সাফল্য একটি ভ্রমণ
সাফল্য কি? সাফল্য কি একটি লক্ষ্য বা গন্তব্যস্থান?
ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে আপনি বরিশাল যাবেন। বরিশাল আপনার গন্তব্যস্থান। বরিশালে পৌঁছুলেই আপনার যাত্রা শেষ। কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা তাহলে? নির্দিষ্ট একটা জায়গা বা লক্ষ্যের নাম গন্তব্যস্থান। সাফল্যকে যদি গন্তব্যস্থান বলে মনে করি, তাহলে নির্দিষ্ট জায়গা বা লক্ষ্যে পৌঁছেই ভাবতে পারি, আমি সফল হয়েছি। কিন্তু আসলে কি তাই? কোনো জিনিস অর্জনের মধ্যেই কি সাফল্য সীমিত বা নিহিত?
আসুন, বিশ্লেষণ করা যাক।
ধরুন, আপনি সুনাম চান। সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দিয়ে, বিপদগ্রস্ত লোককে সাহায্য করে, মানুষকে সৎ পরামর্শ দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুনাম অর্জনও করলেন। যতোটুকু সুনাম অর্জন করলেন, তাতেই কি আপনি সন্তুষ্ট, তাই কি আপনার জন্যে যথেষ্ট? না, তা কখনো হতে পারে না। আপনি আরো সুনাম চাইবেন, আরো সম্মান আশা করবেন। যদি না চান, না আশা করেন-কি হবে? আপনার সুনাম অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে, শুধু তাই নয়, যে সুনামটুকু। খাটাখাটনি এবং ত্যাগ স্বীকার করে অর্জন করেছেন তাও নষ্ট হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে ক্রমশ।
অর্জিত সুনামটুকু ধরে রাখার উপায় কি? উপায় এগিয়ে যাওয়া। যে পথে চলেছেন সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে, অর্থাৎ আরো সুনাম অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। শুধুমাত্র এই চেষ্টার মাধ্যমেই আপনি পূর্ব-অর্জিত সুনাম ধরে রাখতে পারবেন এবং আরো বেশি সুনাম অর্জন করতে পারবেন।
বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা শিখলাম: সাফল্য কোনো নির্দিষ্ট জিনিস পাওয়ার মধ্যে বা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে পৌঁছার মধ্যে সীমিত বা নিহিত নয়। লক্ষ্য বা গন্তব্যস্থান একটা নির্দিষ্ট বিন্দু, সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু সাফল্যের সীমা নেই, সাফল্যের ক্ষেত্র সীমারেখাহীন।
গন্তব্যস্থান থাকলেই সেখানে পৌঁছুবার প্রশ্ন উঠছে। কোথাও পৌঁছুতে হলে কি করতে হয় আপনাকে? হাঁটতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। সাফল্যকে গন্তব্যস্থান মনে করলে রাস্তাটা দুৰ্গম, চড়াই উতরাইবহুল, কণ্টকাকীর্ণ–এরকম মনে হবে। রাস্তাটা দীর্ঘ, এবড়োখেবড়ো, বিপদ-সঙ্কুল হবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর ব্যাপারটা নিরস, কষ্টকর একটা কাজ। কিন্তু সাফল্যকে গন্তব্যস্থান মনে না করে যদি মনে করা হয় ভ্রমণ? কি তারতম্য ঘটছে? একটা। উদাহরণ ব্যবহার করে ব্যাপারটাকে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
ধরুন, কোচযোগে চট্টগ্রাম, ওখান থেকে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে যাবেন। আপনার আনন্দ কি শুরু হবে রাঙ্গামাটিতে পৌঁছুবার পর? মোটেই না। যাবেন এই সিদ্ধান্ত নেবার পর থেকেই আপনি পুলক অনুভব করবেন। অগ্রিম টিকেট কিনতে আপনি বি. আর. টি. সি-র স্টেশনে যাবেন। এই যাওয়াতেও আনন্দ। যাত্রার খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সাথে আলাপ করার সময় অনুভব করবেন রোমাঞ্চ। ব্যাগ-ব্যাগেজ ঠিকঠাক করার সময়ও শিহরণ অনুভব। করবেন। কাপড়-চোপড়, নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিস একটি একটি করে ব্যাগে ভরবেন আর কল্পনায় দেখবেন চট্টগ্রামে পৌঁছে এই শার্টটা গায়ে দিচ্ছেন বা ওই শাড়িটা পরছেন, রাঙ্গামাটি পৌঁছে অমুক জায়গায় যাবেন ওই জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে–এসবই আনন্দ জোগাবে আপনাকে। যাত্রার আগে বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ীদের সাথে দেখা করে বিদায় নেবেন। আপনার চারপাশে একটা হাসিখুশির পরিবেশ পাবেন আপনি। হাসি-ঠাট্টা হবে, কারণে অকারণে হোঃ-হোঃ হাসবেন আপনি। কোচ রওনা হবে। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে পরিচয় হবে, গল্পগুজব জমে উঠবে তাদের সাথে। পথের দু’পাশের দৃশ্যাবলী দেখে বৈচিত্র্যের স্বাদ পাবেন। উপভোগ করবেন শ্যামল বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত ধানখেতের হিল্লোল। নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রামে পৌঁছুলেন, তারপর ওখান থেকে রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটিতে পৌঁছুবার সাথে সাথে কি আপনার আনন্দ শেষ হয়ে গেল? কক্ষনো না! মাত্র তো পৌঁছুলেন, থাকবেন বেশ ক’টা দিন। যে-কদিন থাকবেন, আনন্দ আর আনন্দ আর আনন্দ করবেন। এখানে বেড়াবেন, ওখানে বেড়াবেন। কতো কি দেখবেন। এক সময় বেড়ানো শেষ হবে। বেড়ানোর শেষ মানে কি আনন্দেরও শেষ? না। ফেরার সময়ও আনন্দ কম নয়। ফিরে এলেন, কিন্তু স্মৃতিটা কি রইলো না? স্মৃতি রোমন্থন করে এরপরও কি আপনি আনন্দ পাবেন না?
কেন এতো আনন্দ হয়? কারণ, এটা ভ্রমণ। ভ্রমণে একঘেয়েমি নেই। সাফল্যও একটি ভ্রমণ। যে-মুহূর্ত থেকে আপনি সাফল্য লাভ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে-মুহূর্ত থেকে শুরু হলো আপনার ভ্রমণ। এবং ভ্রমণ মানেই শুরু থেকে আনন্দ, রোমাঞ্চ, পুলক এবং শিহরণ।
ভ্রমণে চলুন। আনন্দের ছোঁয়া পাচ্ছেন না প্রস্তাবটা পাওয়া মাত্র? ভ্রমণ শরীর ও মনের জন্যে একটা টনিক। ভ্রমণে আছে নতুন নতুন জিনিস দেখার, শেখার, অর্জন করার অনির্বচনীয় আনন্দ। আছে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। আছে অচেনাকে। চেনার, অজানাকে জানার সুযোগ।
.
বেঁচে থাকার অপর নাম সৃষ্টি
করা সৃষ্টি উৎপাদনশীল। এবং সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের ভিত্তিমূল। মানুষ যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টি বা উৎপাদনমূলক কাজে লেগে না থাকে, প্রকৃতির আইন কানুনের সাথে তার বিরোধ লেগে যাবে। টিকে থাকাই হয়ে পড়বে দুষ্কর।
শুধুমাত্র সাফল্য অর্জনে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। কোথাও পৌঁছুতে চান খেটেখুটে, গলদঘর্ম হয়ে, চোখকানু বুজে গন্তব্যস্থানের দিকে ছুটলেন, অন্য কোনো দিকে খেয়াল রাখলেন না, পৌঁছানোটাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য, এবং শেষ পর্যন্ত পৌঁছুলেন সেখানে-তারপর? পিছন ফিরে তাকান একবার। দীর্ঘ, দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, কিন্তু চিহ্ন কি রেখে এসেছেন কিছু? কিংবা, সাথে করে কি এনেছেন কিছু যা নিজের তৈরি? আপনার থলেতে কিছু সংগ্রহ করেছেন কি? পথে একটি গাছের চারাও কি পুঁতে আসেননি? এতোদিন ধরে এতো পরিশ্রম করলেন, কিছুই কি উৎপাদন করেননি?
সব প্রশ্নের উত্তর যদি না-সূচক হয়, আপনার সাফল্য লাভে আনন্দ কোথায়?
আসলে সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে হবে। তাতে আনন্দ পাবেন প্রচুর। সৃষ্টিশীল হোন, এগিয়ে যেতে একঘেয়েমির শিকার হতে হবে না। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে উল্লসিত হবেন আপনি শুরু থেকেই।
.
বিশেষ একটি অনুরোধ
অনুরোধ করছিঃ এই বইটি যে বিশেষ ভাবে আপনার জন্যে লেখা হয়েছে, এই কথাটি মনে গেঁথে নিন। বিশেষ করে আপনার জন্যেই লিখেছি এই বই। এর প্রতিটি পরিচ্ছেদ, প্রতিটি প্যারা, সবগুলো বাক্য এবং প্রত্যেকটি শব্দ আপনার উদ্দেশ্যে রচিত। আর কেউ এই বই পড়ছে কি না পড়ছে, দেখার দরকার নেই আপনার। তাদের জন্যে লেখা হয়নি এই বই। আপনার জানা দরকার, এ বইটি লেখা হয়েছে শুধুমাত্র আপনার জন্যে। এ আপনি এবং আমি, আমরা মাত্র দু’জন-কাছেপিঠে আর কেউ নেই। আমি আপনাকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য লাভের সহজতম উপায় জানিয়ে দিচ্ছি। আপনি শিখে নিচ্ছেন।
এবার, বিশেষ একটি অনুরোধ করবো। যে-সব উপায় আপনাকে জানাবো সেগুলো যদি গুরুত্বের সাথে কাজে লাগাতে না চান, দয়া করে এরপর আর একটি লাইনও পড়বেন না। আমি প্রতিশ্রুতি চাই, এই ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে আপনি প্রাচুর্যের রাজ্যে প্রবেশ করবেন। তা নইলে ব্যর্থ হয়ে যাবে এ বই রচনার উদ্দেশ্য।
.
আমি পারবো বনাম আমি করবো
সাফল্য এবং ব্যর্থতার মধ্যে ফারাকটা কোথায়? ফারাক মনোভাবের। কেউ ভাবে, আমি পারবো না। সে ব্যর্থ। সে কেন ব্যর্থ? কারণ, সে চেষ্টা করে না, চেষ্টা করার আগেই জানিয়ে দেয়, সে পারবে না। যে চেষ্টা করে না তার দ্বারা পারা সম্ভব নয় সত্যি কথা।
আবার যে ভাবে, আমি পারবো–সে পারে। সে কেন পারে? কারণ, সে চেষ্টা করে। চেষ্টা করলে পারা যায়। মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। এটাও একটা। প্রমাণিত সত্য। ই চেষ্টা করলে সব পারা যায়। আপনার দ্বারা সম্ভব নয় এমন কোনো কাজ নেই।
অসম্ভব কাজ কোনটিকে বলবেন আপনি? ধরুন, আজ আপনার বয়স চল্লিশের। উপর। লেখাপড়া তেমন শেখেননি, সুযোগ-সুবিধে পাননি বলে। এখন আপনার ইচ্ছা, লেখাপড়া শিখবেন। এই বয়সে লেখাপড়া শিখতে যাওয়া বিড়ম্বনা, স্বীকার– করি। অনেক বাধা পাবেন, তাও সত্যি। কেউ কেউ হাসবে, ব্যঙ্গ করে লজ্জা দেবার চেষ্টা করবে আপনাকে। আপনার স্ত্রীই হয়তো বলবেন, বুড়ো বয়সে ভিমরতিতে ধরেছে। বইপত্রের দোকানে ঘনঘন ছুটতে হবে আপনাকে, সময় খরচ করে ঢু মারতে হবে লাইব্রেরীগুলোয়, আপনার ছেলের বয়সী কোনো পাকা ছাত্রকে হয়তো প্রাইভেট টিউটর হিসেবে পাবার দরকার হতে পারে আপনার, তার জন্যে কিছু অতিরিক্ত টাকা চাই-এই ধরনের প্রতিটি ব্যাপারই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে
এক একটা মস্ত বাধা। এই বাধাগুলোর কথা মনে হলেই আপনি যদি বলেন, নাহ্, এই বয়সে আর সম্ভব নয়-তাহলে ভুল করবেন। আসুন, দেখা যাক বিচার করে, এই বাধাগুলোকে জয় করা সম্ভব কিনা।
লোক ব্যঙ্গ করবে, করুক-আপনি কান দেবেন না। আপনার উদ্দেশ্যের প্রতি আপনি অবিচল থাকুন। এক নম্বর বাধাটা সরে যাচ্ছে এতে করে।
সময়ের অভাব, এটা হতে পারে আপনার দুনম্বর বাধা। চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন। পুরো একদিন অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টা আপনি পরিশ্রম করেন না, তাই না? আট ঘণ্টা ঘুমান, আট ঘণ্টা কাজ করেন, বাকি আট ঘণ্টা বিশ্রাম, প্রাত্যহিক কাজকর্ম, খাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদির জন্যে নির্ধারিত। বিশ্রামের সময় থেকে আধঘণ্টা, খেলাধুলার সময় থেকে আধঘণ্টা এবং ঘুমের সময় থেকে আধঘণ্টা করে মোট দেড় ঘণ্টা আদায় করুন। খেলা, বিশ্রাম এবং ঘুমের কোনো গুরুতর ক্ষতি না করে এই সময় আদায় করা সম্ভব। এইভাবে মাসে পাচ্ছেন আপনি পঁয়তাল্লিশ ঘণ্টা। প্রতিমাসে পয়তাল্লিশ ঘণ্টা লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করতে পারছেন আপনি। দূর হলো দু’নম্বর বাধা।
এইভাবে এক এক করে বাধাগুলোকে টপকাতে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করলে পারবেন।
আমি পারবো-এটা একটা ঘোষণা। এটা আত্মবিশ্বাসেরও লক্ষণ। যদি ভাবেন, আমি এ কাজ পারবো না-সেটা করার জন্যে কি আপনি চেষ্টা করবেন? করবেন না। যেটা পাওয়া সম্ভব নয় সেটা পাবার জন্যে কেউ চেষ্টা করে না। যে চেষ্টা করে না সে পারে না।
কি দাঁড়ালো? চেষ্টা করার আগে আপনাকে জানতে হবে, আপনি পারবেন। কাজটা যতোই কঠিন হোক, মানসূচক্ষে যতো বাধাই আপনি চাক্ষুষ করুন, মনের জোর খাঁটিয়ে ঘোষণা করুন-আমি পারবো। বিশ্বাস করুন, এই ঘোষণার দ্বারা আপনি যে কাজটি করতে চান তার অর্ধেক সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
কাজকে ভয় করবেন না। নিজের যোগ্যতাকে ছোটো করে দেখবেন না। কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি দেখেন সত্যি সত্যি আপনার যোগ্যতার অভাব রয়েছে তাহলে আমি পারবো না এই কথা না বলে যোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করুন এবং আমি পারবো না এই কথা না বলে বলুন আমি পারবো। সাফল্যের মূলমন্ত্রই হলো–আমি পারবো। আপনি যদি সাফল্য চান, আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে আপনি সফল হতে পারবেন। এই জানাটা একান্তই প্রয়োজনীয়। আমি পারবো-এটা একটা বিশ্বাস। খুবই মূল্যবান বিশ্বাস। এই বিশ্বাস আপনার। মধ্যে থাকতেই হবে।
এখন দেখা যাক, আমি পারবো এবং আমি করবো-দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি।
কোনো কাজ আপনি করতে পারবেন একথা জানা আর সেই কাজটা করা, দুটো আলাদা ব্যাপার। আপনি জানেন আপনি করতে পারবেন–কাজটা সম্পন্ন করা আপনার দ্বারা সম্ভব। এই জানার সাথে করার দূরত্ব আকাশ পাতালের।
পারবেন এই বিশ্বাস নিয়ে কোনো কাজ করতে চাইলে তা আপনি করতে পারবেন। আপনি চাকরিতে উন্নতি করতে পারবেন। আপনি লেখাপড়া শিখতে পারবেন। আপনি বড় একজন লেখক হতে পারবেন। ডাক্তার, আইনবিদ, এঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন। কিন্তু হবেন কি? আপনি করতে পারেন না এমন কিছু নেই–কিন্তু করবেন কি? এইটাই হলো সংকল্প-নির্ধারক প্রশ্ন।
আমি পারবো- এটা ঘোষণা করে আপনি জানিয়েছেন আপনার যোগ্যতার অভাব নেই। যদি থাকে, তা পূরণ করে নেবেন।
আমি পারবো-এই বিশ্বাস প্রকাশ করে আপনি জানিয়েছেন প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস আপনার মধ্যে আছে।
সেই সাথে আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন-চেষ্টা করবেন।
এখন আপনার যোগ্যতার প্রমাণ চাই। দেখতে চাই আপনার আত্মবিশ্বাসের নমুনা। চাক্ষুষ করতে চাই প্রতিশ্রুতি পালন করেন কিনা।
অর্থাৎ এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে–আমি করবো।
আমি করবো–এটা একটা সংকল্প।
আমি পারবো এই সচেতনতা যে-কোনো কাজের ব্যাপারে একান্ত প্রয়োজনীয়, আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। আর আমি করবো এই সংকল্প যে-কোনো কাজ সম্পন্ন করার চাবিকাঠি, ট্রিগার। দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে-কোনো একটির অভাবে অন্যটি অচল।
রফিক চৌধুরীর কথা ধরুন। শিক্ষিত, বুদ্ধিমান যুবক। যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। প্রচুর পড়াশোনাও করে। নাটক, উপন্যাস, রহস্যোপন্যাস, প্রবন্ধ-যা পায় তাই পড়ে এবং পড়া শেষ করে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বইটা, বলে, যাচ্ছে তাই! এর চেয়ে ভালো আমিই লিখতে পারি।
লিখতে পারি–এই বিশ্বাস রফিক চৌধুরীর মধ্যে রয়েছে। আসলেও সে হয়তো লিখতে পারবে। কিন্তু লিখছে না। কেন লিখছে না? লিখবো-এই সংকল্প নেই তার মধ্যে, তাই। সংকল্পটি নেই বলে তার লিখতে পারি এই বিশ্বাসটিরও কোনো মূল্য নেই। লিখতে পারি, বা হতে পাত্তেম-এই কথাটি বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে ওকে, লেখা ওর দ্বারা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। অবশ্য, লিখবো। এই সংকল্প ও যদি কখনো গ্রহণ করে তাহলে অন্য কথা।
অপর দিকে, সুলতান আহমেদের কথা ধরুন। রফিক চৌধুরীর চেয়ে বিদ্যা বুদ্ধিতে কম যায় না সে-ও। পড়াশোনা রফিক চৌধুরীর চেয়েও বেশি। নানা বিষয়ে যোগ্য যুবক সে। একবার উঠে পড়ে লাগলো ব্যবসা করবে বলে। টাকা যোগাড়, কারখানার জন্যে জায়গা নির্বাচন, শ্রমিক নিয়োগ, উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরি–ইত্যাদি কাজে কয়েকদিন ব্যস্ত থাকার পর হঠাৎ কি যে হলো, হাত-পা গুটিয়ে ফেলে বলে বসলো-দূর! আমাকে দিয়ে ব্যবসা হবে না!
এই রকম একবার নয়, বহু কাজে বহুবার হাত দিয়ে খানিকটা করে এগিয়ে হঠাৎ থেমে গেছে সুলতান আহমেদ, বলেছে, আমার দ্বারা হবে না!
সুলতান আহমেদের আমার দ্বারা হবে না বলবার কারণ কি?
পারবো-এই আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে ওর মধ্যে। যতোদিন এই বিশ্বাসের অভাব ওর মধ্যে থাকবে, ততোদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে ওর জীবনে।
রফিক চৌধুরীর মধ্যে নেই আমি করবো এই সংকল্প, তাই আমি পারবো এই বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সে ব্যর্থ। অপরদিকে সুলতান আহমেদের মধ্যে নেই আমি পারবো এই বিশ্বাস, তাই আমি করবো এই সংকল্প তার মধ্যে দেখা গেলেও সে। ব্যর্থ।
তার মানে, আমি পারবো এবং আমি করবো এই দুটোই আপনার মধ্যে থাকতে হবে, তবেই আপনি সফল হবেন।
অনেকে অনেক কিছুই করতে চায়। রফিক চৌধুরী এবং সুলতান আহমেদের মতো যুবক আমাদের দেশে হাজারে হাজারে আছে। আপনি নিজের কথাই ভেবে দেখুন না। কতো কি করার, কতো কি হবার ইচ্ছাই না আছে আপনার মধ্যে। কিন্তু আজও করতে পারেননি, হতে পারেননি। কেন? খতিয়ে ভেবে দেখুন, হয় আপনার মধ্যে আমি পারবো এই বিশ্বাসের, নয়তো আমি করবো এই সংকল্পের অভাব আছে। হয় দুটোরই, নয়তো যে-কোনো একটির অভাব আছে বলে আপনি। তেমন কিছু করতে পারেননি, হতে পারেননি।
.
লক্ষ্যস্থির করুন
অর্থাৎ যা করতে চান তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। কেউ উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায়, কেউ ব্যবসা করতে চায়, কেউ নেতা হতে চায়, কেউ আবার লেখক হতে চায়। হতে চাওয়া এবং করতে চাওয়ার শেষ নেই। আপনি কি হতে চান? কি করার ইচ্ছা আপনার? সেটা স্থির করে নিন আগে।
যে কাজটি করতে চান তা নির্ধারণ করুন, তারপর নিজের মধ্যে এই বিশ্বাস আনুন যে কাজটা আপনি করতে পারবেন, এরপর আমি করবো এই সংকল্পে। অটল হোন, দেখবেন আশ্চর্য সব অনুকূল ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে।
আপনার অবস্থান এবং আপনার লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের মধ্যবর্তী দূরত্বটা মেপে নিন, মাঝখানে যে-সব বাধা আছে সেগুলো এক এক করে দেখে নিন, বুঝে নিন। প্রত্যেকটি বাধাকে পরিষ্কার চিনে নিতে হবে আপনার। বাধাগুলো কি কি তা যদি আপনি না জানেন, ওগুলোকে টপকাবেন কিভাবে? বাধাগুলোকে শত্রু বলে মনে করুন। তবে আপনার তুলনায় এইসব শত্রুগুলো নিতান্তই দুর্বল, ইচ্ছা করলেই আপনি এদের প্রত্যেকটিকে ঘায়েল করতে পারেন-মনে রাখবেন কথাটা।
বাধা বা শত্রুর চেনার কাজ শেষ করুন। তারপর? একযোগে শত্রুদলকে সংহার করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বেন নাকি? না। একবার একটি বাধাকে ধরুন। ওটাকে পথ থেকে সরান। তারপর দ্বিতীয় বাধাটিকে ধরুন, সরান ওটিকেও। এইভাবে এগোন, একটি একটি করে বাধাগুলোকে সরিয়ে দিন।
কিন্তু একটি একটি করে তো সরাবেন, আগে সরাবেন কোটিকে? তাও ঠিক করে নিতে হবে আপনাকে আগেভাগে। বাধাগুলোকে এক এক করে লিখে নিতে হবে আপনার নোটবুকে। সংখ্যায় হয়তো দশটা কিংবা বিশটা হবে বাধাগুলো। ধরুন বিশটা। এই বিশটা বাধাকে এক এক করে টপকাবার বা সরাবার জন্যে কি করতে হবে আপনাকে?
তৈরি করতে হবে সক্রিয় তৎপরতামূলক একটি কর্মসূচী। এ বিষয়ে অন্য পরিচ্ছেদে বিশদ আলোচনা করবো।
.
মানুষ কেন ব্যর্থ হয়
সাফল্যলাভ করতে চায় না এমন লোক নেই। সবাই চায়। চেষ্টাও করে অনেকে। কেউ কেউ প্রাণপণ চেষ্টা করতেও কসুর করে না। সাফল্যলাভ করার উপায় সম্পর্কেও এদের কারো কারো বেশ ভালো ধারণা আছে। তবু, এদের মধ্যে থেকে অধিকাংশ লোক ব্যর্থ হয়!!
কেন?
ব্যর্থতার কারণ হিসেবে এরা এক হাজার একটা কারণ দেখায়, যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে, উপায়টা সকলের জন্যে সব পরিস্থিতিতে কার্যকরী নয়।
আমি পারবো এই বিশ্বাস এবং আমি করবো এই সংকল্প এদের মধ্যে থাকলেও এরা ব্যর্থ হয়। কারণটা খুঁজে বের করা দরকার। তা না হলে প্রশ্ন দেখা দেবে: সাফল্যলাভের সহজ কেন, আদৌ কোনো নির্দিষ্ট উপায় (ফর্মুলা) আছে, না নেই?
একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখা যাক।
ধরুন, একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আপনি বহুদূর কোথাও যাচ্ছেন (প্রাইভেট কার আমাদের দেশে খুব কম লোকেরই আছে, হয়তো আপনারও নেই। তবু, উদাহরণের মধ্যে প্রাইভেট কার আমদানী করছি এই জন্যে যে এই বই পড়ে যা শিখবেন তা কাজে লাগিয়ে আপনি ভবিষ্যতে একটা নিজস্ব গাড়ির মালিক হতে পারবেন অনায়াসে, এই বিশ্বাস আমি রাখি)। যাত্রাটাকে সফল করার স্বার্থে আপনি প্রথমেই চেক করে নেবেন গাড়িটা ত্রুটিমুক্ত কিনা। ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট, হর্ন-এক এক করে সব পরীক্ষা করে দেখবেন। গাড়ি চালাবার সময় আপনি খুবই সতর্কতার সাথে, মনোযোগ দিয়ে চালাবেন, যাতে কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটে। কি ধরনের পোশাক পরবেন আপনি, সাথে কি পরিমাণ টাকা নেবেন–এইসব। খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে আপনাকে। পথিমধ্যে অপ্রত্যাশিত কোনো বিপদ ঘটতে পারে, তেমন কিছু ঘটলে সামলে নেবার মতো উপস্থিত বুদ্ধি এবং মানসিক প্রস্তুতি থাকবে আপনার মধ্যে। গাড়ি চালিয়ে কখন ক’টার সময় ঠিক কোন জায়গায় আপনি পৌঁছুবেন, কোথায় দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেবেন, ফেরীঘাটে ঠিক কখন পৌঁছুলে সময়ের অপব্যয় থেকে বাঁচবেন- এই ধরনের অনেক ব্যাপারে আপনি আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। অর্থাৎ আপনি সুপরিকল্পিত ভাবে রওনা হবেন। তবেই না আপনার যাত্রা সফল হবে। তা নইলে হাজারো অসুবিধে চেপে ধরবে আপনাকে চারদিক থেকে। কি দাঁড়ালো তাহলে মোদ্দা ব্যাপারটা? ভ্রমণে বেরুবার আগে আপনার মধ্যে আমি পারবো এবং আমি করবো’ এই দৃঢ় সংকল্প থাকলেই চলছে না, যাত্রাটাকে সফল করার জন্যে একান্তভাবেই দরকার হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির। আপনাকে এক এক করে সবগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রত্যেকটি ব্যর্থতার পিছনে কারণ থাকে। সাফল্যলাভ ভাগ্যের ব্যাপার নয়। প্রয়োজনীয় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের নাম সাফল্য। কেউ যদি ব্যর্থ হয় তাহলে চোখ বুজে বলে দেয়া যায় সাফল্য অর্জনের জন্যে যা যা করা একান্তভাবে জরুরী ছিলো সেগুলো সে করেনি।
আমরা তাহলে শিখলাম:
(ক) আমি পারবো-এই বিশ্বাস আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। এই বিশ্বাস যদি আপনার মধ্যে না থাকে আপনার দশা হবে সুলতান আহমেদের মতো, কোনো কাজে হাত দিলেও তা কক্ষনো শেষ করতে পারবেন না।
(খ) আমি করবো-এই দৃঢ় সংকল্প আপনার মধ্যে না থাকলে চলবে না। যে কোনো কাজ করার জন্যে যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ না করেন, কাজটায় কোনোদিনই হাত দিতে পারবেন না। রফিক চৌধুরীর মতো ‘পারবো’ বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আপনাকে, পারা আর আপনার দ্বারা সম্ভব হবে না।
(গ) আমি পারবো, আমি করবো-এই বিশ্বাস এবং সংকল্প আপনার মধ্যে আছে, কিন্তু এ দুটোই যথেষ্ট নয়। কোনো কাজ সম্পন্ন করতে হলে দরকার হচ্ছে কাজটায় হাত দেয়ার। বিশ্বাসও রয়েছে আপনার মধ্যে, কাজটা করবেন, সে প্রতিজ্ঞাও করেছেন–কিন্তু এ দুটোর সাথে কাজটার হাত দেয়ার সম্পর্ক কি? বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই, যতোক্ষণ আপনি কাজটা করার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে একটা সক্রিয় তৎপরতামূলক কর্মসূচী রচনা করে কাজে না নামছেন।
ধরুন, আপনি একজন ছাত্র। ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র তিনমাস বাকি। স্থির করলেন পরীক্ষায় আপনাকে ইংরেজি, ইকনমি এবং জিয়োগ্রাফীতে স্টার মার্ক পেতে হবে। সারা বছর ধরে পড়াশোনা যা করেছেন তা যথেষ্ট নয়। স্টার। মার্ক পেতে হলে আপনাকে প্রত্যেকদিন অতিরিক্ত আরো চারঘণ্টা করে পড়াশোনা। করতে হবে। সময়ের অভাব নেই আপনার, যদি বা থাকে, অন্যান্য কাজ থেকে সময় আদায় করে এই চারঘণ্টা বের করে নিতে পারবেন আপনি। আপনার দৃঢ় বিশ্বাস-স্টার মার্ক পাবেন আপনি অর্থাৎ নিজেকে আপনি বললেন-আমি পারবো।
এরপর দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলেন আপনি-আমি করবো।
এতেই কি স্টার মার্ক পাবেন বলে আশা করেন? না, তা আপনি আশা করতে পারেন না। বিশ্বাস এবং সংকল্প দ্বারা আপনি শুধুমাত্র মনকে সম্মত ও প্রস্তুত করলেন। এবার আসল কাজ।
আপনার বর্তমান পড়াশোনা এবং আবশ্যক পড়াশোনা অর্থাৎ আপনার বর্তমান অবস্থান এবং লক্ষ্যবস্তুর মধ্যবর্তী দূরত্ব মেপে নিতে হবে আপনাকে, মধ্যবর্তী বাধাবিঘ্নগুলোকে এক এক করে চিনে নিতে হবে, তারপর সক্রিয় তৎপরতামূলক একটা কর্মসূচী তৈরি করে বাধাগুলোকে এক এক করে টপকাবার। কাজে হাত দিতে হবে।
সময়ের অভাব-এটা একটা বাধা হতে পারে। আগেই উল্লেখ করেছি এ-বাধা টপকাবার জন্যে কি করতে হবে আপনাকে।
বইয়ের অভাব-এটা হতে পারে আপনার দু’নম্বর বাধা। এই বাধাকে দূর করার জন্যে লাইব্রেরীতে যাবেন আপনি, সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নেবেন বা নোট সংগ্রহ করবেন।
শারীরিক দুর্বলতা- এটা হতে পারে আপনার তিন নম্বর বাধা। রাত জেগে পড়াশোনা করতে হবে হয়তো আপনাকে, তাই শরীরটাকে সুস্থ রাখতে হবে। শরীর সুস্থ রাখার জন্যে ভালো খাওয়া-দাওয়া, উপযুক্ত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয়। বিশ্রাম দরকার হবে আপনার। বিশ্রামের জন্যে সময় ধার করতে হবে আপনার অন্যান্য কাজ থেকে। সময়ের একটা বাজেট করে নিন, বিশ্রামের সময় পেয়ে যাবেন।
এইভাবে একটি একটি করে বাধাগুলোকে ধরুন, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলোকে টপকান। আসলে বাধাগুলোকে টপকাবার মধ্যেই নিহিত রয়েছে পরীক্ষায় আপনার স্টার মার্ক পাবার মূল রহস্য। আপনি যদি বাধাগুলোকে টপকাতে পারেন, সত্যিই স্টার মার্ক পাবেন।
কয়েক প্রকার বস্তু একত্রিত করলে অন্য এক বস্তু তৈরি হয়। সন্দেশের কথা ধরুন। ছানা এবং চিনি একত্রিত করলে সন্দেশ হয়। ছানা এবং চিনি সন্দেশের উপাদান। যে-কোনো জিনিসই উপাদানের সমষ্টিমাত্র। বস্তুর যেমন উপাদান আছে তেমনি বিষয়েরও উপাদান আছে। সাফল্য একটি বিষয়। সাফল্যের উপাদান কি কি?
.
সাফল্যের উপাদান
সাফল্যের মৌলিক উপাদান তিনটি। কি কি?
ক) আমি পারবো-এই বিশ্বাস।
খ) আমি করবো-এই সংকল্প।
গ) সক্রিয় তৎপরতামূলক একটি কর্মসূচীর বাস্তবায়ন।
.
বর্তমান অবস্থায় যদি সন্তুষ্ট থাকেন
সেক্ষেত্রে এই বই পড়বার দরকার নেই আপনার। অবশ্য আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট মনে করলেও আপনার মনে করাটা সত্য কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবু, আপনি যদি আপনার বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট হন, যদি সব শখ-সাধ ইচ্ছা-অভিলাষ-উদ্দেশ্য-বাসনা আপনার পূরণ হয়ে গিয়ে থাকে, উন্নতি করার বা সমৃদ্ধি অর্জনের যদি কোনো প্রয়োজন বোধ না করেন তাহলে এই বই আপনার জন্যে নয়। তবে, অনুরোধ করবো, বইটা হাতছাড়া করবেন না। কারণ, যা কিছু অর্জন করেছেন তাতেই আপনি সন্তুষ্ট, আরো সাফল্য, আরো সমৃদ্ধি অর্জন করার ইচ্ছা আপনার নেই-তাই, চেষ্টাও করবেন না, ফলে, অর্জিত যা কিছু আছে সব বাসি হয়ে যাবে ক’দিনেই, ওসবে আর মজা পাবেন না তেমন, নতুন কিছু চাইবে আপনার মন। তখন দরকার হবে আপনার এই বইটি।
আপনি যদি টাকা পয়সার ব্যাপারে অভাবগ্রস্ত হন বা আরো টাকা রোজগার করতে চান, যদি আপনার শখ-সাধ-উচ্চাভিলাষ পূর্ণ না হয়ে থাকে, সমাজে সম্মান। এবং শ্রদ্ধার আসনে যদি আপনি প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকেন, আপনার প্রতিটি নতুন প্রভাত যদি আনন্দ এবং প্রেরণাদায়ক না হয় তাহলে যে বই আপনার হাতে। রয়েছে, এই বইটি আপনার অত্যন্ত দরকার, এটাই আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি। বিশ্বাস করুন, এই বই-ই উত্তরণের তঙ্গে পৌঁছে দেবে আপনাকে।
জীবন আপনার সাথে বেঈমানী করেছে। তাই কি জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় ভুগছেন? আমার কথা শুনুন, ভুলে যান সব। মনটাকে হালকা করুন। সব ভুলে হাসতে চেষ্টা করুন একবার। নিজেকে সুখী ও সফল একজন মানুষ বলে মনে। করুন। সামনে আপনার বিপদ, কণ্টকাকীর্ণ পথ, হাজার রকম বাধাবিঘ্ন আর জটিলকুটিল সমস্যা-সব ভুলে আনন্দিত হয়ে উঠুন। যে-সব রঙিন স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে গেছে, বাস্তবায়িত হয়নি-নতুন করে স্মরণ করুন সেগুলোকে। আনন্দিত হয়ে
প্রশ্ন করবেন, তাই না? জানি কি প্রশ্ন করতে চাইছেন; কেন, অতীতের ব্যর্থতার জন্যে এতো আনন্দ করতে যাবো কেন?
কারণ আছে। আনন্দিত হওয়ার কারণ হলো, এই বই আপনাকে এমন এক ফর্মুলা দিচ্ছে যে ফর্মুলার সাহায্যে আপনি আপনার রঙিন স্বপ্নগুলোকে সত্যিই বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছেন এতোদিনে। আপনার ব্যর্থতার গ্লানি ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে সাফল্যের অনাবিল আনন্দ। কথা দিচ্ছি।
এ সাফল্যের পথের যাত্রী আপনি। আমার সাথে রওনা হয়েছেন। আপনার অস্তিত্ব যেমন সত্য, এই যাত্রাও তেমনি সত্য। পায়ে হাঁটা অবস্থা থেকে গাড়ি কিনে চড়ার অবস্থার দিকে যাত্রা আপনার। দুঃখ, দুশ্চিন্তা, হীনম্মন্যতা, দীনতা থেকে আনন্দ, সুখ, স্ফূর্তি এবং অঢেল ঐশ্বর্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। খুশির। কথা নয়?
ঐশ্বর্য এবং প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ দরকার আপনার। বেঁচে থাকার জন্যে শুধু একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই নয়, আরাম-আয়েশের জন্যে, বিলাসিতার জন্যে সবরকম উপকরণ অর্জন করবার অধিকার আপনার আছে।
আর, একান্তভাবে দরকার মানসিক শান্তি। মানসিক শান্তি আপনাকে দেয়া কারও দয়ার দান- এরকম ভাববেন না, নিষেধ করছি আপনাকে। এই জিনিসটি পাবারও সঙ্গত অধিকার আপনার আছে।
মনকে শান্তি দিন। মনের শান্তি আপনার মধ্যে না থাকলে বিপদ। এখন থেকে সাবধান হোন, মনকে অশান্তিতে ভোগাবেন না আর। সাফল্যের পথে রওনা। হতে এই জিনিসটারও দরকার, জেনে রাখুন। এটাকে বাদ দিয়ে রওনা হওয়া সম্ভব নয়।
প্রথম পরিচ্ছেদ শেষ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে দিবালোকের মতো কয়েকটি ধ্রুব সত্য প্রমাণ হয়ে গেছে। সত্যগুলো কি কি, সিরিয়াল সাজিয়ে ফেলি, আসুন।
১) আপনি সাফল্য চান। ২) সাফল্য গন্তব্যস্থান নয়, যাত্রা বা ভ্রমণ। ৩) সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনাকে জানতে হবে–আপনি সফল হতে পারবেন। ৪) আমি পারবো এই বিশ্বাসের সাথেই দরকার হচ্ছে আমি করবো এই দৃঢ় সংকল্পের। ৫) সংকল্প প্রাণহীন, তার দেহের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে সক্রিয়। তৎপরতার দ্বারা। ৬) অঢেল প্রাচুর্য অর্জন করার সঙ্গত অধিকার আপনার আছে। ৭) মানসিক শান্তি সাফল্য অর্জনের জন্যে একটি শর্ত।
এই পরিচ্ছেদ শেষ হবার আগে, আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে চাই। পাতা ওল্টাবার আগে, এই প্রথম পরিচ্ছেদটা প্রথম থেকে আর একবার পড়ে নিন। গোটা বইয়ের মধ্যে এই প্রথম পরিচ্ছেদই কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়বার প্রথম পরিচ্ছেদটা পড়া শেষ করে বইটা বন্ধ করে রাখুন কিছুক্ষণের জন্যে। আপনি যে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা শুরু করেছেন এটা। অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। কল্পনা করুন এমন একটা নতুন জীবনের যে জীবনের নিয়ন্ত্রক স্বয়ং আপনি, কল্পনা করুন এমন একটা সুষ্ঠু পরিবেশের যে। পরিবেশের সৃষ্টি নন আপনি, বরং স্রষ্টা।