০২. লুনাকে সামলে রাখার দায়িত্ব

লুনাকে সামলে রাখার দায়িত্ব পড়েছে ফতের ওপর।

প্রতি মাসে এক-দুদিন ফতেকে এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ প্রতি মাসে এই এক-দুদিন তসলিমা খানম যাত্রাবাড়ীতে তার বোনকে দেখতে যান। বোনের ক্যানসার হয়েছে। বাঁচার কোনো আশা ডাক্তাররা দিচ্ছেন না, আবার দ্রুত মরে গিয়ে অন্যদের ঝামেলাও কমাচ্ছে না।

তসলিমার অনুপস্থিতিতে ফতে লুনার দিকে লক্ষ রাখে। তাকে বলা আছে একটা সেকেন্ডের জন্যেও যেন মেয়েকে চোখের আড়াল না করে। ফতে তা করে না। সে লুনার আশপাশেই থাকে। লুনা এমনই লক্ষ্মীমেয়ে যে কোনো কান্নাকাটি করে না। খাবার সময় হলে শান্ত হয়ে ভাত খায়। সে শুধু রাতে কাঁদে। মেয়েটির আঁধারভীতি আছে।

লুনা বারান্দায় বসে আপনমনে খেলছে। হাতের মুঠি বন্ধ করছে, খুলছে। খুব ক্লান্তিকর খেলা কিন্তু ফতের দেখতে ভালো লাগছে।

ফতে ডাকল, লুনা। এই লুনা।

লুনা ফতের দিকে তাকিয়ে হাসল। আবার খেলা শুরু করল। ফতে বলল, লুনা কী কর?

লুনা তার হাতের মুঠি থেকে চোখ না তুলেই বলল, খেলি।

‘এই খেলার নাম কী?

‘জানি না।’

‘মা কোথায় গেছে লুনা?’

‘জানি না।’

‘মা কোথায় গেছে আমি জানি। সে প্রতি মাসে দুই-তিন দিন কোথায় যায় সেটা আমি জানি। বোনকে দেখতে যাবার নাম করে যায়। বোনকে দেখতে ঠিকই যায়। বোনের কাছে দশ-পনেরো মিনিট, খুব বেশি হলে আধঘণ্টা থাকে। বাকি সময়টা কোথায় থাকে আমি জানি।

লুনা ফতের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মিষ্টি করে হাসল।

ফতে বলল, তোমার মা কোথায় যায় আমি জানি। কীভাবে জানি বলব?

লুনা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। ফতে হতাশ মুখে বলল, কীভাবে জানি বললে তুমি বুঝবে না। এই জন্যে বলব না। অবিশ্যি বুঝতে পারলেও বলতাম না।

ফতে লুনার মতো খেলা নিজেও খেলতে শুরু করল। লুনা তাতে খুব মজা পাচ্ছে। খিলখিল করে হাসছে।

‘আইসক্রিম খাবে?’

লুনা খুশি হয়ে মাথা নাড়ল।

ফতে বলল, চল আইসক্রিম খেয়ে আসি।

লুনা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। তার চোখ চকচক করছে। এর আগেও সে ফতের সঙ্গেই কয়েকবার চিড়িয়াখানায় গিয়েছে। লুনাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এক পাও যাবার অনুমতি নেই। তারপরেও ফতে লুনাকে নিয়ে পাঁচ থেকে ছ’বার চিড়িয়াখানায় গিয়েছে। কেউ কিছু ধরতে পার নি। কাজের মেয়েটা কিছু বলে দেয় নি, আবার দারোয়ানও নালিশ করে নি। ফতে নিশ্চিত আজো কেউ কিছু ধরতে পারবে না। চিড়িয়াখানা যাওয়া, চিড়িয়াখানা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টার মামলা।

ফতে লুনাকে শুধু যে চিড়িয়াখানা দেখাল তা-না—এয়ারপোর্ট নিয়ে গিয়ে প্লেন ওঠানামা দেখাল। এটা ফতের নিজের খুব পছন্দ। বিরাট একটা জিনিস কেমন করে শাঁ করে আকাশে উড়ে যাচ্ছে।

‘লুনা কেমন লাগল?’

লুনা হাসল, কিছু বলল না।

‘শুধু হাসলে হবে না, মুখে বল ভালো। বল, ভালো।’

‘ভালো।’

‘এখন বল আমি লোকটা কেমন?’

লুনা আবার হাসল।

‘আরেকটা আইসক্রিম খাবে?’

‘হুঁ।’

ফতে দুটা আইসক্রিম কিনল। একটা তার জন্যে একটা লুনার জন্যে। লুনা নিজে আইসক্রিম খেলে যত খুশি হয় বড় কাউকে আইসক্রিম খেতে দেখলে তার চেয়েও বেশি খুশি হয়। লুনাকে খুশি রাখা ফতের প্রয়োজন। খুশি রাখা না পোষ মানিয়ে ফেলা। এই কাজটা মনে হয় খুব সহজ—আসলে খুব কঠিন। বড়দের পোষ মানানো সহজ, শিশুদের পোষ মানানো কঠিন। ভয়ঙ্কর কঠিন। কারণ শিশুরা অনেক কিছু বুঝতে পারে—বড়রা পারে না।

লুনার ব্যাপারটা ভিন্ন। সে শিশু হলেও জড়বুদ্ধির কারণে অনেকটাই পশুর মতো। খাবার দিয়ে, মিথ্যা মমতা দিয়ে পশুদের পোষ মানানো যায়। যে কসাই গরু জবেহ করবে সে যদি গরুটার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় গরু তাতে আনন্দ পায়। চোখ বন্ধ করে লেজ নেড়ে আদর নেয়। আদরের সত্যি মিথ্যা ধরতে পারে না।

‘লুনা আরেকটা আইসক্রিম খাবে?’

লুনা আবারো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। আবার তার চোখ চকচক করে উঠল।

ফতে আবারো আইসক্রিম কিনল। এই মেয়েটা পোষ মেনেই আছে। পোষ মানানোটা আরো বাড়াতে হবে। মেয়েটাকে নিয়ে তার কিছু পরিকল্পনা আছে।

‘লুনা বাসায় যাবে?’

‘না।’

‘চল আজ বাসায় চলে যাই। খুব তাড়াতাড়ি আবার বেড়াতে আসব। তখন আর বাসায় ফিরব না। আচ্ছা?’

লুনা মনের আনন্দে ঘাড় কাত করল।

ফতে যে তিন ঘণ্টা লুনাকে নিয়ে ঘুরে এসেছে ব্যাপারটা প্রকাশিত হল না। তসলিমা বেগমের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে ফতে নিজের কাজে বের হল। দোকানটা ঠিক করতে হবে। সাইনবোর্ড বানাতে হবে। হঠাৎ হঠাৎ দোকানে থাকতে হতে পারে। তার জন্যে বিছানা-বালিশ লাগবে। মশারি লাগবে। তার নিজের জন্যেও বাসা ভাড়া করা দরকার।

বুড়িগঙ্গায় বাড়ি ভাড়ার মতো নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকার ভেতর ঘুমানোর ব্যবস্থা। নৌকার ভেতরই রান্নাঘর, বাথরুম। দু মাস, তিন মাসের জন্যে একটা নৌকা ভাড়া করে ফেলা যায়। স্থায়ী বাড়ির চেয়ে নৌকা বাড়ি অনেক ভালো। যেখানে সেখানে নৌকা নিয়ে যাওয়া যায়। কয়েকটা নৌকাওয়ালার সঙ্গে ফতের আলাপ হয়েছে। পছন্দসই নৌকা পাচ্ছে না। তাড়াহুড়া করে একটা নৌকা নিয়ে নিলেই হবে না। কোনো কিছু নিয়েই তাড়াহুড়া করা ঠিক না। আল্লাহপাক কোরান শরিফেও বলেছেন—’হে মানব সন্তান, তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া।’ ফতে তাড়াহুড়ায় বিশ্বাস করে না।

.

রাত এগারোটা বাজে। ফতে বসে আছে তাদের বাসার পেছনে মিউনিসিপ্যালিটির ফাঁকা জায়গাটার ভেতরে কংক্রিটের এক চেয়ারে। জায়গাটার নাম—শিশু বিনোদন পার্ক। এই নামে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জায়গার উদ্বোধন করেছেন। শ্বেতপাথরের একট ফলকে এই বিশেষ ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে। উদ্বোধনের দুদিন আগে তড়িঘড়ি করে কয়েকটা লম্বা চেয়ার বসানো হয়েছে। একটা স্লাইড এবং দুটা সি-সো। একটা দোলনা আনা হয়েছে, বসানো হয় নি। যেহেতু উদ্বোধন হয়ে গেছে এখন আর বসানোর তাড়া নেই। জিনিসগুলি রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। দোলনাটা অবিশ্যি কিছু কাজে লাগছে। দোলনার খুঁটিতে দড়ি লাগিয়ে পলিথিন ঝুলিয়ে গ্রাম থেকে আসা একটা পরিবার সুন্দর সংসার পেতে ফেলেছে।

ফতে এই পরিবারটিকে শুরু থেকেই লক্ষ করছে। বাবা-মা, তেরো-চৌদ্দ বছরের একটা বড় বড় চোখের রোগা মেয়ে। এরা দিশাহারা ভঙ্গিতে একদিন পার্কে ঢুকল, ফতে তখন বেঞ্চিতে বসে বাদাম খাচ্ছে। লক্ষ্য রাখছে পরিবারটি কী করে। স্বামী-স্ত্রী নিচুগলায় কিছুক্ষণ কথা বলল। লোকটি এগিয়ে এল ফতের দিকে। ভিক্ষা চাইতে আসছে না এটা বোঝা যাচ্ছে। গ্রাম থেকে যারা আসে তারা এসেই ভিক্ষা করা শুরু করতে পারে না। সময় লাগে।

‘ভাইসাব এইটা কি সরকারি জায়গা?’

লোকটা খুবই বিনীত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করছে। তার স্ত্রী ও কন্যা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। ফতে বলল, হ্যাঁ, এটা মিউনিসিপালটির জায়গা।

‘সরকারি জাগাত আমরা যদি থাকি কোনো অসুবিধা আছে?’

‘কোনো অসুবিধা নাই—থাকেন।’

‘আমরা এই পরথম ঢাকা শহরে আসছি। কাজের ধান্দায় আসছি।’

‘ভালো করেছেন।’

‘এই জায়গাটা কি নিরাপদ?’

‘আপনার এবং আপনার স্ত্রীর জন্যে নিরাপদ। আপনাদের মেয়ের জন্যে নিরাপদ না। একদিন দেখবেন মেয়ে নাই।

লোকটা ভীত মুখে তাকিয়ে রইল। ফতে বলল, মেয়ের নাম কী?

‘মেয়ের নাম দিলজান।

‘দিলজানকে বাকির খাতায় ধরে সংসার পাতেন কোনো সমস্যা নাই। আপনার দেখাদেখি আরো অনেকে উঠে আসবে। সুন্দর একটা বস্তি তৈরি হয়ে যাবে। আপনাদের সাহায্যের জন্যে এনজিওরা আসবে। সুন্দর সুন্দর স্মার্ট মেয়েরা ভিটামিন এ ট্যাবলেট দিয়ে যাবে। বয়স্করা স্কুলে ভর্তি হবে। নানান রকম পরীক্ষা হবে।’

‘কী বলতেছেন কিছু বুঝতাছি না জনাব।’

‘বোঝবার কিছু নাই। সংসার পাততে চান—পাতেন। নেন সিগারেট নেন।’

লোকটা একবার সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার তার কন্যার দিকে তাকাচ্ছে। অপরিচিত মানুষের থেকে সিগারেট নেওয়া ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছে না আবার আস্ত সিগারেটের লোভও ছাড়তে পারছে না। শেষ পর্যন্ত লোভ জয়ী হল—সে সিগারেট নিয়ে চলে গেল।

ফতে ফজলু মিয়ার পরিবারের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে প্রায় মুগ্ধ হয়ে গেল। তারা অতিদ্রুত সংসার সাজিয়ে ফেলল। প্রথম দিনেই লোকটির স্ত্রী চুলা বানিয়ে ফেলল—চুলার আশপাশের কিছু অংশ লেপে ফেলল। সেখানে একটা মোড়া এবং কাঠের গুঁড়ি চলে এল। এক রাতে দেখা গেল চুলার উপরে কাপড় শুকানোর মতো করে লম্বা করে তার টানানো হয়েছে। সেই তারে মাছ শুকানো হচ্ছে। লোকটিও চালাক—ঠেলা চালানোর কাজ যোগাড় করে ফেলল। দিনের বেলা ঠেলা চালায়, রাতে এক চায়ের দোকানের এসিসটেন্ট। মেয়েটিকে নিয়ে এখনো তাদের কোনো সমস্যা হয় নি। তবে তারা এখন একা না, আরো চার-পাঁচটি পরিবার চলে এসেছে। এখন নিশ্চয়ই তাদের খানিকটা জোর হয়েছে।

ফজলু রান্না চড়িয়েছে। তার কাছেই দিলজান। বাবার সঙ্গে নিচুগলায় গল্প করছে, মাঝে মাঝে চুলার খড়ি নেড়েচেড়ে দিচ্ছে। রান্না আজ অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে ফজলুর স্ত্রী অসুস্থ। ফতে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফজলুর দিকে এগিয়ে গেল, আগুনের পাশে বসে সিগারেটটা শেষ করলে ভালো লাগবে।

‘ফজলু কেমন আছ?’

ফতে নিঃশব্দে এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। ফজলু বুঝতে পারে নি বলে ভয়ঙ্কর চমকে গেল। ফতেকে দেখে সে নিশ্চিন্ত হতে পারল না। চোখে-মুখে ভয়ের ভাবটা থেকে গেল। শুকনো গলায় বলল, জে ভালো আছি। আপনের সইল ভালো।’ এই বলেই সে ফতে যাতে দেখতে না পায় এমন ভঙ্গিতে মেয়েকে চোখের ইশারা করল—যার অর্থ তুই এখানে থাকিস না। ঘরে ঢুকে যা। মেয়ে বাবার আদেশ পালন করল। ফতে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখল। তার চেহারায় কোনো ভাবান্তর হল না। দিলজান যে মোড়ায় বসে ছিল ফতে সেই মোড়াতে বসতে বসতে বলল—কী রান্না হচ্ছে?

ফজলু বিনীত গলায় বলল, গরিবের খাওয়া খাদ্য।

গরিবের খাওয়া খাদ্যটা কী? আমার তো মনে হচ্ছে মাংস রান্না হচ্ছে। ভালো ঘ্রাণ বের হচ্ছে।

‘দিলজান মাংস খাইতে চায়। কয়েক দিন ধইরা বলতেছে। দুই দিন পরে বিবাহ কইরা শ্বশুরবাড়িতে যাইব। আমার কাছে যে কয়দিন আছে শখ মিটিয়ে দেই।’

‘বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি?

‘জে না, তবে এইটা নিয়া চিন্তা করি না। জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ আল্লাপাকের ঠিক করা। উনি যেখানে ঠিক করেছেন সেইখানেই হবে।’

‘রোজগারপাতি কেমন হচ্ছে?’

‘খারাপ না। আল্লা মেহেরবান—রোজই কাজ পাই। গতর খাটনি কাম—তয় গাছপালার কাম পাইলে ভালো হইত।’

‘গাছপালার কামটা কী?’

ফজলু উৎসাহ নিয়ে ঘুরে বসল। আগ্রহের সঙ্গে বলল—ঢাকা শহরে দেখছি রাস্তায় রাস্তায় গাছপালা বেচে। ফুলের গাছ, ফলের গাছ। গাছ বেচতে পারলে ভালো হইত। গাছপালা আমার হাতে খুব হয়।

ফতের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। সে সিগারেটের টুকরাটা দূরে ফেলে আরেকটা ধরাতে ধরাতে বলল—নার্সারির কাজ খারাপ না, কোনো ফুটপাত দখল করে বসে পড়লেই হয়। তবে ব্যবসাটা কীভাবে হয় জানতে হবে। গাছপালা যোগাড় করতে হবে। আমি এক নার্সারির মালিককে চিনি তার সাথে আলাপ করে দেখতে পারি।

ফজলুর চোখ চকচক করছে। মনে হচ্ছে সে চোখের সামনে দেখছে অসংখ্য গাছপালা সাজিয়ে সে বসে আছে। শহরের লোকজন বড় বড় গাড়ি নিয়ে আসছে। চকচকে নোট বের করে গাছ নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফতে বলল—সিগারেট খাবে? ফজলু আনন্দের সঙ্গে বলল, দেন একটা টান দেই।

ফতে সিগারেট দিল। ফজলু চুলা থেকে জ্বলন্ত লাকড়ি বের করে সেই আগুনে সিগারেট ধরিয়ে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলে বলল—গাছের ব্যবসার খোঁজখবর নিয়েন। আমি কলমের কামও খুব ভালো জানি।

তাই নাকি?

‘জি। আমরার গেরামের যত তিতকুট বরই গাছ আছে—কলম দিয়া সব বরই মিষ্টি বানায়ে দিছি। আমরার গেরামে আমারে কী ডাকত জানেন ভাইজান? আমারে ডাকত গাছ ডাকতর।’

‘তোমার গ্রামের নাম কী?

‘শুভপুর। বড়ই সৌন্দর্য জায়গা। কপালে নাই বইল্যা থাকতে পারলাম না।’

ফতে উঠে পড়ল। রাত বারোটার আগে তাকে বাড়িতে পৌঁছতে হবে। রাত বারোটার সময় মূল গেট বন্ধ হয়ে যায়। দারোয়ান গেটে তালা লাগিয়ে গেটের পাশে বেঞ্চিতে বসে ঘুমাবার আয়োজন করে। তার ওপর নির্দেশ আছে বারোটার সময় গেট বন্ধ হয়ে যাবে। তখন গেট খুলতে হলে মালিকের অনুমতি লাগবে। গেট খোলার সময় তিনি উপস্থিত থাকবেন।

ফতের বেলায় হয়তো এটা হবে না। দারোয়ানের সঙ্গে ভালোই খাতির আছে, তারপরেও রিস্ক নেবার দরকার কী? মামা যদি জেগে থাকে গেট খোলার শব্দে অবশ্যই বারান্দায় এসে দাঁড়াবে। চিলের মতো গলায় বলবে—কে আসল? ও আচ্ছা, বাংলার ছোট লাট সাহেব।

ফতে থাকে তার মামার বাড়ির গ্যারেজে।

মামা গাড়ি কেনেন নি বলে তাঁর গ্যারেজ খালি। তিনি কখনো গাড়ি কিনবেন এরকম মনে হয় না। দরিদ্র লোকজন যখন টাকাপয়সা করে তখন জমি কেনে, বাড়ি বানায়। কেউ কেউ এক পর্যায়ে গাড়ি কেনার মতো সাহস সঞ্চয় করে ফেলে আর কেউ কোনোদিনই তা পারে না। বদরুল সাহেব দ্বিতীয় দলের। গাড়ি না কিনলেও তিনি একটা বেবিট্যাক্সি কিনেছেন। ‘প্রাইভেট’ সাইনবোর্ড লাগানো বেবিট্যাক্সিতে করে তিনি ঘুরে বেড়ান, তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন।

গ্যারেজে দুটো চৌকি আছে। একটায় ফতে ঘুমায় পাশেরটায় বেবিট্যাক্সির ড্রাইভার বাদল। তবে বেশিরভাগ সময় বাদল তার বাড়িতে চলে যায়। হঠাৎ হঠাৎ বেবিট্যাক্সি চালানোর প্রয়োজন পড়লে ফতে চালায়। তার লাইসেন্স নেই কিন্তু বেবিট্যাক্সি সে ভালোই চালাতে পারে। যদিও বদরুল সাহেব তার ভাগ্নের বেবিট্যাক্সি চালানোর কোনো ভরসা পান না। সারাক্ষণ টেনশনে থাকেন। সারাক্ষণ উপদেশ দিতে থাকেন—এই গাধা আস্তে চালা। এই গাধা তোর ওভারটেক করার দরকার কী? তোর কি হাগা ধরেছে? হর্ন দেস না কেন? হর্ন না দিলে রিকশাওয়ালা বুঝবে কী করে তার পিছনে বেবিট্যাক্সি? রিকশাওয়ালার মাথার পিছনে কি চক্ষু আছে?

.

বাসায় পৌঁছেই ফতে দেখে উঠানে জটলা। তার মামা ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটাহাঁটি করছেন। ফতেকে দেখেই তিনি ধমক দিয়ে উঠলেন—রাত বারোটা বাজে তুই ছিলি কোথায়? মদ ধরেছিস নাকি? মদের আখড়ায় ছিলি? গা দিয়ে তো মদের গন্ধ বের হচ্ছে। মাল টেনে এসেছিস?

ফতে জবাব দিল না। উত্তপ্ত মুহূর্তে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরে নীরব থাকতে হয়। মামা অতি উত্তপ্ত।

‘বেবিট্যাক্সি বের কর। তোর মামিকে হাসপাতালে নিতে হবে। হঠাৎ তার পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথায় হাত-পা নীল হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম না কী ব্যাপার।’

ফতে বলল, কোন হাসপাতালে যাবেন মামা?

‘আরে গাধা গাড়ি বের কর আগে। বেহুদা কথা বলে সময় নষ্ট।’

ফতে বলল, ব্যথা থাকবে না মামা। কমে যাবে।

বদরুল ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, তুই কি গণক এসেছিস? গনা গুনে বলে দিলি ব্যথা কমে যাবে। কথা বলে সময় নষ্ট। গাড়ি স্টার্ট দে।

ফতে গাড়ি স্টার্ট দিল। বদরুল তাঁর স্ত্রীকে হাত ধরে নিচে নিয়ে এলেন। তারা গাড়িতে ওঠার পরপরই ফতের মামি বলল, ব্যথা কমে গেছে।

বদরুল বললেন—কতটুকু কমেছে?

‘অনেক কম। বলতে গেলে ব্যথা নাই।’

‘একটু আগে কাটা মুরগির মতো ছটফট করছিলে এখন বলছ ব্যথা নাই।’

‘হাসপাতালে যাব না।’

‘আবার যদি শুরু হয়?’

‘শুরু হলে তখন যাব।’

বদরুল স্ত্রীকে হাত ধরে নামালেন। ফতের দিকে তাকিয়ে বললেন—তুই ঘুমাবি না। তোর মরণ ঘুম। একবার ঘুমালে কার সাধ্য তোকে ডেকে তোলে। তুই জেগে বসে থাকবি। তোর মামির ব্যথা আবার উঠবে বলে আমার ধারণা।

ফতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। এবং ফজরের আজান না পড়া পর্যন্ত জেগে বসে রইল। অনেকের রাত জাগতে কষ্ট হয় ফতের কখনো হয় না। বরং রাত জাগতে তার ভালো লাগে। রাতে নানান চিন্তা করতে তার ভালো লাগে। এই চিন্তা দিনে কখনো করতে ভালো লাগে না। দিনে অবিশ্যি চিন্তাগুলি মাথায় আসেও না। চিন্তাগুলি রাতের। রাত যত গভীর হয় চিন্তাগুলিও গভীর হয়।

ফতের আশপাশের সব মানুষকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করে। কাকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়—এই চিন্তা। যেমন মামা বদরুল আলম। তাঁকে নানানভাবে শাস্তি দেওয়া যায়—নরম শাস্তি, নরমের চেয়ে একটু বেশি—কঠিন শাস্তি। তবে মামার মানসিক অবস্থা এইরকম যে—যে কোনো শাস্তিই তার জন্যে কঠিন শাস্তি। ফতে একেক সময় একেক ধরনের শাস্তির কথা ভাবে। গতরাতে ভেবেছে সে তার মামিকে নিয়ে কিছু আজেবাজে কথা লিখে বেনামে মামার কাছে একটা চিঠি লিখবে। এই শাস্তিটা হবে খুবই কঠিন। কারণ তার মামার অসংখ্য দোষ থাকলেও তিনি তাঁর স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালবাসেন। ভালবাসেন বলেই সন্দেহের চোখে দেখেন। স্ত্রীকে একা কোথাও যেতে দেবেন না। সব সময় নিজে সঙ্গে যাবেন। তাঁর স্ত্রীকে কেউ টেলিফেন করলে তিনি তৎক্ষণাৎ একতলায় চলে যাবেন। অতি সাবধানে একতলার টেলিফোন রিসিভার কানে নিয়ে শুনবেন কে টেলিফোন করেছে। একতলার টেলিফোন এবং দোতলার টেলিফোন প্যারালাল কানেকশান আছে। তাঁর স্ত্রীর নামে যেসব চিঠি আসে তার প্রত্যেকটা তিনি আগে পড়ে তারপর স্ত্রীর হাতে দেন। এই যখন অবস্থা তখন যদি তার কাছে একটা চিঠি আসে যার বিষয়বস্তু ভয়াবহ তখন কী হবে? চিঠিটা এরকম হতে পারে—

জনাব বদরুল আলম সাহেব,

সালাম, পর সমাচার, আমি আপনাকে কিছু গোপন বিষয় জানাইবার জন্য এই পত্র লিখিতেছি। বিষয়টি অত্যধিক গোপন বলিয়া আমি আমার নিজের পরিচয়ও গোপন রাখিলাম। এই ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন—ইহাই আমার কামনা। যাহা হউক এখন মূল বিষয়ে আসি আপনার স্ত্রী তসলিমা খানম বিষয়ে কিছু কথা। তসলিমা খানম যখন বিদ্যাসুন্দরী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী তখন জনৈক তরুণের সঙ্গে তাহার অতীব ঘনিষ্ঠতা হয়। যে ঘনিষ্ঠতার কথা ভাষায় বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। উক্ত তরুণ দুষ্ট প্রকৃতির ছিল, সে তসলিমা খানমের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠতার কিছু ছবি গোপনে তাহার আরেক দুষ্ট বন্ধুর সহায়তায় তোলে। ছবির সর্বমোট সংখ্যা একুশ। এই একুশটি ছবির মধ্যে পাঁচটি ছবি এতই কুরুচিপূর্ণ যে, যে কোনো মানুষ শিহরিত হইবে। জনাব আপনাকে উত্তেজিত এবং ছবির কারণে ভীত হইতে নিষেধ করিতেছে। কারণ আমি সমুদয় ছবির নেগেটিভসহ সংগ্রহ করিয়া নষ্ট করিয়া দিয়াছি। কাজেই উক্ত ছবি দেখাইয়া কেহই অর্থ সংগ্রহের জন্যে আপনাকে চাপ দিতে পারিবে না। আপনাকে এই তথ্য জানাইয়া রাখিলাম। এখন কেহ যদি ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ছবির কথা বলিয়া আপনার নিকট হইতে অর্থ গ্রহণের চেষ্টা করে আপনি ইহাকে মোটেই আমল দিবেন না।

হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগিতেছে আমি এই কাজটি কেন করিলাম? আমি কাজটি করিলাম কারণ আমার কাছে মনে হইয়াছে ইহা একটি সৎকর্ম। ইহকালে আমি সৎকর্মের কোনো প্রতিদান আশা করি না। কিন্তু পরকালে আমি এই সৎকর্মের প্রতিদান অবশ্যই পাইব।

এখন জনাব আপনার নিকট আমার একটি আবদার—আমি আপনার মঙ্গলের জন্যে একটি কঠিন কর্ম করিয়াছি। আমি আশা করি তাহার প্রতিদানে আপনি আমার একটা আবদার রক্ষা করিবেন। আবদারটি হইল—এই বিষয়ে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করিবেন না। উঠতি বয়সে তিনি একটি ভুল করিয়াছিলেন-সেই ভুল ক্ষমা করিবেন। আল্লাহপাক ক্ষমা পছন্দ করেন।

আরজ ইতি,
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী জনৈক নাদান।

এই এক চিঠিতেই চৌদ্দটা বেজে যাবার কথা। শাস্তির শুরু। তারপর আস্তে আস্তে শাস্তির ডোজ বাড়াতে হবে।

ফতে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। মিথ্যা চিঠি মানুষ বিশ্বাস করে না। মিথ্যা কখনো টেকে না। খুব বেশি হলে সাত দিন। মিথ্যার আয়ু অল্প। শাস্তি দিতে হলে সত্যি দিয়ে শাস্তি দিতে হবে। সেই ধরনের ‘সত্য’ কিছু বিষয় ফতে জানে। অন্যভাবে জানে। এমনভাবে জানে যার সম্পর্কে ধারণা করা মানুষের জন্যে কঠিন। বেশ কঠিন। ফতে ক্ষমতাধর মানুষ। তার ক্ষমতা অন্য রকম ক্ষমতা

ফতে সিগারেট ধরাল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাও বাড়ছে। গলা থেকে মাফলার খুলে সে কান ঢাকল। মিসির আলি সাহেবের ঘরে বাতি জ্বলছে। বুড়ো এখনো জেগে গুটুর গুটুর করে বই পড়ছে। একটা মানুষ দিনরাত বই পড়ে কীভাবে কে জানে? এত জ্ঞান নিয়ে কী হবে? মৃত্যুর পর সব জ্ঞান নিয়ে কবরে যেতে হবে। যে মাথায় গিজগিজ করত জ্ঞান সেই মাথার মগজ পিঁপড়া খেয়ে ফেলবে। শরীরে ধরবে পোকা। ফতে সব মানুষকে চট করে বুঝে ফেলে এই মানুষটাকে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কখনো মনে হয় মানুষটা বোকা। শুধু বোকা না—বোকাদের উজির-নাজির। আবার কখনো মনে হয় লোকটা মহাচালাক। সে আসলে চালাকদের উজির-নাজির। তার কাজের একটা ছেলে আছে তার সাথে যেভাবে কথা বলে মনে হয় নিজের ছেলের সঙ্গে কথা বলে। একদিন সে বাড়িতে উঁকি দিয়ে দেখেছে দুজন পাশাপাশি বসে ভাত খাচ্ছে। আরেক দিনের কথা ফতের স্পষ্ট মনে আছে। সে গিয়েছে বাড়ি ভাড়া আনতে। মিসির আলি সাহেব তখন নিজেই চা বানাচ্ছিলেন। ফতেকে বলল, চা খাবে? ফতে বলল, না। এখন কাজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ইয়াসিন চা খাবি? ইয়াসিন গম্ভীর গলায় বলল, হ। চিনি বেশি দিয়েন। ফতে অবাক হয়ে দেখল মিসির আলি কাজের ছেলের জন্যে চা বানিয়ে আনছেন।

লোকটা নাকি অনেক জটিল বিষয় জানে। কী জানে কতটুকু জানে তা ফতের দেখার ইচ্ছা। জটিল বিষয় ফতে নিজেও জানে। তাকে কেউ চিনে না কারণ সে বলতে গেলে—এক বাড়ির কাজের লোক, বেবিট্যাক্সির ড্রাইভার। তার কথা কে বিশ্বাস করবে? সে যদি বলে এই দুনিয়ার জটিল বিষয় আমি যত জানি আর কেউ এত জানে না। তা হলে কেউ কি তা বিশ্বাস করবে? কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ সে মিসির আলির মতো জ্ঞানী না। সে ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো দূরে থাকুক—নিজে ইউনিভার্সিটির ধারেকাছে কোনোদিন যায় নাই। যাওয়ার ইচ্ছাও নাই। সে যা শিখেছে নিজে নিজে শিখেছে। সবার ওস্তাদ থাকে তার কোনো ওস্তাদ নেই।

ফতের ইচ্ছা করে মিসির আলিকেও শাস্তি দিতে। জ্ঞানী লোকের জন্য জ্ঞানী শাস্তি। মনে কষ্ট দেওয়া শাস্তি। এই লোকটা কিসে কষ্ট পাবে তা আগে বের করতে হবে। মানুষ হল মাছধরা জালের মতো। মাছধরা জালে দুই একটা সুতা ছেঁড়া থাকে। মানুষের জালেও সেরকম ছেঁড়া সুতা আছে। সুতার ছেঁড়া জায়গাটা হল তার দুর্বল জায়গা। আক্রমণ করতে হয় দুর্বল জায়গায়। ফতের ধারণা মিসির আলির দুর্বল জায়গা তার জ্ঞান। ধাক্কাটা দিতে হবে জ্ঞানে। প্রমাণ করে দিতে হবে এত আগ্রহ করে যে জ্ঞান অর্জন করা হচ্ছে সেই জ্ঞান ভুল। কাজটা কঠিন, তবে খুব কঠিন না।

ফজলু মিয়াকেও শাস্তি দিতে হবে। আজ সে চোখের ইশারায় তার মেয়েকে সরে যেতে বলল। যেন ফতে কোনো দুষ্ট লোক। দুষ্ট লোকের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করার চেষ্টা। ফজলু ঠিকই ভেবেছে ফতে মিয়া দুষ্ট লোক। কিন্তু কী রকম দুষ্ট লোক তা সে জানে না। জানার কথাও না। ফতে নিজেই জানে না, সে কীভাবে জানবে? ফজলু ভেবেছে ফতে তার চোখের ইশারা দেখতে পায় নি। ফতে ঠিকই দেখেছে। কাজেই ফজলু মিয়াও শাস্তি পাবে। তার শাস্তি আবার হবে অন্য রকম। শাস্তি হল জামার মতো। সাইজ হিসাবে জামা বানাতে হয়। কাঁধের পুট ঠিক থাকতে হয়, হাতার মুহুরি ঠিক থাকতে হয়, কলার ঠিক থাকতে হয়। যে কোনো শাস্তিই হতে হয় মাপমতো।

ফতে সিগারেট ধরাল। শীত আরো বেড়েছে। কুয়াশা বাড়ছে। কুয়াশায় মাথার মাফলার ভিজে যাচ্ছে। তার জেগে বসে থাকার কথা—সে নিজের ঘরে জেগে বসে থাকতে পারে। তা না করে সে আগের জায়গাতেই বসে রইল। সে হালকাভাবে শিস দিচ্ছে এবং পা নাচাচ্ছে। তাকে আনন্দিত মনে হচ্ছে।

লুনা কাঁদতে শুরু করেছে। কেঁদেই যাচ্ছে। কেঁদেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফতের ডাক পড়বে। ফতে অপেক্ষা করতে লাগল। এখনো ডাক আসছে না। মেয়ের মা মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। লাভ হচ্ছে না। আচ্ছা এমন কি হবে যে বিরক্ত হয়ে লুনাকে কোলে নিয়ে তার মা বারান্দায় এল তারপর বিরক্ত হয়ে দোতলা থেকে মেয়েকে ফেলে দিল?

হওয়া বিচিত্র কিছু না। এই দুনিয়ায় অনেক বিচিত্র ব্যাপার ঘটে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *