অমরনাথ যখন বাদলকে নিয়ে বেরোলেন, তখন বিকেল পাঁচটা। গ্রীষ্মের শুরু। বঙ্গোপসাগরের বিখ্যাত বাতাস এসে কলকাতাকে ভাসিয়ে দেয়। আকাশে ধোঁয়া নেই। বাড়ির ছাদে ছাদে ছেলেদের ঘুড়ি ওড়াবার খুব হুল্লোড়। মহাত্মা গান্ধী তখন কলকাতায় এসেছেন।
অমরনাথ পরেছেন ফিনফিনে কোঁচানো ধুতি ও কলিদার পাঞ্জাবি, কাঁধে উড়ুনি, পায়ে নিউকাট পাম্পশু, হাতে বেতের ছড়ি। চুল এখনও কালো, তবে গোঁফে পাক ধরেছে। শিশিরবাবুর মতনই মাথার চুল ঘাড় পর্যন্ত থাকে নামানো। জামার ঘড়ি-পকেটে মস্ত বড় গোল সোনার ঘড়ি। বাদলকে তার মা হাফপ্যান্ট ও সাটিনের জামা পরিয়ে দিয়েছেন, মাথার চুল পাতা কেটে আঁচড়ানো। সে মহা উৎসাহে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে অমরনাথের পাশে পাশে। অমরনাথ বললেন, উঁহু, ও রকম করবে না, সব সময় আমার হাতের এই আঙুলটা ধরে থাকবে।
বড় রাস্তার ওপর বাদলের বাবা চিররঞ্জন কথা বলছিলেন আর একটি লোকের সঙ্গে। অমরনাথের সঙ্গে ছেলেকে দেখে একটু অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, বড়বাবু, কোথায় চললেন! গুরুদাসে নাকি?
গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্সের দোকানে প্রায়ই বিকেলের দিকে গল্প করতে যেতেন বড়বাবু। ওখানে জীবিতকালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আসতেন প্রায়ই।
অমরনাথ বললেন, না হে, একটু দক্ষিণে যাব। তোমার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছি। আমি আবার রাত্তিরে ভালো চোখে দেখতে পাই না তো! একটু দেরি হলে চিন্তাটিন্তা কোরো না।
অমরনাথের দৃষ্টিশক্তি খুবই ভালো, বইপড়ার সময় একটা রিমলেস চশমা ব্যবহার করেন মাত্র, কিন্তু তিনি সামান্য রাতকানা।
মোড়ের মাথায় এসে বড়বাবু প্লেয়ার্স নাম্বার থ্রি সিগারেটের একটা টিন কিনলেন। ধপধপে সাদা এই সিগারেটের টিন খালি হয়ে যাবার পর বাড়ির মেয়েদের কাছে খুব প্রিয় ছিল তখন। ঢাকনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভেতরের টিন ফয়েল কেটে অমরনাথ প্রথমে পুরো টিনটার গন্ধ নিলেন নাকে, তারপর একটা সিগারেট বার করে ধরালেন। ধোঁয়া ছেড়ে হঠাৎ উদাস ভাবে তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে। অমরনাথ আজ বেশ অন্যমনস্ক।
বাদলের ইচ্ছে ছিল ঘোড়ারগাড়ি চড়ার, কিন্তু বড়বাবু তা নিলেন না। বাসের জন্য দাঁড়ালেন কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে। বৃষ্টি না হলে বিকেলের দিকে হুডখোলা দোতলা প্রাইভেট বাসে ভ্রমণ করা তখন চমৎকার বিলাসিতা। সেই রকম একটা বাসেই ওপরে জায়গা পাওয়া গেল। বাদলের উত্তেজনার শেষ নেই। এ রকম ভাবে এর আগে আর সে কলকাতায় বেড়ায়নি। শহরটাকে মনে হয় যেন মায়াপুরী। দু’পাশের বিরাট বিরাট বাড়ির মাঝখান দিয়ে রাস্তা–চলন্ত বাসের ওপর দিয়ে দেখতে দেখতে মনে হয়, এ-সবই যেন ছবির বইতে দেখা জগৎ। সদ্য গ্রাম থেকে আসা বাদলের চোখে ট্রামগুলোকে মনে হয় ছোট ছোট স্টিম লঞ্চের মতন।
চৌরঙ্গিতে সাহেব-মেমের ভিড়ই বেশি। ময়দানে দেখা যায় অশ্বারোহী শ্বেতাঙ্গ নর। ইলেকট্রিক অফিসের মাথায় উজ্জল গ্লোব বহু দূর থেকে চোখে পড়ে। মেট্রো সিনেমায় আলো জ্বলছে, চওড়া থেকে শুরু হয়ে যাওয়া লম্বাটে কয়েক থাক আলো রয়েছে হলের মাথায়, তখনকার দিনে এর নামই ছিল মেট্রো প্যাটার্ন, লোকে আংটি তৈরি করত এই ডিজাইনে। পাশেই হোয়াইটওয়ে লেড ল’র বিশাল দোকান। কার্জন পার্কের দিকে সার বেঁধে দাঁড়ানো গাড়ি। বালকের বিস্মিত চোখে এইসব দৃশ্যের ছাপ বুকে এঁকে নেয়। অমরনাথ চুপচাপ বসে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছেন।
বাড়িটার সামনে লোহার গেট, সেখানে নোটিস ঝোলানো, কুকুর হইতে সাবধান! কিন্তু গেটের ওপাশের বাগানে কুকুর কিংবা মানুষজনের কোনও চিহ্ন নেই। বাদল বানান। করে বাংলা পড়তে পারে। অমরনাথ দু বার চেঁচিয়ে ডাকলেন, সুরেশ্বর, সুরেশ্বর! কোনও সাড়া নেই। অমরনাথ তখন হাতের ছড়িটা দিয়ে লোহার গেটে ঠং ঠং করে আওয়াজ করতে লাগলেন। একটু বাদেই একজন বৃদ্ধ চাকর এসে উঁকি মেরে বলল, পঁড়ান, কুকুর বেঁধে আসি। এই প্রথম একটি কুকুরের গম্ভীর হিংস্র ডাক শোনা গেল, বাদল গুটিসুটি মেরে দাঁড়াল বড়বাবুর পেছনে।
লোহার গেট পেরিয়ে একটি ছোট বাগান। তার ঠিক মাঝখানে খানিকটা ঘেরা জায়গায় জল, সেখানে খেলা করছে লাল-নীল মাছ। জলের ওপরে একটা সাদা পাথরের পরি ডানা মেলে আছে, যেন এক্ষুনি উড়ে যাবে। বাদল সে-দিকে ছুটে যাচ্ছিল, অমরনাথ বললেন, উঁহু ও-দিকে নয়, ভেতরে এসো!
বসবার ঘরটা মস্ত হলঘরের মতন। দেওয়ালে দেওয়ালে অনেক ছবি। অধিকাংশই ফ্যামিলি পোর্ট্রেট। এ ছাড়া পঞ্চম জর্জ, এক হাতে সীতাকে ধরে রেখে অন্য হাতে রাবণ জটায়ু বধ করছেন এবং কনস্টেবলের আঁকা প্রকৃতিদৃশ্যের কপি। ছাদ থেকে ঝুলছে মস্ত বড় ঝাড়লণ্ঠন, কিন্তু সদ্য-স্থাপিত ইলেকট্রিক বালবই আলো দিচ্ছে। কল টিপলেই জল পড়ে এবং সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে–এই বিস্ময়ের ঘোর তখনও পুরোপুরি কাটেনি।
একজন মাঝবয়সি লোক ঘরে ঢুকলেন। সিল্কের লুঙ্গি ও সিল্কের ফতুয়া পরে আছেন, মাথায় সম্পূর্ণ টাক। মাথায় একটাও চুল নেই, এ রকম মানুষ বাদল আগে কখনও দেখেনি। বাদল বড়বাবুর চোখের দিকে তাকাল, বড়বাবু ইঙ্গিত করলেন। অর্থাৎ ইনিও ব্রাহ্মণ, এঁকে প্রণাম করতে হবে। অব্রাহ্মণ বয়স্ক ব্যক্তিদেরও তখন ব্রাহ্মণ শিশুরা প্রণাম করে না। বড়বাবু বললেন, ইটি আমার মেজ শালার ছেলে। সুরেশ্বর, ব্যস্ত ছিলে নাকি? হঠাৎ এসে পড়লাম।
টাকমাথা ব্যক্তিটি অমরনাথকে প্রণাম করে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আজ্ঞে না না, কিচ্ছু ব্যস্ত ছিলাম না। আপনি পায়ের ধুলো দিয়েছেন, এ তো আমাদের সৌভাগ্য! তবে একটু আগে থেকে যদি খবর দিয়ে আসতেন, তা হলে জাফর আলি খাঁ সাহেবকে বলে রাখতাম, একটু গানবাজনা করা যেত। আপনি এখনও চর্চা রেখেছেন তো?
অমরনাথ উদাসীন ভাবে বললেন, না, ও-সব চুকে গেছে।
সুরেশ্বর বললেন, সে কী! গোয়ালিয়ারে সেই সেবার আপনার মুখে যে আলাহিয়া বিলাবল শুনেছিলাম, এখনও কানে লেগে আছে।
সে নেশা আমার কেটে গেছে! সুরের চর্চা করে কেন মানুষ, আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য তো? আমার সে-সব কিছু হল না। সুরের চর্চা করেছিলুম শুধু গলা দিয়ে, আর কিছু না শুধু কণ্ঠস্বরের খেলা!
ও কথা বলছেন কেন! আনন্দ পাওয়াটাই বড় কথা। যে আনন্দ–
সুরেশ্বর হঠাৎ বাদলের দিকে ফিরে বললেন, খোকা, তুমি এখানে চুপটি করে বসে আছ কেন? তুমি ওপরে চলে যাও না! তোমার বয়সি আরও ছেলেপুলে আছে–খেলা করবে না?
বাদল লাজুক, সে একা একা ওপরে যাবে না। সে তার ছোট্ট শরীরে একটু মোড়ামুড়ি দিল।
অমরনাথ বললেন, সুরেশ্বর, আমিও একটু উপরে যাব। তোমার মা এখন কেমন আছেন?
সুরেশ্বরের মুখে সামান্য একটু বিস্ময়ের ছায়া খেলেই লুকিয়ে গেল। বললেন, মা? এই এক রকমই, মানে–
এখন এখানেই আছেন? এই সপ্তাহে তোমার এখানে আনানো হবে শুনেছিলাম।
হ্যাঁ, কাল এসেছেন!
আমি একটু দেখা করব। দেখা করা যাবে? আমি সেই জন্যই এসেছি।
দেখা করবেন। তা বেশ তো! দেখছি, ঘুমিয়ে আছেন কিনা।
শোনো! উনি বাইরের লোক দেখলে বিরক্ত হন না তো?
আপনি তো বাইরের লোক নন! অন্তত মার কাছে আপনি…
সেটা যদি আমাকে চিনতে পারেন–চিনতে পারেন এখন সবাইকে? স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে?
মা’র স্মৃতিশক্তি এত ভালো যে, বিশ্বাসই করা যায় না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মা’র অনেক সময় কাছাকাছি সময়ের ঘটনা মনে থাকে না–অথচ বহু পুরনো ঘটনা এমন মনে আছে…কিন্তু কখন কথা বলবেন, কখন চুপ করে থাকবেন, তার কোনও ঠিক নেই! দাদা মারা যাবার পর সেই যে মাথাটা কী রকম হয়ে গেল–
চলো, একবার যাই–
দোতলার সিঁড়ির পাশের ঘরেই বিরাট পালঙ্কে শুয়ে আছেন মন্দাকিনী। ঠিক শোয়া নয়, তিন-চারটে বালিশে হেলান দিয়ে বসা, চাদর দিয়ে শরীর ঢাকা। ঘরের সব জানলা। বন্ধ, অস্বাভাবিক উজ্জ্বল একটা আলো জ্বালানো রয়েছে। ঘরের সব আসবাবপত্রে ঐশ্বর্যের ঝকঝকে চিহ্ন। একটা কাঁচের আলমারি-ভরতি দামি দামি জার্মান পুতুল। কালো মেহগনি কাঠের তৈরি আর একটি আলমারির মাথায় একটি অপরূপ ঘড়ি, প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর তার ভেতর থেকে একটা কোকিল বেরিয়ে এসে ডেকে যায়। ইংল্যান্ডের ডার্বি লটারির ফাস্ট প্রাইজ সাড়ে সাত লাখ টাকা একবার পেয়েছিলেন। মন্দাকিনী।
বিছানার ওপর আধাশোয়া তার চেহারা দেখে ঠিক মানুষ বলে মনে হয় না। মাথা-ভরতি ধপধপে সাদা চুল। অতিরিক্ত ফরসা ও বিবর্ণ মুখখানা মনে হয় মোমের তৈরি, ঠোঁটদুটি অস্বাভাবিক রকমের লাল। সব মিলিয়ে, যেন একটা অপ্রাকৃত পুতুল। অবিশ্বাস্য শীর্ণ একখানা হাত বুকের ওপর রাখা, সেই হাতে চারখানা আংটি, বহুমূল্য পাথর বসানো। মন্দাকিনী চোখ বুজে আছেন।
অমরনাথ সুরেশ্বরের সঙ্গে সেই ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনে ঘর ভরে গেল। বেশ কয়েক জন মহিলা, কয়েকটি শিশু। সবাই প্রণাম করল অমরনাথকে। বাদল প্রণাম করল তাদের। একজন রূপসি মহিলা বাদলের হাত ধরে বললেন, বাঃ, কী সুন্দর ছেলেটি! এই, এই, মুখ নিচু করে আছ কেন? তাকাও আমার দিকে, তোমার নাম কী?
সেই ঘরের মধ্যে সবাই বেশ স্বচ্ছন্দে গোলমাল করছে।
অমরনাথ সুরেশ্বরকে জিজ্ঞেস করলেন, ঘুমোচ্ছন নাকি? তা হলে এখন যাই বরং—
সুরেশ্বর বললেন, আপনার বিব্রত হবার কিছু নেই। মা আজকাল প্রায় একদমই কানে শুনতে পান না! জেগেই আছেন বোধহয়।
অমরনাথের মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। খুব নিরাশ হয়ে গেলেন মনে হয়। আস্তে আস্তে বললেন, কিন্তু, আমি যে ওঁর কাছে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।
কী কথা? আমাকে বলুন না!
তুমি পারবে না। সেসব শুধু উনিই জানেন।
ঠিক আছে, মাকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শান্তি, তুমি মার পাশে একটু বসো তো!
সেই রূপসি মহিলা বসলেন মন্দাকিনীর মাথার কাছে একটা চেয়ার নিয়ে। অমরনাথ চাঁদরের ওপর দিয়েই মন্দাকিনীর পাদুটি স্পর্শ করলেন। চোখ না মেলেই মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করলেন, কে?
ওঁর গলার স্বর কিন্তু আশ্চর্য রকম পরিষ্কার এবং তীক্ষ্ণ। বয়সের কোনও জড়তা নেই।
অমরনাথ বললেন, বড়মা, আমি অমর!
মন্দাকিনীর চোখ বোজাই রইল। মাথার কাছে বসা সেই মহিলা মন্দাকিনীর একেবারে কানের কাছে মুখ নিয়ে কু দেবার মতন করে বললেন, মা, অমরদাদা এসেছেন। অমরদাদা!
মন্দাকিনী এবার চোখ খুলে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন, একটুও মুখ ফেরালেন না। তারপর হাত দিয়ে পাশে কী যেন খুঁজতে লাগলেন। শান্তিলতা তাড়াতাড়ি যে জিনিসটা মন্দাকিনীর হাতে তুলে দিলেন, সেটা দেখে বাদলের মনে হয়েছিল, হাতল লাগানো গোল আয়না, কিন্তু আসলে সেটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস। সেই ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে মন্দাকিনী অনেকক্ষণ ধরে দেখলেন অমরনাথকে। তারপর অপ্রত্যাশিত ভাবে বলে। উঠলেন, অমর, তুই বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করিসনি কেন? আঁ, তোর চোখের চামড়া নেই? নিমকহারাম!
অমরনাথ লাজুক ভাবে ঘরের সবার দিকে চকিতে তাকালেন। মন্দাকিনীর পায়ের কাছে বসে-থাকা ওই বিশাল চেহারার পুরুষটিকে তখন শিশুর মতন লাগছিল। পঁয়তিরিশ বছর আগেকার ঘটনা। অমরনাথ বিয়ে করেছিলেন প্রায় পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর আগে–সেই সময়কার ব্যাপার নিয়ে কেউ এখন অভিযোগ করতে পারে, তিনি কল্পনা করতে পারেননি। তার বিয়ে হয়েছিল অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে–সেকথা এখন বলা যায় না। তা ছাড়া এই প্রশ্ন মন্দাকিনী তার আগেও কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছেন। অমরনাথ কোনও উত্তর দিলেন না।
মন্দাকিনী আবার জিজ্ঞেস করলেন, আজ বউকে সঙ্গে এনেছিস? কোথায় সে? পেন্নাম করেছে?
অমরনাথ মৃদু গলায় বললেন, পূর্ণিমা মারা গেছে।
কাকাতুয়া পাখি যে রকম চিৎকার করে ওঠে, সেই রকম ভাবে মন্দাকিনী চেঁচিয়ে উঠলেন, কী? কী বললি?
তখনও ম্যাগনিফায়িং গ্লাস চোখের সামনে রাখা। সোজা তাকিয়ে আছেন অমরনাথের মুখের দিকে। খুব সম্ভব ঠোঁট নাড়া দেখে তিনি কথা বোঝার চেষ্টা করেন, এখন পারছেন না।
শান্তিলতা আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, উনি বললেন, ওঁর স্ত্রীর নাম পূর্ণিমা, তিনি বেঁচে নেই। হ্যাঁ, হ্যাঁ, মারা গেছেন! পাঁচ-ছ’ বছর আগে।
মন্দাকিনী আবার চুপ। কথাটা তার মগজে ঢুকতে কিছুক্ষণ সময় লাগল যেন। তারপর আবার সেই রকম তীক্ষ্ণ গলায় জানালেন, ভালোই হয়েছে! বেঁচে গেছে। মেয়েটা! ওর মতো একটা বাউন্ডুলে, অলপ্পেয়ে, লক্ষ্মীছাড়ার হাতে পড়েছিল–
ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বাদল। তার অমন গম্ভীর রাশভারী পিসেমশাইকে কেউ অমন ভাবে ধমকাতে পারে, সে কখনও কল্পনাই করতে পারেনি।
পৃথিবীতে কত আশ্চর্য ব্যাপার আছে!
ছেলেপুলে কিছু হয়েছিল? না বংশনাশ করবি?
একটু ইতস্তত করে অমরনাথ উত্তর দিলেন, আমার একটি ছেলে আছে। হাজারীবাগের বোর্ডিং ইস্কুলে পড়ে।
চাঁদরের তলা থেকে আর একটি হাত বার করে মন্দাকিনী অন্য কী যেন খুঁজছেন। শান্তিলতা তাড়াতাড়ি এগিয়ে দিলেন একটা পিকদানি। মন্দাকিনী নিঃশব্দে কী ফেললেন তাতে, মনে হয় টুকটুকে লাল রক্ত, অথবা পানের পিকও হতে পারে। কেন না, তিনি সঙ্গে সঙ্গে আর এক খিলি পান মুখে দিলেন। তারপর আর একটু উঁচু হয়ে বসে বললেন, তুই কাকে যেন বিয়ে করেছিলি?
তার নাম ছিল পূর্ণিমা।
না-না, কাকে বিয়ে করেছিলি যেন, ঠিক মনে পড়ছে না।
পূর্ণিমা ফুলবাড়ির মুখুজ্যের মেয়ে!
চুপ! মনে পড়েছে। তুই বিধবা বিয়ে করেছিলি! ঠিক?
হ্যাঁ।
শান্তিলতাকে আর বলে দিতে হল না, মন্দাকিনী ঠোঁট নাড়া দেখে নিজেই প্রায় সব বুঝতে পারছেন। ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে তিনি কঠোর ভাবে বললেন, তুই আমার বিছানা ছুঁয়েছিস কেন? যা চলে যা! বিদায় হ!
অমরনাথ এই প্রথম হাসলেন। প্রফুল্ল মুখে বললেন, বড়মা, আমি একটি মুসলমান মেয়েকেও বিয়ে করেছিলাম।
মন্দাকিনী শান্তিলতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী? কী বলল?
শান্তিলতা অবনত মুখে বসে রইলেন। বলতে পারলেন না। মন্দাকিনী আবার তাড়া দিলেন, বউমা, কী বলল ওই নচ্ছারটা? এই, তুই কাছে এগিয়ে আয়, নিজে বল আমার কানের কাছে!
অমরনাথ দ্বিতীয় বার কথাটা উচ্চারণ করার পর মন্দাকিনী বুঝতে পেরে চোখ বুজলেন। আস্তে আস্তে বললেন, বেরিয়ে যা! দূর হয়ে যা! এক্ষুনি যা!
অমরনাথ বললেন, না, আমি যাব না।
এই সন্টু! একে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেয় কর! এই আপদটাকে কেন ঘরে ঢুকতে দিয়েছিস!
বড়মা, আমি যাব না!
সন্টু! রামপিয়ারীকে ডাক! একে দূর করে দে বাড়ি থেকে!
বড়মা, আমি যাব না!
সুরেশ্বর দাঁড়িয়ে আছেন দরজার কাছে। তারও মুখে একটু একটু হাসির চিহ্ন। এইসব কথাবার্তা তিনি আগেও শুনেছেন, দেখেছেন এই দৃশ্য।
তুই কেন এসেছিস? টাকা! টাকা চাস আমার কাছে? আমি কারোকে এক পয়সা দেব না। আমি আরও অনেক দিন বাঁচব। কম্পানির কাগজ সব উইল করে রামকৃষ্ণ মিশনকে দিয়ে যাব–গয়নাগাঁটিগুলো হামানদিস্তে দিয়ে খুঁড়িয়ে রাস্তার ধুলোয় মিশিয়ে দেব।
বুঝলি! আমার কাছ থেকে একটা পয়সাও পাবে না।
আমি টাকা চাইতে আসিনি! বড়মা, আমি তোমার কাছ থেকে কি কোনও দিন টাকাপয়সা চেয়েছি? ভগবানের ইচ্ছেয় সে রকম অবস্থা আমার কখনও হয়নি।
কিছু পাবি না! দূর হয়ে যা!
আমি যাব না!
মন্দাকিনী আবার ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা তুলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখলেন অমরনাথকে। তারপর হঠাৎ খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, তুই কেন এসেছিস?
আমি তোমার কাছে আমার মায়ের কথা শুনতে চাই।
কী?
আমাকে আমার মায়ের কথা বলো।
মা? তোর আবার মা কে? আমিই তো তোর মা! অকৃতজ্ঞ, কুলাঙ্গার! তুই আমার বুকের দুধ খাসনি? তিন তিনটে বছর ধরে আমি তোকে ঘুম পাড়াইনি প্রত্যেক রাত্তিরে! গু-মুত পরিষ্কার করেছি পর্যন্ত। তারপর ডানা গজাতেই পাখি উড়ে গেল। আমার আর খোঁজ করেছিলি? সেবার যখ আমি মরতে বসেছিলুম, একবার এসেছিলি? এখন আসা হয়েছে মায়ের জন্য দরদ দেখাতে।
বড়মা, তোমার কাছে আমি আমার নিজের মায়ের কথা শুনতে এসেছি।
কী বলছিস, কী? আমি কানে শুনতে পাই না, জানিস না? শুয়োরের মতন গাঁক গাঁক করে চাঁচাতে হবে না তাই বলে-মুলুক সুদ্ধ লোককে জাগিয়ে! আরও কাছে আয়, আমার চোখের দিকে চোখ রেখে বল
ক’দিন ধরে আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মাকে কখনও দেখিনি, তুমি ছাড়া আমার মায়ের কথা এখন আর কেউ জানেও না! তুমি বলো তো, কী রকম দেখতে ছিল তাকে? খুব রাগী ছিল? কিংবা খুব জেদি ছিল?
হাত দিয়ে বিছানার একটা অংশ দেখিয়ে দিয়ে বললেন, বোস এখানে! তোকে দেখলে আমার গা জ্বলে! কেন আসিস?
মন্দাকিনী তার শীর্ণ হাতখানা রাখলেন অমরনাথের গায়ে। আস্তে আস্তে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, জন্মরাত্তিরেই মা মারা গেলে, সেই ছেলে কখনও বাঁচে? লাখে একটা বাঁচে কিনা সন্দেহ। তোকে বাঁচিয়েছিল এই বামনি, বুঝলি? আমার বাবা বলতেন, ও ছেলেকে জলে ডোবালে কিংবা আগুনে পোড়ালেও মরবে না! ও অমর! তা স্বাস্থ্যটি তো এখনও দিব্যি আছে দেখছি, কত বয়স হল?
ঊনষাট!
আমার রত্নেশ্বর বেঁচে থাকলে এই বয়স হত। সে তো দিব্যি আমার আগেই ড্যাং ড্যাং করে চলে গেল! একটু চক্ষুলজ্জা পর্যন্ত নেই! তা সে মরল কেন, তার বদলে তুই যেতে পারলি না?
আমার ও রকম নাম রেখেছিলে কেন?
রত্নেশ্বর আর তুই একবয়সি। দেড় মাস আগে পরে জন্ম। তোর মা চোখ বোজার আগে আমার হাত ধরে বলেছিল–মন্দা, তোর ছেলে যদি বাঁচে, তা হলে আমার ছেলেও যেন বাঁচে–
বড়মা, ও-সব জানি। তুমি আমার জন্মের আগের কথা বলো।
কতকাল আগের কথা, সেকি আমার মনে থাকে?
যেটুকু মনে পড়ে।
কেন, হঠাৎ শুনতে চাইছিস কেন?
কদিন ধরে খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা, আমার মাকে দেখতে কেমন ছিল?
সরো আমার থেকেও লম্বা ছিল। তবে তোর গায়ের রং পেয়েছিস বাপের কাছ থেকে। সরোর রং ছিল একটু চাপা। তোর বাপ তো তোদের খোঁজও নিত না। সরো মারা যাবার খবরও পায়নি। আমার মনে আছে, তোর যখন দেড় বছর বয়স, তখন তোর হতচ্ছাড়া বাপ এল একদিন। তুই তখন আমার কোলে, তোর বাপ বলল, ইটি আপনার পুত্তুর বুঝি! সে আবার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলত তো! মরে যাই, মরে যাই! ঝাটা মারি ও রকম পুরুষমানুষের মুখে!
আমার বাবার কথা আমি জানি! তুমি আমার মায়ের কথা বলো। চোখদুটি কী রকম ছিল?
কী আর বলব! মুখপোড়ারা একটা ছবিও তুলে রাখেনি তার! একটা চিহ্ন পর্যন্ত নেই! ১৪.
অমরনাথ পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ভেলভেট-মোড়া বাক্স বার করলেন। তার মধ্যে থেকে অনেকগুলো কাগজের পরত খোলার পর বেরিয়ে এল একটা বহুকালের পুরনো বিবর্ণ কাগজ। সেটার ওপরে একটি নারীর পায়ের ছাপ আঁকা। অমরনাথ সেটা সাবধানে তুলে ধরে বললেন, এই যে, আমার মায়ের শুধু এইটুকু চিহ্ন আছে আমার কাছে। তুমিই দিয়েছিলে। আচ্ছা বড়মা, ছাপটা কি বিয়ের দিন তোলা হয়েছিল, না অন্য কোনও সময়ে?
দলিল পরীক্ষা করার মতন মন্দাকিনী ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে কাগজটা দেখলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ ফিরিয়ে বললেন, আমার মনে নেই। আমি জানি না।
তুমিই তো এটা আমাকে দিয়েছিলে। তুমি জানো না?
মন্দাকিনী খুব জোরে কাশতে কাশতে পিকদানিটা তুলে নিলেন। আবার তাতে ফেললেন রক্তের মতন কিছু। যখন মুখ তুললেন, দেখা গেল তার চোখে জল।
অমরনাথ একটু অপেক্ষা করলেন। চোখের জল তখনও থামছে না দেখে পকেট থেকে রুমাল বার করে মুছিয়ে দিলেন মন্দাকিনীর মুখ। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাঁপানি কি বেড়েছে?
চুপ কর তো হতচ্ছাড়া! দরদ দেখাতে হবে না।
বড়মা, বলো, এই ছাপটি নিশ্চয়ই–
হ্যাঁ, যা ভাবছিস তাই। সরোজিনীকে চিতায় তোলার পর তার পায়ে আলতা লাগিয়ে এই ছাপ তোলা হয়েছিল। আমার ভাই বিষ্টু বুদ্ধি করে তুলেছিল। তুই তখন একরত্তি ছেলে; আমি তোর গায়ে গরম জলের সেঁক দিচ্ছি, বাঁচানো যাবে কিনা ঠিক নেই, বিষ্ণু শ্মশান থেকে ফিরে বলল, দিদি, এর মাথায় এই কাগজটা ছুঁইয়ে দেও!
আমার মায়ের সঙ্গে তোমার এত ভাব ছিল কী করে? আমার মা তো গরিবের মেয়ে ছিলেন–মামাবাড়িতে মানুষ।
তুই তখন একরত্তি ছেলে, এইটুকু–এখন লম্বা চওড়া জোয়ান হয়ে মুখে খই ফুটছে।
অমরনাথ হাসতে হাসতে বললেন, এখনও জোয়ান বলছ? এখন তো বুড়ো হয়ে গেছি! তুমি অনেক দিন পরে দেখছ।
মন্দাকিনী রেগে উঠে বললেন, বুড়ো? সেদিনের ছেলে! এখনও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, দুপদাপ করে হামাগুড়ি দিতিস! বড্ড নোলা ছিল তোর, খেজুরের গুড় খেতে ভালোবাসতিস খুব। গুড় খেয়ে পেটে এত বড় বড় কিরমি হল–
বড়মা, তোমার এসব কথাও মনে আছে?
আমার সব মনে আছে। আমি কিছু ভুলি না।
তা হলে, আর একটা কথা বলো তো! আমার জন্যই কি আমার মা মারা যায়?
কথার ছিরি দেখো ছেলের? এতদিনেও ঘটে একটু বুদ্ধি হল না? ছেলে কখনও মাকে মারে! তুই তোর মাকে মারবি কেন, তুই সারা জীবন আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিস!
মন্দাকিনী অতিকষ্টে পাশ ফিরলেন। রোগা হাতখানি ছোঁয়ালেন অমরনাথের গালে। খুব নরম ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, হারে, হঠাৎ এসব কথা মনে হচ্ছে কেন?
জানি না! এমনিই—
শোন, রোজ রাত্তিরে ইসবগুলের ভুসি জলে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খাবি। তাতে শরীর ঠান্ডা থাকবে।
আমার মা কি খুব কষ্ট পেয়েছিল?
কখন?
আমার জন্মের সময়? না হলে, আমার জীবনটা এ রকম হয়ে গেল কেন?
দোতলার চওড়া বারান্দায় বাচ্চারা তখন খেলা শুরু করে দিয়েছে। বাদলকেও টেনে নিয়ে গেছে। চোখ বেঁধে কানামাছি খেলা। কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছে– ছুঁয়েই নাম বলতে হবে। বাদল ওদের কারওর নাম জানে না–ওরাও বাদলের নাম জানে না। বাদলের চেয়ে বছর তিনেক বয়সে বড় একটি ছেলে বলল, এই, তোর নাম কী রে? হোয়াট ইজ ইয়োর নেম?
মাই নেম ইজ বাদলরঞ্জন মুখার্জি। আই রিড ইন ক্লাস টু।
কী নাম বললি? বা-দ–অল! না বাদোল! তুই বুঝি বাঙাল?
অমনি আর সব ছোট ছেলেমেয়েরা চেঁচিয়ে উঠল, বাঙাল! বাঙাল!
বড় ছেলেটি বলল, এই চুপ! জ্যাঠাইমা বকবে! বাদল আবার কী নাম? ও রকম নাম তো চাকরদের হয়।
বাদলের মনে খুব আঘাত লাগল। অনেক কিছু প্রতিবাদ করবে ভেবেও সে শুধু বলল, মোটেই না!
যাকগে, বুঝেছি, বাঙালদের ও রকম নাম হয়। তোর ভালো নাম কী? তোর ভালো নাম নেই?
বাদলের একটাই নাম। ডাকার সময় বাড়ির লোক বলে বাদলা! কিন্তু সেটা তো ওদের জানানো যায় না। সে মাথা নাড়ল দু’দিকে!
এ মা, ডাক নাম আর ভালো নাম এক? আমাদের সক্কলের দুটো করে নাম। এই তো, ওর নাম গগনেন্দ্র আর ডাক নাম হেবো, ওর নাম শঙ্করী আর ডাক নাম চুটকি, এর নাম পার্থসারথি আর ডাক নাম পলতা, আর এই যে, রেণু, তোর ভালো নাম কী রে?
একটা তিন-সাড়ে তিন বছরের পুঁচকে মেয়ে আঙুল চুষতে চুষতে বলল, ইন্দ্রাণী!
সেই ছেলেটি বলল, ও তো আমার আপন বোন নয়, তাই ভালো নাম আমি জানি না। রেণু আমার মামাতো বোন! ওরা হাতিবাগানে থাকে, বেড়াতে এসেছে। তুই হাতিবাগান চিনিস?
বাদল বলল, হ্যাঁ, চিনি।
ঠিক বলছিস? হাতিবাগানে ক’টা হাতি আছে বল তো!
একটাও না! ইল্লি:আর টকের আলু! রোজ সন্ধেবেলা ওখানে হাতি বেরোয় কিছু জানে না!
রেণু নামের মেয়েটি চোখ বড় বড় করে বলল, হ্যাঁ, দুটো হাতি আছে, আমাদের বাড়ির সামনে।
বাদল তার কথায় কান না দিয়ে সেই ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল, আর তোমার নাম বললে না?
ছেলেটি গর্বিত ভাবে বলল, আমার নাম জীমূতবাহন। ডাকনাম ছুটকু।
নাম বলেই ছেলেটি সন্ধিগ্ধ ভাবে তাকিয়ে ছিল বাদলের দিকে। বাদলের ঠোঁটে সামান্য হাসির আভা দেখেই ধমকে জিজ্ঞেস করল, হাসছিস যে? হাসির কী আছে?
বাদল ফিক করে হেসে বলল, এ রকম আবার কারওর নাম হয় নাকি? বাহন মানে তো ঘোড়া!
ছেলেটি এবার বাদলের জুলপি টেনে ধরে বলল, তোকে বুঝি লেখাপড়া শেখায় না! বাহন মানে ঘোড়া? যার পিঠে চড়ে, তাকে বলে বাহন। কার্তিকের বাহন কী, বল বল, ওয়ান, টু
ময়ুর?
সরস্বতীর বাহন কী?
হাঁস!
শিবের বাহন কী?
গোরু!
মোটেই না। ষাঁড়।
জুলপি ছেড়ে দিয়ে ছেলেটি এবার বিজ্ঞের মতন বলল, জীমূত মানে মেঘ। মেঘ কার বাহন জানিস? গাঁট্টা খেলেও তো বলতে পারবি না। ইন্দ্র। আমার নামের মানে ইন্দ্র।
পরবর্তী জীবনে এই জীমূতবাহন নামের ছেলেটির সঙ্গে বাদলের গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যৌবনে এরা দুজনে একসঙ্গে একবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল।