“গগন হয়েছে পূর্ণ নীল-মেঘ-মালে,
অরণ্য শ্যামল-বর্ণ শ্যামল তমালে,
নিশাও প্রসারে হের স্বতিমির-পুঞ্জে;
হে ভীরু শ্যামেরে তুমি লহ, গো, নিকুঞ্জে।”
শুনিয়া সখীর সেই সুখের আদেশ
চলেন নিকুঞ্জে রাই লইয়া প্রাণেশ;
পথেতে বিবিধ কেলি করেন দুজনে
কলিন্দনন্দিনী-তীরে আনন্দে বিজনে।
হউক ভকত চিতে সুখের সঞ্চার,
জয় জয় রাধা -কৃষ্ণ নিকুঞ্জ-বিহার। [১]
(প্রথম শ্লোকের দ্বিতীয় অর্থ)
কহিলেন গোপরাজ রাধিকার প্রতি,
“দেখহ, কিশোরি, নিশা আসিল সম্প্রতি,
গগন হইল পুর্ণ, নীল-মেঘ-মালে,
অরণ্য শ্যামল-বর্ণ শ্যামল তমালে;
ভীরু এ গোপাল একা যাইবে কেমনে,
সঙ্গে লয়ে তুমি তারে যাহ গো ভবনে।”
সে আদেশ মতে রাধা বিনোদিনী সুখে
গোপালে লইয়া যায় গেহ-অভিমুখে;
পথেতে কালিন্দি-কূলে প্রতি কুঞ্জ-বনে
বিজনে বিবিধ কেলি করেন দুজনে।
হউক ভকত চিতে আনন্দ-সঞ্চার
জয় জয় রাধা-কৃষ্ণ-নিকুঞ্জ-বিহার। [১]
পদ্মাবতী-চরণের প্রধান কিঙ্কর
শ্রীহরির সুচরিতে চিত্রিত অন্তর
কবি জয়দেব ভনে এ মধুর গীত,
কৃষ্ণের নিকুঞ্জ-লীলা যাহাতে বর্ণিত।
শ্রীহরি-চিন্তায় যদি মজে হে মানস,
প্রেম-লীলা কীর্ত্তনেতে যদি মিলে রস;
শুন তবে জয়দেব-রচিত সঙ্গীত,
সুকোমল সুমধুর অতি সুললিত।
বচন বিস্তারে পটু উমাপতি ধর,
শরণ জানেন মাত্র শব্দ-আড়ম্বর,
গোবর্দ্ধনে আদি বিনা অন্য রস নাই,
শ্রুতিধর ধোয়ী লেখে শুনে যাহা তাই;
একা জয়দেব জানে বিশুদ্ধ রচনা
অর্থ-সহ যথা যোগ্য শব্দের যোজনা। [২-৪]
প্রথম সঙ্গীত
(রাগিণী জয়জয়ন্তী-তাল ঝাঁপতাল।)
প্রলয়-পরোধি-নীরে তরণী হইয়া
অক্লেশে রক্ষিলে বেদে বক্ষেতে ধরিয়া,
তুমি মীন-মূরতি ধরি কেশব ভবেশ হরি।
ধরণী-ধরণ-ক্ষম বিপুল আকার
কঠিন পৃষ্ঠেতে ধর ধরণীর ভার,
তুমি কূর্ম্ম-মূরতি ধরি কেশব ভবেশ হরি।
প্রলয়ে রাখিলে নিজ দশন-শিখরে
মহীরে, কলঙ্ক যেন শশাঙ্ক-উপরে;
তুমি শূকর-রূপ ধরি কেশব ভবেশ হরি।
শ্রীকর-কমলে ধরি প্রখর নখর
বিদারিলে হিরণ্যকশিপু-কলেবর,
তুমি নৃসিংহ রূপ ধরি কেশব ভবেশ হরি।
পদ-নখ-নীর তব ভুবন পাবন
ত্রিপাদ প্রসারি কর বলিরে ছলন,
তুমি বামন-রূপ ধরি কেশব ভবেশ হরি।
ক্ষত্রিয়-রুধির নীরে করাইয়া স্নান
হরিলে মহীর পাপ ওহে ভগবান
তুমি ভার্গব-রূপে ধরি কেশব ভবেশ হরি।
দশ-মুখ-মুখাবলী ছেদিয়া হে রণে
প্রীতি-উপহারদিলে দিকপালক-গণে,
তুমি রাম-মুরতি ধরি কেশব ভবেশ হরি।
বিশদ শরীরে ধর সুনীল বসন,
হলভয়ে কায়ে যেন যমুনা মিলন,
তুমি হলায়ূধ রূপ ধরি কেশব ভবেশ হরি।
পশু বধ দেখি ওহে করুণা-নিধান
নিন্দিলে নিষ্ঠুর সব যজ্ঞের বিধান,
তুমি বুদ্ধ শরীর ধরি কেশব ভবেশ হরি।
ধূমকেতু-সম কাল করবাল লয়ে
নিধন করিলে নিজে যবন-নিচয়ে,
তুমি কল্কি-মূরতি ধরি কেশব ভবেশ হরি।
জয়দেব কৃত গীত সংসারের সার,
সুখদ শুভদ, ভক্ত, শুন বার বার,
জয় মূরতি-দশ-ধারী কেশব ভবেশ হরি। [৫-১৫]
বেদ উদ্ধারিলে তুমি মীন রূপ ধরি,
কূর্ম্ম রূপে বহিলে মহীরে পৃষ্ঠে করি,
বরাহ রূপেতে দন্তে ধরায় রাখিলে,
নর-হরি-রূপ ধরি দৈত্যে বিদারিলে,
বলিরে ছলিলে ধরি বামন মূরতি,
ক্ষত্র-ক্ষয় করিলে হে হয়ে ভূগু-পতি,
রাম-রূপে দশাননে বিনাশ করিলে,
হলধর-রূপে করে হল ধরেছিলে,
জীবে দয়া দেখাইল বুদ্ধের আকারে,
বিনাশিলে ম্লেচ্ছ-গণে কল্কি-অবতারে,
সাধিলে এ দশ কাজ দশ-রূপ ধরি,
হরি হে, চরণে তব প্রণিপাত করি। [১৬]
দ্বিতীয় সঙ্গীত
রাগিণী মিশ্র খাম্বাজ। তাল লক্ষ্মৌ ঠুংরি।
(‘‘কত কাল পরে বল ভারত রে’’ এর সুর)
কমলা-কুচ-মণ্ডল-ধারণ হে,
বনমাল-সুকুণ্ডল-ভূষণ হে,
জয় ভাস্কর-মণ্ডল-মণ্ডন হে,
মুনি-মানস-চিন্তন-মোহন হে,
জন-রঞ্জন কালিয়-গঞ্জন হে,
যদু-বংশ-সরোরুহ-মণ্ডন হে,
নরকান্ত মুরারি খগাসন হে,
মধু-নাশন দেব-বিনোদন হে,
ভব-মোচন উৎপল-লোচন হে,
ত্রিদিবাদি-জগৎ-ত্রয়-কারণ হে,
মিথিলেশ-সুতা-প্রিয়-ভূষণ হে,
খর-দূষণ-রাবণ-নাশন হে,
নব-মেঘ-কলেবর-মণ্ডন হে,
গিরি-মন্দর-ধারণ শোভন হে,
কমলানন-চন্দ্র-চকোর তুঁ হে,
জয়দেব সুমঙ্গল গীত কহে।
আলিঙ্গিয়া কুচ-যুগ প্রিয়া কমলার
পড়েছে কুঙ্কুম-চিহ্ন হৃদয়ে যাঁহার;
(মরিরে শোভিছে যেন কুঙ্কুম-আকারে
প্রিয়া প্রতি অনুরাগ বক্ষের উপরে;)
যাঁহার হৃদয়ে রাজে স্বেদ-বিন্দু-চয়
জনমি অনঙ্গ-কেলি-ক্লান্তির সময়;
ভক্ত-গণ, তোমাদের করুন কল্যাণ
সতত সে হৃষিকেশ করুণা-নিধান।
বসন্তে নিতান্ত জ্বলি মদন-জ্বালায়,
বাসন্তী-কুসুম-সম-সুকুমার-কায়
রাধা বিনোদিনী ভ্রমে কাননে কাননে
খুঁজিয়া প্রাণের সখা রাধিকা-রমণে;
হেনকালে সহচরী আসি তাঁর পাশে
কহিলেন এই কথা সুমধুর ভাষে। [১৭-২৭]
তৃতীয় সঙ্গীত।
(রাগিণী বেহাগ। তাল জৎ)
“বিমল-সলিলা সই যমুনার তীরে
বৃন্দাবন-বন-মাঝে নিকুঞ্জ কুটীরে
নাচিছে রাখাল-রাজ যুবতী-সমাজে;
বিরহি-হৃদয় দলি ঋতু-রাজ রাজে।
মৃদুমন্দ সুশীতল মলয়-সমীরে
কোমল লবঙ্গ-লতা দুলিছে সুধীরে।
অলিকুল-গুঞ্জরণে পূর্ণ বন-স্থলী,
সুধা-রাশি ঢালে কানে কোকিল-কাকলী;
চুমিছে মধুপ-কুল বকুল মুকুলে,
বিচ্ছেদ অনল দহে বিরহিনি-কুলে।
মৃগ-নাভি-গন্ধামোদে কানন পূরিত,
প্রমত্ত আজি গো কুঞ্জে যুব-জন-চিত।
তমাল-বিটপী-মাল অবিরল রাজে,
কোমল-মূরতি কিবা নব-দলে সাজে।
বিকাশে কিংশুক-চয় সে বন-মাঝারে,
মদন-নখর-সম যুবকে বিদারে।
কামের কনক-দণ্ড-সম ধরি শোভা
কেশর-কুসুম রাজে অতি মনোলোভা।
পাটলি-কুসুম পরে মধু পিয়ে অলি,
স্মরের তূণীর সম শোভে সে পাটলি।
তরুণ করুণ-চয় চৌদিকে বিকাশে,
লাজ-হীন জগ-জনে দেখি যেন হাসে।
কেতকী কন্টকময় শোভে চারি ধার,
বিরহি-দলনে যেন কামের কুঠার।
মল্লিকা চামেলী মিশি মাধবিকা-সনে
পরিমল বিতরণে রমিছে সে বনে।
পুলকিত সুশোভিত মুকুল-নিকরে
সহকারে মাধবিকা আলিঙ্গন করে।
তাপস মোহন আজি বৃন্দাবন-বন
তরুণ-তরুণীগণ বিলাস ভবন।”
জয়দেব-কৃত এই বসন্ত বর্ণন
শুনিয়া ভকত কর শ্রীহরি স্মরণ।
“মল্লিকা-কুসুমে করি অর্দ্ধ বিদলন
পরাগ নিচয় তার করিয়া হরণ,
পট্টবাস-প্রায় তাহে করিয়া আবরি,
বহে বায়ু কেতকীর পরিমল হরি;
পঞ্চ-শর-শর যেন করি প্রসারণ
দহে সে দুর্জ্জয় বায়ু বিরহির মন।
অহি-সহবাসে অতি হইয়া বিকল
চলেছে মলয়ানিল কৈলাস অচল;
তুষার সলিলে সেথা অবগাহি কায়
হলাহল-জ্বালা যেন নিবাইতে চায়।
সহকার তরু শিরে নেহারি মুকুল
কুহু কুহু কূজনিছে মত্ত-পিক-কুল।
মধু-মাসে সহকারে হয়েছে মুকুল,
মধু-গন্ধে লুদ্ধ সেথা জুটে অলি-কুল।
অলি ভরে প্রকম্পিত সে মুকুল পাশে
বসিয়া কূজনে পিক সুমধুর ভাষে।
সে সুরবে প্রবাসীর বিদরে শ্রবণ,
দিন যাপে স্বপ্নে পেয়ে প্রিয়া-আলিঙ্গন।”
যে হরির হৃদে আজি হয়েছে উদয়
নারী-আলিঙ্গনে প্রেম-তরঙ্গ-নিচয়;
সে হরিরে দেখাইয়া কিছু দূর হতে
রাধিকারে পুন সখী কহে হেন মতে। [২৮-৩৯]
চতুর্থ সঙ্গীত।
(রাগিনী মূলতান। তাল জৎ।)
“বিলাস আবেশে মুগ্ধা গোপী-গণ-সঙ্গে
বিহরিছে হরি রঙ্গে ভাসিয়ে রাস-তরঙ্গে,
শ্যাম-অঙ্গে পীতবাস চন্দন রাজিছে,
হাসি মাখা গণ্ড যুগে কুণ্ডল দুলিছে।
পীন-স্তন-ভার-ভরে আলিঙ্গিয়া সমাদরে
কোন বালা হরি সহ গাইতেছে গান
ললিত পঞ্চমে তুলি সুমধুর তান।
কেহ চায় এক মনে হরির কমলাননে,
খেলিছে নয়ন যেথা বিলাসে চঞ্চল
অনঙ্গ-তরঙ্গে সবে করি ঢল ঢল।
গোপনে কথার ছলে মুখ দিয়া কর্ণ মূলে
কোন নিতম্বিনী তাঁর কপোলে পড়িয়া
চুম্বিছে বদন সুখে পুলকে পূরিয়া।
সেই যমুনা পুলিনে বঞ্জুল নিকুঞ্জ বনে
হেরি কৃষ্ণে কোন ধনী আবেশে কৌতুকে
টানিছে ধরিয়া তাঁর পীত বাস সুখে।
কেহ রাসে রস-রঙ্গে নাচিছে হরির সঙ্গে,
বেনু-গানে তাল দেয় তালি দিয়ে করে;
চঞ্চল বলয় বাজে সুমধুর-স্বরে।
বিহরয় কার সঙ্গে, কার পিছু ধায় রঙ্গে,
চুম্বে কার মুখ, কারে করে আলিঙ্গন,
চাহে অপরার পানে সহাস বদন।”
জয়দেব বিরচিত এই সুমধুর গীত
করুক মঙ্গল সব ভকত জনের,
বৃন্দাবন লীলা যাহে বর্ণিত কৃষ্ণের।
“মূর্ত্তিমান হয়ে যেন আপনি শৃঙ্গার,
হের সখি সুখে হরি করেন বিহার;
নীলোৎপল-সম কম সুনীল সে কায়
আলিঙ্গি গোপিকাগণ কত সুখ পায়।”
বেষ্টিত হইয়া যত গোপিকা নিকরে
বিহরেন হৃষিকেশ রাসে রস-ভরে;
হেন কালে রাধারাণী আসিয়া সেথায়
প্রাণেশে বেষ্টিত দেখি রমণী-মালায়,
“সুন্দর আনন তব” স্তুতি গান ছলে
কহিয়া চুমিলা তাঁর বদন-কমলে।
প্রিয়ার চুম্বনে সেই সহাস বদন
শুভদ সবার হোক, ওহে ভক্ত-গণ! [৪০-৪৯]
প্রথম সর্গ সমাপ্ত
———————————–
মূল রচনা
মেঘৈর্ম্মেদুরম্বরং বনভুঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈনক্তং
ভীরুরয়ং ত্বমেব তদিমং রাধে গৃহং প্রাপয় |
ইত্থং নন্দ-নিদেশতশ্চলিতয়োঃ প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমং
রাধামাধবয়োজয়স্তি যমুনাকুলে রহঃ কেলয়ঃ ||১||
বাগ্ দেবতাচরিতচিত্রিতচিত্তসদ্মা
পদ্মাবতীচরণচারণচক্রবর্ত্তী |
শ্রীবাসুদেবরতিকেলিকথাসমেত-
মেতং করোতি জয়দেব কবিঃ প্রবন্ধম্ ||২||
যদি হরিস্মরণে সরসং মনো
যদি বিলাসকলাসু কুতুহলম্ |
মধুরকোমলকান্তপদাবলীং
শণু তদা জয়দেবসরস্বতীম্ ||৩||
বাচঃ পল্লবয়ত্যুমাপতিধরঃ সন্দর্ভশুদ্ধিং গিরাং
জানীতে জয়দেব এব শরণং শ্লাঘ্যো দুরূহদ্রুতে |
শৃঙ্গারোত্তর-সত্প্রম্য়েরচনৈরাচার্য্য গোবর্ধন-
স্পর্দ্ধী কোহপি ন বিশ্রুতঃ শ্রুতিধরো ধোয়ী কবিষ্মাপতিঃ ||৪||
গীতম্
প্রলয়-পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদম্ |
বিহিত-বহিত্র-চরিত্রমখেদম্ ||
কেশবধৃত-মীনশরীর জয় জগদীশ হরে ||৫||
ক্ষিতিরতিবিপুলতরে তিষ্ঠতি তব পৃষ্ঠে |
ধরণি-ধারণ-কিণচক্র-গরিষ্ঠে ||
কেশব ধৃত-কূর্ম্মশরীর জয় জগদীশ হরে ||৬||
বসতি দশনশিখরে ধরণী তব লগ্না |
শশিনি কলঙ্ককলেব নিমগ্না ||
কেশব ধৃত-শূকররূপ জয় জগদীশ হরে ||৭||
তব কর-কমলবরে নখমদ্ভুত-শৃঙ্গম্ |
দলিত-হিরণ্যকশিপু-তনুভৃঙ্গম্ ||
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ||৮||
ছলয়সি বিক্রমণে বলিমদ্ভুতবামন |
পদনখ-নীর-জনিত-জন-পাবন ||
কেশব ধৃত-বামনরূপ জয় জগদীশ হরে ||৯||
ক্ষত্রিয়-রুধিরময়ে জগদপগতপাপম্ |
স্নপয়সি পয়সি শমিত-ভবতাপম্ ||
কেশব ধৃত-ভৃগুপতিরূপ জয় জগদীশ হরে ||১০||
বিতরসি দিক্ষু রণে দিক্পতি কমনিয়ম্ |
দশমুখ-মৌলিবলিং রমণীয়ম্ ||
কেশব ধৃত-রামশরীর জয় জগদীশ হরে ||১১||
বহসি বপুষি বিশদে বসনং জলদাভম্ |
হলহতি-ভীতি-মিলিত-যমুনাভম্ ||
কেশব ধৃত-হলধররূপ জয় জগদীশ হরে ||১২||
নিন্দসি যজ্ঞবিধেরহহ শ্রুতিজাতম |
সদয়হৃদয়-দর্শিত-পশুঘাতম্ ||
কেশব ধৃত-বুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে ||১৩||
ম্লেচ্ছ-নিবহ-নিধনে কলয়সি করবালম্ |
ধূমকেতুমিব কিমপি করালম্ ||
কেশব ধৃত-কল্কিশরীর জয় জগদীশ হরে ||১৪||
শ্রীজয়দেবকবেরিদমুদিতমুদারম্ |
শৃণু সুখদং শুভদং ভবসারম্ ||
কেশব ধৃত-দশবিধরূপ জয় জগদীশ হরে ||১৫||
বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে ভূগোলমুদ্বিভ্রতে |
দৈত্যং দারয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে ||
ম্লেচ্ছান্ মূর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ ||১৬||
গীতম্
গুর্জ্জরীরাগেণ নিঃসারতালেন চ গীয়তে
শ্রিতকমলাকুচমণ্ডল ধৃত কুণ্ডল কলিতললিতবনমাল |
. জয় জয় দেব হরে ||১৭||
দিনমণিমণ্ডল মণ্ডন ভবখণ্ডন মুনিজনমানসহংস |
. জয় জয় দেব হরে ||১৮||
কালিয়বিষধরগঞ্জন জনরঞ্জন যদুকুলনলিনদিনেশ |
. জয় জয় দেব হরে ||১৯||
মধুমুরনরকবিনাশন গরুড়াসন সুরকুলকেলিনিদান |
. জয় জয় দেব হরে ||২০||
অমলকমলদললোচন ভবমোচন ত্রিভূবনভবননিদান |
. জয় জয় দেব হরে ||২১||
জনকসুতাকৃতভূষণ জিতদূষণ সমরশমিতদশকণ্ঠ |
. জয় জয় দেব হরে ||২২||
অভিনবজলধরসুন্দর ধৃতমন্দর শ্রীমুখচন্দ্রচকোর |
. জয় জয় দেব হরে ||২৩||
তব চরণে প্রণতা বয়-মিতিভাবয় কুরু কুশলং প্রণতেষু |
. জয় জয় দেব হরে ||২৪||
শ্রীজয়দেবকবেরিদং কুরুতে মুদং মঙ্গলম্ উজ্জ্বলগীতিঃ |
. জয় জয় দেব হরে ||২৫||
পদ্মাপয়োধরতটিপরিরম্ভলগ্নকাশ্মিরমুদ্রিতমুরো মধুসূদনস্য |
ব্যক্তানুরাগমিব খেলদনঙ্গখেদস্বেদাম্বুপূরমনুপূরয়তু প্রিয়ং বঃ ||২৬||
বসন্তে বাসন্তীকুসুমসুকুমারৈরবয়বৈ-
র্ভ্রমন্তীং কান্তারে বহুবিহিতকৃষ্ণানুসরণাম্ |
অমন্দং কন্দর্প-জ্বরজনিতচিন্তাকুলতয়া
বলদ্বাধাং রাধাং সরসমিদমুচে সহচরী ||২৭||
গীতম্
বসন্তরাগযতিতালাভ্যাং গীয়তে
ললিতলবঙ্গলতাপরিশীলনকোমলমলয়সমীরে |
মধুকরনিকরকরম্বিতকোকিলকূজিতকুঞ্জকুটিরে ||
বিহরতি হরিরিহ সরসবসন্তে |
নৃত্যতি যুবজনেন সমং সখি বিরহিজনস্য দুরন্তে ||২৮||
উন্মদমদনমনোরথপথিকবধুজনজনিতবিলাপে |
অলিকুলসঙ্কুলকুসুমসমুহনিরাকুলবকুলকলাপে ||২৯||
মৃগমদসৌরভরভসবশংবদনবদলমালতমালে |
যুবজনহৃদয়বিদারণমনসিজনখরুচিকিংশুকজালে ||৩০||
মদনমহীপতিকনকদণ্ডরুচিকেশরকুসুমবিকাশে |
মিলিতশিলীমুখপাটলিপটলকৃতস্মরতূণবিলাসে ||৩১||
বিগলিতলজ্জিতজগদবলোকনতরুণকরুণকৃতহাসে |
বিরহিনিকৃন্তনকুন্তমুখাকৃতিকেতকিদন্তুরিতাশে ||৩২||
মাধবিকাপরিমলললিতে নবমালিকয়াতিসুগন্ধো |
মুনিমনসামপি মোহনকারিণি তরুণাকারণবন্ধৌ ||৩৩||
স্ফুরদতিমুক্তলতাপরিরম্ভণপলকিতমুকুলিতচূতে |
বৃন্দাবনবিপিনে পরিসরপরিগতযমুনাজলপূতে ||৩৪||
শ্রীজয়দেবভণিতমিমুদয়তি হরিচরণস্মৃতিসারম্ |
সরসবসন্তসময়বনবর্ণনমনুগতমদনবিকারম্ ||৩৫||
দরবিদলিতমল্লীবল্লিচঞ্চত্পরাগ-
প্রকটিতপটবাসৈর্বাসয়ন্ কাননানি |
ইহ হি দহতি চেতঃ কেতকীগন্ধবন্ধুঃ
প্রসরদসমবাণপ্রাণবদ্ গন্ধবাহঃ ||৩৬||
অদ্যোত্সঙ্গবসদ্ভুজঙ্গকবলক্লেশাদিবেশাচলং
প্রালেয়প্লবনেচ্ছয়ানুসরতি শ্রীখণ্ডশৈলানিলঃ |
কিঞ্চ স্নিগ্ধরসালমৌলিমুকুলান্যালোক্য হর্ষোদয়া-
দুন্মীলন্তি কুহুঃ কুহুরিতি কলোত্তালাঃ পিকানাংগিরঃ ||৩৭||
উন্মীলন্মধুগন্ধলুব্ধমধুপব্যাধূতচূতাঙ্কুর-
ক্রীড়ৎকোকিলকাকলীকলকলৈরুদ্গীর্ণকর্ণজ্বরাঃ |
নীয়ন্তে পথিকৈঃ কথং কথমপি ধ্যানাবধানক্ষণ-
প্রাপ্তপ্রাণসমাসমাগমরসোল্লাসৈরমী বাসরাঃ ||৩৮||
অনেকনারীপরিরম্ভসংভ্রমস্ফুরন্মনোহারিবিলাসলালসম্ |
মুরারিমারাদুপদর্শয়ন্ত্যসৌ সখীসমক্ষং পুনরাহ রাধিকাম্ ||৩৯||
গীতম্
রামকিরীরাগযতিতালাভ্যাং গীয়তে
চন্দনচর্চ্চিতনীলকলেবরপীতবসনবনমালী |
কেলিচলন্মণিকুণ্ডলমণ্ডিতগণ্ডযুগস্মিতশালী ||
হরিরিহ মুগ্ধবধূনিকরে বিলাসিনি বিলসতি কেলিপরে ||৪০||
পীনপয়োধরভারভারেণ হরিং পরিরভ্য সরাগম্ |
গোপবধুরনুগায়তি কাচিদুদঞ্চিতপঞ্চমরাগম্ ||৪১||
কাপি বিলাসবিলোলবিলোচনখেলনজনিতমনোজম্ |
ধ্যায়তি মুগ্ধবধুরধিকং মধুসূদনবদনসরোজম্ ||৪২||
কাপি কপোলতলে মিলিতা লপিতুংকিমপি শ্রুতিমুলে |
চারু চুচুম্ব নিতম্ববতী দয়িতং পুলকৈরনুকূলে ||৪৩||
কেলিকলাকুতুকেন চ কাচিদমুং যমুনাজলকূলে |
মঞ্জুলবঞ্জুলকুঞ্জগতং বিচকর্ষ করেণ দুকুলে ||৪৪||
করতলতালতরলবলয়াবলিতকলিতকলস্বনবংশে |
রাসরসে সহনৃত্যপরা হরিণা যুবতিঃ প্রশশংসে ||৪৫||
শ্লিষ্যতি কামতি চুম্বতি কামপি কামপি রময়তি রামাম্ |
পশ্যতি সস্মিতচারু পরামপরামনুগচ্ছতি বামাম্ ||৪৬||
শ্রীজয়দেবভণিতমিদমদ্ভুতকেশবকেলিরহস্যম্ |
বৃন্দাবনবিপিনে ললিতং বিতনোতু শুভানি যশস্যম্ ||৪৭||
বিশ্বেষামনুরঞ্জনেন জনয়ন্নানন্দমিন্দীবর-
শ্রেণীশ্যামলকোমলৈরুপনয়ন্নঙ্গৈরনঙ্গোত্সবম্ |
স্বচ্ছন্দং ব্রজসুন্দরীভিরভিতঃ প্রত্যঙ্গমালিঙ্গতঃ
শৃঙ্গারঃ সখি মূর্ত্তিমানিব মধৌ মুগ্ধহরিঃ ক্রীড়তি ||৪৮||
রাসোল্লাসভরেণ বিভ্রমভৃতামাভীরবামভ্রুবাম্
অভ্যর্ণে পরিরভ্য নির্ভরমুরঃ প্রেমান্ধয়া রাধয়া |
সাধু তদ্বদনং সুধাময়মিতি ব্যাহৃত্য গীতস্তুতি-
র্ব্যাজাদুদ্ভটচুম্বিতঃ স্মিতমনোহারী হরিঃ পাতু বঃ ||৪৯||
শাস্ত্র বিহর্গিত পরকীয়া প্রীতির বিজ্ঞাপন। শ্রীকৃষ্ণের পুরুষোত্তম চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করেছে।