০১. ডার্ক লর্ডের উত্থান

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস
জে. কে. রাওলিং

০১. ডার্ক লর্ডের উত্থান

চাঁদের আলোয় ভরা গলিটায় শূন্য থেকে ওরা দুজন নেমে এলো একই সময়। দুজনের মাঝে মাত্র কয়েক গজ দূরত্ব। দুজনই দ্রুত তাদের হাতের যাদুর দণ্ড পরস্পরের বুকের দিকে তাক করে এক সেকেন্ড স্থির হয়ে থাকল। পরক্ষণেই একে অপরকে চিনতে পেরে দুজনই যাদুর দণ্ড ঢুকিয়ে ফেলল তাদের আলখাল্লার ভেতর। এরপর তারা দুজন দ্রুত হাঁটতে শুরু করল একই দিকে।

দুজনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত লম্বাজন বলল, কোনো খবর আছে? সেভেরাস স্নেইপ বলল, খুবই ভালো খবর আছে।

গলির বাম পাশেই নিচু ঝোপ আর ডান পাশে যত্ন করে ছেটে রাখা উঁচু ঝোপ। একই সাথে তালে তালে হাঁটার সময় দুজনেরই পরনের লম্বা আলখাল্লা পায়ের সঙ্গে ঘষা খেতে থাকল।

ইয়াক্সলি বলল, মনে করেছিলাম আমি বোধ হয় দেরি করে ফেলেছি। চাঁদের আলোর মাঝে মাঝে গাছের ছায়া। হাঁটার সময় ওই গাছের ছায়ার কারণে তার মোটা শরীরটা একবার দেখা যায় আবার অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। আমি যা ভেবেছিলাম, ব্যাপারটা তারচেয়েও বেশি চালাকির ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় সে সন্তুষ্টই হবে। তোমাকে মনে হচ্ছে বেশ আত্মবিশ্বাসী, তোমার সংবর্ধনাটা ভালোই হবে মনে কর?

স্নেইপ মাথা নাড়ল। কিন্তু কিছু বলল না। তারা দুজনই ডান দিকে বাঁক নিয়ে প্রশস্ত রাস্তায় এসে পড়ল। উঁচু ঝোপটাও বেঁকে লোহার জোড়া-গেট পার হয়ে চলে গেছে। দুজনের কেউ হাঁটার গতি থামাল না। সেলুট দেয়ার ভঙ্গিতে তারা নিঃশব্দে হাত তুলল এবং যেন ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে বন্ধ লোহার গেটটি বাধাহীনভাবে পার হলো।

ঘন সবুজ হেজ গাছের কারণে এখন তাদের পায়ের শব্দ কমে গেল। তাদের ডান দিকের কোথাও থেকে একটি শ..শ শব্দ শোনা গেল। ইয়াক্সলি তার যাদুর দণ্ডটি দ্রুত আবার বের করল এবং তার সঙ্গীর মাথার উপর দিয়ে সেদিকে তাক করল। দেখা গেল কিছুই না, দুটি সাদা ময়ূর রাজকীয়ভাবে ঝোঁপের উপর দিয়ে হাঁটছে।

ইয়াক্সলি নাক দিয়ে শব্দ করে ছড়িটা কোর্তার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে বলল, লুসিয়াস সবসময় নিজেরটা ভালোই বোঝে। ময়ূররা… সোজা পথের শেষে অন্ধকার থেকে ভেসে উঠল একটি বাঙলো। নিচতলার হিরকখচিত জানালায় আলো ঝলমল করছে। ঝোঁপের আড়ালে বাগান থেকে ঝর্নার শব্দ ভেসে আসছে। স্নেইপ আর ইয়াক্সলি সামনের দরোজার দিকে এগিয়ে যেতে পায়ের নিচের নুড়ি পাথরে শব্দ হলো। সাথে সাথেই ভেতর থেকে ওদের ঢোকার পথের দরোজাটি খুলে গেল। অথচ দরোজা খুলতে কাউকে দেখা গেল না।

হলরুমটি বিশাল আকারের। নিভু নিভু আলো, জমকালো সাজানো ঘর। পাথরের মেঝের প্রায় পুরোটাই অপুর্ব সুন্দর একটি কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। স্নেইপ এবং ইয়াক্সলি এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে দেয়ালের ফ্যাকাশে মুখ ছবিগুলো তাদেরকে অনুসরণ করল। পরের রুমে ঢোকার পথে ভারী কাঠের দরোজার সামনে দুজন দাঁড়াল। সামান্য একটু দ্বিধা করে স্নেইপ দরোজার ব্রোঞ্জের হাতলটি ঘোরাল।

ড্রইংরুমে একদল নির্বাক মানুষে পরিপূর্ণ। তারা লম্বা একটি কারুকাজ করা টেবিল ঘিরে বসে আছে। ঘরের অন্যান্য ফার্নিচারগুলো দেয়ালের ভিতরের দিকে ঠেলে দেয়া আছে। ভারী মার্বেলের তৈরি চমৎকার ফায়ারপ্লে। সেটির উপর দিকে আয়না জ্বলজ্বল করছে। ফায়ারপ্লেসের ভেতর সশব্দে জ্বলতে থাকা আগুন থেকে আলো বের হয়ে আসছে। স্নেইপ এবং ইয়াক্সলি এক মুহূর্তের জন্য দরোজার কাছে থামল। ভেতরের স্বল্প আলো চোখে সয়ে এলে তারা দুজন অদ্ভুতদর্শন ঘরটির ভেতর প্রবেশ করল। একটি মানব দেহাকৃতি উল্টো হয়ে টেবিলের উপর শূন্যে ঝুলছে। মনে হলো দেহটি অচেতন। ধীরে ধীরে ঘুরছে। যেন অদৃশ্য একটি রশি দিয়ে দেহটি ঝুলানো। চারপাশের আয়নায় এবং পরিচ্ছন্ন টেবিলের চকচকে উপরিতলে দেহটির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভেতরের কেউ এই দেহটির দিকে একবারও তাকিয়ে দেখছে না, শুধু ঠিক দেহটার নিচে বসা এক যুবক ছাড়া। মনে হলো, মিনিট খানেক পরপর ওদিকে তাকানো থেকে নিজেকে সে সংবরণণ করতে পারছে না।

টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে একটি উচ্চ কণ্ঠস্বর বলে উঠল, ইয়াক্সলি এবং স্নেইপ, তোমরা প্রায় দেরিই করে ফেলেছিলে।

যার কণ্ঠস্বর, তিনি বসেছেন ফায়ারপ্লেসের সামনে। তাই ঘরে ঢুকেই তার অবয়বটি ছাড়া ভালো করে দেখতে পাওয়া খুবই মুশকিল। তারা কাছে এগিয়ে যেতেই আলোআধারির ভেতরও মুখটা দেখতে পেল। লোমহীন, সাপের মতো। চোখা নাক আর জ্বলজ্বলে লাল চোখ। তার শিষ্যরা সারিবদ্ধভাবে বসে। তাকে এতটাই ফ্যাকাশে দেখা যাচ্ছে মনে হয় যেন মুক্তার ঘোলাটে আভা বের হয়ে আসছে।

ভোল্ডেমর্ট তার ডান পাশের আসনের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, সেভেরাস এখানে। আর ইয়াক্সলি দোলোহোভের পাশে।

দুজনই তাদের অনুমোদিত আসনে বসল। সবার চোখ স্নেইপের দিকে এবং তারদিকে তাকিয়েই ভোল্ডেমর্ট প্রথম কথা বলে উঠল।

তাহলে?

প্রভু, অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স পরিকল্পনা করেছে যে আগামী শনিবার রাতে তারা হ্যারি পটারকে তার বর্তমান নিরাপদ অবস্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেবে।

কথাটা শুনে টেবিলের চারপাশের কেউ কেউ উত্তেজনার সঙ্গে তাকালো, কেউ কেউ শক্ত হয়ে বসল, অন্যরা অস্থির হয়ে নড়াচড়া করল। সবার চোখ স্নেইপ এবং ভোল্ডেমর্টের দিকে।

শনিবার …রাতে, ভোল্ডেমর্ট পুনরায় বলল। তার লাল চোখ দুটো স্নেইপের কালো চোখের দিকে এমন তীব্রভাবে স্থির হয়ে আছে যে অন্যান্যরা নিজেদের চোখ সরিয়ে নিল। তাদের মনে হলো যে ওই ভয়ঙ্কর চাহনিতে তারা পুড়ে যেতে পারে। কিন্তু স্নেইপ শান্তভাবেই ভোস্টেমর্টের দিকে তাকাল। কয়েক মুহূর্ত পর ভোল্ডেমর্টের ঠোঁটহীন মুখটিতে যেন হাসি ফুটে উঠল।

ভালো, খুবই ভালো কথা। এবং এই তথ্যটি এসেছে…।

তথ্যসূত্র নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি মাই লর্ড, স্নেইপ বলল।

মাই লর্ড, লম্বা টেবিল থেকে গোল্ডেমর্ট এবং স্নেইপের দিকে ঝুকল ইয়াক্সলি। সবগুলো মুখ এখন তার দিকে ফিরে আছে।

মাই লর্ড, আমি অন্যরকম কথা শুনেছি।

ইয়াক্সলি একটু মুখ অগ্রসর করল, লম্বা টেবিলের যেদিকে ভোল্ডেমর্ট এবং স্নেইপ বসেছিল সেদিকে। ভোল্ডেমর্ট কিছু বলল না। ইয়াক্সলি আবার বলতে শুরু করল, দাওলিশ দ্য অরর জানিয়েছে যে পটারের বয়স ১৭ বছর না হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩০ তারিখের আগে তাকে কোথাও সরানো হবে না।

স্নেইপ মৃদু হাসলেন।

আমার সোর্স আমাকে জানিয়েছে যে ওরা ভুল খবর রটনার পরিকল্পনা করছে। তাহলে এটাই হলো সেই। দাওলিশের উপর যে কনফানডাস চার্ম ব্যবহার করা হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য এটাই প্রথম নয়, আগেও হয়েছে। তাকে যে অতি সহজেই ধোকা দেয়া যায় সেটা সকলের জানা কথা।

ইয়াক্সলি বলল, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি লর্ড, দাওয়ালিশ সঠিকভাবে জেনেই কথাটা বলেছে।

যদি তার ওপর কোনো যাদুমন্ত্র প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, তাহলে তো সে নিশ্চিত হবেই। স্নেইপ বলল, আমি তোমাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি ইয়াক্সলি, অরর অফিস হ্যারি পটারের নিরাপত্তার ব্যাপারে আর কোনো ভূমিকাই রাখবে না। অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্সের ধারনা যে আমরা মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ভেদ করে গোপন। খবর পাচ্ছি।

তাহলে অর্ডার অন্তত একটি বিষয় সঠিক, অ্যাঁ! ইয়ালির কাছ থেকে সামান্য দূরে উবু হয়ে বসা লোকটি বলল। হি হি করে হাসল লোকটি। টেবিলের চারপাশে তার হাসির প্রতিধ্বনি শোনা গেল।

ভোল্ডেমর্ট হাসল না। তার দৃষ্টি চলে গেছে মাথার উপর ঘূর্ণায়মান দেহটির দিকে। মনে হলো সে কোনো চিন্তায় ডুবে আছে।

ইয়াক্সলি বলতে থাকল, মাই লর্ড, দাওলিশ বিশ্বাস করে যে ছেলেটিকে ট্রান্সফার করার কাজে অররদের একটি পুরো দল ব্যবহার করা হবে।

ভোল্ডেমর্ট তার বিশাল লম্বা সাদা হাত উপরে তুলল। সঙ্গে সঙ্গে ইয়াক্সলি থেমে গেল। ভোল্ডেমর্টকে স্নেইপের দিকে মুখ ফেরাতে দেখে ইয়াক্সলি বিরক্তির সঙ্গে তাকাল।

এরপর ওরা ছেলেটিকে কোথায় লুকিয়ে রাখবে?

স্নেইপ বলল, অর্ডারদের মধ্যে একজনের বাড়িতে। আমার সোর্সের মতে জায়গাটিকে অর্ডার এবং মন্ত্রণালয় মিলে যতটা পারা যায় নিরাপদ করেছে। মাই লর্ড, আমার মনে হয় একবার নিয়ে গেলে মন্ত্রণালয়ের পতন না হওয়া পর্যন্ত ওকে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকবে। অবশ্য আগামী শনিবারের আগেই মন্ত্রণালয়ের পতন হলে, তখন হয়তো আমরা সুযোগ পাব। অনেক কিছু আবিষ্কার করার এবং ওদের সকল প্রতিরক্ষা যাদুমন্ত্র ভাঙতেও পারব এবং তখন অন্য সব ঘটনাবলীর বিষয়ও জানা যাবে।

ডোন্ডেমর্ট চোখ নামিয়ে টেবিলের দিকে তাকাল। তার লাল চোখে আগুনের আভা জ্বলজ্বল করছে। বলল, ইয়াক্সলি ঠিক আছে সব? আগামী শনিবারের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের পতন হচ্ছে?

আবারো সবগুলো মুখ ইয়াক্সলির দিকে ফিরল। সে তার কাঁধটা টানটান করে সোজা হয়ে বসল।

মাই লর্ড, এ ব্যাপারে আমার কাছে সুখবর আছে। অনেক চেষ্টা করে এবং অনেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে পিয়াস থিকনেসের ওপর ইম্পেরিয়াস কার্স প্রয়োগ করতে পেরেছি।

ইয়াক্সলির আশেপাশে বসা সবাই তার এ কথায় খুশি হলো। ঠিক পাশে বসা দোলোহভ ইয়াক্সলির পিঠ চাপড়ে দিল।

ভোল্ডেমর্ট বলল, এটা হলো শুরু। কিন্তু থিকনেসে হলো মাত্র একজন। আমি কাজ শুরু করার আগে আমাদের লোকজনদের ক্রিমগিয়রকে ঘিরে ফেলতে হবে। মন্ত্রীদের জীবনের ওপর আঘাতের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমি অনেক পিছিয়ে যাব।

হ্যাঁ মাই লর্ড, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু আপনি জানেন যাদু আইন প্রয়োগকারী বিভাগের প্রধান হিসাবে থিকনেসের যে শুধু তার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তা নয়, অন্য মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোর সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। আমি মনে করি আমাদের জন্য কাজটি সহজ হবে। শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলে অন্যরা নত থাকবে। ফলে তারা সবাই মিলে ক্রিমপিয়রের পতন ঘটাতে পারবে।

ভোল্ডেমর্ট বলল, তবে বাকীদেরকে দলে আনার আগে যদি আমাদের বন্ধু থিকনেসে ধরা না পড়ে। সে কারণে আগামী শনিবার মন্ত্রণালয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তাই, ছেলেটিকে যদি তার গন্তব্য স্থানে আমরা ধরতে না পারি তাহলে যে করেই হোক সরে যাওয়ার পথে তাকে ধরতে হবে।

ইয়াক্সলিকে মনে হলো সে তার পক্ষে অন্তত আংশিক সমর্থন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। সে বলল, আমাদের একটি সুবিধা আছে মাই লর্ড। ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টে আমাদের বেশ কয়েকজন লোককে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি পটার অদৃশ্য হওয়ার অথবা ফু-নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা জেনে যাব।

স্নেইপ বলল, এর কোনোটাই সে করবে না। মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে অথবা পরিচালনা করে এমন সব যানবাহনকেই অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স এড়িয়ে চলে। স্থানের ব্যাপারে তারা সবকিছুকেই অবিশ্বাস করে।

ভোল্ডেমর্ট বলল, সেটা হলে আরো ভালো। তাহলে তাকে নিরাপদ ব্যবস্থা ছাড়া সাধারণভাবে চলতে হবে। ফলে সহজে তাকে তুলে নেওয়া যাবে।

ভোল্ডেমর্ট কথা বলতে বলতে আবার ধীরে ধীরে ঘুর্ণায়মান দেহটার দিকে তাকাল, ওর ব্যাপারটি আমি নিজে দেখব। হ্যারি পটার বিষয়ে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ভুল আমাদের হয়েছে। কিছু ভুল আমি নিজেও করেছি। পটার তার নিজের কৌশলের চেয়ে আমার ভুলের কারণে বেঁচে আছে। টেবিল ঘিরে বসে থাকা সহযোগীরা মন দিয়ে ভোল্ডেমর্টের কথা শুনছে। তাদের প্রত্যেকের অভিব্যক্তিতে একটা শংকা ফুটে উঠেছে। এই বুঝি হ্যারি পটার বেঁচে থাকার কারণে তাকে দায়ী হতে হয়। কিন্তু ভোল্ডেমর্টকে মনে হলো অন্যদের নয় বরং নিজের সঙ্গেই বেশি কথা বলে যাচ্ছে। এখনো সে কথা বলছে ওই অচেতন দেহটির দিকে তাকিয়ে।

আমি ছিলাম অসতর্ক, তাই ভাগ্য এবং সুযোগ দুটোই আমাকে ব্যর্থ করেছে। ও আমার সব ভাল পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন আমি আরো ভালো জানি। আমি এখন সেই ব্যাপারগুলো বুঝি যা আগে বুঝতাম না। আমি হলাম হ্যারি পটারকে হত্যা করার একমাত্র ব্যক্তি এবং আমি সেটা করব।

তার বাক্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ঠিক যেন তার কথার উত্তর দেওয়ার মতো, হঠাৎ একটি চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেল। ভয়ানক চিৎকার। মনে হলো তীব্র যন্ত্রণা ও ব্যথায় কেউ চিৎকার করছে। সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই টেবিলের নিচের দিকে তাকাল। মনে হলো চিৎকারের শব্দটি তাদের পায়ের নিচে কোথাও থেকে এসেছে।

ভোল্ডেমর্টের গলার স্বরে কোনো পরিবর্তন হলো না। ঘুর্ণায়মান দেহটি থেকে চোখ না সরিয়ে সে শান্ত কণ্ঠে বলল, ওয়ার্মটেইল, আমি তোমাকে বলেছি না যে আমাদের বন্দিকে শান্ত রাখো?

জি ম..মাই লর্ড। ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে একজন ছোট সাইজের মানুষ বলল। সে তার চেয়ারটিতে এত কম জায়গা নিয়ে বসেছে যে প্রথমে তাকে চোখেই পড়ে না। এরপর সে চেয়ার বেয়ে নামল এবং ঝটপট রুম থেকে বের হয়ে গেল। সে যাওয়ার সময় সে ঘরটিতে একটি অদ্ভুত রুপালি আভা রেখে গেল।

অনুসারীদের উত্তেজিত মুখের দিকে তাকিয়ে ভোল্ডেমর্ট বলতে থাকল, যে কথা আমি বলছিলাম, এখন আমি আগের চেয়ে ভালো বুঝি, পটারকে হত্যা করতে যাওয়ার আগে তোমাদের কারো কাছ থেকে একটি যাদুদণ্ড আমাকে নিতে হবে।

তার চারপাশের মুখগুলোর মধ্যে ভয় ফুটে উঠল। এরচেয়ে বরং সে বলতে পারত যে তোমাদের কারো একজনের হাত আমি নিতে চাই।

ভোল্ডেমর্ট আবার বলল, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে স্বেচ্ছায় দেবে? দেখা যাক… লুসিয়াস, তোমার আর যাদুদণ্ড রাখার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

লুসিয়াস ম্যালফয় মুখ তুলে তাকাল। তার শরীরের ত্বক হলুদ আকার ধারণ করেছে। আগুনের আলোতে দেখা যাচ্ছে ঘেমে চিকচিক করছে। তার চোখ দুটোতে কালো ছায়া পড়েছে এবং ভিতরে ঢুকে গেছে। কথা বলার সময় তার গলা খসখস করে উঠল।

মাই লর্ড?

তোমার যাদুদণ্ড লুসিয়াস। ওটা আমার লাগবে।

আমি…

ম্যালফয় পাশে বসা তার স্ত্রীর দিকে তাকাল। তার স্ত্রী সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত, কিন্তু ম্যালয়ের মতোই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তার লম্বা সোনালি চুল পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। তার হাতের সরু আঙুলগুলো দিয়ে সে ম্যালয়ের কব্জি ছুঁয়ে দিল। তার হাতের ছোঁয়া পেয়ে ম্যালফয় জামার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে যাদুদণ্ডটি বের করে আনল এবং ভোল্টেমর্টের দিকে বাড়িয়ে দিল। ভোল্ডেমর্ট সেটিকে নিয়ে তার লাল চোখের সামনে ধরল। নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করল।

এটা কী?

দেবদারনু মাই লর্ড, ম্যালফয় ফিস ফিস করে বলল।

আর এর আসলটুকু?

ড্রাগন, ড্রাগন হার্টস্ট্রিং।

খুব ভালো, ভোল্ডেমর্ট বলল। সে নিজের দণ্ডটিও বের করল এবং দুটোর মধ্যে কোনটা লম্বা মেপে দেখল।

লুসিয়াস ম্যালফয় এক সেকেন্ডের কম সময়ের জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে নড়ে উঠল। তাকে দেখে মনে হল সে নিজের দণ্ডটির বদলে ভোল্টেমর্টের দণ্ডটি পাচ্ছে বলে আশা করছে। তার ওই ভাব ভোল্টেমর্টের নজর এড়ালো না। তার চোখ দুটো ভয়ানকভাবে বিস্ফোরিত হলো।

আমি কী তোমাকে আমার দণ্ডটি দেব লুসিয়াস? আমারটি?

উপস্থিত অনেকে অবজ্ঞার হাসি দিল।

আমি তোমাকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছি লুসিয়াস। এটাই কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি তুমি এবং তোমার পরিবার ধীরে ধীরে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছ বলে মনে হচ্ছে। আমি তোমাদের বাড়িতে আছি, সেটাই কি তোমাদের অখুশির কারণ লুসিয়াস?।

মোটেই না, মোটেই না মাই লর্ড!

এক ধরনের মিথ্যা… লুসিয়াস..

নিষ্ঠুর মুখ স্তব্ধ হওয়ার পরও মনে হলো একটি মৃদু হিসহিস শব্দ হচ্ছে। যাদুকরদের মধ্যে একজন বা দুজন থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। শব্দ আরো বাড়তে থাকল। টেবিলের নিচ দিয়ে ভারী কোনো কিছু বেয়ে যাচ্ছে।

দেখা গেল বিশাল একটি সাপ তলা থেকে বেরিয়ে ভোল্টেমর্টের চেয়ার বেয়ে উঠতে থাকল। উঠতেই থাকল। এর যেন শেষ নেই। শেষ পর্যন্ত ভোল্টেমর্টের কাঁধ পর্যন্ত বেয়ে উঠল। সাপটির গলার কাছের অংশ মানুষের উরুর সমান মোটা। চোখের মনিতে আড়াআড়ি দাগ, পলকহীন। ভোল্ডেমর্ট প্রাণীটিকে তার লম্বা এবং সরু আঙুলগুলো দিয়ে অন্যমনস্কভাবে আদর করছে। তখনো ভোল্টেমর্টের চোখ লুসিয়াস ম্যালফয়ের দিকে।

ম্যালফয়রা তাদের ভাগ্য নিয়ে এত অসন্তুষ্ট কেন? আমার ফিরে আসা, অনেক বছর ধরে আমার ক্ষমতায় আরোহণের প্রচেষ্টা —তাদের কাছে কাক্ষিত নয়?

অবশ্যই মাই লর্ড। লুসিয়াস ম্যালফয় বলল। উপরের ঠোঁটের কাছ থেকে ঘাম মুছতে গিয়ে তার হাত কেঁপে গেল। আমরা আপনার ফিরে আসাটাই চাই। আমাদের এটাই আকাঙ্ক্ষা।

ম্যালয়ের বাঁ পাশে বসে তার স্ত্রী দ্বিধার সঙ্গে শক্ত করে মাথা দোলাল। তার চোখ দুটো ভোল্ডেমর্ট এবং সাপটা থেকে সরিয়ে রাখল। তার ডানপাশে তার ছেলে ড্র্যাকো বসে আছে। সে মাথার উপরের নিঃসার দেহটির দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ভোস্টেমর্টের দিকে তাকিয়েই আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তার চোখে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছে।

মাই লর্ড, টেবিলের বেশ খানিকটা দূরে বসা একজন কালো মহিলা বলল। তার গলার স্বর আবেগে সংবরণ করতে কষ্ট হচ্ছে। আপনাকে এখানে, আমাদের বাড়িতে পাওয়া আমাদের জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার। আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।

মহিলার পাশে তার বোন বসা। দেখতে দুবোন পুরোপুরি আলাদা। তার কালো চুল, চোখের পাতা ভারী। তার চালচলন, আচার-আচরণেও। নার্সিসা স্থির দৃঢ়ভাবে বসে আছে। আর বেলাট্রিক্স ভোল্টেমর্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তার নৈকট্যের জন্য শুধুমাত্র কয়েকটি কথা যথেষ্ট নয়।

এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু নেই, ভোল্ডেমর্ট কথাটি পুনরাবৃত্তি করল। বেলাট্রিক্সের দিকে তাকানোর কারণে ভোল্টেমর্টের মাথাটা একটু কাত হয়েছে। তার মানে এটা তোমার কাছে একটা বড় পাওনা বেলাট্রিক্স।

বেলাট্রিক্সের মুখটা রক্তিম হয়ে উঠল। আনন্দে তার চোখে জল চলে এসেছে।

মাই লর্ড, আপনি জানেন, আমি সত্যি কথাই বলছি।  

এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই… কিন্তু তোমাদের বাড়িতে সদ্য ঘটা যে এক বিষয়ের কথা আমি শুনেছি,তার চেয়েও আনন্দের?

বেলাট্রিক্স ভোল্টেমর্টের দিকে তাকাল। তার দু ঠোঁট ঈষৎ ফাঁক হয়ে গেছে। তা থেকেই বোঝা যায় সে ব্ৰিত বোধ করছে।

আমি বুঝতে পারছি না মাই লর্ড, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন।

আমি তোমার ভাগ্নির কথা বলছি বেলাট্রিক্স। লুসিয়াস এবং নার্সিসা, তোমাদেরও। সে রেমুস লুপিনকে বিয়ে করেছে, যে নিজেকে নেকড়েতে রূপান্তরিত করে। নিশ্চয়ই তোমরা এ নিয়ে মহাখুশি?

উপস্থিত টেবিল ঘিরে বসা সবাই তিরস্কারের হাসিতে ফেটে পড়ল। কয়েকজন একটু সামনের দিকে ঝুঁকে একজন আরেকজনের সঙ্গে মজা পাওয়া চোখের চাহনি বিনিময় করল। কয়েকজন হাতের তালু দিয়ে টেবিলের উপর চাপড় দিল। সাপটি এত হৈচৈ শব্দে বিরক্ত হয়ে মুখটা বড় করে হা করল এবং হিসহিস শব্দ করল। কিন্তু ওই নিষ্ঠুররা বেলাট্রিক্স এবং ম্যালয়ের অপমানে এতটাই উৎফুল্ল হয়েছিল যে কেউ লক্ষ্য করল না। এই কিছুক্ষণ আগেও বেলাট্রিক্সের মুখটা আনন্দে রঙিন হয়ে উঠেছিল। সেই মুখই এখন কুৎসিতভাবে লাল হয়ে উঠেছে।

উচ্চ হাসির শব্দের মধ্যে সে চিৎকার করে বলল, সে আমাদের ভাগ্নি নয় মাই লর্ড। নার্সিসা এবং আমি–আমরা কেউ, ওই পশুটাকে বিয়ে করার পর ওর দিকে ফিরেও তাকাই না। এই মেয়েটি বা যে পশুটিকে সে বিয়ে করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে তোমার বক্তব্য কি ড্র্যাকো? তার গলার স্বর শান্ত। কিন্তু চিৎকার এবং শিষের শব্দের মধ্যেও তার কথা পরিস্কার শোনা গেল। তুমি কী ওদের বাচ্চা-কাচ্চা হলে সেগুলো দেখাশোনা করবে?

উল্লাস আরো বেড়ে গেল। ড্র্যাকো ম্যালফয় ভয়ে ভয়ে তার বাবার দিকে তাকাল। ওর বাবা মাথা নিচু করে নিজের কোলের দিকে তাকিয়েছিল। এবার ওর মায়ের দিকে ফিরে তাকাল। প্রায় সকলের অলক্ষ্যে ওর মা মাথাটা নাড়ল। তারপর নির্লিপ্ত চোখে বিপরীত দিকের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকল।

যথেষ্ট, ভোল্ডেমর্ট রাগান্বিত সাপের গায়ে হাত বুলিয়ে বলল, যথেষ্ট।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সব হাসির শব্দ থেমে গেল।

সময়ের ব্যবধানে আমাদের পুরানো পরিবারের গাছের অনেক ডালপালা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ভোল্ডেমর্ট বলল। বেলাট্রিক্স তখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে, করুণা প্রার্থনার চোখে তাকিয়ে আছে। তুমি নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যবান রাখতে রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেটে ফেলবে? যে অংশ সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা ছেটে ফেলে দাও।

হ্যাঁ মাই লর্ড। বেলাট্রিক্স ফিসফিস করে বলল। এবং তার চোখ কৃতজ্ঞতায় ভেসে গেল। প্রথম অবস্থাতেই।

তোমার সেটাই প্রাপ্য, ভোল্ডেমর্ট বলল। এবং তোমার পরিবারও, পৃথিবীতে… আমরা দুষ্টক্ষত এবং রোগগুলোকে কেটে ফেলব যাতে পরিচ্ছন্ন রক্তটুকু টিকে থাকে…।

ভোল্ডেমর্ট লুসিয়াস ম্যালয়ের দণ্ডটি তাক করল। সোজা টেবিলের উপর ঝুলে থাকা দেহটির দিকে। তারপর ছোট্ট করে একটা ঝাঁকি দিল দণ্ডটিতে। সঙ্গে সঙ্গে দেহটি জীবন্ত হয়ে উঠল এবং গোঙাতে থাকল। অদৃশ্য বাধন থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে দেহটি।

তুমি কী আমাদের অতিথিকে চিনতে পেরেছ সেভেরাস? ভোল্ডেমর্ট বলল।

স্নেইপ মুখ তুলে উপুর হয়ে ঝুলে থাকা মুখের দিকে তাকাল। সবগুলো ডেথ ইটার এখন তাকিয়ে আছে বন্দির দিকে, যেন তাদেরকে কৌতুহল প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ঠিক যখন তার দেহটি ফায়ারপ্লেসের আগুনের আলোর দিকে ঘুরল, মহিলা তারঃস্বরে ভয়ঙ্করভাবে চিৎকার করে বলল, সেভেরাস! আমাকে সাহায্য করো!

আহ, হ্যাঁ, স্নেইপ বলল। ততক্ষণে বন্দির দেহটি ধীরে ধীরে আবার ঘুরে গেছে।

আর তুমি ড্র্যাকো? সাপটির নাকের উপর হাত বুলাতে বুলাতে ভোল্ডেমর্ট জানতে চাইল। ড্র্যাকো মাথা ঝাঁকি দিল। এখন মহিলা জেগে ওঠার পর তাকে মনে হলো সে মহিলার দিকে তাকাতে পারছে না।

কিন্তু তোমাদেরকে তো তার ক্লাস করতে হতো না। ভোল্ডেমর্ট বলল। তোমাদের মধ্যে অনেকেই জানো না যে আমরা আজ রাতে এখানে জড়ো হয়েছি চ্যারিটি বার্বেজের জন্য। সে অতি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত হগোয়র্টে যাদু ক্ষমতা ও যাদু শিল্প স্কুলে শিক্ষকতা করেছে।

কথাটা শুনে টেবিলের চারপাশে একটা মৃদু গুঞ্জন উঠল। সামনের দিকে ঘাড় বাঁকানো ও চওড়াদেহী মহিলা চোখা দাঁত বের করে হাসল।

হ্যাঁ, প্রফেসর বার্বেজ যাদুকর আর ডাইনী শিশুদেরকে মাগলদের সম্পর্কে পড়াতে গিয়ে বলেছেন যে তারা আমাদের থেকে তেমন আলাদা কিছু নয়।

ডেথ-ইটারদের একজন মেঝের উপর থুথু ফেলল। চ্যারিটি বার্বেজ আবার স্নেইপের দিকে ঘুরল।

সেভেরাস… প্লিজ… প্লিজ…

সাইলেন্ট, ভোল্ডেমর্ট ম্যালফয়ের যাদুদণ্ডটি ছোট করে ঝাঁকি দিয়ে বলল। চ্যারিটি দেখল সঙ্গে সঙ্গে নিরবতা নেমে এসেছে। যেন মুখের ওপর কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে। যাদুকর শিশুদের মন ও চিন্তা কলুষিত করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রফেসর বার্বেজ। গত সপ্তাহে তিনি ডেইলি প্রফেট-এ মাডব্রডদের পক্ষে একটি লেখা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, ওইসব চোরদেরকে যেন যাদুকররা তাদের বিদ্যা এবং যাদু শিক্ষায় গ্রহণ করে। এরপর প্রফেসর বার্বেজ এক উপযুক্ত সময়ে বলবেন, খাঁটি রক্ত কমে যাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতে … আমাদের সবাইকে মাগলদের সঙ্গে অথবা নিঃসন্দেহে… অথবা সন্দেহ নেই, যারা নেকড়েতে রূপ নিতে পারে সেই ওয়্যার ওলফদের সঙ্গী হতে হবে।

এবার কেউ হাসল না; ভোল্টেমর্টের কণ্ঠে কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ ফুটে উঠল না। তৃতীয়বারের মতো চ্যারিটি বার্বেজ স্নেইপের দিকে ঘুরল। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে চুলের উপর পড়ছে। স্নেইপ অস্থিরভাবে পেছন ফিরে তাকে দেখল। সে আবার ধীরে ধীরে স্নেইপের দিক থেকে ঘুরে গেল।

অ্যাভাডা কেদাভ্রা

রুমের চারদিকে সবুজ আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ল। চ্যারিটি টেবিলের তলায় ধপাস শব্দ করে পড়ে গেল। টেবিল কেঁপে উঠে ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হলো। বেশ কয়েকজন ডেথ ইটার (মরাখেকো) চেয়ারসহ পেছনের দিকে ঝুকলো। ড্র্যাকো তার চেয়ারটি থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল।

এই যে তোমার ডিনার নাগিনী, ভোল্ডেমর্ট শান্তকণ্ঠে বলল। বিশাল সাপটি ভোল্টেমর্টের কাঁধ থেকে হেলেদুলে পালিশ করা কাঠের মেঝেতে নেমে এলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *