০২. জনগণের সঙ্গে ব্যবহারের রহস্য

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
জনগণের সঙ্গে ব্যবহারের রহস্য

এই পৃথিবীতে অন্যকে দিয়ে কাজ করানোর একটাই মাত্র উপায় আছে। কোনদিন কথাটা সম্পর্কে কখনও ভাবতে চেয়েছেন? হ্যাঁ, পথ বলতে একটাই আছে তা হলো অন্য সেই লোকটিকে কাজে আগ্রহী করে ভোলা।

মনে রাখবেন এ ছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই।

অবশ্য কোন মানুষের পাঁজরায় রিভলবার চেপে ধরে তার ঘড়িটা আপনাকে দিতে বাধ্য করতে পারেন। কোন কর্মচারিকে কাজ করতেও বাধ্য করতে পারেন-অবশ্য আপনি পিছন না ফেরা : পর্যন্ত–আর সে বাধ্যতা আনতে পারবেন তাকে কর্মচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে। কোন বাচ্চাকে কাজ করাতে পারেন তাকে চাবুক মারার ভয় দেখিয়ে বা অন্য কোন ভয় দেখিয়ে। কিন্তু এই ধরণের নিষ্ঠুর পদ্ধতির ফলশ্রুতিতে মেলে অবাঞ্ছিত কিছু।

আপনাকে দিয়ে ইচ্ছেমত কাজ করিয়ে নিতে পারি শুধু আপনি যা চান তাই আপনাকে দিয়ে। কিন্তু আপনি কি চান?

ভিয়েনার বিখ্যাত ড. সিগমুণ্ড ফ্রয়েড, যিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খ্যাতনামা একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি একবার বলেন যে আপনি বা আমি যা কিছু করি সেটার উৎপত্তি দুটো উদ্দেশ্য থেকে : যৌন আবেগ আর বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

আমেরিকার বিখ্যাত দার্শনিক প্রফেসর জন ডিউক এটাকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ডঃ ডিউক বলেন, মানব মনে গভীরভাবে যে আকাঙক্ষা প্রোথিত থাকে তা হলো, বিখ্যাত হওয়ার বাসনা। কথাটা ভালো করে মনে রাখবেন। বিখ্যাত হওয়ার বাসনা এটা খুবই তাৎপর্যময়। এ বিষয়ে এ বইটিতে আরও অনেকবার এটার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে।

আপনি কি চান? হয়তো তেমন বেশি কিছু নয়, তবে যে সব অল্প কিছু জিনিস আপনি চান সেগুলো যাতে আপনাকে দিতে অস্বীকার করা না হয় তার জন্য নিশ্চয়ই দাবী জানাবেন আপনি। প্রায় প্রত্যেক স্বাভাবিক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষই এইগুলি আশা করে

১। স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষা। ২। খাদ্য। ৩। ঘুম। ৪। টাকা পয়সা এবং টাকায় কেনা যায় সেরকম জিনিসপত্র। ৫। পরের জীবন। ৬। যৌন আনন্দ ও তৃপ্তি। ৭। সন্তানের সুখ সুবিধা। ৮। নিজের প্রাধান্যবোধ।

এসবের প্রায় সবগুলোই পাওয়া সম্ভব–শুধু একটি ছাড়া। কিন্তু খাদ্য বা ঘুমের মত গভীর আকাঙক্ষা বা জরুরী জিনিসেরই মত আরও একটি জিনিস আছে। এটাকেই ফ্রয়েড বলেছিলেন বড় হওয়ার আকাঙক্ষা, একেই আবার ডিউক ও বলেছেন বিখ্যাত হওয়ার বাসনা।

লিঙ্কন একবার একটা চিঠি শুরু করেন এই ভাবে : প্রত্যেকই প্রশংসা পছন্দ করে। উইলিয়াম জেমস বলেছিলেন : ‘মানব চরিত্রের গভীর এক আকাঙক্ষা হলো প্রশংসা পাওয়ার আকৃতি। লক্ষ্য করবেন তিনি ইচ্ছা’ বা ‘আশা’ বা ‘বাসনা’ কথাটা ব্যবহার করেন নি। তিনি ব্যবহার করেছেন ‘আকুতি’ কথাটা।

এখানেই দেখা যাচ্ছে মানুষের অদ্ভুত, নির্ভুল এক ক্ষুধা। এখানেই বিরল প্রকৃতির সেই মানুষ, যিনি হৃদয়ের এই ক্ষুধা মিটিয়ে দিতে পারেন তার পক্ষেই সমস্ত মানুষকে তার হাতের মুঠোয় রাখা সম্ভব। আর এটাও ধ্রুব সত্য, যে লোকটি কবর দিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ করে সেও এমন মানুষের মৃত্যুতে দুঃখবোধ করে।

মানুষ আর জানোয়ারের মধ্যে অন্যতম প্রধান তফাৎ হলো তার বিখ্যাত হওয়ার মনোবাসনা। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক : আমি যখন মিসৌরীতে খামারে কাজ করতাম আমার বাবা ডুরক-জার্সি জাতের চমৎকার শুয়োর আর সাদা-মুখ গরু পালন করতেন। গ্রামের মেলায় আমরা ওই সব শুয়োর আর সাদামুখ গরু প্রদর্শন করতাম। আমরা এতে বহুবার প্রথম পুরস্কারও পাই। আমার বাবা সাদা সিল্কের কাপড়ে পুরস্কারগুলো ওই সব নীল ফিতেগুলো ভালো করে এঁটে রাখতেন আর যখন বন্ধুরা বা কোন দর্শক আসতেন বাবা কাপড়ের এক প্রান্ত আর আমি অন্যপ্রান্ত ধরে সকলকে দেখাতাম।

শুয়োগুলো অবশ্য যে নীল ফিতে তারা জিততো তাই নিয়ে মাথা ঘামাতো না। তবে বাবা ঘামাতেন। পুরস্কারগুলো বাবার মনে একটা শ্রেষ্ঠত্ববোধ জাগাতে চাইতো।

আমাদের পূর্বপুরুষদের যদি এ ধরনের জ্বলন্ত শ্রেষ্ঠত্ববোধের আকাঙক্ষা না থাকতো তাহলে সভ্যতা গড়ে ওঠাই অসম্ভব হতো। এটা না থাকলে আমরাও হতাম ওই সব জন্তু জানোয়ারের মত।

এই রকম শ্রেষ্ঠত্ব বোধের তাগিদেই এক অশিক্ষিত, দারিদ্র-পীড়িত মুদীর দোকানের কোরানী কোন বাড়ির বাড়তি কিছু পিপের মধ্যে পাওয়া কিছু আইনের বই পড়তে আরম্ভ করেছিলেন। বইগুলো তিনি কিনেছিলেন মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট খরচ করে। আপনারা হয়তো এই কেরানীর কথা শুনে থাকবেন তিনি আর কেউ নন,স্বয়ং আব্রাহাম লিঙ্কন।

এই রকম শ্রেষ্ঠত্ব বোধের অনুভূতিই ডিকেন্সকে তার অমর উপন্যাসগুলো লিখতে প্রেরণা দিয়েছিলো। এই আকাঙক্ষাই স্যার ক্রিস্টোফার রেনুকে পাথরের মধ্যে দিয়ে সুর সৃষ্টির প্রেরণা জোগায়। এই আকাঙক্ষাই আবার রকফেলারকে লক্ষ লক্ষ টাকা করার সাহায্য করে কিন্তু তিনি তা খরচ করেন নি! আর এই আকাঙক্ষাই আপনার শহরের সবচেয়ে ধনী মানুষটিকে বিশাল এক প্রসাদ বানাতে ও উদ্বুদ্ধ করেছে, যে বাড়ি তার প্রয়োজনের তুলনায় ঢের বড়।

এই আকাঙক্ষাই আপনাকে সর্বাধিক পোশাক পরতে আগ্রহী করে তোলে, আগ্রহী করে একেবারে আধুনিক গাড়ি চালাতে আর আপনার চমৎকার ছেলে মেয়েদের সম্বন্ধে গল্প বলতে আগ্রহী করে।

আবার এই আকাঙক্ষাই বহু ছেলেকে ডাকাত আর বন্দুকবাজ হওয়ার জন্য টেনে নিতে চায়। নিউইয়র্কের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ই.পি. মালরুনি বলেন : ‘আজকের দিনে বেশির ভাগ তরুণ অপরাধীই বিশেষ অহমিকাবোধে আচ্ছন্ন, তাদের গ্রেপ্তার করার পর প্রধান অনুরোধ হয় সমস্ত সংবাদপত্রে তাদের বীরের আসনে বসিয়ে সব প্রকাশ করা। কিন্তু তাদের যে বৈদ্যুতিক চেয়ারে ভয়ঙ্কর মৃত্যু বরণ করতে হবে সে কথা আর তাদের মনে থাকে না। তারা শুধু কল্পনা করে নেয় তাদের ছবি ছাপা হবে বেবরুথ, লাগার্ডিয়া, আইনস্টাইন, লিণ্ডেনবার্গ, উসকানিনি বা রুজভেল্টের সঙ্গে। আপনি যদি বলেন কেমন করে শ্রেষ্ঠত্ববোধ অনুভব করেন তাহলে আমি বলে দিতে পারি আপনি কি ধরনের মানুষ। এটাই আপনার চরিত্র কেমন সেটাই জানিয়ে দেবে। আপনার সম্পর্কে এটাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন ধরুন জন ডি. রকফেলার তার শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি পেয়েছিলেন চীনের পিকিংয়ে একটা আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করার জন্য টাকা দিয়ে। এ হাসপাতাল ছিল লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষের জন্য। যাঁদের তিনি জীবনে দেখেন নি বা দেখার সম্ভাবনাও ছিল না। অন্যদিকে ডিলিঞ্জার তার শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি পায় একজন ব্যাঙ্ক ডাকাত আর খুনী হয়ে। পুলিশ যখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সে মিনেসোটার একটা খামার বাড়িতে ঢুকে বলে, আমি ডিলিঞ্জার।’ সে যে জনগণের এক নম্বর শত্রু সেটা ভেবে সে গর্ব অনুভব করতো। সে আরও বলে, আমি আপনাদের কোন ক্ষতি করবো না, তবে আমি ডিলিঞ্জার।‘

একটা বিশেষ ব্যাপার হলো, ডিলিঞ্জার আর রকফেলারের মধ্যে প্রভেদ তারা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি ভিন্ন ভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে পেয়েছিলেন।

ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত সব মানুষদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য নানা প্রচেষ্টার মজাদার সব উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে। এমন কি জর্জ ওয়াশিংটনও চেয়েছিলেন তাঁকে ‘আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মহান প্রেসিডেন্ট বলে ডাকা হোক। কলম্বাস চেয়েছিলেন তাকে বলা হোক ‘মহাসমুদ্রের অধীশ্বর আর ভারতবর্ষের রাজপ্রতিনিধি। ক্যাথারিন দি গ্রেট ‘হার ইম্পিরিয়ার ম্যাজেষ্টি’ লেখা না থাকলে কোন চিঠি খুলতেন না। আবার, মিসেস লিঙ্কন হোয়াইট হাউসে মিসেস গ্রান্টকে তার সামনে বসার জন্য বাঘিনীর মতই চিৎকার করে বলেছিলেন, আপনার এতো দুঃসাহস আমি বসতে না বললেও আমার সামনে বসেছেন!

আমাদের দেশের কোটিপতিরা কুমেরু মহাদেশে অভিযান চালানোর জন্য টাকা দিয়েছিলেন এই শর্তে যে তুষার ঢাকা পর্বতমালার নামকরণ তাঁদের নামেই রাখা হবে। ভিক্টর হুগোও চেয়েছিলেন আরও বেশি–তার ইচ্ছা ছিল প্যারী শহরের নাম বদলে তার নামেই রাখা হোক। এমন কি শেক্সপীয়ার, সেই মহা শক্তিশালী লেখকও তাঁর পরিবারের জন্য পদক আর পুরস্কার প্রত্যাশা করতেন।

মানুষ আবার অনেক সময় সহানুভূতি আর নজর কেড়ে নেওয়ার জন্য শয্যাশায়ী হতে চায়, আর এটা করে তারা গুরুত্ব পেতে চায়। উদাহরণ হিসাবে মিসেস ম্যাকিনলের কথাটাই ধরুন। তিনি প্রাধান্য পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তার স্বামী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রের জরুরী কাজ অবহেলা করে তাঁর দিকে নজর দিতে বাধ্য করেন। প্রেসিডেন্ট স্ত্রীর শয্যায় ঘন্টার পর ঘন্টা থেকে তাকে দুবাহু বেষ্টনে রেখে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতেন। স্ত্রী তার দাঁত বাঁধানোর সময় আবদার করতেন স্বামী সারাক্ষণ তার পাশে থাকুন। একবার দাঁতের ডাক্তারের কাছে তাকে বসিয়ে রেখে প্রেসিডেন্ট জন হে’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ায় স্ত্রী বিশ্রী দৃশ্যের অবতারণা করেছিলেন।

মেরী রবার্টসন রাইনহার্ট আমাকে একবার বলেছিলেন চমৎকার স্বাস্থ্যবতী এক তরুণী গুরুত্ব বা প্রাধান্য অর্জনের জন্যই শুধু শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। মিসেস রাইনহার্ট বলেন, একদিন মেয়েটি কিছু উপলব্ধি হয় খুব সম্ভব ওর বয়স, আর যে সে কোনদিন বিয়ে করতে পারবে না সেই কথাটা। নিঃসঙ্গ দিন কাটাতে গিয়ে সে বুঝেছিল তার ভবিষ্যৎ বলে আর কিছুই নেই। সে তাই শয্যার আশ্রয় নিলো। তারপর দশ বছর তার বৃদ্ধা মা চারতলা থেকে বারবার উপর নিচে যাতায়াত করে ট্রে নিয়ে তার সেবা করে চললেন। অবশেষে একদিন বৃদ্ধা মা পরিশ্রমের ক্লান্তিতে মারা গেলেন। কটা সপ্তাহ মেয়েটি অসহায় ভঙ্গীতে পড়ে থাকার পর উঠে পড়তে বাধ্য হলো। তারপর পোশাক পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এল।

কোন কোন বিশেষজ্ঞর ধারণা যে মানুষ রূঢ় বাস্তব জগতে প্রধান্যের অনুভূতি লাভে ব্যর্থ হয়েই শেষ পর্যন্ত উন্মাদ জগতের স্বপ্নিল দুনিয়ায় প্রবেশ করে সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোয় মানসিক রোগের যত রোগী চিকিৎসায় আছে তার সংখ্যা অন্যান্য রোগাক্রান্ত রোগীর তুলনায় ঢের বেশি। আপনি যদি নিউইয়র্ক রাজ্যের অধিবাসী হন আর আপনার বয়স পনেরোর বেশি হয় তাহলে আপনার পাগল হয়ে সাত বছর কাটানোর সম্ভাবনা হলো কুড়িজনের মধ্যে একজন।

এরকম পাগল হওয়ার কারণ কি?

কারও পক্ষেই এরকম ঝটিতি উত্তর সম্ভব নয়, তবে আমরা জানি যে কিছু রোগ যেমন সিফিলিস, মস্তিষ্কের ক্ষতি কোষগুলো ভেঙে নষ্ট করে দেয় আর তার পরিণতিতেই আসে উন্মাদ রোগ। বাস্তবে, এই মানসিক রোগের অর্ধেকেই ঘটে নানা ধরনের শারীরিক কারণে, যেমন মস্তিষ্কের ক্ষতি, সুরা, টক্সিন বা আঘাত। কিন্তু বাকি অর্ধেকটা-এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর-বাকি যারা উন্মাদ রোগগ্রস্ত হয় তাদের মস্তিষ্কের কোষে আপাত দৃষ্টিতে কোন গলদ থাকে না। ময়না তদন্তের সময় যখন উচ্চ ক্ষমতার অণুবীক্ষণের সাহায্যে মস্তিষ্কের ঝিল্লি পরীক্ষা করা হয় তখন দেখা গেছে ওইসব কোষ আমার আমার আপনার মস্তিষ্কের মতই সজীব আর কর্মক্ষম। তাহলে পাগল হওয়ার আসল কারণ কী?

প্রশ্নটা আমি কিছুদিন আগে আমাদের বিখ্যাত এক উন্মাদাগারের প্রধান চিকিৎসককে করেছিলাম। এই চিকিত্সক ভদ্রলোক উন্মাদ রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে উচ্চতম সম্মান আর অত্যন্ত লোভনীয় পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। তিনি খোলাখুলি আমাকে জানান যে মানুষ কেন উন্মাদ হয়ে যায় সেটা তিনি আদৌ জানেন না। আসলে নিশ্চিতভাবে এটা কেউই জানে না। তবে তিনি বলেন যে বহু লোক যারা পাগল হয়ে যায়, তারা এই পাগলামির মধ্যে একটা প্রাধান্য লাভ করার অনুভূতি খুঁজে পায়, যেটা রূঢ় বাস্তবে তারা পেতে ব্যর্থ হয়। তারপরেই তিনি নিম্নলিখিত কাহিনীটি শোনান :

বর্তমানে আমার হাতে একজন রোগিনী আছেন যাঁর জীবনে বিয়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত। তিনি চেয়েছিলেন ভালোবাসা, যৌন আনন্দ, সন্তান আর সামাজিক সম্মান। কিন্তু রূঢ় জীবন তার সব আশাই নষ্ট করে দেয়। তাঁর স্বামী তাকে ভালোবাসতেন না। এমন কি তাঁর সঙ্গে খেতেও তার আপত্তি ছিল। তিনি স্ত্রীকে উপরে তাঁর ঘরে খাবার দিতে বাধ্য করতেন। মহিলাটির কোন সন্তান বা সামাজিক সম্মান ছিল না। এর ফলে মহিলাটি পাগল হয়ে গেলেন এরপর কল্পনায় তিনি তাঁর স্বামীকে ডাইভোর্স করেন। কুমারী জীবনের নামও গ্রহণ করেন। তার এখন বিশ্বাস ইংল্যাণ্ডের অভিজাত সমাজে তার বিয়ে হয়েছে–আর নিজেকে তাই লেডি স্মিথ বলে ডাকার দাবীও করেন।

সন্তানের ব্যাপারে, তিনি কল্পনায় দেখেন প্রতিরাতেই তিনি এক একটি নতুন সন্তান লাভ করেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেই তিনি আমায় বলেন, ‘ডাক্তার, গত রাত্রিতে আমার একটা বাচ্চা হয়েছে।’

জীবন একবার তাঁর স্বপ্নের তরী বাস্তবের রূঢ় প্রস্তরের বুকে আছড়ে ভেঙে দিয়েছিল কিন্তু রৌদ্রকরোজ্জ্বল, কল্পনাময় বিচিত্র উন্মাদ জগৎটায় সেই ভাবনার তরী পাল তুলে তরতর করেই এগিয়ে চলে।

একে কি বিষাদময় বলবেন? এটা বলতে পারবো না। তার চিকিৎসক একবার আমাকে বলেন, ‘আমি যদি কোনভাবে হাত বাড়িয়ে ওঁর উন্মাদ অবস্থা দূর করে দিতে পারি তাহলেও সেটা করবো না। কারণ নিজের অবস্থাতেই উনি অনেক বেশী সুখী।‘

দল হিসেবে থাকলে পাগলেরা আপনার বা আমার চেয়ে ঢের সুখী। অনেকেই পাগল হয়ে আনন্দ উপভোগ করে চলে। করবে নাই বা কেন? তারা এইভাবে তাদের সমস্যা সমাধান করে ফেলে। এমন অবস্থায় থাকার সময় তারা বেশ মেজাজেই আপনাদের লক্ষ লক্ষ ডলারের চেক লিখে দেবে বা আগা খায়ের কাছে একটা পরিচয় পত্রও। তাদের স্বপ্নের জগৎটাতে তারা তৈরী করে নেয়। যে প্রাধান্য তারা হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরেছে সেটাই।

কোন মানুষ যে প্রাধান্যের অনুভূতির আকাঙক্ষায় পাগল পর্যন্ত হয়ে যায়, একবার ভেবে দেখুন আমি বা আপনি সুস্থ মানুষদের প্রকৃত প্রশংসা করে কি অলৌকিক ব্যাপারই না ঘটাতে পারি।

যতদূর জানি ইতিহাসে মাত্র দুজন মানুষই বছরে দশ লক্ষ ডলার মাইনে হিসেবে পেয়েছেন। তারা হলেন ওয়াল্টার ক্রাইসলার আর চার্লস শোয়াব।

অ্যান্ড্রু কার্নেগি শোয়াবকে বছরে দশ লক্ষ ডলার বা দৈনিক তিন হাজার ডলারের চেয়েও বেশি কেন দিয়ে যান? কেন?

কারণ শোয়াব দারুণ প্রতিভাবান? না। তবে কি ইস্পাত তৈরির কাজে তিনি অন্যের চেয়ে বেশি কিছু জানতেন? এও বাজে কথা। চার্লস্ শোয়ব নিজেই আমায় বলেছিলেন তাঁর নিচে বহুলোক কাজ করতো যারা ইস্পাত তৈরির ব্যাপারে তার চেয়ে অনেক বেশি জানতো। তাহলে?

.

শোয়াব বলেছেন যে তাঁকে ওই মাইনে দেওয়া হতো বিশেষ করে তাঁর মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের অদ্ভুত দক্ষতার জন্যই। আমি জানতে চেয়েছিলাম এটা তিনি কেমন করে করেন। নিচে তার নিজের মুখে জানানো সেই রহস্যের বিষয় জানাচ্ছি। এই কথাগুলো চিরকালীন সম্পদের মতই প্রতিটি বাড়ি, স্কুল, দোকান বা দেশের কর্মস্থলে ব্রোঞ্জে ঢালাই করে টাঙিয়ে রাখা উচিত। শিশুরা লাতিন ব্যাকরণের ক্রিয়ার গোড়ার কথা শিখতে গিয়ে বা ব্রাজিলের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের কথা জানতে গিয়ে সময় নষ্ট করার বদলে মনে গেঁথে রাখবে–যে কথাগুলো শুধু মেনে চলতে পারলে আমার বা আপনার জীবন ধারাও পাল্টে দিতে পারে;

‘আমি মনে করি মানুষের মধ্যে উৎসাহ জাগিয়ে তোলার ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে আমার যা কিছু সম্পদ, শোয়াব বলেছিলেন। এটাই আমার সমস্ত ক্ষমতার গোড়ার কথা আর আমি মনে করি কোন মানুষের মধ্যের সেরা বস্তু আহরণ করার শ্রেষ্ঠ পথ হলো তাকে প্রশংসা করা আর উৎসাহ দেওয়া।

‘উপর মহলের কাছ থেকে নিম্ন পদস্থ লোকদের সমালোচনার মত আর কিছুই কোন মানুষের উচ্চাকাঙক্ষাকে এমনভাবে ক্ষতি করে না। আমি কাউকে সমালোচনা করি না। আমি কোন মানুষকে কাজ করার উৎসাহ দেওয়াতেই বিশ্বাসী। আমি তাই প্রশংসা করতেই উদ্বিগ্ন থাকতে অভ্যস্ত, আর দোষ খুঁজে পেতে আমি ঘৃণা করি। আমি যা পছন্দ করি তা হলো আমার কজে আমি আনন্দ লাভ করি আর প্রশংসা আমি দরাজ ভাবেই করি।’

ঠিক এটাই করেন শোয়াব। কিন্তু গড়পড়তা সাধারণ মানুষ কি করে? ঠিক এর উল্টোটাই। তাদের কোন কিছু পছন্দ না হলে তারা চিৎকার করে মরা মানুষকে জাগাতে চায় কিন্তু প্রশংসার কিছু থাকলে তারা মুখ খোলে না।

শোয়াব আরও বলেন, ‘আমার জীবনে বহু মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে সারা পৃথিবীর বহু বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শে আমি এসেছি। আমি আজও পর্যন্ত এমন কোন মানুষ দেখিনি তারা যত নামী দামী মানুষই হোন না কেন প্রশংসা করলে ভালো কাজ করেন নি বা সমলোচনায় ক্ষুব্ধ হন নি এমন কাউকেই পাইনি।’

শোয়ব আরও জানিয়েছিলেন অ্যাণ্ড কার্নেগীর সেই ঘটনাবহুল সাফল্যের চাবিকাঠিও এই জিনিস। কার্নেগী তার সহকর্মীদের খোলাখুলি আর আড়ালেও প্রশংসা করতেন।

এছাড়াও কার্নেগী তার সহকর্মীদের প্রশংসা করতে চেয়েছিলেন তার সমাধি প্রস্তরের মধ্য দিয়েও। তিনি নিজে একটা সমাধি ফলক লিখেছিলেন যাতে খোদাই করা ছিল এই কথাগুলো : ‘এখানে এমন একজন শায়িত আছেন যিনি তার চেয়েও বুদ্ধিমান মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারতেন।

জনসংযোগের কাজে রকফেলার সাফল্যের অন্যতম রহস্য ছিল আন্তরিকভাবে প্রশংসা করা। যেমন উদাহরণ হিসেবে একবার যখন তাঁর একজন অংশীদার এডওয়ার্ডটি বেডফোর্ড, দক্ষিণ আমেরিকায় কিছু লগ্নী করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশ লক্ষ ডলার ক্ষতি করে বসলেন, জন ডি অবশ্যই দারুণভাবে সমালোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি জানতেন বেডফোর্ড তার যথাসাধ্যই করেছেন–অতএব ব্যাপারটির ওখানেই ইতি ঘটলো। রকফেলার প্রশংসা করার একটা পথ পেয়ে গেলেন, তিনি তাই বেডফোর্ডকে প্রশংসা করে বললেন মোট টাকার শতকরা ষাট ভাগ তো তিনি বাঁচাতে পেরেছেন। একাজ সত্যিই দারুণ’, রকফেলার বলেছিলেন। উঁচু তলার মানুষও এমন সচরাচর করতে পারে না।’

জিগফিল্ড ছিলেন ব্রডওয়েকে যাঁরা উদ্ভাসিত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন সবসেরা প্রমোদ সংগঠক। তিনি সুনামের অধিকারী হয়ে ওঠেন আমেরিকান মেয়েদের গৌরবান্বিত করে তোলার কাজে সুক্ষ্ম ক্ষমতা অর্জন করে। তিনি কাজ করতেন এইভাবে, যাদের দিকে কেউ দুবার তাকায় না এমন সাধারণ মেয়েদের তিনি মঞ্চে বারবার নিয়ে এসে ক্রমে তাদের রহস্যময়ী আর লাবণ্যময়ী করে গড়ে তুলতেন। প্রশংসা আর আত্মবিশ্বাসের মূল্য তিনি জানতেন বলেই তিনি মেয়েদের তার সাহসিকতা আর বিবেচনাবোধ দিয়ে এই বিশ্বাস জাগাতেন যে তারা সুন্দরী। তিনি আসলে ছিলেন বাস্তববোধের মানুষ, তাই তিনি কোরাস মেয়েদের মাইনে মাসে ত্রিশ ডলারের বদলে প্রায় একশ পঁচাত্তর ডলারে তুলে দেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন খুবই চমকদার মানুষ। কোন অনুষ্ঠান রাত্রির উদ্বোধনের সময় তিনি প্রতিটি অংশগ্রহণকারিনীকে টেলিগ্রামে শুভেচ্ছা জানাতেন আর প্রতিটি কোরাসের মেয়েকে চমৎকার রক্ত গোলাপ উপহার দিতেন।

একবার আমায় অনাহারে থাকার পাগলামিতে পেয়েছিল আর তাই ছ’ রাত ছ’ দিন না খেয়ে কাটাই। ব্যাপারটা তেমন কঠিন ছিল না। দুদিনের শেষে যতখানি ক্ষুধার্ত ছিলাম তার চেয়ে ছ’দিনের মাথায় কমই ক্ষুধার্ত হই। তা সত্ত্বেও আমি জানি, আর আপনিও জানেন, অনেকেই নিজেদের অপরাধী ভাবতে চাইবে তারা যদি তাদের পরিবারের লোকজন বা কর্মচারিদের ছ’ দিন অনাহারে রেখে দেয়। অথচ তারাই আবার তাদের ছ’দিন কেন, ছ’ সপ্তাহ বা ষাট বছরেও তাদের আকাঙিক্ষত সেই আহার্যের মতই প্রশংসাটুকু করতে চাইবে না। অ্যালফ্রেড লাস্ট যখন ‘রিইউনিয়ন ইন ভিয়েনা’তে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তখন তিনি বলেন, ‘আমি যা সবচেয়ে বেশি চাই তা হলো আমার আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য কিছু প্রশংসা।‘

.

আমার নানা ভাবেই আমাদের ছেলেমেয়েদের, বন্ধু বাস্তব বা কর্মচারিদের শরীরের জন্য যত্নের ব্যবস্থা করি কিন্তু কদাচিৎ আমরা তাদের আত্মবিশ্বাসের যত্ন নিতে চাই। আমরা তাদের মাংস আর আলু খাইয়ে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করি কিন্তু দুঃখের কথা, তাদের প্রশংসার বাণী শোনাতে আমাদের অবহেলা অফুরন্ত। আমরা বুঝিনা এই প্রশংসা তাদের মনে প্রভাত সঙ্গীতের মতই চিরজাগরুক থাকতে পারে।

কোন কোন পাঠক বোধহয় এ পর্যন্ত পড়ে বলতে চাইবেন : পুরনো বস্তাবন্দী মাল! একদম বাজে আর তোষামোদ ছাড়া কিছুই না। এ জিনিস আমরা জানি। এতে কাজ হয় না–বিশেষ করে বুদ্ধিমান মানুষদের কাছে।

ঠিক কথা, তোষামোদ বুদ্ধিমান মানুষেরা কদাচিৎ ভোলেন। তোষামোদ হলো, স্বার্থপরতা মাখা আর কপটতায় জড়ানো কিছু। এটা সাধারণত ব্যর্থ হয় আর তা হওয়ারই কথা। এটাও সত্যি কথা যে কিছু কিছু মানুষ প্রশংসা শোনার জন্য এতই লালায়িত আর উদগ্রীব থাকে যে তারা যে কোন কিছুই গিলতে তৈরি। অনাহারক্লিষ্ট মানুষ যেমন ঘাস বা কুচোমাছের টোপও গিলে ফেলে।

উদাহরণ হিসেবে বহু বিবাহকারী ডিভানি ভাইদের কথাটাই একবার ধরুন। এই ডিভানি ভাইরা বিয়ের বাজারে একেবারে জ্বলজ্বলে তারার মতই ছিল। তারা অর্থাৎ এই তথাকথিত রাজপুত্ররা কেমন করে দুই অপরূপ সুন্দরী আর বিখ্যাত অভিনেত্রী, বিখ্যাত একজন অপেরা গায়িকা আর লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বারবারা হাটনকে বিয়ে করেছিলেন? কেন? আর কেমন করেই বা তারা এটা করে?

‘লিবার্টি’ নামে একটা কাগজে অ্যাডেলা রোজার্স সেন্ট জন লিখেছিলেন, ‘…. মেয়েদের কাছে ডিভানিদের আকর্ষণের ব্যাপার যুগ যুগ ব্যাপী কোন রহস্যেরই অঙ্গ।‘

তিনি আরও জানান, ‘বিখ্যাত পোলা নেগ্রী পুরুষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আর বিখ্যাত শিল্পী একবার ব্যাপারটা আমার কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ওরা তোষামোদের ব্যাপারটা এতই ভালো বোঝে যেটা আর কোন আমার দেখা পুরুষ কে কখনই দেখিনি। আর এই তোষামোদ ব্যাপারটা এই রসকষহীন বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আপনাকে কথা দিতে পারি যে, মেয়েদের কাছে ডিভানি ভাইদের আকর্ষণের রহস্যটাও এটাই।’

এমন কি মহারাণী ভিক্টোরিয়াও তোষামোদপ্রিয়া ছিলেন। ডিসরেলী স্বীকার করেছিলেন যে রাণীর সঙ্গে কাজকর্ম করার সময় তিনি এ কাজটা বেশ চমৎকার ভাবেই করতেন। তার ঠিক নিজের ভাষায় ব্যাপারটা ছিল এই রকম, ‘… বেশ চমৎকার করে তোষামোদের প্রলেপ লাগাতাম। এটাও জানা কথা ডিসরেলী ছিলেন বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ, নিখুঁত আর ধুরন্ধর একজন মানুষ। নিজের জগতে তিনি ছিলেন একজন পাকা লোক। তার পক্ষে যে কাজ করা সহজ ছিল সেটা আমার বা আপনার পক্ষে কাজের হবে না। শেষ পর্যন্ত এই তোষামোদ ভালো করার চেয়ে আপনার ঢের বেশি ক্ষতিই করতে পারে। তোষামোদ হলো অনেকটা জাল টাকার মত আর জাল টাকার মতই তা আপনাকে সেটা চালাতে গেলে বিপদে ফেলবে।

তাহলে প্রশংসা আর তোষামোদের মধ্যে তফাৎ কি? খুবই সহজ। একটা হলো আন্তরিক আর অন্যটা হলো কপটতা মাখানো। একটার উৎপত্তি হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আর অন্যটা সম্পূর্ণ বানানো। একটা স্বার্থপরতা মুক্ত আর অন্যটা স্বার্থপরতা জড়ানো। একটিকে সারা পৃথিবীই প্রশংসা করে আর অন্যটাকে সারা দুনিয়া ঘৃণা করে।

আমি কিছু দিন আগে মেক্সিকো সিটির ক্যাপশটেপেক প্রাসাদে জেনারেল ওব্রেগণের একটা আবক্ষ মূর্তি দেখে এসেছি। মূর্তির নিচে জেনারেল ওব্রেগণের জীবন দর্শন থেকে এই কথাগুলো খোদাই করা আছে : ‘যে শত্রু আপনাকে আক্রমণ করছে তাকে ভয় পাবেন না। যে বন্ধুরা আপনাকে তোষামোদ করে তাদের সম্পর্কে সাবধান থাকুন।

না! না! না! আমি তোষামোদের হয়ে ওকালতি করছি না। এর ধারে কাছেও আমি যাচ্ছি না। আমি শুধু এক নতুনজীবন প্রবাহের কথাই বলছি। আমাকে আবার বলতে দিন-’আমি এক নতুন জীবন প্রবাহের কথাই বলছি।

রাজা পঞ্চম জর্জ বাকিংহাম প্রসাদে তাঁর স্টাডি কক্ষে ছয়টি নীতিবাক্য টাঙিয়ে রেখেছিলেন। একটি নীতিবাক্য হলো : ‘সস্তা তোষামোদ করতে বা পেতে যেন শিক্ষা না পাই।’ এটাই আসল কথা, তোষামোদ হলো সস্তা প্রশংসা। একবার তোষামোদের চমৎকার একটা অর্থ শুনেছিলাম। সেটা বলার লোভ সামলাতে পারছি না : ‘তোষামোদ হলো লোকটি আসলে নিজের সম্পর্কে কি ভাবে সেটাই বলে দেওয়া।’

আমরা যদি সবাই তোষামোদ করতে চাইতাম, তাহলে সবাই সেটা গ্রহণ করে কাজ করতো আর আমরাও মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে রপ্ত হয়ে উঠতাম। আমরা যখন কোন বিশেষ সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই না, আমরা সাধারণত আমাদের ভাবনার শতকরা ৯৫ ভাগই নিজের সম্বন্ধে ভেবে কাটাই।

এখন কিছুক্ষণের জন্যও যদি নিজেদের সম্বন্ধে আমরা ভাবনা বন্ধ করি আর অন্য সবাইয়ের ভালো ভালো ব্যাপারে ভাবতে শুরু করি তাহলে আমাদের ওই সস্তা আর মিথ্যে তোষামোদ রপ্ত করা দরকার হবে না। সেটা প্রায় মুখ থেকে বের করার আগেই লোকে জেনে ফেলবে।

এমার্সন বলেছিলেন : ‘যেসব মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে তারা সবাই কোন না কোনভাবে আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এর মধ্য দিয়েই আমি তার সম্পর্কে জানতে পারি।’

এটা যদি এমার্সনের ক্ষেত্রে সত্য হয় তাহলে কি তা আমার বা আপনার ক্ষেত্রে হাজার গুণ বেশি সত্য হয়ে উঠবে না? আসুন, আমাদের কাজ কর্ম আর চাহিদা নিয়ে চিন্তা ভাবনা বন্ধ করি আর চেষ্টা করি অন্য সবাইয়ের সদগুণ নিয়ে। তোষামোদ ব্যাপারটাও ভুলে যান। শুধু আন্তরিক আর ভালো প্রশংসা করতে থাকুন। অন্যকে সমর্থনের বেলায় হাসিমুখে সেটা করুন আর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠুন তাহলেই দেখবেন মানুষ আপনার কথা মনে রাখবে আর সেটা আঁকড়ে রেখে সারাজীবন বারবার বলেও চলবে–আপনি তা ভুলে গেলেও বহু বছর পরেও তারা সেটা মনে রাখবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *