০১.১ কোমল হওয়া অধ্যায় – হাদিস ৫৯৭০-৬০৬৯

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭০ | 5970 | ۵۹۷۰

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৩. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন
৫৯৭০। মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি নিয়ামত এমন আছে, যে দু’টোতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হল, সুস্থতা আর অবসর।

আব্বাস আম্বরী (রহঃ) … সাঈদ ইবনু আবূ হিন্দ (রহঃ) থেকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭১ | 5971 | ۵۹۷۱

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৩. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন
৫৯৭১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আয় আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। সুতরাং আপনি আনসার আর মুহাজিরদের কল্যাণ দান করুন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭২ | 5972 | ۵۹۷۲

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৩. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন
৫৯৭২। আহমাদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা খন্দকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি খনন করছিলেন এবং আমরা মাটি সরাচ্ছিলাম। তিনি আমাদের দেখছিলেন। তখন তিনি বলছিলেনঃ আয় আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। সূতরাং আপনি আনসার ও মুহাজিরদেরকে মাফ করে দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৩ | 5973 | ۵۹۷۳

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৪. আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক … ছলনাময়য় ভোগ (৫৭ঃ ২০)
৫৯৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, জান্নাতের মধ্যে একটা চাবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম। আর আল্লাহর রাস্তায় সকালের এক মুহূর্ত অথবা বিকালের এক মুহূর্ত দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৪ | 5974 | ۵۹۷٤

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৫. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ দুনিয়াতে তুমি একজন মুসাফির অথবা পথযাত্রীর মত থাক
৫৯৭৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমার উভয় কাঁধ ধরে বললেনঃ তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথযাত্রীর মত থাক। আর ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবকাশে পিড়ীত অবস্থার জন্য সঞ্চয় করে রেখো। আর জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিও।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৫ | 5975 | ۵۹۷۵

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৬. আশা এবং ধৈর্য। মহান আল্লাহর বাণীঃ যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে, সে-ই সফল হলো, আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময়য় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয় (৩ঃ ১৮) এদের ছেড়ে দাও- খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা এদের মোহাচ্ছন্ন রাখুক, অচিরেই তারা বুঝবে (১৬ঃ ৩) ‘আলী (রাঃ) বলেন, এ দুনিয়া পেছনের দিকে যাচ্ছে, আর আখিরাত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। এ দু’টির প্রতিটির আছে সন্তানাদি। অতএব তোমরা আখিরাতের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত হও। দুনিয়ার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। কারণ, আজ ‘আমালের দিন, অতএব হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব, কোন ‘আমাল নেই
৫৯৭৫। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চতূর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন, যা ভূজ অতিক্রম করে গেল। তারপর দু’পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে ভেতরের দিকে কয়েকটী ছোট ছোট রেখা মিলালেন এবং বললেনঃ এ মাঝামাঝি রেখাটা হলো মানুষ। আর এ চতুর্ভূজটি হলো তার আয়ু, যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে অতিক্রান্ত রেখাটি হল তার আশা। আর এ ছোট ছোট রেখাগুলো বাধা-বিপত্তি। যদি সে এর একটা এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে দংশন করে। আর অন্যটিও যদি এড়িয়ে যায় তবে আরেকটি তাকে দংশন করে।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৬ | 5976 | ۵۹۷٦

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৬. আশা এবং ধৈর্য। মহান আল্লাহর বাণীঃ যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে, সে-ই সফল হলো, আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময়য় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয় (৩ঃ ১৮) এদের ছেড়ে দাও- খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা এদের মোহাচ্ছন্ন রাখুক, অচিরেই তারা বুঝবে (১৬ঃ ৩) ‘আলী (রাঃ) বলেন, এ দুনিয়া পেছনের দিকে যাচ্ছে, আর আখিরাত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। এ দু’টির প্রতিটির আছে সন্তানাদি। অতএব তোমরা আখিরাতের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত হও। দুনিয়ার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। কারণ, আজ ‘আমালের দিন, অতএব হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব, কোন ‘আমাল নেই
৫৯৭৬। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেনঃ এটা আশা আর এটা তার আয়ু। মানুষ যখন এ অবস্থায় থাকে হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৭ | 5977 | ۵۹۷۷

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৭. যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌঁছে গেল, আল্লাহ তা’আলা তার বয়সের ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত, অথচ তোমাদের কাছে সতর্ককারীরাও এসেছিল … (৩৫ঃ ৩৭)
৫৯৭৭। আবদুল সালাম ইবনু মুতাহহার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ, আল্লাহ তা’আলা যাকে দীর্ঘায়ু করেছেন, এমনকি যাকে ষাট বছরে পৌছিয়েছেন তার ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৮ | 5978 | ۵۹۷۸

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৭. যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌঁছে গেল, আল্লাহ তা’আলা তার বয়সের ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত, অথচ তোমাদের কাছে সতর্ককারীরাও এসেছিল … (৩৫ঃ ৩৭)
৫৯৭৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, বৃদ্ধ লোকের অন্তর দুটি ব্যাপারে সর্বদা যুবক থাকে। এর একটি হল দুনিয়ার মহব্বত, আরেকটি হল উচ্চাকাঙ্ক্ষা।

লায়ছ (রহঃ) … সাঈদ ও আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৭৯ | 5979 | ۵۹۷۹

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৭. যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌঁছে গেল, আল্লাহ তা’আলা তার বয়সের ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত, অথচ তোমাদের কাছে সতর্ককারীরাও এসেছিল … (৩৫ঃ ৩৭)
৫৯৭৯। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের বয়স বাড়ে আর তার সাথে দুটি জিনিসও বৃদ্ধি পায়; ধন-সম্পদের মহব্বত ও দীর্ঘায়ুর আকাঙ্ক্ষা।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮০ | 5980 | ۵۹۸۰

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৮. যে ‘আমালের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয়। এ বিষয়ে সা’দ (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদিস আছে
৫৯৮০। মুয়ায ইবনু আসাদ (রহঃ) … মাহমুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা তাঁর স্মরণ আছে। আর তিনি বলেনঃ তাদের ঘরের পানির ডোল থেকে পানি মুখে নিয়ে তিনি তার মুখে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন সে কথাও তার স্মরণ আছে। তিনি বলেনঃ ইতবান ইবনু মালিক আনসারীকে, এরপর বনী সালিমের এক ব্যাক্তিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে আমার এখানে এলেন এবং বললেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যাক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে কিয়ামতের দিন হাযির হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮১ | 5981 | ۵۹۸۱

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৮. যে ‘আমালের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয়। এ বিষয়ে সা’দ (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদিস আছে
৫৯৮১। কুতায়বা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোন প্রিয়তম কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান নেই।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮২ | 5982 | ۵۹۸۲

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮২। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আমর ইবনু আওফ (রাঃ), তিনি বনী আমর ইবনু লুওযাই এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধেও শরীক ছিলেন। তিনি বর্ননা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহকে জিযিয়া আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের উপর আলা ইবনু হাসরামী (রাঃ) কে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবায়দা (রাঃ) বাহরাইন থেকে মালামাল নিয়ে আসেন, আনসারগণ তার আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের সালাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঈে শরীক হন।

সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তাঁরা তার সামনে এলেন। তিনি তাদের দেখে হেসে বললেনঃ আমি মনে করি তোমরা আবূ উবায়দা (রাঃ) এর আগমনের এবং তিনি যে মাল নিয়ে এসেছেন সে সংবাদ শুনেছ। তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা এ সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং তোমরা আশা রেখো যা তোমাদের খুশী করবে। তবে, আল্লাহর কসম। আমি তোমাদের উপর দরিদ্রতার আশংকা করছি না বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববতী উম্মাতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হইয়েছিল, তেমনি তোমাদের উপরও দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। আর তোমরা যা নয় তা তোমাদের আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের জন্য বিমুখ করেছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৩ | 5983 | ۵۹۸۳

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৩। কুতায়বা (রহঃ) … উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং উহুদের শহীদানের উপর সালাত আদায় করলেন, যেমন তিনি মুর্দার উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাকেন। তারপর মিম্বরে আরোহণ করে বললেনঃ আমি তোমাদের অগ্রনী। আমি তোমাদের সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি আমার ‘হাওয’ কে এখন দেখছি। আমাকে তো যমীনের ধনগারের চাবিসমূহ অথবা যমীনের চাবিসমূহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর এ আশংকা করছি না যে, তোমরা আমার পরে মুশরিক হয়ে যাবে, তবে আমি আশংকা করছি যে, তোমরা দুনিরার ধন-সম্পদে আসক্ত হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৪ | 5984 | ۵۹۸٤

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৪। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য যমীনের বরকত সমুহ প্রকাশিত করে দিবেন, আমি তোমাদের জন্য এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞাসা করা হলো, যমীনের বরকত সমূহ কি? তিনি বললেনঃ দুনিয়ার জাঁকজমক। তখন এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে বললেনঃ ভাল কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তার উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভাল শুধুমাত্র ভালকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনদৌলত সবুজ শ্যামল সুমিষ্ট। অবশ্য বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষণকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে প্রানী পেট ভরে খেয়ে সূর্যমুখী হয়ে জাবর কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃ খায় (এর অবস্হা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধনদৌলত তদ্রূপ সুমিষ্ট। যে ব্যাক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যয় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করবে, তার অবস্থা হবে ঐ ব্যাক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৫ | 5985 | ۵۹۸۵

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৫। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার যমানার লোকেরাই সর্বোত্তম। তারপর এর পরবর্তী যমানার লোকেরা। তারপর এদের পরবর্তী যমানার লোকেরা। ইমরান (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বললেন, তা আমার স্মরণ নেই- তারপর এমন লোকদের আবির্ভাব হবে যে, তারা সাক্ষ্য দিবে, অথচ তাদের সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানতকারী হবে। তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তারা মানত মানবে তা পূরণ করবে না। তাদের দৈহিক হৃষ্টপুষ্টতা প্রকাশিত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৬ | 5986 | ۵۹۸٦

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৬। আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শ্রেষ্ঠ হল আমার যমানার লোক। তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক, তারপর এমন সব লোকের আবির্ভাব হবে, যাদের সাক্ষ্য তাদের কসমের পূর্বেই হবে, আর তাদের কসম তাদের সাক্ষ্যের পূর্বেই হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৭ | 5987 | ۵۹۸۷

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৭। ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খাব্বাব (রাঃ) সাতবার তার পেটে উত্তপ্ত লোহার দাগ নেওয়ার পর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ না করতেন, তাহলে আমি মৃত্যু কামনা করতাম। নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবার অনেকেই (দুনিয়ার মোহে পতিত না হয়েই) চলে গিয়েছেন। অথচ দুনিয়া তাঁদের আখিরাতের কোনই ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। আর আমরা দুনিয়ার ধনসম্পদ সংগ্রহ করেছি, যার জন্য মাটি ছাড়া আর কোন স্থান পাচ্ছি না।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৮ | 5988 | ۵۹۸۸

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৮। মুহাম্মদ ইবনু মুছান্না (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একবার খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন তিনি একটা দেয়াল তৈরি করছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমাদের যে সাথীরা দুনিয়া থেকে চলে গেছে, দুনিয়া তাদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। আর আমরা তাদের পর দুনিয়ার ধনসম্পদ সংগ্রহ করেছি, যেগুলোর জন্য আমরা মাটি ছাড়া আর কোন স্থান পাচ্ছি না।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৯ | 5989 | ۵۹۸۹

পরিচ্ছদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৯। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হিজরত করেছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯০ | 5990 | ۵۹۹۰

পরিচ্ছদঃ ২৬৯০. মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কাজেই পার্থিব জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই যেন প্রতারিত না করে … যেন জাহান্নামী হয় পর্যন্ত (৩৫ঃ ৫-৬) ইমাম বুখারী বলেন, السَّعِيرِ এর বহুবচন سُعُرٌ আর মুজাহিদ বলেন, الْغَرُورُ এর মানে শয়তান।
৫৯৯০। সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … ইবনু আবান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর কাছে উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিয়ে এলাম। তখন তিনি মাকায়িদ-এ বসা ছিলেন। তিনি উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ স্থানেই দেখেছি, তিনি উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন, এরপর তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতো উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে, তারপর মসজিদে এসে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সেখানে বসবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, তোমরা ধোকায় পড়ো না। ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি হুমরান ইবনু আবান।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯১ | 5991 | ۵۹۹۱

পরিচ্ছদঃ ২৬৯১. নেককার লোকদের বিদায় গ্রহন
৫৯৯১। ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) … মিরদাস আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন। আর থেকে যাবে নিকৃষ্টরা-যব অথবা খেজুরের মত লোকজন। আল্লাহ তা’আলা এদের প্রতি ভ্রক্ষেপও করবেন না।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯২ | 5992 | ۵۹۹۲

পরিচ্ছদঃ ২৬৯২. ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ‌ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা (৮ঃ ২৮)
৫৯৯২। ইয়াহইয়া ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দ্বীনার, দিরহাম, রেশমী চাঁদর (শাল), পশমী কাপড়ের (চাদর) গোলামরা ধ্বংস হোক। যাদের এসব দেয়া হলে সন্তুষ্ট থাকে আর দেয়া না হলে অন্তুষ্ট হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৩ | 5993 | ۵۹۹۳

পরিচ্ছদঃ ২৬৯২. ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ‌ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা (৮ঃ ২৮)
৫৯৯৩। আবূ আসিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যদি আদম সন্তানের দুটি উপত্যকাপূর্ণ ধনসম্পদ থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্ক্ষা করবে। আর মাটি ছাড়া লোভী আদম সন্তানের পেট ভরবে না। অবশ্য যে ব্যাক্তি তওবা করবে, আল্লাহ তা আলা তার তওবা কবুল করবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৪ | 5994 | ۵۹۹٤

পরিচ্ছদঃ ২৬৯২. ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ‌ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা (৮ঃ ২৮)
৫৯৯৪। মুহাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ বনী আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে তাহলে সে আরও ধন অর্জনের জন্য লালায়িত থাকবে। বনী আদমের লোভী চোখ মাটি ছাড়া আর কিছুই তৃপ্ত করতে পারবে না। তবে যে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সুতরাং আমি জানিনা-এটি কুরআনের অন্তর্ভুক্ত কিনা। তিনি বলেনঃ আমি ইবনুল যুবায়রকে বলতে শুনেছি-এটি মিম্বরের উপরের (বর্ণনা)।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৫ | 5995 | ۵۹۹۵

পরিচ্ছদঃ ২৬৯২. ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ‌ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা (৮ঃ ২৮)
৫৯৯৫। আবূ নুয়াইম (রহঃ) … আব্বাস ইবনু সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আমি ইবনুল যুবায়র (রাঃ) কে মক্কায় মিম্বরের উপর তার খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ হে লোকেরা! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন যে, যদি আদম সন্তানকে স্বর্ণে পরিপূর্ণ একটা উপত্যকা মাল দেয়া হয়, তথাপিও সে এ রকম দ্বিতীয়টার জন্য আকাঙ্ক্ষিত হয়ে থাকবে। আর তাকে এরকম দ্বিতীয়টা যদি দেয়া হয়, তাহলে সে তৃতীয় আরও একটার জন্য আকাঙ্ক্ষা করতে থাকবে। মানুষের পেট মাটি ছাড়া কিছুই ভরভে পারে না। তবে যে ব্যাক্তি তওবা করে, আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৬ | 5996 | ۵۹۹٦

পরিচ্ছদঃ ২৬৯২. ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ‌ তা’আলার বাণীঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা (৮ঃ ২৮)
৫৯৯৬। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি আদম সন্তানের স্বর্ণে পরিপূর্ন একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকার কামনা করবে। তার মুখ একমাত্র মাটি ছাড়া অন্য কিছুই ভরতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যাক্তি তওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। অন্য এক সুত্রে আনাস (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমাদের ধারণা ছিল যে, সম্ভবত এ কুরআনেরই আয়াত। অবশেষে (সূরায়ে তাকাসুর) নাযিল হল।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৭ | 5997 | ۵۹۹۷

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৩. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ এ সম্পদ শ্যামল ও মনোমুগ্ধকর। মহান আল্লাহর বাণীঃ মানুষের জন্য (দুনিয়াতে) মনোহর করে দেওয়া হয়েছে কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলোর মায়া মহব্বতকে অর্থাৎ নারীকুল ও সন্তান-সন্ততি … এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু (৩ঃ ১৪) উমার (র) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যেসব জিনিস মনোহর করে দিয়েছেন, তজ্জন্য খুশি না হয়ে পারি না। হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, যেন আমি এগুলোকে যথাযথ খরচ করতে পারি।
৫৯৯৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মাল চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবারও চাইলাম। তিনি দিলেন। এরপর বললেনঃ এই ধন-সম্পদ সুফয়ানের বর্ণনামতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে হাকীম! অবশ্যই এই মাল শ্যামল-সবুজ ও সুমিষ্ট। যে ব্যাক্তি তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে, তার জন্য এটাকে বরকতময় করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি তা লোভ সহকারে নেবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। বরং সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে খায়, কিন্তু পেট ভরে না। আর (জেনে রেখো) উপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৮ | 5998 | ۵۹۹۸

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৪. মালের যা অগ্রিম পাঠাবে তা-ই তার হবে
৫৯৯৮। আমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন ব্যাক্তি কে যে নিজের সম্পদের চেয়ে তার উত্তরাধিকারীর সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে? তারা সবাই জবাব দিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে সবাই তার নিজের সম্পদকে সবচাইতে বেশি প্রিয় মনে করি। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই মানুষের নিজের সম্পদ তা-ই, যা সে আগে পাঠিয়েছো আর পিছনে যা ছেড়ে যাবে তা ওয়ারিছের মাল।

হাদিস নম্বরঃ ৫৯৯৯ | 5999 | ۵۹۹۹

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৫. প্রাচুর্যের অধিকারীরাই সল্পাধিকারী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি কেউ পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে … এবং তারা যা করে থাকে (১১ঃ ১৫-১৬)
৫৯৯৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাতে আমি একবার বের হলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একাকী চলতে দেখলাম, তার সঙ্গে কোন লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তার সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তার পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এ কে? আমি বললাম, আমি আবূ যার। আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেনঃ ওহে আবূ যার, এসো। আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। তারপর তিনি বললেনঃ প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন স্বল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ সম্পদ দান করেন এবং তারা সম্পদকে তা ডানে বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে। আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (তারা ব্যতীত)।

তারপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেনঃ। তুমি এখানে বসে থাক। (এ কথা বলে) তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটি খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকেো। তিনি বলেনঃ এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল।

অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাকে বলতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। তারপর তিনি যখন ফিরে এলেন তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলাম যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বললেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন।

তিনি বললেনঃ আপনি আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দিবেন যে, সে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওহে জিবরীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আবার আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যদি সে শরাবও পান করে।

নযর (রহঃ) … আবূদ্দারদা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূদ্দারদা থেকে আবূ সালিহের বর্ণনা মুরসাল, যা সহীহ নয়। আমরা পরিচয়ের জন্য এনেছি। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ তবে এ সুসংবাদ এ অবস্থায় দেওয়া হয়েছে, যদি সে তওবা করে আর মৃত্যৃকালে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০০ | 6000 | ٦۰۰۰

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৬. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ আমার জন্য উহুদ সোনা হোক; আমি তা কামনা করি না
৬০০০। আল হাসন ইবনুুূর রাবী (রহঃ) … যায়দ ইবনু ওহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনার কংকরময় প্রান্তরে হেঁটে চলছিলাম। ইতোমধ্যে উহুদ আমাদের সামনে এল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! আমি বললাম, লাব্বাইকা, ইয়া রাসূসাল্লাহ! তিনি বললেনঃ আমার নিকট এ উহুদ পরিমাণ সোনা হোক, আর তা ঝণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে রেখে দেওয়া ব্যতীত একটি দ্বীনারও তা থেকে আমার কাছে জমা থাকুক আর এ অবস্থায় তিন দিন অতিবাহত হোক তা আমাকে আনন্দিত করবে না। তবে যদি আমি তা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এভাবে তাকে ডান দিকে, বাম দিকে ও পেছনের দিকে বিতরণ করে দেই তা স্বতস্ত্র।

এরপর তিনি চললেন। কিছুক্ষণ পর আবার বললেনঃ জেনে রেখো, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন স্বল্পাধিকরী হবে। অবশ্য যারা এভাবে, এভাবে, এভাবে ডানে, বামে ও পেছনে ব্যায় করবে, তারা এর ব্যাক্তিক্রম। কিন্তু এরকম লোক অতি অল্পই। তারপর আমাকে বললেনঃ তুমি এখানে থাক। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করো। অতঃপর তিনি রাতের অন্ধকারে ঢলে গেলেন। এমনকি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপর আমি একটা উচ্চ শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, সম্ভবত তিনি কোন শক্রর সাম্মুখীন হয়েছেন। এজন্য আমি তার কাছেই যেতে চাইলাম। কিন্তু তখনই আমার স্মরণ হলো যে, তিনি আমাকে বলে গিয়েছেন যে, আমি না আসা পর্যন্ত তুমি আর কোথাও যেয়ো না। তাই আমি সেদিকে আর গেলাম না।

ইতোমধ্যে তিনি ফিরে এলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি একটা শব্দ শুনে তো শংকিত হয়ে পড়েছিলাম। বাকী ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি শব্দ শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ইনি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তিনি আমার কাছে এসে বললেনঃ আপনার উম্মাতের কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি সে যিনা করে এবং যদি সে চুরি করে। তিনি বললেনঃ যদিও সে যিনা করে এবং যদিও চুরি করে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০১ | 6001 | ٦۰۰۱

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৬. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ আমার জন্য উহুদ সোনা হোক; আমি তা কামনা করি না
৬০০১। আহমাদ ইবনু শাবীব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার জন্য উহুদের সমতূল্য স্বর্ণ যদি হয় আর এর কিয়দংশও তিনদিন অতীত হওয়ার পর আমার কাছে থাকবে না- তাতেই আমি সুখী হবো। তবে যদি ঋন পরিশোধের জন্য হয় (তা ব্যতিক্রম)।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০২ | 6002 | ٦۰۰۲

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৭. প্রকৃত ঐশ্বর্য হলো অন্তরের ঐশ্বর্য। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তারা কি ধারনা করছে যে, আমি তাদেরকে যেসব ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দান করেছি … করে যাচ্ছে, পর্যন্ত
৬০০২। আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৈষয়িক প্রাচুর্য ঐশ্বর্য নয় বরং প্রকৃত ঐশ্বর্য হল অন্তরের ঐশ্বর্য।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৩ | 6003 | ٦۰۰۳

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৮. দরিদ্রতার ফযীলত
৬০০৩। ইসমাঈল (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে গেলেন তখন তিনি তার কাছে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? তিনি বললেনঃ এ ব্যাক্তি তো একজন সভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! তিনি এমন মর্যাদাবান যে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহনযোগ্য। আর কারো জন্য সুপারিশ করলে তা গ্রহণযোগ্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ ব্যাক্তি সম্বন্ধে তোমার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ ব্যাক্তি তো এক গরীব মুসলমান। এ এমন ব্যাক্তি যে, যদি সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে যদি কারো সুপারিশ করে, তবে তা কবুলও হবে না এবং যদি সে কোন কথা বলে, তবে তা শোনার যোগ্য হয় না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুনিয়া ভরা আগের ব্যাক্তি থেকে এ ব্যাক্তি উত্তম।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৪ | 6004 | ٦۰۰٤

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৮. দরিদ্রতার ফযীলত
৬০০৪। আল হুমায়দী (রহঃ) … আবূ ওয়াহিল (রহঃ) বর্ণনা করেন। একবার আমরা খাব্বাব (রাঃ) এর শুশ্রুষায় গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মদিনায়) হিজরত করেছি; যার সাওয়াব আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ সাওয়াব দুনিয়াতে লাভ করার আগেই বিদায় নিয়েছেন। তন্মধ্যে মুসআব ইবনু উমায়র (রাঃ), তিনি তো উহুদের যুদ্ধে শহীদ হল। তিনি শুধু একখানা চাঁদর রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বেরিয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে পড়তো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর কিছু ‘ইযখির’ ঘাস বিছিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে এমনও অনেক রয়েছেন, যাদের ফল পাকছে এবং তারা তা সরবরাহ করছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৫ | 6005 | ٦۰۰۵

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৮. দরিদ্রতার ফযীলত
৬০০৫। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম যে, অধিকাংশ জান্নাতবাসী গরীব এবং আমি জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, অধিকাংশ জাহান্নামী স্ত্রীলোক।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৬ | 6006 | ٦۰۰٦

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৮. দরিদ্রতার ফযীলত
৬০০৬। আবূ মা’মার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমৃত্যু টেবিলের উপর খাবার খাননি আর ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত মসৃণ রুটি খেতে পাননি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৭ | 6007 | ٦۰۰۷

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৮. দরিদ্রতার ফযীলত
৬০০৭। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে, তখন কোন প্রানী খেতে পারে আমার তাকের উপর এমন কিছু ছিল না। তবে আমার তাকে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে (পরিমাপ না করে) বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। একদা মেপে দেখলাম- যদ্দরুন তা শেয হয়ে যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৮ | 6008 | ٦۰۰۸

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০০৮। আবূ নুয়াইম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া অরে কোন মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোন সময় ক্ষুধার জালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবূ বকর (রাঃ) যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছু করলেন না। কিছুক্ষণ পর উমর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাকে কুরআনের একটি আয়াত সমন্ধে প্রশ্ন করলাম। এ সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোন ব্যবস্থা করলেন না।

তার পরক্ষনে আবূল কাসিম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এখং আমার প্রাণে কি অস্থিরতা বিরাজমান এবং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা আচ করতে পারলেন। তারপর বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হাযির আছি। তিনি বললেনঃ তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তার অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে ঢূকবার অনুমতি চাইলেন এবং আমার্যে ঢুকবার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমান দুধ পেলেন। তিনি বললেনঃ এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেনঃ এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।

রাবী বলেনঃ সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোন পরিবার ছিল না এবং তাদের কোন সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযোগ ছিল না। যখন কোন সাদাকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহন করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এলো। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম।

এরপর যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাঁদেরকে দেই, আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম। তারা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহন করলেন। তিনি বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এরুপে দিতে দিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন।

তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বললেনঃ এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমন কি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তার কসম। (আমার পেটে) আর পান করার মত জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বললেনঃ তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকীটা পান করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০০৯ | 6009 | ٦۰۰۹

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০০৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … কায়স (রহঃ) বর্ণনা করেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমিই আরবের সর্বপ্রথম ব্যাক্তি, আল্লাহর পথে যে তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা যুদ্ধকালীন নিজেদেরকে যে দুবলাহ গাছের পাতা ও বাবলা ছাড়া খাবারের কিছুই ছিল না, অবস্থায় দেখেছি। কেউ কেউ বকরীর পায়খানার ন্যায় পায়খানা করতেন। যা ছিল সম্পূর্ন শুকনো। অথচ এখন আবার বনূ আসাদ (গোত্র) এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্কার করছে। এখন আমি যেন শংকিত আমার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১০ | 6010 | ٦۰۱۰

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১০। উসমান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিজন মদিনায় আগমনের পর থেকে লাগাতার তাঁর ওফাত পর্যন্ত তিন দিন গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১১ | 6011 | ٦۰۱۱

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১১। ইবনু ইবরাহীম ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার একদিনে যখনই দুবেলা খানা খেয়েছেন একবেলা শুধু খুরমা খেয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১২ | 6012 | ٦۰۱۲

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১২। আহমাদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিছানা চামড়ার তৈরি ছিল এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের আঁশ।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৩ | 6013 | ٦۰۱۳

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১৩। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) … কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর কাছে এমন অবস্থায় যেতাম যে, তাঁর বাবুর্চি (মেহমান আপ্যায়নের জন্য) দণ্ডায়মান। আনাস (রাঃ) বলতেন, আপনারা খান। আমি জানিনা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের সময় পর্যন্ত একটা চাপাতি রুটিও চোখে দেখেছেন কিনা। আর তিনি কখনও একটি ভুনা ছাগল নিজ চোখে দেখেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৪ | 6014 | ٦۰۱٤

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১৪। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মাস অতিবাহিত হয়ে যেত আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার জন্য) আগুন প্রজ্বলিত করতাম না। তখন এক-মাত্র খুরমা আর পানি চলত। অবশ্য তবে যদি যৎসামান্য গোশত আমাদের নিকট এসে যেত।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৫ | 6015 | ٦۰۱۵

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১৫। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ আল ওয়াইসী (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার উরওয়া (রাঃ) কে বললেনঃ বোন পুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রাসুলের গৃহগুলোতে (রান্নার জন্য) আগুন জালানো হতো না। আমি বললাম, আপনাদের জীবন ধারণের কি ছিল? তিনি বললেনঃ কালো দুটি জিনিস। খেজুর আর পানি। অবশ্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসার সাহাবীর অনেকগুলো দুগ্নবতী প্রাণী ছিল। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা দিত। তখন আমরা তা পান করে নিতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৬ | 6016 | ٦۰۱٦

পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০১৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেনঃ ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করুন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৭ | 6017 | ٦۰۱۷

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০১৭। আবদান (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) বর্ননা করেন। আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কি রকম আমল সবচাইতে প্রিয় ছিল? তিনি বললেনঃ নিয়মিত আমল। আমি বললাম, তিনি রাতে কোন সময় উঠতেন? তিনি বললেনঃ যখন তিনি মোরগের ডাক শুনতেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৮ | 6018 | ٦۰۱۸

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০১৮। কুতায়বা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে আমল আমলকারী নিয়মিত করে, সে আমল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সবচাইতে প্রিয় ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৬০১৯ | 6019 | ٦۰۱۹

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০১৯। আদম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দেবে না। তাঁরা বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ তা’আলা আমাকে রহমাত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল কর, ঘনিষ্ঠ হও। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর কাজ কর। মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। আকড়ে ধর মধ্যমপন্থাকে, অবশ্যই সফলকাম হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২০ | 6020 | ٦۰۲۰

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০২০। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ঠিকভাবে ও মধ্যমপন্থায় নেক আমল করতে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের কাউকে তার আমল বেহেশতে নেবে না এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২১ | 6021 | ٦۰۲۱

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০২১। মুহাম্মাদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আল্লাহ তাআলার কাছে সবচাইতে প্রিয় আমল কি? তিনি বললেনঃ যে আমল নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হোক। তিনি আরও বললেনঃ তোমরা সাধ্যমত আমল করে যাও।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২২ | 6022 | ٦۰۲۲

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০২২। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আলকামা (রহঃ) বর্ণনা করেন। আমি মুসলিম-জননী আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল কি রকম ছিল? তিনি কি কোন আমলের জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করতেন? তিনি বললেনঃ না। তার আমল ছিল নিয়মিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তোমাদের কেউ কি সে সক্ষমতার অধিকারী?

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৩ | 6023 | ٦۰۲۳

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০২৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা ঠিক ঠিকভাবে মধ্যম পন্থায় আমল করতে থাক। আর সুসংবাদ নাও। কিন্তু (জেনে রেখো) কারো আমল তাকে জান্নাতে নেবে না। তারা বললেনঃ তবে কি আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ তায়াআলা আমাকে মাগফিরাত ও রহমতে ঢেকে রেখেছেন। তিনি বলেছেনঃ এটিকে আমি ধারণা করছি আবূ নাযর … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আফফান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তোমরা সঠিকভাবে আমল কর আর সুসংবাদ নাও। মুহাজিদ বলেছেন, سَدِيدًا‏‏ وَسَدَادًا অর্থ সত্য।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৪ | 6024 | ٦۰۲٤

পরিচ্ছদঃ ২৭০০. আমলে মধ্যমপন্থা এবং নিয়মিত করা
৬০২৪। ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর মিম্বরে উঠে মসজিদের কিবলার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ যখন আমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম, তখন এ প্রাচীরের সান্মুখে আমাকে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখানো হল। আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ আর কোন দিন দেখিনি। এ শেষ কথাটি তিনি দু’বার বললেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৫ | 6025 | ٦۰۲۵

পরিচ্ছদঃ ২৭০১. ভয়ের সাথে সাথে আশা রাখা। সুফ্ইয়ান (রহ) বলেন, কুরআনের মধ্যে আমার কাছে এই আয়াত থেকে কঠিন আয়াত দ্বিতীয়টি নাই। তাওরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমাদের প্রতিপালকের কাছ হতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে (কুরআন) তোমরা তা বাস্তবায়িত না করা পর্যন্ত তোমরা কোন ভিতের উপর নেই।
৬০২৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তাআলা রহমত সৃষ্টির দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। নিরানব্বইটি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমন্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভ থেকে নিরাশ হবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে শাস্তি সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে বে-পরওয়া হবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৬ | 6026 | ٦۰۲٦

পরিচ্ছদঃ ২৭০২. আল্লাহ তা’আলার নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে সবর করা। (মহান আল্লাহর বাণীঃ) ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত প্রতিদান দেওয়া হবে। উমর (রাঃ) বলেন, আমরা শ্রেষ্ঠ জীবন লাভ করেছিলাম একমাত্র ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমেই।
৬০২৬। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ননা করেন। একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাঁর কাছে যা কিছু ছিল তা শেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু’হাত দিয়ে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে যা কিছু মালামাল থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে নিজেকে মুখাপেক্ষিমুক্ত রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই রাখেন; আর যে ব্যাক্তি ধৈর্য ধারণ করে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে ব্যাক্তি পরনির্ভর হতে চায় না, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবর অপেক্ষা বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কস্মিনকালেও তোমাদেরকে দান করা হবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৭ | 6027 | ٦۰۲۷

পরিচ্ছদঃ ২৭০২. আল্লাহ তা’আলার নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে সবর করা। (মহান আল্লাহর বাণীঃ) ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত প্রতিদান দেওয়া হবে। উমর (রাঃ) বলেন, আমরা শ্রেষ্ঠ জীবন লাভ করেছিলাম একমাত্র ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমেই।
৬০২৭। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … যিয়াদ ইবনু ইলাকাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তাঁর পদযুগল ফূলে যেত। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন:আমি কি অত্যধিক কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৮ | 6028 | ٦۰۲۸

পরিচ্ছদঃ ২৭০৩. (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।
৬০২৮। ইসহাক (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক- যারা ঝাড়ফুঁকের শরণাপন্ন হয় না, কুযাত্রা মানে না এবং নিজেদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০২৯ | 6029 | ٦۰۲۹

পরিচ্ছদঃ ২৭০৪. অনর্থক কথাবার্তা অপছন্দনীয়
৬০২৯। আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) … মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) এর কাতিব ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুয়াবিযা (রাঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) কে লিখলেন যে, আপনি আমার কাছে একটা হাদীস লিখে পাঠান, যা আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) তাঁর কাছে লিখে পাঠালেন, আমি নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ফিরার সময় বলতে শুনেছিঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং হামদ তাঁরই। তিনি সবার উপর শক্তিমান।

আর তিনি নিষেধ করতেন অনর্থক কথাবার্তা, অধিক সাওয়াল, মালের অপচয়, উচিত বস্তুকে দেওয়া। অনুচিতকে চাওয়া, মাতাপিতার অবাধ্যতা এবং কন্যাদেরকে জীবিত কবর করা থেকে। হুশায়ম (রহঃ) … আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ওয়াররাদ কে আল মুগীরা … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩০ | 6030 | ٦۰۳۰

পরিচ্ছদঃ ২৭০৫. যবান সাবধান রাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণীঃ যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে।
৬০৩০। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহবা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর হিফাযত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩১ | 6031 | ٦۰۳۱

পরিচ্ছদঃ ২৭০৫. যবান সাবধান রাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণীঃ যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে।
৬০৩১। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নয়তো নীরব থাকে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩২ | 6032 | ٦۰۳۲

পরিচ্ছদঃ ২৭০৫. যবান সাবধান রাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণীঃ যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে।
৬০৩২। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … আবূ শুরাইয়া আল খুযায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার কান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষন করেছে, মেহমানদারী তিন দিন, সৌজন্যসহ। জিজ্ঞাসা করা হলো, সৌজন্য কি? তিনি বললেনঃ এক দিন ও এক রাত (বিশেষ আতিথেয়তা)। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৩ | 6033 | ٦۰۳۳

পরিচ্ছদঃ ২৭০৫. যবান সাবধান রাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণীঃ যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে।
৬০৩৩। ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা এমন কথা বলে যার পরিনাম সে চিন্তা করে না অথচ এ কথার কারণে সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব মাশরিক-এর দূরত্বের চাইতে অধিক।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৪ | 6034 | ٦۰۳٤

পরিচ্ছদঃ ২৭০৫. যবান সাবধান রাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণীঃ যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে।
৬০৩৪। আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা উচ্চারন করে অথচ সে কথার গুরুত্ব সম্পর্কে চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা অনেক গুন বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন কথা বলে ফেলে যার পরিনতি সম্পর্কে সে সচেতন নয়, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে পতিত হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৫ | 6035 | ٦۰۳۵

পরিচ্ছদঃ ২৭০৬. আল্লাহ তা’আলার ভয়ে কাঁদা
৬০৩৫। মুহাম্মাদ ইরন বাশশার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা’আলা ছায়া দেবেন। এক জাতীয় ব্যাক্তি হবে আল্লাহর যিকর করে চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত করল।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৬ | 6036 | ٦۰۳٦

পরিচ্ছদঃ ২৭০৭. আল্লাহর ভয়
৬০৩৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক ব্যাক্তি ছিল, যে তার আমল সম্পর্কে তুচ্ছ ধারনা পোষণ করত। সে তার পরিবারের লোকদেরকে বলল, যখন আমি মারা যাবো, তখন তোমরা আমাকে নিয়ে (জ্বালিয়ে দিবে) অতঃপর প্রচণ্ড গরমের দিনে আমার ভস্মগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। তার পরিবারের লোকেরা সে অনুযায়ী কাজ করলো। অতঃপর আল্লাহ তায়াআলা সেই ভস্ম একত্রিত করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যা করলে, তা কেন করলে, সে বললো, একমাত্র আপনার ভীতিই আমাকে এটিতে বাধ্য করেছে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৭ | 6037 | ٦۰۳۷

পরিচ্ছদঃ ২৭০৭. আল্লাহর ভয়
৬০৩৭। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব অথবা তোমাদের পূর্ব যুগের এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে ধন-সস্পদ ও সন্তানাদি দান করেছিলেন। যখন সে মৃত্যুর সম্মুখীন হল তখন সে তার সন্তানদেরকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল, উত্তম। সে বললো, যে আল্লাহর কাছে কোন সম্পদ সঞ্চয় রাখেনি, সে আল্লাহর কাছে হাযির হলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন। তোমরা লক্ষ্য রাখবে, আমি মারা গেলে আমাকে জ্বালিয়ে দেবে। আমি যখন কয়লা হয়ে যাব তাকে ছাই ভস্ম করে ফেলবে। অতঃপর যখন প্রবল বাতাস বইবে, তখন তোমরা তা তাতে উড়িয়ে দেবে। এভাবে সে তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিল।

রাবী বলেনঃ আমার প্রতিপালকের কসম! তারা যথাযথ তাই করল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বললেন, অস্তিত্বে এসে যাও। হঠাৎ এক ব্যাক্তিরুপে দণ্ডায়মান হল। তখন তিনি বললেনঃ হে আমার বান্দা! তুমি এমনটি কেন করলে? সে বললো তা একমাত্র আপনার ভয়ে। তখন তিনি এর প্রতিদানে তাকে ক্ষমা করে দিলেন আপনার ভীতি অথবা আপনার থেকে সরে থাকার কারণে।

আমি আবূ উসমানকে বর্ণনা করেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি সালমানকে শুনেছি, তিনি এতদ্ব্যতীত অতিরিক্ত করেছেন … আমার ভম্মগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। অথবা তিনি যেমনটি বর্ণনা করেছেন। মু’আয (রহঃ) … উকবা (রহঃ) বলেনঃ আমি আবূ সাঈদ (রাঃ) কে শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৮ | 6038 | ٦۰۳۸

পরিচ্ছদঃ ২৭০৮. সব গুনাহ থেকে বিরত থাকা
৬০৩৮। মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) … আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও আমাকে যা দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হলো এমন ব্যাক্তির মত, যে তার কওমের কাছে এসে বললো, আমি স্ব-চক্ষে শত্রু সেনাদলকে দেখেছি আর আমি স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং তোমরা সত্বর আত্মরক্ষার ব্যবস্থা কর। অতঃপর একদল তার কথায় সাড়া দিয়ে শেষ রজনীতে নিরাপদ গন্তব্যে পৌছে বেঁচে গেল। এদিকে আরেক দল তাকে মিথ্যারোপ করে, যদ্দরুন তাদেরকে ভোর বেলায় শত্রুসেনা এসে সমূলে নিপাত করে দিল।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৩৯ | 6039 | ٦۰۳۹

পরিচ্ছদঃ ২৭০৮. সব গুনাহ থেকে বিরত থাকা
৬০৩৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের দৃষ্টান্ত এমন ব্যাক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চতূর্দিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রাণী যেগুলো আগুনে পুড়ে, তারা তাতে পড়তে লাগলো। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য টানতে লাগলো। কিন্তু তারা আগুনে পুড়ে মরলো। তদ্রুপ আমি তোমাদের কোমরে ধরে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করি অথচ তারা তাতেই প্রবেশ করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪০ | 6040 | ٦۰٤۰

পরিচ্ছদঃ ২৭০৮. সব গুনাহ থেকে বিরত থাকা
৬০৪০। আবূ নুয়াঈম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমান (প্রকৃত) সেই ব্যাক্তি, যার যবান ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির (প্রকৃত) সে, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪১ | 6041 | ٦۰٤۱

পরিচ্ছদঃ ২৭০৯. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে
৬০৪১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তবে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম আর কাঁদতে বেশি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪২ | 6042 | ٦۰٤۲

পরিচ্ছদঃ ২৭০৯. নবী (সাঃ) এর বাণীঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে
৬০৪২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তবে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম আর কাঁদতে বেশি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৩ | 6043 | ٦۰٤۳

পরিচ্ছদঃ ২৭১০. প্রবৃত্তি দ্বারা জাহান্নামকে বেষ্টন করা হয়েছে
৬০৪৩। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম প্রবৃত্তি দিয়ে বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৪ | 6044 | ٦۰٤٤

পরিচ্ছদঃ ২৭১১. জান্নাত তোমাদের কারো জুতার ফিতার চেয়েও বেশী নিকটবর্তী আর জাহান্নামও তদ্রূপ
৬০৪৪। মূসা ইবনু মাসউদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের কারো জুতার ফিতার চাইতেও বেশি কাছাকাছি আর জাহান্নামও তদ্রুপ।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৫ | 6045 | ٦۰٤۵

পরিচ্ছদঃ ২৭১১. জান্নাত তোমাদের কারো জুতার ফিতার চেয়েও বেশী নিকটবর্তী আর জাহান্নামও তদ্রূপ
৬০৪৫। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাধিক সত্য কবিতা যা জনৈক কবি বলেছেনঃ তোমরা জেনে রেখো আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই অনর্থক।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৬ | 6046 | ٦۰٤٦

পরিচ্ছদঃ ২৭১২. মানুষ যেন নিজের চেয়ে নিন্মস্তর ব্যক্তির দিকে তাকায় আর নিজের চেয়ে উচ্চস্তর ব্যক্তির দিকে যেন না তাকায়
৬০৪৬। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো দৃষ্টি যদি এমন ব্যাক্তির উপর নিপতিত হয়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে বেশি মর্যাদা দেয়া হয়েছে তবে সে যেন এমন ব্যাক্তির দিকে তাকায়, যে তার চেয়ে হীন অবস্থায় রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৭ | 6047 | ٦۰٤۷

পরিচ্ছদঃ ২৭১৩. যে ব্যক্তি ইচ্ছা করল ভাল কাজের কিংবা মন্দ কাজের
৬০৪৭। আবূ মা’মার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাদীসে কুদসী স্বরূপ) তার রব থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা নেকী ও বদীসমূহ চিহ্নিত করেছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন সুতরাং যে ব্যাক্তি কোন সং কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তা’আলা তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর সে ইচ্ছা করল ভাল কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল তবে আল্লাহ তা’আলা তার কাছে তার জন্য দশ গুন থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি সাওয়াব লিখে দেন। আর যে ব্যাক্তি কোন অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য পূর্ন নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যদি সে ওই অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তবে তার জন্য আল্লাহ তাঁআলা মাত্র একটা পাপ লিখে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৮ | 6048 | ٦۰٤۸

পরিচ্ছদঃ ২৭১৪. সগীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
৬০৪৮। আবুল ওয়ালীদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) বলেনঃ তোমরা এমন সব কাজ করে থাক, যা তোমাদের চোখে চুল থেকেও সূক্ষ্ম দেখায়। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যমানায় আমরা এগুলোকে ধবংসাত্মক মনে করতাম। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন অর্থাৎ الْمُهْلِكَاتِ “ধ্বংসাত্মক”।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৪৯ | 6049 | ٦۰٤۹

পরিচ্ছদঃ ২৭১৫. আমল পরিনামের উপর নির্ভরশীল, আর পরিণামের ব্যাপারে ভীত থাকা
৬০৪৯। আলী ইবনু আইয়্যাস (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের সাথে যুদ্ধরত এক ব্যাক্তির দিকে তাকালেন। সে ব্যাক্তি অন্যান্য লোকের চাইতে ধনী ছিল। তিনি বললেনঃ কেউ যদি জাহান্নামী লোক দেখতে চায়, সে যেন এই লোকটিকে দেখে। (এ কথা শুনে) এক ব্যাক্তি তার পেছনে পেছনে যেতে লাগল। সে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে আহত হয়ে গেল। সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল, সে তারই তরবারীর অগ্রভাগ বুকে লাগিয়ে উপুড় হয়ে সজোরে এমনভাবে চাপ দিল যে, তলোয়ারটি তার বক্ষস্থল ভেদ করে পার্শ্বদেশ অতিক্রম করে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা দেখে লোকেরা একে জান্নাতী লোকের কাজ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে সে জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত। আর কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা মানুষের চোখে জাহান্নামীদের কাজ বলে মনে হয় অথচ সে জান্নাতী লোকদের অন্তর্ভূক্ত। নিশ্চয়ই মানুষের যাবতীয় আমল পরিণামের সাথে নির্ভরশীল।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫০ | 6050 | ٦۰۵۰

পরিচ্ছদঃ ২৭১৬. অসৎ লোকের সাথে মেলামেশা থেকে নির্জনে থাকা শান্তিদায়ক
৬০৫০। আবূল ইয়ামান ও মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন ব্যাক্তি সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ সে ব্যাক্তি যে নিজের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আর সে ব্যাক্তি যে পর্বতের কোন গুহায় তার রবের ইবাদত করতে থাকে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে রেহাই দেয়। যুবায়দী সুলায়মান (রহঃ) ও নোমান (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে শুআইব (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। মামার (রহঃ) … আবূ সায়ীদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। ইউনুস (রহঃ), ইবনু মুসাফির (রহঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) জনৈক সাহাবী কতৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অর্থাৎ আবূল ইয়ামানের হাদীসের ন্যায় “কোন ব্যাক্তি সবচাইতে উত্তম বর্ণনা করেছেন।”

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫১ | 6051 | ٦۰۵۱

পরিচ্ছদঃ ২৭১৬. অসৎ লোকের সাথে মেলামেশা থেকে নির্জনে থাকা শান্তিদায়ক
৬০৫১। আবূ নুয়াঈম (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে যখন মুসলমানের উত্তম সম্পদ হবে বকরির পাল। সে তা নিয়ে পাহাড়ী উপত্যকা ও বারি ভূমির অনুসরণ করবে, তার দ্বীনকে নিয়ে ফিতনা থেকে দুরে থাকার উদ্দেশ্যে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫২ | 6052 | ٦۰۵۲

পরিচ্ছদঃ ২৭১৬. অসৎ লোকের সাথে মেলামেশা থেকে নির্জনে থাকা শান্তিদায়ক
৬০৫২। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আমানত বিনষ্ট হয়ে যাবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। সে বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ আমানত কেমন করে নষ্ট হযে যাবে, তিনি বললেনঃ যখন অযোগ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে, তখনই তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৩ | 6053 | ٦۰۵۳

পরিচ্ছদঃ ২৭১৭. আমানতদারী উঠে যাওয়া
৬০৫৩। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … হুযায়ফা (রাঃ) বর্ননা করেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি তো আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তর্মুলে অধোগামী হয়। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করে। এরপর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জ্ঞান অর্জন করে। আবার বর্ণনা করেছেন আমানত তুলে নেয়া সম্পর্কে, যে ব্যাক্তিটি (ঈমানদার) এক পর্যায়ে ঘূমালে পর, তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেয়া হবে, তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় ঘূমাবে। তখন আবার উঠিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর তার চিহ্ন ফোস্কার মত অবশিষ্ট থাকবে। তোমার পায়ের উপর গড়িয়ে পড়া অঙ্গার সৃষ্ট চিহ্ন, যেটিকে তুমি ফোলা মনে করবে, অথচ তার মধ্যে আদো কিছু নেই। মানুষ কারবার করবে বটে, কেউ আমানত আদায় করবে না। তারপর লোকেরা বলাবলি করবে যে, অমূক বংশে একজন আমানতদার লোক রয়েছে। সে ব্যাক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা হবে যে, সে কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বাহাদুর? অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও থাকবে না। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার উপর এমন এক যামানা অতিবাহিত হয়েছে যে, আমি তোমাদের কারো সাথে বেচাকেনা করলাম, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করতাম না। কারণ সে মুসলমান হলে ইসলামই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। আর সে নাসরানী হলে তার শাসকই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। অথচ বর্তমানে আমি অমুক অমুককে ছাড়া বেচাকেনা করি না।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৪ | 6054 | ٦۰۵٤

পরিচ্ছদঃ ২৭১৭. আমানতদারী উঠে যাওয়া
৬০৫৪। আবুল ইয়ামান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেনঃ নিশ্চয়ই মানুষ তো উটের ন্যায়, যাদের মধ্য থেকে সাওয়ারীর উপযোগী একটি পাওয়া তোমার পক্ষে দুষ্কর।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৫ | 6055 | ٦۰۵۵

পরিচ্ছদঃ ২৭১৮. লোকদেখানো ও শোনানো ইবাদত
৬০৫৫। মুসাদ্দাদ ও আবূ নুআয়ম (রহঃ) … সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জুনদুবকে বলতে শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ব্যতীত আমি অন্য কাউকে “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এরুপ বলতে শুনিনি। আমি তার কাছে গেলাম এবং তাকে বলতে শুনলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লোক শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে লোক শোনানো দিবেন। আর যে ব্যাক্তি লোক-দেখানো ইবাদত করবে আল্লাহ এর বিনিময়ে “লোক দেখানো দিবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৬ | 6056 | ٦۰۵٦

পরিচ্ছদঃ ২৭১৯. যে ব্যক্তি সাধনা করবে প্রবৃত্তির সাথে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে আল্লাহর আনুগত্যের জন্য নিজের নফসের সাথে
৬০৫৬। হুদবাহ ইবনু খালিদ (রহঃ) … মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহযাত্রী ছিলাম। অথচ আমার ও তার মাঝখানে ব্যবধান ছিল শুধু সাওয়ারীর গদির কাষ্ঠ-খণ্ড। তিনি বললেনঃ হে মুয়ায! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ ওয়া সাদাইকা! তারপর আরও কিছুক্ষণ চলার পরে আবার বললেনঃ হে মুয়ায! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ ওয়া সাদাইকা! তারপর আরও কিছুক্ষন চলার পর আবার বললেনঃ হে মুয়ায ইবনু জাবাল! আমিও আবার বললাম, লাব্বাইকা ইযা রাসূলাল্লাহ ওয়া সাদাইকা। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দার উপর আল্লাহর হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে এই যে, সে তারই ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। এরপর আরও কিছুক্ষন পথ চলার পর আবার ডাকলেন, হে মুয়ায ইবনু জাবাল! আমি বললাম, লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ যদি বান্দা তা করে তখন আল্লাহর কাছে বান্দার প্রাপ্য কি হবে, তা কি তুমি জানো? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ তখন বান্দার হক আল্লাহর কাছে হল তাদেরকে আযাব না দেওয়া।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৭ | 6057 | ٦۰۵۷

পরিচ্ছদঃ ২৭২০. তাওয়াজু (বিনয়)
৬০৫৭। মালিক ইবনু ইসমাঈল ও মুহাম্মদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘আযবা’ নাম্নী একটি উটনী ছিল। তাকে অতিক্রম করে যাওয়া যেত না। একবার একজন বেদুঈন তার একটি উটে সাওয়ার হয়ে আসলে সেটি তার আগে চলে গেল। মুসলিমদের কাছে তা কঠোর মনে হল। তারা বলল যে, আযবা কে তো অতিক্রম করে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার বিধান হলো, দুনিয়ার কোন জিনিসকে উত্থিত করা হলে তাকে পতিতও করা হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৮ | 6058 | ٦۰۵۸

পরিচ্ছদঃ ২৭২০. তাওয়াজু (বিনয়)
৬০৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু উসমান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শক্রতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন– করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি-না যতটা দ্বিধা সংকোচ মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৫৯ | 6059 | ٦۰۵۹

পরিচ্ছদঃ ২৭২১. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ “আমাকে পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।” (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায় বরং তা অপেক্ষাও সত্ত্বর। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (১৬ঃ ৭৭)
৬০৫৯। সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) … সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ রকম। এ বলে তিনি আঙ্গুল দু’টিকে প্রসারিত করে ইশারা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬০ | 6060 | ٦۰٦۰

পরিচ্ছদঃ ২৭২১. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ “আমাকে পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।” (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায় বরং তা অপেক্ষাও সত্ত্বর। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (১৬ঃ ৭৭)
৬০৬০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ রকম।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬১ | 6061 | ٦۰٦۱

পরিচ্ছদঃ ২৭২১. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ “আমাকে পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।” (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায় বরং তা অপেক্ষাও সত্ত্বর। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (১৬ঃ ৭৭)
৬০৬১। ইয়াহইয়া ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ও কিয়ামতের আবির্ভাব এ রকম। অর্থাৎ এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬২ | 6062 | ٦۰٦۲

পরিচ্ছদঃ ২৭২১. নাবী (সাঃ) এর বাণীঃ “আমাকে পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।” (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায় বরং তা অপেক্ষাও সত্ত্বর। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (১৬ঃ ৭৭)
৬০৬২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে, আর লোকজন তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন সকলেই ঈমান নিয়ে আসবে। তখনকার সম্পর্কেই (আল্লাহ তালার বানী) “সেদিন তার ঈমান কাজে আসবে না, ইতিপূর্বে যে ব্যাক্তি ঈমান আনেনি, কিংবা যে ব্যাক্তি-ঈমানের মাধ্যমে কল্যান অর্জন করেনি। কিয়ামত সংঘটিত হবে এ অবস্থায় যে, দু’ব্যাক্তি (বেচা কেনার) জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু তারা বেচাকেনার সময় পাবে না। এমন কি তা ভাজ করারও অবকাশ পাবে না। আর কিয়ামত এমন অবস্থায় অবশ্যই কায়েম হবে যে, কোন ব্যাক্তি তার উটনীর দুধ দোহন করে ফিরে আসার পর সে তা পান করার অবকাশ পাবে না। আর কিয়ামত এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যাক্তি (তার উটকে পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে) চৌবাচ্চা তৈরি করবে। কিন্তু সে এ থেকে পানি পান করানোর সুযোগ পাবে না। আর কিযামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, কোন ব্যাক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোকমা উঠাবে, কিন্তু সে তা খেতে পারবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৩ | 6063 | ٦۰٦۳

পরিচ্ছদঃ ২৭২২. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন
৬০৬৩। হাজ্জাজ (রহঃ) … উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহব সাক্ষাত লাভ করা ভালবাসে, আল্লাহ তা’আালাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে না, আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করেন না। তখন আয়িশা (রাঃ) অথবা তাঁর অন্য কোন সহধর্মিণী বললেনঃ আমরাও তো মৃত্যুকে পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ বিষয়টা এরূপ নয়। আসলে ব্যাপারটা হল এই যে, যখন মুমিন বান্দার মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার সম্মানিত হওয়ার সুসংবাদ শোনানো হয়। তখন তার সামনের সুসংবাদের চাইতে তার নিকট বেশি পছন্দনীয় কিছু থাকে না। সুতরাং সে তখন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করাকেই পছন্দ করে, আর আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর কাফিরের যখন অন্তিমকাল উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার সামনের আযাবের সংবাদের চাইতে তার কাছে অধিক অপছন্দনীয় কিছুই থাকে না। সুতরাং সে (এ সময়) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা অপছন্দ করে, আর আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৪ | 6064 | ٦۰٦٤

পরিচ্ছদঃ ২৭২২. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন
৬০৬৪। মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) … আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর মূলাকাতকে ভালবাসে, আল্লাহ তা’আলাও তার মুলাকাতকে ভালবাসেন। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর মুলাকাতকে ভালবাসে না, আল্লাহ তা’আলাও তার মুলাকাত ভালবাসেন না।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৫ | 6065 | ٦۰٦۵

পরিচ্ছদঃ ২৭২২. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন
৬০৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থাবস্থায় প্রায়ই এ কথা বলতেন যে, কোন নাবীরই (জান) কবয করা হয় না, যতক্ষন পর্যন্ত তাকে তাঁর জান্নাতের ঠিকানা না দেখানো হয়, আর তাকে (জীবন অথবা মৃত্যুর) অধিকার না দেওয়া হয়। সুতরাং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু কাল ঘনিয়ে এলো, এ সময় তার মাথা আমার রানের উপর ছিল, তখন কিছুক্ষণের জন্য তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। বেহুশ থেকে সুস্থ হওয়ার পর তিনি তাঁর চোখ উপরের দিকে তুলে ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “আল্লাহুম্মার রাফীকালআলা” (অর্থাৎ ইয়া আল্লাহ! আমি আমার পরম বন্ধুর সান্নিধ্যই পছন্দ করলাম)। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, তখনই আমি (মনে মনে) বললাম যে, তিনি এখন আর আমাদেরকে পছন্দ করবেন না। আর আমি বুঝতে পারলাম যে, এটাই হচ্ছে সেই হাদীসের মর্ম, যা তিনি ইতিপূর্বে প্রায়ই বর্ণনা করতেন এবং এটাই ছিল তার শেষ কথা, যা তিনি বলেছেনঃ اللَّهُمَّ الرَّفِيقَ الأَعْلَى আমি আমার পরম বন্ধুর সান্নিধ্যই পছন্দ করলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৬ | 6066 | ٦۰٦٦

পরিচ্ছদঃ ২৭২৩. মৃত্যুযন্ত্রনা
৬০৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ ইবনু মায়মুন (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে চামড়ার অথবা কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল (উমর সন্দেহ করতেন) তিনি তাঁর উভয় হাত ঐ পানির মধ্যে দাখিল করতেন। এরপর নিজ মুখমণ্ডলে উভয় হাত দ্বারা মাসেহ করতেন এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতেন। আরও বলতেনঃ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা রয়েছে। এরপর দু’হাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন। ইয়া আল্লাহ! আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর নিকটে পৌছিয়ে দিন। এ সময়ই তার (রূহ) কবয করা হল। আর হাত দু’টি ঢলে পড়ল।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৭ | 6067 | ٦۰٦۷

পরিচ্ছদঃ ২৭২৩. মৃত্যুযন্ত্রনা
৬০৬৭। সাদাকা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিছু সংখ্যক কঠিন মেজাজের গ্রাম্য লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করতো কিয়ামত কবে হবে? তখন তিনি তাদের সর্ব-কনিষ্ঠ ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে বলতেনঃ যদি এ ব্যাক্তি কিছু দিন বেঁচে থাকে তবে তার বুড়ো হওয়ার আগেই তোমাদের কিয়ামত এসে যাবে। হিশাম বলেন যে, এ কিয়ামতের অর্থ হলো, তাদের মৃত্যু।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৮ | 6068 | ٦۰٦۸

পরিচ্ছদঃ ২৭২৩. মৃত্যুযন্ত্রনা
৬০৬৮। ইসমাঈল (রহঃ) … কাতাদা ইবনু রিবঈ আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হল। তিনি তা দেখে বললেনঃ সে শান্তি প্রাপ্ত অথবা তার থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ‘মুস্তারিহ’ ও ‘মুস্তারাহ মিনহু’ এর অর্থ কি? তিনি বললেনঃ মুমিন বান্দা মরে যাওয়ার পর দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতের দিকে পৌছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মরে যাওয়ার পর তার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, গাছ-পেলা ও প্রানীকূল শান্তিপ্রাপ্ত হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৬০৬৯ | 6069 | ٦۰٦۹

পরিচ্ছদঃ ২৭২৩. মৃত্যুযন্ত্রনা
৬০৬৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যাক্তি হয়ত মুস্তারীহ (নিজে শান্তিপ্রাপ্ত) হবে অথবা মুস্তারাহ মিনহু (লোকজন) তার থেকে শান্তি লাভ করবে। মুমিন (দুনিয়ার ফিতনা যাতনা থেকে) শান্তি লাভ করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *