সন্তানদিগের শিক্ষা
অথ দ্বিতীয় সমুল্লাসারন্থঃ
অথ শিক্ষা প্রবক্ষ্যামঃ
মাতৃমান্ পিতৃমানাচার্য্যবান্ পুরুষো বেদ।
(শতপথ ব্রাহ্মণ তথা ছা০উ০ ৬।১৪)
ইহা শতপথ ব্রাহ্মণের বচন। বস্তুতঃ তিন উত্তম শিক্ষক অর্থাৎ প্রথমে মাতা, দ্বিতীয় পিতা এবং তৃতীয় আচাৰ্য্য লাভ করিয়াই মানুষ জ্ঞানবান হয়। যে সন্তানের মাতা ও পিতা ধার্মিক ও বিদ্বান, তাহার কুল ধন্য। সে সন্তান ভাগ্যবান্। সন্তান মাতার নিকট হইতে যেরূপ উপদেশ ও উপকার লাভ করে অন্য কাহারও নিকট সেইরূপ লাভ করে না। মাতা সন্তানকে যেমন স্নেহ করেন ও তাহার হিত কামনা করেন, সেইরূপ অন্য কেহই করে না। এই কারণে (মাতৃমান) অর্থাৎ ‘প্রশস্তা ধার্মিকী বিদূষী মাতা বিদ্যতে যস্য স মাতৃমান’ বলা হইয়াছে। যে মাতা গর্ভাধান হইতে সন্তানদের সম্পূর্ণ বিদ্যালাভ না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে সুশীলতার শিক্ষা দিয়া থাকেন, তিনি ধন্য।
মাতা এবং পিতার পক্ষে গর্ভাধানের পূর্বে, তৎকালে এবং তদন্তর মাদক দ্রব্য, মদ্য, দুর্গন্ধযুক্ত, রুক্ষ ও বুদ্ধিনাশক দ্রব্য পরিত্যাগ করিয়া, যাহাতে শান্তি, আরোগ্য, বল, বুদ্ধি, পরাক্রম এবং সুশীলতার দ্বারা সভ্যতা প্রাপ্ত হওয়া যায় এইরূপ ঘৃত, দুগ্ধ, মিষ্ট অন্নপানাদি উৎকৃষ্ট পদার্থ সেবন করিবে, যাহাতে রজোবীৰ্য্য দোষ রহিত হইয়া অত্যুত্তম গুণ লাভে সমর্থ হয়। ঋতু গমনের বিধি অনুসারে, রজোদর্শনের পঞ্চম দিবস হইতে বেড়শ পর্যন্ত ঋতুদানের সময়। এই (রজোদর্শনের) দিনগুলির মধ্যে প্রথম চারিদিন পরিত্যাজ্য। অবশিষ্ট দ্বাদশ দিনের মধ্যে একাদশ ও ত্রয়োদশ রাত্রি পরিত্যাগ করিয়া অবশিষ্ট দশ রাত্রিতে গর্ভাধান প্রশস্ত। রজোদর্শনের দিন হইতে ষোড়শ রাত্রির পর আর সমাগম করিবে না। পুনরায় যতদিন পূর্বোক্ত ঋতুদানের সময় না আসে ততদিন এবং গর্ভস্থিতির পর এক বৎসর পর্যন্ত সংযুক্ত হইবে না। যতদিন পর্যন্ত উভয়ের শরীর নীরোগ, পরস্পরের মধ্যে প্রসন্নতা এবং কোনরূপ শোকনা থাকিবে ততদিন চরক ও সুশ্রুতে ভোজনাচ্ছাদনের বিধান এবং মনুস্মৃতিতে স্ত্রী-পুরুষের প্রসন্নতা বিধান যেরূপ লিখিত আছে তদনুসারে আচরণ করিবে। গর্ভাধানের পর স্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত সাবধানতার সহিত আহার ও পরিধেয় গ্রহণ করা উচিত। সেই সময় হইতে এক বৎসর পর্যন্ত স্ত্রী পুরুষের সঙ্গ করিবে না। সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পৰ্য্যন্ত গর্ভিণী বুদ্ধি, বল, আরোগ্য, রূপ, পরাক্রম, শান্তি এবং অন্যান্য গুণকারক দ্রব্য সেবন করিতে থাকিবে।
সন্তান ভূমিষ্ঠের পর উত্তম সুগন্ধ জলে শিশুকে স্নান করাইয়া নাড়ী ছেদনের পর সুগন্ধ ঘৃতাদির দ্বারা হোম করিবে। প্রসূতিরও স্নানাহারের যথোচিত ব্যবস্থা করিবে যেন শিশু ও প্রসূতির শরীর ক্রমশঃ সুস্থ ও পরিপুষ্ট হইতে থাকে। শিশুর মাতা অথবা ধাত্রী এইরূপ খাদ্য গ্রহণ করিবে যেন স্তন্য দুগ্ধেও উত্তম গুণ জন্মে। ছয় দিন পর্যন্ত শিশুকে প্রসূতির স্তন্য পান করাইবে, তদন্তর ধাত্রী পান করাইবে। পরন্তু মাতা-পিতা ধাত্রীকে উত্তম খাদ্য ও পানীয় দিবে। যাহারা দরিদ্র, ধাত্রী রাখিতে অসমর্থ, তাহারা বুদ্ধি, পরাক্রম ও আরোগ্যকর ওষধি জলে ভিজাইয়া রাখিবার পর উহাকে ছাঁকিয়া লইবে। তাহার পর সেই জল গো বা ছাগদুগ্ধের সহিত সম-পরিমাণ মিশাইয়া শিশুকে পান করাইবে। প্রসবের পর শিশু ও তাহার মাতাকে বিশুদ্ধ বায়ুযুক্ত স্থানে রাখিবে। সেই স্থানে সুগন্ধ এবং সুদৃশ্য পদার্থও রাখিবে। যে স্থানের বায়ু শুদ্ধ সেই স্থানেই প্রসূতির ভ্রমণ করা উচিত। যে স্থানে ধাত্রী, গাভী ও ছাগী প্রভৃতির দুগ্ধ পাওয়া যাইবে না, সেস্থানে যেরূপ করা উচিত বুঝিবে সেইরূপ করিবে। প্রসূতির দেহাংশ হইতে শিশুর শরীর গঠিত হয়। এইজন্য প্রসবকালে প্রসূতি দূর্বল হইয়া পড়ে। সুতরাং প্রসূতি শিশুকে স্তন্য পান করাইবে না। দুগ্ধ বন্ধ করিবার জন্য স্তনের ছিদ্রের উপর এইরূপ ঔষধির প্রলেপ দিবে, যাহাতে দুগ্ধ নিঃসৃত না হয়। এইরূপ করিলে প্রসূতি দ্বিতীয় মাসে পুনরায় সুস্থ, সবল ও যুবতী হইয়া উঠিবে। তত সময় পর্যন্ত পুরুষ বীৰ্য্য নিরোধ করিবে। স্ত্রী-পুরুষ যাহারা এইরূপ করিবে তাহাদের উত্তম সন্তান জন্মিবে, তাহারা দীর্ঘায়ু হইবে, বল ও পরাক্রমশালী হইতে থাকিবে এবং এইভাবে সমস্ত সন্তান উত্তম, বলবান, পরাক্রমশালী, দীর্ঘায়ু ও ধার্মিক হইবে। স্ত্রী-যোনি সঙ্কোচন ও শোধন করিবে এবং পুরুষ বীৰ্য্যস্তম্ভন। করিবে। এইরূপ করিলে পুনরায় যত সন্তান জন্মিবে তাহারাও উৎকৃষ্ট হইবে।
মাতা সন্তানদিগকে সর্বদা উত্তম শিক্ষা দিবে। তাহারা যেন সভ্য হয় এবং কোন অঙ্গের দ্বারা কুচেষ্টা করিতে না পারে। শিশু কথা বলিতে আরম্ভ করিলেই যাহাতে তাহার জিহ্বা কোমল হইয়া স্পষ্ট উচ্চারণ করিতে পারে শিশুর মাতা সেইরূপ উপায় অবলম্বন করিবে। যে বর্গ ও বর্ণের যে। স্থান তথা প্রযত্ন, যথা –’প’ এর স্থান ওষ্ঠ এবং প্রযন্ত স্পষ্ট, তদনুসারে ওষ্ঠদ্বয় মিলিত করিয়া যাহাতে হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত অক্ষরগুলি সম্যক্ রূপে উচ্চারণ করিতে পারে সেইরূপ উপায় করিবে ॥ উচ্চারণ যেন মধুর, গম্ভীর, সুন্দর, স্বর, অক্ষর, মাত্রা, পদ, বাক্য, সংহিতা, এবং অবসান্ পৃথক পৃথক শ্রুতিগোচর হয়। যখন শিশু কিছু কিছু বলিতে আরম্ভ করিবে, তখন তাহাকে সুন্দর বাক্য এবং জৈষ্ঠ, কনিষ্ঠ, মান্য, পিতা, মাতা, রাজা, ও বিদ্বান্ প্রভৃতির বিষয়ে শিক্ষাদান করিবে, তাহারা যেন কোনও স্থানে অযোগ্য ব্যবহার না করে এবং সর্বত্র সম্মান লাভ করিতে সক্ষম হয়। সন্তান যাহাতে জিতেন্দ্রিয়, বিদ্যানুরাগী ও সৎসঙ্গাভিলাষী হয়, তদ্রপ চেষ্টা থাকিবে। তাহারা যেন ব্যর্থ ক্রীড়া, রোদন-হাস্য, কলহ, হর্য-শোক, বস্তু বিশেষের প্রতি লোলুপতা এবং ঈর্ষা, দ্বেষাদি না করে। উপস্থেন্দ্রিয়ের স্পর্শ ও মর্দন হেতু বীর্যের ক্ষীণতা ও নপুংসকতা জন্মে এবং হস্তে দুর্গন্ধ। হয়, অতএব উহা অকারণে স্পর্শ করিবে না। যাহাতে তাহারা সত্যবাদিতা, শৌর্য্য, ধৈৰ্য্য ও প্রফুল্লতা প্রভৃতি গুণ লাভ করিতে পারে তদ্রপ কাৰ্য্য করাইবে।
বালক বালিকাদের পাঁচ বৎসর বয়স হইলে তাহাদিগকে দেবনাগরী অক্ষরের অভ্যাস করাইবে, অন্য দেশীয় ভাষার অক্ষরের সহিতও পরিচয় করাইয়া দিবে। ইহার পর যাহাতে সুশিক্ষা, বিদ্যা, ধর্ম, পরমেশ্বর, মাতা, পিতা, আচাৰ্য্য, বিদ্বান ব্যক্তি, অতিথি, রাজা, প্রজা, আত্মীয়, বন্ধু, ভগ্নী এবং ভৃত্যাদির সহিত কীরূপ ব্যবহার করা উচিত, সেই সব বিষয়ের মন্ত্র, শ্লোক, সূত্র, গদ্য এবং পদ্যও অর্থের সহিত কণ্ঠস্থ করাইবে। সন্তানগণ যাহাতে কোন ধূর্তের পাল্লায় পড়িয়া প্রতারিত না। হয় এবং যে সকল ব্যবহার দ্বারা তাহাদের বিদ্যা ও ধর্ম-বিরুদ্ধ ভ্রান্তি জালে পতিত হইয়া ভূত প্রেতাদি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস না হয় সে বিষয়ে উপদেশ দিবে।
গুরোঃ প্রেতস্য শিষ্যস্তু পিতৃমেধং সমাচর। প্রেতহারৈঃ সমং তত্র দশরাত্রেণ শুদ্ধতি ॥ মনু (৫। ৬৫) অর্থ –যখন গুরুর মৃত্যু হয়, তখন মৃতদেহের নাম হয় ‘প্রেত’ মৃত দেহের দাহকারী শিষ্য প্রেতহার অর্থাৎ শব-বাহীদের সহিত দশম দিবসে শুদ্ধ হয়।
দাহান্তে সেই মৃতদেহের নাম হল ‘ভূত’ অর্থাৎ তিনি অমুক ব্যক্তি ছিলেন –এইরূপ বলা হয়। যাহা কিছু উৎপন্ন হইয়া বর্তমান কালে থাকে না তাহা ভূতস্থ হয় বলিয়া তাহার নাম ‘ভূত’। ব্রহ্মা হইতে আজ পর্যন্ত বিদ্বান্ব্যক্তিদের এইরূপ সিদ্ধান্ত। কিন্তু যাহার মধ্যে শঙ্কা, কুসঙ্গ প্রভৃতি কুসংস্কার থাকে তাহার ভয় ও শঙ্কা-রূপী ভূত, প্রেত, শাকিনী, ডাকিনী নানাবিধ ভ্ৰম-জাল দুঃখজনক হয়।
দেখ, যখন কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়, তখন তাহার জীবাত্মা পাপ-পূণ্যের বশীভূত হইয়া পরমেশ্বরের ব্যবস্থানুসারে সুখ দুঃখের ফল ভোগার্থে জন্মান্তর গ্রহণ করে। কেহ কি অবিনাশী পরমেশ্বরের এই ব্যবস্থার নাশ করিতে পারে? অজ্ঞানী লোকেরা বৈদ্যক শাস্ত্র বা পদার্থ বিদ্যা পড়াশোনা না করিয়া, বিচারশূন্য হইয়া, সন্নিপাত জ্বরাদি শারীরিক এবং উন্মাদাদি মানসিক ব্যাধিকে ভূত প্রেতাদি নাম দিয়া থাকে। ঐ সমস্ত রোগের ঔষধ সেবন পথ্যাদির উচিত ব্যবহার না করিয়া ধূর্ত, মহামূর্খ, অনাচারী, স্বার্থপর, মেথর, চামার, শূদ্র এবং ম্লেচ্ছ প্রভৃতিকে বিশ্বাস করে এবং নানা প্রকার ঢং, ছলনা, কপটতা করে, উচ্ছিষ্ট ভোজন করে এবং মিথ্যা মন্ত্র, যন্ত্র (মাদুলি ও তাবিজ আদি) ব্যবহার করিয়া সূত্র ও তাগা বাঁধে ও বাঁধায়। এইরূপে তাহারা নিজেদের অর্থ নাশ ও সন্তানাদির দুর্দশা ও রোগ বৃদ্ধি করে। যখন কোনও মুখ-ধনী ঐ সকল দুবুদ্ধি, পাপ স্বার্থপরদের নিকট গিয়া বলে, –“মহারাজ, এই বালক-বালিকা, স্ত্রী অথবা পুরুষের কী হইয়াছে জানি না। তখন তিনি বলেন, “ইহার শরীরে প্রকাণ্ড ভূত-প্রেত, ভৈরব, শীতলাদি দেবী দেবতা ভর করিয়াছে, যে পর্যন্ত তুমি ইহার প্রতিকার না করিবে, সে পৰ্য্যন্ত তাহারা ইহাকে ছাড়িবে না। তাহারা প্রাণহরণও করিতে পারে। যদি তুমি মলিদা (খাদ্য বিশেষ) অথবা এই পরিমাণ ভেঁট দাও, তাহা হইলে আমরা মন্ত্রজপ, পুরশ্চরণ দ্বারা ঝাড় ফুঁক করিয়া তাহাকে তাড়াইয়া দিতে পারি। তখন সেই অন্ধ ও তাহার আত্মীয় স্বজনগণ বলে, –“মহারাজ! আমাদের সর্বস্ব যাক্, ইহাকে ভাল করিয়া দিন।
তখনই তাহারা সুযোগ পায়। তখন ধূর্তগণ বলে, “আচ্ছা এই পরিমাণ সামগ্রী ও এত দক্ষিণা দেবতার জন্য নৈবদ্য রাখ এবং গ্রহণ ও দান করাও। তখন ধূর্তগণ ঝঝর, মৃদঙ্গ, ঢোল এবং কাসর লইয়া রোগীর সম্মুখে বাজায় ও গান করে। তাহাদের মধ্যে একজন পাষণ্ড উন্মাদের ন্যায় নর্তন-কুর্দন করিতে করিতে বলে, –“আমি ইহার প্রাণই হরণ করিব।তখন সেই অন্ধ বিশ্বাসী, উন্মত্ত প্রায় মেথর, চামার প্রভৃতি নীচপ্রকৃতির লোকের পায়ে পড়িয়া বলে, ‘আপনি যাহা ইচ্ছা তাহাই নিন, ইহাকে বাঁচাইয়া দিন। তখন সেই ধূর্ত বলে, “আমি হনুমান, মণ্ডা, মিঠাই, তৈল, সিন্দুর, সওয়া মণ ‘রোট’ (খাদ্য বিশেষ) এবং লাল ল্যাঙোট আনো। আমি দেবী, আমি ভৈরব, পাঁচ বোতল মদ, কুড়িটি মুরগী, পাঁচটি ছাগল,মিঠাই এবং বস্ত্র আনো’। ইহা শুনিয়া তাহারা বলে, ‘যাহা চাহেন তাহাই নিন। তখন সেই পাগল আরও নাচিতে ও লাফাইতে থাকে। কিন্তু, সে সময় কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাহাকে উপহার স্বরূপ পাঁচ জুতা, লাঠি ও কিল, ঘুষি মারিলে তাহার হনুমান, দেবী ভৈরবী তখনই প্রসন্ন হইয়া পলায়ন করিবে। ঐগুলি ধূর্তদের ধনাদি হরণের ছলনা মাত্র।
যখন কোন গ্রহগ্রস্ত ব্যক্তি, গ্রহস্বরূপ ভণ্ড জ্যোতিষীর নিকট গিয়া বলে — “মহাশয়! দেখুন। ইহার কী হইয়াছে? তখন সে বলে, ইহার সূৰ্য্যাদি ক্র গ্রহ চাপিয়াছে। যদি তুমি ইহার জন্য, শান্তি-পাঠ, পূজা ও দান করাও তবে সুখী হইবে, নতুবা অত্যন্ত পীড়িত হইয়া ইহার মৃত্যু হওয়াও আশ্চর্য্যের নহে।
(উত্তর) –জ্যোতিষী ঠাকুর। এই পৃথিবী যেরূপ বৃহৎ সূৰ্য্যাদি লোকও তদ্রূপ। ইহারা তাপ ও আলোক দান করা ব্যতীত অন্য কিছুই করিতে পারে না। ইহারা কি চেতন যে, ক্রুদ্ধ হইয়া দুঃখ এবং শান্ত হইয়া সুখ দিতে পারিবে?
(প্রশ্ন)–তবেকি এই সংসারেরাজা-প্রজা সুখ-দুঃখ লাভ করিতেছে, ইহা কি গ্রহের ফলনহে।
(উত্তর) –না, সকল পাপ-পুণ্যের ফল।
(প্রশ্ন) –তবে কি জ্যোতিষ শাস্ত্র মিথ্যা?
(উত্তর) –না, তাহাতে যে গণিত, বীজ গণিত ও রেখা গণিতাদি বিদ্যা আছে তাহা সব সত্য কিন্তু ফলের লীলা খেলা সমস্ত মিথ্যা।
(প্রশ্ন) –এই যে জন্ম পত্রিকা, কুষ্ঠি, ইহাও কি নিষ্ফল?
(উত্তর) –হাঁ, উহা জন্মপত্র নহে, উহার নাম শোকপত্র রাখা উচিত। কারণ যখন সন্তানের। জন্ম হয় তখন সকলের আনন্দ হয়, কিন্তু যতক্ষণ জন্মপত্র প্রস্তুত ও গ্রহফল শ্রুত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই আনন্দ থাকে। যখন পুরোহিত সন্তানদের মাতা-পিতা গণকঠাকুরকে বলেন, “ঠাকুর! আপনি খুব ভাল জন্ম পত্রিকা প্রস্তুত করুন। যদি সে ধনাঢ্য হয় তবে পুরোহিত অনেক লাল, পীত– রেখা দ্বারা চিত্র বিচিত্র জন্মপত্রিকা, আর যদি সে দরিদ্র হয়, তবে সাধারণ রীতি অনুসারে জন্মপত্রিকা (কুষ্ঠি) প্রস্তুত করিয়া শুনাইতে আসেন। তখন সন্তানের পিতা-মাতা জ্যোতিষীর সম্মুখে বসিয়া বলেন, ইহার জন্মপত্র ভালো ত?’ জ্যোতিষী বলেন, যেমন আছে তেমনই শুনাইয়া দিতেছি। ইহার জন্মগ্রহ অতি উত্তম, মিত্রগ্রহ অতি উত্তম। ইহার ফলে জাত ধনবান ও প্রতিষ্ঠাবান হইবে। এই সন্তান যে সভায় বসিবে, সেই সভায় সকলের উপর তাহার প্রভাব পড়িবে। সে। শারীরিক স্বাস্থ্য ও রাজসম্মান লাভ করিবে। এই সকল কথা শুনিয়া পিতা এবং অন্যান্য লোকেরা বলেন, বাঃ! বাঃ! আপনি বড় ভাল। জ্যোতিষী বুঝিতে পারেন যে, এই সকল কথায় কার্যোদ্ধার হইবে না। তখন জ্যোতিষী বলেন –“এই গ্রহ ত অতি উত্তম, কিন্তু এই সব গ্রহ ক্রুর অর্থাৎ অমুক অমুক ক্র গ্রহের সঙ্গে সংযোগ থাকায় আট বৎসর বয়সে মৃত্যুযোগ আছে। ইহা শুনিয়া। মাতা-পিতা প্রভৃতি পুত্রজন্মজনিত আনন্দ ভুলিয়া শোক সাগরে নিমগ্ন হয় এবং জ্যোতিষীকে বলে, “ঠাকুর মশায়! এখন আমরা কী করি?’তখন জ্যোতিষী বলেন, ‘উপায় কর। গৃহস্থ জিজ্ঞাসা করে, কী উপায় করিব?’ জ্যোতিষী প্রস্তাব দিতে থাকেন, এই দান কর, গ্রহ শান্তির মন্ত্র জপ করাও এবং নিত্য ব্রাহ্মণভোজন করাও তবে অনুমান হয় যে, নবগ্রহের বিঘ্ন দূর হইবে। “অনুমান’ শব্দ এইজন্য যে, সন্তান যদি মরিয়া যায়, তবে বলিবেন,– ‘আমি কী করিব? পরমেশ্বরের উপরে তো কেহই নাই, আমি তো বহু চেষ্টাই করিলাম, তুমিও করাইলে কিন্তু উহার কর্মই এইরূপ ছিল। আর যদি বাঁচিয়া যায়, তবে বলিবেন, “দেখ, আমার মন্ত্রের এবং দেবতা ও ব্রাহ্মণদের কী শক্তি! তোমার সন্তানকে বাঁচাইয়া দিয়াছি।’ এ স্থলে এরূপ হওয়া উচিত যে, যদি। জপ ও মন্ত্রপাঠের দ্বারা কিছু না হয়, তবে ধূৰ্ত্তদের নিকট হইতে দুই-তিন গুণ টাকা আদায় করা। প্রয়োজন। যদি সন্তান বাঁচিয়া যায়, তথাপি ঐরূপ লওয়া উচিত কেননা জ্যোতিষী যেমন বলিয়াছেন। যে, ইহার কর্ম এবং পরমেশ্বরের নিয়ম উল্লম্ফন করিবার সামর্থ্য কাহারও নাই, গৃহস্থও সেইরূপ বলিবে, –‘সে নিজের কর্মে এবং পরমেশ্বরের বিধানে বাঁচিয়াছে, আপনার কাৰ্য্য বা মন্ত্র দ্বারা নহে।’ তৃতীয়তঃ –গুরু প্রভৃতিও দানপুণ্য করাইয়া স্বয়ং তাহা গ্রহণ করে, জ্যোতিষীদের বেলায় যে উত্তর দেওয়া হইয়াছে, তাহাদের সকলকেও সেই উত্তর দেওয়া উচিত।
এখন অবশিষ্ট রহিল শীতলা, এবং তন্ত্র, যন্ত্র প্রভৃতি। ইহারাও এইরূপ করিয়া থাকে। কেহ বলে–যদি আমি মন্ত্রপাঠ করিয়া কাহাকেও তাগা বা মাদুলি বা কবচ তৈরী করিয়া দিই, তাহা ইইলে আমার দেবতাও পীরের সেই মন্ত্র ও তন্ত্রের প্রভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোন বিপ্ন হইতে দেয় না। তাহাদেরও সেই উত্তর দিতে হয়, তুমি কি মৃত্যু, পরমেশ্বরের নিয়ম এবং কর্মফল হইতেও রক্ষা করিতে পারিবে? তোমাদের এইসব করা সত্ত্বেও কত শিশু মরিয়া যায় এবং তোমাদের ঘরেও মরে, তোমরা কি মৃত্যু হইতে অব্যাহতি পাইবে? ‘তখন ধূর্তগণ কিছুই বলিতে পারে না। সেই সব ধূর্ত বুঝিতে পারে যে, এখানে তাহাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবে না। অতএব এই সকল মিথ্যা ব্যবহার পরিত্যাগ করিয়া যাঁহারা ধার্মিক, সর্ব দেশের উপকার করে, অকপটভাবে সকলকে বিদ্যাদানকারী বিদ্যাদাতা,উত্তম বিদ্বান তাহাদের প্রত্যুপকার করিবে। তাহারা যেরূপ জগতের উপকার করেন সেইরূপ কাৰ্য্য কখনও পরিত্যাগ করিবে না। আর যাহারা লীলা রসায়ন-মারণ, মোহন-উচ্চাটন-বশীকরণাদির কথা বলে, তাহাদিগকেও মহাপামর মনে করা উচিত। এই সকল মিথ্যা বিষয় সম্বন্ধে (সচেতন থাকিবার) উপদেশ বাল্যাবস্থাতেই সন্তানদের হৃদয়ে প্রবেশ করাইয়া দিবে, যাহাতে স্বীয় সন্তানগণ কাহারও ভ্রমজালে পতিত হইয়া দুঃখভোগ না করে।
বীর্যরক্ষায় যে আনন্দ ও বীর্যনাশে যে দুঃখ তাহাও তাহাদের সকলকে এই বলিয়া সতর্ক করিয়া দেওয়া উচিত –’দেখ, যাহাদের শরীরে বীৰ্য্য সুরক্ষিত থাকে, তাহারা আরোগ্য, বুদ্ধি, বল এবং পরাক্রমশালী হইয়া বহুবিধ সুখের অধিকারী হয়। বীৰ্য্যরক্ষার নিয়ম এই যে,- বিষয় কথা, বিষয়ীদের সংসর্গ, বিষয়চিন্তন, স্ত্রীলোকদর্শন, একান্ত সেবন, সম্ভাষণ ও স্পর্শাদি হইতে দূরে থাকিয়া ব্রহ্মচারিগণ সুশিক্ষা ও পূর্ণ বিদ্যা লাভ করিবে। যাহার শরীর বীৰ্য্যহীন, সে নপুংসক ও মহাকুলক্ষণী। যাহার প্রমেহ রোগ হয় সে দুর্বল, নিস্তেজ, নির্বুদ্ধি; উৎসাহ, ধৈৰ্য্য, বল এবং পরাক্রম প্রভৃতি গুণ রহিত হইয়া বিনষ্ট হয়, তোমরা যদি এই সময়ে সুশিক্ষা ও বিদ্যালাভে এবং বীৰ্য্যরক্ষায় ভুল কর তাহা হইলে এই জন্মে অমূল্য সময় আর পাইবে না। যতদিন আমরা গৃহকর্মে নিযুক্ত থাকিয়া জীবিত আছি, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের বিদ্যাশিক্ষা ও শারীরিক বল বৃদ্ধি করা উচিত।’মাতা পিতা এইরূপ অন্যান্য শিক্ষাও দান করিবে। এই কারণে ‘মাতৃমান-পিতৃমাশব্দ পূর্বোক্ত বাক্যে গৃহীত হইয়াছে। অর্থাৎ মাতা জন্ম হইতে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত এবং পিতা ষষ্ঠ হইতে অষ্টম বর্ষ পর্যন্ত সন্তানকে শিক্ষা দান করিবে, এবং নবম বর্ষের প্রারম্ভে দ্বিজ নিজ সন্তানের উপনয়ন দিয়া আচাৰ্য কুলে অর্থাৎ যে স্থানে পূর্ণ বিদ্বান পুরুষ এবং পূর্ণ বিদুষী স্ত্রী, শিক্ষা ও বিদ্যাদান করেন সেখানে প্রেরণ করিবে।শূদ্রাদিবর্গের সন্তানদিগকে উপনয়ন না দিয়া বিদ্যাভ্যাসের জন্য গুরুকুলে প্রেরণ করিবে।
যাহারা লেখাপড়ায় সন্তানদিগকে কখনও লালন করে না, বরং তাড়নাই করিয়া থাকে, তাহাদেরই সন্তানগণ বিদ্বান, সত্য এবং সুশিক্ষিত হয়। এ বিষয়ে ব্যাকারণ মহাভাষ্যের প্রমাণ আছে?
সামৃতৈঃ পাণিভির্ঘন্তি গুরবোন বিষোক্ষিতৈঃ ॥ লালনাশ্রয়িণে দোষাস্তাডনাশ্রয়িণে গুণাঃ ॥ (মহাভাষ্য ৮১ ৮।)
অর্থ –যে মাতা, পিতা ও আচাৰ্য্য সন্তান ও শিষ্যদিগকে তাড়না করেন, মনে করিতে হইবে যে তাঁহারা স্বীয় সন্তান ও শিষ্যদিগকে স্বহস্তে অমৃত পান করাইতেছেন এবং যাহারা সন্তান বা শিষ্যদিগকে লালন করেন (আদর দিয়া মাথায় তোলেন) তাহারা স্বীয় সন্তান ও শিষ্যদিগকে বিষ পান করাইয়া নষ্ট-ভ্রষ্ট করেন। কারণ লালনের দ্বারা সন্তান ও শিষ্যগণ দোষযুক্ত এবং তাড়নার দ্বারা গুণবান হয়। আর সন্তান এবং শিষ্যদিগের সর্বদা তাড়নে প্রসন্ন এবং লালনে অপ্রসন্ন থাকা। উচিৎ। কিন্তু মাতা, পিতা ও শিক্ষকগণ ঈর্ষা ও দ্বেষ বশতঃ তাড়না করিবেন না, কিন্তু বাহিরে ভয়। দেখাইবেন আর অন্তরে কৃপাদৃষ্টি রাখিবেন।
অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় চৌর্য্য, ব্যভিচার, আলস্য, প্রমাদ, মাদকদ্রব্য সেবন, মিথ্যা ভাষণ, হিংসা, ক্রুরতা, ঈর্ষা, দ্বেষ এবং মোহ প্রভৃতি দোষ বর্জন ও সত্যাচার গ্রহণ সম্বন্ধে শিক্ষা দান করিবে। কারণ যে ব্যক্তি কাহারও সম্মুখে একবার চুরি, লাম্পট্য, মিতাভাষণাদি করে, সেই ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত তাহার নিকট প্রতিষ্ঠা লাভ করে না। যাহারা মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করে তাহাদের যেইরূপ অনিষ্ট হয়, অন্য কাহারও সেইরূপ হয় না। অতএব যাহার নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিবে, তাহার নিকট সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিবে। অর্থাৎ যদি কেহ কাহাকেও বলিল “আমি অমুক সময়ে তোমার সহিত দেখা করিব, অথবা তুমি আমার সহিত দেখা করিও অথবা আমি অমুক বস্তু অমুক সময়ে তোমাকে দিব” –সেই প্রতিজ্ঞা সেইরূপ পূর্ণ করিবে, নতুবা কেহই বিশ্বাস করিবে না। এই নিমিত্ত সর্বদা সকলের সত্যভাষী ও সত্য প্রতিজ্ঞ হওয়া উচিত।
কাহারও অভিমান করা উচিত নহে। কেননা ‘অভিমানঃ শ্রিয়ং হন্তি’ ইহা বিদুরনীতি বচন ॥ অভিমান অর্থাৎ অহংকার সমস্ত শোভা ও লক্ষ্মীর বিনাশক অতএব অভিমান করা উচিত নহে ॥ ছলনা, কপটতা বা কৃতঘ্নতা দ্বারা নিজেরই হৃদয়ে দুঃখ হয়, এমতাবস্থায় অন্যের সম্বন্ধে কী বলা যাইতে পারে? ভিতরে একরূপ এবং বাহিরে অন্যরূপ বিচার রাখিয়া অপরকে মোহিত করা এবং অপরের চিন্তা না করিয়া নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করাকে ছলনা’ ও কপটতা’ বলে। কাহারও কৃত। উপকার স্বীকার না করাকে কৃতঘ্নতা’ বলে। ক্রোধাদি দোষ এবং কটুবাক্য পরিত্যাগ করিয়া শান্ত ও মধুর বাক্যই বলিবে। অযথা বহু বাক্য ব্যয় করিবে না। যতটুকু বলা প্রয়োজন — তদপেক্ষা কম বা অধিক বলিবে না। বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করিবে। তাহাদের সম্মুখ উঠিয়া গিয়া তাহাদিগকে বসাইবে এবং প্রথমে তাঁহাদিগকে নমস্তে’ করিবে। তাহাদের সম্মুখে উত্তম আসনে বসিবে না। সভায় নিজের যোগ্যতা অনুসারে এরূপ আসনে বসিবে, যাহাতে অন্য কেহ তোমাকে উঠাইয়া না দেয়। কাহারও সহিত বিরোধ করিবে না। প্রসন্ন হইয়া গুণ ও দোষ বর্জন করিবে। কায়মনোবাক্যে ধনাদি অন্যান্য উৎকৃষ্ট সামগ্রী দ্বারা প্রীতি সহকারে মাতা, পিতা এবং আচার্য্যের সেবা করিবে।
যান্যস্মাকসুচরিতানি তানি ত্বয়োপাস্যানি নো ইতরাণি। তৈত্তি ১।১১।
ইহার অভিপ্রায় এই যে, মাতা, পিতা ও আচাৰ্য্য নিজ সন্তান ও শিষ্য দিগকে সর্বদা সত্য উপদেশ দিবেন এবং ইহাও বলিবেন–আমাদের যাহা যাহা ধর্ম–সঙ্গত কর্ম, সেগুলি গ্রহণ। করিবে এবং যাহা যাহা দুষ্ট কর্ম সেগুলি পরিত্যাগ করিবে। যাহা সত্য বলিয়া জানিবে তাহা প্রকাশ ও প্রচার করিবে, কোন পাষণ্ড ও দুষ্টাচারী মনুষ্যকে বিশ্বাস করিবে না। যে সকল সৎ কর্মের জন্য মাতা, পিতা ও আচাৰ্য্য আজ্ঞা করিবেন সেই সমস্ত যথাযথরূপে পালন করিবে। যদি মাতা, পিতা, ধর্ম, বিদ্যা ও সদাচর বিষয়ক শ্লোক, ‘নিঘন্টু’, ‘নিরুক্ত’, অষ্টাধ্যায়ী’ অথবা সূত্র বা । বেদমন্ত্র কণ্ঠস্থ করাইয়া থাকেন, সেই সমস্ত শ্লোকাদির অর্থ বিদ্যার্থীদিগকে পুনরায় বিদিত করাইবেন। এই গ্রন্থের প্রথম সমুল্লাসে পরমেশ্বরের যেইরূপ ব্যাখ্যা করা হইয়াছে সেইরূপ স্বীকার করিয়া তাহার উপাসনা করিবে। যাহাতে আরোগ্য, বিদ্যা এবং বল লাভ হয়, সেইরূপ ভোজনাচ্ছাদন। গ্রহণ এবং ব্যবহার করিবে ও করাইবে। অর্থাৎ ক্ষুধার পরিমাণ অপেক্ষা কিঞ্চিৎ অল্প ভোজন করিবে, মদ্য, মাংস ইত্যাদি সেবনে বিরত থাকিবে। অজ্ঞাত ও গভীর জলে প্রবেশ করিবে না। কারণ জলজন্তু বা অন্য কোনও পদার্থ দ্বারা দুঃখ হইতে পারে বা সাঁতার না জানা থাকিলে ডুবিয়া যাওয়াও সম্ভব। “নাবিজ্ঞাতে জলাশয়ে” ইহা মনুর বচন। অবিজ্ঞাত জলাশয়ে অবতরণ করিয়া স্নানাদি করিবে না।
দৃষ্টিপূতংন্যসেৎপাদং, বস্ত্রপূতং জলং পিবেৎ সত্যপূতাং বদেদ্বাচং, মনঃপূতং সমাচরেৎ ॥ মনু (৪/১২৯)
অর্থ– অধোদিক দৃষ্টিপাত করিয়া উচ্চ নীচ স্থান দেখিয়া চলিবে। বস্ত্ৰ ছাঁকিয়া জল পান। করিবে। সত্য দ্বারা পবিত্র বাক্য বলিবে। মনন ও বিচার বিবেচনা করিয়া আচরণ করিবে।
মাতা শক্রঃ পিতা বৈরী য়েন বালো ন পাঠিত :। ন শোভতে সভামধ্যে হংসমধ্যে বকোয়থা ॥ মাতাপিতা যাঁহারা নিজ সন্তানদিগকে বিদ্যা লাভ করান না, তাহারা সন্তানদিগের পূর্ণ শত্রু। তাঁহাদের বিদ্যাহীন সন্তানগণ বিদ্বাদের সভায় হংস মধ্যে বকের ন্যায় তিরস্কৃত হয় ও কুৎসিৎ দেখায়।
কায়মনোবাক্যে ও অর্থ ব্যয় করিয়া সন্তানদিগকে বিদ্বান্ ও ধাৰ্ম্মিক, সত্য ও সুশিক্ষিত করাই মাতাপিতার কর্তব্য। ইহা মাতাপিতার পরম ধৰ্ম্ম ও কীৰ্ত্তির কাৰ্য। বালক-বালিকার শিক্ষা বিষয়ে এস্থলে কিঞ্চিৎ লিখিত হইল। যাঁহারা বুদ্ধিমান, তাহারা ইহা হইতেই অধিক বুঝিয়া লইবেন।
ইতি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতীস্বামীকৃতে সত্যার্থ প্রকাশে
সুভাষাবিভূষিতে বালশিক্ষা বিষয়ে
দ্বিতীয়ঃ সমুল্লাসঃ সম্পূর্ণ ॥২॥