আমার মনে হচ্ছে বাবুভাইয়ের অল্প মাত্রায় নেশা হয়েছে। সে গুনগুন করে গাইছে–
Pretty girls are everywhere
and if you call me I will be there
কিংস্টোন ট্রায়োর বিখ্যাত গান। যে—বাড়িতে এক জন বৃদ্ধ মানুষ মারা যাচ্ছে সে-বাড়ির ছেলে ঘর অন্ধকার করে চুকচুক করে ব্লাক টাওয়ার খাচ্ছে এবং কিংদ্ষ্টোন ট্রায়ের প্রেমের গান গাইছে–ব্যাপারটা দারুণ রিপালসিভ। তার চেয়ে বড়ো কথা, বড়ো ফুফু, এসে পৌঁছেছেন। তিনি ব্যাপারটা ধরতে পারলে কেলেঙ্কারি হবে। মানুষকে অপদস্থ করার মধ্যে তিনি এক ধরনের আনন্দ পান।
ক্লাস সেভেনে আমি যখন ফেল করলাম, তখনকার কথা বললে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। আমার আশপাশে যখনই অপরিচিত কেউ থাকত, বড়ো ফুফু। কথাবার্তা পড়াশোনার দিকে টেনে এনে এক সময় বলতেন, এই দেখেন না।–টগরটা ক্লাশ সেভেন পাস করতে পারল না। অঙ্কে পেয়েছে বারো। চিন্তা করেন অবস্থাটা। ক্লাস সেভেনের অঙ্কে যোগ-বিয়োগ ছাড়া কিছু আছে?
আমি ফুফুকে সামলাবার জন্যে, যাতে হুঁট করে বাবুভাইয়ের সামনে না পড়ে যান–নিচে চলে গেলাম। ফুফু, আমাকে বারান্দার অন্ধকার কোণের দিকে নিয়ে গেলেন।
বাবার শরীর হঠাৎ করে এত খারাপ হল কী জন্যে? পরশু দেখে গেলাম ভালো মানুষ!
বয়স হয়েছে।
বয়সটয়স কিছু না। এ বাড়িতে বাবার যত্ন হয় না। এই বাড়িতে চাকর বাকরের যে যত্ন হয়, বাবার সে-যত্নটাও হয় না।
হবে না কেন?
কেন–সেটা আমি বলব কী করে? তোরা থাকিস, তোরা বুঝবি।
ফুফু, যত্ব ঠিকই হয়। শাহানা নিজে ভাত খাইয়ে দেয়।
কেন, শাহানা খাওয়াবে কেন? শাহানা কে? মেয়ের ঘরের নাতনী। লতায়পাতায় সম্পর্ক। ভাবীরা কেন খাওয়ায় না? আমি সবই বুঝি। কিছু বলি না। যখন বলব, ঠিকই বলব। কাউকে ছাড়ব না। তোরা আমাকে ভেবেছিস কি?
ফুফু, আপনি দাদাকে নিজের কাছে নিয়ে রাখেন না কেন? মেয়ের কাছে যত্ব ভালো হবে।
তাই রাখব। এই যাত্রা রক্ষা হলে নিজের কাছে নিয়ে যাব।
সেটাই ভালো হবে।
ভালো হোক মন্দ হোক তা-ই করব। এই বাড়িতে বাবার কোনো যত্ন হয়? বড়োভাবীকে দেখলাম চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আশ্চর্য! একটা মানুষ মারা যাচ্ছে, এর মধ্যে মানুষ ঘুমায় কী করে!
ফুফু, আপনি গিয়ে দাদার পাশে বসেন।
এখন আর বসাবসি।–রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। আর ছোটভাবীই-বা কোথায়? নাকি ডাকাচ্ছে বোধ হয়।
ছোটচাচী তো চিটাগাং গেছেন।
কবে গেল?
গতকাল। টেলিফোন করা হয়েছে, এসে পড়বেন।
দেখা কাণ্ড, এত বড়ো এক জন রোগী, আর বাড়ীর বউ ফন্ট করে চিটাগাং 56না वনা!
কাল দাদার শরীর ভালোই ছিল। হাঁটাহাঁটিও করেছেন।
চিটাগাং কী জন্য গিয়েছে জানিস কিছু?
ওনার ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে, মেয়ে দেখতে গিয়েছেন।
ফুফু, খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ফরিদের জন্য একটা মেয়ে দেখলাম আজ সকালে। হাইকোর্টের জাস্টিসের মেয়ে।
কেমন দেখলেন?
মন্দ না।
নওয়াব ফ্যামিলির একটা দেখেছিলেন, সেটার কী হল? খাজা ওয়াসিউদ্দিন না গিয়াসউদ্দিনের নাতনী।
ফুফু, তার উত্তর না দিয়ে হঠাৎ বললেন, এইখানে একটা মেয়ে দেখলাম হলুদ রঙের শাড়ি পরা। দাদার ঘরে বসে আছে। মেয়েটা কে?
নীলু।
নীলু, কে?
আমাদের ভাড়াটের মেয়ে, আগেও তো দেখেছেন।
কই, মনে পড়ছে না তো। মেয়েটা দেখতে মন্দ না।
হুঁ।
পড়াশোনা কী করে?
খুব ভালো ছাত্রী। চারটা লেটার পেয়েছে ম্যাট্রিকে।
তাই নাকি? কোন কলেজে পড়ে।
বখশিবাজার কলেজে পড়ে।
ডাক তো দেখি মেয়েটাকে-কথা বলি।
কী কথা বলবে? তুমি বরং দাদার ঘরে গিয়ে বস।
তুই গিয়ে বল না ফুফু ডাকছে।
এখানে আসতে বলব?
হুঁ। চেয়ার দিয়ে যা, বসি এখানে। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আছে।
চেয়ারে বসতে বসতে ফুফু ফিসফিস করে বললেন, প্ৰেম-ফ্রেম করে না তো আবার?
জানি না করে। কিনা।
করে নির্ঘাত, গরিবের মেয়েগুলি হাড়-বজ্জাত হয়।
ফুফুকে দেখে মনে হল বাবার প্রসঙ্গ আর কিছুই তাঁর মনে নেই।
নীলুকে পাওয়া গেল না। রমিজ সাহেব শুধু বসে আছেন। সারা রাতই সম্ভবত বসে থাকবেন। আমাকে বললেন, একটু মনে হচ্ছে বেটার।
আমার চোখে বেটার মনে হল না। দৃষ্টি উড়ান্ত। বেশ বোঝা যাচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
প্রদ্যোত বাবু বললেন, অক্সিজেন দিতে হবে। একটা অক্সিজেন ইউনিটের ব্যবস্থা করা দরকার। নাকি হাসপাতালে নিতে চান?
বড়োচাচা আমার দিকে তাকালেন। অর্থাৎ উত্তরটা শুনতে চান আমার মুখ থেকে। তাঁর নিজের কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নেই। আমি চুপ করে। রইলাম। বড়োচাচা বললেন, তোর বাবাকে বরং জিজ্ঞেস করে আসি, কি বলিস?
জিজ্ঞেস করে আসেন। ছোটচাচা কোথায়?
এইখানেই তো ছিল।
বড়োচাচা উঠে গেলেন। আমি দেখলাম শাহানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শাহানার এটা অভ্যেস, সে পুরুষদের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে পারে। আমি তার কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে বললাম, নীলু কোথায়?
চা আনতে গেছে।
চা হচ্ছে নাকি?
হুঁ! সবাই রাত জগবে, চা ছাড়া হবে কীভাবে?
চা হলে ভালোই হয়।
শাহানা শুকনো গলায় বলল, নীলুকে খোঁজ করছিস কেন?
আমি খোঁজ করছি না। ফুফু। ডাকছেন।
কেন?
আমি কী করে বলব?
আমি ঘর ছেড়ে বের হয়ে এলাম। শাহানা এল আমার পিছু পিছু সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই শাহানা বলল, আস্তে হাট, আমি দোতলায় যাব। একা এক ভয় লাগে।
তোমার তো ভয়টয় নেই বলেই জানতাম।
নিভে যাচ্ছে।
তাই কি?
হুঁ। তাছাড়া ছোটমামা সিঁড়ির কাছে কালোমতো কী একটা দেখেছেন।
কী? ভূত?
হতে পারে। মানুষের মৃত্যুর সময় অনেক অশরীরী জিনিস ভিড় করে।
আমি শব্দ করে হাসলাম। বারান্দা অন্ধকার। আলো থেকে আসবার জন্যেই হয়তো কিছুই চোখে পড়ছে না। শাহানা বলল, বড়ো ভয় লাগছে। তার কথা শেষ হবার আগেই কাছেই কোথাও একটা শব্দ হল। শাহানা জাপটে ধরল। আমাকে। তার গায়ে একটি হালকা মিষ্টি গন্ধ, যা শুধু মেয়েদের গায়েই থাকে। আমি চাপা গলায় বললাম, বাতাসে দরজা নড়ছে, ভূতটুত কিছু না। শাহানা সন্বিৎ পেয়ে ঝট করে সরে গেল। হুঁড়মুড় করে ছুটে গেল রান্নাঘরের দিকে। রান্নাঘরের চৌকাঠ উঁচু, প্রচণ্ড একটি হোঁচট খেল সেখানে। আকবরের মা ছুটে এল রান্নাঘর থেকে, কী হইছে? কী হইছে গো?
শাহানা এরকম করল কেন কে জানে? আমি অচেনা-অজানা কেউ না। ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলে কিছুই যায় আসে না। মেয়েরা প্রায় সময়ই মনগড়া অনেক ব্যাপারে কষ্ট পেয়ে অদ্ভুত আচরণ করে। শাহানা সেরকম মেয়ে নয়। সে খুব শক্ত ধরনের মেয়ে।
আমার ফুফু (মেজো) যখন মারা যান, তখন শাহানার বয়স মাত্র সাত। মেজে। ফুফা সে বছরই আবার বিয়ে করেন। বাবার বিয়ে মেয়েদের দেখতে নেই, কাজেই শাহানা সাময়িকভাবে মামাবাড়ি থাকতে এসে স্থায়ী হয়ে যায়। মা-মরা একটি মেয়েকে আদর-সোহাগ দেখাবার জন্যে এ বাড়ির সবাই ব্যস্ত ছিল। ছোটবেলায় শাহানার যত্ন দেখে আমি এবং বাবুভাই দারুণ ঈর্ষাবোধ করতাম।
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ সম্ভবত কষ্ট পাবার জন্যেই জন্মায়। টাকাপয়সার কষ্ট নয়, মানসিক কষ্ট। শাহানা সেই রকম একটি মেয়ে। তোর বিয়ে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। ছেলে মেডিক্যাল কলেজের ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র। জামিল হাসান। দারুণ ফুর্তিবাজ ছেলে। রাত দিন কোনো-না-কোনো বদ মতলব মাথায় ঘুরছে। এক বার মানুষের খুলি কালো সুতায় ফ্যানের হুঁকের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিল। বড়োচাচা কি একটা কাজে ঘরে ঢুকে ভিরমি খেলেন, মুখ দিয়ে ফেনা ভাঙতে লাগল।
মুক্তিযুদ্ধের সেই মাসগুলি জামিল ভাইকে নিয়ে চমৎকার কাটছিল, কিন্তু এক দিন জামিল ভাই আর আসে না। কি একটা বই আনতে টিকাটুলি গিয়েছিল, দুপুরে আমাদের সঙ্গে খাবে এরকম কথা।–কিন্তু তাঁর খোঁজ পাওয়া গেল না। একটি লোক দিনে-দুপুরে হারিয়ে গেল।
জামিল ভাইয়ের জন্যে দীর্ঘ ন বছর অপেক্ষা করলাম। আমরা ন বছর পর আবার শাহানার বিয়ে দেওয়া হল। এবারের ছেলেটি গভীর প্রকৃতির। নিচু স্বরে কথা বলে। বইপত্রের পোকা। দাদার ছেলেটিকে অত্যন্ত পছন্দ হল। কিন্তু ছেলেটির হয়তো পছন্দ হল না। শাহানাকে, কিংবা অন্য কিছু। সে চলে গেল সুইডেনে, সেখান থেকে নেদারল্যাণ্ডে। মাঝে-মধ্যে হঠাৎ চিঠি আসত তার। যোগাযোগ বলতে এই পর্যন্ত। সেও আজ প্ৰায় চার বছর হতে চলল। শাহানা অত্যন্ত শক্ত ধাঁচের মেয়ে। সে কেঁদে বুক ভাসাল না, কিছুই করল না। এমনভাবে থাকতে লাগল, যেন এটাই স্বাভাবিক। আজ এরকম করল কেন? ভয় পেয়ে যদি আমাকে জাপটে ধরে তাতে এ৩টা বিচলিত হবার কী আছে? আমি বারান্দার অন্ধকারে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাবুভাইয়ের ঘরে ঢুকে পড়লাম। বাবুভাই ঠিক আগের জায়গাতেই বসে আছে। ঘরে মিষ্টি গন্ধ। অন্ধকারে মানুষ ফিসফিস করে কথা বলে। আমি গলার স্বর অনেকখানি নামিয়ে ডাকলাম, বাবুভাই।
হুঁ।
সাবটা শেষ করে ফেলেছি নাকি?
হুঁ।
কী সৰ্ব্বনাশ।
সর্বনাশের কী আছে?
তুমি আজ একটা কেলেঙ্কারি করবে। বাবুভাই।
কেলেঙ্কারির কিছু নেই। তুই বাস, তোর সাথে কথা আছে।
আমি বসলাম। বাবুভাই শান্তস্বরে বলল, একটা ব্যাপার হয়েছে।
কী ব্যাপার?
মিনিট দশেক আগে এই ঘরে এক জন কেউ এসেছিল। সামনের চেয়ারটায় বসেছিল।
কে সে?
চিনি না। বুড়ো মতো লোক, খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
অন্ধকারে তুমি খোঁচা খোঁচা দাঁটু দেখলে কীভাবে?
কীভাবে দেখলাম জানি না, তবে দেখলাম।
কতক্ষণ ছিল সে লোক?
খুব অল্প সময়।
আমি সিগারেট ধরিয়ে হালকা স্বরে বললাম, তোমার নেশা হয়েছে। আর খেয়ো না।
নেশা-টেশা হয় নি। এ লোকটাকে দেখার পরই বোতল শেষ করেছি। এর আগে যা খেয়েছি, তাতে একটা চড়ুই পাখিরও কিছু হয় না।
মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছ?
না, ভয় পাইনি।
লোকটা কি চোখের সামনে মিলিয়ে গেল?
বাবুভাই কোনো জবাব দিল না। আমি বললাম, চা খাবে নাকি? চা হচ্ছে।
খেতে পারি।
বাম্বটা লাগিয়ে ফেলব বাবুভাই?
বাহু লোগাবি কেন?
তুমি যেমন ভূতটুত দেখা শুরু করেছ।
বাবুভাই হেসে উঠল। অন্ধকারে পা টিপে টিপে যেতে আমার নিজের একটু গা ছমছম করতে লাগল। মানুষের আদিমতম সঙ্গী ভয়, সুযোগ পেলেই কোন এক অন্ধকার গুহা থেকে উঠে আসে। আমাদের সমস্ত বোধ আচ্ছন্ন করে দেয়। বারান্দায় পা রাখতেই বড়োচাচা চেঁচিয়ে উঠলেন, কে, কে?
চাচা আমি।
বারান্দার বাতি গেল কোথায়? একটু আগে বাল্ব দিয়েছি।
আমি চুপ করে রইলাম।
একটা বাল্ব এনে লাগা তো।
লাগাচ্ছি।
বড়োচাচা সিঁড়ি দিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ততার সঙ্গে নেমে গেলেন। বড়োচাচা ভয় পাচ্ছেন। কিসের ভয়?
রান্নাঘরে নীলুকে পাওয়া গেল। বিরাট এক কেতলি চা বানিয়ে চিনি ঢালছে।
নীলু।
জ্বি।
মগবাজারের ফুফু, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান। একতলার বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন, মোটামতো।
জ্বি, আমি চিনি।
সে চায়ের কেতলি হাতে উঠে দাঁড়াল। আমি বললাম, আকবরের মার কাছে দাও না, নিয়ে যাবে।
আকবরের মা নিচে গেছে। আমি নিতে পারব।
বারান্দা খুব অন্ধকার, তাছাড়া ভূত দেখা গেছে। বাবুভাই একটা ভূত দেখেছে–বুড়োমতো একটা লোক, খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
নীলু কিছু বলল না। হঠাৎ আমি লক্ষ করলাম তার চোখ ভেজা।
কী হয়েছে রে?
কিছু হয় নি।
চোখে পানি। কেউ কিছু বলেছে নাকি?
জ্বি না। কে আবার কি বলবে?
হঠাৎ আমার মনে হল মগবাজারের ফুফুর যাদি নীলুকে পছন্দ হয়, তাহলে মন্দ হয় না। ফরিদ ভাই ছেলেটি ভালো। নীলু, সুখীই হবে। তাছাড়া সুখী হবার প্রধান কারণ হচ্ছে টাকা পয়সা, যা ফুফুদের প্রচুর আছে।
নীলু বললো, ফুফু, আমাকে কী জন্যে ডাকছেন জানেন?
জানি। তাঁর ছেলের জন্যে মেয়ে দেখছেন। সুন্দরী মেয়ে হলেই তিনি কথাবার্তা বলে দেখেন চলবে কিনা।
নীলু, শান্তস্বরে বলল, আমার মতো গরিব মেয়েদের আপনার ফুফু দেখবেন ঠিকই কিন্তু বিয়ে দেবার সময় বিয়ে দেবেন তাদের মতো একটা বড়োলোকের মেয়ের সঙ্গে।
আমি বেশ অবাক হলাম। কলেজে উঠে মেয়েটি কথা বলতে শিখেছে। নীলু চায়ের কেতলি হাতে নিচে নেমে গেল।
দাদার ঘরে ঢুকেই একটা হালকা অথচ তীক্ষ্ণ গন্ধ পাওয়া গেল। মৃত্যুর গন্ধ। আমার ভুল হবার কথা নয়। মা যে-রাতে মারা যান, সে-রাতে আমি মৃত্যুর গন্ধ পেয়েছিলাম। তিনি তখন দিব্যি ভালো মানুষ। অসুখ সেরে গেছে। দুপুরবেলা বারান্দায় খানিকক্ষণ বসেও ছিলেন। সন্ধ্যাবেলা খবরের কাগজ পড়তে চাইলেন। খুঁজেপেতে ভেতরের দুটি পাতা পাওয়া গেল। আমি দেখলাম তিনি মন দিয়ে সিনেমার পাতা দেখছেন; যে-রোগী সিনেমার পাতা পড়ে তার রোগ সেরে গেছে। ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমি বিচলিত বোধ করতে লাগলাম। কেমন যেন অন্য রকম একটা গন্ধ ঘরে। অত্যন্ত সূক্ষ্ম কিন্তু তীক্ষ্ণ। মা বললেন, পাবদা মাছ খেতে ইচ্ছে করছে। টগর, তুই দেখিস তো পাবদা মাছ পাওয়া যায় কিনা।
আমি তার জবাব না দিয়ে বললাম, একটা গন্ধ পাচ্ছি মা?
কি রকম গন্ধ?
অন্য রকম, অচেনা।
অডিকেলন দিয়েছি। কপালে, তার গন্ধ বোধহয়।
অডিকেলনের মিষ্টি গন্ধের সাথে তার মিল আছে, কিন্তু অডিকেলন নয়। এ অন্য জিনিস। একটা অচেনা গন্ধ।