দ্বিতীয় অধ্যায় – ঈশ্বর হাইপোথিসিস
‘এক যুগের ধর্ম পরবর্তী যুগের আনন্দদানকারী সাহিত্যকর্ম।‘
— রালফ ওয়ালদো এমারসন
সকল কাহিনীর মধ্যে ওল্ড টেষ্টামেন্টের (১) ঈশ্বরই হলো তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে বেশী অপ্রীতিকর একটা চরিত্র: হিংসুটে এবং এর জন্য গর্বিত, সংকীর্ণমনা, অন্যায়কারী, ক্ষমা প্রদর্শন করতে অক্ষম, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবার মানসিক দোষে দুষ্ট; একজন প্রতিহিংসা পরায়ন, রক্তপিপাসু জাতিগত বিশোধনকারী; একজন নারী বিদ্বেষী, সমকামিদের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী (হোমোফোবিক), বর্ণবাদী, শিশুহত্যাকারী, গণহত্যাকারী, সন্তানহত্যাকারী, বিশ্রী রকমের বিরক্তকর, নিজেকে অতি বড় ভাবার প্রবণতা বা অতিআত্মম্মন্যতায় আক্রান্ত, স্যাডোম্যাসোকিস্ট বা ধর্ষ-মর্ষকামী; খামখেয়ালী পরশ্রীকাতর, দূর্বলের উপর অত্যাচারকারী। আমরা যারা শৈশব থেকে তার কাহিনীর সাথে সুপরিচিত, এসব ভীতিকর ঘটনার প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতাও কমে যাবার সম্ভাবনা আছে। একজন ‘অবুঝ’, যে একটি নিষ্পাপ দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট, এই বিষয়ে সে একটা অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ এবং সুস্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে সক্ষম। উইনস্টোন চার্চিল (২) এর পুত্র রানডলফ (3) সুকৌশলে বাইবেল সম্বন্ধে নিজেকে পুরোপুরি অজ্ঞাত রাখতে পেরেছিলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ইভলিন ওয়াহ (৪) ও অন্য একজন বন্ধু সামরিক অফিসার, যারা তার সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একই জায়গায় কর্মরত ছিলেন– তারা সহযোদ্ধা রানডলফ চার্চিলকে চুপ রাখার জন্য ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসাবে তার সাথে বাজী রেখেছিলেন যে তিনি কিছুতেই মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে বাইবেল পড়তে শেষ করতে পারবেন না; ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা ঘটলো, তা আমরা আশা করিনি। যেহেতু বইটি সে আগে কখনোও পড়েনি এবং পড়া মাত্রই সে ভয়াবহ আনন্দিত হয়েছিল; এবং বারবার সেখান থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি জোরে জোরে আমাদের পড়ে শোনানো শুরু করলো, “আমি নিশ্চিৎ, তোমরা জানতে না এই কথাটা বাইবেল থেকে এসেছে’ অথবা শুধু শুধু হাসি আর তালি বাজিয়ে স্বগোতক্তি করতো: হায় ঈশ্বর! ঈশ্বর কি যাচ্ছেতাই রকমের জঘন্য, তাই না (৫)! টমাস জেফারসন (৬)– আরো বেশী পড়াশুনা ছিল তার, একই মতামত পোষণ করতেন, মোজেস (৭) এর ঈশ্বরকে তিনি বর্ণনা করেছিলেন, ‘ভয়ানক এক চরিত্র, নিষ্ঠুর, প্রতিহিংসাপরায়ন, খামখেয়ালী, অন্যায়কারী হিসাবে।
এরকম একটা সহজ নিশানাকে আক্রমণ করা হয়তো সঠিক হচ্ছে না। ঈশ্বর হাইপোথেসিস প্রমাণ হবে কি, হবে না, তা এর সবচাইতে অপ্রিয় উদাহরণ, ইয়াহয়ে (৮) বা এই নীরস বিপরীত খ্রিষ্টীয় রুপ ‘ভদ্র, নম ও নরম স্বভাবের জিসাস (৯) বা যীশুর উপর নির্ভর করা উচিৎ না। (মানতে হবে এই নিরীহ গোবেচারা ব্যক্তিত্ব রুপের জন্য যীশু অবশ্য তার নিজের চেয়েও বরং তার ভিক্টোরিয় অনুসারীদের কাছে বেশী ঋণী; মিসেস সি, এফ, আলেক্সান্ডার(১০) এর খ্রিষ্টান সব শিশুরা সবাই তার মত অবশ্যই নম্র, অনুগত, ভালো হতে হবে’ এর চেয়ে বিরক্তিকর ভাবপ্রবণ আর কি কিছু হতে পারে?) আমি ইয়াহয়ে বা জীসাস বা আল্লাহ, বা নির্দিষ্ট কোনো দেবতা যেমন, বাল (১১), জিউস (১২) বা ওটান (১৩) এর বিশেষ কোন গুণাবলীকে আঘাত করছি না। তার পরিবর্তে ঈশ্বর হাইপোথেসিসকে সংজ্ঞায়িত করব এমন ভাবে যার পক্ষ নিয়ে আরো খানিকটা বেশী বিতর্ক করা সম্ভব, সেভাবে: ‘এমন একজন অতিমানবীয়, অতিপ্রাকৃত বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব আছে, যিনি তার ইচ্ছামত এই মহাজগত পরিকল্পনা এবং আমাদের সহ, এর মধ্যে অস্তিত্বশীল সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এই বইটি এর একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির সপক্ষে আলোচনা করবে। যে কোন সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা, যা যথেষ্ট পরিমান জটিল এবং সবকিছু পরিকল্পনা ও সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে, তার নিজেরই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব শুধুমাত্র একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার ক্রম বিবর্তনের শেষ পরিণতি হিসাবে। সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা একটি ক্রম বিবর্তনের উৎপাদন বিধায় মহাবিশ্বে তার আগমন ঘটবে অবশ্যই অনেক। পরে, সুতরাং সে কোনোভাবেই বাকী সবকিছুর পরিকল্পনা ও সৃষ্টি করার জন্য দায়ী হতে পারে না। ঈশ্বর, যে অর্থে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেটি হচ্ছে: একটি বিভ্রান্তি বা ডিশন; এবং পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে ক্রমান্বয়ে আরো সুস্পষ্ট হবে, এটি ভয়ানক ক্ষতিকর একটি বিভ্রান্তি।
আশ্চর্য হবার কিছু নেই, কারণ যার ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণহীন, ব্যক্তিগত কোন গুপ্ত আবিষ্কারের স্থানীয় লোকাঁচারে ঈশ্বর হাইপোথেসিসও নানা রুপে বিদ্যমান। ধর্মের ইতিহাসবিদরা চিহ্নিত করেছেন এর বিবর্তন, আদিম অ্যানিমিজম বা সর্বপ্রাণবাদ থেকে বহুঈশ্বরবাদ, যেমন, গ্রীক, রোমান, নরওয়েজীয়রা ও তার থেকে একেশ্বরবাদ যেমন: জুডাইজম ও তার উপজাত খ্রিষ্ট ধর্ম ও ইসলাম।
বহুঈশ্বরবাদ বা পলিথেইজম:
ব্যপারটা স্পষ্ট নয়, ঠিক কেন বহুঈশ্বরবাদ থেকে একেশ্বরবাদকে ধরে নেয়া উচিৎ হবে, একটি স্বতঃসিদ্ধ ক্রম উন্নয়ন হিসাবে। কিন্তু এরকমই একটা ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত, ইবনে ওয়ারাক (১৪) (‘হোয়াই আই অ্যাম নট এ মুসলিম’ এর লেখক) যে কারণেই বুদ্ধিদীপ্ত অনুমান করেছিলেন যে, একেশ্বরবাদ ও শেষ পর্যন্ত তার উত্তরণের পথে আরো একটি ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে নিরীশ্বরবাদে পরিণত হবার সম্ভাবনায় আক্রান্ত। ক্যাথলিক এনসাইক্লোপেডিয়া বহুঈশ্বরবাদ এবং নিরীশ্বরবাদকে নির্বিকারভাবেই একই কাতারে দাঁড় করিয়ে ভিত্তিহীন হিসাবে আখ্যা প্রদান করেছে : ‘আনুষ্ঠানিক গোঁড়া নিরীশ্বরবাদ স্ববিরোধী এবং বাস্তবে কখনোই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারেনি, বহুঈশ্বরবাদও পারেনি একই ভাবে, যদিও সাধারণ মানুষের কল্পনাকে তা আলোড়িত করেছে, কিন্তু একজন দার্শনিকের মনকে কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারেনি (১৫)।
একেশ্বরবাদীদের উগ্র আত্ম-অহংকার অতি-সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত ইংল্যাণ্ড ও স্কটল্যাণ্ডের চ্যারিটি বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনেও সুস্পষ্ট ছিল, করের আওতামুক্ত হবার মর্যাদা পাওয়ার জন্য যা বহুঈশ্বরবাদী সংগঠনগুলোর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে এসেছে, ফলাফলে একচেটিয়া সুযোগ পেয়েছে। একেশ্বরবাদীদের ধর্ম প্রচারণার দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো; এমনকি তারা সুকৌশলে এড়াতেও পেরেছে সরকারের কঠিন তদারকী, যা যে কোনো ধর্মনিরেপক্ষ সংগঠনগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। আমার একটা বিশেষ লক্ষ্য ছিল, ব্রিটেনের সম্মানজনক হিন্দু সমাজের কোন সদস্যকে রাজী করাবো বহুঈশ্বরবাদীদের বিরুদ্ধে এধরনের অবজ্ঞাসুলভ বৈষম্যকারী আইনের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আইনে মামলা করতে।
অবশ্যই তার থেকে অনেক বেশী উত্তম কাজটি হবে, দাঁতব্য সংস্থার করের আওতামুক্ত অবস্থানের কারণ হিসাবে ধর্মীয়। প্রচারণার কাজটি সম্পূর্ণরুপে পরিত্যাগ করা। এধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হলে অনেক উপকৃত হবে সমাজ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে যে পরিমান করমুক্ত অর্থ চার্চগুলো শুষে নেয়, এবং সেই অর্থে এমনিতেই ধনী সব টেলিভ্যানজেলিস্টদের সম্পদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে চলেছে, অনায়াসে বলা যেতে পারে তার মাত্রা অশ্লীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। উপযুক্তভাবে নামকৃত ওরাল রবার্টস (Oral Roberts) একবার তার টেলিভিশন দর্শকদের বলেছিল যে, ‘ঈশ্বর তাকে হত্যা করবেন, যদি না তারা তাকে ৮ মিলিয়ন ডলার দেন। প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে, তার মুখের কথায় কাজও হয়েছিল, তাও করমুক্ত! রবার্টস এখন খুবই ভালো আছেন, তুলসা অ্যারিজোনায় ‘ওরাল রবার্টস বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ভালো আছে। যার বিভিন্ন ভবনগুলো, সব মিলিয়ে যাদের মূল্য হবে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, সরাসরি ঈশ্বরের বিশেষ নির্দেশনায় নির্মিত হয়েছে: “আমার কণ্ঠ শোনার জন্য তোমার শিক্ষার্থীদের গড়ে তোল, আমার কণ্ঠ শোনার জন্য, যেখানে, আমার আলো ক্ষীণ, আমার কণ্ঠ দুর্বল, আমার আরোগ্যদানের শক্তি অজানা, পৃথিবীর সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুত করো। তাদের কর্ম তোমার কর্মকেও ছাড়িয়ে যাবে এবং এতেই আমি মহাসন্তুষ্ট হবো।
বিষয়টা নিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, আমার কাল্পনিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী আইনজীবি সম্ভবত ‘যদি তাদের হারাতে না পারো, তাহলে তাদের সাথে যোগ দাও’ এই যুক্তিটাকে তাদের পক্ষে কাজ করাতে উৎসাহী হবেন। তার বহুঈশ্বরবাদ আসলেতো বহুঈশ্বরবাদ না, বরং ছদ্মবেশে একেশ্বরবাদ। সেখানেও কেবল একজনই ঈশ্বর– দেবতা ব্রহ্ম, যিনি সৃষ্টিকর্তা, দেবতা বিষ্ণু, যিনি রক্ষক, দেবতা শিব, যিনি ধ্বংসকারী, দেবী স্বরস্বতী, লক্ষী, পার্বতী (ব্রহ্ম, বিষ্ণু ও শিব-এর সহধর্মিনী), দেবতা গনেশ (হাতি দেবতা) এবং আরো শত শত দেবদেবী, সবাই একই ঈশ্বরের বহুরুপ বা অবতার।
খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীদের বিষয়টার প্রতি সহমর্মী হওয়া উচিৎ। মধ্যযুগে, রক্তের কথাতো বাদই দিলাম, কয়েকটি নদী সমান কলমের কালি, অপচয় করা হয়েছে ‘ট্রিনিটি’র ‘রহস্য’ ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আর এর সেই ব্যাখ্যার ব্যাতিক্রম ভিন্নমতকে দমন পীড়ন করার জন্য, যেমন, এরিয়ান হেরেসি সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় ভিন্নমত; খ্রিষ্ট জন্ম পরবর্তী চতুর্থ শতাব্দীতে আলেক্সান্দ্রিয়ার এরিয়াস (১৬) অস্বীকার করেন যে, যীশু খ্রিষ্ট ঈশ্বরের ‘কনসাবস্ট্যানশিয়াল’ (অর্থাৎ একই সাবস্টান্স বা এসেন্স বা মূল উপাদান দিয়েই তৈরী)। আশ্চর্য্য! এর সম্ভাব্য কি অর্থ হতে পারে, আপনি সম্ভবত জিজ্ঞাসা করতে পারেন? পদার্থ বা সাবস্টান্স? কি “সাবস্টান্স’? এই মূল বা এসেন্স বলতে আপনি আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? ‘খুব সামান্য সম্ভবত মোটামুটি একটা উত্তর হতে পারে। তারপরও এই বিতর্ক এক শতাব্দী ধরে খ্রিষ্ট ধর্মকে বিভক্ত করে রেখেছিল। এবং সম্রাট কনস্টান্টিন (১৭) এরিয়াসের বইয়ের সব কপি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। খ্রিষ্ট ধর্মকে বিভক্ত করা এমন তুচ্ছ অযৌক্তিক বিতর্কে ধর্মতত্ত্বের নিয়ম চিরকালই এরকমই ছিল।
আমাদের (খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী) তাহলে, তিন অংশে বিভক্ত এক ঈশ্বর আছেন নাকি একের মধ্যে তিন জন ঈশ্বর আছেন? ক্যাথলিক এনসাইক্লোপেডিয়া আমাদের জন্য ব্যপারটা স্পষ্ট করেছে ধর্মতত্ত্বের একটি অসাধারণ উৎকৃষ্ট আবদ্ধ যুক্তি বা ক্লোস রিজনিং (১৮) মাধ্যমে:
ঈশ্বরের একাত্মতায় তিনটি সত্তার অবস্থান, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা, তিনটি সত্তাই পরস্পর থেকে সত্যিকার অর্থেই পৃথক। এভাবেই অ্যাথুনেসিয়ার ক্রীড (১৯) এর ভাষা অনুযায়ী: ‘পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিন জন ঈশ্বর নেই, একজনই ঈশ্বর।
যেন বিষয়টি এতেই যথেষ্ট স্পষ্ট হয়নি, এনসাইক্লোপেডিয়া তৃতীয় শতাব্দীর ধর্মতাত্ত্বিক সেইন্ট গ্রেগরী (২০), দি মিরাকল ওয়ার্কারের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে:
সুতরাং কোন কিছুর সৃষ্টি হয়নি, ‘ট্রিনিটি’র কেউ কারো পরাধীন নয়, এমন কোন কিছু এর সাথে সন্নিবিষ্টও হয়নি, যার আগে কোন অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু পরবর্তীতে যোগ হয়েছে: সে কারণে পিতা কখনো পুত্র ব্যতীত ছিল না তেমন পুত্রও ছিল না কখনো পবিত্র আত্মা ছাড়া। এবং এই ট্রিনিটি রুপান্তরিত হয় না এবং সবসময়ই অপরিবর্তনশীল।
যে অলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য সেইন্ট গ্রেগরী তার উপাধিটা অর্জন করে থাকুক না কেন, আর যাই হোক সেই অলৌকিক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্তত সত্যিকারের মানসিক সুস্থতা ছিলনা। তার শব্দগুলো সুস্পষ্টভাবে ধর্মতত্ত্বের চিরাচরিত অস্পষ্টতাপ্রীতি প্রকাশ করে, যা, বিজ্ঞান কিংবা মানুষের জ্ঞানের অন্য যে কোনো শাখার মত, গত আঠারো শতাব্দী ধরে একটুও অগ্রসর হয়নি। টমাস জেফারসন(২২) প্রায়ই এই ঠিক কথাটা বলতেন, “কোনো নির্বোধ ধারণার বিরুদ্ধে একমাত্র যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে তা হল ব্যঙ্গ। যুক্তি প্রয়োগের পূর্বে ধারণাটাকে অবশ্যই সুস্পষ্ট হতে হবে; এবং কোনো মানুষেরই ট্রিনিটি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট কোনো ধারণাই কখনোই ছিল না। এটা শুধুমাত্র ধাপ্পাবাজদের ছলচাতুরী যারা নিজেদের যীশু খ্রিষ্টের পুরোহিত বলে ডাকে।
আরেকটা বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করে পারছি না তা হলো, ধার্মিকরা অতি সূক্ষ্মতম বিষয়ে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসের সাথে মন্তব্য করে, যে বিষয়ে তাদের কোনো প্রমাণ নেই এবং কোনো প্রমাণই থাকতে পারেনা। ধর্মতত্ত্বের মতামতের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই যা তার ভিত্তি হতে পারে, এই সত্যটাই হয়তো সামান্যতম ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ধর্মের স্বভাবসুলভ কঠোর অসহিষ্ণুতা পোষণ করার কারণ। বিশেষ করে এটা দেখা যায় ট্রিনিটারিয়াটিনিজমের ক্ষেত্রে।
জেফারসন এই মতবাদ নিয়ে অনেক ব্যাঙ্গ করেছেন, ক্যালভানিজমের (২৩) বিষয়ে সমালোচনা করার সময় মন্তব্য করেন: “এখানে তিন জন ঈশ্বর বিদ্যমান’; খ্রিষ্ট ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখা এই বহুঈশ্বরবাদের বিষয়টি নিয়ে বার বার নড়া চড়া করে বিষয়টিকে অনেক বেশী ফাপিয়ে তুলেছে। ট্রিনিটির (দের?) সাথে যোগ দিয়েছেন মেরী, স্বর্গের রাণী’, শুধুমাত্র নাম ছাড়া পুরো অর্থে একজন দেবী, যিনি মানুষের প্রার্থনার নিশানা হিসাবে ঈশ্বরকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন নিকটবর্তী দ্বিতীয় স্থানে। প্রায় দেবদেবীর এই সম্ভার আরো স্ফীত হয়েছে বহু সেইন্টের বা সাধুদের যোগদানের মাধ্যমে, যাদের আছে অন্যের পক্ষ হয়ে ঈশ্বরের কাছে আবেদন করার বিশেষ ক্ষমতা। যা তাদের অর্ধদেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত যদি না করেও থাকে, তারা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভক্তদের কাছে বিশেষ মর্যাদা আদায় করে নিয়েছেন। ক্যাথলিক কমিউনিটি ফোরাম আমাদের সাহায্যকল্পে প্রায় ৫১২০ জন সেইন্টের (২৪) নাম, তাদের বিশেষ ক্ষমতার ক্ষেত্র অনুযায়ী তালিকাভুক্ত করেছে; তাদের মধ্যে আছেন, পেটে ব্যাথা হলে, নির্যাতনের শিকার মানুষদের জন্য, ক্ষুধাহীনতা, অস্ত্রব্যবসায়ী, কামার, হাড় ভাঙ্গলে, বোমার কারিগর, পেটের অসুখ ইত্যাদি, এর বেশী আপাতত আর অগ্রসর হওয়া গেল না। এছাড়া আমাদের নয়টি শ্রেণীবিন্যাসে সাজানো চার স্তরের এনজেলিক (ফেরেশতা) হোষ্টরাও আছেন: সেরাফিম, চেরুবীম, থ্রোনস, ডমিনিয়নস, ভার্চু, পাওয়ারস, প্রিন্সিপালিটিস, আর্ক এনজেলস (সবার প্রধান যারা) এবং আছে সাধারণ ফেরেশতার দল, যার মধ্যে আছে আমাদের প্রিয় বন্ধু, সদাজাগ্রত, গার্ডিয়ান এনজেলস বা অভিভাবক ফেরেশতা। ক্যাথলিকদের পুরাণ কাহিনীর যে জিনিসটা আমাকে মনে দাগ কাটে সেটা কিছুটা এর রুচিহীন অসারতার জন্য, কিন্তু মূলত যে কপট নির্লিপ্ততার সাথে এই সব মানুষগুলো ক্রমান্বয়ে বানোয়াট খুঁটিনাটিগুলো যোগ করেছে, তার জন্য। সব কিছু সেখানে অতি নির্লজ্জভাবে উদ্ভাবিত।
গত বেশ কয়েকটা শতাব্দী যোগ করলে দেখা যায়, পোপ জন পল দ্বিতীয় (২৬) একাই তার সব পূর্বসূরি পোপদের সবার চেয়ে বেশী সেইন্ট বা সাধু তৈরী করেছিলেন। কুমারী মাতা মেরির বিশেষ ভক্ত ছিলেন তিনি। বহুঈশ্বরবাদের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণটি নাটকীয়ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, ১৯৮১ সালে রোমে, যখন তাকে এক আততায়ী হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। মৃত্যুর হাত থেকে তার বেঁচে আসার জন্য তিনি মনে করেন, আওয়ার লেডী অফ ফাতিমা’র প্রত্যক্ষ অবদান ছিল (পর্তুগালের ফাতিমায় যে মা মেরীর অশরীরি রুপ দেখা গিয়েছিল বলে দাবী করেছিল তিন জন স্থানীয় মেষপালক শিশু): মাতৃসুলভ হাত বুলেটটির গতিপথ পরিবর্তন করেছিল। একটি বিষয় অবশ্য না ভেবে পারা যাচ্ছে না সেটি হচ্ছে, তিনি কেন বুলেটটা পুরোপুরি লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দিলেন না। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, যে শল্যচিকিৎসকের যে দলটি তার শরীরে ছয় ঘন্টা অস্ত্রোপচার করেছে তারাও আংশিকভাবে এই কৃতিত্বের দ্বাবীদার; কিন্তু হয়তো অস্ত্রোপচারের সময় তাদের হাতকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন কুমারী মেরির মাতৃসূলভ হাত। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যপার হলো, পোপের মতে, তিনি শুধুই ‘আমাদের লেডী কুমারী মেরি নন, যিনি এই বুলেটের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন বরং সুনির্দিষ্টভাবে ‘আওয়ার লেডী অফ ফাতিমা’; ধরে নেয়া যাতে পারে, ‘ আওয়ার লেডী অফ লুর্ডস’, ‘আওয়ার লেডী অফ গুয়াদালুপ’, ‘আওয়ার লেডী অফ মেডজুগরজে’, ‘আওয়ার লেডী অফ জেইতুন’, ‘আওয়ার লেডী অফ গারাবানডাল” এবং “ আওয়ার লেডী অফ নকস’ এসময়ে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
গ্রীক, রোমান আর ভাইকিংরা কেমন করে এই বহুঈশ্বরবাদের ধর্মতত্ত্বীয় ধাঁধার সাথে সমঝোতা করেছিল? ভেনাস কি আফ্রোদাইতির আরেকটি নাম শুধু, নাকি তারা আলাদা দুইজন প্রেমের দেবী? হাতুড়ীসহ থর কি ওটান-এরই অবতার নাকি আলাদা দেবতা? কার কি আসে যায় এতে? এক কল্পকাহিনী থেকে বহু কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য জীবনটা অনেক ছোট। বহুঈশ্বর নিয়ে ইঙ্গিত করার পর, কোনো বিশেষ একজনকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ এড়াতে এ বিষয়ে আমি আর বেশী কিছু বলবো না। সংক্ষিপ্ত করার স্বার্থে আমি সব দেবদেবীদের, তা সেটা বহু বা এক ঈশ্বরবাদ, যাই হোক না কেন, আমি শুধু ‘ঈশ্বর’ বলেই সম্বোধন করবো। আরেকটা বিষয়ে আমি সচেতন আছি, তা হলে আব্রাহামের ঈশ্বর (একটু রেখে ঢেকে বলতে গেলে), আগ্রাসী পুরুষ, আর সে কারণে সর্বনাম ব্যবহার করার অর্থে আমি ঈশ্বরকে পুংলিঙ্গ হিসাবে ধরে নেব। অনেক পরিণত আর জটিল ধর্মতাত্ত্বিকরা দাবী করেন ঈশ্বরের কোন লিঙ্গ নেই, অপরদিকে নারীবাদী ধর্মতাত্ত্বিকরা ঐতিহাসিক অবিচারগুলো সঠিক করার লক্ষ্যে তাকে নারী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু অস্তিত্বই নেই এমন কিছু নারী না পুরষ, কি এসে যায় তাতে? আমার মনে হয়, ধর্মতত্ত্ব আর নারীবাদের খামখেয়ালী বোকামীর অবাস্তব মিলনক্ষেত্রে তার বাস্তব অস্তিত্ব হয়তো তার লিঙ্গ অপেক্ষা কম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হতে পারে।
আমার অজানা নেই যে ধর্মের সমালোচকরা, ধর্মীয় ঐতিহ্যের আর বিশ্ব-দর্শন এর উর্বর বৈচিত্র্যময়তা যাকে ধার্মিকতা বলে, তার সঠিক মুল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। নৃতত্ত্ববিদ্যার উল্লেখযোগ্য কাজ, স্যার জেমস ফ্রেজারের (২৭) “গোল্ডেন বোহ’ থেকে পাসকাল বয়ের (২৮) এর ‘রেলিজিয়ন এক্সপ্লেইনড’ অথবা স্কট আটরানের (২৯) ইন গডস উই ট্রাষ্ট’ বইটি চমৎকারভাবে লিপিবদ্ধ করেছে বহু অদ্ভুত কুসংস্কারের আর আচারের ফেনোমেনোলজী (৩০)। এই বইগুলো পড়ুন আর বিস্মিত হোন মানবজাতির সহজ বিশ্বাসপ্রবণতার ব্যাপকতা দেখে।
কিন্তু এই বইয়ের উদ্দেশ্য ভিন্ন। যেকোনো রুপের অতিপ্রাকৃতবাদকে আমি খুবই অপছন্দ করি, কিন্তু আলোচনাকে প্রাসঙ্গিক রেখে অগ্রসর হবার সবচেয়ে কার্যকর পথ হবে, অতিপ্রাকৃত যে রুপটার সাথে আমার পাঠকদের পরিচিত হবার সম্ভাবনা বেশী, যা আমাদের সবধরনের সমাজের উপর ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে, সেটার উপরই বেশী গুরুত্ব দেয়া। আমার বেশীরভাগ পাঠকই এসময়ের তিনটি মহান’ একেশ্বরবাদী ধর্মের (চারটি, যদি মর্মনিজমকে( ৩১) ধরা হয়) মধ্যে কোনো না কোনো একটিতে প্রতিপালিত হয়েছেন। এই ধর্ম তিনটির প্রত্যেকটি তাদের উৎসে সেই পূরাণের মহাপিতা আব্রাহামকে খুঁজে পাবে। এবং এই পারিবারিক ঐতিহ্যগুলোর ধারা মনে রাখতে পারলে এই বইটার বাকী অংশ পড়তে সুবিধা হবে।
এছাড়া এটি একটি উপযুক্ত মূহুর্ত হতে পারে একটা আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া, নাহলে, দিনের পর যেমন রাত্রি আসে তেমনই আমি নিশ্চিৎ অবশ্যই কেউ না কেউ কোন পর্যালোচনায়। এই বইটার প্রতি অবশ্যম্ভাবী কিছু দ্রুত মন্তব্য করতে পারেন : ‘ডকিন্স যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন না, সেই ঈশ্বরকে আমিও বিশ্বাস করিনা। আকাশের মধ্যে বসবাসকারী লম্বা শ্যমন্ডিত বদ্ধ। কোনো মানুষকে আমিও বিশ্বাস করিনা’; ঐ বৃদ্ধ মানুষটা মূল বিষয় থেকে মনোযোগটাকে সরানোর অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অবতারণা করার একটি পরিচিত কৌশল, এবং তার দাড়ি যেমনই লম্বা তেমনই বিরক্তিকর। সত্যি, মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করাটা অপ্রাসঙ্গিকতা থেকে আরো অসহনীয়। এর সেই গুরুত্বহীন তুচ্ছতা সুপরিকল্পিতভাবে পাঠকের মনোযোগকে আসল যে সত্য থেকে বিক্ষিপ্ত করবে, তা হলো এই বক্তা আসলে যেটা বিশ্বাস করেন তা কিন্তু অনেক কম তুচ্ছ। আমি জানি আপনি মেঘের উপর বসে থাকা কোনো দাড়িওয়ালা বুড়োকে বিশ্বাস করেন না, সুতরাং এটি নিয়ে কোন সময় নষ্ট করার দরকারও নেই। আমি ঈশ্বর বা ঈশ্বরদের কোন বিশেষ একটি রুপকে আক্রমণ করছিনা, আমি ঈশ্বর, সকল ঈশ্বরদেরকে আক্রমণ করেছি, যে কোনোকিছু এবং সবকিছু যা অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক, যেখানে বা যে সময়েই তারা ছিলেন, আছেন কিংবা ভবিষ্যতে তৈরী হবেন।
একেশ্বরবাদ বা মনোথেইজম
‘আমাদের সংস্কৃতির কেন্দ্রে সবচেয়ে বড় বর্ণনাতীত ক্ষতিকারক বিষয়টি হলো একেশ্বরবাদ। বর্বর সেই ব্রোঞ্জ যুগের বই যার নাম ‘ওল্ড টেষ্টামেন্ট’, এর থেকেই তিনটি মানবতা বিরোধী ধর্মের বিবর্তন হয়েছে –ইহুদীবাদ, খ্রিষ্টধর্ম এবং ইসলাম। এই সবগুলোই আকাশ-দেবতার ধর্ম। প্রত্যেকটি, আক্ষরিকভাবে পিতৃতান্ত্রিক– ঈশ্বর মহান অসীম ক্ষমতাধর পিতা –আর সেকারণেই আকাশ দেবতা ও তার পুরুষ প্রতিনিধিদের দ্বারা আক্রান্ত দেশগুলোতে গত ২০০০ বছর ধরে নারীবিদ্বেষ বিদ্যমান। গোর ভিদাল (৩২)।
তিনটি আব্রাহামীয় ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং সুস্পষ্টভাবে বাকী দুটির পূর্বসূরি হলো জুডাইজম বা ইহুদীবাদ: আদিতে মূলত একজন ভয়ঙ্কর বিরক্তিকর আর হিংস্র ঈশ্বর পূজারী কাল্ট বা গোত্র, যে ঈশ্বর যৌনতা সংক্রান্ত নানাবিধ বাধা নিষেধ নিয়ে সর্বদা মানসিক বিকারগ্রস্থ, পোড়া মাংশের গন্ধযুক্ত যে ঈশ্বর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য সব ঈশ্বরদের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে সদা তটস্থ, যিনি শুধু মাত্র একটি নির্বাচিত মরুবাসী জাতির পৃষ্ঠপোষক। প্যালেষ্টাইনে রোমের শাসনামলে পল অব টারসাস (৩৩) সেখানে খ্রিষ্ট ধর্মের পত্তন করেন, এর চেয়ে কম নিষ্ঠুর, আরেকটু সর্বজনীন ইহুদীবাদের একটি একেশ্বরবাদী অংশ রুপ। নতুন এই ধর্ম ইহুদীদের থেকে বাকী সারা বিশ্বব্যাপী বহির্মুখী ছিল তাদের বিস্তারে কয়েক শতাব্দী পরে মোহাম্মদ ও তার অনুসারীরা আবারও মূল ইহুদীবাদের আপোষহীন একেশ্বরবাদীতায় ফিরে যায়, কিন্তু এর নির্দিষ্ট গোত্রকেন্দ্রিকতাকে পরিত্যাগ করে প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম, একটি নতুন পবিত্র গ্রন্থ কোরান এর উপর ভিত্তি করে, যেখানে বিশ্বাসের প্রসারে সামরিক শক্তি প্রয়োগের শক্তিশালী মতবাদ সংযোজিত হয়। খ্রিষ্ট ধর্মও প্রচারিত হয়েছিল তলোয়ারের সাহায্যে, প্রথমত রোমানদের হাতে, যখন সম্রাট কনস্টান্টিন একে একটি অদ্ভুত গোষ্ঠির আচার থেকে উত্তীর্ণ করে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তলোয়ার ধরে ক্রসেডাররা এবং তাদের পর মিশনারীদের সহায়তায় স্পেনের কনকিষ্টাডোররা (৩৪), ও অন্যান্য ইউরোপীয় আগ্রাসণকারী ও বসতি স্থাপনকারীরা। আমার প্রায় সব ব্যাখার জন্য, তিনটি আব্রাহামীয় ধর্মকে একই রকম ধরে নেয়া যেতে পারে। আলাদাভাবে উল্লেখ না করলে, এখানে আমি মূলত খ্রিষ্টধর্ম নিয়ে কথা বলবো, কিন্তু শুধুমাত্র এর সাথে আমি একটু বেশী পরিচিত, সে কারণেই। আমার উদ্দেশ্য অনুযায়ী অমিলের চেয়ে মিলটাই বেশী জরুরী। অন্য ধর্মগুলো যেমন, বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়াসবাদ নিয়ে কোন আলোচনায় যেতে চাইনা। আসলে, এই সব ধর্মগুলো আসলে ধর্ম হিসাবে না চিন্তা করে এদেরকে বরং কোনো নৈতিক বা জীবন দর্শন হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশাবলী জাতীয় কিছু বলা যেতে পারে।
ঈশ্বর হাইপোথেসিসের খুব সরল যে সংজ্ঞা দিয়ে আমি শুরু করেছি, সেখানে আব্রাহামীয় ঈশ্বরকে খাপ খাওয়াতে হলে আমাকে সাথে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা যোগ করতে হবে। তিনি শুধু এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিই করেননি, তিনি তার মধ্যে বা হয়তো এর বাইরে (এটি বলতে যা বোঝাতে চায় ধর্ম) ব্যক্তিগত ঈশ্বর হিসাবে বসবাসও করছেন, এবং ইতিপুর্বে উল্লেখিত করা হয়েছে এমন অনেক অপছন্দনীয় মানবিক গুণাবলীও তিনি ধারণ করেন।
ব্যক্তিগত গুণাবলী, তা ভালো কিংবা খারাপ যাই হোক না কেন, তা ভলতেয়ার এবং টমাস পেইনের (৩৫) দেইস্ট বা একাত্মবাদী (৩৬) ঈশ্বরের কোনো অংশ না। ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত মানসিক বিকারগ্রস্থ দুষ্কৃতকারীর তুলনায় উনবিংশ শতাব্দীর এনলাইটেনমেন্ট (৩৭) বা আলোকপ্রাপ্তির সময় একাত্মবাদীদের ঈশ্বর পুরোপুরি আরো মহান একটি সত্তা: মহাজাগতিক সৃষ্টির সুযোগ্য সৃষ্টিকর্তা, মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন নিয়ে যার কোনো মাথাব্যাথা নেই, আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তা, আশা আকাঙ্খ থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন বা আমাদের নোংরা পাপ এবং অস্পষ্ট নিজ মনে বিড় বিড় করে বলা অনুশোচনা নিয়ে আদৌ তিনি চিন্তিত নন। একাত্মবাদীদের ঈশ্বর একজন পদার্থবিজ্ঞানী, তার হাতেই পদার্থবিদ্যার শুরু ও শেষ, শীর্ষতম, আলফা এবং ওমেগা গণিতজ্ঞ, মহিমান্বিত পরিকল্পনাকারী এবং শিল্পী, একজন অতি দক্ষ প্রকৌশলী যিনি মহাবিশ্বের সকল আইন এবং ধ্রুব সংখ্যাগুলো সুনির্দিষ্ট করেছেন, এবং তাদের অতি অসাধারণ দক্ষতায় এমন সূক্ষ্ম মাত্রায় সাজিয়েছেন এবং প্রাকধারণা নিয়ে বিস্ফারিত করেছেন, যাকে আমরা এখন অতি উষ্ণ ‘বিগ ব্যাং’ বলছি। এরপর তিনি অবসর গ্রহন করেন এবং তার সৃষ্টির সাথে আর কোনো যোগাযোগই রাখেননি। যে যুগে বিশ্বাসের গোঁড়ামী ছিল সর্বজনীন সেখানে একাত্মবাদীরা নিরীশ্বরবাদীদের থেকে ভিন্ন কিছু নন বলে নিন্দনীয় ব অভিযুক্ত হন। ফ্রি থিংকার: এ হিষ্ট্রি অব আমেরিকার সেকুলারিজম বইটিতে সুজান জ্যাকোবী (৩৮) দুর্ভাগা টম পেইনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কতগুলো দুর্নামের তালিকা করেছিলেন: জুডাস, সরীসৃপ, শূকর, পাগলা কুত্তা, মহা জানোয়ার, অসভ্য এবং অবশ্যই, নাস্তিক। এক সময়ের রাজনৈতিক সুহৃদরা তার অখ্রিষ্টীয় মনোভাবের জন্য বিব্রত হতেন। অসহায় অবস্থায় মারা যান টম পেইন, শুধু ব্যতিক্রমী জেফারসন ছাড়া আর কেউ তার পাশে ছিলেন না। ইদানীং এত বেশী পট পরিবর্তন হয়েছে যে, আগের মত আর কেউই ডেইষ্ট বা একাত্মবাদীদের নিরীশ্বরবাদী অবিশ্বাসীদের সাথে এক কাতারে দাঁড় করাবেন না বরং ঈশ্বরবাদীদের সাথেই তাদের একই ভাবে দেখবেন। কারণ, সর্বোপরি তারাও তো ঈশ্বরবাদীদের মত সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার একজন সত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা সেকুলারিজম, যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতারা এবং ধর্ম।
সঙ্গত কারণে সাধারণত অনুমান করা হয় অ্যামেরিকা প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা ছিলেন ডেইষ্ট বা একাত্মবাদী (৩৯)। সন্দেহ নেই অনেকেও হয়তো সেটাই ছিলেন, যদিও বিতর্ক আছে, এদের মধ্যে সবচেয়ে মহান আর সেরা যারা ছিলেন, তারা হয়তো নিরীশ্বরবাদী ছিলেন। তাদের সমসাময়িক সময়ের প্রেক্ষাপটে ধর্ম নিয়ে তাদের লেখাগুলো পড়লে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, তাদের বেশীর ভাগই আমাদের এই বর্তমান সময়ে নিরীশ্বরবাদী হিসাবেই চিহ্নিত হতেন। কিন্তু সেই সময়ে তাদের নিজেদের ধর্মবিশ্বাস যাই হোক না কেন, তারা গোষ্ঠিগত ভাবে নিঃসন্দেহে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এই অংশে আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। শুরু করছি ১৯৮১ সালে সিনেটর ব্যারী গোল্ডওয়াটারের হয়ত একটা চমক লাগানো উদ্ধৃতি দিয়ে, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমেরিকার রক্ষণশীলতার এই নেতা ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তার বিশ্বাসে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র ধর্মনিরেপেক্ষতার ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার প্রত্যয়:
নিজস্ব ধর্মবিশ্বাসের মত মানুষের আর তেমন কোনো অনড় অবস্থান নেই। যীশু অথবা ঈশ্বর অথবা আল্লাহ অথবা যে নামেই পরিচিত হোক না কেন এই মহাশক্তিশালী সত্তা, যে কোনো বিতর্কে এদের মত ক্ষমতাশালী আর কোনো কিছুকে মিত্র বলে কেউ দাবী করতে পারবেন না। কিন্তু অনেক শক্তিশালী অস্ত্রের মতই ঈশ্বরের নাম নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিৎ। আমাদের সারা দেশজুড়ে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো বিস্তার লাভ করছে, তারা তাদের ধর্মীয় প্রভাব খুব একটা বিচক্ষণের সাথে ব্যবহার করছেন না। তারা। দেশ পরিচালনাকারী নেতাদের উপর তাদের অবস্থান শতকরা একশত ভাগ অনুসরণ করার জন্য জোর খাটাচ্ছেন। কারো যদি এসব ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সাথে নির্দিষ্ট কোনো নৈতিক বিষয়ে নিয়ে মতবিরোধ হয়, তারা অভিযোগ করেন; ভোট কিংবা অর্থ সাহায্য দুটোই প্রত্যাহার করে নেবার হুমকি দেন। আসলেই সারা দেশজুড়ে এইসব রাজনৈতিক ধর্মপ্রচারকদের উপর আমি আমার বিরক্তির চরম সীমায় পৗছে গেছি, যারা নাগরিক হিসাবে আমাকে বিচার করছেন, নীতিবান মানুষ হতে গেলে নাকি আমাকে অবশ্যই এ, বি, সি কিংবা ডি’কে বিশ্বাস করতে হবে। এরা আসলে নিজেদের কি মনে করেন? এবং কেমন করেই বা তারা সেটি মনে করতে পারেন, আমার উপর তাদের নৈতিক মূল্যবোধ চাপিয়ে দেবার অধিকার আছে এমন দাবী তারা কিভাবেই বা করতে পারেন। একজন আইনপ্রণেতা হিসাবে আমি আরো ক্ষুদ্ধ হই যখন প্রত্যেকটি ধর্মগোষ্ঠীর হুমকি সহ্য করতে বাধ্য হই, যারা ভাবেন সিনেটের যেকোন অধিবেশনে আমার ভোট নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে তাদের ঈশ্বর প্রদত্ত অধিকার আছে। আমি তাদের সতর্ক করে দিতে চাই আজ; আমি সর্বত্র তাদের প্রতিরোধ করবো যদি তারা তাদের নৈতিক বিশ্বাস সকল আমেরিকানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে রক্ষণশীলতার দোহাই দিয়ে (৪০)।
নিজেদের সপক্ষে ইতিহাসকে সাক্ষী করার প্রচেষ্টায় জাতির পিতাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রচারণা বর্তমানে আমেরিকায়। দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল প্রচারণাকারীদের কাছে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়। কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতটাই আসলে সত্যি, খ্রিষ্টানদের দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পত্তন হয়নি, প্রথম তা সুস্পষ্ট উল্লেখিত হয়, ত্রিপোলী চুক্তিতে (ট্রিটি অব ত্রিপোলী (৪১)), ১৭৯৬ সালে, যা জর্জ ওয়াশিংটন (৪২) এর সময়ে লেখা হয়েছিল, যেখানে ১৭৯৭ সালে জন অ্যাডামস (৪৩) স্বাক্ষর করেছিলেন:
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কোনো অর্থেই খ্রিষ্ট ধর্মের উপর ভিত্তি করে স্থাপিত হয়নি, এবং যেহেতু এর সাথে মসুলমানদের আইন, ধর্ম, শান্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শত্রুতা নেই, এবং পূর্বেই বলা হয়েছে মোহাম্মদের অনুসারী কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সময়ই কোনো যুদ্ধ বা শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করেনি; উভয় পক্ষ ঘোষণা করছে যে, ধর্মীয় মতামতের কারণে উদ্ভূত কোনো ঘটনাই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে কখনই কোনো বিঘ্নতা সৃষ্টি করবে না।
এই উদ্ধৃতির প্রথমাংশ ওয়াশিংটনের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের মধ্যে রীতিমত শোরগোল ফেলে দিত, সন্দেহ নেই কোনো, কিন্তু এড বাকনার(৪৪) বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করেছেন, সেই সময় এ বিষয় নিয়ে কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা জনগন, কারো মধ্যে কোন মতবিরোধ দেখা যায়নি (৪৫); যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের আপতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী এবং বিপরীতমুখীতা প্রায়শই দেখা যায়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই দেশটি এখন খ্রিষ্ট জগতের সবচেয়ে বেশী ধর্মনির্ভর একটি রাষ্ট্র, অপরদিকে ইংল্যাণ্ড, যেখানে কিনা প্রতিষ্ঠিত চার্চের (অ্যাঙলিকান) নেতৃত্ব দিচ্ছে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, সেটি সবচাইতে কম ধর্ম নির্ভর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি, আমি প্রায়ই প্রশ্নটা করি, কেন এমন হলো? এবং এর উত্তর আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, সম্ভবত এই পরিস্থিতির কারণ হতে পারে : ইংল্যাণ্ড, ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তার আন্তঃবিশ্বাস এবং গোত্রগত ধর্মীয় সহিংসতার ভয়ঙ্কর ইতিহাসের কারণে, যেখানে প্রটেষ্টান্ট আর ক্যাথলিকরা পালাক্রমে প্রাধান্য বিস্তার করে পরস্পরকে নৃশংসভাবে হত্যা ও নিপীড়ন করেছে। আরেকটি ব্যাখ্যার উৎপত্তি হলো একটি পর্যবেক্ষণ, আমেরিকা প্রধানত অভিবাসীদের সৃষ্টি করা একটি জাতি, এক সহকর্মী আমাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, অভিবাসীরা, ইউরোপে তাদের সম্প্রসারিত পরিবার, সামাজিক নিরাপত্তা আর স্থিতিশীলতা থেকে শিকড়চ্যুত হয়ে প্রবাসে ফেলে আসা স্বজনদের বিকল্প হিসাবে হয়তো তারা চার্চকেই বেশী আপন করে নিতে পারেন। অবশ্যই কৌতূহলোদ্দীপক একটা ধারণা যা আরো গবেষণার দাবীদার। কোনো সন্দেহ নেই আমেরিকায় অনেকেই তাদের চার্চকে স্থানীয় ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসাবে মনে করেন, আসলেই যার সম্প্রসারিত পরিবারের মত বেশ কিছু গুণাবলী আছে। আরো একটি হাইপোথিসিস হলো ধাঁধার মতই আমেরিকার ধর্মীয় উদ্দীপনার উৎস দেশটির সংবিধানেরই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। যেহেতু আমেরিকা আইনগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্ম সম্পূর্ণভাবে পরিণত হয়েছে স্বাধীন একটি উদ্যোগে। প্রতিদ্বন্দ্বী চাচগুলো তাদের আকৃতি আর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করে, বলাবাহুল্য সেই সাথে মোটা উপার্জনও কোনো অংশেই কম নয়; এই প্রতিযোগিতা চলে বাজারের আক্রমণাত্মক ক্রয় বিক্রয় বা মার্কেটিং কৌশলের মতই। সাবানের গুড়া বিক্রী যেমন করে চলে, ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তেমন। আর এর ফলাফল বর্তমানে প্রায় কম শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হয়েছে উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা। অপরদিকে ইংল্যাণ্ডে প্রতিষ্ঠিত চার্চের অভিরক্ষণে ধর্ম সামাজিক আচারের চেয়ে খুব বেশী আর কিছু না, আদৌ একে ধর্মীয় একটি বিষয় হিসাবে সহজে চিহ্নিত করা যাবে না। গাইলস ফ্রেজার একজন অ্যাংলিক্যান ভাইকার (ধর্মযাজক) ও একই সাথে অক্সফোর্ডে দর্শনের টিউটর, এই ইংরেজ আচারের সুন্দর ব্যাখা দিয়েছিলেন গার্ডিয়ান পত্রিকায় তার একটি লেখায়, যার শিরোনাম ছিল, দ্য স্টাবলিশমেন্ট অফ দ্য চার্চ অব ইংল্যান্ড টুক গড আউট অফ দ্য রেলিজিয়ন বাট দেয়ার আর রিস্ক ইন মোর ভিগোরাস অ্যাপ্রোচ টু ফেথ:
একটা সময় ছিল যখন গ্রামের পাদ্রী (ভাইকার) ইংরেজী নাটকের নিয়মিত চরিত্র ছিলেন, এই চা-পানকারী, নিরীহ, ক্ষ্যাপাটে, পালিশ করা জুতা পরা মানুষটি তার ভদ্র ব্যবহারসহ এমন একটি ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করতেন, যাকে দেখে আদৌ ধর্মপরায়ন না এমন ধরনের মানুষরা তেমন কোনো অস্বস্তিবোধ করতেন না। তিনি আদৌ ধর্মনাশ হচ্ছে বলে অতিরিক্ত চিন্তিত হতেন না বা আপনাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করতেন না, “আপনি কি নরকের আগুন থেকে রক্ষা পেতে চান?” কোন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পক্ষে চার্চের পালপিট থেকে ধর্মযুদ্ধ শুরু করা বা রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখাতে বহু দূরের কথা (৪৬)।
(জন বেটচামেন এর ‘আওয়ার পাদ্রে’র ছায়া আছে এই বর্ণনায়, প্রথম অধ্যায়ের শুরুতে আমি যেখান থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলাম); ফ্রেজার আরো বলেন যে, এই ভদ্র ভাইকার আসলে প্রকৃত অর্থে বিশাল সংখ্যক ইংরেজদের জন্য খ্রিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি তার রচনাটি শেষ করেন। দুঃখ প্রকাশ করে, যে ইদানীং ধর্মকে পুনরায় বেশী গুরুত্ব দেবার প্রবণতা লক্ষ করা করা যাচ্ছে এবং তার শেষ বাক্যটি ছিল সাবধানবাণী: ‘চিন্তার বিষয় হল, কয়েক শতাব্দী ধরে সুপ্ত ইংরেজদের ধর্মীয় উন্মাদনার দানবটাকে এর প্রাতিষ্ঠানিক বাক্স থেকে আমরা আবার মুক্ত করে না দেই।
বর্তমান সময়ের আমেরিকায় এই ধর্মীয় উন্মত্ত দানবের প্রতাপ সর্বত্র এবং যা অবশ্যই দেশটির জাতির পিতাদের ভীত সন্ত্রস্ত করতো যদি তারা জীবিত থাকতেন। এই বৈপরীত্যকে মেনে নেয়া কিংবা তাদের সৃষ্ট সংবিধানকে অভিযুক্ত করা সঠিক কিংবা ভুল, যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতারা সন্দেহাতীতভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ছিলেন, যারা বিশ্বাস করতেন ধর্মকে রাজনীতি থেকে পৃথক রাখা উচিৎ, আর এটাই তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে, যারা এর ব্যতিক্রমকে প্রতিবাদ করছে তাদের পক্ষে; যেমন, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন কমান্ডমেন্ডের(৪৭) উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে। ধারণা করতে ইচ্ছা হয়, প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ কেউ হয়ত একাত্মবাদী বিশ্বাসকে অতিক্রম করে গিয়ে ছিলেন, হয়তো তারা ছিলেন অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী অথবা এমনকি পুরোপুরি নিরীশ্বরবাদী? যাকে আজকের যুগে আমরা অজ্ঞেয়বাদ বলি, জেফারসনের নীচের লেখাটির সাথে তার কোন পার্থক্য করা যায় নাঃ
নিরাবয়ব অবাস্তব কোনো কিছুর অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলাই অর্থহীন। মানুষের আত্মা, ফেরেশতা, ঈশ্বর আবয়বহীন বলাই মানে বলা এর অস্তিত্বহীনতাকে মেনে নেয়া অর্থাৎ আসলেই কোনো ঈশ্বর নেই, নেই কোন ফেরেশতা বা আত্মা। আর কোনভাবেই এর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো। সম্ভব না যদি না, স্বপ্ন আর ভৌতিক জগতের অতল গহবরে আমরা নিজেদেরকে নিমজ্জিত না করি। যাদের অস্তিত্ব থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে যার কোনো প্রমাণ নেই, এমন কিছু নিয়ে নিজেকে যন্ত্রণা আর দুর্ভোগ দেয়া ছাড়াই আমি সন্তুষ্ট আর যথেষ্ট ব্যস্ত আছি অন্য অনেক বিষয় নিয়ে।
ক্রিষ্টোফার হিচেন্স (৪৮), তাঁর রচিত জেফারসনের জীবনী, ‘থমাস জেফারসন: অথর অফ অ্যামেরিকা’ বইটিতে তথ্যপুষ্ট হয়েই প্রস্তাব করেন, সম্ভবত জেফারসন নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, এমনকি যখন তার সময়ে যে বিশ্বাস ধারণ করা আরো অনেক বেশী কঠিন ছিল।
তিনি নিরীশ্বরবাদী ছিলেন কি ছিলেন না, তার বিচার করতে অবশ্যই আমাদের সংযত হতে হবে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক জীবন তাঁকে যে বিচক্ষণতা এবং ভদ্রতার পরিচয় দিতে বাধ্য করেছে, সেজন্যেই। কিন্তু সেই ১৭৮৭ সালে তার ভাইপো পিটার কার-কে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, কারোরই উচিৎ হবে না, শুধুমাত্র ফলাফলের কথা চিন্তা করে এমন কোনো প্রশ্নকে ভয়। পাওয়া, ‘যদি এর শেষ হয় এমন কোনো বিশ্বাসে যে ঈশ্বর নেই, তুমি অবশ্যই উদ্দীপ্ত হবে, এধরনের অনুশীলনের মধ্যে সুখ আর স্বস্তি এবং অন্যদের ভালোবাসা অর্জন করার গুণাবলী অন্বেষণে।
আবারো পিটার কার’কে লেখা একটি চিঠিতে জেফারসনের এই উপদেশটা আমাকে আরো বেশী নাড়া দেয়:
ঝেড়ে ফেল সব দাসোচিত যত সংস্কারের ভীতি, যার ভারে ক্রীতদাসের মত নত হয়ে থাকে দুর্বল সব মন। যুক্তিকে দৃঢ়ভাবে তার আসনে বসাও, তার উপর বিচারের ভার ছেড়ে দাও সকল তথ্য আর প্রত্যেকটি মতামতের। সাহসের সাথে প্রশ্ন করো এমনকি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে, কারণ যদি এমন কেউ থাকে, তিনিও অন্ধ ভীতির চেয়েও যুক্তির প্রতি এধরনের শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে অনুমোদন করবেন।
জেফারসনের কিছু মন্তব্য যেমন, “খ্রিষ্ট ধর্ম হলো মানুষের উপর চাপানো সবচেয়ে বিকৃত একটি পদ্ধতি, যেমন একাত্মবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি নিরীশ্বরবাদের সাথেও। জেমস ম্যাডিসনের (৪৯) কঠোর অ্যান্টি-ক্লারিকালিজমও (ধর্মীয় যাজকদের রাজনৈতিক ক্ষমতার বিরোধীতা) তেমন: ‘প্রায় পনের শতাব্দী ধরে খ্রিষ্টীয় আইনী প্রতিষ্ঠান বিচারের কাঠগড়ায়, কি সুফল তারা দিতে পেরেছে? কমবেশী সব জায়গা পায়, পাদ্রীদের অহংকার আর অলসতা; সাধারণ জনগনের অজ্ঞতা আর অন্ধ দাসত্ব, উভয় পক্ষের কুসংস্কার, গোঁড়ামী আর নিপীড়ন, একই কথা বলা যেতে পারে বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন (৫০) এর ‘বাতিঘরগুলোও চার্চ থেকে অনেক বেশী কাৰ্যকরী’ মন্তব্যটি বিচার করলে। জন অ্যাডামস সম্ভবত কঠিন ক্লারিকালিজম বিরোধী একাত্মবাদী (এক্লেসিয়াসটিকাল কাউন্সিল ভয়ঙ্কর একটি যন্ত্র….’) এবং তিনি নিজেও খ্রিষ্টীয় ধর্মের বিরুদ্ধে অনেক দীর্ঘ বক্তৃতা প্রদান করেছেন, বিশেষ করে : ‘খ্রিষ্ট ধর্ম সম্বন্ধে আমি যেটুকু বুঝি, এটি যেমন ছিল এবং এখনও যা বলা হয় ঈশ্বরের ঐশী প্রত্যাদেশের প্রকাশ বা রিভিলেশন, কিন্তু কেমন করে লক্ষ লক্ষ উপকথা, কাহিনী, কিংবদন্তী মিশ্রিত হয়েছে ইহুদী এবং খ্রিষ্ট ধর্ম উভয়ের তথাকথিত ঐশী প্রত্যাদেশে, এবং তাদের পরিণত করেছে এ যাবৎকালের সবচেয়ে রক্তাক্ত ধর্ম হিসাবে?”
এবং জেফারসনকে লেখা একটা চিঠিতে: ‘আমি রীতিমত কেপে উঠি, শোকের অপব্যবহারে সবচেয়ে ভয়াবহ চিহ্ন, ক্রুশকে মানব জাতির ইতিহাস সুরক্ষিত করেছে। চিন্তা করে দেখুন শোকের এই যন্ত্র কত বিপর্যয়ের কারণ!’
জেফারসন এবং তার সহযোগীরা ঈশ্বরবাদী, একাত্মবাদী, অজ্ঞেয়বাদী বা নিরীশ্বরবাদী যাই হোক না কেন তারা প্রত্যেকেই প্রবলভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রপতির ধর্মবিশ্বাস বা বিশ্বাসহীনতা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার। যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতাদের প্রত্যেকেই যার যা ধর্মবিশ্বাস থাকুক না কেন, তারা, জর্জ বুশ সিনিয়রকে করা একটি প্রশ্নের উত্তর সংক্রান্ত সাংবাদিক রবার্ট শেরমানের রিপোর্টটি পড়ে অবশ্যই বিস্মিত হতেন, যখন শেরমান তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কি অন্য আমেরিকানদের মত নিরীশ্বরবাদীদেরও একই রকম নাগরিক অধিকার বা দেশপ্রেম আছে বলে মনে করেন কিনা? : ‘না, আমি জানি না নাস্তিকদের এদেশের নাগরিক বা দেশপ্রেমিক বিবেচনা করা উচিৎ হবে কিনা? আমেরিকা ঈশ্বরের অধীনে একটি জাতি (৫১)। ধরে নেই শেরমানের বিবরণ সঠিক, (দুঃখজনকভাবে তিনি টেপরেকর্ডার ব্যবহার করেননি,এবং অন্য কোনো সংবাদ পত্রিকা এ সংক্রান্ত কোনো খবরও প্রকাশ করেনি), আগের বাক্যে ‘নিরীশ্বরবাদী’ শব্দটি ইহুদী’ বা ‘মুসলিম’ বা ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ শব্দগুলো দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে একটা পরীক্ষা করা যায়। এর মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব আমেরিকার নিরীশ্বরবাদীদের কি ধরনের বৈষম্য সহ্য করতে হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নাতালী আনজিয়ার্স (৫২) এর ‘কনফেশনস অব দ্য লোনলি এথিষ্ট’, বর্তমান আমেরিকায় একজন নিরীশ্বরবাদী হিসাবে তার বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির বেদনাদায়ক মর্মস্পর্শী বিবরণ (৫৩); কিন্তু আমেরিকায় নিরীশ্বরবাদীদের বিচ্ছিন্নতা কিন্তু একটি বিভ্রান্তি যা অত্যন্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে এর বিরুদ্ধে বিদ্যমান নানা পূর্বসংস্কার। বেশীর ভাগ মানুষ সাধারণত যা ধারণা করেন, আমেরিকায় নিরীশ্বরবাদীদের সংখ্যা তার চেয়ে আরো অনেক বেশী। যেমনটি আমি ভূমিকায় উল্লেখ করেছি, আমেরিকায় অবিশ্বাসীদের সংখ্যা ধার্মিক ইহুদীদের চেয়ে অনেক বেশী, তাসত্ত্বেও ওয়াশিংটনে ইহুদীদের লবী বিশেষভাবে শক্তিশালী, নানা বিষয়ে তাদের প্রভাব খাটানোর জন্য কুখ্যাতিও আছে। আমেরিকার নিরীশ্বরবাদীরা যদি নিজেদের ঠিক সেভাবে সংগঠিত করতে পারতেন তারা কি না অর্জন করতে পারতেন (৫৪)।
ডেভিড মিলস (৫৫) তার প্রশংসনীয় ‘অ্যাথিষ্ট ইউনিভার্স’ বইয়ে একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন, যা কোনো কল্পকাহিনী হলে আপনি অনায়াসে পুলিশের অজ্ঞতা সংক্রান্ত একটি অবাস্তব কৌতুক কাহিনী হিসাবে প্রত্যাখ্যান করতে দেরী করতেন না। একজন খ্রিষ্টীয় ফেইথ হিলার (বিশ্বাসের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করেন বলে যারা দাবী করে থাকেন), যিনি ‘মিরাকল ক্রসেড’ নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করেন, বছরে একবার মিলস এর শহরে আসেন। অন্য অনেক কর্মকাণ্ডের মধ্যে এই ফেইথ হিলার বা বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে ঠগবাজী চিকিৎসা করেন, যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের ইনসুলিন ফেলে দিতে উৎসাহ দেন, কিংবা যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের কেমোথেরাপি নেবার বদলে প্রার্থনার মাধ্যমে অলৌকিকভাবে রোগমুক্ত হবার উপদেশ দেন। যুক্তিসংঙ্গত কারণেই মিলস জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে এর বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মিলস ভুল করে বসেন পুলিশের কাছে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা এবং ফেইথ হিলারের সমর্থকদের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে পুলিশের সুরক্ষার আবেদন করে। প্রথম যে পুলিশ অফিসারের সাথে তার কথা হয়, তার প্রশ্ন ছিল; তুমি তার পক্ষে না বিপক্ষে সমাবেশ করবে? যখন মিলস তার উত্তরে বলেছিলেনাঃ তার বিপক্ষে, পুলিশ অফিসার প্রত্যুত্তরে বলেছিল, সে নিজেই সেই ফেইথ হিলারের র্যালিতে যোগ দেবে এবং তিনি তার সমাবেশের সামনে দিয়ে যাবার সময় ব্যক্তিগতভাবে মিলসের মুখে থুতু মারার ইচ্ছা পোষণ করেন।
মিলস তার ভাগ্য পরীক্ষার করে দেখার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় আরেকজন পুলিশ অফিসারের কাছে যান। দ্বিতীয় জন উত্তর দেন, এই ফেইথ হিলারের সমর্থকদের কেউ যদি হিংসাত্মকভাবে মিলসকে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে সে মিলসকেই গ্রেফতার করবে কারণ সে ঈশ্বরের কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি করেছে। মিলস বাসায় ফিরে টেলিফোনের মাধ্যমে পুলিশ স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, যদি কোনো সিনিয়র অফিসারের সহানুভূতি পাওয়া যায়। অবশেষে যখন সার্জেন্ট এর সাথে যোগাযোগ হল, তার বক্তব্য ছিল: “নরকে যাও বন্ধু, কোনো পুলিশই নাস্তিকদের রক্ষা করতে চায় না, আশাকরি তোমাকে কেউ যেন ভাল মত রক্তাক্ত করতে পারে; স্পষ্টতই এই পুলিশ স্টেশনে মানুষের স্বাভাবিক সহমর্মিতা, দয়া, কর্তব্যজ্ঞানের সাথে সাথে ক্রিয়া বিশেষণেরও সরবরাহ ঘাটতি আছে। মিলস সেদিন সাত অথবা আটজন পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলার বিবরণ দেন,যাদের কেউই সাহায্য করার কোন ইচ্ছাই প্রকাশ তো করেইনি বরং বেশীর ভাগই সরাসরি মিলসকে হিংসাত্মক প্রতি-আক্রমণের হুমকি দিয়েছিল।
নিরীশ্বরবাদীদের বিরুদ্ধে এধরনের বিদ্বেষপূর্ণ সংস্কারের ঘটনার সংখ্যা অগণিত। কিন্তু অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন সাপোর্ট নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা, মার্গারেট ডাওনী, ফ্রি থট সোসাইটি অব ফিলাডেলফিয়ার মাধ্যমে এধরনের ঘটনাগুলো পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন (৫৬); তার সংগৃহীত ঘটনাগুলোর ডাটাবেস, কমিউনিটি,স্কুল, কাজের জায়গা, গণমাধ্যম,পরিবার এবং সরকার ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত, যার মধ্যে উদাহরণ আছে হয়রানি, কর্মচ্যুতি, পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়া এমনকি হত্যা (৫৭); নিরীশ্বরবাদীদের প্রতি ডাওনীর লিপিবদ্ধ এসব ঘৃণা আর অসহিষ্ণুতার প্রমাণ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, কেন একজন সৎ নিরীশ্বরবাদীর পক্ষে আমেরিকার কোনো নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব একটি ব্যপার। হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেটিভস-এর সদস্য সংখ্যা ৪৩৫, সিনেটে আরো ১০০ জন, ধরে নেই এই ৫৩৫ জন ব্যক্তি সমগ্র শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর (আমেরিকার) প্রতিনিধিত্ব করছে এমন একটি নমুনা, আমেরিকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পরিসংখ্যানগত হিসাব অনুযায়ী, এদের প্রায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবশ্যই নিরীশ্বরবাদী। তাদের অবশ্যই মিথ্যাচার করতে হয়েছে, অথবা তাদের প্রকৃত অনুভূতিটাকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছে নির্বাচনে জেতার জন্য। কে তাদের দোষ দেবে এই মিথ্যাচারের জন্য, যখন ভভাটারদের বিশ্বাস তাদের অর্জন করতে এ ছাড়া কোনো উপায় নেই? এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, নিরীশ্বরবাদী হিসাবে নিজেকে স্বীকার করে নেয়া একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা (৫৮)।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আবহাওয়ার এধরনের বাস্তবতা এবং এই অবস্থা যা ইঙ্গিত করে, তা দেখলে নিঃসন্দেহে আতঙ্কিত হতেন জেফারসন, ওয়াশিংটন, ম্যাডিসন, অ্যাডামস এবং তাদের সতীর্থরা। তারা ঈশ্বরবাদী, একাত্মবাদী, সংশয়বাদী বা নিরীশ্বরবাদী যাই হোন না কেন প্রাক-একবিংশ শতাব্দীর ওয়াশিংটনের এইসব ধর্মবাদী রাজনীতিবিদদের দেখে ভয়ে পিছু হটতেন। তাঁরা হয়তো একাত্মতা বোধ করতেন উপনিবেশ পরবর্তী ভারতের ধর্মনিরপেক্ষবাদী জাতির পিতাদের সাথে, বিশেষ করে ধার্মিক গান্ধী (আমি একজন হিন্দু, আমি একজন মসুলমান,আমি একজন ইহুদী, আমি একজন খ্রিষ্টান, আমি একজন বৌদ্ধ) এবং নিরীশ্বরবাদী নেহরু’র (৫৯) সাথে:
এই যে প্রদর্শনী যার নাম ধর্ম বা আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে সংগঠিত ধর্ম, ভারতে কিংবা পৃথিবী যে কোনো জায়গায়, আমাকে আতঙ্কিত করে। আমি প্রায়শই এর নিন্দা করেছি এবং একে পুরোপুরি ভাবে পরিচ্ছন্ন করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। এবং প্রায় সবসময়ই মনে হয়েছে এর ভিত্তি, অন্ধবিশ্বাস এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা, গোঁড়া মতবাদ আর সংকীর্ণতা, কুসংস্কার, শোষন আর কায়েমী স্বার্থ রক্ষা করা।
গান্ধীর স্বপ্নের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে ব্যাখা করে নেহরুর বর্ণনা (যদি না রক্তাক্ত সামপ্রদাকি দাঙ্গার মধ্য দিয়ে তাদের দেশটা বিভক্ত না হত হয়তো তা বাস্তবে পরিণত হতে পারতো) পড়ে মনে হতে পারে তা যেন জেফারসনেরই নিজের লেখা।
আমরা ধর্মনিরপেক্ষ এক ভারতের কথা বলছি, কিছু মানুষের ধারণা এর অর্থ হলো ধর্মের বিরুদ্ধে যেন কোনো কিছু। অবশ্যই এধরনের ধারণা সঠিক না। এর অর্থ হলো ভারত এমন একটি রাষ্ট্র হবে যা সকল ধর্মবিশ্বাসকে সমান মর্যাদা আর সুযোগ দেবে। ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ইতিহাস অনেক প্রাচীন, ভারতের মত একটি দেশে, যেখানে অনেক ধরনের ধর্ম আর বিশ্বাস বিদ্যমান, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি ছাড়া অন্য কোনো ভাবে সত্যিকারের জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করা সম্ভব না (৬০)।
একাত্মবাদীদের ঈশ্বর, যা প্রায়শই যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতাদের বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়, অবশ্যই সেটি বাইবেলে বর্ণিত হিংস্র দানবীয় চরিত্রটি অপেক্ষা অনেক উন্নতি। দুঃখজনকভাবে ধারণা করা খুবই কঠিন যে তার অস্তিত্ব আছে বা কখনো ছিল। যে কোনো রুপেই ঈশ্বর হাইপোথিসিস আসলেই অপ্রয়োজনীয় (৬১)। ঈশ্বর হাইপোথেসিস সম্ভাবনার সূত্রানুযায়ী প্রায় বাতিল হবার উপক্রম, চতুর্থ অধ্যায়ে আমি তার ব্যাখ্যা দেব, তবে তার আগে আমি তৃতীয় অধ্যায়ে ঈশ্বরের অস্তিত্বের তথাকথিত প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করবো। আপাতত আমি বরং অ্যাগনষ্টিসিজম বা অজ্ঞেয়বাদ এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা চিরকালই বিজ্ঞানের ধরা ছোঁয়ার বাইরে একটি অস্পৃশ্য প্রশ্ন, এমন ভ্রান্ত ধারণার দিকে দৃষ্টি ফেরাই।
অ্যাগনষ্টিসিজম বা অজ্ঞেয়বাদের দীনতা
আমার পুরোনো স্কুলের চ্যাপেলের পালপিট থেকে আমাদের সাথে গলাবাজী করা বলিষ্ঠ, পেশীবহুল খ্রিষ্টান ব্যক্তিটি কিন্তু নিরীশ্বরবাদীদের প্রতি এক ধরনের গোপন শ্রদ্ধার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। কারণ অন্ততপক্ষে তাদের সৎসাহস আছে নিজেদের বিশ্বাসের উপর,তা যত ভ্রান্ত বিশ্বাসই হোক না কেন? এই ধর্মযাজক যা পছন্দ করতেন না তা হলো অজ্ঞেয়বাদীদের (৬২): দুর্বল, নরম, আগাছা, ভীতু, সিদ্ধান্তহীনতায় আক্রান্ত। তিনি কিছুটা ঠিক, তবে কিন্তু কারণটা সম্পূর্ণ ভুল। একই সুরে, কোয়েন্টিন দে লা বেদোইয়ের এর লেখা অনুযায়ী ক্যাথলিক ঐতিহাসিক হিউ রস উলিয়ামসন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধার্মিক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নিরীশ্বরবাদীদেরও। তার ঘৃণা সংরক্ষিত শুধুমাত্র দুর্বল প্রকৃতির ভীরু মেরুদণ্ডহীন সাধারণ মাপের মানুষগুলো যারা বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝামাঝি অবস্থান করে (৬৩)।
অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী হওয়া আদৌ দোষের না, বরং যুক্তিসঙ্গত একটি অবস্থান, যদি সে অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণের অভাব থাকে। কার্ল সেগান অজ্ঞেয়বাদী অবস্থান নিতে গর্ব বোধ করেছিলেন, যখন তাকে মহাবিশ্বে কোথাও জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা সে বিষয়ে তা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। যখন তিনি হ্যাঁ অথবা না জাতীয় কোন উত্তর দিতে অস্বীকার করেন, সাক্ষাৎকার গ্রহনকারী যখন তাকে চাপ দিচ্ছিলেন করছিল এ বিষয়ে তার ‘গাট ফিলিংস’ কি, তিনি এর স্মরণীয় জবাব দিয়েছিলেন: ‘কিন্তু আমিতো আমার ‘গাট’ (অন্ত্রনালী) দিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করিনা; সত্যিই, প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের মতামত সংরক্ষণ করা যেতেই পারে (৬৪); মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের। প্রশ্নটি এখনও উন্মুক্ত; পক্ষে এবং বিপক্ষে জোরালো যুক্তি আছে এবং যে কোনো একটি দিকে এই সম্ভাবনাটিকে প্রভাবিত করার মত যথেষ্ট প্রমাণের অভাব আছে। এক ধরনের অজ্ঞেয়বাদ অনেক বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের ক্ষেত্রেও যুক্তিযুক্ত অবস্থান হতে পারে, যেমন পারমিয়ান যুগের শেষে ঘটা মহাবিলুপ্তির কারণ কি(৬৫)? জীবাশ্ম ইতিহাসে সবচেয়ে যা বড় ধরনের অবলুপ্তি। বর্তমানে সংগৃহীত প্রমাণের ভিত্তিতে এর কারণ হতে পারে পৃথিবীর সাথে কোন উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষ, যেমনটি পরবর্তী সময়ে ডায়নোসরদেরও। বিলুপ্তির কারণ হয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য সম্ভাব্য একক বা মিশ্র কোনো কারণও হতে পারে। এই দুই মহাবিলুপ্তির কারণ সংক্রান্ত প্রশ্নে অ্যাগনষ্টিসিজম কিন্তু অযৌক্তিক না। ঈশ্বর সংক্রান্ত প্রশ্নে তাহলে কি? তার অস্তিত্বের ব্যপারেও কি অজ্ঞেয়বাদ যুক্তিযুক্ত? অনেকেই হয়তো তা বলবেন, অবশ্যই হ্যাঁ, প্রায়শই দৃঢ় বিশ্বাসের আদলে এই বক্তব্য অনেকটাই অতিরিক্ত প্রতিবাদের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু তারা কি সঠিক?
আমি শুরু করবো দুই ধরনের অ্যাগনষ্টিসিজম বা অজ্ঞেয়বাদকে পৃথক করার মাধ্যমে। TAP (৬৬) বা ‘টেম্পরারী অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস’ (সাময়িক ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অজ্ঞেয়বাদ), যা যুক্তিসঙ্গত মধ্যবর্তী অবস্থান, যেখানে পক্ষে বা বিপক্ষে সত্যিই সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে, কিন্তু আপাতত প্রমাণের অভাবে সেই উত্তরে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি (অথবা প্রমাণ থাকলেও ব্যাখ্যা করা যায়নি এখনও বোঝার ঘাটতির কারণে বা যথেষ্ট সময়। পাওয়া যায়নি প্রমাণগুলো বোঝার জন্য); টেম্পরারী অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস বা ট্যাপ অবশ্যই পারমিয়ান মহাবিলুপ্তির কারণ কি হতে পারে তার ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত অবস্থান হতে পারে। অবশ্যই পারমিয়ান মহাবিলুপ্তির একটি কারণ আছে, যদিও এই মুহূর্তে সত্যটি আমাদের জানা নেই, কিন্তু আশা করি একদিন আমরা অবশ্যই জানতে পারবো।
এছাড়াও কিন্তু আরো এক ধরনের মধ্যবর্তী অবস্থান আছে, আমি তার নাম দেব, PAP (৬৭) বা পার্মানেন্ট অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস’ (স্থায়ীভাবে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অজ্ঞেয়বাদ) শব্দসংক্ষেপটি যে শব্দটি বানান করে তার সাথে আমার প্রাক্তন স্কুলের ধর্মযাজকের উচ্চারিত একটি শব্দের মিল (প্রায়) একটি দুর্ঘটনা মাত্র। প্যাপ ধরনের অ্যাগনষ্টিসিজম যুক্তিযুক্ত সেই সব প্রশ্নের ক্ষেত্রে যার উত্তর কোনদিনও পাওয়া যাবেনা, যতই প্রমাণ আমরা পক্ষে বিপক্ষে যোগাড় করি না কেন, কারণ প্রমাণ এক্ষেত্রে প্রযোজ্যই হবেনা। এই প্রশ্নের অবস্থান ভিন্ন এক স্তরে অথবা ভিন্ন কোন মাত্রায়, প্রমাণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। একটা উদাহরণ হতে পারে সেই পুরোনো ফিলোসফিক্যাল ‘চেষ্টনাট’টি আমার মত লাল কি আপনিও দেখেন (৬৮)? হয়তো বা আপনার লাল আমার কাছে সবুজ অথবা আমার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব এমন কোন রং থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দার্শনিকরা এই প্রশ্নের উল্লেখ করেন, এমন একটা প্রশ্ন হিসাবে যার কোন উত্তর দেয়া সম্ভব না, পরবর্তীতে যতই নতুন প্রমাণ যোগাড় করা হোক না কেন। কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী আর অন্যান্য চিন্তাবিদ নিঃসন্দেহ হয়েছেন যে আমি মনে করি একটি বেশী উৎসাহের সাথে– ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নটি চিরকালের জন্য উত্তরহীন থেকে যাবে, এই ধরাছোঁয়ার বাইরে প্যাপ (PAP) শ্রেণীতে। এখান থেকেই, যা আমরা পরে দেখব যে তারা অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা সংক্রান্ত হাইপথিসিস, দুটোই সঠিক হবার সমান সম্ভাবনা আছে। আর যে দৃষ্টিভঙ্গিটা আমি সমর্থন করবো তা খুবই আলাদা: ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যপারে অ্যাগনষ্টিসিজম নিশ্চিৎভাবে সাময়িক বা ট্যাপ (TAP) শ্রেণীভুক্ত। হয় তার অস্তিত্ব আছে কিংবা নেই, অবশ্যই এটি বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন। একদিন আমরা এর উত্তর জানতে পারবো। আপতত আমরা এর সম্ভাবনা নিয়ে জোরালো যুক্তি দিতে পারি।
বিভিন্ন ধরনের মতবাদ বা ধারণার ইতিহাসে, পরে উত্তর পাওয়া গেছে এমন অনেক প্রশ্নের উদাহরণ আছে, যা কোন এক সময় ধরে নেয়া হয়েছিল চিরকালই বিজ্ঞানের আওতার বাইরে থেকে যাবে। ১৮৩৫ সালে বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক অগুস্ত কোঁমত(৬৯) নক্ষত্র নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক না কেন, ‘আমরা কোনদিনও, তাদের রাসায়নিক গঠন ধাতব প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করতে পারব না। অথচ কোঁমত তাঁর এই কথাগুলো কাগজে লেখার আগেই ফ্রাউনহফার (৭০) তার স্পেক্টোস্কোপ ব্যবহার করে সুর্যের রাসায়নিক গঠন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। এখন স্পেক্টোস্কোপ বিশেষজ্ঞরা প্রতদিনই কোঁমত এর অজ্ঞেয়বাদকে ভুল প্রমাণ করে যাচ্ছেন, এমনকি বহু দূরের নক্ষত্রদের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে (৭১); কোঁমত এর নভোবৈজ্ঞানিক অজ্ঞেয়বাদ এর সঠিক যে অবস্থাই থাকুক না কেন, এই সতর্কতামূলক কাহিনীর বক্তব্য হল, অন্ততপক্ষে, কোনো বিষয়ে অজ্ঞেয়বাদের চিরন্তন সত্যতার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেবার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। তাসত্ত্বেও যখনই ঈশ্বরের বিষয় আসে, এই শব্দটির প্রথম আবিষ্কারক, টি এইচ হাক্সলী (৭২) থেকে শুরু করে, অনেক মহান দার্শনিক আর বিজ্ঞানীরা, খুবই খুশী মনে কাজটি করে থাকেন (৭৩)।
শব্দটির উদ্ভাবনের বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন হাক্সলী, যখন সেটি একটি ব্যক্তিগত আক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। লণ্ডনের কিংস কলেজের অধ্যক্ষ রেভারেন্ড ডঃ ওয়েইস হাক্সলীর কাপুরুষোচিত অজ্ঞেয়বাদী অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন:
তিনি হয়ত নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী হিসাবে চিহ্নিত করতে স্বস্তিবোধ করেন, কিন্তু তার প্রকৃত নাম আসলে আরো প্রাচীন, তিনি আসলে নাস্তিক, অর্থাৎ অবিশ্বাসী। অবিশ্বাসী শব্দটির সাথে হয়তো একটি অপ্রীতিকর অর্থ জড়িয়ে আছে, এটাই হওয়া হয়তো স্বাভাবিক কোন মানুষের পক্ষে, এবং সেটা হওয়াই উচিৎ, যীশু খ্রিষ্টকে সে বিশ্বাস করে না, এই কথাটা স্পষ্ট করে বলাটা অবশ্যই সুখকর কোনো বিষয় নয়।
হাক্সলী অবশ্য এমন মানুষ ছিলেন না যে, যিনি সহজে এধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য অগ্রাহ্য করবেন এবং সবাই যেমনটি আশা করেছিল, ১৮৮৯ সালে, তাঁর প্রত্যুত্তর ছিল খুবই তীব্রভাবে সমালোচনামূলক (যদিও তার স্বভাবসুলভ সতর্ক নম্রতার কোনো ব্যতিক্রম না ঘটিয়ে, ‘ডারউইনের বুলডগ হিসাবে তিনি। ইতিমধ্যেই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন ভিক্টোরিয়ীয় যুগের শহুরে বৈশিষ্ট্যসূচক তীর্যক বাদানুবাদে); অবশেষে, ডঃ ওয়েইসকে তার উচিৎ প্রাপ্য শাস্তি এবং শেষ পর্যন্ত যা ছিল তার সবটুকুর কবর দিয়ে, হাক্সলী ফিরে আসেন “অ্যাগনষ্টিক’ শব্দটির কাছে এবং বর্ণনা দেন কেমন করে তিনি এটি পেলেন। “অন্যরা’, তিনি বলেন,
নিশ্চিৎ যে, তারা ‘নসিস (Gnosis) বা অন্তর্গত তত্ত্বজ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন এবং কমবেশী সাফল্যের সাথে অস্তিত্বের প্রশ্নটি সমাধান করতে পেরেছেন; কিন্তু আমি নিশ্চিৎ আমি পারিনি এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই প্রশ্ন সমাধানযোগ্য নয়। হিউম (৭৪) এবং কান্ট’কে (৭৫) আমার পাশে নিয়ে বলছি, আমি আমার নিজেকে এধরনের মতামত শক্ত করে আকড়ে থাকার মত এত অহঙ্কারী ভাবতে পারিনা সুতরাং আমি চিন্তা করলাম এবং আবিষ্কার করলাম ‘অ্যাগনস্টিক’ শব্দটিকে, যা আমার মতে যথাযথ।
পরবর্তীতে তার বক্তৃতায়, হাক্সলী আরো বিষদ ব্যাখ্যা দেন, ‘অ্যাগনস্টিক বা অজ্ঞেয়বাদীদের কোন মতবাদ নেই, এমনকি নেতিবাচক কোন কিছু তো নয়ই।
অ্যাগনস্টিসিজম, আসলে কোন মতবাদ না বরং একটি পদ্ধতি। যার সার কথা হলো, একটি আদর্শকে দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করা। ইতিবাচকভাবে, সেই আদর্শকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে, আর কোনো কিছুর কথা না ভেবে, যতটুকু পর্যন্ত সম্ভব নিজের যুক্তিকে সর্বদা অনুসরণ করা। এবং নেতিবাচকভাবে: বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে, উপসংহার যে নিশ্চিৎ এমন ভান না করা যখন তা প্রমাণ করা যাবেনা বা প্রমাণযোগ্য নয়। আমি এটাকেই অ্যাগনস্টিক বিশ্বাস বলি, কেউ যদি পুরোটা মানেন এবং হালকা করে না ফেলেন, পথিবীর মুখোমুখি হতে তাকে নির্লজ্জ হতে হবেনা, ভবিষ্যতে যা কিছুই ঘটুক না কেন।
একজন বিজ্ঞানীর কাছে এগুলো অনেক মহৎ একটি বক্তব্য এবং টি. এইচ, হাক্সলীকে হালকাভাবে সমালোচনা করা যায়না। কিন্তু হাক্সলী ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতার প্রমাণের অসম্ভাব্যতার দিকে তাঁর মনোযাগ দেবার ফলে তিনি সম্ভাবনার বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেননি। আমাদের পক্ষে কোনো কিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারা বা না পারার এই সত্যটা কিন্তু সেটির অস্তিত্ব আর অস্তিত্বহীনতার বিষয়টিকে একই শ্রেণীতে ফেলে না। আমি মনে করিনা টি, এইচ, হাক্সলী এ ব্যপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন এবং সন্দেহ হয়, তিনি যখন আপাত দৃষ্টিতে কাজটি করেছিলেন প্রচলিত জনমতকে খুশি করার জন্য বেশী মাত্রায় উদ্যোগী হয়ে। আমরা সবাই কাজটি কোনো না কোনো একসময় করেছি।
হাক্সলীর সাথে দ্বিমত পোষণ করে আমি বলতে চাই, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নটি অবশ্যই একটি বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস, অন্য অনেক বিষয়ের মত। যদিও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এটি পরীক্ষা করার মত কোনো বিষয় হিসাবে কঠিন, এটির অবস্থান পারমিয়ান এবং ক্রেটাসিয়াস মহাবিলুপ্তি নিয়ে বিতর্কের সাথে একই TAP বা ‘টেম্পরারী অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস’ শ্রেণীতে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব এই মহাবিশ্ব সংক্রান্ত একটি বৈজ্ঞানিক সত্য, তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণযোগ্য, যদিও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে ব্যপারটা সহজ নয়। যদি ঈশ্বর সত্যিই থাকেন এবং তিনি নিজে যদি চান, ঈশ্বর নিজেই তার অস্তিত্বের এই বিতর্ক চিরকালের মত স্বশব্দে এবং সুস্পষ্টভাবে থামিয়ে দিতে পারেন। এবং এমনকি যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব যদি নিশ্চিৎভাবে প্রমাণ বা খণ্ডানো নাও যায়, বর্তমানে প্রাপ্য সব প্রমাণ আর যুক্তি সম্ভাবনার পরিমাপের অংকটি নিয়ে গেছে শতকরা ৫০ ভাগ থেকে আরো অনেক দূরে।
তাহলে, আমরা গুরুত্বের সাথে সম্ভাবনার স্পেকট্রাম বা ধারাবাহিক একটি বিস্তৃতির ধারণাটিকে প্রহন করি, এবং দুটি চূড়ান্ত বিপরীতমুখী নিশ্চিৎ অবস্থানের মাঝে আরোপ করি ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের নানা ভাবনার ধারাক্রমকে। এই স্পেকট্রাম যদিও অবিচ্ছিন্ন, তা সত্ত্বেও দুই চূড়ান্ত অবস্থানের মধ্যে নিম্নলিখিত সাতটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বিদ্যমান:
১. পুরোপুরি ঈশ্বরবাদী: শতকরা ১০০ ভাগ সম্ভাবনা ঈশ্বরের অস্তিত্বে। সি. জি. ইয়ুঙ (৭৬) এর ভাষায়: “আমি বিশ্বাস করিনা, আমি জানি।
২. অনেক বেশী সম্ভাবনা, কিন্তু শতকরা ১০০ ভাগের নীচে। কার্যত ঈশ্বরবাদী। “আমি নিশ্চিভাবে জানি না কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি এবং তার অস্তিত্ব আছে এটাকে সত্য মনে করে আমার জীবন যাপন করি।
৩. শতকরা ৫০ ভাগের উপরে তবে সম্ভাবনা এর খুব একটা বেশী উপরে না; কৌশলগতভাবে অজ্ঞেয়বাদী কিন্তু ঈশ্বরবাদ ঘেষা। আমি খুবই অনিশ্চিৎ কিন্তু আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক।
৪. সম্ভাবনা ঠিক শতকরা ৫০ ভাগ। পুরোপুরি পক্ষপাতহীন অ্যাগনষ্টিক। “ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা দুটোই সমানভাবে সম্ভাব্য।
৫. শতকরা ৫০ ভাগের নীচে তবে সম্ভাবনা এর খুব একটা বেশী নীচে নয়। কৌশলগতভাবে অ্যাগনষ্টিক কিন্তু নিরীশ্বরবাদ ঘেষা। আমি জানিনা ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা কিন্তু আমি সংশয়বাদী হতে ইচ্ছুক।
৬. খুবই কম সম্ভাবনা কিন্তু শূন্যের উপরে। কার্যত নিরীশ্বরবাদী। আমি নিশ্চিভাবে জানিনা কিন্তু আমি মনে করি ঈশ্বর খুবই অসম্ভব একটি ব্যপার এবং তার নেই এটা মনে করে আমার জীবন যাপন করি।”
৭. পুরোপুরি নিরীশ্বরবাদী। যেমন ইয়ুং তার মন্তব্য ব্যবহার করেছিলেন ‘জানেন, ঠিক তেমন বিশ্বাসের সাথে আমি জানি কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
আমি বেশ অবাকই হবো যদি বেশী মানুষকে ক্যাটেগরী ৭ এ পাওয়া যায়, তারপরও যেখানে বেশীর ভাগ মানুষ, সেই ক্যাটেগরী ১ এর সাথে সামঞ্জস্য রাখার খাতিরে আমি এটি যোগ করেছি। বিশ্বাসের প্রকৃতিই হচ্ছে, ইয়ুঙ এর মত, একজন বিশ্বাসী কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তার বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে সক্ষম (ইয়ুঙ আরো বিশ্বাস করতেন, তার বুক সেলফের নির্দিষ্ট কিছু বই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বশব্দে বিস্ফোরিত হতে পারে); নিরীশ্বরবাদীদের কোনো অন্ধবিশ্বাস নেই,আর শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই এ ধরনের বিশ্বাসে কেউ পৌঁছাতে পারেনা। সেকারণে ক্যাটেগরী ৭ ব্যবহারিকভাবে শূন্য তার বিপরীত মেরুর ক্যাটেগরী ১ থেকে, যেখানে অনেক অনুগত মানুষের সমাবেশ। আমি নিজেকে ক্যাটেসরী ৬ এ, কিন্তু ৭ দিকে ঘেষা মনে করি। আমি অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী, তবে তা শুধুমাত্র, বাগানে গাছের নীচে পরীদের ব্যপারে আমি যেমন অজ্ঞেয়বাদী ঠিক ততটুকু।
সম্ভাবনার এই স্পেক্ট্রামটি, TAP বা ‘টেম্পরারী অ্যাগনষ্টিসিজম ইন এ্যাকটিস’ এর ক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য। পার্মানেন্ট অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস বা PAP (প্যাপ) এই স্পেক্ট্রামটির মাঝামাঝি, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা যেখানে শতকরা ৫০ ভাগ, সেখানে রাখার একটা হালকা প্রলোভন হতে পারে, কিন্তু সেটা সঠিক হবে না। PAP অজ্ঞেয়বাদীরা দৃঢ়তার সংঙ্গে দাবী করেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, কি নেই, এই প্রশ্নে আমাদের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলা সম্ভব না। এই প্রশ্নটি, ‘প্যাপ’বাদীদের মতে, নীতিগতভাবে সমাধানযোগ্য নয় এবং তাদের উচিৎ হবে এই স্পেক্ট্রামটির কোনো স্তরে নিজেদের শ্রেনীভুক্ত করার যেকোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। আমার পক্ষে জানা সম্ভব না যে, আপনার লাল কি আমার সবুজের মত-এই সত্যটা কিন্তু শতকরা ৫০ ভাগ সম্ভাবনার সমান না। এধরনের প্রস্তাব এতটাই অর্থহীন যে, একে কোন ধরনের সম্ভাবনার মর্যাদা দেয়াও সম্ভব না। তাসত্ত্বেও, এটা খুব সাধারণ একটা ভুল, যা আমরা পরবর্তীতে আবার লক্ষ করব, নীতিগতভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নটি সমাধানযোগ্য নয় এমন ধারণা থেকে, তার অস্তিত্ব এবং তার অস্তিত্বহীনতা দুটোই সমানভাবে সম্ভাব্য, এমন কোন একটা উপসংহারে লাফ দেয়া।
অন্য আরেকভাবে এই ভুলটি বোঝানো যেতে পারে, প্রমাণের দায়ভারের মাধ্যমে, যা বার্ট্রান্ড রাসেল (৭৭) চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন স্বর্গীয় চায়ের পাত্রের রপকের মাধ্যমে (৭৮)।
অনেক গোঁড়া ধর্মামতাবলম্বীরা এমন ভাবে কথা বলেন যেন, স্বর্গীয়ভাবে বা ঐশী প্রত্যাদেশে প্রাপ্ত কোনো ধর্মকে মিথ্যা প্রমাণ করার দায়িত্ব সেই ধর্মমতাবলম্বী নয় বরং সংশয়বাদীদেরই উপরেই বর্তায়, গোঁড়া ধর্মবাদীদের কোন দ্বায়িত্ব নেই সেটির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য। এটি অবশ্যই ভুল। আমি যদি প্রস্তাব করি, পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহের মাঝে চীনামাটির তৈরী একটি চায়ের একটি কেতলী বা পাত্র আছে, যা সুর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার একটি কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে, কারো পক্ষে কিন্তু আমার দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে আমি যদি একটু সতর্ক হয়ে আরো বলি যে, চায়ের সেই পাত্রটি এত ক্ষুদ্রকায়, আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও তা দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি যদি আরো বলি, আমার দাবীকে যেহেতু মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না, অতএব একে সন্দেহ করা কোনো মানবিক যুক্তির পক্ষে অসহ্য একটি ধৃষ্টতা হবে; তবে আমি যে অর্থহীন কথা বলছি এমনটি ভাবা কারো জন্য ভুল হবে না। কিন্তু এধরনের একটি চায়ের পাত্রের অস্তিত্ব যদি সুনিশ্চিভাবে। ঘোষণা করা হতো প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থে, প্রতি রোববারে পবিত্র উদ্ধৃতি হিসাবে তা শেখানো হত, স্কুলে শিশুদের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হত, তাহলে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ধরনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব বা ইতস্ততা হিসাবে চিহ্নিত করা হত বরং একটি অস্বাভাবিকতা হিসাবে, এবং এর সংশয়বাদীরা নজরে পড়তেন আধুনিক যুগে মনোচিকিৎসকদের এবং অতীতের ইনকুইজিটরদের(৭৯) নজরে।
এ বিষয়ে কথা বলে আমাদের সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না, আমি যতটুকু জানি কেউই এরকম কোন চায়ের পাত্রের উপাসনা করেন না। কিন্তু যদি জোর করা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের দঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করবো না যে, অবশ্যই কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত এমন কোনো চায়ের পাত্রের অস্তিত্ব নেই। তারপরও মূলত নিয়মানুযায়ী আমাদের সবাইকে চায়ে’র পট অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী হিসাবে ধরে নিতে হবে; আমরা প্রমাণ করতে পারব না, সুনিশ্চিৎভাবে, যে কোনো স্বর্গীয় চায়ের পাত্রের অস্তিত্ব নেই। ব্যবহারিক সব ক্ষেত্রে, চায়ের পাত্র সংক্রান্ত অজ্ঞেয়বাদ থেকে আমরা সরে আসব চায়ের পাত্র সংক্রান্ত অবিশ্বাসী মতবাদে (৮০)।
একজন বন্ধু, যিনি প্রতিপালিত হয়েছেন ইহুদী ধর্মীয় পরিমণ্ডলে এবং নিজ ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত হয়ে এখনও সাবাথ (৮১) বা অন্যান্য ইহুদী ধর্মীয় আচার পালন করেন, নিজেকে বর্ণনা দেন একজন ‘টুথ ফেয়ারী (৮২) অজ্ঞেয়বাদী’ হিসাবে। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে ‘টুথ ফেয়ারীর’ অস্তিত্বের সম্ভাবনার থেকে আদৌ বেশী কিছু মনে করেন না, দুটি হাইপোথিসিসের কোনোটাই প্রমাণ করা সম্ভব না, এবং দুটোই সমানভাবে অসম্ভব। প্রায় ঠিক যতটুকু তিনি ফেয়ারী অবিশ্বাসী ততটুকু ঈশ্বর অবিশ্বাসী, এবং উভয় ক্ষেত্রেই একই রকম সামান্য মাত্রায় অজ্ঞেয়বাদী।
রাসেলের এর কল্পিত চায়ের পাত্র, অবশ্যই অগনিত জিনিসের প্রতিক বা প্রতিনিধিত্ব করছে, যাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব, কিন্তু মিথ্যা প্রমাণ করা অসম্ভব। আমেরিকার বিখ্যাত আইনজীবি, চার্লস ড্যারো বলেছিলেন, ‘আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি না যেমন মাদার গুজকেও (৮৩) বিশ্বাস করিনা; সাংবাদিক অ্যান্ড্রু মুয়েলার মত হল, নিজেকে কোনো বিশেষ একটি ধর্মবিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট করার মানে হলো, পৃথিবী হচ্ছে রম্বস আকৃতির এবং এসমেরেল্ডা আর কীথ নামের দুই অতিবিশাল সবুজ লবষ্টার তাদের সাড়াশীর মত দুই হাতে মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে পৃথিবীটাকে বহন করে নিয়ে চলছে এমন ধরনের কোনো উদ্ভট বিশ্বাসের চেয়ে বেশী কিছু না (৮৪); দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সবচেয়ে প্রিয়, অদৃশ্য, অস্পৃশ্য, অশ্রবণযোগ্য ইউনিকর্ন (৮৫), যা প্রতিবছর ক্যাম্প কোয়েষ্ট শিশুরা মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করে (৮৬)। বর্তমানে ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা যাকে সেই ইয়াহয়ে বা সমতুল্য অন্য যে কোনটার মতই মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তা হল ‘ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার’, যিনি, অনেকেই দাবী করে, তাদেরকে স্পর্শ করেছে নুডলস মত শরীরের অংশ দিয়ে (৮৭); আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি যে, ‘গসপেল অব ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার’ ইতিমধ্যেই বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে। (৮৮); আমি যদিও এখনও পড়িনি কিন্ত গসপেল পড়ার কি দরকার, যদি আপনি জানেন, এটা সত্যি? প্রসঙ্গক্রমে, যা হবার কথা ছিল, বড় মাপের মতবিভেদ ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে, ফলে তৈরী হয়েছে রিফর্মর্ড বা সংস্কারকৃত ‘চার্চ অব দ্য ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার’ (৯০)।
এসব বিচিত্র উদাহরণ নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্য হলো, এদের মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব না, তারপরও কেউ চিন্তা করেনা, তাদের অস্তিত্ব আর অস্তিত্বহীনতার হাইপোথিসিস একই সমমানের। রাসেলের বক্তব্য হল, প্রমাণ করার দায়ভার বিশ্বাসীদের, অবিশ্বাসীদের নয়। আমার বক্তব্যও কিছুটা সেধরনেরর, উড়ন্ত চায়ের পাত্রের অস্তিত্বের পক্ষে সম্ভাবনা (বা স্প্যাগেটি মনস্টার/এসমেরে আর কীথ/ ইউনিকর্ন ইত্যাদি) কিন্তু এর বিপক্ষে সম্ভাবনার সমান না।
কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত কোনো চায়ের পট’ বা ‘টুথ ফেয়ারী’র অস্তিত্ব মিথ্যা প্রমাণ করার অযোগ্য, এই বিষয়টিকে সত্য হিসাবে কোনো যুক্তিবাদী মানুষই অনুভব করেন না কিংবা মনে করেন না যে এটি এমন কোনো বিষয় হতে পারে যা কিনা যা আগ্রোহদ্দীপক যুক্তিতর্কের মাধ্যমে মীমাংসা করা সম্ভব। আমরা কেউই, উর্বর আর ছলনাময়ী কল্পনা তৈরী করতে পারে এমন লক্ষ লক্ষ অবাস্তব বিষয়গুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করাকে নিজেদের দ্বায়িত্ব বলে মনে করি না। যখন জিজ্ঞেস করা হয় আমি নিরীশ্বরবাদী কিনা, আমার এটিকে মজার একটা কৌশল বলে মনে হয়, যে আমিও প্রশ্নকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বোঝাতে চাই যে, জিউস (৯০), অ্যাপোলো (৯১), আমন-রা (৯২), মিথরাস (৯৩), বাল (৯৪), থর (৯৫), ওটান (৯৬), সোনালী বাছুর (৯৭) এবং ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টারের (৯৮) ক্ষেত্রে তিনি নিজেও একজন নিরীশ্বরবাদী, আমি কেবল আরেকটি বেশী ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করি মাত্র।
আমরা প্রায় সবাই পুরোপুরি অবিশ্বাসের কাছাকাছি এক ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করার অধিকার রাখি– শুধুমাত্র ইউনিকর্ন, টুথ ফেয়ারী, প্রাচীন গ্রীস, রোম, মিশর এবং ভাইকিংদের দেবদেবীদের ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু আব্রাহামীয় ঈশ্বরের ক্ষেত্রে চিন্তার প্রয়োজন আছে, কারণ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যাদের সাথে আমরা এই পৃথিবীতে বাস করি তারা তার অস্তিত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। রাসেল এর চায়ের পাত্রটির উদাহরণ যা প্রদর্শন করছে, তা হলো ঈশ্বর বিশ্বাসের সর্বজনীনতা; স্বর্গীয় চায়ের পাত্রের বিশ্বাসের সাথে তুলনা করলে কিন্তু যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করার দায়ভারটা যে তাদের (ধর্মবিশ্বাসীদের), সেই বিষয়টি কিন্তু অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। যদিও প্রায়োগিক বাস্তব রাজনীতির স্তরে মনে হতে পারে দায়ভার পরিবর্তিত হয়ে নির্দেশিত হয়েছে অবিশ্বাসীদেরই দিকে। ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা যে আমরা প্রমাণ করতে পারবে না তা গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে, এবং রুপান্তরিত হয়েছে যেন খুবই তুচ্ছ একটি ব্যপারে, এমনকি শুধুমাত্র এই অর্থে যে, আমরা কখনেই চূড়ান্তভাবে কোনকিছুর অস্তিত্বহীনতাকে প্রমাণ করতে পারব না। আসল ব্যাপারটা হলো যে, ঈশ্বরকে কি অপ্রমাণ করা যায় কিনা (তিনি অবশ্যই তা না) সেটা কিন্তু না বরং তার অস্তিত্ব আদৌ সম্ভব’ কি কিনা, সেটাই। এবং সেটা ভিন্ন একটি ব্যপার। কিছু প্রমাণ অযোগ্য বিষয়। যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিচার করা হয়, অন্য আরো কিছু প্রমাণ অযোগ্য বিষয় থেকে, অনেক কম ‘সম্ভাব্য’ হিসাবে। কোন কারণই নেই ‘ঈশ্বরকে সম্ভাবনার এই বিস্তার বা স্পেকট্রামের নিরিখে পরীক্ষাযোগ্য না ভাবা। এবং অবশ্যই কোনো কারণ নেই ভাববার যে, শুধুমাত্র ঈশ্বর এর অস্তিত্ব প্রমাণ করা বা মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না বলেই তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ। বরং এর বিপরীতটাই সম্ভব, যা আমরা পরবর্তীতে দেখবো।
.
নোমা (NOMA)
সম্পূর্ণভাবে পক্ষপাতহীন অজ্ঞেয়বাদের প্রতি টমাস হাক্সলী যেভাবে আন্তরিকতাহীন সমর্থন জানাতে বেশী মাত্রায় সচেষ্ট হয়েছিলেন, আমার সাত স্তরের সম্ভাবনা স্পেক্ট্রামের মধ্যবর্তী স্তরের ঈশ্বরবাদীরাও ঠিক একই ধরনের কিছু কারণে কাজটি অন্যদিক বরাবর করে থাকেন। ধর্মতত্ত্ববিদ অ্যালিস্টার ম্যাকগ্রাথ (১০০) তার ‘ডকিন্স’স গড: জিনস, মিমস অ্যাণ্ড দি অরিজিন অব লাইফ বইতে এটাকেই মূল বক্তব্য হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। সত্যি, আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি সপ্রশংস পক্ষপাতহীন সারাংশ শেষে মনে হয়েছে, যুক্তি খণ্ডানোর লক্ষ্যে তিনি কেবলমাত্র একটি বিষয় শুধু উল্লেখ করেছেন: সেই অনস্বীকার্য এবং অসম্মানজনক দুর্বল যুক্তি, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবে না। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ম্যাকগ্রাথ পড়ার সময় আমি মার্জিনে ‘চায়ের পাত্র (১০১) লিখে গেছি। টি, এইচ, হাক্সলীর বক্তব্য তার সমর্থনে উল্লেখ করে তিনি বলেন: “চরম বিরক্ত হই যখন ঈশ্বরবাদী আর নিরীশ্বরবাদী, উভয় পক্ষই অপর্যাপ্ত পরিমান প্রায়োগিক প্রমাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে নৈরাশ্যজনকভাবে অযৌক্তিক গোঁড়া মতবাদ বা বক্তব্য প্রদান করেন, হাক্সলী ঘোষণা করেছিলেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে ঈশ্বর প্রশ্নের কোনো সুরাহা হবেনা।
ম্যাকগ্রাথ পরে স্টিফেন জে. গুলড (১০২) এর উদ্ধৃতি দেন একই ধারাবাহিকতায়: “আমার সহকর্মীদের জন্যে আর বহু লক্ষবার যা বলেছি (কলেজের ঘরোয়া আলোচনা থেকে গবেষণামূলক সেমিনারে): বিজ্ঞান কোনোভাবেই (এর অন্তর্ভুক্ত কোনো স্বীকৃত বৈধ উপায়ে), প্রকৃতির উপর উপর ঈশ্বরের সম্ভাব্য তদারকীর বিষয়টি মিমাংসা করতে পারবে না। আমরা না পারবো একে সত্যাপন করতে, না পিরবো অস্বীকার করতে। বিজ্ঞানী হিসাবে এ বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতেই পারবো না’; গুল্ডের দাবীর মধ্যে প্রত্যয়ী, প্রায় জোর জবরদস্তিমূলক আওয়াজ থাকা সত্ত্বেও, আসলেই তার এই কথার যৌক্তিকতটা কি? কেন বিজ্ঞানী হিসাবে আমরা ঈশ্বরের বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না? আর কেনই বা রাসেলের ‘চায়ের পাত্র’ অথবা “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার’ সমানভাবে বৈজ্ঞানিক সন্দেহের উর্ধে থাকবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি যুক্তি উপস্থাপন করব যে, সৃষ্টিকর্তার তদারকীতে চলমান একটি মহাবিশ্ব অবশ্যই সৃষ্টিকর্তাহীন কোনো মহাবিশ্ব থেকে ভিন্ন হবে। আর কেনই বা তা বৈজ্ঞানিক বিষয়ে হিসাবে গ্রাহ্য করা হবে না?
খুশী করার জন্য অতিরিক্ত বিনয়ী হবার চেষ্টার শিল্পটিকে আক্ষরিক অর্থে মাটিতে প্রায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ার পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ছিলেন গুল্ড তার অপেক্ষাকৃত কম প্রশংসিত বই ‘রকস অব এজেস এ। এখানেই তিনি উদ্ভাবন করেন নোমা (NOMA), শব্দটিকে, শব্দটি ‘নন-ওভারল্যাপিং ম্যাজিষ্টেরিয়ার (Non Overlaping Magisteria) শব্দ সংক্ষেপ:
বিজ্ঞানের প্রভাব বা কর্তৃত্বের ক্ষেত্র’ বা ‘ম্যাজিষ্টেরিয়াম’ বিস্তৃত প্রায়োগিক জগতে: বিশ্বব্রহ্মান্ড কি দিয়ে তৈরী (বাস্তব তথ্য) এবং কেন এটি এভাবে কাজ করে (তত্ত্ব); কিন্তু ধর্মের ‘ম্যাজিষ্টেরিয়াম’ বিস্তৃত এসব কিছুর সর্বশেষ অর্থ এবং নৈতিক মূল্যবোধ সংক্রান্ত প্রশ্ন সমুহে। এই দুই ম্যাজিষ্টেরিয়া একে অপরকে অধিক্রমণ করে না, এবং তারা সকল জিজ্ঞাসাকেও ধারণ করেনা (উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, শিল্পের ম্যাজিষ্টেরিয়াম এবং সৌন্দৰ্য্যর অর্থ); পুরোনো বহুল ব্যবহৃত কথা উল্লেখ করে বললে, বিজ্ঞান জানে কিভাবে কোন পাথরের অতিক্রান্ত করা সময় নির্ধারণ করা যায় (age of rocks), আর ধর্ম জানে যুগযুগান্তরের বিশ্বাসের প্রতীক রুপী পাথরকে (rock of ages); বিজ্ঞান গবেষণা করে কিভাবে স্বর্গোলক চলছে। (how the heaven goes), আর ধর্মের ভাবনা হচ্ছে কেমন করে স্বর্গে যাওয়া যায় (how to go to heaven)।
বিষয়টা নিয়ে আপনি চিন্তা করার আগ পর্যন্ত শুনতে ভালোই লাগবে উপরের কথাগুলো। সেই সব চূড়ান্ত প্রশ্নাবলী আসলে কোনগুলো যার সামনে ধর্ম সম্মানিত অতিথি আর বিজ্ঞানকে শ্রদ্ধা সহকারে চুপিসারে সরে পড়তে হবে।
মার্টিন রিস, কেমব্রীজের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী যাঁর কথা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, তিনি তার বই ‘আওয়ার কসমিক হ্যাঁবিট্যাট’ শুরু করেছেন দুটি সম্ভাব্য চূড়ান্ত প্রশ্ন প্রস্তাব এবং নোমা-বান্ধব উত্তর দেয়ার মাধ্যমে। সবচেয়ে প্রধান রহস্যটা হলো, যেকোনো কিছুর আদৌ কেন অস্তিত্ব আছে এবং এই সমীকরণে কে বা কি জীবনের স্পর্শ দিয়ে এই মহাবিশ্বে তাদের বাস্তবতা দিয়েছে? এধরনের প্রশ্নগুলো বিজ্ঞানের আওতার বাইরে, কিন্তু তারা দর্শন আর ধর্মতত্ত্বের এখতিয়ারে অবস্থিত। আমি বরং বলতাম যে, যদি সত্যি তারা বিজ্ঞানের নাগালের বাইরে অবস্থান করে থাকে, অবশ্যই ধর্মতত্ত্বর আওতার বাইরেও তাদের অবস্থান (আমার সন্দেহ আছে দার্শনিকরা তাদেরকে ধর্মতাত্ত্বিকদের সাথে এক গোত্রে ফেলার জন্য মার্টিন রিস এর উপর সন্তুষ্ট হতে পারেন); আমি আরেকটু আগ বাড়িয়ে ভাবার চেষ্টা করছি যে, কোন অর্থে বলা সম্ভব যে, ধর্মতাত্ত্বিকদের একটি পৃথক এখতিয়ার বা সীমানা আছে। আমার অক্সফোর্ড কলেজের ওয়ার্ডেন (প্রধান) এর মন্তব্যটা মনে পড়লে হাসি পায় এখনও; একজন তরুণ ধর্মতত্ত্ববিদ জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশীপের জন্য আবেদন করেছিল, এবং খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্ব নিয়ে তার ডক্টরাল থিসিস ওয়ার্ডেনকে মন্তব্য করতে প্ররোচনা করেছিল : ‘আমার গভীর সন্দেহ আছে যে আদৌ এটা কোনো গবেষণার বিষয় হতে পারে কিনা।
গভীর মহাজাগতিক প্রশ্নের সমাধানে ধর্মতাত্ত্বিকরা কি এমন বিশেষ দক্ষতা দেখাবেন, যা বিজ্ঞানীরা পারবেন না? আরেকটি লেখায়। আমি অক্সফোর্ডের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কথা উল্লেখ করেছিলাম, যখন আমি তাকে এই গভীর প্রশ্নগুলোর একটি করেছিলাম, তার উত্তর ছিল: “নাহ, এখন আমরা বিজ্ঞানের সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছি, এখন এর উত্তর দেবার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি আমাদের ভালো বন্ধু চ্যাপলেইনের (ধর্মযাজক) উপর। আমি খুব দ্রুত এর উত্তর দিতে পারিনি, যা আমি পরে লিখেছিলাম: ‘কিন্তু কেন চ্যাপলেইন? কেন বাগানের মালী বা বাবুর্চি না? কেন বিজ্ঞানীরা কাপুরুষের মত ধর্মতত্ত্ববিদদের উচ্চাশার প্রতি ভক্তিশীল, যখন এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য তারা অবশ্যই বিজ্ঞানীদের নিজেদের থেকে বেশী যোগ্য নয়?
এটি বিরক্তিকর বহু ব্যবহৃত উক্তি (আর, অন্য অনেক বহু-ব্যবহৃত শব্দ থেকে এর পার্থক্য, এটি এমনকি সত্যিও না), তা হলো, বিজ্ঞান ব্যস্ত থাকে ‘কিভাবে’ (how) প্রশ্ন নিয়ে কিন্তু একমাত্র ধর্মতত্ত্ব যথেষ্ট উপযুক্ত ‘কেন’ (why) প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য। এই ‘কেন প্রশ্নটা আসলেই বা কি? প্রত্যেকটা ইংরেজী বাক্য ‘কেন’ দিয়ে শুরু হলেই সেটা যুক্তিসঙ্গত বৈধ কোন প্রশ্ন হয়ে যায় না: ইউনিকনের ভেতরটা ফাঁপা বা শূন্য কেন? কিছু প্রশ্ন কোন উত্তর পাবারই যোগ্যতা রাখেনা, চিন্তার রং কেমন? আশার গন্ধ কেমন? কোনো প্রশ্ন ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ হলেই অর্থবহ বাক্য হয়। না বা তার জন্য সময় নষ্ট করাও যুক্তিযুক্ত হয় না। এমন কি প্রশ্নটা যদি বাস্তবসম্মতও হয়, বিজ্ঞান পারবে না বলে এর অর্থ এমন না যে, ধর্ম সেটি পারবে।
হয়ত এমন কিছু সত্যিকারের এবং গভীর প্রশ্ন আছে চিরকালই যা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে থেকে যাবে। হয়ত কোয়ান্টাম তত্ত্ব ইতিমধ্যে আমাদের বোঝার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার দরজায় কড়া নাড়ছে। কিন্তু যদি বিজ্ঞান না পারে, কোনো চূড়ান্ত বা সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর দিতে, তাহলে ধর্ম পারবে এমন কথা কেমন করে ভাবা সম্ভব? আমি বিশ্বাস করি, না কেমব্রিজ বা অক্সফোর্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কেউই বিশ্বাস করতে পারেন না যে, বিজ্ঞানের পক্ষে উত্তর দেওয়া কঠিন এমন কোন গভীরতম প্রশ্নের উত্তর দেবার মত বিশেষ কোনো দক্ষতা ধর্মতত্ত্ববিদদের আছে। আমি সন্দেহ করছি, দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী, আবারো বিনয়ী হবার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করেছেন; ধর্মতাত্ত্বিকদের তো কোনো কিছু সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বলার নেই, সুতরাং ঠিক আছে আমরা তাদের বরং একটু ছাড় দেই, উনারা চিন্তা করতে থাকুন এমন কতগুলো প্রশ্ন নিয়ে যা কেউ কোনদিনও উত্তর দিতে পারবে না। আমার জ্যোতির্বিজ্ঞানী বন্ধুদের মত আমি কিন্তু মনে করিনা, আমাদের আদৌ তাদের এধরনের সুযোগ দেবার কোন প্রয়োজন আছে। আমি এখনো কোনো জোরালো কারণ দেখিনি ধর্মতত্ত্ব (বাইবেল সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, সাহিত্য এর পরিবর্তে) আসলে কোন একটি বিষয় হতে পারে।
বাড়িয়ে না বললেও, একইভাবে, আমরা প্রায় সবাই একমত হতে পারি যে, নৈতিক মূল্যবোধের উপর উপদেশ দেবার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অধিকারের বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু গুল্ড কি আসলেই চান কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ সেটা নির্ধারন করার অধিকার ধর্মের উপরেই ছেড়ে দিতে? মানুষের জ্ঞানের সম্ভারে যার নতুন আর কিছু দেবার নেই; আমাদের করণীয় সম্বন্ধে কোনো নির্দেশ দেবার জন্য ধর্মকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার ব্যপারে এই বাস্তব সত্যটা নিশ্চয়ই কোনো কারণ হতে পারে না। তাছাড়া, কোন ধর্ম? সেই ধর্ম, জন্ম থেকে যে ধর্মে ঘটনাচক্রে আমরা প্রতিপালিত হয়েছি? বেশ তাহলে, কোন অধ্যায়, বাইবেলের কোন বইটার পাতা আমরা উল্টাবো– কারণ কোনো বইই একমত পোষণ করেনা, আর কয়েকটি যে কোনো যুক্তিসঙ্গত মাপকাঠিতে রীতিমত কদর্য। কত জন আসলে যথেষ্ট পরিমান বাইবেল পড়েছেন আর জানেন যে সেখানে ব্যভিচার বা সাবাথের দিনে কাঠ কুড়ানোর মত কোনো কাজ বা পিতামাতার সাথে বেয়াদবী করার শাস্তি হিসাবে মত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা যদি ডিউটেরোনমী (১০৩) এবং লিভিটিকাসকে (১০৪) বাদ দেই (আধুনিক সুশিক্ষিত ও আধুনিক সব মানুষই সাধারণত যেটা করে থাকেন), কোন মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করেই বা আমরা সিদ্ধান্ত নেব, ধর্মের কোন নৈতিক মূল্যবোধ আমরা গ্রহন করব? নাকি আমরা সারা পৃথিবীর সব ধর্মগুলো খুঁজে বেছে দেখব যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এমন কোন নৈতিক শিক্ষা আমরা খুঁজে না পাই। সেটাই যদি হয়, তাহলে আবার প্রশ্ন ওঠে, কোন মানদন্ডের উপর ভিত্তি করেই আমরা তা বাছাই করবো? ধর্মীয় নৈতিকতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যদি স্বতন্ত্র কোনো মানদণ্ড থেকেই থাকে, তাহলে কেন আমরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের বাদ দিয়ে অর্থাৎ ধর্ম ছাড়াই সরাসরি নৈতিক মূল্যবোধগুলো বেছে নিতে পারি না? প্রশ্নগুলোতে আমি আবার ফিরে আসব সপ্তম অধ্যায়ে।
আমি সত্যি বিশ্বাস করিনা, গুন্ড তার ‘রক অব এজেস’ (১০৫) বইয়ে যা লিখেছেন আসলেই তিনি তা বোঝাতে চাইছেন। আমি যেমনটা বলেছি আগে, আমরা প্রত্যেকেই মাঝে মাঝে, অযোগ্য কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষের প্রতি নম্র হতে বা তাদের ছাড় দিতে অতিরিক্ত সচেষ্ট হবার অপরাধে অপরাধী, এবং গুল্ডের এসব করার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমি শুধু এটুকুই ভাবতে পারি। কিন্তু কল্পনা করা যেতে পারে যে, তিনি তাঁর সুস্পষ্ট শক্তিশালী বক্তব্য দিয়ে আসলেই বোঝাতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নে বিজ্ঞানের কোনো কিছু বলার নেই: ‘আমরা না পিরবো প্রমাণ করতে, না পারবো অস্বীকার করতে, বিজ্ঞানী হিসাবে আমরা এ বিষয়ে কোনো রকম মন্তব্যই করতে পারবো না; বক্তব্যটা শুনতে অজ্ঞেয়বাদীদের মত শোনাচ্ছে, স্থায়ী আর অপরিবর্তনশীল, পুরোপুরি PAP বা ‘পার্মানেন্ট অ্যাগনষ্টিসিজম ইন প্র্যাকটিস’। এর অর্থই হচ্ছে এই প্রশ্ন সম্বন্ধে বিজ্ঞান এমন কি সম্ভাবনা সংক্রান্ত কোনো মন্তব্যও করতে পারবে না। এই লক্ষণীয় সর্বব্যাপী মিথ্যা ধারণাটি অনেকেই যা যপ করেন মন্ত্রের মতন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ, আমার সন্দেহ, ভালোমত ভেবেছেন ব্যপারটা নিয়ে, আমি যাকে বলছি ‘অজ্ঞেয়বাদের দীনতা’। গুল্ড কিন্তু পক্ষপাতহীন অজ্ঞেয়বাদী নন বরং বেশ তীব্রভাবে কার্যত নিরীশ্বরবাদী। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা এ বিষয়ে আর কিছুই বলার নাই থাকে তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে তিনি এমন রায় দিলেন?
ঈশ্বর হাইপোথিসিসের বক্তব্য হল, যে বাস্তবে আমাদের বাস সেখানে একজন অতিপ্রাকৃত সত্তারও বসবাস, যিনি এই মহাবিশ্বের পরিকল্পক এবং সৃষ্টিকারী– নিদেনপক্ষে এই হাইপোথিসিসের বেশ কিছু সংস্করণ– তিনি রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং এমনকি অলৌকিক ঘটনা ঘটনোর মাধ্যমে সেখানে মাঝে মধ্যেই হস্তক্ষেপও করে থাকেন, যা তার নিজের তৈরী সুবিশাল চির-অপরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক সূত্রেরই সাময়িক লঙ্ঘন। রিচার্ড সুইনবার্ন (১০৬), ব্রিটেনের নেতৃস্থানীয় ধর্মতত্ত্ববিদ এ বিষয়ে স্পষ্ট তার ‘ইস দেয়ার এ গড’ বইয়ে:
ঈশ্বরবাদীরা ঈশ্বর সম্বন্ধে যা দাবী করেন তা হলো, তার ক্ষমতা আছে ছোট কিংবা বড় কোনো কিছু সৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ধ্বংস করার। এবং তিনি যে কোনো বস্তুকে পরিচালিত করতে পারেন অথবা এর দ্বারা যে কোনো কিছু করাতে পারেন। তিনি গ্রহদের এমনভাবে নাড়ান যে, কেপলার আবিষ্কার করেছিলেন তারা স্থির নয়, অথবা বারুদকে বিস্ফোরিত করেন যদি তা আমরা জলন্ত দিয়াশলই কাঠির সংস্পর্শে নিয়ে আসি; অথবা তিনি গ্রহদের গতিপথ নাড়াতে পারেন অন্য কোনো ভাবে, এবং নিয়ন্ত্রণ করেন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থসমুহ বিস্ফোরিত হবে কি হবে না, তাদের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন পরিস্থিতিতে। প্রকৃতির নিয়মকানুন দিয়ে ঈশ্বর সীমাবদ্ধ নন, তিনি তাদের তৈরী করেন, যদি ইচ্ছা পোষণ করেন, তিনি তাদের স্থগিত করতে পারেন।
যেন কত সহজ, তাই না, এটা আর যাই হোক না কেন, নোমা (NOMA) প্রস্তাবনা থেকে অনেক পৃথক একটি প্রস্তাব। এবং তারা যা কিছু বলুক না কেন, যে সমস্ত বিজ্ঞানীরা এই ‘পৃথক ম্যাজিস্টিরিয়া বা ক্ষমতার বলয়’ তত্ত্বটির অনুগত তাদের উচিৎ হবে মেনে নেয়া যে, অতিপ্রাকৃত এবং বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা সহ একটি মহাবিশ্ব অবশ্যই অনেক পৃথক হবে সৃষ্টিকর্তাহীন কোনো মহাবিশ্ব থেকে। এই দুটি প্রস্তাবিত মহাজগতের মধ্যে পার্থক্য নীতিগতভাবে তেমন মৌলিক না, যদিও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তা পরীক্ষা করা কঠিন। এবং এটি দুর্বল করে দেয় এই আত্মতুষ্টি প্রদানকারী চিত্তাকর্ষক বাণীটিকে; বিজ্ঞানকে অবশ্যই সম্পূর্ণ নীরব থাকতে হবে ধর্মের কেন্দ্রীয় অস্তিত্ব সংশ্লিষ্ট দাবী প্রসঙ্গে। সৃজনশীল একজন অতিবুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি প্রশ্নাতীতভাবে একটি বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন এবং, যদিও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যার আপাতত এখনও অবধি কোনো মিমাংসা হয়নি। তেমনি সকল অলৌকিক কাহিনীগুলো, যার উপর ধর্ম নির্ভর করে অসংখ্য বিশ্বাসীদের চমক দিতে, তাদের সত্যতা বা মিথ্যার বিষয়টিও বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন।
যীশুর কি মানব কোনো পিতা ছিলেন অথবা তার জন্মের সময় তার মা কি কুমারী ছিলেন? এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার মত যথেষ্ট পরিমান প্রমাণ এখনও অবশিষ্ট থাকুক বা না থাকুক, এখনও এই প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন, যাদের নীতিগতভাবে নির্দিষ্ট একটি উত্তর আছে: ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। যীশু কি ল্যাজারাসকে মৃত্যুশয্যা থেকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন? ক্রুশবিদ্ধ হবার তিন দিন পর তিনি কি মৃত্যু থেকে পুনরায় জীবিত হয়ে উঠেছিলেন? এধরেনের প্রত্যেকটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কিছু উত্তর আছে, আমরা সেই উত্তর ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুঁজে পাই কিংবা না পাই এবং এটি কঠোরভাবে বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর। যদি প্রাসঙ্গিক প্রমানাদি জোগাড় হবার মত অসম্ভব ঘটনা ঘটে কোনোদিন, তবে এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য আমরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করবো তা সম্পূর্ণভাবে এবং বিশুদ্ধভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক হবে। প্রসঙ্গটিকে একটু নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করা যাক, কল্পনা করুন, কোনো অসাধারণ ঘটনাচক্রে ফরেনসিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা ডিএনএ প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেন, যা প্রমাণ করে, আসলে যীশুর পিতা কোনো জৈব মানুষ ছিলেন না। আপনি কি কল্পনা করতে পারবেন, ধর্মীয় আত্মপক্ষসমর্থনকারীরা পুরো ব্যপারটাকে তুচ্ছ বলে উড়িয়ে দেবে, সম্ভাব্য এমন কিছু বলে, যেমন,’কার কি আসে যায়, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্নে সম্পূর্ণরুপে অপ্রাসঙ্গিক। ভুল জ্ঞানের ক্ষেত্র! আমাদের ভাববার বিষয় হল চূড়ান্ত প্রশ্নগুলো আর নৈতিক মূল্যবোধ। ডিএনএ কিংবা অন্য যে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণের এ বিষয়ে কোনোভাবেই কোনো ধরনের প্রভাব থাকতে পারে না।
এই ধারণাটাই হাস্যকর। আপনি আপনার জীবন বাজী রাখতে পারেন, এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য প্রমাণ যদি কিছু কোনোদিন পাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো জোর করে দখল করে অনুকীর্তন করে তারা আকাশে উঠিয়ে দেবেন তারা। নোমা ধারণাটির জনপ্রিয়তার কারণ শুধুমাত্র ঈশ্বর হাইপোথিসিসের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বলেই। যে মুহূর্তে কোনো ক্ষুদ্রতম প্রস্তাব বা প্রমাণ ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে সাফাই গাইবে, ধর্মীয়। আত্মপক্ষসমর্থনকারীরা নোমাকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও দেরী করবে না। কিছু জ্ঞানী ধর্মতাত্ত্বিকদের বাদ দিলে (এবং এমন কি তারাও সাধারণ মানুষদের অলৌকিক কাহিনী বলতে ভালোবাসেন তাদের সমাবেশের আকার স্ফীত করতে),আমার সন্দেহ,এই কথিত অলৌকিক ঘটনাগুলো অনেক বিশ্বাসীদের তাদের বিশ্বাসকে ধরে রাখার পেছনে শক্তিশালী কারণ। এবং অলৌকিক ঘটনাগুলো, সংজ্ঞানুযায়ীই বিজ্ঞানের মূলনীতিগুলো ভঙ্গ করে।
রোমান ক্যাথলিক চার্চ একদিকে যেমন কখনো মনে হয় ‘নোমা হবার উচ্চাকাঙ্খ পোষণ করে, কিন্তু আবার অন্যদিকে অলৌকিক ঘটনা ঘটানোকে সেইন্ট হিসাবে স্বীকৃতি পাবার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় নিয়ম হিসাবে বেঁধে দেয়। গর্ভপাতের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের জন্য বেলজিয়ানদের প্রয়াত রাজা সেইন্ট হবার একজন প্রার্থী। বর্তমানে জোর ও আন্তরিক অনুসন্ধান চলছে, তার মৃত্যুর পর তার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা কোন প্রার্থনা কোনো অলৌকিকভাবে নিরাময় লাভ করার ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায় কিনা। আমি ঠাট্টা করছি না কিন্তু। এটাই হচ্ছে ঘটনা, সেইন্টদের কাহিনীগুলো কিন্তু এধরনেরই। আমার মনে হয় চার্চের মধ্যে বিজ্ঞ কারো কারো কাছে ব্যপারটা বিব্রতকর। কেনই বা বিজ্ঞ বলে পরিচিত কেউ চার্চের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবেনই বা কেন এটাই রহস্যজনক, অনেকটা ধর্মতাত্ত্বিকরা যে রহস্য উপভোগ করেন সেরকম।
অলৌকিক ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ের মুখোমুখি হলে, অনুমান করা। যায় স্টিফেন জে, গুন্ডের মন্তব্য হবে এ ধরনের। নোমার মূল ব্যপারটি হল যে, এটি একটা দুমুখো দরকষাকষি। যে মুহূর্তে ধর্ম বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পা ফেলবে এবং বাস্তব পৃথিবীতে অলৌকিক ঘটনা কারণ নিয়ে অনধিকারচর্চা করা শুরু করবে, তখন গুন্ড যে ধর্মের পক্ষে ওকালতী করছেন, ধর্মের আর সেই অর্থ থাকে না এবং তার ‘অ্যামিকাবিলিস কনকর্ডিয়া’ বা বন্ধুসুলভ মৈত্রী চুক্তিটি ভঙ্গ হয়ে যায়। লক্ষ করুন, যদিও অলৌকিক ঘটনাহীন ধর্ম যা গুল্ড সমর্থন করছেন, তা কিন্তু বেশীর ভাগই চার্চের পিউ বা পার্থনার মাদুরে বসা ধর্মপালনকারী ঈশ্বরবাদীরা আদৌ মানেন না। আসলেই এটা তাদের জন্য হবে বড় ধরনের হতাশাব্যঞ্জক। ওয়ান্ডারল্যাণ্ডে পড়ে যাবার আগে তার বোনের বই নিয়ে। অ্যালিসের (১০৭) মন্তব্য একটু খাপ খাইয়ে নিয়ে বললে, “কি দরকার এমন ঈশ্বরের, যে কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটায় না আর প্রার্থনার জবাব দেয়না’; মনে আছে অ্যামব্রোজ বিয়ের্সে’র (১০৮) ‘প্রার্থনা করা ক্রিয়াপদটির বুদ্ধিদীপ্ত সংজ্ঞাটি: ‘শুধুমাত্র একজন আবেদনকারীর স্বার্থে, যে আত্মস্বীকৃতভাবেই অযোগ্য, মহাজগতের সমস্ত আইন বাতিল করার জন্য আবেদন’; অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা মনে করেন ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেছে জয় লাভ করার জন্য– এমন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যাকে দেখে মনে হতেই পারে ঈশ্বরের সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারাও কোন অংশে কম যোগ্য নন। অনেক গাড়ীচালক বিশ্বাস করেন ঈশ্বর তাদের জন্য পার্কিং এর জায়গা সংরক্ষণ করেছেন, স্পষ্টতই আরেকজনকে বঞ্চিত করেই তাকে সে কাজটি করতে হচ্ছে তার জন্য। এ ধরনের ঈশ্বরবাদ বিব্রতকরভাবে জনপ্রিয়, নোমার মত যুক্তিসঙ্গত (যদি উপরি উপরি) কিছু তাদের মনে দাগ কাটাবে এমন সম্ভাবনা কম।
তাসত্ত্বেও চলুন আমরা গুল্ডকে অনুসরণ করে এবং আমাদের ধর্মর খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে একেবারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতাহীন ন্যূনতম কোনো পর্যায়ে নিয়ে যাই: কোন অলৌকিক ঘটনা না, ঈশ্বর এবং আমাদের মধ্যে উভয় দিকে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত যোগাযোগ না, পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সূত্র নিয়ে খামখেয়ালী খেলাধুলা না, বিজ্ঞানের এলাকায় কোনো অবৈধ প্রবেশ না। বড়জোর, একটু একাত্মবাদী ঈশ্বরের মত মহাবিশ্বের জন্মলগ্নে কিছু অবদান রাখা, যা পরবর্তীতে সময়ের পূর্ণতার সাথে সাথে, নক্ষত্র, মৌলিক উপাদান, রসায়ন, গ্রহ সম্পূর্ণতা পায় এবং জীবনের উদ্ভব এবং বিবর্তন হয়; নিঃসন্দেহে এটা যথেষ্ট পৃথকীকরণ, নিশ্চই নোমা টিকে থাকতে পারবে এই পরিমিত এবং ভনিতামুক্ত ধর্ম নিয়ে।
বেশ, আপনি হয়ত তাই ভাববেন। কিন্তু আমার প্রস্তাব হল, এমনকি একজন হস্তক্ষেপ ক্ষমতাহীন, ‘নোমা’ ঈশ্বর, যদিও সে আব্রাহামীয় ঈশ্বর অপেক্ষা অনেক কম হিংস্র এবং কম অমার্জিত, তাসত্ত্বেও যখন আপনি তাকে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখবেন, দেখতে পারবেন এটি একটি বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস। আমি সেই প্রসঙ্গেই ফিরে আসি: যে মহাবিশ্বে আমরা নিঃসঙ্গ, শুধু ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে থাকা বুদ্ধিমত্তা ছাড়া আর কিছু না, সেই মহাবিশ্ব অবশ্যই অনেক আলাদা সেই মহাজগত থেকে, যেখানে একজন মূল পথপ্রদর্শক পরিকল্পক ছিলেন, যার বুদ্ধিদীপ্ত সৃষ্টিশীলতা এর সব অস্তিত্বের জন্য দায়ী। আমি মানছি, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এমন দুটি মহাবিশ্বের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করা কঠিন। তাসত্ত্বেও, সৃষ্টিকর্তার মৌলিক ডিজাইন হাইপোথিসিসে সম্পূর্ণভাবে নির্দিষ্ট কিছু আছে এবং সমানভাবে বিশেষ কিছু আছে এর একমাত্র বিকল্প হাইপোথিসিসে একটু বিশাল অর্থে যা ক্রম-বিবর্তন। দুটি হাইপোথিসিস আবার প্রায় অসমন্বয়জনকভারে পথক। অন্য আর কিছু যা পারে নি, একমাত্র বিবর্তন আসলেই সক্ষম হয়েছে, কোনো কিছুর অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা দিতে, যার অসম্ভাব্যতা এত বেশী যে, প্রায়োগিক দিক থেকে ভাবলে হয়ত অস্তিত্ব থাকার কথা ছিল না। এবং তর্কের উপসংহার, যা আমি ৪র্থ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি, ঈশ্বর হাইপোথেসিস এর জন্য যা চূড়ান্তরুপে প্রাণনাশক।
দ্য গ্রেট প্রেয়ার এক্সপেরিমেন্ট
অলৌকিক ঘটনা সংক্রান্ত কেস স্টাডির একটা কৌতুকপ্রদ, যদিও হতাশাব্যাঞ্জক, উদাহরণ হচ্ছে, বিখ্যাত ‘দ্য গ্রেট প্রেয়ার এক্সপেরিমেন্ট বা মহান ঈশ্বরে প্রতি প্রার্থনার পরীক্ষা’: রোগীদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে কি, সেই প্রার্থনা তাদের রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে? রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন উপাসনালয়ে সাধারণত প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। ডারউইনের আত্মীয় ফ্রান্সিস গালটন (১০৯) প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করেছিলেন প্রার্থনার কার্যকারিতা নিয়ে। তিনি লক্ষ করেছিলেন প্রতি রোববারে ইংল্যান্ডের সকল চার্চে, সমবেত সবাই প্রকাশ্যে রাজপরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রার্থনা করে থাকেন। সুতরাং স্বভাবতই তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে কি বেশী স্বাস্থ্যবান থাকা উচিৎ না সাধারণ মানুষের তুলনায়, যাদের জন্য শুধুমাত্র কাছের মানুষ ছাড়া আর কেউ প্রার্থনা করেন না? (১১০) গালটন বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন, এবং পরিসংখ্যানগতভাবে কোন পার্থক্য খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। তার উদ্দেশ্য হয়ত ছিল ব্যঙ্গাত্মক, এরপর যখন তিনি নিজে কিছু পৃথক ভাবে ভাগ করা জমির জন্য আলাদা আলাদাভাবে প্রার্থনা করেন, প্রার্থনা করা জমিতে লাগানো গাছ, প্রার্থনা করা হয়নি এমন জমির গাছ থেকে দ্রুত বাড়ে কিনা তা দেখতে (অবশ্যই গাছ দ্রুত বাড়েনি)।
সাম্প্রতিক সময়ে, পদার্থবিদ রাসেল স্ট্যানার্ড (১১১) (ব্রিটেনের তিন সুপরিচিত ধার্মিক বিজ্ঞানীর একজন) এধরনের একটি গবেষণার উদ্যোগে নেন অবশ্যই টেম্পলটন ফাউন্ডেশনের (১১২) অর্থ সাহায্যে, অসুস্থ রোগীদের জন্য প্রার্থনা করলে তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে, এই প্রস্তাবটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করার লক্ষ্যে (১১৩)।
এধরনের গবেষণা নিয়মমাফিক করতে গেলে অবশ্যই ডাবল ব্লাইন্ড (গবেষক এবং গবেষণায় অংশগ্রহনকারী দুজনেই জানেন কাকে কোন ধরনের ইন্টারভেনশন’ বা পরীক্ষাধীন চিকিৎসাটি দেয়া হচ্ছে) হতে হয়, এবং এই মানটা কঠোর ভাবে অনুসরণ করতে হয়। বিভিন্ন গ্রুপে রোগীদের সম্পূর্ণ এলোমেলো বা র্যানডমভাবে বন্টন করা হয়, একটি পরীক্ষাধীন গ্রুপ থাকে (যারা প্রার্থনা পাবে), এবং একটি কন্ট্রোল গ্রুপ কোন প্রার্থনা যারা পাবে না), রোগী, চিকিৎসক, সেবা প্রদানকারী, এমনকি গবেষক, কারোরই জানার অনুমতি থাকবে না, কোনো রোগী প্রার্থনা পাচ্ছে আর কে পাচ্ছে না। যারা পরীক্ষা মূলক প্রার্থনা করবেন তাদের অবশ্য আলাদা আলাদা করে নাম জানতে হবে, তাদের নাম ধরে প্রার্থনা করার জন্য। নয়ত তারা কিভাবে জানবেন,তারা কার জন্য প্রার্থনা করছে। কিন্তু বিশেষ নজর রাখা হয়েছে যেন প্রার্থনাকারী যার জন্য প্রার্থনা করছেন,তার নামের শুধু প্রথম অংশ আর পদবীর আদ্যক্ষরটি শুধু জানতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, ঈশ্বরের পক্ষে এতটুকু তথ্যই যথেষ্ট, সঠিক হাসপাতালের শয্যা শনাক্ত করার জন্য।
এধরনের কোনো গবেষণা করার পরিকল্পনার যথেষ্ট পরিমান ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য আর বিদ্রুপের শিকার হওয়া স্বাভাবিক এবং যথেষ্ট পরিমান তা জুটেছিল এই প্রকল্পের ভাগ্যে। আমি যতদূর জানি বব নিউহার্ট (১১৪) এটা নিয়ে কোন কৌতুক নক্সা করেননি, কিন্তু আমি তাঁর কণ্ঠ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি:
কি বললে তুমি, ঈশ্বর, তুমি আমার নিরাময় করতে পারবে না কারণ আমি কন্ট্রোল গ্রুপ? ওহ, আমি বুঝেছি, আমার খালার দোয়া যথেষ্ট না। কিন্তু ঈশ্বর, আমার পাশের বিছানার মিঃ ইভান্স… এটা কি ঈশ্বর, মিঃ ইভান্স প্রতি দিন এক হাজার প্রার্থনা পায়, কিন্তু ঈশ্বর মিঃ ইভান্স হাজার জনকে চেনেই না। ওহ, তারা শুধু জন বলে তাকে চেনে, কিন্তু ঈশ্বর কেমন করে তুমি বুঝলে তারা আসলে জন ইলসওয়ার্থীর জন্য দোয়া করছে না। ওহ ঠিক, তুমি তোমার অসীম জ্ঞান ব্যবহার করে বের করে ফেলেছ, কোন ‘জন ই’ র জন্য দোয়া করা হচ্ছে। কিন্তু ঈশ্বর ..
সাহসের সাথে সব হাসি ঠাট্টা একপাশে সরিয়ে গবেষক দল তাদের কাজ সম্পন্ন করেন, বোস্টনের কাছে অবস্থিত মাইন্ডবিডি মেডিকেল ইন্সস্টিটিউট এর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ হার্বার্ট বেনসন নেতৃত্বে টেম্পলটন ফাউন্ডেশন তাদের ২.৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করে গবেষণাটিতে। টেম্পলটন ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইতিপূর্বে ডাঃ বেনসন মন্তব্য করেছিলেন: “তিনি বিশ্বাস করেন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইন্টারসেসরী বা ‘অপরের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা কার্যকারিতার উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে’; সেকারণে নিশ্চিতভাবে গবেষণার লাগাম ছিল উপযুক্ত মানুষের হাতেই, যা মূল গবেষকের সন্দেহবাদীতাদের প্রভাবে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ছিল খুব ক্ষীণ। ডাঃ বেনসন এবং তার গবেষক দল, ছয়টি হাসপাতালে মোট ১৮০২ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, এদের প্রত্যেকেরই হৃৎপিণ্ডের করোনারী বাইপাস সার্জারী হয়েছিল। রোগীদের মোট তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়, গ্রুপ ১: প্রার্থনা পায়, কিন্তু তারা তা জানতেন না, গ্রুপ ২: (কন্ট্রোল গ্রুপ) কোন প্রার্থনা পায় না তারা এবং সেটা তাদের জানাও ছিল না, গ্রুপ ৩: প্রার্থনা পায় এবং তারা তা জানতেন। ইন্টারসেশরী প্রার্থনার কার্যকারিতা নিয়ে তুলনামূলক সমীক্ষা হয়, গ্রুপ ১ এবং ২ এর মধ্যে গ্রুপ ৩ কে পরীক্ষা করা হয় যেহেতু তারা জানতেন মঙ্গল কামনা করে তাদের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে, এই তথ্যটি তাদের উপর মনোদৈহিক কোন প্রভাব ফেলেছে কিনা তা দেখবার জন্য।
প্রার্থনা করেছিলো মোট তিনটি চার্চের সদস্যরা, যাদের একটি মিসিসিপিতে, একটি ম্যাসাচুসেটস এ, ও একটি মিসৌরিতে অবস্থিত, প্রত্যেকটিরই অবস্থান হাসপাতাল থেকে বহু দূরে। ইতিপূর্বে যা ব্যাখ্যা করেছি, প্রার্থনাকারী ব্যক্তিকে, সে যার জন্যে প্রার্থনা করবে তার নামের প্রথমাংশ, এবং পদবীর প্রথম আদ্যক্ষরটি জানানো হয়েছিল। যত দূর সম্ভব ততদূর পর্যন্ত প্রতিটি গবেষণার বিভিন্ন পরিমাপের নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড থাকা উচিৎ, সেকারণে প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে তাদের প্রার্থনায় ‘সফল সার্জারীসহ কোন জটিলতা ছাড়াই দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক’ বাক্যটি যোগ করে নিতে বলা হয়েছিল।
এপ্রিল ২০০৬ এ আমেরিকান হার্ট জার্নালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং ফলাফল খুব সুস্পষ্ট। প্রার্থনা পেয়েছে আর পায়নি এই দুই গ্রুপের মধ্যে কোন পার্থক্যই পাওয়া যায়নি। অবাক হবার ব্যপার, পার্থক্য পাওয়া গেছে যারা জানতো তাদের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে আর যারা কোনোভাবে জানত না তাদের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে কিনা, কিন্তু প্রমাণের সন্ধান মিলেছে। উল্টোদিকে। যারা জানত তাদের দ্রুত আরোগ্যলাভের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে, তারা অনেক বেশী জটিলতায় ভুগেছে অন্য গ্রুপের তুলনায়। ঈশ্বর কি তার অপছন্দ জানিয়ে একটু ধাক্কা দিলেন, এরকম সম্পূর্ণ পাগলামীর পরিচায়ক একটা গবেষণা পরিচালনা করার জন্যে। আরো সম্ভাব্য কারণ মনে হয় যে ঐ রোগীরা যারা আগেই জানতেন তাদের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে, তারা হয়ত এক ধরনের বাড়তি চাপ অনুভব করেছিলেন: গবেষকদের ভাষায় যা ‘পারফরমেন্স সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা। গবেষকদের একজন, ডাঃ চার্লস বেথেয়ার ভাষায়, “হয়ত তারা ভেবেছেন, আমি কি এতই অসুস্থ যে তাদেরকে প্রার্থনাকারীদের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। বর্তমান মামলা প্রিয় সমাজে, আশা করা কি খুব অতিরিক্ত মনে হবে যে, ঐ যে রোগীগুলোর জটিলতা হওয়ার কারণ হচ্ছে যারা জানতেন তারা ‘পরীক্ষামূলক প্রার্থনা’ পাচ্ছেন, তারা টেম্পলটন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য মামলা করতে উদ্যোগ নেবেন।
অবাক হবার কোনো কারণ ছিল না, যখন ধর্মতাত্ত্বিকরা এই গবেষণার বিরোধিতা করেছিলেন আগেই, কারণ হয়ত এমন গবেষণার সম্ভাবনা আছে ধর্মকে উপহাসের বস্তুতে পরিণত করার। অক্সফোর্ডের ধর্মতাত্ত্বিক রিচার্ড সুইনবার্ন, গবেষণার ফলাফল কাঙ্খিত না হবার পর, এর বিরোধিতা করে লিখেছিলেন এই যুক্তি দিয়ে, ঈশ্বর শধুমাত্র সেই সব প্রার্থনার জবাব দেন, যদি তা ভালো কোন উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় (১১৫); শুধুমাত্র ডাবল ব্লাইন্ড স্টাডির জুয়ার ছক্কার দানের মত কারো জন্য প্রার্থনা না করে বরং অন্য কারো জন্য প্রার্থনা করা, কোনো ভাল কারণ না। ঈশ্বর খুব ভালোই বুঝতে পারেন ব্যপারটা। এটাই আমার বক্তব্য ছিল আগে উল্লেখ করা বব নিউহার্টের ব্যঙ্গ রচনাটির। সুইনবার্নও ঠিক একই কথা বলেছেন। কিন্তু তার রচনার অন্য অংশে সুইনবার্ন নিজেই চলে যান সব ব্যঙ্গের উর্ধে। যদিও প্রথমবারের মত নয়, তিনি ঈশ্বর নিয়ন্ত্রিত এই পৃথিবীর দুঃখ কষ্টের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন:
আমার কষ্ট আমাকে সুযোগ করে দেয় সাহস আর ধৈর্য প্রদর্শনের জন্য। আপনাকে সুযোগ করে দেয় সমবেদনা প্রকাশ এবং আমার কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে উদ্যোগী হবার জন্য। এবং সমাজকে সুযোগ করে দেয়, বেছে নেবার জন্য, প্রচুর পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করা হবে কি হবেনা, এটা কিংবা অন্য কোনো একটা সুনির্দিষ্ট কষ্ট দূর করার উপায় আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে; যদিও মহান ঈশ্বর আমাদের দুঃখ সহ্য করতে পারেন না, তার বড় চিন্তার বিষয় হল, নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেকে ধৈর্য, সমবেদনা, দয়া দেখাবো, এবং এভাবেই পবিত্র চরিত্র গঠন করবো। কিছু মানুষের অবশ্যই তাদের নিজেদের স্বার্থেই অসুস্থ হবার প্রয়োজন আছে আর কিছু মানুষের আসলে খুব বেশী প্রয়োজন আছে অসুস্থ হবার জন্য, যা অন্যদের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। একমাত্র এভাবেই কিছু মানুষ, তারা কি ধরনের মানুষ হতে চায়, সে রকম হবার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদের জন্য, অসুস্থতা হয়ত তেমন কোন মূল্যবান বিষয় না।
এরকম অদ্ভুত যুক্তি, এত নিকৃষ্টভাবে ধর্মতাত্ত্বিক মনের নমুনার প্রমাণ, আমাকে মনে করিয়ে দিল আরেকটি ঘটনার, যখন আমি সুইনবার্নের সাথে এবং অক্সফোর্ড এর আমাদের আরেক সহকর্মী প্রফেসর পিটার এটকিনস (১১৬) এর সাথে একটি টেলিভিশন প্যানেলে আলোচনায় আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। এক পর্যায়ে সুইনবার্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী গণহত্যা বা হলোকষ্টের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন, এই যুক্তিতে যে, হলোকস্ট নাকি ইহুদীদের সাহসী আর মহান হবার চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছ। পিটার এটকিনস দারুণভাবে গর্জে উঠেছিলেন, “আপনি যেন নরকে পচেন’ (১১৭)।
ধর্মতাত্ত্বিক যুক্তি প্রয়োগের আরেকটি উদাহরণ দেখা যায়। সুইনবার্নের লেখায় তার আগের করা মন্তব্যের খানিকটা পরেই। তিনি ঠিকই প্রস্তাব করেছেন যে, ঈশ্বর যদি তার নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ দিতে চাইতেন, পরীক্ষাধীন বনাম কন্ট্রোল গ্রুপের হৃদরোগীদের নিরাময়ের পরিসংখ্যান সামান্য প্রভাবিত করা ছাড়া অবশ্যই আরো ভালো কোনো পথ বেছে নিতেন। যদি ঈশ্বররে অস্তিত্ব থাকে এবং আমাদেরকে তা তিনি প্রমাণ করে দেখাতে চাইতেন, তাহলে তিনি সারা পৃথিবী ভরে দিতেন নানা অলৌকিকতায়’; কিন্তু তারপরই সুইনবান তার পছন্দের কথাটা বললেন, ‘ঈশ্বরের অস্তিত্বের ইতিমধ্যেই অনেক প্রমাণ আছে, অতিরিক্ত বেশী প্রমাণ আমাদের জন্য ভালো নাও হতে পারে; অতিরিক্ত বেশী প্রমাণ আমাদের জন্য ভালো নাও হতে পারে, বাক্যটা আবার পড়ুন। অতিরিক্ত বেশী প্রমাণ আমাদের জন্য ভালো নাও হতে পারে; রিচার্ড সুইনবার্ন ব্রিটেনের সবচেয়ে সন্মানজনক ধর্মতত্ত্বের প্রফেসরশীপ থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন এবং ব্রিটিশ একাডেমীর একজন ফেলো। আপনি যদি কোনো ধর্মতাত্ত্বিক চান, তাহলে এর চেয়ে বেশ বিশিষ্ট আর কেউ হতে পারে না। হয়ত আপনি চাচ্ছেন না কোন ধর্মতাত্ত্বিককে।
শুধুমাত্র সুইনবার্ন একমাত্র ধর্মতাত্ত্বিক নন যিনি এই গবেষণার আশানুরুপ ফলাফল না হবার কারণে এটি অস্বীকার করেছিলেন। রেভারেন্ড রেমন্ড জে লরেন্সকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বেশ অনেকটুকু জায়গা দিয়েছিল মন্তব্য প্রতিবেদনের জন্য, কেন দায়িত্বশীল ধর্মীয় নেতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন, যে কারো জন্যে বিশেষভাবে করা প্রার্থনা তার আরোগ্য লাভের উপর যে কোন প্রভাব নেই সেই কারণে (১১৮); তিনি কি অন্য সুরে কথা বলতেন, যদি ডাঃ বেনসনের গবেষণা প্রার্থনার ক্ষমতা প্রমাণে সফল হত। হয়ত না। কিন্তু আপনি নিশ্চিৎ থাকতে পারেন অনেক ধর্মতাত্ত্বিক বা যাজকরা ঠিক তাই করতেন। রেভারেন্ড রেমন্ড জে, লরেন্স-এর লেখাটি মনে রাখার মত কারণ মূলত নিম্নলিখিত ঘটনাটি তার লেখায় প্রকাশের জন্য সম্প্রতি, আমার এক সহকর্মী আমাকে বলেছিলেন, একজন নিষ্ঠাবান, শিক্ষিত মহিলা, ডাক্তারের বিরুদ্ধে তার স্বামীর চিকিৎসায় অবহেলা করেছেন বলে অভিযুক্ত করেছেন। মহিলার দাবী, তার স্বামী মুমূর্ষ থাকাকালীন ডাক্তার তার স্বামীর জন্য প্রার্থনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অন্য ধর্মতত্ত্ববিদরাও ‘নোমা অনুপ্রাণিত সন্দেহবাদীদের সাথে যোগ দিয়েছেন এই বলে যে, এ ধরনের প্রার্থনার কার্যকারিতা সংক্রান্ত গবেষণা অর্থের অপচয় মাত্র, কারণ অতিপ্রাকৃত কোনো কিছুর প্রভাব এর সংজ্ঞানুযায়ীই বিজ্ঞানের এখতিয়ারের বাইরে। কিন্তু টেম্পলটন ফাউন্ডেশন যখন এই গবেষণা অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা কিন্তু মেনে নেয়,কারো মঙ্গলের জন্য প্রার্থনার কথিত ক্ষমতা প্রমাণের বিষয়টা নীতিগতভাবে অন্ততপক্ষে বিজ্ঞানের আওতায় পড়ছে। এ বিষয়ে ‘ডাবল ব্লাইন্ড স্টাডি পরিকল্পনা করা হয়, গবেষণা করাও হ্য। তাদের গবেষণায় এর সপক্ষে ফলাফল হতে পারতো। এবং যদি তাই হত, তাহলে কল্পনা করুন, ধর্মের পক্ষ সমর্থনকারী এমন কাউকে কি খুঁজে পাওয়া যেত, যারা সেই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করতেন কারণ ধর্মীয় ব্যপারে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোন সুযোগ নেই। অবশ্যই না।
বলাবাহুল্য, পরীক্ষাটির নেতিবাচক ফলাফল অবশ্যই বিশ্বাসীদের নাড়া দেবে না। বব বার্থ, মিসৌরির প্রেয়ার মিনিষ্ট্রির স্পিরিচুয়াল ডিরেক্টর, যিনি এই গবেষণায় প্রার্থনাকারীদের যোগান দিয়েছিলেন, বলেন: ‘বিশ্বাসী মানুষের কাছে এই গবেষণা অবশ্যই কৌতূহলোদ্দীপক, কিন্তু আমরা অনেকদিন থেকেই প্রার্থনা করে আসছি এবং আমরা দেখেছি প্রার্থনা কাজ করে এবং প্রার্থনা আর আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে গবেষণা কেবল শুরু হলো’; হ্যাঁ, ঠিক সেটাই : আমরা আমাদের বিশ্বাস থেকেই জানি প্রার্থনা কাজ করে, যদি এর পক্ষে প্রমাণ না পাওয়া যায়, আমরা সাহসের সাথে এগিয়ে। যাবো যতদিন পর্যন্ত না আমরা যে রকম ফলাফল চাই তেমনটি পাই।
বিবর্তনবাদীদের নেভিল চেম্বারলেইন (১১৯) তোষণবাদী গোষ্ঠী:
যে সকল বিজ্ঞানীরা যারা দাবী করেন, নোমা (NOMA), ঈশ্বর হাইপোথিসিস, বিজ্ঞান দ্বারা অনাক্রম্য একটি বিষয়, তাদের সম্ভাব্য একটি অভিসন্ধি হলো বিশেষভাবে আমেরিকার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বা কার্যক্রম, যা আসলে উস্কে দিয়েছে লোক মনোরঞ্জনবাদী বা পপুলিস্ট ক্রিয়েশনিজম বা সৃষ্টিতত্ত্ববাদের হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গায় সুসংগঠিত, রাজনৈতিক যোগাযোগসম্পন্ন ও সর্বোপরি অর্থ সাহায্যপুষ্ট শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দ্বারা বিজ্ঞান এখন আক্রান্ত এবং বিবর্তন শিক্ষা এ যুদ্ধের একবারে সামনের কাতারে। বিজ্ঞানীরা সহানুভূতি পেতেই পারেন, কারণ তারা ভীত, এছাড়াও বেশীর ভাগ গবেষণার অর্থ যোগান দেয় মূলত সরকার এবং সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করতে হয়, যেমন, তাদের ভোট দেয়া অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে, ঠিক তেমনই শিক্ষিত সুবিদিত সমাজের কাছেও।
এধরনের হুমকির মুখে, একটি বিবর্তনবাদ রক্ষাকারী লবীও গড়ে উঠেছে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যটির প্রতিনিধিত্ব করে ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন (NCSE); এর নেতৃত্বে আছেন ইউজেনি স্কট (১২০), বিজ্ঞানের জন্য অক্লান্ত কর্মী, যিনি সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছেন, “ইভোল্যুশন ভারসাস ক্রিয়েশনিজম। এনসিএসই’র অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলো সুবুদ্ধিসম্পন্ন ধর্মীয় মতামতগুলোকে জয় এবং সংগঠিত করা। এরা হল মূলধারার চার্চে যাতায়াতকারী নারী এবং পুরুষ, বিবর্তনবাদের সাথে যাদের কোনো বিরোধ নেই, এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তারা বিষয়টিকে অপ্রাসঙ্গিক (অথবা কোনো অদ্ভুত উপায়ে তাদের বিশ্বাসের সহায়ক) হিসাবে মনে করেন। এই সব মূলধারার ধর্মযাজক, ধর্মতাত্ত্বিক, এবং উদার মনোভাবাপন্ন ধর্মবিশ্বাসীরা, যারা বিব্রত সৃষ্টিতত্ত্ববাদ নিয়ে, কারণ তা ধর্মের সুনাম কলুষিত করেছে, এদের কাছে বিবর্তনবাদ রক্ষাকারী লবী চেষ্টা করছে তাদের পক্ষে মতামত গড়বার। এবং সেটা করার একটা উপায়। হল, তাদের তুষ্ট করার অতিরিক্ত চেষ্ঠায় নোমাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা– স্বীকার করে নেয়া যে বিজ্ঞান আদৌ ক্ষতিকর কিছু না, কারণ ধর্মের দাবী থেকে বিজ্ঞান সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এই গোষ্ঠীর, যাকে আমরা বিবর্তনবাদীদের ‘নেভিল চেম্বারলীন’ গোষ্ঠী বলতে পারি, আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন দার্শনিক মাইকেল রুজ (১২১)। সৃষ্টিতত্ত্ববাদের বিপক্ষে রুজ একজন কার্যকর যোদ্ধা, ছাপার অক্ষরে এবং আদালত, উভয় ক্ষেত্রে (১২২); তিনি নিজেকে একজন নিরীশ্বরবাদী হিসাবে দাবী করেন, কিন্তু প্লে বয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রচনায় তাঁর মতামত প্রকাশ পায় এভাবে:
আমরা যারা বিজ্ঞানকে ভালোবাসি তাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে আমাদের শত্রুর শত্রু কিন্তু আমাদের বন্ধু। প্রায়ই বিবর্তনবাদীরা সময় নষ্ট করেন তাদের সম্ভাব্য মিত্র পক্ষকে অপমান করার লক্ষ্যে। ব্যপারটা বেশী সত্য ধর্মনিরেপক্ষ বিবর্তনবাদীদের ক্ষেত্রে। সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের প্রতিরোধ করার চেয়ে নিরীশ্বরবাদীদের বেশী সময় কাটানো উচিৎ সহানুভূতিশীল খ্রিষ্টানদের বোঝানোর প্রচেষ্টায়। যখন দ্বিতীয় পোপ জন পল ডারউইনবাদকে অনুমোদন করে চিঠি লিখেছিলেন, রিচার্ড ডকিন্স এর প্রত্যুত্তর ছিল পোপ ভণ্ডামী করছেন এবং তিনি আসলেই বিজ্ঞানের ব্যপারে এতটা সৎ হতেই পারেন না এবং এভাবে স্পষ্ট যে ডকিন্স নিজেই বরং পছন্দ করেন একজন সৎ মৌলবাদীকে।
শুধুমাত্র বিশুদ্ধ কৌশলগত দিক থেকে, হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধজোট করার সাথে, রুজের অগভীর আবেদনটার তুলনাটি আমি বুঝতে পারি: উইনস্টোন চার্চিল বা ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট কেউই স্ট্যালিন বা কমিউনিজম পছন্দ করতেন না, কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছিলেন, হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে তাদের সোভিয়েট ইউনিয়নের সাথে কাজ করতে হবে। সেরকমভাবে সব ধরনের বিবর্তনবাদীদের একসাথে কাজ করতে হবে সৃষ্টিতত্ত্ববাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। কিন্তু আমি সবশেষে আমার সহকর্মী শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্ববিদ জেরি কয়েন (১২৩) এর সাথে একমত, যিনি লিখেছিলেন রুজ,
এই দ্বন্দ্বের মূল কারণটাই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটা শুধুমাত্র বিবর্তনবাদ বনাম সৃষ্টিতত্ত্ববাদ নয়। ডকিন্স বা উইলসনের (ই, ও, উইলসন (১২৪), প্রখ্যাত হার্ভার্ড জীববিজ্ঞানী) মত বিজ্ঞানীদের কাছে, আসল যুদ্ধ হলো যুক্তিবাদ বনাম কুসংস্কারের মধ্যে। বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তিবাদের এক ধরনের রুপ, অপরদিকে ধর্ম হচ্ছে। কুসংস্কারের সবচেয়ে পরিচিত রুপ,তারা যাকে আরো বড় শত্রু হিসাবে দেখেন : সৃষ্টিতত্ত্ববাদ হচ্ছে ধর্মের একটা উপসর্গ মাত্র। ধর্ম কিন্তু সৃষ্টিতত্ত্ববাদ ছাড়াই টিকে থাকতে পারবে, কিন্তু সৃষ্টিতত্ত্ববাদ ধর্ম ছাড়া তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না (১২৫)।
সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের সাথে আমার একটা মিল আছে, তারা আমার মতই এবং চেম্বারলেইন গ্রুপের মত নয়, নোমা কিংবা এর পৃথক ম্যাজিষ্টেরিয়া বা ক্ষমতার বলয়কে বর্জন করেছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্র পৃথক এটা মানা তো দূরের কথা, তাদের সবচেয়ে পছন্দের কাজ এর মধ্যে নাক গলানো। তাদের যুদ্ধ কৌশলও নোংরা। সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের উকিলরা আমেরিকার গ্রাম আর মফস্বল শহরগুলোয় বিভিন্ন আদালতে বেছে বেছে সেই সব বিবর্তনবাদীদের খুঁজে বের করেন যারা প্রকাশ্যে নাস্তিক। আমি জানি, যদিও বিরক্তকর, আমার নামও এভাবে ব্যবহার করা হয়। এটা বেশ কার্যকর একটা কৌশল, কারণ নির্বাচিত জুরীদের মধ্যে এমন ব্যক্তিদেরই থাকার সম্ভাবনা বেশী, যারা কিনা নাস্তিকরা যেন পুনর্জন্ম হওয়া শয়তান এমন বিশ্বাস নিয়ে প্রতিপালিত হয়েছেন, শিশুকামী বা সন্ত্রাসীদের মত তাদের অপরাধ ( সালেম এর ডাইনী (১২৬) এবং ম্যাকআর্থারের কমি বা কমিউনিষ্টদের (১২৭) আধুনিক সংস্করণ); যে কোন সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের আইনজীবি যে আমাকে সাক্ষী হিসাবে দাঁড় করাবে, সাথে সাথেই সে জুরীদের মন জয় করে নেবেন, শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করে: “বিবর্তন সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন কি আপনাকে নাস্তিক হতে প্রভাবিত করেছে?’ আমাকে এর উত্তরে বলতে হবে, “হ্যাঁ’, ব্যস ঐ এক কথাতে জুরীরা আমার বিপক্ষে চলে যাবেন। কিন্তু এর বীপরিতে, ধর্মনিরপেক্ষ দিক থেকে আইনসিদ্ধ সঠিক উত্তর হবে: ‘আমার ধর্ম বিশ্বাস, বা অবিশ্বাস আমার ব্যক্তিগত ব্যপার, এটা আদালতের যেমন বিষয় না, তেমন বিজ্ঞানের সাথে কোনভাবে এর যোগসূত্র নেই। আমি সতোর সাথে এভাবে কথাগুলো বলতে পারবো না, কারণগুলো, আমি ৪র্থ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করেছি।
গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক ম্যাডেলাইন বান্টিং ‘হোয়াই দি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন লবী থ্যাঙ্কস গড ফর রিচার্ড ডকিন্স বা ‘কেন ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন লবী রিচার্ড ডকিন্স এর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবে’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন (১২৮); মাইকেল রুজ ছাড়া এটি লেখার সময় তিনি আর কারো সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এমন নিদর্শন লেখাটিতে পাওয়া যায় না; মনে হতে পারে প্রবন্ধটির ছায়া লেখক মাইকেল রুজ (নিউ ইয়র্ক টাইমস এ ২২ জানুয়ারী ২০০৬ এ প্রকাশিত ‘হোয়েন কসমোলজী কোলাইড’ প্রবন্ধটি নিয়ে একই কথা বলা যেতে পারে; এটি লিখেছিল সন্মানিত (এবং ভালোভাবে যাকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল) জুডিথ শুলেভিৎজ। জেনারেল মন্টোগোমারীর যুদ্ধের প্রথম নীতি ছিল ‘মস্কোর দিকে মার্চ না করা হয়তো বিজ্ঞান জার্নালিজমের এরকম একটা প্রথম নীতি থাকা দরকার: ‘মাইকেল রুজ ছাড়া অন্ততপক্ষে আরো একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া’; ড্যান ডেনেট এর জবাব দেন লাগসই ভাবে আংকেল রেমুসের লোক কাহিনীর চতুর খরগোশের কথা উল্লেখ করে (১২৯):
আমার কাছে মজার ব্যপার হলো, দুইজন ব্রিটেন নিবাসী, ম্যাডেলাইন বান্টিং এবং মাইকেল রুজ আমেরিকান লোকগাথার সবচেয়ে বিখ্যাত ছলচাতুরীর ফাঁদে পড়েছেন ( সূত্র: কেন ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন লবী রিচার্ড ডকিন্স এর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবে, মার্চ ২০০৭); যখন ব্রেয়ার খরগোশ শিয়ালের হাতে ধরা পড়েছিল, সে শিয়ালের কাছে মিনতি করে বলে, “ওহ, দয়া করো ব্রেয়ার শিয়াল, যাই করো না কেন, আমাকে ঐ জঘন্য ব্রায়ার (এক ধরনের কাটাযুক্ত কাণ্ডের ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ) ঝোপে ছুঁড়ে ফেল না’, শিয়াল ঠিক সেই কাজটা করার পর, খরগোশ নিরাপদে পালিয়ে গেল। যখন আমেরিকান প্রচারণাবিদ উইলিয়াম ডেম্বস্কি রিচার্ড ডকিন্সকে বিদ্রূপ করে লেখেন এই বলে যে, তিনি যেন ভালো কাজ করে। যেতে থাকেন ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন পক্ষে, বান্টিং আর রুজ সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন, “ওহ!, ব্রেয়ার শিয়াল, আপনার এই সুস্পষ্ট দাবীটা বিবর্তন সংক্রান্ত জীববিদ্যা, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। কিন্তু ক্লাসরুমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে হুমকির মুকে ঠেলে দেবে, কারণ এ বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করলে আবার চার্চ আর রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ বিষয়টিকে লজ্জন করা হবে!” ঠিক, আপনাদের উচিৎ হবে শারীরবৃত্তীয় বিদ্যাকে একটু রেখে ঢেকে পড়াতে, কারণ এটিতো আগেই প্রমাণ করেছে কুমারী কারো পক্ষে গর্ভধারণ অসম্ভব.. (১৩০)।
এই পুরো ব্যপারটা, এমনকি স্বতন্ত্রভাবে কাটা গাছের ঝোপে ব্রেয়ার খরগোশ বিষয়টির অবতারণা করে বিষদ আলোচনা করেছেন জীববিজ্ঞানী পি. জে. মায়ারস, যার ফ্যারিঙ্গুলা ব্লগ থেকে আস্থার সাথে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে তার সূতীক্ষ্ম প্রজ্ঞার জন্য (১৩১)।
আমি কিন্তু বোঝাতে চাইছি না, তোষণকারী লবীর আমার সহকর্মীরা সবাই অবশ্যই অসৎ। তারা হয়ত আন্তরিকভাবেই নোমাতে বিশ্বাস করেন, যদিও আমি বাধ্য হই চিন্তা করতে, আসলে বিষয়টি নিয়ে তারা কতটা গভীরভাবে ভেবেছেন এবং তারা কিভাবে তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামাল দিতে পেরেছেন। আপাতত বিষয়টি নিয়ে আর নাইবা ভাবি কিন্তু কেউ যদি এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত বক্তব্য বোঝার চেষ্ঠা করেন, তারা এর পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটা যেন না ভুলে যান: একটা পরাবাস্তব সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এখন যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে। নোমা ধরনের তোষণবাদ আবার পরের অধ্যায়গুলোতে আলোচনায় আসবে। এখানে, আমি বরং আবার অজ্ঞেয়বাদ এবং আমাদের অজ্ঞতাকে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে ফেলে এবং পরিমাপ সম্ভব এমন একটা স্তরে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা সংক্রান্ত আমাদের অনিশ্চয়তাকে নিয়ে আসার সম্ভাবনায় ফিরে আসি।
ছোট সবুজ মানুষের দল
ধরা যাক, বাট্রান্ড রাসেলের রুপক কাহিনীর বিষয়, মহাশূন্যে চায়ের পাত্র না বরং মহাশূন্যে জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে যা কার্ল সেগানের সেই স্মরণীয় মন্তব্য ‘গাট বা অন্ত্রনালী দিয়ে চিন্তা না করার প্রত্যাখানের বিষয়টি। আবারো আমরা বিষয়টিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবে না এবং একমাত্র যৌক্তিক অবস্থান হল অজ্ঞেয়বাদ। কিন্তু এই হাইপোথিসিসটি আর কোনো হালকা বিষয় হিসাবে নেই এখন। আমরা কিন্তু সাথে সাথেই একেবারে চূড়ান্ত সব অসম্ভাব্যতার ঘ্রাণ পাই না এখন। আমরা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক একটা বিতর্ক অবতারণা করতে পারি অসমাপ্ত এই অবধি পাওয়া নানা সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এবং আমরা সেই প্রমাণগুলো লিপিবদ্ধ করতে পারি যৌক্তিক উপায়ে যেগুলো আমাদের অনিশ্চয়তাকে কমাতে পারে। আমরা কিন্তু প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হবো, যদি আমাদের সরকার ব্যয়বহুল টেলিস্কোপের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করে যার একমাত্র কাজ হবে মহাশূন্যে চায়ের পটের সন্ধান করা। কিন্তু আমরা সেটি (SETI) বা “সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ক্ষত্রে, যার মূল কাজ ভীনগ্রহবাসী বুদ্ধিমান সত্তাদের পাঠানো কোনো সংকেত খুঁজে পাওয়ার আশায় রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে মহাশূন্যের বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করা, অর্থ ব্যয় করার ব্যপারটাকে কিন্তু মূল্যায়ন করতে পারি সম্পূর্ণ অন্যভাবে।
আমি কার্ল সেগানের প্রশংসা করি ভীনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ব্যপারে আনুমানিক অনুভূতি নির্ভর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করার জন্য। কিন্তু যে কারো পক্ষে (এবং সেগানও তাই করেছিলেন। এরকম একটা সম্ভাবনার পরিমাপ করার জন্য, আমাদের যা জানা দরকার, তার একটা সংযমী মুল্যায়ন করা সম্ভব। এটা শুরু হতে পারে আমাদের অজানা বিষয়গুলোর একটা তালিকা প্রস্তুত করার মাধ্যমে। যেমন, বিখ্যাত ড্রেক সমীকরণ (১৩২) যা পল ডেভিসের (১৩৩) ভাষায় সম্ভাবনা সংগ্রহ করে। সমীকরণটির মূল বক্তব্য হল, এই পুরো মহাবিশ্বে স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত সভ্যতার সংখ্যা পরিমাপের জন্য আমাদের অবশ্যই সাতটি সংখ্যাকে একসাথে গুন করতে হবে। এদের মধ্যে আছে, মোট নক্ষত্রের সংখ্যা, প্রতিটি নক্ষত্রের পৃথিবীর মত গ্রহের সংখ্যা এবং এর সম্ভাবনা, এগুলো এবং এছাড়া অন্য সংখ্যাগুলো যার তালিকা উল্লেখ করার দরকার নেই কারণ আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি তা হলো এসবই অজানা অথবা পরিমাপ করা হয়েছে অনেক বেশী অনুমানের উপর ভিত্তি করে। যখন অনেকগুলো সংখ্যা হয় সম্পূর্ণ অজানা অথবা পরিমাপ করা হয় অনেক বড় ভ্রান্তির সম্ভাবনা রেখে, তার ফলাফল– ভীনগ্রহের সভ্যতার সম্ভাব্য সংখ্যায়– এতো বিশালাকৃতির ভুল থাকে যে, অজ্ঞেয়বাদকে মনে হয় বেশী যুক্তিযুক্ত, যদিও তা একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান নয়।
১৯৬১ সালে প্রথম যখন তিনি সমীকরণটি লিখেছিলেন, তখনকার তুলনায় বর্তমানে ড্রেক সমীকরণের কিছু সংখ্যা কিন্তু ইতিমধ্যে আমাদের জন্য কম অজানা। সেই সময় আমাদের সৌরজগতই ছিল একমাত্র জানা গ্রহমণ্ডলী যা কেন্দ্রীয় একটি নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে, এছাড়া ছিল বৃহস্পতি আর শনির উপগ্রহমণ্ডল সদৃশ্য কিছু উদাহরণ। মহাবিশ্বে এধরনের মণ্ডলের সংখ্যা সম্বন্ধে আমাদের সবচেয়ে ভালো ধারণাটাটির ভিত্তি হল তাত্ত্বিক মডেলগুলো, যার সাথে সংযুক্ত আরেকটু বেশী অনানুষ্ঠানিক প্রিন্সিপাল অব মিডিওক্রিটি’ বা সাধারণত্বের মূলনীতি: আমরা ঘটনাক্রমে যেখানে বসবাস করি তার বিশেষ কোন অসাধারণত্ব নেই (এই অনুভূতিটা কোপার্নিকাস (১৩৪), হাবল (১৩৫), এবং অন্যান্যদের অস্বস্তিকর ইতিহাসের শিক্ষা থেকে জন্ম নেয়া); দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রিন্সিপাল অব মিডিওক্রিটিকে আবার দুর্বল করে দিয়েছে অ্যানথ্রেপিক তত্ত্ব (অধ্যায় ৪ দ্রষ্টব্য) : যদি আমাদের সৌরজগত মহাবিশ্বে সত্যি একটি মাত্র হয়ে থাকে, তার সঠিক কারণ হলো, সেখানে আমরা, যারা এসব বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি, সেই আমাদের বসবাস। আমাদের অস্তিত্বের নিগুড় সত্যটাই অতীতমুখী পর্যালোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করে দেয় যে, আমাদের বসবাস খুবই অসাধারণ একটি স্থানে।
সৌরজগতের সর্বব্যাপিতা সম্বন্ধে বর্তমানে আমাদের পরিমাপ কিন্তু আর আগের মতন প্রিন্সিপাল অব মিডিওক্রিটির উপরে নির্ভর করে নেই; প্রত্যক্ষ প্রমাণের দ্বারা তথ্যসমৃদ্ধ। কোঁমত (১৩৬) এর পজিটিভিজমের (১৩৭) উচিৎ প্রতিফল, স্পেক্টোস্কোপ আবারও তা প্রমাণ করেছে। আমাদের টেলিস্কোপ এখনও এতটা শক্তিশালী হয়নি যে নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিনতরত গ্রহদের সরাসরি দেখতে সক্ষম। নক্ষত্রের অবস্থানের সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয় তার চতুর্দিকে ঘুর্ণায়মান গ্রহদের মাধ্যাকর্ষণের টানে আর নক্ষত্রের আলোক বর্ণালী বিশ্লেষণের মাধ্যমে ‘ডপলার ইফেক্ট’ (১৩৮) শনাক্ত করে স্পেক্টোস্কোপ (১৩৯), অন্ততপক্ষে যেখানে মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণ গ্রহটির আকার অনেক বড়। বেশীর ভাগ সময় এভাবেই, আমার এই লেখার সময়, আমরা সৌরজগতের বাইরে ১৪৭টি নক্ষত্রের কক্ষপথে ঘুর্ণায়মান ১৭০ টি গ্ৰহর সন্ধান পেয়েছি (১৪০); এবং এই সংখ্যা অবশ্যই বেড়ে যাবে যখন আপনারা এই বইটা পড়বেন। আপাতত এই গ্রহগুলো সব বড় আকারের ‘বৃহস্পতির মত; কারণ বৃহস্পতি আকারের বড় গ্রহই কেবল পারে তাদের নক্ষত্রের আলোর বর্ণালীতে পরিবর্তন আনতে, বর্তমান সময়ের কোনো স্পেক্টোস্কোপ বা বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের যা শনাক্ত করার ক্ষমতা আছে। আমরা অন্ততপক্ষে পরিমানগত দিক থেকে ড্রেক সমীকরণের একটি অজানা সংখ্যার কিছুটা উন্নতি করেছি। এর ফলে এই সমীকরণের শেষ ফলাফল সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞেয়বাদে সামান্য হলেও, গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে আমরা এখনও হয়তো অজ্ঞেয়বাদী থাকতে বাধ্য– কিন্তু কিছুটা অবশ্যই কম অজ্ঞেয়বাদী, কারণ আমরা আগের চেয়ে আমাদের অজ্ঞতাকে একটু কমাতে পেরেছি। বিজ্ঞান ধীরে ধীরে অজ্ঞেয়বাদের পরিমানকে কমিয়ে দিতে সক্ষম, যেমন করে হাক্সলী ঈশ্বরের বিশেষ অবস্থানটি অস্বীকার করেছিলেন সবাইকে তুষ্ট করার অতিরিক্ত প্রচেষ্টায়। আমার যুক্তি হলো, হাক্সলী, গুল্ড এবং অনেকের নম্র সংযম সত্তেও . ঈশ্বর প্রশ্নটি নীতিগতভাবে এবং চিরকালের মত বিজ্ঞানের আওতা বহির্ভূত না। কোঁমত এর ধারণার বীপরিতে যেমন নক্ষত্রের প্রকৃতি, আর তার চারপাশে কক্ষপথে জীবনের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা, অন্ততপক্ষে বিজ্ঞান পারে অজ্ঞেয়বাদের ভূখণ্ডে সম্ভাবনার অনুপ্রবেশ ঘটাতে।
ঈশ্বর হাইপোথিসিস সম্বন্ধে আমার সংজ্ঞায় ‘অতিমানবীয়’, ‘অতিপ্রাকৃত’ এসব শব্দগুলো সংযুক্ত। এদের মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট করতে, কল্পনা করুন যে একটি সেটি (SETI) রেডিও টেলিস্কোপ সত্যি সত্যি মহাশূন্য থেকে একটা সংকেত শনাক্ত করলো, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করলো, মহাবিশ্বে আমরা একা নই। প্রসঙ্গক্রমে, কোনো ধরনের সংকেত পেলে কেন আমরা বিশ্বাস করবো যে, তা আসলেই কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সৃষ্টি? এটা কিন্তু তুচ্ছ প্রশ্ন নয়। একটা ভালো উপায় হচ্ছে, যদি প্রশ্নটাকে উল্টে নেই। আমরা বুদ্ধিমত্তার সাথে কি করতে পারি, পৃথিবীর বাইরে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছে আমাদের অস্তিত্ব প্রচার করার লক্ষ্যে? ছন্দময় পা দিয়ে কাজটা করা সম্ভব হবে না। জোসলীন বেল বার্নেল (১৪১), রেডিও জোতির্বিজ্ঞানী, যিনি ১৯৬৭ সালে প্রথম পালসার-এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন, এর ঠিক ১.৩৩ সেকেণ্ডের নিয়মিত পর্যায়ক্রমটি দেখে অবাক হয়ে নাম রেখেছিলেন, মজা করে, এলজিএম সংকেত (LGM: little green man signal)। পরবর্তীতে মহাশূন্যের অন্য একটি জায়গায় তিনি দ্বিতীয় পালসারটি আবিষ্কার করেন, যার সংকেতের পর্যায়ক্রম ছিল ভিন্ন, যা ভালোভাবেই এলজিএম হাইপোথিসিসকে ভুল প্রমাণ করেছিল। অনেক বুদ্ধিমত্তাহীন উৎস থেকে মেট্রোনমিক বা নিয়মিত ছন্দ বা পর্যায়ক্রমের সংকেতের উৎপত্তি হতে পারে, যেমন, দোল খাওয়া গাছের ডাল, ফোঁটা ফোঁটা করে পড়া পানির বিন্দু থেকে, ঘুর্ণায়মান আর কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত মহাজাগতিক বস্তু। আমাদের ছায়াপথে হাজারের বেশী পালসার পাওয়া গেছে, এবং এখন স্বীকৃত যে, এরা আসলে হচ্ছে ঘুর্ণায়মান নিউট্রন নক্ষত্র, যারা বাতিঘরের আলোর মত চারপাশে বেতার তরঙ্গ নিঃসরণ করে। কল্পনা করতে অবাক লাগে এমন নক্ষত্রের কথা যা কিনা সেকেন্ডের মধ্যে নিজ কক্ষে ঘুরছে (ভাবুন আমাদের দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘন্টার বদলে ১.৩৩ সেকেন্ড), নিউট্রন নক্ষত্র সম্বন্ধে আমরা যা জানি তার সবকিছু অবাক করার মত। আসল কথা হলো পালসার এর ব্যপারটি সাধারণ পদার্থবিদ্যার একটি ঘটনা, কোনো বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টি নয়।
তাই শুধু নিয়মিত ছন্দময় কিছু অপেক্ষমান মহাবিশ্বের কাছে আমাদের বুদ্ধিদ্বীপ্ত উপস্থিতির জানান দেবে না। প্রাইম সংখ্যা (১৪২) অনেক সময় পছন্দের একটা ব্যপার হয়ে আসে। কারণ শুধুমাত্র কোনো ভৌত উপায়ে এই সংখ্যা তৈরী করা সম্ভব নয়। প্রাইম সংখ্যা শনাক্ত করে তোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক, কল্পনা করুন ‘সেটি মহাশূন্যে বুদ্ধিমান প্রাণীর উপস্থিতির অকাট্য প্রমাণ পেল, এর পরে হয়তো বিশাল আকারের তথ্য এবং জ্ঞানের আদান প্রদান হলো, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, যেমন, ফ্রেড হয়েলের (১৪৩) এ ফর অ্যান্ড্রোমিডা’ বা কার্ল সেগানের ‘কনটাক্ট’ উপন্যাসটির মত। আমরা কিভাবে এর প্রত্যুত্তর দেব? ক্ষমার যোগ্য একটা প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমন কিছু যা অনেকটাই উপাসনার মত, যে সভ্যতার ক্ষমতা আছে এতো বিশাল দূরত্ব থেকে সংকেত পাঠানোর, সেই সভ্যতা আমাদের তুলনায় অনেক অগ্রবর্তী হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী। এমন কি যদি ঐ সভ্যতা সংকেত পাঠানোর সময় আমাদের চেয়ে খুব একটা বেশী উন্নত না হয়েও থাকে, এই অতি বিশাল দূরত্ব আমাদের হিসাব করতে বাধ্য করায়, যে সময় আমরা তাদের সংকেত শনাক্ত করছি তারা হয়তো কয়েক সহস্র বছর আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে (যদি না অবশ্য তারা নিজেদেরকে ধ্বংস না করে ফেলে, যা কিন্তু অসম্ভব না)।
আমরা তাদের সম্বন্ধে কখনো জানতে পারি বা না পারি, সম্ভাবনা আছে, যে ভীনগ্রহের সভ্যতা আছে যারা অতিমানবিক, অনেক দিক থেকে দেবতুল্য, যে কোনো ধর্মতাত্ত্বিকের কল্পনাতীত। তাদের কারিগরী অগ্রগতি আমাদের কাছে অতিপ্রাকৃত মনে হতে পারে, যেমন অন্ধকার যুগের কোনো কৃষককে যদি এশবিংশ শতাব্দীতে নিয়ে আসা যায়, কল্পনা করুন তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে ল্যাপটপ বা মোবাইল টেলিফোন, হাইড্রোজেন বোমা, জাম্বো জেট দেখে। আর্থার সি, ক্লার্ক (১৪৪) যেমন লিখেছিলেন, তার তৃতীয় সূত্রে: ‘যথেষ্ট পরিমান উন্নত কোন প্রযুক্তিকে আসলে ম্যাজিক থেকে আলাদা করা যায়না।’; আমাদের সভ্যতা যে প্রযুক্তি তৈরী করেছে, প্রাচীন মানুষের কাছে তা মোজেস এর সাগর দুই ভাগ করা বা যীশুর পানির উপর হাটা থেকে থেকে কোন অংশে কম অলৌকিক মনে হবে না। আমাদের ‘সেটি’সংকেতের ভীনগ্রহবাসীরা আমাদের কাছে দেবতাদের মতই মনে হতে পারে, যেমন করে, মিশনারীদের মনে করেছিল (এবং তারা যেভাবে তাদের অযোগ্য সম্মানকে অপব্যবহার করেছে চরমভাবে) প্রস্তরযুগীয় সভ্যতার মানুষরা যখন তারা তাদের দেশে এসেছিল অস্ত্র, টেলিস্কোপ, দিয়াশলাই আর পরবর্তী গ্রহনের তারিখ সেকেণ্ড পর্যন্ত নির্ণয় করা সক্ষম পঞ্জিকা সাথে নিয়ে।
তাহলে কোন অর্থে, অতি উন্নত ‘সেটি’ ভীনগ্রহীরা দেবতা হবে না? তাহলে কোন অর্থে তারা অতিমানবীয় হবে, তবে অতিপ্রাকৃত হবে না? খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থে, যা এই বইটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য। দেবতা আর দেবতাতুল্য ভীনগ্রহীদের মধ্যে পার্থক্য তাদের গুণাবলীতে না, তাদের উৎপত্তিতে। যে কোনো প্রাণী যা এত জটিল যে তার বুদ্ধিমত্তা আছে, সে একটি বিবর্তন পক্রিয়ার ফসল। যখন তাদের সাথে আমাদের দেখা হবে তখন যতই তাদের দেবতাতুল্য মনে হোক না কেন, তাদের শুরুটা কিন্তু এভাবে হয়নি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখক যেমন, ড্যানিয়েল এফ, গালোওয়ে (১৪৫), কাউন্টারফিট ওয়ার্ল্ড’ এ এমনকি প্রস্তাব করেছেন (আমি চিন্তা করতে পারছি না কিভাবে তা ভুল প্রমাণ করব) যে আমরা কম্পিউটারের সৃষ্ট কাল্পনিক জগতে বাস করছি যা নিয়ন্ত্রণ করছে অতি উন্নত একটি সভ্যতা। কিন্তু যারা এই জগতটা তৈরী করেছে তাদেরও কোনো এক জায়গা থেকে আসতে হবে। সম্ভাবনার নীতি অনুযায়ী সরল সাধারণ পূর্বসূরি ছাড়া তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্ট হবার সকল ধারণা নাকচ হয়ে যায়। তারাও সম্ভবত তাদের অস্তিত্বের জন্য এক ধরনের (হয়ত অপরিচিত এবং ভিন্ন) ডারউইনবাদের কাছের ঋণী: ড্যানিয়েল ডেনেটের শব্দ ব্যবহার করে বলা যায় ‘স্কাই হুকের পরিবর্তে একধরনের ক্রমবর্ধমান (একদিকে ঘুরতে পারে এমন) হুক সমৃদ্ধ দাঁতালো চাকাযুক্ত ‘ক্রেইন’ (১৪৬); স্কাইহুক সব দেবতাসহ শুধুমাত্র জাদুর খেলা। তারা প্রকৃতার্থে আন্তরিকভাবে কোনো কিছুর ব্যাখ্যা করে না, এবং তাদের প্রদত্ত ব্যাখ্যার চেয়ে আরো বেশী ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয় সেখানে অবশিষ্ট থেকে যায়। ক্রেইন হলো সেই ব্যাখ্যাকারী যন্ত্র, যা আসলে পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম। আর প্রাকৃতিক নির্বাচন হলো সর্বকালের সেরা ক্রেইন, যা জীবনকে আদিমতম সরলতা থেকে ধীরে ধীরে জটিলতা, সৌন্দর্য আর সুস্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয় এমন নকশার সুউচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে যা আমাদের বিস্মিত করে আজ। চতুর্থ অধ্যায় ‘কেন প্রায় নিশ্চিভাবে কোন ঈশ্বর নেই’ এর এটাই হবে মূল বক্তব্য। কিন্তু প্রথমে, সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করার আমার মূল কারণে প্রবেশের আগে, আমার দ্বায়িত্ব হল ঈশ্বর বিশ্বাসের সপক্ষে ঐতিহাসিক সময় থেকে প্রস্তাবিত সকল ইতিবাচক যুক্তিগুলো খণ্ডন করা।
.
পাদটীকা:
(১) ওল্ড টেষ্টামেন্ট হচ্ছে খ্রিষ্টীয় বাইবেল এর প্রথম অংশ, এর মূল ভিত্তি হিব্রু বাইবেল, প্রাচীন ইসরায়েলাবাসীদের ধর্মীয় রচনার একটি। সংকলন।
(২) স্যার উইনস্টোন লিওনার্ড স্পেন্সার-চার্চিল (১৮৭৪-১৯৬৫), ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, দুবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী।
(৩) র্যানডোলফ চার্চিল (১৯১১-১৯৬৮) উইনস্টোন চার্চিল এর ছেলে, ব্রিটিশ সংসদ সদস্য।
(৪) ইভলিন ওয়াহ (১৯০৩-১৯৬৬) ব্রিটিশ লেখক।
(৫) Mitford and Waugh (2001): The Letters of Nancy Mitford and Evelyn Waugh. New York: Houghton Mifflin.
(৬) টমাস জেফারসন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতাদের একজন, প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের একজন প্রধান লেখক।
(৭) ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত কাহিনীতে মিসরীয় এই রাজকুমার ইসরায়েলবাসীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন, তাকে ঈশ্বর মাউন্ট সাইনাইতে দশটি কমান্ডমেন্ট দেন। ইহুদীবাদের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ইসলাম ধর্মে পরিচিত মুসা নামে।
(৮) ইয়াহয়ে (Yahweh), লৌহ যুগে ইসরায়েল এবং যুদাহ’র কেন্দ্রীয় ঈশ্বর।
(৯) জীসাস, (৭-২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ –৩২/৩৩ খ্রিস্টাব্দ), জীসাস অফ নাজারেথ, যীশু খ্রিষ্ট, খ্রিষ্ট ধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, ইসলামে তিনি ঈসা নামে পরিচিত, ইসলামী মতে তিনি ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে মারা। যানটি, তিনি সশরীরে স্বর্গে আহোরণ করেছিলেন এবং ঈশ্বরের পুত্র নন, ইহুদীরা যীশুকে তাদের পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করা মেসিয়া হিসাবে মনে করে না, কারণ তিনি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর শর্ত পূরণ করেন না। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি ত্রাতা, ঈশ্বরপূত্র, ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছিলেন এবং পুনরুজ্জীবিত হয়েছিলেন।
(১০) মিসেস সেসিল ফ্রান্সিস আলেক্সান্ডার (১৮১৮-১৮৯৫), আইরিশ হিম বা খ্রিষ্টীয় স্তব সংগীত রচয়িতা এবং কবি।
(১১) বা’ল– উত্তর পশ্চিম সেমিটিক একটি পদমর্যাদা, যার অর্থ মাস্টার। শব্দটি ব্রোঞ্জ যুগে লেভান্ত ও এশিয়া মাইনরের অনেক শহরের পৃষ্ঠপোষক দেবতাকেও ইঙ্গিত করে।
(১২) গ্রীক পুরাণের প্রধান দেবতা।
(১৩) ওটান বা ওডান, অ্যাঙলো-স্যাক্সন ও মহাদেশী জার্মানিক গ্রোত্রগুলো বহুঈশ্বরবাদী ধর্মের প্রধান দেবতা, নর্স পুরাণের ওডিনের সাথে সংশ্লিষ্ট।
(১৪) ইবন ওয়ারাক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখকের ছদ্মনাম, যিনি ইসলামের সূচনা পর্ব নিয়ে তার গবেষণা মূলক প্রবন্ধগুলো ইসলাম সম্বন্ধে প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
(১৫) http://www.newadvent.org/cathen/06608b.htm
(১৬) এরিয়াস (২৫০-৩৩৬) মিসরের আলেক্সজান্দ্রিয়ার ধর্মযাজক ছিলেন। Arian Heresy এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
(১৭) কনস্টান্টিন রোমের সম্রাট ছিলেন ৩০৬-৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি। প্রথম রোমান সম্রাট যিনি খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন, তিনি দি এডিক্ট অফ মিলান ঘোষণয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যে আদেশের মাধ্যমে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টানদের সাথে সকল বৈরী আচরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় (৩১৩ খ্রিস্টাব্দ), এছাড়াও তার সময়ে (৩২৫) প্রথম নাইসিয়ান কাউন্সিল এর অধিবেশন হয়, যেখানে খ্রিষ্ট ধর্মে মৌলিক ‘নাইসিন ক্রিড’ টি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
(১৮) ক্লোস রিজনিং এর ব্যবহার আমরা দেখি, যখন পাঠককে প্ররোচিত করাই লক্ষ থাকে, যুক্তির মাধ্যমে কোনো একটি উপসংহার পৌঁছাবার বদলে।
(১৯) আথানাসিয়ান ক্রিড বা কুইকানকোয়ে ভুল্ট, একটি কেন্দ্রীয় খ্রিষ্টীয় মতবাদ, যা ট্রিনিটির তিনটি সত্তাকে সমান রুপে চিহ্নিত করেছে। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে এটি খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রীয় রুপ।
(২০) সেইন্ট গ্রেগরী দ্য মিরাকল ওয়ার্কার (২১৩-২৭৫/২৭৬) এশিয়া মাইনরে জন্ম নেয়া ধর্মতাত্ত্বিক যাজক।
(২১) থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬) আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল লেখক এবং তৃতীয় প্রেসিডেন্ট।
(২২) ক্যালভানিজম (Calvanism) খ্রিস্টান ধর্মের প্রটেষ্টানিজম এর একটি প্রধান শাখা, জন ক্যালভিন সহ অন্যান্য রিফরমেশন পর্বে ধর্মতাত্ত্বিকদের মতাদর্শ নির্ভর একটি শাখা।
(২৩) ক্যাথলিক চার্চ দাবী করে তারা কোনো সেইন্ট তৈরী করেন। না, শুধু তাদের ক্যানোনাইজ বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন। সব সেইন্ট এর অবস্থান স্বর্গে।
(২৪) http://www.catholic forum.com/saints/indexsnt.htm?NF=I
(২৫) পোপ জন পল দ্বিতীয় (কারোল ইয়ুজেফ ভোজতিয়া (১৯২০ ২০০৫), ১৯৭৮ থেকে ২০০৫ অবধি ক্যাথলিক চার্চের পোপ ছিলেন।
(২৬) স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজার (১৮৫৪-১৯৪১) ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ধ্রুপদী বই ‘দ্য গোল্ডেন বোহ’ (Golden bough) এর লেখক।
(২৭) পাসকাল বয়ের, ফরাসী নৃতত্ত্ববিদ, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেইন্ট লুইস এর অধ্যাপক। Religion explained বইটির লেখক।
(২৮) স্কট আটরান, যুক্তরাষ্ট্রের নৃতত্ত্ববিদ।
(২৯) ফেনোমেনোলজী হচ্ছে সচেতনতা বা সজ্ঞানতার গঠন প্রকৃতি নিয়ে অধ্যয়ন, যে সচেতন সজ্ঞানতায় অভিজ্ঞতালব্ধ হয় কোন এক ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে। কোনো একটি অভিজ্ঞতার কেন্দ্রীয় কাঠামোটি তৈরী করে এর উদ্দেশ্যময়তা, এটি অন্য কোন কিছুর প্রতি নির্দেশিত যেমন একটি কিছুর বা কোন কিছু সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা।
(৩০) মর্মনিজম হচ্ছে লেটার ডে সেইন্ট মুভমেন্ট এর প্রধান ধর্মীয় প্রথা। এই মুভমেন্টটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৮২০ এর দশকে জোসেফ স্মিথ।
(৩১) গোর ভিদাল ( ইউজিন লুইস ভিদাল) (১৯২৫-২০১২) যুক্তরাষ্ট্রের লেখক।
(৩২) পল দি অ্যাপস্টোল (সল অফ টারসাস– ৫-৬৭) একজন অপোষ্টল বা অনুসারী শিষ্য (যদিও যীশুর ১২ জন অ্যাপোষ্টল এর একজন নয়) যিনি প্রথম শতাব্দীতে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচারক ছিলেন।
(৩৩) কনকিষ্টাডোর, পর্তুগীজ ও স্প্যানিশ সাম্রজ্যের সৈন্য অভিযাত্রীদের বোঝাতে এই নামটি ব্যবহার করা হতো, সাধারণ ১৫ থেকে ১৭শ শতাব্দীতে, পৃথিবী জুড়ে নতুন উপনিবেশ স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
(৩৪) থমাস পেইন (১৭৩৭-১৮০৯) ইংরেজ এবং আমেরিকার রাজনৈতিক দার্শনিক, তাত্ত্বিক এবং বিপ্লবী। ১৭৭৬ সালে আমেরিকার বিপ্লবের শুরুতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাম্ফলেট এর রচয়িতা ছিলেন, তিনি আমেরিকার বিদ্রোহীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন ইংল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য।
(৩৫) একাত্মবাদীরা মনে করেন, ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করলেও প্রাকৃতিক জগতের কোনো বিষয়ে তিনি কোন হস্তক্ষেপ করেন না, তিনি তার বেধে দেয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই সব কিছু পরিচালিত হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। একাত্মবাদীদেও মতে মানুষরা শুধুমাত্র যুক্তি আর প্রকৃতির নানা প্রপঞ্চ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমেই কেবল সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারবে, কোন ঐশী প্রত্যাদেশ বা অতিপ্রাকৃত (অলৌকিক কোন ঘটনা) কোন প্রকাশের মধ্যে নয়।
(৩৬) এজ অফ এনলাইটেনমেন্ট (অথবা শুধু এনলাইটেনমেন্ট বা এজ অব রিজন) হচ্ছে সেই সময় পর্ব, যখন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছিল প্রথাগত চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে যুক্তি, বিশ্লেষন আর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতার উপর ভিত্তি করে। এটির সূচনা করেছিলেন পশ্চিম ইউরোপের দার্শনিকরা।
(৩৭) সুজান জ্যাকোবী (জন্ম ১৯৪৫) একজন আমেরিকান লেখক।
(৩৮) ডেইজম (একাত্মবাদ), শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন ডিউস শব্দটি থেকে, যার অর্থ ঈশ্বর। সৃষ্টিকর্তা এবং প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে তার সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট এটি একটি ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থান। সপ্তদশ শতকে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মাধ্যমে সুচিত হয়েছে ডেইষ্টিক এই দৃষ্টিভঙ্গি যা অষ্টাদশ শতাব্দীর এনলাইটেনমেন্ট পর্বকে প্রভাবিত করেছিল। কোন ধরনের ধর্মীয় বিধিনিষেধ বা ঐশী প্রত্যাদেশ ছাড়াই যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তিকে একজন পরমসত্তা বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস, অন্যভাবে বললে যৌক্তিক একেশ্বরবাদ। যদিও একাত্মবাদীরা নিরীশ্বরবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, প্রথাগত ঈশ্বরবিশ্বাসীরা অবশ্যই প্রায়শই তাদের চিহ্নিত করেছেন নিরীশ্বরবাদী হিসাবে। কিন্তু একাত্মবাদী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন খ্রিষ্ট ধর্ম বিরোধী থেকে শুরু করে অ-খ্রিষ্টীয় ঈশ্বরবাদীরাও। একাত্মবাদীরা মনে করেন, ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করলেও প্রাকৃতিক জগতের কোন বিষয়ে তিনি কোন হস্তক্ষেপ করেন না, তিনি তার বেধে দেয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই সব কিছু পরিচালিত হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। একাত্মবাদীদের মতে মানুষরা শুধুমাত্র যুক্তি আর প্রকৃতির নানা প্রপঞ্চ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমেই কেবল সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারবে, কোন ঐশী প্রত্যাদেশ বা অতিপ্রাকৃত (অলৌকিক কোন ঘটনা) কোন প্রকাশের মধ্যে নয়। এই বিষয়গুলো একাত্মবাদীরা মনে করেন সতর্কতার ( পুরোপুরি সন্দেহবাদীতার সাথে না হলেও) সাথে যৌক্তিক ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা আছে।
(৩৯) Congressional Record, 16 Sept, 1981.
(৪০) যুক্তরাষ্ট এবং অটোমান ত্রিপোলিতানিয়া’র মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম চুক্তি।
(৪১) জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯) আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
(৪২) জন অ্যাডামস (১৭৩৫-১৮২৬) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের একজন, এবং দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট।
(৪৩) এডওয়ার্ড মিল্টন ‘এড’ বাকনার (জন্ম ১৯৪৬) আমেরিকার অ্যাথিষ্ট অ্যাক্টিভিষ্ট। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল অবধি অ্যামেরিকান অ্যাথিষ্ট এর সভাপতি ছিলেন।
(৪৪)। http://www.stephenjaygould.org/ctrl/buckner_tripoli.html.
(8৫) Giles Fraser, “Resurgent religion has done away with the country vicar’, Guardian, 13 April 2006
(৪৬) ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত মাউন্ট সাইনাই পর্বতে মোজেসকে দেয়া ঈশ্বরের অবশ্য পালনীয় দশটি নির্দেশ।
(৪৭) ক্রিষ্টোফার এরিক হিচেন্স ( ১৯৪৯-২০১১) ব্রিটিশ আমেরিকান লেখক, সাংবাদিক, বিতার্কিক।
জেমস ম্যাডিসন জুনিয়র (১৭৫১-১৮৩৬) আমেরিকার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, তাকে সংবিধানের জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নে তার ভূমিকার জন্য, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিল অব রাইটস এর রচয়িতা।
(৪৯) বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের অন্যতম, নানা কারণে তাকে প্রথম আমেরিকান হিসাবে মনে করা হয়, বিজ্ঞানী, রাজনিতিবিদ, লেখক, আবিষ্কারক, প্রকাশ, কুটনীতিবিদ।
(৫০) Robert I. Sherman, in Free Inquiry 8: 4, Fall 1988, 16, (৫২) নাটালি আনজিয়ার্স (জন্ম ১৯৫৮) নিউ ইয়র্ক টাইমস এর বিজ্ঞান সংবাদদাতা এবং লেখক।
(৫১) N. Angier, Confessions of a lonely atheist, New York Times Magazine, 14 Jan. 2001: http:// www. Geocities.com/mindstuff/ Angier.html
(৫২) এই বিষয়টি নিয়ে ফ্রি এনকোয়ারী পত্রিকার সম্পাদক টম ফ্লিন জোরালো যুক্তি দিয়েছিলেন, তার সেকুলারিজমস ব্রেক থ্র মোমেন্টস শীর্ষক একটি নিবন্ধে: যদি নিরীশ্বরবাদীরা একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং বিষণ্ণতায় ভোগেন, সেটার জন্য দায়ী আমরাই (নিরীশ্বরবাদীরা); সংখ্যা বিচারে আমরা অনেক শক্তিশালী, আসুন আমাদের শক্তির প্রমাণ দেয়া শুরু করি।
(৫৩) ডেভিড মিলস (জন্ম ১৯৫৯) যুক্তরাষ্ট্রের লেখক।
(৫৪) http://www.fsgp.org/adsn.html
(৫৫) একটি বিশেষভাবে অদ্ভুত ঘটনা, যেখানে একটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল শুধুমাত্র নাস্তিক হবার অপরাধে। সেই ঘটনাটি বর্ণিত আছে ফ্রি থট সোসাইটি অব গ্রেটার ফিলাডেলফিয়া মার্চ/এপ্রিল ২০০৬ এর নিউজ লেটারে। http://www.fsgp.org/ newsletters/newsletter_ 2006_0304.pdf এই ওয়েবসাইটে যান। এবং ল্যারী হুপারের হত্যাকাণ্ডটি স্ক্রল করে পড়ুন।
(৫৬) এখানে উল্লেখ করতে হবে, মার্চ ২০০৭ এ ক্যালিফোর্নিয়ার ১৩তম ডিস্ট্রিক্ট এ কংগ্রেস ম্যান পিট স্টার্ক, জনসমক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তার কোনো ঈশ্বরবাদী বিশ্বাস নেই; আশা করা যাক, যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজনীতিবিদরাও এই সাহসী মানুষকে অনুসরণ করবেন। আসুন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, পানি ঠাণ্ডা ঠিকই তবে আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে। http://www. Secular.org / news/ pete_stark_070312.html)
(৫৭) জাওয়াহরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪) ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, এবং আধুনিক ভারতের স্থপতি।
(৫৮) http://www.hinduonnet.com/thehindu/mag/2001/11/1 8/ stories/ 2001111800070400.htm.
(৫৯) “সন্মানিত মহাশয়, আমার এই হাইপোথিসিসের প্রয়োজন নেই’,এই বিখ্যাত উত্তরটি দিয়েছিলেন লাপ্লাস, নেপোলিয়ন যখন বিস্মিত হয়ে এই বিখ্যাত গণিতজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেমন করে তিনি তার বই লিখতে সক্ষম হয়েছেন একবারও ঈশ্বরের নাম উল্লেখ না করে।
(৬০) অ্যাগনষ্টিসিজম (অজ্ঞেয়বাদ) হচ্ছে একটি দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে কিছু নির্দিষ্ট দাবীর সত্যতা– বিশেষভাবে ঈশ্বর, স্বর্গীয় বা অতিপ্রাকৃতি কোন সত্তার অস্তিত্ব আছে কিংবা নেই, এই বিষয়ে কোন অধিবিদ্যা নির্ভর এবং ধর্মীয় দাবী– হচ্ছে অজানা এবং যা জানা সম্ভব না। দার্শনিক উইলিয়াম এল, রোয়ের মতে কোন একজন অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী, সাধারণ অর্থে সেই ব্যক্তি, যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এমন কিছু বিশ্বাসও করেন না আবার অবিশ্বাসও করেন না ( ঈশ্বরবাদীরা যেমন বিশ্বাস করেন ও নিরীশ্বরবাদীরা যেমন বিশ্বাস করেন না)। থমাস হেনরী হাক্সলী, একজন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী, ১৮৬৯ সালে এই অ্যাগনষ্টিক শব্দটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন। হাক্সলীর ভাষায়: অ্যাগনষ্টিসিজম কোন বিশ্বাস বা ক্ৰীড নয় বরং একটি পদ্ধতি, যার মূল হচ্ছে একটি একক মূলনীতিতে কঠোরভাবে অনুসরণ করা, এবং ইতিবাচকভাবে এই মূলনীতিটিকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: বুদ্ধিমত্তার কোন ব্যপারে, আপনি যুক্তিকে অনুসরণ করুন, যত দূর অবধি তা করা সম্ভবপর হয়, অন্য কোন বিবেচনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে। এবং নেতিবাচকভাবে: বুদ্ধিমত্তার কোন বিষয়ে এমন কোন ভান করবেন না যে উপসংহারে আপনি পৌঁছেছেন সেটি নিশ্চিৎ, যা আপনি প্রদর্শন করে প্রমাণ করতে পারবেন না বা সেটি প্রদর্শন করা সম্ভব না। দার্শনিক রোয়ের মতে, আরো সংকীর্ণ অর্থে, অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা দাবী করে মানুষের যুক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংক্রান্ত বিশ্বাসের পক্ষে বা বিপক্ষে যথার্থ পরিমান যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নয়। অ্যাগনষ্টিক শব্দটির উৎপত্তি– (a) যার অর্থ উইথ আউট ও (gnosis) বা নলেজ।
(৬১) Quentin de la Bedoyere, Catholic Herald, 3 Feb. 2006 (48) Carl Sagan, The burden of skepticism, Skeptical Inquirer 12, Fall.1987.
(৬২) The Permian-Triassic (P-Tr) extinction event বা পার্সিয়ান-ট্রায়াসিক মহাবিলুপ্তি যা পরিচিত the Great Dying হিসাবে, ঘটেছিল প্রায় ২৫২.২৮ মিলিয়ন বছর আগে। যা পার্মিয়ার আর ট্রায়াসিক ভূতাত্ত্বিক মহাপর্বের ও একই সাথে প্যালিওজয়িক ও মেসোজয়িক এরার সীমারেখা তৈরী করেছে। আমাদের গ্রহের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় মাপের মহাবিলুপ্তির ঘটনা, যে সময় ৯৬% সামুদ্রিক প্রজাতি এবং ৭০ শতাংশ স্থলবাসী মেরুদণ্ডী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল। এই বিশাল পরিমানে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবার কারণে অন্য যে কোনো মহাবিলুপ্তির চেয়ে পার্মিয়ান মহাবিলুপ্তির পর পৃথিবীতে পুনরায় জীব বৈচিত্র্য ফিরে আসার জন্য সময় নিয়েছিল অনেক বেশী, সম্ভবত ১০ মিলিয়ন বছর।
(৬৩) TAP: Temorary Agnostocism in Practice
(৬৪) PAP: Permanent Agnostocism in Practice
(৬৫) একটি প্রশ্ন যা কিনা বহুদিন ধরেই প্রচলিত, এবং এটি একটি প্রশ্নও যা বেশ উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিতে পারে, কারণ খুব ভালো কারণ আছে এর উল্টর দুভাবে দেবার জন্য; যেমন কোন বনভূমিতে যদি কোন একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে যখন সেখানে কেউ না থাকে, তখন কি কোন শব্দ হয়।– হ্যাঁ গাছটি অবশ্যই শব্দ সৃষ্টি করবে; না গাছটি অবশ্যই শব্দ সৃষ্টি করবে না।
(৬৬) ইসিডোর অগুস্ত মারি ফ্রাসোয়া জাভিয়ের কৌমত (১৭৯৮ ১৮৫৭) যিনি সুপরিচিত অগুস্ত কোঁমত হিসাবে, ফরাসী দার্শনিক। সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসাবে তাকে মনে করা হয়। আধুনিক অর্থে বিজ্ঞানের দার্শনিক শব্দটি যা অর্থ করে, সেই অর্থে তিনি প্রথম বিজ্ঞানের দার্শনিক।
(৬৭) যোসেফ ফ্রাউনহফার (পরবর্তীতে রিটার ফন ফ্রাউনহফার ( ১৭৪৭-১৮২৬) জার্মান অপটিশিয়ান, সুর্যের বর্ণালীতে অ্যাবসৰ্পৰ্শন বা শোষণ রেখা (ফ্রাউনহফার লাইন) আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। এছাড়াও খুবই উন্নত মানে অ্যাক্রোমাটিক লেন্স এর আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি।
(৬৮) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে, Dawkins, R. (1998). Unweaving the Rainbow. London: Penguin, বইটিতে।
(৬৯) থমাস হেনরী হাক্সলী (১৮২৫-১৮৯৫) ইংরেজ জীববিজ্ঞানী।
(৭০) T. H. Huxley, Agnosticism (1889), Agnosticism : http://www. infidels. Org/library/historical/ uxley_huxley/ uxley_wace/part_02.html.
(৭১) ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬) স্কটিশ দার্শনিক। পশ্চিমা দর্শনের উপর তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে।
(৭২) ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) জার্মান দার্শনিক, আধুনিক দর্শনের অন্যতম কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে তাকে চিহ্নিত করা হয়।
(৭৩) কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙ (১৮৭৫-১৯৬১) সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহনকারী মনোবিজ্ঞানী, সাইকোথেরাপিষ্ট, যিনি অ্যানালিটিকাল সাইকোলজী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
(৭৪) বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল (১৮৭২-১৯৭০) ব্রিটিশ দার্শনিক,গণিতজ্ঞ, লেখক।
(৭৫) Russell, Is there a God? (1952); Why I Am Not a Christian. London: Routledge. Russell, B. (1993). The Quotable Bertrand Russell. Amherst, NY: Prometheus
(৭৬) ইনকুইজিটররা ছিলেন ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো ভিন্ন মতাবলম্বী বা বৈধর্ম প্রচারকারীদের অনুসন্ধান ও তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত যাজক।
(৭৭) হয়তো আমি একটু তাড়াতাড়ি কথাটা বলে ফেললাম, ২০০৫ সালের ৫ জুন The Independent on Sunday একটি খবর প্রকাশ করে: মালায়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, যে ধর্মীয় সেক্টটি পবিত্র চায়ের এর পট এর আকারে একটি বাড়ি বানিয়েছে, তারা গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া বিবিসি’র খবরটি দেখুন এখানে: http://news.bbc.co.uk/2/hi/asia-pacific/4692039.stm
(৭৮) সাবাথের উৎপত্তি ওল্ড টেষ্টামেন্টে, ইহুদী মতাবলম্বীদের জন্য সাবাথ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার দিন, ধর্মীয় প্রার্থনার পবিত্র দিবস হিসাবে। সাধারণত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাবাথ পালন করা হয়, খ্রিষ্টানদের জন্য এই দিনটি হচ্ছে রবিবার।
(৭৯) টুথ ফেয়ারী, শিশুতোষ রুপকথার একটি চরিত্র, বলা হয়ে থাকে যখন কোন শিশুর দুধ দাঁত পড়ে, সে যদি দাঁতটি তার বালিশের নীচে নিয়ে ঘুমায়, টুথ ফেয়ারী এসে সেটি সামান্য কিছু টাকা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে। সম্ভবত প্রাচীন ইউরোপীয় একটি প্রথা থেকে এর উৎপত্তি, যখন শিশুদের দুধ দাঁত অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করা হতো।
(৮০) মাদার গুজ, সাধারণ রুপকথা বা শিশুতোষ ছড়া সংকলনের কল্পিত লেখক।
(৮১) Andrew Mueller, An argument with Sir Iqbal, Independent on Sunday, 2April 2006, Sunday Review section, 12-16
(৮২) প্রাচীন কাল থেকেই বর্ণিত হয়ে আসা কাল্পনিক একটি প্রাণী, প্রায় ২৫০০ বছর আগের হরপ্পা মহেঞ্জদারো থেকে পাওয়া পাথরের সীলে এক শিং সহ ঘোড়ার মত এই প্রাণীর চিত্র প্রথম দেখা যায়।
(৮৩) ক্যাম্প কোয়েষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের সামার ক্যাম্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ব্যতিক্রম এবং এটি সম্পূর্ণ প্রশংসনীয় একটি দিকে এই সংস্কৃতিটাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। অন্যান্য সামার ক্যাম্পগুলো যা একটি ধর্মীয় এবং স্কাউট নির্ভর মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, কেন্টাকীতে এডউইন এবং হেলেন কাগিন এর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্প কোয়েস্ট পরিচালিত হয় ধর্মনিরেপক্ষ মানবতাবাদী নৈতিকতার উপর। শিশুদের এখানে সংশয় এবং প্রশ্নের সাথে সবকিছুকে বিচার করার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়, এর সাথে অন্যান্য বাইরের নানা কার্যক্রমতো আছেই (www.camp quest.org); ক্যাম্প কোয়েস্টের এর মত আরো বেশ কিছু সামার ক্যাম্প গড়ে উঠেছে টেনিসি,মিনোসোটা, মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডায়)।
(৮৪) New York Times, 29 Aug. 2005.
(৮৫) Henderson, B. (2006). The Gospel of the Flying Spaghetti Monster: Villard ঘবি পড়ৎশ ঞরসবং, ২৯ অঁম, ২০০৫.
(৮৬) http://www.lulu.com/content/267888.
(৮৭) গ্রীক পুরাণের প্রধান দেবতা।
(৮৮) গ্রীক পুরাণের দেবতা।
(৮৯) আমন– মিসরীয় পুরাণে প্রধান দেবতা, সূর্য দেবতার রা সাথে একসাথে তাকে আমন-রা বলা হয়ে থাকে।
(৯০) রহস্যময় গ্রীক-রোমান ধর্ম,যার উৎস প্রোটো-ইন্দো-ইরানি দেবতা মিত্রা, যার গ্রীক রুপ মিথরাস (খ্রিষ্ট জন্মের পর প্রথম থেকে চতুর্থ শতাব্দী)
(৯১) ব্রোঞ্জ যুগে লেভান্ত ও এশিয়া মাইনরের প্রধান দেবতা
(৯২) নরওয়েজীয় পুরাণের দেবতা।
(৯৩) অ্যাঙলো-স্যাক্সন ও জার্মানিক গোত্রদের দেবতা
(৯৪) হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত মোজেস এর অনুপস্থিতিতে ইসরায়েলাইটদের জন্য অ্যারণ সোনালী বাছুর উপাসনার জন্য বানিয়ে দিয়েছিলেন।
(৯৫) সাম্প্রতিক সময়ের একটি প্যারোডি ধর্ম।
(৯৬) অ্যালিস্টার ম্যাকগ্রাথ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক।
(৯৭) বার্ট্রান্ড রাসেল এর টি পট বা চায়ের পাত্রের যুক্তি।
(৯৮) স্টিফেন জে গুল্ড (১৯৪১-২০০২) আমেরিকার বিবর্তন জীববিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ।
(৯৯) দি বুক অব ডিউটেরোনমী (গ্রীক ডিউটেরোনোমিয়ন, ‘দ্বিতীয় সুত্র’) হিব্রু বাইবেল ও ইহুদী তোরাহ’র পঞ্চম বই। এই বইটিতে মূলত তিনিটি সারমন বা উপদেশপূর্ণ বক্তৃতা আছে, যা মমাজেস, ইসরায়েলবাসীদের উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন, তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে প্রবেশ করার কিছু সময় আগে।
(১০০) বুক অব লিভিটিকাস (গ্রীক লিউটিকোস, যার মানে লিভাইটদের সম্পর্কিত), হিব্রু বাইবেল এর তৃতীয় বই, তোরাহ’র পাঁচটি বই এর তৃতীয়তমটি। এর বেশীর ভাগ অধ্যায় মূলত মোজেস এর প্রতি ঈশ্বরের নির্দেশাবলী, যা তিনি। ইসরায়েলাইটদের প্রতি পুনরাবৃত্তি করতে বলেছেন।
(১০১) Rocks of Ages: Science and Religion in the Fullness of Life, New York: Ballantine Books
(১০২) রিচার্ড জি. সুইনবার্ণ (২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৪) ব্রিটিশ ধর্মতত্ত্বের দার্শনিক।
(১০৩) অ্যালিস এই ওয়াণ্ডারল্যাণ্ড, লুইস ক্যারোল
(১০৪) অ্যামব্রোজ গিনেট বিয়ের্স (১৮৪২-১৯১৪?) আমেরিকার সাংবাদিক, লেখক, এবং ব্যঙ্গাত্মক কাহিনী রচয়িতা।
(১০৫) স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন (১৮২২-১৯১১), ভিক্টোরিয় ইংল্যান্ডে নৃতত্ত্ববিদ,ইউজেনিষ্ট, অভিযাত্রী, ভূগোলবেত্তা,আবিষ্কার, আবহাওয়াবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, মনোবিজ্ঞানী।
(১০৬) যখন আমার অক্সফোর্ড কলেজ, ওয়ার্ডেন বা প্রধান হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন সেই ব্যক্তিকে, যার যার কথা আমি এর আগে উল্লেখ করেছি, সদস্যরা প্রকাশ্যে তার সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে পান করেছিলেন পর পর তিনটি সন্ধ্যা, এই সব নৈশভোজের তৃতীয় দিনে তিনি বিনম্রভাবে এর প্রত্যুত্তর মন্তব্য করেছিলেন: “আমি ইতিমধ্যেই অনেক ভালো বোধ করছি।”
(১০৭) রাসেল স্ট্যানার্ড (জন্ম ১৯৩১) ব্রিটিশ পদার্থবিদ।
(১০৮) স্যার জন টেম্পেলটন সৃষ্ট একটি ফাউণ্ডেশন। নানা ধরনের গবেষণায় এটি অর্থ প্রদান করে, মূলনীতি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিকার সাথে বিজ্ঞান বা অন্যান্য শাখার সমন্বয় সাধন।
(১০৯) H. Benson et al., Study of the therapeutic effects of intercessory prayer (STEP) in cardiac bypass patients, American Heart Journal:151: 4, 2006, 934-42.
(১১০) জর্জ রবার্ট ‘বাব’ নিউহার্ট ( জন্ম ১৯২৯) আমেরিকার কমেডিয়ান ও অভিনেতা।
(১১১) Richard Swinburne, in Science and Theology News, 7 April
(১১২) পিটার উইলিয়াম অ্যাটকিন্স (জন্ম ১৯৪০) ব্রিটিশ রসায়নবিদ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের প্রাক্তন অধ্যাপক।
(১১৩) এই বাদানুবাদটি অবশ্য চূড়ান্ত সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান থেকে সম্পাদিত করা হয়েছিল। সুইনবর্ণের এই বক্তব্য তার স্বভাবসুলভ ধর্মতত্ত্বের চিহ্ন বহন করে; প্রায় একই রকম মন্তব্য তিনি হিরোশিমা নিয়ে করেছিলেন তার “দি এক্সিষ্টেন্স অব গড’ (২০০৪) বইটিতে ২৬৪ নং পৃষ্ঠায়, “মনে করুন হিরোশিমার পারমানবিক বোমায় যদি একজন মানুষ কম পুড়তেন,তাহলে সেখানে সাহস এবং সমবেদনার সুযোগও খানিকটা কমে যেত।
(১১৪) New York Times, 11 April 2006
(১১৫) আর্থার নেভিল চেম্বারলেইন ( ১৮৬৯-১৯৪০) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪০); চেম্বারলেইন বিশেষভাবে খ্যাত যুদ্ধ এড়ানোর জন্য হিটলারের সাথে তার তোষনবাদী মিউনিখ চুক্তির (১৯৩৮) জন্য। যখন চেকোস্লোভাকিয়ার জার্মান প্রধান সুডেটেনল্যান্ডকে জার্মানী অধিগ্রহন করেছিল।
(১১৬) ইউজেনি ক্যারল স্কট (জন্ম ১৯৫৪) জৈববৈজ্ঞানিক নৃতত্ত্ববিদ, ২০১৩ অবধি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্স এডুকেশন এর পরিচালক ছিলেন।
(১১৭) মাইকেল রুজ (জন্ম ১৯৪০) বিজ্ঞানের দার্শনিক।
(১১৮) আদালতের বেশ কিছু কেসে এবং প্রকাশিত গ্রন্থ যেমন Ruse, M. (1982). Darwinism Defended: A Guide to the Evolution Controversies. Reading, MA: Addison-Wesley. Playboy ম্যাগাজিনে তার নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল এপ্রিল ২০০৬ সংখ্যায়।
(১১৯) জেরী অ্যালেন কয়েন (জন্ম ১৯৪৯) ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’র জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক, লেখক।
(১২০) এডওয়ার্ড ওসবোর্ন উইলসন ( জন্ম ১৯২৯) আমেরিকার জীববিজ্ঞানী,গবেষক,তাত্ত্বিক এবং লেখক।
(১২১) মাইকেল রুজ এর নিবন্ধটির জবাব দিয়েছিলেন জেরী কয়েন প্লে বয় ম্যাগাজিনে আগষ্ট ২০০৬ সংখ্যায়।
(১২২) সালেম উইচ ট্রায়াল, ১৬৯২ আর ১৬৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ উপনিবেশ ম্যাসাচুসেটস ডাইনীবিদ্যার চর্চার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ জনকে, যাদের মধ্যে ছিলেন ১৪ জন নারী।
(১২৩)জোসেফ (জো) ম্যাকার্থি, যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত রাজনীতিবিদ যিনি ৫০ এর দশকে কমিউনিষ্ট নাশকতা সন্দেহে বহু মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন মূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
(১২৪) Madeleine Bunting, Guardian, 27 March 2006
(১২৫) আংকেল রেমুস লোকপ্রিয় একটি কাহিনীর চরিত্র, মূলত তাকে আমরা দেখি মূল সূত্রধর হিসাবে আফ্রিকান আমেরিকান লোকগাথায়, যা সংকলন করেছিলেন জোনলয় শ্যান্ডলার হ্যারিস, এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮১ সালে। পেশায় সাংবাদিক হ্যারিস মোট সাতটি আঙ্কেল রেমুস এর লোকাগাথার সংকলন প্রকাশ করেছিলেন।
(১২৬) ড্যান ডেনেটের উত্তর প্রকাশিত হয়েছিল গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল।
(১২৭) http://scienceblogs.com/pharyngula/2006/03/the_da wkinsdennett boogeyman.php; http://scienceblogs.com/pharyngula / 2006/02/ our_double_standard.php; http://scienceblogs.com/ pharyngula/2006/02/ the_rusedennett_feud.php.
(১২৮) ড্রেক সমীকরণ হচ্ছে একটি সম্ভাবনার প্রস্তাব যা দিয়ে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সীতে সক্রিয়, যোগাযোগ করতে সক্ষম ভীনগ্রহের সভ্যতার সংখ্যার একটি আনুমানিক পরিমান করা যায়। এই সমীকরণটি লিখেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক (জন্ম ১০৩০) ১৯৬১ সালে, প্রথম সেটি মিটিং এ আলোচনা শুরু করার জন্য।
(১২৯) পল ডেভিস, ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী।
(১৩০) নিকোলাউস কোপার্নিকাস ( পোলিশ: মিকোলাই কোপেরনিক: ১৪৭৩-১৫৪৩) গনিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি মহাবিশ্বের একটি মডেল নির্মান করেছিলেন পৃথিবীর পরিবর্তে সূর্যকে এর কেন্দ্রে স্থাপন করে।
(১৩১) এডউইন পাওয়েল হাবল (১৮৮৯-১৯৫৩) আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
(১৩২) অগুষ্ট কোঁমত, ফরাসী দার্শনিক।
(১৩৩) পজিটিভিজম হচ্ছে বিজ্ঞানের একটি দর্শন, সব তথ্য যার উৎপত্তি যুক্তি এবং গাণিতিক প্রক্রিয়ায় এবং যা ইদ্রিয় দ্বারা অনুভূতপর্যবেক্ষিত অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে, কোনো কর্তৃত্বপূর্ণ জ্ঞানের সেটাই একমাত্র উৎস এবং সত্যিকারের প্রমাণিত জ্ঞান (সত্য) থাকে শুধুমাত্র এভাবে আহরিত জ্ঞানে। আর ইন্দ্রিয় থেকে প্রাপ্ত পরীক্ষিত উপাত্তকে বলা হয় এমপিরিকাল এভিডেন্স।
(১৩৪) ডপলার ইফেক্ট ডপলার শিফট হচ্ছে তরঙ্গ হারের পরিবর্তন (অথবা অন্য কোন পর্যায়ক্রমিক ঘটনা) যখন কোন পর্যবেক্ষণকারী এই তরঙ্গ উৎস থেকে তার নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করেন। অষ্ট্ৰীয় পদার্থবিদ ক্রিষ্টিয়ান উপলার এটি প্রস্তাব করেছিলেন।
(১৩৫) এটি যন্ত্র যার দ্বারা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেক্ট্রাম এর একটি নির্দিষ্ট অংশের আলোর প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হয়, মূলত কোন পদার্থকে শনাক্ত করার জন্য।
(১৩৬)। http://vo.obspm.fr/exoplanetes/encyclo/encycl.html.
(১৩৭) সুজান জোসলীন বেল বার্ণেল (জন্ম ১৯৪৩), উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
(১৩৮) ১ অপেক্ষা বড় কোনো সংখ্য যা সেই সংখ্যাটি নিজে ও ১ ছাড়া আর কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। যেমন ৫;
(১৩৯) ফ্রেড হয়েল (১৯১৫-২০০১) ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, স্টেলার নিউক্লিওসিনথেসিস এর জন্য যিনি সুপরিচিত।
(১৪০) আর্থার সি ক্লার্ক (১৯১৭-২০০৮) ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক, বিজ্ঞান লেখক এবং ফিউচারিষ্ট, আবিষ্কারক।
(১৪১) ড্যানিয়েল ফ্রান্সিস গ্যালওয়ে ( ১৯২০-১৯৭৬), আমেরিকার কল্প বিজ্ঞান লেখক। (384) Dennett, D. (1995). Darwins Dangerous Idea. New York: Simon & Schuster.
.
Google translate diye Translate korechen naki,