সেলুনে চুল কাটাতে গিয়েছিলাম।
ফিরে এসে দেখি এক জন সন্ন্যাসী বসে আছেন। সোফায় পা তুলে পদ্মসন হয়ে বসে থাকা জলজ্যান্ত সন্ন্যাসী। বাংলাদেশে এই জিনিস দেখাই যায় না। যে দু একটা দেখা যায় তাও স্কুলের এ্যানুয়েল স্পাের্টসে যেমন খুশি সাজো অংশে। কিন্তু যে সন্ন্যাসী বসে আছেন তাঁর মধ্যে সাজের কোনো ব্যাপার নেই, খাঁটি সন্ন্যাসী। চুলে জট, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া কাপড়। সোফায় হেলান দেয়া বিচিত্র এক লাঠি। সন্ন্যাসী আমাকে বললেন, ভাইয়া, আপনার কাছে দেয়াশলাই আছে?
সন্ন্যাসীর মুখে ভাইয়া ডাক মানায় না। ওহে বৎস-টৎস বললে হয়ত মানাতো। আমি তাঁকে দেয়াশলাই দিলাম। ভেবেছিলাম তিনি সিগারেট ধরবেন, তা না করে তিনি দেয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে গভীর মনোযোগ কান চুলকাতে লাগলেন। কান চুলকানোর মতো শারীরিক সুখের প্রতি সন্ন্যাসীদের মোহ থাকে জানতাম না। আমি বেশ কৌতূহল নিয়েই তাকিয়ে রইলাম।
এর আগমন কী জন্যে হয়েছে কে জানে। সম্ভবত চাচীর অসুখ সারানোর জন্যে। সব কিছুই তো হল, সন্ন্যাসীই বা বাদ থাকে কেন?
আমি বললাম, আপনি এখানে, কি ব্যাপার? সন্ন্যাসী জবাব দিলেন না। ব্যাপার কি জানার জন্যে বাড়ির ভেতর চলে গেলাম।
আমাদের বসার ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ছোট ঘরটায় আমার হোট দুবোন মীরা এবংনীরা পড়ে। দুজনেরই সামনে পরীক্ষা। এই সময় এদের বই চোখের সামনে নিয়ে বসে থাকার কথা। আজ কেউ নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার, শুধু এরাই যে নেই তাই না, পুরো একতলায় কোনো মানুষজন নেই। লক্ষণ মোটই সুবিধার নয়। মনে হচ্ছে ছোট চাচীর কিছু একটা হয়ে গেছে। কিংবা হতে যাচ্ছে। সবাই ভিড় করেছে দোতলায়। ফলস্ এ্যালার্ম কি কে জানে। ইদানীং মাসের মধ্যে দু একবার ছোট চাচী ফলস্ এ্যালার্ম দিচ্ছেন। মরি মরি করেও মরছেন না।
আমি ভেতরের দিকের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, কী করব ঠিক বুঝতে পারছি না। দোতলায় যাব? না এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। আমার ঘর তিনতলার ছাদে। চুপি চুপি নিজের ঘরে চলে যাওয়া যায়। তবে তারও সমস্যা আছে। ভাত খাওয়ার জন্যে আবার একতলায় নেমে আসতে হবে। এই বাড়ির রান্না এবং খাবার ঘর একতলায়, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জন্যে তিনতলা এবং দোতলায় খাবার যায়, যেমন বড় চাচা তিনতলায় থাকেন, তাঁর জন্যে খাবার যায়। ছোট চাচা থাকেন দোতলায়, তাঁর জন্যেও যায়, তবে সব দিন না। বেশিরভাগ সময়ই তিনি নিচে খেতে আসেন।
বারান্দা থেকে আমি খাবার ঘরে ঢুকলাম। উপরে উঠার সিঁড়ি এই ঘরেই। বাইরে দিয়েও একটা সিঁড়ি আছে। সিঁড়ির মুখের কলাপসেবল গেট অবশ্যি সব সময় তালাবন্ধ থাকে। খাবার ঘরে পা দেয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মীরাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখা গেল। আমি বললাম, দোতলায় কিছু হচ্ছে নাকিরে?
মীরাকে কোনো প্রশ্ন করলে কখনো তার সরাসরি জবাব দেয় না। সে বলল, কিছু হবার কথা নাকি?
ছোট চাচীর শরীর ভালো তো?
আমি কী করে বলব, আমি কি ডাক্তার?
মীরার কথাবার্তা থেকে ধরে নেয়া যায় যে, ছোট চাচী ভালেই আছেন। সন্ধ্যার। ঠিক মুখোমুখি একতলা যে পুরো খালি তার পেছনে কোনো কারণ নেই।
আমি মীরার পেছনে পেছনে রান্নাঘর পর্যন্ত এলাম। সে চা বানাতে যাচ্ছে বোধহয়। পরীক্ষার সময় মীরার খুব ঘন ঘন চা খেতে হয়। সে আবার অন্যের বানানট চা খেতে পারে না। বার বার নিজেই বানায়।
বসার ঘরে একটা সন্ন্যাসী বসে আছে, দেখেছিস নাকি মীরা?
হুঁ।
ব্যাটা কে?
ভোলাবাবু।
ভোলাবাবু এখানে কী চায়?
জানি না কী চায়। বড় চাচার কাছে আসে। গুজ গুজ করে কী সব বলে।
চা বানাচ্ছিস নাকি?
হুঁ।
আমাকে এককাপ দিতে পারবি?
না।
মীরা চলায় কেতলি চাপিয়ে মেপে এককাপ চায়ের পানি দিল, এর পরেও রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না। তবু খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে দেখাতে হবে যে মীরার এই ব্যবহারে আমি মোটেই আহত হই নি।
তোর পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন হচ্ছে?
যে রকম হবার সে রকমই হচ্ছে।
তুই কি স্বাভাবিকভাবে কোনো কথাই বলতে পারি না?
না।
মা কোথায়?
জানি না। বাসায় নেই, কোথায় যেন গেছে।
আমি বসার ঘরে চলে এলাম। তিনতলায় উঠা আপাতত স্থগিত। মার সঙ্গে কথা বলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তারপর যা হয় করা যাবে। এই সময়টা বরং সন্ন্যাসীর সঙ্গে কথা বলা যাক।
সন্ন্যাসী এখনো কান চুলকাচ্ছেন। এদের মতো মানুষও তাহলে জাগতিক আনন্দে অভিভূত হন? আশ্চর্য।
আপনার দেয়াশলাই-এর কাজ শেষ হয়েছে?
হয়েছে। নেন ভাইয়া।
কত দিন ধরে আপনি সন্ন্যাসী
জন্ম থেকেই। গেরুয়া ধরলাম ছয় বছর আগে। তার আগে নাঙ্গা বাবার শিষ্য ছিলাম কাপড় ছাড়া।
পুরো দিগম্বর? না নেংটি-ফেংটি ছিল?
কিছুই ছিল না।
লজ্জা করত না?
প্রথমে দুই একদিন করল, তারপর দেখি আর করে না। নাঙ্গা থাকলে শরীরটা ভালো থাকে। অসুখ-বিসুখ হয় না। যে একবছর নাঙ্গা ছিলাম জ্বর-জারি, সর্দি-কাশি কিছুই হয় নাই।
নাঙ্গা থাকলেই পারতেন, কাপড় ধরলেন কেন?
ঠিকই বলেছেন, আবার নাঙ্গা হতে ইচ্ছা করে। কাপড় গায়ে কুটকুট করে, সহ হয় না।
মীরা দরজার পর্দা ধরে দাঁড়াল। থমথমে গলায় বলল, দাদা, চা নিয়ে যা। আমি খানিকটা বিস্মিত হলাম। মীরা তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার প্রতি শেষ পর্যন্ত করুণা করবে, এটা মনে হয় নি।
শুধু আমার জন্যে আনলি? সন্ন্যাসী ব্যাটার জন্যে আনলি না? ওকে সামনে রেখে খাব?
ও এই বাড়িতে কিছু খায় না।
তাই নাকি? কারণ কি?
জানি না।
আমি চা নিয়ে সন্ন্যাসীর সামনে বসলাম। সে এখন অতি দ্রুত পা নাচাচ্ছে। কিছু কিছু মানুষ পা নাচানোর এই ব্যাপারটা অতি দ্রুত করতে পারে।
আপনি শুনলাম এই বাড়িতে কিছু খান না।
ঠিকই শুনেছেন।
কারণ জানতে পারি?
যেসব বাড়িতে পাপকার্য হয়, সেসব বাড়িতে আমি খাদ্য গ্রহণ করি না।
এই বাড়িতে পাপকার্য হয়?
হুঁ, হয়।
ফাজলামি করছেন নাকি?
না।
আমার তো মনে হয় করছেন।
না। করছি না। আমি সন্ন্যাসী মানুষ। ফাজলামি করব কেন?
প্ৰচণ্ড একটা ধমক দেব দেব করেও শেষ পর্যন্ত দিলাম না। ধমকা-ধমকি আমার স্বভাবে নেই। ব্যাটা যদি মনে করে এই বাড়িতে প্রচুর পাপকার্য হয় তাহলে মনে করুক, কিছুই যায় আসে না।
কী ধরনের পাপকার্য এ বাড়িতে হচ্ছে?
তা তো আপনারাই ভালো জানেন।
জানি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি।
সন্ন্যাসীর কিছু বলার সুযোগ হল না। বড় চাচা ঢুকলেন। তাঁর হাতে বাজারের দুটো প্ৰকাণ্ড থলি। বড় চাচার পেছনে মা। মার পেছনে ইরা। এই প্রসেশন-এর অর্থ হল—আজ বুধবার, সাপ্তাহিক বাজারের দিন। সাপ্তাহিক বাজার চাচা নিজে করেন এবং বেশ আগ্রহ নিয়ে করেন। সেই দিন তাঁর সঙ্গে দু তিন জন থাকতে হয়। যাদের কাজ হচ্ছে তাঁর পেছনে পেছনে ঘোরা এবং যখনই তিনি কিছু কেনেন তখন বলা—জিনিসটা সস্তায় কেনা হয়েছে।
বড় চাচা সন্ন্যাসীকে দেখে বিরক্তমুখে বললেন, আজ আপনি এসেছেন কেন? আপনাকে বলেছি না বুধবারে কখন আসবেন না। সেটা বলার পরেও দেখি প্ৰতি বুধবার এসে বসে থাকেন। এর মানে কি?
দিনক্ষণ আমার খেয়াল থাকে না স্যার। গেরুয়া পরা সন্ন্যাসীর মুখে স্যার শব্দটা একেবারেই মানায় না। সন্ন্যাসীর মধ্যেও আজকাল সম্ভবত ভেজাল ঢুকে গেছে।
স্যার, আমি কী চলে যাব?
হুঁ, চলে যান। বুধবারে কখন আসবেন না। নেভার।
আচ্ছা। বুধবার বাদ দিয়েই আসব। আমি সন্ন্যাসী মানুষ। আমার কাছে বুধবারও যা, বৃহস্পতিবারও তা। সব সমান।
যখন-তখন আসারও দরকার নেই। আমি খবর পাঠালে তবেই আসবেন?
আমি নিজের ঘরে চলে এলাম! সবে বাজার এসেছে। দুটোর আগে আজ খাওয়াদাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেকক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া যেতে পারে।
আগেই বলেছি, আমার ঘর তেতলার ছাদে। এটাকে ঘর বলাটা ঠিক হবে না। জিনিসপত্র রাখার জন্যে চিলেকোঠার মত একটা জায়গা আছে, যার ছাদ করোগেটেড টিনের। দিনের বেলা এখানে ঢোকা যায় না। গরমে টিন তেতে থাকে। তবে রাত আটটা নটার পর খুব আরাম। একটাই অসুবিধা-জানালা নেই বলে দরজা খুলে রাখতে হয়। রোজই ঘুমুবার সময় একটু ভয় ভয় লাগে। যদি ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে ছাদে চলে যাই। আমাদের তেতলার ছাদে এখনও রেলিং হয় নি। বর্ষার সময় ছাদ খুব পিচ্ছিল হয়ে থাকে।
শার্ট খুলে বিছানায় এলিয়ে পড়তেই মা ঢুকলেন। আমি বিস্মিত হয়ে উঠে বসলাম। তিনি সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না বলে কখনো আমার ঘরে আসেন না। যখন আসেন তখন বুঝতে হবে ব্যাপার গুরুত্তর। আমি বললাম, কী ব্যাপার মা?
মা তেমন ভনিতা করতে পারেন না। সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে আসেন। আজও তাই করলেন। শীতল গলায় বললেন, তোর ছোট চাচার ব্যাপার কিছু জানিস?
কোন ব্যাপার?
ঐ নার্স মেয়েটার সঙ্গে এর কিছু আছে নাকি বল তো?
আমি কী করে বলব?
তোর এই ছাদে এসেই তো দুজন ঘোরাঘুরি করে। তুই জানবি না কেন?
দুজন ছাদে আসে তোমাকে বলল কে?
ইরা বলেছে।
ইরা বললে মোটেই পাত্তা দিও না। ইরা বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলে।
তোর ছোট চাচাকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলবে কেন?
তাছাড়া ব্যাপারটা যদি সত্যিই হয়, তোমার তো কিছু করার নেই। ছোট চাচা কচি থোক না। সে যদি মনে করে সমিতাকে বিয়ে করবে তাহলে করবে। এটা তার ব্যাপার।
সমিতা আবার কে?
নার্সটার নাম সমিতা।
বিয়ে করার কথা আসছে কেন?
প্রেম হলে বিয়েও হতে পারে।
তোর ছোট চাচা কি তোকে কিছু বলেছে?
আমি অতি দ্রুত চিন্তা করলাম সত্যি কথাটা মাকে বলব, না কি বলব না। ছোট চাচা আমাকে যখন বলেছেন তখন নিশ্চয়ই এই ভেবেই বলেছেন যে আমার মাধ্যমে খবরটা আস্তে আস্তে ছড়াবে। এইসব ব্যাপার সরাসরি বলার চেয়ে ভায়া মিডিয়ায় বলা অনেক নিরাপদ। আর বলতেই যখন হবে; বাড়িয়ে বলাই ভালো। বিয়ে হয়ে গেছে বলে দেখা যাক কী রিএ্যাকশন হয়।
কথা বলছি না কেন? কিছু বলেছে?
হুঁ।
কী বলেছে?
সমিতাকে বিয়ে করেছেন এই রকম একটা কথাই মনে হল শুনলাম।
ফাজলামি করছিস কেন?
মোটেই ফাজলামি করছি না।
মা আমার বিছানার একপাশে বসে ডাঙায় ভোলা মাছের মতো বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন। তার প্রায় মিনিট পাঁচেক পর ছোট চাচা ছাদে উঠে এসে বললেন, ভাবী আছেন নাকি? একটু আসুন তো, আপনার সঙ্গে একটা জরুরি কথা আছে।
ছোট চাচা মার সঙ্গে কথা বলছেন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। আমার ঘর থেকে তাঁদের কথা শোনা যায় না, কাজেই আমি সিঁড়ির দরজার কাছে নিঃশব্দে এগিয়ে এলাম। নিঃশব্দে চলাফেরাটা আমি বেশ ভালো পারি।
ছোট চাচাকে মনে হল খুবই স্বাভাবিক। সহজ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। প্রতিটি শব্দ বেশ স্পষ্ট, তবে মাঝে মাঝে তিনি এমন নিচু পর্দায় চলে যাচ্ছেন যে আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। সেই তুলনায় মার গলা ভয়াবহ। এমন চেঁচামেচি করছেন যে একতলার লোকজনও শুনতে পাচ্ছে বলে আমার ধারণা। মা এই ব্যাপারটা খুব সম্ভব ইচ্ছা করেই করছেন। একই সঙ্গে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছেন। ক্ষেত্রবিশেষে মেয়েরা খুব বুদ্ধি খাটাতে পারে। তাঁদের কথোপকথনের ধরনটা এ রকম–
ছোট চাচা : আস্তে কথা বলুন ভাবী, চেঁচাচ্ছেন কেন?
মা : তুমি অকাম-কুকাম করবে আর আস্তে কথা বলব আমি? তুমি পেয়েছ কী?
ছোট চাচা : চিৎকার করে লাভ তো কিছু হচ্ছে না।
মা: এর মধ্যে লাভ-লোকসান কি? তুমি বৌ থাকতে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে বসে আছ। সেই বৌ এখন যায় তখন যায়।
ছোট চাচা : বিয়ের কথা কোত্থেকে এল? কি মুশকিল। ভাবী প্লিজ, চেঁচাবেন না।
মা : চেঁচাব না মানে? চেঁচানির তুমি দেখেছ কী? দরকার হলে গোটা ঢাকা শহর আমি ঢোল দিব। মাইক ভাড়া করব।
ছোট চাচা; করুন আপনার যা ইচ্ছে।
রঙ্গমঞ্চ থেকে ছোট চাচা প্রস্থান করলেন। মা খানিকক্ষণ একা একা দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর সিঁড়ি ভেঙে থপথপ করে উঠে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে জমিদার-গিন্নীদের গলায় বললেন, শুনেছি কিছু?
আমি বললাম, না। কি ব্যাপার?
তোর ছোট চাচা ঐ নার্স ব্যাটিকে বিয়ে করে ফেলেছে। তুই যা বলেছিস তাই।
মা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বড়-বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। দম নিচ্ছেন। চিৎকার করে দম ফুরিয়ে গেছে। মার দম ফিরে এলে তিনি টানা গলায় বললেন, আমার মনে হয় ঘটনাটা অন্য। ঘটনাটা অন্য মানে? এমন কিছু একটা হয়েছে যে বিয়ে না করে উপায় নেই। প্ৰেম-ফ্ৰেম কিছু না।
আমি মার বুদ্ধি দেখে চমৎকৃত হলাম। মাঝে মাঝে মা এমন বুদ্ধির ঝিলিক দেখান। উদাহরণ দেই। অরুণানামে মীরার এক বান্ধবী আছে। কলেজের বান্ধবী। প্রায়ই টেলিফোন করে। প্রথমে সে চায় আমার মাকে। তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে। কেমন আছেন খালামা? আজ কী রান্না করেছেন? তারপর তার গল্প শুরু হয় মীরার সঙ্গে। সেই গল্প আর শেষ হতে চায় না। একদিন এরকম গল্প চলছে, মা এসে ফট করে মীরার হাত থেকে টেলিফোন নিয়ে কানে ধরলেন। ওপাশ থেকে মিষ্টি মিষ্টি গলায়। একটা ছেলে কথা বলছে। মা টেলিফোন রেখে বজ্ৰকণ্ঠে বললেন, মীরা। এ হারামজাদা কে? কে এই হারামজাদা? আর অরুণাইবা কে?
মীরা ছুটে পালিয়ে গেল। আমরা মীরার কাণ্ডকারখানায় হলাম বিস্মিত, মার বুদ্ধি দেখে হলাম চমৎকৃত। মীরা অবশ্যি কিছুদিন বেশ যন্ত্রণা দিল। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। আমাদের কাজের ছেলেকে দিয়ে স্লিপ পাঠিয়ে দশটা ঘুমের ট্যাবলেটও কিনে আনল। মা শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, ঠিক আছে, ঐ ছেলের সঙ্গেই তোর বিয়ে দেব। বি.এটা পাস করুক।
ঐ ছেলে বি.এ পরীক্ষায় কম্পার্টমেন্টাল পেয়ে যাওয়ায় আমাদের অ হয়ে গেল। মীরার প্রেম বাতাসে উড়ে গেল। কম্পার্টমেন্টাল পাওয়া ছেলেদের প্রতি মেয়েদের প্রেম থাকে না।
যাই হক, পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে আসি। রাতে নিচে খেতে গিয়ে দেখি, ছোট চাচার ব্যাপারটা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছে।
মীরা বলছে, আমি যা আগেই সন্দেহ করেছিলাম। ইদানীং কেমন সেজেগুজে আসছিল।
এটা একটা ডাহা মিথ্যে কথা। সমিতা এ বাড়িতে সব সময় নার্সের পোশাক পরে আসে। বাড়তি কোনো রকম সাজসজ্জা তার নেই। সে আসে, নিজের মনে কাজ করে যায়। তাকে নিয়ে আমার বোনেরা যেসব কথাবার্তা বলে তা হচ্ছে কী দেমাগ। চার পয়সা দামের নার্সের এত দেমাগ হয় কী করে। তাও যদি চেহারাটা ভালো হত। আবলুস কাঠের মতো গায়ের রং। ঠোঁট দুটা পুরুষদের ঠোঁটের মতো মোটা।
এসব কথার কোনোটাই সত্যি নয়, সমিতার গায়ের রং কালো এবং ঠোঁট দুটাও মোটা, তবু এই মেয়ের দিকে একবার তাকালে দ্বিতীয়বার তাকাতে হয়। মীরা এবং ইরা যে এত কথা বলে তার কারণ সম্ভবত ঈৰ্ষা।
খাবার টেবিলে ছোট চাচাকে নিয়েই আলাপ চলতে লাগল। টেবিলে আছি শুধু আমরা অর্থাৎ মীরা, ইরা এবং বাবা। মা খাবার-দাবার এগিয়ে দিচ্ছেন এবং রাগে গন গন করছেন। মীরা-ইরা কিছুক্ষণ পর পর বলছে, এরকম একটা কুৎসিত কাজ কী করে করল। নার্স বিয়ে করে ফেলল–ছিঃ! এক পর্যায়ে বাবা বললেন, থা তো। একটা ব্যাপার নিয়ে এত কথা! বিয়ে যে করেই ফেলেছে এমন তো নাও হতে পারে। এই নিয়ে আর কোনো ডিসকাসন যেন না হয়।
সঙ্গে সঙ্গে সবাই থেমে গেল। কোন কারণ ছাড়াই আমরা বাবাকে বেশ ভয় পাই। এর মধ্যে মাও আছেন। তিনি ভয় পান সবচে বেশি।
বাবা ডাল দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললেন, এসব হচ্ছে পারিবারিক স্ক্যান্ডেল। ধামাচাপা দিতে হবে। মা ক্ষীণ গলায় বললেন, বিয়ে করে বসে আছে, এই জিনিস তুমি ধামাচাপা দেবে কিভাবে?
বাবা এমন ভঙ্গিতে মার দিকে তাকালেন যেন মার মুখতায় তিনি খুবই বিস্মিতবোধ করছেন। এই দৃষ্টিটি তিনি কোত্থেকে শিখেছেন কে জানে, তবে খুব ভালো শিখেছেন। এই দৃষ্টির মুখোমুখি আমাদের প্রায়ই হতে হয় এবং আমরা খুবই সংকুচিত বোধ করি।
বাবা হাত ধোবার জন্যে উঠতে উঠতে বললেন, সমস্যা যেমন আছে, সমস্যার সমাধানও আছে। আসগরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।
জাজ সাহেব ফাঁসির হুকুম দিয়ে এজলাস থেকে নেমে গেলেন এরকম ভঙ্গিতে বাবা নিজের ঘরে রওনা হলেন। আমি ছোট চাচাকে খবর দিতে গেলাম।
ছোট চাচা বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে আছেন। বারান্দায় আলো নেই বলে তাঁর মনের ভাবটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। অন্ধকারে বসে আছেন দেখে বোঝা যাচ্ছে মন আলো নেই। যাদের মন হাসি-খুশি তারা বেশিক্ষণ অন্ধকারে থাকতে পারে না।
কী করছ চাচা?
কিছু করছি না। আঁধারের রূপ দেখছি। আচ্ছা, তুই কী বিয়ে নিয়ে কিছু বলেছিস? আমি সমিতাকে বিয়ে করে ফেলেছি এই জাতীয় কিছু?
বলেছি।
ছোট চাচা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ভালই করেছিস। বিয়ে করে ফেললে কী রিএ্যাকশন হবে এ্যাডভান্স জানা গেল।
তোমাকে বাবা ডাকছেন।
কেন?
কোর্ট মার্শাল হবে বলে মনে হচ্ছে।
বলে আয় ঘুমিয়ে পড়েছি।
খাওয়া-দাওয়া করেছ?
আমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তোক ভাবতে হবে না। তুই একটা কাজ কর তো—ছোট চাচীর ঘরে যা।
কী কবর ঘরে গিয়ে?
দেখে আয় সে ব্যাপারটা শুনেছে কি না।
আমার মনে হয় শুনেন নি।
মনে হওয়া-হওয়ি না-তুই জেনে আয়।
আমি ছোট চাচীর ঘরের দিকে রওনা হলাম। তাঁর ঘরে ঢোকার অনেক সমস্যা আছে খালি পায়ে ঢুকতে হয়। ছোট চাচী দিনের মধ্যে সতের বার মেঝেতে পা ঘষে ঘষে দেখেন বালি কিচমিচ করছে কি না। ছোট চাচীর ভাষায় তিনি পৃথিবীর সবকিছু সহ্য করতে পারেন, তবে, মেঝেতে বালি থাকলে তা সহ্য করতে পারেন না।
ছোট চাচীর ঘরে আসবাবপত্রও তেমন নেই। কারণ, শোবার ঘরে তিনি আসবাবপত্র সহ্য করতে পারেন না, তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। তাঁর প্রকাণ্ড ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা খাট। একপাশে গোল একটা টেবিল। সেই গোল টেবিলের মাঝখানে কাচের ফুলদানিতে দুটা গোলাপ। এই গোলাপ আসে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে। ছোট চাচীর বাবা রিটায়ার্ড জাজ হামিদুর রহমান সাহেব বর্তমানে গগালাপের চাষ করেন। ঢাকা শহর গোলাপ সমিতির তিনি সহ-সভাপতি। তাঁর বাগানে একান্নটা গোলাপের গাছ আছে। তিনি প্রতিদিন বাগানের গোলাপ তাঁর চার মেয়ের বাসায় দুটা করে পাঠান। সাইকেলে করে একটা শুটকো লোক গোলাপ দিয়ে যায়। এমনভাবে দেয় যেন সাত রাজার ধন দিয়ে যাচ্ছে। একবার আমার হাতে দিয়ে বলল, একটু কেয়ারফুলি ধরুন ভাই। আমি বললাম, কেন? বিষাক্ত না কি? লোকটা অত্যন্ত বিরক্ত হল।
পুরো ব্যাপারটা কেন জানি আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হয়। রিটায়ার্ড জাজ হামিদুর রহমান সাহেবের এই গোলাপপ্রেমের বিষয়টি লোক-দেখানো বলেই আমার ধারণা। তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই তিনি গদ গদ ভঙ্গিতে গোলাপ সম্পর্কে এত সব কথা বলেন যে, রাগে গা জ্বলে যায়। শেষবার যেদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হল, তিনি বললেন, জানো টুকু, ঘুমুবার আগে গোলাপের ঘ্রাণ না নিলে আমার আলো ঘুম হয় না।
আমি নিরীহ ভঙ্গিতে বললাম, যেদিন সর্দি থাকে সেদিন কী করেন? নিশ্চয়ই ঘুমের খুব অসুবিধা হয়।
জাজ সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বুঝতে চাইলেন আমি ঠাট্টা করছি কি না। আমি খুবই সরল ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলাম যেন সত্যি সত্যি জানতে চাই সর্দি হলে উনি কী করেন। রিটায়ার্ড জাজ সাহেবের শেষ পর্যন্ত ধারণা হল, আমি ঠাট্টা করছি না। জাজ সাহেবরা কে সত্যি কথা বলছে, কে বলছেনা, তা কখনো ধরতে পারেন না।
তিনি বললেন, সর্দি, জ্বর-জ্বারি এইসব আমার কখনো হয় না। গোলাপের ঘ্রাণে সম্ভবত রোগপ্রতিরোধী কোনো কিছু আছে। এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। বিজ্ঞানের যে শাখাটি নিয়ে সবচে কম গবেষণা হয়েছে তা হচ্ছে গন্ধ। The science of smell.
গোলাপপ্রেমী বাবার কন্যার অর্থাৎ আমার ছোট চাচীর গোলাপপ্রেম নেই। তিনি ফুল শুকে দেখেন না, কারণ ছোটবেলায় একবার টগর ফুল শুকেছিলেন, গন্ধের সঙ্গে সেই ফুলের ভেতর থেকে আধইঞ্চি লম্বা শুয়োপোকা তাঁর নাকের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল।
আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ছোট চাচী বিছানা থেকে উঠে বসলেন। ঘটনাটা তিনি জানেন কি না তাঁকে দেখে তা বুঝতে পারলাম না। তাঁর গায়ে রাত-পোশক। সেই নীল রঙের রাত-পোশাক এতই স্বচ্ছ যে, আমার কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল।
ছোট চাচী মিষ্টি গলায় বললেন, কী ব্যাপার টুকু?
কিছু না। আপনার খবর নিতে এলাম। শরীর কেমন?
শরীর ভালোই। আজ বুধবার না? শরীর খারাপ থাকবে কেন?
এই আরেকটা মজার ব্যাপার-সপ্তাহে তিনদিন ছোট চাচীর শরীর ভালো থাকে–বুধবার, শনিবার এবং সোমবার। বাকি চারদিন খুবই খারাপ। সপ্তাহের দিনক্ষণ দেখে শরীর খারাপ হয় কী করে, এটা একটা রহস্য।
যাই চাচী।
তুমি কি শরীরের খোঁজ নিতে এসেছিলে?
জ্বি।
এর আর খোঁজ নেবার কিছু নেই। শরীর আমার সারবে না। Mydaysare numbered.
চিকিৎসা তো হচ্ছে।
এর কোনো চিকিৎসা নেই। যত দিন যাচ্ছে গায়ের চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় স্কিনে কোনো অনুভূতি নেই। আমার কথা তোমার বিশ্বাস হয় না, তাই না?
বিশ্বাস হবে না কেন? হয়।
উহুঁ, তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা একদিন আমার বুকের স্কিন তোমাকে। দেখাব। নাকি এখনই দেখবে?
না থাক।
এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? ডাক্তারকে যদি দেখাতে পারি, তোমাকে দেখাতে অসুবিধা কি? আমার এত লজ্জা-টজ্জা নেই।
আমি ছোট চাচীর ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। এই চাচীর সঙ্গে বেশি সময় থাকা খুবই বিপজ্জনক। এই ব্যাপারটা আগেও লক্ষ করেছি। একবার সন্ধ্যাবেলা কী কারণে যেন তাঁর ঘরে ঢুকেছি। ছোট চাচী ঘরে নেই। লাগোয়া বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে গোসল করছেন। বাথরুমের দরজা হাট করে খোলা। চাচী বললেন, কে, টুকু নাকি?
হ্যাঁ।
কাইন্ডলি ভোয়ালেটা দিয়ে যাবে? চোখ বন্ধ করে এসো। আমার গায়ে কিন্তু কাপড় নেই।
ঘর থেকে বেরুতেই ছোট চাচার সঙ্গে দেখা। তিনি সম্ভবত ছোট চাচীর ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। আমি বললাম, ছোট চাচী এখনো কিছু জানেন না।
ঠিক বলছিস তো?
হ্যাঁ, ঠিকই বলছি।
গুড। আমি নিজেই তাহলে বলব। তোর কাছে সিগারেট থাকলে আমাকে দিয়ে। যা।
যা করবে বুঝে-সুঝে করবে।
তোর উপদেশের যখন প্রয়োজন বোধ করব তখন জানাব। এই মুহূর্তে আমার প্রয়োজন নেই।
আমি পকেট থেকে সিগারেট বের করছি। ছোট চাচা তা না নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি পড়ার শব্দ হল।
ঘুমুতে যেতে অনেক দেরি হল। বড় চাচা আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি নাকি অসাধারণ বই পেয়েছেন। আমাদের পড়ে শোনাবেন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল—বাড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না। অবশ্যি না জানার কোনো কারণ নেই। বড় চাচার সেবা-যত্নের জন্যে কমলা নামের যে মেয়েটি আছে সে দুর্দান্ত স্পাই। কোথায় কী হচ্ছে টুক করে তাঁর কানে তুলে দেয়।
মীরা, ইরা এবং আমি তিনজনই এসেছি। মীরা বলল, পরীক্ষার পড়া পড়তে হবে, আজ থাক।বড় চাচা বললেন, আধঘণ্টার বেশি লাগবে না। একটা মাত্র চ্যাপ্টার পড়ব। চ্যাপ্টারটার শিরোনাম হল ইনফিনিটি এন্ড মাইন্ড। অসাধারণ জিনিস। ভাবছি, অনুবাদ করে ফেলব। দশ জনে পড়বে। এতে সমাজে একটা উপকার হবে। কমলা, আমাদের জন্য কফি বানাও তো।
চা এবং কফির সরঞ্জাম বড় চাচার ঘরেই থাকে। কমলা ইলেকট্রিক হিটারে পানি গরম করে ব্রেন্ডারে চমৎকার এক্সপ্রেসো কফি তৈরি করে। বড় চাচার ঘরে মাঝে মাঝে আমি কফির লোভই আসি। এমিতে বোকা মানুষের সঙ্গ আমার বিশেষ ভালো লাগে না। বড় চাচা শুধু বোকা তাই না, বেশ বোকা। তিনি ছাড়া এই তথ্যটি সবাই জানে। কমলাও জানে।
বড় চাচা বললেন, কি, পড়া শুরু করব? ফুল এ্যাটেনশনে শুনবি। পড়ার সময় কাশাকাশি-হাসাহাসি যেন না হয়। কারুর বাথরুমে যাবার ব্যাপার থাকলে এক্ষুনি সেরে আয়।
আমি বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ফিরলাম খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে। বাথরুমে লাল বালতিতে কমলার শাড়ি। সে কি বড় চাচার বাথরুম ব্যবহার করে? তা তো করার কথা না। তাদের বাথরুম আলাদা।
কমলা কফির কাপ এনে হাতে দিল। তার গা থেকে ভুরভুর করে গন্ধ আসছে। গায়ে সেন্ট দিয়েছে বোধহয়।
কমলার বয়স কত? ত্রিশ, না কি আরো কম?
বড় চাচা বললেন, কমলা, তুমিও খাও। সবাইকে বানিয়ে দেবে, নিজে খাবে না এটা তো ভালো কথা না। খাও, কথা না, খাও, তুমি খাও। আই ইনসিস্ট।