০২. রাশেদ যে মহা মিচকে শয়তান

রাশেদ যে মহা মিচকে শয়তান সেটা আমরা বেশ তাড়াতাড়ি আবিস্কার করলাম। তাকে আমার লাড্ডু বলেই ডাকব ঠিক করেছি, সেও কোন আপত্তি করেনি। কিন্তু আসলেই যখন তাকে লাড্ডু বলে ডাকি ব্যাটা কোন উত্তর দেয় না, ভান করে থাকে যেন শুনতে পায়নি। যতক্ষণ রাশেদ বলে না ডাকছি। সে না শোনার ভান করে উদাসমুখে বসে থাকে। রাশেদ বলে ডাকামাত্র মুখে হাসি ফুটিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, আমাকে ডাকছিস? ব্যাটার ন্যাকামো দেখে মরে যাই !

আমি আর ফজলু খুব রেগে—মেগে ঠিক করলাম, যত চেষ্টাই করুক আমরা তাকে লাড্ডু বলেই ডেকে যাব, কিছুতেই রাশেদ ডাকব না। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই আমরা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, সবার সাথে সাথে আমি আর ফজলুও তাকে রাশেদ বলে ডাকছি।

শেষ পর্যন্ত আমরাও হাল ছেড়ে দিলাম। রাশেদ হাসান নামটা তার সত্যিই পছন্দ, এই নামে ডাকলে সে যখন এত খুশি হয়, না হয় ডাকলামই তার নতুন নাম দিয়ে।

 

কয়দিনের মাঝে আমরা টের পেলাম, রাশেদ ছেলেটা আর দশটা ছেলের মত না। সে মোটেও বেশি কথা বলে না, কিন্তু তাই বলে বোকা না। সে ঘোষণা করেছে, পর পর দুই বছর ফেল করে পড়াশোনার ঝামেলা চুকিয়ে দেবে, কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ হবে বলে মনে হয় না। অন্য কোন সাবজেক্টে ঝামেলা না হলেও মনে হয় ইংরেজিতে পােশ করে যাবে। এইটুকু ছেলে এরকম কঠিন ইংরেজি শিখল কি করে সেটা প্রথম প্রথম আমাদের কাছে একটা রহস্য ছিল। সাধারণত আমাদের মাঝে যারা বড় লোকের ভদ্রঘরের ছেলে তারা ইংরেজি কমিক টমিক পড়ে ভােল ইংরেজি শিখে। রাশেদকে দেখে মনে হয় না সেরকম ছেলে, তার বাবা কাঠমিস্ত্রী না হয় ইলেকট্রিশিয়ান, মোটেও ইংরেজি-জােনা বড়লোক না। রাশেদ নিজেই একদিন কারণটা বলল— তার বাবা ইংরেজি জানে না বলে মাঝেমাঝেই ইংরেজি খবরের কাগজ পড়ে তাকে বোঝাতে হয়। একটা ডিকশনারি নিয়ে বসে বানান করে পড়তে পড়তে সে ইংরেজি শিখে গেছে। আজকাল সে চোখ বুজে। ‘বাক স্বাধীনতা’ বা ‘অর্থনৈতিক শোষণ’ এরকম কঠিন কঠিন জিনিস ইংরেজিতে বলে ফেলতে পারে।

রাশেদের আরো কিছু অবাক ব্যাপার আছে। তাকে যা ইচ্ছা তাই বলা যায়, সে কিছুতেই রাগ হয় না। সে প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিনই ফজলু তাকে নিয়ে কবিতা বানাল—

আব্বুকা লাড্ডু
পরীক্ষায় গাড্ডু,
একদম ফাড্ডু

সাংঘাতিক কবিতা সেরকম কলা যায় না। কিন্তু যার নাম লাড্ডু তার কানের কাছে যদি এই কবিতা তিবিশি সেকেন্ড পর পর বলা হয়, তার মেজাজ খারাপ হবার কথা। কিন্তু রাশেদের বেলায় সেটা সত্যি হল না। প্রত্যেকবার ফজলু এই কবিতাটি বলল আর রাশেদ শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল, যেন এর থেকে মজার আর কোন ব্যাপার পৃথিবীতে থাকতে পারে না। ফজলু এক সকালে চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। একজন মানুষ যদি না রাগে তাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে সময় নষ্ট করে কি লাভ?

রাশেদকে যা খুশি বলা যায়। কিন্তু তার গায়ে হাত দেয়া যায় না। ফাজিলেমি করে একটু-আধটু সে সহ্য করে কিন্তু রাগারগি করে তাকে একটা ধাক্কা দিলেও সে ঘুরে এসে ডবল জোরে ধাক্কা দিয়ে তার উত্তর দেয়। আমাদের সাথে তো করেই— একদিন কান্দেরের সাথে করে ফেলল। কাদের হচ্ছে আমাদের ক্লাস-গুণ্ডা। ফেল করে করে আমাদের ক্লাসে এসেছে। তার মনে হয় এখন কলেজে-টলেজে পড়ার কথা। সে হচ্ছে আমাদের ক্লাসের একমাত্র ছেলে যে গঙ্গা নাপিতের দোকানে দাড়ি কামিয়ে আসে। শুধু যে দাড়ি কামায় তাই নয়, বগলও কামিয়ে আসে। আমরা কখনো কাদেরকে ঘাটাই না, মাঝে মাঝে সে পিছন থেকে আমাদের মাথায় চাটি মেরে কিছু একটা গলাগলি দেয়, আমরা চুপ করে সহ্য করে যাই। একদিন খামােখা সে রাশেদের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল, এই ফাডুর বাচ্চা, কিলিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলব।

রাশেদ সাথে সাথে কাদেরকে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল, আমার নাম ফাড্ডু না।

কাদের চিন্তাও করতে পারেনি এই ক্লাসে কেউ তার গায়ে হাত দেবে, সে মোটেও এর জন্যে প্রস্তুত ছিল না। হঠাৎ করে ধাক্কা খেয়ে তাল হারিয়ে একটা বেঞ্চিতে লেগে একেবারে হুড়মুড় করে আছড়ে খেয়ে পড়ল। কয়েক মুহুর্ত লাগল তার বুঝতে কি হচ্ছে। যখন বুঝতে পারল তখন রাগে ক্ষ্যাপা শুওরের মত চোখ লাল করে ওঠে এল। রাশেদকে একেবারে ছিড়েই ফেলত। কিন্তু ঠিক তখন অংক স্যার এসে গেলেন বলে কিছু করতে পারল না।

টিফিনের ছুটিতে কাদের রাশেদকে জানালার নিচে চেপে ধরে বলল, এই ফাডুব বাটচ

আমার নাম ফাড্ডু না।

আমার সাথে রংবাজি? চাকু মেরে ভূঁড়ি ফাঁসিয়ে দেব।

রাশেদ সেই অবস্থায় হেসে বলে, দে না দেখি।

কাদের এটাকে তাকে অপমান করার চেষ্টা হিসেবে ধরে নিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে একটা চড় মারে। ব্যথা দেওয়ার থেকে অপমান করার চেষ্টা বেশি।

সাথে সাথে স্মগ্ৰীংয়ের মত রাশেদের পা উঠে যায়। বিদ্যুৎগতিতে সে এত জোরে কান্দেরের তলপেটে লাথি মারে যে কাদের নাক চেপে বসে পড়ে।

এরকম অবস্থায় পালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রাশেদ পালানোর কোন চেষ্টা করল না। বরং কাদেরের কাছে দাঁড়িয়ে বড় মানুষদের মত উপদেশ দেবার ভঙ্গিতে বলল, মারপিট করা ঠিক না। মারপিট করে কোন সমস্যার সমাধান হয় না—

কাদেরের জন্যে এটাই বাকি ছিল। চিৎকার করে উঠে সে বাঘের মত রাশেদের উপর লাফিয়ে পড়ল। কাদের রাশেদ থেকে অন্তত একমাথা উঁচু, ওজন সম্ভবত দুই গুণ, বয়স অন্তত দেড় গুণ। কাদেরকে এখনই বাজারে গুণ্ডা হিসেবে চালানো যায়, তার তুলনায় রাশেদ একেবারে বাচ্চা একটা ছেলে। দেখে মনে হয়, কান্দেরের সাথে রাশেদের মারপিটের কোন প্রশ্নই আসে না। কিন্তু মারপিটে গায়ের জোরটা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হচ্ছে সাহস। রাশেদের সাহসের কোন অভাব নেই, মনে হয় তার ভিতরে ভয়ের ছিটেফোটাও নেই। কাদের ইচ্ছে করলে তাকে ষে পিষে ফেলতে পারে সে ব্যাপারটা সে জানে না। প্রত্যেকবার ঘুসি খেয়ে সে ফিরে পাল্টা ঘুসি মারছিল। বেকায়দা দুই-একটা এমন মোক্ষম লাথি হাঁকলো যে কাদেরকে পিছিয়ে যেতে হল। কিন্তু রাশেদ এমন মারি খেল যে সেটা বলার মত নয়।

স্কুলে ছোটখাট খামচোখামচি প্রায়ই হয়। কিন্তু বড় ধরনের মারপিট খুব বেশি হয় না। যখন বড় ধরনের মারপিট শুরু হয়, আমরা নিজেরাই ছুটিয়ে দেবার চেষ্টা করি। খুৰ খারাপ অবস্থা হলে স্যারদের ডাকতে হয়। আজকেও আরেকটু হলে স্যারদের ডাকতে হত। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত টেনে কাদের আর রাশেদকে আলাদা করে দিতে পারলাম। কাদেরকে বেশ কয়েকজন মিলে ধরে রাখতে হচ্ছিল, বাগে সে ফোসফোর্স করছে ক্ষ্যাপা মোষের মত। রাশেদের কথা ভিন্ন, রক্তমাখা খানিকটা থুতু ফেলে কিছুই হয়নি এরকম শান্ত স্বরে বলল, মারপিট করা ঠিক না। আর করতেই যদি হয় সমান সমান মিলে মারপিট করতে হয়। তোর হাতির মত সাইজ, মারপিট করার ইচ্ছা করলে আরেকজন হাতির মত সাইজ খুঁজে বের করে তার সাথে করবি। আমার সাথে কারিস না। লাজার ব্যাপার।

আমরা ভেবেছিলাম ব্যাপারটা হয়তো স্যারদের কানো যাবে না, কিন্তু হেড স্যারের কানে চলে গেল। হেড স্যার দপ্তর দিয়ে ডেকে পাঠালেন দুজনকে। আমরা বাইরে ঘুর ঘুর করে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম ভিতরে কি হচ্ছে।

হেড স্যারের দুইটা বেত, একটা নাকি ইণ্ডিয়া থেকে আনা হয়েছে, সেটার নাম ‘শিলং ইস্পিশাল’, আরেকটা এসেছে গারো পাহাড় থেকে, সেটার নাম ‘গারো ইম্পিশাল’। স্কুলের দপ্তরী কালিপদ নাকি প্রত্যেক শুক্রবার বেতগুলিতে তিশির তেল মাখিয়ে রাখে। কেউ মারপিট করলে হেড স্যার প্রথমে দুজনকেই শিলং ইম্পিশাল দিয়ে এক চোেট ধোলাই দিয়ে দেন। তারপর দুজনের কথা শুনেন, যে দোষী সাব্যস্ত হয় তাকে গারো ইম্পিশাল দেওয়া হয়। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম, কাদের আজ ডাবল ডোজ গারো ইম্পিশাল পাবে কিন্তু দেখা গেল কাদের বেশ হাসিমুখে বুক ফুলিয়ে হেড স্যারের রুম থেকে বের হয়ে এল। তাকে গারো ইম্পিশাল দেওয়া হয়নি। হেডস্যারের রুমে রাশেদ কিছুতেই মুখ খুলতে রাজি হয়নি। মুখ ফুটে একবার সত্যি কথাটা বললেই কান্দেরের বারটা বেজে যেতো। কাদেরকে স্কুলের সবাই চিনে, হেড স্যার মনে হয় ওঁৎ পেতে থাকেন তাকে ধোলাই দিতে।

বিকেলের দিকে রাশেদের মুখ এবং চোখ বেশ খারাপভাবে ফুলে গেল। হাত দিয়ে টিপে-টুপে আমাকে বলল, এ্যাই ইবু, দেখে কি বোঝা যাচ্ছে?

হ্যাঁ।

বেশি কি বোঝা যাচ্ছে?

হ্যাঁ।

এ্যাহ! খুব খারাপ হল ব্যাপারটা। খুব খারাপ হল।

কি খারাপ হল?

এই যে নাক-মুখ এইভাবে ফুলে গেল !

বেকুবের মতো মারপিট করবি আর মুখ ফুলবে না? তোকে বাসায় আবার বানাবে?

না-না। বাসায় বানাবে কেন?

তাহলে?

রাশেদ খানিকক্ষণ মুখ সূচালো করে থেকে বলল, কাদেরের না কোন ঝামেলা হয়!

কাদেরের? কাদেরের কি ঝামেলা হবে?

কাচু ভাইয়ের যা মাথা গরম!

কাচু ভাই? সেটা কে?

আমাদের পাড়ায় থাকেন। ছত্রিশ ইঞ্চি সিনা। এন-এস-এফের গুণ্ডারা একবার পেটে চাকু মেরেছিল, চাকু পেটে ঢুকে নাই, পিছলে গেছে। সকালে চারটা করে কাচা ডিম খান।

তোর সাথে খাতির আছে?

এক পাড়ায় থাকেন, খাতির থাকবে না? আমাকে খুব মায়া করেন, রাজনীতির খবর দেই তো।

রাশেদ খুব চিন্তিতমুখে বসে থাকে দেখে আমিই ভয় পেয়ে যাই।

 

পরদিন কাদের স্কুলে এল না। কাদের খুব নিয়মিত স্কুলে আসে না, তাই সেটা নিয়ে কারো খুব মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু রাশেদকে খুব চিন্তিত দেখল। কাদের তার পরদিনও স্কুলে এল না, রাশেদকে তখন আরো বেশি চিন্তিত দেখাল। আমরা তখন আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। রাশেদকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হল কাদেরের?

জানি না।

তোর কাছু ভাইকে জিজ্ঞেস করিসনি?

করেছি। কিছু তো বলে না।

তোর কি মনে হয়? জানে মেরে ফেলেছে?

রাশেদ হেসে উড়িয়ে না দিয়ে মুখটা আরো গভীর করে বলল, কিছুই তো জানি না। কাচু ভাইয়ের যা মাথা গরম!

তুই কি তোর কাছু ভাইকে কাদেরের কথা বলেছিলি?

বলতে চাই নাই, কিন্তু জোর করলেন- রাশেদ মুখ সূচালো করে বসে থাকে।

ফজলু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, সত্যি মার্ডার করে ফেলেছেন?

রাশেদ উত্তর না দিয়ে খুব হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে থাকে।

আমাদের গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। কি সর্বনাশা। কথা ! রাশেদকে পিটিয়েছে বলে কাদেরকে মার্ডার করে ফেলেছে? আমরা গুটিশুটি মেরে বসে থাকি, ক্লাসে মন দিতে পারি না। যখন থানা পুলিশ হবে তখন কি সবাইকে বলতে হবে না? কেমন করে মার্ডার হল কাদের? ডেডবডি কোথায় ফেলেছেন রাশেদের কাছু ভাই, যিনি সকালে চারটা করে কাঁচা ডিম খান।

পরদিন অবশ্যি কাদের ক্লাসে হাজির হল। প্রথমে আমরা তাকে চিনতে পারলাম না। কাদেরের মাথায় ছিল ফ্যাসনের চুল। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সে চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়াতো গভীর মনোযোগ দিয়ে। চুলের গোছা তার কপালের উপর ঝাউগাছের মত উচু হয়ে থাকত। কাদেরের মাথায় সেই চুলের চিহ্ন নেই, পুরো মাথা ন্যাড়া চকচকে বেলের মত। দেখে আমরা একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম। কাদের মাথা ন্যাড়া করে ফেলবে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।

ফজলু চোখ কপালে তুলে বলল— তোর চুল?

কাদের মেঘের মত স্বরে বলল, চুপ শালা।

ফজলু আর কিছু বলার সাহস পেল না। আমি গলা নামিয়ে বললাম, আমরা ভেবেছিলাম তুই মার্ডার হয়ে গেছিস।

কাদের আমার দিকে বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, একটা কথা বললে তোকে মার্ডার করে দেব।

দিলীপ বলল, মাথা ন্যাড়া করেছিস কেন? তোর বাবা ভাল আছেন তো?

চুপ শালা মালাউন।

রাশেদ বলল, তোর কপাল ভাল, শুধু চুলের উপর দিয়ে গেছে। কাচু ভাইয়ের যা মাথা গরম!

কাদের কি একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। যারা জোককে ভয় পায় তাদের পায়ে জোক কামড়ে ধরলে তারা যেভাবে জোকের দিকে তাকায় ঠিক সেভাবে সে রাশেদের দিকে তাকাল। চোখের মাঝে একই সাথে ভয় আর ঘেন্না ! তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাশেদকে তার আর স্পশ করারও ইচ্ছে নেই।

কাদের এর পর আর কোনদিন রাশেদকে কিংবা আমাদেরকেও উৎপাত করেনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *