০১. আমাদের বাড়িতে হইচই

আমাদের বাড়িতে সকালের দিকে হইচই একটু বেশি হয়।

আমার মা, বয়সের কারণেই হোক কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক সকালবেলায় রেগে আগুন হয়ে থাকেন। যাকে দেখেন তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের প্রবল ঝাপ্টা বেশিরভাগ সময় আমার বড় ভাইয়ের ওপর দিয়ে যায়। বেচারার দোষ তেমন কিছু থাকে না— হয়তো। টুথপেস্টের টিউবের মুখ লাগানো হয়নি, কিংবা বাথরুমের পানির কল খোলা–এই জাতীয় তুচ্ছ ব্যাপার। রেগে আগুন হবার মতো কিছু না।

আজো বেচারা বকা খাচ্ছে। মার গলা ক্রমেই উঁচুতে উঠছে। অন্যপক্ষ চুপচাপ। বড় ভাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেও কিছু বলছেন না, কারণ কথা বললেই বিপদ। আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়— নীরবতা। মার একতরফা কথাবার্তা থেকে যা বোঝা যাচ্ছে তা হচ্ছে বুনোভাই দাড়ি শেভ করেন নি। বড় ভাইয়ের ডাকনাম বুনো। আমরা সবাই তাকে বুনোভাই ডাকি। যার নাম বুনো তাঁর স্বভাব-চরিত্রে বন্যভােব প্রবল হওয়ার কথা। তা কিন্তু না। বুনোভাই খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ। এই যে মা তুফান মেল চালাচ্ছেন তিনি একটা শব্দও করছেন না। মিটমিটি হাসছেন।

মা হড়বড় করে বলছেন, তুই ভেবেছিস কী? তোর অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি। গতকালও তুই শেভ করিস নি। আজো না। তোর মুখভর্তি খোচা খোচা দাড়ি। ঘরে কি ব্লেড কেনার টাকা নেই? নাকি তোকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেয়া হয় না? হাসছিস কেন? এত কিছু শোনার পরেও তোর হাসি আসে? হাসি খুব সস্তা হয়ে গেছে?

মারা গালাগালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘটাং ঘটাং শব্দ হচ্ছে। শব্দটা টিউবওয়েলের। টিউবওয়েলের পাম্প চেপে আমরা দোতলার ছাদে পানি তুলি। ট্যাঙ্কে পানি তোলার জন্য আমাদের কোন ইলেকট্রিক পাম্প নেই। ওয়ান হর্স পাওয়ারে একটা পাম্প কিনলেই কাজ হয়। সেই পাম্প কেনা হচ্ছে না, কারণ আমার বাবার স্বাস্থ্য বাতিক। তিনি ঘোষণা করেছেন সকাল বেলা সবাইকে খানিকক্ষণ টিউবওয়েলে পানি পাম্প করতে হবে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। পানি তোলা হবে, স্বাস্থ্যও রক্ষা হবে। শুরুতে আমরা সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে পানি তুলেছি। এখন আর উৎসাহ পাচ্ছি না। এ বাড়ির একমাত্র কাজের ছেলে জিতু মিয়ার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। সে হাড় জিরজিরে শরীরে মিনিট বিশেক পাম্প করে তারপর দুহাতে বুক চেপে বসে পড়ে। বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেয়। এই দৃশ্য দেখলে যে কোন লোক ভাববে, আমরা বোধহয় হৃদয়হীন। তবে দেখে দেখে আমাদের অভ্যোস হয়ে গেছে বলেই এখন আর খারাপ লাগে না। শুধু বুনোভাই এখনো অভ্যস্ত হতে পারেন নি। তিনি রোজই জিতু মিয়াকে সাহায্য করতে যান এবং একনাগাড়ে খুব কম করে হলেও একঘণ্টা ঘটাং ঘটাং করেন। এমন চমৎকার একটি ছেলের উপর মা শুধু শুধু এত রাগ করেন, কে জানে কেন।

অন্যদিন মিনিট দশেকের মধ্যেই মার দম ফুরিয়ে যায়। আজ ফুরুচ্ছে না। এখন বুনোভাইয়ের অকৰ্মণ্য স্বভাবের ওপর লেকচার দেয়া হচ্ছে। তাঁকে তুলনা করা হচ্ছে অজগর সাপের সঙ্গে। যে অজগর একটা আস্ত হরিণ গিলে এক মাস চুপচাপ শুয়ে থাকে। মার এই উপমা খুব খারাপ না। অজগর সাপের শুয়ে থাকার সঙ্গে বুনোভাইয়ের বিছানায় পড়ে থাকার মধ্যে বেশ মিল আছে। তাকে টেবিল-চেয়ারে বসে কোনদিন পড়তে দেখি নি। যাবতীয় পড়াশোনা তিনি করেন শুয়ে শুয়ে।

তুই হচ্ছিস অজগর, বুঝলি? অ-তে যে অজগর, সেই অজগর।

ঠিক আছে মা, এখন শান্ত হও। আমাকে বকে বকে তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তুমি একটু বিশ্রাম নাও মা। শান্ত হও।

মা শান্ত হলেন না। আরো কী-সব বলতে লাগলেন। মার চিৎকার প্রাস জিতু মিয়ার ঘটাং ঘটাং-এর সঙ্গে যুক্ত হল আমার বড়। আপার দুই কন্যা রিমি ও পলির চিৎকার। এই দুই কন্যা কান ঝালাপালা করে দিতে লাগল। বড়। আপা গত চার মাস ধরে আমাদের সঙ্গে আছেন। আরো দু মাস থাকবেন, কারণ দুলাভাই কী একটা ট্রেনিঙে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছেন ছমাসের জন্য। রিমি এবং পলি এই চার মাসে চিৎকার করে আমাদের মাথার পোকা নাড়িয়ে দিয়েছে। এদের কিছু বলার উপায় নেই। কিছু বললেই সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে এরা তাদের মার কাছে নালিশ করবে এবং লোক-দেখানো নাকীকান্না কাঁদবে। আমি একবার মহাবিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, এই রিমি, আর শব্দ করলে চড় খাবি। জন্মের মতো চিৎকার করার শখ মিটিয়ে দেব। রিমি চোখ বড় বড় করে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর লাফাতে লাফাতে তার মার কাছে গেল। বড় আপা সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে চলে এলেন। তাঁর মুখ থমথমে, গলার স্বর ভারি। মনে হচ্ছে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলবেন। তার কান্নারোগ আছে।

রঞ্জু, তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।

কী কথা?

দরজাটা বন্ধ করা, বলছি।

এমন কী কথা যে দরজা বন্ধ করে বলতে হবে?

বড় আপা নিজেই দরজা বন্ধ করে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসলেন এবং চাপা গলায় বললেন, আমার মেয়েগুলোকে তুই দেখতে পারিস না কেন? ওরা কী করেছে?

আমি পরিবেশ হালকা করার জন্য হাসতে হাসতে বললাম, কী যে বল আপা, ওদের তো আমি খুবই পছন্দ করি। পরীর মতো দুই মেয়ে। দেখতে পারব না কেন?

কেন সেটা তো তুই বলবি। তোর কাছে থেকেই শুনতে চাই। খানিকক্ষণ আগে রিমি কী করছিল? বল, কী করছিল?

চিৎকার করছিল।

বাচ্চারা চিৎকার করবে না?

করবে। তবে সারাক্ষণ করবে না এবং চিৎকার থামতে বললে থামবে। এদের মুখে কোন ব্ৰেক নেই।

সে চিৎকার করছিল শুধু এই কারণে তুই তাকে চড় দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিবি? আচ্ছা একটা মেয়ে!

আমি স্তম্ভিত হয়ে বললাম, কী বলছ আপা? চড় দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেব কেন?

আবার অস্বীকার করছিস? তোর লজ্জাও লাগে না? কয়েকটা দিন শুধু আছি তাও সহ্য হচ্ছে না? আমরা কি জন্মের মতো তোদের ঘাড়ে এসে চেপেছি? আমরা কি সিন্দাবাদের ভূত যে নামাতে পারবি না? আর আমাদের যদি তোর এতই অসহ্য হয় সেটা বলে ফেল–চলে যাই। এমন তো না যে যাবার জায়গা নেই। ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে এসেছি— তালা খুলে ঢুকব।

আপা, ব্যাপারটা হচ্ছে কী…

থাক, তোকে ব্যাপার বলতে হবে না। ব্যাপার। আমি বুঝতে পারি। আমার কি চোখ নেই? আমার চোখ আছে। দুই-এ দুই-এ যে চার হয় তা-ও আমি জানি। তোরা কেউ এখন আমাদের সহ্য করতে পারছিস না। বাবা সেদিন পলিকে ধমক দিলেন। আমার সামনেই দিলেন। আমি তো হতভম্ব। আমার সামনে আমার মেয়েকে ধমক দেবেন। কেন?

বড় আপা চোখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুপাতে লাগলেন। তাঁকে নিয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে। তাঁর মনে একটা ধারণা ঢুকে গেছে যে এ বাড়িতে আমরা তাকে পদে পদে অপমান করছি। অপদস্থ করার চেষ্টা করছি।

একই মায়ের পেট থেকে আমরা পাঁচ ভাইবোন এসেছি। পাঁচজনই সম্পূর্ণ পাঁচ রকম। বড় আপা অসম্ভব সন্দেহপরায়ণ, ঝগড়াটে এবং ছিচকাদুনে। বুনোভাই চুপচাপ ধরনের। কোনো কিছুতেই তিনি রাগ করেন না। এম.এ. পাস করেছেন চার বছর আগে। এই চার বছরে চাকরির কোনো চেষ্টা করেন নি। আমাদের দূর সম্পর্কের একজন আত্মীয় আছেন— শিল্পমন্ত্রী। তাঁকে ধরাধরি করে নারায়ণগঞ্জের একটা মিলে তার জন্য চাকরি যোগাড় করা হল। ভালো চাকরি, ছ হাজার টাকার মতন বেতন। কোয়ার্টার আছে। দেড় মাস সেই চাকরি করে একদিন সুটকেস নিয়ে বাসায় চলে এলেন। এই চাকরি নাকি ভালো লাগে না। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য অনেক টেলাঠেলি করা হল। কোনোই লাভ হল না। মা যত রাগ করেন বুনোভাই তাত হাসেন। বড়দের কোনো ছেলেমানুষি দেখে আমরা যেমন হাসি সে রকম হাসি। মা রাগী গলায় বললেন, এই চাকরি তোর পছন্দ না। কী চাকরি তোর পছন্দ?

কোনো চাকরিই পছন্দ না, মা!

কী করবি তাহলে?

কিছুদিন রেস্ট নেব।

রেস্ট নিবি মানে? রেষ্ট নিবি–এর মানে কী?

রেস্ট নেবার মানে হচ্ছে বিশ্রাম করা। কিছুদিন বিশ্রাম করব বলে ঠিক করেছি, মা।

বিশ্রাম করবি?

হ্যাঁ। শুয়ে-টুয়ে থাকব। বই-টই পড়ব।

সত্যি সত্যি বুনোভাই পরের এক মাস শুয়ে শুয়েই কাটালেন। হাতে একটা পত্রিকা কিংবা বই। সেই বই মুখের উপর ধরা। পা নাচাচ্ছেন। মুখ হাসি হাসি। যেন তিনি বড় আনন্দে আছেন। রিমি এবং পলি বেশির ভাগ সময় তার ঘরেই লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করেন। তিনি ফিরেও তাকান না। তাদের চিৎকার, চেঁচামেচি তাঁর কানে ঢোকে বলেও মনে হয় না। সেই তুলনায় আমার মেজোভাই খুব প্র্যাকটিক্যাল। মেজোভাই ইনজিনিয়ারিং পড়েন–ফাইন্যাল ইয়ার। রাতদিন পড়াশোনা নিয়ে আছেন।

পাস করার সঙ্গে সঙ্গে যাতে বাইরে যেতে পারেন। সেই চেষ্টাও আছে। নানান জায়গায় লেখালেখি করছেন। একটা মেয়ের সঙ্গে তার বেশ ভালো ভাব আছে। খুব বড়লোকের মেয়ে। গাড়ি করে এ বাড়িতে আসে। এই গাড়িও মেয়ে নিজেই চালায়। মেয়েটার নাম শ্রাবণী। মেজোভাই ডাকেন বনী বলে। খুব মিষ্টি করে ডাকেন। কাউকে যে এত মিষ্টি করে ডাকা যায় তা আমার ধারণায় ছিল না। মেয়েটা দেখতে বিশেষ ভালো না। চেহারায় কেমন পুরুষ পুরুষ ভাব। এই মেয়ে ছাড়াও আরো একটি মেয়ে মেজোভাইয়ের কাছে আসে। সেই মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। তবে গরিব ঘরের মেয়ে। বেশির ভাগ সময়ই সে হেঁটে হেঁটে আসে। তার নাম শোভা। মেজোভাই তাকে ডাকেন শু বলে। এই মেয়ে বাসায় এলে মেজোভাইয়ের মুখ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল দেখায়। মেয়েটি চলে যাবার সময় মেজোভাই তাকে এগিয়ে দেবার জন্য অনেক দূর যান। হয়তো বাসে তুলে দেন। কিংবা রিকশা ঠিক করে দেন। মেজোভাইয়ের মুখের উজ্জ্বল ভাব মেয়েটি চলে যাবার পরেও অনেকক্ষণ থাকে। তবু আমার কেন জানি মনে হয় মেজোভাই বড়লোকে মেয়েটাকেই বিয়ে করবেন। কারণ খাবার টেবিলে একদিন কথায় কথায় বললেন, বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষের অসম্ভব পয়সা হয়েছে। শ্রাবণী বলে যে একটা মেয়ে আমার কাছে আসে ওরা তিন বোন। তিনজনের নামেই গুলশানে আলাদা আলাদা বাড়ি আছে। তিনজনের আলাদা আলাদা গাড়ি। Can you belive it? কথাগুলো বলার সময় মেজোভাইয়ের মুখ ঝলমল করতে লাগল। চোখে ঘোর ঘোর ভাব চলে এল। মনে হল তিনি কল্পনায় গুলশানের বাড়ি এবং বাড়ির সামনে কালো রঙের মরিস মাইনর গাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন।

আমার সবচে ছোট বোনের নাম নীতু। নীতু এবার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার কারণেই বোধহয় নিজেকে সে বেশ বড় বড় ভাবছে। যদিও সে এখনো পুরোপুরি ছেলেমানুষ। বাসায় সারাক্ষণ আচার খায়। শিবরামের বই পড়ে হি হি করে হাসে। টিভির অতি অখাদ্য নাটকও গভীর আগ্রহে দেখে। করুণ রসের দুএকটা ডায়ালগ শুনলেই তার চোখে ছিল ছল করে ওঠে। ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে সে নিজের জন্য একটা ঘর নিয়েছে। প্রতিরাতেই নিজের ঘরে ঘুমুতে যায়। একবার ঘুম ভাঙলেই ভয় পেয়ে মার ঘরে চলে আসে। ছোটবেলায় নীতুকে রাগানোর একটা বুদ্ধি ছিল। তার সামনে দড়িয়ে বলা–নীতু, আয় তু-তু-তু। নীতুর স্কুল জীবনের বন্ধুরা এখনো তাকে এভাবে ক্ষেপায়। নীতু হচ্ছে আমাদের পরিবারের সবার আদরের মেয়ে এবং হয়তোবা সবচে ভালো মেয়ে। উঁহু, ঠিক হল না। সবচে ভলো আমাদের বুনোভাই। মা যাকে অজগর সাপ বলেন।

সব ভাইবোন সম্পর্কেই বললাম, এবার বোধ হয় নিজের কথা কিছু বলা দরকার। মুশকিল হচ্ছে, আমার নিজের প্রসঙ্গে বলার মতো কিছু নেই। তাছাড়া বলতে ইচ্ছে করছে না। বরং মার কথা বলি।

মা এককালে খুব রূপবতী ছিলেন। তাঁর তরুণী বয়সের একটি ছবি আছে। সেই ছবির দিকে তাকালে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়। আজকের মোটাসোটা, চুলপাকা মার সঙ্গে এ ছিপছিপে তরুণীর কোন মিল নেই। ছবিতে মার মুখে এক ধরনের দুষ্ট হাসি। চোখ দুটাকে অন্য ভুবনের রহস্যময়তা। একবার ছবির সামনে দাড়ালে চট করে সরে যাওয়া যায় না। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। মা খুব রাগারগি করেন এটা তো বলেছি। তবে সবার সঙ্গে না। তাঁর রাগের মূল টার্গেট বুনোভাই। দ্বিতীয় টার্গেট নীতু। বড় ভাইয়ের উপর রাগ করার তা-ও একটা অর্থ হয়, নীতুর উপর রাগের আমি কোনো কারণ খুঁজে পাই না। অনেক মানুষের সামনে নীতুকে অপমান করতে পারলে তিনি যেন কেমন আনন্দ পান। আবার একই সঙ্গে নীতুর সামান্য অসুখ-বিসুখে অস্থির হয়ে যান। অবশ্যি বড় আপার সঙ্গে মার খুবই খাতির। দুজনে পান খেতে খেতে বান্ধবীর মতো গল্প করেন। গল্পের এক পর্যায়ে একজন অন্য জনের গায়ে ধাক্কা দেন। দেখতে খুব ভালো লাগে।

আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা হল না। দোতলা বাড়ির কথা এক ফাঁকে বলেছি, নীতুর আলাদা ঘরের কথা বলেছি। এর থেকে ধারণা হওয়া বিচিত্র নয় যে, আমরা বেশ মালদার পার্টি। আসলে তা না। সাধু ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়–ইহা সত্য নহে। আমরা মোটেই মালদার পার্টি নই। খুবই দুর্বল পার্টি। আশেপাশে কেউ তা জানে না। তারা দেখে অনেকখানি জায়গা জুড়ে চমৎকার একটা দোতলা বাড়ি। লাল রঙের বাগানবিলাসের পাতা যখন বাড়িটা ঢেকে ফেলে তখন এই বাড়িকে স্বপ্নের বাড়ি বলে মনে হয়। এই বাড়িতে যারা থাকে তাদের দুর্বল পার্টি মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কাউকে বাড়ির ঠিকানা দেবার সময় আমরা বলি, রাস্তার ডান দিক মোড় নিলেই দেখবেন চমৎকার, একটা শাদা বড়ি। বাগানবিলাসের ছাওয়া। আমাদের বাড়ির কথা বলতে গেলে চমৎকার বিশেষণ আপনা আপনি চলে আসে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে— এই বাড়ি কিন্তু আমাদের না। আমরা এই বাড়ির কেয়ারটেকার, আসল মালিক হলেন মইনুদিন চাচা— বাবার ছেলেবেলার বন্ধু। তারা দুজন একই সঙ্গে বি. এ. পাস করেন। বাবা ধরাধরি করে চাকরি পেয়ে যান, মইনুদ্দিন চাচা পান না। তিনি ইন্টারভ্যুর পর ইন্টারভ্যু দিতে থাকেন। তাঁর খুবই খারাপ সময় যেতে থাকে। বাবা তখন মোটামুটি সব গুছিয়ে ফেলেছেন। বিয়েও করেছেন। ফ্ল্যাটে ভাড়া করে থাকেন। গোছানো ছিমছাম সংসার।

মইনুদ্দিন চাচার কিছু হচ্ছে না। বাবার সঙ্গে থাকেন। বসার ঘরে সোফায় রাতে ঘুমান, সারাদিন চাকরির চেষ্টা করেন। কিছু হয় না। শেষে কী একটা ব্যবসা শুরু করলেন। ব্যবসা ঠিক না। দালালি ধরনের কাজ, যাতে ক্যাপিটেল লাগে না। এতেই তাঁর কপাল খুলে গেল। হু-হু করে পয়সা আসতে লাগল। দালালি ছেড়ে নানান ধরনের ব্যবসা শুরু করলেন। কয়েটা মার খেল। কয়েকটা দাড়িয়ে গেল। বাড়ি করলেন। তারপর চলে গেলেন ইংল্যান্ড। ঐখানে ব্যবসার চেষ্টা দেখবেন, তাছাড়া দেশে বোধহয় ব্যবসা-সংক্রান্ত তার কিছু জটিলতাও সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি চলে এল আমাদের হাতে। ঠিক হল আমরা থাকব, বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করব।

বাবা বললেন, এক শর্তে থাকব–ভাড়া নিতে হবে। যত ভাড়া হওয়া উচিত তা তো দিতে পারব না। যা পারি আলাদা একাউন্ট করে জমা রাখব।

মইনুদিন চাচা বললেন, বেশ। কিছু কিছু টাকা আলাদা একাউন্টে রাখ। ছোটখাটো রিপিয়ারিঙের কাজ এই টাকায় করা যাবে। আমার কোনো আপত্তি নেই। বাড়ি আমি অন্যের হাতে দিতে চাই না। বাড়ির পেছনে তোমরা খরচপাতি করতে চাও করবে।

আমরা কোনো খরচপাতিই করলাম না। মইনুদিন চাচার একাউন্টে এক পয়সাও জমা পড়ল না। আমরা অন্যের বাড়িতে দিব্যি থাকি। খাই, দাই, ঘুমাই। প্রতি মাসে বাড়িভাড়ার টাকাটা বেঁচে যায়।

শুধু তাই না, বাবা চিঠি লিখে মইনুদিন চাচার কাছ থেকে মাঝে মাঝে টাকা আনান। যেমন একবার লিখলেন–দোতালার ছাদে দুটা ঘর করে রাখলে বেশ ভালো হয় এবং ছাদের চারদিকে রেলিং দেয়া দরকার। বাচ্চারা ছাদে যায়। মুইনুদ্দিন চাচা তার জন্যে আলাদা করে টাকা পাঠালেন। পানির পাম্পের জন্যে লেখা হল। তার জন্যেও টাকা চলে এল। কিছু মাটি দিয়ে উঠোনটা উঁচু করা দরকার। ছয় ট্রাক মাটি হলেই চলে। মইনুদিন চাচা সেই টাকাও পাঠান। এসব টাকার কোনোটাই বাবা কাজে লাগালেন না। ঘর উঠল না। রেলিং হল না। পানির পাম্প কেনা হল না। মইনুদিন চাচা বাড়ির পেছনে দুটা ঘর করার জন্যেও টাকা পাঠালেন। ঐ ঘরে ড্রাইভার, মালী, দারোয়ান ওরা থাকবে। তিনি এই সঙ্গে ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখেন যার বিষয়বস্তু আগামী বছরে মাঝামাঝি তিনি দেশে আসবেন। কতদূর কী হল দেখবেন। অথচ কিছুই করা হয় নি। শেষবার পাঠানো টাকা বাবা একটা ব্যবসায় খাটিয়েছিলেন। সেখান থেকে আর পয়সা আসে নি। আমিও গেছে, ছালাও গেছে।

এখন বাবার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আগে স্বাস্থ্যবিধি পালনে নিয়মিত প্ৰাতঃভ্রমণ করতেন, সেই প্ৰাতঃভ্রমণ আপাতত বন্ধ। অফিস থেকে এসে ঝিম মেরে বসে থাকেন। কলিংবেল বাজলে দারুণ চমকে ওঠেন। বোধহয় ভাবেন–মইনুদিন চাচা চলে এসেছেন। যখন দেখা যায়, না মইনুদিন চাচা না অন্য কেউ, তখন বাবার চোখে আনন্দের একটা আভা খেলে যায়। আমার বড় মায়া লাগে। কয়েক দিন আগে সবাইকে ডেকে একটা মিটিঙয়ের মতো করলেন, শুকনো মুখে বললেন, মইনুদিন চলে আসছে। একটা কিছু তো করতে হয়। বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। কম ভাড়ায় একটা বাসা খোজা দরকার। তোমাদের বিষয়টা বলতে আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। বলাই উচিত—আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। Total darkness.

বাবা মার দিকে তাকালেন। এমনিতে মার কথার যন্ত্রণাতে থাকতে পারি না। আজ তাঁর মুখেও কথা নেই। তিনিও সম্ভবত চোখে অন্ধকার দেখছেন।

আমার নিজের বেশ মন খারাপ হল। এই চমৎকার শাদা বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে আবার দুই রুমের ফ্ল্যাটে উঠতে হবে। থাকব কী করে? দম বন্ধ হয়ে আসবে।

মেজোভাই বললেন, ইনি বেড়াতে আসছেন। বাড়ি দখল নেয়ার জন্যে তো আসছেন না। কাজেই আমরা এখন যেমন আছি, পরেও থাকব। আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।

বাবা শুকনো মুখে বললেন, কিন্তু সে যখন দেখবে কাজ-টাজ কিছুই হয়নি। তখন…

মেজোভাই বললেন, তখন আবার কী? রাগারাগি-হইচই করবে। তাই বলে তো বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবে না? এভিকশন এত সহজ না, খুব কঠিন।

বাবা অবাক হয়ে বললেন, জোর করেও ন্যের বাড়িতে থাকব নাকি?

দরকার হলে থাকতে হবে।

থানা-পুলিশ করবে। বিশ্ৰী ব্যাপার।

থানা-পুলিশ করলে আমরাও থানা-পুলিশ করব। থানা-পুলিশ কি উনার একার নাকি? আমাদের রাইট অব পজেশন আছে না? আইন আমাদের পক্ষে।

বুনোভাই এই পর্যায়ে বললেন, তোর কথাবার্তা তো আমি কিছুই বুঝছি না। বেচারা এতদিন থাকতে দিয়েছে, থেকেছি। এখন চলে যেতে বললে চলে যাব না? এ কেমন কথা?

যাবে কোথায় তুমি? যেখানেই হোক যেতে হবে। আমার তো মনে হয় যে টাকাটা ভদ্রলোক পাঠিয়েছিলেন সেটা যোগাড় করে রাখলে… মানে উনাকে টাকাটা দিয়ে যদি

মেজোভাই তিক্ত গলায় বললেন, টাকাটা থাকতে হবে তো? বাবা, তোমার কাছে কি টাকা আছে?

বাবা জবাব দিলেন না। সেই সময় হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল। দেখা গেল বাবা দারুণ চমকে উঠেছেন। না, মইনদিন চাচা না–শ্রাবণী এসেছে। মেজোভাই মিটিং ফেলে উঠে গেলেন।

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে বললেন, রঞ্জু, কী করা যায় বল তো?

আমি পরিবেশ সহজ করার জন্যে হালকা গলায় বললাম, চল, আমরা সবাই মিলে আলাদীনের চেরাগের সন্ধানে বের হই। রসিকতা হিসেবে এটা যে খুব উচ্চমানের তা না। তবে নীতু হেসে ভেঙে পড়ল। হাসির ফাঁকে ফাঁকে অনেক কষ্টে বলল, ভাইয়া যা হাসাতে পারে। বাবা বেশ কয়েকবাম কঠিন দৃষ্টিতে নীতুর দিকে তাকালেন। নীতুর হাসি বন্ধ হল না।

মা উঠে এসে আমাদের সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে প্ৰচণ্ড চড় বসিয়ে দিলেন নীতুর গালে। নীতু বড় অবাক হল, তবে সম্ভবত পরিস্থিতি গুরুত্ব খানিকটা বুঝল। কারণ কেঁদে ফেলল। না বা উঠে চলেও গেল না। শুকনো মুখে বসে রইল।

যাই হোক, বাবার এবং সেই সঙ্গে আমাদের সবার সমস্যার সমাধান হঠাৎ করেই হয় গেল। মইনুদিন চাচার মেয়ের এক রেজিস্টার্ড চিঠি এসে পড়ল। ইংরেজিতে লেখা চিঠি, যার সরল বাংলা–আমার আব্বার শরীর ভালো না। হঠাৎ খুব খারাপ করেছে তাকে চিকিৎসার জন্যে আমেরিকা নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই এখন তিনি আর দেশে যেতে পারছেন না। বাবা আপনাদের তার জন্যে দোয়া করতে বলেছেন। দয়া করে দোয়া করবেন।

ইতি— তানিয়া।

তানিয়া মইনুদিন চাচার বড় মেয়ে। বয়সে নীতুর তিন বছরের ছোট। মইনুদিন চাচা বিয়ে করেন অনেক দেরিতে। নীতুর জন্মেরও বছরখানেক পর। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আসবেন তখন তাকে অন্য বাড়ির লোক মনে হত। তিনি থাকতেন চমৎকার বাংলো প্যাটার্নের একটা বাড়িতে। যে বাড়ির ভাড়া সাত হাজার টাকা। দারোয়ান আছে, মালি আছে। চারটা বাথরুমের তিনটাতেই বাথটাব। হুলস্থূল কাণ্ড। আমরা বেশ কয়েকবার ঐ বাড়িতে গিয়েছি, কখনো স্বস্তি বোধ করিনি। এই বাড়িতে গেলেই মনটা খারাপ হয়ে যেতো। ওরা এত বড়লোক, আমরা এত গরিব! মইনুদিন চাচা এক সময় দরিদ্র ছিলেন এবং বাবার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন– এটা বিশ্বাস করতেই আমার কষ্ট হত। বাবা যখন তাঁর সঙ্গে তুই তুই করে কথা বলতেন তখন আমার ভয় ভয় করত। মনে হত বাবা খুব একটা ভুল কাজ করছেন। এই ভুলের জন্য সবার সামনে বকা খাবেন।

তানিয়া এবং তার ছোট বোন মুনিয়াও বেশ কয়েকবার আমাদের বাসায় এসেছে। মেয়ে দুটির চেহারা ভালো না, তবে সব সময় সেজেগুজে থাকত বলে দেখতে ভালো লাগত। এই দুই মেয়ে আমাদের বাসায় এলে কখনো কথা বলত না। গম্ভীর মুখে বসে থাকত। নীতু একবার তানিয়াকে হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তানিয়া বিরক্ত গলায় বলেছিল, প্লিজ, আমার হাত ধরে টানাটানি করবেন না। কেউ গায়ে হাত দিলে আমার ভালো লাগে না। এই কথায় নীতু খুবই অপমানিত বোধ করে। সে তখন ক্লাস টেনে পড়ে— অপমানিত বোধ করারই বয়স। সেই বছরই মইনুদিন চাচা ইংল্যান্ডে চলে যান এবং আমরা তাদের নতুন বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে উঠে আসি।

নীতু কিছুতেই এই বাড়িতে থাকতে রাজি ছিল না। বার বার ঘাড় গোজ করে বলছিল, আমরা কেন ওদের বাড়িতে থাকব? আমরা কি পাহারাদার যে উনার বাড়ি পাহারা দেব? আমি কিছুতেই ঐ বাড়িতে যাব না। মরে গেলেও না। ওটা তানিয়াদের বাড়ি। ঐ হিংসুটে মেয়ের বাড়িতে আমি থাকব না। না-না-না।

মজার ব্যাপার, মইনুদিন চাচার ঐ হিংসুটে মেয়ের চিঠি পড়ে আমাদের বাসায় শান্তি ফিরে এল। বাবার মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে গেল। যদিও সেই চিঠি পড়ে বন্ধুর অসুখের কথা ভেবে তাঁর বিষাদগ্ৰস্ত হবার কথা ছিল। তিনি তেমন বিষাদগ্ৰস্ত হতে পারলেন না। তবু মুখ যথাসম্ভব করুণ করে বললেন, আহা, কী অসুখ হল বল তো? অসুখ সম্পর্কে যখন কিছু লেখে নি তখন তো মনে হচ্ছে মারাত্মক কিছু। ক্যানসার না তো? ক্যানসার হলে আমি তো কোনো আশা দেখি না। ভেরি স্যাড। ক্যানসার হ্যাজ নো আনসার।

মা বললেন, বড় কিছুই হবে নয়তো কি আর চিকিৎসার জন্যে আমেরিকা গেছে। বাবা বললেন, দ্যাটস ট্রু। তাছাড়া ও নিজে চিঠি পর্যন্ত লেখে নি। সবার কাছে দোয়া চাচ্ছে— উফ! আমি তো সহ্য করতে পারছি না।

মা বললেন, তুমি মৌলানা সাহেবকে ডেকে একটা মিলাদের ব্যবস্থা কর।

মা জিতু মিয়াকে দিয়ে মুরগি আনিয়ে ছদগা দিলেন। বাসায় একদিন মিলাদও হল। একজন উটকো ধরনের মওলানা এসে নবী-এ করিমের জীবনের যাবতীয় ঘটনা তুলে দুঘণ্টা লাগিয়ে বর্ণনা করলেন। এত বিরক্ত লাগছিল যে বলার না। কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপার বিরক্তি প্ৰকাশ করা যায় না বলে মুখ বুজে সহ্য করেছি।

এক মাস পর আমেরিকা থেকে মইনুদ্দিন চাচার মৃত্যুসংবাদ এল। তাঁর যকৃতে ক্যানসার হয়েছিল। সিরোসিস অব লিভার। বাবা খনিকক্ষণ কাঁদলেন, হয়তো আন্তরিকভাবেই তিনি দুঃখিত হয়েছিলেন। কারণ মইনুদ্দিন চাচা তার একেবারে ছেলেবেলার বন্ধু। তাঁদের দুজনের নিশ্চয়ই অনেক সুখস্মৃতি আছে। সবচে বেশি কাঁদল নীতু। সে কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলল— কারণ মইনুদিন চাচা নীতুকে খুবই আদর করতেন। নীতু যখন ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ত তখন মইনুদিন চাচা তাকে প্রায় স্কুল থেকে নিয়ে গাড়িতে করে ঘুরতেন। তিনি তখন নতুন গাড়ি কিনেছে, নীতুর এই গাড়ি খুব পছন্দ।

মইনুদিন চাচা প্রায়ই নীতুকে বলতেন, মা, তোর গাড়ি এত পছন্দ, তোকে আমি তোর বিয়ের সময় একটা গাড়ি প্রেজেন্ট করব। তোকে কথা দিলাম রে মা। নীতু কচি কচি গলায় বলত, আপনি ভুলে যাবেন না তো চাচা?

না, ভুলব না। আমি কিছুই ভুলি না রে মা। আমার স্মৃতিশক্তি অসাধারণ।

বিয়েতে সে গাড়ি পাবে না। এই শোকে নীতু নিশ্চয়ই কাঁদে নি— তার দুঃখে কোনো খাদ ছিল না। মইনুদিন চাচা তাকে যেমন পছন্দ করতেন সেও তাকে তেমনি পছন্দ করত। আমরা তাঁর মৃত্যুতে সত্যিকার অর্থে ব্যথিত হলাম। তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার আর দুমাস পর যখন তাঁর মেয়ে আমেরিকা থেকে জানাল— তার বাবা মৃত্যু সময় বলে দিয়েছেন ঢাকার যে বাড়িতে আমরা আছি–সেই বাড়িটা যেন আমরাই পাই এই ব্যবস্থা করতে। কীভাবে কী করতে হয় তা সে জানে না। তার মার শরীরও ভালো না। তার দেশে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করবে।

এই চিঠি পেয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা অভিভূত হলাম। মইনুদিন চাচা তাঁর এক জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। তবে তার মানে এই না যে, তিনি আস্ত একটি বাড়ি ছেলেবেলার বন্ধুকে দিয়ে দেবেন। কেউ তা দেয় না। গল্প, উপন্যাস বা সিনেমায় হয়তো দেয় বাস্তবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *