1 of 3

০২।৫ দ্বিতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক

পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শক্রপরাজয়
[ঋষি : কপিঞ্জল দেবতা : ওষধি (বনস্পতি), রুদ্র, ইন্দ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ]

নেচ্ছঃ প্রাশং জয়াতি সহমানাভিভূরসি। প্রাশং প্রতিপ্রাশো জহ্যরসাত্ কৃঘোষধে ॥১॥ সুপর্ণষ্যাম্ববিন্দৎ সূরাখনন্নসা। প্রাশং প্রতিশো জহ্যরসান কৃন্বেষধে ॥ ২॥ ইন্দ্রো হ চক্রে ত্বা বাহাবসুরেভ্য স্তরীতবে। প্রাশং প্রতিশো জহ্যরসাত্ কৃঘোষধে ॥ ৩॥ পাটামিন্দ্রো ব্যাশ্নাদপুরেভ্য স্তরীতবে। প্রাশং প্রতিশো জহ্যরসান কৃশ্বোষধে ॥ ৪৷৷ তয়াহং শক্ৰসাক্ষ ইন্দ্রঃ সালাবৃক্ট ইব। প্রাশং প্রতিশো জহ্যরসাত্ কৃঘোষধে ॥ ৫ রুদ্র জলাষভেষজ নীলশিখন্ড কর্মকৃৎ। প্রাশং প্রতিশো জহ্যরসান কৃষোষধে ॥ ৬৷৷ তস্য প্রাশং ত্বং জহি যো ন ইন্দ্রাভিদাসতি। অধি নো ত্রুহি শক্তিভিঃ প্ৰাশি মামুত্তরং কৃধি ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ –হে পাঠা (একপ্রকার লতা) নাম্নী ঔষধি! যে আমার শত্রু, সে তোমার সেবনকারী আমাকে যেন জয় করতে সমর্থ না হয়। তুমি শত্রুদের মোকাবিলা করে তাদের বশ করে থাকো। বাদ-বিবাদে বিজড়িত আমাকে গ্রহণ করার পর, আমার প্রতিবাদীগণকে পরাভূত করো। তুমি বাত, পিত্ত ইত্যাদি দোষসমূহকে প্রশমনশালিনী। ভিষকের অনুমতিতে যে তোমার রস পান করে, হে পাঠা! তুমি তার প্রতিবাদীদের কণ্ঠ শুষ্ক করে দাও এবং তাদের (সেই প্রতিবাদীদের) শব্দোচ্চারণ স্তব্ধ করে দাও। ১

হে ঔষধি! গরুড় তোমাকে বিষনাশের নিমিত্ত অন্বেষণ করেছিল। (সৰ্পৰ্শত্রু গরুড় সর্পবিষ নিবারণকল্পে তোমাকে অন্বেষণ পূর্বক প্রাপ্ত হয়েছিল)। তুমি আমার প্রতিবাদীগণকে পরাভূত করো। তাদের শুষ্ক-কণ্ঠশালী ও বাহিত করে দাও। ২

হে ঔষধি! ইন্দ্রদেব অসুর-নাশের নিমিত্ত তোমাকে আপন দক্ষিণ ভুজে ধারণ করেছিলেন, সেইরকমেই আমিও ধারণ করছি। তুমি আমার প্রতিবাদীদের স্মৃতি-হরণ পূর্বক পরাভূত করো। তাদের কণ্ঠকে বিশুষ্ক করে দাও, যাতে তারা অসম্বদ্ধ (অসংগত) বাক্যশালী হয়ে যায়। ৩।

 হে পাঠা! ইন্দ্রদেব রাক্ষসদের উপর বিজয়-লাভের নিমিত্ত তোমাকে সেবন (ভক্ষণ) করেছিলেন। তোমাকে সেবন-করণশালী আমাকে লক্ষ্য পূর্বক প্রতিবাদীকে পরাভূত করো এবং তাদের কণ্ঠকে বিশুষ্ক করে অসংগত প্রলাপশালী করে দাও। ৪।

 হে ঔষধি! তোমাকে সেবনের দ্বারা ইন্দ্রদেব যেমন রাক্ষসবর্গকে নিরুত্তর করে দিয়েছিলেন, সেই রকমেই তোমাকে সেবনকারী আমিও প্রতিবাদীদের নিরুত্তর করে দিচ্ছি। তুমি আমার প্রতিবাদী শত্রুগণকে পরাভূত করো এবং তাদের কণ্ঠকে শুষ্ক করে দাও। তারা যেন অসংগত বাক্যোচ্চারণশালী হয়ে যায় ৷৷ ৫৷

 হে রুদ্র। তুমি স্মরণমাত্রই জলকে ঔষধে পরিণত করে থাকো। তুমি নীলবর্ণ শিখাসম্পন্ন এবং সৃষ্টি ইত্যাদি পঞ্চকৰ্ম-সাধনশালী। আমার দ্বারা সেবনকৃত এই পাঠাকে সেইরকম শক্তি দাও, যাতে সে (পাঠা) আমার প্রতিবাদীদের তিরস্কৃত করতে পারে। হে ঔষধি! তুমি আমার প্রতিবাদীদের পরাভূত করো। তারা শুষ্ক কণ্ঠশালী এবং অসম্বন্ধ বাক্যোচ্চারণশালী হয়ে যাক ৷৬৷৷

হে ইন্দ্রদেব! যাদের সাথে তর্কে (যুক্তিসঙ্গত বাক্যে) আমরা ক্ষীণ হয়ে আছি, সেই প্রতিবাদীদের তুমি প্রশ্নহীন করে দাও। আমাদের আপন শক্তিতে তর্কযুদ্ধে প্রবল করে দাও (অর্থাৎ কোনও তর্কে আমরা যেন কখনও র পরাভূত না হই)। ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চমেনুবাকে পঞ্চসূক্তানি। তত্র নেচ্ছঃ ইতি প্রথমেন সূক্তেন বিবাদজয়কর্মণি পাঠামূলং অভিমন্ত্র খাদন অপরাজিতাৎ দেশাৎ সভাস্থানং প্রবিশেৎ। তথা অনেন অভিমন্ত্রিতাং পাঠাৎ খাদ প্রতিবাদিনং ক্ৰয়াৎ। এবং পাঠামূলং সম্পাত্য অনেনাভিমন্ত্র বর্ধীয়াৎ। এবমেব অনেনাভিমন্ত্রিতাং পাঠামালং সপ্তভিঃ পত্রৈর্বিরচিতাং শিরসি ধারয়েৎ।…ইত্যাদি। (২কা, ৫অ, ১সূ)।

টীকা –পঞ্চম অনুবাকে পাঁচটি সূক্ত। তার মধ্যে এইটি প্রথম। এই সূক্ত মন্ত্রগুলির দ্বারা বিবাদজয় কর্মে পাঠা নামক লতা-ঔষধির মূল অভিমন্ত্রিত করে ভক্ষণ (সেবন) পূর্বক তর্কসভায় প্রবেশ করণীয়। এইভাবে এই ঔষধিরূপ লতার মূল এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে বাহুতে ধারণীয়। এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত এই লতার সাতটি পত্রে বিরচিত পাঠ্য মালা শিরে ধারণীয়।…ইত্যাদি। (২কা, ৫অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : দীর্ঘায়ুঃপ্রাপ্তিঃ

[ঋষি : শম্ভু দেবতা : জরিমা, আয়ু প্রভৃতি ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

তুভ্যমেব জরিম বর্ধময়ং মেমমন্যে মৃত্যবো হিংসিমুঃ শতং যে। মাতেব পুত্রং প্ৰমনা উপন্থে মিত্র এনং মিত্রিয়াৎ পাত্বংহসঃ ॥১॥ মিত্র এনং বরুণো বা রিশাদা জরামৃত্যুং কৃণুতাং সংবিদানৌ। তদগ্নিহোতা বয়ুনানি বিদ্বান বিশ্বা দেবানাং জনিমা বিবক্তি ॥ ২U ত্বমীশিষে পশুনাং পার্থিবানাং যে জাতা উত বা যে জনিত্রাঃ। মেমং প্রাণো হাসীন্মো অপানো মেমং মিত্রা বধিষুৰ্মো অমিত্রাঃ ॥ ৩৷৷ দেষ্টা পিতা পৃথিবী মাতা জরামৃত্যুং কৃণুতাং সংবিদানে। যথা জীবা অদিতেরুপস্থে প্রাণাপানাভ্যাং গুপিতঃ শতং হিমাঃ ॥ ৪৷ ইমমগ্ন আয়ুষে বর্ডসে নয় প্রিয়ং রেতো বরুণ মিত্ররাজ। মাতেবা অদিতে শর্ম যচ্ছ বিশ্বে দেবা জরদষ্টিৰ্যর্থসৎ ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ— হে অগ্নি! তোমার সেবার নিমিত্তই এই বালক ব্যাধিরহিত হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকুক। তোমাকে প্রাপ্তি পর্যন্ত এই বালক প্রবৃদ্ধ হোক। রোগরূপ পিশাচ ইত্যাদি যেন এর অনিষ্ট না করতে পারে। যেমন মাতা তাঁর পুত্রকে রক্ষা করে থাকেন, সেইরকমেই মিত্র দেবতা, মিত্র দ্রোহের পাপ হতে এই বালককে রক্ষা করুক ॥১॥

 দিবসাভিমানী দেবতা মিত্র এবং রাত্রির অভিমানী দেবতা বরুণ সমমনোভাবাপন্ন হয়ে এই বালককে বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত করান (অর্থাৎ পূর্ণ আয়ুঃ প্রদান করুন)। দেবাহ্বায়ক অগ্নি দেবতাগণের নিকটে এর দীর্ঘজীবনের নিমিত্ত প্রার্থনা করুন। ২।

হে অগ্নি! পার্থিব প্রাণিসমূহের তুমি অধিস্বামী; যারা উৎপন্ন হয়েছে (অর্থাৎ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে) এবং যারা উৎপন্ন হবে (অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করবে), তুমি তাদেরও অধিস্বামী। তোমারই কৃপাবলে প্রাণ ও অপান বায়ু যেন একে ত্যাগ না করে। বন্ধু ও শত্রুরাও যেন একে হিংসা না করে। (শত্রুরা তো হিংসা করবেই, সুতরাং তাদের নিরস্ত করো। মিত্ররূপে পরিগণিত কিছু স্বজনও যেন হিংসান্বিত হয়ে এর ক্ষতি সাধন না করতে পারে) ৷ ৩৷

হে বালক! তুমি পৃথিবীর ক্রোড়ে প্রাণ ও অপান বায়ুর সাথে যুক্ত হয়ে শত হেমন্ত ঋতু পর্যন্ত (বহুবৎসর পর্যন্ত) জীবিত থাকো। পিতৃরূপ আকাশ ও মাতৃরূপা পৃথিবী তোমাকে বৃদ্ধাবস্থায় মরণ-সম্পন্ন করুন। (অর্থাৎ তোমাকে পূর্ণ আয়ুষ্মন্ করুন)। ৪

হে অগ্নি! তুমি এই বালককে সন্তান-উৎপাদনক্ষম বীর্য প্রদান করো। হে বিশ্বদেবগণ! তোমরা এই বালককে সর্ব গুণসম্পন্ন এবং দীর্ঘজীবী করো। হে মাতা অদিতি! তুমি এই বালকের পক্ষে মাতৃবৎ সুখশালিনী হও। ৫।

 সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— তুভ্যমেব জরিমন ইতি সূক্তেন গোদানচৌলকর্মশোর্মাতাপিতরৌ পরস্পরং পুত্ৰং ত্রিঃ প্রত্যর্পয়তঃ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন সূক্তেন ত্ৰী ঘৃতপিণ্ডা সম্পত্য অভিমন্ত্র পুত্রং শয়তঃ। …ইত্যাদি। (২কা, ৫অ. ২সূ)।

টীকা — এই সূক্তের দ্বারা গোদান ও চৌলকর্মে মাতা ও পিতা পরস্পর তিন বার পুত্রকে প্রত্যর্পণ করবেন। সেই কর্মে তিনটি ঘৃতপিণ্ড এই সূক্ত-মন্ত্রগুলির দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে পুত্রকে ভোজন (প্রাশন) করণীয়। ইত্যাদি। (২কা, ৫অ. ২)।

.

তৃতীয় সূক্ত : দীর্ঘায়ুষ্যম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি, সূর্য, বৃহস্পতি প্রভৃতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি]

পার্থিবস্য রসে দেবা ভগস্য তম্বোই বলে। আয়ুষ্যমম্মা অগ্নিঃ সূর্যো বর্চ আ ধা বৃহস্পতিঃ ১। আয়ুরস্মৈ ধেহি জাতবেদঃ প্রজাং ত্বষ্টরধিনিধেহ্যশ্মৈ। রায়ম্পোষং সবিতরা সুবাস্মৈ শতং জীবাতি শরদস্তবায়। ২। আশীর্ণ ঊর্জমুত সৌপ্রজাস্তুং দক্ষং ধং দ্রবিণং সচেতসৌ। জয়ং ক্ষেত্রাণি সহসায়মিন্দ্র কৃথাননা অন্যানধরান্ত সপত্না৷৷ ৩৷৷ ইন্দ্রেণ দত্তো বরুণেন শিষ্টো মরুদ্ভিরুগ্রঃ প্রহিতো ন আগন্। এষ বাং দ্যাবাপৃথিবী উপস্থে মা ক্ষুধম্মা তৃষৎ৷৷ ৪ ঊর্জমম্মা ঊর্জতী ধং পয়ো অস্মৈ পয়স্বতী ধৰ্ত্তম। ঊর্জমস্মৈ দ্যবাপৃথিবী অধাতাং বিশ্বে দেবা মরুত ঊর্জমাপঃ ॥৫॥ শিবাভিষ্টে হৃদয়ং তৰ্পয়াম্যনমীবো মোদিষীষ্ঠাঃ সুবৰ্চাঃ। সবাসিনৌ পিবতাং মন্থমেমশ্বিনো রূপং পরিধায় মায়া ৷৷ ৬ ৷ ইন্দ্র এতাং সসৃজে বিদ্ধো অগ্র ঊর্জাং স্বধামজরাং সা ত এষা। তয়া ত্বং জীব শরদঃ সুবর্চা মা ত আ সুস্রো ভিষজস্তে অক্ৰ৷৷ ৭.

বঙ্গানুবাদ –পার্থিব রস-পানশালী (অর্থাৎ ব্রীহি যব ইত্যাদির সারাংশ গ্রহণকারী) এই পুরুষকে, ভগ দেবতার তেজে ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণ তেজঃ-সম্পন্ন করুন; ইন্দ্র একে শতায়ুষ্য করুন, সূর্য একে তেজঃ প্রদান করুন এবং বৃহস্পতি একে বেদাধ্যয়নের বুদ্ধি প্রদান করুন। ১।

 হে অগ্নি! তুমি একে শত বর্ষের আয়ু প্রদান করো। হে ত্বষ্টা! তুমি একে সন্তান প্রদান করো। হে সূর্য! তুমি একে গো-ইত্যাদি ধনে সম্পন্ন করে তোলো। তোমাদের কৃপায় এই পুরুষ শতায়ুষ্য হোক ২

হে আকাশ-পৃথিবী! আমাদের যাচনা (প্রার্থনা) সত্য হোক। আমাদের ঈপ্সিত ধন, অন্ন, বল এবং সন্তান প্রদান করো। তোমাদের আশীর্বাদ আমাদের অন্ন ও সন্তানসম্পন্ন করুক। হে ইদ্রদেব! তোমাদের শক্তির দ্বারা এই পুরুষ রিপুগণের উপর বিজয় প্রাপ্ত হোক এবং তাদের (অর্থাৎ শত্রুদের) গৃহ ইত্যাদিকেও আপন অধিকারভুক্ত করুক ॥ ৩॥

 ইন্দ্রের নিকট হতে আয়ু প্রাপ্ত হয়ে, বরুণের নিকট হতে বল লাভ করে, মরুতের দ্বারা অভিপ্রেরিত এই পুরুষ আমাদের নিকট আগত হয়েছে। হে আকাশ-পৃথিবী! তোমাদের ক্রোড়স্থায়ী এই পুরুষ ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায় যেন পীড়িত না হয়। ৪

হে আকাশ ও পৃথিবী! তোমরা এই পুরুষকে অন্ন ও জল প্রদান করো। তোমরা একে ঈপ্সিত অন্ন ইত্যাদি প্রদান করেছে এবং বিশ্বদেবগণ, মরুত্বর্গ এবং জলদেবতাবৃন্দ একে বলে (শক্তিতে) পূর্ণ করে দিয়েছেন। ৫।

হে পিপাসার্ত পুরুষ! আমি তোমাকে সুখদায়ক জলে তৃপ্ত করছি। তুমি সুন্দর দীপ্তিসম্পন্ন এবং আনন্দময় হও। এক বস্ত্র পরিহিত বা এক স্থানে অবস্থানকারী এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষ অশ্বিদ্বয়ের ভেষজরূপ মন্থকে পান করো ৷ ৬ ৷৷

ইন্দ্রদেব তৃষ্ণা নিবৃত্তির নিমিত্ত এই মন্থকে প্রস্তুত করেছিলেন। (পুরাকালে ইন্দ্রদেব বৃত্রাসুর ইত্যাদি কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে, লুক্কায়িতভাবে অবস্থান কালে আপন তৃষ্ণা নিবারণকল্পে এই বলকারক মন্থ প্রস্তুত করেছিলেন)। হে তৃষ্ণার্ত রোগী! যে মন্থ তোমাকে প্রদান করা হয়েছে, তার দ্বারা তুমি বল ও তেজের সাথে সংযুক্ত হয়ে শতায়ুষ্য হও। এই মন্থ তোমার শরীর হতে যেন পৃথক্ না হয় ॥ ৭ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— পার্থিবস্য ইতি সূক্তেন তৃষার্তভৈষজ্যকর্মণি সূর্যোদয় কালে সূত্রোক্তপ্রকারেণ ব্যাধিতং উপবেশ্য মথিতং সদকং অভিমন্ত্র পায়য়েৎ। অনেনৈব সূক্তেন নদ্যাদি উদকং অভিমন্ত্র উদ্ধৃত্য সবাসিনৌ (৬) ইত্যধর্চেন ব্যাধিতাব্যাধিতৌ একাসনস্থৌ একবস্ত্রপরিহিত কৃত্বা উভাবাপ মন্থং পায়য়েৎ প্রযোক্তা। …ইত্যাদি। (২কা, ৫অ. ৩সূ)। ..

টীকা –তৃষ্ণারোগাক্রান্ত পুরুষের নিরাময়কল্পে সূত্রে উল্লিখিত প্রকারে ব্যাধিত ব্যক্তিকে সূর্যোদয়কালে উপবেশন করিয়ে এই সূক্তমন্ত্রে সদক অভিমন্ত্রিত পূর্বক পান করানো উচিত। নদী ইত্যাদির জল এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে ষষ্ঠতম ঋকের সবাসিনেী পিবতাং মন্থমেতমখিনো রূপং পরিধায় মায়া এই অর্ধ ঋকের দ্বারা ব্যাধিত ও অব্যাধিত পুরুষকে একাসনে উপবিষ্ট করিয়ে একবস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দুজনকে মন্থ পান করণীয়। ইত্যাদি। (২কা, ৫অ, ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : কামিনীমনোহভিমুখীকরণ

 [ঋষি : প্রজাপতি দেবতা : মন, অশ্বিদ্বয়, ঔষধি, দম্পতী ছন্দ : পংক্তি, অনুষ্টুপ]

যথেদং ভূম্যা অধি তৃণং বাতো মথায়তি। এবা মামি তে মনো যথা মাং কামিন্যসো যথা মন্নাপগা অসঃ ॥১॥ সং চেন্নয়াথে অশ্বিনা কামিনা সং চ বক্ষথঃ। সং বাং ভগাসো অগ্মত সং চিত্তানি সমু ব্ৰতা ॥ ২॥ যৎ সুপর্ণা বিবক্ষবো অনমীবা বিবক্ষবঃ। তত্র মে গচ্ছতাদ্ধবং শল্য ইব কুল্মলং যথা ॥ ৩॥ যদন্তরং তদ্ বাহ্যং যদ বাহ্যং তদন্তরম্। কন্যানাং বিশ্বরূপাণাং মনো গৃভায়ৌষধে ॥ ৪ এয়মগন্ পতিকামা জনিকামোইহমাগম। শ্বঃ কনিক্ৰদ যথা ভগেনাহং সহাগমম্ ॥ ৫॥

 বঙ্গানুবাদ— হে পত্নী! যেমন বায়ুর ঘূর্ণনে পতিত তৃণ আবর্তিত হয়, সেই রকমেই আমি তোমার মনকে আন্দোলিত (অর্থাৎ মথিত) করছি, যাতে তুমি আমাতেই অভিলাষিণী হয়ে থাকো এবং আমার নিকট হতে দূরে না গমন করতে পারো। ১।

হে অশ্বিদ্বয়! আমি যাকে কামনা করছি, তাকে প্রাপ্ত করিয়ে আমার নিকট উপনীতা করে দাও। তোমাদের দুজনের মন আমার দিকাভিমুখী হোক (অর্থাৎ তোমরা আমার প্রতি প্রসন্ন থাকো)। ২।

সুন্দর পক্ষীর আকর্ষক স্বর এবং স্বাস্থ্যবান (নীরোগ) পুরুষের প্রভাবযুক্ত বাক্যের ন্যায় আমার এই আহ্বানরূপ বাণী আমার লক্ষ্যে (অর্থাৎ স্ত্রীতে) যেন উপস্থিত হয় এবং তাকে যেন আমার বশীভূতা করে দেয়। ৩

অন্তরে ও বাহিরে এক বিচারশালিনী, নির্দোষ অঙ্গশালিনী কন্যাদের চিত্তকে গ্রহণ করতে সক্ষমা হে ঔষধি! তুমি তাদের মনকে গ্রহণ করো (অর্থাৎ তাদের মন আমার প্রতি আসক্ত হোক)। ৪।

এই কামনাময়ী স্ত্রী পতির কামনায় আমার নিকট আগতা হয়েছে। আমি তাকে কামনা পূর্বক তার নিকট গমন করেছি। আমি ধনের সাথে (অর্থাৎ সম্পৎ-সম্পন্ন হয়ে) এর নিকট আগমন করেছি, যেমন শ্রেষ্ঠ অশ্ব আপন বড়বার (ঘোটকীর) নিকট মিলনের নিমিত্ত গমন করে থাকে। ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যথেদং ভূম্যাং ইতি সূক্তেন স্ত্রীবশীকরণকর্মণি বৃক্ষত্বশরখণ্ড তগরাঞ্জনকুষ্ঠাদিদ্রব্যাণি পেষয়িত্ব আজ্যেন আলোড় স্ত্রিয়া অঙ্গং অনুলিস্পেৎ…ইত্যাদি। (২কা, ৫অ. ৪সূ)।

টীকা –স্ত্রীবশীকরণ কর্মে গাছের ছাল, শরখণ্ড, রাঞ্জনকুষ্ঠ ইত্যাদি দ্রব্য পেষণ পূর্বক এই সূক্তমন্ত্রগুলির দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে ঘৃত মিশ্রিত করে স্ত্রীর অঙ্গে অনুলেপনীয়। (২কা. ৫অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : ক্রিমিজন্তনম

[ঋষি : কাণ্ব দেবতা : মহী, চন্দ্রমা ছন্দ : অনুষ্টপ, বৃহতী ]

 ইন্দ্রস্য যা মহী দৃষৎ ক্রিমেৰ্বিশ্বস্য তহণী। তয়া পিনম্মি সং ক্রিমী দৃষদা খাঁ ইব। ১। দৃষ্টমদৃষ্টমতৃহমথো কুরূরুমতৃহম্। অল্পসর্বাছনা ক্রিমী বচসা জয়ামসি৷৷ ২৷৷ অল্প হম্মি মহতা বধেন দূনা অদূনা অরসা অভূবন্। শিষ্টানশিষ্টান নি তিরামি বাঁচা যথা ক্রিমীণাং নকিরুচ্ছিষাতৈ৷৷ ৩৷  অন্বাং শীর্ষণ্য মথো পায়েং ক্রিমীন। অবস্কবং ব্যধ্বরং ক্রিমী বচসা জম্ভয়ামসি৷৷ ৪৷৷ যে ক্রিময়ঃ পর্বতেষু বনেঘোষধীষু পশুস্বহস্তঃ। যে অস্মাকং তথ্যমবিবিশুঃ সর্বং তদ্ধন্মি জনিম ক্রিমণাম৷৷ ৫৷৷

 বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্রদেবতার নিকট ক্রিমিসমূহকে নাশ-করণশালী যে মহৎ শিলা আছে, তার দ্বারা আমি পেষণিতে (যাঁতায়): চণক (ছোলা, বুট) ইত্যাদিকে পেষণের মতো শরীরস্থ সকল ক্রিমিকে পেষণ করছি। ১

আমি দেহগত দৃশ্য অদৃশ্য সমস্ত ক্রিমিকে নষ্ট করছি। জালের ন্যায়, রক্ত ও মাংসকে দূষিত-করণশালী এবং সকল প্রকার ক্রিমিকে বিনাশ করছি। ২৷৷

আমি সেই ক্রিমিদলকে মন্ত্র ও ঔষধির দ্বারা বিনাশ করছি। সকল ক্রিমি শুষ্ক হয়ে নির্জীব হয়ে যাক। এই সমস্ত ক্রিমিবর্গকে আমি মন্ত্রবলে শেষ করে দিচ্ছি। ৩

অন্ত্রের (নাড়ীভুড়ির) মধ্যগত, মস্তিষ্কের মধ্যে জাত, শরীরের পশ্চাৎদেশে (পাঝিতে) উৎপন্ন এবং অন্য নানাপ্রকার ক্রিমিকীটগুলিকে আমি মন্ত্রবলে বিনষ্ট করছি। ৪।

পর্বতে, বনে, ঔষধিতে (শাক-সজিতে), পশু ইত্যাদিতে জাত যে ক্রিমিসমূহ আমাদের ব্রণের মধ্য দিয়ে, মুখের মধ্য দিয়ে, স্নান-পানের মাধ্যমে দেহের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছে, আমি সেই সকল ক্রিমির পুষ্টি স্তব্ধ করে তাদের বিনাশ করছি। ৫

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রস্য যা মহী ইতি সূক্তেন শরীরগতবিবিধক্রিমিরোগে তচ্ছান্তরে ঘৃতমিশ্ৰান্ কৃষ্ণচণকান্ জুহুয়াৎ। তথা গোবালবেষ্টিতং শরকাণ্ডং সম্ভিদ্য অগ্নৌ প্রতাপ্য আদধ্যাৎ। এবমেব রথ্যাপাংসু সব্যহস্তেনাদায় দক্ষিণহস্তেন সংঘৃজ্য দক্ষিণামুখ এতৎ সূক্ত জপ ব্যাধিতস্যোপরি কিরতি। তথৈব এতৎ সূক্তং জপ ব্যাধিতো হস্তাভ্যাং পাংসুং মর্দয়েৎ। তথা অনেন সূক্তেন পলাশোদুম্বরাদ্যাঃ– সমিধ আদধ্যাৎ। তৎ উক্তং কৌশিকেন।….ইত্যাদি৷৷ (২কা, ৫অ. ৫সূ)।

 টীকা –উপরোক্ত ভাষ্যানুক্রমণিকা অনুসারে শরীরগত বিবিধ ক্রিমিরোগের বিনাশকল্পে ঘৃতমিশ্রিত কৃষ্ণচণক (কালো ছোলা বা বুট) এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে হোম করণীয়। সেইরকমে গাভীর রোমে বেষ্টিত শরকাণ্ড অগ্নিতে তপ্ত করে ক্রিমিরোগগ্রস্তকে ধারণ করণীয়। এই ভাবে চতুষ্পথের সংযোগস্থলস্থ ধূলি বাম হস্তের দ্বারা সংগৃহীত করে দক্ষিণ হস্তের দ্বারা মথিত করে দক্ষিণাভিমুখী হয়ে এই সূক্তমন্ত্রগুলি জপ পূর্বক ব্যাধিত ব্যক্তির উপর বিচ্ছুরণ কর্তব্য। এ ছাড়া এই সূক্তমন্ত্রগুলি জপ করতে করতে ক্রিমি-রোগী দুই হস্তে ধূলি মর্দন করলেও রোগের উপশম হয়। এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত পলাশ উদুম্বর ইত্যাদি সমিধ (কাষ্ঠখণ্ড বা বৃক্ষত্বকের খণ্ড) রোগীর পক্ষে ধারণীয়। (২কা, ৫অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *