হে নিশান-বাহী
নিশান কি ঝড়ে পড়ে গেছে আজ মাটির ‘পরে?
আধো চাঁদ-আঁকা সেই শাশ্বত জয়-নিশান?
বহু মৃত্যর প্রলয়-আঘাতে, প্রবল ঝড়ে
নুয়ে গেছে সেই প্রথম দিনের জয়-নিশান?
হামাগুড়ি দিয়ে কারা চলে ঐ পতাকীদল?
কার ক্রন্দনে ভরিছে শূন্য জলস্থল?
নিশান কি আজ প’ড়ে গেছে ভূঁয়ে,
নিশান-বাহ কি চলে মাটি ছুঁয়ে
শিয়রে কি তার কঠিন বাধার জগদ্দল? “
বুক চাপা দেওয়া ধন মিথ্যার জগদ্দল?
হে নিশান বাহী। আজো সম্মুখে রাতের সীমা
দৃষ্টি রোধে কি তিমিরাচলের ঘন ম্লানিমা?
আজো সম্মুখে বন্ধুর পথ বালিয়াড়ির
সঙ্গী বিহীন জনতা-মুখর সাগরতীর?
ঐ দেখো স্রোতে অরূপ আলোতে সূর্যতরী
তীক্ষ্ণ আলোর তুফানে ছিঁড়িহে এ শর্বরী,
এই কালো রাত জমাট-তুহিন হিম-অতল,
ছিঁড়ে চ’লে যায় আলোর ছোঁয়ায় গলানো জল।
পাওনি এখনো আলোর পরশ নবজীবন?
মৃত শব হতে হয়নি কি আজো উজ্জীবন,
এখনো সূর্য ভাঙেনি কি এই রাতের সীমা,
এখনো তোমায় পথ ছেয়ে আছে ঘনম্নানিমা?
হি নিশান-বাহী। তাই আছো নুয়ে?
তাই কি পতাকা আছে মাটি ছুঁয়ে?
তবু এই চলা জানি উদয়ের পূর্বাভাস,
কালো কুয়াশার পর্দায় ঢাকা
তোমার সূর্য, আলো, আকাশ।
পায়ের তলায় প্রবল অশ্বখুরে
মরুবালুকার ফুলিঙ্গ উঠে নিমেষে মিলায় দূরে,
ওড়ে বাতাসের শিখার শিখরে মুক্তি লাল,
শ্বেত পতাকায় শাস্তিচিহ্ন আল-হেলাল।
সেই উদ্দাম রণতরঙ্গ মানে না বাধা,
পলকে পলকে জ্বলে তার খুরে অগ্নিশিখা।
আলোর প্লাবনে কে নিশান-বাহী অগ্রগামী,
ঝড়ের দাপটে ভাঙে শতকের কুজঝটিকা।
আমাকে জাগাও তোমার পথের ধারে,
আমাকে জাগাও এ বিজন কান্তারে,
আমাকে জাগাও যেখানে সেনানী। মানে না বাধন রবি,
আমাকে জাগাও যেখানে দীপ্ত সে মদিনাতুন্নবী,
বিশ্বকরুণা, মুক্তি পদা-বেদনা লাল
বহিছে চিত্ত-সুরভিত-শ্বেত আল হেলাল।
আজ দেখি হেথা ভাঙে গড়ে শর্বরী বিস্বাদ,
পাপড়ি খোলার মুহূর্তে জাগে মুমূর্ষ অবসাদ।
কোথায় নিশান, কালের পাখায় মিলালো কোথা সে-দিন,
সেই অভিযান-স্মৃতি নিয়ে আছে মরুভূমি ধুলিলীন,
জরাগ্রস্ত এ খাপদ ভূমির রজনী-স্বপ্নহীন,
প্রবল বাধার পাহারায় হেথা উদ্যত সংগীন।।
হে নিশান-বাহী। অশ্বরের প্রবল ধ্বনি
যায় না শোনা,
আজ অগণন ক্ষুধিত মুখের আর্তধ্বনি
যায় না গোণা।
কোথায় তোমার বীর-সঙ্গীর উদ্বোধন?
ফিরে আসে আজ নিরাশ হাওয়ায় শূন্যমন।
মাটি ছোঁওয়া হায় তোমার নিশান ওড়ে না ঝড়ে;
তোমার সাথীরা পথে প্রান্তরে জরায় মরে।
হে নিশান-বাহী! ওড়াও তবুও আধেক চাঁদ,
ভাঙো বারবার রাত্রির দ্বার মৃত্যুবাঁধ
হয়তো এখানে জাগিবে না আজ শস্ত্রধ্বনি,
ভাঙা শিরদাঁড়া হবে শঙ্কিত মৃত্যু গণি;
হে নিশান-বাহী! ওড়াও তবুও ওড়াও
হেলাল রশি আকাশে আকাশে ছড়াও।
নিশান তোমার যদি না ওড়ে;
নিশান তোমার প্রবল ঝড়ে
যদি বা কখনো ধূলায় পড়ে
তবুও দিনের স্বপ্নসাধ
এ ধূলি-ধূসর পথের ‘পরে।
জানি এই-দল ভাঙা মিছিল
বিজয়ী মুঠিতে নেবে নিখিল,
খুলি রাত্রির তিমির খিল
জাগাবে সূর্য; জাগাবে নীল।।
এখনো তোমার দৃষ্টিতে জাগে সুদূরের ইঙ্গিত–
সমুদ্রপথ আবিস্কারের বিপুল সম্ভাবনা,
নিমেষে আকাশ পার হয়ে এসে বসুধার সঙ্গীত
শুনিবার সাধ এখনো তোমার যায়নি অন্যমনা।
তুমি বেঁচে আছে, আজো বেঁচে আছে-সেনানীর তরবারী;
আধো চাঁদ আজো সঙ্গী তোমার যে আল-হেলালধারী।
তোমার তনুর অণুতে অণুতে সেই অশ্রুত সুর,
জাগ্রত মান হেরিছে সমুদ্র অশ্রুর।
আছে তার পার, সাগর-বেলার তীরে ভয় পেয়োনাকো
আধো চাঁদ আঁকা হে নিশানধারী, এ মিনতি মোর রাখো–
যেথা সমুদ্র হিংস্র ক্ষুধায় আঁধার-নীল
যেথা আবর্ত-সঙ্কুল স্রোত বাধা কুটিল।।