২০
ওয়াশিংটনের বাইরে সিএনএন’র প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটিটা ২১২টা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্টুডিওর মধ্যে অন্যতম, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আটলান্টায় টার্নার হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে দেয়া হয়।
পৌনে দু’টার দিকে সিনেটর সেজউইক সেক্সটনের লিমোজিনটা পার্কিং লটে এসে থামলো। সেক্সটনের খুব হাসি পাচ্ছে যখন ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছেন। তাকে এবং গ্যাব্রিয়েলকে সিএনএন’র প্রযোজক, বিশাল বপুর এক লোক হাসিমুখে স্বাগত জানালো।
“সিনেটর সেক্সটন,” প্রযোজক বললো। “স্বাগতম, দারুণ খবর আছে। আমরা জানতে পেরেছি হোয়াইট হউজ কাকে আপনার সঙ্গে মুখোমুখি করার জন্য পাঠাচ্ছে।” প্রযোজক উকটভাবে দাঁত বের করলো। “আশা করি আপনি আপনার যোগ্য প্রতিযোগীই পেয়েছেন।” সে স্টুডিওর কাঁচের ওপাশে ইঙ্গিত করলো।
সেক্সটন সেখানে তাকিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন। তিনি আবার তার দিকে তাকালেন। সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে তাকে দেখতে পেলেন, রাজনীতির জগতের সবচাইতে কুসিত মুখটাকে।
“মারজোরি টেঞ্চ?” গ্যাব্রিয়েল বিস্ময়ে করল, “সে এখানে কী করতে এসেছে?”
সেক্সটনের কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু সে যে কারণেই এসে থাকুক না কেন, তার উপস্থিতি দারুণ একটি খবর– প্রেসিডেন্ট যে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন তার প্রমাণ এটি। তিনি যেন তাঁর সিনিয়র উপদেষ্টাকে সামনের দিকে ঠেলে দেবেন? প্রেসিডেন্ট জাখ হর্নি তার বিগ-গানদের ব্যবহার করছেন, সেক্সটন এই সুযোগটাকে স্বাগতম জানালেন।
যতো বড় শত্রু হবে, ততো বড় তার পতন।
টেঞ্চ একজন ধূর্ত প্রতিপক্ষ হবে সে ব্যাপারে সিনেটরের কোনো সন্দেহই নেই। সেক্সটন এটা না ভেবে পারলেন না যে প্রেসিডেন্টের বিচারে ভুল হয়ে গেছে। মারজোরি দেখতে বীভৎস। এখন সে চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।
কিন্তু, সেক্সটন ভাবলেন এরকম চেহারার কেউ কি কখনও টিভিতে মুখোমুখি হয়েছে কিনা কে জানে।
সেক্সটন হোয়াইট হাউজের এই জন্ডিস মার্কা উপদেষ্টার চেহারা ম্যাগাজিনে খুব কমই দেখেছেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না, ওয়াশিংটনের সবচাইতে শক্তিশালী মানুষটিকে দেখছেন।
“আমার এটা ভালো ঠেকছে না।” গ্যাব্রিয়েল চাপা কণ্ঠে বললো।
সেক্সটন কথাটা শুনতেই পেলো না। তাঁর অবশ্য এটা ভালোই লাগছে। মারজোরি টেক উচ্চ কণ্ঠে বলে থাকে যে, ভবিষ্যতে আমেরিকার নেতৃত্ব নির্ভর করবে প্রযুক্তিগত উচ্চমান অধিকারের মধ্যই। সে হাইটেক গভর্নমেন্ট আরডি প্রকল্প, এবং সবচাইতে বড় কথা নাসার একজন বড় সমর্থক। অনেকেই বিশ্বাস করে ব্যর্থ এজেন্সি হিসেবে নাসার পেছনে অব্যাহত সাহায্য দেবার পেছনে আসলে টেঞ্চের ভূমিকাই প্রধান।
সেক্সটন ভাবলেন প্রেসিডেন্ট কি মারজোরি টেঙ্ককে এতদিন ধরে দিয়ে আসা বাজে উপদেশ দেবার জন্য শাস্তি স্বরূপ এখানে পাঠিয়েছেন কিনা।
তিনি কি তার সিনিয়র উপদেষ্টাকে নেকড়ের মুখে ছুঁড়ে মারছেন না?
গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ মারজোরি টেঞ্চের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিতে ভুগতে লাগলো। এই মহিলো অসম্ভব স্মার্ট, অপ্রত্যাশিতভাবে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাকে এখানে পাঠানোটা। প্রেসিডেন্টের জন্য বাজে চাল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিশ্চয় এত বোকা নন। গ্যাব্রিয়েলের মন বলছে, এই ইন্টারভিউটা দুঃসংবাদ বয়ে আনবে।
গ্যাব্রিয়েল ইতিমধ্যেই আঁচ করতে পেরেছে সিনেটর খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী আর উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। ঘাড় মটকাবার সুযোগ পেলে সেক্সটনের বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠার স্বভাব আছে। নাসা ইসুটা নির্বাচনের জন্য উপযোগী হলেও সেক্সটন তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।
প্রযোজক উদগ্রীব হয়ে উঠলো। “আসুন, তৈরি হয়ে নিন, সিনেটর।”
সেক্সটন যখন স্টুডিওতে যেতে উদ্যত হলেন তখন গ্যাব্রিয়েল তার জামার হাতা খামচে থরল। “আমি জানি তুমি কী ভাবছ,” সে চাপা কণ্ঠে বললো। “ধু স্মার্ট থেকো। বেশি বাড়াবাড়ি করো না।”
“বাড়াবাড়ি? আমি?” সেক্সটন দাঁত বের করে হাসলেন।
“মনে রেখ, এই মহিলা যা করে তা ভালো মতোই করে।”
সেক্সটন তার দিকে মিটিমিটি হেসে আশ্বস্ত করলেন। আমিও তাই করি।”
২১
নাসা’র হ্যাবিস্ফেয়ারের গুহাতুল্য মূল কক্ষটি খুবই অদ্ভুত রকমের, এমনটি পৃথিবীতে দেখা যায় না। কিন্তু আর্কটিকের শৈলভূমিতে এটার অবস্থান রাচেল সেক্সটন হজম করতে পারলেন না।
রাচেলের মনে হলো সে একটা স্যানোটরিয়াম-এ প্রবেশ করেছে। দেয়ালগুলো ঢালু হয়ে কঠিন বরফের জমিনে এসে মিশেছে। যেখানে এক সারি হ্যালোজেন ল্যাম্প প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে। উপরের দিকে সেগুলো তীব্র আলো ছড়াচ্ছে তাতে করে পুরো কক্ষটা আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে গেছে।
ঘরে ভ্রাম্যমান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। সে সব যন্ত্রপাতির ভীড়ে বসে কাজ করে যাচ্ছে সাদা পোশাক পরা ত্রিশ-চল্লিশ জনের মত নাসা’র কর্মকর্তা। তারা আনন্দে আর উত্তেজনায় একে অন্যের সাথে কথা বলছে। রাচেল ঘরের ইলেক্ট্রসিটিটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পারলো।
এটা নতুন একটি চমক জাগানো আবিষ্কার।
ঘরটা দিয়ে যাবার সময় রাচেল লক্ষ্য করলো তাকে যারা দেখে চিনতে পারছে তারা অখুশী হচ্ছে। তাদের ফিসফাস্ পরিষ্কার কোনো গেলো।
এ কি সিনেটর সেক্সটনের মেয়ে না?
সে এখানে আবার কী করতে এসেছে?
আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না নাসা প্রধান তার সাথে কথাও বলছেন!
রাচেল যেনো চারপাশে তার বাবার প্রেতাত্মাটা দেখতে পেলো। তার চারপাশে কেবল যে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিক্রিয়াই রয়েছে তা নয়; রাচেল অন্য একটি জিনিসও টের পাচ্ছে– নাসা যেনো পরিষ্কার জানে শেষ হাসিটা কে হাসবে।
নাসার প্রধান রাচেলকে এক সারি টেবিলের দিকে নিয়ে গেলো, যেখানে একজন লোক কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে। তার পরনে কালো টার্টলনেক, ঢিলেঢালা প্যান্ট এবং ভারি বুট জুতা। নাসার সবাই যেমনটি পরেছে সে রকম নয় মোটেও। সে তাদের দিকে পেছন ফিরে বসে আছে।
নাসা’র প্রধান তাকে অপেক্ষা করতে বলে ঐ লোকটার কাছে গেলো কথা বলতে। কিছুক্ষণ বাদে লোকটা রাচেলের দিকে তাকিয়ে হাই করে কম্পিউটারটা বন্ধ করে দিলো। নাসা প্রধান আবার তার কাছে ফিরে এলো।
“মি: টোল্যান্ড এখান থেকে আপনাকে নিয়ে যাবেন, সে বললো,” তিনি প্রেসিডেন্টের আরেকজন নিযুক্ত ব্যক্তি। তো, আপনারা দুজন ভালো সময়ই কাটাতে পারবেন। পরে আপনার সাথে দেখা করবো।”
“ধন্যবাদ আপনাকে।”
“আমার ধারণা আপনি মাইকেল টোল্যান্ডের নাম শুনেছেন?”
রাচেল কাঁধ ঝাঁকাল। তার মাথাটা চারপাশের অবিশ্বাস্য জিনিসেই ডুবে আছে। নামটা এনে চিনতে পারছি না।”
টার্টলনেক পরা লোকটা তার সামনে এসে দাঁত বের করে হাসলো। “চিনতে পারছেন না?” তার কণ্ঠ আন্তরিক আর বন্ধুভাবাপন্ন। “মনে হচ্ছে প্রথম দেখায় আমি কাউকেই খুশী করতে পারবো না আর।”
রাচেল তার দিকে ভাল করে দেখতেই তার পা দুটো জমে গেলো। সে লোকটার হ্যান্ডসাম চেহারাটা মুহূর্তেই চিনে ফেললো। আমেরিকার সবাই সেটা চেনে।
“ওহ্” সে বললো। লোকটা তার সাথে করমর্দন করলো। “আপনি সেই মাইকেল টোল্যান্ড।
প্রেসিডেন্ট যখন রাচেলকে বলেছিলেন তিনি কিছু খ্যাতিমান বিজ্ঞানীকে নিযুক্ত করেছেন তখন তার মনে হয়েছিল সেটা প্রেসিডেন্টের পক্ষে আছে এমন লোকজনই হবে। কিন্তু মাইকেল টোল্যান্ড তার সঙ্গে খাপ খায় না। আজকের দিনে আমেরিকার সবচাইতে সুপরিচিত জনপ্রিয় বিজ্ঞানী, টোল্যান্ড একটি সাপ্তাহিক প্রামান্যচিত্র উপস্থাপনা করেন, বিস্ময়কর সমুদ্র নামে। তাতে তিনি দর্শকদেরকে সাগর তলের সব বিস্ময়কর তথ্য দিয়ে থাকেন– সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি, দশ ফুট দৈর্ঘ্যের সমুদ্র কেঁচো, মরণঘাতি সমুদ্রস্রোত। মিডিয়া টোল্যান্ডকে জ্যাক বস্তু এবং কার্ল সাগানের সংমিশ্রন বলে অভিহিত করে থাকে। তার অনুষ্ঠানে জ্ঞানগর্ভ তথ্য। এমন বিনোদনের মধ্য দিয়ে দেয়া হয় যে, দর্শক নিজেই অভিযানের স্বাদ পেয়ে থাকে, আর সেজন্যেই বিস্ময়কর সমুদ্র রেটিং-এ শীর্ষে চলে গেছে।
“মি: টোল্যান্ড… রাচেল একটু ভোলাতে তোলাতে বললো। “আমি রাচেল সেক্সটন।”
টোল্যান্ড সানন্দে বাঁকা ঠোঁটে হাসলো। “হাই রাচেল, আমাকে মাইক বলেই ডেকো।”
রাচেলের জিভ যেনো জড়িয়ে গেলো, এটা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাইরে। অপ্রত্যাশিতভাবে সে এক বিখ্যাত টিভি তারকার মুখোমুখি এখন। “আপনাকে এখানে দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি।” নিজের জড়তা কাটাবার জন্য সে বললো। “প্রেসিডেন্ট যখন বলেছিলেন, তিনি কিছু সিভিলিয়ান বৈজ্ঞানিককে নিযুক্ত করেছেন, তখন আমি ভেবেছিলাম, গানে আশা করেছিলাম …” সে ইতস্তত করলো।
সত্যিকারের বিজ্ঞানী?” টোল্যান্ড হাসলো।
রাচেল অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আমি আসলে তা বলছি না।”
“এ নিয়ে ভাববে না,” টোল্যান্ড বললো। এখানে আসার পর থেকেই একথা শুনে সছি।”
নাসা প্রধান তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। টোল্যান্ড এবার কৌতূহলেী চোখে রাচেলের দিকে তাকালো। “নাসা প্রধান বলেছেন আপনি নাকি সিনেটর সেক্সটনের মেয়ে?”
রাচেল সায় দিলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবেই।
“সেক্সটনের একজন র শক্রশিবিরে?”
“যুদ্ধের শিবিরের রেখাটাকে তুমি যেভাবে ভাবছ সবসময় সেভাবে টানা হয় না।”
একটা অসহ্য নীরবতা নেমে এলো।
“তো আমাকে বলো, রাচেল চট করে বললো, “একজন জগদ্বিখ্যাত সমুদ্রবিজ্ঞানী এই হিমবাহের ওপরে একদল নাসা’র রকেট বিজ্ঞানীর সাথে করছেটা কি?”
টোল্যান্ড মুখ টিপে হাসলো। “আসলে প্রেসিডেন্টের মতো দেখতে একজন লোক আমাকে এখানে আসার আমন্ত্রণ দিয়েছে। আমি আমার মুখ খুলে বলতে চেয়েছিলাম ‘গোল্লায় যাও’, কিন্তু যেভাবেই হোক, বলে দিয়েছি হ্যাঁ, স্যার।”
সারা দিনে রাচেল এই প্রথম হাসলো। “ক্লাবে যোগ দিয়ে দিলে।”
যদিও বেশির ভাগ সেলিবৃটিরাই ব্যক্তি হিসেবে মনে হয় ক্ষুদ্র, কিন্তু রাচেলের মনে হলো মাইকেল টোল্যান্ড খুবই দীর্ঘকায়। তার বাদামী চোখ দুটো যেমন অভেদী তেমনি সুতীব্র, ঠিক যেমনটি টেলিভিশনে দেখা যায়। তার কণ্ঠটাও আন্তরিক আর উচ্ছ্বাসে ভরা। তাকে দেখতে শক্তসামর্থ্য আর পাঁচ চল্লিশ বছরের যুবক বলেই মনে হয়। টোল্যান্ডের ঘন কালো চুল কপালের উপর অবিন্যস্তভাবে পড়ে আছে। তার চোয়াল শক্ত, আর সাবলীল আচরণে আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন রয়েছে। সে যখন রাচেলের সাথে করমর্দন করলো তখন রাচেল বুঝতে পারলো, টিপিক্যাল টিভি উপস্থাপকদের মতো নরম হাতের কোমল কিছু নয়, হাতে কলমে কাজ করা একজন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ বলেই মনে হলো তাকে।
“সত্যি বলতে কি,” টোল্যান্ড স্বীকার করলো। “আমার মনে হয় আমি এখানে যোগ দিয়েছি আমার পাণ্ডিত্যের জন্য নয় বরং জনসংযোগের জন্য। প্রেসিডেন্ট আমাকে এখানে এনে তাঁর জন্যে একটা প্রামান্যচিত্র বানাতে বলেছেন।”
“প্রামান্যচিত্র? একটা উল্কাপিণ্ড নিয়ে? কিন্তু আপনিতো একজন সমুদ্রবিজ্ঞানী।”
“সেটাই তাকে আমি বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি নাকি কোনো উল্কাপিণ্ড-প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতাকে চেনেন না। তিনি আজ রাতে যে সংবাদ সম্মেলন করবেন তাতে আমার তৈরি প্রামান্যচিত্রটাও দেখানো হবে।”
একজন সেলিবৃটি মুখপাত্র। জাখ হার্নির কৌশলটা আঁচ করতে পারলো রাচেল। নাসা জনসাধারণের কাছে যতোটা গ্রহণযোগ্য হবে তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে ইতিমধ্যেই বিখ্যাত হওয়া একজন প্রামান্যচিত্র নির্মাতা উপস্থাপক।
টোল্যান্ড রাচেলকে কক্ষের এক কোণে নীল কার্পেটের একটা অংশ দেখিয়ে দিলো। সেটাই তার সেট-আপ। ক্যামেরা, লাইট, মাইক্রোফোন সব রয়েছে সেখানে। পেছনের দেয়ালে কেউ আমেরিকার বিশাল একটা পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে।
“আজকের রাতের জন্য,” টোল্যান্ড বললো। “নাসা প্রধান এবং কিছু শীর্ষ বিজ্ঞানী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সাথে সংবাদ সম্মেলনের সময়ে অংশ নেবে।”
যথার্থ, রাচেল ভাবলো। এটা জেনে খুশি হলো যে জাখ হার্নি নাসা’কে পুরোপুরি বাদ দেয়ার কথা ভাবেননি।
“তো,” রাচেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “কেউ কি বুলবে এই উল্কাপিণ্ডটার বিশেষত্ব কী?”
টোল্যান্ড ভুরু তুলে রহস্য করে তার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো। “আসলে বিশেষত্বটা ব্যাখ্যা করার চেয়ে দেবেই বেশি বোঝা যাবে।” সে রাচেলকে পাশেই একটা জায়গায় নিয়ে গেলো। ওখানে যে লোকটা আছে, তার কাছে অনেকগুলো নমুনা রয়েছে আপনাকে দেখানোর জন্য।”
“নমুনা? আপনাদের কাছে উল্কাপিণ্ডটার নুমনাও রয়েছে?”
“অবশ্যই। আমরা খনন করে কয়েক টুকরো বের করে আনতে পেরেছি।”
কিছু বুঝতে না পেরে রাচেল টোল্যান্ডকে অনুসরণ করলো। জায়গাটা ফাঁকা। একটা টেবিলে এক কাপ কফি, আর কয়েক টুকরো পাথরখও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিছু যন্ত্রপাতিও আছে সেখানে। কফি থেকে ধোঁয়া উঠছে।
“মারলিনসন!” টোল্যান্ড চিৎকার করে বললো, আশে পাশে তাকিয়ে। কোনো জবাব এলো না। সে রাচেলের দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “সম্ভবত কফির ক্রিম আনতে গিয়ে সে হারিয়ে গেছে। আমি তোমাকে বলি, তার সাথে আমি একবার প্রিন্সটন পোস্টগার্ডে গিয়েছিলাম, আর সে তার নিজের থাকার জায়গাটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলো। এখন সে অ্যাসট্রোফিজিক্সে জাতীয় স্বর্ণ পদক পাওয়া একজন বিজ্ঞানী। বোঝো তাহলে।”
রাচেল অবাক হলো। “মারলিনসন? সেই বিখ্যাত কর্কি মারলিনসনের কথা বলছো?”
টোল্যান্ড হেসে ফেললো, “এক এবং অদ্বিতীয়।”
স্তব্ধ হয়ে গেলো রাচেল। কর্কি মারলিনসন এখানে?” মারলিসনের মহাকর্ষীয় ধারণাসমূহ এনআরও’র স্যাটেলাইট প্রকৌশলীদের কাছে কিংবদন্তীতূল্য। “মারলিনসন প্রেসিডেন্টের সিভিলিয়ান নিযুক্তদের একজন?”
“হ্যাঁ, সত্যিকারের বিজ্ঞানীদের একজন।”
একেবারেই সত্যিকারের, রাচেল ভাবলো। কর্কি মারলিনসন খুবই প্রতিভাবান আর শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
“কর্কি সম্পর্কে অবিশ্বাস্য প্যারাডক্সটা হলো,” টোল্যান্ড বললো, “সে তোমাকে দূরবর্তী আলফা সেন্টুরির দূরত্বের হিসাব মিলিমিটার পর্যন্ত বলে দিতে পারবে, কিন্তু নিজের টাইটা বাঁধতে জানে না সে।”
“আমি ক্লিপওয়ালা ব্যবহার পরি!” নাকি কণ্ঠে একটা লোক গর্জন করে বললো কাছ থেকেই। “স্টাইলের চেয়ে যোগ্যতাই বড়, মাইক। তোমার মত হলিউড টাইপের লোকেরা সেটা বুঝতে পারবে না!”
রাচেল আর টোল্যান্ড পেছনে তাকিয়ে দেবে একগাদা যন্ত্রপাতি নিয়ে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। সে দেখতে বেটে ও মোটা, বেচা নাকের কুকুরের মত, পাতলা চুল ছোট করে ছাটা।
“যিশুখৃস্ট, মাইক! আমরা হিমশীতল উত্তর মেরুতে আছি, আর তুমি দেখছি এখানেও সুন্দরী মেয়ে যোগার করে ফেলেছ। আমার টেলিভিশনে যাওয়াই উচিত ছিল!
মাইকেল টোল্যান্ড দৃশ্যত বিব্রতই হলো। “মিস সেক্সটন, মিঃ মারলিনসের কথায় কিছু মনে করবে না।”
কর্কি সামনে এসে দাঁড়ালো, “ম্যাম, আমি আপনার নামটা ধরতে পারি নি।”
“রাচেল,” সে বললো, “রাচেল সেক্সটন।”
“সেক্সটন?” কর্কি একটু আকে উঠল যেনো। আশা করি ঐ দূরদৃষ্টিহীন, চরিত্রহীন সিনেটরের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই।”
টোল্যান্ড জিভে কামড় দিলো। “আসলে, কর্কি, সিনেটর সেক্সটন রাচেলের বাবা হন।”
কর্কি হাসি থামিয়ে দিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। “তুমি জানো মাইক, মেয়েদের ব্যাপারে আমার ভাগ্য যে ভালো হয় না সেটা কোনো অবাক করার বিষয় নয়।”
২২
রাচেল আর টোল্যান্ডকে পুরস্কার বিজয়ী অ্যাস্ট্রোফিজিস্ট কর্কি মারলিনসন তার কাজের টেবিলের কাছে নিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরের নমুনাগুলো সরিয়ে ফেললো।
“ঠিক আছে, তার কণ্ঠে উত্তেজনা। “মিস্ সেক্সটন, আপনি কর্কি মারলিনসনের ত্রিশ সেকেন্ডের উল্কাবিষয়ক বিবৃতি গুনতে যাচ্ছেন।”
টোল্যান্ড রাচেলকে ধৈর্য ধরার ইশারা করলো, “লোকটাকে সহ্য করো। সে আসলে একজন অভিনেতা হতে চায়।”
“হ্যাঁ, আর মাইক হতে চায় একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী।” কর্কি একটা বাক্স থেকে তিনটি পাথরখণ্ড বের করে ডেস্কে পাশাপাশি সাজিয়ে রাখলো। “এগুলো হলো এই পৃথিবীতে পাওয়া তিন ধরণের উল্কাপিণ্ডের নমুনা।”
রাচেল তিনটা নমুনার দিকে তাকালো। প্রতিটির আকারই গলফ বলের সমান হবে। সবগুলোই অর্ধেক করে কাটা যাতে ভেতরের অংশটা দেখা যায়।
“সব উল্কাপিণ্ডেই,” কর্কি বললো, “বিভিন্ন পরিমাণে নিকেল আয়রনের সঙ্কর, সিলিকেট, এবং সালফাইড থাকে। আমরা সেগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করি তাদের ধাতুর সাথে সিলিকেটের অনুপাতের ভিত্তিতে।”
রাচেল বুঝে গেছে কর্কি মারলিনসনের বক্তৃতা ত্রিশ সেকেন্ডের বেশি সময় নেবে।
“এই নমুনাটা, কর্কি বললো, “একটা কালো জেট পাথর, লোহার-শাঁস’র উল্কাপিণ্ড। খুবই ভারি। এই ক্ষুদে ভদ্রলোকটি কয়েক বছর আগে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলো।”
রাচেল পাথরটা ভালো করে দেখলো। এটা দেখে অপার্থিব বলেই মনে হচ্ছে-বাইরের আবরণটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে।
“এটার বহিরাবরণটা অঙ্গারে পরিণত হয়েছে, যাকে বলে ফিউশন ক্রাস্ট, কর্কি বললো।
“প্রচণ্ড তাপের ফলে এমনটি হয়েছে, বায়ু মণ্ডলে প্রবেশ করার সময় উল্কাটা পুড়ে অঙ্গারে পরিণত হয়ে যায়। সব উল্কাই এরকম হয়।” কর্কি পাথরের নমুনাটার দিকে গেলো। “এটাকে আমরা বলি পাথুরে লোহার উল্কাপিণ্ড।”
রাচেল নমুনাটা দেখলো, এটারও বাইরের আবরণ অঙ্গারে পরিণত হয়েছে। এই নমুনাটার অবশ্য হাল্কা সবুজাভ ছিটছিট রয়েছে। আর ভেতরের অংশটাতে রঙ্গীন কৌণিক টুকরো আছে।”
“সুন্দর,” রাচেল বললো।
“আপনি ঠাট্টা করছেন, এটা দারুণ সুন্দরী!” কর্কি এই নমুনাটার ব্যাপারে কিছু বর্ণনা দেবার পর পরের নমুনাটা রাচেলের হাতে তুলে দিলো।
রাচেল তার হাতে শেষ নমুনাটি তুলে নিলো। এটার রঙ ধূসর বাদামী, গ্রানাইটের মতো অনেকটা। এটা অন্যগুলোর চেয়ে বেশি ভারি মনে হলো। অন্য পাথরের চেয়ে এটা একটা দিক থেকে আলাদা, তাহলো ফিউশন ক্রাস্টের কারণে বাইরের আবরণটা একটু পোড়া।
“এটাকে” কর্কি বললো, “পাথুরে উল্কাপিণ্ড বলে। এটা হলো খুবই সাধারণ ধরণের উল্কাপিণ্ড। পৃথিবীতে পাওয়া নব্বইভাগ উল্কাপিণ্ডই এরকম হয়ে থাকে।”
রাচেল অবাক হলো। সব সময় উল্কার যে ছবি কল্পনা করে সেটা প্রথম নমুনার মতো-ধাতব, অপার্থিব ফুটকিযুক্ত। তার হাতের উল্কাপিণ্ডটি আর যাই হোক অপার্থিব ব’লে মনে হচ্ছে না। এটাকে দেখে তার মনে হলো সাগর সৈকতে পায়ে মাড়িয়ে যাওয়া নুড়ি পাথরের মতোই।
কর্কির চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। “যে উল্কাপিণ্ডটি মিলনের বরফের নীচে চাপা পড়ে আছে সেটা হলো পাথুরে উল্কাপিণ্ড-অনেকটা আপনার হাতেরটার মতো। আর সব উল্কাপিণ্ডের মতোই বিশেষত তেমন কিছু নেই।”
আমিও তাই বলি, রাচেল ভাবলো। নমুনাটি তার হাতে ফিরিয়ে দিলো রাচেল। “এই পাথরটা দেখতে মনে হচ্ছে, কেউ ফায়ার প্লেসে ফেলে রেখে গেছে, আর সেটা পুড়ে এরকম হয়েছে।”
কর্কি হাসিতে ফেটে পড়লো। “বেশ বলেছেন!”
টোল্যান্ড আর রাচেল বিব্রত হয়ে হাসলো।
“এটা দেখুন, কর্কি বললো, রাচেলের কাছ থেকে পাথরটা নিয়ে নিলো। “একটু কল্পনা করুন এই ছোট্ট ভদ্রলোকটি একটি বাড়ির সমান আকৃতির। ঠিক আছে…মহাশূন্যে আছে এটা…আমাদের সৌর জগতে ভেসে বেড়াচ্ছে…ঠাণ্ডা হিমশীতল তাপমাত্রায়…মাইনাস একশ’ ডিগ গেলেসিয়াস।”
টোল্যান্ড মুখটিপে হাসলো।
কর্কি নমুনাটি একটু নিচে নামিয়ে আনলো। “আমাদের উল্কাটি পৃথিবীর দিকে তেড়ে আসছে…খুব কাছে এসে পড়েছে। আমাদের মধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতায় এসে পড়েছে। সেটা…গতি বাড়ছে..বাড়ছে তো বাড়ছেই…”
রাচেল কর্কির এই নাটকীয়তা দেখে মজা পাচ্ছে।
“এবার এটা খুব দ্রুত গতিতে ছুটছে, কর্কি বিস্মিত হয়ে বললো। “প্রতি সেকেন্ডে দশ মাইলেরও বেশি গতিতে ছত্রিশ হাজার মাইল, ঘণ্টায়! পৃথিবীর একশ পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার উপরে। উল্কাটি বায়ুমণ্ডলে এসে সংঘর্ষে পড়লো। কর্কি পাথরটা জোরে ঝাঁকাতে লাগলো। “একশ কিলোমিটার নিচে পড়ে গেলো, এটা গলতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড তাপে সেটাই হবে।” কর্কি মুখ দিয়ে হিস হিস শব্দও করলো। “এবার এটা আরো আশি কিলোমিটার নিচে এসে। পড়লো। বাইরের আবরণটা আঠারো শত ডিগ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হবে!”
রাচেল অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো।
“ষাট কিলোমিটার!” এবার চিৎকার করতে শুরু করলো কর্কি। “আমাদের উদ্ধা বায়ুমণ্ডলের দেয়ালের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলো। বাতাসও খুব ঘন! এটা প্রচণ্ডভাবে গতিহ্রাসের শিকার হবে, মধ্যাকর্ষণের শক্তির চেয়ে তিন শত গুণ কমে!” কর্কি গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ করলো।
সঙ্গে সঙ্গে উল্কাটি ঠাণ্ডা হয়ে এর ভেতরের গলিত অংশের তুলনায় পৃষ্ঠদেশটি শক্ত হয়ে যাবে। বাইরের অংশ ফিউশনের ফলে পরিণত হবে অঙ্গারে।”
কর্কি হাটু গেঁড়ে বরফের উরপ বসতেই টোল্যান্ড আর্তনাদ করে উঠলে রাচেল সেটা শুনতে পেলো। পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাতের বর্ণনা দিতেই এমনটি করেছে কর্কি।
“এখন এটা আর্কটিকের সাগরের দিকে নেমে আসছে… কোনাকুনিভাবে…পড়ছে.. পড়ছে…” পাথরটা বরফে স্পর্শ করলো কর্কি। “ধা!”
একটু লাফিয়ে উঠলো রাচেল।
“আঘাতটা হবে মারাত্মক! উল্কাটি বিস্ফোরিত হলো। টুকরো টুকরো অংশগুলো চারদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো সমুদ্রের মধ্যে।” এবার কর্কি মোেশনে দেখাচ্ছে। রাচেলের পায়ের কাছে মৃদশ্য সমুদ্রে গড়িয়ে, আছড়ে পড়ছে সেগুলো। “একটা টুকরো ছিটকে এলোমেয়ার। দ্বীপে এসে পড়লো ..” সে তার পায়ের কাছে পাথরের টুকরোটা নিয়ে এলো।”সেটা গড়িয়ে সাগরে গিয়ে পড়লো। মাটিতে আঘাত লেগে একটু লাফিয়ে উঠল …” সে তার পায়ের কাছে পাথরটা গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে দৃশ্যটা বুঝিয়ে দিলো। “অবশেষে, এটা মিলুনে হিমবাহে এসে থামলো, সেখানে তুষার আর বরফ এটাকে খুব জলদিই ঢেকে ফেললো ফলে ভূপৃষ্ঠের ক্ষয় হওয়ার হাত থেকে এটা রক্ষা পেয়ে যায়।” কর্কি হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো।
রাচেলের মুখ হা হয়ে গেলো। সে মুগ্ধ হয়ে হেসে ফেললো। “বেশ, ডক্টর মারলিনসন, ব্যাখ্যাটা একেবারে …”
“পরিষ্কার?” কর্কি বললো।
হেসে ফেললো রাচেল। বলতে গেলে সেরকমই।”
কর্কি নমুনাটা তার হাতে দিয়ে দিলো।”এটার ভেতরটা দেখুন একটু।”
রাচেল কিছুই খুঁজে পেলো না তাতে।
“আলোর সামনে এটা ধরুন,” টোল্যান্ডের কণ্ঠে আন্তরিকতা আর সহযোগীতা। “কাছ থেকে দেখুন এবার।”
রাচেল পাথরটা তার চোখের সামনে এনে মাথার ওপরে হ্যালোজেন লাইটের কাছে ধরল। এবার সে ওটা দেখতে পেলো-পাথরটাতে রয়েছে ছোটোছোটো ধাতব গোলাকার উজ্জ্বল চকচকে বিন্দু। কয়েক ডজনের মতো বিন্দু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, পারদের ফোঁটার মতো। এক মিলিমিটান পরপর।
“এসব ক্ষুদ্র বুদবুদকে বলা হয় কন্ড্রুইল, কর্কি বললো, “এগুলো কেবল উল্কাপিক্সে মধ্যেই থাকে।”
রাচেল ফোঁটাগুলো ভালো করে দেখলো। “মানছি, পৃথিবীর কোনো পাথরে আমি এরকম কিছু দেখি নি।”
“আর দেখতেও পারবেন না!” বললো কর্কি। “কন্ড্রুইল হলো এমন একটি ভৌগলিক অবস্থা যা পৃথিবীতে আমরা পাই না। কিছু কিছু কন্ড্রুইল খুব বেশি রকমই পুরনো-সম্ভবত মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থায় পদার্থ যখন তৈরি হয়েছিলো তখন এগুলোর সৃষ্টি হয়। বাকি কন্ড্রুইলগুলো একেবারেই নবীন। আপনার হাতেরটার মতো। এই উল্কাপিণ্ডের কন্ড্রুইল একশ’ নব্বই মিলিয়ন বছর আগের।”
“একশনব্বই মিলিয়ন বছর হলো নবীন?”
“হ্যাঁ, মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে, এটা গতকাল। আসল কথাটা হলো, এই নমুনাটিতে কন্ড্রুইল রয়েছে-উল্কাপিণ্ডের প্রমাণ হিসেবে।”।
“ঠিক আছে,” রাচেল বললো। “কন্ড্রুইল হলো অকাট্য প্রমাণ, বুঝতে পেরেছি।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কর্কি বললো, “যদি ফিউশন ক্রাস্ট আর কন্ড্রুইল দেখেও আমরা সন্তুষ্ট হতে না পারি, তবে আমাদের কাছে আরেকটা নিদ্রি পদ্ধতিও রয়েছে।”
“সেটা কি?”
কাঁধ ঝাঁকালো কর্কি। “আমরা পেট্রোগ্রাফিক পোলারাইজিং মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে থাকি, এক্সরে ধরণের যন্ত্র।”
টোল্যান্ড মাঝপথে বললো, “কর্কি বোঝাতে চাইছে, আমরা রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করেই কোনো পাথরকে উল্কাপিণ্ড হিসেবে প্রমাণ করতে পারি।”
“অ্যাই; সমুদ্রবালক!” বললো কর্কি। “বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানীদের জন্যই রেখে দাও, ঠিক আছে?” রাচেলের দিকে ফিরে বললো, “পৃথিবীর শিলাখণ্ডে খনিজ নিকেলের পরিমাণ হয় খুব বেশি নয়তো কম মাত্রায় থাকবে; মাঝামাঝিতে নয়। উল্কাপিণ্ডে সেটা মাঝামাঝি পরিমাণে থাকে। সেজন্যেই, আমরা যদি কোনো শিলাখণ্ডে নিকেলের উপাদান মাঝামাঝি পরিমাণে পেয়ে থাকি তবে আমরা নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্ত নিই যে, সেটা একটা উল্কাপিণ্ড।”
অধৈর্য হয়ে পাথরখণ্ডটি কর্কির টেবিলে রেখে দিয়ে রাচেলে বললো, “ঠিক আছে, জেন্টেলমেন, আপনাদের সব কথাই বুঝলাম। তাহলে আমি এখানে কেন এসেছি?”
কর্কি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “আপনি এই বরফের নিচ থেকে নাসার পাওয়া উল্কাপিণ্ডটি দেখতে চাচ্ছেন?”
এখানে রফে জমে মরে যাবার আগে, দয়া করে তাই করুন ….
কর্কি বুক পকেট থেকে চাকতির মতো দেখতে একটা পাথরখণ্ড বের করলো। পাথরটার আকার অডিও সিডির মতো। আধ ইঞ্চির পুরু এবং সেটা রাচেলের দেখা অন্যসব উল্কাপিণ্ডের মতোই।
“এটা সেই উল্কাপিণ্ডের একটা নমুনা, গতকালকে আমরা ড্রিল করেছিলাম।” কর্কি ডিস্কটা রাচেলকে দিলো।
এটা দেখে মনে হচ্ছে না জিনিসটা দুনিয়া কাঁপানো তেমন কিছু এটা কমলা-সাদা রঙের ভারি পাথর। বাইরের কানা কালো, পুড়ে অঙ্গারে পরিণত হয়েছে। উল্কাপিণ্ডের বাইরের আবরণের মতোই। “এরকম ফিউশন ক্রাস্ট দেখেছি আমি।”
“হ্যাঁ, এটাতে এখনও ফিউশন ক্রাস্ট দেখা যায়।”
রাচেল আলোর কাছে এনে ভালো করে দেখলো সেটা। “আমি কভুইলও দেখতে পাচ্ছি।”
“ভালো, কর্কি কণ্ঠে প্রবল উত্তেজনা। “আর আমরা পেট্রোগ্রাফিক পোলারাইজিং মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি-এটা পার্থিব কোনো পাথরও নয়। এটা মহাশূন্য থেকেই এসেছে।”
রাচেল তার দিকে তাকালো দ্বিধাগ্রস্তভাবে। “ডক্টর মারলিনসন, এটাতো উল্কাপিণ্ডই। এটা মহাশূন্য থেকেই তো আসবে। আমি কি কিছু ভুল করেছি?”
কর্কি এবং টোল্যান্ড একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো। টোল্যান্ড রাচেলের কাঁধে হাত রেখে চাপা কণ্ঠে বললো, “এটা উল্টিয়ে দেখ।”
রাচেল ডিস্কটা উল্টিয়ে অন্য পাশটা দেখলো। ব্যাপারটা বুঝতে তার খুব অল্প সময়ই নিলো, সে কী জিনিস দেখছে।
এরপরই সত্যটা তাকে একটা ট্রাকের মত আঘাত করলো।
অসম্ভব! সে পাথরটার দিকে চেয়ে ‘অসম্ভব’ শব্দটা বদলাতে বাধ্য হলো। পাথরে একটা আকৃতি খোদাই করা আছে, সেটা পৃথিবীর হলে খাপ খেয়ে যায়, কিন্তু একটি উল্কাপিণ্ডের সাথে। এটা খাপ খায় না।
“এটা…” রাচেল বিস্ময়ে বললো, কথাটা প্রায় বলতেই পারছে না সে। “এটা তো… একটা ছারপোকা! এই উল্কাপিণ্ডটাতে একটা ছারপোকার ফসিল রয়েছে!”
টোল্যান্ড আর কর্কি একসাথে চোখ কুচকে তাকালো। “স্বাগতম এখানে, কর্কি বললো।
প্রচণ্ড আবেগে রাচেল কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো, তারপরও, সে কোনো সন্দেহের অবকাশ পেলো না, কারণ ফসিলটা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে। একটি প্রাণীর ফসিল, জিনিসটা তিন ইঞ্চির মত লম্বা হবে, গুবড়ে পোকার মতো। সাতজোড়া চিকন পা।
রাচেলের মাথা ঝিঁঝিম্ করতে লাগলো, “মহাশূন্যে থেকে একটা পোকা …”
“এটা একটা আইসোপড়, কর্কি বললো। “পোকা মাকড়ের থাকে তিনজোড়া পা, সাত জোড়া নয়।”
রাচেল তার কথাটা শুনতেও পেলো না। ফসিলটা দেখে তার মাথা ঘুরছে।
“আপনি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছেন, কর্কি আবারো বললো। “পোকাটার পিঠের শক্ত আবরণটা এ পৃথিবীর পোকাদের মতোই, কিন্তু দুটো দৃশ্যমান উপাঙ্গের মতো লেজ এটাকে কোনো এঁটেল পোকা বা উকুন থেকে পৃথক করে রেখেছে।”
রাচেল ভাবছে প্রজাতিটির শ্রেণীবদ্ধ করা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। খাপছাড়া ব্যাপারগুলো এবার মিলে যাচ্ছে-প্রেসিডেন্টের গোপনীয়তা, নাসার উচ্ছ্বাস…এই উল্কাপিণ্ডটিতে একটি ফসিল রয়েছে। কোনো ব্যাকটেরিয়া কিংবা আনুবীক্ষণিক প্রাণী নয়, একটি উন্নত প্রজাতির জীব! মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণ রয়েছে তারই প্রমাণ এটি!
২৩
সিএনএন’র বিতর্কটা দশ মিনিট পার হয়েছে, সিনেটর সেক্সটন ভাবতে লাগলেন তিনি কেন এতো বেশি উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। মারজোরি টেঞ্চকে খুব বেশি হোমরাচোমড়া ভাবা হয়েছিল প্রতিপক্ষ হিসেবে। সিনিয়র উপদেষ্টার নির্মম তীক্ষ্ণ বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও, সে এখানে যোগ্য প্রতিপক্ষ না হয়ে বরং বলির পাঠা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে।
মানতে হবে যে, আলোচনার শুরুতে টেঞ্চ সিনেটরের নারী বিদ্বেষী মনোভাবটাকে বেশ। ভালভাবেই আঁকড়ে ধরে একটু বিপদে ফেলে দিয়েছিল, কিন্তু তখনই টেঞ্চ একটা ভুল করে বসল। যখন প্রশ্ন করা হচ্ছিল সিনেটর কীভাবে শিক্ষা উন্নয়নের ফান্ড কোনো রকম ট্যাক্স না বাড়িয়ে যোগার করার আশা করেন, টেঞ্চ তখন পরোক্ষভাবে সেক্সটন যে নাসাকে বলির পাঠা বানাচ্ছেন সেটা উল্লেখ করে।
যদিও নাসা ইসুটা সেক্সটন নিশ্চিতভাবেই চাইছিলেন আলোচনার শেষে তুলবেন, কিন্তু মারজোরি টেঞ্চ দরজাটা বেশ আগেভাগেই খুলে দিলো। ইডিওট!
“নাসা সম্পর্কে বলছি,” সেক্সটন খুব হাল্কা চালেই বললেন, “আপনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করবেন কি, যে, নাসা সাম্প্রতিক আরেকটি ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে, আমি ক্রমাগত এরকম গুজব শুনে আসছি।”
মারজোরি টেঞ্চ জবাব দিলো না। “আমি এরকম কোনো ব্যর্থতার গুজবের কথা শুনিনি।” তার সিগারেট খাওয়া কণ্ঠটা মনে হলো স্যান্ড-পেপারের মতো।
“তাহলে, কিছু বলছেন না?”
“আমার মনে হয়, না।”
সেক্সটন উদ্বেলিত হলেন। মিডিয়া জগতে কোনো মন্তব্য নেই’ কথার মানে হচ্ছে। অপরাধীর অপরাধ প্রচ্ছন্নভাবে স্বীকার করে নেয়া।
“আচ্ছা। তাহলে প্রেসিডেন্ট আর নাসা প্রধানের গোপন মিটিংয়ের ব্যাপারটা কি?” সেক্সটন জানতে চাইলেন।
কথাটা শুনে টেঞ্চকে খুবই অবাক মনে হলো। “বুঝতে পারছি না কোন্ মিটিংয়ের কথা বলছেন? প্রেসিডেন্টকে তো অনেক মিটিং করতে হয়।”
“অবশ্যই।” সেক্সটন ঠিক করলেন সরাসরিই বলবেন। “মিস টেঞ্চ, আপনি স্পেস এজেন্সির একজন বড় সমর্থক, তাই না?”
টেঞ্চ দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সেক্সটনের এই বিরক্তিকর ইসুতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সে। “আমি আমেরিকার প্রযুক্তিগত গুরুত্ব সংরক্ষণ করাতে বিশ্বাস করি। সেটা মিলিটারি, ইন্টেলিজেন্স, টেলিকমিউনিকেশন যাইহোক না কেন। নাসা নিশ্চিতভাবেই এসবের একটি অংশ।”
প্রোডাকশন বুথে, সেক্সটন দেখতে পেলেন গ্যাব্রিয়েল এর চোখ বলছে পিছটান দিতে, কিন্তু সেক্সটন রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। “আমি কৌতূহলেী, ম্যাম। প্রেসিডেন্ট যে বিরামহীনভাবে এই পতিত, ব্যর্থ এজেন্সিকে সমর্থন করে যাচ্ছেন সেটার পেছনে কি আপনার হাত রয়েছে?”
টেঞ্চ মাথা নাড়লো। “না, প্রেসিডেন্টও নাসার উপর আস্থাশীল একজন। তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেন।”
সেক্সটন তার নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারলেন না। এইমাত্র তিনি টেঞ্চকে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন যাতে কিছু দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে প্রেসিডেন্টকে বাঁচানো যায়। তার বদলে টেঞ্চ উল্টো প্রেসিডেন্টের কাঁধেই চাপিয়ে দিলো। প্রেসিডেন্ট তার সিদ্ধান্তগুলো নিজেই নিয়ে থাকেন। মনে হলো টেঞ্চ প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারণাকে আরো সমস্যায় ফেলে দিলো। এটা অবশ্য অবাক হবার ব্যাপার নয়। হাজার হোক, বিপদ ঘনিয়ে এলে মারজোরি টে চাকরি খুঁজতে লেগে যাবে।
এর কয়েক মিনিট পরে টেঞ্চ চেষ্টা করলো বিষয়টা বদলাতে, কিন্তু সেক্সটন নাসার বাজেট নিয়ে চেপে ধরলেন।
“সিনেটর,” টেঞ্চ বললো, “আপনি নাসা’র বাজেট কাটছাট করতে চাইছেন, কিন্তু আপনার কি ধারণা আছে এতে করে কতগুলো হাইটেক কাজের চাকরি হারাবে লোকজন?”
সেক্সটন প্রায় হেসেই ফেললেন। এই বুড়ি ছুরিটাকে ওয়াশিংটনে সবচাইতে বুদ্ধিদীপ্তমাথা হিসেবে গণ্য করা হয়?
হাইটেক চাকরির সংখ্যা অন্যসব চাকরির তুলনায় নিতান্তই নগন্য।
সেক্সটন ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। “আমরা কথা বলছি বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে, মারজোরি, তাতে করে কতিপয় নাসার বিজ্ঞানীর কি হবে সেটা দেখা আমার কাজ নয়। তারা অন্য কোথাও কাজ জুটিয়ে নেবে। আমি খরচ কমানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ।”
সিএনএন’র উপস্থাপক তাড়া দিলো, “মিস টেঞ্চ? কোনো প্রতিক্রিয়া?”
টেঞ্চ গলাটা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলো। “আমি খুব অবাক হচ্ছি যে মি: সেক্সটন নিজেকে একজন নাসা বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন।”
সেক্সটনের চোখ কুচকে গেলো। খুব ভালই বলেছেন। “আমি নাসা বিরোধী নই। আমি এই অভিযোগটা অস্বীকার করছি। আমি কেবল বলতে চেয়েছি নাসা’র বাজেট অস্বাভাবিক বেশি, আর সেটা প্রেসিডেন্টই অনুমোদন দিয়ে থাকেন। নাসা বলেছিল তারা শাটটা পাঁচ বিলিয়নে নির্মাণ করতে পারবে। দেখা গেলো এটার খরচ শেষ পর্যন্ত বারো বিলিয়ন হয়ে গেলো। তারা স্পেস স্টেশনের ব্যাপারে বলেছিল আট বিলিয়নের কথা, কিন্তু এটা এখন দাঁড়িয়েছে একশো বিলিয়নে।”
“আমেরিকানরা নেতা,” টেঞ্চ পাল্টা বললো, “কারণ আমরাই কঠিন লক্ষ্য ঠিক করি আর কঠিন সময় পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়নে লেগে থাকি।”
“এই জাতীয় গৌরবের বক্তৃতা আমাকে পটাতে পারবে না, মারজোরি। নাসা খুব বেশি খরচ করে ফেলছে, বিগত দু’বছর ধরে, আর প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে লেজ নাচাতেই তিনি আরো বেশি টাকা দিয়ে দেন তাদের ব্যর্থতাগুলো ধরে নেবার জন্য। এটা কি জাতীয় অহংকার, গৌরব? আপনি যদি জাতীয় গৌরবের কথা বলতে চান, তবে শক্তিশালী স্কুলের কথা বলুন। কথা বলুন বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবার কথা। কথা বলুন সুযোগের দেশের বাচ্চা-কাচ্চাদের বেড়ে ওঠার কথা। এটাই হলো জাতীয় গৌরব!”
টেঞ্চ তাকিয়ে রইলো। “আমি কি আপনাকে সরাসরি একটি প্রশ্ন করতে চাই, সিনেটর?”
সেক্সটন কোনো জবাব দিলেন না। তিনি কেবল অপেক্ষা করলেন।
“সিনেটর, আমি যদি আপনাকে বলি যে বর্তমান খরচ কমালে নাসা মহাশূন্যের আবিষ্কারগুলো করতে পারবে না, তবে কি আপনি স্পেস এজেন্সিটাকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দেবেন?”
প্রশ্নটা যেনো সেক্সটনের ওপর একটা ট্রাকের মতো চেপে ধরলো। টেঞ্চ আসলে সেক্সটনকে কোনোঠাসা করে ফেলেছে। এখন প্রতিপক্ষকে পরিষ্কার একটি পক্ষ নিতেই হবে। কোনো উপায় নেই।
সেক্সটন অবশ্য পাশ কাটানোর চেষ্টা করলেন। এব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই, যে, ভালো ব্যবস্থাপনায় আমরা নাসা’কে দিয়ে বর্তমানের চেয়েও কম খরচে চালাতে পারব, এবং মহাশূন্যে নিত্য নতুন আবিষ্কার করতে সক্ষম হব–
“সিনেটর সেক্সটন, আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। মহাশূন্য গবেষণা খুবই ব্যয় বহুল আর বিপজ্জনক কাজ। আমাদেরকে হয় এটা করতে হবে, নয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। ঝুঁকিটা খুবই বেশি। আমার প্রশ্ন হলো : আপনি যদি প্রেসিডেন্ট হন, আর আপনার সামনে যদি এই প্রশ্নটি এসে যায় যে, নাসা’কে যথাযথ ফান্ড দেয়া হবে অথবা আমেরিকার স্পেস কর্মসূচী বাতিল করে দিতে হবে, আপনি কোনোটা বেছে নেবেন?”
ধ্যাততিরিকা। সেক্সটন গ্যাব্রিয়েলের দিকে কাঁচের মধ্য দিয়ে তাকালেন। তার অবস্থাও সেক্সটনের মত। তুমি দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। সরাসরিই বল। কোনো ঘোরপ্যাঁচ নয়। সেক্সটন মাথাটা উঁচু করে বললেন, “হ্যাঁ। সেরকম হলে আমি নাসা’র বর্তমান বাজেট আমাদের স্কুল সিস্টেমে স্থানান্তরিত করব। আমি আমাদের বাচ্চাদেরকেই বেশি অগ্রাধিকার দেব, মহাশূন্যের চেয়ে।”
মারজোরি টেঞ্চের মুখে অবিশ্বাসের ছায়া। “আমি বিস্মিত। আমি কি আপনার কথা ঠিক ঠিক নতে পাচ্ছি? প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আপনি এই দেশের মহাশূন্য কর্মসূচী পুরোপুরি বিলুপ করে দেবেন?”
সেক্সটন রাগে কাঁপতে লাগলেন। তিনি কিছু বলতে যাবেন, কিন্তু টেঞ্চ আবারো বলতে শুরু করলো।
“তো, আপনি বলছেন, সিনেটর, এটা রেকর্ডে থাক, যে আপনি এমনি একটি এজেন্সিকে বন্ধ করে দেবেন যারা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল?”
“আমি বলছি, মহাশূন্য প্রতিযোগীতা শেষ হয়ে গেছে! সময় বদলে গেছে। নাস আর এখন বড় ভূমিকা রাখে না। তারপরও তারা যেমন চায় আমাদেরকে সেটাই দিতে হবে কেন।”
“তাহলে আপনি মনে করেন মহাশূন্যের কোনো ভবিষ্যৎ নেই?”
“অবশ্যই মহাশূন্যই ভবিষ্যৎ কিন্তু নাসা একটি ডাইনোসর! প্রাইভেট সেক্টরকে মহাশূন্যে আবিষ্কার করার সুযোগ দেয়া হোক। আমেরিকান করদাতাদের তাদের মানিব্যাগ খুলে প্রতিবারই নাসার জুপিটারের ছবি তোলার জন্য বিলিয়ন ডলার দেয়া উচিত নয়। আমেরিকানরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিকিয়ে দিয়ে এই অথর্ব এজেন্সিটার পেছনে টাকা ঢালতে ঢালতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।”
টেঞ্চ নাটকীয়ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “অথব? নাসা কিন্তু অনেক অর্জন করেছে। বিশেষ করে কিছু প্রকল্পের কথা যদি বলি।”
টেঞ্চের মুখ থেকে SETI র কথা বের হতেই সেক্সটন দারুণ অবাক হলো। আরেকটা বড়সড় দেউলিয়া। মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্টেরিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ অপার্থিব জীব অনুসন্ধান প্রকল্পটি নাসার সবচাইতে বড় টাকা গচ্চা দেবার প্রকল্প।
“মারজোরি,” সেক্সটন একটু আক্রমণাত্মকভাবে বললো, “আপনি বলাতেই আমি SETI সম্পর্কে বলছি।”
অদ্ভুত ব্যাপার যে টেঞ্চকে কথাটা কোনোর জন্য খুবই ব্যাকুল বলে মনে হলো।
সেক্সটন গলাটা পরিষ্কার করে নিলেন। “বেশিরভাগ লোকেই জানে না যে, নাসা বিগত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এটা অনুসন্ধান করে যাচ্ছে। এটা এখন খুবই ব্যয়বহুল অনুসন্ধান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এটা এখন সম্পদ বিনষ্ট করার জন্য বিব্রত।”
“আপনি বলতে চাচ্ছেন সেখানে কোনো কিছুই নেই, মানে অপার্থিব জীব বলে কিছুই নেই?”
“আমি বলছি, যদি অন্যকোন সরকারী এজেন্সি পঁয়ত্রিশ বছর ধরে পাঁচচল্লিশ মিলিয়ন ডলার খরচ করে কিছুই না পেত, তবে বহু আগেই সেটাকে কোপানলে পড়তে হত।” সেক্সটন একটু থামলেন। “পঁয়ত্রিশ বছর পর, আমার মনে হয় আমরা কোনো অপার্থিব জীব খুঁজে পাব না।”
“আর আপনার ধারণা যদি ভুল হয়?”
সেক্সটন চোখ দুটো বড় করে ফেললেন। “ওহ্ ঈশ্বরের দোহাই, মিস টেঞ্চ, তো আমি যদি ভুল প্রমাণিত হই, আমি আমার টুপি চিবিয়ে খাব।”
মারজোরি টেঞ্চ তার জন্ডিস চোখ দুটো সিনেটর সেক্সটনের দিকে স্থির করে রাখল, “কথাটা আমার মনে থাকবে, সিনেটর।” এই প্রথম সে হাসলো। “আমার মনে হয় আমাদের সব্বই সেটা মনে রাখবে।”
.
ছয় মাইল দূরে, ওভাল অফিসের ভেতরে, প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি টিভিটা বন্ধ করে এক গ্লাস মদ ঢাললেন। মারজোরি টেঞ্চের টোপটা সিনেটর সেক্সটন গিলে ফেলেছেন।
২৪
রাচেল সেক্সটনকে নীরবে ফসিলযুক্ত উল্কাখণ্ডটি হাতে নিয়ে দেখতে দেখে মাইকেল টোল্যান্ড খুব উৎফুল্ল বোধ করলো। মেয়েটার নিখুঁত সৌন্দর্য এখন নিষ্পাপ বিস্ময়ের সৌন্দর্যে রূপান্ত রিত হয়ে গেছে– একটা বাচ্চা মেয়ে, যে এইমাত্র সান্তাক্লজকে দেখেছে প্রথম বারের মতো।
আমি জানি তোমার কেমন লাগছে, সে ভাবলো।
আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে টোল্যান্ডও ঠিক একইভাবে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। সেও অবাক আর বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এখনও তার ভেতরে এ ঘটনাটার বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক প্রভাব নিয়ে তোলপাড় চলছে। সে প্রকৃতি সম্পর্কে যা ভাবত তা যেনো জোড় করেই বদলাতে হচ্ছে।
টোল্যান্ডের সমুদ্র সংক্রান্ত প্রামাণ্যচিত্রটিতে এর আগে কয়েকটি গভীর জলের অজ্ঞাত প্রজাতি আবিষ্কারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিলো। তারপরও, মহাশূন্যের কোনো ছারপোকা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। হলিউডের বহুল চর্চিত অপার্থিব জীবের চেহারাটা হলো সবুজ রঙের বামনাকৃতির মানুষ, তো বাইরে যদি কোথাও প্রাণী থেকেই থাকে তবে সেটা ছারপোকা জাতীয়ই হবে, কেননা পৃথিবীর পরিবেশ বিবেচনায় নিলে এরকমই অনুমান করতে হয়।
পোকামাকড় হলো ফিলাম আর্থেপড শ্রেণীর অন্তর্গত– যেসব প্রাণীর শক্ত বহিরাবরণ আর জোড়া দেয়া পা থাকে।১.২৫ মিলিয়নেরও বেশি প্রজাতি এবং পাঁচ লক্ষ শ্রেণীতে বিভক্ত পৃথিবীর পোকামাকড় অন্যান্য জীবজন্তুর সম্মিলিত সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। তারা হলো এই গ্রহের প্রাণীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ। এবং Biomass এর ৪০ শতাংশ।
কেবল যে তারা প্রচুর পরিমাণেই আছে তা নয়, বরং নিজেদের স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করে নিতে পারে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেও। এন্টারটিকার গুবরেপোকা থেকে ডেথ-ভ্যালির সান স্করপিয়ন পর্যন্ত, পোকামাকড় খুব স্বাচ্ছন্দেই অতি ঠাণ্ডা আর প্রচণ্ড তাপেও টিকে থাকে। এমনকি প্রচণ্ড চাপেও তারা বেঁচে থাকতে পারে। এই বিশ্বের সবচাইতে প্রাণঘাতি শক্তি বিকিরণ-এর বিপক্ষেও টিকে থাকতে পারে তারা। ১৯৪৫ সালের একটি পারমাণবিক পরীক্ষার পর এয়ারফোর্সের অফিসারেরা বিকিরণপোশাক পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় তেলাপোকা আর পিঁপড়েরা এমনভাবে চলা ফেরা করছে যেনো কিছুই ঘটেনি। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলো যে অর্থপোডের বহিরাবরণ এমন সুরক্ষিত যে, যেকোন প্রকারের বিকিরণ সহ্য করে তারা টিকে থাকতে পারে।
মনে হয় সেই জ্যোতি-পদার্থবিদরা অর্থাৎ এ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্টরা ঠিকই বলেছে, টোল্যান্ড ভাবলো। ইটি একটি ছারপোকা।
রাচেলের পা দুটো খুব দুর্বল মনে হলো। “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না,” সে নিজের হাতে ধরা ফসিলটা উল্টেপাল্টে দেখে বললো। “আমি কখনও ভাবতে পারিনি …”
টোল্যান্ড দাঁত বের করে হেসে বললো, “এটা দেখার পর আমি আমার নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম।”
“নতুন একজন এসেছে দেখছি,” কথাটা বললো খুব লম্বা মত একজন এশিয়ান লোক, তাদের দিকে এলো সে। এশিয়ানরা সাধারণত এত লম্বা হয় না।
কর্কি এবং টোল্যান্ড তাকে দেখে মনে হলো একটু দমে গেলো। সঙ্গত কারণেই জাদুকরী মুহূর্তটা চুড়মার হয়ে গেলো।
“ডক্টর ওয়েলি মিং” নিজের পরিচয় দিয়ে লোকটা বললো, “ইউসিএলএ-র প্যালিওন্টোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান।”
লোকটা পরে আছে সেকেলে ধরণের বো টাই, সেটার সাথে হাটু পর্যন্ত লম্বা একটি কোট, উটের লোমে তৈরি সেটা।
“আমি রাচেল সেক্সটন,” মিংয়ের সাথে হাত মেলাতে গিয়ে রাচেলের হাতটা কাঁপছিল। মিং নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত আরো একজন সিভিলিয়ান বিশেষজ্ঞ।
“খুব খুশি হলাম আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে, মিস সেক্সটন,” লোকটা বললো। “এই ফসিল সম্পর্কে আপনি আরো যা জানতে চান তা বলছি।”
“এবং তুমি যা জানতে চাও না তাও বলা হবে, কর্কি খোঁচা মেরে বললো।
মিং তার বো টাইটা ঠিক করে নিলো। আমার বিশেষ ক্ষেত্ৰই হলো অর্থপোড় আর মিগালোমোরফাই। এই জিনিসটার সবচাইতে বড় যে বৈশিষ্ট্য তা হলো–
“–তাহলো এটা আরেকটা হস্তমৈথুনের গ্রহ থেকে এসেছে!” কর্কি মাঝখানে বললো।
মিং ভুরু কুচকে গলাটা পরিষ্কার করে নিলো। এই প্রজাতির সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য, এটা খুব সুন্দরভাবেই ডারউইনের প্রাণী শ্রেণী বিভাজন আর শ্রেণী বিভাজনের সূত্রাদির সাথে খাপ খেয়ে যায়।”
রাচেল চোখ তুলে তাকালো। তারা এই জিনিসটার শ্রেণীবিভাগও করতে পেরেছে? “আপনি বলতে চাচ্ছেন কিংডম, ফিলাম, স্পিসিজ এ ধরণের কিছু?”
“একেবারে ঠিক, মিং বললো। এই প্রজাতিটা যদি পৃথিবীতে পাওয়া যেত, তাহলে সেটা আইপেড়া হিসেবেই শ্ৰেণীবদ্ধ করা হোতো আর সেটা হোতত উকুনের দুই হাজার প্রজাতির আরেকটি সদস্য।”
“উকুন?” সে বললো। “কিন্তু এটাতো অনেক বড়।
“শ্রেণীবদ্ধ করা আকারের উপর নির্ভর করে না। বাসা বাড়ির বিড়াল আর বনের বাঘ একই প্রজাতির। শ্রেণীবদ্ধ হলো শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার। এই প্রজাতিটা স্পষ্টতই একটি উকুন, এটার সমতল শরীর, সাত জোড়া পা, এবং এর পুনউৎপাদন সক্ষম থলিটা বন্য উকুন, গুটি ছারপোকা, বিচ হলার, কীটপোকা আর Gribble-এর সাথে মিলে যায়। অন্য ফসিলগুলো আরো বেশি স্পষ্ট করে বোঝা যায়—”
“অন্য ফসিল?”
কর্কি আর টোল্যান্ডের দিকে মিং তাকালো।”সে জানে না?”
টোল্যান্ড মাথা ঝাঁকালো।
মিংয়ের চেহারাটা সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। “মিস সেক্সটন আপনি এখনও আসল জিনিসটাই দেখেননি।”
“আরো ফসিল রয়েছে কর্কি মাঝখানে বলে উঠলো, বোঝাই যাচ্ছে মিংয়ের কাছ থেকে কথাটা কেড়ে নিতে চাচ্ছে। “অনেক ফসিল।” কর্কি একটা ফোল্ডার থেকে বড়সড় ভাঁজ করা। কাগজ বের করে সেটা ডেস্কের উপর মেলে রাখলো। “আমরা কিছুটা খনন করার পর একটা। এক্স-রে ক্যামেরা সেখানে ঢুকিয়েছিলাম। এটা হলো উল্কাপিণ্ডটার ভেতরকার একটি চিত্র।”
রাচেল এক্স-রের প্রিন্টটার দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়লো।
চিত্রে দেখা যাচ্ছে ডজনখানেকেরও বেশি ছারপোকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
“এরকমটি হরহামেশাই হয়,” মিং বললো। “মাটি ধ্বসে কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রচুর পরিমানে পোকা-মাকড় আঁটকা পড়ে যায়, অনেক সময় তাদের বাসা কিংবা পুরো সম্প্রদায়টিও আঁটকা পড়তে পারে।”
কর্কি দাঁত বের করে হাসলো। আমাদের ধারণা উল্কাটার ভেতরে যে সগ্রহটা আছে সেটা একটা আস্ত একটি বাসা।” সে ছবির একটা পোকা দেখিয়ে বললো, “আর ইনি হলেন তাদের মা জননী।”
রাচেল ছবিটার দিকে অবিশ্বাসে চেয়ে রইলো, তার মুখ হা হয়ে গেছে। ছবির পোকাটি কম পক্ষে দুই ফিট লম্বা হবে।
“বড় পাছার উকুন, আহ?” কর্কি বললো।
রাচেল উদাসভাবে মাথা নাড়লো।
“পৃথিবীতে,” মিং বললো, “আমাদের ছারপোকারা অপেক্ষাকৃত ছোট থাকে কারণ। মধ্যাকর্ষণ শক্তি তাদেরকে চেপে রাখে। তাদের বহিরাবরণ যতোটা সইতে পারে তারা ততোটাই বড় হয়। আর যে গ্রহে মধ্যাকর্ষণ শক্তি অপেক্ষাকৃত কম বা মৃদু, সেখানে পোকামাকড়গুলো বড় মাত্রায় আকার লাভ করতে পারে।”
“ভাবুন একটি মশার আকার শকুনের মতো, কর্কি ঠাট্টা করলো, ছবির কাগজটা রাচেলের কাছ থেকে নিয়ে পকেটে ভরে ফেললো সে।
মিং ভুরু তুললো। “তুমি এটা চুরি না করলেই ভালো হয়।”
“ধীরে বন্ধু, কর্কি বললো, “আমাদের কাছে আট টন ওজনের জিনিস আছে, এটাতো কিছুই না।”
“কিন্তু মহাশূন্যের প্রাণীদের সাথে পৃথিবীর প্রাণীদের এতো মিল কিভাবে হতে পারে? মানে আমি বলতে চাচ্ছি, আপনি বলেছেন এটা ডারউইনের শ্রেণীবদ্ধতার সূত্রের সাথে খাপ খেয়ে যায়?”
“যথার্থভাবেই, কর্কি বললো, “আর বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, অনেক মহাকাশ বিজ্ঞানীই অনুমান করেছিলেন যে বহির্জগতের প্রাণীদের সাথে পৃথিবীর প্রাণীদের বেশ মিলই থাকবে।”
“কিন্তু কেন?” জানতে চাইলো সে। “এই প্রজাতিটা তো সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ থেকে এসেছে।
“প্যান্সপারমিয়া।” কর্কি চওড়া হাসি দিয়ে বললো।
“কী বললেন?”
“প্যান্সপারমিয়া হলো এমন একটি তত্ত্ব যাতে বলা হয় এখানকার প্রাণীদের বীজ এসেছে। অন্য গ্রহ থেকে।”
রাচেল দাঁড়িয়ে গেলো। “হেয়ালী করছেন।”
কর্কি টোল্যান্ডের দিকে ঘুরলো। “মাইক, তুমি হলে আদিম সমুদ্র মানব।”
টোল্যান্ড খুব খুশি হলো তাকে বলতে হবে বলে। “এই পৃথিবী একসময় ছিলো একেবারেই প্রাণহীন, রাচেল। তারপর, হঠাৎ করেই, যেনো রাতারাতি, জীবনের আবির্ভাব হলো। বেশিরভাগ প্রাণী বিজ্ঞানীই মনে করে জীবনের আবির্ভাব ঘটে আদিম সমুদ্রে একটি জাদুকরি এবং আদর্শ মিশ্রণের ফলে। কিন্তু আমরা কখনই ল্যাবরেটরিতে এটা পুণঃউৎপাদন করতে পারিনি। সুতরাং ধর্মীয় পণ্ডিতেরা এই ব্যর্থতাকে পুঁজি করে ঘোষণা দিলো যে, এটাই প্রমাণ করে ঈশ্বর রয়েছে। ঈশ্বর ছাড়া কোনো প্রাণের জন্ম হতে পারে না।”
“কিন্তু আমরা জ্যোতির্বিদরা, কর্কি বললো, “আরেকটা ব্যাখ্যায় পৌঁছেছি যে, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব হয়েছে রাতারাতি।”
“প্যান্সপারমিয়া, রাচেল বললো, এবার বুঝতে পারলো তারা কী বলতে চাচ্ছে। সে এই তত্ত্বটার কথা আগে শুনেছে কিন্তু নামটা জানতো না। “তত্ত্বটি বলে যে, একটি উল্কাপিণ্ড আদিম সমুদ্রে পতিত হলে এই পৃথিবীর প্রথম এককোষী প্রাণীর সৃষ্টি হয়।”
“বিংগো, কর্কি বললো, “সেখানে তাদের বিকাশ আর বৃদ্ধি ঘটে।”
“আর সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে,” রাচেল বললো, “তাহলে বর্হিজীবের সাথে পৃথিবীর প্রাণীজগতের সাদৃশ্য থাকবেই।”
“আরেকবার বিংগো।”
“তো এই ফসিলটী কেবল অন্য গ্রহে প্রাণ রয়েছে সেটাই প্রমাণ করে না, বরং প্যান্সপারমিয়া তত্ত্বকেও একই সাথে প্রমাণিত করে।”
“আবারো বিংগো।” কর্কি উদ্বেলিত হয়ে সায় দিলো। “টেকনিক্যাল দিক থেকে, আমরা সবাই অপার্থিব জীব।” সে তার আঙুল দুটো এন্টেনার মতো করে মাথার দু’পাশে রাখলো, সেই সাথে জিভ বের করে এমন ভঙ্গী করলো যেনো সে একটি পোকা জাতীয় কিছু।
টোল্যান্ড রাচেলের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে হাসলো। “এই লোকটা হলো বিবর্তনের সর্বশেষ অবস্থার নমুনা।”
২৫
হ্যাবিস্কেয়ারের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে রাচেল সেক্সটনের মনে হলো স্বপ্নের মতো একটা কুয়াশা চারপাশ থেকে জাপটে ধরেছে তাকে। তার সাথে রয়েছে মাইকেল টোল্যান্ড। তার ঠিক পেছনেই কর্কি আর মিং।
“তুমি ঠিক আছো?” টোল্যান্ড জিজ্ঞেস করলো।
রাচেল তার দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত একটা হাসি দিলো, “ধন্যবাদ। একটু একটু বেশি হয়ে গেছে, এই যা।”
তার মনে পড়ে গেলো নাসার এক অখ্যাত আবিষ্কারের কথা– ১৯৯৭ সালে এএলএইচ-৮৪০০১ মঙ্গলের একটি উল্কাখণ্ড, যা নাসা দাবি করেছিলো তাতে ব্যাকটেরিয়ার ফসিল রয়েছে বলে, দুঃখজনক হলো, এক সপ্তাহ পরেই সিভিলিয়ান বৈজ্ঞানিকেরা নাসার। প্রেস কনফারেন্সে প্রমাণ করে দিলো যে পাথরটার মধ্যে জীবনের যে চিহ্ন দেখা যাচ্ছে সেটা পার্থিব সংক্রমণ ছাড়া আর কিছুই না, এটা কোরোজেন দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় নাসার বিশ্বাসযোগ্যতা বিরাট একটি ধাক্কা খায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস এই সুযোগটা লুফে নেয়। তারা ব্যঙ্গ করে নাসার নতুন নাম দেয় নাসা নট অল ওয়েজ সাইন্টিফিক্যালি একুরেইট, অর্থাৎ নাসা সব সময় বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়।
এখন, রাচেল বুঝতে পারলো যে নাসা একটি অকাট্য প্রমাণ পেয়ে গেছে। কোনো অবিশ্বাসী বৈজ্ঞানিক এইসব ফসিলকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। নাসা আর টাউট বাটপার নয়। তারা এবার কয়েক ফুট দীর্ঘ প্রাণী বা উকুনের ছবি এবং প্রমাণ দুটোই দেখাতে পারবে। খালি চোখেই সেটা দেখা যাবে!
রাচেল তার শৈশবে ডেভিড বাওয়ির গানের কথা মনে করে হেসে ফেললো। পপ তারকা বাওয়ি’র গানটার শিরোনাম মঙ্গল থেকে এলো মাকড়। খুব কম লোকেই অনুমান করতে পেরেছিল যে, আজকের এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী মুহূর্তটা এই পপ গায়কই ভবিষ্যত্বাণী করে গিয়েছিলেন তার গানে।
রাচেলের মনের গহীনে যখন গানটা বাজছিল তখন কর্কি তার পাশে এসে দাঁড়াল। “মাইক কি তার প্রামান্য চিত্রটা এখনও করতে পেরেছে?”
রাচেল জবাব দিলো, “না, কিন্তু আমি সেটা দেখতে চাই।”
কর্কি টোল্যান্ডের পাছায় চাপর মেরে বললো, “এগিয়ে যাও, বড় ছেলে। মেয়েটাকে বলো প্রেসিডেন্ট কেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটার দায়িত্ব ছোকরাটাইপের টিভি স্টারের হাতে দিলেন।”
টোল্যান্ড আতকে উঠলো। “কর্কি তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে?”
“চমৎকার, আমি ব্যাখ্যা করবো, কর্কি বললো, তাদের পথ আগলে দাঁড়ালো সে। “আপনি হয়তো জানেন মিস সেক্সটন, আজ রাতে প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে এই খবরটা জানাবেন। যেহেতু পৃথিবীর বেশির ভাগ লোকই অর্ধেক গাধা, তাই প্রেসিডেন্ট সেই গর্দভদেরকে বোঝানোর জন্য মাইককেই দায়িত্ব দিয়েছেন।”
“ধন্যবাদ, ককি,” টোল্যান্ড বললো। খুব ভালো বলেছো,” সে রাচেলের দিকে তাকালো। “কর্কি যা বলতে চাচ্ছে তা হলো, যেহেতু এই ব্যাপারটা খুবই জটিল বৈজ্ঞানিক হিসাব আর উপাত্তের ব্যাপার তাই সাধারণ জনগণ, যাদের এ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর উপর বড় কোনো ডি। নেই, তাদের জন্য সহজবোধ্য করে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে।”
“আপনি কি জানেন,” কর্কি রাচেলকে বললো, “আমি এইমাত্র জানতে পারলাম যে, আমাদের প্রেসিডেন্ট বিস্ময়ক সমুদ্রর একজন বড় ভক্ত।” সে তিক্তভাবে মাথা নাড়লো। “জাখ হার্নি –এই মুক্ত বিশ্বের শাসক– তার সেক্রেটারিকে প্রামান্যচিত্রটি রেকর্ড করে রাখতে বলেন যাতে পরবর্তীতে তিনি সেটা দেখতে পারেন।
টোল্যান্ড কাঁধ ঝাঁকালো। “লোকটার রুচি আছে, আর কি বলবো আমি?”
রাচেল এবার বুঝতে পারলো প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাটা কতো বেশি নিখুঁত। রাজনীতি হলো মিডিয়ার খেলা। জাখ হার্নি তাঁর কাজের জন্য আদর্শ সব মানুষদেরকেই বেছে নিয়েছেন। সন্দেহবাদীরা তথ্যটাকে চ্যালেঞ্জ করতে বিপাকে পড়ে যাবে যখন তারা দেখবে দেশের সেরা বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এবং কতিপয় শ্রদ্ধেয় সিলিভিয়ান বিজ্ঞানী সেটাকে সমর্থন করছে।
কর্কি বললো, “মাইক তার প্রামান্যচিত্রের জন্য আমাদের সবার ভিডিও ইতিমধ্যেই তুলে নিয়েছে। নাসার সেরা বিশেষজ্ঞদেরও নিয়েছে সে। আর আমি আমার ন্যাশনাল মেডেলটা দিয়ে বাজি ধরতে পারি, আপনি হলেন তার পরবর্তী টার্গেট।”
রাচেল তার দিকে তাকালো। “আমি? আপনি বলছেন কি? আমার তো বলার কিছু নেই। আমি একজন ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো।”
“তাহলে প্রেসিডেন্ট আপনাকে এখানে পাঠিয়েছেন কেন?”
“তিনি এখনও সেটা আমাকে বলেননি।”
কর্কির ঠোঁটে মজার হাসি দেখা দিলো। “আপনি হোয়াইট হাউজ ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো যে ডাটার সত্যতা আর গ্রহনযোগ্যতা নিশ্চিত করে, ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ তা ঠিক, কিন্তু বৈজ্ঞানিক কিছু নয়।”
“আর আপনি হলেন এমন একজনের মেয়ে যে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, নাসা’কে বেশি টাকা দেয়া হচ্ছে, সেগুলো জলে যাচ্ছে?”
রাচেল জানতো এটা শুনতে হবে।
“আপনাকে মানতেই হবে, মিস সেক্সটন,” মিং উফুল্ল হয়ে বললো, “প্রামাণ্য চিত্রটাতে আপনার উপস্থিতি নতুন একটি মাত্রা যোগ করবে। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করবে। তিনি যদি আপনাকে এখানে পাঠিয়েই থাকেন তবে অবশ্যই চাচ্ছেন আপনি এতে অংশ নিন।”
রাচেলের মনে পড়ে গেলো পিকারিংয়ের কথাটা, তাকে ব্যবহার করা হবে।
টোল্যান্ড তার হাত ঘড়িটা দেখলো। “আমরা এসে গেছি,” সে বললো, হ্যাবিস্ফেয়ারের মাঝখানে ইঙ্গিত করলো, “হয়তো প্রায় পৌঁছে গেছে।”
“কিসে পৌঁছে গেছে?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। “তুলতে। নাসা উল্কাপিণ্ডটি উপরে তুলে আনছে। যেকোন সময়ে সেটা তোলা হবে।”
রাচেল দারুণ অবাক হলো। “আপনারা আসলে আট টন ওজনের পাথরটা দুশত ফিট কঠিন বরফের নিচ থেকে তুলে আনছেন?”
কর্কি দাঁত কামড়ে বললো, “আপনি কি ভেবেছেন নাসা এরকম একটি আবিষ্কার বরফের নিচে ফেলে রেখে যাবে?”
‘না, কিন্তু “ রাচেল ভোলার জন্য বড়সড় কোনো যন্ত্রপাতি দেখতে পেলো না। হ্যাবিস্ফেয়ারের কোথাও এসবের কোনো চিহ্ন নেই।”নাসা কীভাবে এটা তুলে আনবে?”
কর্কি আবারো উৎফুল্ল হয়ে উঠল। “কোনো সমস্যা নেই। আপনি এমন একটা ঘরে আছেন যেখানে রকেট বিজ্ঞানীতে পরিপূর্ণ!”
রাচেলের দিকে তাকিয়ে মিং বললো, “ডক্টর মারলিনসন লোকজনের মাংসপেশী টান টান করতে উপভোগ করেন। সত্য হলো, এখানকার সবাই এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছে, উল্কাপিণ্ডটি কীভাবে তোলা হবে। ডক্টর ম্যাঙ্গোর একটা সমাধানের কথা প্রস্তাব করেছেন।”
“আমি ডক্টর ম্যাঙ্গেরের সাথে এখনও পরিচিত হইনি।”
“নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবাহবিদ,” টোল্যান্ড বললো। “চতুর্থ এবং শেষ সিভিলিয়ান বিজ্ঞানী।
“ঠিক আছে, রাচেল বললো।”তো এই লোকটা কি প্রস্তাব করছে?”
“লোক নয় ছুরি,” মিং ধরে দিলো। “ডক্টর ম্যাঙ্গোর একজন মহিলা।”
“তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার, কর্কি হেসে রাচেলের দিকে তাকালো। আর একটা কথা, ডক্টর ম্যাঙ্গোর আপনাকে মোটেও পছন্দ করবে না।”
টোল্যান্ড করি দিকে রেগেমেগে তাকালো।
“সে তাই করবে!” কর্কি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বললো, “সে প্রতিযোগীতা পছন্দ করে না।
রাচেল কিছুই বুঝতে পারলো না। “বুঝলাম না? প্রতিযোগীতা?”
“কর্কির কথাকে পাত্তা দিও না, টোল্যান্ড বললো। তুমি এবং ডক্টর ম্যাঙ্গেীরের মধ্যে কোনো সমস্যাই হবে না। সে একজন পেশাদার। তাকে মনে করা হয় বিশ্বের সেরা হিমবাহবিদ হিসেবে। সে আসলে কয়েক বছর আগে হিমবাহ গবেষণার জন্য এন্টারটিকাতে এসেছে।”
“অদ্ভুত, কর্কি বললো। “আমি শুনেছি ইউএনএইচ কিছু চাঁদা তুলে তাকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে তারা তাদের ক্যাম্পাসে শান্তিতে থাকতে পারে।”
“তুমি কি জান, মিং চট করে বললো, মনে হলো মন্তব্যটা সে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছে, “ডক্টর ম্যাঙ্গোর এখানে প্রায় মরতে বসেছিলো! সে এক ঝড়ে হারিয়ে গিয়েছিল এবং সিল মাছের চর্বি খেয়ে বেঁচেছিলো পাঁচ সপ্তাহ, তারপর তাকে উদ্ধার করা হয়।”
কর্কি চাপা কণ্ঠে রাচেলকে বললো, “আমি শুনেছি কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি।”
২৬
সিএনএন স্টুডিও থে কে লিমোজিনে করে সেক্সটনের অফিসে ফেরার সময় গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের কাছে পথটা খুবই দীর্ঘ বলে মনে হলো। সিনেটর তার মুখোমুখি বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন, বিতর্কটা নিয়ে ভাবছেন।
“তার টেঞ্চকে দুপুরের টিভি শো তে পাঠিয়েছে,” তিনি পাশ ফিরে একটু হেসে বললেন।”হোয়াইট হাউজ পাগল হয়ে গেছে।”
গ্যাব্রিয়েল মাথা নাড়লো। কোনো মন্তব্য করলো না। সে মারজারি টেঞ্চের চেহারায় একধরণের প্রচ্ছন্ন তৃপ্তির আভাস দেখেছে। এটাই তাকে ঘাবড়ে দিয়েছে।
সেক্সটনের সেলফোনটা বেজে উঠলো। অন্য রাজনীতিবিদদের মতই সেক্সটনের ফোন নাম্বারও হাতে গোনা লোকদের কাছেই রয়েছে। কার কাছে নাম্বার থাকবে সেটা নিক্স করে কে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যে-ই এখন ফোন করুক না কেন, সে তার তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে, ফোনটা এসেছে এমন একটি নাম্বার থেকে যেটা গ্যাব্রিয়েলও জানে না।
“সিনেটর সেজউইক সেক্সটন বলছি,” তিনি বললেন।
লিমোজিনের শব্দের কারণে গ্যাব্রিয়েল ফোনের অপর প্রান্তের লোকটার কথা শুনতে পেলো না। সেক্সটন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন, উকু হয়ে জবাব দিলেন। “চমৎকার। আপনি ফোন করাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি ভাবছি ছয়টার দিকে? চমৎকার
ওয়াশিংটন ডিসিতে আমার একটি এপার্টমেন্ট রয়েছে, ব্যক্তিগত ও আরামদায়ক। ঠিকানাটা জানেন, ঠিক আছে? ওকে, দেখা হবে। গুডবাই।”
সেক্সটন ফোন রেখে দিলেন। তাকে খুবই তৃপ্ত দেখাচ্ছে।
“সেক্সটনের কোনো নতুন ভক্ত?” গ্যাব্রিয়েল জিজ্ঞেস করলো।
“তারা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে,” বললেন তিনি। “এই লোকটা জবরদস্ত।”
“তাই হবে। তোমার এপার্টমেন্টে দেখা করবে?” কোনো সিংহ যেমন তার গুহাকে রক্ষা করে সেক্সটন তার এই এপার্টমেন্টের ব্যাপারে ঠিক সেই রকম গোপনীয়তা বজায় রাখে।
সেক্সটন কাঁধ ঝাঁকালেন। “হা। ভাবলাম, তার সাথে একটু ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হই। এই লোকটা কিছু কাজে লাগবে। বেশ ভালো কাজই হবে তাকে দিয়ে।”
গ্যাব্রিয়েল মাথা নাড়লো। সেক্সটনের দৈনিক পরিকল্পনার নোটটা বের করলো। “তুমি কি তাকে তোমার দিনপঞ্জিকায় রাখতে চাও?”
“তার দরকার নেই। আমি রাতে বাড়িতে থাকার কথা ভাবছি।”
গ্যাব্রিয়েল আজ রাতের পাতাটাতে দেখতে পেলো সেখানে সেক্সটন নিজের হাতে বড় বড় করে লিখে রেখেছেন পিই’– সেক্সটনের নিজের শর্টহ্যান্ড, যার মানে প্রাইভেট ইভিনিং পারসোনাল ইভেন্ট, অথবা সবার ওপরে পেচ্ছাব করা, কেউ জানে না কোনোটা। যতই দিন যাচ্ছে সিনেটরের দৈনিক তালিকায় পিই’র সংখ্যা বাড়ছেই। নিজের এপার্টমেন্টে দরজা বন্ধ করে, সেলফোনটা বন্ধ রেখে, তার উপভোগ করার যা তাই করেন –পুরনো বন্ধুদের সাথে বসে মদ খাবেন আর ভান করবেন আজকের রাতের জন্য তিনি রাজনীতি ভুলে গেছেন।
গ্যাব্রিয়েল তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো, “তো, তুমি আগে থেকেই এই মিটিংটা ঠিক করে রেখেছিলে? আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি।”
“এই লোকটা আজরাতে আমার সময় হলে একটু আসবে। কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলবো। দেখি লোকটা কী বলে?”
গ্যাব্রিয়েল চাইছিলো এই রহস্যময় লোকটা কে সেটা জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু সেক্সটন বলতে চাচ্ছেন না। গ্যাব্রিয়েল জানে কখন নাক গলাতে নেই।
তারা যখন সেক্সটনের অফিসের দিকে যাচ্ছে তখন গ্যাব্রিয়েল আবারো পিই লেখাটার দিকে তাকালো। সেক্সটন আগে থেকেই জানে মিটিণ্টা হবে।
২৭
নাসা’র হ্যাবিস্ফেয়ারের মাঝখানকার বরফের ওপর একটা তিন পায়াবিশিষ্ট স্থাপনা বসান হয়েছে, যেটা দেখতে তেল উত্তােলনের রিগ এবং আইফেল টাওয়ারের সংমিশ্রণের মতো। রাচেল জিনিসটা ভাল করে দেখে কোনোভাবেই বুঝতে পারলো না এটা দিয়ে কী করে বিশাল একটি উল্কাখণ্ডকে তোলা হবে।
টাওয়ারটা নিচে পা-গুলো ক্রু দিয়ে বরফের সাথে আঁটকে দেয়া হয়েছে। উপর থেকে লোহার তার নামানো, একটী পুলির সাথে তারগুলো সংযুক্ত। আর ঠিক মাঝখানের বরফের মধ্যে ছোট্ট একটা ছিদ্র করা হয়েছে, ঐ ছিদ্রের ভেতরে তারটা ঢোকানো আছে। নাসার বেশ কয়েকজন লোক তারগুলো টানটান করে রেখেছে, যেনো তারা নিচ থেকে কোনো নোঙর টেনে তুলছে।
কিছু একটা বোঝা যাচ্ছে না, রাচেল অবলো, সে ঐ জায়গাটার বেশ কাছে চলে এলো সে। লোকগুলো মনে হচ্ছে বরফ ভেদ করে সরাসরি উল্কাখণ্ডটি টেনে তুলছে।
“আরো টান দাও! ধ্যাত্!” একটা মহিলা বলে উঠলো খুব কাছেই।
রাচেল দেখলো ছোটখাটো একজন মহিলা, হলেদ রঙের বরফ জামা পরে আছে, সারা পোশাকে তেল লাগা। সে রাচেলর দিকে পেছন ফিরে আছে। তারপরও রাচেল বুঝতে পরলো সেই এই কর্মকাণ্ডের দলনেতা।
কর্কি ডাক দিলো, “হেই, নোর, এইসব নাসা বেচারিদের সাথে মাতুব্বরি বাদ দিয়ে আমার সাথে একটু রঙ্গ করতে আসো তো।”
মহিলা এমন কি ফিরেও তাকালো না। “মারলিনসন, তুমি? আমি জানতাম এই ন্যাকা কণ্ঠটা সবজায়গাতেই আছে। সাবালক হবার পর আমার কাছে এসো।”
কর্কি রাচেলের দিকে তাকালো। “নোরা তার সৌন্দর্য দিয়ে আমাদেরকে উষ্ণ করে রাখে।”।
“সেটা আমি শুনেছি স্পেস বালক,” ডক্টর ম্যাঙ্গোর পাল্টা বললো। এখনও নোট টুকে নিচ্ছে। “তুমি আমার পাছাটা ভাল করে দেখে নাও, ত্রিশ পাউন্ডের।”
“কোনো ভয় নেই, কর্কি বললো, “তোমার লোমশ পাছা আমাকে পাগল করেনি, করেছে তোমার চমৎকার ব্যক্তিত্ব।”
“আমাকে কামরাও।”
কর্কি আবারো হাসলো। “দারুণ খবর রয়েছে আমার কাছে, নোরা, প্রেসিডেন্ট যাদের নিযুক্ত করেছে তার মধ্যে তুমি একাই মেয়ে মানুষ নও।”
“তা হবে কেন। সে তোমাকেও যে নিয়েছে।”
টোল্যান্ড এবার বললো, “নোরা, তোমার কি একটু সময় হবে, একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো?”।
টোল্যান্ডের কণ্ঠটা শুনে নোরা তার কাজ থামিয়ে তাদের দিকে ফিরল। তার খটমটে চেহারাটা সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেলো। “মাইক!” সে ভুরু কুচকে তার দিকে এগিয়ে এলো, “তোমাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে দেখিনি যে?”
“আমার প্রামান্যচিত্রটা এডিট করছিলাম।”
“আমার অংশটা কেমন হয়েছে?”
“তোমাকে দারুণ আর চমৎকার লাগছিলো।”
“এজন্য তাকে স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করতে হয়েছে, কর্কি বললো।
নোরা মন্তব্যটা কানেই নিলো না, রাচেলের দিকে তাকালো, খুবই ভদ্রভাবে। সে আবারো টোল্যান্ডের দিকে তাকালো।
“আশা করি তুমি আমার সাথে চিটিং করছে না, মাইক।”
টোল্যান্ড মুচকি হেসে একটু বিব্রত হলো যেন, সে পরিচয় করিয়ে দিলো। “নোরা, পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, রাচেল সেক্সটন। মিস্ সেক্সটন ইন্টেলিজেন্সে আছে। সে এখানে প্রেসিডেন্টের অনুরোধে এসেছে। তার বাবা সিনেটর সেজউইক সেক্সটন।”
নোরা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। “আমি কোনো ভান করব না।” নোরা রাচেলের সাথে আন্তরিকতাশূন্য করমর্দন করার সময় নিজের হাত মোজাটা পর্যন্ত খুললো না। “স্বাগতম, পৃথিবীর শীর্ষে।”
রাচেল হেসে ধন্যবাদ জানালো। দেখতে পেলো নোরার বাদামী ও হাল্কা ধূসরের মিশ্রনে চোখ দুটো খুবই তীক্ষ্ণ। তাতে রয়েছে লোহার মত শক্তি আর আত্মবিশ্বাস, এটা রাচেলের ভালো লাগলো।
“নোরা,” টোল্যান্ড বললো।” তুমি কি করছ সে ব্যাপারে একটু রাচেলকে বলবে?”
নোরা তার ‘ভুরু তুলে বললো, “তোমরা দুজন দেখি ইতিমধ্যে নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে? আচ্ছা!”
কর্কি আক্ষেপে বললো, “আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, মাইক।”
নোরা ম্যাঙ্গোর রাচেলকে টাওয়ারের সামনে নিয়ে গিয়ে সবকিছু বিস্তারিত বলতে শুরু করলো, এই ফাঁকে টোল্যান্ড বাকিদের সাথে একটু দূরে গিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলো।
“তিন পার নিচে ছিদ্রগুলো দেখতে পেরেছো?” নোরা জিজ্ঞেস করলো।
রাচেল মাথা নাড়লো। বরফের মধ্যে কয়েকটা ফুটোর দিকে তাকালো, প্রত্যেকটি ফুটো এক ফুট হবে। আর তার ভেতরে স্টিলের তার ঢোকানো রয়েছে।
“এইসব ফুটো করা হয়েছিলো যখন আমরা পাথরটার ভেতরে ভুল করে নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম, এক্সরে ছবি তুলেছিলাম তখন। এখন সেগুলোকে আবার ব্যবহার করে উল্কাটার গায়ে কিছু ক্রু লাগিয়ে নিচ্ছি। এরপর আমরা কয়েকশত ফুট তার সেটার মধ্যে ফেলে দেবো, প্রতিটি ফুটোর মধ্যেই। ক্রুগুলোর সাথে তারগুলো আঁটকিয়ে টেনে তুলে ফেলবো। এইসব ছুরিদের এই জিসিনটা তুলতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে।কিন্তু সেটা উঠবেই।”
“আমি ঠিক বুঝতে পারলোম না,” রাচেল বললো। “উল্কাটা হাজার হাজার টন বরফের নিচে রয়েছে। আপনাআপনি এটা এভাবে কেমনে টেনে তুলবেন?”
নোরা স্থাপনাটির ঠিক ওপরে একটা লাল আলোক রশ্মির দিকে ইঙ্গিত করলো। সেটা সোজা নিচে গিয়ে পড়েছে। রাচেল এটা প্রথমে দেখলেও ভেবেছিল কোনো চিহ্ন দেবার জন্য আলোটা ব্যবহার করা হয়েছে।
“এটা হলো গালিয়াম আমেনাইড সেমিকন্ডাক্টর লেজার, নোরা বললো।
রাচেল আলোক রশ্মির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পেলো সেটা আস্তে আস্তে বরফ গলিয়ে ফেলছে।
“খুবই উত্তপ্ত কিন্তু, নোরা বললো। “আমরা উল্কাটা গরম করতে করতে তুলবো।”
রাচেল নোরার এই সহজ-সরল পরিকল্পনাটার কথা ভেবে মুগ্ধ হলো। লেজারের প্রচণ্ড উত্তাপে উল্কা খণ্ডটি গলবে না, কিন্তু পাথরটা গরম হয়ে চারপাশের বরফ গলিয়ে আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠতে থাকবে। উপর থেকে টান দেয়া সেই সাথে গরম পাথরের বরফ গলিয়ে ফেলা, এই দুটো এক সাথে করা হলে পাথরটা ওঠান কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। চারপাশের বরফের মধ্যে খাজ কেটে কেটে পাথর খণ্ডটি উঠে আসবে।
অনেকটা জমে থাকা মাখনের ভেতর দিয়ে গরম ছুরি চালানর মতো।
নোরা নাসার লোকদের দিকে তাকিয়ে চোখ কুকালো।”জেনারেটর এতো শক্তি দিতে পারবে না, তাই আমি লোকজন ব্যবহার করেছি সেটা টেনে তোলার জন্য।”
“ফালতু যুক্তি।” কর্মরতদের মধ্যে একজন বললো। “সে আমাদের ব্যবহার করেছে কারণ সে আমাদেরকে ঘামতে দেখতে চায়!”
“শান্ত হও,” নোরা পাল্টা বললো, “তোমরা মেয়েরা দুদিন ধরে ঠাণ্ডায় জমে গিয়েছিলে। আমি তা থেকে তোমাদের মুক্ত করেছি। এখন, সুবোধ বালকের মতো টেনে যেতে থাকো।”
কর্মরতরা হেসে উঠলো।
“লোহার পিলারগুলো কিসের জন্য?” রাসেল টাওয়ারটার চারপাশে এলোমেলোভাবে পোঁতা কতগুলো পিলারের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলো।
“হিমবাহবিদ্যার ক্রিটিক্যাল যন্ত্রপাতি, নোরা বললো। “আমরা তাদেরকে বলি SHABA। এর অর্থ হলো, ‘স্টে হিয়ার এ্যান্ড ব্রেক এ্যাংকেল’। সে একটা পিলার তুলে নিয়ে। গোল ছিদ্রটা উন্মোচিত করলো, সেটা যেনো অন্তহীন কুয়ার মতোই। “পা রাখার জন্য বাজে জায়গা।” সে পিলারটা অন্য কোথাও রাখল। “আমরা পুরো হিমবাহের অনেক জায়গাতেই। এরকম ছিদ্র করেছি চেক করার জন্য। আর্কিওলজির নিয়ম অনুসারে, কোনো বস্তু কত বছর ধরে চাপা পড়ে আছে সেটার নির্দেশ করে কত নিচে চাপা পড়ে আছে তার ওপর। যত। গভীরে পাওয়া যাবে ততোই বেশি ধরে নিতে হবে। অনেক জায়গায় এটা পরীক্ষা করে দেখা হয়, কারণ বস্তুটা ভূমিকম্প, তুষার ধ্বস এবং বিচ্যুতি বা ফাঁটলের শিকারও হতে পারে, তাই হিসাবটা সঠিক করার জন্য এতো বেশি ডাটা সংগ্রহ করতে হয়।”
“তো, হিমবাহটা কেমন দেখলেন?”
“নিখুঁত,” বললো নোরা, “একেবারে নিখুঁত আর শক্ত পাটাতন। কোনো ফাঁটল নেই অথবা হিমবাহের উল্টে যাওয়ারও কোনো চিহ্ন নেই। এই উল্কাটি, যাকে আমরা বলে থাকি ‘নিঃশব্দ পতন, এটা এই বরফে পড়ার পর থেকে একেবারে অক্ষত আছে। সেই ১৭১৬ সাল থেকেই।”
রাচেল প্রশ্ন করলো, “আপনারা এটার একেবারে নির্দিষ্ট বছর পর্যন্ত জেনে গেছেন?”
প্রশ্নটা শুনে মনে হলো নোরা অবাকই হয়েছে। “অবশ্যই। এজন্যেই তো তারা আমাকে এখানে ডেকে এনেছে। আমি বরফ পড়তে পারি।” সে কিছু চোঙাকৃতির এক সারি বরফের দিকে ইঙ্গিত করলো। প্রতিটাতেই কমলা রঙের ট্যাগ লাগানো রয়েছে। এইসব বরফ হলো জমে থাকা ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড।” সে ওগুলোর সামনে গেলো। “তুমি যদি আলো করে দেখো তবে দেখতে পাবে বরফের স্তরগুলো খুবই স্পষ্ট।”
রাচেল কথামত তাই দেখতে পেলো, প্রতিটি স্তরই আনুমানিক আধ ইঞ্চির মতো পুরু হবে।
“প্রতি শীতেই প্রচুর বরফ পড়ে থাকে,” নোরা বললো, “আর প্রতি বসন্তেই তার আংশিক ক্ষয় হয়। সুতরাং প্রত্যেক বছরই আমরা নতুন একটি স্তর পাবো। আমরা উপর থেকে শুরু করি, মানে সাম্প্রতিক শীতটা থেকে, তারপর নিচের দিকে যাই।”
“অনেকটা গাছের গুঁড়ির ভেতরকার রিং গোনার মতো।
“ঠিক ততোটা সহজ নয়, মিস সেক্সটন। মনে রাখবে, আমরা শত শত ফুট স্তর হিসাব করি। আমাদেরকে আবহাওয়া আর জলবায়ুর অনেক কিছুও হিসেবের মধ্যে রাখতে হয়।”
টোল্যান্ড এবং বাকিরা এবার তাদের সঙ্গে আবারো যোগ দিলো। টোল্যান্ড রাচেলের দিকে তাকিয়ে হাসলো।সে বরফ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে, তাই না?”
রাচেল তাকে দেখে খুব খুশি হলো। “হ্যাঁ, সে দারুণ জানে।”
“আর বলে রাখি,” টোল্যান্ড বললো, “ডক্টর ম্যাঙ্গেরের ১৭১৬ সালের হিসেবটা একদম ঠিক। আমরা এখানে আসার আগে নাসাও ঠিক এই হিসেবটা বের করেছিলো। ডক্টর ম্যাঙ্গোর তার নিজের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নাসার দাবিটার সত্যতা খুঁজে বের করেছে।
রাচেল মুগ্ধ হলো আবারো।
“আর কাকতালীয়ভাবেই,” নোরা বললো, “প্রথম দিককার অভিযাত্রীরা উত্তর কানাডা থেকে এই তারিখে আকাশে উজ্জ্বল অগ্নিস্ফুলিঙ্গের দেখা পেয়েছিলো। এই উল্কাটি জাঙ্গারসল, ফল নামে পরিচিত, অভিযাত্রী দলের নেতার নামানুসারে এটা দেয়া হয়েছিলো।”
“তাহলে সবকিছু দেখে বোঝা যাচ্ছে আমরা আসলে জাঙ্গাসল ফল উল্কাটাকেই পেয়েছি।” কর্কি বললো।
“ডক্টর ম্যাঙ্গোর!” নাসার কর্মীরা ডাক দিলো তাকে, মনে হয় মাখাটা দেখা যাচ্ছে!”
“তুলো ওটা,” নোরা বললো, “সত্যের মুহূর্ত এটা।”
সে একটা ফোল্ডিং চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়ালো, তারপর প্রাণপণে চিৎকার করলো। “পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপরে উঠছে, সবাই শুনে রাখো!”
পুরো হ্যাবিস্ফেয়ারের সব লোকজন তার দিকে তাকালো, ছুটে এলো সেই জায়গায়।
নোরা ম্যাঙ্গোর কোমরে দুহাত রেখে কর্মীদের দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিলো। “ঠিক আছে, এবার টাইটানিককে তোলা হোক।”
২৮
“সরে দাঁড়াও!” নোরাহ গর্জে বললো, লোকজনের ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলো সে। কর্মীরা সবাই সরে দাঁড়ালো। নোরা পরখ করে দেখলো তারগুলো ঠিক আছে কিনা।
‘টান মারো?” নাসার একজন কর্মী চিৎকার করে বললো। লোকজন জোরে টান মারতে তারটা আরো ছয় ইঞ্চি উপরে উঠে এলো।
রাচেলের মনে হলো ভীড়টা আরো সংকুচিত হয়ে আসছে। কর্কি আর টোল্যান্ড পারে দাঁড়িয়ে আছে, ক্রিসমাসের বাচ্চাদের মতো লাগছে তাদের। দূরে নাসার প্রধান বিশ আকৃতির লরেন্স এক্সট্রম এসে সবকিছু দেখছে।
“জোরে!” নাসার একজন কর্মী বললো। “বস দেখছে!”
“আরো ছয় ফুট! টানতেই থাকো!”
চারপাশের সবাই নিশুপ হয়ে গেলো, যেনো স্বর্গীয় কিছুর আবির্ভাব হচ্ছে –সবাই চাচ্ছে প্রথম দেখাটা দেখতে।
এরপরই রাচেল সেটা দেখতে পেলো। পাতলা বরফের স্তর থেকে, অস্পষ্ট সেটা কিন্তু উঠে আসছে। উল্কাখণ্ডটির দেখা মিলছে। যতোই উপরে উঠছে ততো বেশি স্পষ্ট হচ্ছে সেটা
শক্ত করে ধরে রাখো!” একজন বললো। তারটা আঁটকে দেয়া হলো। খ্যা করে একটা শব্দ হলো তাতে।
“আরো পাঁচ ফিট তোলো!”
রাচেল এবার বরফের উপরে একটা গর্ভবতী জানোয়ারের মতো জিনিসটাকে দেখতে পেলো।
“সংকীর্ণ স্থানটির বর্ণনা দাও!” কেউ চিৎকার করে বললো।
“নয়শ সেন্টিমিটার!”
একটা হাসিতে নিরবতা ভাঙলো।
“ঠিক আছে, লেজারটা বন্ধ করে দাও!”
সুইচটা বন্ধ করতেই লেজারটা থেমে গেলো। তারপরই সেটা ঘটলো।
যেনো প্রাচীন কোনো দেবতার মতো, বিশাল পাথরটা জলীয়বাষ্প সহকারে, হিসহিস শব্দ করে বরফের ওপরে উঠে এলো। উষ্ণ পানি বেয়ে পড়ছে সেটার গা থেকে।
রাচেল সম্মোহিত হয়ে গেলো।
পাথরটা মসৃণ এবং একমাথা গোলাকার। এই অংশটাই সংঘর্ষের কবলে প্রথমে পড়েছিলো। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় সম্মুখ দিকে ছিলো। জিনিসটা দেখেই রাচেল কল্পনা করতে পারলো, শত শত বছর আগে এটা কীভাবে আকাশ থেকে পতিত হয়েছিলো। এখন এটা লোহার তারে আটকে ঝুলে রয়েছে। শরীর থেকে পানি ঝরে পড়ছে।
শিকার পর্ব শেষ হয়েছে।
শুধু এই মুহূর্তটাই যে রাচেলকে আচ্ছন্ন করেছে, তা নয়, তার সামনে ঝুলে থাকা বস্তুটা অন্য একটি দুনিয়া থেকে এসেছে। লক্ষ-কোটি মাইল দূর থেকে। আর আঁটকে গিয়ে একটি প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে যে, মানুষ এই মহাবিশ্বে একা নয়।
এই মুহূর্তটার রমরমা অবস্থা একই সময়ে এখানকার সবাইকেই ছুঁয়ে গেছে, জড়ো হওয়া লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাইে হাত তালি দিয়ে উঠল। এমনকি নাসার প্রধানও হাত তালি দিলো। সে তার লোকজনদের পিঠ চাপড়ে দিলো। রাচেল দেখে বুঝতে পারলো, এটা নাসার জন্য বিরাট এক আনন্দের মুহূর্ত। অতীতে তাদের খুব কঠিন সময় গেছে। শেষে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। তারা এই মুহূর্তটার জন্য যোগ্য।
বরফের মাঝখানটায়, যেখান দিয়ে পাথরখণ্ডটা উঠে এসেছে, এখন সেটাকে একটা সুইমিং পুলের মতোই লাগছে। এই গর্তটা দুশো ফুট গভীর আর বরফগলা পানিতে পূর্ণ। গর্তের পানি পৃষ্ঠ থেকে চার ফুট নিচে। উল্কাখণ্ডটির অনুপস্থিতি এবং বরফ থেকে পানি হওয়ায় চার ফুটের মতো কম পানি রয়েছে, কারণ পানির চেয়ে বরফের আয়তন বেশি হয়।
নোরা ম্যাঙ্গোর সঙ্গে সঙ্গে SHABA পিলারগুলো গর্তের চারপাশে বসিয়ে দিলো। যদিও গর্তটা খুব সহজেই দৃষ্টিগোচরে আসে, তারপরও কেউ যদি কৌতূহলবশত ওখানে উঁকি মারতে গিয় পিছুলে পড়ে যায় তাহলে ভয়ংকর বিপদ হবে। গর্তটার দেয়াল কঠিন বরফের, কোনো ছিদ্র বা খরখরে স্থান নেই। কারো সাহায্য ছাড়া ওখান থেকে উঠে আসা অসম্ভব।
লরেন্স এক্সট্রম এগিয়ে এসে নোরার সাথে হাত মেলালো। “চমৎকার করেছেন, ডক্টর ম্যাঙ্গোর।”
“আমি পত্র-পত্রিকায় অনেক বেশি প্রশংসা আশা করছি, ননীরা জবাব দিলো।
“আপনি সেটা পেয়েই গেছেন বলা যায়,” নাসা প্রধান এবার রাচেলের দিকে তাকালো। তাকে দেখে খুশি আর নির্ভার মনে হচ্ছে। “তো, মিস সেক্সটন, পেশাদার সন্দেহবাতিকা কি সম্ভষ্ট হবে?”
রাচেল না হেসে পারলো না। “বিস্ময়ের চেয়েও এটা বেশি।”
“ভালো। তাহলে এবার একটু আসেন।”
.
রাচেল নাসার প্রধানের সঙ্গে হ্যাবিস্ফেয়ারের অন্যপাশে চলে এলো। সেখানে একটা লোহার বড় বাক্স রাখা হয়েছে, দেখতে শিপিং কন্টেইনারের মতো। বাক্সটাতে সেনাবাহিনীর ক্যামোফ্লেজ রঙ লাগানো আর তাতে লেখা রয়েছে মি: পি-এস-সি
“আপনারা প্রেসিডেন্টকে এখানে থেকে ফোন করবেন, এক্সট্রম বললো।
পোর্টেবল সিকুইর কম, মানে বহনযোগ্য নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাচেল ভাবলো। এইসব জিনিস যুদ্ধক্ষেত্রের যোগাযোগ স্থাপনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই এই জিসিনটাকে নাসা শান্তিকালীন সময়ে এখানে ব্যবহার করবে সেটা রাচেল কখনও ভাবেনি। তবে এটাও ঠিক, এক্সট্রমের রয়েছে পেন্টাগনের ব্যাকগ্রান্ড, সুতরাং সে এ ধরণের যুদ্ধ খেলনা ব্যবহার করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বাক্সটার সামনে অস্ত্র হাতে দু’জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে, তার মানে এক্সট্রমের অনুমিত ছাড়া এখান থেকে কেউ বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
মনে হচ্ছে আমিই একা নই যাকে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
এক্সট্রম একজন গার্ডকে কী যেনো ব’লে রাচেলের দিকে তাকালো। “গুডলাক, সে বলেই চলে গেলো।
একজন গার্ড দরজাটা খুলে দিলো। ভেতর থেকে একজন টেকনিশিয়ান বের হয়ে এলো, সে রাচেলকে ভেতরে আসতে বললে সে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
ভেতরটা খুবই অন্ধকার। কম্পিউটার মনিটরের হাল্কা নীল আলোতে সে ভেতরের জিনিসগুলো ভালমত দেখতে পেলো না। তারপরও বোঝা যাচ্ছে, টেলিফোনের ব্ল্যাক, রেডিও এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগের যন্ত্রপাতি। তার ক্লসট্রোফোবিয়া অনুভূত হলো। ভেতরের বাতাসটা গুমোট, শীতকালে মাটির নিচে বেসমেন্টে যেমনটি হয়।
“এখানে বসুন, প্লিজ, মিস সেক্সটন।” টেকনিশিয়ান একটা রোভিং চেয়ার টেনে নিয়ে বললো। সেটার সামনে একটা ফ্ল্যাট টিভি পর্দা। সে তার মুখের কাছে একটা মাইক্রোফোন রেখে একেজি হেডফোন তার মাথায় পরিয়ে দিলো। একটা নোটবই দেখে পাসওয়ার্ডটা টাইপ করলো সে। রাচেলের সামনের পর্দাটাতে সময় দেখা গেলো।
০০:৬০ সেকেন্ড
টেকনিশিয়ান সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়লো, “কানেশান লাগতে আর এক মিনিট বাকি।” সে এই বলে দরজাটা খুলে চলে গেলো। দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়া হলো।
খুব ভালো।
সময়টা কমতে শুরু করলে রাচেল সেটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রথম রাচেল একান্তে সময় পেলো।
রাচেল এবার আঁচ করতে শুরু করলো উল্কাপিণ্ডের এই খবরটা তার বাবার জন্য কতোটা বিধ্বংসী হতে পারে। যদিও নাসার বাজেটের বিষয়টা গর্ভপাতের অধিকার, জনকল্যাণ, এবং স্বাস্থ্য সেবার মতো কোনো রাজনৈতিক ইসু নয়, তারপরও তার বাবা এটাকেই ইসু বানিয়েছেন। এখন এটাই তার জন্য হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমেরিকানরা নাসা’র এই রোমাঞ্চকর বিজয়ে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে আরেকবার। সেখানে থাকবে অশ্রু সজল স্বপ্নবিলাসীরা আর মুখ হা করা বিজ্ঞানীর দল। শিশুদের কল্পনা লাগামহীনভাবে ছুটতে শুরু করবে। ডলার আর সেন্ট-এর ইসু আড়ালে চলে যাবে এই পর্বতসম বিজয়ের মুহূর্তে। প্রেসিডেন্ট ফিনিক্স পাখির মতো আবারও ভষ্ম থেকে উঠে আসবেন। বীর হিসেবে পরিণত হবেন। আর তার বাবার অবস্থা হবে নিঃস্ব-রিক্ত হতশ্রী এক করুশীর পাত্রের মতো।
কম্পিউটারটা বিপ্ করলে রাচেল সেক্সটন চোখ তুলে তাকালো।
০০:০৫ সেকেন্ড
পর্দায় হোয়াইট হাউজের সিলটার ছবি ভেসে উঠলো। একটু বাদেই সেই ছবিটা ফিকে হয়ে প্রেসিডেন্টের ছবিটা ভেসে এলো।
“হ্যালো, রাচেল,” তিনি বললেন, তাঁর চোখে দুষ্টুমীর ছাপ। “আমার বিশ্বাস আপনার দুপুরটা খুবই মজায় কেটেছে?”
২৯
সিনেটর সেজউইক সেক্সটনের অফিসটা ক্যাপিটল হিলের উত্তর দিকে ফিলিপ এ হার্ট অফিস ভবনে অবস্থিত। ভবনটা নিও-মডার্ন ধরণের, সাদা আয়তক্ষেত্রের আকারের, সমালোচকরা বলে এটা কোনো অফিস ভবনের চেয়ে জেলখানা হিসেবেই বেশি মনে হয়। যারা এখানে কাজ করে তারাও একই রকম ভাবে।
চতুর্থ তলায় গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ কম্পিউটারের সামনে হাটছে। মনিটরের পর্দায় নতুন একটি ই-মেইল মেসেজ এসেছে। সে বুঝতে পারছে না এটা দিয়ে কী করবে সে।
প্রথম দুটো লাইন হলো :
সেজউইক সেক্সটন সিএনএন-এ খুবই দারুণ করেছেন।
আপনার জন্য আমার কাছে আরো তথ্য রয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই গ্যাব্রিয়েল এরকম মেসেজ পেয়ে আসছে, কিন্তু সেগুলোর ঠিকানা সব ভূয়া। যদিও সে ঠিকানাটা ঠিকই বের করতে পেরেছিল আর সেটা ছিলো হোয়াইট হাউজ গভর্নমেন্ট ডোমেইন-এর। এই রহস্যময় তথ্যদাতা হোয়াইট হাউজের ভেতরেই রয়েছে। আর সে যে-ই হোক না কেন, তার দেয়া তথ্য মতেই গ্যাব্রিয়েল জানতে পেরেছিল প্রেসিডেন্টের সাথে নাসা প্রধানের গোপন মিটিংয়ের খবরটি।
প্রথমে গ্যাব্রিয়েল তথ্যটা পাত্তা না দিলেও পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো সেটা একেবারে নিখুঁত আর নির্ভুল– নাসা’র অপার্থিব জীব অনুসন্ধান প্রকল্পটির বিরাট অংকের ব্যয়, কোনো কিছু অর্জিত না হওয়া ইত্যাদি তথ্য সেই রহস্যময় তথ্যদাতাই তাকে দিয়েছিলো।
গ্যাব্রিয়েল অবশ্য সিনেটরকে এ তথ্যটা জানায়নি যে হোয়াইট হাউজের ভেতর থেকে একজন তাকে অসমর্থিত কিছু তথ্য দিয়ে থাকে। সে কেবল তথ্যগুলো সিনেটরকে জানিয়ে দেয়। সূত্রের কথা উল্লেখ করে না। জিজ্ঞেস করলে বলে তার একটি সূত্র। আর সেক্সটন কখনই কোত্থেকে তথ্যটা পাওয়া গেছে সেটা জানতে আগ্রহী নয়, তিনি জানতে চান কী বলা হয়েছে।
গ্যাব্রিয়েল হাটাহাটি থামিয়ে মেসেজটার দিকে তাকালো। এইসব ই-মেইল এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার: হোয়াইট হাউজের ভেতরে কেউ চায় সিনেটর সেক্সটন নির্বাচনে জয়ী হোক। তাই নাসা’কে আক্রমণ করতে সে সাহায্য করেছে।
কিন্তু কে? আর কেনইবা করছে?
ডুবন্ত জাহাজের এক ইঁদুর, গ্যাব্রিয়েল ভাবলো। হোয়াইট হাউজে এরকম ভাবার মানুষ অনেক আছে যারা মনে করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যর্থ হবেন, সিনেটর সেক্সটনং হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
এখন মেসেজটা পেয়ে গ্যাব্রিয়েল একটু ঘাবড়ে গেছে। এরকমটি সে এর আগে আর পায়নি। প্রথম দুটো লাইন তাকে তেমন একটা ভাবায়নি। শেষ দুটো লাইনই হলো ভাবনার বিষয় :
পূর্বদিকের এপয়েন্টমেন্ট গেটে, ৪টা ৩০ মিনিটে
একা আসবেন।
তার তথ্যদাতা কখনও একান্তে দেখা করার জন্য বলেনি। তারপরও, গ্যাব্রিয়েল প্রত্যাশা করেছিলো অন্য কোথাও মুখোমুখি দেখা হবে। পূর্ব এপয়েন্টমেন্ট গেটে এটাতো হোয়াইট হাউজের পাশেই। হোয়াইট হাউজের পাশে? এটা কি কোনো ঠাট্টা?
গ্যাব্রিয়েল জানে সে ই-মেইলের মাধ্যমে জবাব দিতে পারবে না। তার সঙ্গে যোগাযোগকারীর একাউন্টটা ছদ্মবেশি, এতে অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই।
আমার কি সেক্সটনের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত? সে সঙ্গে সঙ্গেই সেটা বাতিল করে দিলো। সে যদি এই ই-মেইলটার কথা তাঁকে বলে, তবে বাকিগুলোর কথাও তার কাছে বলতে হবে। সে ভাবলো দিনের বেলায়, পাবলিক প্লেসে দেখা করাটা তার জন্যে নিরাপদই হবে। হাজার হোক, এই লোকটা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে সাহায্যই করেছে, কোনো ক্ষতি তো করেনি। সে মেয়ে হোক অথবা ছেলে, অবশ্যই তার বন্ধু।
শেষবারের মতো ই-মেইলটা পড়ে গ্যাব্রিয়েল ঘড়িটা দেখলো। তার হাতে এক ঘন্টা রয়েছে।