হাদিস নম্বরঃ ৩০১ | 301 | ۳۰۱
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওহীর সুচনা হয়েছিল… এরপর বর্ণনাকারী ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপই বর্ণনা করেন। তবে তিনি لاَ يُحْزِنُكَ اللَّهُ أَبَدًا (অর্থাৎ আল্লাহ তায়াআলা আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না) এর স্থলে لاَ يُحْزِنُكَ اللَّهُ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করবেন না উল্লেখ করেছেন এবং অন্যত্র أَىِ ابْنَ عَمِّ বলেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩০২ | 302 | ۳۰۲
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০২। আবদুল মালিক ইবনু শুয়াইব ইবনু লাইস (রহঃ) … উম্মুল মূমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে … এ রেওয়ায়েতে فَرَجَعَ إِلَى خَدِيجَةَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কম্পিত হৃদয়ে খাদিজা (রাঃ)-এব কাছে ফিরে এলেন…] একথার উল্লেখ রয়েছে। এরপর রাবী ইউনুস ও মা’মারের অনুরুপ বর্ননা করেন, তবে أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ওহীর সুচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে।” এ কথার উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا (আল্লাহর শপথ, তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না) এতটুকু ইউনুসের অনুরুপ বর্ণনা কঁরেছেন। আর খাদীজার সম্বোধন এভাবে উল্লেখ করেছেন أَىِ ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ (চাচাত ভাই! শুন তো আপনার ভাতিজা কি বলছেন)
হাদিস নম্বরঃ ৩০৩ | 303 | ۳۰۳
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০৩। আবূ তাহির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ ওহীর বিরতি প্রসঙ্গে পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর বিরতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, আমি পথ চলছিলাম, সে মুহূর্তে আকাশ হতে একটি শব্দ শুনে মাথা ভুলে তাকালাম, দেখি, সেই হেরা গুহায় যে ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিলেন সে ফেরেশতা যমীন ও আসমানের মধ্যস্থলে কুরসীর উপর বসে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আর জলদি বাড়ি ফিরে এসে বলতে লাগলামঃ আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর। তারা আমায় বস্ত্রাচ্ছাদিত করল। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠূন! সতর্কবানী প্রচার করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পরিচছদ পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রতা হতে দুরে থাকুন” (৭৪ঃ ১-৫)।
এখানে الرُّجْزَ অপবিত্রতা الأَوْثَانُ বলে প্রতিমাকে-বোঝানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারপর ধারাবাহিকভাবে ওর্হীর অবতরণ আরম্ভ হয়।
হাদিস নম্বরঃ ৩০৪ | 304 | ۳۰٤
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০৪। আবদুল মালিক ইবনু শু’আইব ইবনু লাইস (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ তারপর কিছুদিন যাবত আমার প্রতি ওহীর অবতরণ বন্ধ ছিল। পরে একদিন আমি পথ চলছিলাম…। এরপর রাবী ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে উকায়ল خشيت এর স্থলে فَجُثِثْتُ مِنْهُ فَرَقًا حَتَّى هَوَيْتُ إِلَى الأَرْضِ (তাকে দেখে আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম, এমনকি আমি মাটিতে পড়ে গেলাম) বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন তিনি বর্ণনা করেছেন ثُمَّ حَمِيَ الْوَحْىُ بَعْدُ وَتَتَابَعَ (অতঃপর অহী নিয়মিত হয়ে গেল ও ক্রমাগত নাযিল হতে থাকল)
হাদিস নম্বরঃ ৩০৫ | 305 | ۳۰۵
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … যুহুরি (রহঃ) থেকে ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ (অর্থ) “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত … এবং অপবিত্রতা থেকে দুরে থাকুন”। (৭৪ঃ ১-৫) এ আয়াতটি সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হওয়ার পূর্বেই নাযিল হয়। الرُّجْزَ অর্থ الأَوْثَانُ (প্রতিমা) এবং মা’মার এ হাদীসে উকায়লের মতো خشيت স্থলে جُئِثْت বর্ণনা করেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩০৬ | 306 | ۳۰٦
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি আবূ সালামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ন হায়ছে? তিনি বললেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (৭৪ঃ ১-৫)। আমি বললাম اقْرَأْ (৯৬ঃ ১-৫)। তিনি বললেন, আমিও জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআনের কোন আয়াতর্টি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেছেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ আমি বললাম, اقْرَأْ? জাবির (রাঃ) বললেন, আমি তোমাদের তাই বর্ণনা করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি একমাস হেরা শুহায় অবস্থান করি। অবস্থান শেষে আমি নিচে নেমে এলাম। উপত্যকার মাঝখানে যখন পৌছলাম তখন আমাকে ডাকা হল। আমি সামনে পেছনে ডানে-বায়ে তাকালাম, কাউকে দেখলাম না। তারপর আমাকে ডাকা হল, তখনো কাউকে দেখতে পেলাম না। পূনঃ আমাকে ডাকা হল। আমি তাকালাম, দেখি সে ফেরেশতা অর্থাৎ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) শূন্যে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট। আমার প্রবল কম্পন গুরু হল। অনন্তর খাদীজার কাছে আসলাম। বললাম তোমরা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো। তারা আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিল। আমার উপর পানি ঢালল। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠূন, সতর্কবানী প্রচার করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন।” (৭৪ঃ ১-৪)
হাদিস নম্বরঃ ৩০৭ | 307 | ۳۰۷
পরিচ্ছদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা
৩০৭। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদে বর্ননা করেছেন। তবে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেনঃ ‘সে ফিরিশতা, আসমান যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট’।
হাদিস নম্বরঃ ৩০৮ | 308 | ۳۰۸
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরারের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এর সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এর সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩০৯ | 309 | ۳۰۹
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩০৯। আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম আল আবদী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার কাছে ফেরেশতা আসলেন এবং তাঁরা আমাকে নিয়ে যমযমে গেলেন। আমার বক্ষ বিদীর্ন করা হল। তারপর যমযমের পানি দিয়ে আমাকে গোসল করান হল। এরপর নির্ধারিত স্থানে আমাকে ফিরিয়ে আনা হল।
হাদিস নম্বরঃ ৩১০ | 310 | ۳۱۰
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১০। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৎপিন্ডটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিন্ড বের করলেন এবং বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিণ্ডটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। তখন ঐ শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধমায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মাদ -কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্ষে সে সেলাই-এর চিহ্ন দেখেছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩১১ | 311 | ۳۱۱
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১১। হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) … শারীক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ নামির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কা’বার মসজিদ থেকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাত সম্পর্কে আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ওহী প্রাপ্তির পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মাসজিলে হারামে নিদ্রিত অবস্থায় ছিলেন। এরুপে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত সাবিতুল বুনানীর হাদীসেরই অনুরুপ বর্ণনা করে যান। তবে এ বর্ণনায় শব্দের কিছু আগপাছ ও শব্দের কিছু বেশকম রয়েছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩১২ | 312 | ۳۱۲
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আত তুজিবী (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমি মক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র আনা হলো এবং তা আমার বুকে ঢেলে বক্ষ বন্ধ করে দিলেনা এরপর আমার হাত ধরলেন এবং ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন। আমরা যখন প্রথম আসমানে গিয়ে পৌছলাম, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এ আসমানের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! তিনি বললেন, কে? বললেন, জিবরীল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি অন্য কেউ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার সাথে মুহাম্মদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দেওয়া হলো।
আমরা প্রবেশ করে দেখি, এক ব্যাক্তি, তাঁর ডানে একদল মানুষ এবং বায়ে একদল মানুষ। যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আর যখন বাঁ দিকে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি আমাকে বললেন মারহাবা হে সুযোগ্য সন্তান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিবরীলকে বললাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি আদম (আলাইহিস সালাম) আর ডানে ও বায়ের এ লোকগুলো তার বংশধর। ডান পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জান্নাতবাসী আর বাম পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জাহান্নামবাসী। আর এ কারণেই তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন এবং বাঁ দিকে তাকালে কাদেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ করলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌছলেন এবং এর দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি প্রথম আসমানের দ্বাররক্ষীর মত প্রশ্নোত্তর করে দরজা খূলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, তিনি আসমানসমূহে . আদম, ইদূরীস, মূসা ও ইবরাহীম (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। আদম (আলাইহিস সালাম) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ষষ্ঠ আসমানে। এছাড়া অন্যান্য নাবীর অবস্থান সম্পর্কে এ রেওয়ায়েতে কিছু উল্লেখ নেই।
আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল (আলাইহিস সালাম) ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী! সুযোগ্য ভ্রাতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন; ইনি ইদরীস (আলাইহিস সালাম) তারপর আমরা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম)।
তারপর আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)। তারপর আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য সন্তান! জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি . ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)।
ইবনু শিহাব, ইবনু হাযম, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বে চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌঁছলাম যে, তথায় আমি কলম-এর খশমশ (লেখার) শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ইবনু হাযম ও আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তখন আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) , ফরয করা হয়েছে।
মূসা (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এসে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানালে তিনি বললেন, না, আপনি পুনরায় ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত এতেও সক্ষম হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলে তিনি বললেন, এ নির্দেশ পাঁচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই।
এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর নিকটে। আমি বললাম আমার লজ্জা অনুভূত হচ্ছে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চললেন, আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলাম। তা এত বিচিত্র রঙে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না যে, আসলে তা কী। তারপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হল। সেখানে ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৩ | 313 | ۳۱۳
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত- বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন?
তিনি জবাব দিলেন, “বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হল এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ‘বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আসলাম … এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও . ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সা’দূশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দুটি নহরের সাথে।
এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ‘বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়… এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৪ | 314 | ۳۱٤
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৪ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে আছে, এরপর আমার কাছে ঈমান ও হিকমত ভর্তি একটি স্বর্ণের রেকাবি আনা হলো এবং আমার বক্ষের উপরিভাগ হতে নিয়ে পেটের নিম্নাংশ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল ও যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে হিকমত ও ঈমান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, এ অংশটূকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৫ | 315 | ۳۱۵
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৫। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মিরাজ ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ মূসা (আলাইহিস সালাম) হচ্ছে শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত দীর্ঘদেহী, গৌর বর্ণের। ঈসা (আলাইহিস সালাম) মধ্যমাকৃতির সূঠাম দেহ বিশিষ্ট। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের রক্ষী মালিক এবং দাজ্জালের উল্লেখ করেছিলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৬ | 316 | ۳۱٦
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৬। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মিরাজ রজনীতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে গিয়েছি। তিনি দেখতে গৌরবর্ণের, দীর্ঘদেহী, অনেকটা যেন শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত। ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছি, তার রং ছিল শ্বেত-লোহিত; সুঠামদেহী আর তার চুলগুলো ছিল স্বাভাবিক। বর্ণনাকারী বলেন, যে নিদর্শনসমুহ কেবল তাঁকেই দেখান হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে জাহান্নামের রক্ষী মালিককে এবং দাজ্জালকে দেখান হয়। ইরশাদ হয়েছেঃ “অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ সমন্ধে সন্দেহ কর না”, (২ঃ ৩২) কাতাদা (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৭ | 317 | ۳۱۷
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৭। আহমাদ ইবনু হান্বাল ও সুবায়হ ইবনু ইউনূস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গিগণ উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি যেন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে গিরিপথ থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া পাঠ করছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারশা গিরিপথে আসলেন। তিনি বললেনঃ এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা গিরিপথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন ইউনূস ইবনু মাত্তা (আলাইহিস সালাম) কে দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি, তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন। ইবনু হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন, خُلْبَةٌ এর অর্থ لِيفًا – খেজুর বৃক্ষের ছাল।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৮ | 318 | ۳۱۸
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আমরা মক্কা ও মদিনার মধ্যকার এক স্থানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কর্ণদ্বয়ের ছিদ্রে আঙ্গূল স্থাপন পূর্বক উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আলাইহিস সালাম) এর দেহের বর্ণ ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাঊদ তা স্মরণ রাখতে পারেন নি।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা কিংবা লিফ্ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও ইউনূস (আলাইহিস সালাম)-কে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় তিনি গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমী জোব্বা আর তিনি একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রির পিঠে আরোহিত। তাঁর উষ্ট্রির রশিটি খেজুর বৃক্ষের বাকল দ্বারা তৈরি।
হাদিস নম্বরঃ ৩১৯ | 319 | ۳۱۹
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত সবাই দাজ্জালের আলোচনা উঠালেন। তখন কোন একজন বললেন, তার (দাজ্জালের) দুই চোখের মাঝামাঝিতে ‘কাফির’ শব্দ খচিত থাকবে। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু বলেছেন বলে আমি শুনিনি। তবে এতটুকু বলতে শুনেছি যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম-এর আকৃতি জানতে হলে তোমাদের এ সাথীরই (নিজের দিকে ইঙ্গিত) দিকে তাকাও। (তিনি অনুরুপই ছিলেন) আর মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন গৌরবর্ণের সুঠামদেহী। তাঁকে লাল বর্নের একটি উষ্টের পিঠে আরোহিত দেখেছি। আমি যেন এখনও তাঁকে তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় উপত্যকার ঢাল দিয়ে নামতে দেখছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩২০ | 320 | ۳۲۰
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩২০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমুহ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণকে উপস্থিত করা হল। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম, একজন মধ্যম ধরনের মানুষ, অনেকটা শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত। আর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম, তাঁর নিকটতম ব্যাক্তি হলেন উরওইয়া ইবনু মাসঊদ। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম; তার অনেকটা কাছাকাছি সদৃশ ব্যাক্তি হচ্ছে তোমাদের এ সাথী অর্থাৎ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখলাম; তাঁর কাছাকাছি সদৃশ ব্যাক্তি হচ্ছেন দাহইয়া। ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে, দিহইয়া ইবনু খলীফার মত।
হাদিস নম্বরঃ ৩২১ | 321 | ۳۲۱
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩২১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরুশাদ করেছেনঃ মিরাজ রজনীতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দেহের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। আমার ধারনা তিনি বলেছেন, তিনি মৃদু কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। দেখতে শানূয়া গোত্রের লোকদের মত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তিনি মধ্যম ধরনের লোহিত বর্ণের পুরুষ। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষণি স্নানাগার থেকে বেরিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আমিই তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। এরপর আমার সন্মুখে দুটি পাত্র পেশ করা হয়, এর একটি দুধের ও অপরটি শরাবের। আমাকে বলা হল, এর মধ্যে যেটা আপনার ইচ্ছা সেটা গ্রহণ করুন। আমি দুধ গ্রহণ করে তা পান করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেনঃ আপনাকে ফিতরাতেরই হিদায়াত করা হয়েছে। আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তবে আপনার উম্মাত গুমরাহ হয়ে যেত।
হাদিস নম্বরঃ ৩২২ | 322 | ۳۲۲
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একরাতে (স্বপ্নে) আমি কা’বা শরীফের কাছে আমাকে দেখতে পেলাম। গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যতলোক তোমরা দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। ঘাড় পযন্ত লম্বা কেশ ছিল তাঁর। এ ধরনের কেশের অধিকারী যত ব্যাক্তি তোমরা দেখেছ, তাদের মধ্যে তিনি হলেন সবচেয়ে সুন্দর। তিনি এ কেশ আচড়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দু-জনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দূ-জনের কাঁধের উপর ভর করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হলঃ ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তারপর দেখি আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোঁকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা, যেন একটি আঙ্গুর (থোকা থেকে উপরে উঠে আছে) জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হচ্ছে মাসীহুদ্ দাজ্জাল।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৩ | 323 | ۳۲۳
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২৩। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল মূসায়্যাবী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা টেরাচোখবিশিষ্ট নন। জেনে রাখ, দাজ্জালের ডান চোখ টেরা, যেন থোকা থেকে উঠে আসা একটি আঙুর। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বা শরীফের কাছে পেলাম। তখন গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। কেশ তাঁর গ্রীবার উপর ঝুলছিল। তার কেশ গুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দুব্যাক্তির কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হল, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তাঁরই পেছনে দেখলাম আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতানের মত। সেও দু’ ব্যাক্তির কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছে। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৪ | 324 | ۳۲٤
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাবা গৃহের কাছে গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম, দু’জনের কাঁধে হাত রেখে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর চুল থেকে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো يَسْكُبُ শব্দ অথবা يَقْطُرُ শব্দ ব্যবহার করেছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ মারইয়াম তনয় ঈসা অথবা الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ মারইয়াম তনয় মাসীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দেখলাম, তার পশ্চাতেই আরে-ক ব্যাক্তি, ঘন কুঞ্চিত কেশ। গায়ের রং তার লাল। আমার দেখা মতে তার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাক্তি ইবন কাত্তান। ডান চোখ ট্যারা। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ্ দাজ্জাল।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৫ | 325 | ۳۲۵
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (মিরোজের সংবাদে) কুরায়শরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিল। তখন আমি হাজরে আসওয়াদের পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ালাম। আল্লাহ তায়ালা আমার সন্মুখে বায়তুল মাকদাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন, আর আমি চোখে দেখেই তার সকল নিদর্শন উল্লেখ করে যেতে লাগলাম।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৬ | 326 | ۳۲٦
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন দেখি যে, আমি কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছি। গৌরবর্ণের মধ্যমাকৃতির এক ব্যাক্তিকে সেখানে দেখলাম। তাঁর কেশগুলো ছিল সোজা। তিনি দু-জনের কাঁধে ভর করে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর মাথা হতে টপটপ করে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো يَنْطِفُ অথবা يُهَرَاقُ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ইনি ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)। তারপর আমি চোখ ফিরিয়ে তাকালাম, লোহিত বর্ণের মোটা এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। তার চুলগুল ছিল কুঞ্চিত। তার চোখ ছিল টেরা, যেন থোকা থোকার উপরে উঠে আসা একটি আঙুর দানা। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হলো দাজ্জাল। তার নিকটতম সদৃশ হল ইবনু কাতান।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৭ | 327 | ۳۲۷
পরিচ্ছদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
৩২৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি হিজর অর্থাৎ হাতামে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, যা আমি ভালভাবে মনে রাখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মাকদিসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নাবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) কে সালাতে (নামায/নামাজ) দণ্ডায়মান দেখলাম তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কেও সালাতে (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবনু মাসঊদ আবূ সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কেও সালাতে (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর সালাত (নামায/নামাজ) এর সময় হল, আমি তাঁদের ইমামতি করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে এক ব্যাক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’ ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৮ | 328 | ۳۲۸
পরিচ্ছদঃ ৭৫. সিদরাতুল মুনতাহা প্রসঙ্গে
৩২৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নূমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মি’রাজ রজনীতে সিদরাতূল মুনতাহা- পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হল। এটি ৬ষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। যমীন থেকে যা কিছু উত্থিত হয়, তা সে পর্যন্ত গিয়ে পৌছে এবং সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হয়। তদ্রূপ ঊর্ধ্বলোক থেকে যা কিছু অবতরণ হয়, তাও এ পর্যন্ত এসে পৌছে এবং সেখান থেকে তা নেওয়া হয়। এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى “যখন প্রান্তবর্তী (৫৩ঃ ১৬) এবং বলেন, এখানে যদ্দ্বারা কথাটির অর্থ স্বর্ণের পতঙ্গ। তিনি বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনটি বিষয় দান করা হলঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ), সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং শিরক মুক্ত উম্মাতের মারাত্মক গুনাহ ক্ষমার সুসংবাদ।
হাদিস নম্বরঃ ৩২৯ | 329 | ۳۲۹
পরিচ্ছদঃ ৭৫. সিদরাতুল মুনতাহা প্রসঙ্গে
৩২৯। আবূ রাবী আয যাহরানি (রহঃ) … শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যির ইবনু হুবায়শকে فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান থাকল কিংবা তারও কম– (৯ঃ ৫৩) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ ডানাবিশিষ্ট অবস্থায়।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩০ | 330 | ۳۳۰
পরিচ্ছদঃ ৭৫. সিদরাতুল মুনতাহা প্রসঙ্গে
৩৩০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى তিনি যা দেখেছেন তাঁর অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি” (১১ঃ ৫৩) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর ছয়শ, ডানাযুক্ত অবস্থায় দেখেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩১ | 331 | ۳۳۱
পরিচ্ছদঃ ৭৫. সিদরাতুল মুনতাহা প্রসঙ্গে
৩৩১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى “তিনি যা দেখেছেন তা তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন (১৮ঃ ৫৩) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর আকৃতিতে দেখেছিলেন- তার ছয়শ ডানা আছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩২ | 332 | ۳۳۲
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন– (১৩ঃ ৫৩)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছিলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩ | 333 | ۳۳۳
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (আল্লাহকে) অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪ | 334 | ۳۳٤
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى – وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى “তিনি যা দেখেছেন, তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করে নাই নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” (৫৩ঃ ১১ -১৩) আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] স্বীয় অন্তর্দৃষ্টিতে তাঁকে (আল্লাহকে) দুবার দেখেছিলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৫ | 335 | ۳۳۵
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, হাফস ইবনু গিয়াস ও আঁমাশ (রহঃ) … থেকে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্নিত হয়েছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৬ | 336 | ۳۳٦
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে আবূ আয়িশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলো কি? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ তার প্রতিপালককে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উমুল মু”মিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কি ইরশাদ করেননিঃ “তিনি (রাসুল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন-, (২৩ঃ ৮১), অন্যত্র “নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” (৫৩ঃ ১৩)
আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমিই এ উষ্মতের প্রথম ব্যাক্তি, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কেবলমাত্র এ দু-বারই আমি তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও যমীনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান।
আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” (৬ঃ ১০৩) এরুপ তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দুত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়” (৪২ঃ ৫১)।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর ঐ ব্যাক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার রুকন, যদি তা না করেন তবে আপনি তার বার্তা প্রচারই করলেন না। (৫ঃ ৬৭)
তিনি (আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, যে ব্যাক্তি এ কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষন অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “বল, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না। ” (২৭ঃ ৬৫)
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৭ | 337 | ۳۳۷
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এতটুকু অতিরিক্ত আছে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উপর অবতীর্ণ ওহীর কোন অংশ গোপন করতেন, তবে তিনি এ আয়াতটি অবশ্য গোপন করতেনঃ (অর্থ) “স্মরণ করুন, আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ দান করেছেন এবং আপনিও যার [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পোষ্যপূত্র যায়িদ] প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আপনি তাকে বলেছিলেন, তুমি তোমার ন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি আপনার অন্তরে যা গোপন করেছেন, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিয়েছেন। আপনি লোকভয় করছিলেন; অথচ আল্লাহকে ভয় করা আপনার জন্য অধিকতর সঙ্গত” (৩৩ঃ ৩৭)
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৮ | 338 | ۳۳۸
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৮। ইবনু নুমায়র (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ কি তাঁর প্রতিপালককে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, আপনার কথা শুনে আমার শরীরের পশম খাড়া হয়ে গেছে… বর্ণনাকারী পূর্ব হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে দাঊদ বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও সুদীর্ঘ।
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৯ | 339 | ۳۳۹
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৩৯। ইবনু নুমায়র (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি’রাজ রজনীতে যদি আল্লাহর দর্শন না পেয়ে থাকেন তাহলে] আল্লাহর এ বলার অর্থ কি দাঁড়াবে। “এরপর তিনি [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হলেন এবং আরো নিকটবর্তী; ফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান রইল বা তারও কম; তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন।” (৫৩ঃ ৮-১০)। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (সাধারণ) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লেখিত সময়) নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন। তাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪০ | 340 | ۳٤۰
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? তিনি [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] বললেনঃ “তিনি (আল্লাহ) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করব”।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪১ | 341 | ۳٤۱
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৪১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ) কে বললাম, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। আবূ যার (রাঃ) বললেন, কি জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেনঃ আমি নূর দেখেছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪২ | 342 | ۳٤۲
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৪২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে পাঁচটি কথা বললেনঃ আল্লাহ কখনো নিদ্রা যান না। নিদ্রিত হওয়া তাঁর সাজেও না। তিনি তাঁর ইচ্ছানূসারে তুলাদণ্ড নামান এবং উত্তোলন করেন। দিনের পূর্বেই রাতের সকল আমল তার কাছে উত্থিত করা হয় এবং রাতের পূর্বেই দিনের সকল আমল তাঁর কাছে উত্থিত করা হয়। এবং তার পর্দা হল নূর (বা জ্যোতি)।
আবূ বকরের অন্য এক বর্ণনায় النُّورُ এর স্থলে النَّارُ (আগুন) শব্দের উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি সে আবরণ খুলে দেয়া হয়, তবে তাঁর নূরের বিভা সৃষ্টি জগতের দূশ্যমান সব কিছু ভস্ম করে দেবে। আবূ বকরের অন্য রেওয়ায়েতে حَدَّثَنَا শব্দের স্থলে عَنْ শব্দের উল্লেখ আছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩ | 343 | ۳٤۳
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৪৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম … আ’মাশ (রহঃ) থেকে পূর্ববর্ণিত সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মূখে চারটি কথা নিয়ে দাঁড়ালেন…। বর্ণনাকারী আবূ মুআবিয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি مِنْ خَلْقِ শব্দ উল্লেখ করেন নাই এবং حِجَابُهُ النار “তার পর্দা আগুন” না বলে النُّورُ বলেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪ | 344 | ۳٤٤
পরিচ্ছদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ ‘তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার’ এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে
৩৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সন্মুখে চারটি কথা নিয়ে আলোচনা করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা কখনো নিদ্রা যান না, আর নিদ্রা তাঁর জন্য শোভাও পায় না, তুলাদণ্ড উচু এবং নিচু করেন, তাঁর কাছে রাতের পূর্বে দিনের আমল উত্থিত হয় এবং দিনের পূর্বে রাতের আমল উত্থিত হয়।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৫ | 345 | ۳٤۵
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৪৫। নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী, আবূ গাসনান আল মিসমাঈ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমন, যেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি। “আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাঁদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬ | 346 | ۳٤٦
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৪৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা (রহঃ) … সুহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা কি চাও আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবেঃ আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেওয়া হয়নি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭ | 347 | ۳٤۷
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৪৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … হাম্মাদ ইবনু সালামা (রাঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তঁবে এতে তিনি আরও বলেন, “তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (অর্থ) ‘যারা ভাল করে তাদের জন্য আছে মঙ্গল এবং আরো অধিক কিছু। ”
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৮ | 348 | ۳٤۸
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৪৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকেি বর্ণিত যে, কতিপয় সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের পরস্পরের মাঝে কি ধাক্কাধাক্কি কি হয়? সাহাবীগণ বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের পরস্পরের কি ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়? তাঁরা বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তদ্রূপ তোমরাও তাঁকে দেখবে।
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ সকল মানুষকে জমায়েত করে বলবেন, পৃথিবীতে তোমাদের যে যার ইবাদত করেছিলে আজ তাঁকেই অনুসরণ কর। তখন সূর্যের উপাসক দল সূর্যের পেছানে, চন্দ্রের উপাসক দল চন্দ্রের পেছনে এবং দেব-দেবীর উপাসকদল দেব-দেবীর পিছনে চলবে। কেবল এ উম্মাত অবশিষ্ট থাকবে। তন্মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন আল্লাহ তায়াআলা তাদের কাছে এমন আকৃতিতে উপস্থিত হবেন যা তারা চেনে না। তারপর (আল্লাহ তা-আলা) বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক (সূতরাং তোমরা আমার পেছনে চল)। তারা বলবে, নাউযূবিল্লাহ। আমাদের প্রভূ না আসা পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। আর তিনি যখন আসবেন, তখন আমরা তাঁকে চিনতে পারব।
এরপর আল্লাহ তায়াআলা তাদের কাছে তাদের পরিচিত আকৃতিতে আসবেন, বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভূ। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রভূ। এ বলে তারা অনুসরণ করবে। ইত্যবসরে জাহান্নামের উপর দিয়ে সিরাত (রাস্তা) স্থাপন করা হবে। আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রাসুলগণ ব্যতীত অন্য কেউ মুখ খোলারও সাহস করবে না। আর রাসুলগণও কেবল এ দুআ করবেনঃ হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে থাকবে সাদান বৃক্ষের কাটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহ দন্ড। তোমরা সাদান বৃক্ষটি দেখেছ কি? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ দেখেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা সাদান বৃক্ষের কাটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জাননা। মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও করা হবে। কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে, আর কেউ আমলের শাস্তি ভোগ করবে যতদিন না তারা নাজাত পেয়েছে। এরুপে বান্দাদের মধ্যে যখন আল্লাহ তা’আলা বিচারকার্য সমাপ্ত করবেন, এবং দয়া করে কিছু জাহান্নামীকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যেন কালিমায় বিশ্বাসীদের মধ্যে যাদের উপর আল্লাহ জন্য রহম করতে চাইবেন এবং যারা আল্লাহর সাথে শিরক করেনি, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস।
অনন্তর ফেরেশতাগণ জান্নাতীদের শনাক্ত করবেন। তারা সিজদার চিহ্নের সাহায্যে তাদের চিনবেন। কারণ অগ্নি মানুষের সবকিছু ভস্ম করে দিলেও সিজদার স্থান অক্ষত থাকবে। আল্লাহ তায়াআলা সিজদার চিহ্ন নষ্ট করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মোট কথা ফেরেশতাগণ এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। তাদের দেহ আগুনে দগ্ধ। তাদের উপর আবে-হায়াত (সঞ্জীবনী পানি) ঢেলে দেওয়া হবো তখন তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে উঠে। আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন। শেষে এক ব্যাক্তি থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল হবে জাহান্নামের দিকে। এই হবে সর্বশেষ জান্নাতী।
সে বলবে, হে প্রভূ! (অনুগ্রহ করে) আমার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিন। জাহান্নামের উত্তপ্ত বায়ু আমাকে ঝলসে দিচ্ছে; এর লেলিহান শিখা আমাকে দগ্ধ করে দিচ্ছে আল্লাহ যতদিন চান ততদিন পর্যন্ত সে তাঁর কাছে দুআ করতে থাকবে। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার এ দুআ কবুল করলে তুমি কি আরো কিছু কামনা করবে? সে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গীকার করে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তা’আলা তার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। তার চেহারা যখন জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, আর জান্নাত তার চোখে ভেসে উঠবে, তখন আল্লাহ যতদিন চান সে নীরব থাকবে।
পরে আবার বলবে, হে প্রতিপালক! কেবল জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিন! আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি না কথা দিয়েছিলে যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তাছাড়া আর কিছু চাইবে না। হতভাগা, তুমি তো সাংঘাতিক ওয়াদাভঙ্গকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! এই বলে মিনতি জানাতে থাকবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি যা চাও তা যদি তাই দেই, তবে আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তখন তার থেকে এ বিষয়ে ওয়াদা এবং অঙ্গীকার নিবেন। এরপর তাঁকে জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত এগিয়ে আনা হবে।
এবার যখন সে জান্নাতের তোরণে দাড়াবে, তখন জান্নাত সুনিশ্চিত হয়ে তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে জান্নাতের সুখ-সমূদ্ধি দেখতে থাকবে। সেখানে আল্লাহ যতক্ষন চান সে ততক্ষন চুপ করে থাকবে। পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি না সকল ধরনের ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে বলেছিলে, আমি যা দান করেছি, এর চাইতে বেশি আর কিছু চাইবে না? দূর হতভাগা! তুমি তো ভীষণ ওয়াদাভঙ্গকারী। সে বলবে, হে আমার রব! আমি যেন সৃষ্টির সবচেয়ে দুর্ভাগা না হই। সে বারবার দুআ করতে থাকবে। পরিশেষে এক পর্যায়ে সে আল্লাহকে হাসিয়ে ফেলবেন। আল্লাহ তা’আলা হেসে উঠে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাকে বলবেন, যা চাওয়ার চাও। তখন সে তার সকল কামনা চেয়ে শেষ করবে। এরপর আল্লাহ নিজেই স্বরণ করিয়ে বলবেন, অমুক অমূকটা চাও। এভাবে তার কামনা শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো।
আতা ইবনু ইয়াযীদ বলেন, আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের কোন কথাই রদবদল করেননি। তবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন এ কথা উল্লেখ করলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে এসব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো” তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! বরং তাসহ আরো দশগুন দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘এর সমপরিমাণ’- এ-শব্দ স্মরণ রেখেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘আরো দশগুন’- এ শব্দ সংরক্ষিত রেখেছি। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) পরিশেষে বলেন, এ ব্যাক্তি হবে জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী ব্যাক্তি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৯ | 349 | ۳٤۹
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদ দারিমী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব?… এরপর রাবী ইবরাহীম ইবনু সা’দ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫০ | 350 | ۳۵۰
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৫০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … হাম্মান ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে এটিও ছিল। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতীকে বলা হবে যে, তুমি আকাঙ্ক্ষা কর। সে আকাঙ্ক্ষা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার যা আকাঙ্ক্ষা করার তা কি করেছ? সে বলবে, জ্বী! আল্লাহ বলবেন, যা আকাঙ্ক্ষা করেছ তা এবং এর অনুরুপ তোমাকে প্রদান করা হল।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫১ | 351 | ۳۵۱
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৫১। সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কতিপয় সাহাবী তাঁকে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি আরো বললেনঃ দুপূরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য অবলোকন করতে কি তোমাদের ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়? সকলে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! না, তা হয় না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঠিক তদ্রুপ কিয়ামত দিবসে তোমাদের প্রতিপালককে অবলোকন করতে কোনই বাধার সৃষ্টি হবে না। সেদিন এক ঘোষনাকারী ঘোষণা দিবে, “যে যার উপাসনা করতে, সে আজ তার অনুসরণ করুক”।
তখন আল্লাহ ব্যতীত যারা অন্য দেব-দেবী ও বেদীর উপাসনা করত, তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না ; সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সৎ হোক বা অসৎ যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তারাই কেবল অবশিষ্ট থাকবে এবং কিতাবীদের যারা দেব-দেবী ও বেদীর উপাসক ছিল না তারাও বাকি থাকবে। এরপর ইহুদীদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হবে! তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আল্লাহর পূত্র উযায়েরের। তাদেরকে বলা হবে মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের খুবই পিপাসা পেয়েছে। আমাদের পিপাসা নিবারণ রুকন। প্রার্থনা শুনে তাদেরকে ইঙ্গিত করে মরীচিকাময় জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। এর একাংশ আরেক অংশকে গ্রাস করতে থাকবে। তারা এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এরপর খৃষ্টানদেরকে ডাকা হবে, বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আল্লাহর পুত্র মসীহের উপাসনা করতাম। বলা হবে, মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। জিজ্ঞেস করা হরে, এখন কি চাও? তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের দারুন তৃষ্ণা পেয়েছে, আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করুন। তখন তাদেরকেও (পানির ঘাটে যাবার) ইঙ্গিত করে জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। একে মরীচিকার মত মনে হবে। এর এক অংশ অপর অংশকে গ্রাস করে নিবে। তারা তখন জাহান্নামে ঝাপিয়ে পড়তে থাকবে। শেষে মুমিন হউক বা গুনাহগার, এক আল্লাহর উপাসক ব্যতীত আর কেউ (ময়দানে) অবশিষ্ট থাকবে না।
তখন আল্লাহ জন্য তাদের কাছে আসবেন। বলবেন, সবই তাদের স্ব স্ব উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে, আর তোমরা কার অপেক্ষা করছ? তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেখানে আমরা বেশি মুখাপেক্ষী ছিলাম, সেই দুনিয়াতে আমরা অপরাপর মানুষ থেকে পৃথক থেকেছি এবং তাদের সঙ্গী হইনি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রভূ। মুমিনরা বলবে, “আমরা তোমার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আল্লাহর সঙ্গে আমরা কিছুই শরীক করি না। এই কথা তারা দুই বা তিনবার বলবে। এমন কি কেউ কেউ অবাধ্যতা প্রদর্শনেও অবতীর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলবেন, আচ্ছা, তোমাদের কাছে এমন কোন নিদর্শন আছে যদ্দ্বারা তাকে তোমরা চিনতে পার? তারা বলবে, অবশ্যই আছে। এরপর “সাক” উন্মোচিত হবে, তখন পৃথিবীতে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করত, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা সিজদা করার অনুমতি দিবেন। আর যারা লোক দেখানো বা লোকভয়ে আল্লাহকে সিজদা করত, সে মুহূর্তে তাদের মেরুদন্ড শক্ত ও অনমনীয় করে দেয়া হবে। যখনই তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে তখনই তারা চিত হয়ে পড়ে যাবে। তারপর তারা মাথা তুলবে।
ইত্যবসরে তারা আল্লাহকে প্রথমে যে আকৃতিতে দেখেছিল তা পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তিনি তার আসল রুপে আবির্তূত হবেন। অনন্তর বলবেন, আমি তোমাদের রব, তারা বলবে হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রতিপালক। তারপর জাহান্নামের উপর জিস্র (পূল) স্থাপন করা হবে। শাফায়াতেরও অমুমতি দেয়া হবে। মানুষ বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল জিসর কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটি এমন স্থান, যেখানে পা পিছলে যায়। সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাঁটা, দেখতে নজদের নাদান বৃক্ষের কাঁটার মত।
মুমিনগণের কেউ এ পথ পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ অশ্বগতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ অক্ষত অবস্থায় নাজাত পাবে আর কেউ হবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নাজাতপ্রাপ্ত। আর কতককে কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না।
তারা বলবে, হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত, হাজ্জ (হজ্জ) করত। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ যাও তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।) মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ অগ্নি ভস্ম করে দিয়েছে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই।
আল্লাহ বলবেন, পূনরায় যাও, যার অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরও একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে রব! অনুমতি প্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অণূ পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন, তাদের কাউকেই রেখে আসিনি।
সাহাবী আবূ সাঈদ আল খূদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটিও তিলাওয়াত করতে পারঃ (অর্থৎ আল্লাহ অণূ পরিমাণও জুলুম করেন না এবং অণূ পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুন করে করে দেন এবং তাঁর কাছ থেকে মহা-পুরস্কার প্রদান করেন।” (৪ঃ ৪০) এরপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেনঃ ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল আরহামূর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে একু মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে, যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি, এবং আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ মুখের ‘নাহরুল হায়াতে’ ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়ালে কোন শস্য দানা অংকুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থাকে সেগুলো হলদে ও সবুজ রুপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়ামুক্ত স্থানে থাকে, সেগুলো সাদা হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে পশু চরিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর তারা নহর থেকে মূক্তার মত ঝকঝকে অবস্থায় উঠে আসবে এবং তাদের গ্রীবাদেশে মোহরাঙ্কিত থাকবে, যা দেখে জান্নাতিগণ তাদের চিনতে পারবেন। এরা হলো ‘উতাকাউল্লাহ’ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। ”আল্লাহ তায়ালা সৎ আমল ব্যতীতই তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন।
এরপর আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ করে বলবেনঃ যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখছ সবকিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব! আপনি আমাদেরকে এতই দিয়েছেন যা সৃষ্ট-জগতের কাউকে দেননি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের জন্য আমার কাছে এর চেয়েও উত্তম বস্তু আছে। তারা বলবে, কি সে উত্তম বস্তু? আল্লাহ বলবেনঃ সে হল আমার সন্তুষ্টি। এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অন্তুষ্ট হবো না।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ শাফা’আত সম্পর্কীয় এ হাদীসটি আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদ যুগবা আল মিসরী-এর কাছে পাঠ করে বললাম, আপনি লায়স ইবনু সা’দ থেকে নিজে এ হাদীসটি শুনেছেন? আমি কি আপনার পক্ষ থেকে এ হাদীসটি এরুপ বর্ণনা করতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদকে হাদীসটি এ সুত্রে শুনিয়েছি যে, ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ মেঘমূক্ত আকাশে সূর্য দর্শনে ভিড়ের কারণে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না…। এভাবে হাদীসটির শেষ পর্যন্ত তুলে ধরলাম।
এ হাদীসটি হাফস ইবনু মায়সারা বর্ণিত হাদীসেরই অনুরুপ। তিনি بِغَيْرِ عَمَلٍ عَمِلُوهُ وَلاَ قَدَمٍ قَدَّمُوهُ এই অংশটূকুর পর فَيُقَالُ لَهُمْ لَكُمْ مَا رَأَيْتُمْ وَمِثْلُهُ مَعَهُ অর্থাৎ তোমাদের জন্য যা রয়েছে যা তোমরা দেখছ তা এবং তদসঙ্গে অনুরুপ আরও কিছু। আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, আমার কাছে রেওয়ায়েত পৌছেছে যে, “জিসর (সিরাত) চুল অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম ও তরবারি অপেক্ষা অধিক তীক্ষ্ণ। তা ছাড়া লায়সের হাদীসে فَيَقُولُونَ رَبَّنَا أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ বাক্যটি এবং এর পরবর্তী অংশটির উল্লেখ নেই। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তা স্বীকার করেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫২ | 352 | ۳۵۲
পরিচ্ছদঃ ৭৭. আখিরাতে মু’মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে
৩৫২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের সনদের হাফস ইবনু সা’দের অনুররূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে শব্দগত কিছু বেশকম আছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৩ | 353 | ۳۵۳
পরিচ্ছদঃ ৭৮. শাফায়াত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমান
৩৫৩। হারুন ইবনু সাইদ আল আয়লী (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতবাসীদেরকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাঁর রহমতেই তিনি যাকে ইচ্ছা তা করবেন। আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তারপর (ফেরেশতাদেরকে) বলবেনঃ যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণও ঈমান দেখতে পাবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনবে এবং অনন্তর ফেরেশতাগণ তাদেরকে দগ্ধ অঙ্গার অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এবং ‘হায়াত” বা ‘হায়া’, নামক নহরে নিক্ষেপ করবে। তখন তারা এতে এমন সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। তোমরা কি দেখনি, কত সুন্দররুপে সে শস্যদানা কেমনভাবে হরিদ্রাভ মাথা মোড়ানো অবস্থায় আংকুরিত হয়?
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪ | 354 | ۳۵٤
পরিচ্ছদঃ ৭৮. শাফায়াত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমান
৩৫৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) … আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি দ্ব্যর্খহীনভাবে الْحَيَاةُ শব্দ উল্লেখ করেছেন। খালিদ বর্ণিত রেওয়ায়েতে এবং উহায়বের রেওয়ায়েতে كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِئَةٍ أَوْ حَمِيلَةِ السَّيْلِ বাক্যের উল্লেখ রয়েছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫ | 355 | ۳۵۵
পরিচ্ছদঃ ৭৮. শাফায়াত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমান
৩৫৫। নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে যারা প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামী, তাদের মৃত্যুও ঘটবে না এবং তারা পূনর্জীবিতও হবে না। তবে তন্মধ্যে তোমাদের এমন কতিপয় লোকও থাকবে, যারা গুনাহের দায়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা’আলা (তাদের উপর পতিত আযাবের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে) তাদেরকে কিছুক্ষন নির্জীব করে রেখে দিবেন। অবশেষে তারা পূড়ে সম্পূর্ণ অঙ্গার হয়ে যাবে। এ সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফাআতের অনুমতি হবে। তখন এদেরকে দলে দলে নিয়ে আসা হবে এবং জান্নাতের নহর গুলিতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। পরে বলা হবে, হে জান্নাতীরা তোমরা এদের গায়ে পানি ঢেলে দাও! ফলত স্রোতবাহিত পানিতে গজিয়ে ওঠা শস্যদানার মত তারা সজীব হয়ে উঠবে। উপস্থিতদের মধ্যে একজন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন এককালে গ্রামে অবস্থান করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৬ | 356 | ۳۵٦
পরিচ্ছদঃ ৭৮. শাফায়াত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমান
৩৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে فِي حَمِيلِ السَّيْلِ কথাটি পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তবে পরবর্তী অংশটূকু উল্লেখ করেন নাই।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭ | 357 | ۳۵۷
পরিচ্ছদঃ ৭৯. জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তি প্রসঙ্গ
৩৫৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। যে নিতান্ত হেঁচড়ে হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেনঃ যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে সেখানে আসবে। তার ধারণা হাব যে এটা পরিপূর্ণ। তাই ফিরে গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! আমি জান্নাতকে পরিপূর্ন দেখলাম। আল্লাহ আবার বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে আবার এসে দেখবে, এ তো ভরপূর হয়ে আছে। তাই ফিরে গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! এ তো ভরপূর হয়ে আছে। আল্লাহ পূনরায় বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাকে পৃথিবী ও পৃথিবীর দশগুন পরিমাণে প্রদান করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে নিয়ে কি ঠাট্টা করছেন। অথচ আপনি তো মহান রাজাধিরাজ! সাহাবী বলেন এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত হেসে উঠলেন যে তাঁর মাড়ির প্রান্তের দাঁতগুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর ঘোষণা করা হবে, এ ব্যাক্তই জান্নাতের সর্বনিম্নস্তরের অধিবাসী।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৮ | 358 | ۳۵۸
পরিচ্ছদঃ ৭৯. জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তি প্রসঙ্গ
৩৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ উদ্ধারপ্রাপ্ত লোকটিকে অবশ্যই আমি জানি। সে নিতম্ব হেঁচড়ে হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। তারপর তাকে বলা হবে যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করে দেখবে, লোকেরা পূর্বেই জান্নাতের সকল স্থান দখল করে রেখেছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার কি পূর্বকালের কথা স্মরণ আছে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, তুমি আমার কাছে কামনা কর। সে তখন কামনা করবে। তখন তাকে বলা হবে, যাও তোমার আশা পূর্ণ করলাম। সেই সাথে পৃথিবীর আরও দশগুন বেশি প্রদান করলাম। লোকটি হতভম্ব হয়ে বলবে, ওগো প্রতিপালক! আপনি আমাদের প্রভূ, আর আপনি আমার সাথে কৌতুক করছেন? সাহাবী বলেন, এ কথাটি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হয়ে গেল।
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৯ | 359 | ۳۵۹
পরিচ্ছদঃ ৭৯. জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তি প্রসঙ্গ
৩৫৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সবার শেষে এক ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে হাটবে আবার উপূড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দেবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, সে সত্তা কত মহিমাময়, যিনি আমাকে তোমা থেকে নাজাত দিয়েছেন। তিনি আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা পূর্বাপর কাউকেও প্রদান করেননি। এরপর তাঁর সম্মুখে একটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, (যা দেখে) সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহন করতে পারি এবং এর নিচে প্রবাহিত পানি থেকে পিপাসা নিবারণ করতে পারি।
আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে তা দান করি, তবে হয়তো তুমি আবার অন্য একটি প্রার্থনা করে বসবে। তখন সে বলবে, না, হে প্রভু! সে এর অতিরিক্ত আর চাইবে না বলে আল্লাহ তা’আলার কাছে অঙ্গীকার করবে এবং আল্লাহও তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। অতএব, আল্লাহ জন্য তাকে ঐ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে এর ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে।
তারপর আবার একটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে; যেটি প্রথমটি অপেক্ষা অধিক সুন্দর। তা দেখেই সে প্রার্থনা করবে, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে এর নিকটবর্তী করে দিন যেন আমি তা থেকে পানি পান করতে পারি এবং এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি। তারপর আর কিছুর প্রার্থনা করব না। আল্লাহ উত্তর দিবেনঃ আদম সন্তান! তুমি না আমায় কসম করে বলেছিলে আর কোনটি প্রার্থনা জানাবে না। তিনি আরো বলবেনঃ যদি আমি তোমাকে তার নিকটবর্তী করে দেই, তরে তুমি হয়তো আরও কিছুর জন্য প্রার্থনা করবে। সে আর কিছু চাইবে না বলে অঙ্গীকার করবে। আল্লাহ তা’আলা তার এ ওযর কবুল করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে যা দেখে সবর কবা যায় না। যাহোক তিনি তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন। আর সে ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে।
এরপর আবার জান্নাতের দরজার কাছে আরেকটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, এটি পূর্বের বৃক্ষদ্বয় অপেক্ষাও নয়নাভিরাম। তাই সে বলে উঠবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করতে ও পানি পান করতে পারি। আমি আর কিছু প্রর্থেনা করব না। আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার কাছে আর কিছু চাইবে না বলে কসম কর নি? সে উত্তরে বলবে, অবশ্যই করেছি। হে প্রভু! তবে এটই আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। তিনি তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন। যখন তাকে নিকটবতী করে দেওয়া হবে, আর জান্নাতীদের কণ্ঠসূর তাঁর কানে ধ্বনিত হরে, তখন সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার কামনা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আমি যদি অেমাকে পৃথিবী এবং তার সমপরিমাণ বস্তু দান করি তবে কি তুমি পরিতৃপ্ত হবে? সে বলবে, হে প্রতিপালক! আপনি কৌতূক করছেন! আপনি তো সারা জাহানের প্রভূ।
এ কথাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ণনাকারী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে ফেললেন। আর বললেন, আমি কেন হেসেছি তা তোমরা জিজ্ঞেস করলে না? তারা বলল, কেন হেসেছেন? তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ হেসেছিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন হাসছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এজন্য যে, ব্যাক্তিটির এ উক্তি “আপনি আমার সাথে কৌতূক করছেন, আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক? শুনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেসেছেন বলে আমিও হাসলাম। যা হোক, আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তোমার সাথে কৌতুক করছি না। মনে রেখ, আমি আমার সকল ইচ্ছার ওপর ক্ষমতাবান।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬০ | 360 | ۳٦۰
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিম্নতম জান্নাতী ঐ ব্যাক্তি, যার মুখমন্ডলটি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে সরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দিবেন। তার সামনে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ উদ্ভাসিত করা হবে। সে ব্যাক্তি প্রার্থনা জানাবে, হে প্রতিপালক। আমাকে এ বৃক্ষ পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আমি এ ছায়ায় অবস্থান করতে চাই… এভাবে তিনি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেন।
তবে এ হাদীসে يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْكَ এর উল্লেখ নেই। অবশ্য এতটুকু বলেছেন যে, আল্লাহ তাঁকে বিভিন্ন নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেনঃ এটা চাও। এভাবে যখন তার সকল আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেনঃ যাও, তোমাকে এসব সস্পদ প্রদান করলাম সে সাথে আরও দশগুন দান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন লোকটি জান্নাতে তার গৃহে প্রবেশ করবে। তার সাথে ডাগর চোখ বিশিষ্ট দু-জন হুর তার পত্নী হিসাবে প্রবেশ করবে। আর তারা বলবে, সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জীবন দান করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জীবন দান করেছেন। লোকটি বলবে, আমাকে যা দেয়া হয়েছে, এমন আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬১ | 361 | ۳٦۱
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬১। সাঈদ ইবনু আমর আল আশআসী, ইবনু আবূ উমর এবং বিশর ইবনু হাকাম (রহঃ) … মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেনঃ সে হল এমন এক ব্যাক্তি, যে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রতিপালক! তা কিরুপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে, পৃথিবীর কোন সম্রাটের সামরাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে, হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে উক্ত পরিমাণ সস্পদ দেওয়া হলো। সাথে দেওয়া হল আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন, আরো দশগুন দেওয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যদ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে, হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এরা তারাই যাদের মর্যাদা আমি চুড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি, কারো অন্তরে কখনও কল্পনায়ও উদয় হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, কুরআনের এ আয়াতটি এর প্রমাণ বহন করেঃ (অর্থ) “কেউ জাননা, তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুকায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পূরস্কারস্বরুপ। ” (সাজদাঃ ১৭)
হাদিস নম্বরঃ ৩৬২ | 362 | ۳٦۲
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬২। আবূ কুরায়ব (রহঃ) … মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) থেঁকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা’আলাকে জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যাক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন… এরপর বর্ণনাকারী পূর্ববর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৩ | 363 | ۳٦۳
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জাহান্নাম হতে সবার শেষে উদ্ধারপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সবার শেষে প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। কিয়ামতের দিন তাকে উপস্থিত করে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, এ ব্যাক্তির সগীরা গুনাহগুলো তার সামনে পেশ কর, আর কবীরা শোনাহগুলো আলাদা তুলে রাখ। ফেরেশতাগণ তার সম্মুখে সগীরা গুনাহগুলো উপস্থিত করবেন। ঐ ব্যাক্তিকে বলা হবে, তুমি অমুক দিন এ পাপ কাজ করেছিলে? অমুক দিন এ কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। সে কোনটার অস্বীকার করতে পারবে না। আর কবীরা গুনাহগুলো পেশ করা হলে সে ভয় করতে থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার এক একটি গুনাহর স্থলে একটি নেকী দেওয়া হল। লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! আমি আরও অনেক অন্যায় কাজ করেছি, যেগুলো এখানে দেখছি না। এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত ভেসে উঠল।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৪ | 364 | ۳٦٤
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৪। ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব … আ’মাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৫ | 365 | ۳٦۵
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) … আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে الْوُرُودِ অর্থাৎ “অতিক্রম করতে হবে” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ একত্রিত হবে। আমি মানুষের উপর থেকে-তা দেখব। (এ উম্মাতকে একত্র করা হবে একটি টিলায়) এরপর একে একে প্রতিটি জাতিকে তাদের নিজ নিজ দেব-দেবী ও উপাস্যের নামসহ ডাকা হবে। তারপর আল্লাহ আমাদের (মুমিনদের) কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কার অপেক্ষায় রয়েছ? মুমিনগন বলবে, আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, যতক্ষন পর্যন্ত আপনাকে না দেখব (আমরা তা মানছি না)। এরপর আল্লাহ তখন সহাস্যে স্বীয় তাজাল্লীতে উদ্ভাসিত হবেন। অনন্তর তিনি তাদের নিয়ে চলবেন এবং মুমিনগণ তাঁর অনুসরণ করবে। মুনাফিক কি মুমিন, প্রতিটি মানুষ কেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পূলের উপর থাকবে কাটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে।
মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাজাত পাবেন। প্রথম দল হবে সত্তর হাজার লোকের, তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তাঁদের চেহারা হবে পূর্নিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্ত। এভাবে পর্বায়ক্রমে সকলে পার হয়ে যাবে। তারপর শাফাআতের অনুমতি প্রদান করা হবে। ফলে সকলেই শাফাআত লাভ করবে। এমন কি যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করেছে, এবং যার অন্তরে সামান্য যব পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। পরে এদেরকে জান্নাতের আঙ্গিনায় জমায়েত করা হবে, আর জান্নাতিগণ তাদের গায়ে পানি সিঞ্চন করবেন, ফলে তারা এমন সতেজ হয়ে উঠবেন, যেমন কোন উদ্ভিদ স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। আগুনে পোড়া দাগসমূহ মুছে যাবে। এরপর তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাবে। আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। তাদের প্রত্যেককে পৃথিবীর মত এবং তৎসহ আরো পৃথিবীর দশগুন প্রতিদান দেওয়া হবে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৬ | 366 | ۳٦٦
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৬। আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইরশাদ করতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা কতিপয় লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭ | 367 | ۳٦۷
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৭। আবূ রাবী (রহঃ) … হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমর ইবনু দ্বীনারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বরাত দিয়ে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা কতিপয় মানুষকে শাফাআতের ম্যধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তখন তিনি বললেন- হ্যাঁ।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৮ | 368 | ۳٦۸
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৮। হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদূল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ জন্য কতিপয় মানুষকে এমতাবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করবেন, যখন জাহান্নামে তাদের মুখমন্ডলের চারপাশ ব্যতীত অন্য সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, অবশেষে তারা (আল্লাহর অনুগ্রহে) জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৯ | 369 | ۳٦۹
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৬৯। হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) … ইয়াযীদ আল ফাকীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খারিজীদের একটি মত, আমাকে বড়ই আকৃষ্ট করছিল। আমরা একবার একটি দলের সাথে বের হই। উদ্দেশ্য ছিল হজ্জ করা তারপর মানুষের সাথে যোগাযোগ করা। আমরা মদিনা দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) একটি খুঁটির পাশে বসে লোকদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ননা করছেন। বর্ননাকারী বলেন, আর একটু এগিয়ে দেখি, তিনি জাহান্নামীদের আলোচনা তুলেছেন। আমি বললাম, হে রাসুলের সাহাবী! আপনারা এ কি বলছেন? অথচ আল্লাহ তায়াআলা ইরশাদ করেছেনঃ (অর্থ) “কাকেও আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো আপনি নিশ্চয়ই হেয় করলেন” (৩ঃ ১১২)। আরো ইরশাদ করেনঃ (অর্থ) যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরোবার চেষ্টা করবে, তখনই ফিরিয়ে দেয়া হবে।” (৩২ঃ ২৫)
জাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে কুরআনে তুমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সে সম্মানিত আসন, যেখানে আল্লাহ তাঁকে (কিয়ামত দিবসে) সমাসীন করবেন, সে আসনের কথা শুননি? বললাম, হ্যাঁ। জাবির (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে আসনটি হচ্ছে “মাকামে মাহমুদ” যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা যাকে জাহান্নাম থেকে বের করার, বের করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর জাবির (রাঃ) পুলসিরাত স্থাপন ও মানুষ তা অতিক্রম করার কথা বর্ণনা করেন।
বর্ণনাকারী আরো বলেন, আলোচনাটি পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে আমার আশঙ্কা হয়। তবে তিনি অনশ্যই একথা উল্লেখ করেছেন যে, কতিপয় মানুষ কিছু কাল জাহান্নামে অবস্থান করার পর, তাদেরকে বের করা হবে। জাহান্নামে আগ্নি দগ্ন হয়ে রোদেপোড়া তিল গাছের মত কালো বর্ণ ধারণ করবে, তখন তাদেরকে বের করে আনা হবে। এরপর তারা জান্নাতের একটি নহরে নেমে গোসল করবে। পরে সকলে কাগজের মত সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবে। ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস নিয়ে আমরা আমাদের এলাকায় ফিরে এলাম এবং সকলকে বললাম, অমঙ্গল হোক তোমাদের! তোমরা কি মনে কর যে, এ বৃদ্ধ (জাবির) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন? পরিশেষে আমাদের সকলেই (ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস) থেকে ফিরে আসে। আল্লাহর কসম! মাত্র এক ব্যাক্তি ছাড়া কেউ আমাদের এ সঠিক আকীদা পরিত্যাগ করে নাই, বা আবূ নূয়ায়ম যা বলেছেন তার অনুরুপ।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭০ | 370 | ۳۷۰
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭০। হাম্মাদ ইবনু খালিদ আল আযদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ চার ব্যাক্তিকে (বিচারের জন্য) জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করা হবে। তন্মধ্যে একজন বারবার পশ্চাৎ দিকে ফিরে তাকারে আর বলবে, হে আমার রব! যখন আমাকে এ জাহান্নাম থেকে বের করেছেন, তখন আমাকে আর সেখানে ফিরিয়ে নেবেন না। আল্লাহ তা’আলা এ লোকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭১ | 371 | ۳۷۱
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭১। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী ও মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ আল শুবারী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হাশরের মাঠে আল্লাহ জন্য সকল মানুষকে একত্র করবেন। তখন সংকটমুক্তির জন্য সুপারিশ প্রার্থনার ব্যাপারে তারা তৎপর হবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনু উবায়দ يُلْهَمُونَ শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থ, অন্তরে উৎসারিত করা হবে। তারা বলবে, আমরা যদি কাউকে আল্লাহর কাছে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করতাম, যেন তিনি আমাদের সংকটময় স্থান থেকে মুক্তি দেন।
সে মতে তারা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে এসে বলবে, আপনি আদম (আলাইহিস সালাম), আপনি মানুষের আদি পিতা, আল্লাহ তা’আলা স্বহস্তে আপনাকে করেছেন, আপনার দেহে আত্না ফুকেছেন, আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা আপনাকে সিজদাও করেছেন। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এ সংকটময় স্থান থেকে মুক্তি দেন। তিনি তাঁর ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা নূহের কাছে যাও। তিনি প্রথম রাসুল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকেই সর্বপ্রথম রাসুলরুপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
তখন সকল মানুষ নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে অনুরোধ করবে। তিনিও তার ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। তাকে আল্লাহ তা’আলা বন্ধুরুপে গ্রহণ করেছেন। তখন সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি স্বীয় ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। আল্লাহ তার সাথে কথোপকথন করেছেন। তাঁকে আল্লাহ তাওরাত প্রদান করেছেন। তখন সবাই মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি তাঁর ক্রটির কথা স্বরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই।
তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত “কালিমা”। তখন সবাই ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন বান্দা যে, তার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন সবাই আমার কাছে আসবে, আর আমি আল্লাহর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। তখন আমি তাঁকে দেখামাত্র সিজদাবনত হয়ে যাব। যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন আমাকে এ অবস্থায় রেখে দিবেন।
তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে, আপনি প্রার্থনা করুন, তা পূর্ণ করা হবে, আপনি শাফা’আত করুন, আপনার শাফাআত কবুল করা হবে। তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করব। আমার জন্য (শাফাআতের) সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হবে। সেমতে আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে এনে জান্নাতে প্রবেশ করাব। পূনরায় আমি শাফাআতের জন্য আসব এবং সিজদাবনত হব। যতক্ষন আল্লাহ এ অবস্থায় আমাকে রাখতে ইচ্ছা করবেন ততক্ষন রেখে দিবেন। পরে বলা “হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, তা পূর্ণ করা হরে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে।
তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। আমার জন্য (শাফা’আতের) সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সে মতে আমি এদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী বলেন, নিশ্চিতভাবে স্মরণ নেই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় কিংবা চতূর্থবারে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, আমি বলবঃ হে আমার প্রতিপালক! কুরআন যাদেরকে আটকে দিয়েছে (অর্থাৎ কুরআনের আলোকে যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকা নির্ধারিত) তারা ছাড়া জাহান্নামে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। ইবনু উবায়দ-এর বর্ণনায় রয়েছে (অর্থাৎ তার জন্য চিরদিন জাছান্নামে থাকা অবধারিত)।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭২ | 372 | ۳۷۲
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামতের দিন মুমিনগণ (হাশরের ময়দানে) একত্র হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে يُلْهَمُونَ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোল্লিখিত আবূ আওয়ানার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, এরপর আমি চতুর্থবার এসে বলবঃ হে প্রভূ! আর কেউ অবশিষ্ট নেই, কেবল তারাই আছে, যাদেরকে কুরআন আটকে রেখেছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩ | 373 | ۳۷۳
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলা মুমিন বান্দাদেরকে একত্র করবেন। বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে চতুর্থবারের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (চতুর্থবারে) তারপর আমি বলবঃ হে প্রতিপালক! আর কেউ অবশিষ্ট নেই, তবে তারাই আছে, যাদেরকে পবিত্র কুরআন আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ব্যাপারে চিরকালের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৪ | 374 | ۳۷٤
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৪। মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল আয যারীর, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ঐ ব্যাক্তিকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে একটি যবের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে সামান্য একটি গমের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” আর তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। ইবনু মিনহাল তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ইয়াযীদ (রহঃ) বলেছেন, এরপর আমি শু’বার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ হাদীস শোনলাম। তখন তিনি বললেন, আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কাতাদা (রহঃ), আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূত্রে। তবে শু’বা الذَّرَّةِ (অনু) শব্দের স্থলে ذُرَةً (ভুট্ট্রা) বর্ণনা করেছেন। ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, আবূ বিসতাম এতে তাসহীফ (এক শব্দ স্থলে অন্য শব্দ ব্যবহার) করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৫ | 375 | ۳۷۵
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৫। আবূ রাবী আল আতাকী, সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) … মা’বাদ ইবনু হিলাল আল আনাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি এবং সুপারিশকারী হিসাবে সাবিতকে সাথে নিয়ে যাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা যখন আনাসের কাছে গিয়ে পৌছি, তখন তিনি সালাতুদ্দোহা আদায় করছিলেন। সাবিত (রাঃ) প্রার্থনা করলেন, অনুমতি হল। আমরা আনাস (রাঃ) এর মজলিসে প্রবেশ করলাম। আনাস (রাঃ) সাবিতকে চৌকিতে তাঁর পাশে বসালেন। তারপর সাবিত (রাঃ) আনাস (রাঃ) কে বললেন, হে আবূ হামযা! আপনার এ বাসরী ভাইয়েরা আপনার কাছ থেকে শাফাআত বিষয়ক হাদীস জানতে চাচ্ছে।
তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষ বিপর্যন্ত অবস্থায় এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে। অবশেষে সবাই আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বসবে, আপনার বংশধরদের জন্য সুপারিশ করুন। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর বন্ধু।
সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলে, তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তখন সকলে তার কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রুহ ও তাঁর কালিমা। এরপর তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলবঃ ‘আমিই এর জন্য, আমি যাচ্ছি। অনন্তর আমি আমার পরওয়ারদিগারের অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁর সন্মুখে দাঁড়াব এবং এমন প্রশংসাসূচক বাক্যে তার প্রশংসা করতে থাকব, যা তখনই আল্লাহ আমার প্রতি ইলহাম করবেন; এখন আমি তা বর্ণনা করতে পারছি না।
এরপর আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মাদ! বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; শাফা’আত করুন, আপনার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার, ‘উাম্মাতী” ‘উম্মাতী’ (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। এরপর আমাকে বলা হবেঃ চলূন, যার অন্তরে গম বা যবের পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবেন তাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনুন। আমি যাব এবং তদনূসারে উদ্ধার করব।
পূনরায় আমার পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব এবং পূর্বানুরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তার প্রশংসা করব, এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। তখন আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী , উম্মাতী আমার উম্মাত (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। আল্লাহ বলবেনঃ যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও অবশিষ্ট থাকবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন।
এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব। পূনরায় আমি পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব এবং পৃর্বানূরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সিজদায় লূঁটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; শাফাআত করুন, শাফা’আত গৃহীত হবে। আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। আল্লাহ বলবেন, যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও আরো আরো কম পরিমাণ ঈমান পারেন, তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব।
বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) এ পর্যন্ত আমাদেরকে বলেছেন। এরপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে পথ চলতে শুরু করলাম। এভাবে যখন “জাব্বান” এলাকায় পৌছলাম, তখন নিজেরা বললাম, আমরা যদি হানান বসরীর সাথে সাক্ষাৎ করতাম এবং তাঁকে সালাম পেশ করতাম, কতই না ভাল হতো! সে সময় তিনি আবূ খলীফার ঘরে আত্মগোপন করেছিলেন। আমরা তাঁর বাড়িতে গেলাম এবং তাঁকে সালাম পের্শ করলাম। আমরা তাঁকে বললাম, আবূ সাঈদ! আমরা আপনার ভাই আবূ হামযার নিকট থেকে আসছি। আজ তিনি আমাদেরকে শাফা’আত সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছেন, যা আর কখনও শুনিনি। তিনি বললেন, আচ্ছা শোনাও তো? তখন আমরা তাঁকে হাদীসটি শোনালাম। তারপর তিনি বললেন, আরও বল। আমরা বললাম, এর চেয়ে বেশি কিছু তো আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেননি। তখন তিনি বললেন, আনাস (রাঃ) আমাদের কাছে আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি সুস্থ-সবল ছিলেন, তখন এ হাদীসটি শুনিয়েছেন। কিন্তু আজ তোমাদের কাছে কিছু ছেড়ে দিয়েছেন মনে হচ্ছে। জানিনা, তিনি তা ভুলে গেছেন, না তোমরা এর উপর ভরসা করে আমলের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করবে, আশংকায় তিনি তা বর্ণনা করাটা পছন্দ করেননি।
আমরা বললাম আমাদের তা বর্ণনা করুন। তিনি ঈষৎ হেসে উত্তর করলেন, মানূষ তো খুব ত্বরাপ্রিয়। তোমাদের তা বর্ণনা করব বলেই তো এর উল্লেখ করলাম। তারপর তিনি হাদীসটির অবশিষ্ট অংশ এরুপ বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরপর আমি পুনরায় আমার পরওয়ারদিগারের কাছে ফিরে আসব এবং চতুর্থবারও উক্তরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, তা কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে।
আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! আমাকে সেসব মানুষের জন্য অনুমতি দিন, যারা “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই” একথা স্বীকার করেছে। আল্লাহ বলবেনঃ না, এটা আপনার দায়িত্বে নয়; বরং আমার ইজ্জত, প্রতিপত্তি, মহত্ত্ব ও পরাক্রমশীলতার কসম! আমি নিজেই অবশ্য এদের মুক্তি দেব, যারা একথার স্বীকৃতি দিয়েছে যে, “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই”। হাদীসটি শেষ করে বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাসান আমাদেরকে হাদীসটি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য আমার বিশ্বাস তিনি এ কথা বলেছেন যে, বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি পূর্ণ সুস্থ-সবল ছিলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৬ | 376 | ۳۷٦
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, তার সামনে সামনের রান পেশ করা হলো। (ছাগলের) গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের আহবান সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবতী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কটূ ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দুর্দশায় তোমরা আছ, দেখছ না? কী অবস্থায় তোমরা পৌছেছ উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না, যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন?
তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, চল, আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাই। অনন্তর তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন; তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আলাইহিস সালাম) উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি, আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের কাছে যাও।
তখন তারা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরুওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি? অ্যমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ (আলাইহিস সালাম) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুঁআ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’, (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও।
তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নাবী পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে, পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, -‘নাফসী”, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও।
তারা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে যাও।
তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন অবস্থায় পৌছেছে? ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরুপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা জন্য কারো কাছে যাও।
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ “গ্রহণ করা হবে”।
অনন্তর আমি। মাথা তুলব। বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, (আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, এদেরকে মুক্তি দান করুন)। আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত।*
* হাজার- বাহরায়ানের একটি শহর। বুসর- দামেশকের নিকটবর্তী একটি শহর।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭ | 377 | ۳۷۷
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেঁন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে সারীদ ও গোশতের একটি পেয়ালা পেশ করা হলে তিনি তা থেকে গোশতের একটি বাহু নিয়ে এক কামড় গ্রহণ করলেন। আর বকরীর গোশতের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাহু অধিকতর পছন্দনীয় ছিল। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের সর্দার। এরপর আরেক কামড় গ্রহণ করে বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের সর্দার। তিনি যখন দেখলেন সাহাবীগণ কোন প্রশ্ন করছেন না, তখন নিজেই বললেন, তোমরা কেন জিজ্ঞাসা করছ না যে তা কেমন করে হবে? সাহাবীগন বললেন, বলুন হে আল্লাহর রাসুল! তা কিভাবে হবে? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর করলেনঃ হাশরের ময়দানে সকল মানুষ আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। অবশিষ্টাংশ আবূ হায়্যান … আবূ যুর’আ সূত্রে বর্নিত হাদীসেরই অনুরুপ।
তবে এ হাদীসে ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) প্রসঙ্গে তিনি নক্ষত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি আমার প্রতিপালক; দেব—দেবীর সম্পর্কে বলেছিলেন, “বরঞ্চ এদের বড়টাই তো হত্যা করেছে ও আমি অসুস্থ”-এ কথা অতিরিক্ত আছে। শপথ সে সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, জান্নাতের দু’চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের দূরত্বের মত বা হাজর ও মক্কার দুরত্বের মত, কোনটি বলেছেন আমি জানিনা।
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮ | 378 | ۳۷۸
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৮ মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ ইবনু খলীফা আল-বাজালী ও আবূ মালিক (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা সকল মানুষকে একত্র করবেন। মুমিনগণ দাঁড়িয়ে থাকবে। জান্নাত তাদের নিকটবতী করা হবে। অবশেষে সবাই আদমের কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার প্রার্থনা করুন। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমাদের পিতা আদমের পদন্থলনের কারনেই আমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আমার পুত্র ইব্রাহীমের কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বন্ধু।
[এরপর সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এলে] তিনি বলবেনঃ না, আমিও এর যোগ্য নই, আমি আল্লাহর বন্ধু ছিলাম বটে, তবে তা ছিল অন্তরাল থেকে। তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি বাক্যালাপ করতেন। সবাই মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবেনঃ আমিও এর যোগ্য নই; বরং তোমরা ঈসার কাছে যাও। আল্লাহর দেওয়া কালিমা ও রুহ। সবাই তাঁর কাছে আসলে তিনি বলবেনঃ আমিও তার উপযুক্ত নই। তখন সকলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে আসবে। তিনি দু’আর নিমিত্তে দাড়াবেন এবং তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আমানতকারী আত্নীয়তার সম্পর্ক পুলসিরাতের ডানে-বামে এসে দাঁড়াবে। আর তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে।
সাহাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য আমার পিতামাতা উৎসর্গ হউক। আমাকে বলে দিন “বিদ্যুৎ গতির ন্যায়” কথাটির অর্থ কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনো দেখনি? চক্ষের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায় আবার ফিরে আসে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর পরবর্তী দলগুলি যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে! যাবে। প্রত্যেকেই তার আমল হিসাবে তা অতিক্রম করবে। আর তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অবস্থায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দুআ করতে থাকবেঃ আল্লাহ এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন। এরুপে মানুষের আমল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম করতে থাকবে।
শেষে এক ব্যাক্তিকে দেখা যাবে, সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ সিরাতের উভয় পার্শের ঝূলান থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহশলাকা। এরা আল্লাহর নির্দেশক্রমে চিহ্নিত পাপীদেরকে পাকড়াও করবে। তন্মধ্যে কাউকে তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; সে নাজাত পাবে। আর কতক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, শপথ সে সত্তার, যার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ। জেনে রাখ, জাহান্নামের গভীরতা সত্তর খারীফ (অর্থাৎ সত্তর হাজার বছরের পথ তুল্য। )
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৯ | 379 | ۳۷۹
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি প্রথম ব্যাক্তি যে জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর কাছে শাফা’আত করব। নাবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮০ | 380 | ۳۸۰
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮০। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ’লা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮১ | 381 | ۳۸۱
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন জান্নাত সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান আনবে, যা অন্য কোন নাবীর বেলায় হবে না। নাবীদের কেউ কেউ তো এমতাবস্থায়ও আসবেন, যার প্রতি মাত্র এক ব্যাক্তই ঈমান এনেছে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮২ | 382 | ۳۸۲
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮২। আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করব, মুহাম্মাদ। খাজাঞ্চি বলবেন, “আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি নির্দেশিত হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৩ | 383 | ۳۸۳
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৩। ইউনূস ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্যই বিশেষ একটি দু’আ নির্ধারিত আছে, যা তিনি করবেন। আমি আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত রাখার সংকল্প নিয়েছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৪ | 384 | ۳۸٤
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৪। যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে। আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য সংরক্ষিত রাখব বলে ইচ্ছা করেছি, ইনশাআল্লাহ।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৫ | 385 | ۳۸۵
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৫। যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আমর ইবনু আবূ সুফিয়ান ইবনু আর্সীদ ইবনু জারিয়া আল সাকাফী (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৬ | 386 | ۳۸٦
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন কা’ব আল আহবারকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে। আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি। কা’ব (রাঃ) আবূ হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি শুনেছেন? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন- হ্যাঁ।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৭ | 387 | ۳۸۷
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে তন্মধ্যে সকলেই তাদের দু’আ পৃথিবীতেই করে নিয়েছেন। আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের জন্য রেখে দিয়েছি। আমার উম্মতের যে ব্যাক্তি কোন প্রকার শিরক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে ইনশাআল্লাহ আমার এ দুআ পাবে।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৮ | 388 | ۳۸۸
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি বিশেষ দুআর অনুমতি প্রদান করা হয়েছে; এর মাধ্যমে তিনি যে দুআ করবেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন। সকল নাবী তাঁদের দুআ করে ফেলেছে। আবূ আমি আমার দুআটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৯ | 389 | ۳۸۹
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারি (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে তাঁর উম্মাতের ব্যাপারে একটি করে এমন দু’আর অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা অবশ্যই কবুল করা হবে। আমি সংকল্প করেছি, আমার দু’আটি পরে আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য করব।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯০ | 390 | ۳۹۰
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৯০। আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর কাছে তাঁর উম্মাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য একটি দু’আর অনুমতি আছে। আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি। যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ খালাফ, আবূ কুরায়ব, ইবরাহিম ইবনু সা’দ আল জাওহারী (রহঃ) ও মিসআর (রহঃ) এ সুত্রে কাতাদা থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯১ | 391 | ۳۹۱
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৯১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আ’লা (রাঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে কাতাদা এর অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯২ | 392 | ۳۹۲
পরিচ্ছদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৯২। মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি করে কবুল দুআর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সবাই তাদের দুআ করে ফেলেছিল, তবে আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৩ | 393 | ۳۹۳
পরিচ্ছদঃ ৮১. উম্মাতের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু’আ ও তাদের প্রতি মমতায় তার ক্রন্দন
৩৯৩। ইউনূস ইবনু আবদুল আলা আস সাদাফী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ বর্ণনা করেনঃ (অর্থ) হে আমার প্রতিপালক! এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভূক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালূ” (১৪ঃ ৩৬) তিলাওয়াত করেন। আর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর দুয়া বর্ণনা করেছেনঃ (অর্থ) “তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তরে তো তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (৫ঃ ১১৮)।
তারপর তিনি তাঁর উভয় হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত! আর কেঁদে ফেললেন। তখন মহান আল্লাহ বললেনঃ হে জিবরীল! মুহাম্মদের কাছে যাও, তোমার রব তো সবই জানেন, তাঁকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কাঁদছেন কেন? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, তা তাঁকে অবহিত করলেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাঁকে বল, আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব, আপনাকে অন্তুষ্ট করব না।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৪ | 394 | ۳۹٤
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন পিছনে ফিরে যাচ্ছিল, তখন তিনি ডাকলেন এবং বললেনঃ আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।”
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৫ | 395 | ۳۹۵
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও—” (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের ডাকলেন। তারা একত্রিত হল। তারপর তিনি তাঁদের সাধারণ ও বিশিষ্ট সকলকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে কা’ব ইবনু লূওয়াইর বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে মুররা ইবনু কাবের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে আবদ মানাফের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাও। হে হাশিমের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর। হে আব্দুল মূত্তালিবের বংশধর! জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাচাও। হে ফাতিমা! জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচাও! কারন আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য তোমাদের সঙ্গে আমার আত্নীয়তার রসে আমি তোমাদের সিঞ্চিত করব।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬ | 396 | ۳۹٦
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) … আবদুল মালিক ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন; তবে জারীর বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৭ | 397 | ۳۹۷
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৭। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও (২৬ঃ ২১৪); তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বললেন, হে ফাতিমা বিনূত মুহাম্মাদ! হে সাফিয়্যা বিন্ত অবদুল মুত্তালিব! হে আবদুল মূত্তালিবের বংশধর! আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। তোমরা আমার কাছে আমার সম্পদের যা খুশি চাইতে পার।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৮ | 398 | ۳۹۸
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “তোমার নিকট আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও।” (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে কুরাইশগণ! আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমরা নিজেদের কিনে নাও (বাঁচাও) আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমাদের রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। ওহে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! তোমাদের আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা করতে পারব না। হে সাফিয়্যা! তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারব না। হে ফাতিমা বিন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তোমার যা ইচ্ছা চাইতে পার। আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমাকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই।
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৯ | 399 | ۳۹۹
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৩৯৯। আমর আন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস নম্বরঃ ৪০০ | 400 | ٤۰۰
পরিচ্ছদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৪০০। আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) … কাবীসা ইবনু মুখারিক ও যুহায়র ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) “তোমার নিকট- আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও” (২৬ঃ ২১৪)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্বতের স্তরে স্তরে সাজানো বৃহদাকার পাথরের দিকে গেলেন এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ প্রস্তর খণ্ডে আরোহণ করলেন। এরপর তিনি আহবান জানালেন, ওহে আবদ মানাফের বংশধর! আমি (তোমাদের) সতর্ককারী। আমার ও তোমাদের উপমা হল এমন এক ব্যাক্তির মত, যে শক্রকে দেখতে পেয়ে তার লোকদের রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হল। পরে সে আশঙ্কা করল যে, শক্র তার আগেই এসে যাবে। তখন সে ইয়া সাবাহ (হায় মন্দ প্রভাত!) বলে চিৎকার শুরু করল।