হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অব দ্য ফনিক্স — জে. কে. রাওলিং
০১. ডাডলি ডিমেন্টেড
গ্রীষ্মের অসহ্য গরমের দিনগুলো প্রায় বিদায় নিতে চলেছে। প্রাইভেট ড্রাইভের স্কোয়ার হাউজের বাড়িগুলোর চারধার তন্দ্রালু নিস্তবদ্ধতায় ঘিরে রেখেছে। বাড়ির সামনে লনে রাখা গাড়িগুলো ঝকঝকে তকতকে নয়, বরং ধূলোয় মলিন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়িগুলো শুধু নয়, বাড়ি সংলগ্ন লন, বাগানগুলো রোদের তাপে শুকিয়ে গিয়ে বিবর্ণ! পান্নার মত সবুজ দেখাচ্ছে না। অনাবৃষ্টি ও জলের অভাবের জন্য সরকার মোটা পাইপ দিয়ে গাড়ি ধোওয়া, বাগানে, লনে জল দেওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। প্রাইভেট ড্রাইভের বাসিন্দারা বাইরে জানালা খুলে মৃদু মন্দ ঠাণ্ডা হাওয়ার আশায় গৃহবন্দি হয়ে বসে আছে। সকলেই যখন বাড়িতে তখন শূধুমাত্র একটি কিশোর চার নম্বর বাড়ির জানালার কোনের বাগানে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে রয়েছে।
ছেলেটির শীর্ণ চেহারা, মাথার চুল কালো, চোখে চশমা। বয়সের তুলনায় একটু যেন বড় দেখায় অপুষ্টিজনিত চেহারায়। ওর পরণের জীনসটা জীর্ণ আর নোংরা, টি শার্টের অবস্থাও তেমনই, ঝোলা ঝোলা বিবর্ণ। ওর জুতোর অবস্থা তেমনই, তলাটা খুলে গেছে। প্রতিবেশীরা হ্যারি পটারকে তাই পছন্দ করে না। ওরা মনে করে ছেলেটার অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার জন্য আইনত শাস্তির প্রয়োজন।
কিন্তু হ্যারি পটার তো পাড়া প্রতিবেশীর সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে না, ও সকলের দৃষ্টির বাইরে বিরাট হাইড্রেঞ্জিয়ার (থোকো থেকো সাদা ফুল) ঝোঁপের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। সন্ধেবেলা হাঁটা চলার সময় কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। এক মাত্র আঙ্কল ভার্নন অথবা আন্টি পেটুনিয়া যদি জানালা দিয়ে মুখ বাড়ান তো ও বাগানে শুয়ে আছে দেখতে পাবেন।
সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ওইভাবে শুয়ে থাকাটা হ্যারি পটারের মনে হয় ভালই, ওকে তো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। উত্তপ্ত, কঠিন মাটিতে শুয়ে থাকা খুবই অস্বস্তি কর হলেও আশপাশের সকলের কথা ও শুনতে পাচ্ছে। ওকে দেখতে পেয়ে দাঁত কিড়মিড় করে নানা বিরক্তকর প্রশ্ন করতে পারছে না তাই টেলিভিশনের খবরও শুনতে পাচ্ছে। বসবার ঘরে চুপচাপ বসে টেলিভিশনে প্রোগ্রাম দেখা, খবর শোনা ওর বিরক্তিকর মনে হয়। আঙ্কল আর আন্টি ওকে দেখলেই এমন এমন সব প্রশ্ন করে, কথা বলে–শুনলে রাগে হাড় পিত্তি জ্বলে যায়।
শুয়ে থাকতে থাকতে হ্যারির কানে এলো আঙ্কল ভার্ননের গলা, ভালই হয়েছে ছেলেটা নেই, কিন্তু কোথায় ও গেলো বলতো?
আন্টি পেটুনিয়া নিরাসক্ত কণ্ঠে বললো–কে জানে কোন চুলোয় বসে আছে, বাড়িতে তো নেই।
কথাটা শুনে আঙ্কল ভার্নন ঘোৎ ঘোৎ করে বললো–ওর কোন কিছুতেই মন নেই। কি করে কোথায় যায় ডাডলি পর্যন্ত জানে না। দেশের কে প্রধানমন্ত্রী তাও বোধহয় ও জানে না। আমাদের দেশের খবরে মন নেই, মন পড়ে আছে ওর জাদু স্কুলের খবরে।
–ভার্নন আস্তে বলল, জানালা খোলা রয়েছে।
–হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো।
ডার্সলে পরিবারের কথা হ্যারি শুনতে পেলো না। হ্যারি ঝোঁপের আড়াল থেকে দেখতে পেলো বেড়াল প্রেমী মিসেস ফিগ উইস্টিরিয়া ওয়াক থেকে থপ থপ করে চলেছেন। যেতে যেতে আপন মনে বিড় বিড় করছেন। ভাগ্য ভাল মিসেস ফিগ ওকে দেখতে পাননি। দেখলেই বলবেন–হ্যারি চলো আমার বাড়িতে এক কাপ চা। খাবে। একটু একটু করে মিসেস ফিগ দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতেই হ্যারির কানে এলো ভার্ননের গলা, ডাডলি বাড়িতে নেই? রোজই দেখছি বাইরে চা খায়।
আন্টি বললো–বাড়িতে বসে থেকে করবেটা কি? পাড়ার সকলে, বন্ধু-বান্ধবরা ওকে দেখতে পেলেই ছাড়তে চায় না। সব্বাই ওকে দারুণ ভালবাসে।
কথাটা শুনে হ্যারি ওর হাসি খুব কষ্ট করে চেপে রাখে। আঙ্কল-আন্টি ওদের ছেলে ডাডলিকে নিয়ে গদগদ। বন্ধুরা ভালবাসে, চা খেতে নেমন্তন্ন করে–সব বাজে কথা। এই সময় ও পার্কে, রাস্তায় কতগুলো বদ বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাফেরা করে ছোট নিরীহ ছেলে দেখলে তাকে ধরে মারধর করে, পেছনে লাগে। শুধু তাই নয় রাস্তার কোণায় দাঁড়িয়ে ভাল ভাল গাড়ি যেতে দেখলে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। সমস্ত গরমের ছুটির দিন এই ভাবেই ডাডলি ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। মারধোর করে কাটায়।
আন্টি পেটুনিয়া টেলিভিশন চালিয়ে দিতেই হ্যারির কানে এলো
স্প্যানিশ পোর্টারদের ধর্মঘট, এই নিয়ে দুসপ্তাহে পা দিল। ছুটি যাপনের হাজার হাজার লোক বিমানবন্দরে তাদের মালপত্র নিয়ে অসহায়ের মতো বসে রয়েছে।
আঙ্কল ভার্নন বললেন–চুলোয় যাক। সারাজীবন ওরা দিবানিদ্রা দিক। বাগানে শুয়ে থাকা হ্যারির সেই খবর শুনে একটুও ভাল লাগে না। হলিডে মেকার্সের বিমানবন্দরে বসে থাকার চেয়ে আরও অনেক খবর যেমন ধ্বংস, মৃত্যুর খবর যদি থাকত তাহলে প্রথমেই সেটা জানাতো।
ও বিরাট একটা নিশ্বাস ফেলে ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। গরমের ছুটির প্রতিটি দিন ওর বিরক্তিকর, একঘেয়ে লাগছে। নতুন কিছু নেই। আশ্চর্য! এখনও পর্যন্ত সব নীরব কেন? কিছু একটা ঘটছে না কেন? ব্যর্থ উত্তেজনা আশা। মাঝে মাঝে এক ঘেয়ে বন্ধ হয় আবার তারই পুনরাবৃত্তি।
–কেন, কেন এখনও কিছু ঘটছে না? ও কান পেতে রইল প্রতিক্ষা করতে লাগল।
হ্যারি চোখ বন্ধ করল। নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো প্রতিটি দিন ওর এমনিভাবে কাটে–টেনসন, আশা, তারপর আবার টেনসন, কিছুটা স্বস্তি… আবার জমে ওঠা টেনসন বড়ো এক ঘেয়ে লাগলে ওর।
কামান দাগার মতো বিরাট এক ভয়ঙ্কর শব্দ, গাড়ির তলায় শুয়ে একটা বেড়াল ঝড়ের বেগে ছুটে গেল দৃষ্টির বাইরে; আর্তনাদ, অভিশাপের শব্দ, ডার্সলের ঘর থেকে কাঁচের বাসন ভাঙার শব্দ? দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। হ্যারি লাফিয়ে উঠল। ঝুলে পড়া জীনসের পেছনের পকেট থেকে একটা ছোট কাঠের দণ্ড টেনে নিল খাপের মধ্য থেকে তলোয়ার টেনে নেওয়ার মত। তড়াক করে লাফিয়ে ওঠার সময় ডার্সলের খোলা জানালার কপাটে মাথা ঠকে গেল। শব্দ শুনে আন্টি পেটুনিয়া ঘর থেকে খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন।
হ্যারির মনে হল ওর মাথাটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। যন্ত্রণায় দু চোখ জলে ভরে গেল, ওর মাথা ঘুরতে লাগল। সেই অবস্থাতেই ও শব্দ, আর্তনাদ কোথা থেকে আসছে জানার জন্য উঠবার চেষ্টা করতেই দুটি পুরুষ্ট লোমশ হাত খোলাজানালা থেকে ওর গলা চেপে ধরল।
–ওটা ফেলে দাও, কেউ দেখতে পাবার আগে ফেলে দাও বলছি। আঙ্কল ভার্নন ঘরের ভেতর থেকে গর্জন করে উঠলেন।
হ্যারি হাঁফাতে হাঁফাতে বললো–ছেড়েদিন, খুব লাগছে।
ভার্নন হ্যারির হাত থেকে দণ্ডটা কেড়ে নেবার চেষ্টা করতেই হ্যারি দণ্ডটা ভার্ননের দিকে এগিয়ে দিতেই ভার্নন তরিতাহতের মত হ্যারিকে ছেড়ে দিলেন। কোনও এক অদৃশ্য শক্তি হ্যারিকে তরঙ্গায়িত করেছে। হ্যারির মাথার ভেতর অকথিত এক তীব্র যন্ত্রণা। ও কোনও মতে উঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাল। কোথা থেকে সেই ভয়াল-ভয়ঙ্কর শব্দ ভেসে আসছে? আশপাশের বাড়ির লোকেরা সেই শব্দ শুনে জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে রয়েছে হ্যারি দেখতে পেল। তারি একটুও সময় নষ্ট না করে দণ্ডটা জীনসের পকেটে খুঁজে গো-বেচারার মত তাকিয়ে রইল।
আঙ্কল ভার্নন সামনের সাত নম্বর বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন–বেশ সুন্দর লাগছে সন্ধেটা। আপনি কী একটা ভীষণ শব্দ শুনেছেন? আমরাতো বেশ ভয় পেয়ে গেছি!
আঙ্কল আপনমনে শব্দটার সম্বন্ধে নানা ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। বুঝতেই পারেননি প্রতিবেশীরা যে যার কাজে চলে গেছে।
এই ছেলে কোথা থেকে শব্দটা এলরে? ভার্নন রাগে কাঁপতে কাঁপতে হ্যারিকে বললেন।
হ্যারি উদাসীন কণ্ঠে বললো–আমি কেমন করে বলব? আমি তো করিনি। ও ভান করে রাস্তার এধার ওধার তাকিয়ে শব্দটা কে করল জানার জন্য তাকাতে লাগল।
–আমাদের বাড়ির কাছে কেউ পিস্তলের আওয়াজ করে তোকজনদের ভয় দেখাচ্ছে?
–আমি জানি না, হ্যারি অবিচলিত হয়ে বললো। আন্টি পেটুনিয়া ভার্ননের পাশে এসে দাঁড়ালেন। ওর মুখেও ভয়ের ছাপ। মুখ শুকিয়ে গেছে।
–জানালার তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছিলেটা কি শুনি?
–হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ পেটুনিয়া। সত্যি করে বল তো কী করছিলে?
হ্যারি নিরাক্ত কণ্ঠে বললো–খবর শুনছিলাম।
আঙ্কল ও আন্টি পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রাগত স্বরে বললেন–খবর শুনছিলে আবার?
–খবর তো সবসময় এক থাকে না, প্রতিদিনই নতুন নতুন খবর থাকে।
–বেশি চালাক হতে যেও না ছোকরা! আমি সত্যি কথা জানতে চাই, খবর শুনছি স্রেফ ভাঁওতা। ভাল করেই জানো কি করছিলে। আন্টি পেটুনিয়া ইশারায় আঙ্কল ভার্ননকে চুপ করতে বললেন। তবুও ভার্নন বললেন–তুমি যে খবর শুনতে চাও, তা আমাদের টিভি নিউজে থাকবে না।
আন্টি বললেন–মিথ্যুক, তাই যদি হবে তো তোমার প্যাঁচাটা কি করছে? খবর না নিয়ে এলো ওটা!
–আহ্ যা বলেছ! এই ওটাকে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়াও বলে দিলাম। ওটাই তোমার আজেবাজে খবর নিয়ে আসে! কথাটা শুনে হ্যারি জবাব দিতে ইতস্ত ত করল। সত্যি কথা বলে লাভ নেই। সত্যি কথাটা বলতে ওর কতটা খারাপ লাগবে আঙ্কল-আন্টি জানে না।
–প্যাঁচারা আমার কোনও খবর নিয়ে আসে না, হ্যারি নীরস কণ্ঠে বললো।
–আনে না! আঙ্কল ভার্নন দৃঢ় স্বরে বললেন।
–আমরা ভাল করেই জানি তুমি নানা রকম অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড করে বেড়াচ্ছ।
–আমাদের তুমি যতোটা বোকা ভাবছ তা কিন্তু আমরা নই, আঙ্কল ভার্নন বললেন।
–বাঃ বেশ নতুন কথা শুনলাম বলে মনে হচ্ছে, হ্যারির মেজাজ চড়তে শুরু করেছে। আঙ্কল-আন্টি আর কিছু বলার আগেই হ্যারি দ্রুত পায়ে লন ছেড়ে বাগান টপকে রাস্তায় দাঁড়াল। তারপর দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগল।
ও বেশ বুঝতে পেরেছে নতুন এক বিপদ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাড়ি ফিরলে আঙ্কল-আন্টির সামনে দাঁড়িয়ে কতগুলো বিশ্রী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা ভাল করেই জানে। আরও জানে এই মুহূর্তে সেই পরিস্থিতির চেয়েও আরও অনেক জরুরি জিনিস মনের মধ্যে রয়েছে।
যে পথ দিয়ে ও বরবার হাঁটে সেই পথ ধরে ও চলতে শুরু করল। হ্যারি জানে কে বা কারা যাবার বা আসার সময় সেই ভুতুরে শব্দ করেছে। অ্যাপারেটিং, ডিস অপারেটিং-এর শব্দ হাওয়াতে মিলিয়ে যাবার সময় ডব্বি ঠিক এই রকম বীভৎস শব্দ করেছিল। ডব্বি কি তাহলে প্রাইভেট ড্রাইভে এসেছিল? ঠিক এই মুহূর্তে কি ডব্বি ওর সঙ্গে থাকতে চাইছে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হ্যারি প্রাইভেট ড্রাইভের দিকে এগোতে লাগল। তাহলেও ব্যাপারটা খুব মাথামুণ্ডুহীন মনে হল। হ্যারি জানে ডব্বি অদৃশ্য হবার কৌশল জানে না।
হ্যারি যন্ত্রচালিতের মত হাঁটতে হাঁটতে ওর সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় পৌঁছল। ওর প্রতি পদক্ষেপেই মনে হল কে যেন ওর পেছনে পেছনে চলছে। ও যখন আন্টি পেটুনিয়ার বাগানে শুয়েছিল, তখন; বার বার মনে হচ্ছিল কারা যেন ছায়ার মত যাদুবলে ওর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। বারবার ও পেছনে তাকাতে লাগল। তাহলে তারা ওর সঙ্গে কথা বলেনি কেন? কেন যোগাযোগ করছে না? লুকিয়ে রয়েছে কেন?
এমনও হতে পারে, সেই ভয়ঙ্কর শব্দগুলো ঐন্দ্রজালিক ছিলো না। হয়ত যে জগতে ও থাকে সেখানকার সামান্য ছোট একটা সংবাদের আশায় উদগ্রীব হয়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছ বলেই কি সাধারণ কিছু গোলমালের শব্দে ও হানফান করছে? আবার প্রতিবেশীদের বাড়ির কিছু ভাঙাচোরার শব্দও হতে পারে।
দিনের পর দিন এক ঘেয়ে জীবনে হ্যারি শুধু আশাহত নয়, দারুণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
আগামীকাল অ্যালার্ম শুনে ভোর পাঁচটায় উঠে ডেইলি প্রফেট দেবার জন্য পেঁচাকে টাকা দিতে হবে; কিন্তু খবরের কাগজটা নেবার কি কোনও সার্থকতা আছে? ইদানীং ও কাগজটায় একবার চোখ বুলিয়ে ঠেলে সরিয়ে রাখে। যে বোকা লোকগুলো ডেইলি প্রফেট চালায়, তারা ভোল্ডেমর্টের আবার আবির্ভাব হয়েছে এই খবরটা যখন জানবে তখন নিশ্চয়ই শিরোনাম হবে খবরটি। আর অপেক্ষা সেই খবরটির জন্য পত্রিকা কেনা। যদি ও সত্যি ভাগ্যবান হয় তাহলে পেঁচারা অবশ্যই ওর প্রিয় বন্ধু রন আর হারমিওনের চিঠি নিয়ে আসবে; কিন্তু আশা করে কোনও লাভ নেই!
কিছুদিন আগে ওদের কাছ থেকে ছোট একটা চিঠি এসেছিল
তোমাকে আমরা বিশেষ কারণে সবিস্তারে কিছু জানাতে পারছি না। কেন তা তুমি বোধকরি জান। পাছে চিঠি হারিয়ে যায় সেই কারণে তোমাকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ খবর লিখতে পারি না। আমরা এখানে খুবই ব্যস্ত আছি। ব্যস্ততার কারণেও জানাতে পারছি না। অনেক কিছু এখানে ঘটছে, দেখা হলে তোমাকে বলবো।
কিন্তু দেখাটা কবে হবে? সেই দিনটির কথা ওরা কেউ লেখেনি। হারমিওন অবশ্য ওর জন্মদিনের শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাবার সময় লিখেছিল, আমরা আশা করছি তোমার সঙ্গে খুব শিগগিরি দেখা হবে। কিন্তু সেই দিনটি কবে? হ্যারি চিঠিটা পড়ে একটুও খুশি হয়নি। রনের বাবা-মার বাড়িতে রন আর হারমিওন বেশ মজায় ছুটির দিন কাটাচ্ছে। প্রাইভেট ড্রাইভে ও যে কি কষ্টে আর মনের দুঃখে রয়েছে তা ওরা বুঝতে পারছে না। বারোতে ওরা বেশ ভালভাবেই আছে। জন্মদিনের কার্ডের সঙ্গে ওরা দুবাক্স হানিডিউকস চকোলেট পাঠিয়েছিল। রাগ করে হ্যারি ওদের পাঠান চকোলেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। প্যাকেট পর্যন্ত খোলেনি। রাতে পেটুনিয়া আন্টির বানান শুকনো সালাদ খেতে খেতে চকোলেটের প্যাকেট ফেলে দেবার কথাটা মনে করে দুঃখ পেয়েছিল।
রন আর হারমিওন কি এমন কাজে ব্যস্ত আছে? হ্যারি তাহলে কেন থাকবে? ওদের চেয়েও অনেক শক্ত শক্ত কাজ করতে পারে সেটা কি প্রমাণীত হয়নি? বেমালুম ভুলে গেছে দুজনেই? কবরস্থানে সেডরিকের হত্যা কে দেখেছিল? তারপর খুনি ওকে টম্বস্টোনে বেঁধে রেখে হত্যা করতে চায়নি?
ওই ঘটনা মনে রেখো না। হ্যারি নিজেকে বললো এবং অন্তত হাজারবার মন থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। শুধু রাতে বিকট নিশাস্বপ্ন দেখে তাই নয় মাঝে মাঝে দিনে-দুপুরে চোখের সামনে সেই বীভৎস কাণ্ডকারখানা ভেসে ওঠে।
যেতে যেতে হ্যারি ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্টে ঢুকলো। গ্যারেজের পাশে একমুখো সরুগলিটা ছেড়ে আরও সামান্য এগোল।এই খানেই ও প্রথম ওর ধর্মপিতা সিরিয়সের দেখা। চিঠি সিরিয়াস পাঠিয়েছিলেন তা ঠিক রন আর হারমিওনের মত দায়সারা গোছের নয়। চিঠির প্রতিটি ছত্রে ছিল–ভবিষ্যত বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক বার্তা, সমবেদনা, কোনও মন খোলানো কথা ছিলো না।
আমি জানি চিঠিটা পড়ে তুমি হতাশ হবে–তোমার শরীর মন ঠিক রাখবে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সাবধানে থাকবে, কোনও কিছু না ভেবে চিন্তে করবে না।
ভাল, খুউব ভাল। ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্ট ছেড়ে ম্যাগনোলিয়া রোডে পা রাখল হ্যারি, তারপর অন্ধকার প্লে পার্কের দিকে চলল। যা কিছু করছে সবই সিরিয়সের দেওয়া উপদেশ মত। তারই পরমার্শ মত জাদুঝাড়ু কোমরে বেঁধে বারোর দিকে একা উড়ে যাবার লোভ সংবরণ করেছে। ও যতই হতাশ আর রেগে থাকুক না কেন এতদিন প্রাইভেট ড্রাইভে টিকে থাকাটা অবশ্যই ভাল চালচলনের তুল্য। ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে বাগানে শুয়ে থাকার একমাত্র কারণ লর্ড ভোল্ডেমর্ট কি করছে, কি ভাবছে, কি ছক কষছে তা জানা। যাই হোক না কেন, যে মানুষটা বার বছর আজকাবানের জাদু জেলে বন্দি থেকেছে তার কথা মেনে চলা যন্ত্রণাদায়ক তো বটেই… তারপর জেল থেকে পালানো, তাছাড়া খুন করতে যাওয়ার অপরাধে অপরাধী প্রতিপন্ন হওয়া, চুরি করে হিপোগ্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া তো আছেই।
হ্যারি পার্কের তালা লাগানো গেটটা লাফিয়ে পার হয়ে শুকনো ঘাসের ওপর দাঁড়াল। আশপাশের রাস্তা আর পার্কটা জনমানবহীন। পার্কের দোলনার কাছে গিয়ে দেখল ডাডলি আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা তখনও দোলনাটা অক্ষত রেখেছে। এক হাতে দোলনার একটা লোহার তার ধরে হ্যারি বিষণ্ণভাবে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। কাল থেকে ও আর ডার্সলেদের (আঙ্কল-আন্টি) বাগানে লুকিয়ে থাকার সুযোগ পাবে না। খবর শোনার জন্য নতুন কোনও রাস্তার কথা ভাবতে হবে। যতক্ষণ না কোনও খবর পাচ্ছে আগামী দিনের রাতগুলো কাটবে অস্থিরতা আর উত্তেজনার সঙ্গে। সেডরিককে হত্যার রাতের দুঃস্বপ্ন না দেখলেও ও মাঝে মাঝে দেখে অন্ধকার এক করিডোর দিয়ে একা হেঁটে চলেছে। করিডোরের শেষ প্রান্তে একটি তালাবন্ধ দরজা। দিনের বেলা এইসব ছাইপাশ না ভাবলেও রাত্রে উদভট স্বপ্ন এড়াতে পারে না! মাঝে মাঝে ওর কপালের কাটা দাগটাও অসম্ভব চুলকোয়, দারুণ অস্বস্তি লাগে; কিন্তু রন, হারমিয়ন-সিরিয়র্স সেই সমন্ধে কিছু ভাবে বলে মনে হয় না, নিজেকে আর বোকা বানাবে না। ওদের কথা ভাববে না। অতীতে ওর কপালের কাটাদাগটা চুলকোবার সময় কে যেন সাবধান করে দিয়েছিল ভোল্ডেমর্ট আবার আবির্ভাব হচ্ছে প্রচুর শক্তি নিয়ে। যেহেতু ভোল্ডেমর্ট এসে গেছে, কপালের কাটাদাগটা চুলকোলে ধরে নিতে হবে ওইরকমভাবে চুলকোবেই, তার জন্য অন্য কিছু চিন্তার কারণ নেই। পুরনো খবর ছাড়া আর কিছুই নয়, ওই ভোল্ডেমর্ট।
যখন ও রন আর হারমিওনের কথা ভাবে তখন ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অবিচারের জন্য। একমাত্র ওর জন্যই সকলে জানতে পেরেছে লর্ড ভোল্ডেমর্ট প্রচুর শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। তার উপযুক্ত প্রতিদান কি ভার্সলেদের ছোট একটা স্যাঁত স্যাঁতে ঘরে–সম্পূর্ণভাবে জাদু পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চার সপ্তাহ একরকম বন্দি হয়ে থাকা? এত সহজে কী ডাম্বলডোর ওকে ভুলে যাবেন। কেন, রন আর হারমিওন ওকে বারোতে একসঙ্গে ছুটি কাটাবার নেমন্তন্ন করেনি? সিরিয়সের উপদেশ মত আর কতদিন ও ভাল ছেলের মত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে অথবা স্টুপিড ডেইলি প্রফেটে লিখবে না ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছে? এই সমস্ত চিন্তা হ্যারির মাথায় বন বন করে ঘোরে… স্থির থাকতে পারে না। ও অন্যায় অবিচারের কথা ভেবে গুমোট রাতে তারা ভরা আকাশের দিকে বিষণ্ণ চিত্তে তাকিয়ে থাকে। ওর আশপাশে সবকিছুই নীরব নিথর, মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি চলার শব্দ বা কিছু লোক পার্কের ভেতর দিয়ে চলছে তারই শব্দ। তাদের মধ্যে একজন বেসুরো বিকৃত কণ্ঠে গান গেয়ে উঠল। বাকি সবাই হাসছে। হঠাৎ কানে এল কয়েকটা রেসিং সাইকেলের ক্লিং ক্লিং শব্দ। হ্যারি জানে বাইকে ঘণ্টি মারতে মারতে কারা আসছে। দলের আগে যে বাইক চালাচ্ছে সে তার খালাতো ভাই, ডাডলি কোনও সন্দেহ নেই। ও বিশ্বস্ত সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছে।
ডাডলি চিরকালই মোটাসোটা। ইদানীং ডায়টিং আর ব্যায়াম করে দেহের ওজন কিছুটা কমিয়েছে। ওজন কমানোর সফলতার পর সামান্য কর্মঠ হয়েছে। আঙ্কল যাকে কাছে পায় তাকে ধরে বলে জানো ডাডলি জুনিয়র হেভিওয়েট ইন্টার স্কুল বকসিং চ্যাম্পিয়ন (সাউথ ওয়েস্টের) হয়েছে। আঙ্কলের ভাষায় নোবল স্পোর্ট ডাডলিকে আরও বেশি দূর্দান্ত করে তুলেছে। হ্যারির প্রাইমারি স্কুলের কথা মনে আছে… ডাডলি ওকে কাছে পেলেই প্রচণ্ড ঘুষি মারতো। হ্যারি যেন ওর পাঞ্চবল। তখন ও ছোট ছিল। এখন আর ডাডলিকে সে ভয় পায় না। সে মনে করে না যে, অন্যদের ঘুষি মারার জন্য ডাডলির বক্সিং শেখা, আর আঙ্কলের বুকফুলিয়ে যাকে পায় তাকে ডেকে ছেলের কৃতিত্বের কথা বলার কোনও কারণ আছে। পাড়া প্রতিবেশীর ছোট ছোট ছেলেরা ডাডলিকে দেখলেই লুকিয়ে পড়ে।
হ্যারি দূর থেকে দেখল অন্ধকারের ভেতর দিয়ে ওরা আসছে। ভাবে কে জানে আজ কোন এক নিরীহ ছেলেকে সকলে মিলে ধরে ওরা মারধোর করেছে।
ডাডলির বন্ধুরা হ্যারিকে একলা বসে থাকতে দেখলে নিশ্চয়ই চুপ করে থাকতো না। ঘিরে ধরে অবশ্যই কিল চড় মারতো, তাহলে ডাডলি তখন কি করত? কিন্তু হ্যারি এখন প্রস্তুত, হাতে রয়েছে ম্যাজিক ওয়ান্ড। আসুক ওরা… মারবার চেষ্টা করুক। এমন কিছু ভেল্কি দেখাবে যাতে ভবিষ্যতে আর ওর সামনে আসতে সাহস করবে না।
কিন্তু ডাডলির সাঙ্গপাঙ্গরা ওকে দেখতে পায়নি। অযথা মারপিট করতে ওর মন চায় না। কোনভাবেই সে আর জাদুদণ্ড দিয়ে ম্যাজিক দেখাবে না। অযথা ব্যবহার করলে স্কুল থেকে আবার বিতাড়িত হবার সম্ভাবনা আছে।
একটু একটু করে ডাডলির বন্ধুদের গলার শব্দ কমে গেল। ওরা হ্যারির দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। খুব সম্ভব পৌঁছে গেছে ম্যাগনোলিয়া রোডের কাছে।
সিরিয়স দেখ আমি তোমার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি হ্যারি নিপ্রহ হয়ে ভাবে। কোনও কিছুই সতর্ক না হয়ে করা ঠিক নয়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ কর? সিরিয়স তুমি করেছ ঠিক তার বিপরীত।
হ্যারি দাঁড়ালো, আড়মোড়া ভাঙল। আঙ্কল-আন্ট সব সময় ভাবেন রাতে যে সময় ডাডলি বাড়ি ফেরে সেটা সঠিক সময়। তারপরে বাড়ি ফিরলে অবশ্যই ধরে নেন দেরি করে ফিরেছে। আঙ্কল ভার্নন, হ্যারি কোনও কারণে ডাডলির পরে বাড়ি ফিরলে চোখ লাল করে শাসান। তালা দিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখার ভয় দেখান। হ্যারি বড় দেখে একটা হাই তুলে পার্কের গেটের দিকে চলল।
ম্যাগনোলিয়া রোড প্রাইভেট ড্রাইভের মত ঝকঝকে তকতকে। বাড়ির সামনে সবুজ লন, ফুলের বাগান। ওদের বাড়ির সামনে রাখা গাড়িগুলো প্রাইভেট ড্রাইভের মত ঝকঝকে তকতকে। হ্যারি রাত্রিবেলা লিটিল হুইংগিং দিয়ে যাওয়া পছন্দ করে। রাত্রে সব বাড়ির জানালায় পর্দা ফেলা থাকে। পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো ঠিকরে পড়ে রাস্তায়। ওকে দেখে নাক সিঁটকোবার কেউ সুযোগ পায় না ঘরের ভেতর থেকে। ও খুব জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো, অর্ধেক রাস্তা পার হবার পর আবার চোখে পড়ল ডাডলির দলের। ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্টের মুখে ওরা শুভরাত্রি জানাচ্ছিল। হ্যারি বিরাট একটা লিল্যাক গাছের ছায়ার তলায় দাঁড়াল যাতে ওরা দেখতে না পায়। ওদের চলে যাবার অপেক্ষা করতে লাগল। শুনতে পেল ম্যালকমের কথা–ব্যাটা শুয়রের ছানার মত মার খেয়ে কাঁ কাঁ করছিল। তাই না?
পাইয়ার্স বললো–চলি বিগ-ডি… আবার কাল দেখা হবে। ওডেলি হাত বাড়িয়ে বললো–কাল একই সময়ে।
আমার বাড়িতে আয়। বাড়িতে বাবা-মা থাকবে না, গর্ডন বললো।
বাই ডাভ!
–আবার দেখা হবে বিগ-ডি!
সবকটা সাঙ্গপাঙ্গ চলে না যাওয়া পর্যন্ত হ্যারি লিল্যাক গাছের তলায় দাঁড়িয়ে রইল। ওরা চলে গেলে ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্টের এককোণে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর খুব জোরে জোরে হেঁটে ডাডলির সামান্য দূরে দাঁড়াল। ডাডলি তখন বেসুরে গান গাইতে গাইতে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল।
–আরে বিগ-ডি!
ডাডলি ডাক শুনে পিছনে তাকাল।
–ওহ, ঘোঁত ঘোত করে ডাডলি বললো–তুমি…?
–কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছ বিগ-ডি?
-ধ্যাৎ বাজে বকবে না, ডাডলি দাঁত খিচিয়ে বললো।
–শান্তি শান্তি। বাঃ সুন্দর তোমার নামকরণ করেছে; হ্যারি ডাডলির পাশে এসে বললো। যে যাই বলুক তুমি আমার কাছে ইকিল ডিড্ডিকিন্স।
–এই তুমি চুপ করবে? ডাডলি ওর শুয়রের রাং-এর মত মোটা একটা হাত ঘুষি মারার জন্য এগিয়ে দিয়ে বললো।
–এই, তোমার বন্ধুরা জানে আন্টি তোমায় আদর করে কি নামে ডাকেন?
–মুখ বন্ধ করবে না করবে না?
–তুমি তো তোমার মায়ের মুখ বন্ধ করতে পারবে না। পপকিন ডিস্কি ডিড্ডিডামস নাম বড় মধুর, তোমায় ওই নামে ডাকতে পারি?
ডাডলি চুপ করে রইল। মুখে রা নেই। ও ইচ্ছে করলে দুবলা পাতলা হ্যারিকে মারতে পারত; কিন্তু অনেক ভেবে চিন্তে হাত গুটিয়ে নিল।
তো আজ তুমি কাকে মারধোর করলে? হ্যারি দাঁত বার করে হাসতে হাসতে বললো–নিশ্চয়ই একটা ছোট দশ বছরের ছেলেকে? আমি জানি মাস দুয়েক আগে তোমরা মার্ক ইভান্সকে একলা পেয়ে ভীষণ মেরেছিলে।
–ওর নিজের দোষে মার খেয়েছে, ডাডলি ঘোঁত ঘোত করে বললো।
–ও তাই?
–আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল।
–সত্যি? তোমাকে নিশ্চয়ই দুপায়ে হাঁটা শুয়োরের মত দেখতে বলেছিল, ডাভ?
হ্যারি ম্যাজিক ওয়ান্ডটা পকেট থেকে টেনে নিল। দেখল ডাডলি আড় চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে।
–ওটা ব্যবহার করার তোমার অধিকার নেই, ডাডলি সাথে সাথে বললো আমি জানি তুমি পারবে না। যদি ব্যবহার করো তাহলে তোমার ওই উদ্ভট জাদু স্কুল থেকে তোমায় তাড়িয়ে দেবে।
–কেমন করে জানলে বিগ-ডি সেই আইন এখনও চালু আছে?
হ্যারি মৃদু হাসল।
–বুঝলে চাদু, ওইটি ছাড়া তোমার আমাদের সঙ্গে লড়াই করার সাধ্যি নেই; ডাডলি ঘোত ঘোত করে জাদুদণ্ডটা দেখতে দেখতে বললো।
–সত্যি তো, যেমন তোমার সামনে আর আর পিছনে চারটে করে সাঙ্গপাঙ্গ থাকলে দশ বছরের একটা নিরীহ ছেলেকে বেধড়ক পেটাতে পারতে না। বুঝলে বিগ-ডি, যে বক্সিং টাইটেলটা নিয়ে তুমি আর আঙ্কল গর্ব করে বেড়াও, সেটা পেয়ে একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে লড়াই করে। কত ছিল তার বয়স? সাত না আট?
–ষোল বছর, এটা তুমি মনে রেখ, তোমায় জানালাম। আরও জেনে রেখো, লড়াই শেষ হবার পরও প্রায় কুড়ি মিনিট প্রায় চেতনা হারিয়ে মাটিতে শুয়েছিল। ও তোমার চেয়ে দুগুণ ছিল–দাঁড়াও ড্যাডিকে বলে তোমার মজা দেখাচ্ছি।
–কিসের জন্যে?
–আবার তুমি বিশ্রি ওয়ান্ডটা বার করে আমায় ভয় দেখিয়েছ।
–এখনই ছুটে যাবে না কি ড্যাডির কাছে? বলবে তোমার প্রিয় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, হ্যারির হাতে সেই নোংরা জাদু দণ্ডটা দেখে ভয় পেয়েছে? হাঃ হাঃ
–রাতে তুমি খুব সাহসী হয়ে যাও তাই না?
–এখন তো রাত্রি, ডিডিকিন্স। চতুর্দিক এইরকম অন্ধকার হয়ে গেলে আমার রাত্রি বলি।
–বলছিলাম মানে ঘুমোবার সময়! তখন সাহস কোথায় পালায়? ডাডলি চলতে চলতে থেমে গেল। হ্যারিও থামল। তাকিয়ে রইল ডাডলির দিকে। সামান্য আলোয় দেখে মনে হল ডাডলির বিরাট মুখ অদ্ভুত এক জয়ের আনন্দে ভরে গেছে।
–তার মানে তুমি বলতে চাও, রাতের বেলায় বিছানায় একা শুতে আমি ভয় পাই? হ্যারি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললো–আমি তাহলে বালিশ-বিছানা বা অন্য কিছুতে ভয় পাই?
গত রাতেও আমি তোমাকে ঘুমের মধ্যে গোঁ গোঁ করতে শুনেছি। কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
ডাডলির কথা শুনে হ্যারির পেটের ভেতরটা কোঁ কোঁ করে উঠল–তুমি কী বলতে চাইছ? গত রাতেও আবার হ্যারি কবরস্থানের সেই ভয়ঙ্কর স্বপ্নটা দেখেছে। ডাডলি উকটভাবে হেসে উঠল, তারপর খুব জোর গলায় ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো–সেডরিককে মেরে ফেলো না সেডরিককে মেরে ফেলো না! সেডরিক? তোমার অতি প্রিয় বাল্য বন্ধু বুঝি?
–তুমি মিথ্যে কথা বলছ, ডাডলিকে হ্যারি বললো। কিন্তু বলার সময় ওর গলা শুকিয়ে গেল। ও জানে ডাডলি এক বর্ণও মিথ্যে বলছে না–ও কেমন করে সেডরিকের নাম জানবে?
–ড্যাঙ! আমাকে বাঁচাও ড্যাড! ও আমাকে মেরে ফেলবে, ড্যাড! আরে ছো: বু: বু: হু:!
–চুপ কর, হ্যারি ফুঁসে উঠল–একটি কথাও বলবে না ডাডলি–আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি!
–ও মা আমাকে বাঁচাও–ড্যাড! ও সেডরিককে হত্যা করেছে। আমাকেও মেরে ফেলবে, এই এই কী করছো আমার দিক থেকে ওটা সরাও! ডাডলি ভয়ে ভীত হয়ে সুর বদলে বললো।
ডাডলি কানাগলির দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা সোজা ডাডলির বুকে তাক করেছে। চৌদ্দ বছর ধরে ডাডলির ওর শিরা, উপশিরায় ঘুরপাক খাচ্ছে–ও কী ডাডলিকে ছেড়ে দেবে? এমন দুর্ভাগ্যগ্রস্ত করবে যে হেঁটে বাড়ি ফেরার অবস্থা থাকবে না–পোকার মত বুক ঘষতে ঘষতে বাড়ি ফিরতে হবে, অনেকটা শুয়ো পোকার মতো।
–ভবিষ্যতে ওই কথাগুলো বলবে না, হ্যারি ধমক দিল–বুঝতে পেরেছ আমার কথা?
–ওটা তুমি অন্যদিকে সরাও!
–আমার কথার মানে বুঝেছ?
–আমাকে তাক করো না, সরিয়ে নাও।
ডাডলি অস্থির চিত্তে হাঁফাতে থাকে, এমনভাবে হাঁফায় যেন সদ্য ওকে প্রচণ্ড বরফের মত ঠাণ্ডা জল থেকে তোলা হয়েছে।
আচমকা সেই রাত্রিটা অদ্ভুতভাবে বদলে গেল–সবকিছু আলোক বিহীন অন্ধাকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। আকাশের তারা, চাঁদ, কানাগলির দুধারে ক্ষীণ বাস্তার বাতিগুলো হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। বহু দুর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসা গাড়ি চলার শব্দ, গাছের ফিস ফিসানী আর আর শোনা গেলো না। উষ্ণ সন্ধ্যা হঠাৎ বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। নিস্তব্ধ অন্ধকার, অভেদ্য অন্ধকার সব কিছু ছেয়ে গেল। কতগুলো বিরাট বিরাট দৈত্যদের বরফের মত ঠাণ্ডা হাত কানাগলির সবকিছু চাঁদরে ঢেকে দিয়ে ওদের দৃষ্টি শক্তি লোপ পাইয়ে দিল।
হ্যারির মনে হলো কোনও কিছু না ভেবে চিন্তে–হঠাৎ অজান্তে ও ম্যাজিক করে ফেলেছে যদিও সেটা করবে না দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। ওর এমন কোনও ক্ষমতা নেই আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার, সবকিছু ওর হাতের বাইরে চলে গেছে। ও এধার–ওধার তাকিয়ে কিছু দেখবার চেষ্টা করলো কিন্তু এক গভীর অন্ধকার চাঁদর ওর দুচোখ চেপে ধরেছে।
ডাডলির ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর হ্যারির কানে ঢুকল।
–এই এই হ্যারি তুমি কি করলে? বন্ধ কর, বন্ধ কর বলছি।
–আমি কিছু করিনি! চুপ, এক চুলও নড়বে না!
–আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, অন্ধ হয়ে গেছি।
–কতবাব বলব চুপ কর।
হ্যারি দৃষ্টিহীন চোখে এধার ওধার তাকাল। ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। সারা দেহে কাঁটা দিয়ে উঠল।
দুচোখ খোলার চেষ্টা করল; কিন্তু পারলো না।
প্রবলভাবে বললো, অসম্ভব ওরা এখানে আসতে পারে না। লিটিল হুইংগিং এ নয়… ও আবার চোখ খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করলো, ওদের দেখার আগে ওদের কথা শুনতে চায়।
ডাডলি কাঁদকাঁদ গলায় বললো–তোমার এই বদমায়েসী, বাবাকে বলে দেব! আ… তুমি কোথায়? তোমার কি মতলব? তুমি কী করছ?
কিন্তু ও কিছু শুনতে পেলো না। যে ভয়ঙ্কর জিনিসটা শোনার প্রতীক্ষায় ছিল শুধুমাত্র সেটাই ওর কানে এলো।
কানাগলিতে ওদের উপস্থিতি ছাড়াও অন্য কিছুর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারছে না। বড় বড় টানাটানা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ওদের খুব কাছেই কারা যেন অবিরত ফেলে চলেছে। বরফের মত ঠাণ্ডা শীতল আবহাওয়াতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এক ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেল। ও থর থর করে কাপতে লাগল।
ডাডলির গলা শুনতে পেল, হ্যারি–হ্যারি ভাল চাওতো তোমার ম্যাজিক বন্ধ কর বলছি।
–ডাডলি, চুপ…।
ওহ্।
অন্ধকারের ভেতর থেকে কে যেন ওর মাথার ধারে প্রচণ্ড এক ঘুষি মারল। এতো তার জোর! হ্যারি খানিকটা শূন্যে উঠে গেল। চোখের সামনে সাদা সাদা। আলো ফটফট শব্দ করে ফুটে উঠল। এই নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার হ্যারির মনে হল ওর মাথার ভেতরটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, পর মুহূর্তে ও ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল আর হাত থেকে জাদুদণ্ডটা উড়ে গেল।
–গর্দভ, ডাডলি! হ্যারি যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে চিৎকার করল। ওর চোখ দুটো যন্ত্রণায় জলে পরিপূর্ণ, ও ওর হাত-পা থেকে ধূলো ঝাড়ুতে থাকে।
–ডাডলি, যেও না, ওদিকে যেও না, ফিরে এসো! তুমি বিপদের মুখে ছুটে যাচ্ছ।
ওর কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে কে যেন বীভৎসভাবে চিৎকার করে উঠল। তারপরই ডাডলির পায়ের শব্দ শোনা গেল না। ঠিক সেই সময় হ্যারির মনে হলো অসম্ভব হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা, ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ, তার অর্থও জানে। একটি অর্থ, একজন নয় আরও রয়েছে তার সঙ্গে।
–ডাডলি যেখানেই থাক, মুখটা চেপে বন্ধ করে থাক।
–জাদুদণ্ড! হ্যারি মাকড়সার মত ওর দুহাত তুলে পাগলের মত বললো আমার জাদুদণ্ড কোথায় এগিয়ে এসো–লুমোস।
হ্যারির মুখ থেকে আপনা-আপনি স্পেল বেরিয়ে এল। খোজবার জন্য ওর আলো দরকার–কথাটা ভাবার সাথে সাথে ওর ডানহাত থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে লাগলো। জাদুদরে মুখ থেকে আগুন জ্বলে উঠল। হ্যারি জাদুদণ্ডটা একরকম হিঁচড়ে তুলে ধরে সেটা পায়ের কাছে পড়ে ঘুরপাক খেতে লাগল।
হ্যারি জাদুদণ্ডটা হাতে নিয়ে তুলে বললো: এক্সপেকটো পেট্রোনাম!
বলার সাথে সাথে হ্যারি জাদুদণ্ডের মুখ থেকে রূপালী রং-এর বাষ্প বেরুতে লাগল। ডিমেন্টর গতি কমিয়ে দিল, কিন্তু জাদুমন্ত্র ঠিকমত কাজ করেনি। হ্যারি দাঁড়িয়ে উঠে সামান্য পিছনে হটলো। ডিমেন্টর তখন ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, দারুণ আতঙ্কে ওর মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত, হতবুদ্ধি হয়ে গেছে–কনসেনট্রেট।
ডিমেন্টরের আললেখাল্লা থেকে এক জোড়া ধূসর, ক্ষতের ওপর মামড়ি পড়ার মত লিকলিকে দুটি হাত বেরিয়ে এসে ধীরে ধীরে হ্যারির দিকে এগোতে লাগল। অজানা এক হিস্ হিস্ শব্দ হ্যারির কানে আসতে লাগল।
এক্সপেকটো পেট্রোনাম!
ওর গলার শব্দ খুব ঢিমে আর দূর থেকে ভেসে এলো যেন।
আবার একগাদা রূপালী বাষ্প আগের চাইতে আরও দূর্বল হয়ে ওর জাদুদণ্ড থেকে বেরুতে লাগলো, ওর আর কিছু করতে পারছে না, জাদুমন্ত্রও কাজ করছে না।
ওর মাথার ভেতরে কে যেন দমকে দমকে হেসে চলেছে। তীক্ষ্ম, উচ্চস্বরের হাসি, ডিমেন্টরের পচাগন্ধ নাকে আসছে, মৃত্যুর শীতল নিঃশ্বাস ওর ফুসফুস ভরিয়ে দিচ্ছে, কোন এক অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে ও ভাবো আনন্দের কথা ভাবো।
কিন্তু ওর মনে তো কোনও আনন্দ নেই। ডিমেন্টরের হাতের বরফ শীতল আঙ্গুলগুলো ওর গলা টিপে ধরতে এগিয়ে আসছে উচ্চস্বরের হাসির বিরাম নেই গতি তার বেড়ে চলেছে। কেউ যেন মাথার ভেতর থেকে কিছু বলছে। বলছে, হ্যারি, মৃত্যুর কাছে মাথানত কর, যন্ত্রণাহীন মৃত্যু হতে পারে, আমি ঠিক জানি নে, আমার কখনও মৃত্যু হয়নি।
তাহলে তো আর রন, হারমিনিওনের সঙ্গে দেখা হবে না। ওদের মুখগুলো ওর মানসচক্ষের সামনে ভেসে উঠলো তবুও বেঁচে থাকার জন্য নিঃশ্বাস নিয়ে চলল।
এক্সপেকটো পেট্রোনাম!
হ্যারির যাদুদণ্ডের মুখ থেকে একটা প্রকান্ড হরিণ শাবক বেরুতে লাগল। শিং দিয়ে ডিমেন্টরের হৃদপিণ্ডের কাছে ছুঁ মারতে লাগল। কখনও এগোয়, কখনও পেছোয়। অন্ধকারের মতই ভারহীন। হরিণের শিং-এর চাপে ডিমেন্টররা হঠাৎ সবেগে পিছু হটে গেল, অনেকটা বাদুড়ের মতো পরাজিত হয়ে ডিমেন্টর পালাল।
ওইদিকে ধাওয়া কর। হ্যারি চিৎকার করে হরিণকে নির্দেশ দিল। চড়কিবাজির মত ঘুরতে ঘুরতে ও কানাগলির শেষ প্রান্তের দিকে বেগে ছুটল। হাতে প্রজ্জ্বলিত জাদুদণ্ড, ডাডলি ডাডলি!
খুব বেশি না, বার কি তের পা ছোটার পর ও ডাডলির কাছে পৌঁছল : দেখতে পেল ডাডলি জমিতে কুঁকড়ে শুয়ে আছে, ওর দুহাতে মুখ ঢাকা। দ্বিতীয় ডিমেন্টর ওর ওপর হুমড়ি খেয়ে বসে রয়েছে, ডাডলির কব্জি ওর ল্যাকপ্যাকে সরু লম্বা লম্বা আঙ্গুল চেপে ধরে রয়েছে। আঙ্গুলগুলো যেন নাচছে। ওর আবৃত মুখ ডাডলির মুখের কাছে অনেকটা নামান দেখে মনে হলো চুম্বন করতে চাইছে। ওদিকে যাও হ্যারি খুব জোরে আদেশের সুরে নির্দেশ দিল হরিণের শিং কে। হরিণের শিং একরকম লাফাতে লাফাতে এগিয়ে গেল ডাডলির দিকে। ডিমেন্টরের চক্ষুবিহীন মুখ প্রায় ডাডলির মুখ স্পর্শ করেছে তখন রূপালী হরিণের শিং ওকে ধরে ফেলল সেই সর্বাঙ্গ ঢাকা মূর্তি ডাডলিকে ছেড়ে দিয়ে আগের সঙ্গীর মত হাওয়াতে মিলিয়ে গেল। হরিণের শিং ও কানাগলির শেষ প্রান্তে গিয়ে রূপালী কুয়াশার মধ্যে বিলীন হয়ে গেল।
আকাশে আবার চাঁদ, তারা, রাস্তার বাতি প্রাণ ফিরে পেল। কানাগলিতে গরম এক ঝলক হাওয়া বয়ে গেল। কাছাকাছি বাগানের গাছগুলোর পাতা পৎ পৎ করে উঠল। ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্ট গাড়ির চলার শব্দে গম গম করে উঠল। হ্যারির আশপাশের সবকিছুই প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠল। একটু পর বুঝতে পারল ও ঘেমে নেয়ে গেছে। টি শার্টটা গায়ে আঁঠার মত সেঁটে রয়েছে।
যা ঘটে গেল ও যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যিই কি ডিমেন্টরেরা লিটিল হুইংগিংতে এসেছিল?
ডাডলি তখনও মাটিতে ভয়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে রয়েছে। কাঁপতে কাঁপতে বিড় বিড় করে কিছু বলছে। হ্যারি হাঁটু গেড়ে ডাডলির কাছে বসে দেখতে চাইল ও ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে না দাঁড়াবার শক্তি আছে। ঠিক সেই সময় হ্যারি শুনতে পেল ওর পেছনে কারও পায়ের শব্দ। কে দাঁড়িয়েছে দেখার জন্য মুখ ফেরাল। হাতের জাদুদণ্ড তাড়াতাড়ি ওপরে তুলল।
দেখতে পেল মিসেস ফিগ হাঁফাচ্ছেন। মাথার চকচকে পাকা পাকা চুল হেয়ার নেটে আবদ্ধ। হাতের কব্জিতে ঝুলছে শপিং ব্যাগ। বাড়িতে পরার ছোট দুটো জুতো থেকে দুপায়ের অনেকটা বেরিয়ে এসেছে। হ্যারি তাড়াতাড়ি ওর জাদুদণ্ড মিসেস ফিগের দৃষ্টি থেকে আড়াল করল।
–আরে ওটা লুকোতে যেও না মূর্খ ছেলে! মিসেস ফিগ তীক্ষ্মস্বরে বললেন আরও দুচারটে তো এখানে ওখানে থাকতে পারে? –দাঁড়াও, আমি শয়তান মুন্ডানগাস ফ্লেচারকে খুন করবো!