০২০. লা ক্লিনিকা দ্য সালুড পাবলিকা

অধ্যায় : ২০

লা ক্লিনিকা দ্য সালুড পাবলিকা দেখেই বোঝা যায় জায়গাটা আগে স্কুল ছিল। দেখতে মোটেও ক্লিনিক বা হাসপাতালের মত মনে হয় না। বড় এক ভবন। জানালাগুলো বিশাল বিশাল। ধাপগুলো পেরিয়ে উঠে এল বেকার।

ভিতরটা আঁধার। আওয়াজ উঠছে চারপাশ থেকে। ইয়া লম্বা এক করিডোর ধরে সাজানো আছে ধাতব ফোল্ডিং চেয়ারগুলো। হলের ভিতরদিকে অফিসিনা লেখা একটা এ্যারো আছে।

হাল্কা আলোয় আলোকিত করিডোর ধরে এগিয়ে গেল বেকার। দেখতে হলিউডের ভূতুড়ে ছবির মত লাগছে আশপাশটা। বাতাসে প্রস্রাবের বোটকা গন্ধ। সামনের দিকে কোথাও বাতি নষ্ট হয়ে গেছে। পরের চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ যেন পটে আকা কোন বোবা পৃথিবী। এক মহিলার ব্লিডিং হচ্ছে… দুজন পুরুষ আর মহিলা কাঁদছে… ছোট্ট মেয়েটা প্রার্থণারত… অন্ধকার হলের শেষ মাথায় চলে এল। বেকার। বা পাশের দরজাটা একটু ফাঁকা হয়ে ছিল, চাপ দিতেই খুলে গেল। পুরো ঘরে কেউ নেই, শুধু শুভ্র বিছানায় এক নগ্ন বৃদ্ধা বেপ্যান নিয়ে কসরৎ করে যাচ্ছে।

লাভলি। গুঙিয়ে উঠল বেকার। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভাবল, মরার অফিসটা গেল কোথায়?

তারপর কী এক আওয়াজ অনুসরণ করে পৌঁছে গেল কাঁচঘেরা এক রুমের কাছে। অফিস।

সামনে লাইন। লাইনটায় দাঁড়িয়ে আছে জনা দশেক লোক। প্রত্যেকেই চাপাচাপি করছে আর সামনে এগুনোর চেষ্টায় মরছে। স্পেন এসব ক্ষেত্রে খুব একটা বিখ্যাত নয়। ক্যানাডিয়ানের খোঁজ বের করতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে, বুঝতে পারছে বেকার। ডেস্কের পিছনে মাত্র একজন সেক্রেটারি এবং সে ধৈর্যের শেষ সীমার কাছাকাছি কোথাও পৌঁছে গেছে। অন্য পথ খুজল বেকার।

কন পারমিসো? চিৎকার করে উঠল এক আর্দালি।

এবার লাইন থেকে সরে এসে আর্দালির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলল বেকার, ডন্ডে এস্টা এল টেলেফোনো?

সামনে এগুনো বাদ দিয়ে একটা দু পাল্লার দরজা দেখিয়ে দিল লোকটা। সামনে এগিয়ে গেল বেকার সাথে সাথে।

সামনের ঘরটা অতিকায় পুরনো কোন জিমন্যাশিয়াম। পায়ের নিচে সবুজ টাইলস। দেয়ালে বাস্কেটবলের ঝুরি ঝুলছে। সামনে নিচু খাটের উপর শুয়ে আছে ডজনখানেক রোগি। দূরের কোণায়, পুড়ে যাওয়া স্কোরবোর্ডের নিচে আদ্যিকালের একটা পে টেলিফোনের দেখা পাওয়া গেল। দুরু দুরু মনে এগিয়ে গেল বেকার। যদি এটাকে ভাল অবস্থায় পাওয়া যায়!

পকেট হাতড়াল বেকার পয়সার জন্য। সেখানে পচাতুর পেসেটা আছে। সেগুলো সিনকো-ডোয়োস কয়েন। ট্যাক্সি থেকে নেমে এ পয়সাগুলো পেয়েছিল সে ভাঙতি হিসাবে। কোনমতে দুটা লোকাল কল করা যাবে। এক নার্সের দিকে কষ্ট-হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল সে ফোনের দিকে। এগিয়ে গিয়ে রিসিভার তুলে নিল। ডায়াল করল ডিরেক্টরি এ্যাসিস্টেন্সে। ত্রিশ সেকেন্ড পর ক্লিনিকের মূল অফিসের নাম্বারটা পাওয়া গেল।

বেকার ছ ডিজিটের এক্সচেঞ্জটা পাঞ্চ করল। আজকে নিশ্চই ভাঙা কব্জি নিয়ে একজনের বেশি ক্যানাডিয়ান আসেনি! তার ফাইল পাওয়া মোটেও কঠিন হবে না। অফিস তাকে সাথে সাথেই রোগির ঠিকানা দিয়ে দিবে একেবারে অপরিচিত কোন মানুষের কাছে সেটা বিশ্বাস্য নয়। বেকারের একটা প্ল্যান আছে।

রিঙ হচ্ছে।

ক্লিনিকা দ্য সালুদ পাবলিকা। সেক্রেটারি ঘেউঘেউ করে উঠল।

ফ্রান্সে আমেরিকান একসেন্টে কথা বলে উঠল ডেভিড স্প্যানিশেই, ডেভিড বেকার বলছি। ক্যানাডিয়ান দূতাবাসের সাথে আছি আমি। আমাদের এক নাগরিক আপনাদের এখানে আজ চিকিৎসা নিয়েছেন। আমি তার ঠিকানা পেতে চাই কারণ এ্যাম্বাসি তার ফিগুলো পে করতে চায়।

ফাইন, বলল মহিলা, আমি সোমবারে এ্যাম্বাসিতে পাঠিয়ে দিব।

আসলে দ্রুত পাওয়া প্রয়োজন।

অসম্ভব। আমরা খুব ব্যস্ত।

আরো কঠিনভাবে অফিসিয়াল সুরে এবার কথা বলে উঠল বেকার, খুব জরুরি। লোকটা আজ সকালে এখানে চিকিৎসা নিয়েছে। বয়েসি। কব্জি ভেঙে গিয়েছিল, মাথাতেও চোট ছিল সামান্য। তার

উত্তর আমেরিকানদের বাহাদুরির নিকুচি করে মেয়েটা ফোন রেখে দিল দড়াম করে।

ভেবে পায় না এবার কী করবে বেকার। ঐ লাইনে দাঁড়িয়ে তথ্য আদায় করার আশা দুরাশা বৈ কিছু নয়। এদিকে টিকটিক করে সময় বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যানাডিয়ান লোকটা যে কোন জায়গায় চলে গিয়ে থাকতে পারে। কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়ত আহত হয়ে চলে যেতে পারে ক্যানাডায়, বেচে ফেলতে পারে আঙটিটা। দিয়ে দিতে পারে কাউকে। কোন নিশ্চয়তা নেই।

আবার রিঙ করল বেকার। ফোনটা বাজছে। এক-দু-তিন…

হঠাৎ সারা শরীরে এ্যাড্রিনালিনের একটা স্রোত বয়ে গেল। ঘুরে দাঁড়াল বেকার। নামিয়ে রাখল ফোনটাকে জায়গামত।

সেখানে, ঐ রুমের ভিতরেই, একটা লোক শুয়ে আছে। দখল করে রেখেছে একটা খাট। ঠিক তার সামনেই। লোকটা শ্বেতাঙ্গ, বয়েসি, এক হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ।

অধ্যায় : ২১

টকোগান নুমাটাকার প্রাইভেট লাইনে আমেরিকানের অসহিষ্ণু কণ্ঠ শোনা গেল।

মিস্টার নুমাটাকা- আমার হাতে মাত্র একটা মুহূর্ত সময় আছে।

ভাল। আশা করি আপনার হাতে দুটা পাস কি-ই এর মধ্যে চলে এসেছে।

একটু দেরি হবে।

গ্রহনযোগ্য নয়। আপনি বলেছিলেন আজকের দিন ফুরানোর আগেই দুটা চলে আসবে আপনার হাতে।

একটা ব্যাপারে একটু দেরি হয়ে যাবে।

টানকাড়ো মারা গেছে?

হ্যাঁ। বলল কণ্ঠটা, আমার লোক মিস্টার টানকাডোকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু জিনিসটা পায়নি। টানকাডো মারা যাবার আগে সেটাকে অন্য এক ট্যুরিস্টের হাতে তুলে দেয়।

অবিশ্বাস্য! তাহলে আপনি কোন মুখে আমাকে আশ্বাস দেন যে

রিল্যাক্স। আমেরিকান হিসহিস করে উঠল, আপনার এক্সকুসিভ মাইট থাকবে, ওয়াদা রইল। মিসিং পাস কি টা পেয়ে গেলে ডিজিটাল ফোর্ট্রেস ওই আপনার।

কিন্তু পাস কি তো কপি করা হয়ে যেতে পারে।

কি দেখা যে কোন লোককে সরিয়ে দেয়া আমার কাজ।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে নুমাটাকা কথা বলে উঠল, কি টা এখন কোথায়?

আপনার শুধু জেনে রাখা দরকার যে এটাকে পাওয়া যাবে।

আপনি কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন এতটা?।

কারণ একা আমিই সেটার পিছু ধাওয়া করছি না। আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সও মিসিং কির গন্ধ পেয়েছে। তাই তারা চেষ্টা করবে যেন ডিজিটাল ফোর্ট্রেসকে পাবলিশ করা না হয়। তারা এক লোককে কাজে পাঠিয়েছে। নাম- ডেভিড বেকার।

আপনি কী করে জানেন এতকিছু?

এটা অপ্রাসঙ্গিক।

নুমাটাকা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। আর মিস্টার বেকার যদি কি টা পেয়ে যায়?

আমার লোকজন সেটা তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেবে।

আর তারপর?

আপনার উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। ঠান্ডা সুর আমেরিকানের, মিস্টার বেকার চাবিটা পাবার পর তাকে উপযুক্ত ইনাম দিয়ে দেয়া হবে।

অধ্যায় : ২২

ঘুমন্ত বৃদ্ধের কাছে গেল ডেভিড বেকার। তার ডান হাতের কব্জিটা ব্যান্ডেজ করা। বয়স হবে ষাট থেকে শত্ত্বরের মধ্যে। তুষারশুভ্র চুল এলিয়ে আছে মুখের চারপাশে। আরামের ঘুমের মধ্যেও বেচারার কপাল কুচকানো।

মেঘ না চাইতেই বিষ্টি? ভেবে পায় না বেকার। লোকটার হাতে কোন সোনার আঙটি নেই। এগিয়ে গেল সে ঘুমন্ত লোকটার কাছে, স্যার… বলল সে, এক্সকিউজ মি স্যার?

কোন সাড়া নেই তার চোখেমুখে।

বৃদ্ধের গায়ে এবার মৃদু টোকা দিল। স্যার?

ফ্রেঞ্চ ভাষায় কী যেন বলে উঠল লোকটা। আশা জাগল বেকারের মনে। ফরাসি ক্যানাডিয়ান? আবারো কী যেন বলছে লোকটা। অস্ফুটে।

কোয়েস সে ভস ভলেস?

ভালভাবেই ফ্রেঞ্চ জানে বেকার। কিন্তু সে ভাষায় কথা বলে সুবিধা নিতে চাইল না সে। যে কোন কারণে সন্দেহের নিচে পড়তে পারে।

একটু সময় হবে? বলল বেকার আমতা আমতা করে।

ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রোগিটা। হাতের আঙুলের দিকে তাকাল কিছুক্ষণ। তারপর নাকিয়ে নাকিয়ে কথা বলে উঠল, দুর্বল ইংরেজিতে, কী চান আপনি?

স্যার, কণ্ঠটাকে যথাসম্ভব মোলায়েম করে নিয়ে বেকার এবার বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

কী ব্যাপার? কোন সমস্যা?

আমি আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না। স্যার। কিন্তু আপনি কি আজ কোন সময় প্লাজা ডি এসপানায় গিয়েছিলেন?

সিটি কাউন্সিল থেকে এসেছেন?

না। আসলে আমি—

ব্যুরো অব ট্যুরিজম?

না। আমি–

দেখুন, আমি জানি কেন এখানে এসেছেন আপনি! বুড়ো লোকটা এবার উঠে বসার চেষ্টা করছে শ্রাগ করে, ভয় পাই না আমি! কথাটা একবার বলেছি, বলেছি হাজারবার! পিয়েরে ক্লচার্ডে দুনিয়াটা লেখে, এভাবেই সে চালায় দুনিয়াটাকে। মন্ট্রিল টাইমসকে ভাড়া করা যাবে না। কিনে ফেলা যাবে না। বলে রাখলাম!

স্যরি স্যার। আমি জানতাম না আপনি–

মার্বে এলোর্স। আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি! একটা হার জিরজিরে আঙুল তাক করল সে বেকারের দিকে। জিমন্যাশিয়ামে তার কণ্ঠ গমগম করে উঠল। আপনিই প্রথম নন! তারা একই চেষ্টা করেছে মলিন র‍্যাগে, ব্রাউনস প্যালেসে, গোলফিঙ্গো লাগোসে! কিন্তু সংবাদপত্রে কী গিয়েছে? সত্য ঘটনা। এত খারাপ ওয়েলিংটন আমি এর আগে খাইনি। এত বিচ্ছিরি বিচে এর আগে আসিনি। এত কুচ্ছিত টাবে শুয়ে কখনো গা ধুইনি। এরচে খারাপ আর কী আশা করতে পারে আমার পাঠকেরা?

আশপাশের বিছানায় উঠে বসছে রোগিরা। হাল ছেড়ে দিয়ে চারদিকে তাকায় বেকার। কোন নার্সের দেখা পেলে ভাল হয়।  

ক্লচার্ডের কন্ঠে যেন আগুন ধরে গেছে, আপনার সিটিতে কাজ করে যে পুলিশ। অফিসার তার মোটর সাইকেলে চড়ে আমার কী হাল হল একবার দেখেছেন? হাতের দিকে নজর গেল তার, এখন আমার কলামগুলো কে লিখে দিবে, এ্যা?

স্যার, আমি–

আমার ভ্রমণের তেতাল্লিশ বছরের ইতিহাসে কখনো এমন অসুখি হইনি। এখানে একবার তাকিয়ে দেখুন! জানেন, আমার কলাম প্রকাশিত হয় কত জায়গায়-?

স্যার! আমি আপনার কলামের ব্যাপারে আগ্রহী নই। ক্যানাডিয়ান কনস্যুলেট থেকে আসছি। আপনি ভাল আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতেই আমার এখানে আসা!

হঠাৎ জিমন্যাশিয়ামের বুকে নিরবতা নেমে এল। এবার চোখ তুলে তাকাল বৃদ্ধ।

ফিসফিস করছে বেকার, আমি এখানে এসেছি এটা দেখতে যে আপনি ভাল আছেন। যেমন আমি এনে দিতে পারি আপনাকে এক জোড়া ভ্যালিয়াম।

বৃদ্ধের কন্ঠে যেন কোন কথা যোগাচ্ছিল না। কনস্যুলেট থেকে?

নড করল বেকার।

তাহলে আপনি কলামের ব্যাপারে কথা বলতে আসেননি?

না, স্যার।

যেন বুক ভেঙে গেছে বৃদ্ধের। বালিশে মাথা ডুবিয়ে শুয়ে পড়ল সে। আর আমি কিনা মনে করলাম আপনি এসেছেন সিটি থেকে… আমার কলামের ব্যাপারে… আরো যেন কষ্ট হচ্ছে তার, যদি কলামের জন্য না এসে থাকেন তাহলে কী উদ্দেশ্যে আসা আপনার?

এবার লাইনে এসেছ বুড়ো! শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ–

কূটনৈতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ?

ইয়েস, স্যার। আমি জানি, আপনার মত স্ট্যাটাসের নাগরিক, বা যে কোন নাগরিক, যে ক্যানাডার অধিবাসি, তার জন্য আমরা সর্বদা সচেতন। আমাদের লোক যখন এমন কোন দেশে নাকি আমি বলব এমন কোন কম উন্নত দেশে আসেন, তখন তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের উপরই বর্তায়।

কিন্তু–অবশ্যই, কী ভাল কাজ!

আপনি একজন ক্যানাডিয়ান নাগরিক, তাই না?

হ্যাঁ। অবশ্যই! কী বোকার মত কথা বলছিলাম আমি! প্লিজ, ক্ষমা করে দিবেন। আমার মত স্ট্যাটাসের কিছু কিছু লোক মাঝে মাঝে নানা ঝামেলায় পড়ে… আপনি তো বুঝতেই পারছেন, তাই না?

জ্বি, মিস্টার ক্লচার্ডে, আমি ভালভাবেই বুঝতে পারছি। সেলিব্রিটি হবার কারণে মানুষ কম ভোগান্তি পোহায় না।

ঠিক তাই। আপনি কি এ নরকতুল্য জায়গাটা দেখে বিশ্বাস করতে পারছেন যে আমি এখানে পড়ে আছি? আশপাশে চোখ বোলায় সে, জায়গাটা যাচ্ছেতাই। আর তারা আমাকে এখানে সারারাত রাখার পায়তাড়া ভাজছে।

বেকারের সুরে আফসোস, আমি জানি। জঘন্য। এত দেরি করে ফেললাম আসতে, আমি দুঃখিত।

আমিতো জানতামই না আপনি আসবেন।

আপনার মাথাটা বোধহয় ফুলে গেছে। ব্যথা আছে নাকি?

না। আসলে তেমন কোন ব্যথা নেই। কিন্তু সমস্যাটা অন্য কোথাও। কব্জিটা বোধহয় গেছে। ব্যথা আছে। ব্যাটা গার্ডিয়া! কী করে সে আমার মত বয়সের একজনকে মোটরসাইকেলে নিয়ে এল!

আমি কি আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসতে পারি?

ক্লচার্ডে এই জরুরি ভাবটা বেশ উপভোগ করল। তারপর আয়েশ করে বলল, যাক, আসলে…মাথাটাকে ডানে বায়ে ঘোরায় সে, তারপর বলে, আসলে একটা বাড়তি বালিশ হলে মন্দ হত না। যদি খুব একটা কষ্ট না হয়…

মোটেও না।

বেকার বাড়তি খাটাখাটনির ধার দিয়েও না গিয়ে সোজা পাশের সিট থেকে একটা বালিশ তুলে এনে ক্লচার্ডের মাথার নিচে গুঁজে দিল।

এবার ভাল লাগছে… থ্যাঙ্ক ইউ।

পাস দ্যু টট।

ও, আচ্ছা! উজ্জ্বল হয়ে উঠল ক্লচার্ডের চোখমুখ, তাহলে আপনি সভ্য দুনিয়ার ভাষায় কথা বলেন?

এই আরকী!

কোন সমস্যা নেই। আমার কলামগুলো ইউ এস এ তেও যায়। ইয়ংরেজিতে।

এ কথা আমিও জানি। বলল বেকার, তারপর ষড়যন্ত্রীর মত মুখ সামনে ঝুঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনার মত মানুষ সেভিলে এত ভাল ভাল হাসপাতাল থাকা সত্বেও এখানে এসে পড়লেন কেন সে কথাটা কি আমি জানতে পারি?

এবার রেগে গেল ক্লচার্ডে, সেই পুলিশ অফিসারের কম্ম… শয়তানটা আমাকে মোটরসাইকেলের এ্যাকসিডেন্টে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। ব্লিডিং হচ্ছিল আমার। কী আর করা, আমি নিজেই হেঁটে এখানে চলে এলাম।

সে আপনাকে কোন ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে চায়নি?

চোখ কপালে উঠে গেছে বেকারের।

তার সেই বাইকে করে? নো, থ্যাঙ্কস।

আজ সকালে ঠিক কী হয়েছিল?

আমি সেসবই বলেছি লেফটেন্যান্টকে।

আজ তার সাথে আমার কথা হয়েছিল।

আশা করি তাকে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন—

নড করল বেকার, অবশ্যই। আমার অফিস ফলো আপ করবে।

আশা করি।

মঁসিয়ে ক্লচার্ডে, পকেট থেকে একটা কলম বের করে হাসল বেকার, আমি সিটিতে একটা ফরম্যাল কমপ্লেন করতে চাই। আপনি কি সহায়তা করবেন? আপনার মত একজন মানুষ খুবি মূল্যবান সাক্ষি।

কেন, অবশ্যই… সহায়তা করতে পেরে ভাল লাগবে।

আচ্ছা, সকাল থেকে শুরু করা যাক। এ্যাকসিডেন্টটার ব্যাপারে বলুন।

আহা। সকালে সেই বেচারা এশিয়ান পড়ে গেল। আমি তাকে হেল্প করতে চাই। কিন্তু কিছু করার ছিল না।

আপনি তাকে সি পি আর দিয়েছিলেন?

যেন লজ্জা পেল ক্লচার্ডে, আমি তো জানি না সি পি আর কী করে দিতে হয়। একটা এ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিলাম।

টানকাড়োর বুকের লাল দাগের কথা মনে পড়ে গেল বেকারের, প্যারামেডিক এ্যাডমিস্টিাররা কি সি পি আর দিয়েছিল?

হায় খোদা! না! বলল ক্লচার্ডে, মরা ঘোড়র উপর ঘা চালানোর কোন মানে তো হয় না। তারা আসার অনেক আগেই বেচারা মরে গেল। আর কী করা। লাশ নিয়ে চলে গেল সবাই। শুধু ঐ শয়তান পুলিশম্যানটা ছিল আমার সাথে।

ব্যাপারটাতো বেখাপ্পা! ভেবে পায় না বেকার। কিছু একটা মিলছে না। আর আঙটির ব্যাপারটা?

লেফটেন্যান্ট আপনাকে আঙটির কথা বলেছিল?

হ্যাঁ।

আসলেই? আমার মনে হয়েছিল সে আঙটির কথাটা বিশ্বাস করেনি। তার ভাবভঙ্গি এমন যেন আমি মিথ্যা বলছি। কিন্তু আমার কথা সত্যি। আমি আমার সততা নিয়ে গর্ব করি।

এখন তাহলে আঙটিটা কোথায়? চাপ দিল বেকার।

ক্লচার্ডে যেন সে ব্যাপার নিয়ে কোন কথা বলতে চায় না। তার কাঁচের মত চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। অবাক করা জিনিস, সত্যি। আমি আগে কখনো এমন অক্ষর খোদাই করা দেখিনি।

জাপানি ভাষায়?

অবশ্যই না।

তার মানে আপনি সেটার দিকে ভালভাবে তাকিয়েছিলেন?

হেভেনস, ইয়েস! আমি যখন ঝুঁকে পড়ি তখন লোকটা আমার দিকে বারবার আঙুল এগিয়ে দিচ্ছিল। যেন চাইছিল আমি সেটা নিয়ে নিই। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশি সুবিধার মনে হয়নি। আঙুলের ছিরি বেশি ভাল ছিল না।

আর তখনি আপনি আঙটিটা নিয়ে নিলেন?

বড় বড় হয়ে গেল লোকটার চোখমুখ, এ কথাই বলেছে পুলিশ অফিসার আপনাকে? আমি আঙটি নিয়েছি?

অস্বস্তিতে পড়ে গেল বেকার।

বিস্ফোরিত হয়ে গেল এবার ক্লচার্ডের কণ্ঠ, আমি জানতাম সে ব্যাটা আমার কথা ঠিকমত শোনেনি। এভাবেই গুজব ছড়ায়। এভাবেই জন্ম নেয় বাজে কথারা। বলেছি জাপানি ভদ্রলোক আঙটিটা দিয়ে দিয়েছে। তাই বলে আমাকে দিয়েছে সে কথা আমি কস্মিনকালেও বলিনি। আমি কী করে একজন মরতে বসা মানুষ থেকে কিছু নিয়ে নিই! হায় খোদা! এ চিন্তা করে কী করে লোকে?

তাহলে আপনি আঙটিটা পাননি?

হেভেনস! নো!

তাহলে কার কাছে আছে সেটা?

জার্মান। ঐ জার্মানের কাছে।

জার্মান? কোন জার্মান?

পার্কে জার্মানির যে লোকটা ছিল সে। আমিতো অফিসারকে সে কথা বলেছি। আমি সেটা নিতে চাইনি কিন্তু ফ্যাসিস্টের বাচ্চাটা সেটা কী তুতুলু করেই না নিয়ে নিল!

তার মানে একজন জার্মানের হাতে রিঙটা আছে?

অবশ্যই।

কোথায় গেছে সে?

জানি না। আমি পুলিশকে ডাকতে গেলাম এর মধ্যেই চম্পট দিল সে।

আপনি জানেন কে সে?

কোন টুরিস্ট হবে।

আপনি শিওর?

আমার জীবনটাই কাটল ট্যুরিস্ট হয়ে হয়ে। ক্লচার্ডে হাত নাড়ল সাথে সাথে, দেখার সাথে সাথেই আমি তাদের ধরে ফেলতে পারি। সে আর তার মেয়ে বন্ধুটা পার্ক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

প্রতি মুহূর্তে বেকার আরো আরো অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছে। লেডি ফ্রেন্ড? জার্মানের সাথে আরো একজন ছিল?

একজন এসকর্ট। দুর্ধর্ব সুন্দরী। লাল মাথার মেয়ে।

এসকর্ট? অবাক হল বেকার, কোন পতিতা নাতো?

হ্যাঁ। আপনি যদি ঐ বিশ্রি শব্দটা ব্যবহার করেন তো তাই বলা যায়।

আচ্ছা, যৌনকর্মি।

এবার ঠিক আছে।

কিন্তু… অফিসারতে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি

অবশ্যই বলবে না। আমি কখনোই সেই এসকর্টের ব্যাপারে কিছু বলিনি। হাতের ইশারা করল ক্লচার্ডে, তারা তো আর কোন ক্রিমিনাল নয়, এখন কোন আঙটি চুরির দায়ে তাদের ধরা হোক তা আমি কখনোই চাইব না।

আর কেউ ছিল সেখানে?

আর কেউ না। শুধু আমরা তিনজন। যা গরম পড়েছিল!

আর আপনি নিশ্চিত সে মহিলা যৌনকর্মি?

অবশ্যই! এত সুন্দর, কোন মেয়ে কখনোই ঐ হোল্কা লোকটার সাথে এমন গরমের মধ্যে থাকবে না যে পর্যন্ত তাকে পে না করা হচ্ছে। মন ডিউ! সে ছিল একেবারে মোটা-মোটা-মোটা! বিশাল মুখের জার্মান! উপরের দিকে উঠে এল। ক্লচার্ডে উত্তেজনার চোটে। লোকটা জানোয়ার। কমসে কম তিনশ পাউন্ড। সে এমনভাবে বেচারি মেয়ের দিকে তাকাচ্ছিল যেন সে যে কোন মুহূর্তে দৌড়ে পালিয়ে যাবে। আমি মেয়েটাকে কোন দোষ দিব না। কাঁধের উপর হাত রেখেছে সর্বক্ষণ। বোঝাই যায়, মেয়েটার পুরো উইকএন্ডটা মাটি করে দিয়েছে সে তিনশ ডলারের বিনিময়ে। তারই পরে দিয়ে পটল তোলার দরকার ছিল। ঐ ছিমছাম এশিয়ানের নয়!

আপনি কি তার নাম জানেন?

একটু সময় ধরে ক্লচার্ডে ভাবল। তারপর নাড়ল মাথাটা। কোন আইডিয়া নেই।

আবার ব্যথা অনুভব হতেই মাথা ডুবে গেল বাড়তি বালিশের ভিতরে।

ছোট্ট করে শ্বাস ফেলল বেকার। চোখের সামনে থেকে আঙটিটা যেন হাওয়ায় উবে গেল চট করে। কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর খুশি হতে পারবে না তার উপর।

ক্লচার্ডে একটু শব্দ করল। হঠাৎ তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে।

বেকার এখনো মনে আশা জিইয়ে রাখছে, মিস্টার ক্লচার্ডে, আমি ঐ জার্মান লোক আর তার সঙ্গির সাথে একটু কথা বলতে চাই। আপনার কি কোন ধারণা আছে… কোথায় থাকতে পারে তারা?

চোখ বন্ধ করল ক্লচার্ডে। তার শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আরো ক্ষীণ হয়ে উঠছে শ্বাস প্রশ্বাস।

কোন কিছুই কি মনে নেই? চেষ্টা করছে বেকার, তার এসকর্টের নাম?

অনেকক্ষণ নিরবতা ঝুলে থাকল।

একদম ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে ক্লচার্ডেকে। আসলে… আহ… না। আমি বিশ্বাস করি না যে… কেঁপে কেঁপে উঠছে তার কণ্ঠ।

আপনি ঠিক আছেন তো?

হ্যাঁ… মানে… একটু বেশি উত্তেজনা…

ভাবুন, মিস্টার ক্লচার্ডে, ব্যাপারটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

ক্লচার্ডে আবার দম ফেলল, আমি জানি না। মহিলা… লোকটা তাকে কী নামে যেন ডাকছিল…চোখ বন্ধ করে গোঁ গোঁ করছে বৃদ্ধ কলামিস্ট।

কী নাম তার?

আমি আসলেই মনে করতে পারছি না…

ভাবুন। ভেবে বের করুন। কনস্যুলেটে এটার গুরুত্ব বেশি। আমি আরো সাক্ষ্য প্রমাণ বের করব। সেজন্যই দরকার। তাদের বের করার জন্য যে কোন কথা আপনি আমাকে দিতে পারলে-  

আমি দুঃখিত… হয়ত কালকে, হঠাৎ আরো যেন ডুবে যাচ্ছে লোকটা।

মিস্টার ক্লচার্ডে, আপনি এখন কথাটা মনে করতে পারলে ভাল হয়। শেষ কথাটা একটু জোরে বলে ফেলল বেকার। আবার আশপাশের কট থেকে মুখ তুলে তাকায় রোগিরা। ঘরের শেষপ্রান্তে এক নার্স ছিল। এগিয়ে আসছে সে এদিকে।

যে কোন তথ্য! শেষ চেষ্টা করে বেকার।

জার্মান লোকটা মহিলাকে ডাকছিল

বেকার একটু ঝাঁকি দিল ক্লচার্ডেকে। তার কথায় ফিরিয়ে আনতে হবে যে করেই হোক।

ক্লচার্ডের চোখ ঝিকিয়ে উঠল একবারের জন্য। তার নাম…

আমার সাথে সেঁটে থাক, বুড়ো…

ডিউ… ক্লচার্ডের চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল। নার্স এগিয়ে আসছে অগ্নিশর্মা হয়ে।

ডিউ? ক্লচার্ডের হাতে ঝাঁকি দিল বেকার।

নাম হল…

এবার আর বুড়ো লোকটার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না।

রাগে স্প্যানিশে বেকারের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে এগিয়ে আসছিল নার্স। দশ ফুট দূরেও নেই। বেকার কিছুই শুনছে না। তার চোখ তাকিয়ে আছে ক্লচার্ডের ঠোঁটের দিকে। নার্স ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে শেষবারের মত ঝাঁকি দিল সে বুড়ো লোকটাকে।

ডেভিড বেকারের কাধ ধরে বসেছে নার্স। সরিয়ে আনছে বুড়ো লোকটার উপর থেকে। সেখানে লোকটা অস্ফুটে একটা শব্দ উচ্চারণ করল কোনক্রমে। ডিউড্রপ…

বেকারকে সরিয়ে নিচ্ছে নার্স।

ডিউড্রপ? ভাবছে বেকার। ডিউড্রপ আর কোন ধারার নাম হল? নার্সের কাছ থেকে ছাড়া নিয়ে আবার ফিরে তাকায় বেকায়, ক্লচার্ডের দিকে। আপনি নিশ্চিত, নামটা ডিউড্রপ?

ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লচার্ডে, শান্তির ঘুম।

অধ্যায় : ২৩

সুসান ফ্লেচার নড থ্রি তে একা একা বসে আছে। একটা লেমন মিস্ট হার্ব চা নিয়ে বসে থাকল ট্রেসারের ফিরে আসার আশায়।

নড থ্রি থেকে কাঁচের ওপাশে চোখ যায় হেড ক্রিপ্টোগ্রাফারের। ক্রিপ্টো ফ্লোরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ট্রান্সলেটার।

ঘড়ির দিকে চোখ যায় তার। এ্যানোনিমাসের খবর আসতে আসতে ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। নর্থ ডাকোটার কাছে ই-মেইলটা যেতে আসলেই সময় লাগছে প্রচুর। সময় আছে হাতে। বসে বসে সকালে ডেভিডের সাথে হওয়া কথাগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় সে। আশা একটাই, ডেভিড যেন স্পেনে ভাল থাকে।

নড থ্রি ক্রিপ্টোর দরজা খুলে যাবার হিসহিসে শব্দ শুনে তাকায় সে বাইরে। ক্রিপ্টোগ্রাফার গ্রেগ হেল আসছে।

গ্রেগ হেল লম্বা, পেশীবহুল দেহের অধিকারী। মাথায় খুলি কামড়ে পড়ে আছে ব্লন্ড চুল। সব সময় ফুটবাবু সেজে থাকবে। লোকে ডাকে হেলিটে নামে। হেল এতে মোটেও আপত্তি করে না। তার ক্ষুরধার মেধা আর পেশীবহুল শরীরের জন্য যে সবাই এ নামে ডাকে তাতে আর সন্দেহ কী! এনসাইক্লোপিডিয়া ঘাটলেও তার কোন আপত্তি নেই। শুধু নির্মোহ মনটা একটা কথাই ভাবে। সাগর শুকিয়ে গেলে আর কী হয়, অনেক অনেক লবণ পড়ে থাকবে, এই তো!

এন এস এর আর সব ক্রিপ্টোগ্রাফারের মত হেলও মোটাসোটা বেতন পায়। এ কথাটা নিজের কাছে লুকিয়ে রাখার কোন ইচ্ছা তার নেই। সাদা লোটাস চালায় সে। সেটায় মুন রুফ আছে, আছে সাব উফার। সে গ্লোবাল পজিশনিং কম্পিউটিং সিস্টেম বসাতে পারবে, ভয়েস এ্যাক্টিভেটেড ডোর লক বা ফাইভ পয়েন্ট রেডিও জ্যামার লাগাতে পারবে। কাজে লাগাতে পারবে একটা সেলুলার ফোন ও ফ্যাক্স যাতে কখনোই যোগাযোগের বাইরে যেতে না হয়। তার ভ্যানিটি প্লেটে মেগাবাইট লেখা আছে। নীল নিয়নে জ্বালানো।

ইউ এস মেরিন কোর হেলকে একটা বাল্য-অপরাধ থেকে উদ্ধার করে আনে। মেরিনরা এর মত তুখোড় প্রোগ্রামার খুব কমই দেখেছে। এতেই কপালে সামরিক তকমা লেগে যেতে পারত। কিন্তু তৃতীয় মাত্রাতেই গন্ডগোল লেগে গেল। হেল তার সাথের এক মেরিনকে মদ্যপ অবস্থায় মেরে ফেলে। কোরিয়ান সেই মার্শাল আর্ট, টায়কোয়ান্ডো যে আত্মরক্ষারচে পরের ক্ষতি বেশি করতে পারে তাতে আর সন্দেহ নেই কারো। কাজ থেকে অব্যাহতি পায় সে তখনি।

জেলে কিছুদিন পচার পর প্রাইভেট সেক্টরে প্রোগ্রামার হিসাবে কাজ জুটিয়ে নেয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় হেলিট। সে প্রথম এক মাস বিনা বেতনে কাজ করে দেখাতে চায়। রাজিও হয় সবাই। তারপর যখনি তার কাজের ধারা দেখে, আর ছাড়বে না কেউ।

কম্পিউটারে দক্ষতা যত বাড়ে ততই সে সারা পৃথিবীতে নিজের কাজের প্রমাণ রাখতে থাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। পৃথিবীর সেরা সব সাইবার ফ্রিকের মধ্যে জায়গা করে নেয়। ই-মেইলের মাধ্যমে বন্ধু জোটায় দেদার। সব ইউরোপিয় দেশের মানুষের সাথে ভয়েস ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায় তার। দুটা কোম্পানি তাকে সরিয়ে দেয় একই অপরাধে- বন্ধুদের পর্নোগ্রাফিক ছবি তুলে দিয়েছিল ইন্টারনেটে তাদের সুবিধা নিয়ে।

.

কী করছ এখানে? অবাক হয়ে প্রশ্ন তোলে হেল, সে আশাও করেনি সুসান নড থ্রি তে এখন থাকবে।

সুসান ঠান্ডা চোখে তাকায়, আজকে শনিবার, গ্রেগ। আমিও তোমাকে একই প্রশ্ন করতে পারি। কিন্তু সুসান জানে কী করছে গ্রেগ এখানে। সে পুরোপুরি কম্পিউটার এডিক্ট। শনিবারতো ভালই, রবিবারেও সে চলে আসে এখানে, তারপর তার নতুন সব প্রোগ্রামকে এন এস এ র কম্পিউটারে ঝালিয়ে নেয়।

কয়েকটা লাইন দেখে নিতাম, আর সেইসাথে চেক করে দেখতাম আমার ই মেইলগুলো। বলল হেল, উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে সুসানের দিকে, আর তুমি যেন কী বললে, কী যেন করছ এখানে?

আমি বলিনি।

ভ্রু ছড়িয়ে দিল হেল, দু দিকে, এখানে কোন গোপনীয়তার ধার ধের না। আমাদের এখানে, নড থ্রি তে, গোপনীয়তার কোন বালাই নেই, মনে আছে? সবাই একের জন্য, একে সবার জন্য।

লেমন মিস্টে চুমুক দিয়ে সুসান উপেক্ষা করল হেলকে শ্রাগ করে হেল নড। থ্রি পেন্ট্রির সামনে থামল। সব সময় এখানে আগে থামে। তারপর সামনে যেতে যেতে তাকায় সুসানের ছড়ানো পায়ের দিকে সুসান তাকায় না। না তাকিয়েই বুঝে নেয় কেন হেল থেমেছে। পা সোজা করে নেয় সে। মুখ ভেঙচে হাসে হেল।

হেল যে সুসানের উপর আক্রমণাত্নক ভাব নিবে সে কথা ভালই জানা আছে। অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। সব সময় হার্ডওয়্যার নিয়ে বিবক্ত করবে সুসানকে। কিন্তু মেয়েটাও হোড়াই পরোয়া করে। স্ট্র্যাথমোরের কাছে নালিশ করে ছুচো মেরে হাত গন্ধ করার কোন মানে হয় না। উপেক্ষাই তার উপযুক্ত শাস্তি।

নড থ্রি প্যান্ট্রির দিকে এগিয়ে গিয়ে ষাঁড়ের মত খুলে ফেলল ল্যাটিসের দরজা। টফুর টুপারওয়ার কন্টেইনার খুলে নিল ফ্রিজ থেকে কয়েক খন্ড সাদা জেলির মত জিনিস রেখে দিল মুখের ভিতরে। এরপর ছোট কিচেনেটে খাবার চড়িয়ে দিয়ে মুখ খুললঃ

তুমি এখানে বেশিক্ষণ থাকছ?

সারা রাত। বলল সুসান।

হুমম্… হাসল হেলিটে বিকৃতভাবে, তাহলে এই রাত তোমার আমার… তাই না?

চুপ করে থাকার জন্য অনেকটা কষ্ট করতে হল সুসানকে।

নিজে নিজেই একটু হেসে হেল টফুটা সরিয়ে রাখল। এরপর ভার্জিন অলিভ ওয়েল নিয়ে নিল একটু। এটা তার পাকস্থলিকে পরিষ্কার রাখে। হাজার হলেও, হেল স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কড়া।

অলিভ ওয়েল শেষ করে সুসানের বিপরীতে তার কম্পিউটার টার্মিনালে চলে গেল। সুসান এখান থেকেই কলোজেনের গন্ধ পায়।

নাইস কলোজেন, গ্রেগ। পুরো বোতল সাবাড় করে দিলে নাকি?

টার্মিনালের অপর প্রান্ত থেকে উঁকি দিল হেল। শুধু তোমার জন্য, ডিয়ার।

একটা কথা মনে পড়ে গেল সুসানের। যদি হেল ট্রান্সলেটারে এ্যাকসেস নেয়? এখন ট্রান্সলেটারে তার ঢোকার কোন কারণ নেই, কিন্তু যদি সে কাজটা করে? তাকে তো আর এই বলে বুঝ দেয়া যাবে না যে কোড ব্রেকিং মেশিনটায় ষোল ঘন্টা ধরে ডায়াগনোসিস চলছে! রান মনিটরে না ঢু মারলেই হল।

কোন এক বিচিত্র কারণে সুসান চায় না ব্যাপারটা হেল জেনে যাক। কেন যেন তাকে বিশ্বাস করতে পারে না মোটেও। হেলকে ভাড়া করার পক্ষে ছিল না সুসান। কিন্তু এন এস এর কাছে অন্য কোন অপশনও ছিল না। তাকে আনা হয়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রডাক্ট হিসাবে।

স্কিপজ্যাক ফিয়াস্কো।

চার বছর আগে কংগ্রেস দেশের সেরা প্রোগ্রামারদে শরণাপন্ন হয়েছিল, একটা সুপার লগারিদম তৈরির জন্য। আর সব প্রোগ্রামারের কাছ থেকে এটা ভিন্ন হতে হবে।

এন এস এ কে একটা কোডব্রেকিং: আল্টিমেট সফটওয়্যার বানাতে বলা আর কোন লোককে তার নিজের কফিন বানাতে বলা একই কথা। এর ফলে এন এস এর কাজ আরো ঘোলাটে হয়ে পড়বে।

ই এফ এফ কথাটা বুঝতে পারে। তারা প্রচার করে যে এন এস এ বেশি ভাল কোন প্রোগ্রাম করতে পারবে না এ ব্যাপারে। লবিং করে তারা। কংগ্রেস ঘোষণা করে এটা তৈরি হলে পৃথিবীর বড় বড় ম্যাথমেটিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

তাই এন এস এর ক্রিপ্টো টিম কাজে নেমে পড়ল কোমর বেঁধে। সাথে ছিল কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর। নাম দেয়া হল স্কিপজ্যাক। কংগ্রেসের কাছে পাঠানো হল অনুমোদনের জন্য। সারা পৃথিবীর ম্যাথমেটিশিয়ানরা দেখল স্কিপজ্যাককে। দেখে বিষম খেল। অসাধারণ। তারা রিপোর্ট করল এটা অসাধারণ আর কাজ করবে দারুণ। কিন্তু স্কিপজ্যাকের অনুমোদন দেয়ার মাত্র দিন তিনেক আগে বেল ল্যাবরেটরির এক তরুণ প্রোগ্রামার গ্রেগ হেল একটা ঘোষণা দেয়। ঘোষণাটা দিয়ে কাঁপিয়ে দেয় পুরো পৃথিবীকে। সে এই এ্যালগরিদমে একটা ফাঁক খুঁজে পেয়েছে।

স্ট্র্যাথমোর সেই ফাঁকটা রেখেছিল নিজের কারণেই। মাত্র কয়েক লাইনে। এর পিছনে যুক্তিও ছিল। ফাঁকটা রাখতে হবে যেন নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিতে পারলে যে কেউ স্কিপজ্যাকের মাধ্যমে একক্রিপ্ট করা কোডের সবটুকু জেনে যেতে পারে। এন এস এর এটা রাখার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে। দেশের স্ট্যান্ডার্ড এনক্রিপশন প্রোগ্রামের আসল চাবিকাঠি লুকিয়ে থাকত এন এস এর কাছে, যেন চাইলেই যে কোন সরকারি-বেসরকারি তথ্য জেনে যেতে পারে তারা।

ই এফ এফ হার মেনে নিল। হিটলারের পর এন এস এ কে পৃথিবীর গোপনীয়তার পথে প্রধান বাধা হিসাবে ধরে নিল কংগ্রেস। মাঠে মারা গেল প্রজেক্টটা।

দুদিন পরই এন এস এ যখন গ্রেগ হেলকে ভাড়া করল তখন অবাক হয়েছিল অনেকেই। স্ট্র্যাথমোর ধরেই নিল গ্রেগ হেল ভিতরে থেকে এন এস এর পক্ষে কাজ করলেই ভাল হয়। বাইরে থেকে বিরোধিতা করার কোন মানে হয় না।

স্ট্র্যাথমোর নিজের কাঁধে সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেসের কাছে ধর্ণা দিল। বলল, লোকের সব গোপন থাকারচে সবচে গোপন সংস্থার কাছে জানা থাকা ভাল। নাহলে বুমেরাং হয়ে এ সহনশীলতাই ফিরে আসবে তাদের বিরুদ্ধে। সে অনুরোধ করল- মানুষের উপর চোখ রাখার কেউ থাকলে সেটা মানুষের জন্যই ভাল। ভাল দেশের জন্য। শান্তি রক্ষার জন্যই কারো কারো কোডের উপর নজরদারি করতে হবে এন এস এ কে। ই এফ এফ এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো আদাজল খেয়ে লাগল স্ট্র্যাথমোরের বিরুদ্ধে।

অধ্যায় : ২৪

সেই ক্লিনিকের বাইরে, একটা বুথের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ডেভিড বেকার। রোগি নং একশো চারকে বিরক্ত করার দায়ে এইমাত্র তাকে বের করে দেয়া হয়েছে।

প্রত্যাশারচে জটিল হয়ে যাচ্ছে অবস্থা, প্রতি মুহূর্তে। খবরটা ভালভাবে নেয়া হয়নি। সবটুকু শোনার পর অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে স্ট্র্যাথমোর, ডেভিড, বলে সে জলদগম্ভীর কণ্ঠে, সেই আঙটিটাকে খুঁজে বের করা জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার। আমি আপনার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি ব্যাপারটা। আমাকে ব্যর্থ করে দিবেন না যেন। স্তব্ধ হয়ে গেল ফোনটা।

থমকে দাঁড়িয়ে রইল বেকার। ইয়েলো পেজ পরীক্ষা করল। না। কোন লাভ নেই।

ডিরেক্টরিতে তিনটা এসকর্ট সার্ভিসের নাম আছে। কিন্তু সে কী আর করতে পারবে? শুধু এটুকু জানে জার্মান লোকটার সাথের মেয়েটা লাল চুলো। স্পেনে লালচুলো মেয়ের কোন অভাব হবে না। ক্লচার্ডে লোকটা ডিউড্রপ নাকি কী ছাইপাশ বলেছিল। ডিউড্রপ? নামটা যেন কোন সুন্দরী মেয়ের নয়, গরু-টরুর। হাজার হলেও, ক্যাথলিক নাম নয়। ক্লচার্ভে নিশ্চই ভুল করেছে।

প্রথম নাম্বারে ডায়াল করল বেকার। সার্ভিসিও সোশ্যাল ডি সেভিলা, নরম মেয়েলি কণ্ঠ শোনা গেল।

জার্মান উচ্চারণের সাথে বেকার স্প্যানিশে বলে গেল, হোলা। হ্যাঁবলাস এ্যালিমান?

না। কিন্তু আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি। জবাব এল।.

ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলতে লাগল এবার বেকার; থ্যাঙ্ক ইউ। আপনার কোন সহায়তা পাব কিনা তাই ভাবছিলাম।

আমি আপনাকে কীভাবে সহায়তা করতে পারি? আপনি কি একজন এসকর্টের খোঁজ করছেন?

হ্যাঁ, প্লিজ। আজ আমার ভাই ক্লাউস… মানে তার সাথে একটা মেয়ে ছিল। অত্যন্ত রূপবতী। আমি তাকে চাই। কালকের জন্য।

আপনার ভাই ক্লাউস এখানে আসেন?

হ্যাঁ। খুব মোটা। মনে পড়ছে আপনার?

তিনি আজ এখানে এসেছিলেন, এ কথাই বলছেন কি?

বেকার শুনতে পায় অপর প্রান্ত থেকে পাতা উল্টানো হচ্ছে। সেখানে কোন ক্লাউসের নাম থাকবে না। কিন্তু বেকারের একটাই আশার কথা, এসব ক্ষেত্রে মক্কেলরা তাদের আসল নাম ব্যবহার করে না।

হুম! স্যরি। ক্লাউস নামে কেউ আসেনি আজকে। সাথের মেয়েটার নাম কি মনে আছে আপনার?

হ্যাঁ। মেয়েটার চুল লালচে।

লালচে চুল? সেভিলে লালচে চুলের মেয়ের কোন অভাব নেই। আপনি নিশ্চিত আপনার ভাই এখানে আসেন?

হ্যাঁ। আমি নিশ্চিত।

সিনর, আমাদের এখানে লাল চুলো কোন মেয়ে নেই। শুধু আন্দালুসিয়ান বিউটিদের আনাগোনা আমাদের এখানে।

লাল চুল- বোকার মত বলে চলেছে বেকার।

স্যরি। আমাদের কাছে একজনও রেডহেড নেই। আপনি যদি–

তার নাম ডিউড্রপ, আরো বোকামি করে ফেলল বেকার।

মহিলার কাছে বিচিত্র নামটার কোন মানে নেই। মহিলা বলল, তাদের কাছে কেউ নেই এ নামে। সে হয়ত অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের গুলিয়ে ফেলছে। এরপর রেখে দিল ভদ্রভাবে।

প্রথম ঢিলটা ভুল।

.

রাগে একটু মুখ ঝামটা দিয়ে পরের নাম্বারে ডায়াল করল বেকার। কানেকশন পাওয়া গেল সাথে সাথে।

বুয়েনাস নচেস। মুজেরেস এসপানা। আমি কি আপনাকে সহায়তা করতে পারি?

এখানেও বেকার একই চাল চালল। সে একজন জার্মান। আজ তার ভাইয়ের সাথে যে মেয়েটা বেরিয়ে গেছে তার জন্য সে অনেক খরচ করতেও রাজি আছে। কাল তাকে চাই।

কেইনে রোটকোপফে, আমি দুঃখিত।

নামিয়ে রাখল ফোনটা এবারো রিসিপশনিস্ট।

দ্বিতীয় ঢিলও মাঠে মারা।

ফোনবুকের দিকে আবার চোখ দিল বেকার। আর মাত্র একটা নাম্বার বাকি। দড়ির শেষ প্রান্তে চলে এসেছে খেলা।

ডায়াল করল সে।

.

এসকর্টে বেলেন। এক লোক জবাব দিল।

সেই একই গান গেয়ে গেল বেকার।

সি, সি, সিনর। আমার নাম সিনর রলডেন। আপনাকে সহায়তা করতে পারলে আমি খুশি হব। আমাদের আছে দুজন লাল চুলো মেয়ে। খুব সুন্দরী।

বেকার মনে মনে লাফিয়ে উঠল। লাল চুলো? বলল সে কড়া জার্মান উচ্চারণে। খুব সুন্দরী?

হ্যাঁ। আপনার ভাইয়ের নাম কী? আমি জানাতে পারি আজ তার এসকর্ট কে। আমরা তাকে আপনার জন্য কালকে পাঠাতে পারি।

ক্লাউস শমিডট। পুরনোদিনের এক টেক্সটবুক থেকে নামটা ঝেড়ে দিল বেকার অন্ধের মত।

অনেকক্ষণ নিরবতা চারধারে। না। স্যার। আমাদের রেজিস্ট্রারে কোন ক্লাউস শমিডট নেই। কিন্তু মনে হয় আপনার ভাই ছদ্মনাম নিয়েছেন। বাসায় মনে। হয় স্ত্রী আছে, তাই না? লোকটা হাসল অসম্পূর্ণভাবে।

হ্যাঁ। ক্লাউস বিয়ে। খুব মোটা। যেন ইংরেজিতে ঠিকমত কথা বলতে পারে না বেকার। তার স্ত্রী তার সাথে শোয় না। একবার চোখ বুলিয়ে নেয় বেকার বুথের ভিতরে। সুসান এখন যদি তাকে এসব কথা দেখতে দেখে তাহলে কুরুক্ষেত্র বেধে যাবে, ভাবতে ভাবতেই হেসে ওঠে বেকার আপন মনে। আমিও মোটা। আমিও একা। আমি তার সাথে শুতে চাই। অনেক টাকা।

বেকারের অভিনয় ভালই হচ্ছিল কিন্তু অনেকদূর চলে গেছে সে। একটু ভুল হয়ে গেছে তার। স্পেনে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ। সিনর রোলড়ান এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। এটা কোন ফাঁদও হতে পারে। আমি তার সাথে শুতে চাই। এখন যদি সে যা বলে তাহলেই কেল্লা ফতে। গার্ডিয়া অফিস ঘাড় ধরে জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়বে। এমন এক সময়ে একবার ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য পুলিশ অফিসারের কাছে এক সপ্তাহ রেখে দিতে হয়েছিল এক এসকর্টকে।

এবার যখন কথা বলে উঠল রোলডান, তার কণ্ঠ আর বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। স্যার, দিস ইজ এসকর্টেস বেলেন। কে কল করছেন আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি?

আহ… সিগমুন্ড শমিষ্ট। দুর্বলভাবে বলল বেকার।

আপনি আমাদের নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?

লা গার্ডিয়া টেলিফোনিকা- ইয়েলো পেজেস।

হ্যাঁ, স্যার। আমরা একটা এসকর্ট সার্ভিস।  

হ্যাঁ। আমার একজন এসকর্ট প্রয়োজন। বেকার টের পাচ্ছে কিছু একটা গোলমাল হয়ে গেছে এর মধ্যেই।

স্যার, এসকর্টে বেলেন একটা সার্ভিস যারা বিজনেসম্যানদের জন্য এসকর্ট পাঠায় লাঞ্চনে আর ডিনারে। এ কাজের জন্যই আমাদের ফোন নাম্বার বুকে আছে। আমরা যা করি তা আইসসম্মত। আপনি খোঁজ করছেন অন্য কারো। একজন প্রস্টিটিউটের খোঁজ করছেন আপনি।

কিন্তু আমার ভাই…

স্যার, আপনার ভাই যদি পার্কে বসে বসে কোন মেয়েকে চুমু খেতে খেতে দিন পার করে দেয় সে আমাদের কেউ নয়। ক্লায়েন্ট-এসকর্ট সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা খুব কড়া।

কিন্তু–

আপনি আর কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের গুলিয়ে ফেলছেন। আমাদের মাত্র দুজন রেডহেড আছে। ইমাকুলাডা আর রোসিয়ো। তাদের কেউ টাকার বিনিময়ে কোন লোককে বিছানায় আসতে দিবে না। এ কাজের নাম পতিতাবৃত্তি আর স্পেনে এ কাজটা করা নিষিদ্ধ। গুড নাইট, স্যার।

কিন্তু—

ক্লিক।

একটা চেপে রাখা দম ছেড়ে দিয়ে বেকার ফোনটাকে নামিয়ে রাখল ক্রেডলে। তৃতীয় ঢিলও নষ্ট। ক্লচার্ডে বলেছিল জার্মান লোকটা মেয়েটাকে ভাড়া করেছিল সারাটা উইকএন্ডের জন্য।

.

বুথ থেকে বেরিয়ে গেল সে। রাতের বাতাসে সেভিলের মিষ্টি কমলার ঘ্রাণ ম-ম করছে। গোধূলীবেলা এখন সবচে রোমান্টিক পরিবেশ। সুসানের কথা মনে পড়ে গেল তার। স্ট্র্যাথমোরের কথাগুলোও মনে পড়ে গেল সাথে সাথেঃ আঙটিটা খুঁজে বের করুন।

বসে ছিল যেখানে, সেখানে বেঞ্চের গায়ে ঘা দিল বেকার। পরের পদক্ষেপের জন্য এগিয়ে যেতে হবে এবার।

কোন পদক্ষেপ?

অধ্যায় : ২৫

ক্লিনিকা দ্য সালুদ পাবলিকার ভিতরে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে। জিমন্যাশিয়াম হলের লাইটগুলো নিভিয়ে দেয়া। পিয়েরে ক্লচার্ডে সবার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে। তার উপরে ঝুঁকে আসা মানুষটার কথা সে জানতেও পারেনি। অন্ধকারে ঝিকিয়ে ওঠে চুরি করা সিরিঞ্জের ঝকঝকে অংশ। ক্লচার্ডের ডান কব্জির উপরের আই ভি টিউবটায় ঢুকে গেল সেটা। জ্যানিটরের কার্ট থেকে ত্রিশ সিসি ক্লিনিং ফ্লুয়িড চুরি করে নেয়া হয়েছিল। বুড়ো লোকটার কব্জিতে জোরে বুড়ো আঙুল ঠেসে ধরে পুরো নীল পদার্থটুকু ঢুকিয়ে দেয়া হল। ছড়িয়ে দেয়া হল ধমনীতে।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্লার্ডে জেগে উঠল। হয়ত সে খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠেছিল, কিন্তু মুখের উপর চেপে বসেছে জোরালো হাত। পড়ে থাকে সে নিথর। গায়ের উপর চেপে বসেছে দুনিয়ার ওজন। হাত দিয়ে আগুনের হল্কা উঠে আসছে উপর দিকে। টের পায় বৃদ্ধ কলামিস্ট। হাতের গোড়ায় আগুন ধরে গেছে যেন। যন্ত্রণাটা ছড়িয়ে পড়ছে বুকে, পিঠে। লক্ষ লক্ষ কাঁচের গুড়ার মত সে অনুভূতিটা এবার আঘাত হানল মাথায়। ক্লচার্ডে লক্ষ আলোর ঝলকানি দেখতে পায় এক মুহূর্তের জন্য… তারপর শুধুই শূণ্যতা।

মেডিক্যাল চার্টের খোঁজে ভিজিটর চোখ বুলাল আশপাশে। এরপর সে বাইরের দিকে সরে যেতে নেয়।

রাস্তায়, ওয়্যার রিম গ্লাস পরা এক লোক তার বেল্টের ছোট্ট ডিভাইসটার বাটন চেপে ধরে। চারকোণার প্যাকেটটা ক্রেডিট কার্ডের মত। এটা নতুন মনোকল কম্পিউটারের প্রোটোটাইপ। ইউ এস নেভি তাদের ডুবোজাহাজের ব্যাটারি ভোল্টেজ রেকর্ডের কাজে লাগায় এটাকে। এর সাথে একটা সেলুলার মডেমও লাগানো আছে। মাইক্রো টেকনোলজির সর্বশেষ কৃতীত্বের পরশও পাওয়া যাবে। ভিজুয়াল মনিটরটা ট্রান্সপারেন্ট লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে। আইগ্লাসের জোড়ার বা পাশে লাগানো থাকে। পার্সোনাল কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব এনে দিবে এই মনোকল। ব্যবহারকারী একই সাথে ভার:কম্পিউটারের ডাটার দিকে চোখ রাখতে পারবে, আবার পারবে বাইরের সব দেখতে। কাঁচের গায়ে লেখা যেমন, লেখাটাও দেখা যায় আবার লেখার পিছনের দৃশ্যও দেখা যায়, চশমাতে এভাবেই লাগানো এর মনিটর।

মনোকলের আসল ব্যবহার এর ডিসপ্লেতে নয়। ডাটা এন্ট্রি সিস্টেমে নতুন চমক আছে। আঙুলের ডগায় ছোট কন্টাক্টের মাধ্যমে ইউজার ডাটা ঢোকাবে। শর্টহ্যান্ডের মত পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী তথ্য ঢোকাবে। শর্টহ্যান্ডকে কম্পিউটার নিজেই ইংরেজিতে রূপান্তরিত করে নিতে পারবে।

খুনি একটা ছোট সুইচ চাপল। জীবন পেয়ে গেল চোখের চশমা। খুব দ্রুত সে একেকটা আঙুলে চাপ দেয়, তৈরি হয়ে যায় লেখা। চোখের সামনে একটা লেখা উঠে আসেঃ

বিষয়ঃ পি. ক্লার্ডে- টার্মিনেটেড

হাসল সে। খুনগুলোর হিসাব রাখা তার কাজের অংশ। আঙুল ব্যবহার করে সে আবার। সেলুলার মডেম সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ম্যাসেস সেন্ট

অধ্যায় : ২৬

পাবলিক ক্লিনিকের অপর পাশে একটা বেঞ্চে বসে বেকার ভেবে পায় না কী করবে এখন। স্ট্র্যাথমোর সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছে, পাবলিক ফোন ব্যবহার করে যখন তখন তথ্য পাঠানো যাবে না। নিরাপদ নয় সাধারণ লাইন। শুধু আঙটিটা পেলেই যেন সে কল করে। লোকাল পুলিশের কাছে যাবে নাকি ভাবছে বেকার চিন্তিতভাবে। তাদের কাছে লালচুলো মেয়ের ব্যাপারে তথ্য থাকতেই পারে। কিন্তু এখানেও স্ট্র্যাথমোরের নিপাট ভদ্র বাক্য জানানো আছে। আপনি অদৃশ্য। কেউ রিঙটার অস্তিত্বের কথা জানে না।

কী করবে সে? ট্রিয়ানায় খুঁজে দেখবে নাকি সবগুলো রেস্তোরাঁ ভাজা ভাজা করবে একজন মোটাসোটা জার্মানের খোঁজে? এসব কাজের যেন কোন মূল্যই নেই। যেন শুধু সময়টাই নষ্ট করা হবে এসব করলে।

স্ট্র্যাথমোরের শব্দগুলো আবার ফিরে ফিরে আসছে- এর সাথে জাতীয়। নিরাপত্তা জড়িত… আপনাকে অবশ্যই আঙটিটা পেতে হবে।

মাথার পিছন থেকে একটা কণ্ঠ বারবার বেকারকে বলছে- সে বড় কোন একটা ব্যাপার বারবার মিস করছে। কী- তাই ভেবে পায় না। আমি একজন শিক্ষক- কোন ড্যাম সিক্রেট এজেন্ট নই! তেতে ওঠে বেকার আপন মনে। কেন

স্ট্র্যাথমোর কোন প্রফেশনালকে পাঠাল না বোঝার উপায় নেই এখন আর।

ক্যালে ডেলিসিয়াসের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে বেকার মনে মনে আউড়ে নেয় পুরো ব্যাপারটা। পায়ের নিচের টাইলগুলো ঝাপসা হয়ে উঠছে প্রতি মুহূর্তে। নেমে আসছে অমানিশা। নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে, তার মনে।

ডিউড্রপ।

এ নামটার মধ্যেই কী যেন একটা আছে যা তার মাথার পিছনে সর্বক্ষণ যন্ত্রণা হয়ে দেখা দেয়। ডিউড্রপ! টেলিফোনের লোকজনের কথা মনে পড়ে যায়। আমাদের মাত্র দুজন লালচুলো মেয়ে আছে… দুজন রেডহেড… ইনমাকুলাডা আর রোসিও… রোসিও… রোসিও…

হঠাৎ থেমে গেল বেকার। আর আমি কিনা আমাকে একজন ভাষাবিদ বলি! বিশ্বাসই হচ্ছে না এ সাধারণ ব্যাপারটা মিস করেছে।

রোসিও নামটা স্পেনে মেয়েদের জন্য জনপ্রিয়। একজন তরুণী ক্যাথলিকের সব বৈশিষ্ট আছে এখানে- শুদ্ধতা, কৌমার্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নামটার আক্ষরিক অর্থ ভেবে সে হয়রান হয়ে পড়ে- ড্রপ অব ডিউ!

সেই বুড়ো ক্যানাডিয়ানের কথা মনে পড়ে যায় ধপ করে। ডিউড্রপ। মেয়েটা আর জার্মানের মধ্যে বাক্য বিনিময়ের একটা মাত্র ভাষা ছিল। ইংরেজি। রোসিও তার নামের অর্থটা ইংরেজি করে বুঝিয়ে দিয়েছে। উত্তেজিত হয়ে বেকার সাথে সাথে একটা ফোনের খোঁজে আশপাশ আতিপাতি করে ফেলল।

রাস্তার অপর প্রান্ত থেকে বিচিত্র চশমা পরা এক লোক তাকে অনুসরণ করছে। কেউ জানে না।

অধ্যায় : ২৭

ক্রিপ্টো ফ্লোরে ছায়াগুলো আরো দীর্ঘ হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। মাথার উপর অটোমেটিক লাইটিং তীব্র হচ্ছে আস্তে আস্তে। সুসান এখনো তার টার্মিনালে বসে থেকে অপেক্ষা করছে ট্রেসারের জন্য। এত দেরি হতে পারে ভাবাই যায় না!

তার মনে দুটা জ্বালা। মিস করছে সে ডেভিডকে। চাইছে গ্রেগ হেল যেন বাসায় ফিরে যায়। ভাগ্য ভাল, কান ঝালাপালা করছে না লোকটা। নিজের টার্মিনালে বসে থেকে পুঁদ হয়ে আছে আপন কাজে। যা খুশি তা করে মরুকগে লোকটা। রান-মনিটরে না ঢুকলেই হল। সে যে সেখানে ঢোকেনি তার প্রমাণ এই নিরবতা।

ব্যাপারটা ঘটল সুসানের তৃতীয় কাপ চা খাবার সময়- টার্মিনালটা এবার বিপ করে উঠল। দ্রুত হয়ে উঠল নাড়ির গতি। একটা এনভেলাপ দেখা যাচ্ছে। তার মানে ফিরতি ই-মেইল। একবার দ্রুত হেলের দিকে তাকিয়ে নেয় সুসান। না সে আসলেই ডুবে গেছে কাজে। দম বন্ধ করে এনভেলাপের গায়ে ডবল ক্লিক করল সে।

নর্থ ডাকোটা, নিজেকে শুনিয়ে বিড়বিড় করল অবশেষে সুসান, দেখা যাক কে তুমি।

খুলে গেল ই-মেইল। একটা মাত্র লাইন সেখানে। পড়ল সুসান। আবার পড়ে দেখল।

এ্যালফ্রাডোতে ডিনার চলবে? রাত আটটায়?

ঘরের অপর প্রান্ত থেকে হেল মুচকে হাসল।

সেন্ডারের ঠিকানা দেখল সুসান সাথে সাথে।

FROM: [email protected]

রাগের একটা তীব্র অনুভূতি উঠে আসছে সুসানের সারা শরীর বেয়ে। কোনক্রমে সেটাকে ঠেকিয়ে দিল সুসান। মেইলটা ডিলিট করে দিয়ে কোনমতে মুখ কামড়ে বলল, খুব বড়মি দেখান হল, তাই না গ্রেগ?

তারা কিন্তু দারুণ কারপাচ্চিও বানায়, হাসল গ্রেগ, কী বল তুমি? তারপর আমরা–

ফরগেট ইট।

হায়! আফসোস ঝরে পড়ল গ্রেগের কণ্ঠে। আবার নিজের টার্মিনালে ফিরে গেল সে। ব্যাপারটা আর ভাল লাগে না ক্রিপ্টোগ্রাফির প্রধানের। সে তিতিবিরক্ত হয়ে গেছে গ্রেগের ব্যবহারে। হেল সব সময় যৌন সুড়সুড়ি দেয়া খোঁচা দেয় সুসানকে। তার অনেকদিনের ইচ্ছা, ট্রান্সলেটারের বাকা দেহটায় শরীর এলিয়ে দিয়ে তারা সেক্স করবে। কিন্তু সুসান তার পরও তাকে কিছু বলেনি কখনো। হেলের একটাই আফসোস, সুসান এক ইউনিভার্সিটি টিচারের সাথে ভালবাসা করছে যে কিনা সামান্য বাদামের দাম তুলে আনতেও অনেক খাটাখাঁটি করে। আফসোস। আমরা দারুণ সন্তান জন্ম দিতে পারতাম- ভাবে লোকটা।

কী নিয়ে কাজ করছ তুমি এত শশব্যস্ত হয়ে? কথার মোড় ঘোরাতে চায়। হেল।

কোন জবাব নেই সুসানের পক্ষ থেকে।

তুমি তো আমাদের দলের সদস্য তাই না? আমি কি কিছুই জানতে পারব না? উঠে দাঁড়াল হেল। টার্মিনাল ঘুরে চলে আসছে সুসানের কাছে।

হেলের আগ্রহ আজ যে একটা অনর্থ ঘটিয়ে ছাড়বে ঠিক ঠিক বুঝতে পারে সুসান। সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে, ডায়াগনোসিস। কমান্ডারের মত করেই মিথ্যাটা ঝেড়ে দিল সে।

সাথে সাথে থমকে গেল হেল, ডায়াগনোসিস? সন্দেহ দেখা দিল তার কণ্ঠে, সেই প্রফেসরের সাথে খেলাধূলা না করে তুমি শনিবারটা মাটি করছ ডায়াগনোসিস করে?

তার নাম ডেভিড।

যাই হোক।

বাঘিনীর মত তাকাল সুসান সাথে সাথে, ভাল কোন কাজ কি তোমার হাতে নেই?

তুমি কি আমার হাত থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করছ?

আসলে, ইয়েস।

ওহহো, সু! আমি আহত হলাম।

সুসানের চোখ এবার আরো সরু হয়ে গেল। সু নামে ডাকলে সে সব সময়। তেতে ওঠে। নামটা নিয়ে তার কোন আপত্তি থাকত না কিন্তু গ্রেগ হেল একমাত্র লোক যে তাকে এ নামটায় ডাকে।

আমি কেন তোমাকে সহায়তা করব না, বলতো! আবার এগিয়ে আসছে সে সুসানের কাছে, ডায়াগনস্টিক্স জাতীয় কাজে আমি কিন্তু এককাঠি সরস। আর তার উপর আমি আরো মরে যাচ্ছি ভেবে ভেবে, কী এমন ডায়াগনোসিস আছে। যার জন্য শক্তিমত্ত সুসান ফ্লেচার শনিবারের রাতটা কাটাতে আসে ক্রিপ্টোতে!

এ্যাড্রিনালিন বয়ে গেল সুসানের শরীরে। স্ক্রিনের ট্রেসারের দিকে চোখ চলে গেল তার। জানে, হেলকে এটা দেখতে দেয়া যাবে না- সে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ত্যক্ত বিরক্ত করে ছাড়বে। আমি ব্যাপারটা গোপন রেখেছি, গ্রেগ। বলল সে অবশেষে।

কিন্তু হেল আসছেই। টার্মিনালের সামনে চলে এলে সুসান বুঝতে পারল যা করার করতে হবে এখনি। হেল মাত্র কয়েক পা দূরে থাকতেই পদক্ষেপ নিল সে। উঠে দাঁড়াল। পথরোধ করল হেলের।

সোজা চোখে চোখে তাকাল সে। আমি বলেছি, নো!

সুসানের সিন ক্রিয়েশন দেখে ঘাবড়ে গেল গ্রেগ। একটু। আরো এগিয়ে এল এবার খেলোয়াড়ের মত। এরপর কী ঘটবে সে ব্যাপারে গ্রেগ হেলের কোন ধারণাই নেই।

দাঁড়িয়ে গেল হেল। পিছিয়ে গেল শক পেয়ে। সুসান ফ্লেচার যে সিরিয়াস তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর আগে কখনো মেয়েটা তাকে ছোয়নি। কখনো না। হেল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর ফিরে গেল নিজের টার্মিনালে। বসতে বসতে একটা কথা তার মাথায় খেলছে- আর যাই হোক, সুসান ফ্লেচার ডায়াগনোসিস করছে না।

সে আরো গুরুত্বপূর্ণ কোন এক কাজে ব্যস্ত।

অধ্যায় : ২৮

সিনর রোল্ডান তার ডেস্কে বসে বসে ভাবছে, বড় বাঁচা বাঁচা গেল। পুলিশের বা সে রকম কোন এক সংস্থার লোকের কাছে পরিষ্কার করে দেয়া গেছে সে কোন সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। তাদের এ প্রতিষ্ঠান একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা। গার্ডিয়া তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য এ কাজ করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এরপর তারা কী করবে?

ভাবনায় ছেদ পড়ল টেবিলের ফোনটা তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিতেই। বুয়েনাস নচেস, এসকর্টে বেলিন। বলল সে।

বুয়েনাস নচেস, আলোর গতিতে স্প্যানিশে বলে উঠল এক লোকের কণ্ঠ। নাকে নাকে কথা বলছে লোকটা। যেন ঠান্ডা লেগেছে। এটা কি কোন হোটেল?

না, স্যার। কোন নাম্বার আপনি ডায়াল করেছেন? আজ বিকালে সিনর রোল্ডান আর কোন ফাঁদে পা দিতে চায় না।

থ্রি ফোর- সিক্স টু- ওয়ান জিরো, বলল কণ্ঠটা।

ভ্রু কোঁচকাল রোল্ডান। কণ্ঠটা কেমন যেন পরিচিত লাগছে। উচ্চারণটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করল সে। বার্গোস নাকি? আপনি ঠিক নাম্বারেই ডায়াল করেছেন। কিন্তু এটা একটা এসকর্ট সার্ভিস।

একটু থেমে থাকল লাইনের কণ্ঠটা। ও… আই সি! দুঃখিত। কে যেন নাম্বারটা লিখে রেখেছিল। মনে করলাম কোন হোটেলের নাম্বার। আমি বার্গোস থেকে আসছি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সত্যি দুঃখিত। আচ্ছা।

থামুন! না বলে পারল না সিনর রোল্ডান। সে মনেপ্রাণে একজন সেলসম্যান এখানে। কেউ কি রেফার করেছে? উত্তর থেকে নতুন কোন ক্লায়েন্ট? বাণিজ্যের সামান্যতম সুযোগও সে ছাড়বে না।

বন্ধু আমার, আমুদে সুর নিয়ে বলল সিনর রোল্ডান, আমি আপনার কণ্ঠে আগেই বার্গোসের সুর ধরেছিলাম। নিজেও বাস করতাম ভ্যালেন্সিয়ায়। সেখানেই আমার জন্ম। আপনি কোন কাজে সেভিলে এসেছেন?

জুয়েলারি বিক্রি করি। মাজোরিকা মুক্তা।

মাজোরিকা, সত্যি? আপনি মনে হয় ঘোরাঘুরির উপরেই থাকেন…

অসুস্থের মত কাশল কণ্ঠটা, আসলে… ঠিকই বলেছেন।

সেভিলে এসেছেন ব্যবসার কাজে? রোল্ডান নিশ্চিত এটা আর যাই হোক, গার্ডিয়ার চাল নয়। মাটি ঘেঁষা উচ্চারণ। সে একজন কাস্টমার। ক-তে কাস্টমার।

আমাকে আন্দাজ করতে দিন- কোন বন্ধু আপনাকে নাম্বারটা দিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন আমাদের একটা কল করতে, তাই না?

কণ্ঠটায় অপ্রস্তুতের ভাব ঝরে পড়ল, আসলে… না, মানে ব্যাপারটা তেমন নয়।

লজ্জা পাবার কিছু নেই, সিনর। আমরা এসকর্ট সার্ভিস। এতে লজ্জার কিছুই নেই। সুন্দর মেয়ে নিয়ে ডিনার ডেট করা- এই সব। কে আপনাকে নাম্বারটা দিয়েছে? মনে হয় খুব নিয়মিত কোন ক্রেতা। আমি আপনাকে স্পেশাল রেট দিতে পারি।

আসলে কেউ আমাকে নাম্বারটা দেয়নি। আমি একটা পাসপোর্টের সাথে পেয়েছিলাম। মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

ডুবে গেল রোল্ডান, তার হৃদপিন্ড সাথে করে। এ লোক তাহলে কাস্টমার নয়। আপনি বলতে চাচ্ছেন নাম্বারটা কুড়িয়ে পেয়েছেন?

আজকে পার্কে এক লোকের পাসপোর্ট কুড়িয়ে পাই। ভিতরে একটা কাগজের টুকরায় আপনাদের নাম্বারটা লেখা ছিল। মনে হল এটা তার হোটেলের নাম্বার। যাক, আমার ভুল। যাবার পথে কোন পুলিশ স্টেশনে সেটা ফেলে দিলেই কাজ হয়ে গেল।

মাফ করবেন। আমি কি আরো ভাল একটা ধারণা দিতে পারি? মনে মনে একবার চেখে নিচ্ছে নতুন কাস্টমার বাগানোর সম্ভাবনাটা। গার্ডিয়া যা শুরু করেছে। তাতে তার পুরনো কাস্টমাররা এক্স কাস্টমারে পরিণত হচ্ছে। নতুন লোক পেলে বরং ভাল হয়। ব্যাপারটা এভাবে দেখুন। যেহেতু আপনি এক লোকের পাসপোর্টে নাম্বারটা পেয়েছেন সেহেতু বলা চলে সে আমাদের কাস্টমার। আমি হয়ত পুলিশের কাছে যাবার কষ্টটা কমিয়ে দিতে পারি।

ইতস্তত করছে কণ্ঠটা, আমি ঠিক জানি না। আমার হয়ত শুধু—

এত বেশি দোনোমনায় ভোগার কোন মানে হয় না; মাই ফ্রেন্ড। কথাটা বলতে আমি একটু দ্বিধা করছি। আসলে এখানকার পুলিশ উত্তরের মত ততটা কাজের কাজি নয়। লোকটার হাতে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে দিতে কয়েক দিনও পেরিয়ে যেতে পারে। আপনি নামটা জানিয়ে দিলে আমি খেয়াল রাখব যেন তিনি দ্রুত জিনিসটা ফেরৎ পান।

হ্যাঁ। যাক… আমার মনে হয় না তাতে কোন ক্ষতি হবে… বলল সে, কাগজ উল্টাতে উল্টাতে, খসখস শব্দ হচ্ছে ওপাশে, নামটা জার্মান। উচ্চারণটা ঠিকমত করতে পারব না… গুস্তা… গুস্তাফসন?

নামটা চট করে চিনে ফেলে রোল্ডান। কিন্তু সারা পৃথিবীতে তাদের ক্লায়েন্ট আছে। তারা কেউ আসল নাম জানায় না। কেমন দেখায় তাকে? মানে তার ছবিতে? হয়ত মনে পড়ে যাবে নামটা।

আসলে… বলল কণ্ঠটা, তার চেহারা অনেক অনেক মোটা।

সাথে সাথে রোল্ডান চিনে ফেলল। সেই হোকা চেহারাটাকে ভালভাবেই চেনে। রোসিওর সাথের লোকটা। ব্যাপারটা বিচিত্র, ভাবে সে, এক জার্মানের ব্যাপারে দুটা কল পাওয়া স্বাভাবিক নয়।

মিস্টার গুস্তাফসন? অবশ্যই। আমি তাকে ভালভাবেই চিনি। আপনি পাসপোর্টটা আনলে সেটা মালিকের হাতে গছিয়ে দিতে পারব সহজেই।

আমি আছি ডাউনটাউনে। কোন গাড়ি নেই সাথে। আপনি এলে ভাল হয়।

আসলে আমি ফোনের কাছ থেকে সরতে পারব না। কিন্তু জায়গাটাতো তেমন দূরে নয়, ইচ্ছা হলেই চলে আসতে পারেন আপনি।

আই এ্যাম স্যরি। আমার হাতে ততটা সময় নেই। কাছেই একটা গার্ডিয়া স্টেশন আছে। আমি সেখানেই রেখে যাচ্ছি। আপনি তাকে পেলে জানিয়ে দিবেন।

না, থামুন! চিৎকার করে উঠল রোল্ডান, পুলিশকে এর সাথে জড়ানোর কোন মানে হয় না। আপনি ডাউনটাউনে, তাই না? আলফানসো তের হোটেলটা কি চেনেন? সিটিতে এরচে ভাল হোটেল খুব বেশি নেই।

হ্যাঁ। আমি আলফানসো তের হোটেলটা চিনি। পাশেই।

দারুণ! মিস্টার গুস্তাফসন সেখানে আজ রাতের অতিথি। তিনি হয়ত এর মধ্যেই সেখানে চলে গেছেন।

একটু ইতস্তত করল কণ্ঠটা, আই সি… তাহলে মনে হচ্ছে এতে কোন সমস্যা নেই।

সুপার্ব! হোটেলের রেস্তোরাঁয় তিনি আমাদের একজন এসকর্টের সাথে ডিনার সারবেন। রোল্ডান জানে, তারা এর মধ্যেই বিছানার কাছাকাছি চলে গেছে, কিন্তু বিশ্রি ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে লোকটার মন নষ্ট করে দিতে চায় না সে। কনসার্জের কাছে পাসপোর্টটা রেখে দিন। তার নাম ম্যানুয়েল। তাকে বলুন আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। জানিয়ে দিন জিনিসটা রোসিওর কাছে দিতে হবে। আজ সন্ধ্যার জন্য রোসিও মিস্টার গুস্তাফসনের ডেট। আপনি সেখানে নিজের নাম-ঠিকানাও রেখে দিন। হয়ত মিস্টার গুস্তাফসন আপনাকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দিতে চাইবেন।

ভাল আইডিয়া। আলফানসো তের। আমি এখনি সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। থ্যাঙ্ক ইউ।

.

ডেভিড বেকার ফোনটা ঝুলিয়ে রাখল। আলফানসো তের। হাসল সে। শুধু জানতে হয় কী করে জিজ্ঞেস করতে হয়।

নিরব আন্দালুসিয়ান রাতে বেকারের পিছু নিল কেউ একজন।

কে, কেউ জানে না।

।অধ্যায় : ২৯

হেলের সাথে মোটামুটি সংঘর্ষের পর সুসানের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। নড থ্রির ওয়ান ওয়ে গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকাল। ক্রিপ্টো ফ্লোর খালি। হেল একেবারে চুপ মেরে গেছে। গম্ভীর। সুসানের মনে একটাই আশা, এই উটকো লোকটা যেন চলে যায়।

মাঝে মাঝে ভাবছে স্ট্র্যাথমোরকে ডাকবে কিনা। ডাকলে কমান্ডার সোজা সাপ্টা লাথি কষাবে হেলের পিছনদিকে। বের করে দিবে। হাজার হলেও, আজ শনিবার রাত। কিন্তু তাকে সরিয়ে দিলে অবিশ্বাসের বিষবাষ্প ছড়াবে। বাকি ক্রিপ্টোদের কাছেও রাষ্ট্র হয়ে যাবে। বদনামও ছড়াতে পারে। সুসান ঠান্ডা মাথায় ভাবল- হেলকে পাত্তা না দিলেই চলে। লোকটা নিজে নিজেই চলে যাবে আর একটু পর।

আনব্রেকেবল এ্যালগরিদম! আবার চিন্তা চলে যাচ্ছে ডিজিটাল ফোট্রেসের দিকে। মন মানতে চায় না। এদিকে ট্রান্সলেটার তার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।

স্ট্র্যাথমোরের কথা মনে পড়ে যায় এবার। একা একাই সমস্ত গুরুভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। সমস্ত বাধা বিপত্তির সামনে থেকে একেবারে হিমালয়ের মত অবিচল আর শান্ত সে।, স্ট্র্যাথমোরের ভিতরে মাঝে মাঝে ডেভিডের ছায়া পায় সুসান। তাদের গুণের মধ্যে অনেক মিল। কখনো কখনো সুসানের মনে হয় স্ট্র্যাথমোর তাকে ছাড়া চলতে পারত না। রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচ, বাইরের শত হ্যাপা সামলানোর পর স্ট্র্যাথমোর কাজে মন দিতে পারত না যদি সুসানের মত কোন হেড ক্রিপ্টোগ্রাফার নিজের কাজটা এত ভাল না বাসত।

এদিকে স্ট্র্যাথমোরও সুসানের জীবনে আলোকবর্তিকার মত। চারধারে ক্ষমতালোভী মানুষের দঙ্গল, এর মাঝেও তাকে কী করে যেন ছায়া দিয়ে দিয়ে এত দূরে টেনে এনেছে। আগে যা শুধু স্বপ্ন ছিল সেগুলোকে দিয়েছে বাস্তব রূপ।

সবচে বড় কথা, কমান্ডার সেই সুন্দর বিকালে ডেভিড বেকারকে ক্রিপ্টোতে ডেকে না আনলে সে আর তাকে দেখতে পেত না কখনোই। মনের মত একজন মানুষের সন্ধান পাওয়াটা শুধুই কল্পনা থেকে যেত।

একটা ফ্যাক্স এসেছে সুসানের কাছে। সাত মাস ধরে পড়ে আছে। এখনো এর কোড ভাঙতে পারেনি সুসানঃ

প্লিজ এ্যাকসেপ্ট দিস হাম্বল ফ্যাক্স
মাই লাভ ফর ইউ ইস উইদাউট ওয়াক্স।

সুসান ভেবে পায় না কী এই উইদাউট ওয়াক্স। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে। হাসে ডেভিড। জবাব দেয় না। এটা এক ধরনের প্রতিশোধ। কোড দিয়ে দিয়ে ডেভিডের জান জেরবার করে দিয়েছিল সুসান। সব জায়গায় কোড। বাজারের লিস্টিতে এনক্রিপশন, ভালবাসার নোটে এনক্রিপশন। এ এক প্রকার খেলা। ডেভিড আস্তে আস্তে ভাল ক্রিপ্টোগ্রাফার হয়ে উঠছিল। এরপর এক খেলা খেলতে শুরু করল সে। সব জায়গায় লেখা শুরু করল, উইদাউট ওয়াক্স, ডেভিড।

এই উইদাউট ওয়াক্সের কোন মানে বের করতে পারছে না আর সুসান।

যত বার সুসান মানে জানতে চেয়েছে, চাপাচাপি করেছে, ততবারই ঠান্ডা মাথায় ডেভিড বলেছে, তুমিই তো কোড ব্রেকার।

এন এস এ ক্রিপ্টোর হেড সব চেষ্টা করেছে, সাইফার বক্স, সাবস্টিটিউশন এমনকি এ্যানাগ্রাম। কম্পিউটারে উইদাউট ওয়াক্স ঢুকিয়ে দিয়ে অক্ষরগুলো সাজিয়ে দিয়ে নতুন শব্দ বানাতে বলেছে। যা পেয়েছে তার কোন মানে নেই। ট্যাক্সি হাট ওয়াও। বোঝাই যায়, এনসেই টানকাডো একমাত্র লোক নয় যে আনব্রেকেবল কোড বানাতে পারে।

হিসহিস করে খুলে যাচ্ছে কাঁচের দরজা। মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেল। স্ট্র্যাথমোর ঢুকছে।

সুসান, কোন খবর আছে নাকি? প্রশ্ন করতে করতেই স্ট্র্যাথমোর দেখতে পায় হেলকে, ওয়েল, গুড ইভিনিং, মিস্টার হেল। চোখ সরু হয়ে গেল তার, শনিবারে, আমিতো ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। কী করছেন আপনি?

হাসল হেল, শুধু নিশ্চিত হতে চাচ্ছি আমার ওজনটা টেনে নিতে পারি নিজেই।

আই সি। একটু ভাবল স্ট্র্যাথমোর, সিদ্ধান্ত নিল, হেলকে এখান থেকে বের করে দিবে না হঠাৎ করে। তাতে ব্যাপারটা খারাপ হতে পারে: মিস ফ্লেচার, তোমার সাথে কি কথা বলতে পারি? বাইরে?

একটু ইতস্তত করল সুসান, ও… অরশাই স্যার। তাকাল সে মনিটরের দিকে। তারপর তাকাল গ্রেগ হেলের চোখে চোখে, এক মিনিট।

মাত্র কয়েকটা বাটন চেপে সে স্ক্রিনলক নামের প্রোগ্রামটা বের করে আনল। এটা প্রাইভেসি ইউটিলিটি। নড় থ্রির প্রতিটা কম্পিউটারে এটা আছে। স্ক্রিন লক দেখবে যেন তার ব্যবহারকারি বাদে আর কেউ এসব গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া না করে। পাঁচ অক্ষরের প্রাইভেসি কোড দিল সুসান। তার স্ক্রিন কালো হয়ে গেল সাথে সাথে। এমনি থাকবে সে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত।

পায়ে জুতা গলিয়ে নিয়ে এবার পিছু নিল কমান্ডারের।

.

কোন নরকের কাজ করছে সে এখানে? নড থ্রির বাইরে বেরুনোর সাথে সাথে স্ট্র্যাথমোর গর্জে উঠল।

যা সে করে, বলল সুসান, কিছুই না।

স্ট্র্যাথমোর একটু উদ্বিগ্ন, সে কি ট্রান্সলেটারের ব্যাপারে কিছু বলেছে?

না। কিন্তু যদি সে রান মনিটরে যায় আর সতেরো ঘন্টার কাহিনী দেখে তাহলে কিছু না কিছু যে বলবে তাতে সন্দেহ কী!

স্ট্র্যাথমোর মানে না, সে রান মনিটরে ঢুকবে কোন দুঃখে?

আপনি কি তাকে বাসায় দেখতে চান?

না। তাকে এখানেই থাকতে দিব। চার্ট্রাকিয়ান গেছে নাকি?

জানি না। দেখিনি তাকে।

জিসাস! স্ট্র্যাথমোর আরো তীব্র কণ্ঠে বলল, এ কি কোন সার্কাস? ট্রেসার থেকে কোন তথ্য এসেছে? আমি বসে আছি, মনে হচ্ছে ট্রেসারটা আমার পাঠানো।

না। ডেভিড কল করেছিল?

মাথা নাড়ল স্ট্র্যাথমোর, আঙটি পাবার আগ পর্যন্ত কল করতে মানা করে দিয়েছি।

কেন? যদি তার সাহায্য প্রয়োজন হয়, তখন?

এখান থেকে তাকে খুব সাহায্য করতে পারব আমি, তাই না? সে একা আছে সেখানে। তার উপর আমি আনসিকিউরড লাইনে কথা বলব কোন আক্কেলে? যদি কেউ শুনে ফেলে? আমাদের পিছনে ফেউ লেগে থাকার সম্ভাবনা কম নয়।…

উদ্বেগে সুসানের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, এর মানে কী?

একটু অপ্রস্তুত হয়ে উঠল স্ট্র্যাথমোর, ডেভিড ভাল আছে। আমি শুধু একটু বাড়তি সতর্কতা রাখছি।

.

তাদের ত্রিশ গজ দূরে, নড় থ্রির ওয়ান ওয়ে কাঁচের ওপাশ থেকে সুসানের টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হেল। মনিটরটা কালো। সুসান আর কমান্ডারের দিকে তাকাল সে। তারপর পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে তুলে আনল একটা কার্ড। ইনডেক্স নাম্বারটা দেখল একবার।

আবার তাকাল সুসান আর স্ট্র্যাথমোরের দিকে। তারা এখনো কথা বলছে। এবার পাঁচটা অক্ষর ঢোকাল ভিতরে। জীবন ফিরে পেল মনিটর।

বিংগো! মুখ ভেঙচে হাসল সে।

.

নড থ্রির প্রাইভেসি নাম্বার বের করা খুব বেশি জটিল নয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোড ব্রেকার আর প্রোগ্রামারদের জন্য। প্রত্যেক টার্মিনালে একটা করে ডিটাচেবল কিবোর্ড থাকে। হেল তার সাথে করে সবার টার্মিনালের কিবোর্ডই নিয়ে গেছে। একেক বার। তারপর সেখানে নিজের ইচ্ছামত একটা চিপ বসিয়ে দিয়েছে, যেন প্রতিটা কি স্ট্রোক মনে রাখতে পারে সেটা। সকালে সে নিজের মডিফাইড কিবোর্ডটা নিয়ে এসে লাগিয়ে রাখে। সন্ধ্যার সময় তুলে নিয়ে যায়। আসলটা লাগিয়ে রাখে। চিপে রেকর্ড করা ডাটা দেখে নেয়। যদিও লাখ লাখ কি স্ট্রোক থাকার কথা তবু পাসওয়ার্ডটা বের করা সহজ। একজন ক্রিপ্টোগ্রাফার তার দিনটা শুরু করে পার্সোনাল কিগুলো চেপে। আনলক করে টার্মিনাল। এ কারণেই হেলের কাজটা একেবারে পানির মত সোজা হয়ে যায়- লিস্টের প্রথম পাঁচটা অক্ষরই প্রাইভেসি কোড।

সুসানের মনিটরের দিকে তাকাতে তাকাতে হেলের মনে হয় ব্যাপারটা বিচিত্র। সে কোডগুলো চুরি করেছে নিতান্তই শখের বশে, কিছুটা তালগোল পাকানোর ইচ্ছায়। এখন তার খুশি লাগছে, আগেই কোন তালগোল পাকায়নি বলে।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকল সে। সেখানের লেখাটা লিম্বোতে করা। এটা তার স্পেশালিটির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু এদিকে তাকিয়েই হেল ঠিক ঠিক বলে দিতে পারবে- এটা কোন ডায়াগনোসিস নয়। মাত্র দুটা শব্দের মানে ধরতে পারল সে, কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট–

টার্গেট সার্চিং…

ট্রেসার? আপনমনে বলে সে, কী সার্চ করছে? হঠাৎ অপ্রস্তুত বোধ করে। হেল। সুসানের মনিটরের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে সে সিদ্ধান্ত নেয়।

লিম্বোর ভাষাটা ভালভাবে না চিনলেও সে এ সম্পর্কে খুব ভালভাবেই জানে। এটা লেখা হয়েছে দুটা ভাষাকে অবলম্বন করে। সি এবং প্যাস্কেল। দুটাই তার একেবারে নখদর্পণে।

বাইরে তাকায় সে। এখনো কথা বলছে স্ট্র্যাথমোর আর সুসান। কয়েকটা মডিফাইড প্যাস্কেল কমান্ড দিয়ে সে রিটার্ন চাপল। ট্রেসারের স্ট্যাটাস উইন্ডো তার আশা মতই ব্যবহার করলঃ

টার্গেট এ্যাবোর্ট?

দ্রুত টাইপ করল সেঃ ইয়েস

আর ইউ শিওর?

আবার টাইপ করলঃ ইয়েস

এক মুহূর্ত পর বিপ করে উঠল কম্পিউটারঃ

ট্রেলার এ্যাবোর্টেড

হাসল হেল।

এইমাত্র সুসানের কাছ থেকে একটা মেসেজ গেল যাতে বলা আছে ট্রেসার নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। সে যে ব্যাপারটার জন্যই অপেক্ষা করুক না কেন, সেজন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে অনেক সময় ধরে।

তার এখানে আসার সমস্ত প্রমাণ মুছে ফেলা হল। মুছে ফেলা হল এইমাত্র দেয়া কমান্ড। এরপর দিয়ে দিল সুসানের প্রাইভেসি কমান্ড।

কালো হয়ে গেল মনিটর।

যখন সুসান নড থ্রি তে নিজের টার্মিনালে ফিরে এল তখন শান্তভাবে জায়গামত বসে আছে গ্রেগ হেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *