শেষ পর্যন্ত বাবুর নিদ্রাভঙ্গ হলো তাহলে! আমি তো ভেবেছিলাম এ যাত্রায় বিছানা-বালিশ জব্দ করার পালাটা আরো বেশ কিছুদিন ধরে চলবে।
বড় বড় চোখে রঞ্জুর দিকে তাকালো খোকা। বললে, কি বলতে চাস পষ্টাপষ্টি বলে ফ্যাল। এমনভাবে রোয়াব দেখাচ্ছিস যে এসবে তোর রাজ-রাজেশ্বরীর মাথাটা একেবারে কাটা যায়।
আরেববাস! অমনি তা-ছোটা মুরগির মতো ঝট পটানি শুর হয়ে গেল!
দ্যাখ রঞ্জু, বেশি ফাজলামি মারবি না বলে দিচ্ছি! দিন দিন তোর পাকামির মাত্রাটা অসম্ভব বেড়ে যাচ্ছে; বড়-ছোটর মান্য নেই। কি ঠাউরেছিস আমাকে?
তোর মাথায় নির্ঘাত ছিট হয়েছে। তোশক-বালিশে তা দিয়ে যে হারে ন্যালাখ্যাপার মতো ছারপোকার বংশবৃদ্ধি করে চলেছিস তাতে কোনো ভদ্রলোক আর এ বাড়ি মাড়াবে না।
বুঝেছি। তাতে তোর বেজায় লোকসান।
রঞ্জু হেসে বললে, রাখ, চান্স পেলে কানকো মারা বের করবো একদিন। চোত মাসের কই কোথাকার!
মায়ের কথা মনে পড়লো খোকার ঝট করে। খুব ছোটবেলায় তার লিকলিকে হাত-পা আর হাড় জিরজিরে শরীরের তুলনায় বেঢপ হেঁড়ে মাথার জন্যে যশুরে কই বলে ডাকতো মা, ওটা নাকি বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলার নাম। কিন্তু রঞ্জু… কোথা থেকে এসব পায় রঞ্জু!
বিছানার ময়লা চাঁদরের খুঁট ধরে জাল টেনে তোলার মতো ধীরে ধীরে খুব সন্তর্পণে তুললো সেটা রঞ্জু। অভিধানসহ ইংরেজি-বাংলা গোটা তিনেক বই, সিগ্রেটের প্যাকেট, দেশলাই, খোকার ব্যবহৃত গুচ্ছের আলতু-ফালতু জিনিস জালের সুতো থেকে মাছ বাছাই করার মতো একটা একটা করে টিপয়ের উপরে রাখলো। চাদরটা মেঝেয় ছুড়ে দিয়ে বালিশের গায়ে ময়দা ঠাসার মতো করে ঘুসি বসালো কয়েকটা। তারপর এপিঠ-ওপিঠ থাবড়া মেরে সেটাকে যথাস্থানে রেখে বিছানার তলা থেকে দলামোচড়া রুমাল, হিজিবিজি কাটা কাগজ, এটা-সেটা টেনে বের করতে করতে বললে, নাহ্, সত্যি তোকে এ বাড়িতে এক্কেবারেই মানায় না; তুই বরং…
ই-য়াহ্! পোয়াবারো আর কি তোমার! একটা কাঁট বেল্লিক!
অতো ঝাল লগড়াচ্ছিস কেন আমাকে নিয়ে? তোর মতো এই এলুম বলে মাঝরাতে দেবদাস হয়ে ঘরে ফিরি না, আবার গাঁটে গাঁটে রসবাত ধরা পর্যন্ত একনাগাড়ে পাঁচ-সাতদিন বিছানায় সাঁতারও দিই না, চোর-চোট্টা-হাজতির মতো আমার দাড়ি-গোঁফও নেই, দাঁতে মাখনের পলেস্তারাও জমে না তোর মতো! ইশ, গায়ের বোঁটকা গন্ধ নিয়ে, দাঁত মেজে, দাড়ি না কামিয়ে, পানি না ছুঁয়ে থাকিস কি করে? তোর মতো পিপুফিশু আমি কোথাও দেখিনি।
কী-ইবা এমন দেখেছিস তুই, বয়েস তো আধপাতা! বেশি গার্জেনি ফলাতে আসবি তো শালার কষে এইসা রদ্দা লাগাবো যে ফিঁয়াসের নামতক ভুলে যাবি।
কি বললি?
ফিঁয়াসে ফিঁয়াসে! কেন মুরগির মগজে ঢোকেনি বুঝি? জানি। মানে ভাতারের নাম নজ্জায় ধরি না, রাখ, তোর ন্যাকামি একদিন বার করবো!
তোর দাদাগিরির আমি কানাকড়ি দাম দিই কি না। তোদের মতো আমি লোচ্চা-বেলেল্লা নাকি, যে স্রেফ ফিঁয়াসে জুটিয়ে বেড়াবো?
তা ঐ বহুবচনের মানেটা কি?
তুই আর তোর ইয়ার-বন্ধুরা!
যোগ্যতা থাকলে তবে না জোটাবি। ফিঁয়াসে তো আর গাছের শুকনো পাতা নয় যে ডাল ধরে নিছক হুপহুপ বাঁদরামি করে নাড়া দিবি আর ঝুরঝুর ঝরে পড়বে। যোগ্যতার মধ্যে ওই একটাই, অযথা খুনসুড়ি পাকানো। কি কূটকচালে ছুঁড়িরে বাবা! যা, দাড়ি কামাবো, ঝট করে পানি নিয়ে আয়।
সবকিছু নিয়েই তো দিব্যি আঁক করে গেড়ে বসা হয়েছে, পানিটুকু নিয়ে বসলে গতরের এমন কিছু খেয়ানত হতো না।
বহুৎ লেকচার ঝেড়েছিস, এবার কাজ কর। একটু নাই দিয়েছি কি দিয়েছি অমনি মুখে খৈ ফুটতে শুরু করেছে। কাজ আছে, বাইরে বেরুতে হবে, নে নে, ঝটপট, জলদি ক্রো জলদি ক্রো…
গায়ে টিকে তোলা কাচের বাটিতে খানিকটা পানি নিয়ে এলো রঞ্জু; খোকা তখন পানপাতার মতো একটা আয়না চকচকে স্ট্যান্ডের ওপর এঁটে গালে হাত বুলিয়ে মাত্র কদিনের অযত্নে লালিত ভয়ানক রকমের রুক্ষ আর তীক্ষ্ণ আদল টিপে টিপে নিরিখ করছিলো।
ঠিক যেন একটা গাঁজাখোর! যা চোয়াড়ে মার্কা চেহারা হচ্ছে না তোর দিন দিন। ভালো করে ঠাহর করতে পারছিস কাচের হার্টে, না লাইট জ্বেলে দেব?
ঠাহর কি বে? ঠাহর কি? কথার কি ছিরি, কড়ে আঙুলের মতো পুঁচকে ছুঁড়ি, তার আবার কথার বহর কত! ঠাহর, চোয়াড়ে, গতর, ঝাল লগড়ানি, কানকো মারা, পানিওয়ালী মাতারি কোথাকার।
দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডার নামিয়ে ঝেড়ে–পোঁছে একটা পাতা উল্টিয়ে সেটাকে আবার যথাস্থানে ঝুলিয়ে রাখলো রঞ্জু। এই মুহূর্তে তাকে নিদারুণ চিন্তাক্লিষ্ট আর গম্ভীর দেখায়। দাড়ি চাচতে চাচতে আড়চোখে একবার দেখলো খোকা। আজকাল প্রায়ই তার মনে হয় রঞ্জু ইতোমধ্যেই বয়েসের তুলনায় মাত্রা ছাড়া গাম্ভীর্য কুক্ষিগত করে ফেলেছে। সাংসারিকতাকে ঠিক দায়ী করা যায় না এ জন্যে, হিসেব করে দেখেছে খোকা, টোল নেই রঞ্জুর গাম্ভীর্যে, কোনো ছিদ্র নেই, মনে হয় সন্ন্যাসিনী; দুটি আয়ত চোখ মেলে রহস্যময় অচেনা ঘুলঘুলিতে সবসময় কিছু একটা খুঁজে বেড়ায় সে।
জানিস দাদা, কদিন থেকে আমার শুধু মনে হচ্ছে অন্যান্যবার যা হয় এবার তা হবে না, বাপি সময়মতো এসে পৌঁছুতে পারবে না, তুই দেখিস… এ কথায় তার গলায় বিষাদ ঝরে পড়ে।
নাকের ডগা থেকে ক্রিমের ফেনা মুছতে মুছতে খোকা জানতে চাইলো, এরকম মনে হওয়ার কারণটা জানতে পারি কি?
ক্যালেন্ডারের একটা তারিখের ওপর হাত বুলিয়ে ভাসা ভাসা গলায় রঞ্জু অনেক দূর থেকে বললে, অন্যবার বাপি আসার তারিখটা প্রায় মনেই থাকে নি, দেখতে না দেখতে দিন কেটে গিয়েছে, টেরই পাওয়া যায় নি, দেখা গেল হুট করে একদিন বাপি এসে হাজির। এবারে কোনো রকমেই আর তারিখটা আসতে চায় না; তারিখটা যেন পথ হারিয়ে ফেলে একটা উটের মতো মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে…!
মেইরেছে, এ শালার আর এক জেন ডিকসন! গতরাতে আমি একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখেছি… কাছে সরে এসে খুব অন্তরঙ্গ হয়ে রঞ্জু বললে, হাতিয়া-সন্দ্বীপের সাইক্লোনের সেই ফোলা ফোলা পচাখসা লাশগুলো খবরের কাগজ থেকে বের হয়ে অলিগলি, রাস্তাঘাট এখানে-ওখানে লুকোচুরি খেলছে আর কুরকুট্টি দিয়ে হাসছে!
বাঁ হাত দিয়ে রঞ্জুর বিনুনি ধরে মুঠো পাকালো খোকা। বললে, এইসা থাপ্পড় মারবো যে গুলতাপ্পি ভুলে যাবি! আব্বে খুঁড়ি, ওটা বোক্কাচিও সেভেনটির অনিতা, বেমালুম কপিরাইট ঝাড়ন্তিফাই করা হচ্ছে, এ্যাঁ!
ঠাট্টা নয়, বিশ্বাস কর দাদা, ভোররাতে মাকেও দেখলাম। অনেক দিন হলো তুই ঘরে ফিরিস নি, আমি একা থাকি আর ভয় নাই বলে মা আমার কাছে শুতে আসে, এইসব। তোর জন্যে মা খুব কাঁদলো। কবে নাকি তুই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে জুয়া খেলেছিস, হাতের আংটি বেচে দিয়েছিস, আরো অনেক অভিযোগ, পরিষ্কার মনেও নেই সব…
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে খোকা বললে, তাই বল! তোর স্বপ্নেরও দেখি মারাত্মক রকমের একটা মোরাল থাকে, তা ভালো…
দুৎ! সবকিছুতেই তোর ঠাট্টা!
খোকা একটা চিমটি দিয়ে বললে, মা তোর কাছে কান্নাকাটি তো করবেই, তুই তো আমার লোকাল গার্জেন…
গার্জেনই তো…
তবু ভালো, আজকাল আর আগেকার মতো কায়দা করে গার্জিয়েন বলিস না।
কিছু একটা ভেবে রঞ্জু বললে, বাড়িতে একটা মিলাদ-টিলাদের ব্যবস্থা কর না; আমার কেমন লাগছে কদিন থেকে।
চল, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তোকে।
রঞ্জু কোনো উত্তর দিল না। খুব বেশি হয় নি সে, বরং ধরে নিয়েছে।
এটা খোকার নিছক কুড়েমিসুলভ এক নিষ্ঠুরতা, পাছে আলসেমির ভাঁজ ভাঙে এই ভয়ে সে বহু কিছুই করতে নারাজ। রঞ্জু যে সন্তুষ্ট নয় এই মুহূর্তে অতি সহজেই তা খোকার কাছে ধরা পড়ে; বুঝতে অসুবিধা হয়।
ভিতরে ভিতরে ও কিভাবে গুমরে উঠছে।
বুঝলেও, বিশেষ কতোগুলো ক্ষেত্রে বেশি আমল দেওয়াটা খোকার স্বভাববিরুদ্ধ; রঞ্জুটা এখনো বড় ছেলেমানুষ…বরং এইভাবে ভাবতে তার ভালোলাগে, সে অভ্যস্ত ও এই জাতীয় ধরে নেওয়া চিন্তা-ভাবনায়। বিশেষ করে রঞ্জু যখন বয়েসে ছোট, জাতে মেয়ে, সর্বোপরি মাথার উপরে তেমন কেউ নেই, এক্ষেত্রে তার সব আকাঙ্ক্ষাই তার কাছে সুলভ অথবা সহজসাধ্য হোক খোকা তা চায় না। খোকা মনে করে এটা একটা সঙ্কট, ফলে তার পদক্ষেপ অযথা হিসেবের ফেরে পড়ে এবং তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটা এক ধরনের সংস্কার, খোকা জানে। কিন্তু একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সে সজ্ঞানেই এই সংস্কারকে মেনে নিয়েছে। এই সংস্কার তার দায়-দায়িত্বকে অল্পবিস্তর আচ্ছন্ন করে রাখলেও খোকা একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসে।
খুব ছোটবেলায় একবার, বেশ মনে পড়ে খোকার–তখন মহামারী চলছে গোটা দেশ জুড়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে দুপয়সার চালতার আচার কিনে খেয়েছিলো সে ছেঁড়া ধুড়ধুড়ি ন্যাতাকাপড় জড়ানো এক নড়বড়ে বুড়োর কাছ থেকে; অথচ বারণ ছিলো, বারণ এবং কড়া পাহারা। তা সত্ত্বেও দুপয়সার আচার সেই বয়েসে এমন ঈপ্সিত এমন বাঞ্ছিত হয়ে উঠেছিলো যে নিষেধের বেড়া ডিঙাতে তিলবিন্দু দ্বিধান্বিত হয় নি সে। ফলে যা অনিবার্য তাই ঘটেছিলো, কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলো সে। মা তখনো বেঁচে; যমে-মানুষে টানাটানি যাকে বলে, সমানে তা-ই চললো। রঞ্জুর। ব্যাপারটা ঠিক এই ধরনের না হলেও খোকা তার বিচারের মাপকাঠি এইভাবেই তৈরি করেছে।
খুব ক্লান্ত দেখায় রঞ্জুকে। এতো মলিন কেন রঞ্জুর মুখ? মা মারা গিয়েছে আজ প্রায় দুবছর হতে চললো; এই দুবছরে রঞ্জুই তার সবচেয়ে ধারে-কাছের মানুষ, উঠতে বসতে দুবেলা সমানে সে তাকে দেখে। আসছে, অথচ অনেক কিছুই সে জানে না, বুঝতে পারে না, কখনো কখনো এমন দুর্বোধ্য এমন অচেনা মনে হয় রঞ্জুকে যার ফলে সে-ই খেই হারিয়ে ফেলে। কে জানে, হয়তো এই দীর্ঘ ছবছরে নিঃশব্দ
পদসঞ্চারে একটি ছায়া প্রসারিত হয়েছে রঞ্জুর মনের গহনে, যে ছায়া মানুষের একটি খণ্ডিত অতীতকে চিরকালের জন্যে অবিচলভাবে ধরে রাখে, নিয়ন্ত্রণ করে সমগ্র ভবিষ্যৎকে। অনেক কিছুই মনে হয় খোকার; বিশেষ একটি অভাব বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে মুখের ছবিটিকে বিষাদের আচ্ছন্নতায় হিম-শীতল করে তুলছে, বেঁচে থাকা উচিত ছিলো মার।
প্রসঙ্গ পরিবর্তনের জন্যে খোকা বললে, বাইরে বেরুনোর মতো জমা-কাপড় আছে তো?
বোধহয় আছে, দেখছি…
বোঝা গেল রঞ্জু চালাকিটার বিন্দু-বিসর্গও ধরতে পারে নি।
সত্যি, রঞ্জুটা একটা ল্যাঠা; এই আলো, এই আঁধার, থেকে থেকে একটা কিছু ঘটে ওর ভিতর। স্বভাবটাও তৈরি করেছে বিদঘুটে। ইসকুলের পাট চুকিয়ে এ বছর থেকেই কলেজে যাচ্ছে, ব্যাস্, ওই পর্যন্তই! সমবয়েসী কারো সঙ্গে মেলামেশা, ছিটেফোঁটা শপিং-এ বেরুনো, কোনো ফাংশন অথবা সিনেমায় যাওয়া, কখনো কোনো কিছুতেই ও নেই। সময়মতো কলেজে যাওয়া, লেবু আর ময়নাকে দিয়ে সংসারের কাজ গুছিয়ে নেওয়া, মাঝে মাঝে দুএকটা গল্প-উপন্যাসের পাতা ওল্টানো, নিজের পড়া করা, এইসব নিয়েই সময় পার হয়ে যায় রঞ্জুর। বাগানের ব্যাপারে তুমুল উৎসাহ ছিলো তার এক সময়। বাগান পরিচর্যার জন্যে রমনা পার্কের এক মালীর সঙ্গে বন্দোবস্ত করে নিয়েছে তারা। হাতেম আলী অর্থাৎ ঐ গুণধর মালীরতুটি নিয়মিত তার মাসোহারাটি গুণে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাগানে আগাছা-কুগাছা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছুর তদারকি করেছে রঞ্জু, দুঘণ্টার মাঝে দম ফেলার ফুরসত মিলতো না ছোকরা হাতেম আলীর। কিন্তু এখন! সেখান থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে রঞ্জু। আগে হপ্তায় কদিন সে কামাই করছে রঞ্জুর তা হিসেব থাকতো, এখন গা ছেড়ে দিয়েছে। বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনিবার্যভাবেই কিছু না কিছু পরিবর্তন। ঘটে, রঞ্জুর সেই পরিবর্তন কোন খাতে বয়ে চলেছে সে জানে না, গা ছমছম করে খোকার, তার অন্তরাত্মা কেঁপে যায়। তার নিজের এখন বাইশ বছর চলছে; টু লিটল ডাকস…টয়েন্টি টু তার মনে হয় না, তার মনে হয়। এক জোড়া উদ্ধত রাগী গোখরো ফণা তুলে রেখেছে তার দিকে, সুযোগ। পেলেই ছোবল মারবে।
বয়েস কতো হলো রঞ্জুর? গালে রেজর টানতে টানতে হিসেব করে খোকা, সাত বছরের ছোট রঞ্জু। আরো দুটি বোন ছিলো রঞ্জু আর তার মাঝখানে, একজন অঞ্জু অপরজন মঞ্জু। বাঞ্ছারামপুরে মামা বাড়ির পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটের শ্যাওলায় পা হড়কে পানিতে পড়ে যায় অঞ্জ, মঞ্জু নামে তাকে ধরতে; বাঁচানো যায় নি দুজনের একজনকেও। রঞ্জু যেন মামাবাড়ি সেই আশ্চর্য শান্ত তিরতিরে পুকুর যার গভীর গোপন তলদেশে চিরকালের মতো ঘুমিয়ে আছে অঞ্জু আর মঞ্জু।
দাড়ি কামানো শেষ করে গোসলখানায় গেল খোকা; একটানা চারদিন বিরতির পর শরীর জুড়ানো দীর্ঘ গোসল চাই।
ধন্যবাদ আপনাদের আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। পাপমোচন উপন্যাসটি সংযোজিত করার জন্য বিনিতভাবে অনুরোধ করছি।।।অনেক লেট হলে পড়ার জন্য একটা লিংক দিলে উপকৃত হতাম।