এক
কাল রাতের বেলায় কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হয়েছিল। ভোরের ঝিরঝিরে বাতাস তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনে ঢুকে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই একজন সেটা টের পেল। চাপা গলায় সেই অন্ধ-মুখটা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিষ্টি এল নাকি!’ ন্যাড়া হওয়ার পর সাদা কদমের চেহারা নিয়েছে মাথাটা, দড়ি পাকানো শরীরে একটা চিলতে থান, যাতে বুকের খাঁচা ঢাকতে পায়ের গোড়ালি বেরিয়ে যায়, কাঠির মত হাত বাড়িয়ে দেখতে চাইল জলের ফোঁটা পড়ে কিনা। সামনেই একটা বাঁধানো টিউবওয়েল। তার তলায় পা ছড়িয়ে বসে দাঁত মাজছিল একটি যুবতী। যতক্ষণ না সরু গলির শেষে ঈশ্বরপুকুর লেনের মুখে একটা সাইকেল এসে দাঁড়াবে ততক্ষণ ওর দাঁত পরিষ্কার হবে না। যুবতী বলল, ‘ওমা, কি করছ হাত বাড়িয়ে?’
‘বিষ্টি এল নাকি লা?’
‘ধুস, আকাশে মেঘ নেই তো বৃষ্টি আসবে কোত্থেকে!’
‘তবে যে ঠাণ্ডা বাতাস পেলাম, ভিজেভিজে।’
যুবতী ঠোঁট ওল্টালো। তারপর দাঁত মাজতে মাজতে গলির শেষপ্রান্ত দেখে চাপা গলায় বলল, ‘আঃ, বুক খুলে বসে আছ কেন? ব্যাটাছেলে আসছে!’
পড়ে যাওয়া থানের আঁচল বুকে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে যায়?’
যে গেল সে জবাব দিল না।
ঠাসঠাস বাঁকা টিন আর ভাঙ্গা টালির তলায় যে ঘরগুলো সেখানে এখনও সকাল নামেনি। ঠাণ্ডা বাতাসেরা ভুল করেই বোধ হয় এই সরু পথে ঢুকেছিল। সাধারণত তারা এর অনেক উঁচু দিয়ে সূর্যের কাছাকাছি ঘরগুলোয় খেলা করে। বেলগাছিয়া ব্রিজ ছাড়িয়ে এই এলাকাটার নাম বস্তি। দরিদ্রের ঘনবিন্যস্ত কুটীরশ্রেণী। বসতি শব্দটি সংকুচিত হয়ে অনেক কিছু গুটিয়ে দিয়েছে। আড়াই শো ঘরের দেড় হাজার বাসিন্দার একটাই ঠিকানা, তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেন।
এখন, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এই গত চার ঘণ্টাই তিন নম্বরে কোন শব্দ নেই। সেই নির্জনে বসে দাঁত মাজতে মাজতে যুবতী আড়চোখে বুড়ির দিকে তাকাল। চার বছর পার হলে একশ হবে। এখন আর মেয়েছেলে বলে মনে হয় না। গলার স্বরেও না। চোখেও দ্যাখে না অনেকদিন। সে বলল, ‘রাতে ঘুমাওনি?’
বুড়ি ঘাড় কাৎ করল, ‘ঘুমুবনি কেন লা? তোর মত শরীরের জ্বালায় জ্বলি নাকি আমি!’
যুবতীর চোখ ছোট হল, ‘আমি জ্বলি তোমাকে কে বলল?’
‘জ্বলিস! নইলে রোজ এত ভোরে দাঁত মাজার ধুম কেন? ব্যাটাছেলে দেখলে আমায় বুক ঢাকতে বলিস কেন?’
‘ওমা, মেয়েছেলে বুকে আঁচল দেবে না?’
‘যদ্দিন ছিল তদ্দিন দিয়েছি। দু কুড়ি বছর ধরে দিয়েছি।’
‘তাহলে আর বেঁচে আছ কেন?’
‘মর মাগী, আমি মরতে যাব কোন দুঃখে?’
‘ওমা, এখনও বাঁচার ইচ্ছে? এতদিন বেঁচেও শখ গেল না?’
‘না গেল না। কালকের দিনটা দেখব না? রোজ রাত্তিরে শোওয়ার সময় বলি, হে ভগবান, কালকের দিনটা দেখিয়ে দিও। কে যায় ?’ বুড়ি কান খাড়া করল।
যুবতী আগন্তুককে দেখে চাপা গলায় বলল, ‘নারাণকাকা।’
যে আসছিল তার কাছে গলিটা যেন ফুরোচ্ছিল না। এই না-রাত না-দিনের সময়টায় এখন একটা বিছানা খুঁজছিল সে। বুড়ি আবার চেঁচাল, ‘কোন নারাণ?’
লোকটা কোনরকমে সামনে এসে দাঁড়াল, ‘আমি নারায়ণ। বিষ্ণুর আর এক নাম নারায়ণ।’ লোকটার গলার স্বর জড়ানো, বিরক্ত।
‘ওমা তুমি! একটু দাঁড়াও বাবা।’ বুড়ি রক থেকে হড়বড়িয়ে নামল। তারপর শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল। লোকটা দুটো হাত শূন্যে ঘোরালো আশীর্বাদের ভঙ্গীতে। তারপর ময়লা জামা আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে ভেতরে চলে গেল।
মাটি ছেড়ে উঠে বুড়ি বলল, ‘রোদ ওঠেনি তো রে?’
যুবতীর কপালে ভাঁজ পড়েছিল। এবার খিঁচিয়ে উঠল, ‘ওই মাতালটাকে প্রণাম করে তোমার কি পুণ্যিলাভ হল? সারা রাত বাইরে ফুর্তি করে আসে, মেয়ে বউকে খেতে দেয় না আর তাকে তুমি প্রণাম করছ! দেখলে গা জ্বলে যায়।’
‘মদ খাক আর রাঁড়ের বাড়ি যাক আমার কি লা? ওর শরীরে বামুনের রক্ত আছে তাই প্রণাম করলাম। সাইকেলের ঘন্টি বাজছে না?’ বুড়ি কান খাড়া করল।
যুবতীর আঙুল ততক্ষণে থেমে গেছে। ঈশ্বরপুকুর লেনের যে অংশটা এখান থেকে দেখা যায় সেখানে একটা সাইকেল এসে দাঁড়িয়েছে। সাইকেলের সামনে—পেছনে খবরের কাগজ স্তূপ করা। লম্বা এক যুবক সাইকেল থেকে নেমে কয়েক পা হাঁটতেই যুবতীর চোখের আড়ালে চলে গেল। তাড়াতাড়ি কলের জলে মুখ ধুয়ে যুবতী হেলতে দুলতে গলির মুখে গিয়ে দাঁড়াল। এখনও ঈশ্বরপুকুর লেনের দোকানপাট খোলেনি। নরম ছায়া ছড়িয়ে আছে রাস্তায়। দুটো বাস পাশাপাশি যেতে পারে ঈশ্বরপুকুর লেনে। যুবতী জানে বাঁ দিকের মুদির দোকানের পরেই নিমুর চায়ের দোকান। যুবক সেখানেই গেছে। নিমুর চায়ের দোকান খুলেছে ঘণ্টাখানেক আগে। এই সময় কিছু ঘুম-না-হওয়া বুড়ো দোকানের ভেতরে বসে রাজনীতির কথা বলে। উনুনে ফুটন্ত জলের ড্রাম বসিয়ে নিমু অবিরত চা করে যাচ্ছে। এই একঘণ্টায় নিমুর খদ্দের ঠিকে-ঝিয়েরা। বুড়োগুলো কথা বলে আর তাদের দ্যাখে। যুবক নিমুকে কাগজ দেওয়া মাত্র বুড়োদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। এককাপ চা নিয়ে যুবক গম্ভীর মুখে মুদির দোকানের সামনে চলে আসে, তারপর আরাম করে চুমুক দেয়।
যুবতী যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে চায়ের দোকানের খদ্দেরদের নজর যায় না। এই ভোরে রাস্তায় তেমন লোক নেই। যুবতী মিষ্টি গলায় বলল, ‘আজ দেরি হল যে?’
যুবক বলল, ‘দেরি করে ভ্যান এল, লোডশেডিং ছিল কাগজের অফিসে!’
যুবতী জিজ্ঞাসা করল, ‘কাশিটা কেমন আছে?’
যুবক চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, ‘না মরলে যাবে না।’
‘আঃ, বাজে কথা বলো না। আজ বিকেলে আসবে?’
‘কোথায়?’
‘দর্পণায়।’
‘কি বই?’
‘কি যেন নামটা, মিঠুন আছে!’
‘দূর! ওসব ভাল্লাগে না। মিত্রায় চল।’
‘ওখানে তো কি একটা খটমট বই হচ্ছে!’
‘তামিল ছবি। হেভি সেক্সি। টিকিট কেটে রাখব। ছ’টায়।’
যুবতী কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় বাজুতে তেঁতুলের খোলার স্পর্শ পেয়ে চমকে ফিরে দেখল বুড়ি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কোঁচকানো শুকনো গালে কেমন যেন ভিজে ভিজে হাসি জড়ানো, ফোকলা মুখে জিভটা নড়ল, ‘একটু চা খেতে ইচ্ছে করছে লা, ওকে বল না!’
যুবতী খুব বিরক্ত হল। কিন্তু বুড়ি তার হাত ছাড়ছে না। বাধ্য হয়ে সে বলল, ‘নিমুর দোকান থেকে একটা চা এনে দাও তো?’
‘কে খাবে?’ যুবক বিস্মিত, সে বুড়িকে দেখতে পায়নি।
যুবতী বলল, ‘ঘাটের মড়া, মোক্ষ বুড়ি!’
যুবক ঠোঁট উল্টে কাপের চা শেষ করে নিমুর দোকানের রকে রেখে আর এককাপ চা নিয়ে আসতেই মোক্ষবুড়ি আঁচলের তলা থেকে একটা টিনের গ্লাস বের করল। যুবক তাতে চা ঢেলে দিতেই বুড়ি বলল, ‘বেঁচে থাকো বাবা, তাড়াতাড়ি বিয়েটা হোক।’
যুবতী ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘ঠিক আছে, এবার বিদায় হও।’
মোক্ষদা বুড়ি আর দাঁড়াল না। চায়ের গ্লাসটা দুহাতে ধরে ভাঙ্গা মাজা নিয়ে টুক টুক করে সরু গলি দিয়ে চলে গেল ভেতরে। যুবক একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, ‘বিকেলে আসার সময় লক্ষ্য রাখিস কেউ ফলো করছে কিনা!’
যুবতী ভ্রূ-কুঞ্চন করল, ‘কে ফলো করবে?’
‘তুই জানিস।’
‘ইস! আমি অত সস্তা না?’
‘তিন নম্বরের মেয়েদের আমার জানা আছে।’
‘ছাই জানো!’
‘ও হ্যাঁ, শোন। তোদের এখানে একটা মাস্টারনি থাকে না?’
‘হ্যাঁ। কেন?’
‘ওদের স্কুলে লোক নেবে। কেরানির চাকরি। জিজ্ঞাসা করবি? আমি পি ইউ পাশ।’ যুবক কথাটা বলে আর দাঁড়াল না। চায়ের দাম চুকিয়ে সাইকেলে উঠে প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, ‘তোর বাপ আসছে!’
চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে যুবতী দেখল গলির ভেতরে যে মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে তার চোখ আকাশের দিকে। পঞ্চাশ বছর বয়স, স্টেট বাসের ড্রাইভার। এই গলি দিয়ে বের হতে হতে অন্তত দশবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে নমস্কার করবে। যুবতী আবার ঘাড় ঘুরিয়ে দূরে মিলিয়ে যাওয়া সাইকেলটাকে দেখে নিস্পাপ মুখ করে ভেতরে ঢুকল।
মুখোমুখি হতেই বাপ বলল, ‘এখানে কি করছিস?’
‘এমনি!’
‘এমনি মানে? এই ভোরে রাস্তায় কি দরকার? আমি মরে গেছি, না? সেই হকারটা এসেছিল?’
‘কে আবার আসবে?’
‘আবার মুখে মুখে কথা! যা, ভেতরে যা। নিজে সাততাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠিস আমাকে ডেকে দিতে পারিস না।’ বাপ আর দাঁড়ালো না।
যুবতী ঠোঁট বেঁকিয়ে চলে যাওয়া শরীরটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শালা!’
সেই সময় গলির ভেতরে মোক্ষদা বুড়ির পরিত্রাহি চিৎকার ছড়িয়ে পড়ল। যুবতী দেখল দুহাতে কপাল চাপড়াচ্ছে বুড়ি আর তার সামনে দাঁড়িয়ে ওর ছোটভাই ন্যাড়া। দিদিকে দেখতে পেয়েই ন্যাড়া দৌড়ে এল, ‘বাবা চলে গেছে?’ যুবতী ঘাড় নাড়তেই ন্যাড়া ছুটে গেল বাইরের দিকে। বুড়ি তখনও সমানে চিৎকার করে কাঁদছে। একটু একটু করে বিভিন্ন ঘর থেকে মেয়েরা বেরিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুড়ি দুপা সামনে ছড়িয়ে মাথা নাড়ছে আর বলছে, ‘ওলাওঠা হোক, মার দয়া হোক ছোঁড়ার। সক্কাল বেলায় একটু চা খাব ভেবেছিলাম, ছোঁড়াটা ফেলে দিয়ে গেল! তোমরা বিচার করো, আমার কি হবে গো?’
দশ বছরের ন্যাড়ার অবাধ্যতা নিয়ে দু-একজন যখন মন্তব্য করছে তখন যুবতীর মা বেরিয়ে এল, ঘর ছেড়ে। বোঝা যায় বিছানা থেকেই ন্যাড়ার নাম শুনে ছুটে এসেছে, ‘কি হল?’
‘আমার চা ফেলে দিল তোমার ছেলে!’ বুড়ি ককিয়ে উঠল।
‘চা! তুমি চা পেলে কোথায়? কে কিনে দিল?’
‘তোমার মেয়ের ভাতার। ওই যে সাইকেলে আসে!’
যুবতীর মনে হল তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। গুঞ্জনরত ভিড়টা আচমকা যেন জমে গেল। যুবতীর মা আগুনচোখে মেয়েকে দেখল। তারপর চিৎকার করে বলল, ‘মুখ সামলে কথা বল, আমার মেয়ে তেমন নয়।’
‘ওমা, আমি বানিয়ে বলছি নাকি। সে ছুঁড়ি কোথায়, তাকেই জিজ্ঞাসা কর না!’
অন্ধচোখে বুড়ি যেন চারদিকে যুবতীকে খুঁজতে লাগল।
যুবতীর মা সোজা হয়ে দাঁড়াল, ‘এ্যাই, এদিকে আয়!’
যুবতীর কপালে ভাঁজ পড়ল। গোল হয়ে দাঁড়ানো মানুষেরা এবার গুনগুন করতে লাগল। প্রত্যেকের দৃষ্টি যুবতীর দিকে। যুবতী কি করবে বুঝতে পারছিল না। মায়ের ভীষণা মূর্তি তাকে সংকুচিত করে রেখেছিল। কিন্তু সে এগিয়ে যাওয়ার আগেই ছুটে এল মা। রোগা শরীরটা ক্ষিপ্তভঙ্গীতে আছড়ে পড়ল মেয়ের ওপর। একহাতে চুলের ঝুঁটি ধরে টানতে টানতে সবার সামনে দিয়ে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল মা তাকে। মাটিতে শুয়ে থাকা এক ভাই এক বোন চটপট উঠে বসে দেখল দিদি সমানে মার খেয়ে যাচ্ছে। মায়ের গলা যেন চিরে যাচ্ছে উত্তেজনায়, ‘বল, সত্যি কথা বল, রোজ দাঁত মাজতে যাস তোর ভাতারের সঙ্গে দেখা করতে? পিরীত? তোর দড়ি জোটে না! মানুষটা গলায় রক্ত তুলে খাটছে আর তুমি ফুর্তি করছ। কত বড় বংশের মেয়ে তুমি তা জানো? ওই কাগজওয়ালা ছোঁড়াটার কথা ন্যাড়া বলেছিল কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি। তোকে আমি পেটে ধরেছিলাম কি জন্যে? বল, সত্যি কথা বল!’
যুবতী চুপচাপ মার খাচ্ছিল। যুবতীর মা উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত দম হারিয়ে মাটিতে বসে পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলে দরজায় একটা মূর্তি এসে দাঁড়াল, ‘অ বউমা, ওকে মের না।’
যুবতী কাঁদছিল না। পাথরের মত দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। মোক্ষদা বুড়ি আবার বলল, ‘মাথা গরম করো না বউমা।’
যুবতীর মা এবার মুখ তুলল, ‘না, মাথায় বরফ দেব!’
মোক্ষদা বুড়ি বলল, ‘ছেলেটা তো খারাপ না। আমায় চা খাওয়ালো!’
সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠল যুবতীর মা, ‘বেরিয়ে যান, চলে যান সামনে থেকে। এত খেয়েও, নোলা যায় না! ঘটকি হতে এয়েছে। বেরিয়ে যান সামনে থেকে!’
মোক্ষদা বুড়ি বলল, ‘ওমা, ভাল কথা বলতে এলাম উল্টে চোখ রাঙাচ্ছে! এটা তোর বাপের জায়গা যে বেরিয়ে যেতে বলছিস? ঘটকিগিরি, বেশ করেছি ঘটকিগিরি করে। মেয়ের শরীর ভারী হচ্ছে, সে তো পিরীত করবেই। ট্যাঁক তো ফাঁকা, কে তোর মেয়েকে বিয়ে করতে আসবে।’ কথাগুলো বলতে বলতে বুড়ি সরে গেল দরজা থেকে। থর থর করে কাঁপছিল যুবতীর মা। তার বন্ধ চোখ থেকে জল গড়িয়ে আসছিল। মাটিতে বসা একটা সরু গলা চিৎকার করে উঠল, ‘দিদি মা পড়ে যাচ্ছে।’
যুবতী সঙ্গে সঙ্গে সম্বিত ফিরে পেয়ে দৌড়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। তার বুকের মধ্যে মায়ের ছোট্ট শরীরটা থরথরিয়ে কাঁপছিল। যুবতী ব্যাকুল গলায় ডাকল, ‘মা, মাগো!’
যুবতীর মা একটু একটু করে চোখ মেলে মেয়েকে দেখল। যুবতী দুহাতে তাকে জড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ মেয়ের বুকে মুখ রেখে হু হু করে কেঁদে উঠল মা। কিন্তু তারপরেই যুবতী অনুভব করল মায়ের শরীর শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে চিৎকার করে উঠল সে। তারপর মাটিতে শুইয়ে দিয়ে এক ছুটে বাইরে বেরিয়ে এল। যে ভিড়টা একটু আগে জমেছিল তা এখন গলে গেছে। কি করবে ভেবে না পেয়ে সে সামনের বন্ধ দরজায় আঘাত করল।
কাপড় পাল্টানো হয়ে গিয়েছিল। বদ্ধ ঘরটায় একটা বাসী গন্ধ চাপ হয়ে রয়েছে। দেওয়ালে টাঙানো চৌকো আয়নায় এখন তার সিঁথি। একটু একটু করে চুল পাতলা হয়ে চওড়া হচ্ছে সিঁথিটা। ছোট্ট কপালটাও বেশ বড় হতে চলল। একফোঁটা সিঁদুর সিঁথিতে বোলানো মাত্রই দরজায় শব্দ হল। মাধবীলতা ভ্রু কুঁচকে দরজাটাকে দেখল। তারপর ঘরে চোখ রাখল। কিন্তু এবার শব্দের সঙ্গে ব্যাকুল গলা, ‘ও বউদি, বউদি।’
দরজা খুলতেই মাধবীলতা দেখতে পেল ওপাশের ঘরের একটি মেয়ে কান্না কান্না মুখে দাঁড়িয়ে। দেখা মাত্রই বলল, ‘বউদি, একটু আসুন, মা কেমন করছে!’
‘কেন কি হয়েছে?’ মাধবীলতা অবাক হল।
‘জানি না, চিৎকার করতে করতে কেমন নেতিয়ে পড়ল।’
মাধবীলতা আড়চোখে প্রায়ান্ধকার ঘরের দিকে তাকিয়ে চটপট বেরিয়ে এল। যুবতীর নাম অনু। অনুপমা। কিন্তু ওর চেহারায় এমন একটা ভোঁতা উগ্রতা আছে যা সে পছন্দ করে না।
ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে মাধবীলতা দেখল অনুপমার মা মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। ঠোঁট বন্ধ, হাত ছড়ানো, মুঠো খোলা। দ্রুতপায়ে কাছে এসে বুকে হাত রাখল, নাকের তলায় আঙুল দিয়ে দেখল নিঃশ্বাস পড়ছে। প্রথমেই তার মনে হল স্মেলিং সল্ট দরকার। তারপরেই চিন্তাটাকে বাতিল করে বলল, ‘জল নিয়ে এস, আর একটা পাখা।’
অনুপমা দ্রুত জিনিসগুলো কাছে আনতে মাধবীলতা মুখে জল দিয়ে বাতাস করল কিছুক্ষণ। তারপরে ঠিক সাহস না পেয়ে বলল, ‘আমার ভাল লাগছে না, তুমি মোড়ের ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনতে পারবে?
হুকুম পাওয়া মাত্র অনুপমা ছুটল। এর মধ্যেই চিৎকার চেঁচামেচিতে দরজায় বেশ ভিড় জমে গেছে। বাচ্চা দুটো তখনও বিছানার ওপর পাথরের মত বসে তাদের মাকে দেখছিল। এই ঘরে জানলা বলতে যেটুকু ফাঁক তাতে হাওয়া ঢোকে না। একখানা তক্তাপোশও নেই, চারদিকে হাঁ-করা অভাব। মাধবীলতা বলল, ‘আপনারা একটু সরে দাঁড়ান ভাই, হাওয়া আসতে দিন।’
মেয়েরা একটু নড়ল কিন্তু সরল না। ওরা সবাই অনুপমার মাকে ছেড়ে এখন মাধবীলতাকে দেখছে। এই বস্তিতে অনেক বছর হয়ে গেল কিন্তু ওকে সবাই মাস্টারনি ছাড়া অন্য পরিচয়ে জানে না। বড়ঘরের মেয়ে, একটু বেশী দেমাক, কারো ঘরে যায় না, প্রয়োজন ছাড়া এ বস্তির কারো সঙ্গে কথা বলে না। কৌতূহল যেমন আছে তেমনি একটু ঈর্ষাও আছে ওর সম্পর্কে। সেই মাস্টারনি আজ অনুর মাকে হাওয়া করছে—এ দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে পারছে না ওরা। এই সময় মোক্ষবুড়ির গলা শোনা গেল, ‘কি হয়েছে, একটু সর না লা, দেখি কি হল?’
ছিয়ানব্বই বছরের বুড়িকে জায়গা দিতে হয় না, সে নিজেই করে নেয়। একে সরিয়ে ওর ফাঁক গলে দরজায় এল বুড়ি, ‘অ বউমা!’ মধ্যবয়স্কা একজন বলল, ‘অনুর মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে!’
‘সেকি! কি করে হল?’ মোক্ষদা বুড়ি চমকে উঠল।
আর একজন ফোড়ন দিল, ‘আজ ঝগড়া করেছিলে খেয়াল নেই?’
‘আমি করেছিলুম না ও করেছিল?’ হাতড়ে হাতড়ে বুড়ি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তারপর অনুর মায়ের শরীর ঠাওর পেয়ে মুখে গলায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘দাঁতকপাটি লেগে গেছে। মৃগী। কে বসে এখানে?’
মাধবীলতা বৃদ্ধার দিকে অপলক তাকিয়েছিল। দিন রাতে একে ঝগড়াটি ছাড়া অন্য ভূমিকায় সে দ্যাখেনি। কিন্তু অনুর মায়ের গালে কপালে হাত বুলিয়ে দেওয়ার সময় একদম অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছিল তার।
সে নিচু গলায় জবাব দিল, ‘আমি সামনের ঘরে থাকি।’
‘আঃ, নাম নেই নাকি লা? দাঁড়াও, দাঁড়াও, গলার স্বরটা কেমন ঠেকল! অ! তুমি সেই মাস্টারনি না? তা তুমি এখানে কি করে এলে? শুনেছি তোমার নাকি ভারি দেমাক, মাটিতে পা পড়ে না! তোমার ছেলে বাপু ঠিক উল্টো!’
মাধবীলতা বলল, ‘আমার কথা থাক।’
এই সময় বাইরে বেশ গুঞ্জন উঠল। অনুপমা ভিড় সরিয়ে ডাক্তারকে ঘরে নিয়ে এল। সাত সকালে লুঙ্গির ওপর পাঞ্জাবি পরে চলে এসেছেন ভদ্রলোক। নাড়ি দেখে, বুকের শব্দ মেপে, চোখের পাতা টেনে মাথা নাড়লেন ডাক্তার, ‘প্রায়ই ফিট হয়?’
প্রশ্নটা মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে। মাধবীলতা অনুপমাকে দেখল। অনুপমা ঘাড় নেড়ে না বলল। মাধবীলতা জবাব দিল, ‘না। আজকে এক্সসাইটমেন্ট থেকে এরকম হয়েছে।’
ডাক্তার বললেন, ‘ভাল বুঝছি না। একে এখনই হাসপাতালে নিয়ে যান।’
সঙ্গে সঙ্গে একটা চাপা আর্তনাদ বের হল অনুপমার মুখ থেকে। আর তখনই ভিড় ঠেলে ন্যাড়া এসে দাঁড়াল দরজায়, ‘কি হয়েছে?’
অনুপমা চিৎকার করে উঠল, ‘মা অজ্ঞান হয়ে গেছে। ডাক্তার বলছে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’
ন্যাড়া বলল, ‘বাপ শালা টাকা দিল না। বলল হাত খালি।’ তারপরে দৌড়ে চলে গেল চোখের সামনে থেকে।
ডাক্তারবাবু বললেন, ‘আমার টাকাটা!’
মাধবীলতা অনুর দিকে তাকাল। অনু বলল, ‘টাকা নেই। বাবা বাজারের টাকা পর্যন্ত দিয়ে যায়নি।’
ডাক্তারবাবু বোধ হয় এর মধ্যেই মাধবীলতাকে চিনতে পেরেছিলেন। তার দিকে তাকিয়ে বেজার মুখে বললেন, ‘প্রথম কল তো শুধু-হাতে হয় না।’
মাধবীলতা ঠোঁট কামড়াল। তারপর বলল, ‘এদের অবস্থা তো দেখতে পাচ্ছেন। আপনি এখন যান, পরে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’
‘আজকের মধ্যেই টাকাটা পাঠিয়ে দেবেন। এই জন্যেই ভোরবেলায় বস্তিতে আসি না।’ গজর গজর করতে করতে ডাক্তার চলে গেলেন। একটু পরেই বস্তির চার-পাঁচটি ছেলে এসে অনুর মাকে তুলে নিয়ে গেল বাইরে। মাধবীলতা দেখল একটা প্রাইভেট কার-এ করে অনুর মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল ওরা। অনুপমাও সঙ্গে গিয়েছে। বিস্মিত গলায় পাশে দাঁড়ানো একটা মেয়েকে মাধবীলতা জিজ্ঞেস করল, ‘গাড়িটা কার?’
মেয়েটি ঠোঁট ওল্টালো, ‘জানি না। বিনু গাড়িটাকে ধুতে এনেছিল। বিনুর বাবুর গাড়ি বোধ হয়।’
মাধবীলতার খেয়াল হল ঈশ্বরপুকুর লেনের তিন নম্বরের সামনে রোজ অনেক প্রাইভেট কার এবং ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকে। তিন নম্বরের অনেকেই ড্রাইভিং জানে।
ঘরে ফিরতে ফিরতে সে দেখল অনুদের দরজা হাট করে খোলা। বাচ্চা দুটো এখন গলির মুখে। কি মনে করে দরজাটা বন্ধ করে দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। মোক্ষবুড়ি পাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে হাতের ওপর মাথা রেখে। বুড়ির শুকনো গালের চামড়া ভিজিয়ে জল পড়েছে মাটিতে। ওর পায়ের শব্দ পেয়ে সেই অবস্থায় জিজ্ঞেস করল বুড়ি, ‘কে এল?’
‘আমি, মাধবীলতা।’
‘অ, মাস্টারনি! শোন, অনুর মা আর ফিরবে না।’
চমকে উঠল মাধবীলতা। অদ্ভুত সিরসিরে, মধ্যাহ্নের তপ্ত হাওয়ার মত শোনাচ্ছে বুড়ির গলা। সে রেগে গিয়ে বলল, ‘ছিঃ, একি বলছেন।’
‘ঠিক বলছি লা। এটাকেও আমি খেলাম। এত নোলা আমায় কেন দিলে ভগবান! এত খেয়েও কেন পেট ভরে না!’ পাথরের শায়িত মূর্তির মুখ থেকে যেন ছিটকে আসছিল শব্দগুলো। দ্রুত নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল মাধবীলতা। শব্দ করে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে লাগল দাঁড়িয়ে। বালিসে হেলান দিয়ে আধা-বসা অনিমেষ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে তোমার?’
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো মাধবীলতা। কানের ভেতর শব্দের গরম হলকা রয়ে গেছে এখনও। ঠিক যেন মৃত্যু টেনে টেনে তোলা, গভীর কুয়োয় ডোবা বালতির মতন। একটা বড় নিঃশ্বাস বুক উজাড় করে দিল সে। তারপর মাথা নাড়ল, ‘সামনের ঘরের বউটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।’
‘কেন?’
‘ঝগড়া করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।’ তারপর দ্রুত আয়নার সামনে এসে চুলে চিরুনি বুলিয়ে নিল।
অনিমেষ বলল, ‘বেঁচে যাবে তো?’
মাধবীলতা আলনা থেকে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘জানি না। এসব আমি আর সহ্য করতে পারি না। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। রোজ রোজ লেট হলে আর চাকরি থাকবে না। তোমার চা করে দিতে পারছি না। খোকাকে বল, নিমুর দোকান থেকে যেন এনে দেয়।’
‘তুমিও তো খেলে না!’
‘স্কুলে গিয়ে খাব। নবাবটাকে ডেকে তোল। এত বড় ছেলের ঘুমুবার সময় কোন হুঁস থাকে না। আমি চললাম।’ দরজা ভেজিয়ে দিয়ে মাধবীলতা বেরিয়ে গেল।
অনিমেষ বন্ধ দরজাটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর ধীরে নিজের পা দুটো প্রসারিত করার চেষ্টা করল। ডান পা কোনদিনই সোজা হবে না। শুকিয়ে লিকলিকে হয়ে গেছে সেটা। অনেক চেষ্টার পর বাঁ পায়ে সামান্য জোর এসেছে। বাঁ পা-টাকে আস্তে আস্তে ভাঁজ করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু অর্ধেক আসার পরই চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হল। নিঃশ্বাস ফেলল অনিমেষ। এখন এটাকে বেশী নাড়াচাড়া করতে ভয় লাগে।
বিছানার পাশে রাখা ক্ৰাচটাকে টেনে নিল সে। ডান বগলের নিচে সেটাকে রেখে শরীর বেঁকিয়ে খাট থেকে ধীরে ধীরে নামল। কাল রাত্রে বেশ গরম গিয়েছে। ঘামে গেঞ্জি চিটচিট করছে। পরনের খুলে আসা লুঙ্গির গিঁটটাকে শক্ত করল সে। তারপর একটু একটু করে উঠে দাঁড়াল। সারাদিনের প্রথমবার এই ওঠা বড় কষ্টকর। কিছুক্ষণ সময় লাগে সামলে নিতে। তবু ভাগ্য বলতে হবে, একেবারে নুলো হয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। মাধবীলতা যখন তাকে জেল থেকে এনেছিল তখন তো এটুকু শক্তিও ছিল না। মানুষের কোলে চেপে আসতে হয়েছে তাকে।
ঠুক ঠুক করে বাইরে এল অনিমেষ। এখনও রোদ ওঠেনি। আকাশে বেশ মেঘ আছে। অনিমেষ মনে করতে পারল না মাধবীলতা ছাতা নিয়ে গিয়েছে কিনা। সামনের ঘরের দরজা বন্ধ। এই বস্তির অধিকাংশ মানুষের সঙ্গে মাধবীলতার আলাপ নেই কিন্তু খোকার আছে। সে রয়েছে মাঝখানে, যেচে কেউ কথা বললে সে উত্তর দেয়। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা এখানে শান্তি থাকে, শব্দ বাজে না। এখানে পড়ে থাকা ছাড়া অনিমেষের কোন উপায় নেই। স্কুলের চাকরিতে মাইনে ঠিকমতন পাওয়া যায় না। তার ওপর ডাক্তার দেখাতে দেখাতে প্রচুর ধারের বোঝা চেপেছে মাথায়। অনিমেষের মনে হয় সে বোঝা এ-জীবনে নামবে না।
টিউবওয়েলের সামনে এখন বিরাট লাইন। অনর্গল চেঁচামেচি হচ্ছে। মুখ ধোয়া দরকার কিন্তু সুযোগ পাবে বলে মনে হচ্ছে না। ওপাশে একটা গঙ্গাজলের কল আছে। সি এম ডি এ থেকে পাকা পায়খানা করে দিয়ে গেছে তার পাশে। কয়েক পা এগিয়ে অনিমেষ দেখল সেখানেও বেশ ভিড়। হয় খুব ভোরে নয় বেশ বেলায় এসব চেষ্টা না করলে বিপদে পড়তে হয়।
‘জল দরকার?’
অনিমেষ দেখল অবিনাশ হাতে বালতি নিয়ে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সামনের উনুনের কারখানাটা অবিনাশের। ঘর থেকে বেরিয়ে ওইখানে রোজ সে কিছুক্ষণ বসে। ঘাড় নাড়ল অনিমেষ, ‘হ্যাঁ, মুখ, ধোব।’
‘নিয়ে নিন। বাঁ হাতের মগটা বালতিতে ডুবিয়ে অবিনাশ বাড়িয়ে ধরল। তাড়াতাড়ি তাই দিয়ে মুখ ধুয়ে অনিমেষ বলল, ‘বাঁচালেন।’
‘কে কাকে বাঁচায়।’ অবিনাশ কারখানার দিকে চলে গেল।
অনিমেষ ঘরে ফিরে এসে খাটের ওপর বসল কিছুক্ষণ। এইবার ছেলেটার ঘুম ভাঙানো দরকার। ঘরের একপাশে মাদুরের ওপর চিৎ হয়ে পড়ে আছে ছেলেটা। মাধবীলতা ঠিকই বলেছে, শোওয়া বড্ড খারাপ। অনিমেষ ডাকল, ‘খোকা, খোকা ওঠ।’
ওপাশ থেকে কোন সাড়া এল না। অনিমেষ মাটিতে বসে দুহাতে ভর দিয়ে ছেলের কাছে এগিয়ে গিয়ে গায়ে হাত রেখে বলল, ‘এই খোকা, এবার ওঠ। বেলা হয়ে গেছে!’
পনের বছরের মুখটা বিরক্তিতে ভাঙচুর হল। উপুড় হয়ে শুতে শুতে বলল, ‘ফোট তো, ন্যাকড়াবাজি করো না।’