হ-য-ব-র-ল

হ-য-ব-র-ল

০১.

তথাকথিত পণ্ডিতেরা বলেন, আসাম দেশ অসমান বলিয়া ইহার নাম আসাম। অথচ আদি বাসিন্দাদের নাম অহম। ইহাদের নামেই দেশের নাম হওয়া উচিত অহম দেশ। প্রকৃত তত্ত্ব এই যে, আসাম হইতে অহম হয় নাই, অহম হইতে আসাম হইয়াছে। ফোক ফিললজিস্ট অর্থাৎ গাঁওবুড়ো শব্দতাত্ত্বিক মনে মনে তর্ক করিয়াছেন যে, যেহেতু শুদ্ধ বাঙলার সেপার পূর্ব বঙ্গে হেপার, সাগর হাওর, সরিষা হইরা হয়, অতএব উল্টা হিসাবও চলে– অর্থাৎ স যখন হ হইতে পারে তখন হ-ও স হইতে পারে। এই নীতি চালাইলে যে হাসানো আর শাসানো একই ক্রিয়া হইয়া দাঁড়ায়, গাঁওবুড়ারা তাহা খেয়াল করিলেন না। স্থির করিলেন অহমই অসম; তার পর অসম হইতে আসাম হইল। তখন তথাকথিত পণ্ডিতেরা আসিয়া সমাধান করিলেন, এই দেশ অসমান বলিয়া ইহার নাম আসাম।

গাঁওবুড়াদের মূর্খ বলিলে আমাদের অন্যায় হইবে। উল্টাপুরাণ যে সর্বত্র চলে না– এ জ্ঞান এখনও বহু নাগরিকের হয় নাই। সায়েবরা হ্যাটকোট পরেন অতএব হাটকোট পরিলেই সায়েব হইয়া যাইব গায়িকা সুন্দরী কাননবালা লম্বা হাতা জামা পরেন অতএব লম্বা হাতা জামা পরিলে গায়িকা ও সুন্দরী হওয়া যায় এই ভুল যুক্তিজনিত আচার তো হাটে-ঘাটে ট্রামে-বাসে সর্বত্র দেখা যায়।

***

এই আসাম হইতে প্রত্যাগত এক বন্ধু বলিলেন যে, এতদিন আসামে যে তিন দলে রাজনৈতিক রেষারেষি চলিত তাহার সঙ্গে এখন চতুর্থ দল আসিয়া জুটিয়াছে। এই তিন দলের প্রথম দল আসামি বা অসমিয়া (উচ্চারণ অহমিয়া); ইঁহারা আসামি ভাষায় কথাবার্তা বলেন। আসামি ভাষা ও বাংলায় পার্থক্য ওড়িয়া বাঙলা অপেক্ষাও কম; আসামিদের গায়ে আর্য ও অহম রক্তের সংমিশ্রণ, যেরকম বাঙালির ধমনিতে আর্য ও মঙ্গোল দ্রাবিড় রক্তের সংমিশ্রণ। দ্বিতীয় দল শ্রীহট্ট, কাছাড়, গোয়ালপাড়ার অধিবাসী বাঙালি। ইঁহারা মূলত বাঙলা দেশেরই লোক, ইহাদের বাসভূমি বাঙলা দেশ হইতে কর্তন করিয়া আসামে জুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে এবং ইহাদের অনেকেই চাহেন যে, ওইসব জিলাগুলো যেন পুনর্বার বাঙলা দেশে ফিরাইয়া লওয়া হয়। তৃতীয় দল বিশুদ্ধ অহম। ইঁহারা আসামের আদিম বাসিন্দা, হঁহাদের অনেকেই আর্যরক্ত দ্বারা অশুদ্ধ বা শুদ্ধ–যাহাই বলুন–না হইয়া আপন আভিজাত্য রক্ষা করিয়াছেন। চতুর্থ দল নতুন আসিয়া জায়গা চাহিতেছেন, ইঁহারা গারো, লুসাই, কুকি, নাগা, আবর, মিশমি ইত্যাদি পার্বত্য জাতি। ইঁহারা আসামের আদিমতম বাসিন্দা এবং আসামের রাজনৈতিক যজ্ঞশালায় উঁহারা এতদিন অপাঙক্তেয় ছিলেন।

***

যতদূর মনে পড়িতেছে ১৯৩২ সালে কাছাড় লর্ড বেনটিঙ্কের সময় ইংরেজ কর্তৃক অধিকৃত হয়। তাহার পর একশত বৎসর কাটিয়াছে। ধীরে ধীরে ইংরেজ গারো, লুসাই, নাগা অঞ্চলে আপন ডেরা ফেলিয়া ফেলিয়া দখল বাড়াইয়া চলিয়াছেন। ইহাদের জন্য ইংরেজ সরকার কী উপকার করিয়াছেন তাহার ইতিহাস লিখিবার সময় আজও হয় নাই। মোগল পাঠানরা ইহাদের রাজত্ব দখল করেন নাই, ইহাদের প্রতি কোনও দায়িত্ব তাঁহাদের ছিল না। কিন্তু ইংরেজ সরকারকে একদিন উভয়ার্থে আসামি ঐতিহাসিক গবেষণার কাঠগড়ায় দাঁড়াইয়া স্বপক্ষ সমর্থন করিতে হইবে।

মধ্য আফ্রিকার বনেজঙ্গলে হস্তীদন্ত-ব্যবসায়ী মুসলমান ইসলাম প্রচার করেন, বেতনভোগী ইউরোপীয় মিশনারিরা খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন। নিগ্রো মুসলমানদের কথা আজ থাক, কিন্তু খ্রিস্টান নিগ্রোদের কী অবস্থা হইয়াছে তাহা বার্নার্ড শর কৃষ্ণার ব্রহ্মান্বেষণ পুস্তকে পাইবেন। অসভ্য সুরা-অনভ্যস্ত জনগণের ভিতর মদ্য চালাইলে কী নিদারুণ কুফল হয় ও সেই সুযোগ লইয়া বিবেকধর্মহীন পুঁজিপতিরা তাহাদের কী অনিষ্ট করে, তাহা আঁদ্রে জিদের বেলজিয়ম কঙ্গো পুস্তকে পাঠক পাইবেন। ও অন্যান্য নিরপেক্ষ লেখকের অধুনা-খ্যাতিপ্রাপ্ত ফরাসি ডাকার অঞ্চলের বর্ণনায় পাইবেন।

***

খ্রিস্টান মিশনারিরা লুসাই, গারো, খাসিয়া ও নাগা অঞ্চলে প্রবেশ করেন। সরকারের কতটা সাহায্য পান ঠিক বলিতে পারি না, কিন্তু অনুমান করি ভারতবর্ষে ও পৃথিবীর অন্যত্র মিশনারিরা সচরাচর যে সাহায্য লাভ করেন, তাহাই পাইয়াছিলেন। অধুনা মুসলমানরা খাসিয়া পাহাড়ে ইসলাম প্রচারে লিপ্ত হইয়াছেন ও ব্রাহ্মরা কিয়ঙ্কাল ওইস্থলে ধর্মপ্রচারের পর কয়েকটি পরিবারকে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত করেন। তুলনামূলক ধর্ম সম্বন্ধীয় আলোচনা বারান্তরে হইবে; উপস্থিত শুধু এইটুকু বলিতে চাই যে, যে কোনও মানুষ যে কোনও ধর্ম গ্রহণ করুক আপত্তি নাই, কিন্তু যে ধর্মান্তর গ্রহণে সাহায্য করে সে যেন ঠিক এইটুকু বোঝে যে, ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে তাহাকে সে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বেশভূষা, আহার-বিহার সংক্রান্ত, দেশের অবস্থার সঙ্গে খাপ না খাওয়া, ছন্নছাড়া কোনও নতুন ক্ষতিকর পরিবেষ্টনীতে যেন টানিয়া লইয়া না যায়।

বাঙালি মুসলমান আরব বেদুইনের ন্যায় কাবাব-গোস্ত খায় না, রাইফেল লইয়া দল বাঁধিয়া হানাহানি করে না, কিন্তু এক জর্মন নৃতত্ত্ববিদ খ্রিস্টান নাগাদের নতুন সামাজিক জীবনের সঙ্গে বসবাস করিয়া তাহাদের প্রচুর নিন্দা করিয়াছেন। কোনও কোনও পার্বত্য অঞ্চলে স্বচক্ষে কড়া মদের মাতলামি দেখিয়াছি ও বিশ্বস্তসূত্রে শুনিয়াছি কোনও কোনও অঞ্চলে গোপন বেশ্যাবৃত্তি আরম্ভ হইয়াছে।

কিন্তু সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ভয়, এইসব খ্রিস্টানরা যেন আসামের চা-বাগিচার খ্রিস্টান ম্যানেজারদের সঙ্গে জুটিয়া এক নতুন ক্রিশ্চান লিগ নির্মাণ না করে। ট্রাইবেল লিগ হউক, আমরা তাহার মঙ্গল কামনা করিব, কিন্তু ক্রিশ্চান লিগ করিলে পার্বত্য জাতিরা আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।

.

০২.

উচ্চারণ সম্বন্ধে আর বাক্যবিনাস করিব না, এই প্রতিজ্ঞা করিলাম। কিন্তু তৎপূর্বে শেষবারের মতো একখানি চিঠি হইতে কিঞ্চিৎ উদ্ধৃত করিব। হাজরা লেন হইতে শ্রীমতি ঘোষ লিখিতেছেন :

আমার ধারণা, অল্প একটু চেষ্টা করলেই বাঙালির সংস্কৃত উচ্চারণ বিশুদ্ধতায় যে কোনও ভারতীয় পণ্ডিতের সমকক্ষ হতে পারবে। প্রমাণস্বরূপ একটা উদাহরণ দিতে পারি– যদিও সেটি এত তুচ্ছ যে বলতে সংকুচিত হচ্ছি। পাঞ্জাবি অধ্যাপকটির ক্লাসে আমরা যে কয়টি ছাত্রী ছিলাম, তাহাদের মধ্যে তিনি বাঙালির উচ্চারণে কখনও কোনও ভুল তো ধরেনইনি; এমনকি সময়ে সময়ে একটু বেশি প্রশংসা করতেন। (লেখিকা দিল্লি কলেজে পড়িতেন।)

সর্বশেষ লেখিকার বক্তব্য–

যদি কলকাতার স্কুলগুলোর সংস্কৃত শিক্ষকেরা এ বিষয়ে একটু অবহিত হন, তা হলে বোধহয় কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে।

সবিস্তার মন্তব্য অনাবশ্যক। শুদ্ধ উচ্চারণ শিক্ষা যদি সত্যই কঠিন না হয়, তাহা হইলে এই স্থলে উচ্চারণ সম্বন্ধে আলোচনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া বন্ধ করা যাইতে পারে।

***

আমরা যখন সংস্কৃত শিখি, আরবি-ফারসি শিখি, তখন আমাদের উদ্দেশ্য এই নহে যে, সংস্কৃত অথবা আরবিতে সাহিত্যসৃষ্টি করিব। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য উৎকৃষ্ট সাহিত্য পড়িয়া হৃদয়মনকে সংস্কৃত ও ধনবন্ত করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ওইসব সাহিত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়া, উহাদের পরশমণি দ্বারা যাচাই করিয়া করিয়া মাতৃভাষায় উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনা করা। উদাহরণরূপে বলিতে পারি যে, রবীন্দ্রনাথ সংস্কৃত না জানিলে যৌবন বেদনা রসে উচ্ছল আমার দিনগুলি কবিতাটি লিখিতে পারিতেন না, প্রমথ চৌধুরী উত্তম ফরাসি ও বিশেষত আনাতোল ফ্রাঁস না পড়িলে কখনও বাংলাতে নতুন শৈলী প্রবর্তন করিতে পারিতেন না।

ইংরেজি, ফরাসি, জর্মন সাহিত্য আজ এত সমৃদ্ধ যে গ্রিক-লাতিনের জ্ঞান না থাকিলেও ইহাদের যে কোনও ভাষাভাষী মাতৃভাষার সাতজন ভালো লেখকের শৈলী মিশ্রণ করিয়া নতুন সৃষ্টি করিতে পারে; বিষয়বস্তু অনুসারে গড়িয়া পিটিয়া নতুন ঢং তৈয়ারি করিতে পারে। কিন্তু বাঙলাভাষা এখনও অত্যন্ত অপকু, সাহিত্য বড়ই দরিদ্র।

সংস্কৃতই যে জানিতে হইবে এমন কোনও কথা নহে। ইংরেজি ফরাসি বা আরবি যে কোনও সাহিত্যের সঙ্গে একটু ঘনিষ্ঠ যোগ থাকিলেই ভাষা ও সাহিত্যের মাপকাঠি পাওয়া যায়।

আধুনিক বঙ্গসাহিত্য না পড়িলে মনে হয় অধিকাংশ লেখকেরা যেন শুধু বাঙলার পুঁজিই ভাঙাইয়া খাইতেছেন। কিন্তু এককালে তো এরকম ছিল না। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, সকলেই যে শুধু সংস্কৃতে পণ্ডিত ছিলেন তাহা নহে, তাহারা সকলেই ইংরেজি বেশ ভালো করিয়া জানিতেন।

ভারতচন্দ্র ফারসি ও সংস্কৃত দুই ভাষাই জানিতেন, এবং কী প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ যে তাহার আয়ত্তাধীন ছিল ও মোগল বিলাসের যে কী সন্ধান তিনি রাখিতেন তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হইতে প্রকাশিত ভারতচন্দ্র গ্রন্থাবলীর প্রথম খণ্ড ১৭/১৮ পৃষ্ঠা পশ্য।

(এস্থলে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করি, সাধারণ বাঙালি পাঠক এই দুই পৃষ্ঠায় উল্লিখিত তাবৎ আরবি শব্দ বুঝেন? না ইহাদের অর্থ দ্বিতীয় খণ্ডে প্রকাশিত হইবে– আমার কাছে দ্বিতীয় খণ্ড নাই।)।

যে কবি অত্যন্ত সহজ সরল অনুভূতি গীতিকাব্যে প্রকাশ করিতে চাহেন তাহার জন্য হয়তো সংস্কৃতের প্রয়োজন নাই। চণ্ডীদাসের সংস্কৃত জানিবার প্রয়োজন নাই; জসীম উদ্দীন চসার শেক্সপিয়র পড়িয়াছেন কি না সে প্রশ্ন অবান্তর।

যাহারা জটিল নভেল লেখেন ও উপন্যাস রচনা করেন তাঁহাদের সম্বন্ধেই উপরের মন্তব্যগুলি করিলাম।

.

০৩.

আমরা সাধারণত যখন ইউরোপে বা ইউরোপীয় সভ্যতা সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করি, তখন প্রায়ই ভুলিয়া যাই যে ইউরোপ সম্বন্ধে আমাদের প্রায় সকল জ্ঞান ইংরেজি পুস্তক হইতে সঙ্কলিত এবং ইংরেজিতে যেসব ফরাসি-জর্মন ইত্যাদি গ্রন্থ অনূদিত হয়, সেগুলি প্রায়শ ইংরেজ মনকে দোলা দিয়াছে বলিয়াই ওই ভাষাতে রূপান্তরিত হইয়াছে। অর্থাৎ বহুস্থলে সেগুলি খাস ফরাসি-জর্মন নহে, ইংরেজকে খুশি করিতে পারিয়াছে, ঈষৎ ইংরেজ-ভাবাপন্ন বলিয়া।

অথচ ইংরেজ ও ফরাসি যে কী ভীষণ দুই পৃথক জাত সে সম্বন্ধে অন্তহীন আলোচনা চলিতে পারে। সাহিত্যের দিক দিয়া দেখিতে গেলে নির্ভয়ে বলা যায় ফরাসি সাহিত্য ইংরেজি হইতে বিশেষ কিছু গ্রহণ করে নাই, কিন্তু ইংরেজি পদে পদে ফরাসির হাত ধরিয়া চলিয়াছে। তামাম ফরাসি ভাষাতে একশতটি ইংরেজি শব্দ খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না; ইংরেজিতে শুধু ফরাসি শব্দ নহে, গোটা বাক্য বিস্তরে বিস্তরে আছে। ইংরেজের পোশাকি রান্না বলিয়া কোনও বস্তু নাই– দ্র খাবারের মেনু মাত্রই আগাগোড়া ফরাসিতে লেখা। এমনকি ভিয়েনার ভিনার মিসেল পর্যন্ত ইংরেজি মেনুতে ফরাসির মধ্যস্থতায় এসূকেলপ দ্য ভ্য আ লা ভিয়েনেয়াজ রূপে পৌঁছিয়াছে।

ইংরেজি সঙ্গীত বলিয়া কোনও বস্তু নাই– যাহা কিছু তাহার শতকরা ৯৯ ভাগ জর্মন-ফরাসি-ইতালীয়-রুশ। তামাম বৎসর চালু থাকে এরকম অপেরাগৃহ একটিও লন্ডনে নাই; উত্তম অপেরা শুনিতে হইলে ড্রেসডেন যাও, মুনিক যাও, বন্ যাও, ভিয়েনা যাও, প্যারিস যাও।

ইংরেজ মেয়ে ফ্রক ব্লাউজ কিনিতে প্যারিস যায়, ছবি আঁকা শিখিতে প্যারিস যায়, ভাষা শিখিতে প্যারিস যায়, উৎকৃষ্ট খাদ্য ও মদ্য আস্বাদ করিতে প্যারিস যায়, বোতল বোতল বর্দো-বার্গন্ডি-শ্যাম্পেন খরিদ করিয়া নৌকা বোঝাই করিয়া ইংলন্ডে লইয়া যায়– ফরাসি স্কচ-হুঁইস্কি খাইতেছে আর মারোয়াড়ি পাঠার কালিয়া খাইতেছে– একই কথা।

ফরাসি ইংরেজকে বলে চরুয়া অর্থাৎ চরের বাসিন্দা অর্থাৎ খানদানহীন ঔপনিবেশিক। পদ্মার পারের জমিদার পদ্মার চর-বাসিন্দাকে যেরকম অবহেলা করে, ভাবে– চর আজ আছে কাল নাই– খানদানের বনিয়াদ গড়িবে কী প্রকারে, ফরাসি ইংরেজ সম্বন্ধে সেইরকম ভাবে। চ্যানেল পার হইয়া তাহাকে লন্ডন যাইতে হইলে, তাহার মস্তকে সহস্র বজ্রাঘাত হয়।

উপযুক্ত মন্তব্যগুলি করার উদ্দেশ্য এই যে, আমরা যেন ইউরোপের তাবৎ কর্মকীর্তি ইংরেজের জমার খাতায় লিখিয়া তাহাকে অহেতুক ভক্তি না দেখাই। দ্বিতীয়ত, ফরাসি ও জর্মন পড়াইবার ব্যাপক ব্যবস্থা যেন এদেশের স্কুল-কলেজে করা হয়। আমাদের মনে হয় কলকাতার ছেলেরা এককালে যেটুকু ফরাসি-জর্মন শিখিত এখন যেন সেইটুকুও শিখিতেছে না।

আমাদের স্কুল-কলেজে কী বিকট আনাড়ি কায়দায় ভাষা শিখানো হয় তাহার বিস্তৃত আলোচনা আরেকদিন করিবার বাসনা রহিল। উপস্থিত শুধু বলি চারি বৎসর স্কুলে ও চারি বৎসর কলেজে সংস্কৃত অথবা ফারসি পড়ার পরও ছাত্র ওইসব ভাষাতে সড়গড় হয় না এমন অদ্ভুত ব্যাপার আমি কোনও সভ্য দেশে দেখি নাই শুনি নাই।

.

০৪.

এক প্রসিদ্ধ আরব লেখকের স্বগত পড়িতেছিলাম।

ধনীরা বলে, অর্থোপার্জন করা কঠিন, জ্ঞানার্জনের অপেক্ষাও কঠিন। পণ্ডিতেরা বলেন, জ্ঞানার্জন অর্থোপার্জনের অপেক্ষা কঠিন; অতএব জ্ঞানীরা ধনীর চেয়ে শক্তিমান ও মহৎ। আমি বিস্তর বিবেচনা করিয়া এই সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়াছি যে, আমরা– অর্থাৎ জ্ঞানীরা যদি কখনও অর্থ পাই, তবে সে অর্থ ব্যয় করিতে সক্ষম এবং অনেক সময় ধনীদের চেয়েও সৎপথে অর্থ ব্যয় করি, কিন্তু ধনীরা যখন আমাদের সম্পদ অর্থাৎ পুস্তকরাজি পায়, তখন সেগুলির ব্যবহার বিলকুল করিতে পারে না। অতএব সপ্রমাণ হইল জ্ঞানীরা ধনীর চেয়ে শক্তিমান।

বিবেচনা করিয়া দেখিলাম, আরব লেখকের কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য।

গত শনি, রবি, সোমবারে বোম্বাই বাজারে যে তুমুল কাণ্ড দেখিলাম, তাহাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ আর রহিল না।

একশত হইতে উপরের নোট আর যত্রযত্র ভাঙানো যাইবে না খবর প্রকাশ হওয়া মাত্র কালোবাজারিদের হৃদকম্প উপস্থিত হইল। ফালতু ট্যাক্স হইতে আত্মত্রাণ করিবার জন্য ব্যবসায়ীরা বিস্তারে বিস্তরে একশত, এক হাজার টাকার নোট গৃহে লোহার সিন্দুকে জমায়েত করিয়া রাখিয়াছিল, সে টাকা লইয়া তাহারা করিবে কী?

তখন কালোবাজারিরা ছুটিল ব্যাংকারদের কাছে। দয়া করিয়া, ঘুষ লইয়া নোটগুলি লও, হিসাবে দেখাও যে বহুদিন ধরিয়া এই নোটগুলি তোমাদের ব্যাংকে জমা ছিল। আমরা বাঁচি। ব্যাংকারদের জেলের ভয় আছে; কাজেই পন্থা বন্ধ।

কেহ ছুটিল সোনার বাজারে। সে বাজারে এমনি হিড়িক লাগিল যে, দাম হুশ হুশ করিয়া গগনস্পর্শী হইতে লাগিল। কর্তারা সোনার বাজার বন্ধ করিয়া দিলেন।

কেহ ছুটিল তাড়া তাড়া নোট পকেটে করিয়া শরাবের দোকানে। এক টাকার মদ খাইয়া একশত টাকার নোট ভাঙাইবার চেষ্টা করে। আমি গিয়াছিলাম এক বোতল সোডা খাইতে, দোকানি সোড়া দিবার পূর্বে সন্তর্পণে কানে কানে প্রশ্নবাণে প্রাণ হানে, একশত টাকার নোট নয় তো স্যার? ভাঙানি নাই।

বিস্ময় মানিলাম। প্রায় ছয় মাস হইল আমার মতো কারবারি-বুদ্ধি-বিবর্জিত মূর্খও বিলাতি মাসিকে পড়িয়াছিল যে, ইংলন্ডে কালোবাজারের ফাঁপানো পয়সাকে কাবুতে আনিবার জন্য দশ পৌন্ড নোটের উপর কড়া আইন চালানো হইয়াছে। সেই মাসিক কি এদেশের কারবারিরা পড়ে নাই। পড়িয়া থাকিলে ছোট নোটে ভাঙাইয়া রাখিলেই পারিত।

আরব ঠিকই বলিয়াছিলেন, ধনীরা পুস্তক (এমনকি মাসিক কাগজও) পড়িতে জানে না।

.

০৫.

বাঙলা ভাষায় একখানা অতি উপাদেয়, গ্রন্থ আছে। বঙ্কিমচন্দ্রের কৃষ্ণচরিত্রের কথা স্মরণ করিতেছি। কী অসাধারণ পরিশ্রম, কী অপূর্ব বিশ্লেষণ, অবিমিশ্র যুক্তিতর্কের কী অদ্ভুত ক্রমবিকাশ এই পুস্তকে আছে, তাহা বর্ণনা করিয়া শেষ করা যায় না। ভাষা ও শৈলী সম্বন্ধে শুধু এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, যুক্তিতর্কপূর্ণ রচনায় এই ভাষাকেই আজ পর্যন্ত কেহই পরাজিত করিতে পারেন নাই। অনেকের মতে বাংলা গদ্য রচনায় কৃষ্ণচরিত্রের পর উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নতি হয় নাই।

আরেকটি বিষয় লক্ষ করিয়া বিস্ময় মানিতে হয়। বঙ্কিম কয়েক জর্মন পণ্ডিতের নাম এই পুস্তকে উল্লেখ করিয়াছেন এবং সেই যুগে প্রত্যেকের নামের শুদ্ধ উচ্চারণ জৰ্মনে কী সে খবর লইয়া বাঙলায় বানান করিয়াছেন। আমরা নির্বিকার চিত্তে নিত্য নিত্য জওহরলাল, প্যাটেল, মালব্য লিখি, পটোডির নওয়াব ও ভিনু মনকদের কথা আর তুলিলাম না।

সে কথা থাকুক। কিন্তু বঙ্কিমের পুস্তকখানা বাঙলায় লেখা, বাঙলা লিপিতে। যদি পুস্তকখানা দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হইত, তবে বহু অবাঙালি অনায়াসে ইহা পড়িয়া উপকৃত হইতে পারিতেন।

পাঠক পত্রপাঠ শুধাইবেন বাঙলা, হিন্দি, গুজরাতি, মারাঠিতে কি এতই সাদৃশ্য যে শুধু ভিন্ন লিপি বলিয়া, এক প্রদেশের লোক অন্য প্রদেশের রচনা পড়িতে পারে না?

দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নলিখিত রচনাটি পাঠ করুন।

ব্যায়ামচর্চা ভারত অতি পুরনি কালরে পরা প্রচলিত; অসমতো নতুন নহয়। অহোম রাজা সকলর দিনত অসমত ব্যায়ামর খুব আদর আছিল। বিশেষকৈ মহারাজ রুদ্ৰসিংহর দিনত ইয়ার প্রসার বেচী হয়। তেঁও অসমর জাতীয় উৎসব আদিত ব্যায়ামর দৃশ্য দেখুবার নিয়ম করিছিল।

একখানা আসামি পুস্তিকা হইতে এই কয়টি পঙক্তি তুলিয়া দিলাম: ইহার বাংলা অনুবাদ করিয়া সহৃদয় সরল পাঠককে অপমানিত করিতে চাহি না। যে লিপিতে লেখা হইয়াছে অক্ষরে অক্ষরে সেইরকম তুলিয়া দিলাম; কেবলমাত্র বক্তব্য যে র অক্ষর আসামিতে ক অক্ষরের পেট কাটিয়া করা হয় এবং ওয়া উচ্চারণ প্রকাশ করিতে হইলে ব অক্ষরের উপরে একটি হসন্ত জাতীয় চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।

এই কয়টি পঙক্তিই যদি কোনও বিজাতীয় লিপিতে লেখা হইত, তবে এ ভাষা যে না। শিখিয়াও পড়া যায়, সে তত্তটুকু শিখিতে আমাদের মতো অনভিজ্ঞের এক যুগ কাটিয়া যাইত।

পুনরায় দেখুন :

ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক উন্নতি রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে বাক্যটি হিন্দিতে ভারতবর্ষকী অর্থনৈতিক উন্নতি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পর নির্ভর করতি হৈ, এবং গুজরাতিতে ভারতবর্ষনী অর্থনৈতিক উন্নতি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পর নির্ভর করে ছে বলিলে বিশেষ ভুল হয় না কিন্তু যেহেতু গুজরাতি ও হিন্দি ভিন্ন লিপিতে লেখা হয়, আমরা এইসব ভাষা দূরে রাখি; ওইসব ভাষা-ভাষীরাও একে অন্যের মধ্যে তাহাই করেন।

এই বাক্যটিই ফরাসিতে বলি :

le progres economique de l Indedepend sur son Independance politique.

লিপি একই, অর্থাৎ ইংরেজি; কাজেই ভাষাশিক্ষা ব্যাপারে অতি অথর্ব ইংরেজও তাড়াতাড়িতে ফরাসি শিখিতে পারে।

তাহা হইলেই প্রশ্ন, তাবৎ ভারতবর্ষে একই লিপি প্রচলিত হইলে ভালো হয় কি না?

তাহা হইলে পুনরায় প্রশ্ন– শান্তিনিকেতন হইতে শ্ৰীযুত সেন মহোদয় জিজ্ঞাসা করিতেছেন তাবৎ পৃথিবীর জন্য একই লিপি হইলে ভালো হয় কি না? অর্থাৎ লাতিন লিপি যে লিপিতে লাতিন, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, তুর্কি ও অধিকাংশ জর্মন পুস্তক লেখা হয়।

***

এই সম্পর্কে আরেকটি কথা মনে পড়িল। প্রথম যৌবনে এক গুরুর কাছে শিক্ষালাভ করার চেষ্টা করি। সেই প্রাতঃস্মরণীয় গুরু অন্ততপক্ষে একশতটি ভাষা জানিতেন ও খুব সম্ভব একশত হইতে দুই শতের মধ্যেই ঠিক হিসাব পড়ে। এবং প্রত্যেকটি ভাষাই সাধারণ গ্র্যাজুয়েট যতটা সংস্কৃত বা ফারসি জানে তাহা অপেক্ষা বেশি জানিতেন। সাধারণ এ্যাডুয়েট আট বৎসর সংস্কৃত অধ্যয়ন করে। সেই হিসাবে গুরুর বয়স অন্ততপক্ষে ১৫০ x ৮ = ১২০০ বৎসর হওয়া উচিত ছিল; যদি তিন-তিনটি ভাষা একসঙ্গে শিখিয়া থাকেন, তবে তাঁহার বয়স ৪০০ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গুরু বিরিঞ্চি বাবা নহেন ও ৬০ বৎসর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। এবং শেষের দশ বৎসর খুব সম্ভব কোনও নতুন ভাষা শিখেন নাই।

তবেই প্রশ্ন এই অলৌকিক কাণ্ড কী প্রকারে সম্ভবপর হইল?

স্বীকার করি শুরু ভাষার জহুরি ছিলেন ও ভাষা শিখিতে তাহার উৎসাহের অন্ত ছিল না। কিন্তু তবু আমার বিশ্বাস ভালো শুরু পাইলে, অর্থাৎ শিক্ষাপদ্ধতি উত্তম হইলে অল্পায়াসে এক ডজন ভাষা দশ বত্সরে শিখা যায়। শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে আরেকটি জিনিসের প্রয়োজন, তাহা নিষ্ঠা। এবং তৃতীয়ত কণ্ঠস্থ করা অপ্রয়োজনীয়– এই অদ্ভুত বিজাতীয় অনৈসর্গিক পাণ্ডববর্জিত ধারণা মস্তিষ্ক হইতে সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাষণ করা।

***

আরেকটি প্রশ্ন। প্যারিস লিখিব, না পারি? ফরাসিস লিখিব, না ফরাসি, না ফ্রেঞ্চ; বেৰ্লিন না বার্লিন; এ্যাক্সেলা শাপেল না আখেন (প্রথমটি ফরাসি উচ্চারণ ও আন্তর্জাতিক ভাষায় ইহাই চলে, কিন্তু দ্বিতীয়টি জর্মন ও শহরটি জর্মনিতে অবস্থিত? মস্কভা, না মস্কৌ, না মস্কো; শ্যাম না সিরিয়া যিশু, না য়েশু, না জীসস? ১৮৭০-৮০ খ্রিস্টাব্দে এইসব সমস্যা সমাধান করিবার জন্য কলকাতায় একটি কমিটি নির্মিত হয়, তাহার রিপোর্ট এযাবৎ দেখি নাই। কোনও পাঠক দেখিয়াছেন কী?

.

০৬.

ভর্তৃহরি বলিয়াছেন, প্রিয়ভাষীজনকে ধনহীন মনে করা দুর্জনের লক্ষণ। কিন্তু প্রিয়ভাষণেরও তো একটি সীমা থাকার প্রয়োজন। আমরা স্থির করিয়াছি বিলাতি কমিশন না আসা পর্যন্ত টু শব্দটি পর্যন্ত করিয়া রাজনৈতিক আবহাওয়া অহেতুক উষ্ণ করিব না, বিলাতি কর্তাদের গরমে কষ্ট হইতে পারে। কিন্তু এই সুযোগে অ্যাটলি সাহেবের প্রিয়ভাষণ যে অলঙ্কারের উপর অলঙ্কার পরিধান করিতেছে, তাহাতে সন্দেহ হইতেছে– বধূটি খুব সম্ভব কুরূপা। তবু গুরুজনেরা বলিতেছেন, বিশ্বাসে কৃষ্ণ মিলয়। হইতে পারে; কিন্তু কন্যাকর্তাকে বিশ্বাস করিয়া সুরূপা বধূলাভের আশা নগণ্য বলিয়াই কনে দেখার প্রথা এদেশে প্রচলিত।

সে যাহাই হউক, সর্বশেষ উপমা শুনিলাম নিউইয়র্কের কোনও এক খবরের কাগজের লন্ডনস্থ সংবাদদাতার নিকট হইতে। তিনি মনে মনে এক নদীর ছবি আঁকিয়াছেন, তাহার একপারে অ্যাটলি সাহেব, হাতে নাকি বহুমূল্য স্বরাজ; অন্য পারে তাবৎ ভারতীয়। সংবাদদাতা বলিতেছেন, শুধু কংগ্রেস, শুধু লীগ, শুধু রাজসংঘ, শুধু হরিজন সন্তরণ করিয়া উত্তীর্ণ হইলেই হইবে না; সকলকে একযোগে একসঙ্গে সে বৈতরণী পার হইতে হইবে।

বাল্যবয়সে বিস্তর ভারতীয় বিস্তর নদী সাঁতরাইয়া পার হয়, এবারেও চেষ্টা করিবে; কিন্তু প্রশ্ন– কে কে জলে নামিবেন? কংগ্রেস তো নামিবেনই, সায়েবের হাতে যখন স্বরাজ রহিয়াছে, লীগ নামিবেন কি? কারণ সংবাদদাতা বলিয়াছেন, সায়েবের হাতে স্বরাজ, পাকিস্তান আছে কি না বলেন নাই। না হয় লীগও নামিলেন; কিন্তু রাজারা তো কখনও সাঁতার কাটেন না। প্রজাদের পৃষ্ঠে বসিয়া যে যাইবেন তাহারও কোনও উপায় নাই; কারণ প্রথমত প্রজাদের সে-সন্তরণে যোগ দিবার কোনও প্রস্তাবই হয় নাই, দ্বিতীয়ত তাহারা সরেজমিন উপস্থিত থাকিলে মণিটির হিস্যা পাইবার জন্য চেল্লাচেল্লি করিবে, হয়তো-বা সাকুল্য মণিলাভের তালে থাকিবে। কাজেই মনে হইতেছে রাজারা দুইশত বৎসরের প্রাচীন খানদানি বাতরোগের অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে কৃত সনাতন সন্ধিশর্তের দোহাই দিয়া পাড়ে দাঁড়াইয়া রহিবেন অথবা শূন্যে হাত-পা ছুড়িয়া সাঁতারের ভান করিবেন। হরিজন নামিতে পারেন, কারণ কূপ অপবিত্র হইতে পারে, মা-গঙ্গার সে ভয় নাই।

কিন্তু একযোগে সাঁতার কাটিতে হইবে। বয়নাক্কাটা বিবেচনা করুন। রুশ বাদ দিলে তামাম ইউরোপ ভারতের চেয়ে ক্ষুদ্র, তবু তথাকার কর্তারা সাঁতার কাটিবার সময় একে অন্যের গলা এমনি টিপিয়া ধরেন, যাহাকে বলে মহাযুদ্ধ। আর শুধু তাহাই নহে। পৃথিবীর আপামর জনসাধারণকে সেই নদীতে নামানো চাই, কি অস্ট্রেলিয়া, কি আমেরিকা, কি ভারত–কাহারও রেহাই নাই। এই এক জন্মেই দুইটি দক্ষযজ্ঞ দেখিলাম। তাহারই এক ছাগ-মুণ্ড তম্বি করিয়া বলিতেছেন, একযোগে সাঁতরাও।

না হয় সঁতরাইলাম, কিন্তু তথাপি প্রশ্ন ক্রিপস-নদীতে যে হাঙর-কুমির আমাদের পা কামড়াইয়া সবকিছু ভণ্ডুল করিয়া দিয়াছিলেন তাঁহারা ইতোমধ্যে বৈষ্ণব হইয়া গিয়াছেন কি?

সর্বশেষ প্রশ্ন, সায়েবের হস্ত মুষ্টিবদ্ধ। এ যেন ফোকা ধোকা খেলা। আমরা সকলে একযোগে হাঙ্গর-কুমির এড়াইয়া নদী পার হইয়া একবাক্যে চিৎকার করিয়া বলিব, আমরা ফোকা চাই অথবা ধোকা চাই, তখন সায়েব হস্তানন্মাচন করিবেন।

তখন আমাকে দোষ দিবেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *