০২. খুঁটিনাটি

যে মেয়েটির সঙ্গে কলেজের শেষ দিকে আমার বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল সে শিপ্রা, শিপ্রা চৌধুরি। শিপ্রার দুটি জিনিস আছে, যে জিনিসটি আমাকে আকর্ষণ করে তা তার রসবোধ আর যে জিনিসটি বিকর্ষণ করে তা হল যে কোনও কিছু নিয়ে তার উদ্বিগ্নতা। দেখছে ক্লাসের একটি মেয়ে লিভারের অসুখগুলো পড়ছে শিপ্রা সঙ্গে সঙ্গেই উদ্বিগ্ন, কেন মেয়েটি লিভারের অসুখ পড়ছে, নিশ্চয়ই এ নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে! তক্ষুনি সে রাত জেগে লিভারের অসুখ পড়া শুরু করে দিল। কেউ একজন বলল, হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া না করলে মেডিকেলের লেখাপড়া ঠিক হয় না। যেই না বলা, যদিও বাড়িতে বসে শিপ্রার লেখাপড়া চমৎকার হচ্ছিল, ব্যাগে কাপড় চোপড় ভরে সে হোস্টেলে রওনা হল। শিপ্রার পড়ার সঙ্গী ছিল একটি ছেলে। ভাল ছাত্র হিসেবে ছেলের নাম ছিল। এরপর আরও ভাল ছাত্র হিসেবে যখন আরও কজনের নাম হল, তখন শিপ্রা সেই আরও ভালর দিকে নজর দিতে শুরু করল, মুখ চোখ ওর বিষাদাচ্ছত। কেন সে সেই আরও ভালদের পাচ্ছে না সঙ্গী হিসেবে! শিপ্রার স্বস্তি নেই সহজে। শিপ্রার বাড়ি শহরে। খাগডহর পার হয়ে জেলখানা, জেলখানার কাছে পুরোনো বোম্বাই কলোনি, সেখানে তার মা আর সে থাকে। বাবা অনেক আগেই শিপ্রার মাকে ছেড়ে চলে গেছে। শিপ্রার মা চাকরি করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাপাই নবাবগঞ্জের মানুষ তিনি, বদলির চাকরিতে ঘুরতে ঘুরতে এই ময়মনসিংহে এসে থিতু হয়েছেন। শিপ্রার মাকে দেখলে অগাধ শ্রদ্ধা জাগে। এমন স্বনির্ভর, এমন আত্মপ্রত্যয়ী মা খুব একটা দেখা হয়নি আমার। শিপ্রা এই শহর থেকেই বিদ্যাময়ী পাশ করে আনন্দমোহন পাশ করে মেডিকেলে ঢোকে। এতবছর এ শহরে থেকেও শিপ্রা কথা বলে রাজশাহীর ভাষায়। ময়মনসিংহের ভাষার তুলনায় পরিচ্ছত, সুন্দর। আইবাম, খাইবাম, যাইবাম চন্দনার মত রপ্ত করা শিপ্রার পক্ষে সম্ভব হয় না, এখনও সে আসব খাব যাবতে রয়ে গেছে। তা থাক, শিপ্রা যেমন আছে, তেমন থাকলেই দেখতে ভাল লাগে। শিপ্রা লম্বায় আমার চেয়ে দুইঞ্চি বেশি, মেদ মাংসে আমার চেয়ে কেবল দুইঞ্চি নয়, অনেক ইঞ্চিই বেশি। ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়ে বলে আমার পরিচয়খানি শিপ্রার সামনে এসে খুব ম্লান না হলেও খানিকটা তো হয়ই। এই ম্লানতা আমাকে, আমি লক্ষ্য করেছি, ছুঁতে পারে না।

মাঝে মধ্যে ক্যাম্পে যাওয়া ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা আপিসের চাকরিটি যেহেতু আমার বসে থাকার, তাই শিপ্রার সঙ্গে আমার দেখা হতে থাকে ঘন ঘন, আড্ডা হতে থাকে দীর্ঘ দীর্ঘ। আমি আর শিপ্রা ছাড়া আমাদের ক্লাসের আর কোনও ছেলে বা মেয়ে এই শহরে চাকরি করছে না, শিপ্রা বাউন্ডারি রোডে পঙ্গু সেবালয়ে বসে। তারও কাজ নেই। শহরে বড় একটি হাসপাতাল থাকলে এসব ছোট খাটো জায়গায় বেশি কেউ আসে না। মেডিকেল কলেজের আমরাই শেষ ডাক্তার যারা পাশ করার পরই সরকারি চাকরি পেয়েছি। আমাদের পরের বছর থেকে যারা ডাক্তার হয়ে বেরোচ্ছে, তাদের জন্য আপনাতেই কোনও চাকরি হয়নি। তারা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় ঘুরছে চাকরি পেতে, সরকারি চাকরি পেতে হলে তাদের বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এই উদ্ভট ১৩ পরীক্ষাটি পাশ করা আর সবার সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক হলেও ডাক্তারদের জন্য ছিল না। নিয়ম চালু হয়েছে নতুন। খবর পাই যে আমরা যারা সরকারি চাকরি করছি, তাদেরও নাকি পরীক্ষাটি পাশ করতে হবে। কি কারণ? আমাদের তো চাকরি পাওয়ার কিছু নেই, আমরা তো সেই কবেই পেয়ে বসে আছি। কিন্তু সরকারি নতুন নিয়ম হল, পেয়েছি বটে চাকরি তবে পরীক্ষাটি পাশ করতে হবে চাকরিটি স্থায়ী করার জন্য। সরকারি চাকরি আবার অস্থায়ী হয়, এমন কথা শুনিনি কোনওদিন। এতকাল জানতাম সরকারি চাকরি মানেই স্থায়ী চাকরি। খবরটি শুনে শিপ্রা উদ্বিগ্ন। মোটা একটি বিসিএস গাইড কিনে সে মুখস্ত করতে শুরু করে দিল। আমারও একটি গাইড জোটে বটে কিন্তু পাতা ওল্টানো হয় না। পঞ্চম শ্রেণীর বালিকাদের মত গরুর রচনা লেখা আর ভাব সম্প্রসারণ করার কোনও ইচ্ছে হয় না আমার। বিসিএস ব্যপারটি বাংলা ইংরেজি অংক ইতিহাস ভুগোল থেকে শুরু করে গার্হস্থ বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞান সবকিছুর খিচুড়ি। আমি ডাক্তারি করব, ডাক্তারি ভাল জানলেই তো হল, আমার ওই খিচুড়ি জানতে হবে কেন! সরকার আর ডাক্তারদের চাকরি দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না, তাই চাকরি যেন কম দেওয়া যায় তাই এই ব্যবস্থা। বিসিএস যারা পাশ করবে, তাদের জন্যও চাকরির ব্যবস্থা না করতে পারলে মনে হয় চারশ মিটার দৌড়ের একটি আয়োজন করবে সরকার, যে জিতবে তাকেই দেওয়া হবে সরকারি চাকরি। ভাব দেখে মনে হয় যে ডাক্তারে ভরে গেছে দেশ, কোথাও জায়গা নেই আর ডাক্তার বসানোর। বলা হচ্ছে সরকারের তহবিলে অত টাকা নেই যে চাকরি দেবে। ডাক্তারদের চাকরি দিতে পারছে না সরকার, অথচ দেশে কয়েক হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন ডাক্তার।

শিপ্রা আর আমি ঢাকায় গিয়ে বিসিএস নামক পরীক্ষাটি দিয়ে আসি। গরুর রচনা না লিখলেও ছাগলের রচনা লিখতে হয়েছে। সরল অসরল সব রকম অংক কষে তরল করে, কাজী নজরুল ইসলাম কোন সালে জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন, তা বানিয়ে দিয়ে, গোয়ালা ৫ সের দুধে ২ সের পানি মিশাইলে ২৮ সের দুধে কয় সের পানি মিশাইয়াছের উত্তরে তিন বালতি আর বৈকাল হৃদ কোথায় অবস্থিতর উত্তরে বগুড়া বসিয়ে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে আমরা আমাদের চাকরি স্থায়ী করি। এই পরীক্ষা পাশে চাকরির কোনও হেরফের হয় না, যেমন ছিল তেমনই থাকে। যারা বিসিএস পরীক্ষায় ফেল করে বসে আছে, তাদের চাকরিতেও কোনও চিড় ধরে না।

শিপ্রার জীবনে এরপর দুটি ঘটনা ঘটে। একটি হল বোম্বাই কলোনি থেকে সে আর তার মা চলে যায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টারে। দ্বিতীয়টি হল শিপ্রা প্রেমে পড়ে। প্রেমের পড়ার ব্যপারটি শিপ্রার জীবনে খুব উল্লেখযোগ্য। কারণ জীবনে সে প্রথম প্রেমে পড়েছে। মানু নামের এক ডাক্তার ছেলের প্রেমে পড়েছে সে। মানু বিবাহিত। শিপ্রাও বিবাহিত। শিপ্রার স্বামী থাকে মস্কোয়। ডাক্তারি পাশ করার পর শিপ্রা যখন দেখল যে ক্লাসের মেয়েরা ফটাফট সব ডাক্তার ছেলেদের বিয়ে করছে তখন সে যথারীতি খুব উদ্বিগ্ন। সকলে যখন বিয়ে করছে তখন বিয়ে ব্যপারটি নিশ্চয়ই মন্দ কোনও ব্যপার নয়, তারও নিশ্চয়ই তবে বিয়ে করা উচিত। কিন্তু বিয়ে করার জন্য পাত্র কোথায় পাবে সে! আশে পাশের কোনও ডাক্তারকে তার পছন্দ হয় না, এর এই মন্দ তো ওর ওই মন্দ। কাউকে যদিই বা পছন্দ হয়, তার সম্পর্কে সে অন্যদের কাছে জানতে চায়, অন্যরা ঠোঁট উল্টো দুএকটি কথা বললেই শিপ্রা চুপসে যায়। এরপর আমাকেই একদিন কণ্ঠে বড় উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কী করি বলো তো! বিয়ে করার কাউকে তো পাচ্ছি না। আমি বলেছিলাম, বিয়ে তোমার এক্ষুনি করতে হবে কেন! অনেকে আছে এখনও বিয়ে করেনি।

এ কথা শিপ্রাকে কদিন শান্ত রেখেছিল। এরপর শুনলো ক্লাসের কুৎসিত দেখতে কিছু মেয়েও বিয়ে করে ফেলেছে। এখন উপায় কি হবে! আমি কজন সুন্দরী মেয়ের উদাহরণ দিয়ে বললাম, ওরা তো এখনও করেনি। সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে হালিদার কথা বিশেষ করে বললাম।

শিপ্রা বলল, হালিদার কথা বাদ দাও। হালিদা তো জীবনে বিয়ে করবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরপর শিপ্রা ভাবনা চিন্তা করে খুঁজে পেল তার এক খালাতো ভাই আছে বিয়ের বয়সী। যেই ভাবা সেই কাজ, খালাতো ভাইটি কোথায় আছে খবর নাও। খবর নিয়ে জানা গেল খালাতো ভাইটি মস্কোতে আছে, মস্কোতে সে দাঁতের ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল, ডাক্তার হয়ে বেরিয়েছে। শিপ্রা এবার বলতে শুরু করল, আচ্ছ! বল তো এই হুমায়ুনকে একটা চিঠি লিখলে কেমন হয়! বলব আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।

আমি বললাম, তাকে সেই ছোটবেলায় দেখেছো, এখন কি মিলবে তোমার মনের সঙ্গে? দেখ ভেবে।

শিপ্রা ভাবতে বসল। হুমায়ুন মস্কোয় মানুষের ডাক্তার না হলেও মানুষের দাঁতের ডাক্তার হয়েছে, এ আর এমন কি খারাপ! সাধারণত মানুষের ডাক্তাররা গরুর ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার এসব হাবিজাবি ডাক্তারদের পাত্তা দেয় না। কিন্তু শিপ্রা এমন মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে শেষ পর্যন্ত সে হুমায়ুনকে মস্কোতে একটি চিঠি পাঠিয়ে দেয়, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোনও কথা নয়, একেবারে সরাসরি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। হুমায়ুন কোনও এক কালে উলুঝুলু চোখে তাকিয়েছিল তার দিকে, সেটিকে সম্বল করেই শিপ্রার এই আবেদন। হুমায়ুন রাজি হওয়ার পর শিপ্রা আর দেরি করেনি, সোজা উড়ে গেছে মস্কোয়, ওখানে বিয়ে করে মাস দুয়েক স্বামীর হোস্টেলে কাটিয়ে পেটে বাচ্চার ভ্রুণ নিয়ে দেশে ফিরেছে। শিপ্রার বাচ্চা হয় জোবায়েদ হোসেনের হাতে। বাচ্চাটি দেখে তিনি বলেছিলেন, হাতির পেট থেকে মুষিক বেরিয়েছে রে। মুষিকের নাম শিপ্রা রাখে আনন্দ। আনন্দ তার নানির যত্নে বড় হচ্ছে। শিপ্রা চাকরি করছে, মানুর সঙ্গে প্রতিদিনই তার দেখা হচ্ছে। মানুরও একটি ছেলে আছে, নাম হৃদয়। মানুর মত লোক ছেলের নাম হৃদয় রাখতে পারে, খানিকটা আশ্চর্যই হয়েছিলাম। মানুর মুখখানা সুন্দর হলেও, শরীরখানা মেদহীন হলেও, কথা বলতে গিয়ে ময়মনসিংহি আঞ্চলিকতার বাইরে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারে না, শিপ্রা বলছে যেতে হবে, মানু বলছে যাইতে অইব। শিপ্রার সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে উৎসাহ থাকলেও মানুর সামান্যতমও নেই। লম্বায় শিপ্রার চেয়ে দু ইঞ্চি খাটো খাঁটি ময়মনসিংহি গাট্টাগোট্টা কালচে মানু যখন ঝড়ের বেগে মোটরসাইকেলে শহর চষে বেড়ায়, দেখে যে কেউ বলবে ডাক্তার না হয়ে পাড়ার মাস্তান হলে তাকে মানাত বেশি। মানুর কোটরে আর কিছু নয়, পরিস্কার দুটো গরুর চোখ। এমন চোখ ছেলেদের মুখে ঠিক মানায় না। মানায় না বলেই মানুর ইস্পাতি শরীরটির কাঠিন্য চোখদুটোই আড়াল করে রাখে। শিপ্রা ভুলেই গেছে স্বামী বলে একটি বস্তু তার আছে, বস্তুটি একদিন মস্কো থেকে ফিরে আসবে দেশে, বস্তুটি তাকে আর তার ছেলে আনন্দকে নিয়ে একটি সংসার গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ফিরবে। হুমায়ুনের স্বপ্ন নিয়ে শিপ্রা মোটেও উদ্বিগ্ন নয় বস্তু নিয়ে, উদ্বিগ্ন মানুকে নিয়ে। মানু তাকে সত্যি ভালবাসে তো! আমার কাছে জানতে চায় কী মনে হয় আমার, মানু তাকে ভালবাসে কি না। আমি কি করে বলব, মানুর মনে কি আছে। তখন একবার কেবল দেখেছি তাকে, শিপ্রা পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছে, মানু তাকে থামিয়ে উনারে চিনি ত! বলে আমার দিকে তেরচা চোখে সব জানি ভঙ্গিতে তাকিয়ে ডাক্তার রজব আলী ত আপনের বাবা বলে দৃষ্টিটি আমার মুখ থেকে সরিয়ে শিপ্রার মুখে মুহূর্তের জন্য ফেলে, তা থেকেও আবার সরিয়ে হাতের একটি কাগজে ফেলল। কাগজটি জরুরি কোনও কাগজ নয়, কিন্তু মানুর কাছে তখন খুবই জরুরি। শিপ্রার মুখে সেদিন মিষ্টি মিষ্টি হাসি আর মানুর মুখে বিন্দু বিন্দু ব্যস্ততার ঘাম। ঘাম মুছে ফেললেই হত, মানু মুছে ফেলেনি। আমি খুব নিশ্চিত হতে পারিনি মানুর আদৌ কোনও দুর্বলতা আছে কি না শিপ্রার জন্য। শিপ্রার এই মানু-প্রেম গড়িয়ে গড়িয়ে আপিসের অঙ্গন ছাড়িয়ে যায়। অবকাশের ধূলির ওপর শিপ্রার পদধূলির আস্তর জমে ওঠে। দীর্ঘক্ষণ মানুর লাল মোটর সাইকেলের দাঁড়িয়ে থাকায় অবকাশের মাঠের ঘাস জন্মের মত মাটির সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। বৈঠকঘরে বসে তারা সময় কাটাতে থাকে কথা বলে, তর্ক করে, অভিমান করে, রাগ করে, হেসে, কেঁদে, ঠাট্টা করে, চিমটি কেটে, কালপরশুর জন্য প্ল্যান করে। একসময় আমার বৈঠকঘর তাদের জন্য মোটেও প্রয়োজন হল না। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় শিপ্রার বাড়ির মাঠেই মানুর মোটর সাইকেল থামতে থামতে ওখানের ঘাসগুলোকে চিড়ে চ্যাপ্টা করে, হলুদ করে, মেরে, মাটির তলায় ডুবিয়ে দিতে থাকে। মানুর সঙ্গে তখন আর খুনসুটি নয়, রীতিমত বিছানায় গড়াগড়ি যায় শিপ্রা। গভীর রাতে মানু বাড়ি ফিরে যায়। শিপ্রার মা পাশের ঘরে বসে শব্দ শোনেন সবকিছুর, মোটর সাইকেল আসার যাওয়ার, শিৎকারের চিৎকারের। কিন্তু মেয়ের জীবনে তিনি নাক গলাতে পছন্দ করেন না। মেয়ে তাকে বলে দিয়েছে, ওই হুমায়ুনের সঙ্গে শোয়া আর না শোয়া সমান কথা, ও লোক মোটেও তাকে তৃপ্ত করতে পারে না। শিপ্রা আমাকে নিখুঁত বর্ণনা করেছে বিছানায় হুমায়ুনের ভূমিকা — উঠল, কী করল সে নিজেই জানে, নেমে পড়ল। শিপ্রা তার শরীর খানা আর হুমায়ুনের জন্য খরচ করতে চায় না।

হুমায়ুন পাকাপাকিভাবে দেশে ফেরার পরও মানু গিয়েছে শিপ্রার বাড়িতে, স্বামীর সামনেই শিপ্রা মানুর সঙ্গে ঘন হয়ে বসেছে, ফিসফিস করেছে, ঢলে পড়েছে মানুর শরীরে হাসতে হাসতে। সে পারে না নিজের আবেগের আগুন কোনও কিছু দিয়ে চাপা রাখতে। দাউ দাউ করে যার তার সামনে লাল জিভ বেরিয়ে আসে। হুমায়ুনের সঙ্গে রাতে সে ভাই বোনের মত পাশাপাশি শুয়ে ঘুমোয়, শরীরে হুমায়ুনের হাত তো নয় হাতের ছায়া পড়ার আগেই শিপ্রা বলে ওঠে, বিরক্ত কোরো না তো!

হুমায়ুন রাজশাহীতে চলে গেল দাঁতের একটি ক্লিনিক তৈরি করতে। হুমায়ুনের কি হবে না হবে তার কিছুই না ভেবে শিপ্রা মানুর জন্য দিন দিন উন্মাদ হয়ে ওঠে। মানু শিপ্রাকে বলেছে যে তার বউকে সে তালাক দিয়ে শিপ্রাকে বিয়ে করবে। শিপ্রা বিশ্বাস করেছে সব। শিপ্রা জানে না যে মানুর সঙ্গে তার সাদামাটা ধার্মিক ডাক্তার বউ শিরিনএর খুব ভাল সম্পর্ক, আনু নামের এক ডাক্তারকে সে অনেকটা রক্ষিতা হিসেবে রেখেছে এবং শিপ্রাকে সে ব্যবহার করছে প্রেমিকা হিসেবে। মানু প্রতিদিন তিন রমণীকে ভোগ করে যাচ্ছে, এবং তিনজনকেই সে তিন রকম ভাবে ভালবাসার কথা শোনাচ্ছে। শিপ্রা জানে না যে মানু আসলে কাউকেই ভালবাসে না, ভালবাসে কেবল নিজেকে।

মানুর এই চরিত্রের কথা আমি জেনেছি ইয়াসমিনের কাছ থেকে। ইয়াসমিনের জেনেছে তার সহপাঠী বন্ধু মিলনের কাছ থেকে, মিলন মানুরই আপন ছোট ভাই। এর চেয়ে ভাল আর কী প্রমাণ থাকতে পারে।

শিপ্রাকে আমি বলেছি, ‘দেখ এত উন্মাদ হয়ো না, মানু শুধু তোমাকে ভোগ করতে চায়, তোমাকে সে ভালবাসে না।’

‘কিন্তু মানু তো আমাকে বলেছে যে সে আমাকে ভালবাসে।’

‘মিথ্যে বলেছে।’

শিপ্রা মিথ্যে বলে না, তাই সে ভেবেছে অন্যরাও বুঝি মিথ্যে বলে না।

‘তোমার সঙ্গে শুয়ে সে আনুর বাড়িতে আনুর সঙ্গে শুতে যায়, তারপর আনুর বাড়ি থেকে এসে শিরিনের সঙ্গে শোয়।’

‘মানু আমাকে বলেছে, এক আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া আর কারও সঙ্গে তার এই সম্পর্ক নেই।’

এরপর শিপ্রা উঠে পড়ে লাগে সত্যতা যাচাই করতে। মানু এদিকে কোরান শরীফ মাথায় নিয়ে কসম কেটে বলছে আনুর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই, আনুর ছায়া মাড়ায় না মানু, কথা বলা তো দূরের কথা। শিপ্রা কোরানে বিশ্বাস না করলেও মানু করে। কোরানে বিশ্বাস করা লোক কোরান নিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারে না, শিপ্রার ধারণা। কিন্তু একদিন শিপ্রা একটি অদ্ভুত কাজ করে। সে তার গায়ে একটি কালো বোরখা চাপিয়ে, বাসে করে মুক্তাগাছায় গিয়ে, মুক্তাগাছা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, যেখানে মানু আর আনু দুজনেই চাকরি করে, ঢোকে। রোগীদের কাতারে দাঁড়িয়ে থাকে রোগীর মত। বোরখার আড়াল থেকে লক্ষ্য করে মানু আর আনুকে। মানু আর আনু দুজনে গল্প করছে, হাসছে । শুধু দেখাই তার উদ্দেশ্য ছিল না, দেখা দেওয়াও ছিল উদ্দেশ্য। হঠাৎ মানু আর আনুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শিপ্রা বোরখার মুখটি চকিতে খুলে ফেলে। মানু ভূত দেখার মত চমকে ওঠে। দুজনকে হাতে নাতে ধরার পরই শিপ্রার সঙ্গে মানুর সম্পর্ক শেষ হতে পারতো কিন্তু হয় না। মানু ক্ষমা টমা চেয়ে কেঁদে কেটে একাকার করে শিপ্রাকে আবার বশে আনে।

যে শিপ্রা হিসেব করে জীবন চলত, যে শিপ্রা যে কোনও কিছুতেই উদ্বিগ্ন হত, সেই শিপ্রা কী ভীষণ রকম পাল্টো গেছে! আমাদের বয়সী ডাক্তাররা এফসিপিএসএ ভর্তি হবার জন্য দিন রাত পড়াশোনা করছে জেনেও শিপ্রা কোনও আগ্রহ দেখায় না এফসিপিএসএর জন্য। তার নাওয়া খাওয়া সব গোল্লায় গেছে। শরীর শুকোচ্ছে। সুন্দর মুখটিতে কালো কালো দাগ পড়ছে। যে শিপ্রা প্রাণখুলে হাসতো, অন্যদের হাসাতো, যার রসবোধ ছিল অতুলনীয়, সেই শিপ্রা শুকনো মুখে বসে থাকে মরা গুঁড়ির মত, শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে রং ওঠা দেয়ালের দিকে। মানুর জন্য পাগলের মত কাঁদে সে। যার আত্মমর্যাদা বোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর, সে ই কি না নিজেকে অপমানিত হতে দিচ্ছে একটা অসৎ অর্থলোভীর কাছে। মানু এর মধ্যেই নদীর পাড়ে একটি চেম্বার খুলে বসেছে, রিক্সাঅলা-দালালদের দিয়ে গুদারাঘাটে গ্রাম থেকে শহরে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী ধরে আনে। খামোকা রোগীর মল মুত্র রক্ত পরীক্ষা করার নাম করে রোগীর কাছ থেকে প্রচুর টাকা খসিয়ে নেয়। শিপ্রা দেখে সব, দেখেও তার চক্ষু বুজে থাকে। তার চলাফেরা নিয়ে কে কি বলল না বলল এ নিয়েও তার কোনও উদ্বেগ নেই। সে যে করেই হোক, যা কিছুর বিনিময়েই হোক, মানুকে চায়। মানু শিরিনকে আজ তালাক দেবে, কাল দেবে করে করে বছর চলে যাচ্ছে তালাক দিচ্ছে না। শিপ্রা কি বোঝে না এসব! বোঝে না যে মানু তাকে ধোঁকা দিচ্ছে! আসলে সে কোনওদিনই ওই গর্দভ বউটিকে তালাক দেবে না! শিপ্রার এই বোধবুদ্ধিহীন প্রেমটি দেখলে আমার বড় বিরক্তি ধরে।

একদিন শিপ্রা আমার বাড়ি এসে অনেকক্ষণ বসে থাকে। অনেকক্ষণ কাঁদে, একসময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, ‘জীবনে আমি অন্তত একবার অরগাজমের স্বাদ পেতে চাই।’ আমি তো অবাক, ‘বল কি! তুমি অরগাজম পাওনি আজও?’

শিপ্রা বলল সে পায়নি। হুমায়ুনের কাছ থেকে তো প্রশ্ন ওঠে না। মানু যেহেতু সঙ্গমে পটু, দীর্ঘক্ষণ, চাইলে দুঘন্টাও চালিয়ে যেতে পারে, মানুর পক্ষেই হয়ত সম্ভব তাকে অরগাজম দেওয়া।

শিপ্রার ওপর আমার রাগ হয় আবার মায়াও হয়।

অরগাজম নিয়ে এরপর আমি একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছি বেশির ভাই মেয়েই জানে না জিনিসটি কী। শিপ্রা কোনওদিন এটি না পেলেও জানে অরগাজম বলে একটি ব্যপার আছে. তাই সে এটি পেতে চায়। যারা জানে না এটি কি জিনিস, তারা তো কোনওদিন এটি চায়ও না।

আমার জীবন কেবল শিপ্রার ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ নিয়ে কাটে না। নিজের ডাক্তারি বিদ্যেটি কাজে লাগানোর জন্য আমি যত রকম চেষ্টা করা যায়, করতে থাকি। নাম ডিগ্রি লিখে রোগী দেখার সময় উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড লিখিয়ে অবকাশের কালো ফটকে টানিয়ে দিই। জমান প্রিন্টার্স থেকে ডাক্তার লেখা প্যাড করেও নিয়ে আসি। সবই হয়। রোগীও আসতে শুরু করে। কিন্তু পাড়ার রোগী, চেনা মুখ। যখনই ওরা ডাক্তারের ফি দিতে যায়, লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে যায়। কান যেন লাল না হয়, কানের রং যেমন আছে, তেমন যেন থাকে তার জন্য চেষ্টা করেছি, তারপরও লাল হওয়া কমেনি। পাড়ার লোকের কাছ থেকে টাকা নিতে হাত ওঠে না, প্রেসক্রিপশান লিখে হাত টেবিলের তলায় গুটিয়ে রাখি। এরপর আরও একটি শখ হয় আমার। শখটি একটি ক্লিনিক করার। বেদনা নাশক ব্যবহার করে প্রসূতিদের সন্তান প্রসব করানোর জন্য অবকাশের সামনের ঘরটিকে ছোটখাটো একটি ক্লিনিক করার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ির উঠোনে একটি পড়ে থাকা বড় একটি টিন ধুয়ে মুছে রং করিয়ে ডাক্তার তসলিমা নাসরিন, এম বি বি এস, বি এইচ এস(আপার), স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, এখানে বেদনা নাশক ব্যবহার করে বাচ্চা ডেলিভারি করা হয় ইত্যাদি লিখিয়ে আনি গোলপুকুর পাড়ে জয়ন্ত তালুকদারের দোকান শিল্পশ্রী থেকে। যেদিন সাইনবোর্ডটি অবকাশের সামনে টাঙালাম, সেদিনই বাবা এটি খুলে বারান্দায় এনে রেখে বললেন ক্লিনিক শুরু করতে গেলে লাইসেন্স লাগে, যেখানে সেখানে ক্লিনিক বসিয়ে দিলেই হয় না। ডাক্তারি করার জন্য আমার অতি-উৎসাহ দেখে বাবা নিজেই আমাকে একটি চাকরি দিলেন, চাকরি পেয়ে আমি মহাখুশি। তাঁর চেম্বারের বারান্দায় ছোট একটি ঘর বানিয়ে একটি প্যাথলজি ক্লিনিক দিয়েছেন, টেবিলে মাইক্রোসকোপ, তাকে লাল নীল শিশি সাজানো। বিকেলে সেখানে বসব। তিনি তার রোগীদের মলমুত্রকফথুতু পাঠাবেন আমার কাছে, আমি পরীক্ষা করে দেব। কুড়ি টাকা করে পাবো প্রতি পরীক্ষায়। এসময় বাবার সঙ্গে আমার বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। রাতে বাড়ি ফিরে বাবা আমার সঙ্গে মাঝে মাঝে দাবা খেলতে বসেন, অবশ্য আমাকে হারিয়ে দিতে তাঁর খুব বেশি সময় কখনও লাগে না। সে এক দেখার বিষয় হয় আমাদের দাবা খেলা। বাড়ির সকলে আমার পক্ষে, বাবার পক্ষে কেবল এক বাবাই। মা খুব চান আমি যেন বাবাকে হারিয়ে দিই। বাবা আমার ঘোড়া খেয়ে নিলেন তো মা অস্থির হয়ে বলতে থাকেন, ইস, ঘোড়াটা আগেই সরাইয়া ফেলতা, দেখ না তোমার বাবা কেমনে চিন্তা কইরা খেলে। তুমি চিন্তা ছাড়াই গুটি সরাও কেন? আমি হারলে আমি আর কত, আমার চেয়ে অনেক বেশি নিরানন্দে ভোগেন মা। বাবার প্যাথলজিতে গিয়ে মলমুত্র পরীক্ষায় একসময় ভাটা পড়ে যখন পপুলার ক্লিনিক থেকে কল আসা শুরু হয়। পুপুলার ক্লিনিকটি সি কে ঘোষ রোডে, দাদার বাচুপান কা দোস্ত জাহাঙ্গীর ক্লিনিকের মালিক। ওখানে ডাক্তারি ভাষার মেনস্ট্রুয়েশন রেগুলেশন, সংক্ষেপে এমআর, সাধারণের ভাষায় এবরশান করাতে আসে মেয়েরা, তাদের জন্যই আমার ডাকা। প্রতি এমআরে তিনশ টাকা দেওয়া হয় আমাকে। বাকি এক হাজার বা বারোশ টাকা ক্লিনিক নিয়ে নেয়। এম আর এ আমার হাত মোটেও পাকা ছিল না। এ বিষয়টি ডাক্তারি শাস্ত্রের তেমন কোনও জরুরি বিষয় নয়। একটি মোটা মত সিরিঞ্জে উল্টো চাপ দিয়ে জরায়ুর ভেতরের ভ্রূণ বের করে নিয়ে আসতে হয়। অপারেশন থিয়েটারে নার্সরাই রোগীকে টেবিলে শুইয়ে তৈরি করে রাখে, আমাকে শুধু গিয়ে হাতে গ্লবস পরে ব্যপারটি সারতে হয়। প্রথম প্রথম দুএকজন রোগীর জরায়ু পরিষ্কার হয়নি, ইনফেকশনে ভুগেছে, আবার ফেরত গেছে ভেতরের রয়ে যাওয়া জিনিস বের করতে। ওই দুএকটি দুর্ঘটনা দেখে আমি মরমে মরেছি। ধীরে ধীরে হাত পেকে যায় এমআরে। ছায়াবাণী সিনেমার কাছে সেবা নার্সিং হোমেও আমার ডাক পড়ে এমআর করার জন্য। বাড়তি টাকা উপার্জন হচ্ছে বেশ। বাবা ডাক্তারি ব্যপার নিয়ে আমার আগ্রহ উসকে দেন তবে ছোটখাটো চাকরি আর খুচরো কিছু এবরশান নিয়ে আমার পড়ে থাকা তিনি চান না, চান আমি পড়াশোনা করি। এফসিপিএস ডিগ্রি নিই। এফসিপিএস না পাশ করলে এমবিবিএস দিয়ে কাজের কাজ কিμছু হবে না। চিরকাল গাঁওগেরামের ডাক্তার হয়ে থাকতে হবে। এমবিবিএস আজকাল অলিতে গলিতে পাওয়া যায়। সত্যিকার ডাক্তারি করতে চাইলে এক্ষুনি যেন আদা জল খেয়ে যেন বই নিয়ে বসে পড়ি এফসিপিএসে ভর্তি হওয়ার জন্য। বই নিয়ে আমার বসা হয়, তবে ডাক্তারি বই নয়, কবিতার বই নিয়ে। বাবা প্রতিদিনই আমার ক্লাসের কোন কোন ছেলে মেয়ে পিজিতে পোস্ট গ্রাজুয়েশান করতে গেছে তার খবর নিয়ে আসেন আর আমার জন্য হা হুতাশ করেন। আমার শখের ডাক্তারি করার ইচ্ছেকে তিনি প্রথম প্রথম আসকারা দিলেও অথবা বাধা না দিলেও, বাধা না দেওয়াই আমাদের কাছে একরকম আসকারা, অপছন্দ করা শুরু করলেন। পপুলার ক্লিনিক আর সেবা নার্সিং থেকে যে তিনশ টাকা করে আয় করি, ও নিয়েও একদিন ভেঙচি কাটেন, হু, এফসিপিএস পাশ করলে একটা অপারেশন কইরাই তিন লাখ টাকা পাইতি। বাবা নিজের কথা বলেন, তিনি একটি গরিব কৃষকের ছেলে হয়ে কৃষক না হয়ে ডাক্তার হয়েছেন। তিনি এমবিবিএস ডাক্তার, তাঁর সন্তান কেন এমবিবিএসে পড়ে থাকবে! সে এফসিপিএস ডাক্তার হবে, বিদেশে গিয়ে এফআরসিএস এফআরসিপি ডিগ্রি নিয়ে আসবে। পড়াশোনার এমন সুযোগ আমি নষ্ট করছি খামোকা, এ তিনি মেনে নিতে পারেন না। যে সময় যাচ্ছে, সে সময় আর যে ফিরে আসবে না, যে সুযোগ আমি নষ্ট করছি, সে সুযোগ যে আমি আর পাবো না তা তিনি দিনে দশবার করে বলতে থাকেন।

বাবা যাই বলুন না কেন, এফসিপিএস এর জন্য পড়াশোনা আমার হয়ে ওঠে না। খুচরো ডাক্তারিতেই সময় কাটতে থাকে। কিন্তু এই ডাক্তারি নিয়েও দীর্ঘদিন মেতে থেকে একসময় দেখি আমি হাঁপিয়ে উঠছি, আমি অন্য কিছু একটা করতে চাই। সেই অন্য কিছুটা একদিন করে বসি। সকাল কবিতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন করি। কবিতা পরিষদের কার্যালয় অবকাশের সামনের ঘরটি, যে ঘরটিতে একটি ক্লিনিক করার ইচ্ছে ছিল আমার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *