॥ ১ ॥
‘সুখবর বলে মনে হচ্ছে?’
লালমোহনবাবু ঘরে ঢুকতেই ফেলুদা তাঁকে প্রশ্নটা করল। আমি নিজে অবিশ্যি সুখবরের কোনো লক্ষণ দেখতে পাইনি। ফেলুদা বলে চলল, ‘দুবার পর পর বেল টেপা শুনেই বুঝেছিলাম আপনি, কোনো সংবাদ দিতে ব্যগ্র তবে সেটা সুসংবাদ না দুঃসংবাদ বুঝতে পারিনি। এখন স্পষ্ট বুঝছি সুসংবাদ।’
‘কী করে বুঝলেন?’ বললেন লালমোহনবাবু, ‘আমি ত হাসিনি।’
‘এক নম্বর, আপনার মাঞ্জা দেওয়া চেহারা। হল্দে পাঞ্জাবিটা নতুন, দাড়ি কামিয়েছেন নতুন ব্লেড দিয়ে, আফটার-শেভ লোশনের গন্ধে ঘর মাতোয়ারা, তারপর আপনি সচরাচর নটার আগে আসেন না; এখন নটা বাজতে সতেরো।’
লালমোহনবাবু হেসে ফেললেন। ‘ঠিকই ধরেছেন মশাই! আপনাকে ব্যাপারটা না বলা অবধি সোয়াস্তি পাচ্ছিলাম না। সেই পুলক ঘোষালকে মনে আছে ত?’
‘চিত্র পরিচালক? যিনি আপনার বোম্বাইয়ের বোম্বেটে থেকে হিন্দি ছবি করেছিলেন?’
‘শুধু ছবি নয়, হিট ছবি। তখন থেকেই বলে রেখেছিল ভবিষ্যতে আবার আমার গল্প থেকে ছবি করবে। অ্যাদ্দিনে সেটা ফলেছে।’
‘এটা কোনটা?’
‘সেই কারাকোরামের গল্পটা। অবিশ্যি কারাকোরাম আর নেই; সেখানে হয়ে গেছে দার্জিলিং।’
‘কোথায় কারাকোরাম, আর কোথায় দার্জিলিং!’
‘তবু নেই মামার চেয়ে ত কানা মামা ভালো মশাই। আর আমার রেটও ত বেড়ে গেছে অনেক। ফর্টি থাউজ্যাণ্ড!’
‘বলেন কি! আমার দু বছরের রোজগার।’
‘তা যেখানে ছাপ্পান্ন লাখ টাকা বাজেট সেখানে রাইটারকে ফর্টি থাউজ্যাণ্ড দেবে না? ওখানে টপ অভিনেতারা কত পায় জানেন?’
‘তা মোটামুটি জানি বৈ কি!’
‘তবে? আমার এ ছবিতে হিরো করছে রাজেন রায়না। সে নিচ্ছে বারো লাখ। আর ভিলেন করছে মহাদেব ভার্মা। এর রেট আরো বেশি। সবে পাঁচখানা ছবি করেছে, কিন্তু পাঁচখানাই সিলভার জুবিলি হিট।’
‘তা পুলক ঘোষাল আপনার এত পেয়ারের, আপনাকে দার্জিলিং ডাকল না?’
‘সেইটে বলতেই ত আসা! ডাকবে না মানে? ওর গ্র্যাণ্ডফাদার ডাকবে। আর আমাকে একা নয়, আমাদের তিনজনকেই ডেকেছে। অবিশ্যি আমি বলিচি ইনভিটেশনের দরকার নেই—আমরা এমনিই যাব। কী—ঠিক বলিনি?’
শেষ কবে গেছি দার্জিলিং? মনেই নেই; শুধু এইটুকু মনে আছে যে ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির শুরু দার্জিলিং-এ। আমি ছিলাম খুব ছোট, আর ওর নরম-গরম ধমক প্রায়ই শুনতে হত। এখন ফেলুদা আমাকে ওর অ্যাসিসট্যান্ট বলে পরিচয় দেয়। তখন সেটা করতে গেলে লোকে হাসত। বেশ কিছুদিন থেকেই মনে হয়েছে যে আবার দার্জিলিং গেলে বেশ হয় কিন্তু গত পাঁচ-ছ বছরে ফেলুদার পসার বেড়েছে অনেক। সেই সঙ্গে অবিশ্যি রেটও বেড়েছে। আজকাল ওর দিব্যি চলে যায়। গত ছ’মাসে পাঁচটা তদন্ত করতে হয়েছে ওকে। তার মধ্যে চন্দননগরের একটা জোড়া খুনের কেস ছাড়া সব কটাতেই ও সফল হয়েছে, তারিফ পেয়েছে, পয়সা কামিয়েছে। তিন মাস আগে একটা কালার টি ভি কিনেছে ও। তাছাড়া ওর পুরোন বইয়ের শখ, সেই সব বই বিস্তর কিনে ও তাক ভরিয়েছে। এটা আমি বুঝেছি যে ফেলুদা খরুচে লোক। টাকা জমানোর দিকে ততটা আগ্রহ নেই। যা ঘরে আসে তার বেশির ভাগই খরচ হয়ে যায়, আর সেটা যে শুধু নিজের পিছনে তা নয়। লালমোহনবাবু আমাদের জন্য এত করেন বলে ফেলুদা সুযোগ পেলেই তাঁকে কিছু না কিছু দেয়। আফটার-শেভ লোশনটা ওরই দেওয়া। সেটা ‘স্পেশাল অকেশনে’ লালমোহনবাবু ব্যবহার করেন। বোঝাই যাচ্ছে আজকে সেরকমই একটা দিন।
সামনে পুজো, ফেলুদা ঠিকই করেছিল মাস কয়েক আর কোনো কাজ নেবে না। কাজেই দার্জিলিং যাওয়ায় তার আপত্তির কোনো কারণ থাকতে পারে না। এমনিতেই দার্জিলিং ওর খুব প্রিয় জায়গা। ও বলে বাংলা দেশটা ভারতবর্ষের কটিদেশে হওয়াতে এখানে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটেছে—বাংলার উত্তরে হিমালয় আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এটা ভারতবর্ষের আর কোনো প্রদেশে নেই। এটা নাকি একটা ‘অ্যাক্সিডেন্ট অফ জিয়োগ্রাফি’। ‘এত বৈচিত্র্য আর কোনো একটা প্রদেশে পাবি না,’ বলে ফেলুদা। ‘শস্য-শ্যামলাও পাবি, রুক্ষতাও পাবি, সুন্দরবনের মতো জঙ্গল পাবি, গঙ্গা পদ্মা মেঘনার মতো নদী পাবি, সমুদ্র পাবি, আবার উত্তরে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘাও পাবি।’
‘বলুন মশাই যাবেন কি না,’ শ্রীনাথের আনা গরম চায়ে চুমুক দিয়ে এক মুঠো চানাচুর মুখে পুরে বললেন লালমোহনবাবু।
‘দাঁড়ান, আরেকটা ডিটেল জেনে নিই।’
‘বলুন কী জানতে চান।’
‘গেলে কবে যাওয়া?’
‘ওদের একটা দল অলরেডি দার্জিলিং পৌঁছে গেছে। তবে আগামী শুক্রবারের আগে কাজ আরম্ভ হচ্ছে না। আজ হল রবি।’
‘শুটিং দেখার ব্যাপারে আমার তেমন কোনো উৎসাহ নেই। কাজটা কি মাঠে-ঘাটে হচ্ছে, না বাড়ির ভিতর?’
‘বিরূপাক্ষ মজুমদারের নাম শুনেছেন?’
‘বেঙ্গল ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর?’
‘ছিলেন, এখন আর নেই। একটা মাইল্ড সেরিব্রাল স্ট্রোকের পর বাহান্ন বছর বয়সে রিটায়ার করেন।’
‘তাছাড়া ওঁর ত আরো অনেক গুণপনা আছে না? ভদ্রলোক স্পোর্টসম্যান ছিলেন না?’
‘এককালে ভারতবর্ষের বিলিয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। শিকারও বোধহয় করতেন।’
‘ওঁর একটা শিকারকাহিনী একটা পত্রিকায় পড়েছি।’
‘খুব বড় ফ্যামিলির ছেলে। এঁর পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গে নয়নপুরের জমিদার ছিলেন। দার্জিলিং-এ ওঁদের একটা পুরোনো বাড়ি আছে। একতলা বাংলো টাইপের ছড়ানো বাড়ি, ষোলটা ঘর। বিরূপাক্ষ মজুমদার রিটায়ার করার পর সেখানে গিয়েই থাকেন। ওঁদের বাড়ির দুখানা ঘরে কিছু শুটিং হবে। পারমিশন হয়ে গেছে। বাকি শুটিং বাইরে নানান জায়গায় ছড়িয়ে। এরা মাউন্ট এভারেস্ট হোটেলে রয়েছে। আমরা অন্য কোনো হোটেলে থাকতে পারি।’
‘সেই ভালো। ফিল্ম পার্টির সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখিটা আমার পছন্দ হয় না। দার্জিলিং-এ ইদানীং অনেক নতুন হোটেল হয়েছে। তার একটাতে থাকলেই হল।’
আমি বললাম, ‘হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘার একটা বিজ্ঞাপন দেখেছি কাগজে।’
‘ঠিক বলেছিস,’ বলল ফেলুদা। ‘আমিও দেখেছি।’
‘তাহলে আর কী’, বললেন লালমোহনবাবু, ‘ব্যবস্থা করে ফেললেই হয়।’
ব্যবস্থা তিন দিনের মধ্যেই হয়ে গেল।
বিষ্যুদবার ত্রিশে সেপ্টেম্বর দুপুরে এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি আমাদের সঙ্গে পুলক ঘোষালও চলেছেন। আর সে-সঙ্গে চলেছে ছবির হিরো, হিরোইন আর ভিলেন। লালমোহনবাবুর গল্পে কোনো হিরোইন ছিল না; সেটা বুঝলাম এঁরা ঢুকিয়েছেন। পুলক ঘোষাল ফেলুদাকে দেখে এক গাল হেসে বললেন, ‘লালুদার গল্প হওয়াতে আবার আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ভেরি লাকি। তবে আশা করি আগের বারের মতো এবারও আপনাকে তদন্তে জড়িয়ে পড়তে হবে না।’
পুলক ঘোষাল হিরো রাজেন্দ্র রায়না, হিরোইন সুচন্দ্রা আর ভিলেন মহাদেব ভার্মার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। সুচন্দ্রাকে দেখতে ভালো, তবে রং একটু বেশি মেখেছেন, রাজেন রায়নার ছবি আমি আগেই দেখেছি—বেশ স্মার্ট, হাসিখুশি ভদ্রলোক, একটা দাড়ি আছে বেশ ছোট করে আর যত্ন করে ছাঁটা, লম্বায় ফেলুদারই মতো, আর শরীরটাকেও বেশ ফিট বলেই মনে হল। ইনি নবাগত হলেও বয়স অন্তত চল্লিশ তো হবেই; তবে সেটা মেক-আপ নিলে ক্যামেরায় আর ধরা পড়বে বলে মনে হয় না। লালমোহনবাবু ওঁর হিরো প্রখর রুদ্রের যে বর্ণনা দিয়েছেন—লম্বায় সাড়ে ছ ফুট, পঞ্চাশ ইঞ্চি ছাতি, খাঁড়ার মতো নাক, আর চোখ দেখলে মনে হয় যেন আগুন জ্বলছে—সেরকম চেহারার কোনো অভিনেতা কোনো দেশে আছে বলে আমার জানা নেই।
আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগল মহাদেব ভার্মাকে। ইনি হলেন যাকে ইংরিজিতে বলে পালিশ করা ভিলেন। চোখ দুটো ঢুলু ঢুলু, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি, নাকের নীচে সরু চাড়া দেওয়া গোঁফ, দেখে মনে হয় প্রয়োজনে খুন করতে কিছুমাত্র দ্বিধা করবেন না। তার উপর দেখলাম ভদ্রলোক পারফিউম ব্যবহার করেছেন, তাতে বোঝা যায় ইনি শৌখিনও বটে। পারফিউম অবিশ্যি রাজেন্দ্র রায়নাও মেখেছেন, তবে তার গন্ধ অন্য। ফেলুদা পরে বলেছিল যে মহাদেব ভার্মার সেণ্টটা হচ্ছে ডেনিম, আর রায়নারটা হল ইয়ার্ডলি ল্যাভেণ্ডার।
এয়ার পোর্টেই লাউড স্পীকারে বলল যে বাগডোগরার প্লেন এক ঘণ্টা লেট আছে। তাই আমরা সকলেই রেস্টোরান্টে চা-কফি খেতে চলে গেলাম। এ ব্যবস্থাটা অবিশ্যি পুলক ঘোষালই করলেন, আর আমরা তাঁর অতিথি হয়েই গেলাম।
রেস্টোরান্টে মহাদেব ভার্মার সঙ্গে ফেলুদার কথা হল। আমি ফেলুদার পাশেই বসেছিলাম, তাই সব কথাই শুনতে পেলাম।
ফেলুদাই প্রথম শুরু করল, বলল, ‘আপনি ত বোধহয় কয়েক বছর হল এ লাইনে এসেছেন?’
ভার্মা বললেন, ‘হ্যাঁ, সবে তিন বছর হয়েছে। তার আগে আমার ছিল ভ্রমণের নেশা। ভারতবর্ষের বহু জায়গায় ঘুরেছি; এমন কি বছর পাঁচেক আগে লে-লাদাক পর্যন্ত ঘুরে এসেছি। সেখান থেকে যাই কাশ্মীর। শ্রীনগরে একটা শুটিং হচ্ছিল, সেই ছবির পরিচালকের সঙ্গে ঘটনাচক্রে পরিচয় হয়; তিনিই আমাকে ছবিতে অফার দেন। এখন অবিশ্যি আর ফিল্ম ছাড়ার কথা ভাবাই যায় না।’
লালমোহনবাবু কিছুক্ষণ থেকেই উস্খুস্ করছিলেন, এবার তাঁর প্রশ্নটা করে ফেললেন। ‘আপনি যে চরিত্রটা করছেন সেটা আপনার কেমন লাগল?’
‘খুব জোরদার চরিত্র,’ বললেন মহাদেব ভার্মা। ‘বিশেষ করে আমি যেখানে হিরোইনকে আমার সামনে ধরে হিরোর প্রতি বাক্যবাণ নিক্ষেপ করছি, আর হিরো হাতে রিভলভার নিয়েও কিছু করতে পারছে না, সে দৃশ্যটা সত্যিই নাটকীয়।’
অবিশ্যি এমন কোনো দৃশ্য বইয়ে নেই। লালমোহনবাবুর মুখের হাসিটা তাই কেমন যেন শুকিয়ে গেল।
এবার মহাদেব ভার্মা ফেলুদাকে একটা প্রশ্ন করলেন।
‘আপনি ত গোয়েন্দা বলে শুনলাম। তা গোয়েন্দারা ত শুনেছি একজন মানুষকে দেখেই তার বিষয়ে অনেক কিছু বলে দিতে পারেন। আপনি আমাকে দেখে কিছু বলুন ত দেখি।’
ফেলুদা হেসে বলল, ‘গোয়েন্দারা অবশ্যই জাদুকর নন। তাঁরা যেটুকু বোঝেন তার কিছুটা পর্যবেক্ষণের জোরে, আর কিছুটা মনস্তত্ত্বের সাহায্যে। এ দুটোর ভিত্তিতে এটুকু বলতে পারি যে আপনি কিছুটা নিরাশ বোধ করছেন।’
‘কেন?’
‘কারণ আপনি প্রায়ই কথা বলতে বলতে এদিক ওদিক দেখছেন আর বেশ বুঝতে পারছেন যে এই লোক-ভর্তি রেস্টোরান্টে আপনাকে অনেকেই চিনতে পারছে না। একটু আগেই লক্ষ করলাম যে আপনি চারপাশে চোখ বুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অথচ হিরো রাজেন্দ্র রায়নাকে অনেকেই চিনেছে, অনেকেই এগিয়ে এসে তার অটোগ্রাফ নিয়েছে। শেষে দেখলাম আপনি আপনার কালো চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখলেন যদি তার ফলে কেউ চেনে; কিন্তু তাতেও কোনো ফল হল না দেখে আপনি আবার চশমাটা পরে নিলেন।’
মহাদেব ভার্মা এবার আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আপনি হান্ড্রেড পারসেন্ট ঠিক বলেছেন। বম্বেতে আমাকে পাবলিক প্লেসে দেখলে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে যায়। আপনাদের বাঙালীরা বোধহয় বেশি হিন্দি ছবি দেখেন না।’
‘যথেষ্ট দেখেন,’ বললেন লালমোহনবাবু, ‘কিন্তু আপনার তিনখানা ছবি এখনো এখানে রিলিজ হয়নি। অবিশ্যি আমি যে সিনেমার খুব খবর রাখি তা নয়, তবে আমার গল্পে যিনি ভিলেনের পার্ট করছেন তাঁর বিষয়ে গত ক’দিনে কিছু খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম ফিল্ম পত্রিকাগুলো থেকে।’
‘আই সী’, খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বললেন মিঃ ভার্মা। ‘যাই হোক্, মিঃ মিত্তিরের অবজারভেশন যে দারুণ শার্প তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
ফেলুদার পর্যবেক্ষণ শক্তির পরীক্ষা অবিশ্যি দার্জিলিং-এ খুব ভালো ভাবেই হয়েছিল, কিন্তু সেকথা, যাকে বলে, ‘যথাস্থানে’ বলব। আপাতত প্লেন এসে গেছে, আমাদের ডাক পড়ে গেছে, তাই উঠে পড়তে হল। এখন সিকিউরিটি খুব কড়া, আমি জানি ফেলুদা তাই তার কোল্ট রিভলভারটা সুটকেসে চালান দিয়েছে, সেটা ইতিমধ্যে আমাদের অন্য মালের সঙ্গে প্লেনে উঠে গেছে। আজকাল ফেলুদা আর কোনো রিস্ক নেয় না; স্রেফ ছুটি ভোগ করতে গিয়েও তাকে এতবার তদন্তে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে যে ও রিভলভার ছাড়া কোথাও যায় না।
সিকিওরিটি থেকে লাউঞ্জে গিয়ে বসার দশ মিনিটের মধ্যেই ডাক পড়ল—‘দ্য ফ্লাইট টু বাগডোগরা ইজ রেডি ফর ডিপারচার’। আমরা তিনজন আর সেই সঙ্গে শুটিং-এর দল, প্লেনে গিয়ে উঠলাম। এখন আমরা সমতল ভূমিতে, কিন্তু আর ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই উঠে যাব ৬০০০ ফুট উঁচুতে। অক্টোবরে দার্জিলিং-এ বেশ ঠাণ্ডা, ভাবতেই মনটা নেচে উঠছে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে সামনে অ্যাডভেঞ্চার আছে, যদিও সেটা ফেলুদাকে বলায় ও দাবড়ানি দিয়ে বলে দিল, ‘তার কোনো ইঙ্গিত এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, কাজেই তোর আশা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
এরপরে আর আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে যাইনি।