যোনিং গর্ভ এতু পুমান্ বাণ ইবেষুধি। আ বীরোহত্র জায়তাং পুত্ৰস্তে দশমাস্যঃ ২পুমাংসং পুত্রং জুনয় তং পুমাননু জায়তা। ভবাসি পুত্ৰাণাং মাতা জানাং জনয়াশ্চ যা ৷৷ ৩৷ যানি ভদ্ৰাণি বীজানূষভা জনয়ন্তি চ। তৈং পুত্রং বিন্দস্ব সা প্রসূৰ্ধেনুকা ভব৷ ৪৷ কৃণোমি তে প্রাজাপত্যমা যযানিং গর্ভ এতু তে। বিস্ব ত্বং পুত্রং নারি বস্তুভ্যং শমসম্মু তস্মৈ ত্বং ভব৷ ৫যাসাং দ্যৌঃ পিতা পৃথিবী মাতা সমুদ্রো মূলং বীরুধাং বভূব। তত্ত্বা পুত্রবিদ্যায় দৈবীঃ প্রাবন্তোষধয়ঃ ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে স্ত্রী! তুমি যে পাপ হতে উৎপন্ন রোগের দ্বারা বন্ধ্যা হয়েছে, সেই পাপ-রোগকে আমি তোমার থেকে পৃথক করছি। সেই রোগ যাতে পুনরায় না প্রকট হতে পারে, সেই ভাবে তাকে দূর করে দিচ্ছি। ১।

হে নারী! বাণ স্বভাবতঃ যেমন তূণীরে গমন করে (বা অবস্থান করে), সেইরকমেই তোমার প্রজননাঙ্গ বীর্যযুক্ত (অর্থাৎ পুরুষ-জ্বণরূপ) গর্ভ প্রাপ্ত হোক। সেই গর্ভ পুত্র-রূপে পরিণতি প্রাপ্ত হয়ে দশ মাস পরে প্রসবকালে প্রকট হোক ॥ ২॥

হে স্ত্রী! তুমি পুরুষ-সন্তানকে (অর্থাৎ পুত্রকে) উৎপন্ন করো। পুত্রের পরে পুত্রই উৎপন্ন হোক, এমন অটুট নিয়মের দ্বারা তুমি পুত্রবতী হয়ে থাকো। ৩।

হে স্ত্রী! যে অমোঘ বীর্যের দ্বারা বৃষভগণ গাভীগুলিতে বৎস উৎপন্ন করে থাকে, সেই রকমেই (অর্থাৎ পুরুষের সেই রকম অব্যর্থ বীর্যে) তুমি পুত্রলাভ করো। ৪

হে স্ত্রী! ব্রহ্মা কর্তৃক, বিরচিত প্রজনন সম্বন্ধী নিয়ম অনুসারে আমি > তোমার নিমিত্ত এই বিধান (কর্ম) করছি। তোমার গর্ভে গর্ভ সুখদানশালী পুত্র প্রাপ্ত হোক ॥ ৫৷৷

উপর দিকে বৃদ্ধিশালী ঔষধিসমূহের পিতা হলো আকাশ এবং বীজ ধারণকারিণী পৃথিবী হলো। মাতা। সেই ঔষধিসমূহ জলের দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সেই ঔষধি তোমাকে পুত্র প্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত গর্ভের রক্ষক হোক। ৬।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যেন বেহৎ বভূবিথ ইতি তৃতীয় সূক্তেন পুংসবনকর্মণি বানং অভিমন্ত্র– স্ক্রিয়া মূর্ধি বিবৃহে! তথা অনেন সূক্তেন আজ্যং হুত্বা শরমণিং সম্পত্য অভিমন্ত্র বন্ধুীয়াৎ। তথা (কাল) চমসে সরূপবৎসায়া গোর্দুগ্ধে ব্রীহিযবৌ প্রক্ষিপ্য আলোড্য অধ্যণ্ডে বিবৃহেৎ। তথা পলাশবিদাঘৌ একত্র পিন্থা অনেন সূক্তেন অভিমন্ত্র দক্ষিণেনাঙ্গুষ্ঠেন স্ত্রিয়া দক্ষিণস্যাং নাসিকায়াং নস্যং কুর্যাৎ…ইত্যাদি। (৩কা: ৫অ. ৩সূ)।

টীকা— এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা পুংসবন কর্মে (অর্থাৎ গর্ভিণীর দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাসে কর্তব্য সংস্কারবিশেষে) বাণ অভিমন্ত্রিত করে স্ত্রীর মস্তকে ধারণীয়। এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা আজাহুতি প্রদান পূর্বক শর-মণি অভিমন্ত্রিত করে বন্ধন (ধারণ) করণীয়।..ইত্যাদি। (৩কা, ৫অ. ৩সূ)

.

চতুর্থ সূক্ত : সমৃদ্ধিপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : বনস্পতি, প্রজাপতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি ]

পয়স্বতীরোষধয়ঃ পয়স্বমকং বচঃ। অথো পয়স্বতীনামা ভরেহহং সহস্ৰশঃ ॥১॥ বেদাহং পয়স্বন্তং চকার ধান্যং বহু। সংভৃত্বা নাম যো দেবস্তং বয়ং হবামহে যো যো অষজ্বনো গৃহে ॥ ২॥ ইমা যাঃ পঞ্চ প্রদিশো মানবীঃ পঞ্চ কৃষ্টয়ঃ। বৃষ্টে শাপং নদীরিবেহ স্ফাতিং সমাবহান্ ॥ ৩৷৷ উদুৎসং শতধারং সহস্রধারমক্ষিত। এবাশ্মকেদং ধান্যং সহস্রধারমক্ষিতম্ ॥ ৪ শতহস্ত সমাহর সহস্ৰহস্ত সং কির। রুতস্য কার্যস্য চেহ স্ফাতিং সমাবহ ॥ ৫॥ তিসম্র মাত্রা গন্ধবাণাং চতম্রো গৃহপত্নাঃ। তাসাং যা ফাতিমত্তমা তয়া ত্বাভি মৃশামসি ॥ ৬ উপেহশ্চ সমূহশ্চ যাত্তারৌ তে প্রজাপতে। তাবিহা বহতাং স্ফাতিং বহুং ভূমানমক্ষিতম্ ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ –ধান্য, যব ইত্যাদি সারযুক্ত (অর্থাৎ ঔষধিসম্পন্ন) হোক; তেমনই আমার বাক্যও সারযুক্ত (অর্থাৎ অব্যর্থ বা সকলের গ্রহণীয়) হোক। আমি সেই সারযুক্ত ধান্য ইত্যাদি (ঔষধিকে)। লাভ করবো ॥১॥

 আমি সেই সারবান্ দেবতাকে জ্ঞাত আছি; তিনি ধান্য ইত্যাদির কা বৃদ্ধি-করণশালী। ধান্য ইত্যাদিকে একত্ৰ-করণশালী দেবতাকে আমরা আহ্বান করছি। অযাজ্ঞিক ধনবানের সমস্ত ধন তাদের গো-ইত্যাদি সহ সভৃত্বা নামক (সঞ্চয়ের) দেবতা আমাদের প্রদান করুন। ২৷৷

এই পরিদৃশ্যমান পঞ্চ দিক (পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ-ঊর্ধ্ব) ও পঞ্চ প্রকার মনুষ্য (ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-নিষাদ) এই যজমানকে ধন-ধান্যে নানা রকমে সম্পন্ন (সমৃদ্ধ) করুক, যেমন বর্ষা হলে নদীর প্রবাহ জলে পতিত জীবসমূহকে এক স্থান হতে অপর স্থানে নিয়ে যায় ৩

সহস্র ধারায় সম্পন্ন হওয়ার পরও জলের উৎপত্তিস্থল যেমন ক্ষীণতা-রহিত থেকে যায়, সেই রকম এই সঞ্চিত ধান্য অনেক ধারায় প্রদত্ত হলেও যেন ক্ষীণ (বা ক্ষয়) না হয়ে যায় ॥৪॥

হে দেব! তোমার শত সংখ্যক হস্ত আছে। সেগুলির দ্বারা ধন আনয়ন করে আমাদের প্রদান করো। হে সহস্র হস্তশালী! তোমার সেই হস্তগুলির দ্বারা ধন আনয়ন করে আমাদের প্রদান করো; এবং আমাদের দ্বারা সম্পাদিত তথা সম্পাদিতব্য কার্যগুলিকে সমৃদ্ধির সাথে আমাদের সম্পন্ন করাও ৫৷৷

গন্ধর্ববর্গের সমৃদ্ধির কারণ স্বরূপ তিনটি কলা অংশ আছে, তথা অপ্সরাবৃন্দের সমৃদ্ধির হেতুভূত চারিটি কলা আছে; সেইগুলির মধ্যে যা অত্যন্ত সম্পন্ন (বা সমৃদ্ধ) যে কলা, তার দ্বারা আমরা, হে ধান্য! তোমাকে স্পর্শ করাচ্ছি ॥৬।

হে প্রজাপতি! ধান্যকে নিকটে আনয়নশালী। উপপাহ দেব এবং প্রাপ্ত ধনের বৃদ্ধিকরণশালী সমূহ দেব, এই দুজন তোমার সারথিস্বরূপ। অনেক। প্রকারে ধন-ধান্যকে বৃদ্ধি করণের নিমিত্ত তুমি তাদের উভয়কে আনয়ন (প্রেরণ) করো ॥৭॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পয়স্বতীঃ ওষধয় ইত্যস্য ধান্যসমৃদ্ধিকর্মসু বিনিয়োগঃ।…পয়স্বতীঃ ইত্যাদ্যয়া পিতৃমেধকর্মণি শবদাহানন্তরং স্নানং কুর্যাৎ..ইত্যাদি। (৩কা. ৫অ. ৪সূ)।

টীকা –এই সূক্তটি ধান্য-সমৃদ্ধি কর্মে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। পিতৃমেধ কর্মে শবদাহের পর এই মন্ত্রে স্নান করণীয়।….ইত্যাদি ॥ (৩কা, ৫অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : কামস্য ইষুঃ

 [ঋষি : ভৃগু দেবতা : কামবাণ, মিত্রাবরুণ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

উদস্যোৎ তৃদত মা ধৃথাঃ শয়নে স্বে। ইষুঃ কামস্য যা ভীমা তয়া বিধ্যামি জ্বা হৃদি ॥১॥ আধীপণাং কামশল্যামিং সংকল্পকুল্মলা। তা সুসংনতাং কৃত্বা কামো বিধ্যতু ত্বা হৃদি। ২৷৷ যা প্লীহানং শোষয়তি কামস্যেযুঃ সুসংনতা। প্রাচীনপক্ষা ব্যোষা তয়া বিধ্যামি জ্বা হৃদি। ৩ শুচা বিদ্ধা ব্যোয়া শুষ্কাস্যাভি সৰ্প মা। মৃদুনিৰ্মনঃ কেবলী প্রিয়দিন্যনুব্রতা। ৪আজামি ত্বজন্যা পরি মাতুরঘো পিতুঃ। যথা মম ক্ৰতাবসসা মম চিত্তমুপায়সি ॥ ৫॥ ব্যস্যৈ মিত্রাবরুণৌ হৃদশ্চিত্তান্যস্যতম। অথৈনামতুং কৃত্বা মমৈব কৃণুতং বশে ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে স্ত্রী! উদ্ভুদ নামক দেবতা অত্যন্ত ব্যথিত-করণশালী; তিনি তোমাকে কামার্ত করুন। তুমি কামের বাণের দ্বারা বিদ্ধ হয়ে কামবিকারে ব্যাকুল হয়ে পালঙ্কের উপর শয়ন করতে পছন্দ করোনি। আমি তোমার উপর কামের ভয়প্রদ বাণ চালনা করছি ॥১॥

 রমণ করার অভিলাষ রূপ পর্ণগুলি যে কামরূপ বাণের অগ্রভাগে যুক্ত হৃদয়ভেদক লৌহ-শলাকা-তুল্য, তা ভোগাত্মক সঙ্কল্পে যুক্ত মশালের মতো (দাহপ্রদ); সেই বাণে আরোহিত হয়েই কামদেব তোমাকে বিদ্ধ করছেন ২

কামদেবের দ্বারা উত্তম প্রকারে নিক্ষিপ্ত বাণ প্রাণের আশ্রয় রূপ প্লীহাকে শোষণ (শুষ্ক) করুক। সরল ফলাসম্পন্ন তথা অনেক রকমে সন্তপ্ত করণশালী বাণের দ্বারা আমি তোমার হৃদয়কে আক্রান্ত করছি ৷ ৩৷

এই সন্তাপময় বাণের দ্বারা তোমার কণ্ঠ শুষ্ক হোক! তুমি আপন ইচ্ছাকে ব্যক্ত করতে উত্তাপের কারণে অসমর্থ হয়ে আমাকে প্রাপ্ত হও। প্রণয়-কলহকে ত্যাগ করে মৃদু-ভাষিণী হও এবং আমার অনুকূলে চলো। ৪।

(কামরূপ) কশার দ্বারা তাড়না করে আমি তোমাকে আমার অভিমুখিনী করছি। তোমাকে তোমার মাতা-পিতার নিকট হতেও আমি আপন সম্মুখে আগমনের আহ্বান করছি, যাতে তুমি আমার মতানুকূলা হয়ে আমাকে প্রাপ্ত হও ॥ ৫

হে মিত্র ও বরুণ দেবদ্বয়! এই স্ত্রীর হৃদয়কে জ্ঞান-শূন্য করে দাও। এ যাতে কার্য বা অকার্য বিস্মৃত হয়ে যায় এবং আমার বশীভূতা হয়ে থাকে, এমন করো ৷৷ ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –উদ্ভুদজ্বা ইতি সূক্তং জপন স্ত্রীবশীকরণকামঃ অঙ্গুল্যা স্ক্রিয়ং নুদেৎ। তথা অনেন সূক্তেন একবিংশতি বদরীকন্টকান্ ঘৃতাক্তান্ আদধ্যাৎ। তথা একবিংশতিবদরী-প্রাপ্তানি সূত্রেন বেষ্টয়িত্ব অনেন সূক্তেন কৃজ্জহুয়াৎ। এবং অনেনৈব সূক্তেন কুষ্ঠং নবনীতেন অভ্যজ্য ত্রিকালং অগ্নৌ প্রতপেৎ। তথা অনেন সূক্তেন খট্টায়া অধোমুখপট্টিকাং গৃহীত্বা ত্রিরাত্রং স্বপ্যাৎ। তথা অনেন সূক্তেন উষ্ণোদকং ত্রিপাদে শিকো প্রবধ্য অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং মর্দয় শয়ীত। তথা লিখিতং প্রতিকৃতিং সূত্রোক্তলক্ষণয়া ইদা বিধ্যেৎ। তৎ উক্তং কৌশিকেন।.ইত্যাদি। (৩কা, ৫অ. ৫সূ)।

টীকা— এই সূক্ত-মন্ত্রগুলি জপ পূর্বক স্ত্রীবশীকরণ কামনায় অঙ্গুলির দ্বারা স্ত্রীকে তাড়না করণীয়। তথা একবিংশতি সংখ্যক বদরীকন্টক ঘৃতে সিক্ত করে সেগুলির প্রাপ্তভাগ একটি সূত্রের দ্বারা বেষ্টন করে এই সূক্ত-মন্ত্রে হোম করণীয়।….ইত্যাদি। (৩কা, ৫অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *