প্রথম অধ্যায়
১। মনুমেকাগ্রমাসীনমভিগম্য মহর্ষয়ঃ।
প্রতিপূজ্য যথান্যায়মিদং বচনমব্রুবন ॥
মহর্ষিগণ একাগ্রচিত্তে উপবিষ্ট মনুর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে যথাবিধি সম্মানিত করে এই কথা বললেন।
২। ভগবন্ সর্ববর্ণানাং যথাবদনুপূর্বশঃ।
অন্তরপ্রভবাণাঞ্চ ধর্মান্ নো বক্তুমর্হসি ॥
হে ভগবন, যথাক্রমে সকল বর্ণের এবং তাদের মিশ্রণজাত বর্ণসমূহের১ ধর্ম আমাদের বলতে আজ্ঞা হয়।
৩। ত্বমেকো হ্যস্য সর্বস্য বিধানস্য স্বয়ম্ভুবঃ।
অচিন্ত্যস্যারপ্রমেয়স্য কার্যতত্ত্বার্থবিৎ প্রভো ॥
হে প্রভু, ব্রহ্মার এই সকল অচিন্তনীয় ও অপরিমেয় বিধানের কার্য ও তত্ত্ব সম্বন্ধে একমাত্র আপনিই জানেন।
৪। স তৈঃ পৃষ্টস্তথা সম্যগমিতৌজা মহাত্মভিঃ।
প্রত্যুবাচার্চ্য তান্ সর্বান্ মহর্ষীণ্ শ্রূয়তামিতি ॥
অসীম শক্তিমান্ সেই (মনু) মহাত্মা (মুনিগণ) কর্তৃক সম্যক্ভাবে জিজ্ঞাসিত হয়ে সেই সব মহর্ষিগণকে সংবর্ধনা করে উত্তর দিলেন—শুনুন।
৫। আসীদিদং তমোভূতমপ্রজ্ঞাতমলক্ষণম্।
অপ্রতকর্ম্যবিজ্ঞেয়ং প্রসুপ্তুমিব সর্বতঃ ॥
(প্রলয়কালে) এই (পরিদৃশ্যমান জগৎ) অন্ধকারাচ্ছন্ন, অপ্রজ্ঞাত২, লক্ষণহীন৩, অননুমেয় ও অবিজ্ঞেয় ছিল ; যেন সব দিকে (জগৎ) ছিল নিদ্রিত।
৬। ততঃ স্বয়ম্ভুৰ্ভগবানব্যক্তো ব্যঞ্জয়ন্নিদম্।
মহাভূতাদিবৃত্তৌজাঃ প্রাদুরাসীত্তমোনুদঃ ॥
তারপর (প্রলয়ানন্তর) ভগবান্, ইন্দ্রিয়ের অগোচর, অপ্রতিহত শক্তিসম্পন্ন, তমোনুদ৪ স্বয়ম্ভু এই মহাভূতাদি৫ ব্যক্ত করে আবির্ভূত হলেন।
৭। যোহসাবতীন্দ্রিয়গ্রাহ্যঃ সুক্ষ্মোহব্যক্তঃ সনাতনঃ।
সর্বভূতময়য়াহচিন্ত্যঃ স এব স্বয়মুদ্ধভেী ॥
ঐ যিনি ইন্দ্রিয়ের অগোচর, সূক্ষ্ম, অব্যক্ত, শাশ্বত, সকল জীবের আত্মা এবং অচিন্তনীয়, তিনি নিজেই (মহৎ প্রভৃতি কার্যরূপে) আবির্ভূত হলেন।
৮। সোহভিধ্যায় শরীরাৎ স্বাৎ সিসৃক্ষুর্বিবিধাঃ প্রজাঃ।
অপ এব সসর্জাদৌ তাসু বীজমবাসৃজৎ ॥
তিনি নিজদেহ থেকে নানাবিধ মানুষ সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে ধ্যানপূর্বক প্রথমে জলই সৃষ্টি করলেন, তাতে (নিজের শক্তিরূপ) বীজ নিক্ষেপ করলেন।
৯। তদণ্ডমভবদ্ধৈমং সহস্রাংশুসমপ্ৰভম্।
তম্মিন্ জজ্ঞে স্বয়ং ব্রহ্মা সর্বলোকপিতামহঃ ॥
সেই (বীজ) সূর্যের ন্যায় প্রভাবিশিষ্ট সুবর্ণ অণ্ড হল। সকল লোকের পিতামহ ব্রহ্মা স্বয়ং তাতে জন্মগ্রহণ করলেন (অর্থাৎ শরীর ধারণ করলেন)।
১০। আপো নারা ইতি প্ৰোক্তা আপো বৈ নরসুনবঃ।
তা যদস্যায়নং পূর্বং তেন নারায়ণঃ স্মৃতঃ ॥
জলকে বলা হয় নারা, জল নরের অপত্য। সেই জল যেহেতু পূর্বে তাঁর (নরের) আশ্রয়। ছিল, সেইজন্য তিনি নারায়ণ নামে অভিহিত হন।
১১। যত্তৎ কারণমব্যত্তং নিত্যং সদসদাত্মকম্।
তদ্বিসৃষ্টঃ স পুরুষো লোকে ব্রহ্মেতি কীর্ত্যতে ॥
যে (পরমাত্মা) [সৃষ্ট বস্তুর] কারণ, ইন্দ্রিয়ের অগোচর, শাশ্বত, যিনি সৎও বটেন অসৎও বটেন ; তাঁর উৎপাদিত সেই পুরুষ, পৃথিবীতে ব্রহ্মা নামে ঘোষিত হন।
১২। তস্মিন্নণ্ডে স ভগবানুষিত্বা পরিবৎসরম্।
স্বয়মবাত্মনো ধ্যানাত্তদণ্ডমকরোদ্দ্বিধা ॥
সেই ভগবান্ সেই অণ্ডে এক বৎসর বাস করে নিজেই নিজের ধ্যানবলে সেই অণ্ডকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিলেন।
১৩। তাভ্যাং স শকলাভ্যাঞ্চ দিবং ভূমিঞ্চ নির্মমে।
মধ্যে ব্যোম দিশশ্চাষ্টাবপাং স্থানঞ্চ শাশ্বতম্ ॥
সেই খণ্ড দুটি দ্বারা তিনি স্বর্গ ও পৃথিবী নির্মাণ করলেন ; মধ্যভাগে আকাশ, আট দিক্ ও জলের শাশ্বত স্থান (অর্থাৎ সমুদ্র) সৃষ্টি করেছিলেন।
১৪। উদ্ববর্হাত্মনশ্চৈব মনঃ সদসদাত্মকম্।
মনসশ্চাপ্যহঙ্কারমভিমস্তারমীশ্বরম্ ॥
তিনি নিজে থেকেই সৎ ও অসৎ স্বভাব মন সৃষ্টি করলেন ; মন থেকে হল অভিমানের জনক ও স্বকার্যকরণক্ষম অহংকার।
১৫। মহান্তমেব চাত্মানং সর্বাণি ত্রিগুণানি চ।
বিষয়াণাং গ্রহীতৃণি শনৈঃ পঞ্চেন্দ্রিয়াণি চ ॥
(অহংকারতত্ত্বের পূর্বে) মহৎ তত্ত্বের সৃষ্টি করলেন যা (মহত্তর আত্মা থেকে উৎপন্ন বলে) আত্মা নামে কথিত হয়েছে ; (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনগুণ এবং ধীরে ধীরে (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধাত্মক) বিষয়সমূহের গ্রাহক পাঁচটি ইন্দ্রিয় সৃষ্টি করলেন।
১৬। তেষান্ত্ববয়বান্ সূক্ষ্মান্ ষণ্ণামপ্যমিতৌজসাম্।
সন্নিবেশ্যাত্মমাত্ৰাসু সর্বভূতানি নির্মমে ॥
অপরিমিত বলসম্পন্ন সেই ছয়টির (অর্থাৎ অহংকার ও রূপাদি পঞ্চতন্মাত্রের) সূক্ষ্ম অংশ নিজের অংশসমূহে সন্নিবেশিত করে সকল জীব সৃষ্টি করেছিলেন।
১৭। যন্মূর্ত্যবয়বাঃ সূক্ষ্মাস্তস্যেমান্যাশ্রয়ন্তি ষট্।
তস্মাচ্ছরীরমিত্যাহুস্তস্য মূর্তিং মনীষিণঃ ॥
যে হেতু মূর্তি বা শরীর সম্পাদক ছয়টি সূক্ষ্ম অবয়ব তাঁর এই (বক্ষ্যমাণ ভূতজাত ও পূর্বোক্ত ইন্দ্রিয়সমূহ) আশ্রয় করে, সেই জন্য মনীষিগণ (ব্রহ্মার মূর্তিকে) শরীর বলে থাকেন।
১৮। তদাবিশন্তি ভূতানি মহান্তি সহ কর্মভিঃ।
মনশ্চাবয়বৈঃ সূক্ষ্মৈঃ সর্বভূতকৃদব্যয়ম্ ॥
(শব্দাদি পঞ্চতন্মাত্ররূপে অবস্থিত) সেই (ব্রহ্মা) মহাভূতসমূহকে আবিষ্ট করে অর্থাৎ তাদের থেকে কার্যসহ উৎপন্ন হয়। (অহংকারাত্মক ব্ৰহ্ম থেকে) সকল জীবের উৎপত্তির কারণ অবিনাশী মন সূক্ষ্ম অংশসমূহের সহিত উৎপন্ন হয়।
১৯। তেযামিদস্তু সপ্তানাং পুরুষাণাং মহৌজসাম্।
সুক্ষ্মাভ্যো মূর্তিমাত্রাভ্যঃ সম্ভবত্যব্যয়াদ্ব্যয়ম্ ॥
সেই সাতটি অতিশক্তিসম্পন্ন পুরুষের৬ সূক্ষ্ম দেহমাত্রা থেকে এই বিনাশী (জগৎ) উদ্ভূত হয় ; অবিনাশী থেকে বিনাশীর এই উদ্ভব।
২০। আদ্যাদ্যস্য গুণন্ত্বেষামবাপ্নোতি পরঃ পরঃ।
যে যো যাবতিথশ্চৈষাং স স তাবদ্গুণঃ স্মৃতঃ ॥
এদের (অর্থাৎ ভূতসমূহের) পূর্ব পূর্বটির গুণ পর পরটি প্রাপ্ত হয়।৭ যেটি যে সংখ্যক সেটি সেই সংখ্যকগুণবিশিষ্ট বলে কথিত হয়।৮
২১। সর্বেষান্তু স নামানি কমণি চ পৃথক্ পৃথক্।
বেদশব্দেভ্য এবাদৌ পৃথক্সংস্থাশ্চ নির্মমে ॥
তিনি (পরমাত্মা) বেদের শব্দসমূহ থেকে সকলের পৃথক্ পৃথক্ নাম৯ ও সংস্থা১০ সৃষ্টি করলেন।
২২। কর্মাত্মনাঞ্চ দেবানাং সোহসৃজৎ প্রাণিনাং প্রভুঃ।
সাধ্যানাঞ্চ গণং সূক্ষ্মং যজ্ঞঞ্চৈব সনাতনম্ ॥
সেই প্রভু ইন্দ্রাদি দেবগণ, কর্মহেতুক পাষাণময় দেবগণ, সূক্ষ্ম সাধ্য (নামক দেববিশেষগণ) ও শাশ্বত যজ্ঞকে সৃষ্টি করলেন।
২৩। অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু ত্রয়ং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগযজুঃসামলক্ষণম্ ॥
ব্রহ্ম অগ্নি, বায়ু ও সূর্য থেকে যজ্ঞসিদ্ধির জন্য শাশ্বত ঋক্, যজু ও সাম বেদ দোহন করেছিলেন।
২৪- কালং কালবিভক্তীশ্চ নক্ষত্রাণি গ্রহাং স্তথা।
২৫। সরিতঃ সাগরান্ শৈলান্ সমানি বিষমাণ চ ॥
তপো বাচং রতিঞ্চৈব কামঞ্চ ক্রোধমেব চ।
সৃষ্টিং সসৰ্জ চৈবেমাং স্রষ্টু মিচ্ছন্নিমাঃ প্রজাঃ ॥
এই জনগণকে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করে তিনি কাল, কালের (মাস, ঋতু প্রভৃতি) ভাগ, নক্ষত্র, গ্রহ, নদী, সাগর, পর্বত, সমতল, অসমতল স্থান, তপস্যা, বাক্য, মনের সন্তোষ, কাম ও ক্রোধ সৃষ্টি করেছিলেন।
২৬। কর্মর্ণাঞ্চ বিবেকাৰ্থং ধর্মাধর্মৌ ব্যবেচয়ৎ।
দ্বদ্বৈরযোজয়চ্চেমাঃ সুখদুঃখাদিভিঃ প্রজাঃ ॥
কর্মসমূহের মধ্যে কর্তব্য অকর্তব্য) বিচারের জন্য ধর্ম ও অধর্ম পৃথক্ভাবে বিভক্ত করলেন এবং এই জনগণকে সুখদুঃখাদি দ্বন্দ্বের১১ সহিত যুক্ত করলেন।
২৭। অণ্ব্যো মাত্রা বিনাশিন্যা দশার্ধানান্তু যাঃ স্মৃতাঃ।
তাভিঃ সার্ধামিদং সর্বং সম্ভবত্যনুপূর্বশঃ ॥
পাঁচটি (মহাভুতের) যে বিনাশী (পঞ্চতন্মাত্ররূপ) সূক্ষ্ম অংশ কথিত হয়, তাদের সঙ্গে এই সমগ্র (জগৎ) ক্রমানুসারে উদ্ভূত হয়।১২
২৮। যন্তু কর্মণি যস্মিন্ স ন্যযুঙক্ত প্রথমং প্রভুঃ।
স তদেব স্বয়ং ভেজে সৃজ্যমানঃ পুনঃ পুনঃ ॥
সেই প্রভু প্রথমে যাকে যে কর্মে নিযুক্ত করেছিলেন সে বারংবার সৃষ্ট হয়ে নিজে সেই কার্যই অবলম্বন করল।
২৯। হিংস্রাহিংস্রে মৃদুক্রূরে ধর্মাধর্মাবৃতানৃতে।
যদ যস্য সোহদধাৎ সর্গে তৎ তস্য স্বয়মাবিশৎ॥
তিনি হিংস্র, অহিংস্র, মৃদু, ক্রূর, ধর্ম, অধর্ম, ঋত, অনৃত, যার যা সৃষ্টিকালে ব্যবস্থা করলেন সে তাই (পরজন্মে) নিজে প্রাপ্ত হল।
৩০। যথর্তুলিঙ্গান্যৃতবঃ স্বয়মেবর্তুপর্যয়ে।
স্বানি স্বান্যভিপদ্যন্তে তথা কর্মণি দেহিনঃ ॥
যেমন পর্যায়ক্রমে ঋতুসমূহ (চূতমঞ্জরী প্রভৃতি) লক্ষণ নিজেরাই ধারণ করে, তেমনই জীবগণ নিজ নিজ কর্ম প্রাপ্ত হয়।
৩১। লোকানান্তু বিবৃদ্ধ্যর্থং মুখবাহুরুপাদতঃ।
ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বৈশ্যং শূদ্রঞ্চ নিরবর্তয়ৎ ॥
লোকবৃদ্ধির জন্য (স্রষ্টা) মুখ, বাহু, ঊরু ও পদ থেকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র সৃষ্টি করলেন।
৩২। দ্বিধা কৃত্বাত্মননা দেহমর্ধেন পুরুষোহভবৎ।
অর্ধেন নারী তস্যাং স বিরাজমসৃজৎ প্রভুঃ॥
সেই প্রভু নিজদেহ দ্বিধা বিভক্ত করে অর্ধভাগে পুরুষ হলেন, (অপর) অর্ধে হল নারী ; তাতে তিনি বিরাট্ (পুরুষকে) সৃষ্টি করলেন।
৩৩। তপস্তপ্ত্বাসৃজদ্যন্তু স স্বয়ং পুরুষো বিরাট।
তং মাং বিত্তাস্য সর্বস্য স্রষ্টারং দ্বিজসত্তমাঃ॥
হে ব্রাহ্মণগণ, সেই বিরাট্ পুরুষ তপস্যা করে যাকে সৃষ্টি করেছিলেন, সকলের স্রষ্টা আমাকে তিনি বলে জানুন।
৩৪। অহং প্রজাঃ সিসৃক্ষুস্ত তপস্তপ্ত্বা সুদুশ্চরম্।
পতীন্ প্রজানামসৃজং মহার্ষীনাদিতো দশ ॥
আমি লোক সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে অতি কঠোর তপস্যা করে প্রথম থেকে দশ জন প্রজাপতি মহর্ষিকে সৃষ্টি করেছিলাম।
৩৫। মরীচিমত্র্যঙ্গিরসৌ পুলস্ত্যং পূলহং ক্রতুম্।
প্রচেতসং বশিষ্ঠঞ্চ ভৃগুং নারদমেব চ॥
(এঁরা হলেন) মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরস্, পুলস্ত্য পুলহ, ক্রতু, প্রচেতস্, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদ।
৩৬। এতে মনূংস্তু সপ্তান্যানসৃজন্ ভূরিতেজসঃ।
দেবান্ দেবর্নিকায়াংশ্চ মহর্ষীংশ্চামিতৌ জসঃ ॥
এঁরা অতি তেজসম্পন্ন অন্য সাত মনুকে, (ব্রহ্মার সৃষ্ট নয় এমন) দেবগণকে, দেবগণের বাসস্থান ও অপরিচিত বলশালী মহর্ষিগণকে সৃষ্টি করেছিলেন।
৩৭। যক্ষরক্ষঃপিশাচাংশ্চ গন্ধর্বাপ্সরসোহসূরান্।
নাগান্ সর্পান্ সুপর্ণাং পিতৃণাঞ্চ পৃথ্গণান্ ॥
যক্ষ, রাক্ষস, পিশাচ, গন্ধর্ব, অপ্সরা, অসুর, (বাসুকি প্রভৃতি) (তার থেকে নিকৃষ্ট] সর্প, গরুডাদি এবং পিতৃগণের পৃথক্ পৃথক্ গণসমূহকে১৩ ও (তাঁরা সৃষ্টি করেছিলেন)।
৩৮। বিদ্যুতোহশনিমেঘাংশ্চ রোহিতেন্দ্রধনৃংষি চ।
উল্কানির্ঘাতকেতংশ্চ জ্যোতীংষ্যুচ্চাবচানি চ ॥
বিদ্যুৎ, বজ্র, মেঘ, রোহিত১৪ ইন্দ্রধনু, উল্কা, নির্ঘাত,১৫ কেতু এবং বিবিধ জ্যোতিষ্ক পদার্থও (তিনি সৃষ্টি করেছিলেন)।
৩৯। কিন্নরান্ বানরান্মৎস্যান্ বিবিধাংশ্চ বিহঙ্গমান্।
পশূন্ মৃগান্মনুয্যাংশ্চ ব্যালাংশ্চোভয়তোদতঃ ॥
কিন্নর, বানর, মৎস্য, বিবিধ পাখী, পশু, হরিণ, মানুষ, হিংস্র জন্তু, দুই পংক্তি দন্তবিশিষ্ট (অশ্বদি) জন্তুও (তিনি সৃষ্টি করলেন)।
৪০। কৃমি-কীট-পতঙ্গাংশ্চ যূকা-মক্ষিক-মৎকুণম্।
সর্বঞ্চ দংশমশকং স্থাবরঞ্চ পৃথগ্বিধম্॥
কৃমি, কীট, পতঙ্গ, উকুন, মাছি, ছারপোকা, সকল ডাঁস ও মশা প্রভৃতি নানাবিধ স্থাবর (বৃক্ষলতাদি) পদার্থও (তিনি সৃষ্টি করলেন)।
৪১। এবমেতৈরিদং সর্বং মন্নিয়োগাহাত্মভিঃ।
যথাকৰ্ম তপোযোগাৎ সৃষ্টং স্থাবরজঙ্গমম্ ॥
এভাবে আমার নির্দেশক্রমে এঁরা তপস্যার ফলে কর্মানুসারে স্থাবর জঙ্গমাত্মক এই সব কিছু সৃষ্টি করেছিলেন।
৪২। যেষান্তু যাদৃশং কর্ম ভূতানামিহ কীর্তিতম্।
তৎ তথা বোহভিধাস্যামি ক্রমযোগঞ্চ জন্মনি ॥
যে সকল জীবের যেরূপ কর্ম ঘোষিত হয়েছে, তা এবং জন্মক্রম আপনাদের বলব।
৪৩- পশবশ্চ মৃগাশ্চৈব ব্যালাশ্চোভয়তোদতঃ।
৪৬। রক্ষাংসি চ পিশাচাশ্চ মনুষ্যাশ্চ জরায়ুজাঃ ॥
অণ্ডজাঃ পক্ষিণঃ সর্পা নাক্রা মৎস্যাশ্চ কচ্ছপাঃ।
যানি চৈবম্প্রকাণি স্থলজান্যৌদকানি চ ॥
স্বেদজং দংশমশকং যূকা-মক্ষিক-মৎকুণম্।
উষ্মণশ্চোপজায়ন্তে যচ্চানাৎ কিঞ্চিদীদৃশম্ ॥
উদ্ভিজ্জাঃ স্থাবরা সর্বে বীজকাণ্ডপ্ররোহিণঃ।
ওষধ্যঃ ফলপাকান্তা বহুপুষ্পফলোপগাঃ ॥
পশু, হরিণ, হিংস্ৰজন্তু ও দুই পংক্তি দন্তযুক্ত জন্তু, রাক্ষস, পিশাচ, মানুষ, জরায়ুজাত, অণ্ডজ পক্ষী, সর্প, কুম্ভীর, মৎস্য, কচ্ছপ এবং এইরূপ স্থলজ ও জলজ প্রাণী, ক্লেদ থেকে উৎপন্ন দংশ (ডাঁশ?), মশক, উকুন, মাছি, ছারপোকা, তাছাড়া উষ্মা থেকে এইরূপ অন্য যা কিছু জন্মে। বীজ ও কাণ্ড থেকে জাত সকল স্থাবর পদার্থ উদ্ভিদ্জাত। বহু পুষ্পফলসমন্বিত ওষধি ফল পাকলে মরে যায়।
৪৭। অপুষ্পাঃ ফলবন্তো যে তে বনষ্পতয়ঃ স্মৃতাঃ।
পুষ্পিণঃ ফলিনশ্চৈব বৃক্ষাস্তূভয়তঃ স্মৃতাঃ ॥
যে সকল গাছে ফুল না হয়ে ফল হয় সেগুলি বনস্পতি নামে কথিত। কতক গাছে ফুল ও ফল হয়। এই ভাবে গাছ দুরকমের।
৪৮। গুচ্ছগুল্মন্তু বিবিধং তথৈব তৃণজাতয়ঃ।
বীজকাগুরুণ্যেৰ প্ৰতানা বল্ল্য এব চ ॥
গুচ্ছ১৬ গুল্ম১৭ নানাপ্রকার। তৃণজাতিও তদ্রুপ। বীজ ও কাণ্ড থেকে প্রতান১৮ ও বল্লী১৯ জন্মে।
৪৯। তমসা বহুরূপেণ বেষ্টিতাঃ কর্মহেতুনা।
অন্তঃসংজ্ঞা ভবন্ত্যেতে সুখদুঃখসমন্বিতাঃ ॥
এইগুলি বহুপ্রকার কর্মফলে তমোগুণে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সুখ ও দুঃখের অনুভূতিযুক্ত এদের ভিতরে চৈতন্য থাকে।
৫০। এতদন্তাস্তু গতয়ো ব্রহ্মাদ্যাঃ সমুদাহৃতাঃ।
ঘোরেহস্মিন্ ভূতসংসারে নিত্যং সততায়িনি ॥
জীবগণের এই ভীষণ সততবিনাশী সংসারে ব্রহ্মাদি (স্থাবর পর্যন্ত সমুদয় জীবের) গতি বর্ণিত হল।
৫১। এবং সর্বং স সৃষ্টেদং মাংচাচিন্ত্যপরাক্রমঃ।
আত্মন্যন্তর্দধে ভূয়ঃ কালং কালেন পীড়য়ন্।
অচিন্তনীয় পরাক্রমসম্পন্ন তিনি এইরূপে (পরিদৃশ্যমান) এই সব এবং আমাকে সৃষ্টি করে (সৃষ্টির) কালকে (প্রলয়) কালের দ্বারা নাশ করতে করতে পুনরায় নিজের মধ্যে অন্তর্হিত হলেন।
৫২। যদা স দেবো জাগর্তি তদেদং চেষ্টতে জগৎ ।
যদা স্বপিতি শান্তাত্মা তদা সর্বং নিমীলতি ॥
সেই দেব যখন জাগ্রত থাকেন, তখন এই জগৎ ক্রিয়াশীল হয়। যখন শান্তাত্মা তিনি নিদ্রিত হন, তখন সব কিছু নিমীলিত হয়।
৫৩। তস্মিন্ স্বপতি তু স্বস্থে কর্মাত্মানঃ শরীরিণঃ।
স্বকর্মভ্যো নিবর্তন্তে মনশ্চ গ্লানিমৃচ্ছতি ॥
তিনি সুস্থ অবস্থায় নিদ্রিত হলে কর্মানুরূপ দেহধারী জীবগণ নিজ নিজ কার্য থেকে নিবৃত্ত হয় এবং মনও বৃত্তিরহিত হয়।
৫৪। যুগপত্তু প্ৰলীয়ন্তে যদা তস্মিন্মহাত্মনি।
তদায়ং সর্বভূতাত্মা সুখং স্বপিতি নিবৃতঃ ॥
যখন সেই মহাত্মাতে (অর্থাৎ পরমাত্মাতে সর্বভূত) প্রলয়প্রাপ্ত হয়, তখন সর্ব ভূতের আত্মা (জাগ্ৰত স্বপ্নাদি ব্যাপার থেকে) নিবৃত্ত হয়ে সুখে নিদ্রিত হয়।
৫৫। তমোহয়ন্তু সমাশ্ৰিত্য চিরং তিষ্ঠতি সেন্দ্রিয়ঃ।
ন চ স্বং কুরুতে কর্ম তদোৎক্রামতি মূৰ্তিতঃ ॥
এই জীব (জ্ঞানবৃত্তিরূপ) তমোগুণ প্রাপ্ত হয়ে ইন্দ্রিয়সহিত দীর্ঘকাল অবস্থান করেও নিজের কর্ম করে না; তখন পূর্বদেহ থেকে (অন্যত্র) গমন করে।
৫৬। যদাণুমাতৃকো ভূত্বা বীজং স্থাস্নু চরিষ্ণু চ।
সমাবিশতি সংসৃষ্টস্তদা মূর্তিং বিমুঞ্চতি ॥
যখন (জীব) অণুমাত্র হয়ে (বৃক্ষাদিহেতুভূত) স্থিতিশীল বীজে ও (মানুষাদির) সংক্রমণশীল বীজে প্রবেশ করে, তখন সংসৃষ্ট২০ হয়ে (কর্মানুরূপ) মূর্তি (বা স্থূলদেহ) গ্রহণ করে।
৫৭। এবং স জাগ্রৎস্বপ্নাভ্যামিদং সর্বং চরাচরম্।
সঞ্জীবয়তি চাজস্রং প্রমাপয়তি চাব্যয়ঃ ॥
এইরূপে সেই অবিনাশী পুরুষ জাগরণ ও স্বপ্ন দ্বারা জঙ্গম স্থাবর সব কিছুকে অনবরত সৃষ্টি ও সংহার করছেন।
৫৮। ইদং শাস্ত্রন্তু কৃত্বাসৌ মামেব স্বয়মাদিতঃ।
বিধিবদ্গ্রাহয়ামাস মরীচ্যাদীংস্ত্বহং মুনীন্॥
এই শাস্ত্র রচনা করে তিনি প্রথমে আমাকেই যথাবিধি শিখিয়েছিলেন। আমি আবার মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে শিখিয়েছিলাম।
৫৯। এতদ্বোহয়ং ভৃগুঃ শাস্ত্ৰং শ্রাবয়িষ্যত্যশেষতঃ।
এতদ্ধি মত্তোহধিজগে সর্বমেষোহখিলং মুনিঃ ॥
ভৃগু এই শাস্ত্র আপনাদের নিঃশেষে শোনাবেন। এই মুনি এই সম্পূর্ণ (শাস্ত্র) আমার কাছে শিখেছিলেন।
৬০। ততস্তথা স তেনোক্তো মহর্ষির্মনূনা ভৃগুঃ।
তানব্ৰবীদৃষীন্ সর্বান্ প্রীতাত্মা শ্রূয়তামিতি॥
তারপর সন্তুষ্টচিত্ত মহর্ষি ভৃগু সেই মনু কর্তৃক ঐভাবে উক্ত হয়ে সেই সব ঋষিকে বললেন—শুনুন।
৬১। স্বায়ম্ভুবস্যাস্য মনোঃ ষভ্ বংশ্যা মনবোহপরে।
সৃষ্টবন্তঃ প্রজাঃ স্বাঃ স্বা মহাত্মাননা মহৌজসঃ ॥
এই ব্রহ্মার পুত্র মনুর বংশধর অন্য ছয়জন মহাত্মা মহাবলশালী মনু (নিজ নিজ কালে সৃষ্টি পালনাদি অধিকারযুক্ত) নিজ নিজ লোক সৃষ্টি করেছিলেন।
৬২- স্বারোচিষশ্চোত্তমশ্চ তামসো রৈবতস্তথা।
৬৩। চাক্ষুষশ্চ মহাতেজা বিবস্বৎসুত এব চ ॥
স্বায়ম্ভুবাদ্যাঃ সপ্তৈতে মনবো ভূরিতেজসঃ।
স্বে স্বেহস্তরে সর্বমিদমুৎপাদ্যাপুশ্চরাচরম্ ॥
স্বায়ংভুল প্রমুখ স্বারোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, মহাতেজস্বী বৈবস্বত—এই সাতজন অতিতেজোমান্ মনু নিজ নিজ অধিকারকালে (মন্বন্তরে) স্থাবর জঙ্গম এই সব সৃষ্টি করে পালন করেছিলেন।
৬৪। নিমেষা দশ চাষ্টেী চ কান্ঠা ত্রিংশত্তু তাঃ কলাঃ।
ত্রিংশৎকলা মুহূর্তঃ স্যাদহোরাত্রন্তু তাবতঃ ॥
চোখের আঠার পলকে হয় এক কাষ্ঠা, ত্ৰিশ কাষ্ঠায় এক কলা, ত্রিশ কলায় এক মুহূর্ত ও ত্রিশ মুহূর্তে এক দিবারাত্র হয়।
৬৫। অহোরাত্রে বিভজতে সূর্যো মানুষদৈবিকে।
রাত্রিঃ স্বপ্নায় ভূতানাং চেষ্টায়ৈ কর্মণামহঃ ॥
সূর্য মানুষ ও দেবগণের দিন রাত্রি ভাগ করে। রাত্রি জীবগণের নিদ্রার জন্য, দিন কর্ম করার জন্য।
৬৬। পিত্র্যে রাত্র্যহনী মাসঃ প্রবিভাগস্তু পক্ষয়োঃ।
কর্মচেষ্টাস্বহঃ কৃষ্ণঃ শুক্লঃ স্বপ্নায় শর্বরী ॥
(মানুষের) এক মাস পিতৃগণের এক রাত্রি এক দিন দুই পক্ষে বিভক্ত। কর্ম করার জন্য কৃষ্ণপক্ষ দিন এবং নিদ্রার জন্য শুক্লপক্ষ রাত্রি (রূপে) পরিগণিত হয়।
৬৭। দৈবে রাত্র্যহনী বর্ষং প্রবিভাগস্তয়োঃ পুনঃ।
অহস্তত্রোদগয়নং রাত্রিঃ স্যাদ্দক্ষিণায়নম্॥
মানুষের এক বছর দেবগণের এক রাত্রি, এক দিন ; এই দুইয়ের ভাগ এইরূপ—দিন উত্তরায়ণ, রাত্রি দক্ষিণায়ন।
৬৮। ব্রাহ্মস্য তু ক্ষপাহস্য যৎ প্রমাণং সমাসতঃ।
একৈকশো যুগানান্তু ক্রমশস্তন্নিবোধত॥
ব্রহ্মার রাত্রিদিনের ও যুগসমূহের এক একটির পরিমাণ সংক্ষেপে ক্রমে শুনুন।
৬৯। চত্বার্য্যহুঃ সহস্রাণি বর্ষাণান্তু কৃতং যুগম্।
তস্য তাবচ্ছতী সন্ধ্যা সন্ধ্যাংশশ্চ তথাবিধঃ ॥
সত্যযুগ চার হাজার বছর বলা হয়, তার সন্ধ্যা তত শ’ (অর্থাৎ চার শ’) এবং সন্ধ্যাংশও তদ্রুপ।
৭০। ইতরেষু সসন্ধ্যেষু সসন্ধ্যাংশেষু চ ত্রিষু।
একপায়েন বর্তন্তে সহস্রাণি শতানি চ ॥
সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশযুক্ত অপর তিন যুগে হাজার ও শ’ এক এক করে কম (অর্থাৎ ত্রেতা তিন হাজার বছর ব্যাপী, সন্ধ্যা তিন শ’ বছর ও সন্ধ্যাংশ তিন শ’ বছর, দ্বাপর দুই হাজার বছর ব্যাপী, তার সন্ধ্যা দুই শ’ বছর এবং সন্ধ্যাংশ দুই শ’ বছর)।
৭১। যদেতৎ পরিসংখ্যাতমাদাবেব চতুর্যুগম্।
এতদ্বাদশসাহস্রং দেবানাং যুগমুচ্যতে ॥
পূর্বেই (মানুষের) যে চার যুগের পরিমাণ নিরূপিত হল, তার বারো হাজার২১ দ্বারা দেবগণের এক যুগ কথিত হয়।
৭২। দৈবিকানাং যুগানাস্তু সহস্রং পরিসংখ্যয়া।
ব্রাহ্মমেকমহর্জ্ঞেয়ং তাবতীং রাত্রিমেব চ ॥
দেবগণের হাজার যুগে ব্রহ্মার একদিন বুঝতে হবে, ঐ সংখ্যায় তাঁর এক রাত্রি হয়।
৭৩। তদ্বৈ যুগসহস্রাস্তং ব্রাহ্মং পুণ্যমহর্বিদুঃ।
রাত্রিঞ্চ তাবতীমেব তেহহোরাত্রবিদো জনাঃ ॥
সেই সহস্ৰযুগের সমাপ্তিতে ব্রহ্মার এক পুণ্য দিন বলে জ্ঞাত এবং সেই সংখ্যায় রাত্রি যাঁরা জানেন, তাঁরা দিবারাত্রজ্ঞ লোক।
৭৪। তস্য সোহহর্নিশস্যান্তে প্রসুপ্তঃ প্রতিবুধ্যতে।
প্রতিবুদ্ধশ্চ সৃজতি মনঃ সদসদাত্মকম্ ॥
তিনি সেই দিবারাত্রের শেষে নিদ্রিত অবস্থা থেকে জাগ্রত হন, জেগে তিনি সৎ ও অসৎ রূপ মনাকে সৃষ্টি করেন।
৭৫। মনঃ সৃষ্টিং বিকুরুতে চোদ্যমানং সিসৃক্ষয়া।
আকাশং জাহাতে তস্মাৎ তস্য শব্দগুণং বিদুঃ ॥
সৃষ্টির প্রেরণায় মন (মহত্তত্ব) সৃষ্টি করে, তার থেকে উৎপন্ন হয় আকাশ, তার গুণ শব্দ বলে জ্ঞাত।
৭৬। আকাশাত্তু বিকুর্বাণাৎ সর্বগন্ধবহঃ শুচিঃ।
বলবান্ জায়তে বায়ুঃ স বৈ স্পর্শগুলো মতঃ ॥
বিকৃতভাবাপন্ন আকাশ থেকে সকল গন্ধের বাহক পবিত্র বলশালী বায়ু জন্মে ; তা স্পর্শগুণ বলে স্বীকৃত।
৭৭। বাযোরপি বিকুর্বাণাদ্বিরোচিষ্ণু তমোনুদম্।
জ্যোতিরুৎপদ্যতে ভাস্বৎ তদ্রূপগুণমুচ্যতে ॥
বিকৃতভাবাপন্ন বায়ূ থেকে অন্য বস্তুর প্রকাশক, অন্ধকারনাশক, দীপ্তিমান্ জ্যোতি উৎপন্ন হয় ; তার গুণ রূপ বলে কথিত হয়।
৭৮। জ্যোতিষশ্চ বিকুর্বাণাদাপো রসগুণাঃ স্মৃতাঃ।
অদ্ভো গন্ধগুণা ভূমিরিত্যেষা সৃষ্টিরাদিতঃ ॥
বিকৃতভাবাপন্ন জ্যোতি থেকে (উৎপন্ন হয়) জল ; তার গুণ রস বলে জ্ঞাত। জল থেকে (উৎপন্ন হয়) গন্ধগুণবিশিষ্ট পৃথিবী। প্রথম থেকে সৃষ্টি (ক্রম) এই।
৭৯। যৎপ্রাগ্ দ্বাদশসাহস্রমুদিতং দৈবিকং যুগম্।
তদেকসপ্ততিগুণং মন্বন্তরমিহোচ্যতে ॥
পূর্বে দ্বাদশসহস্ৰবর্ষাত্মক যে দৈব যুগ বলা হয়েছে, তার একুশ গুণ মন্বন্তর বলে কথিত।
৮০। মন্বন্তরাণ্যসংখ্যানি সর্গঃ সংহার এব চ।
ক্রীড়ন্নিবৈতৎ কুরুতে পরমেষ্ঠী পুনঃ পুনঃ ॥
মন্বন্তর অসংখ্য, সৃষ্টি ও সংহার (অনন্ত)—ব্রহ্মা যেন ক্রীড়াচ্ছলে বারংবার এই কাজ করেন।
৮১। চতুষ্পাৎ সকলো ধর্মঃ সত্যঞ্চৈব কৃতে যুগে।
নাধর্মেণাগমঃ কশ্চিন্মনূষ্যান্ প্রতিবর্ততে ॥
সত্যযুগে সম্পূর্ণ ধর্ম ছিল চতুষ্পদ, সত্য ছিল, অধর্মের দ্বারা (ধন বিদ্যাদির) উপার্জন ছিল না।
৮২। ইতরেষ্বাগমাদ্ধর্মঃ পাদশস্তবরোপিতঃ।
চৌরিকানৃতমায়াভিধর্মশ্চাপৈতি পাদশঃ ॥
অন্য যুগগুলিতে (অধর্মের দ্বারা ধন বিদ্যাদির) আগম হেতু ধর্ম এক এক পাদ করে হীন হয়েছিল। চৌর্য, মিথ্যা ও মায়া দ্বারা ধর্ম এক এক পাদ করে হ্রাস পায়।
৮৩। অরোগাঃ সর্বসিদ্ধার্থশ্চতুর্বর্ষশতাইয়ূষঃ।
কৃতে ত্রেতাদিষু হ্যেষামায়ুর্হ্রসতি পাদশঃ ॥
সত্যযুগে মানুষ ছিল নীরোগ, সকল বিষয়ে সিদ্ধকাম ও চার শত বৎসর আয়ু সম্পন্ন ত্রেতাদি যুগে, এদের আয়ু একপাদ করে হ্রাস পায়।
৮৪। বেদোক্তমায়ুর্মর্ত্যানামাশিষশ্চৈব কর্মর্ণাম্।
ফলন্ত্যনুযুগং লোকে প্রভাবশ্চ শরীরিণাম্ ॥
পৃথিবীতে (শতায়ু পুরুষ ইত্যাদি) বেদোক্ত আয়ু (কাম্য) কর্মসমূহের ফলবিষয়ক প্রার্থনা (ব্রাহ্মণাদির শাপানুগ্রহ প্রভৃতি) প্রভাব যুগানুসারে ফলে।
৮৫। অন্যে কৃতযুগে ধর্মাস্তেতায়াং দ্বাপরেহপরে।
অন্যে কলিযুগে নৃণাং যুগহ্রাসানুরূপতঃ ॥
সত্যযুগে মানুষের ধর্ম একপ্রকার ; যুগের হ্রাস অনুসারে ত্রেতায় একপ্রকার, দ্বাপরে একপ্রকার ও কলিযুগে একপ্রকার।
৮৬। তপঃ পরং কৃতযুগে ত্রেতায়াং জ্ঞানমুচ্যতে।
দ্বাপরে যজ্ঞমেবাহুত্তর্দানমেকং কলৌ যুগে॥
সত্যযুগে তপস্যা শ্রেষ্ঠ, ত্রেতায় জ্ঞান, দ্বাপরে যজ্ঞ, কলিযুগে একমাত্র দান।
৮৭। সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহুরুপজ্জানাং পৃথক্ কমাণ্যকল্পয়ৎ ॥
সেই মহাকান্তিমান্ (দেব) এই সকল সৃষ্টির রক্ষার জন্য মুখ, বাহু, উরু ও পদ থেকে জাত (বর্ণগুলির) কর্ম পৃথক্ভাবে সৃষ্টি করলেন।
৮৮। অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।
দানং প্রতিগ্ৰহঞ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ ॥
ব্রাহ্মণদের জন্য (তিনি) সৃষ্টি করলেন অধ্যাপনা, অধ্যয়ন, যজন, যাজন, দান ও প্রতিগ্রহ।
৮৯। প্রজানাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বিষয়েষ্বপ্রসক্তিশ্চ ক্ষত্রিয়স্য সমাসতঃ ॥
ক্ষত্রিয়ের (কর্ম) সংক্ষেপে লোরক্ষা, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন ও বিষয়ে অত্যাসক্তির অভাব।
৯০। পশূনাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বণিক্পথং কুসীদঞ্চ বৈশ্যস্য কৃষিমেব চ ॥
পশুপালন, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, সুদে অর্থ বিনিয়োগ ও কৃষি বৈশ্যের (কর্ম)।
৯১। একমেব তু শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম সমাদিশৎ।
এতেষামেব বর্ণানাং শুশ্রূষামনসুয়য়া ॥
প্রভু শূদ্রের কিন্তু একটি মাত্র কর্ম নির্দেশ করলেন ; তা হল এই সকল বর্ণের অসূয়াহীন সেবা।
৯২। ঊধ্বং নাভের্মধ্যতরঃ পুরুষঃ পরিকীর্তিতঃ।
তস্মান্মধ্যতমং ত্বস্য মুখমুক্তং স্বয়ম্ভুবা ॥
নাভির ঊর্ধ্বভাগে পুরুষ পবিত্রতর বলে কথিত, তার অপেক্ষা এর মুখ পবিত্রতম বলে ব্রহ্মা বলেছেন।
৯৩। উত্তমাঙ্গোদ্ভবাজ্জৈষ্ঠ্যাদ্ব্ৰহ্মণশ্চৈব ধারণাৎ।
সর্বস্যৈবাস্য সর্গস্য ধর্মতো ব্রাহ্মণঃ প্রভুঃ ॥
(ব্রহ্মর) উত্তমাঙ্গ বা মুখ থেকে উৎপন্ন বলে, (বর্ণচতুষ্টয়ের মধ্যে) জ্যেষ্ঠ বলে এবং বেদ২২ ধারণ হেতু ধর্মতঃ ব্রাহ্মণ এই সমগ্র সৃষ্টির প্রভু।
৯৪। তং হি স্বয়ম্ভুঃ স্বাদাস্যাত্তপস্তপ্ত্বাদিতোহসৃজৎ।
হব্যকব্যাভিবাহ্যায় সর্বস্যাস্য চ গুপ্তয়ে॥
ব্রহ্মা তপস্যা করে তাঁকে নিজের মুখ থেকে প্রথমে হব্য২৩ ও কব্য২৪ বহন করার জন্য ও এই সব কিছুর রক্ষার জন্য সৃষ্টি করলেন।
৯৫। যস্যাস্যেন সদাশ্নন্তি হব্যানি ত্রিদিবৌকসঃ।
কব্যানি চৈব পিতরঃ কিসম্ভূতমধিকং ততঃ ॥
যাঁর মুখ দিয়ে দেবগণ সর্বদা হব্য এবং পিতৃপুরুষগণ হব্য ভক্ষণ করেন, তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে?
৯৬। ভূতানাং প্রাণিনঃ শ্রেষ্ঠাঃ প্রাণিনাং বুদ্ধিজীবিনঃ।
বুদ্ধিমৎসু নরাঃ শ্রেষ্ঠা নরেষু ব্রাহ্মণাঃ স্মৃতাঃ ॥
সৃষ্ট (স্থাবর জঙ্গমাদির মধ্যে) প্রাণী শ্রেষ্ঠ, প্রাণীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীরা শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমান্দের মধ্যে মানুষ এবং মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বলে কথিত।
৯৭। ব্রাহ্মণেষু তু বিদ্বাংসো বিদ্বৎসু কৃতবুদ্ধয়ঃ।
কৃতবুদ্ধিষু কর্তারঃ কর্তৃষ্ণু ব্ৰহ্মবেদিনঃ ॥
ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিদ্বান্, বিদ্বান্দের মধ্যে কৃতবুদ্ধি,২৫ কৃতবুদ্ধিগণের মধ্যে কর্তব্যপরায়ণ এবং কর্তব্যপরায়ণদের মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞগণ (শ্রেষ্ঠ)।
৯৮। উৎপত্তিরেব বিপ্রস্য মূর্তিধর্মস্য শাশ্বতী।
স হি ধর্মার্থমুৎপন্নো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥
ব্রাহ্মণের দেহই ধর্মের সনাতন মূর্তি। তিনি ধর্মের জন্য জাত এবং মোক্ষলাভের যোগ্য পাত্র।
৯৯। ব্রাহ্মণো জায়মানো হি পৃথিব্যামধিজায়তে।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ধর্মকোষস্য গুপ্তয়ে ॥
জাতমাত্রেই ব্রাহ্মণ পৃথিবীতে সকল লোক অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হন এবং সকল সৃষ্ট পদার্থের ধর্মসমূহ রক্ষার জন্য প্রভু হন।
১০০। সর্বং স্বং ব্রাহ্মণেস্যেদ্যং যৎকিঞ্চিজ্জগতীগতম্।
শ্রৈষ্ঠ্যেনাভিজনেনেদং সর্বং বৈ ব্রাহ্মণোহর্হতি ॥
পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সেই সব ব্রাহ্মণের সম্পত্তি। শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য হেতু ব্রাহ্মণ এই সবই পাওয়ার যোগ্য।
১০১। স্বমেব ব্রাহ্মণো ভুঙ্ক্তে স্বং বস্তে স্বং দদাতি চ।
আনৃশংস্যাদ্ব্রাহ্মণস্য ভুঞ্জতে হীরে জনাঃ ॥
ব্রাহ্মণ নিজের অন্নই ভক্ষণ করেন, নিজের বস্ত্র পরিধান করেন এবং নিজের দ্রব্য দান করেন। অন্য লোকেরা যা ভোগ করে, তা ব্রাহ্মণের দয়া হেতু করে।
১০২। তস্য কর্মবিবেকাৰ্থং শেষাণামনুপূর্বশঃ।
স্বায়ম্ভুবো মনুধীমানিদং শাস্ত্রমকল্পয়ৎ ॥
তাঁর এবং অবশিষ্ট বর্ণসমূহের আনুপূর্বিক কর্ম বিবেচনার জন্য বুদ্ধিমান স্বায়ংভুব মনু এই শাস্ত্র রচনা করেছিলেন।
১০৩। বিদুষা ব্রাহ্মণেনেদমধ্যেতব্যং প্রযত্নতঃ।
শিষ্যেভ্যশ্চ প্রবক্তব্যং সম্যঙ্নান্যেন কেনচিৎ॥
বিদ্বান্ ব্রাহ্মণের এই শাস্ত্র যত্নসহকারে পঠনীয় এবং উপযুক্ত ভাবে শিষ্যগণের নিকট ব্যাখ্যেয়, অন্য কারও নয়॥
১০৪। ইদং শাস্ত্রমধীয়ানো ব্রাহ্মণঃ শংসিতব্রতঃ।
মনোবাগ্দেহজৈর্নিত্যং কার্যদোষৈর্ন লিপ্যতে॥
(যম নিয়মাদির অনুষ্ঠান রূপ) ব্রতপালনকারী ব্রাহ্মণ এই শাস্ত্র পাঠ করলে কখনও কায়মনোবাক্যজনিত কার্যদোষের দ্বারা লিপ্ত হন না।
১০৫। পুনাতি পঙ্ক্তিং বংশ্যাংশ্চ সপ্ত সপ্ত পরাবরান্।
পৃথিবীমপি চৈবেমাং কৃৎস্নামেকোহপি সোহর্হতি॥
তিনি বংশের ঊর্ধ্বতন সপ্ত ও অধস্তন সপ্ত পুরুষ ও পংক্তি পবিত্র করেন। তিনি একাই এই সমগ্র পৃথিবী প্রতিগ্রহের যোগ্য।
১০৬। ইদং স্বস্ত্যয়নং শ্রেষ্ঠমিদং বুদ্ধিবির্বদ্ধনম্।
ইদং যশস্যমায়ুষ্যমিদং নিঃশ্রেয়সং পরম্ ॥
এই শাস্ত্র (অধ্যয়ন) শ্রেষ্ঠ মঙ্গলজনক কর্ম, বুদ্ধিবর্ধক, যশস্কর, আয়ুবৃদ্ধিকর ও মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ কারণ।
১০৭। অস্মিন্ ধর্মোহখিলেনোক্তা গুণদোষৌ চ কর্মণাম্।
চতুর্ণামপি বর্ণানামাচারশ্চৈব শাশ্বতঃ ॥
এতে সমগ্র ধর্ম, কার্যসমুহের গুণ দোষ ও চার বর্ণের শাশ্বত আচার লিপিবদ্ধ হয়েছে।
১০৮। আচারঃ পরমো ধর্মঃ শ্ৰুত্যক্তঃ স্মার্ত এব চ।
তস্মাদস্মিন্ সদাযুক্তো নিত্যংস্যাদাত্মবান্ দ্বিজঃ ॥
শ্রুতি ও স্মৃতিবিহিত আচার শ্রেষ্ঠ ধর্ম। অতএব আত্মজ্ঞানসম্পন্ন দ্বিজ সর্বদা আচারনিষ্ঠ হবেন।
১০৯। আচারাদ্বিচ্যুতে বিপ্রো ন বেদফলমশ্লুতে।
আচারেণ তু সংযুক্তঃ সম্পূর্ণফলভাগ্ ভবেৎ ॥
আচারভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ বেদের ফলভোগ করেন না। কিন্তু, আচারবান্ ব্যক্তি সম্পূর্ণ ফলভাগী হন।
১১০। এবমাচারতো দৃষ্ট্বা ধর্মস্য মুনয়ো গতিম্।
সর্বস্য তপসসা মূলমাচারং জগৃহুঃ পরম্ ॥
এইরূপে মুনিগণ আচার থেকে ধর্মের গতি লক্ষ্য করে আচারকে সকল তপস্যার শ্রেষ্ঠ মূল বলে গ্রহণ করেন।
১১১- জগতশ্চ সমুৎপত্তিং সংস্কারবিধিমেব চ।
১১৮। ব্রতচর্যোপচারঞ্চ স্নানস্য চ পরং বিধিম ॥
দারাধিগমনঞ্চৈব বিবাহানাঞ্চ লক্ষণম্।
মহাযজ্ঞবিধানঞ্চ শ্রাদ্ধকল্পঞ্চ শাশ্বতম্ ॥
বৃত্তীনাং লক্ষণঞ্চৈব স্নাতকস্য ব্ৰতানি চ।
ভক্ষ্যাভক্ষ্যঞ্চ শৌচঞ্চ দ্রব্যাণাং শুদ্ধিমেব চ ॥
স্ত্রীধর্মযোগং তাপস্যং মোক্ষং সন্ন্যাসমেব চ।
রাজ্ঞশ্চ ধর্মমখিলং কার্যাণাঞ্চ বিনির্ণয়ম্॥
সাক্ষিপ্রশ্নবিধানঞ্চ ধর্মংস্ত্রীপুংসয়োরপি।
বিভাগধর্মং দ্যূতঞ্চ কণ্টকানাঞ্চ শোধনম্ ॥
বৈশ্যশূদ্রোপচারঞ্চ সঙ্কীর্ণানাঞ্চ সম্ভবম্।
আপদ্ধর্মঞ্চ বর্ণানাং প্রায়শ্চিত্তবিধিং তথা ॥
সংসারগমনঞ্চৈব ত্রিবিধং কর্মসম্ভবম্।
নিঃশ্রেয়সং কর্মণাঞ্চ গুণদোষপরীক্ষণম্ ॥
দেশধর্মান্ জাতিধর্মান্ কুলধর্মাংশ্চ শাশ্বতান্।
পাষণ্ডগণধর্মাংশ্চ শাস্ত্রেহস্মিন্নুক্তবান্ মনুঃ ॥
‘পৃথিবীর উৎপত্তি, সংস্কারের নিয়ম, ব্ৰতাচরণ, উপচার,২৬ স্নানের শ্রেষ্ঠ বিধি, স্ত্রীসংলোগ, বিবাহসমূহের২৭ লক্ষণ, মহাযজ্ঞবিধি,২৮ শাশ্বত শ্রাদ্ধবিধি, জীবিকসমূহের লক্ষণ, স্নাতকব্রত, খাদ্যাখাদ্য,২৯ (মরণাদি অশৌচে) শুদ্ধি, দ্রব্যশুদ্ধি, স্ত্রীলোকের ধর্মেপায়, বানপ্রস্থে বিহিত কর্ম, মোক্ষোপায়, সন্ন্যাস, সমগ্র রাজধর্ম৩০, (ঋণাদানাদি) কার্যসমূহের বিচার, সাক্ষীকে প্রশ্ন করার নিয়ম, স্ত্রীলোক ও পুরুষের পারস্পরিক ধর্ম, দায়ভাগসংক্রান্ত বিধি, দ্যূতক্রীড়া, চোরাদির অপসারণ, বৈশ্য ও শূদ্রের স্বধর্মানুষ্ঠান, সংকরবর্ণের উৎপত্তি, বর্ণসমূহের আপদ্ধর্ম, প্রায়শ্চিত্তবিধি, (উত্তম, মধ্যম, অধম ভেদে) তিনপ্রকার শুভাশুভকর্মহেতুক দেহান্তরপ্রাপ্তি, মোক্ষ, কার্যসমূহের গুণ দোষ পরীক্ষা, চিরপ্রচলিত দেশধর্ম, জাতিধর্ম, কুলধর্ম, পাষণ্ডধর্ম৩১ ও গণধর্ম৩২—মনু এই শাস্ত্রে বলেছেন।
১১৯। যথেদমুক্তবান্ শাস্ত্রং পুরা পৃষ্টো মনুর্ময়া।
তথেদং যূয়মপ্যদ্য মৎসকাশান্নিবোধত ॥
প্রাচীনকালে আমাকর্তৃক বিজ্ঞাসিত হয়ে মনু যেভাবে এই শাস্ত্র বলেছিলেন, সেইভাবে আপনারাও আজ আমার কাছ থেকে শুনুন।
মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত।
পাদটীকা
১ যথা অস্বষ্ঠ, করণ প্রভৃতি সংকরবর্ণ। সংকরবর্ণ হতে পারে অনুলোমজ বা প্রতিলোমজ। উচ্চবর্ণ পতির ঔরুসে, নিম্নতর বর্ণের স্ত্রীর গর্ভে জাত অনুলোমজ। বিপরীত ক্রমে জাত সন্তান প্রতিলোমজ।
২ অপ্রত্যক্ষ।
৩ কোন্ বস্তু কিরূপ তা বোঝা যেত না। লক্ষশ অর্থাৎ লিঙ্গ বা চিহ্ন; যেমন সাদা কালো, ছোট বড় ইত্যাদি।
৪ প্রলয়াবস্থায় ধ্বংসকারী (মেধাতিথি, গোবিন্দয়াজ)। প্রকৃতিপ্রেরক (কুল্লূক)। প্রকৃতিকে চালিত না করলে সৃষ্টি হয় না।
৫ ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ ব্যোম এই পঞ্চভূত। আদি শব্দ দ্বারা মহৎ প্রভৃতিকে ৰোৰান হয়েছে। প্রকৃতি থেকে মহৎ এবং তার থেকে ক্রমে অহংকার, রূপাদি তন্মাত্র প্রভৃতি সৃষ্ট হয়েছে বলে একটি দার্শনিক মতবাদ আছে।
৬ মহৎ, অহংকার, পঞ্চ মহভূত—এই সাতটি পরমপুরুষ থেকে উৎপন্ন বলে পুরুষ নামে কথিত হয়।
৭ অর্থাৎ আকাশ, বায়ু, তেজ, অল, পৃথিবী—এই ক্রমে পর পর ভূত পূর্ব পূর্ব ভূতের গুণসম্পন্ন হয়; যেমন আকাশের শব্দগুণ বায়ুতে থাকে।
৮ অর্থাৎ বায়ু দ্বিতীয় বলে তার গুণ দুইটি, যথা শব্দ ও স্পর্শ। তেজ তৃতীয় বলে তিন গুণের অধিকারী, যথা শব্দ, স্পর্শ ও রূপ। এই ভাবে জলের চার ও পৃথিবীর পাঁচটি গুণ।
৯ যেমন ব্রাহ্মণাদি বর্ণের নাম।
১০ লৌকিক ব্যবস্থা; যেমন কুকারের ঘটনির্মাণ, তন্তুবায়ের পটনির্মাণ ইত্যাদি।
১১ শীত, শ্ৰীষ্ম, লাভ ক্ষতি প্রভৃতি বিরোধী ভাব প্রকাশক।
১২ যেমন, সূক্ষ্ম থেকে স্কুল, স্কুল থেকে স্থূলতর ইত্যাদি।
১৩ যথা আজাপ, সৌম্য ইত্যাদি।
১৪ আকাশে দৃষ্ট দণ্ডাকার নানাবর্ণবিশিষ্ট জৌতি (কুল্লূক)।
১৫ পৃথিবীতে বা অন্তরীক্ষে অশুভসূচক ধ্বনি।
১৬ যার মূল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক লতা জন্মে, তাকে বলে গুচ্ছ ; যেমন মল্লিকা।
১৭ যাক এক মূলে অনেক অঙ্কুর জন্মে, তার নাম গুল্ম ; যেমন ইক্ষু, শব ইত্যাদি।
১৮ তন্তুযুক্ত লতা ; যথা শশা, লাউ।
১৯ যা মাটি থেকে গাছে ওঠে তার নাম বল্লী ; যেমন গুড়ুচ্যাদি।
২০ পূর্যষ্টকযুক্ত অর্থাৎ ভূত, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, বাসনা, কর্ম, বায়ু, অবিদ্যা এই আটটির সহিত যুক্ত।
২১ অর্থাৎ বার হাজার গুণ চতুর্যূগ।
২২ ব্রহ্ম শব্দের এক অর্থ বেদ।
২৩ দেবতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত দ্ৰব্য।
২৪ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত দ্রব্য।
২৫ শাস্ত্রোক্ত অনুষ্ঠানে যাদের কর্তব্যতাবুদ্ধি উৎপন্ন হয়েছে।
২৬ গুরু প্রভৃতির অভিবাদন, উপাসনা প্রভৃতি।
২৭ অষ্টপ্রকার বিবাহ।
২৮ পঞ্চ মহাযজ্ঞ ; ৩/৭০ দ্রঃ।
২৯ পঞ্চমাধ্যায় দ্রঃ।
৩০ সপ্তমাধ্যায় দ্রঃ।
৩১ বেদবিরোধী জৈনাদির ধর্ম।
৩২ বণিক্ প্রভৃতি সংঘের ধর্ম।
Nice