০১. সন্ধ্যা হয়-হয় করছে

সন্ধ্যা হয়-হয় করছে। এখনো হয় নি। আকাশ মেঘলা। ঘরের ভেতর অন্ধকার। সন্ধ্যা লগ্নে ঘর অন্ধকার থাকা অলক্ষণ। মিসির আলি লক্ষণ-অলক্ষণ বিচার করে চলেন না। চেয়ার ছেড়ে উঠতে তাঁর আলস্য লাগছে বলে ঘরে বাতি জ্বালানো হয় নি। তিনি খানিকটা অস্বস্তির মধ্যেও আছেন। তাঁর সামনে যে-তরুণী বসে আছে, অস্বস্তি তাকে নিয়েই। আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা। এতক্ষণ সে বোরকার ভেতর থেকে কথা বলছিল, কিছুক্ষণ আগে মুখের সামনের পরদা তুলে দিয়েছে। মিসির আলি ধাক্কার মতো খেয়েছেন। এমন রূপবতী মেয়ে তিনি খুব বেশি দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।

লম্বাটে মুখ। খাড়া নাক। লিপস্টিকের বিজ্ঞাপন হতে পারে এরকম পাতলা ঠোঁট। বড় বড় চোখ। চোখের পল্লব দীর্ঘ। তবে এই দীর্ঘ পল্লব নকলও হতে পারে। এখনকার মেয়েরা নকল পল্লব চোখে পরে। বরফি কাটা চিবুক। চিবুকে লাল তিল দেখা যাচ্ছে। এই তিলও মনে হয় নকল।

আমার নাম সায়রা। সায়রা বানু।

মিসির আলি মনে-মনে কয়েকবার বললেন—সায়রা, সায়রা। তাঁর ভুরু সামান্য কুঁচকে গেল। কেন তিনি মনে-মনে মেয়েটির নাম নিলেন তা বুঝতে পারলেন না। তিনি কি মেয়েটির নাম মনে রাখার চেষ্টা করছেন? এই কাজটি তিনি কেন করলেন? মেয়েটির অস্বাভাবিক রূপ দেখে? একটি কুরূপা মেয়ে যদি তার নাম’ বলত তিনি কি মনে-মনে তার নাম জপতেন?

সায়রা, তুমি কি রোজা রেখেছ?

জি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইফতারের সময় হবে। আমার এখানে ইফতারের ব্যবস্থা নেই।

পানি তো আছে। এক গ্লাস পানি নিশ্চয়ই দিতে পারবেন।

বলতে-বলতে মেয়েটি হাসল। রূপবতী মেয়েদের হাসি বেশিরভাগ সময়ই সুন্দর হয় না। দেখা যায় তাদের দাঁত খারাপ। কিংবা হাসির সময় দাঁতের মাড়ি বের হয়ে আসে। দাঁত-মাড়ি ঠিক থাকলে হাসির শব্দ হয় কুৎসিত—হায়না টাইপ। প্রকৃতি কাউকে সবকিছু দেয় না। কিন্তু সায়রা নামের মেয়েটিকে দিয়েছে। মেয়েটির হাসি সুন্দর। হাসি শেষ হবার পরেও মেয়েটির চোখ সেই হাসি ধরে রেখেছে। এরকম ঘটনা সচরাচর ঘটে না।

মিসির আলি বিব্রত বোধ করছেন। মেয়েটি সারাদিন রোজা রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আজান হবে। মেয়েটি রোজা ভাঙবে। ঘরে পানি ছাড়া কিছুই নেই।

আমি কি আপনাকে চাচা ডাকতে পারি?

পার।

চাচা, আমার ইফতার নিয়ে আপনি চিন্তিত হবেন না। আমার ইফতারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

কীভাবে হবে?

আমি অনেকবার লক্ষ করেছি রোজার সময় আমি যখন বাইরে থাকি তখন কেউ- না-কেউ আমার জন্য ইফতার নিয়ে আসে। চিনি না জানি না এমন কেউ।

মিসির আলি চেয়ারে সোজা হয়ে বসতে বসতে বললেন, সায়রা তুমি নিতান্তই যুক্তিহীন কথা বলেছ।

সায়রা হাসিমুখে বলল, আমি বিশ্বাসের কথা বলেছি, যুক্তির কথা বলি নি।

আমি বরং কিছু ইফতার কিনে নিয়ে আসি?

না, আপনি যেভাবে বসে আছেন বসে থাকুন। আপনার ঘরে কি জায়নামাজ আছে? আমি রোজা ভেঙেই নামাজ পড়ি।

জায়নামাজ নেই।

মিসির আলি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েটি এখন সামান্য দুলছে। যে- চেয়ারে সে বসে আছে সেটা কাঠের একটা চেয়ার। রকিং-চেয়ার না। মেয়েটির দুলুনি দেখে মনে হচ্ছে সে রকিং-চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে। কিশোরী মেয়েদের চেয়ারে বসে দুলুনি মানানসই, এই মেয়েটির জন্য মানানসই না।

সায়রা! জি?

তুমি কী জন্য আমার কাছে এসেছ সেটা এখনো বলো নি!

বলব। রোজা ভাঙার পর বলব।

আমি যদি সিগারেট ধরাই তোমার সমস্যা হবে?

জি না।

মিসির আলি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার নিয়ম। তুমি যদি তুন্দ্রা অঞ্চলে যাও তখন রোজা রাখবে কীভাবে? সেখানে তো ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত।

সায়রা বলল, চাচা, আমি তো তুন্দ্রা অঞ্চলে যাই নি। যখন যাব তখন দেখা যাবে। আপনার কি চা খেতে ইচ্ছা করছে? আপনাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিই? যারা প্রচুর সিগারেট খায় তারা সিগারেটের সঙ্গে চা খেতে পছন্দ করে। এইজন্য বললাম। আপনি চা খেতে চাইলে আমি আপনার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসতে পারি।

মেয়েটি মিসির আলির অনুমতির জন্য অপেক্ষা করল না। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আপনার রান্নাঘর কোনদিকে?

মিসির আলি অতিদ্রুত কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যে বিষয়টা তাঁকে সাহায্য করল তা হচ্ছে—মেয়েটি রান্নাঘরে গেল খালি পায়ে। স্যান্ডেল চেয়ারের পাশে পড়ে থাকল। তার অর্থ নিজ-বাড়িতে মেয়েটি খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করে। এই বাড়িতেও সে পুরোনো অভ্যাসবশত খালি পায়ে রান্নাঘরে গেছে। যে-বাড়িতে এই মেয়ে খালি পায়ে হাঁটে সে বাড়ির মেঝে হতে হবে ঝকঝকে ধূলিশূন্য। মার্বেলের মেঝে কিংবা পুরো বাড়িতে ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট।

মেয়েটি চেয়ারে বসে দোল খাওয়ার ভঙ্গি করছিল। অর্থাৎ মেয়েটির বাড়িতে একটি রকিং-চেয়ার আছে। সে অনেকখানি সময় এই চেয়ারে বসে কাটায়। সেই অভ্যাস রয়ে গেছে।

মেয়েটির নাকে নাকফুল আছে। নাকফুল হীরের। হীরের সাইজ ভালো। সচরাচর মেয়েরা নাকে যেসব হীরের নাকফুল পরে সেই হীরে চোখে দেখা যায় না। ম্যাগনিফাইং গ্লাসে দেখতে হয়।

মেয়েটি যখন উঠে রান্নাঘরে গেল তখন তার গা থেকে হালকা সেন্টের গন্ধ এসেছে। অতি দামি পারফিউম মাঝে মাঝে গন্ধ ছড়ায়। সব সময় ছড়ায় না। মেয়েটি অতি দামি কোনো পারফিউম মেখেছে।

মেয়েটি ‘আপনার রান্নাঘর কোথায়’ বলেই রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিয়েছে। রান্নাঘরে যাবার অনুমতি চায় নি। এর অর্থ, এই মেয়ে অনুমতি নিয়ে কোনোকিছু করায় অভ্যস্ত না। যে-বাড়িতে সায়রা বাস করে সেই বাড়ির কর্ত্রী সে নিজে।

মিসির আলি চোখ বন্ধ করলেন। অনেকগুলো ছোট-ছোট সিদ্ধান্ত থেকে একটা বড় সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সেটা কোনো জটিল কাজ না।

সায়রা নামের মেয়েটি অতি ধনবান গোত্রের একজন। সে গাড়ি ছাড়া আসবে না। সে অবশ্যই গাড়ি নিয়ে এসেছে। গাড়ি কাছেই কোথাও অপেক্ষা করছে। মেয়েটির ইফতার গাড়িতেই আছে। ইফতারের সময় হলেই গাড়ির ড্রাইভার ইফতার নিয়ে আসবে। এই ব্যাপারে মেয়েটি নিশ্চিত বলেই ইফতারের ব্যাপারে মাথা ঘামায় নি।

চাচা আপনার চা।

মিসির আলি চায়ের কাপ হাতে নিলেন। সায়রা বলল, আমি আগামীকাল লোক পাঠাব। সে এসে রান্নাঘর পরিষ্কার করে দেবে। আমি আমার জীবনে এমন নোংরা রান্নাঘর দেখি নি।

সায়রা আগের জায়গায় বসল। হাতঘড়িতে সময় দেখল। মিসির আলি বললেন, ইফতারের সময় হলেই তোমার ড্রাইভার ইফতার দিয়ে যাবে আমার এই অনুমান কি ঠিক আছে?

সায়রা বলল, ঠিক আছে।

মিসির আলি বললেন, তুমি তোমার বাড়িতে ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা রকিং চেয়ারে বসে দোল খাও আমার এই অনুমান কি ঠিক আছে?

হ্যাঁ, ঠিক আছে। আপনাকে আমি যত বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম আপনার বুদ্ধি তারচেয়ে বেশি। আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। আমি আপনাকে দয়া করতে বলছি না। আমি আল্লাহ্পাকের দয়া ছাড়া কারোর দয়া নিই না। আপনার কাজের জন্য আমি যথাযোগ্য পারিশ্রমিক দেব।

তুমি আল্লাহ্পাকের দয়া ছাড়া কারো দয়া নাও না?

জি না।

আল্লাহ্পাক তো সরাসরি দয়া করেন না। তিনি কারো না কারো মাধ্যমে দয়া করেন। তুমি অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাও। তার সেবা তোমাকে নিতে হয়।

আপনি তর্ক খুব ভালো পারেন। আমি আপনার সঙ্গে তর্কে যাব না। আমার মূল কথা হচ্ছে, আপনাকে যোগ্য পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।

যোগ্য পারিশ্রমিকটা কী?

উত্তরায় ২৪ শ স্কয়ার ফিটের আমার একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে। ফোর বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট। আমি অ্যাপার্টমেন্টটা আপনাকে দিয়ে দেব।

মিসির আলি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েটিও তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে না। চোখে চোখ রাখার খেলা মেয়েরা খুব ভালো পারে।

সায়রা বানুর ড্রাইভার ইফতার নিয়ে এসেছে। সে সঙ্গে করে জায়নামাজও এনেছে। টেবিলে সে দুটা চায়ের কাপ এবং ফ্লাঙ্ক রাখল। ফ্লাস্কে নিশ্চয়ই চা আছে। গোছানো ব্যবস্থা!

আজান হয়েছে। মিসির আলি আগ্রহ নিয়ে মেয়েটির রোজা ভাঙার দৃশ্য দেখলেন। এক গ্লাস পানি খেয়ে সে রোজা ভেঙেই জায়নামাজ নিয়ে বসল। অপরিচিত জায়গায় কেউ নামাজ পড়তে চাইলে প্রথমেই পশ্চিম কোন দিকে জেনে নেয়। সায়রা তা করে নি। তার পরেও পশ্চিমমুখী করে জায়নামাজ পেতেছে। এর অর্থ সে আজ প্রথম এখানে আসে নি। আগেও এসেছে, খোঁজখবর নিয়েছে।

মেয়েটির আচার-আচরণে কোনো জড়তা নেই, অস্পষ্টতা নেই। সে নিজে কী করছে তা জানে। নিজের ওপর তার বিশ্বাস প্রবল। এই বিশ্বাস সে অর্জন করেছে তা মনে হচ্ছে না। বিশ্বাসটা সে মনে হয় জন্মসূত্রেই নিয়ে এসেছে।

.

সায়রার হাতে চায়ের কাপ। সে আগ্রহ নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। মিসির আলি সিগারেট ধরিয়েছেন।

সায়রা বলল, চাচা, আপনি কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

মিসির আলি বললেন, কোন প্রস্তাব? সমস্যার সমাধান করব, বিনিময়ে বাড়ি?

হুঁ।

মিসির আলি বললেন, তুমি আমার বিষয়ে ভালো খোঁজখবর নিয়েই এসেছ। কাজেই তোমার জানা উচিত সমস্যা সমাধান আমার পেশা না। তা ছাড়া সমস্যার সমাধান আমি সেইভাবে করতেও পারি না। জগতের বড় বড় রহস্যের বেশিরভাগ থাকে অমীমাংসিত। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। রহস্যের মীমাংসা তেমন পছন্দ করে না।

সায়রা শান্ত গলায় বলল, প্রকৃতি রহস্যের মীমাংসা পছন্দ করুক বা না করুক আপনি মীমাংসা পছন্দ করেন। আমি আপনার কাছে সাহায্যের জন্য এ সছি। আপনি

আমাকে সাহায্য করবেন।

কেন সাহায্য করব?

আপনি আপনার নিজের আনন্দের জন্য করবেন। সমস্যা সমাধান করে আপনি আনন্দ পান। সমস্যা যত বড় আপনার আনন্দও হয় তত বেশি। এখন আপনার কিছুই করার নেই। আপনি সময় কাটান শুয়ে-বসে, বই পড়ে এবং সস্তার সিগারেট টেনে। মানুষের জীবন যতটা একঘেয়ে হওয়া উচিত আপনার জীবন ততটাই একঘেয়ে। আপনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পাবেন। তার মূল্যও কি কম? বলুন কম?

না, কম না।

আপনি জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। সস্তার একটা ভাড়া বাড়িতে বাস করেন। একটা মাত্র কামরা। ঘরে নিশ্চয়ই এসি নেই। গরমে কষ্ট পান। শীতের সময় বরফের মতো ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে হয়। এখন যদি আপনার চমৎকার একটা ফ্ল্যাট থাকে যে-ফ্ল্যাটে এসি আছে, বাথরুমে গিজার আছে তা হলে ভালো হয় না?

আমি যে-জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত আমার জন্য সেটাই ভালো।

ঠিক আছে বাদ দিলাম। আপনার যদি আমার মতো একটা মেয়ে থাকত সেই মেয়ে যদি কাঁদতে-কাঁদতে আপনাকে সমস্যার কথা বলত আপনি কী করতেন?

তুমি কিন্তু কাঁদছ না।

আপনি বললে আমি কাঁদতে পারি। আমি অতি দ্রুত চোখে পানি আনতে পারি। কেঁদে দেখাব?

বলো তোমার সমস্যা।

সায়রা বলল, থ্যাংক য়্যু স্যার। বলেই সে রুমাল দিয়ে চোখ মুছল। এর মধ্যেই সে চোখে পানি নিয়ে এসেছে। মিসির আলি মেয়েটির কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হলেন।

সায়রা বলল, পুরোটা আমি লিখে এনেছি। আপনার কাছে খাতাটা রেখে যাচ্ছি। খাতায় আমার টেলিফোন নাম্বার দেওয়া আছে। যখন পড়া শেষ হবে আমাকে টেলিফোন করবেন আমি চলে আসব। আবার যদি পড়তে-পড়তে আপনার খটকা লাগে তা হলেও নিজে এসে খটকা দূর করব।

সায়রার ড্রাইভার এসেছে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে। সায়রা বলল, কাপ দু’টা থাকুক। এই বাড়িতে ভালো কাপ নেই। আবার যখন আসব—এই কাপে চা খাব।

মিসির আলি খাতাটা হাতে নিলেন। প্রায় এক শ পৃষ্ঠা গুটিগুটি করে লেখা। পুরোটাই ইংরেজিতে। শিরোনাম—

Autobiography of an unknown young girl.

সায়রা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, লেখাটার টাইটেল আমি একজনের কাছ থেকে নকল করেছি। নীরদ সি চৌধুরীর একটা বই আছে, নাম—

Autobiography of an unknown Indian সেখান থেকে নেওয়া।

মিসির আলি বললেন, তোমার পড়াশোনার সাবজেক্ট কি ইংরেজি?

জি না। কেমিস্ট্রি। আমি স্কটল্যান্ডের এবারডিন ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রিতে পিএইচ. ডি. করেছি। বুঝতে পারছি আপনি ছোটখাটো ধাক্কার মতো খেয়েছেন। আপনি আমাকে অনেক অল্পবয়সি মেয়ে ভেবেছিলেন। আমার বয়স ত্রিশ। এখন আপনাকে আরেকটা ছোট্ট ধাক্কা দিতে চাই। দেব?

দাও।

আমি একটা সিগারেট খাব। আপনি যদি অনুমতি দেন।

অনুমতি দিলাম।

সায়রা তার হ্যান্ডব্যাগ খুলে সিগারেট বের করল। লাইটার বের করল। খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সিগারেট ধরাল।

মিসির আলি তেমন কোনো ধাক্কা খেলেন না। মেয়েটা ধূমপানে অভ্যস্ত না। এই কাজটা যে সে তাঁকে চমকে দেবার জন্য করেছে তা বোঝা যাচ্ছে। সিগারেটের প্যাকেটটা নতুন। লাইটার ধরাবার কায়দাও সে জানে না। সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসে নিয়ে সে কাশছে। চোখের মণি লাল হয়ে গেছে।

আপনি কি আমার সিগারেট খাওয়া দেখে রাগ করছেন?

না।

বিরক্ত হচ্ছেন?

না।

প্লিজ রাগ করবেন না। বিরক্তও হবেন না। সিগারেটের প্যাকেট এবং লাইটার আমি আপনার জন্য এনেছি। হঠাৎ কেন জানি ইচ্ছা হল আপনাকে আরেকটু চমকাই। চাচা এখন আমি যাই?

যাও।

আপনি কিন্তু খাতাটা আজ রাতেই পড়তে শুরু করবেন।

মিসির আলি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন।

যাই বলেও সায়রা দাঁড়িয়ে আছে। যাচ্ছে না। মিসির আলি বললেন, তুমি কি আরো কিছু বলবে?

সায়রা বলল, আমি আপনাকে যেরকম ভেবেছিলাম আপনি সেরকম না।

মিসির আলি বললেন, কীরকম ভেবেছিলে?

অহংকারী, রাগী। আমি চিন্তাই করি নি আপনি এত সহজে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবেন। থ্যাংক য়্যু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *