অনিমা ও রাজীবের প্রেমের কথা বেশি দিনের নয়। দূরখালি স্টেশনে অনিমার বাবা বদলি হয়ে এসেছে মাত্র ছ’মাস হলো। এর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেভাবে জমে উঠলে ভালোবাসার অতিরিক্ত আরো নানা ধরনের আসক্তির জন্ম হয় তেমন পর্যায়ে ওরা পৌঁছেনি।
স্টেশন মাস্টারের মেয়ে অনিমা। বাবার সঙ্গে স্টেশন থেকে স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে থাকতে ভালো লাগে। ওর। বছর দুয়েক আগে মা মরে গেছে। ওর কোনো ভাইবোনও নেই। বি.এ পরীক্ষা দিয়েছে। ইচ্ছে আছে কোনো প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করার। এখনো সে সুযোগ আসেনি। রাজীবের বাবা দূরখালি গায়ের কৃষক, অবস্থা মোটামুটি ভালো। সংসারে অভাব নেই। তবে ছেলেকে বি.এ পাসের পরে ঢাকায় পাঠিয়ে এম.এ পড়াবে এমন ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু ছেলের জোর তাগাদা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে একটা কিছু করবে এমন স্বপ্ন ওর ভেতরে আছে। এর পাশাপাশি বাড়তি যেটুকু ইচ্ছে তা হলো এম.এ পাস করতে পারলে দূরখালি গায়ের প্রথম ডিগ্রিধারী যুবক হবে ও। বাবাকে এই শর্তে রাজি করিয়েছে। ছেলে এম.এ পাস করলে বাবারও নামডাক হবে গাঁয়ে, এমন লোভ কোন বাবার না হয়!
একদিন ঢাকা যাওয়া ঠিক হয় রাজীবের। স্টেশনের প্লাটফর্মের শেষপর্যন্ত বাবা রাজি হয়েছে। খরচ চালাতে বাবার একটু কষ্ট হবে, তারপরও বাবা খুশি যে, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি নিতে পারব। বাবা গাঁয়ের প্রথম মানুষ হবেন, যার ছেলে এম.এ পাস করেছে।
হা হা করে হাসে রাজীব। সঙ্গে অনিমাও। হাসি থামলে রাজীব বলে, তবে আমি চেষ্টা করব টিউশনি করে বাবার কাছ থেকে যত কম টাকা নেয়া যায়। আর চেষ্টা করব কোনো কারণে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি লেখাপড়া শেষ করে বাড়ি ফিরতে।
অনিমার দু-চোখে ঝিলিক ওঠে।
সত্যি ফিরবে তো? এম.এ পাস করে তুমি ঢাকায় থেকে যাবে না তো?
মোটেই না, ঢাকায় থাকব কেন? আর যদি থাকতেই হয়, যদি চাকরি করি, তাহলে তুমি যাবে তো আমার সঙ্গে?
অনিমার ছেলেমানুষি কণ্ঠস্বরে কিছুটা বিস্ময় ধ্বনিত হয়, আমাদের ঘর হবে?
হবে, হবে, হবে। দুজনে আনন্দের স্রোতে ভেসে যায়। হাসি থামলে রাজীব দ্বিধা নিয়ে বলে, কিন্তু আমার একটা ভয় আছে অনিমা।
ভয়? অনিমার দম আটকে আসে।
ভয়ই তো। আমার দুবছরের পড়ার ফাঁকে তোমাকে যদি তোমার বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়!
অনিমার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস ধ্বনিত হয়, বাবা সে রকম চেষ্টা করলে আমি রাজি হবো না। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
কত দিন অনিমা? কত দিন?
অনিমা মাথা ঝাকিয়ে অবলীলায় বলে, যত দিন তুমি না ফিরো।
তাহলে এখন থেকে আমাদের অপেক্ষার শুরু।
হ্যাঁ, শুরু।
দুজনে হাত ধরে। দুজনের মাথার ওপর উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি। দুজনে প্লাটফর্ম থেকে লাফিয়ে নেমে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যায়। প্লটফর্ম ধরে নয়, ধানক্ষেতের আল ধরে যতটা পথ পাড়ি দেয়া যায় তত দূরে।
দুদিন পরে চলে যায় রাজীব। স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেনের লেজটুকু অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পরেও অনিমার মনে হয় রাজীব যায়নি–ও একটু পরই রাজীবের কণ্ঠ শুনতে পাবে। অকস্মাৎ এই ফাঁকা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে ওর ভয় করে। মনে হয় চারদিক থেকে হলুদ জামা গায়ে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে। ওদের ফ্যাকাশে চেহারায় আলো নেই। ও চারদিকে তাকায়। যেন হলুদ আলোর প্রলেপ পড়েছে চারদিকে। গাছগুলো নিথর, পাতাগুলোর রঙ আর সবুজ নেই। চারপাশের ধানক্ষেতের ওপর হলুদের ছোঁয়া। গত বছর জন্ডিসে আক্রান্ত হলে বাবার চেহারাটা অমন হয়ে গিয়েছিল। ও বাবার কাছে যেতে ভয় পেত মনে হতো বাবাকে ধরতে গেলে বাবা মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। আর বাবা না থাকলে ও কার সঙ্গে কথা বলবে, কে ওকে বকুনি দেবে, কে ওকে বলবে, মেয়েটা আমার বুকের ভেতরে একটা বড় মাকড়সা হয়ে আটকে আছে, জাল বুনছে। আমি সেই জালে আটকা পড়া মাছি। অনিমা ভয়ে কুঁকড়াতে থাকে। মনে হয় ফাঁকা স্টেশনের গরুগুলো তেড়ে আসবে ওর দিকে, আর রাখাল বালকেরা ভাববে ও একটা ডাইনি, গরুগুলোকে নিয়ে গুহার ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে তেমন কিছু ভাবার সঙ্গে সঙ্গে ওর মায়ের কথা মনে হয় মরে যাওয়ার আগে মাকেও অমন হলুদ দেখাচ্ছিল–ফ্যাকাশে, বিবর্ণ। মৃত্যুর রঙ কি তাহলে হলুদ? নাকি কালো? ও দুহাতে মুখ ঢাকে।
তখন পেছন থেকে ওর বাবা তৌফিক ওর ঘাড়ে হাত রাখে।
একা একা দাঁড়িয়ে আছিস যে মা?
বাবা, মৃত্যুর রঙ কী?
মৃত্যুর আলাদা রঙ নেই। সব রঙের ভেতরই মৃত্যুর ছায়া আছে।
লাল রঙে আছে?
কেন থাকবে না। সন্ত্রাসীর গুলিতে মানুষ তো রক্তের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। রক্তের রঙ লাল ছাড়া আর কী?
বাবা, মায়ের মৃত্যুর রঙ কী?
হলুদ।
হলুদ! আশ্চর্য, আমারও তাই মনে হয়েছিল।
বাড়ি চল মা। বাড়ি গিয়ে আমরা দুজনে তোর মায়ের ছবি দেখব।
ঠিক। চলো। ছবিতে মা আমাদের কাছে ফিরে আসবে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমার মনে হবে মা মরেনি। মা আমাদের সঙ্গেই আছে। ভাগ্যিস, দুটো অ্যালবাম ভরে মায়ের ছবি রেখেছি আমরা।
অনিমা বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরে, যেন ও শৈশবের অনিমা। বাবা ওকে গুড়বালি গাঁয়ের মেলায় নিয়ে অনেক খেলনা কিনে দিয়েছে। সেদিন গুড়বালি স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনটা ছেড়ে যাবার পরে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। কে বা কারা রেললাইনের খানিকটুকু তুলে নিয়েছিল। বাবা ভীষণ মন খারাপ করেছিল। অনেক দিন ভাত খেতে পারেনি। এক গভীর রাতে ওর ঘুম ভেঙে গেলে ও দেখেছিল, মা বাবাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে।
সেই থেকে বাবা আবার ভাত খাওয়া শুরু করেছিল। এখন যদি আবার কোনো ট্রেন দুর্ঘটনায় বাবার মন খারাপ হয় তাহলে কে ওর বাবাকে ভাত খাইয়ে দেবে? মা তো নেই। তাহলে কি ওর বাবা ভাত না খেতে খেতে মরে যাবে! অনিমা নিজের ছেলেমানুষি ভাবনায় বিরক্ত হয়। বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে বলে, বাবা আমি তোমার ছবির একটা অ্যালবাম। বানাতে চাই।
আমার তো অত ছবি নেই মা।
তুমি আর আমি শহরে গিয়ে অনেক ছবি তুলব।
তুলব, তোর কথাই ঠিক। আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে মা।
চলো, তোমাকে আগে খেতে দেই।
অনিমা রান্নাঘরে ঢুকলে তৌফিক চেঁচিয়ে মেয়েকে ডাকে। বাবার কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক মনে হয় অনিমার কাছে। ও দ্রুত কাছে এসে বলে, কী হয়েছে বাবা?
আমি ভাত পরে খাব। আগে তোর মায়ের ছবি দেখব।
অনিমা আর কোনো কথা না বলে অ্যালবাম নিয়ে এসে বাবার সামনে রাখে। তৌফিক অনেকক্ষণ ধরে অ্যালবামের পাতা ওল্টায়। অনিমা চুপ করে বাবার পাশে বসে থাকে। কিছুতেই বুঝতে পারে না যে বাবার কী হলো। আজ ওর বাবা বেশ লম্বা সময় ধরে ছবি দেখছে।
বোহেমিয়ান তন্ময় আজো বাড়ি থেকে চুপচাপ পালানোর জন্য তৈরি হয়েছে। ওর যখন ইচ্ছে করে তখন ও হুটহাট যেখানে-সেখানে চলে যায়। যত দিন খুশি তত দিন থাকে। শুধু মাকে চিঠি লিখে নিজের খবরাখবর দেয়। সাবিহা বানু বলে, আমার ছেলের পায়ের নিচে সরষে। তন্ময়ের মনে হয়, মায়ের উপমাটা তো অনেককাল আগের কথা। ও নিজে ওর জন্য নতুন উপমা বানাবে। বেশ জুতসই উপমা, না ঠিক হলো না, আধুনিক উপমা, না তাও হলো না শেষ পর্যন্ত পরে ভাববে মনে করে ও ভাবাভাবি ক্ষান্ত দেয়। ওর প্রিয় জিনিস ক্যামেরা। শখ ছবি তোলা। সেজন্যই ওর হাজারো জায়গা খুঁজে বেড়ানো, যেন দারুণ একটি ছবি তুলতে পারে।
তখন ভোর হয়েছে মাত্র। দিনের প্রথম আলোর শুরু। তন্ময় বিছানা ছেড়ে প্রথমে জানালায় দাঁড়ায়। আলোর আভায় ফুটে ওঠা দিনের সূচনা। দেখে। ফিরে এসে বাথরুমে যায়। টেবিলের ওপর ব্যাগ আর ক্যামেরার ব্যাগ রাখা। রাতেই সব কিছু গুছিয়ে রেখেছিল। টেবিলের কাছে দাঁড়িয়েই মাকে চিঠি লেখে। ফুলদানির নিচে ভাজ না-করা চিঠিটা রেখে দেয়, যেন মা দূর থেকেই চিঠিটা দেখতে পায়। তাহলেই বুঝে যাবে যে ছেলেটা পালিয়েছে।
নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে ও মায়ের ঘরে উঁকি দেয়। সাবিহা বানু ঘুমিয়ে আছে। ও নিজেকে বলে, মা কখনো ভোরে উঠতে পারে না। বেচারা ইনসমনিয়ার রোগী। বাবা মারা যাবার পরে সেটা আরো বেড়েছে। ও মৃদু স্বরে বলে, যাচ্ছি মা, তোমার জন্য চিঠি রেখে গেলাম। তুমি আমার কাছ থেকে শুধু এটুকুই তো চাও।
সিঁড়ি দিয়ে খুব নিঃশব্দে নামে। যেন বাড়ির কাজের মানুষদের ঘুম না ভাঙে। তাহলেই চেঁচামেচি শুরু করবে। মাকে জাগিয়ে ফেলবে। গেটের একটা ড়ুপ্লিকেট চাবি আছে ওর কাছে। ধীরেসুস্থে গেট খুলে বেরিয়ে যায় ও। গেটটা মুখে মুখে লাগিয়ে রাখে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে বলে, পুরো ধরিত্রী আমার।
ফুটপাথে বসে ছোট মেয়ে সখিনা ফুল গোছাচ্ছে বিক্রি করার জন্য। তন্ময় ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সখিনা হাসিমুখে ওর দিকে তাকায়। নিরন্ন, শুকনো চেহারার চোখজোড়া দারুণ তীক্ষ। ওকে দিয়ে একটা কিছু হবে–তন্ময়ের মনে হয়। ও সখিনাকে বলে, তোমার একটি ছবি তুলি?
সখিনা চটপট উঠে দাঁড়ায়। একগুচ্ছ ফুল বুকের কাছে ধরে পোজ দিয়ে বলে, সুন্দর কইরা তুলবেন কিন্তু। আমারে একড়া ছবি দিবেন। আমার মারে দেখামু। মা খুশি হইয়া কইব, ও আল্লারে, আমার সখিনা কত সোন্দর! আল্লা অরে য্যান বাঁচাইয়া রাখে।
তন্ময় ছবি তোলে। কয়েকটা ছবি তুলে সখিনার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ায়। এ বয়সে ও ফুল বেচবে কেন? ওর কি আরো কিছু পাওনা ছিল না? সখিনা বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে, তাকায়ে আছ ক্যান? ছবি ভালো হয় নাই?
তন্ময় জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলে, না একটুও ভালো হয়নি। এটা কোনো ছবিই। এমন ছবি তুলতে আমার লজ্জা হয়।
সখিনার ভীষণ মন খারাপ হয়। বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে, আমারে খুব খারাপ দেহাইতাছে?
তন্ময় ওর বিপ্ন দৃষ্টি উপেক্ষা করে অবলীলায় বলে, হ্যাঁ, ভীষণ খারাপ দেখাচেছ।
আমারে দেহাও না। কেমুন খারাপ লাগতাছে আমি দেহি।
তন্ময় ওর ডিজিটাল ক্যামেরায় সখিনাকে ছবি দেখায়। সখিনা ছবি দেখে উৎফুল্ল হয়ে বলে, আল্লারে কী সোন্দর দেহাইতাছে!
তুমি খুশি হয়েছ সখিনা?
সখিনা ঘাড় কাত করে লম্বা করে টেনে বলে, হ–খুব খুশি হইছি। আমার মাও খুশি হইব। কইব, ও আল্লারে আমার সখিনা তো একডা ফুটফুইটা মাইয়া!
তন্ময় হো-হো করে হাসে। সখিনার স্মার্টনেস দেখে খুব মজা পায়। তারপরও বলে, কিন্তু এটা তোমার ছবি নয়। তোমার ছবি এমন হওয়া উচিত। তন্ময় ওকে অন্য একটা ছবি দেখায়। সখিনা ছবি দেখে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। স্কুল ইউনিফর্ম পরে বই-খাতা হাতে নিয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে ও উৎফুল্ল হয়, তারপর আবার বিষণ্ণ হয়ে যায়। বলে, ধুত এইডা আমার ছবি না। আমি তো কোনো দিনই স্কুলে যাই নাই। আপনে মিছা ছবি তোলেন ক্যান?
সখিনা ফুলের গোছা উঠিয়ে নিয়ে গোছগাছ করতে করতে তন্ময়ের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তন্ময় অবাক হয় না। ও তো আগেই বুঝে নিয়েছিল যে সখিনা মেধাবী, ওর চোখ সে কথা বলে দেয়। ও চিন্তা করতে পারে। ও তো মুহূর্তে বুঝতেই পারবে যে ওর অবস্থান কোথায়। ও দেখতে পায় ও ফুল নিয়ে রাস্তায় সিগনাল বাতির নিচে গিয়ে। দাঁড়িয়েছে। এখন শুরু হবে ওর ছোটাছুটি। এ সত্য ওর চেয়ে বেশি কে কঠিনভাবে জানে! ও নিজেকেই বলে, তুমি বললে এটা মিথ্যে ছবি। এটাই তো সত্য হওয়া উচিত সখিনা। এই সত্য ছবির ধারণা থেকে তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তোমাকে এই জীবনের ধারণাও পেতে হবে।
তন্ময় হাঁটতে থাকে। রাস্তার ধারের ঝুপড়ি চায়ের দোকান খুঁজতে থাকে। তখন রাস্তা সরব হয়ে উঠেছে। গাড়ি-রিকশায় সয়লাব হয়ে উঠেছে রাস্তা। ও আবার দাঁড়ায়। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা তাক করে।
তখন সাবিহা বানুর ঘুম ভাঙে। বুকটা খচ্ করে ওঠে। তন্ময় কি ঘরে আছে? ছেলেটা যখন উধাও হয় একটু বলেও যায় না। আগে বলত আর মায়ের কাছ থেকে বাধা পেত। মন খারাপ করে বসে থাকত। কিছুকাল ঘরে থেকে ও না বলে চলে যাওয়ার উপায় বের করেছে–একটা চিঠি এখন মা-ছেলের সেতুবন্ধ।
সাবিহা বানু তন্ময়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ওর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘর খালি। ওর ব্যাগ এবং ক্যামেরা নেই দেখে সাবিহা বুঝে যায় যে, ছেলে উধাও হয়েছে। নিশ্চয় ফুলদানির নিচে চিঠি রেখে গেছে। সাবিহা ঘরে ঢুকে চিঠিটা নেয়। তন্ময় লিখেছে, মা, বরাবরের মতো আবারো বেরিয়ে পড়েছি। একটুও ভেব না। আমি জানি তুমি কখনোই ভাব না যে ছেলেটা বখে গেছে। তুমি ভাব ছেলেটা নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। সোনা মা আমার, প্রজাপতি মা আমার। কিছু ভেব না। অল্পদিনে ফিরে আসব। অনেক আদর আর ভালোবাসা। তোমার আদরের ছেলে বাজপাখি তন্ময়।
সাবিহা বানু বিষণ্ণ হয়ে চিঠিটা একটি ছোট সুন্দর কাঠের বাক্সে রাখে। দেখা যায় অনেক রঙের কাগজে লেখা অনেক চিঠি জমে আছে। কখনো কোনো চিঠি ফেলে দেয়নি সাবিহা বানু। প্রথম দিকে টেবিলের ড্রয়ারে চিঠিগুলো রেখে দিত। তারপর একটি সুন্দর বাক্স কেনে। আজো চিঠিটা দুতিনবার পড়ে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখে।
তন্ময়ের ঘরটা নিজেই গোছায়। যেখানেই যায় সেখান থেকে কিছু নাকিছু আনবে। ফলের বীচি, গাছের গোটা, রঙিন পাতা, দোকানের কিছু, একটি রুমাল কিংবা বাঁশের ফুলদানি, মাছ ধরার খলুই, বাবুই পাখির বাসা ইত্যাদি হরেক জিনিস। ঘরজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। সাবিনা বানু কোনোটা দেয়ালে টানায়, কোনোটা ঘরের এখানে-সেখানে সাজায়। বাড়ি ফিরে তন্ময় চেঁচিয়ে বলবে, মা, আমার বাবুই পাখি মা। ঠিক বাবুই পাখির বাসার মতো বুনেছ আমার ঘর। সাবিহা বানুর মনে হয় ছেলের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে ও। শুধু ও এখন সামনে নেই।
তখন ফুলমসি স্টেশন মাস্টারের ঘরে তৌফিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। দু-মাস হলো দূরখালি স্টেশন থেকে এখানে বদলি হয়ে এসেছে। জায়গাটা পছন্দ হয়েছে অনিমার। আসার পরপরই স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছে। একজনের লিভ ভ্যাকান্সিতে অবশ্য। তাতে কী, মেয়েটার সময় তো কাটবে। হঠাৎ হঠাৎ ওর চোখে জল দেখলে চমকে ওঠে তৌফিক। ভয় হয়। মেয়ের ভাবনায় হাতের কাজ থেমে যায়। চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দেয়ার সময় শুনতে পায় অনিমার কণ্ঠ। বাইরে কারো সঙ্গে কথা বলছে। একটু পরে ঘরের ভেতর মুখ বাড়ায়।
বাবা কি করছ?
আয় মা। তুই কী করছিলি?
স্কুল থেকে এসে তোমার জন্য দুটো কই মাছের দোপেঁয়াজা করেছি বাবা। চিংড়ি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ো ভাজি করেছি। তুমি খেয়ে বলবে আমি মুগের ডালটা খুব ভালো বেঁধেছি।
বাহ্, শুনেই আমার পেট ভরে যাচ্ছে। এই নতুন স্টেশনে এসে তোর কি ভালো লাগছে মা?
হ্যাঁ, বাবা, খুব ভালো লাগছে, ঘর-দুয়ার গোছাতেই যা একটু কষ্ট হয়।
তুই তো দিব্যি কদিনের মধ্যে বেশ গুছিয়ে ফেলেছিস। আমার কাজের মেয়ে, সোনাকুট্টি মেয়ে।
তুমি যে আমাকে কত ভালোবাস বাবা! আকাশের সমান, পাহাড়ের সমান।
হা হা করে হাসে অনিমা। তৌফিকও। দুজনেরই মনে হয় এসব বলার কথা নয়। তবু বলতে ভালো লাগে, বলাটা মজার হয় এবং কখনো ছোটবেলার খেলার মতো। হাসি থামলে তৌফিক বলে, তাই তো মাঝে মাঝে ভাবি, তোর বিয়ে হলে আমার কী হবে!
মেয়ের দিকে তাকিয়ে তৌফিক চোখ মোছে। অনিমা বাবার দিকে তাকিয়ে প্রথমে থমকে যায়, তারপর বলে, বাবা তুমি এমন করলে আমার যেদিক দু-চোখ যায় সেদিকে চলে যাব। স্টেশনে কেউ নেই, আমি এখন বাইরে গিয়ে ঘুরে বেড়াব। তুমি কাজ করো। ফাঁকা স্টেশন অনিমার বেশ লাগে। হুহু বাতাস এ-মাথা থেকে ও-মাথায় বয়ে যায়। গত পনেরো দিন রাজীবের কোনো খুব নেই। ও অবশ্য যাবার সময় বলে গিয়েছিল, আমার চিঠি না পেলে একটুও ভেব না। মনে করো যে আমি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
কিন্তু কদিন ধরে অনিমার কিছু ভালো লাগছে না। কোনো কিছুতে মন বসছে না। স্কুলের বাচ্চাগুলোর সঙ্গেও অনেক সময় কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। ও স্টেশনের সিমেন্টের বেঞ্চের ওপর পা উঠিয়ে বসে। তখন একটি কাগজ হাতে নিয়ে ছুটতে ছুটতে আসে মাসুম।
আপা–
মনে হয় আপা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওর দম বুঝি ফুরিয়ে যাচ্ছে। লম্বা শ্বাস ফেলে মাসুমের চোখ জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
কী হয়েছে মাসুম?
এই দেখেন।
ও কাগজটা মেলে ধরে।
একটা দুর্ঘটনার খবর ছাপা হয়েছে।
কাগজটা রেখে ও চলে যায়। অনিমা কাগজ হাতে নিয়ে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় নিহত রাজীবের ছবি ও রাজপথে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। ছবির নিচে লেখা আছে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্র রাজীব সরকার বাসের ধাক্কায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। অনিমা কাগজটা বুকে জড়িয়ে ধরে হাঁটুতে মাথা গোজে। না ঠিক হচ্ছে না। ও এখন চিৎকার করে কাঁদতে চায়। চিৎকার করে বলে, এই তোমার ফিরে আসা—এভাবে–চারদিকে হা-হা শূন্যতার মাঝে অনিমার বোবা কান্না প্রবল শূন্যতায় বাতাস ভারী করে তোলে।
একটু পরে ট্রেন আসবে। দু-চারজন করে লোক প্লাটফর্মে জমায়েত হতে শুরু করেছে। অনিমা বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়। কেউ কেউ ওকে দেখে। তারপর পোটলা-পুঁটলি নিয়ে এক জায়গায় বসে পড়ে। মাসুম তাহেরাকে নিয়ে অনিমার কাছে আসে।
আপা দেখেন, চাচি শহরে কাজ খুঁজতে যাচ্ছে। গাঁয়ে আর থাকবে না।
অনিমা চোখের জল মুছে বলে, কী হয়েছে চাচি?
কিছু হয় নাই।
তাহেরা বেঞ্চের ওপর বসে। অনিমা জানে কয়েক মাস আগে তাহেরার স্বামী আর একটা বিয়ে করেছে। ওদের কোনো ছেলেমেয়ে নেই। সে দুঃখেই তাহেরা বাড়ি ছাড়ছে। বাড়ি ছাড়লেই কি তাহেরার ঠিকানা খোজা শেষ হবে? অনিমা তাহের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কত বয়স হবে? তিরিশ থেকে চল্লিশ, নাকি আরো কম। গ্রামের মেয়েরা পুষ্টির অভাবে দ্রুত স্বাস্থ্য হারায়। তাদের বয়সটা চোরা-বয়স হয়।
কী দেখো মা?
আপনার সাহস আছে।
সংসারে লাথি মারা কি সাহস?
অনেক বড় সাহস। আপনি তো মুখ বুজে সহ্য করেননি।
ফুঃ। তাহেরা ঠোঁট ওল্টায়। তুমি কাঁদছিলা কেন?
এমনি।
তখন হুস-হুস শব্দে ট্রেন ঢোকে। লোকজন যে যার মতো গাড়িতে ওঠার জন্য তৈরি হয়। তাহেরাও পোটলা নিয়ে রেডি হয়। যাবার আগে অনিমার হাত ধরে চাপ দেয়। অনিমা কিছু বলার আগেই চলে যায়। ওর মনে হয় মানুষটি কি ওকে শক্তি সঞ্চয়ের সাহস দিয়ে গেল? আহ, ওর চোখ আবার জলে ভরে যায়। মাসুম সবুজ পতাকা ওড়াচ্ছে। ট্রেন স্টেশন ছাড়িয়ে চলে যায়, লেজটুকুও আর দেখা যাচ্ছে না। মাসুম ওকে ডাকে।
আপা, বাড়ি যাবেন না? ওঠেন আপা।
অনিমা ওর সঙ্গে কথা না বলে বাবার অফিস ঘরে গিয়ে ঢোকে। তৌফিক কাজ থেকে মুখ না তুলেই বলে, আয় মা।
তুমি আমার দিকে তো তাকালে না বাবা?
আমার মেয়ের পায়ের শব্দ আমার বুকের ভেতর টুনটুন বাজে। তাই মুহূর্তে বুঝে যাই যে কে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
বাবা, আমার প্রিয় বাবা।
আজ কেমন লাগল তোর ট্রেন চলে যাওয়ার দৃশ্য?
বাবা তোমাকে না বলেছি আমি যত দৃশ্য দেখি এটা হলো সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
তৌফিক কাজ থামিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে পেপারওয়েটটা ঘোরায়। টেবিলের ওপর মৃদু শব্দ হয়। যেন কোনো ছন্দে বোল উঠেছে। অনিমা কান পেতে শব্দ শোনে। তারপর বলে, বাবা তুমি কোনো বড় স্টেশনে বদলির চেষ্টা করো।
কেন মা?
তাহলে আমার এম.এ পড়া হবে।
তৌফিক হেসে বলে, বি.এ পাস করেছিস, এই তো অনেক। লেখাপড়া কি শুধু ডিগ্রি দিয়ে হয়? আমি চাই এর চেয়েও ছোট কোনো স্টেশনে যেতে।
অনিমার কৌতূহলী কণ্ঠের উচ্চারণ, কেন বাবা?
তৌফিক একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, তোর মা ছোট স্টেশনে থাকতে ভালোবাসত।
তখন আমি ছোট ছিলাম বাবা। প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম।
তুই চাইলে তোকে আমি হোস্টেলে রেখে এম.এ পড়ার সুযোগ করে দিতে পারি। তুই আমার একটা মাত্র মেয়ে। তোর খরচ আমি চালাতে পারব।
অনিমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, তোমাকে ছেড়ে যাবার কথা আমি ভাবি বাবা। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।
ছিঃ মা, আমি তা ভেবে বলিনি। তুই আমাকে ছেড়ে যাবি কেন, পড়তে যাবি। বড় জায়গায় যাবি, ক্যারিয়ার গড়বি। শুধু কি প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেই হবে। তাই না? তুই যেখানে যাবি আমিও তোর সঙ্গে সেখানে যাব।
স্বপ্নের মতো লাগছে তোমার কথা শুনতে। তোমার মতো বাবা আছে বলেই তো আমি মায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে পারি।
বাবাকে শুধু বলা হয় না যে রাজীব নেই। রাজীব না থাকার দুঃখ বাবার কথায় আশ্রয় পায়। বাড়ি ফিরে তৈরি হয়ে স্কুলে যায়। স্কুলের ছেলেমেয়েরা ওর আরেক আশ্রয়। কত গরিব ঘর থেকে ওরা পড়তে এসেছে। গান শুনতে ভালোবাসে। ছবি আঁকতে চায়। বোর্ডে অঙ্ক করতে দিলে অনায়াসে যোগ-বিয়োগ করে ফেলে। এইসব ছেলেমেয়ে এই গাঁয়ের সীমানার পরে আর কিছু চেনে না। তবুও আজ বারবার ওর মন খারাপ হয়ে যায়। স্কুলের হেড মাস্টার আজ আসেনি। অন্য টিচাররা নানা কাজের অজুহাতে চলে গেছে। তখন পুরো স্কুলে নিজেকে একা মনে হয় না, মনে হয় ঈশ্বরের মতো, পুরো পৃথিবীটা নিজের হাতের মুঠোয় পাওয়ার আনন্দ। ও সব ছেলেমেয়েকে এক ক্লাসে ডেকে বলে, আজ আমি তোমাদের একটা গান শেখাব। রোজ যেমন শেখাই, তেমন। তবে আজ হবে নতুন গান।
আমরা শিখব আপা।
তৈয়বা বিষণ্ণ মুখে বলে, আপা আমি বাড়ি যাব।
কেন? তোমার কী হয়েছে তৈয়বা?
আমার মায়ের অসুখ।
ঠিক আছে তুমি যাও। আমি বিকেলে তোমার মাকে দেখতে যাব।
অনিমা ছেলেমেয়েদের গান শেখাতে চাইলেও ওর কোনো গান মনে আসে না। ওর বুকের ভেতরটা যে স্তব্ধ হয়েছে সে ঘোর ওর কাটেনি। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে চোখ মুছে বলে, তোমরা বাড়ি যাও সবাই। আজ ছুটি।
ছুটি?
হ্যাঁ।
আমরা আপনার বাড়ি পর্যন্ত যাব। আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেব আপা।
না, তোমাদের উল্টো দিকে যেতে হবে না।
না, আমরা যাব।
কেন?
আপনার যে মন খারাপ সেজন্য।
ঠিক আছে এসো।
মেঠোপথে আজ অনিমার পা চলে না। ছেলেমেয়েরা চিৎকার করে ওর শেখানো গান গাইছে। একদল ওর সামনে, একদল পেছনে। কিন্তু অনিমার মনে হয় ও কিছু শুনতে পাচ্ছে না। ওর এমন করে বধির হয়ে যাওয়া বড় কষ্টের।
কমলাপুর রেল স্টেশনে তন্ময় চুপচাপ বসে আছে। জুতসই কোনো দৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে না, ক্যামেরা ব্যাগেই বন্দি। খানিকটুকু অস্থিরতায় ফাঁকা ফ্লাটফর্মে ঘোরাফেরা করে। একসময় তাহেরাকে দেখে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তাহেরা ওকে দেখেই বলে, তোমারে আমার চেনা চেনা লাগে কেন বাজান?
তন্ময় মৃদু হেসে বলে, আর একজনমে আপনি বোধহয় আমার মা ছিলেন।
তাহেরা ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত স্বরে বলে, মা আছিলাম? না আমার কোনো সন্তান হয় নাই। এর লাইগাই তো আমার স্বামী আবার বিয়া করছে। সেই দুঃখে আমি বাড়ি ছাইড়া চইলা আসছি। আল্লাহ যে ক্যান আমারে একটা সন্তান দিল না।
তন্ময় সন্তান প্রসঙ্গে না গিয়ে বলে, আপনি এখন কী করবেন?
তাহেরা সহজ কণ্ঠে বলে, একড়া বাসায় কাম লমু।
বাসায় কাজ নেবেন? একটু ভেবে ও বলে, আমি আপনাকে একটা বাসা ঠিক করে দেব। থাকবেন? ভালো বাসা। আপনার কোনো কষ্ট হবে না।
তোমার কেউ হয় বুঝি? তোমার কেউ হইলে আমি একশবার থাকমু।
আপনি বসেন, আমি একটা চিঠি লিখে দেই।
তন্ময় ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিঠি লেখে–‘সোনা মা আমার, আমি তোমার একজন সঙ্গী পাঠালাম। তুমি তাকে বাসায় থাকতে দিও রিজিয়া বুয়া চলে যাওয়ার পরে তুমি বড় একা হয়ে গেছ। এসব গ্রামের মানুষের জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা থাকে মা। আমার বিশ্বাস যাকে পাঠাচ্ছি তার সঙ্গ তোমার ভালো লাগবে মা। আর যদি ভালো না লাগে তাহলে বিদায় করে দেয়ার পথ তো খোলাই থাকে। আমাদের মানবিক বোধে বড় ঘাটতি আছে মা। তোমার নটেগাছ তন্ময়।’
চিঠিটা ভাঁজ করে তাহেরাকে দেয় তন্ময়।
আমি যে বাড়িতে আপনাকে রেখে আসব তাঁর কাছে গিয়ে চিঠিটা দেবেন।
তাহের ভীত কণ্ঠে বলে, আমারে যদি ভাগায়ে দ্যায়? তহন আমি কই যামু?
আপনি বাড়ির গৃহিণীকে এই চিঠিটা দিলে তিনি আপনাকে ভাগাবেন। আর যদি ভাগিয়ে দেন তাহলে অন্য একটা বাসা খুঁজে নেবেন। পারবেন না?
তাহেরা সজোরে মাথা নেড়ে বলে, খুব পারমু। পথে নামতে পারছি। আর পথ চিনতে পারমু না!
অকৃত্রিম সরল হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তাহেরার মুখ। তন্ময় মুগ্ধ হয়ে যায়। এমন চেহারাই তো ও পথে পথে দেখতে চায়। ক্যামেরা বের করতে করতে বলে, আপনি খুব সাহসী মহিলা চাচি। আপনার একটা ছবি তুলি?
তাহেরা খুশি হয়ে বলে, ছবি তুলবা বাবা, তোল তোল। সোন্দর কইরা তুলবা। আমারে য্যান পরীর মতো দেহায়।
তাহেরা শাড়িটা টেনেটুনে ঠিক করে পোজ দেয়। তন্ময় আপন আনন্দে অনেকগুলো ছবি তোলে। তারপর তাহেরাকে নিজের বাড়ির গেটে পৌঁছে দিয়ে দারোয়ানকে বলে, ওনাকে মায়ের কাছে নিয়ে যান।
তুমি যাইবা না বাবা?
না, আমার একটু কাজ আছে। ভয় নেই, আপনি গিয়ে মাকে আমার চিঠি দেখান।
তাহেরা দারোয়ানের সঙ্গে সাবিহা বানুর কাছে গিয়ে চিঠিটা দেয়। সোফায় বসে সাবিহা বানু চিঠিটা পড়ে। দুর-তিনবার পড়ে। তাহেরা মেঝেতে বসে আছে। উত্তষ্ঠা, দুরুদুরু বুক। এ বাড়িতে একটা ঠাঁই মিলবে তো? সাবিহা চিঠি পড়ে তাহেরীর দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে, আমার ছেলে তোমাকে পছন্দ করেছে। আমার কি সাধ্য আছে ওর হুকুম পালন না করার! পালন করতে না পারলে আমার বুক ভেঙে যাবে।
তাহেরা সাবিহা বানুর কথায় সুর ধরতে না পেরে বলে, পোলাডা খুব ভালো আম্মা। আপনের কে হয়?
সাবিহা চমকে ওঠে।
আমার কে হয়? তারপর চমক ভাঙলে দ্রুত কণ্ঠে বলে, আমার ছেলে হয়, ছেলে, ছেলে। হ্যাঁ, ও খুব ভালো ছেলে। আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
পরক্ষণে ম্লান হয়ে যায় দৃষ্টি। চিঠিটা হাতে নিয়ে তন্ময়ের ঘরে আসে। পেছনে তাহেরাও। চিঠিটা বাক্সে রেখে তাহেরার দিকে তাকিয়ে বলে, এটা আমার ছেলের ঘর। তোমার নিজ হাতে ঝেড়েমুছে রাখবে।
এইডা তো আমার লাইগা একডা পবিত্র ঘর। আল্লাহর রহমত। আম্মা খাড়ান, আপনেরে একটা সালাম করি।
তাহেরা সাবিহার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। সাবিহা নিজের মনেই বলে, পাগল ছেলেটা যে এখন কোথায় আছে!
তন্ময় তখন আবার কমলাপুর রেল স্টেশনে ফিরে এসেছে। ট্রেনে উঠেছে। ট্রেন চলতে শুরু করলে ও কিছুক্ষণ সিটের গায়ে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে থাকে। শহরের জঞ্জালভরা এলাকাটা পার হয়ে গেলে তবে ও জানালা দিয়ে তাকাবে নিসর্গ এবং মানুষ দেখার জন্য। অনেকক্ষণ পরে ও ব্যাগ থেকে লেখার প্যাড বের করে মাকে চিঠি লেখে : সোনা মা আমার–। ইতি তোমার সাদা কবুতর তন্ময়। কাগজটা জানালা দিয়ে উড়িয়ে দেয়। উড়ে যাওয়া কাগজটার একটা ছবি তোলে।
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনিমার মনে হয় ওর চারদিকের নেমে আসা আকাশের ঘেরাটোপে ও বন্দি। চারদিকে ছোপ ছোপ রঙের মতো দুঃখগুলো সাঁটা হয়ে আছে। যেদিকেই দৃষ্টি পড়ে সেখানেই রাজীবের মুখ। রক্তাক্ত। রাজপথের পিচের সঙ্গে সেঁটে থাকা এবং খ্যাতলানো। মেঠোপথের কোথাও বসে পড়বে কি-না ভাবতেই মাঠের চড়ইগুলো ঝাক বেঁধে উড়ে যায়। ওর আর বসা হয় না। দেখতে পায় স্কুলের কয়েকটি ছেলেমেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ওর দিকে আসছে। অনিমা খুশি হয়ে ভাবে, ওরা আমার আশ্রয়। ও ওদের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। দূর থেকে স্টেশনটা স্পষ্ট দেখা ঋচ্ছে। লাইনম্যান মাসুম এক কোনায় বসে আপন মনে খঞ্জনি বাজায়। অনিমা একটি বুনোফুল তুলে খোঁপায় পরে। মনে মনে বলে, তোমায় দেব বলে এই ফুলটি খোপায় রাখলাম প্রিয়তম।
ও ছেলেমেয়েরা কাছে এসে বলে, আপা আমরা এসেছি।
বেশ করেছ। এখন তোমরা একটা দৌড় দাও তো, দেখি কে আগে যেতে পারে।
দুলি বলে, আমরা গিয়ে কী ছোঁব?
মন্টু মহাউৎসাহে আঙুল তুলে বলে, ওই দূরের গাছটা।
অনিমা ঘাড় নাড়ে, গাছ নয়, তোমাদেরকে মানুষ ছুঁতে হবে।
সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে, হ্যাঁ, আমরা মানুষ ছোঁব।
অনিমা বলে দেয়, ওই যে স্টেশনের প্লাটফর্মে লাইনম্যান মাসুম বসে আছে তাকে ছুঁতে হবে।
ছেলেমেয়েরা হৈচৈ করে ওঠে, ঠিক আছে তাই হবে। আমরা গেলাম মাসুম ভাইকে ছুঁতে।
মন্টু অনিমাকে ছুঁয়ে বলে, আপা আমরা মাসুম ভাইকে গিয়ে বলব, আপনার খনিটা আমাকে দেন।
সাবু সঙ্গে সঙ্গে বলে, দেবে কচু। খঞ্জনি মাসুম ভাইয়ের প্রাণের জিনিস।
তোমরা গিয়েই দেখো না। দিতেও তো পারে।
অনিমার কথার প্রতিধ্বনি ওরাও করে, হ্যাঁ দিতেও তো পারে। চল দৌড়াই।
অনিমার মনে হয় ওরাও একঝাঁক চড়ুইয়ের মতো উড়ে যাচ্ছে। ওরাও উড়ে যাবে নীলিমার কাছে। বলবে, আকাশ, আমরা এসেছি। আমাদেরকে বৃষ্টি দাও, রোদ দাও। ধান দাও। ভাত খাব, খঞ্জনি বাজাব, পূর্ণিমার রাতে উৎসব করব। আমাদের অনেক কিছু করার আছে আকাশ। এসব ভাবনা ভাবনাই। অনিমার মন আবার খারাপ হয়ে যায়। দেখতে পায় ছেলেমেয়েরা মাসুমকে ঘিরে ধরেছে। ও বাড়ির পথে যায়।
দুলি বলে, আপনার হাতটা আমাদের দিকে বাড়ান মাসুম ভাই।
মাসুম হকচকিয়ে যায়। ভ্রু উঁচিয়ে বলে, কেন?
আপা আমাদেরকে বলেছে মানুষকে ছুঁতে। আমরা আপনাকে ছোঁব।
আপা যখন বলেছে তাহলে তো সেটা মানতেই হবে।
মাসুম ওর ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ধরো।
ছেলেমেয়েরা ওকে সঙ্গে নিয়ে নাচতে থাকে। সুর করে গায়–‘আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি/রেলগাড়ি ঝমাঝম/পা পিছলে আলুর দম…।’ নাচতে নাচতে ছেলেমেয়েরা ইচ্ছা করে পড়ে যায়। আর হি-হি করে হাসতে হাসতে বলে, মাসুম ভাই আমাদের যদু মাস্টার। মাসুম অই রেলগাড়িতে চড়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে। আমরা সবাই বরযাত্রী হবো।
হি-হি করে হাসে সবাই। মাসুম ওদের ধমক দিয়ে বলে, অ্যাই পোলাপান থাম। থাম বলছি।
ওরা হাসতে হাসতে খালি প্লাটফর্মে দৌড়াদৌড়ি করে।
অনিমা তখন নিজের শোবার ঘরের দেয়ালে টাঙানো মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে দু-হাতে মুখ ঢাকে। রাজীবের কোনো ছবি নেই ওর কাছে। এত অল্প সময়ের পরিচয়ে ছবি রাখা হয়নি। ভেবেছিল সুযোগ হলে দুজনে একটা ছবি তুলবে। সে সুযোগ আর হলো না। মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, মা বড় শূন্য করে রেখে গেলে আমাদের। এই খালি ঘরটা খাঁ-খাঁ করে। একজনের না থাকা যে কত ভয়াবহ তুমি কি তা কখনো বুঝেছিলে মা!
অনিমা নিজেকে সামলে নিয়ে স্নান করতে যায়। হঠাৎ ট্রেনের শব্দ ওকে চমকে দেয়। বাথরুমে আর ঢোকা হয় না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বোঝে যে বাবুগঞ্জের ট্রেনটা এসেছে। ও দ্রুত বাইরে এসে দাঁড়ায়। রাজীবের জন্য ওর অপেক্ষা ফুরোয় না।
ট্রেন থেকে নামে তন্ময়। কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ। সঙ্গে আর একটি ছোট ব্যাগ। ট্রেন চলে গেলেও ও দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেন কোন দিকে যাবে বুঝতে পারে না। নতুন জায়গায় তো ঝট করে পা বাড়ানো যায় না। দূর থেকে অনিমার দিকে চোখ পড়ে। দৃষ্টি ফিরিয়ে সবুজ ফ্ল্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মাসুমের দিকে চোখ পড়ে। বেশ লাগে ওকে দেখতে। জিজ্ঞেস না করেই ওর একটা ছবি তোলে।
মাসুম দু-পা এগিয়ে এসে বলে, ছবি তুললেন যে?
তন্ময় ওর ঘাড়ে হাত রেখে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে বলে, ছবি তোলা নেশা। ছবির মধ্যে মানুষ খুঁজি। অনেকগুলো ছবি একসঙ্গে করলে মানুষের মুখ যে কত রকম হয় তা বোঝা যায়।
মাসুম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, তাতে আপনার কী লাভ?
তন্ময় মাথা নাড়ে। ঘনঘন মাথা নাড়লে ওর চুলগুলো কপালের ওপর ছড়িয়ে যায়। অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বলে, লাভ? লাভের কথা ভেবে দেখিনি কখনো। ওটা ভীষণ কঠিন কাজ।
আপনি কী করেন?
এই ছবিই তুলি।
এতে রোজগার হয়?
রোজগার!
মানে নিজের খরচ চালান কী দিয়ে?
এর মধ্যে তন্ময়ের দৃষ্টি আবার অনিমার দিকে যায়। দেখতে পায় অনিমাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভেতরে ভেতরে কৌতুক বোধ করে। পরক্ষণে মাসুমের দিকে তাকিয়ে বলে, ও হ্যাঁ, খরচের কথা বলছিলে তো। মা আমাকে ছবি তোলার পড়ালেখার জন্য বৃত্তি দেয়। সেই টাকা দিয়ে আমি লেখাপড়া করি।
আপনার মায়ের বুঝি অনেক টাকা?
হ্যাঁ, অনেক টাকা।
ইস আমার যদি এমন মা থাকত! আমার মায়ের কেবল অভাব।
টাকাঅলা মা থাকলে কী করতে?
আমার গাঁয়ের সব ছেলেমেয়েকে খঞ্জনি বাজানো শেখাতাম।
হা-হা করে হেসে ওঠে তন্ময়। হাসতে হাসতে দেখতে পায় অনিমা আর নেই। ও বাড়িতে ঢুকে গেছে। যে দেয়ালের গায়ে ও হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে নিশ্চয় অনিমার ফসিলের চিত্র আছে। যারা মুহূর্তে অদৃশ্য হয় তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। তন্ময়কে স্টেশন মাস্টারের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাসুম তিক্ত স্বরে বলে, আপনি এই স্টেশনে নেমেছেন কেন?
এমনি। আমি এমনই করি। ট্রেনে, লঞ্চে, বাসে ঘুরতে ঘুরতে কোথাও নেমে যাই। কিছুদিন সে জায়গা দেখি। আবার অন্য কোথাও চলে যাই।
আজব মানুষ! এমন মানুষ দেখিনি।
তন্ময় ওর পিঠে হাত রেখে বলে, আবার তোমার সঙ্গে কথা হবে।
ও স্টেশন মাস্টারের অফিসের দিকে এগিয়ে যায়। তৌফিক উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। বাইরে দাঁড়িয়েও তন্ময় স্পষ্ট তার কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে। সেজন্য সে স্টেশন মাস্টারের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে।
তৌফিক বলে যাচ্ছে, কী বললেন, ট্রেন আটকে গেছে! আমি তো আমার স্টেশন থেকে ট্রেনটা ঠিকঠাক মতো পার করে দিয়েছি। ওহ হো, লাইনে সমস্যা? ঠিক আছে দেখি এদিক থেকে কী করা যায়।
কথা শেষ হয়ে গেছে, তন্ময় মৃদু কণ্ঠে বলে, আসতে পারি স্যার?
তৌফিক ঘাড় ফিরিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলে, আসুন। আমার কাছে কোনো দরকার?
আপনার এই গাঁয়ে নদী আছে?
কেন থাকবে না! বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। ভূগোলে পড়েননি?
জি পড়েছি। বাবা-মা আমাকে খুব যত্ন করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন।
তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
ছবি তুলব তো সেজন্য। নদী আমার একটি ভীষণ প্রিয় সাবজেক্ট।
নদী আছে কি-না খুঁজে দেখুন। অনেক ভালো সাবজেক্টও পেয়ে যেতে পারেন। এখানে কার কাছে এসেছেন? পরিচিত কেউ?
তন্ময় একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, আমার নাম আশরাফুল হক তন্ময়। আপনি আমাকে তন্ময় করে ডাকবেন। আমি ভীষণ খুশি হবো।
খুশি! তৌফিক ভ্রূ কুঁচকায়।
তন্ময় তড়িঘড়ি বলে, আমার বাবা নেই।
আমার মেয়েটিরও মা নেই।
দুজনে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হো-হো করে হাসে তৌফিক। বলে, এই না থাকার ভাবনায় আমি বেশ আনন্দ পাই।
আনন্দ! তন্ময় একটু ভেবে বলে, হ্যাঁ, আমার মনে হচ্ছে আমিও আনন্দ পাই।
তুমিও আনন্দ পাও? বেশ ছেলে তো! আমার না হয় বয়স হয়েছে। চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। যে কোনো সময় দম ফুরিয়ে যাবে। তোমার সামনে লম্বা জীবন।
ভাবলেই লম্বা হয়, না ভাবলে ছোট।
তৌফিক তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোথা থেকে উড়ে এসে ছেলেটি এমন টানটান কথা বলছে! জড়তা নেই, চঞ্চলতা নেই। গম্ভীর, বয়সি ভাবের চেহারা।
আমি আপনার একটা ছবি তুলি?
তৌফিক ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেয়। তন্ময় ছবি তোলে। তারপর ব্যাগ থেকে সাবিহা বানুর ছবি বের করে দেখিয়ে বলে, এটা আমার মায়ের। ছবি।
তৌফিক ছবিটা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখে। স্মৃতি তাড়িত হয়। তন্ময়কে আপন ভেবে অন্তরঙ্গ স্বরে বলে, তোমার মায়ের সঙ্গে অনিমার মায়ের খুব সুন্দর মিল আছে তন্ময়।
কেমন মিল?
দু’জনের হাসিতে গালে টোল পড়ে।
হো-হো করে হাসে তন্ময়।
হাসছ যে?
মানুষের চেহারায় নতুন নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য আমি ছবি তুলি।