ঘণ্টাখানেক ধরে যথেষ্ট বোঝাবার পরেও যখন স্ত্রীর মুখে হাসি ফুটল না, তখন মহাদেব বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘প্রত্যেক বার তুমি সমতলে যাবে আর ফিরে এসে মন খারাপ করে বসে থাকবে। তা সত্ত্বেও যাওয়া বন্ধ করবে না।’
‘আমি কি সাধে যাই, ওরা আমাকে জোর করে নিয়ে যায়।’ শিবানী বললেন।
‘কেউ কাউকে জোর করে এক বার নিয়ে যেতে পারে, বারে বারে পারে না। তা ছাড়া তুমি তো ওখানে উদ্বাস্তু। পশ্চিমবাংলা তো তোমার বাপের বাড়ি দেশ নয়। তোমার বাবা মা থাকতেন হিমালয় পাহাড়ে। তুমি পর্বতকন্যা। আয়নায় দেখো, তোমার মুখে মঙ্গোলিয়ান ছাপ, পাহাড়িদের যেমন হয়। ওরা জোর করে পশ্চিমবাংলাকে তোমার বাপের বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে, চোখ মুখ বদলে দেয়, ফিরে এলে কষ্ট তো হবেই।’ মহাদেব সপ্রেমে বললেন।
শিবানী শ্বাস ফেললেন, ‘আগে এমন হত না। তখন তো ডাকের সাজে সাজাত। চোখ মুখ তেমন পাল্টাত না। এখন ছেলেমেয়েদের দিকে তাকালে প্রথম প্রথম অচেনা লাগে। বুঝতে পারি, আমার মুখও পাল্টে দিয়েছে ওরা।’
‘ভয়ঙ্কর কাণ্ড। ওই দিনগুলো মুখ বদলে থাকা কি সোজা কথা?’ মহাদেব বললেন, ‘যখন ফিরে আসো, তখন তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কষ্ট হয়।’
শিবানী একটু ঘনিষ্ঠ হলেন, ‘তুমি আমাকে এখনও এত ভালবাসো?’
‘হুঁ।’ মহাদেব চোখ বন্ধ করলেন।
‘কিন্তু কী জানো, ওই বাঙালিরা আমার কেউ নয়, ওরা সমতলের বাসিন্দা। পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মিলেমিশে খিচুড়ি হয়ে আছে, কিন্তু সেই যে প্রথম বার ভুল করে হিমালয় না গিয়ে ওখানে নেমে পড়েছিলাম হাতির পিঠে চড়ে, তার পর থেকে ওখানে যাওয়াটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। না গেলে খুব খারাপ লাগে। ছেলেমেয়েদের এ বার বললাম: চল, এ বার তোদের নিয়ে সত্যিকারের দাদু দিদিমার বাড়িতে যাব। চার জনেই বেঁকে বসল।’ শিবানী বললেন।
‘কী বলল ওরা?’
‘কার্ত্তিক বলল, অসম্ভব। ওখানে কোনও পাবলিক দেখা যাবে না। লক্ষ্মী সরস্বতী বলল, ওই শীতে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকতে পারব না। গণেশ বলল, মাইনাস তিরিশে খালি গায়ে থাকলে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।’
‘তা অবশ্য। তোমার বাপের বাড়িতে কৈলাসের চেয়ে শীত বেশি।’ মহাদেব মাথা নাড়লেন, ‘না। এ বার আর যেও না।’
‘তা কী করে হয়! ওরা তো আমার জন্যে প্যাণ্ডেল বানিয়ে ফেলেছে। আমি না গেলে কাকে না কাকে দুর্গা বানিয়ে মণ্ডপে বসিয়ে দেবে। উপদেবীগুলো তো প্রক্সি দেওয়ার জন্যে ছোঁক ছোঁক করছে।’ শিবানী বললেন।
‘তোমাকে নিয়ে পারা যাচ্ছে না। ফিরে এলে মন খারাপ করে থাকো, অথচ যাওয়ার জন্যে ব্যস্ত হও। ওদের ভাষা বুঝতে পারো?’
‘যখন পুরুত মন্ত্র পড়ে তখন পারি, অন্য সময় না বুঝে বোকা হয়ে হাসি। ছেলেমেয়েরা এত দিনে মাইম অ্যাক্টিং শিখে ফেলেছে বলে ! জানো, তোমার মেয়ে দুটো খুব ফাজিল হয়েছে। কার্ত্তিকটাও।’
‘কী রকম?’
‘উদ্বোধন করতে ছেলে ফিল্মস্টার এলে মেয়ে দুটো গদগদ হয়ে যায়। আর কার্ত্তিকটা মেয়ে দেখলেই হল ! তখন ইচ্ছে করে, ঠাস করে চড় মারি।’ বলে ঠোঁট ফোলালেন শিবানী, ‘একেবারে বাপের স্বভাব পেয়েছে।’
‘আবার আমাকে টানছ কেন? এখন কী আর সে বয়স আছে।’
‘আমার একটাই সমস্যা হয় ওখানে গেলে। কারও মন বুঝতে পারি না।’
‘সে কী! তুমি অন্তর্যামিনী। তোমার তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
‘কী জানি। পশ্চিমবাংলায় পা দিয়েই দেখি ওই ক্ষমতাটা লোপ পেয়ে যায়। কী রকম বোকা বোকা লাগে তখন। যে ক’দিন থাকি কে কী ভাবছে, একদম বুঝতে পারি না। তাই ফিরে এসে মন খারাপ হয়ে যায়।’
মহাদেব হাসলেন, ‘এত স্যাটেলাইট আকাশে ঘুরলে কৈলাসের নেটওয়ার্ক ওখানে কাজ করবে কী করে। আমি একটু ভেবে দেখি, তুমি যখন যাবেই তখন একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।’
খবরটা চাউর হয়ে গিয়েছিল। শুনে কার্ত্তিকের মাথা গরম হয়ে গেল। সটান সরস্বতীর কাছে এসে বলল, ‘পিতৃদেব নাকি ইনজাংশন জারি করেছেন, আমাদের পশ্চিমবাংলায় যাওয়া চলবে না!’
সরস্বতী বলল, ‘মা বলছিল বটে, তবে মা তো বাবাকে ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। তুই ভাবিস না।’
‘ভাবব না? গত বার শুনে এসেছি, এক পুজোয় সেক্রেটারি বলছিল সামনের বার হয় মল্লিকা, নয় প্রীতি জিন্টাকে উদ্বোধনে নিয়ে আসবে। উঃ, কী জিনিস! আমি এ বারে ওদের দেখার জন্যে বসে আছি, পিতৃদেব না বললেই হল? এ রকম ডিক্টেটরশিপ সহ্য করবি?’
সরস্বতীর কপালে ভাঁজ পড়ল, ‘তুই ওই মেয়েদের জিনিস বললি কেন? পশ্চিমবাংলায় গিয়ে গিয়ে তোর ভাষা খুব নিম্নমুখী হয়েছে।’
‘সরি। আমাদের রম্ভা উর্বশীরা ওদের পায়ের নখের যুগ্যি নয়। তাই মুখ ফস্কে জিনিস বলে ফেলেছি। লক্ষ্মী কোথায়?’
‘জামাইবাবুর কাছে গেছে। পারমিশন নিতে। মা যদি না যায় তা হলে আমার কী দুরবস্থা বল? জামাইবাবু ছাড়া একটাও সুপুরুষ নেই, যার দিকে এখানে তাকানো যায়। বেশি তাকালে আবার বোনে বোনে ঝগড়া হয়ে যায়। চল, মায়ের কাছে গিয়ে শুনি, আসল ব্যাপার কী?’
কিন্তু যাওয়ার আগে গণেশ এল হেলেদুলে। বলল, ‘মা বলল রেডি হতে। মামার বাড়ি যেতে হবে।’ কার্ত্তিক চিৎকার করল, ‘পিতৃদেব রাজি হয়েছেন?’
‘হ্যাঁ। মা তোমাদের জানিয়ে দিতে বললেন।’ গণেশ বলল।
সরস্বতী বলল, ‘আমরা স্বর্গে থাকার সময় কেউ কারও মন জানতে পারি না। মর্তের মানুষদের মন কী ভাবছে, ঠিক টের পাই। আবার ইদানীং মর্তে গিয়ে দেখেছি, ওদের মনের কোনও খবরই বুঝতে পারি না। যাই, দিদিকে খবরটা দিই।’
কার্ত্তিক মনে মনে বলল, ‘এই সুযোগে জামাইবাবুকে এক বার দেখে আসবে। অদ্ভুত।’ যেহেতু স্বর্গে কেউ অন্তর্যামী নয়, তাই সরস্বতী বুঝতে পারল না।
কৈলাস থেকে শিবানী পুত্র কন্যাকে নিয়ে পশ্চিমবাংলায় যাত্রা শুরু করার আগে স্বামীকে প্রণাম করতে গেলেন। মহাদেব বললেন, ‘সাবধানে যাবে। বাসে বা অটোয় উঠবে না। ওরা ঠেলে ফেলে দেয়, নয় চড় মারে। একলা কোথাও যাবে না। তোমার বয়স তো শরীরে ছাপ ফেলেনি, ইভ মনে করে টিজ করবে রাস্তায়। আর হ্যাঁ, মহিষাসুর খবর পেয়েছে?’
শিবানী গলায় আঁচল জড়িয়ে প্রণাম সেরে উঠে বললেন, ‘হ্যাঁ। সে চরিত্র-সংশোধনাগার কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর নভোমণ্ডলে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। গত বার খুব সমস্যা করেছিল।’
‘কী করেছিল?’
‘কিছুতেই আমার দিকে মুখ করে লড়াই করতে চায় না। গেল বার যাওয়ার সময় বলে গেছে এ বারে যেন দর্শকের দিকে তার মুখ রাখা হয়। আমার তো হাত নেই, উদ্যোক্তারা যেমন চাইবে তেমনটাই হবে। বুঝতে চায় না।’
‘ও যায় বলে আমি একটু নিশ্চিন্তে থাকি। তোমার ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতে পারে না।’ মহাদেব বললেন।
‘আহা! তিন কুল গিয়ে এক কুলে ঠেকেছে, তবু তোমার ভয় গেল না।’ শিবানী চোখের কোণে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
‘সতীকে হারানোর যন্ত্রণা তোমাকে পেয়ে ভুলেছি। তাই ভয় তো হবেই।’
‘শোনো, দিদির শরীরের অংশ যেখানে যেখানে পড়েছিল, সেই জায়গাগুলো পবিত্র তীর্থ হয়ে গিয়েছে। লোক তাই এখনও দিদির নাম করে। আমার শুধু যাওয়া আসাই সার। আমার নামে কোনও তীর্থ নেই।’ ঠোঁট ফোলালেন শিবানী, চোখের পাতা ভিজে গেল।
‘কী যে বলো! পাঁচ ছয় দিন তো পাড়ায় পাড়ায় তোমার জন্যে তীর্থ হয়ে যায়। এ রকমটা আর কোনও দেবতা বা দেবীর বেলায় হয়েছে?’
হাসি ফুটল শিবানীর ঠোঁটে, ‘তা অবশ্য হয়নি। এই যে ছেলেমেয়েরা যখন একা একা যায়, তখন ওদের পুজো তেমন জমে না। তবে তুমি যখন আমার সতীনের সঙ্গে যাও তখন তো বাঙালি বাঁধনহারা।’
‘ভয়ে। ওই কালো রূপ, হাতে খাঁড়া, গলায় মুণ্ডুর মালা দেখে ভয় পায় ওরা। ওর গায়ের রং যদি তোমার মতো হত, তা হলে ভয়ের বদলে লোকে ভাবত ক্যাবারে দেখছি। যাক গে, এটা রাখো।’
মহাদেব একটা ফুল এগিয়ে ধরলেন।
শিবানী সেটা নিয়ে বললেন, ‘তুমি আমাকে ফুল দিয়ে বিদায় জানাচ্ছ?’
‘না, না। এ ফুল যে সে ফুল নয়। তোমরা যেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে, তখন গোপনে এই ফুল বের করে ঘ্রাণ নেবে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে স্যাটেলাইটগুলো আর বাধা হবে না। তোমার অন্তর্দৃষ্টি অটুট থাকবে। তুমি অন্তর্যামিনী হয়ে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারবে।’
‘উঃ। তুমি কী ভাল। আচ্ছা, ছেলেমেয়েদের ঘ্রাণ নিতে ফুলটা দেব?
‘আমার মনে হয়, না দেওয়াই ভাল। তা হলে পাবলিকের মনের কথা বুঝতে পেরে ওদের দুষ্টুমি বেড়ে যাবে।’ মহাদেব হাসলেন।
‘ঠিক বলেছ। শুনছি মল্লিকা আর প্রীতি নামের অপ্সরা আসবে উদ্বোধন করতে। ওরা কী ভাবছে, তা কার্ত্তিক জানতে পারলে মুশকিল হয়ে যাবে। আমি কাউকে ফুলটার কথা বলব না! এ বার আসি?’
মহাদেব বসে বসে হাত বাড়ালেন, ‘আয়ুষ্মতী ভব।’
‘তা হব। শোনো, এই ক’দিন একটু থিতু হয়ে থেকো। কৈলাস ছেড়ে কোথাও যেও না। ওখানে যাওয়ার পর অন্তর্দৃষ্টি থাকত না বলে জানতে পারতাম না আমি চলে গেলে তুমি কী কী করছ। এ বার তো জানতে পারব। যদি দেখি আবার কাউকে দু’দিনের জন্যে জুটিয়েছ, তা হলে আর ফিরে আসব না। এই বলে যাচ্ছি।’ শিবানী মহাদেবের সামনে থেকে বিদায় নিলেন। মহাদেবের মনে হল যেন রাজহংসী হেঁটে চলেছে। এখন বাহনদের নিয়ে যেতে হয় না। মণ্ডপে মণ্ডপে মাটির বাহন রেডি করা থাকে। উঠে বসলেই হল। যেহেতু তাদের কোনও নড়াচড়া নেই, নিয়ে যাওয়ার দরকারও পড়ে না। শিবানীর একটা পোষা সিংহ আছে। সেটা এখন এত বুড়ো হয়ে গিয়েছে হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। ইঁদুর কিংবা হাঁস ওর লেজে ঠোকর দিলেও কিছু বলতে পারে না। মাটির ময়ূরে কার্ত্তিকের খুব আপত্তি। জ্যান্ত হলে রাতবিরেতে একটু ঘোরাঘুরি করতে পারত।
লক্ষ্মী বলল, ‘মা, এ বার আমরা কীসে যাব?’
‘অদৃশ্য দোলায় চেপে।’
কার্ত্তিক গুণগুণ করল, ‘দোলা, এ দোলা, রাজা মহারাজাদের দোলা।’
সরস্বতী ধমক দিল, ‘অ্যাই! কী গাইছিস?’
‘ভূপেন হাজারিকার গান। তিরিশ বছর আগে মণ্ডপে বাজিয়েছিল ওরা। এখনও মনে আছে।’ কার্ত্তিক বলল হাসতে হাসতে।
শুভক্ষণ দেখে শিবানী ছেলেমেয়েদের নিয়ে বায়ুতে শরীর ভাসিয়ে দিলেন। এখন তাঁদের শরীর অতি সূক্ষ্ম, তাই ভেসে যেতে কোনও সমস্যা হল না। যেতে যেতে তাঁরা প্রথমে গন্ধর্ব এবং অপ্সরাদের লীলা করতে দেখলেন। তারাও শিবানীকে সপরিবার দেখে দ্রুত সরে গেল।
চরিত্র সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এক জন প্রহরী মহিষাসুরকে নিয়ে অপেক্ষা করছিল। শিবানীকে প্রণাম জানিয়ে প্রহরী বিদায় নিলে অসুর দলে যোগ দিল। এখন কথা বলা নিষেধ। কিন্তু শিবানী দেখলেন অসুরের পরনে বিজাতীয় পোশাক।
স্যাটেলাইটগুলোকে এড়িয়ে ওরা অদৃশ্য দোলায় উঠে বসলেন। শিবানী বিরক্ত হয়ে মহিষাসুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ কী পোশাক পরেছ?’
‘কী করব? পৃথিবী থেকে কয়েক দিন আগে এক জন চরিত্র-সংশোধনাগারে এসেছে। তার মুখে শুনলুম, এ বার নাকি ওরা আমাকে এই পোশাকে পুজো করবে।’ হাসল মহিষাসুর, ‘বেশ ঢিলেঢালা, তাই না?’
শিবানী রেগে গেলেন, ‘এটার নাম কী?’
‘আলখাল্লা। আমাকে নাকি বিন লাদেনের আদলে তৈরি করেছে ওরা।’
‘সর্বনাশ! আমি বিন লাদেনকে ত্রিশূল দিয়ে হত্যা করব?’
‘বোধহয়। আপনার মুখটা আমেরিকান করে দিতে পারে ওরা।’
চমকে উঠলেন শিবানী। এক বার ভাবলেন ফিরে গেলেই ভাল হয়। এ সব খবর কৈলাসে বসে জানতে পারেননি! ওই স্যাটেলাইটগুলোর জন্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার গোলমাল হচ্ছে। এমন সময় নীচে আলোর ফোয়ারা চোখে পড়ল। এসে গেছে। সন্তর্পণে মহাদেবের দেওয়া ফুলটা বের করে নাকের তলায় নিয়ে এসে ঘ্রাণ নিতে যাবেন, অমনি গণেশ শুঁড় বাড়িয়ে সেটা ধরতে চাইল। হাত ফস্কে ফুলটা পড়ে গেল নীচে। যেখানে কলকাতা শহর সেজেচ্ছে আলোয়। আর সেই ফুলের ঘ্রাণ কলকাতার বাতাসে মিশে গেল। রাত তখন দুটো।
স্কাইল্যাণ্ড হাউসিং কমপ্লেক্সের এগারো তলার বারোশো তিরিশ ফ্ল্যাটটার দাম এখন বিয়াল্লিশ লক্ষ টাকা। সেই ফ্ল্যাটের মাস্টার বেডরুমে ঘুমাচ্ছিলেন বাহান্ন বছরের সপ্তর্ষি সেন এবং তাঁর স্ত্রী উর্বশী সেন। আজকাল সপ্তর্ষিকে অন্তত তিন বার ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যেতে হয়। তিনটে দশে তাঁর ঘুম ভাঙল নিম্নদেশে চাপ বৃদ্ধি হওয়ায়।
বিছানা থেকে উঠে খাটের দিকে তাকালেন, রোজ যেমন তাকান। হাল্কা নীল আলোয় উর্বশী শুয়ে আছেন। রোজ যেমন থাকেন। সপ্তর্ষি টয়লেটের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে গেলেন। এ কী শুনলেন তিনি? এ কণ্ঠ উর্বশীর ছাড়া হতে পারে না। তিনি তাকালেন আবার। উর্বশী পাশ ফিরে শুল। না। ঠিক শুনেছেন তিনি।
সপ্তর্ষি গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলে, ‘কী বললে তুমি?’
কোনও জবাব এল না। সপ্তর্ষি একটু অপেক্ষা করে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি জেগে আছ?’
এ বারও উত্তর নেই। টয়লেটে ঢুকলেন সপ্তর্ষি। নিজেকে হাল্কা করতে করতে মাথা নাড়লেন। কানে লেগে আছে উর্বশীর গলা। ‘টেকোটা নির্ঘাত ডায়েবেটিক পেশেন্ট হয়ে গেছে।’
‘টেকো। টেকো বলল অপ্সরা? নিজে কী? একটা ধুমসি মুটকি! বিয়াল্লিশ বছরের হস্তিনী খুকি সেজে থাকে। হুঁঃ।’ মনে মনে বলল সপ্তর্ষি। বলে খুশি হল। শুয়ে ছিল অপ্সরা। তড়াক করে উঠে বসে টয়লেটের বন্ধ দরজার দিকে বাসি মুখে তাকাল সে। সপ্তর্ষির মনে মনে বলা কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে সে।