1 of 3

০৩।১ তৃতীয় কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতাতৃতীয় কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শত্রুসেনাসংমোহনম
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি, মরুৎ, ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ ]

অগ্নিঃ শত্রু প্রত্যেতু বিদ্বান প্রতিদহন্নভিশস্তিমরাতি। স সেনাং মোহয়তু পরেষাং নিৰ্হস্তাংশ্চ কৃণবজ্জাতবেদাঃ ॥ ১ যায়মুগ্রা মরুত ঈদৃশে স্থাভি প্রেত মৃণত সহধ্বম্। অমীমৃণ বসবো নাথিতা ইমে অগ্নিহের্ষাং দূতঃ প্রত্যেতু বিদ্বান্৷ ২। অমিত্রসেনাং মঘবন্নন ছয়তীমভি। যুৰং তানিন্দ্র বৃহন্নগ্নিশ্চ দহতং প্রতি৷৷ ৩৷৷ প্রসূত ইন্দ্র প্রবতা হরিভ্যাং প্র তে বজ্রঃ প্রমৃণন্নেতু শক্র। জহি প্রতীচো অনূচঃ পরাচো বিম্বক সত্যং কৃণুহি চিত্তমেষাম। ৪। ইন্দ্র সেনাং মোহয়ামিত্রাণাম। অগ্নেবাতস্য ব্রাজ্যা তান্ বিষুচো বি নাশয় ॥ ৫॥ … ইন্দ্রঃ সেনাং মোহয়তু মরুততা ঘনভোজসা। চক্ষুংষ্যগ্নিরা দত্তাং পুনরেতু পরাজিতা৷৷ ৬ ৷৷—

বঙ্গানুবাদ –এই অগ্নিদেব সেনাধ্যক্ষের সহযোগে, নাশের নিমিত্ত উদ্যত শত্রুগণের মনকে ব্যাকুল করে অস্ত্র-শস্ত্র ধারণের পক্ষে অসমর্থ করে দিন। এই অগ্নি দেবাসুরের যুদ্ধে দেবসেনাগণের অগ্রবর্তী হয়ে গমনশীল; তিনি বৈরিগণের অঙ্গকে ভস্মীভূত করে অগ্রসর হোন ১

হে মরুত-বর্গ! তোমরা যুদ্ধে আমার সহায়তার নিমিত্ত সমীপবর্তী হয়ে থাকো এবং শত্রুদের প্রহার করো। বসু দেবতাগণও আমাদের নিবেদন গ্রহণ পূর্বক শনাশে প্রবৃত্ত হোন। বসুগণের প্রধান দূতরূপে অগ্নিও শত্রুর অভিমুখে অগ্রসর হোন। ২।

হে ইন্দ্র! আমরা, যারা তোমার পরিচর্যাকারী, সেই নিরপরাধীদের প্রতি শত্রুবৎ আচরণশীল আক্রমণকারী সেনাগণের সম্মুখে। আগমন করো। তুমি এবং অগ্নিদেব উভয়েই শত্রুর নিমিত্ত প্রতিকূলতা সম্পন্ন হয়ে তাদের ভস্মীভূত করে দাও। ৩।

হে ইন্দ্র! তুমি শত্রুসেনার মধ্যে সমুপস্থিত হয়ে বজের দ্বারা তাদের ভয়ঙ্কর ভাবে সংহার করে ফেলো। সম্মুখভাগে অগ্রসরমান, পশ্চাৎভাগ হতে ধাবমান এবং পলায়মান সকল শত্রুগণকে বিনাশ করে ফেলো। এই অবসরে শত্রুকে পরাজিত করা ব্যতীত আর কোন কথা বিচার করো না। ৪।

 হে ইন্দ্রদেব! রিপু সেনাগণকে বিমূর্ত (বা বিমোহিত) করে দাও। অগ্নি ও পবনের সহযোগে বিনাশ-সাধনকারী যে বিকরাল গতি হয়ে থাকে, তার দ্বারা তুমি রিপুগণকে পরাজুখ করে শেষ করে দাও। ৫।

হে দেববর্গের অধিপতি (ইন্দ্র)! তুমি রিপু সেনাগণকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দাও এবং তোমার আপন সখা মরুৎ-গণের দ্বারা তাদের নির্মূল করে দাও। অগ্নিদেব রিপুগণের নেত্রগুলিকে বিকৃত করে দিন। এই পদ্ধতিতে এই রকম পরাজিত হয়ে রিপুসৈন্যগণ প্রত্যাবর্তন করুক ৷ ৬ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –তৃতীয় কাণ্ডে ষড়নুবাকাঃ। তত্র প্রথমেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র অগ্নিৰ্ণঃ শর্জন ইতি প্রথম সূক্তং। তস্য পরসেনামোহনকর্মণি ফলীকরণমিশ্রিতস্য বা কনিকিকামিশ্রিতস্য বা ওদনপিণ্ডস্য সাংগ্রামিকাগ্নেী উলুখলেন হোমে বিনিয়োগ। তথা অস্মিন্নেব কর্মণি একবিংশতিং শর্করাঃ শূপে কৃত্বা পরসেনাং প্রতি নিপুনীয়াৎ। তথৈব অপা বাখ্যায়ৈ দেবতায়ৈ অনেন সূক্তেন চরুং জুহুয়াৎ। 3ৎ উওং কৌশিকেন।…ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ১সূ.)।

টীকা –তৃতীয় কাণ্ডের ছটি অনুবাকের মধ্যে প্রথম অনুবাকের পঞ্চ সূক্তের এটি প্রথম সূক্ত। এই সূক্তমন্ত্রের সহযোগে পরসৈন্যকে বিমোহিত করতে ফলীকরণ-মিশ্রিত বা কণিকিকা-মিশ্রিত বা অন্নপিণ্ডের সাংগ্রামিক অগ্নিতে উলুখলের দ্বারা হোম করণীয়। এই কর্মকালে একুশটি শর্করা কুলায় করে পরসেনার প্রতি উড়িয়ে দিতে হয়। এবং তারপর অপা নামধেয় (সকলের সুখ ও প্রাণ অপহরণকারী দেবতা বা) অপদেবতার উদ্দেশে এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত চরু-হোম করণীয়।.. ত্যাদি। (৩কা, ১অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : শত্রুসেনাসংমোহনম

[ঋযি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি, ইন্দ্র ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ ]

অগ্নিনো দূতঃ প্রত্যেতু বিদ্বান্ প্রতিদহন্নভিশস্তিমরাতি। স চিত্তানি মোহয়তু পরেং নিৰ্হস্তাংশ্চ কৃণবজ্জাতবেদাঃ ॥১॥ অয়মগ্নিরমূমুহদ যানি চিত্তানি তা হৃদি। বি বো ধমজােকসঃ প্র বো ধমতু সর্বতঃ ॥ ২॥ ইন্দ্র চিত্তানি মোহয়ন্নর্বাঙাকৃত্যা চর। অগ্নেবাৰ্তস্য ব্রাজ্যা তান্ বিষুচো বি নাশয় ॥ ৩৷ ব্যাক্তয় এষামিতাখো চিত্তানি মুহ্যত। অথো যদদ্যৈষাং হৃদি তদেষাং পরি নির্জহি ॥ ৪৷৷ অমীষাং চিত্তানি প্রতিমোহয়ন্তী গৃহাণাঙ্গান্যপে পরেহি। অভি প্রেহি নির্দহ হৃৎসু শশাকৈগ্রাহ্যামিত্রাংশুমসা বিধ্য শত্রু ॥ ৫৷৷ অসৌ যা সেনা মরুতঃ পরেষামম্মানৈত্যভ্যোজমা স্পর্ধমানা। তাং বিধ্যত তমসাপব্ৰতেন যথৈষামনো অন্যং ন জানাৎ ॥ ৬

বঙ্গানুবাদ–দেবদূতের ন্যায় অগ্রগণ্য অগ্নি শত্রুগণকে ভস্ম করুন; তাদের মনকে মোহগ্রস্ত করুন এবং তাদের অস্ত্র-শস্ত্র গ্রহণের সামর্থ্য রহিত করে দিন। ১।

হে শবর্গ! আমাদের দমন করার বিষয়ে তোমরা যে পরিকল্পনা করেছে, সেই পরিকল্পনাকে অগ্নি ভ্ৰমান্বিত করুন এবং তোমাদের স্থানচ্যুত করে দিন। ২।

 হে ইন্দ্র! শত্রুগণের মনকে ভ্ৰমান্বিত করে তুমি তাদের সম্মুখে বিচরণ করো এবং অগ্নি ও বায়ুর সম্মিলনে যে প্রচণ্ড গতি উৎপন্ন হয়ে থাকে, সেই গতির দ্বারা শত্রুগণকে বিনষ্ট করো ৷ ৩৷

হে শত্রুগণের মনঃসমূহ! তোমরা বিমোহিত বা প্রমান্বিত হয়ে যাও। হে শত্রুগণের সঙ্কল্পসমূহ! তোমরা বিরুদ্ধ হয়ে যাও। হে দেবগণ! তোমরা এই শত্রুগণের মনকে মোহগ্রস্ত করে দাও। হে ইন্দ্র! যুদ্ধের নিমিত্ত প্রস্তুত আমাদের শত্রুবর্গের উৎসাহকে তুমি নষ্ট করে দাও। ৪।

 হে সুখ নষ্ট-করণশালিনী অপা নামধারিণী পাপদেবী! আমাদের শত্রুবর্গের মনকে ভ্রমপূর্ণ করে তুমি তাদের শরীরে অবস্থান করো। তুমি শত্রুর অভিমুখে গমন পূর্বক তাদের মতিভ্রষ্ট করো; ভয় শোক ইত্যাদির দ্বারা পূর্ণ করে তাদের মোহ রূপ পিশাচগণের দ্বারা বিনাশ করো ॥ ৫॥

হে মরুৎ-বর্গ! আপন বলের অহঙ্কারে আমাদের প্রতি স্পর্ধাকারী এই শত্রুসেনাগণ আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তুমি আপন মায়ায় তাদের নষ্ট করে দাও। এদের মধ্যে কোন জনও যেন নিজেকে ভিন্ন অপরকে না জানতে পারে (অর্থাৎ মায়ার অন্ধকারে যেন তারা সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন হয়ে যায়) ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অগ্নির্ণো দূতঃ ইতি দ্বিতীয়সূক্তেন পরসেনামোহনকর্মণি পূর্বসূক্তোক্তানি কর্মণি কুর্যাৎ….ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ২সূ)।

টীকা –দ্বিতীয় সূক্তোক্ত এই মন্ত্রগুলি পূর্বসূক্তের মতোই পরসেনাবিমোহন কর্মে বিনিয়োগ করা হয়। ….ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : স্বরাজ্যে রাজ্ঞঃ পুনঃ স্থাপনম

 [ঋযি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত অগ্নি ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, অনুষ্টুপ ]

অচিক্রদৎ স্বপা ইহ ভূবদগ্নে ব্যচস্ব রোদসী উরূচী। যুন্তু ত্বা মরুতো বিশ্ববেদসঃ আমুং নয় নমসা রাতহব্যম্ ॥১॥ দূরে চিৎ সন্তমরুষাস ইন্দ্রমা চ্যাবয়ন্তু সখ্যায় বিপ্রম। যদ গায়ত্রীং বৃহতীমৰ্কৰ্মস্মৈ সৌভ্রামণ্যা দধৃষন্ত দেবাঃ ॥ ২॥ অদ্ভ্যা রাজা বরুণো হয়তু সোমস্তা হয়তু পর্বতেভ্যঃ। ইন্দ্রা হয়তু বিড়ভ্য আভ্যঃ শ্যেনো ভূত্বা বিশ আ পতেমাঃ ॥ ৩৷৷ শ্যেনো হব্যং নয়ত্বা পরম্মাদন্যক্ষেত্রে অপরুদ্ধং চরন্ত। অশ্বিনা পন্থাং কৃণুতাং সুগং ত ইমং সজাতা অভিসংবিশধ্বম্ ॥ ৪৷৷ হয়ন্তু ত্বা প্রতিজনাঃ প্রতি মিত্রা অবৃষত। ইন্দ্রাগ্নী বিশ্বে দেরাস্তে বিশি ক্ষেমমদীধর ॥৫ যস্তে হবং বিবদৎ সজাত যশ্চ নিষ্ট্যঃ। অপাঞ্চমি তং কৃত্বাথেমমিহাব গময় ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ— হে অগ্নি! এই রাজা আপন রাজ্য হতে পতিত (চ্যুত হয়েছেন; পুনরায় রাজ্যপ্রাপ্তির নিমিত্ত তোমাকে আহ্বান করছেন। প্রজাপালক রাজা তোমার কৃপায় পূর্ণ হোন। তুমি এঁর নিমিত্ত দাবা পৃথিবীতে ব্যাপ্ত হও; এই কর্মে উনপঞ্চাশসংখ্যক মরুৎ-বৃন্দ তোমার সহায়তা করুক। তুমি এই রাজাকে পুনরায় রাজ্য প্রাপ্ত করিয়ে দাও। ১।

হে ঋত্বিবৃন্দ! দেবরাজ ইন্দ্রকে এই রাজার সহায়তার নিমিত্ত আহুত করো। দেবগণ এই ইন্দ্রকে গায়ত্রী ছন্দে, বৃহতী ছন্দে ও বৃহৎ- মন্ত্রে পরম পরাক্রমী করে দিয়েছেন। অতএব সেই ইন্দ্রকে এই স্থানে আনয়ন করো ২

হে রাজন্! তোমার রাজ্য অপরে ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই রাজ্যে স্থিত করার নিমিত্ত বরুণ তোমাকে জল হতে, সোম তোমাকে তার আশ্রয়স্থান পর্বত হতে এবং ইন্দ্র তোমাকে তোমার প্রজাগণের দ্বারা আমন্ত্রিত করুন। এর পরে তুমি বাজপক্ষীর ন্যায় দ্রুতগতিতে আগমনকারী হয়ে, শত্রুগণের দ্বারা অপরাজিত হয়ে আপন প্রজাবর্গের মধ্যে সুশোভিত হও। ৩

স্বর্গবাসী দেবতা, অপরের আশ্রয়ে পতিত হয়ে থাকা তোমাকে তোমার আপন রাজ্যে উপনীত করুন। হে রাজন! তোমার আগমন-পথ অশ্বিনীকুমারদ্বয় শত্রুশূন্য করে দিন। হে (রাজার) বান্ধবগণ! এই পুনঃ প্রাপ্ত রাজার সাথে মিলিত হয়ে তোমরা এঁর সেবাপরায়ণ হও। ৪

হে রাজন! তুমি প্রতিকূলে অবস্থানশীল ছিলে, এখন অনুকূল হয়ে যাও (অর্থাৎ পূর্বে তুমি যাদের বিরুদ্ধাচারী ছিলে, এখন তাদের স্বপক্ষে আনয়ন পূর্বক পালন করো) এবং তারা তোমাতে স্নেহান্বিত হয়ে আজ্ঞানুবর্তী হয়ে যাক। ইন্দ্র, অগ্নি ও বিশ্বদেবগণ তোমাতে প্রজাপালনের শক্তি উৎপন্ন করুন। ৫।

 হে রাজন! তোমার পুনরায় রাজ্য প্রবেশে যে সমান বলসম্পন্ন, তোমার অপেক্ষা উচ্চ বলশালী বা কম বলবান ব্যক্তি সহমত হয়নি, সেই শত্রুকে, হে ইন্দ্র! তুমি বহিস্কৃত করে দাও এবং এই রাজাকে রাজ্যের প্রকৃত অধিস্বামী রূপে ঘোষণা করো। ৬।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অচিদং ইতি সূক্তেন শক্রংসাদিতস্য রাজ্ঞঃ পুনঃ স্বরাষ্ট্রপ্রবেশার্থং শত্রুসেনাকারং পুরোশং উদকে দৰ্ভান্ সংস্তীর্য তত্র নিনয়েৎ। ততো নিমজ্জনার্থং তং পুরোডাশং লোষ্টেন পূরয়েৎ। তথা অনেন সূক্তেন স্বরাষ্ট্রপ্রবেশার্থং ক্ষীরৌদনং সম্পত্য অভিমন্ত্র রাজানং আশয়েৎ।… ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ৩সূ)। 

টীকা –শত্রুগণ কর্তৃক পরাজিত ও রাজ্যভ্রষ্ট রাজা পুনরায় আপন স্বরাষ্ট্রে প্রবেশের (বা প্রাপ্তির) নিমিত্ত শত্রুসেনার আকারে কৃত পুরোডাশ এই মন্ত্রগুলির দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে জলে দুর্ভ বিস্তার পূর্বক তার উপর নিক্ষেপ করবেন। তারপর সেই পুরোডাশ নিমজ্জিত করার নিমিত্ত লোষ্ট্র স্থাপন করবেন। এবং, এই সূক্তের দ্বারা অভিমন্ত্রিত ক্ষীরৌদন স্বরাষ্ট্রে প্রবেশার্থে রাজাকে ভোজন করাতে হয়।…ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত: প্রজাভী রাজ্ঞ সংবরণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

 আ ত্বা গন রাষ্ট্রং সহ বৰ্চসোদিহি প্রাঙ। বিশাং পতিরেকরাট ত্বং বি রাজ। সর্বাত্ত্বা রাজন্ প্রদিশো হুয়পসদ্যো নমস্যো ভবেহ ॥ ১। ত্বং বিশশা বৃণতাং রাজ্যায় ত্বামিমাঃ প্রদিশঃ পঞ্চ দেবীঃ। বৰ্মন্ রাষ্ট্রস্য ককুদি শ্ৰয়স্ব ততো ন উগ্রো বি ভজা বসূনি ॥ ২॥ অচ্ছ ত্বা যন্তু হবিনঃ সজাতা অগ্নিদূত অজিরঃ সং চরাতৈ। জায়াঃ পুত্ৰাঃ সুমনসো ভবন্তু বহুং বলিং প্রতি পশ্যাসা উগ্রঃ ॥ ৩৷৷ অশ্বিনা স্বাগ্রে মিত্রাবরুণোভা বিশ্বে দেবা মরুতস্তা হয়ন্তু। অধা মনন বসুদেয়ায় কৃণুষ ততো ন উগ্রো বি ভজা বসূনি। ৪৷৷  আ প্র দ্রব পরমস্যাঃ পরাবতঃ শিৰে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্। তদয়ং রাজা বরুণস্তথাহ স ত্বায়মহুৎ স উপেদমেহি ॥ ৫॥ ইন্দ্ৰেন্দ্ৰ মনুষ্যাঃ পরেহি সং হ্যজ্ঞাস্থা বরুণৈঃ সংবিদানঃ। স ত্বায়মহুৎ স্বে সধস্থে স দেবা যক্ষৎ স উ কল্পয়াদ বিশঃ ॥ ৬৷৷ পথ্যা রেবতীর্বহুধা বিরূপাঃ সর্বাঃ সংগত্য বরীয়স্তে অক্র। তাস্থা সর্বাঃ সংবিদানা হয়ন্তু দশমীমুগ্ৰঃ সুমনা বশেহ ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ –হে রাজন! শত্রুগণের দ্বারা অপহৃত তোমার রাজ্য তুমি পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছে। তুমি প্রজাপালক ও শত্রু-রহিত হয়ে শোভিত হও। সর্বদিকের গৌরবশীল দেবতা এবং সর্ব দিকে নিবাসকারী সকল মনুষ্য তোমাকে নিজেদের অধিস্বামীরূপে জ্ঞান করুক এবং তুমি তাদের অভিবাদন লাভ করো ॥১॥

হে রাজন! এই শ্রেষ্ঠ দিমূহ তোমার পক্ষে শুভ হোক, তুমি আপন দেশে উচ্চ সিংহাসনে বিরাজমান হও এবং পুনরপি, আমরা যারা তোমার সেবক, তাদের যথাযোগ্য ধন প্রদান করো। তোমার প্রজাবৃন্দ তোমাকে রাজকর্ম পালনের নিমিত্ত বরণ পূর্বক তোমার শাসনাধীন থাকুক। ২

হে রাজন! তোমার অপর সজাতীয় রাজ্যন্যগণ তোমার আহ্বান মাত্রই সম্মুখে আগমন করুক। তোমার দূতগণ অগ্নির ন্যায় অপ্রধৃষ্য রূপে বিচরণশীল থোক। তোমার স্ত্রী পুত্র ইত্যাদি সকলে পুনরায় রাজ্যপ্রাপ্তির কারণে প্রসন্ন হয়ে নানা উপটৌকন প্রাপ্তির দ্বারা সন্তুষ্ট হোক ॥ ৩।

 হে রাজন! অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মিত্রাবরুণ এবং মরুৎ-গণ তোমাকে রাজ্যে প্রবিষ্ট করান। পুনরায় তুমি আপন মনকে দান-কর্মে নিয়োজিত করো এবং অত্যন্ত পরাক্রমে সম্পন্ন হয়ে ওঠো ॥৪

হে রাজন্! যদি তুমি দূর দেশেও থাকো, তবুও শীঘ্রতার সাথে আপন দেশে আগমন করো। তোমার রাষ্ট্র প্রবেশের কালে আকাশ ও পৃথিবী মঙ্গলকারিণী হোক। এই বরুণ তোমাকে আহ্বান করছেন, তুমি আপন রাজ্যে আগমন করো। ৫।

হে ইন্দ্র! মনুষ্যগণের নিকট আগত হও। তুমি বরুণের সাথে সহমত হয়ে এই রাজাকে আহ্বানের আজ্ঞা প্রদান করেছে; সেই নিমিত্ত এখানে আগমন করো। হে রাজন! ইন্দ্র তোমাকে আহ্বান করছেন, অতএব আপন রাজ্যে আগমন করো এবং ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞানুষ্ঠান পূর্বক প্রজাগণকে আপন আপন কর্মে নিযুক্ত করো ॥ ৬।

 হে রাজন্! এই সকল প্রকার জল দেবতা তোমার কল্যাণ-সাধন করুন। এই সকল দেবতা তোমাকে রাষ্ট্রে আগমনের নিমিত্ত আহ্বান করছেন। তুমি আপন শত বৎসরের (দীর্ঘ)। আয়ুষ্কাল পর্যন্ত রাজ্যসুখ ভোগশালী হও। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আ ত্বা গ ইতি সূক্তেন স্বরাষ্ট্রপ্রবেশকর্মণ্যেব পূর্বসূক্তোক্তানিকর্মাণি কুঠাৎ …ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ৪সূ)।

টীকা— পূর্ব সূক্তের ন্যায় এই সূক্তের দ্বারাও রাজার স্বরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পর্কিত কর্মগুলি করণীয়। ইত্যাদি (৩কা, ১অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : রাষ্ট্রস্য রাজা রাজকৃতশ্চ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : সো, পর্ণমণি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

আয়মগ পর্ণমণির্বলী বলেন মৃণসপত্না। ওজো দেবানাং পয় ওষধীনাং বচসা মা জিম্বত্বপ্রবন্ ॥১॥ ময়ি ক্ষত্রং পর্ণমণে ময়ি ধারয়তাদ রয়িম। অহং রাষ্ট্রস্যাভীবর্গে নিজো ভূয়াসমুত্তমঃ ॥২॥ যুং নিদধুবনম্পতৌ গুহ্যং দেবাঃ প্রিয়ং মণিম্।। তমস্মভ্যং সহায়ুষা দেবা দদতু ভর্তবে ॥ ৩॥ সোমস্য পর্ণঃ সহ উগ্রমাগন্নিন্দ্রেণ দত্তো বরুণেন শিষ্টঃ। তং প্রিয়াসং বহু রোমাননা দীর্ঘায়ুত্বায় শতশারদায় ॥৪॥ আ মারুক্ষৎ পর্ণমণির্মহ্যাঁ অরিষ্টতাতয়ে। যথাহমুত্তয়োহসান্য উত সংবিদঃ ॥৫॥ যে ধীবানো রথকারাঃ কর্মারা যে মনীষিণঃ। উপস্তী পর্ণ মহং ত্বং সবা কৃভিতো জনান্ ॥ ৬৷৷ যে রাজানো রাজকৃতঃ সূতা গ্রামণ্যশ্চ যে। উপস্তী পর্ণ মহং ত্বং সর্বান কৃভিতো জনা ॥৭৷৷ পর্ণোহসি তনূপানঃ সয়োনির্বীয়রা বীরেণ ময়া। সংবৎসরস্য তেজসা তেন বমি কা মণে ॥৮॥

বঙ্গানুবাদ –আপন শক্তিতে শত্রুগণকে বিনাশকারিণী, সকল ঔষধির সারভূত পলাশ-মণি আমাকে প্রাপ্ত হোক এবং আপন তেজের দ্বারা আমাকে তেজীয়া করুক ॥১॥

হে পলাশবৃক্ষ হতে নিমিত্ত মণি, আমাতে ধন ও বল স্থিত করো, যাতে আমি আমার আপন রাজ্যকে স্বাধীন করতে (অর্থাৎ আপন অধিকারে আনতে) অপর কারও মুখাপেক্ষী না হতে হয় ॥ ২।

ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ অভীষ্ট ফলদায়িনী হওয়ার কারণে এই গোপনীয় মণিটিকে পলাশ নামক বনস্পতিতে স্থিত করেছিলেন। দেবগণ সেই মণিকে আমাদের ভরণ-পোষণ এবং আয়ু-বর্ধনের নিমিত্ত আমাদের প্রদান করুন ৷৩৷

সোমলতার মণি অপরকে তিরস্কৃত-করণে সমর্থ; অতএব এটি আমাকে প্রাপ্ত হোক (অর্থাৎ আমি এটি লাভ করি)। ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত এবং বরুণের দ্বারা অনুশিষ্ট সেই সোমলতার পর্ণ (যা পলাশে রক্ষিত হয়েছিল) হতে উদ্ভূত পর্ণমণিকে আমি শতায়ুষ্য হওয়ার নিমিত্ত গ্রহণ করছি। ৪।

 এই পর্ণমণি চিরকাল পর্যন্ত আমার নিকট অবস্থানপূর্বক আমার পক্ষে ) কল্যাণজনক হয়ে থাকুক। শত্ৰু-মদক অত্যন্ত বলশালী অর্যমা দেবতার কৃপায় আমি আমার এক সমবল-সম্পন্নগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের নিমিত্ত একে (অর্থাৎ এই পর্ণমণিটিকে) আপন বাহুতে ধারন করে রাখবো ॥৫॥

ধীবর, রথকার (সূত্রধর), লোহকার (কর্মকার) ইত্যাদি কর্মজীবী এবং বুদ্ধিজীবী বিদ্বানবর্গকে, হে পলাশ-নির্মিত মণি! আমার অধীন করে দাও ॥৬

রাজার অভিষেক কর্মশালী মন্ত্রী, অন্য দেশস্থ রাজন্যগণ, ব্রাহ্মণ কর্তৃক ক্ষত্রিয়গণের মধ্যে উৎপন্ন সারথি (সূতজাতি) এবং গ্রামের নেতা (গ্রামণী, এদের সকলকে, হে মণি! তুমি আমার সেবায় তৎপর করো ॥ ৭।

হে মণি! তুমি সোমের পর্ণের বিকার রূপ, এই নিমিত্ত দেহের রক্ষক। তুমি বীর্যবান, আমার সমান জন্মা। তুমি সূর্যের সমান তেজস্বিনী। আমি তোমার তেজকে লাভ করার নিমিত্ত তোমাকে পরিধান (অর্থাৎ ধারণ) করছি ॥ ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আয়মগন পর্ণমণিঃ ইত্যনেন সূক্তেন তেজোবলায়ুৰ্ধনাদিপুষ্টয়ে পলাশবৃক্ষমণিং বাসিতং কৃত্বা সম্পাত্য অভিমন্ত্র বধীয়াৎ।…ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ৫সূ)। টীকা –তেজ, বল, আয়ু, ধন ইত্যাদির পুষ্টির নিমিত্ত পলাশবৃক্ষ হতে নির্মিত মণি এই সূক্তমন্ত্রগুলির দ্বারা বাসিত পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে ধারণীয়।..ইত্যাদি। (৩কা, ১অ. ৫সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *