০১. ললিতা-হরণ

ভূমিকা

সপ্তগ্রামে ও চট্টগ্রামে পর্ত্তুগীজ ফিরিঙ্গিগণ যে যে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিল, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাঙ্গালায় মোগল শাসনের শৈশবে তাহা রোম্যান ক্যাথলিক্‌ ধর্ম্মযাজকগণের অত্যাচারের কেন্দ্র হইয়া উঠিয়াছিল। পর্ত্তুগীজ জলদস্যুর অত্যাচার ও তদপেক্ষা অধিক পর্ত্তুগীজ পাদ্রীর উৎপীড়নে বাধ্য হইয়া বাদশাহ শাহ্‌ জহান কাশেম খাঁকে হুগলী আক্রমণ করিতে আদেশ করিয়াছিলেন। মহম্মদ আমীন রচিত বাদশাহনামা অথবা তারিখ-ই-শাহ্‌জহান নামক গ্রন্থে এই সকল ঘটনার প্রকৃত ইতিহাস প্রদত্ত আছে। পর্ত্তুগীজ পাদ্রী ও জলদস্যুর অত্যাচারই যে বাঙ্গালায় পর্ত্তুগীজ শক্তির অধঃপতনের কারণ, ইংরাজ ঐতিহাসিক কীন (H. G. Keene) ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সর্বাধ্যক্ষ স্বর্গীয় ডাক্তার বর্গেস (James Burgess) তাহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়াছেন। ইংরাজ ইষ্ট্‌ ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সাহায্য ব্যতীত শাহ্‌জহান পর্ত্তুগীজগণকে পরাজিত করিতে পারিতেন কিনা সন্দেহ। ১৬২৯ খৃষ্টাব্দে শাহ্‌ জহান সুরট বন্দরের ইংরাজ প্রধানকে মোগল সাম্রাজ্য মধ্যে সর্ব্বত্র সকল সময়ে পর্ত্তুগীজ জাহাজ আক্রমণ করিতে ফর্ম্মাণ প্রদান করিয়াছিলেন। ১৫৬০ খৃষ্টাব্দে ভারতবর্ষে পর্ত্তুগীজগণ কর্ত্তৃক Inquisition বিচার প্রণালী অবলম্বিত হইয়াছিল এবং ১৮১৪ খৃষ্টাব্দে উহা পরিত্যক্ত হইয়াছিল। কীলের ইতিহাসে ও বাদশাহনামায় বাঙ্গালার পর্ত্তুগীজ পাদ্রীর অত্যাচারের বিবরণ দেখিতে পাওয়া যায়। অগষ্টিনিয়ান সম্প্রদায়ভুক্ত খৃষ্টান সন্ন্যাসী (Friar) ম্যানরিক্‌ (Manrique) হুগলী যুদ্ধের যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা ইতিহাস নহে, কারণ তাহা একদেশদর্শী। এই যুগের ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে এই আখ্যায়িকা রচিত হইল।

সুহৃদ্‌বর শ্রীমান্ ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষের অনুরোধে মোগল সাম্রাজ্যের সর্ব্বাপেক্ষা গৌরবময় যুগের ঐতিহাসিক বিবরণ স্বরূপ এই কাহিনী লিপিবদ্ধ হইল। বাদশাহনামা, আমল্‌-ই-সলিহ, রিয়াজ-উস্‌-সালাতীন, মাসির-উল্‌-উমারা প্রভৃতি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক গ্রন্থ সমূহ অবলম্বনে এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক অংশ সঙ্কলিত হইয়াছে। শ্রীযুক্ত হরিদাস সাহা ও শ্রীমান্‌ ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্ত্তৃক ইহার পাণ্ডুলিপি লিখিত হইয়াছিল।

গ্রন্থকার
কলিকাতা
৩রা পৌষ, ১৩২৩

———–

ময়ূখ
প্রথম পরিচ্ছেদ
ললিতা-হরণ

শরৎকাল, মধ্যাহ্ন, ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে সহকারবৃক্ষের ছায়ায় একখানি ক্ষুদ্র নৌকার উপরে বসিয়া জনৈক যুবক অন্যমনস্ক হইয়া গুন্‌গুন্‌ করিয়া গান করিতেছিল। তাহার পার্শ্বে তীর ও ধনু এবং দুই তিনটি সদ্যোনিহত পক্ষী নৌকার উপরে পড়িয়াছিল। ক্ষুদ্র নৌকার অপর পার্শ্বে জনৈক প্রৌঢ় ধীবর লগিতে নৌকা বাঁধিয়া নিশ্চিন্ত মনে নিদ্রা যাইতেছিল। একটি বহুপুরাতন ইষ্টকনির্ম্মিত ঘাটের উপরে সহকার বৃক্ষটি শতাধিক বর্ষপূর্ব্বে জন্ম গ্রহণ করিয়াছিল, কালক্রমে তাহার আকারবৃদ্ধির অনুপাতে প্রাচীন ঘাটেরও জরাবৃদ্ধি হইয়াছিল। ভাদ্রমাস, ভাগীরথী কূলে-কূলে ভরিয়া উঠিয়াছে, প্রাচীন ঘাটের তিন চারিটি মাত্র সোপান ডুবিতে অবশিষ্ট আছে। ঘাটের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া একটি গাভী হরষিত মনে উচ্ছিষ্ট কদলী পত্র চর্ব্বণ করিতেছিল। চারিদিক নিস্তব্ধ। সহসা নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ঘাটের উপর হইতে বামাকণ্ঠে উচ্চারিত হইল, “ঘাটে কাহার নৌকা? নৌকা শীঘ্র সরাইয়া লইয়া যাও।” শব্দ শুনিয়া ধীবরের নিদ্রা ভঙ্গ হইল, যুবকের গান থামিয়া গেল। ধীবর জিজ্ঞাসা করিল,“কে?” যে নৌক সরাইতে বলিয়াছিল, সে পুনরায় বলিল, “তোমরা কেমন লোক গো? নৌকা সরাইতে বলিতেছি সরাও না কেন? মাঠাকুরাণীরা যে ঘাটে যাইতে পারিতেছেন না?” ধীবর ক্রুদ্ধ হইয়া কহিল, “নৌকা সরিবে না, তোর মাঠাকুরাণীদিগকে অন্য ঘাটে যাইতে বল্‌।”

যুবক মুখ তুলিয়া কহিল, “ভুবন?” ধীবর নৌকায় উঠিয় দাঁড়াইয়া কহিল, “মহারাজ?” “কি করিতেছ?” “কেন মহারাজ?” “ভদ্র মহিলারা গঙ্গাস্নানে আসিয়াছেন, এখানে নৌকা থাকিলে তাঁহারা কেমন করিয়া স্নান করিবেন?” “ঠাকুরাণীরা যখন এতদূর আসিয়াছেন তখন আর একটু কষ্ট করিয়া অন্য ঘাটে গেলেই পারেন। কোথাকার কে স্নান করিতে আসিয়াছে, তাহার জন্য মহারাজের নৌকা সরাইব?” “ভূবন, তুমি পাগল হইয়াছ।” “কেন হুজুর?” “আমিত পথের ভিখারী, লোকে কেন আমার অন্যায় আচরণ সহ্য করিবে? তুমি নৌকা সরাইয়া লও।”

ধীবর অগত্য লগি খুলিয়া লইয়া নৌকা সরাইল এবং দূরে নৌকা বাঁধিল। ঘাট পার হইয়া যাইবার সময় যুবক ডাকিয়া কহিল, “আপনারা ঘাটে আসুন, নৌকা সরাইয়া লইয়াছি।” ঘাটের অদূরে একটী বৃহৎ বেণুকুঞ্জ, নদী-কুলের তলদেশ ক্ষয় হওয়ায়, ভাগীরথী-বক্ষে ঢলিয়া পড়িয়াছিল। তাহার নিম্নে বংশখণ্ডে নৌকা বাঁধিয়া ভুবন পুনরায় শয়নের উদ্যোগ করিতেছিল; তখন যুবক কহিল, “ভুবন, তুমি আর আমাকে মহারাজ বলিয়া ডাকিও না।” ধীবর বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেন মহারাজ?” “তুমি আমাকে কেন মহারাজ বলিয়া ডাক?” “হুজুর, আপনার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ সকলেই মহারাজা ছিলেন, আপনার বংশের সকলকেই সেই জন্য মহারাজা বলিয়া থাকি।” “কিন্তু আমিত মহারাজা নহি?” “একদিন হইবেন,—সকলেই বলে যে ছোট রাজার মৃত্যু হইলে আপনি মহারাজা হইবেন।” “ভুল ভুবন, সমস্ত ভুল, বর্ত্তমান মহারাজার পরে কেশব মহারাজা হইবে, আমি যেমন আছি তেমনই থাকিব। তোমরা বর্ত্তমান মহারাজাকে ছোট রাজা বলিয়া এবং আমাকে মহারাজা বলিয়া কেবল আমার অনিষ্ট কর।” “কেন মহারাজ, আপনার পিতার রাজ্য আপনি কেন পাইবেন না?” “খুড়া মহাশয় দিল্লী হইতে ফরমান্ পাইয়াছেন। আমি যখন শিশু ছিলাম তখন খাজনা বাকি পড়িয়াছিল বলিয়া, সুবাদার আমার রাজ্য কাড়িয়া লইয়াছিল, সেই সময় ছোট রাজা দিল্লী হইতে ফরমান্‌ আনাইয়া রাজ্য পাইয়াছেন।” “দুই বৎসর খাজানা বাকি পড়িয়াছিল বলিয়া কি আপনার সাত পুরুষের অধিকার লোপ হইবে?” “বাদ্‌শাহের হুকুম কে অমান্য করিবে?” “তাহা হইবে না মহারাজ, আপনার পিতার রাজ্য আপনিই ফিরিয়া পাইবেন—” সহসা তীর হইতে কে বলিয়া উঠিল, “ময়ূখ, তাহাই সত্য, সত্য, তোমার পিতৃরাজ্য তুমি ফিরিয়া পাইবে।”

যুবক ও ধীবর চমকিত হইয়া চাহিয়া দেখিল, তীরে বেণু কুঞ্জের মূলে এক দীর্ঘকায় গৈরিকধারী সন্ন্যাসী দাঁড়াইয়া আছেন। তাঁহাকে দেখিয়া যুবকের দেহ রোমাঞ্চিত হইল, তিনি ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রভু, আপনি কি বলিতেছেন?”

“সত্য বলিতেছি, ময়ূখ, কিছুদিন পরে তুমি তোমার পিতৃরাজ্যের অধীশ্বর হইবে।” যুবক দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিল, “প্রভু, তাহা অসম্ভব।”

“জগতে কিছুষ্ট অসম্ভব নহে, ময়ূখ। ধর্ম্মপথে থাকিও, সত্য হইতে বিচলিত হইও না, দেবতা, ব্রাহ্মণ, রমণী ও শিশুকে রক্ষা করিও, অসহায় ও অনাথের সহায় হইও, তাহা হইলে ভগবান্‌ একদিন মুখ তুলিয়া চাহিবেন। সম্মুখে পরীক্ষা উপস্থিত।” যুবক ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া মুখ তুলিয়া দেখিল সন্ন্যাসী অন্তর্হিত হইয়াছেন। যুবক বিম্মিত হইয়া ধীবরের মুখের দিকে চাহিলেন, ধীবরও তাঁহার মুখের দিকে চাহিল। যুবক জিজ্ঞাসা করিল, “ভুবন, সন্ন্যাসী ঠাকুর কোন্‌ দিকে গেলেন?” ভুবন মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে কহিল, “তাই ত! ঠাকুর কোন্‌ দিকে গেলেন?” “তুমি দেখ নাই?” “না— মহারাজ, আমি চক্ষু মুদিয়া ছিলাম ” “কেন?” “মহারাজ,—” “ভুবন, আবার মহারাজ?” “হুজুর, আমার সাতপুরুষ যে কথা বলিয়া আসিয়াছে আমি একদিনে সে অভ্যাস কেমন করিয়া ছাড়িব?” “ভাল। চক্ষু মুদিয়াছিলে কেন?” “ভয়ে।” “সে কি ভুবন, তোমার ভয়?” “মহারাজ, মানুষকে অথবা জানোয়ারকে ডরাই না। কিন্তু ঐ গেরুয়াপরা ঠাকুরদের দেখিলে আমার বুক কাঁপিয়া উঠে।” “সত্য বলিয়াছ, সন্ন্যাসীরা বড়ই ক্রোধনস্বভাব।”

ভুবন কথা কহিল না দেখিয়া যুবক তাহার দিকে চাহিলেন, দেখিলেন সে দূরে নদীবক্ষে একখানি নৌকার দিকে চাহিয়া আছে। যুবক তখন পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভুবন, কি দেখিতেছ?” ভুবন মুখ না ফিরাইয়াই কহিল, “মহারাজ, নৌকা খানা বড় জোরে চলিতেছে।” “বোধ হয়, ফৌজদারের ছিপ্‌।” “না, ছিপ্‌ নয়, হুজুর, একখানা কোশা।” “কোশা কি কখনও জোরে চলিতে পারে?” “ফিরিঙ্গীর কোশা চলে।” “এখানে ফিরিঙ্গীর কোশা কোথা হইতে আসিবে? সপ্তগ্রাম বহুদূর।” “আমিও তাহাই ভাবিতেছি।” “আমাদের মক্‌সুসাবাদে বাদশাহী নাওয়ারার কোশাত নাই। হয়ত ঢাকা হইতে আসিয়াছে।” “হুজুর, প্রকাণ্ড কোশা, একদিকে পঞ্চাশখানা বৈঠা পড়িতেছে—”

সহসা ভুবন কাঁপিয়া উঠিল, যুবক ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি?” ভুবন উত্তর না দিয়া নৌকা হইতে তাহার ধনু উঠাইয়া লইল, তাহা দেখিয়া যুবকও ধনু উঠাইলেন। দেখিতে দেখিতে একখানা দীর্ঘ নৌকা তীরবেগে গঙ্গার মধ্যস্থলে আসিয়া পৌঁছিল। দুই তিন খান বৃহৎ মহাজনী নৌক পালভরে ধীরে ধীরে উজান চলিতেছিল, কোশাখানি তাহাদের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। দুইতিন বার বন্দুকের শব্দ হইল, সঙ্গে সঙ্গে একখানি নৌকা ডুবিয়া গেল। সেই সময়ে ভুবন বলিয়া উঠিল, “মহারাজ, ঠিক বলিয়াছিলাম, ফিরিঙ্গি হার্ম্মাদের কোশা, তিন খান নৌকাই মরিবে।”

ক্রমাগত বন্দুকের শব্দ হইতে লাগিল; দেখিতে দেখিতে তিনখানি নৌকাই ডুবিয়া গেল। সহসা নক্ষত্রবেগে কোশা তীরের দিকে ছুটিয়া আসিল, এবং দেখিতে দেখিতে পূর্ব্ববর্ণিত জীর্ণ ঘাটে লাগিল। ঘাট হইতে বামা-কণ্ঠ-নিঃসৃত আর্ত্তনাদ শ্রুত হইল; তাহা শুনিয়া যুবক কহিলেন, “ভুবন, নৌকা ছাড়িয়া দাও।”

“হুজুর, বলেন কি? আমরা এই দুইজন লোক, হার্ম্মাদের নৌকায় পঞ্চাশ জন বন্দুকধারী আছে, জানিয়া শুনিয়া মরিতে যাইব?” “নৌকা খুলিয়া দাও, না দিলে আমি তীরে নামিয়া যাইব।” “একই কথা, তবে একটা কথা রাখুন, নৌকা এই বাঁশঝাড়ের মধ্যে ঢুকাইয়া দিই, তাহা হইলে সহজে দেখিতে পাইবে না। আসুন, দুইজনে তীর ছাড়িতে আরম্ভ করি।”

ক্ষুদ্র নৌকা অনায়াসে বেণুকুঞ্জে প্রবেশ করিল; যুবক দেখিলেন, ঘাটের উপরে একজন ফিরিঙ্গি একটি রমণীকে নৌকায় উঠাইবার চেষ্টা করিতেছে, রমণী ঘাটের সোপানগুলি আকর্ষণ করিয়া আত্মরক্ষার চেষ্টা করিতেছে, আর বলিতেছে, “হরি মধুসূদন, রক্ষা কর।” সহসা দুইটী তীক্ষ্ণ শর আসিয়া দস্যুর চক্ষু ও বাম স্কন্ধ বিদ্ধ করিল, সে ঘাটের উপর হইতে জলে পড়িয়া গেল। নাবিকগণ ও দুই তিনজন ফিরিঙ্গী নৌকার ছিদ্র মেরামত করিতেছিল, তাহারা আহত ব্যক্তিকে জল হইতে তীরে উঠাইল। বেণুকুঞ্জ হইতে শ্রাবণের বারিধারার ন্যায় শরবর্ষণ হইতে লাগিল, দশ পনর জন আহত হইল। তাহা দেখিয়া নাবিক ও ফিরিঙ্গিগণ ঘাটের পার্শ্বে আশ্রয় লইয়া বন্দুক ধরিল। দস্যুপরিত্যক্তা রমণী চেতনা হারাইয়া ঘাটের উপরে পড়িয়া রহিল।

বন্দুকের সহিত ধনু লইয়া কতক্ষণ যুদ্ধ চলিতে পারে? ভুবন দুই তিন স্থানে আহত হইয়াছিল, ক্রমে তূণের শর ফুরাইয়া আসিল, তখনও অবিরাম গুলি বর্ষণ হইতেছিল। একটি গুলি আসিয়া যুবকের কর্ণমূলে লাগিল, যুবক মূর্চ্ছিত হইয়া নৌকার উপরে পতিত হইলেন। তাহা দেখিয়া ভুবন নৌকা টানিয়া বাহির করিল এবং বন্ধনরজ্জু দন্তে ধারণ করিয়া জলে লাফাইয়া পড়িল; স্রোতের মুখে ক্ষুদ্র নৌকা দ্রুতবেগে ভাসিয়া গেল। তখন ফিরিঙ্গিগণ নৌকা মেরামত করিয়া মূর্চ্ছিতা রমণীকে তাহাতে উঠাইয়া লইল এবং নৌকা ভাসাইয়া দক্ষিণাভিমুখে চলিয়া গেল।

ফিরিঙ্গিগণের নৌকা দৃষ্টিপথের বহির্ভূত হইলে, সেই সন্ন্যাসী ঘাটের উপরে আসিয়া দাঁড়াইল এবং কহিল, “অদ্য এই প্রথম, গঞ্জালিস্ আজি হইতে আমার প্রতিশোধ আরম্ভ। বাঙ্গালাদেশ ফিরিঙ্গী দস্যুর অত্যাচার হইতে মুক্ত করিব।” সন্ন্যাসী জলে নামিল এবং স্রোতে গা ভাসাইয়া দিয়া দক্ষিণাভিমুখে চলিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *