প্রথম প্রকরণ – প্রাক-কথা
একাধিক হাজার বছরের অধিককাল ধরে ভারতবর্ষ ও তার পূর্বাঞ্চলের এক বিরাট এলাকায় জনচিত্তে রামকথা তথা রামায়ণ একটি বিশেষ আসন অধিকার করে রয়েছে। ভারতীয় হিন্দু-সমাজে রামায়ণের রামসীতা দেবত্বে অধিষ্ঠিত হলেও রামকথার আসল জনপ্রিয়তা লোকসংস্কৃতির ক্ষেত্রে।
ধর্মমত নির্বিশেষে একারণেই রামকথা শিল্প, সাহিত্য, সংগীত এবং সাধারণ মানুষের সমাজচিন্তার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। স্থান ও কাল ভেদে রামকথার বিন্যাস ও চরিত্র বদল হয়েছে, সত্য, কিন্তু কাহিনীর মূল কাঠামোটি প্রায় ঠিক আছে!
রামকথার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই কাহিনীকে কেন্দ্র করে সুধীমহলে বাদ-প্রতিবাদের আজও শেষ হয়নি। বিশেষ করে বর্তমানের প্রচলিত বাল্মীকি-রামায়ণ ধৰ্মগ্রন্থের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ায় মহাকাব্যর চরিত্রগুলির উপর কোন মন্তব্য করতে গেলেই ধর্মমতে হস্তক্ষেপ করার আশংকা দেখা দেয়। ফলে রামায়ণ নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ কেবলমাত্র বিদগ্ধজনের মধ্যেই সীমিত আছে।
পণ্ডিতগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে রামকাহিনীর বিচার করেছেন নিজ নিজ শিক্ষা ও চিন্তাধারা দিয়ে।
এই মহাকাব্যর রচনাকাল নিয়ে যেমন নানা মত, তেমনি কাহিনীর ঐতিহাসিকতা প্রসঙ্গেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মোটামুটি দেখা যায় সাহিত্য ও সংগীত বিশারদগণের বিচারে রামায়ণের রচনাকাল খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় বা চতুর্থ শতক ধার্য হয়েছে। রামায়ণে উল্লেখিত গ্রহ-নক্ষত্রের ভিত্তিতে জ্যোতিবিদগণেরও এই একই ধারণা।(১) কিন্তু ঐতিহাসিকগণের মতে মহাভারত-বর্ণিত ভারত যুদ্ধের আগের ঘটন রাম-রাবণের যুদ্ধ। ভারত যুদ্ধের ঘটনাকাল খৃষ্টপূর্ব চোদ্দশত অব্দ বলে অধিকাংশ পণ্ডিতের অভিমত।
রচনাকাল যাই হোক, মহাকাব্য রামায়ণে রাম-চরিত্রটির দৈব ও মানবিক দুটি রূপই স্পষ্ট।
রামায়ণে নানা ঐতিহাসিক-ধর্মীয় ঘটনা এবং ভৌগলিক স্থানের প্রতি এত সুস্পষ্ট ইংগিত আছে যে রামকথাকে নিছক কল্প-কাহিনী হিসাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না।
লৌকিক ও অলৌকিক কাহিনী-সমৃদ্ধ রামায়ণ একারণেই বহু আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও তার প্রকৃত স্বরূপ আজও সুস্পষ্ট নয়।
রামকাহিনীর বিভিন্ন সংস্করণ থাকলেও বাল্মীকি-রচিত রামায়ণ যে প্রাচীনতম এ বিষয়ে দ্বিমত নাই।
বাল্মীকি-রামায়ণেই বলা আছে বাল্মীকি যে গীতিকাব্য রচনা করেছিলেন তার আদি নাম ছিল ‘পৌলস্ত্য বধ সীতা-চরিত্র-সম্বলিত এই কাব্যকে অবশ্য বারংবার রামায়ণ নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। রামায়ণে লংকাকাণ্ডের পর যেভাবে পূর্ণচ্ছেদ টান হয়েছে তাতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে উত্তরকাণ্ডটি পরবর্তী সংযোজন। মূল কাহিনীর সঙ্গে উত্তরকাণ্ড প্রায় সম্পর্কহীন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম ছয়টি কাণ্ডের কোন কোন উপাখ্যানের পীরপূরক মাত্র।
অনুরূপভাবে বালকাণ্ডের অধিকাংশ উপাখ্যানগুলির সঙ্গে মূলকাহিনীর সম্পর্ক বিশেষ নাই। ঐ কাহিনীগুলির জন্যই রাম-চরিত্রটির দেবত্ব মানতে হয়।
বালকাণ্ডের অংশবিশেষ এবং উত্তরকাণ্ড বাদ দিয়ে মহাকাব্যর যে কাহিনী, সেখানে রাম-চরিত্রটির মানবিক সত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত।
রামায়ণে প্রথমেই বলা হয়েছে বাল্মীকি রামকাহিনী প্রথম শুনেছিলেন নারদের মুখে। সুতরাং বাল্মীকি রামকাহিনীর স্রষ্ট নন। প্রচলিত একটি কাহিনী আদিকবি নতুন ছন্দে ও সুরে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন মাত্র।
বাল্মীকি-নারদ কথোপকথনের পরই ক্ৰৌঞ্চবধ প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। মূল-কাহিনীর সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে ক্ৰৌঞ্চবধের কোন সম্পর্ক নাই। অথচ শুরুতে এই ক্ৰৌঞ্চ-কাহিনীর অবতারণা কি তাৎপর্যপূর্ণ নয়? মূলকাহিনীবর্জিত একটি উপাখ্যান দিয়ে মহাকাব্য রচনার আরম্ভ চিন্তা করা যায় না। হয়ত মনে করা যেতে পারে চিরদুঃখী সীতার দুঃখ-বেদনার প্রতীক হিসাবে ক্ৰৌঞ্চ প্রসঙ্গ। কিন্তু এটি কষ্টকল্পনা মাত্র। কেননা নিহত ক্রৌঞ্চের জন্য ক্রোঞ্চীর শোক আর রাবণ কর্তৃক অপহৃত সীতার স্বামী-বিরহে শোক, এক পর্যায়ভুক্ত হতে পারে না।
রামায়ণে এমন তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা অনেক আছে।
রাম সর্বশাস্ত্রবিশারদ হওয়ার পরে দশরথ যখন পুত্রের বিবাহের কথা চিন্তা করছেন ঠিক তখনই কাহিনীর মধ্যে বিশ্বামিত্রর আকস্মিক প্রবেশ। বিশ্বামিত্রর যোগাযোগে রাম ধনুৰ্ভঙ্গ করে জনক-কন্যা সীতাকে লাভ করেন। অথচ রামসীতার বিবাহের পরই বিশ্বামিত্র যবনিকার অন্তরালে চলে গেলেন। আর কোন প্রসঙ্গেই রাম বিশ্বামিত্রর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না।
সুষ্ঠুভাবে যজ্ঞ সমাপণ করার কারণে মাত্র দশ রাত্রর জন্য বিশ্বামিত্র দশরথের নিকট হতে রামকে চেয়ে নিয়েছিলেন। তা হলে যজ্ঞ সমাপনের পর অঙ্গীকার-বাক্যের অপলাপ করে বিশ্বামিত্র কেন রাম লক্ষ্মণকে জনকের যজ্ঞ-ভূমিতে ধনু দেখাতে নিয়ে গেলেন?
রামসীতার বিবাহের মুখ্য যোগাযোগকারী বিশ্বামিত্র পরিশেষে মহাকাব্যে উপেক্ষিত হলেন কেন?
একই বিবাহ-আসরে রাম-প্রমুখ চার ভায়ের সঙ্গে সীতা-প্রমুখ। চার বোনের বিবাহ হয়। সীতা-ভগিনী ঊর্মিলার প্রতি আদিকবিই শুধু নিষ্করুণ নয়, লক্ষ্মণ স্বয়ং রামের বনগমনকালে পত্নীকে একবার স্মরণ পর্যন্ত করেননি। ভরত আর শত্রুঘ্নর স্ত্রীদ্বয় মাণ্ডবী আর শ্রুতকীর্তি বিবাহ অনুষ্ঠানের পর হতেই উপেক্ষিতা। সুতরাং ঊর্মিলা-প্রমুখার মানবিক সত্ত্বা কি স্বীকার করা যায়?
রামের সঙ্গে একই আসরে লক্ষণেরও বিবাহ হয়েছিল। তবু সত্যবাদী রাম পঞ্চবটী বনে শূৰ্পণখাকে মিথ্যা ভাষণ করেছিলেন। সবটুকুই কি পরিহাস?
রামের যে চরিত্র তাতে এমন পরিহাস তার চরিত্র বহির্ভূত। তাছাড়া তাড়কাকে নাসাকর্ণ ছেদন করে পরে হত্যা করার পিছনে বিশ্বামিত্রর সমর্থন ছিল। কিন্তু শূপণখার নাসাকৰ্ণ ছেদন রামের আকস্মিক ক্ৰোধের কারণেই হয়েছিল। রামের চরিত্রের সঙ্গে এই আচরণের সংগতি কোথায়?
লক্ষ্মণ বিবাহিত অথবা অবিবাহিত কোনটা সত্য? নাসাকর্ণ ছেদন হিন্দু সমাজে প্রাচীন কাল হতে বিবাহ অনুষ্ঠানের একটি রীতি। সেই রীতি শূৰ্পণখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হল কেন? শূৰ্পণখার নাসাকর্ণ ছেদন করার ফলেই সীতাহরণ এবং পরিশেষে লংকা-যুদ্ধে রাবণ বধ। কিন্তু পরবর্তীকালে রামায়ণে শূৰ্পণখার আর কোন ভূমিকা নাই।
রাম বনগমন করলে ভরতের উপস্থিতিতে শত্রুঘ্নর হাতে লাঞ্ছনার পর মন্থরার আর কোন উল্লেখ নাই। অথচ মন্থরার জন্যই রামকাহিনীর বিস্তার।
শান্তা ও ঋষ্যশৃঙ্গকে নিয়ে যে কাহিনী সেই শান্তা কার কন্যা? কোশলপতি দশরথের, না অঙ্গরাজ রোমপাদর? শান্তার মাতা কে? ঋষ্যশৃঙ্গর কৃপায় দশরথের পুত্ৰলাভ। তবু এই ঋষির ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। রাম-জন্মের পর কোন ঘটনাতেই এই ঋষির উল্লেখ করা হয়নি।
বালকাণ্ডে (৪.২৯) বলা হয়েছে রাম অযোধ্যার রাজপথে লবকুশকে গান গাইতে দেখে তাদের রাজপ্রাসাদে ডেকে এনেছিলেন। অথচ উত্তরকাণ্ডে ( ১০৬ সর্গ ) আছে রামচন্দ্রর অশ্বমেধ-যজ্ঞে লবকুশকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাল্মীকি! সেখানে লবকুশের মুখে রামায়ণ গান শুনে রামচন্দ্র তাঁর পুত্রদের চিনতে পেরেছিলেন।
কোনটা সত্যি?
রামায়ণে এমন অনেক কিছু লক্ষ্য করার আছে, যা অসংলগ্ন মনে হয়। এই সব অসংলগ্নতার মধ্যেই কিন্তু রামকাহিনীর রূপকভেদের ইংগিত রয়েছে।
মহাকাব্যর আদিশ্লোক মূলতঃ মেঘবন্দন ৷ লক্ষ্মীপতি যেহেতু তুমি কামমোহিত ক্ৰৌঞ্চমিথুনের পুরুষ-ক্ৰৌঞ্চকে বধ করে এসেছ, অতএব তুমি
শাশ্বত প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
মা নিষাদ অর্থে লক্ষ্মীপতি অর্থাৎ মেঘ।
কামমোহিত ক্ৰৌঞ্চ-মিথুন শব্দে গ্রীষ্মকালীন সূর্য ও কর্ষিত-জমিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
আদি শ্লোকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে কৃষি কথার। কৃষিকথার নির্দেশ পাওয়া যায় রামায়ণের কেন্দ্রচরিত্র সীতা নামকরণের মধ্যে। সীতা বসুন্ধরা-কন্যা; হলরেখ। মহাকাব্যর একমাত্র সীতা নামটির উল্লেখ আছে ঋগ্বেদে সীতা সেখানেও হলরেখ; মূর্তিমতী কৃষিশ্ৰী, লক্ষ্মী।
অথর্ববেদের কৌশিক সূত্রে (১৪.৭) সীতাকে ‘পর্জন্য পত্নী’ বলা হয়েছে। পারস্কর গুহ্যসূত্রে সীতাকে ‘ইন্দ্ৰপত্নী’ বলা হয়েছে। সীতার এই স্বরূপ অর্থাৎ কৃষিত্রী রামায়ণের মূল অবলম্বন। এখানে রাম সীতার পতি।
বেদের নৈসর্গিক দেবতা পর্জন্য, মূলতঃ মেঘ। এই পর্জন্যদেবকে রামায়ণে রাম নামে উল্লেখ করা হয়েছে মনে করা অসংগত হয় না। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে গঙ্গাকে শ্রেষ্ঠানদী বলায় ধারণা হয় যে প্রাচীন সরস্বতী নদীর তটদেশ ত্যাগ করে আর্যগণ ভারতের মধ্যদেশে গঙ্গানদী তীরে বসবাস কালে এই মণ্ডলটি রচিত হয়। গঙ্গা-যমুনা-উপত্যকায় কালক্ৰমে আর্য ও আর্যেতর জাতির মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটে। এই দশম মণ্ডলে ‘রামাসুর’এর উল্লেখ আছে। পারসিকদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ আবেস্তার ‘রামাহুর’ একজন শান্তির দেবতা।
আবেস্তার অহুর বেদে অসুর হিসাবে স্থান পেয়েছে। আরবি ভাষায় একটি শব্দ আছে ‘রামা’; যার অর্থ নিক্ষেপকারী। মেঘের মানবিক সত্ত্বা কল্পনা করলে মনে হয় সে যেন বৃষ্টির শর নিক্ষেপ করছে।
নানা কারণে মনে করা হয় ভারতের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বেদ-গ্রন্থ রচনা শুরু হয়েছিল। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনা করে বল যায় তখন মানুষের জীবিকা হিসাবে কৃষিকাজ গৌণ ছিল। মুখ্য জীবিকা পশুপালন, বনজসম্পদ আহরণ ও শিকার বর্ষাকালে অবশ্যই ব্যাহত হত।
এই বৈদিক সভ্যতার কালে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে সমকালীন অথবা পূৰ্ববতী বা পরবর্তী কালে আর একটি সভ্য উন্নত অঞ্চল ছিল, যার বর্তমান পরিচয় ‘সিন্ধু সভ্যতা’। এই অঞ্চলটিতে খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক পর্যন্ত পারসিক ও এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলির প্রভাব অনেক বেশী ছিল। ‘সিন্ধু সভ্যতা’ চিহ্নিত অঞ্চলে একদা আবেস্তা নির্দেশিত দেবদেবীর প্রাধান্য থাকা স্বাভাবিক। ‘সিন্ধু সভ্যতা’ প্রভাবিত এই পাললিক ভূখণ্ডে কৃষি ও বাণিজ্য ছিল প্রধান উপজীবিকা। বর্ষা এদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। ক্ষুধার অন্ন ও তৃষ্ণার জলের চাহিদা মিটত সুষম বর্ষণে।
এদের বর্ষণ-দেবতা কে?
মনে হয় ‘আবেস্তা’ গ্রন্থে উল্লেখিত ‘রামাহুর’ অর্থাৎ আরবি ‘রামা’। এই ‘রামাহুর’ বা ‘রামা’র, অবশ্যই একটি বন্দনা-গান তৎকালীন কৃষক সমাজে প্রচলিত ছিল, এমন চিন্তা অসংগত নয়।
আর্যেতর এই জাতির মেঘবন্দনা-গান লৌকিক-সংগীতের সূত্র ধরে কালক্ৰমে মধ্য ও পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল মনে হয়। লৌকিক মেঘবন্দনা-গানের দেবতা ‘রামা’ যখন আর্য সমাজে তথা সংস্কৃত ভাষার স্বীকৃতি পেল, তখন শব্দটি হল ‘রাম’। সংস্কৃত ভাষায় ‘রামা’ শব্দের অর্থ রমণীয়া, শুভ্রা, সুন্দরী স্ত্রী, প্রিয়া। লক্ষ্মীর এক নাম রাম। সীতা লক্ষ্মীর অংশজাত।
রামা শব্দের পুংলিঙ্গে রাম হতে পারে। যেমন মূলশব্দ ‘বামা’র পুংলিঙ্গে বাম। রামা শব্দের পুংলিঙ্গে রাম ধরে অর্থের কোন পার্থক্য ঘটানো হয় না। লক্ষ্মীর অর্থাৎ কৃষিশ্রীর পতি মেঘকেই বুঝানো যায়। রাম শব্দের অর্থ অসিত, অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণ। অসিতের বিপরীত শব্দ সিত অর্থাৎ শুভ্রবর্ণ। সিত শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গে সীতা, গৌরবর্ণ। রামায়ণের সীতার গাত্রবর্ণও ছিল গৌর; আর রামের অসিত অর্থাৎ শ্যামবর্ণ।
রামায়ণে রাম এবং সীতা শব্দ দ্বারা আদিম মানবজাতির গাত্রবর্ণ ভেদে দুই গোত্রের সংমিশ্রণকে ইংগিত করে কিনা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
আদি শ্লোক মেঘবন্দনা, রাম মেঘদেবতা এবং সীতা কৃষিশ্রী। সুতরাং রামায়ণের মূল স্বরূপ কৃষিভিত্তিক।
রামায়ণ–রামের (মেঘের অর্থাৎ বর্তমানকালের মৌসুমী বায়ুর) অয়ন অর্থাৎ চক্র বা আবর্তন।
অথবা, রামার (লক্ষ্মীর অর্থাৎ কৃষিখ্রীর) অয়ন (আশ্রয়)।
রামায়ণ শব্দটি যদি বহুব্রীহি সমাস ধরা হয় তাহলে রাম (মেঘ) অথবা রাম (কৃষিশ্রী) হইয়াছে অয়ন (আশ্রয়) যাহার।
রামায়ণের এই কৃষিচরিত্র সম্পর্কে জামাণ পণ্ডিত ওয়েবার প্রথম ইংগিত দিয়েছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সীতাকে হলরেখ এবং রামকে নবদুর্বাদলশ্যাম হিসাবে উল্লেখ করে রামকথাকে কুষিসভ্যতা বিকাশের রূপক কাহিনী বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু রামায়ণের কৃষিচরিত্র বিষয়ে যে মতামতই পাওয়া যাক না কেন তা অসংলগ্ন ও বিচ্ছিন্ন। রামকাহিনীর ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়নি। ফলে অভিমতগুলি ইংগিত পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে।
রামায়ণের উৎস সন্ধানের জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন বাল্মীকি কেন ‘পৌলস্ত্য বধ’—পরবর্তী নামকরণ রামায়ণ-রচনা করেছিলেন।
রাম কথার প্রথম বক্তা নারদ। বাল্মীকি উদ্গীত শ্লোকের সমর্থন দাতা ব্ৰহ্মা। রামকথার পরিমার্জিত রূপকার বাল্মীকি। গায়ক লবকুশ। শ্রোতা প্রথমে ঋষিকুল, পরে অযোধ্যার জনগণ এবং পরিশেষে রাজা রামচন্দ্র।
রামায়ণ গীতিকাব্যর সূত্র ধরে রাজ রামচন্দ্রর পরিত্যক্ত স্ত্রী সীতার গর্ভজাত সন্তান লবকুশ পিতার রাজ্যের উত্তরাধিকার লাভ করে। অতএব বলা যায় লবকুশকে উত্তরাধিকারে প্রতিষ্ঠিত করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন। সুতরাং বাল্মীকি-রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর ঐতিহাসিকতা অনস্বীকার্য।
সামাজিক তথা রাজনৈতিক কারণে গর্ভাবস্থায় সীতাকে বনবাসে পাঠান হয়। লবকুশের জন্মের আগেই রাজা রামচন্দ্র শত্রুঘ্নকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করে লবণকে বধের নিমিত্ত মথুরা পাঠান।
সুতরাং স্বীকৃতি লাভের প্রত্যাশায় আশ্রমবাসী কিশোর লবকুশকে চারণের ছদ্মবেশে রামায়ণ গীতিকাব্য অবলম্বন করে রাজা রামচন্দ্রর সম্মুখীন হতে হয়েছিল। লবকুশের এই ছদ্মবেশ আপন প্রাণরক্ষার নিমিত্ত প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক কারণে পরিত্যক্ত স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্রদের ঐ একই কারণে রাজা রামচন্দ্র কিভাবে গ্রহণ করবেন সংশয় ছিল।
স্বীকৃতি না পেলে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসাবে প্রাণনাশের বা বন্দীদশার আশংকা থাকে। অপরদিকে শত্ৰুঘ্ন যৌবরাজ্যে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন। এমত অবস্থায় শত্ৰুঘ্ন সিংহাসনের জন্য কোন দাবিদারকে শরুজ্ঞানে অবশ্যই দমন করার চেষ্টা করবেন। সুতরাং লবকুশের আত্মপরিচয় গোপন করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। এই একই কারণে তাদের অবলম্বন গীতিকাব্যর মূল বক্তব্যও অবশ্যই প্রচ্ছন্ন রাখা অনিবার্য ছিল। আদিকবি সার্থকভাবে যে এই প্রচ্ছন্নত রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন তার প্রমাণ চারণবেশী লবকুশ কর্তৃক গীত রামায়ণের মূল অর্থ রাজদরবারে একমাত্র রামচন্দ্র অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, অন্য কোন শ্রোতা নয়। বাল্মীকি-রামায়ণের বৈশিষ্ট্য এই রূপক সৃষ্টিতে।
সুতরাং রামকাহিনীর দুটি স্বরূপ। একটি বাহ্যঃ, অপরটি অন্তর্নিহিত। এজন্য বারংবার রামায়ণে বলা হয়েছে এই গীতিকাব্য বিবিধার্থবহ। লবকুশ কর্তৃক গীত মহাকাব্যর অন্তর্নিহিত ঐতিহাসিক তথ্য বুঝতে পেরেছিলেন একমাত্র রামচন্দ্র। অপর সকলের নিকট যে বাহ্যঃ স্বরূপ প্রকাশিত ছিল তার মূলসত্ত্বা মেঘবন্দনা অর্থাৎ মেঘ-আশ্রিত কৃষিভিত্তিক লোকগাথা।
এই মেঘদেবতা রাম এবং কৃষিশ্রী সীতা আজ হিন্দুধর্মের দেবদেবী। বৈদিককাল হতে নৈসর্গিক বিভিন্ন ঘটনা দেবত্ব লাভ করে এসেছে এটা তর্কাতীত সত্য।
আজও ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। কয়েক দশক আগেও এদেশের কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করত মেঘের আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর। এ নিয়ে অতি প্রাচীনকালেই লোকগাথা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক এবং সেই লোকগাথার স্থান ও কালভেদে পরিবতন ঘটাও বিচিত্র নয়। মহাকাব্য হিসাবে রামায়ণ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে থাকলেও দেখা যায় রামকাহিনী জনজীবনের উপর বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে কৃষি-প্রধান মৌসুমী-বায়ু সেবিত অঞ্চলে।
রামসীতার এই দৈব-সত্ত্বাকে নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না। অস্বীকার করার উপায়ও নাই। সুতরাং বাল্মীকি-রামায়ণের বিচার বিশ্লেষণ করে তার রচনাকাল বা ঐতিহাসিকতার তথ্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টাকে ধমবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা ভেবে নেওয়াটা মোটেই সংগত নয়। কারণ এই বিশ্লেষণের ফলে রামের দেবত্ব এতটুকু ক্ষুন্ন হয় না।
একাদশ খৃষ্টাব্দে গৌড়ে পালবংশর রাজত্বকালে রাজা রামপালের গুনগান গাইতে সন্ধ্যাকর নন্দী ‘রামচরিত’ রচনা করেছিলেন। ঐ রচনা বহুকাল রামায়ণের একটি সংস্করণ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার পরে জানা যায় আসলে দ্বৈত অর্থবোধক রচনাটি রাজা রামপালের স্তুতিবাদ। এই সত্য উদ্ঘাটনে রামায়ণের রামসীতার দেবত্ব কি এতটুকু নিম্প্রভ হয়েছে?
বলা যায় মেঘ-দেবতা রাম ও কৃষিশ্রী সীতাকে কেন্দ্র করে একদ৷ যে লোকগাথা মৌসুমীবায়ু-সেবিত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল, বাল্মীকি সেই কাহিনী অবলম্বন করে বিবিধার্থবোধক শ্লোকে তার আমলের কোনও এক রাজার হৃত পিতৃরাজ্য উদ্ধারের ঐতিহাসিক বর্ণনা রেখে গিয়েছেন।
সুতরাং বাল্মীকি-রামায়ণের বর্ণিত রামচন্দ্রর মানবিক সত্তা যদি আজ উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাহলেও স্মরণ রাখতে হবে রামের দৈবসত্তা বিন্দুমাত্র স্নান হবে না। মহাবীর জৈন ও গৌতম বুদ্ধদেব হতে শুরু করে আজকের দিনের পরমপুরুষ রামকৃষ্ণ পর্যন্ত বিভিন্ন যুগের বহু ধৰ্মবেত্তা আজ দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হলেও তাদের নরদেহসত্তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এরজন্য তাদের মূল্যায়ণ কিছুমাত্র বিঘ্নিত হয়নি। চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ায় হিন্দু বা মুসলমান কারও ধর্মবিশ্বাস আহত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। কেন হবে? নিজের বিশ্বাস নিজের কাছে। সম্প্রতি আচার্য সুনীতিকুমারের রামায়ণ বিষয়ক দু-চারটি মন্তব্য প্রচণ্ড আলোড়ন ও উন্মাদন সৃষ্টি করেছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি তার মন্তব্যর সমর্থনে প্রতিশ্ৰুত গ্রন্থটি রচনা করে যেতে পারেননি। এই গ্রন্থ রচনা যদি সম্পূর্ণ হত এবং রামায়ণের রাজ রামচন্দ্রর কোন মানবিক সত্তা স্থিরীকৃত হত, তাহলে রামকথার প্রাচীনত্ব ও রামের দেবত্ব এতটুকু ক্ষুন্ন হত বলে মনে করি না। কারণ মেঘদেবতা রাম এবং ঐতিহাসিক রামচন্দ্র দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সত্তা।
কোনদিন রামায়ণের রামচন্দ্রর মানব-সত্তা উদ্ঘাটিত হলে সোচ্চার হওয়ার কারণ নাই। কেন না বৈষ্ণব মতবাদের রূপকার পঞ্চদশ শতাব্দীর চৈতন্যদেব মহাপ্রভু, একাধারে নরদেহী এবং ঈশ্বর অবতার। যদি দেখা যায় কোন এক কালে কোন এক রাজ ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনরভ্যুদয় ও বর্ণাশ্রম প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হওয়ায় বিষ্ণুর অবতার হিসাবে গণ্য হয়েছিলেন; তাহলে আপত্তির কি কারণ ঘটতে পারে?
আজকের মানুষের মন বিশ্লেষণ-ধর্মী। কোন কিছু বিচার না করে সে গ্রহণ করতে চায় না। এজন্য দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত যোগী সাধুসন্তর অলৌকিক ক্ষমতাকে বিজ্ঞানের কষ্টি-পাথরে যাচাই করে নেওয়ার প্রয়াস।
এতকথা বলার উদ্দেশ্য এই যে রামকাহিনীর উৎস ও ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ঘাটন-প্রচেষ্টা কোন প্রকারেই কারও ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা নয়।
আগেই বলেছি বাল্মীকি তাঁর মহাকাব্য রচনায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুরোপুরি রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন; বিশেষ করে ইতিহাসের ক্ষেত্রে। সুতরাং ব্যক্তি ও স্থান নামগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রূপক মানতে হবে, নতুবা রামায়ণের বিবিধার্থবোধক বিশেষণটি ব্যাহত হয়। নামের বুৎপত্তিগত অর্থ, সংশ্লিষ্ট কাহিনী এবং প্রয়োজনীয় ইংগিত অনুধাবন করে মূল বক্তব্যর সন্ধান করতে হবে।
দশরথের কোশলরাজ্যে অযোধ্যা নামে এক নগরী ছিল। কোশল রাজ্যটির ঐতিহাসিক সত্তা আছে বলে অযোধ্যা নামেও একটি নগরী ছিল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালে নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হবে। অযোধ্যা শব্দের অর্থ, যেখানে যোদ্ধা নাই অথবা যোদ্ধাদেরও অগম্য স্থান; উভয়ই হতে পারে। সুতরাং অযোধ্যা শব্দ দ্বারা প্রাচীন এমন একটি নগরীকে ইংগিত করা হয়েছে যাহা কোশলরাজ্যের রাজধানী ছিল। বর্তমানের কোন স্থানের নামের সাদৃশ্য হেতু সেই স্থানটিকে রামায়ণের অযোধ্যা হিসাবে চিহ্নিত করতে গেলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
রামায়ণের কৃষিভিত্তিক সত্তাকে যত সহজে চেনা যায়, তার ঐতিহাসিক সত্তা ততই দুরূহ। শব্দ চয়নে প্রচও কুশলত বিভ্রম ঘটায় পদে পদে। তাছাড়া বৈদিক সাহিত্যরীতি অনুসরণে প্রচ্ছন্নতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন, লক্ষ্মীর অংশজাত সীতা শব্দে কৃষিশ্রী, রাজ্যশ্রী, ভাগাশ্রী, শুভ্রাঙ্গী ইত্যাদি অনেক কিছু ইংগিত করা যায়। অতএব বিবিধার্থবোধক সীতা শব্দটির সংশ্লিষ্ট কাহিনীগুলি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত এক এবং একটিমাত্র ব্যক্তিসত্তার কিনা চিন্তা করতে হবে।
রামায়ণে কৃষিভিত্তিক লোকগাথার মেঘ যেমন রাম ও হলরেখ সীতা, তেমনি ঋতুচক্রের বিভিন্ন নৈসর্গিক ঘটনাগুলি এবং বিভিন্ন পদার্থ ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলিও মানবিক স্ত্রী-পুরুষের আকার ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতই ভাবভঙ্গি প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিশ্বজগৎ, উদ্ভিদজগৎ এবং জীবজগতের সকল কিছুই মানুষের মত আচরণ করায় রামায়ণের কাহিনীগুলিতে এত জটিলতা।
রামায়ণে অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার যেমন আছে, তেমনি ভাবার্থেও অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
রামায়ণ নিয়ে আলোচনায় বসতে হলে সংস্কারমুক্ত মনে স্মরণ রাখতে হবে বাল্মীকি ছদ্মনামে একজন সর্বশাস্ত্র-বিশারদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কারণে ‘পৌলস্ত্য বধ’ তথা ‘রামায়ণ রচনা করেছিলেন তৎকালীন একটি জনপ্রিয় কৃষিলোকগাথা অবলম্বন করে।
এমত ধারণার হেতু এই যে বাল্মীকি বিভিন্ন ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন এই কাব্য বিবিধার্থবোধক ৷ উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকি লবকুশকে অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রাঙ্গণে রামচন্দ্রর সম্মুখে রামায়ণ গান গাওয়ার প্রাক্কালে যে উপদেশ দিয়েছেন তা অনুসরণ করলে স্পষ্ট হয় যে এই কাব্যর সূত্র ধরে লবকুশকে সন্তানের স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়া। কার্যক্ষেত্রে ঘটেছেও তাই। যাই হোক, রামায়ণের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার যোগ্য।
বতমানে ঐ প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে রামায়ণের কৃষিভিত্তিক সত্তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
——————-
পাদটীকা
১। “দৃষ্টান্তস্বরূপ রামায়ণ গ্রহণ করা যাক। পতঞ্জলি মগধ দেশে পুষ্পমিত্র রাজার রাজত্ব সময়ে পাণিনির উপর মহাভাষ্য লিখিয়াছিলেন। শ্ৰীযুক্ত রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকার ঐতিহাসিক প্রমাণে মহাভাৰ্য রচনাকাল খ্ৰীঃ পূঃ ১৫০ বর্ষ স্থির করিয়াছেন। মহাভাষ্যের পূর্বে বাল্মীকির রামায়ণ ছিল। এজন্য শ্ৰীযুক্ত কাশীনাথ তেলাঙ্গ বর্তমান রামায়ণ রচনাকাল খ্ৰীঃ পূঃ ৩০০ বর্ষ অনুমান করিয়াছেন। উহাতে মেষাদি সংজ্ঞা ও গ্রহ-নক্ষত্রের সম্বন্ধ আছে। মেঘাদি সংজ্ঞা আছে বলিয়া জানিতেছি যে, খ্ৰী: পূ: ৫ম শতাব্দীর পরে রামায়ণের বর্তমান আকার হইয়াছে, তৎপূর্বে হয় নাই। ঐ সময়ের পূর্বে যে রামায়ণ ছিল না, তভা অবশ্য আমাদের উক্তিতে নিবারিত হইতেছে না।” –স্ত্রীযোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি প্রণীত “আমাদের জ্যোতিষী ও জ্যোতিষ”, পৃষ্ঠা ১৬৪।