বৌদ্ধ দর্শন / বৌদ্ধদর্শন / বৌদ্ধ-দর্শন
বৌদ্ধেরা চারি শ্রেণীতে বিভক্ত; মাধ্যমিক, যোগাচার, সৌত্রাস্তিক ও বৈভাষিক। মাধ্যমিক হতে কিছুই নাই, সকলই শূন্য। যে সমস্য বস্তু স্বপ্নাবস্থায় দৃষ্ট হইয়া থাকে, জাগ্রদবস্থায় তাহার কিছুই দেখা যায় না, এবং যে সমস্ত বস্তু জাগ্রদবস্থায় দৃষ্ট হইয়া থাকে, স্বপ্নাবস্থায় তাহার কিছুই দেখা যায় না; আর সুষুপ্তিদশায় কোন বস্তুই দেখা যায় না। ইহাতে বিলক্ষণ প্রতিপন্ন হইতেছে যে, বস্তুতঃ কোন বস্তুই সত্য নহে; সত্য হইলে অবশ্যই সকল অবস্থায় দৃষ্ট হইত। যোগাচারমতে বাহ্যবস্তুমাত্রেই অলীক, কেবল ক্ষণিক বিজ্ঞানরূপ আত্মাই সত্য। ঐ বিজ্ঞান দুই প্রকার, প্রবৃত্তিবিজ্ঞান ও আলয়বিজ্ঞান। জাগ্রত ও সুপ্ত অবস্থায় যে জ্ঞান জন্মে তাহাকে প্রবৃত্তিবিজ্ঞান বলে, আর সুষুপ্তিদশায় যে জ্ঞান হয় তাহার নাম আলয়বিজ্ঞান। ঐ জ্ঞান কেবল আত্মাকেই অবলম্বন করিয়া হইয়া থাকে। সৌতারন্তিকেরা বাহ্য বস্তুকে সত্য ও অনুমানসিদ্ধ কহে। বৈভাষিকদিগের মতে বাহ্যবস্তু সকল প্রত্যক্ষসিদ্ধ। একমাত্র ভগবান বুদ্ধ, বৌদ্ধধর্মের উপদেষ্টা হইলেও শিষ্যদিগের মতভেদ অসম্ভাবিত নহে। যদ্যপি কোন ব্যক্তি কহে সূর্য্য অস্তগত হইলেন; তাহা হইলে ঐ বাক্য শ্রবণে লম্পট ব্যক্তি পরদারহরণের ও তস্কর পরধনাপহরণের কাল উপস্থিত বোধ করে, এবং সাধুগণ সন্ধ্যাবন্দনাদির সময় হইয়াছে বিবেচনা করেন। অতএব এক ব্যক্তি বক্তা হইলেও শ্রোতৃবর্গ স্ব স্ব অভিপ্রায়ানুসারে এক বাক্যের পৃথক পৃথক তাৎপর্য গ্রহণ করিয়া থাকে। বাক, পানি, পাদ, গুহ্য ও লিঙ্গ এই পঞ্চ কর্ম্মেন্দ্রিয়; নাসিকা, জিহ্বা, চক্ষু, ত্বক ও শ্রোত্র এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়; আর মন ও বুদ্ধি এই দুই উভয়েন্দ্রিয়; এই দ্বাদশ ইন্দ্রিয়ের আয়তন বলিয়া দেহকে দ্বাদশায়তন কহে। সকল বৌদ্ধমতেই, ধনোপার্জ্জন দ্বারা এই দ্বাদশায়তন শরীরের সম্যক শুশ্রুষারূপ পূজা করাই প্রধান কর্ম্ম। ইহাদিগের মতে দেবতা সুগত, জগৎ ক্ষণভঙ্গুর, প্রত্যক্ষ ও অনুমান এই দুই প্রমাণ; এবং দুঃখ, আয়তন, সমুদয় ও মার্গ এই চারি তত্ত্ব। বিজ্ঞানস্কন্ধ, বেদনাস্কন্ধ, সংজ্ঞাস্কন্ধ, সংস্কারস্কন্ধ ও রূপস্কন্ধ এই পঞ্চ স্কন্ধকে দুঃখতত্ত্ব কহে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় এবং রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ এই পাঁচ বিষয় এবং মন ও ধর্ম্মায়তন অর্থাৎ বুদ্ধি এই দ্বাদশটি আয়তন তত্ত্ব। মনুষদিগের অন্তঃকরণে স্বভাবতঃ যে রাগদ্বেষাদি জন্মে তাহাকে সমুদয় তত্ত্ব কহে। এবং সকল সংস্কারই ক্ষণমাত্রস্থায়ী এইরূপ যে স্থির বাসনা তাহার নাম মার্গতত্ত্ব। এই মার্গতত্ত্বই মোক্ষ। চর্ম্মাসন, কমণ্ডলু, মুণ্ডন, চীর, পুর্ব্বাহ্নভোজন, সমূহবাস্থান ও রক্তাম্বর এই কয়েকটি বৌদ্ধদিগের যতিধর্ম্মের অঙ্গ।