০১. একটি অস্বাভাবিক জন্মদিন

০১. একটি অস্বাভাবিক জন্মদিন

সাংঘাতিক রকমের অস্বাভাবিক ছেলে হ্যারি পটার এবং অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় গ্রীষ্মকালীন ছুটিটাকে সে ঘৃণা করত সবচাইতে বেশি। হোম ওয়ার্কটা সে করতে চাইত ঠিকই, কিন্তু বাধ্য হতো গোপনে একেবারে শেষ রাতে করতে। এবং সে ছিল যাদু বিদ্যায় ওস্তাদ এক ক্ষুদে যাদুকর।

সময়টা মধ্যরাত। হ্যারি পটার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কম্বলটা তাঁবুর মতো করে একেবারে মাথার ওপর পর্যন্ত টানা। হাতে টর্চ এবং বালিশের ওপর খোলা বাথিলডা ব্যাগশিল্ডের লেখা ম্যাজিকের ইতিহাস বইখানা। ভ্রূ কুঁচকে হ্যারি পটার খোলা বইয়ের পাতার ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঈগল পাখার কলমটা টেনে নিয়ে গেলো, সে খুঁজছে এমন কিছু, যেটা তাকে চতুর্দশ শতাব্দীতে ডাইনী পোড়ানোর ঘটনা ছিল একেবারে অর্থহীন–আলোচনা কর রচনাটি লিখতে সাহায্য করবে।

একটা সম্ভাব্য প্যারার ওপর এসে ঈগল পাখার কলমটা থামল। হ্যারি তার গোল চশমাটা নাকের ওপর ঠেলে দিয়ে টর্চটাকে বইয়ের আরো কাছে নিয়ে পড়তে শুরু করলঃ

যেসব মানুষ যাদুবিদ্যা জানে না (সাধারণভাবে যারা মাগলস হিসেবে পরিচিত) তারা মধ্যযুগে যাদু বা ম্যাজিককে বিশেষভাবে ভয় পেত। কিন্তু এটা ভালোভাবে বুঝতে পারতো না। কোন কোন বিরল ঘটনায় তারা হয়তো আসল ডাইনী এবং যাদুকর ধরতে পারতো কিন্তু আগুনে পোড়ানোর কোন কার্যকর প্রভাব ওদের ওপর পড়তো না। ডাইনী অথবা যাদুকর যেই হোক না কেন, আগুনের মধ্যে হিম একটা মৌলিক মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিত, ব্যথায় চিৎকার করবার ভান করত। আসলে এসময় তারা মৃদু রোমাঞ্চকর এক শিহরণ উপভোগ করত। বস্তুত ওয়েন্ডেলিন দি উইয়ের্ড নিজে পুড়তে এত মজা পেত যে, সে বিভিন্ন ছদ্মবেশে নিজেই কমপক্ষে সাতচল্লিশবার ধরা দিয়েছিল পোড়ার জন্যে।

দাঁতের ফাঁকে ঈগল পাখাটা ধরে হ্যারি বালিশের নিচে থেকে কালির দোয়াত আর পার্চমেন্টের রোলটা বের করবার চেষ্টা করল। খুব সাবধানে কালির দোয়াতটা খুলে পাখার কলমটা ডুবিয়ে হ্যারি লিখতে শুরু করল। মাঝে মাঝে থামছে তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে। কোন একজন ডার্সলি যদি বাথরুমে যাওয়ার পথে ওর কলমের খসখসানি শুনতে পায় তাহলেই দফারফা শেষ। সারা গ্রীষ্মটা কাটাতে হবে সিঁড়ির নিচে কাপবোর্ডে আটক অবস্থায়।

প্রাইভেট ড্রাইভের চার নম্বর বাড়ীর ডার্সলি পরিবার হচ্ছে হ্যারির গ্রীষ্মকালীন ছুটির সবচেয়ে বড় শত্রু। ওদের জন্যে প্রতিবারই ওর ছুটিটা মাঠে মারা যায়। অথচ এই পরিবারটিই অর্থাৎ আংকেল ভারনন, আন্ট পেটুনিয়া এবং তাদের ছেলে ডাডলিই হচ্ছে হ্যারির একমাত্র জীবিত আত্মীয়। ওরা মাগল এবং যাদুবিদ্যার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা একেবারেই মধ্যযুগীয়। হ্যারির মৃত মা-বাবা নিজেরা ছিলেন ডাইনী এবং যাদুকর। কিন্তু ডার্সলিদের বাড়ীতেই কখনই ওদের নাম উচ্চারণ করা হয় না। বছরের পর বছর আংকেল ভারনন এবং আন্টি দুজনই আশা করে আসছেন হ্যারিকে যথাসম্ভব দীনহীন অবস্থায় রাখতে পারলে হয়তো তার ভেতরের যাদু ক্ষমতাটাকে ধ্বংস করা যাবে। বলা বাহুল্য তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এর জন্যে রাগও তাদের কম নয়। এবং এখন ভয়ে ভয়ে আছেন, কে যে কখন জেনে ফেলে হ্যারি গত ২ বছরের বেশির ভাগ সময়টা কাটাচ্ছে হোগার্টস-এর ডাইনী ও যাদুবিদ্যা স্কুলে। আজকাল ডার্সলিরা যেটা করতে পারে সেটা হচ্ছে গ্রীষ্মের ছুটির শুরুতে হ্যারির যাদুর কাঠি, মায়ার বা যাদু বিদ্যার বই, কড়াই এবং লম্বা ঝাড়ু বা ব্রুমস্টিকটা তালা মেরে রাখতে। আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে হ্যারির কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে।

যাদুর বইটি হাতছাড়া হওয়াতে হ্যারি মুশকিলেই পড়েছে কারণ হোগার্টস-এর টিচাররা অনেক হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। অবশ্য ছুটির প্রথম সপ্তাহেই হ্যারি এক সুযোগে নিচের কাপবোর্ডের তালা খুলে কয়েকটি বই নিয়ে এসে তার ঘরে লুকিয়ে রেখেছে। ডার্সলি পরিবার তখন বাগানে পাড়াপড়শীকে শুনিয়ে শুনিয়ে তাদের নতুন গাড়ির তারিফ করছিল। চাদরে কালির দাগ না পেলেই হলো ডার্সলিরা জানতেও পারবে না যে সে রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে ম্যাজিকের বই পড়ছে।

এই মুহূর্তে হ্যারি আংকেল-আন্টির সঙ্গে কোন ঝামেলা চাচ্ছে না। ওরা এমনিতেই ক্ষেপে আছেন ওর ওপর। কারণটা হোগার্টস-এর সহপাঠি বন্ধু যাদুকর রন উইজলির টেলিফোন। এদের পুরো পরিবারটিই ডাইনী–যাদুকরের পরিবার। তার মানে হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রেই ও অনেক কিছু জানে যা হ্যারি জানে না। কিন্তু কখনও টেলিফোন ব্যবহার করে না। সেদিন যে কেন করেছিল। ভাগ্যের দোষে আংকেল ভারননই ধরলেন টেলিফোনটা।

ভারনন ডার্সলি বলছি।

রন কথা বলছে শুনে সেসময় ঘরে উপস্থিত হ্যারি তখন ভয়ে একেবারে হিম।

হ্যালো! হ্যালো! আপনি শুনতে পাচ্ছেন, আমি হ্যারি পটারের সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।

রন এত জোরে চিৎকার করছিল যে আংকেল ভারনন একেবারে লাফিয়ে উঠে ফোনের রিসিভারটা কান থেকে এক ফুট দূরে সরিয়ে ধরলেন। ভয় আর শংকা মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ওটার দিকে।

কে কথা বলছে? রিসিভারটার দিকে গর্জন ছুঁড়ে দিলেন।

কে তুমি?

রন-উইজলি! পাল্টা চিৎকার করল রন। যেন ফুটবল মাঠের এ মাথা ও মাথা থেকে দুজনে কথা বলবার চেষ্টা করছে।

আমি হ্যারির স্কুলের বন্ধু।

এবার রিসিভারটাকে এক হাত দূরে ধরলেন আংকেল ভারনন, যেন ভয় পেলেন ওটা ফেটে যেতে পারে। সগর্জনে বললেন, আমি জানি না তুমি কোন স্কুলের কথা বলছ! আর এখানে কোন হ্যারি পটার নেই! কখনও ফোন করবে না! কখনই আমার পরিবারের কাছাকাছি আসবার চেষ্টা করবে না!

বলে রিসিভারটা এমনভাবে রাখলেন যেন একটা বিষাক্ত সাপ ছুঁড়ে ফেলছেন।

এরপর যেটা ঘটলো সেটা আরো ভয়াবহ।

কোন সাহসে তোমার মতো তোমার মতো একজনকে এই টেলিফোন নাম্বার দিয়েছ? চিৎকার করে উঠলেন তিনি হ্যারির উদ্দেশ্যে। তার মুখের ছিটানো থুথু এসে লাগলো হ্যারির চোখেমুখে।

অবশ্য রন বুঝতে পেরেছিল যে হ্যারিকে সে বিপদেই ফেলেছে। আর কোনদিন ফোন করেনি। হোগার্টস-এর আরেক বন্ধু হারমিওন গ্রেঞ্জারও ফোন করেনি। নিশ্চয়ই রন তাকে সাবধান করে দিয়েছে।

পাঁচ সপ্তাহ ধরে উইজার্ড বন্ধুদের কাছ থেকে একটি শব্দও শোনেনি হ্যারি। এর মধ্যে অবশ্য ছোট্ট একটি পরিবর্তন হয়েছে, এবং সেটা ভালোর দিকেই। আংকল ভারনন অনুমতি দিয়েছেন, রাতের বেলায় হ্যারি তার পেঁচা হেডউইগকে ছেড়ে দিতে পারে। এর জন্যে অবশ্য হ্যারিকে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছে, হেডউইগকে সে কখনই বন্ধুদের কাছে চিঠি পাঠানোর কাজে ব্যবহার করবে না। অনুমতিটা দিতে আংকেল ভারনন বাধ্যই হয়েছেন বলা যায়। খাঁচায় বন্ধ করে রাখলে হেডউইগ যা চেঁচামেচি করে না।

ওয়েন্ডেলিন দি উইয়ের্ড সম্পর্কে লেখা শেষ করে হ্যারি আবার কান পাতল। তার বিশালদেহী চাচাত ভাইয়ের নাসিকার গর্জনই রাতের নীরবতা ভাঙ্গছে। নিশ্চয়ই অনেক রাত হয়েছে। ক্লান্তিতে হ্যারির চোখ বুজে আসছে। আজ এ পর্যন্তই থাক। লেখাটা কাল রাতে শেষ করা যাবে। কালির দোয়াতের মুখ বন্ধ করল। বিছানার নিচে থেকে একটা বহু পুরনো বালিশের ওয়াড় বের করল। ওয়াড়ের ভেতরে টর্চ, ম্যাজিকের ইতিহাস বইখানা, তার লেখা, পালকের কলম এবং দোয়াতটা রাখলো। বিছানা থেকে নামলো। সম্পত্তিটা তার বিছানার নিচে আলগা করে রাখা একটা ফ্লোর বোর্ডের তলায় লুকিয়ে রাখলো।

ঘড়িটা দেখলো। রাত একটা বাজে। হ্যারির পেটের ভেতরটা কেমন যেন অদ্ভুতভাবে লাফিয়ে উঠলো। এক ঘণ্টা আগেই সে তের বছর পেরিয়ে এলো আর তার কি না খবরই নেই। আর একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে নিজের জন্মদিন সম্পর্কে খোদ হ্যারির কত কম আগ্রহ! জীবনে সে জন্মদিনের কোন কার্ড পায়নি। ডার্সলিরা গত দুটো জন্মদিনকে একদম মনে করেনি। এবারেরটা মনে রাখবে তেমনটা বিশ্বাস করারও কোন কারণ নেই।

অন্ধকার ঘরের মধ্য দিয়ে হেঁটে গিয়ে হ্যারি জানালার কাছে দাঁড়ালো। ঝুঁকলো বাইরের দিকে। দীর্ঘক্ষণ কম্বলের নিচে কাটানোর পর বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস হ্যারির চোখে মুখে মধুর পরশ বুলিয়ে দিয়ে গেল যেন। হেডউইগের শূন্য খাঁচাটা শুধু ঝুলছে। দুই রাত ধরে পেঁচাটা নেই। ঘাবড়ে যায়নি মোটেই সে। এরকম আরো গেছে হেডউইগ। হ্যারি আশা করছে তার ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছে। এই বাড়ির একমাত্র জীবিত প্রাণী হচ্ছে এই পেঁচাটা যে হ্যারিকে দেখে কুঁকড়ে যায় না।

বয়সের তুলনায় হ্যারি এখনও বেশ অগোছালো এবং হাড্ডিসার। অবশ্য গত এক বছরে সে একটু লম্বা হয়েছে। কুচকুচে কালো চুল বরাবরের মতোই এবং অবাধ্য। চশমার কাঁচের পেছনে একজোড়া উজ্জ্বল সবুজ চোখ। কপালে চুলের ফাঁকে স্পষ্ট দেখা যায় সরু একটা দাগ, যেন বিদ্যুতের ফালি।

হ্যারির মধ্যে যত অস্বাভাবিকতা রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে বিশিষ্ট হলো কপালের এই দাগটি। ডার্সলিয়া গত দশ বছর ধরে যা ভেবে আসছে এই দাগটি সেই মোটর অ্যাকসিডেন্টের স্মৃতি চিহ্ন, যে মোটর অ্যাকসিডেন্টে হ্যারির বাবা মা মারা গেছে বলে ওরা বিশ্বাস করে। কিন্তু মোটেই সেটা সেরকম কিছু নয়। লিলি এবং জেমস পটার কোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে একশ বছরের মধ্যে সবচাইতে ভীতিকর ডার্ক উইজার্ড লর্ড ভোলডেমর্ট। একই আক্রমণ থেকে হ্যারি অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে কপালে সামান্য একটু দাগের বিনিময়ে, কারণ ভোলডেমর্টের আক্রমণটা তাকে না মেরে রেবাউন্ড হয়ে ফিরে গিয়েছিল তার দিকেই। প্রায় মরো মরো অবস্থায় ভোলডেমর্ট পালিয়ে বেঁচেছিল সে যাত্রা।

হোগার্টস-এ আসার পর হ্যারিকেও ওর মুখোমুখি হতে হয়েছে। অন্ধকার জানালায় দাঁড়িয়ে তাদের সর্বশেষ মোলাকাতের কথা ভেবে হ্যারির মনে হলো সে ভাগ্যবান বলেই ১৩তম জন্মদিনটাকে দেখতে পাচ্ছে।

তারা ভরা আকাশটার দিকে আবার তাকালো হ্যারি, খুঁজলো যদি দেখা যায় হেডউইগ তার দিকে উড়ে আসছে, হয়তো ঠোঁটে ঝুলছে মরা ইঁদুর। সামনের বাড়িগুলোর ছাদের উপর দিয়ে অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর হ্যারি বুঝতে পারলো কি দেখছে সে। সোনালী চাঁদটাকে পেছনে রেখে, প্রতি মুহূর্তে বড় হচ্ছে একটি অদ্ভুত উড়ন্ত জীব, জোরে জোরে পাখা চালিয়ে তার দিকেই উড়ে আসছে।

একেবারে কাছে চলে এসেছে। এক মুহূর্তের জন্য হ্যারি ভাবলো জানালাটা বন্ধ করে দেবে। ঠিক তখনই রহস্যময় প্রাণীটা রাস্তার একটি বাতির উপর দিয়ে উড়ে এলো। উড়ন্ত জীবটার পরিচয় সম্পর্কে হ্যারির আর কোন সন্দেহ রইল না। লাফিয়ে হ্যারি জানালার একদিকে সরে এলো। জানালা দিয়ে সবেগে ঢুকল তিনটি পেঁচা, দুটো পেঁচা বহন করে নিয়ে উড়ছে অন্যটিকে এবং মনে হচ্ছে তৃতীয়টি জ্ঞান হারিয়েছে। আস্তে একটা ভো ভো শব্দ করে ওরা বসলো হ্যারির বিছানায়। মাঝের ধূসর বিশাল পেঁচাটি ডান দিকে গড়িয়ে পরে একবারে নিথর নিঃশব্দ। ওটার পায়ে বিরাট একটা প্যাকেট বাঁধা রয়েছে। জ্ঞানহারা পেঁচাটিকে মুহূর্তের মধ্যে চিনে ফেলল হ্যারি। ওটার নাম এরল, নিবাস উইজলি পরিবার। দৌড়ে হ্যারি বিছানার কাছে গিয়ে এরলের পা থেকে প্যাকেটটা মুক্ত করল। বুকে করে এরলকে হেডউইগের খাঁচায় নিয়ে গেলো। এরল ঝাঁপসা একটা চোখ মেলল, দুর্বল ভাবে যেন ধন্যবাদ জানিয়ে পানি খেতে শুরু করল।

এবার হ্যারি অন্য পেঁচা দুটোর দিকে নজর দিল। তুষারের মত সাদা বড় মেয়ে পেঁচাটি তার নিজের হেডউইগ। ওটাও একটা পার্সেল বহন করছিল এবং কেন জানি নিজেই নিজের উপর খুব সন্তুষ্ট ছিল। যেমনি হ্যারি ওকে ভারমুক্ত করলো ওমনি ঠোঁট দিয়ে হ্যারিকে আদরের ঠোকর দিয়ে ওটা উড়ে গেল এরলের কাছে।

তৃতীয় পেঁচাটিকে হ্যারি চিনতে পারলো না। কিন্তু বাদামী সুন্দর পেঁচাটি কোত্থেকে এসেছে এক নিমেষেই হ্যারি বুঝতে পারলো। তৃতীয় একটা পার্সেল ছাড়াও ওটা একটি চিঠি নিয়ে এসেছে, যে চিঠিতে হোগার্টস-এর প্রতীক রয়েছে। পেঁচার কাছ থেকে হ্যারি চিঠি এবং পার্সেল বুঝে নিতেই ওটা গম্ভীরভাবে নিজের পালকগুলোকে ঠিকঠাক করে নিল এবং পাখা মেলে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেল। হ্যারি বিছানায় গিয়ে বসলো। এরলের আনা প্যাকেটটি নিয়ে বাদামী রং এর মোড়কটা খুলল। জীবনের প্রথম জন্মদিনের কার্ড এবং সোনায় মোড়ানো উপহার পেল হ্যারি। কাঁপা কাঁপা আঙ্গুল দিয়ে খামটা খুললো ও। কাগজের দুটো টুকরো পড়লো খামটা থেকে। কাগজ দুটোর একটি হচ্ছে চিঠি আর একটি খবরের কাগজের কাটিং।

পেপার কাটিংটা নিশ্চিতভাবেই যাদু দৈনিক ডেইলি প্রফেট-এর, কারণ সাদা কালো ছবিটার লোকগুলো নড়ছে। হ্যারি পেপার কাটিংটা তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

গ্র্যান্ড পুরস্কার পেলেন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের মাগল আর্টিফ্যাক্টস দপ্তরের প্রধান আর্থার উইজলি ডেইলি প্রফেট-এর বার্ষিক গ্র্যান্ড পুরস্কার গ্যালিয়ন ড্র জিতে নিয়েছেন।
পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত মিস্টার উইজলি ডেইলি প্রফেটকে বলেছেন, আমরা এই সোনা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মিশরে খরচ করবো। ওখানে রয়েছে আমাদের বড় ছেলে বিল, কাজ করছে শাপ ভঙ্গকারী হিসেবে গ্রিংগটস উইজার্ডিং ব্যাংকের জন্য।
হোগার্টস-এ নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে উইজলি পরিবার মিসরে থাকবে একমাস। এই স্কুলটিতে উইজলি পরিবারের পাঁচটি ছেলেমেয়ে পড়ছে।

হ্যারি ছবিটা তুলে নিল। ওর সারা মুখে একটা শব্দহীন হাসি ছড়িয়ে পড়লো। সে দেখলো বিরাট এক পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে উইজলি পরিবারের নয়জনই তার দিকে প্রবল বেগে হাত নাড়ছে। পরিবারটি অত্যন্ত ভালো, কিন্তু খুবই গরিব। হ্যারি ভাবতেই পারে না এই পরিবারটি ছাড়া অন্য কারো একতাল সোনা জেতা উচিত। এরপর রন-এর লেখা চিঠিটা তুলে নিয়ে সে পড়তে শুরু করে।

প্রিয় হ্যারি,
শুভ জন্মদিন।
টেলিফোন করার ব্যাপারে আমি সত্যিই দুঃখিত। আশাকরি মাগলগুলো এ নিয়ে তোমাকে জ্বালাতন করেনি। বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি বললেন, আমার চিৎকার করা মোটেই উচিত হয়নি।
মিশর একটা চমৎকার জায়গা। বিল আমাদেরকে সবগুলো সমাধি দেখিয়ে বেড়িয়েছে। বললে বিশ্বাস করবে না, প্রাচীনকালের যাদুকরের মিশরীয়দের উপর যে কতরকমের শাপ দিয়ে রেখেছেন। জিনিকে মা শেষ পিরামিডটাতে যেতেই দেয়নি। ওখানে মাগলদের অতিরিক্ত মাথা গজানো ভাঙাচোরা রূপান্তরিত কংকালগুলি ছিল।
বাবা ডেইলি প্রফেট লটারি পেয়েছে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। সাত সাতশ গ্যালিয়ন! অবশ্য তার বেশিরভাগটাই মিশর ভ্রমণে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু আমাকেও আগামী বছরের জন্য একটা যাদুর কাঠি কিনে দেবে।

হ্যারির ভালো করেই মনে আছে ঘটনাটা। ওরা দুজন যেবার গাড়ি উড়িয়ে হোগার্টস-এ গিয়ে স্কুল মাঠে একটা গাছের উপর পড়েছিল সেবারই হ্যারির পুরনো যাদুর কাঠিটি ভেঙে গিয়েছিল।

স্কুল শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে আমরা ফিরব। আমাদেরকে লন্ডন পর্যন্ত যেতে হবে। নতুন বই আর যাদুর কাঠির জন্য। সেখানে কি তোমার সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে?
মাগলগুলোকে তোমার সর্বনাশ করতে দিও না!
লন্ডনে আসার চেষ্টা করো।
রন
পুনশ্চ পার্সির হেড বয় হওয়ায় চিঠিটি সে গত সপ্তাহে পেয়েছে।

হ্যারি আবার ছবিটা দেখল। হোগার্টস-এর সপ্তম অর্থাৎ শেষ বছরের পার্সিকে বিশেষভাবে আত্মসন্তুষ্ট মনে হচ্ছিল। স্টাইল করে পরা ফেজ টুপিটার ওপর ওর হেড বয় ব্যাজটা আটকানো। মিশরীয় সূর্যের আলো ওর চশমা থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে যেন।

এতক্ষণে প্রেজেন্টটার দিকে নজর দিল হ্যারি। উপরের মোড়ক খুলল। ভেতরে পাওয়া গেল কাঁচের ছোট্ট লাট্ট একটা। নিচে রন-এর আরেকটি ছোট চিঠি।

হ্যারি-এটা হচ্ছে একটি পকেট স্নিকোস্কোপ। আশপাশে যদি বিশ্বাস না করবার মতো কেউ থাকে তবে এটা নিজে নিজেই জ্বলে উঠে ঘুরতে থাকবে। বিল বলে এটা একটা বাজে জিনিস, উইজার্ড ট্যুরিস্টদের গছিয়ে দেয়া হয়। ওর এরকম ধারণা হওয়ার কারণ গত রাতে ডিনারের সময় ওটা জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু ও তো জানে না ফ্রেড আর জর্জ ওর স্যুপের মধ্যে পান পা দিয়ে রেখেছিল। এ কারণেই ওটা জ্বলে উঠেছিল।
শুভেচ্ছা–রন

বেডসাইড টেবিলের উপর স্নিকোস্কোপটাকে রাখল হ্যারি। আলোর ওপর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ওটা। ঘড়ির কাটা থেকে বিচ্ছুরিত আলো ওটাতে প্রতিফলিত হচ্ছে দেখল হ্যারি। কয়েক মুহূর্ত সন্তুষ্ট চিত্তে ওটার দিকে তাকিয়ে থেকে হ্যারি হেডউইগের আনা পার্সেলটা তুলে নিল।

এটার ভেতরেও দেখতে পেলো কাগজে মোড়া একটি প্রেজেন্ট কার্ড এবং একটি চিঠি রয়েছে। চিঠিটি হারমিওনের লেখা।

প্রিয় হ্যারি,
তোমার ভারনন আংকেলকে ফোন করা নিয়ে ঘটে যাওয়া বিপত্তি সম্পর্কে রন আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছে। আশাকরি এখন তুমি বিপদমুক্ত হয়েছ।
এখন আমি ছুটি কাটাচ্ছি ফ্রান্সে। এই পার্সেলটা তোমার কাছে পাঠাবার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিলাম, যদি কাস্টমসে ওরা খুলে দেখে! ঠিক সেই সময় হেডউইগ এসে পড়ল। আমার যেন কেন মনে হলো ও চাইছে জন্মদিনে তোমার একটা প্রেজেন্ট পাওয়া উচিত। সে যেন এটাই নিশ্চিত করতে আমার কাছে উড়ে এলো। টেলিফোন অর্ডারের মতোই পেঁচা অর্ডারে তোমার প্রেজেন্ট কিনেছি; ডেইলি ফেটে একটা বিজ্ঞাপন ছিল (আমি আবার ওটা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, যাদুর দুনিয়ায় কি ঘটছে সে সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকাটা খুব ভালো)। এক সপ্তাহ আগে রন আর ওদের পরিবারের ছবিটা দেখেছিলে? আমি শিওর ওখানেও ও যাদু শিখছে, আমি সত্যিই জেলাস–প্রাচীন মিশরের যাদুকরেরা সত্যিই ছিল মোহিনী শক্তির অধিকারী।
এখানেও যাদুবিদ্যার অতীত কিছু ইতিহাস রয়েছে বৈকি। আমি এখানে পাওয়া কোন কোন বিষয় উল্লেখ করে আমার যাদুর ইতিহাস রচনাটিকে সমৃদ্ধ করেছি।
রন লিখেছে যে ছুটির শেষের দিকে ও লন্ডনে থাকবে। তুমি কি যেতে পারবে? আশা করি পারবে। যদি না পারো তবে ১লা সেপ্টেম্বর দেখা হচ্ছে হোগার্টস এক্সপ্রেসে।
ভালোবাসা
হারমিওন
পুনশ্চ: রন লিখেছে পার্সি হেড বয় হয়েছে। আমি বলতে পারি পার্সি সত্যিই খুশি হয়েছে। মনে হচ্ছে রন এতে খুশি হয়নি।

হাসলো হ্যারি। হারমিওনের চিঠিটা রাখতে রাখতে ওর দেয়া প্রেজেন্টটা তুলে নিল। খুব ভারি। হারমিওনকে তো সে জানে। এটা নিশ্চয়ই বিরাট একটা যাদুর বই, কঠিন সব যাদু কসরৎসহ, কিন্তু না, ওটা সে রকম কিছু না। ওপরের মোড়কটা খুলতেই ওর মন লাফিয়ে উঠল। চমৎকার একটি চামড়ার কেস, ওপরে রূপালী অক্ষরে লেখা : মস্টিক সার্ভিসিং কিট।

ওহ, হারমিওন! ফিস ফিস করে উঠল হ্যারি, কেস-এর চেইনটা খুলল।

ফ্লিটউড হ্যান্ডল পলিশ, রূপার একজোড়া টেইল–টুইগ ক্লিপার্স। ছোট্ট একটি কম্পাস, লম্বা যাত্রার সময় ব্রুমস্টিকে আটকে রাখার জন্যে। আরেকটি রয়েছে হ্যান্ডবুক; নিজে নিজের ব্রুমের যত্ন নাও।

বন্ধুবান্ধব ছাড়া হ্যারি হোগার্টস-এর আর যেটা মিস করছে সেটা হচ্ছে যাদুর জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা: কুইডিচ। খুবই বিপদজনক, উত্তেজনায় ভরপুর। খেলা হয় যাদুকর–বাহন ব্রুমস্টিকের ওপর চড়ে। কুইডিচে হ্যারি খুবই ভালো। এক শতাব্দীর মধ্যে হোগার্টস হাউজ টিমের মধ্যে হ্যারি হচ্ছে সবচেয়ে ছোট প্লেয়ার। হ্যারির রয়েছে নিম্বাস দুই হাজার রেসিং ব্রুমস্টিক।

চামড়ার কেসটা সরিয়ে হ্যারি তার শেষ প্রেজেন্ট তুলে নিল। হাতের লেখা দেখেই হ্যারি চিনতে পারল এটা পাঠিয়েছে হোগার্টস-এর পশুপাখী রক্ষক (গেম কিপার) হ্যাগ্রিড। উপরের কাগজটা ছেঁড়ার পর দেখা গেল সবুজ চামড়ার মতো কিছু। পুরোটা খুলবার আগেই পার্সেলটা অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠল। ভেতরে যাই ছিল সেটা কড়াৎ করে উঠল যেন ওটার শক্ত চোয়াল রয়েছে।

ভয়ে জমে গেল হ্যারি। ও জানে হ্যাগ্রিড ইচ্ছে করে ওকে বিপদজনক কিছু পাঠাবে না। তবে বিপদ সম্পর্কে হ্যাগ্রিডের ধারণাটা সাধারণ লোকের মত নয়। হ্যারি পার্সেলটায় একটা গুতো দিল। আবার ওটা কড় কড় শব্দ করে উঠল। হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিল ল্যাম্পটা মাথার ওপর তুলো হ্যারি। এক হাতে মারতে উদ্যত হয়ে আরেক হাতে পার্সেলের বাকি মোড়কটা খুলল। একটা বই ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। সুন্দর সবুজ মলাটের ওপর সোনালী অক্ষরে লেখা রয়েছে দি মনস্টার বুক অফ মনস্টার্স। নামটা ভালো করে পড়ার আগেই বইটা ভুতুড়ে কাকড়ার মতো দুদ্দাড় করে বিছানার ওপর দিয়ে পালাতে শুরু করল।

আহ, ওহ! বিড় বিড় করল হ্যারি।

শব্দ করে বইটা বিছানার ওপর থেকে লাফিয়ে মাটিতে পড়ে ঘষটাতে ঘষটাতে রুমের আরেক দিকে রওনা হলো। পা টিপে টিপে হ্যারি বইটার পেছন পেছন গেল। ডেস্কের নিচে অন্ধকারে বইটা যেন লুকোতে চাইছে। মনে মনে হ্যারি প্রার্থনা করল ডার্সলিরা যেন ঘুমিয়েই থাকে। হাটু গেড়ে হাত পায়ের ওপর ভর দিয়ে বইটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যারি।

আউচ!

বইটা জোরে মেরেছে হ্যারির হাতে। এখনও ওটা মলাটের ওপর ভর করেই তড়িঘড়ি করে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। বইটার ওপর একরকম লাফিয়েই পড়ল হ্যারি। কোনরকমে শুইয়ে দিল বইটাকে। পাশের ঘরে আংকল ভারনন ঘুমের মধ্যেই ঘোৎ করে শব্দ করল।

হেডউইগ আর এরলের কৌতূহলী চোখের সামনে হ্যারি বইটাকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে, চেষ্ট অফ ড্রয়ারের কাছে গিয়ে একটা বেল্ট বের করে সেটা দিয়ে বইটাকে কষে বাঁধল। রাগে কাঁপতে শুরু করল মনস্টার বইটা কিন্তু বাধা থাকায় কিছুই করতে পারল না। বইটাকে খাটের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে হ্যাগ্রিডের কার্ডটা তুলে নিল হ্যারি।

প্রিয় হ্যারি,
শুভ জন্মদিন!
মনে হচ্ছে আগামী বছর এটা তোমার প্রয়োজন হবে। এখন আর কিছু লিখব না। দেখা হলে আরো কথা বলব।
আশা করি মাগলগুলি তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করছে।
অল দি বেস্ট
হ্যাগ্রিড

হ্যাগ্রিড ভেবেছে এমন একটা বই-এর তার প্রয়োজন হবে, চিন্তাটাই হ্যারির কাছে অলুক্ষণে মনে হলো। তবে হেসে হ্যাগ্রিডের কার্ডটা রন আর হারমিওনের কার্ডের পাশেই রেখে দিল। এখন শুধু হোগার্টস থেকে আসা চিঠিটাই দেখার বাকি রয়েছে।

চিঠিটা স্বাভাবিক চিঠির চেয়ে ভারি। ওটা খুলে পড়তে শুরু করল ও।

প্রিয় মাস্টার হ্যারি,
মনে রাখবে স্কুলের নতুন বর্ষ সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে শুরু হবে। হোগার্টস এক্সপ্রেস ছাড়বে কিংস ক্রস স্টেশন থেকে। প্লাটফরম নং পৌনে দশ, সময় বেলা ১১টা।
কোন এক উইক এন্ডে তৃতীয় বর্ষীয়দেরকে হগসমিড গ্রামে যেতে দেয়া হবে। সঙ্গের অনুমোদন পত্রটি অভিভাবকদের দিয়ে সই করিয়ে আনতে হবে।
আগামী বছরের বুক লিস্ট সঙ্গে দেয়া হলো।
শুভেচ্ছা সহ
প্রফেসর এম. ম্যাকগোনাগল
ডেপুটি হেড মিসট্রেস

হ্যারি হগসমিড অনুমোদন পত্রটি টেনে বার করে দেখল, এখন আর হাসছে সে। উইক এন্ডে হগসমিডে যাওয়ার চেয়ে একসাইটিং আর কিছুই হতে পারে। পুরো গ্রামটিই যাদুকরের গ্রাম। হ্যারি ওখানে কখনই যায়নি। কিন্তু আংকল ভারনন আর আন্ট পেটুনিয়াকে দিয়ে অনুমোদন পত্রটি সই করাবে কী ভাবে?

এলার্ম ঘড়ি দেখল হ্যারি ভোর দুটা।

হগসমিড ফরম নিয়ে ঘুম থেকে উঠার পর ভাবা যাবে, বিছানায় ফিরে গেল হ্যারি। নিজের জন্য করা রুটিনের আর একটি দিনের সমাপ্তি টানল ছুটির আর কয়দিন বাকি আছে গুণে। চোখ থেকে চশমা খুলে শুয়ে পড়ল হ্যারি। খোলা চোখ জোড়া জন্মদিনের তিনটি কার্ডের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অপলক। যদিও সে খুবই অস্বাভাবিক ধরনের, তবুও হ্যারি পটার অন্য সকলের মতোই আনন্দিত হলো, জীবনে প্রথমবারের মতো, তার জন্মদিনটার জন্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *