০১. কবি রুস্তম আলী দেওয়ানের ছদ্মনাম রু আদে

কবি রুস্তম আলী দেওয়ানের ছদ্মনাম রু আদে। নিজ নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে ছদ্মনাম। রুস্তমের রু, আলীর আ এবং দেওয়ানের দে–রু আদে। তার একমাত্র প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম রু আদের সাইকেল। কাব্যগ্রন্থে চল্লিশটি কবিতা আছে। প্রথম কবিতার নাম পিঁপড়া।

পিঁপড়া

আমার গ্লাস বেয়ে একটা পিঁপড়া উঠছে।
তার মাথা কালো
শরীরের বর্ণ মধুলাল।
এখন সকাল।
গ্লাসে ফ্রিজের পানি
শূন্যের কাছাকাছি তাপ
তৃষায় কাতর পিঁপড়া পানি খুঁজে পাবে কি না
মনে সেই চাপ…

দ্বিতীয় কবিতা মশা। তৃতীয়টি ফড়িং। কবির সব কবিতাই কীটপতঙ্গ নিয়ে। সর্বশেষ কবিতাটির নাম অন্ধ উইপোকা।

রুস্তমের দুলাভাই আমিন সাহেব এই বই তাঁর এক বন্ধুর প্রেস থেকে ছেপে দিয়েছেন। প্রচ্ছদ এঁকেছে প্রেসের এক কর্মচারী। বইয়ে প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম নেই। প্রচ্ছদে উল্টো করে রাখা একটা সাইকেল। সাইকেলের চাকা আকাশের দিকে। একটি চাকায় নীল রঙের পাখি বসে আছে। ঠিক কী পাখি, তা বোঝার উপায় নেই। ঘুঘু হতে পারে, আবার কবুতরও হতে পারে। পাখিটা আহত। তার ডানা ভাঙা। ভাঙা ডানায় গাঢ় লাল রঙের রক্তের আভাস। কয়েক ফোটা রক্ত সাইকেলের স্পাইকের ওপরও পড়েছে। সাইকেলের চাকার পাশে এক কাপ চা। চা থেকে গরম ধুঁয়া উড়ছে।

কবি সাহেবের বয়স চল্লিশ। সরলরেখার মতো কৃশকায়। কৃশকায় লোক সাধারণত লম্বা হয়। রুস্তম আলী বেঁটে। সে কবি নজরুল স্টাইলে মাথায় বাবরি রেখেছিল। মাথার তালুতে ফাংগাসের প্রবল আক্রমণে তাকে মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছে। মাথা কামানোয় তার চেহারায় আলাভোলা ভাব চলে এসেছে। তার চোখ বড় বড়। চোখের মণি ঘন কালো। চোখের পল্লব মেয়েদের চোখের পল্লবের মতো দীর্ঘ বলে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে।

কবি রুস্তম ধানমণ্ডির একটি দোতলা বাড়িতে থাকেন। বাড়ি লেকের পাশে, নাম আসমা ভিলা। বাড়িটা তিনি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। রুস্তমের বাবা সাজ্জাদ আলী দুনম্বরি ব্যবসায় বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ব্যবসায়ী মহলে তার নাম ছিল বজ্জাত আলী। বর্তমানে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে স্ত্রী হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন জেল খাটছেন। ছয় বছর খাটা হয়েছে। আর আট বছরের মাথায় মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা। জেলের যাবজ্জীবন চৌদ্দপনেরো বছরে শেষ হয়।

তার স্ত্রীর নাম আসমা। আসমা রুস্তম আলীর মা। আসমার নামেই ধানমণ্ডির বাড়ির নাম আসমা ভিলা। শেতপাথরে খোদাই করে লেখা বাড়ির নাম বেশিদিন থাকে না। কালো রঙ উঠে যায়। আসমা ভিলার সব আকার চিহ্ন উঠে গেছে। এখন বাড়ির নাম অসম ভিল।

স্ত্রী হত্যার দায় থেকে সাজ্জাদ আলী বেকসুর খালাস পেতে যাচ্ছিলেন। চাক্ষুষ কোনো সাক্ষী নেই। হঠাৎ কোখেকে তার কাজের মেয়ে সালমার মা উদয় হয়ে আদালতকে জানাল, সে এবং তার মেয়ে সালমা দুজনই বেগম সাহেবকে খুন হতে দেখেছে।

স্ত্রী হত্যা মামলার শেষ পর্যায়ে সাজ্জাদ আলী হতাশ গলায় জজ সাহেবকে বলেছেন, স্যার, আমার স্ত্রী আসমা ছিল তিন মণি মুটকি। আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন। আমার ওজন চল্লিশ পাউন্ড। আমার পক্ষে কি সম্ভব ওই মুটকিটাকে গলা টিপে মারা? মুটকি একটা লাথি দিলেই তো আমি শেষ। তারপরেও ধরলাম মেরেছি। মুটকিটাকে ফ্যানের সঙ্গে দড়িতে ঝুলাব কী করে? তাকে ঝুলাতে কপিকল লাগবে। মুটকি সুইসাইড করেছে, এটা কেন বোঝেন না? আপনারা জ্ঞানী-গুণী মানুষ।

কোর্টে হাসির ধুম পড়ল। জজ সাহেব নিজেও হাড্ডিসর্বস্ব সাজ্জাদ আলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে দিলেন।

জেলে সাজ্জাদ আলী খুব যে কষ্টে আছেন, তা না। জেলের মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি ভালোমতোই যুক্ত। বাংলা মদ, স্কচ হুইস্কি, ফেনসিডিল সবই তিনি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জোগাড় করে দিতে পারেন। তার গা, হাত-পা টেপার জন্য দুজন কয়েদি আছে। রাতে একজন গা টিপে, অন্যজন তালপাখায় বাতাস করে ঘুম পাড়ায়। গরম বেশি পড়লে তিনি জেলের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। সেখানে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে।

বৎসরে ছটা চিঠি পাঠানোর অনুমতি সাজ্জাদ আলীর আছে। তিনি তার ছেলে রুস্তমের নামে ছয়টা চিঠি পাঠান। সব চিঠির বিষয়বস্তু এবং ভাষা একই। একটা চিঠির নমুনা—

৭৮৬

বাবা রুস্তম আলী
দোয়াগো,

তোমার ওপর আমার বিরক্তির সীমা নাই। তোমাকে বলেছি সালমার মাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবে। এই বদ মাগীর সাক্ষীর কারণে আমি আজ জেলখানায়। সে নাকি নিজের চোখে দেখেছে আমি তোমার মাকে খুন করেছি। এই শুয়োরনিকে দিয়ে সত্য কথা বলায়ে মামলা পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা। করবে। এটা আমার আদেশ। এই আদেশের যেন অন্যথা না হয়।

ইতি তোমার হতভাগ্য পিতা
এস. আলী B.Sc. (Hons)

পুনশ্চ-১ : ধানমণ্ডির বাড়ি বিক্রির জন্য অনেক দালাল তোমাকে ধরবে। তাদের কথায় কর্ণপাত করবে না। জেলখানা থেকে ফিরে এসে যা করার আমি কক্ষ।

পুনশ্চ-২: আমার ব্যবসার পার্টনার গোলাম মওলার কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবে। তার অবস্থান ইবলিশ শয়তানের তিন ধাপ নিচে।

পুনশ্চ-৩: তোমার মাথা কিঞ্চিৎ আউলা অবস্থায় আছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। অবহেলা করবে না। অবহেলা করলে দেখা যাবে একটা পর্যায়ে তুমি গায়ের সব কাপড় বিসর্জন দিয়ে ফার্মগেটের মোড়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতেছ।

রুস্তম আলী বাবার চিঠির উত্তর দেয় না। সালমার মাকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে তার মধ্যে কোনোরকম আগ্রহ দেখা যায় না। বর্তমানে সে একটি সুররিয়েলিস্টিক উপন্যাস লেখার চিন্তায় ব্যস্ত আছে। উপন্যাসের নায়ক মৃত। কিন্তু সে তা জানে না। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে বাস করে। তার ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যায়। পিজাহাটে নিয়ে যায়। ছেলে পিজা খায়, সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। নিজে কিছু খায় না। কারণ সে ক্ষুধা-তৃষ্ণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। নায়ক হিন্দু, নাম শলারাম। শলারাম শব্দটা উল্টালে হয় মরা লাশ।

অতি জটিল উপন্যাস বলেই চিন্তাভাবনাতেই রুস্তম আলীর অনেক সময় কাটছে।

উপন্যাসের নানান খুঁটিনাটি যখনই তার মাথায় আসছে, সে লিখে রাখছে। যেমন, মৃত্যুর এক মাস পরও মানুষের মাথার চুল এবং নখ বাড়ে। বন্ধ হৃৎপিণ্ড হঠাৎ চালু হয়ে কিছু রক্ত সঞ্চালন করে।

 

রুস্তমের বাড়িভর্তি লোকজন। বেশিরভাগ লোকজনকেই সে চেনে না। একজনের নাম চণ্ডিবাবু। তিনি একতলার সর্বদক্ষিণে থাকেন। দুপুরের পর থেকে বারান্দায় খালি গায়ে বসে থাকেন। তার পরনে থাকে লুঙ্গি। প্রায়ই এই লুঙ্গি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে থাকে বলে বারান্দার দক্ষিণে কেউ তাকায় না।

ড্রাইভার সুরুজকে রুস্তম চেনে। ড্রাইভার সুরুজের সঙ্গে আরেকজন ফিটফাট বাবু থাকে, তাকে সে চেনে না। এই ফিটবাবু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চোখে সানগ্লাস পরে থাকে। ইন করে শার্ট পরে। গলায় লাল রঙের টাই। তার ব্যবহার অত্যন্ত দ্র। যত বারই রুস্তম বের হয়, সে ছুটে এসে গেট খুলে দেয় এবং বিনীত গলায় বলে, স্যার ভালো আছেন? রাতে ঘুম কি ভালো হয়েছে? কোথায় যাচ্ছেন স্যার? গাড়ি বের করতে বলব?

রুস্তম কখনো গাড়ি বের করতে বলে না। তার ক্লস্টোফোবিয়া আছে। গাড়ির দরজা বন্ধ করা মাত্র ভীষণ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এই গাড়ি নিউমার্কেট থেকে কাঁচাবাজার করার কাজে ব্যবহার হয়।

ইঞ্জিন যেন বসে না যায়, এই জন্য ড্রাইভার সুরুজ সপ্তাহে তিন দিন গ্যারাজে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তখন গাড়ির পেছনের সিটে ফিটবাবু গম্ভীর মুখে বসে থাকে। তাকে দেখে মনে হয় সে দাওয়াত খেতে যাচ্ছে।

রান্নাঘরের বাবুর্চি মরিয়মকে রুস্তম চেনে। মরিয়মের সঙ্গে ইদানীং অল্পবয়স্ক সুশ্রী চেহারার এক মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। সে সবসময় সেজেগুজে থাকে এবং বিরহী ভঙ্গিতে ঘুরঘুর করে। প্রতিদিন বিকেলে ছাদে যায়। ছাদে সে গুনগুন করে গান করে। হিন্দি সিরিয়ালের কোনো গান। গানের মাঝখানে হো…হো…হো… শব্দ আছে।

রাত দশটার দিকে সে রুস্তম আলীর ঘরে ঢুকে। তার পরনে থাকে রাতের পাতলা পোশাক। সেই পোশাক এমনই যে তাকালে গা ঝিমঝিম করে। সে রুস্তমের দিকে তাকিয়ে খানিকটা নাকি গলায় বলে, স্যার, কিছু লাগবে?

রুস্তম তখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, না না, কিছু লাগবে না। থ্যাংক ইউ। বিরহিণী তার পরেও দরজা ধরে উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে। উদাসী এই মেয়ের নাম মুনিয়া। এই নাম কবি রুস্তমের প্রায়ই মনে থাকে না। পাখির নামে মেয়ের নাম, এটুকু শুধু মনে থাকে। কী পাখি সেটা আর মনে আসে না। অদ্ভুত অদ্ভুত পাখির নাম মনে আসে, যেসব পাখির নামে মেয়েদের নাম রাখা হয় না।

যেমন—

ধনেশ পাখি

হরিয়াল

ঘুঘু

লেজবোলা কাকাতুয়া

চিল

সারস

বক

মেয়েটা মনে হয় ড্রাইভারের কোনো আত্মীয় কিংবা ড্রাইভারের সঙ্গে যে ফিটবাবু থাকে তার আত্মীয়। ড্রাইভারকে এবং ফিটবাবুকে মেয়েটা ডাকে ছোটকাকু। রুস্তম প্রায়ই ভাবে, মেয়েটার বিষয়ে খোঁজ নেবে। খোঁজ নেওয়া হয় না।

দোতলায় রুস্তমের আর্ট টিচার সাদেক হোসেন মিয়ার জন্য একটা ঘর আছে। সাদেক হোসেন মিয়া চারুকলা থেকে পাঁচ বছর আগে পাস করেছেন। অনেক চেষ্টা এবং সাধনায় তিনি তার চেহারা উলুমুসের মতো করেছেন। মুখভর্তি দাড়ি। মাথা এবং ভুরু সুন্দর করে কামানো। ডান কানে তিনি দুল পরেন। এই দুলের ডিজাইন তার নিজের। একটা আস্ত পাকা সুপারি রুপার রিংয়ে ঝুলতে থাকে। তার ডিজাইন করা এই দুল এখন অনেক জায়গায় পাওয়া যায়।

ফ্রান্সে যাওয়ার নানান ধান্ধায় সাদেক হোসেন মিয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তেমন কিছু হচ্ছে না।

সাদেক হোসেন তার ছাত্রকে বলেছেন, আপনার ভেতর জিনিস নাই। জিনিস থাকলে টুথপেস্টের মতো টিপে বের করে ফেলতাম। যাই হোক, আপনার প্রধান কাজ হবে ক্যানভাসে ব্রাশ দিয়ে রঙ ঘষা। রঙ ঘষতে ঘষতে হাত ফ্রি হবে, তখন আমি চেষ্টা নিব।

রুস্তম আলী ক্যানভাসে নিয়মিত রঙ ঘষে যাচ্ছেন। তার শিক্ষক সস্তা সিগারেট ফুঁকে সময় পার করছেন। ভদ্রলোকের থাকা-খাওয়া ফ্রি। মাস শেষে বেতন পাঁচ হাজার টাকা। তিনি বেতনের টাকাটা অতি অনাগ্রহের সঙ্গে হাতে নেন। সেদিনই ছাত্রের ছবি আঁকা বিষয়ে কিছু খোঁজখবর নেন। কিছু কথাবার্তাও হয়।

রঙ ঘষা চলছে?

চলছে।

কত নম্বর ব্রাশ ব্যবহার করছেন?

ছয়।

সিঙ্গেল রঙ ব্যবহার করছেন তো?

জি।

গুড। এখন শুরু করুন দুটা রঙ ঘষা। ক্যানভাসের এক কোনায় দিবেন কোবাল্ট ব্ল, অন্য কোনায় লেমন ইয়েলো। ডায়াগোনালি রঙ দেওয়া শুরু করবেন। মিডপয়েন্টে দুটা রঙের সাক্ষাৎ হবে। ব্লু এবং ইয়েলো মিলে হবে সবুজ। সবুজের একটা আড়াআড়ি লাইন হবে। লাইন ইউনিফর্ম সবুজ হবে না। গাঢ় সবুজ, হালকা সবুজ এইসব হবে। সেখানেই মজা। বুঝতে পারছেন তো?

হুঁ।

আঁকা কমপ্লিট হলে মাঝখানে লাল রঙ দিয়ে একটা ঘষা দিবেন। লাল রঙ সবুজ রঙে প্রাণ নিয়ে আসে। আজ থেকে শুরু করে দিন।

আচ্ছা শুরু করব। আপনার ফ্রান্সে যাওয়ার কী হলো?

এখনো কিছু হয় নাই, চেষ্টা চলছে। মনে হচ্ছে ইতালি দিয়ে ঢুকতে হবে। অসুবিধা নাই, খসরু ইতালিতে আছে।

খসরু কে?

আমার বোসম ফ্রেন্ড। একসঙ্গে পাস করেছি। ওয়াটার কালারে গোল্ড মেডেল পেয়েছিল। এখন ইতালির এক জুতার দোকানে কাজ করে।

ও আচ্ছা।

স্প্যানিশ এক মেয়ের সঙ্গে লিভ টুগেদার করে। ওই মেয়েও একই জুতার দোকানে কাজ করে। মেয়ের নাম এলিজা।

ভালো তো।

আফসোস, লিভ টুগেদার বাংলাদেশে এখনো চালু হয় নাই। বিবাহ মানে বন্ধন। বন্ধনের ভেতর থেকে কোনো ক্রিয়েটিভ কাজ হয় না। আপনার লাইফ স্টাইল আমার পছন্দ। বন্ধনমুক্ত লাইফ। ছবি আঁকায় আপনার কিছু হবে না, অন্য কোনো লাইনে হতেও পারে। তবে কবিতায় হবে না। আমাকে যে কবিতার বই দিয়েছেন, সাইকেল না মোটরসাইকেল কী যেন নাম, ওইটা পড়ে দেখেছি। আবর্জনা হয়েছে, কবিতা হয়নি। আমার কথা শুনে আপনি আবার মন খারাপ করবেন না। আর্টিস্ট মানুষ তো পেটে কথা চেপে রাখতে পারি না। নো অফেন্স প্লিজ।

ঠিক আছে। ঠিক আছে।

লেজ ভেতরে থাকলে যথাসময় লেজ গজায়। লেজ না থাকলে লেজ কখনোই গজাবে না। ছবি আঁকার বিদ্যাটা লেজের মতো। ভেতরে থাকতে হবে। তাই বলে ডিসহার্টেড হবেন না। রঙ নষ্ট করতে থাকুন। আপনার তো আর টাকার অভাব নাই। ঠিক বলেছি?

রস্তম আলী হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়াল।

আপনার এখানে একটা মেয়ে ঘুরঘুর করে। আমি একদিন নাম জিজ্ঞাসা করলাম। সে ঠোঁট বঁকিয়ে বলেছে, নাম ভুলে গেছি। আপনি একটা নাম দিয়ে দিন। এসন ফাজিল মেয়ে আমি প্রথম দেখলাম। আপনার আত্মীয়?

না।

ফাজিল মেয়েটার নাম কী?

নাম এখন মনে পড়ছে না। পাখির নামে নাম। ম দিয়ে শুরু।

ময়ূরী নাকি?

না ময়ূরী না।

তাহলে কি ময়না?

না, ময়নাও না, তবে কাছাকাছি।

ময়নার কাছাকাছি নাম আর কি থাকবে? যাই হোক, জিজ্ঞেস করে জেনে আমাকে বলবেন তো। মেয়েটার চেহারায় এবং ফিগারে অন্যরকম ব্যাপার আছে। নুড মডেল হিসেবে অসাধারণ হবে। রাজি হবে বলে মনে হয় না। আপনি আমার হয়ে জিজ্ঞেস করে দেখবেন। ডেইলি এক ঘণ্টা সিটিং দিলেই হবে। পাঁচশ টাকা পার আওয়ার দেব। U.S. ডলারে প্রায় দশ ডলার। খারাপ না।

আচ্ছা বলে দেখব।

থাক, আপনার বলার দরকার নাই। আপনি গুছিয়ে বলতে পারবেন না। মেয়ে অন্য অর্থ করবে। যা বলার আমিই বলব।

আচ্ছা।

 

কবি রুস্তম সপ্তাহে একদিন জিগাতলায় তার বোনের বাসায় যায়। তার একটাই বোন, নাম সামিনা। সামিনা অপ্সরীদের চেয়েও রূপবতী। নয় বছর হলো বিয়ে হয়েছে, এখনো ছেলেমেয়ে হয়নি। সামিনার তা নিয়ে কোনো দুঃখ নেই, বরং আনন্দ আছে। ছেলেমেয়ে মানেই ঝামেলা। সন্তান হলে শরীর নষ্ট হবে। সন্তান পেটে থাকার সময় যে পেট বড় হবে, খালাসের পর সেই পেট কমলেও একটা থলথলে ভাব থেকেই যাবে। নাভি বের করে শাড়ি পরা জন্মের জন্য শেষ। সামিনা অনেক টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে নাভিতে একটা হীরার দুল লাগিয়েছে। সেই দুল যদি শাড়ি দিয়ে ঢেকেই রাখতে হয় তাহলে এত টাকা খরচ করে নাভি ফোটা করার মানে কী?

সামিনার স্বামীর নাম আমিন। বয়স পঞ্চাশ। চুল পেকে গেছে। গাল ভেঙেছে। একটা চোখে ছানি পড়েছে। ছানি পোক্ত হয়নি বলে অপারেশন করা যাচ্ছে না। আমিনের বেশ কিছু চালু ব্যবসা আছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবসা। ট্রাকে করে বাড়িতে বাড়িতে পাঁচ গ্যালনের পানি সাপ্লাই করা হয়। একটা চালু ফার্মেসি আছে। ফার্মেসির নাম শুরুতে ছিল শেফা। শেফা আরবি শব্দ। অর্থ আরোগ্য। এখন নাম ফার্মেসি সামিনা। স্ত্রীর নামে নাম। একটা দেশি জুতার দোকানের মালিকানা তিনি সম্প্রতি কিনেছেন। দোকানের নাম ছিল হংকং শু প্যালেস। এখন নাম সামিনা শু প্যালেস।

আমিন নিতান্তই ভালো মানুষ। রুস্তমকে তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন। রুস্তম শুক্রবার দুপুরে তার এখানে খায় বলে তিনি নিজে বাজার করেন। ফ্রেশ মাছ-মাংস। রুস্তমের পছন্দ টকদই দিয়ে রসমালাই। আমিনের একজন কর্মচারী হাফিজ মিয়া প্রতি শুক্রবার সকালে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার থেকে এক কেজি রসমালাই নিয়ে আসে।

আজ শুক্রবার। ১টার মতো বাজে। আমিন চিন্তিত মুখে বসে আছেন। কারণ কুমিল্লা থেকে রসমালাই এখনো এসে পৌঁছেনি। হাফিজ মিয়ার মোবাইলে টেলিফোন করা হচ্ছে। রিং হয়, কিন্তু সে টেলিফোন ধরে না।

আমিন মন খারাপ করে জুমার নামাজ পড়তে গেলেন। তার মন খারাপের প্রধান কারণ কুমিল্লার রসমালাই, দ্বিতীয় কারণ সামিনা বাসায় নেই। কোথায় গেছে তাও কাউকে বলে যায়নি। রুস্তম খেতে বসে দেখবে তার বোন নেই। বেচারার মনটা নিশ্চয়ই খারাপ হবে।

রুস্তম নিঃশব্দে দুলাভাইয়ের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেল। তার পছন্দের সব আইটেমই ছিল। যেমন–তেলচুপচুপ ইলিশ মাছের ভাজি, কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ, ছোট মাছের টক, টাকি মাছ দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল।

মাষকলাইয়ের ডালের আইটেমটা আমিন নিজের হাতে বেঁধেছেন। আমিন বললেন, সবচেয়ে ভালো আইটেম কোনটা হয়েছে?

রুস্তম বলল, আপনি যেটা বেঁধেছেন সেটা।

আমি কোনটা বেঁধেছি?

মাষকলাইয়ের ডাল।

আমিন বিস্মিত হয়ে বললেন, বুঝলে কী করে?

রুস্তম জবাব দিল না। আমিন রুস্তমের এই বিষয়টা জানেন। রুস্তম কিছু কিছু বিষয় না জেনেই বলতে পারে। তিনি যখন হংকং শু প্যালেস কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সেদিনই রুস্তমকে বললেন, একটা নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি। কেমন হবে বুঝতে পারছি না।

রুস্তম বলল, এই ব্যবসা ভালো হবে।

আমিন বললেন, কী ব্যবসা বলো তো?

জুতার ব্যবসা।

বুঝলে কিভাবে?

মনে হয়েছে।

তুমি তো দিন দিন পীর-ফকিরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছ। তোমার কথাবার্তায় মাঝে মধ্যে এমন অবাক হই।

খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই হাফিজ মিয়া রসমালাই এবং টকদই নিয়ে উপস্থিত হলো। রাস্তায় বাস এক্সিডেন্টের কারণে চার ঘণ্টা রোড ব্লক ছিল বলে দেরি হয়েছে।

আমিন অত্যন্ত আনন্দিত। রসমালাই শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। তিনি রুস্তমের বাটিতে রসমালাই এবং দই দিতে দিতে বললেন, তোমার বুবু থাকলে ভালো হতো। কোথায় যেন গেছে। বলেও যায়নি। মোবাইল টেলিফোন করছি, ধরছে না।

রুস্তম স্বাভাবিক গলায় বলল, বুবু পালিয়ে গেছে। আর ফিরবে না।

আমিন হতভম্ব গলায় বললেন, তুমি কী বললে?

রুস্তম বলল, আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ। বুবুর পছন্দ না। অনেকে থাকে এ রকম। তারা দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

আমার গায়ে দুর্গন্ধ?

আমি পাই না, বুবু পায়। তার নাক অনেক সেনসেটিভ।

তুমি কি এইসব অনুমানে বলছ, নাকি জেনে বলছ?

জেনে বলছি। আমাকে টেলিফোনে সব বলেছে।

সে এখন আছে কোথায়?

রুস্তম হাই তুলতে তুলতে বলল, আপনি যার কাছ থেকে হংকং শু প্যালেস কিনেছেন, বুবু আছে তার সঙ্গে। আফতাব চৌধুরী। দুলাভাই, একটা পান খাব। ঘরে পান আছে?

পান খাবে?

হুঁ।

পান তো থাকার কথা। তোমার বুবু মাঝে মধ্যে পান খেত। দাঁড়াও দেখি।

আমিন পানের সন্ধানে গেলেন না। বসে রইলেন। রুস্তম বলল, আপনার মন কি বেশি খারাপ হয়েছে?

হুঁ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আফতাব চৌধুরীকে খুন করাব। ভাড়াটে খুনি লাগবে।

দোষটা তো বুবুর। খুন করাতে চাইলে বুবুকে খুন করান। আপনার সন্ধানে কি ভাড়াটে খুনি আছে?

না।

আমার সন্ধানে আছে। আপনি চাইলে তাকে আপনার কাছে পাঠাতে পারি।

তোমার সন্ধানে ভাড়াটে খুনি আছে?

বাবার পার্টনার গোলাম মওলা আংকেলের কাছে আছে। উনি মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তাকে ভাড়াটে খুনির কথা বললে উনি ব্যবস্থা করে দেবেন।

আমিন কিছু বললেন না। ঝিম ধরে রইলেন। রুস্তম আবারও বলল, দুলাভাই পান খাব।

আমিন মনে হলো শুনতে পাননি। তিনি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কি তোমার দেখা হয়?

না। সে তো এখন আমার স্ত্রী না। তাকে স্ত্রী বলা উচিত না।

তোমার ছেলে কত বড় হয়েছে তুমি জানো?

না।

তোমার স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছিল। নিউমার্কেটে। তোমার স্ত্রী এমন ভাব করল যেন আমাকে চেনে না। স্ত্রী

জাতিকে কোনো বিশ্বাস নাই। এটা মনে রাখবে।

জি আচ্ছা, মনে রাখব।

খনার বচনে নারী সম্পর্কে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলা হয়েছে। খনা মেয়েমানুষ হয়েও বলে গেছেন।

একটা বলুন শুনি।

এখন মনে পড়ছে না। মনে হলে বলব।

জি আচ্ছা।

তোমার ছেলের চেহারা তোমার মতোই হয়েছে। চোখে চশমা। এই বয়সে চোখ নষ্ট করে বসে আছে।

দুলাভাই, আমার ছেলের প্রসঙ্গটা থাকুক। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, আমি যেন সবসময় আনন্দে থাকি।

চারদিকে নিরানন্দ, এর মধ্যে আনন্দে থাকা সম্ভব? তোমার এই ডাক্তার কিছু জানে না। ডাক্তার বদলাতে হবে।

দুলাভাই! আপনার মন কি বেশি খারাপ?

হ্যাঁ।

সাইকেলে চড়বেন? সাইকেলে চড়লে মন ভালো হবে।

কে বলেছে? তোমার ডাক্তার?

না। এটা আমি বের করেছি। সাইকেলে চড়লে কেন মন ভালো হয় ব্যাখ্যা করব?

ব্যাখ্যা লাগবে না।

বুবু আপনার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখেছে।

কোথায় রেখেছে?

আমার কাছে রেখে গেছে।

কী লিখেছে চিঠিতে?

আমি পড়ি নাই। স্ত্রী চিঠি লিখেছে স্বামীকে, সেই চিঠি পড়া উচিত না।

চিঠি সঙ্গে করে এনেছ?

জি।

আমিন চিঠি পড়লেন। তার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। নিঃশ্বাসেও সামান্য কষ্ট শুরু হলো। চিঠিটা এ রকম—

এই শোনো,

তোমার কাছে লেখা এটা আমার প্রথম চিঠি এবং শেষ চিঠি। যেসব স্বামী-স্ত্রী চব্বিশ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকে তারা চিঠি চালাচালি করে না।

এখন আমি তোমাকে ল্যাং মেরে চলে গেছি, কাজেই দুএকটা চিঠি লেখা যেতে পারে। ল্যাং শব্দটা খুবই খারাপ শোনাচ্ছে। এই মুহূর্তে অন্য কোনো শব্দ মাথায় আসছে না। ল্যাং-এর বদলে ইংরেজি Kick ব্যবহার করা যেত। এটা ল্যাংয়ের চেয়েও খারাপ।

ল্যাং শব্দ ব্যবহারের জন্য সরি।

তোমাকে ছেড়ে আসার সাতটা কারণ আমি বের করেছি। প্রধান কারণ তোমার গায়ে পাঠার মতো বোটকা গন্ধ।

অন্য কারণগুলো বলছি—

১. ঘুমালেই নাক ডাকো, মনে হয় প্রেসার কুকার চলছে।

২. তুমি সবার সামনে নির্বিকার ভঙ্গিতে নাকের লোম ছিড়।

৩. বাথরুম করে ফ্ল্যাশ টানতে বেশিরভাগ সময় ভুলে যাও।

৪. নিজের ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে তোমার আগ্রহ নেই।

৫. ঘুমানোর সময় তুমি হাঁ করে ঘুমাও।

৬. বাড়িতে যতক্ষণ থাকো, খালি গায়ে থাকো…।

৭. তুমি প্রথম শ্রেণীর নির্বোধ।

আমিন চিঠি পড়ার মাঝখানে বললেন, তোমার বুবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নয় বৎসর সে আমার গায়ে কোনো গন্ধ পেল না। এখন একেবারে পাঁঠার গন্ধ?

রুস্তম বলল, গন্ধটা হয়তো আস্তে আস্তে ডেভেলপ করেছে।

আমিন বললেন, পাঁঠার গন্ধ তোমার বোন চেনে? জীবনে কখনো পাঠা দেখেছে?

দুলাভাই আপনি রেগে যাচ্ছেন। আপনাকে কখনো রাগতে দেখি না তো এই জন্যে অবাক লাগছে।

আগে গায়ে পাঁঠার গন্ধ ছিল না বলে রাগ করতাম না। এখন পাঁঠার গন্ধ কাজেই রাগ করছি।

কিছুক্ষণ মুখ থেকে জিভ বের করে বসে থাকুন। দেখবেন রাগ কমে গেছে।

কে বলেছে?

আমার আর্ট টিচার। উনি প্রায়ই জিভ বের করে বসে থাকেন। মুখ থেকে জিভ বের করলে আমাদের মধ্যে কুকুর ভাব চলে আসে তখন রাগ পড়ে যায়।

আমিন বিরক্ত গলায় বললেন, উদ্ভট কর্মকাণ্ড তোমার আর্ট টিচার করুক। আমি করব না।

রুস্তম বলল, একটা এক্সপেরিমেন্ট করায় তো দোষ নাই। মুখ থেকে কিছুক্ষণের জন্যে জিভ বের করা।

আমিন জিভ বের করলেন। অদ্ভুত কাণ্ড। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর রাগ কমে গেল।

দুলাভাই! রাগ কমেছে?

হুঁ।

রুস্তম বলল, আমাকে খুব শিগগিরই একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। কবে নিয়ে যাবেন?

নতুন কোনো সমস্যা?

রুস্তম বলল, আমার কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। প্রচ্ছদে ছিল সাইকেলের চাকায় একটা পাখি বসে আছে। কয়েক দিন হলো দেখছি পাখিটা চায়ের কাপের উপর বসে আছে।

বলো কি?

কবিতার বইটা আপনার কাছে আছে, নিয়ে আসুন না।

আমিন চিন্তিত মুখে কবিতার বইয়ের সন্ধানে গেলেন।

বই পাওয়া গেল। পাখিটা সাইকেলের চাকার উপরেই আছে। চা খেতে নিচে নামেনি। রুস্তম বই হাতে নিয়ে বলল, দুলাভাই দেখনু চায়ের কাপে বসে আছে।

আমিন ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। রুস্তমের মাথা দ্রুত এলোমেলো হচ্ছে। আটকানোর বুদ্ধি কি কে জানে। তার ধারণা রুস্তমের ডাক্তার অবস্থাটা আরো খারাপ করে দিচ্ছে।

রুস্তম বলল, দুলাভাই এটা কি পাখি?

আমিন বললেন, জানি না। আমি পাখি চিনি না। ঢাকা শহরে যারা বাস করে তারা কাক ছাড়া আর কিছু চিনে না।

রুস্তম বলল, আমার ধারণা এটা ডাহুক পাখি। ডাহুক পাখি মারা গেলে কি করে জানেন?

না।

পা দুটা আকাশের দিকে তুলে রাখে।

কেন?

মৃত্যুর আগে আগে ডাহুক পাখি মনে করে আকাশ ভেঙে তার উপর পড়ছে। তখন সে দু পায়ে আকাশ আটকাতে চায়।

আমিন বললেন, এইসব কি তুমি নিজে নিজে বানাচ্ছ?

রুস্তম হাসল। তার হাসি সুন্দর। দেখতে ভালো লাগে।

দুলাভাই।

বলো।

আমার বইটার প্রচ্ছদ যে এঁকেছে তার সঙ্গে একটু দেখা করা দরকার।

কেন?

তাকে জিজ্ঞাস করতাম উনি কি পাখি এঁকেছেন।

এর কি দরকার আছে?

অবশ্যই দরকার আছে।

বাংলাবাজার চলে যাও। বই হাতে নিয়ে যাও। প্রেসের ঠিকানা দেয়া আছে। তুমি পান খেতে চেয়েছিলে। পান খুঁজে পেলাম না। দোকান থেকে একটা পান কিনে নিও।

জি আচ্ছা।

 

রুস্তমের কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ যিনি করেছেন তিনি বিরাট মাওলানা। চাপদাড়ি, চোখে সুরমা। বাংলাদেশের মাওলানারা মাথায় পাগড়ি কমই পরেন। ইনার মাথায় সবুজ রঙের পাগড়ি। মাওলানার নাম হাজি আসমত উল্লাহ।

রুস্তম বলল, মওলানা সাহেব এটা কি পাখি?

হাজি আসমত উল্লাহ বললেন, মনের ধ্যান থেকে এঁকেছি জনাব। কি পাখি বলতে পারব না। তবে পাখি আঁকা ঠিক হয় নাই। গুনাহর কাজ হয়েছে?

কেন?

পশু পাখি মানুষ আঁকা নিষিদ্ধ। এদের জীবন দেয়া যায় না বলেই নিষিদ্ধ। আমি একটা পাপ কাজ করে ফেলে গুনাগার হয়েছি।

আপনার আঁকা ছবি খুব সুন্দর হয়েছে। আমি একটা উপন্যাস লিখব বলে ঠিক করেছি। সেটার প্রচ্ছদও আপনি করবেন।

আল্লাহপাকের হুকুম হলে আমাকে করতেই হবে। উনার হুকুমের বাইরে যাওয়ার আমার উপায় নাই।

সবকিছুতেই তাঁর হুকুম লাগবে?

জি জনাব। এই যে আপনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন ফেলছেন তাও উনার হুকুমে চলছে। মনে করেন আপনি নিঃশ্বাস নিলেন তখনই আল্লাহপাক নিঃশ্বাস ফেলার হুকুম বন্ধ করলেন, আপনি আর নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন না। জনাব চা খাবেন?

খাব।

একটু বসেন। আমি জোহরের নামাজ আদায় করে নিজের হাতে আপনাকে চা বানায়ে দেব। আল্লাহপাকের হুকুমে আমি খুব ভালো চা বানাতে পারি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *