ইন্দ্র বৃত্রকে মারিয়া ফেলেন, এই কথাটা বেদে পুনঃ পুনঃ দেখা যায়। এ সম্বন্ধে যে সকল গল্প আছে, তাহা তোমাদিগকে বলি।
ত্বষ্টা নামে এক ঋষি ছিলেন, ইঁহার সঙ্গে ইন্দ্রের এক সময় খুব ভাব ছিল। ত্বষ্টা ঋষি একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন। তিনি ইন্দ্রকে খুব ভাল ভাল সোনা ও লৌহের বর্ম্ম বানাইয়া দিয়াছিলেন, সেইগুলি গায়ে পরিয়া ইন্দ্র দস্যুদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে যাইতেন। ইন্দ্র যুদ্ধকালে যে বজ্র ব্যবহার করিতেন, তাহার কোনটির ছিল চার ধার, কোনটির একশ ধার, এবং কোনটির হাজার ধার। এইগুলি যাহার প্রতি ছুড়িয়া মারিতেন, তাহার আর প্রাণরক্ষ হইত না। নিপুণ কারিগর ত্বষ্টা ঋষিই এই সমস্ত বজ্র তৈরী করিয়া ইন্দ্রকে উপহার দিতেন।
কিন্তু এই ভাব বেশী দিন রইল না। ইন্দ্র একবার রাগিয়া ত্বষ্টা ঋষির পুত্র বিশ্বরূপকে মারিয়া ফেলেন। ত্বষ্টা তাহাও সহ্য করিয়া রহিলেন, কিন্তু ঋষি তারপর একটা যজ্ঞ করিলেন, তাহাতে ইন্দ্রকে আর নিমন্ত্রণ করিলেন না। ইন্দ্র যজ্ঞের লোভী ছিলেন। তিনি লুকাইয়া ত্বষ্টার যজ্ঞে বেশ আকণ্ঠ সোমরস পান করিয়া আসিলেন।
ত্বষ্টা ইহা জানিতে পারিয়া রাগ সামলাইতে পারিলেন না। তিনি ইন্দ্রকে বধ করিবার জন্য একটা মহাযজ্ঞের আয়োজন করিলেন। যজ্ঞের শেষ আহুতি দেওয়ার সময় ঋষি প্রার্থণা করিলেন,–“আমার যেন একটা ‘ইন্দ্র-ঘাতক’ পুত্র হয়।” কিন্তু ত্বষ্টা ছিলেন কারিগর লোক, তাঁর উচ্চারণ শুদ্ধ ছিল না। ফলে তিনি যে ভাবে এই প্রার্থনাটি উচ্চারণ করিলেন তাহাতে “যে ইন্দ্রকে হত্যা করিবে,” তাহা না বুঝাইয়া “ইন্দ্র যাহাকে হত্যা করিবে,” ইহাই বুঝাইল। সুতরাং ফল উল্টা হইল, বৃত্রই ইন্দ্রের হাতে মারা পড়িলেন।
কিন্তু ঋষির যজ্ঞ–তা কি একবারে বিফল হইতে পারে! বৃত্রের পরাক্রম এত বেশী হইল যে ইন্দ্রের ইন্দ্রত্ব যায়–দেবগণের মধ্যে এক সময় এই আশঙ্কা হইয়াছিল।
বৃত্রের সৈন্য এত বেশী ছিল যে পৃথিবীটাই সেই সৈন্যগণ ছাইয়া ফেলিয়াছিল। তাহারা ইন্দ্রের রাজ্যের পূর্ব্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকটা একেবারে দখল করিয়া বসিয়াছিল। বৃত্রের রণতরীর সংখ্যাও কম ছিল না, তাহারা সিন্ধু-নদীর সাতটা শাখা জুড়িয়া বসিয়াছিল। ইন্দ্রের অধীন লোকদের সমস্ত জল-পথ তাহারা বন্ধ করিয়া ফেলিয়াছিল। সুতরাং দেবগণের অত্যন্ত জল-কষ্ট হইয়াছিল।
বৃত্রই এই যুদ্ধে আক্রমণকারী, সে ইন্দ্রকে সম্মুখ-যুদ্ধে আহ্বান করিয়া ইন্দ্রের রাজধানীর নিকট উপস্থিত হইল।
(বাকি পেজ মিসিং!)