সিদ্ধার্থ এসে অতীনকে ঘুম থেকে টেনে তুললো। এখন সন্ধে সাতটা, এখন মোটেই ঘুমোবার সময় নয়। টি ভি চলছে, জানলার পর্দা টানা, বেড সাইড টেবিলে গোটা ছয়েক বীয়ার ক্যান, অতীন শুয়ে আছে খাটের একেবারে ধার ঘেঁষে, তার একটা হাত পাশে ঝুলছে। সিদ্ধার্থ সেই হাতটা ধরে টান মেরে বললো, এই বাবলু, ওঠ!
জড়ানো গলায় অতীন বললো, আঃ বিরক্ত করিস না। আমি এখন ঘুমোবো। আজ আমি রান্না-ফান্না করতে পারবো না!
টি ভি বন্ধ করে, জানলার পর্দা সরিয়ে কাচের ওপাশের আলোকোজ্জ্বল নগরীর দিকে তাকিয়ে সিদ্ধার্থ বললো, তোর একটা চিঠি এসেছে!
সঙ্গে সঙ্গে তড়াক করে উঠে বসলো অতীন। খানিকটা অবিশ্বাসের সঙ্গে বললো, যাঃ, বাজে কথা!
কোটের পকেট থেকে বার করে একটা এয়ার মেল খাম দেখিয়ে আবার সেটা পকেটে ভরে ফেললো সিদ্ধার্থ। তারপর বললো, দেবদাস, অ্যাঁ? দিনের বেলা একাকী মদ্যপান, বিরহ, বেকারত্বের দুঃখ! আজ কাজে যাসনি।
–দে চিঠিটা দে! কার চিঠি!
–আগে উঠে মুখ চোখ ধুয়ে আয়। ঐ জঘন্য নোংরা গেঞ্জিটা না খুললে তোর এই চিঠি পড়ার কোনো রাইট নেই। ঘরটাকে এত গরম করে রেখেছিস কেন? এত গরম খুব আনহাইজিনিক।
অতীন দু হাতে মাথা চেপে ধরলো। দিনের বেলা বীয়ার খেয়ে ঘুমালেই তার মাথা ধরে। আবার একলা একলা বীয়ার খেলে ঘুম পাবেই। উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে সে জিজ্ঞেস করলো, তোর কাছে টাইলেনল আছে?
–কড়া করে কফি খা, মাথা ছেড়ে যাবে। যখন-তখন ওষুধ খাওয়া ভালো নয়। সিদ্ধার্থ ওভারকোট খুলে ওয়ার্ডরোবে ঝোলালো। টাই খুললো, চেয়ারে বসে জুতো-মোজা। খুললো, সব গুছিয়ে রাখলো ঠিক জায়গায়। সে পরিপাটি ধরনের ছেলে। এদিক-ওদিকে জিনিসপত্র ছড়িয়ে রাখা সে একেবারে পছন্দ করে না। ঘরের চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখলো
অতীন কী কী অগোছালো করে রেখেছে। বাইরে শূন্যের নিচে তাপমাত্রা হলেও ঘরের মধ্যে ঘাম হচ্ছে, সিদ্ধার্থ দেয়ালের রেগুলেটার ঘুরিয়ে গরম কমালো, বীয়ারের খালি টিনগুলো ফেলে দিল ট্রাস ক্যানে, দু তিনটে সিগারেটের টুকরো কুড়োললা মেঝে থেকে। তারপর সে পাশের রান্নাঘরে এসে গ্যাস জ্বেলে কেটলিতে জল চড়ালো।
অতীন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো টেবিলের ওপর এনভেলাপটি রাখা। ঠিকানার হাতের লেখা দেখেই সে চিনেছে। সাহেবরা হাতের লেখা পড়তে পারবে না এই ভয়ে মা পুরো ঠিকানাটাই ক্যাপিটাল অক্ষরে লেখে।
মায়ের চিঠির সঙ্গে মুন্নিরও একটা আলাদা চিঠি আছে। বাবা চিঠি লেখেন না। অতীনও তো মাকে লেখা চিঠির শেষে এক লাইন জুড়ে দেয়, বাবা ভালো আছে নিশ্চয়ই, বাবাকে প্রণাম জানিও। বাবাকে চিঠি লেখে না অতীন, কিন্তু এখানে সে প্রায়ই বাবার সঙ্গে মনে মনে কথা বলে, তর্ক-বিতর্ক করে।
প্রথমে সে দুটো চিঠিতেই দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিল, কোনো বড় রকমের খবর আছে কি না জানার জন্য। পরে ভালো করে পড়বে। একবার নয়, তিন চারবার। মা কিংবা মুন্নি কোনো চিঠিতেই কারুর অসুখের কথা লেখে না।
সিদ্ধার্থ দু’ কাপ কফি নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, বাড়ির চিঠি?
অতীন চিঠি থেকে চোখ না তুলে মাথা নাড়লো। সিদ্ধার্থ হেসে বললো, ড্রয়ারে এরোগ্রাম আছে, এবার উত্তর লিখতে বসে যা! যত পারিস গুল-গাপ্পা ঝাড়। লেখ যে, এই উইক এন্ডে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলুম। জানো তো, মা, একটা লাল রঙের গাড়ি কিনেছি, আমার বাড়ির বাগানে কী সুন্দর গোলাপ ফুটেছে, অফিসে একজন সাহেবকে ডিঙিয়ে আমার প্রমোশন হয়েছে, অফিসের বস কাল ব্রডওয়ে-তে থিয়েটার দেখালো, তারপর ডিনার খাওয়ালো–আরও কী কী যেন তুই বানাস?
অতীন চিঠি দুটো খামে ভরে কফিতে চুমুক দিল।
সিদ্ধার্থ আবার বললো, কলকাতায় বাবা মা ভাবছে, ছেলে আমাদের কী না সুখে আছে! লন্ডন ছেড়ে চলে এসেছে সোনার দেশ আমেরিকায়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর নিউ ইয়র্কে তার বাড়ি, নিজের গাড়ি চেপে অফিস যাচ্ছে, পকেটে সব সময় ঝমঝম করছে ডলার।
অতীন প্যান্টের পকেট থেকে একটা দশ ডলারের নোট বার করে এগিয়ে দিল সিদ্ধার্থর দিকে।
–ড্রয়ারে রাখ। আজ কাজ পেয়েছিলি তা হলে?
কাছেই একটা সুপার মার্কেটে অতীন দিন-মজুরির ভিত্তিতে কুলির কাজ করে। তাও প্রত্যেকদিন নয়, মাঝে মাঝে কাজ পায়। ট্রাক থেকে আপেল ভর্তি বড় বড় কাঠের ক্রেট নামিয়ে দোকানের মধ্যে এক জায়গায় জড়ো করা। সবচেয়ে নিম্নতম কাজ। সেজন্য তাকে একটা নীল ওভারঅল জড়াতে হয় গায়ে, মাথায় পড়তে হয় কাপড়ের টুপি। কারুর সঙ্গে কোনো কথাবার্তা নেই, ট্রাকে ওঠো ক্রেট নামাও। দু হাতে বয়ে নিয়ে যাও! ভারি ভারি ক্রেটগুলো বইতে গিয়ে সে কুঁজো হয়ে যায়, হাতের জোড়ে টন টন করে, তবু কোনো কথা বলতে হয় না বলেই সে সন্তুষ্ট। কথা বলতে গেলেই তার মুখ দিয়ে খারাপ ভাষা বেরিয়ে আসে, এ জন্য দু জায়গায় সে কাজ হারিয়েছে। ঘণ্টায় দু’ ডলার। কত আপেল, শুধু একটা সুপার মার্কেটেই এত আপেল, এরা রাক্ষসের মতন আপেল খায়।
সিদ্ধার্থ বললো, আজ দশ পেয়েছিস? ডলারের রেট কত করে যাচ্ছে যেন, পাঁচ আশি, ছ’ টাকাই ধর। দেশের লোক ভাবছে ষাট টাকা, অনেক টাকা! তুই শিলিগুড়ি কলেজে ক’ পয়সা মাইনে পেতিস রে?
অতীন এবারও কোনো উত্তর দিল না। কফিটা শেষ করে সে একটা সিগারেট ধরালো। বাইরে ঝিরঝির করে তুষারপাত হচ্ছে, জানলার কাচের ভেতর দিকে জমে যাচ্ছে বাষ্প। একটা আঙুল দিয়ে সেই বাষ্পে সে আঁকিবুকি কাটতে লাগলো।
–খিদে-টিদে পায়নি, বাবলু! রান্না করতে হবে না।
–ও বেলার খিচুড়ি করা আছে। দু’ একটা সসেজ আর ডিম ভেজে নিলেই হবে। আমার ইচ্ছে করছে না। তুই ভেজে নে।
–বাড়ির চিঠি পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেছে? কিছু টাকা পাঠাতে চাস তো বল, ম্যানেজ হয়ে যাবে। ব্রুকলিনের হাসপাতালে একটা কেমিস্টের কাজ খালি আছে, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখলুম, মাইনে খুব খারাপ না। চেষ্টা করবি?
–না!
–তা হলে তুই শুধু এই সব অড জব করে যাবি? গ্যাস স্টেশানের কাজটা তো এই কুলিগিরির চেয়ে অনেক ভালো ছিল, টাকা বেশি দিত।
–ওখানে একটা লোক যখন-তখন ব্যাস্টার্ড বলতো!
–ওটা এদের কথার কথা! অনেক সময় আদর করে বলে। পুরো দেশটাই তো ব্যাস্টার্ডদের দেশ। দেখা যাচ্ছে, মিক্সড ব্লাড়ের মানুষ বেশি হার্ড ওয়ার্কিং হয়। তোর এদেশে কি হবে না বাবলু! তুই এখানে ভ্যাতভেতে বাঙালী রয়ে গেলি! এখানে ছোটখাটো অপমান গায়ে মাখলে চলে না। আমাদের মতন ইমিগ্রান্টদের একমাত্র মটো কী? টাকা রোজগার করো, টাকা রোজগার করো! যত পারো শালা টাকা জমাও! আমি তো ঠিক করেছি এক লাখ ডলার জমালেই দেশে কেটে পড়বো। মধ্যমগ্রামে বিরাট বাড়ি হাঁকাবো আর ফুলের চাষ করবো!
অতীন সিগারেটের টুকরোটা জঞ্জালের বালতির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলতেই সিদ্ধার্থ তাকে এক ধমক দিয়ে বলল, তুই আবার না নিবিয়ে ও রকম ভাবে সিগারেট ফেলছিস? আগুন লেগে গেলে কী হবে জানিস? এ দেশে সব সময় আগুনের ভয়। বাড়িগুলো তো এক একটা। জতুগৃহ!
অতীন ঝুঁকবার আগেই সিদ্ধার্থ নিজে নিবিয়ে দিল সেটা। তারপর বললো, এক কাজ কর, জামা-জুতো পরে নে। আজ বাইরে খাবো!
–না, আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। খিচুড়ি তো রয়েছেই।
–ধ্যাৎ, রোজ রোজ ঐ একঘেয়ে খিচুড়ি খেতে ভালো লাগে কারুর? অনেকদিন স্টেক খাইনি। ভিলেজে একটা ভালো দোকান দেখে রেখেছি, চ, চ, ওঠ, ওঠ!
–এই ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে যাবো?
–ঠাণ্ডা তো কী হয়েছে, তুই কি ন্যাংটো হয়ে যাচ্ছিস নাকি? ইংল্যাণ্ডে থাকার সময় রাত্তিরে বেরুতি না কক্ষনো? ইংল্যাণ্ডে কি এর চেয়ে কম ঠাণ্ডা? দিন দিন কুঁড়ের যম হচ্ছিস। তুই আমার ব্লু পার্কাটা চাপিয়ে নে, তোকে ওটা ভালো মানায়।
অতীন বললো, তুই যে এক লাখ ডলার জমাবার কথা বললি, স্টেক খেতে তো অনেক পয়সা বেরিয়ে যাবে!
–তা বলে কি না খেয়ে টাকা জমাবো নাকি? বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়, অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়, লভিব মুক্তির স্বাদ…তার পর কী যেন! তোর মনে আছে?
অতীন কাঁধ ঝাঁকালো। সে কবিতা-টবিতা বিশেষ পড়েনি। সিদ্ধার্থ মোজা পরতে পরতে বললো, দেশ থেকে দুটো বই এনেছিলুম সঙ্গে, সঞ্চয়িতা আর আবোল তাবোল। প্রথম প্রথম মন খারাপ হলেই পড়তুম। কোন শালা যেন সঞ্চয়িতাখানা মেরে দিয়েছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো দু’জনে। ম্যানহাটনের এক প্রান্তে লোয়ার ইস্ট সাইডের তিন। নম্বর রাস্তার একটা ছ’তলা বাড়ির ছাদের ঘরটা সিদ্ধার্থর অ্যাপার্টমেন্ট, এদেশের ভাষায়। অ্যাটিক। লিফট নেই। ক্ষয়ে যাওয়া সিঁড়ি, নড়বড়ে রেলিং, দেয়ালে নানা রকম অসভ্য কথা লেখা। বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দাই পোটুরিকান আর গরিব ইহুদী, তিন চারটে কালো পরিবার আছে। সিঁড়িতে প্রায়ই আলো থাকে না। সব মিলিয়ে এমন একটা নোংরা নোংরা ভাব যে এটাকে একটা কংক্রিটের ঊর্ধ্বমুখী বস্তি বলা যায়। নিউ ইয়র্কের নগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই বাড়ি ভাঙার নির্দেশ জারি করেছে, দু’ এক মাসের মধ্যেই সিদ্ধার্থকে এই অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়তে হবে।
বেশ খানিকটা হেঁটে এসে ওরা ঢুকে পড়লো ওয়াশিংটন স্কোয়ারে। এত ঠাণ্ডার মধ্যেও টুরিস্টদের ভিড় যথেষ্ট। এক সময় গ্রীনিচ ভিলেজ ছিল শিল্পী কবি-সাহিত্যিকদের পাড়া, এখন সেখানে নকল কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকে ভরে গেছে, উদ্ভট পোশাক ও বিরাট দাড়িওয়ালা মুখ নিয়ে তারা টুরিস্টদের তৃপ্তি দেয়। কাফে-রেস্তোরাঁয় এক সময় এক দশক আগেও নামকরা প্রতিবাদী কবিরা চিৎকার করে কবিতা পড়তেন, এখন অনেক কাফে-রেস্তোরাঁতেই কবি সেজে আসা অভিনেতারা অশ্লীল ছড়া শোনায়, বহু লোক টিকিট কেটে তা শুনতে আসে। এখানকার অনেক রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট খোলা থাকে সারা রাত। ঠাণ্ডা আটকাবার জন্য সব রেস্তোরাঁতেই দু পাল্লা কাচের দরজা, কখনো দুটো দরজাই এক সঙ্গে খুলে গেলে ছিটকে বেরিয়ে আসে বাজনার শব্দ।
অতীন বললো, আমি রাত্তিরের দিকে এদিকটায় আসিনি আগে। একটা পাড়াতেই এত হোটেল-রেস্টুরেন্ট? গোটা কলকাতাতেও বোধ হয় এত নেই!
সিদ্ধার্থ বললো, আমেরিকাতে দুটো কী কী জিনিসের সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় বল্ ত? আলো আর কাগজ। এত আলো তুই পৃথিবীর আর কোনো শহরে দেখতে পাবি না। দ্যাখ, যে-সব দোকানগুলো বন্ধ, সেগুলোরও ভেতরে সব আলো জ্বলছে। সব বিজ্ঞাপনের আলোগুলো সারা রাত জ্বলে। কেউ কি সারা রাত ধরে দেখে? লিংকন টানেলের মধ্যে গিয়ে দ্যাখ, অত আলো, চব্বিশ ঘণ্টা জ্বলছে। আর দেখবি কাগজ। যেখানে সেখানে কাগজের ছড়াছড়ি। পেপার ন্যাপকিন তুই একটা চাইলে পাঁচখানা দেবে। খবরের কাগজগুলো তাগড়া তাগড়া। নিউ ইয়র্ক টাইমস একশো কুড়ি পাতা, লোকে পাঁচ-দশ মিনিট পড়ে, তারপর পুরো কাগজটাই ফেলে দেয়। পুরানো খবরের কাগজ বিক্রি করা যায় না বলে প্রথম প্রথম আমার গা কচকচ করতো।
–আমাদের দেশে কাগজের কত অভাব।
–আমাদের দেশের কথা বাদ দে। তুই নতুন এসেছিস তো, এখন তোর আমাদের দেশের সঙ্গে তুলনাটা প্রায়ই মনে আসবে। কিন্তু তুলনা করতে গেলে খেই পাবি না। এটা পৃথিবীর উল্টো দিক। এখানে সব কিছুই উল্টো। আমাদের দেশের লোক খেতে পায় না, এখানে জাহাজ ভর্তি গম সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসে।
–এ দেশে এত কাগজ নষ্ট হয়, তবু বইয়ের কিন্তু বেশ দাম।
–এরা সস্তায় বিশ্বাস করে না। এদের ব্যবসা মানেই হচ্ছে, তোর পকেট থেকে কী করে বেশি টাকা খরচ করাবে। খুব সাধারণ একটা জিনিস ধর না, টয়লেট পেপার। প্রত্যেকেরই লাগবে। আগে ছিল সাদা, এখন পিংক বেরিয়েছে, ব্লু বেরিয়েছে। ইয়ে পোঁছার কাগজ সাদা হলো না গোলাপী, নীল হলো তাতে কী আসে যায়? এরা বিজ্ঞাপন দিয়ে বোঝালো যে রঙীন কাগজ টয়লেট রুমে মানায় ভালো। ব্যস, দশ পনেরো সেন্ট দাম বেড়ে গেল, লোকে সাদার। বদলে রঙীন টয়লেট পেপার কিনছে পাগলের মতন। তোর পকেট থেকে যত পয়সা বেরিয়ে যাবে, তত তুই বেশি রোজগারের জন্য ব্যস্ত হবি। আর যত তুই বেশি রোজগার করবি, তত তোর খরচ বাড়বে। এই হচ্ছে কনজিউমার সোসাইটির গোলকধাঁধা।
কোনাকুনি পার্কটা পার হয়ে সামনের বড় রাস্তা পেরিয়ে সিদ্ধার্থ একটা ছোট রাস্তার মধ্যে ঢুকলো। সে একটা বিশেষ রেস্তোরাঁয় যাবে। এ শহরের সমস্ত রাস্তাই সোজা-টানা, ঘোরানো-প্যাঁচানো গলি একটাও নেই। একটা আলো ঝলমল রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে যেতে যেতে সিদ্ধার্থ বললো, তুই ডিলান টমাসের নাম শুনেছিস! খুব বড় একজন ব্রিটিশ কবি, মাতালের হদ্দ ছিল, এই দোকানটায় শেষ দিনে নাকি এক ঘণ্টায় আঠারো পেগ মদ খেয়ে মারা যায়। ভেতরে গিয়ে একদিন দেখিস, সেই কথাটাই এরা গর্ব করে লিখে রেখেছে।
আর একটা রাস্তার মোড়ে এসে সিদ্ধার্থ বললো, এবার তোক এই সোসাইটির একটা ভালো জিনিস দেখাই। তোর একটা টেবল ল্যাম্প লাগবে বলছিলি না? দ্যাখ এটা চলবে?
একটা পার্কিং মিটারের পাশে রাখা রয়েছে কয়েকটা কাগজের বক্স, কিছু সাময়িক পত্রিকা, কিছু কাপ-প্লেট, একটা প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা বাতিদান, ওপরে চমৎকার শেড, কিছু গ্রামোফোন। রেকর্ড ইত্যাদি।
সিদ্ধার্থ বললো, এরা বাড়ি বদলাবার সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নেয় না। আমাদের দেশে দেখেছি লোকে ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে মর্চে ধরা বালতি, পাইখানার মগ, ছেঁড়া মাদুর, ভাঙা টব কিছুই বাদ দেয় না। এরা বাড়তি জিনিস রাস্তার মোড়ে রেখে যায়, অন্য যার কাজে লাগবে, সে নিয়ে যেতে পারবে। এ সব জিনিসের রি-সেল ভ্যালু খুব কম, এরা দু চারটে টাকার পরোয়া করে না, বরং অন্য যে বিনা পয়সায় পাবে, সে খুশী হবে।
বাতিদানটি সুন্দর পালিশ করা কাঠের, বালব পর্যন্ত লাগানো আছে, প্লাগটিও অক্ষত। সেটার গায়ে হাত বুলিয়ে অতীন বললো, এটা তো একটুও ভাঙেনি, নষ্ট হয়নি, তবু ফেলে গেল কেন?
–এত বড় স্ট্যান্ড ল্যাম্প কেউ আর এখন ঘরে রাখে না। ফ্যাসানেবল নয়। এটাও মনে সোসাইটির ইউটিলিটিটাই বড় কথা নয়। যাদের বেসিক নীডগুলো মিটে। গেছে, তারা নানা রকম শৌখিনতা নিয়ে মাথা ঘামাবেই।
–এখানেও আমি কয়েকজনকে ভিক্ষে করতে দেখেছি।
–এ পাড়াতেই বেশি দেখতে পাবি। সেগুলো মাতাল, গেঁজেল কিংবা শখের ভিখিরি। সে আর কটা! তুই এ জিনিসটা নিবি তো তুলে নে। লজ্জার কিছু নেই। আমার ঘরের অনেক কিছুই এরকম রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া।
নিচু হয়ে ঝুঁকে সিদ্ধার্থ রেকর্ডগুলো দেখতে লাগলো। তার পছন্দ হলো না। সে বললো, সব কটাই প্যাট বুন, শুনলেই আমার গা জ্বলে যায়। টেপ রেকডারের যুগ এসে গেছে, এখন আর কেউ এ সব ভারি ভারি রেকর্ড জমিয়ে রাখতে চায় না। একদিন আমি এরকম জায়গা থেকে পল রবসন পেয়েছিলাম, জানিস!
–এত বড় একটা বাতিদান ঘাড়ে করে আমরা দোকানে খেতে যাবো?
–তাতে কী হয়েছে? এ দেশে সব কিছু চলে। আমার বাবার কাছে গল্প শুনেছি, ওঁদের আমলে টাই না পরে, জ্যাকেট গায়ে না দিয়ে এ দেশের কোনো ভদ্র রেস্তোরাঁয় ঢোকা যেত না। এখন দ্যাখ না, যেই সামার শুরু হবে, আমেরিকান ছেলেরাই চটি পরে, গেঞ্জি গায়ে যেখানে সেখানে ঢুকে যাবে। হিপিরা এ দেশে পোশাকের ব্যাপারে ন্যাকামির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
সিদ্ধার্থ নিজেই তুলে নিল অত বড় বাতিদানটা। তারপর খানিকটা গিয়ে একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়ালো। এ দোকানে গানবাজনা নেই, একটু ভেতরের দিকে বলে নিরিবিলি।
ঢোকার মুখে একটি দীর্ঘকায়া যুবতীর সঙ্গে চোখাচোখি হতেই সিদ্ধার্থ বললো, হাই! যুবতীটিও ফিক করে হেসে বললো, হাই!
টেবিল পেয়ে বসবার পর অতীন জিজ্ঞেস করলো, মেয়েটা তোর চেনা?
–কেন, চেনা না হলে বুঝি হাই বলা যায় না?
জিন্স-এর প্যান্ট ও উজ্জ্বল হলুদ রঙের পুলওভার পরা মেয়েটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাকে যেন খুঁজছে, তার ঠোঁটে একটা লম্বা হোল্ডারে বসানো সিগারেট। বেশ চোখে পড়ার মতন রূপসী সে।
সিদ্ধার্থ বললো, মেয়েটা বোধ হয় খালি আছে, ডাকবো আমাদের টেবিলে? ওকে আমি একটু একটু চিনি, আমাদের অফিসের হ্যারি একদিন আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ও মেয়েটা এত লম্বা তো, তাই কোনো ছেলে ওর সঙ্গে ডেট করতে চায় না। তার সঙ্গে মানাবে, তুই ডেট করতে চাস তো ব
অতীন কোনো কথা না বলে সিদ্ধার্থর মুখের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে রইলো।
–এমন কিছু খারাপ কথা বলিনি যে আমার দিকে অমন কট কট করে তাকাতে হবে। ঠিক আছে, কী খাবি বল, তোর স্টেক ভালো লাগে? অন্য কিছুও খেতে পারিস।
–তোর যেটা ইচ্ছে বল না।
–কেন, তোর নিজের কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে নেই? লবস্টার খাবি? দামের জন্য তোকে চিন্তা করতে হবে না।
–না, না, আমি অত দামী কিছু খাবো না!
টেবিলের ওপর থেকে এক গোছা ন্যাপকিন তুলে অতীনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, তোর ঐ বিপ্লবী-বিপ্লবী অভিমানী অভিমানী মুখখানা মুছে ফ্যাল তো! এদেশে যখন এসেই পড়েছিস, এখানেই যখন থাকতে হবে, তখন সব সময় মুখ গোমড়া করে রেখে লাভটা কী? হাসতে শেখ। এদেশে হাসতে না শিখলে বাঁচা যায় না!
অতীন তবু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
সিদ্ধার্থ ধমক দিয়ে বললো, মুখখানা মুছে নে, তেলতেলে হয়ে গেছে। শোন, অত চিন্তা করিস না। এপ্রিল থেকে ইউনিভার্সিটিগুলোতে নতুন সেমেস্টার শুরু হচ্ছে, পাঁচখানা অ্যাপ্লিকেশন পাঠানো হয়েছে, তুই একটা না একটাতে ঠিক চান্স পেয়ে যাবি। তোর রেজাল্ট তো ভালো! কিছুদিন ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। লেক্সিংটনে ইন্ডিয়ান ছাত্রদের একটা মেস বাড়ি আছে, সেখানে গিয়ে দ্যাখ, ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এসেও কেউ কেউ এক বছর দু’ বছর অড় জব করছে। প্রথম দিকে আমাকে কি কম কষ্ট করতে হয়েছিল? বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রি করতুম।
যে হোটেল কর্মীটি ওদের অডার নিতে এসেছিল, সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, স্যার, আপনারা বাঙালী!
দু জনে মুখ তুলে দেখলো, ওদেরই বয়েসী একজন যুবক, ঠোঁটে সামান্য হাসি ফোঁটালেও মুখে একটা উদ্বিগ্ন ভাব রয়েছে। নিউ ইয়র্কের হোটেল রেস্তোরাঁয় ভারতীয় বা পাকিস্তানী পরিচারক দেখতে পাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। বাংলা কথা শুনলে বাঙালীরা খুশী হয়।
সিদ্ধার্থ জিজ্ঞেস করলো, আপনি কোথাকার?
লোকটি বললো, আমার বাড়ি চিটাগাং, দুই বৎসর এদেশে আসছি! ঢাকার নতুন খবর কিছু জানেন?
–নতুন খবর তো কিছু জানি না। সপ্তা দু’য়েক আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটা ছোট খবর দেখেছিলাম।
–সেটা আমিও দেখছি। তারপর মিটমাট কিছু হইলো কি না—
একটু পরে যুবকটি অর্ডার নিয়ে চলে যাবার পর অতীন জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে। ঢাকায়?
সিদ্ধার্থ বললো, ইস্ট পাকিস্তানে বিরাট গোলমাল চলছে। ইয়াহিয়া খান ইলেকশন কল করেছিল, তুই সে খবর জানিস?
অতীন ঘাড় নাড়লো। তাদের দু’জনের সংসারে খবরের কাগজ কেনা হয় না, টি ভি-তে যেটুকু খবর দেখে। এদেশের টি ভি-তে ভারত-পাকিস্তানের প্রায় কোনো উল্লেখই থাকে না। সিদ্ধার্থ অফিসের লাইব্রেরিতে কাগজ পড়ে আসে।
সিদ্ধার্থ বললো, ইলেকশন ডেকে ইয়াহিয়া প্যাঁচে পড়ে গেছে। ইস্ট পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সিক্স পয়েন্ট ফর্মুলার ভিত্তিতে ভোটে নেমে দারুণ ভাবে জিতেছে। ইস্ট পাকিস্তানে তো সুইপ করে বেরিয়ে গেছে বটেই, গোটা পাকিস্তানেই ওদের মেজরিটি, এখন মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী না করে উপায় নেই। কিন্তু ভুট্টো তা মানবে কেন? সে নানান রকম বায়নাক্কা তুলেছে। এই নিয়ে খুব হাঙ্গামা ওখানে। আজ কত তারিখ? পঁচিশে মার্চ তো, আজও ওদের ওখানে…
অতীন শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে গেল। পাকিস্তানের ঘটনা সম্পর্কে তার আগ্রহ নেই, তার মনে পড়ে গেল মানিকদা, কৌশিকদের কথা। কৌশিক আর পমপম দু’ জনেই ধরা পড়ে জেলে আছে, মানিকদার কোনো হদিস নেই। সে আপন মনে বললো, কতদিন দেশের বন্ধুবান্ধবদের খবর পাইনি।
সিদ্ধার্থ বললো, ওয়েস্ট বেঙ্গলের অবস্থাও খুব খারাপ। ইণ্ডিয়া অ্যাব্রড’ বলে একটা ট্যাবলয়েড কাগজ বেরোয়, তাতে একটা নিউজ দেখলুম, সিদ্ধার্থ রায়ের গবর্ণমেন্ট নতুন ট্যাকটিকস্ নিয়েছে, নকশাল ছেলেগুলোকে কোর্টে পাঠাচ্ছে না। পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে ময়দানে এনে ছেড়ে দিয়ে বলছে, যা বাড়ি যা, পালা! ছেলেগুলো দৌড়তে শুরু করলেই পেছন থেকে গুলি করে শেষ করে দিচ্ছে, এর নাম এনকাউন্টার! ফিমস্টার উত্তমকুমার ময়দানে মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে নাকি এ রকম একটা দৃশ্য দেখে ফেলেছে। তুই ভাগ্যিস দেশ থেকে ঠিক টাইমলি পালাতে পেরেছিলি, এখন জেলে থাকলে তুই খতম হয়ে যেতিস!
অতীন টেবিল ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, তার চোখ দুটি রক্তিম। সে কর্কশ গলায় বললো, আমি খাবো না। বাড়ি যাচ্ছি।
সিদ্ধার্থ তার হাত চেপে ধরে বললো, আরে পাগল, বোস, বোস! অতীত নিয়ে মানুষ বাঁচে না। যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
–দ্যাখ সিদ্ধার্থ, আমাকে অপমান করার কোনো রাইট নেই তোর।
–ইয়ার্কি-ঠাট্টাও বুঝিস না? সব সময় মাথা গরম! চট্টগ্রামের ছেলেটি ওদের জন্য দু প্লেট স্টেক নিয়ে এলো। সঙ্গে একটি রেড ওয়াইনের বোতল। সিদ্ধার্থ ওয়াইনের অর্ডার দেয়নি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে যেতেই ছেলেটি বললো, ওটা আমার কমপ্লিমেন্ট। আপনাদের বাড়ি কি ঢাকা?
না, আমরা কলকাতার লোক।
–স্যার, গত সপ্তায় দ্যাশ থিকা একজন আসছে, সে কইলো, ঢাকায় স্টুডেন্টরা স্বাধীন বাংলা ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে, মিলিটারি গুলি চালিয়ে অনেককে মেরেছে।
–সেটা তো দু’ সপ্তাহ আগের খবর। আজ পচিশে মার্চ, আজ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে, আজ শেখ মুজিবরের হাতে ক্ষমতা দিতেই হবে। কালকের কাগজে কিছু খবর থাকবে নিশ্চয়ই। আপনিও বসুন না আমাদের সঙ্গে?
–না স্যার, অন ডিউটি, আপনাদের ঠিকানা দ্যান, একদিন গল্প করতে যাবো।
ছেলেটি চলে যাবার পর অতীন অবজ্ঞার সঙ্গে বললো, স্বাধীন বাংলা না কচু হবে! আর্মি রেজিমে কখনো সিসেশান হতে পারে? ওদের দেশে রেভোলিউশান হবার স্কোপ ছিল, তার বদলে আবার ভোটের দিকে গেল!
সিদ্ধার্থ বললো, ইস্ট পাকিস্তানে কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যেটা ওয়ার্ল্ডে আর কোথাও বোধ হয় হয়নি। নেতাগুলো তো অনেকেই জেলে ছিল কিংবা চুপ মেরে গিয়েছিল। কিন্তু সিক্সটি নাইন থেকে ছাত্ররা এমন বিরাট আন্দোলন শুরু করলো যে তাতেই সরকার টলে যাচ্ছে। ছাত্রদের দাবিতেই এখন নেতারা গলা মেলাচ্ছে। ছাত্রদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ওখানে কোনো নেতার নেই। স্টুডেন্ট পাওয়ার একটা দেশের পলিটিক্যাল চেইঞ্জ নিয়ে আসছে…আর তোরা ওয়েস্ট বেঙ্গল কী করলি? নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি…
–আমেরিকায় বসে দেশের সমালোচনা করতে খুব মজা লাগে, তাই না?
–চল উঠে পড়ি, টি ভি-তে রাত সাড়ে এগারোটায় একটা ভূতের ছবি দেখাবে।
ফেরার পথে সিদ্ধার্থ বললো, এবার বিনা পয়সায় কফি খেতে হবে। জায়গাটা চিনে রাখ।
সত্যিই একটি রাস্তার ওপরের দোকানের কাউন্টারে দুটি মেয়ে কাগজের গেলাসে কফি বিলি। করছে। সিদ্ধার্থ দু’ গেলাস নিয়ে এলো। চুমুক দিয়ে বললো, ভালো কফি! এদেশের ছেলে মেয়েদের গাঁজা খাওয়ার অভ্যেস ছাড়ানোর জন্য স্যালভেশন আর্মি থেকে এই বিনা পয়সার কফি খাওয়াচ্ছে। আজ ইফ কফি খেলে কেউ আর গাঁজা খেতে চাইবে না। কী বুদ্ধি এদের!
এতক্ষণ পরে অতীন খুক খুক করে একটু হাসলো।
বাড়ি ফিরে সিদ্ধার্থ খাটে শুয়ে টিভি দেখতে লাগলো, অতীন চিঠি লেখার জন্য বসলো টেবিলে। চিঠি পেতে একটু দেরি হলেই মা উতলা হয়ে পড়ে। সিদ্ধার্থ নিশ্চয়ই একদিন তার চিঠি পড়ে ফেলেছিল। মাকে চিঠি লেখার সময় অনেক গল্প বানাতেই হয়। ছেলে কুলিগিরি করছে শুনলে মা অজ্ঞান হয়ে যাবে!
একটু পরে অতীন খানিকটা ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো, সিদ্ধার্থ, একটা ফোন করবো বোস্টনে?
সিদ্ধার্থ ঘড়ি দেখে বললো, আর দশ মিনিট পরে করিস। বারোটার পর চার্জ অনেক কম লাগবে।
–আমি পয়সাটা দিয়ে দেবো তোকে।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ, দিবি দিবি! তুই হার্ভার্ডে না হোক, বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে একটা চান্স পেয়ে গেলে খুব ভালো হয়। তখন আর তোকে ঘন ঘন লং ডিসটেন্স কল করতে হবে না।
একটু থেমে সিদ্ধার্থ আবার বললো, দ্যাখ অতীন, তোকে একটা কথা বলি। শর্মিলার মতন এরকম সত্যিকারের একটা ভালো মেয়ে খুব কম দেখেছি। তোর মতন একটা অপদার্থ, গোঁয়ারকে যে ওর কী করে পছন্দ হলো সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। তুই যদি মেয়েটাকে কষ্ট দিস, সেটা হবে বিরাট ক্রাইম, তাহলে তার সঙ্গে আর জীবনে কথা বলবো না। তুই শর্মিলাকে ডিচ করিস না!