০১. আকাশে মেঘ করেছে

আকাশে মেঘ করেছে।

ঘন কালো মেঘ। ক্রমেই ফুলে ফোঁপে উঠছে।

ওসমান সাহেব আকাশের দিকে তাকালেন। তার কেন জানি মনে হল এই মেঘে বৃষ্টি হবে না। প্রিকগনিশন নাকি? ভবিষ্যতের কথা আগে ভাগে বলে ফেলা। তিনি হাঁটছেন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। উদ্দেশ্যহীন মানুষের হাঁটা। গন্তব্যহীন যাত্ৰা। অথচ তার একটি গন্তব্য আছে। বি.ডি.আর-এর তিন নম্বর গেট পার হয়ে তিনি ঢুকে যাবেন নিউ পল্টন লাইনের গলিতে। গোরস্থানের দেয়াল ঘেঁষে এগুতে থাকেন।

স্নামালিকুম।

ওসমান সাহেব চমকে তাকালেন। সালামটা কী তাকেই দেয়া হয়েছে? দু-একজন কী চিনতে শুরু করেছে? চেনার কথা নয়। তিনি মাসের দুবারের বেশি আসেন না। এদিকে। সালাম দেয়া ছেলেটির বয়স অল্প। চোখে চশমা। সে তাকাচ্ছে কৌতূহলী হয়ে। ওসমান সাহেব প্রশ্রয়ের হাসি হাসলেন। এবং মৃদু স্বরে বললেন–ভাল তো?

আপনি কী এই পাড়াতে থাকেন?

না। তবে মাঝে মাঝে আসি।

আমি আগেও একবার দেখেছি। তখন চিনতে পারিনি।

তিনি মৃদু হেসে হাঁটতে শুরু করলেন। পেছন না ফিরেও বুঝতে পারছেন ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে। তার হয়ত আরও কিছু কথা বলবার ছিল।

ওসমান সাহেব ঘড়ি দেখলেন–পাঁচটা দশ। তিনি সব সময় চারটার মধ্যে এসে পড়েন। আজ অনেকখানি দেরি করলেন। তার চরিত্রের সঙ্গে এটা খাপ খায় না। রানুকে পাওয়া যাবে কী? দেরি দেখে কোথাও চলে যায়নি তো?

রানুরা থাকে তিন তলার শেষ মাথায়। ছোট্ট এক চিলতে বারান্দা আছে তাদের। সে সেখানে দু’টি টবে মরিচ গাছ লাগিয়েছে। গোলাপ-টোলাপ না লাগিয়ে মরিচ গাছ লাগানোটা উদ্দেশ্যমূলক। উদ্দেশ্যটা কী?

তিনি বারান্দায় কাউকে দেখলেন না। সাধারণত টগর রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ওরা কী নেই আজ? টগরের জন্যে এক প্যাকেট মিমি-এনেছেন। তিনি মিমির প্যাকেট হাতে নিয়ে নিলেন। আজ যেন গতবারের মত না হয়। গতবার পেয়ারা নিয়ে গিয়েছিলেন মনের ভুলে দেয়া হয়নি।

ওরা কী সত্যি সত্যি নেই? সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তার মনে আশা ভঙ্গের বেদনা জাগতে লাগল। সিঁড়ি অন্ধকার। কে যেন জায়গায় জায়গায় পানি ফেলে রেখেছে। রানুকে বলতে হবে এ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে ভাল একটা জায়গায় বাড়ি নিতে।

কলিং বেলে হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল। যেন দরজার পাশেই রানু অপেক্ষা করছিল। ওসমান সাহেব মৃদু গলায় বললেন–একটু দেরি করে ফেললাম। রানু কিছু বলল না।

টগর কী বাসায় নেই?

না।

কোথায় গিয়েছে?

খালার বাসায় গেছে। এসে পড়বে।

তিনি ইতস্তত করে বললেন–আমি কী ওর জন্যে অপেক্ষা করব?

ইচ্ছা করলে কর।

তিনি বসতে বসতে বললেন–তুমি ভাল আছ তো? রানু জবাব দিল না। ওসমান সাহেব বললেন–ঘরে কী মাথা ধরার টেবলেট আছে? রানু হ্যাঁ না কিছুই বলল না। পাশের ঘরে চলে গেল। তাঁর মনে হল রানু অনেক রোগা হয়ে গেছে। অসুখ-বিসুখ হয়েছে কী? রোগা হবার জন্যেই বোধ হয় তাকে উনিশ-কুড়ি বছরের তরুণীর মত লাগছে। তিনি মনে মনে রানুর বয়স হিসেব করতে চেষ্টা করলেন। বিয়ে হয়েছিল। ষোল বছর বয়সে। সেও তো পাঁচ বছর হল। তার মানে রানুর বয়স এখন একুশ। এত অল্প।

পাশের ঘরে খুটি খুঁট শব্দ হচ্ছে। ওটা কী রান্না ঘর? এখানে সব মিলিয়ে কটি রুম কে জানে! কিছুই তিনি জানেন না। রানুর শোবার ঘরটি কেমন? খুব গোছানো নিশ্চয়ই। এমনিতেই রানুর খুব গুছিয়ে রাখার স্বভাব। টুথপেস্টের মুখ খুলে রাখলে সে রাগ করত। মাথা আঁচড়ে চিরুনি ড্রেসিং টেবিলের উপর না রেখে অন্য কোথাও রাখলে গম্ভীর হয়ে যেত।

দুলাভাই, আপনার ওষুধ নিন।

কামিজ পরা লম্বা বেণীর মেয়েটি প্রায় নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি মেয়েটিকে চিনতে পারলেন না। দুলাভাই সম্বোধনে বিব্রতবোধ করতে লাগলেন।

আমাকে বোধ হয় চিনতে পারেননি, তাই না?

চেনা চেনা লাগছে অবশ্যি।

মোটেই চেনা চেনা লাগছে না। আপনি আমাকে দেখেছেন মাত্র একবার। আপনার বিয়ের সময়। তখন আমার চেহারা অন্য রকম ছিল।

এখন চেহারা বদলে গেছে?

হ্যাঁ।

তুমি কে?

আমার নাম অপলা। আমি রানু আপার দূর সম্পর্কের বোন হই।

তিনি দু’টি ট্যাবলেটের একটি গিলে ফেলে অন্যটি পকেটে রাখলেন, শান্ত স্বরে বললেন। আমি একসঙ্গে দু’টি ট্যাবলেট গিলতে পারি না, বমি হয়ে যায়, কাজেই বাকিটা খাব দুঘণ্টা পর।

এর মধ্যেই হয়ত আপনার মাথাব্যথা সেরে যাবে।

না, সারবে না। আমার এত সহজে কিছু সারবে না।

ওসমান সাহেব লক্ষ্য করলেন অপলা মেয়েটি বেশ সহজভাবেই আলাপ করছে, মেয়েটা রানুর অন্য আত্মীয়দের মত নয়।

দুলাভাই আপনি কী বারান্দায় বসবেন? এখানে ফ্যান নেই। আপনার গরম লাগছে নিশ্চয়ই।

না, থাক।

চলুন আমি চেয়ার নিয়ে দিচ্ছি।,

আমি বারান্দায় বসলে তোমার আপা সেটা পছন্দ করবে না। সে চায় না লোকজন দেখুক আমি তার এখানে আসি।

অপলা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে চুপ করে রইল। ওসমান সাহেবের মনে হল, এটা না বললেই পারতেন। কেন এটা বললেন? তিনি কী অবচেতন মনে মেয়েটির সহানুভূতি চাচ্ছিলেন?

অপলা বলল বসুন চা নিয়ে আসি। তিনি দীর্ঘ সময় বসে রইলেন একা একা। বসে থাকতে তার কখনো খারাপ লাগে না, আজ লাগছে। চলে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। এতক্ষণ তার গরম লাগেনি। এখন লাগছে। রানুর শোবার ঘরে ফ্যান আছে কী? তিনি ঠিক করে রাখলেন রানু এলেই জিজ্ঞেস করবেন। শুধু এটিই নয়। তার আরো কিছু জািনবার আছে। যেমন পুরুষ মানুষ কেউ কী থাকে রানুদের সঙ্গে? তিনি যতবার এসেছেন কোন বারই পুরুষ কাউকে দেখেননি। একবার এসে এশট্রেতে ছটা সিগারেটের টুকরো দেখেছেন। যে এসেছিল। সে নিশ্চয়ই নার্ভাস প্রকৃতির লোক; কারণ কোন সিগারেটই পুরোপুরি শেষ করেনি। একটি তো প্রায় আস্তই ছিল।

দুলাভাই, চা দেয়া যাবে না, চিনি নেই।

চা লাগবে না।

আপনি খবরের কাগজটা পড়ুন। টগর এসে পড়বে।

অপলা কাগজটা টেবিলে রেখে ভেতরে চলে গেল। রানু চায় না কেউ তার সামনে থাকুক। মানুষকে অপদস্ত করার ও কষ্ট দেবার সব কটি মেয়েলি অস্ত্রই সে প্রয়োগ করতে চায়।

খবরের কাগজে কোনো খবর নেই। তেরো বছরের একটি কিশোরীকে ঝিকাতলা থেকে দিনে দুপুরে অপহরণ করা হয়েছে। দু’টি ছেলে বেবি টেক্সিতে করে মেয়েটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এটা কী বিশ্বাসযোগ্য? হাজার হাজার মানুষ গিজিগিজ করছে চারদিকে। একটি মেয়ের চিৎকারে লোক জমে যাবার কথা। নিশ্চয়ই কোনো প্রেমের ব্যাপার। মেয়েটি পালিয়েছে। বাবা অপহরণের মামলা করছেন।

পাশের ঘর থেকে রানুর হাসির শব্দ পাওয়া গেল। অপলাও হাসছে। ওসমান সাহেব সিগারেট ধরালেন। ঘড়ি দেখলেন। খবরের কাগজে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপনগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। অবসর সময়ে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন পড়তে তার বেশ ভাল লাগে। এর পেছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণটি কী? কারণ কিছু নিশ্চয়ই আছে। এই যে রানু খিলখিল করে হাসছে তার পেছনে যেমন কারণ আছে, বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন পড়ার পেছনেও কারণ আছে। চার রুম। গ্রিল দেয়া বারান্দা। সার্ভেন্টস রুম ও গ্যারাজ। ভাড়া আলোচনা সাপেক্ষ। ড্রয়িং কাম ডাইনিং, দুই বেডরুম, দুই বাথরুম। ভাড়া বাইশশ টাকা অগ্রিম আবশ্যক।

দুলাভাই আপনার চা।

ওসমান সাহেব চায়ের পেয়ালার দিকে তাকালেন! দুধ চা। তিনি দুধ চা খান না। দুধ ছাড়া হালকা চা খান। রানু তা জানে। ওসমান সাহেব হাসি মুখে বললেন চিনি ছিল না বলেছিলে।

টগরের চিনি থেকে বানানো হয়েছে।

টগরের জন্য আলাদা চিনি কেনা হয়?

হ্যাঁ।

অবাক হতে গিয়েও তিনি অবাক হলেন না। সব কিছু আলাদা আলাদা করার একটা প্রবণতা রানুর আছে। বিয়ের কিছু দিন পরই রানু বলেছিল তুমি আমার সাবান ব্যবহার করছ, কেন? ওসমান সাহেব অবাক হয়ে বলেছিলেন তোমার আলাদা সাবান নাকি?

হ্যাঁ। নীল সাবানদানীতে যে সাবান সেটা আমার।

ও আচ্ছা।

তবু তার মনে থাকত না। রানুর সাবান মেখে ফেলতেন। ভুল ধরা পড়া মাত্র লজ্জাবোধ করতেন।

চা খাচ্ছেন না কেন? চা খান।

তিনি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন অপলা চাটা ভালই বানিয়েছ।

আমি বানিয়েছি বুঝলেন কী করে?

আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি।

আবার অনেক কিছু বুঝতেও পারেন না।

তা ঠিক আমি অনেক কিছুই বুঝতে পারি না।

অপলা একটু অবাক হল। সে ধারণা করেছিল ওসমান সাহেব তার কথায় আপত্তি করবেন। কিছু কিছু মানুষকে দেখলেই মনে হয় এরা কারো কথাই মেনে নেয় না। সব সময় কঠিন কিছু যুক্তি-তর্ক বের করে বিপক্ষের! রাশায়ী করে দেয়। যুক্তিগুলি দেয়া হয় খুব ঠাণ্ডা মাথায় গলার স্বর থাকে খাদে। মুখ থাকে হাসি হাসি কিন্তু প্রতিটি বাক্যই কেটে কেটে বসে যায়। ওসমান সাহেব কী এ রকম একজন মানুষ?

অপলা, এমন মন দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন? কী দেখছ?

অপলা লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়াল। বিব্রতম্বরে বলল–আপনি বসুন আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসব। কাপড় বদলাব।

আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য তোমাকে তাড়াতাড়ি আসার দরকার নেই। আমার একা বসে। থাকার অভ্যাস আছে। ইউ টেক ইওর টাইম।

মাথা ধরাটা এখনো যায়নি। ওসমান সাহেব দ্বিতীয় ট্যাবলেটটি গিলে ফেললেন। একা সময় কাটানো তার নিজস্ব কিছু পদ্ধতি আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে শুরু করলেন। ঘরের প্রতিটি জিনিসের দিকে তিনি তাকবেন। এবং বেশ কিছু সময় এগুলি নিয়ে ভাববেন। এই ছোট্ট ঘরে তিনি তাঁর পদ্ধতি আগেও অনেকবার খাটিয়েছেন। প্রতিটি জিনিসই তার চেনা, তবু প্রতিবারই নতুন নতুন ডিটেইল চোখে পড়ে। যেমন আজ চোখে পড়ল শোকেসে কিছু নতুন বই এনে রাখা হয়েছে। সবই কবিতার বই। রানু কবিতা পড়ে না। এখন কী পড়তে শুরু করেছে, না উপহার পাওয়া? শোকেসে একটা তালাও লাগানো হয়েছে। খুব সম্ভব টগরের জন্যে। শোকেস ঘাটাঘাটির বয়স এখন। দেয়ালে যে ক্যালেন্ডার ঝুলছে তার পাতা উল্টানো হয়নি। এখনো দেখা যাচ্ছে জুলাই মাস এই ভুল রানু করবে না। সে এসব ব্যাপারে খুব সাবধান। কিন্তু ভুলটা করেছে। এটাকে কী সূক্ষ্ম কোনো মানসিক পরিবর্তনের লক্ষণ বলা যাবে? ওসমান সাহেব ক্যালেন্ডারের ছবিটির দিকে মন দিলেন, রানু এসে ঢুকাল তখন।

সে নিশ্চয়ই কোথাও বেরুবে। যত্ন করে সেজেছে। কালো জমিনের উপর লাল পাতা আঁকা জামদানী শাড়ি। শাড়িটার জন্যেই কী তার চেহারা বদলে গেছে, না রোগ হবার জন্যে এমন লাগছে? ওসমান সাহেব মুগ্ধ হয়ে তাকালেন। এবং মনে মনে বললেন–কিছু মেয়ে আছে যাদের রূপ সব সময় টের পাওয়া যায়।

তোমরা কোথাও যাচোচ্ছ নাকি?

হ্যাঁ বিয়েতে যাচ্ছি।

আমি তাহলে যাই?

না বস। টগর আসবে। টগরকে তুমি আজ রাতে তোমার সঙ্গে রাখবে। সকাল বেলা আমি ওকে নিয়ে আসব। অসুবিধা হবে?

না। কার বিয়ে?

আমাদের এক আত্মীয়।

রানু বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই সামনে বসল। শীতল স্বরে বললো সামনে তো এ্যাশট্রে আছে, চায়ের কাঁপে ছাই ফেলিছ কেন?

এ্যাশট্রেটা এত সুন্দর যে ছাই ফেলতে ইচ্ছা করে না। সুন্দরের মধ্যে অসুন্দর ঠিক মানায় না।

আমার সঙ্গে বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। তোমার বড় বড় কথা অনেক শুনেছি। আর শুনতে ইচ্ছা করছে না।

তিনি দ্বিতীয় সিগারেটটি ধারালেন এবং খুব সাবধানে ছাই ফেললেন এ্যাশট্রেতে। রানুবারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। ওসমান সাহেবও এগিয়ে গেলেন–হাল্কা গলায় বললেন, এ বাড়িতে তোমার সঙ্গে পুরুষ মানুষ কেউ থাকে না?

না।

একা একা থাক ভয় লাগে না।

ভয় লাগবে কেন? এটা আমার বড় খালার বাড়ি। রাতে আমি বড় খালার সঙ্গে ঘুমাই।

এটা তোমার খালার বাড়ি জানতাম না তো। আপন খালা?

রানু জবাব দিল না। আগ্রহ নিয়ে রাস্তার দিকে তাকাল। ওসমান সাহেব দেখল ক্রিম কালারের একটা গাড়ি এসে থেমেছে। প্রায় ছফুটের মত স্বাস্থ্যবান একটি তরুণ হাসি মুখে নামছে গাড়ি থেকে। খুব সম্ভব এই ছেলেটির সঙ্গে রানু বিয়েতে যাবে। রানুর দিকে তাকালেন। ছেলেটিকে ওসমান সাহেব আগে দেখেছেন। কিনা মনে করতে পারলেন না। দেখেছেন হযত, মানুষের চেহারা তার মনে থাকে না।

রানু ঐ ছেলেটা কে?

আমাদের দূর সম্পর্কে আত্মীয়–আলম। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

ওর সঙ্গে কী যাচ্ছে?

হ্যাঁ। এত প্রশ্ন করছি কেন?

তিনি অপ্রস্তুত হয়ে নিজ জায়গায় ফিরে গেলেন। আলমকে দেখে মনে হল সে ওসমান সাহেবকে দেখে খুব অবাক হয়েছে। সে তার বিস্ময় গোপন করল না। হাসি মুখে বলল, কেমন আছেন। আপনি?

ভাল। ভাল আছি।

আপনি কী আমাকে চিনেছেন? আমি রানুর মামাতো ভাই। আমার নাম আলম। রানু, কী আপনাকে আমার কথা বলেছে?

তিনি হ্যাঁ না কিছুই বললেন না। অস্পষ্টভাবে হাসলেন। যার মানে হ্যাঁও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। আলম বলল–আমি আপনার একটা মাত্র বই পড়েছি–নাম হল গিয়ে চৈত্রের রাতে। বইটা আমার একটুও ভাল লাগেনি। আপনি রাগ করলেন না তো?

না, রাগ করিনি।

রানুকে বলেছিলাম–আমি তো বই পড়ি না। পড়তে ভালও লাগে না। উনার সবচে ভাল বইটা দাও, পড়ি। রানু ঐটা দিল।

আলম সিগারেট ধরাল। নড়েচড়ে বসল। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে একটা আলোচনায় নামতে চায়। ওসমান সাহেব শঙ্কিত বোধ করলেন। যে তার বই পছন্দ করে না তার সঙ্গে আলোচনা জমে না। কথা বলতে গেলেই মনের ওপর চাপ পড়ে।

আচ্ছা ওসমান ভাই, চৈত্রের রাতে বইটিতে নীলু। মেয়েটি শেষ মুহূর্তে এই কাণ্ডটি কেন করল?

ওসমান সাহেব জবাব দিলেন না। আলম উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগল নীলু যা করেছে তাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। আমি তো তাকে ক্ষমা করবো না। ইন ফেক্ট…. তিনি হেসে ফেললেন। আলম কথা বন্ধ করে অবাক হয়ে বলল হাসছেন কেন? ওসমান সাহেব বুলুন, উপন্যাসটি আপনার পছন্দ হয়নি তবুও নীপুর ব্যাপারে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়েছেন। তাই হাসছি।

আলম আধা-খাওয়া সিগারেট এ্যাস্ট্রেতে গুজে নতুন সিগারেট ধরাল। অসহিষ্ণু কণ্ঠে বললঅনেক লেট করে ফেললাম আমরা। রানু বলল–টগরকে নিয়ে আসতে এত দেরি করছে কেন, বুঝছি না। সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখে চিন্তার ছাপ। কপালে দু’টি সূক্ষ্ম ভাঁজ।

টগরকে তার কিছুক্ষণ পরই আসতে দেখা গেল। সে তার খালার কোলে ঘুমুচ্ছে। রানু বলল যাক, টগরকে সঙ্গেই নিয়ে যাব। ওসমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। আলম বলল–চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

দরকার নেই কোনো।

চলুন না। এমনিতেও আমাকে সিগারেট কিনতে হবে।

আলম বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত এল এবং এক সময় বলল–আপনি আপনার নাম লিখে একটা বই আমাকে দেবেন। আমি আমার বন্ধুদের দেখাব।

ঠিক আছে দেব। রানুর কাছে রেখে যাব।

আপনিও চলুন না। আমাদের সঙ্গে।

না। আমি বিয়ে-টিয়েতে বিশেষ যাই না। আপনারা যান।

আপনার বাসায় আপনাকে নামিয়ে দেব।

দরকার নেই কোনো।

তিনি হাটতে শুরু করলেন। অল্প কয়েক পা হাঁটার পরই মনে হল মিমির প্যাকেটটা টগরকে দেয়া হয়নি। আলম এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছা করলেই ফিরে গিয়ে তার হাতে দেয়া যায়। কিন্তু ফিরলেন না। লম্বা লম্বা পা ফেলতে লাগলেন।

আকাশে মেঘ। ঘন কালো মেঘ।

বৃষ্টি কী হবে? ভাদ্র মাসে এত মেঘ হয় আকাশে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *