০৭.
হু আর ইউ?
এয়ার বোর্ন। মেজর ভর্দৰ্গ পুনরায় ধমকে উঠলেন, মাই ব্লাডি ফুট। লাউডার। ওরা এয়ার বোর্ন এয়ার বোর্ন চিৎকার করছে, আর দৌড়চ্ছে। পেছনে মেজর ভদগ। ওদের চিৎকার ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল দূরে। চেরাটে আবার শুরু হলো অফিসার্স অ্যাডভান্সড কমাণ্ডো কোর্স। কিছুদিন পূর্বে আনোয়ার এখান থেকেই আর্মি কমাণ্ডো লীডার্স কোর্স শেষ করেছে। সেই কোর্স থেকে একমাত্র ওকেই এ ট্রেনিং-এর জন্য মনোনীত করা হলো।
মোট ট্রেইনী অফিসারের সংখ্যা ছিল ২৪ জন। এদের মধ্যে রয়েছে ক্যাপ্টেন আদিল–আনোয়ারের রূমমেট, ক্যাপ্টেন জিয়া আনোয়ারের কম্পাস মার্চের সহচর, ফ্লাইং অফিসার মঞ্জুরুল হক বিখ্যাত হার্ডল দৌড়বিদ, ফ্লাইং অফিসার তোফায়েল বাজোয়া– শর্টপুট নিক্ষেপে পাকিস্তান নাম্বার ওয়ান এবং এশিয়ান নাম্বার থ্রী। বিশাল আকৃতির বাজোয়াকে অন্ধকার রাতে কোন শত্রু সৈন্য আচমকা দেখলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে, এমনকি হার্টফেলও বিচিত্র নয়।
এই চারজনই ভীষণ অমায়িক । এই ট্রেনিং-এর সময় আনোয়ারের সঙ্গে দেখা হলো ওর প্রাক্তন চীফ ট্রেইনার মেজর রউফের। আনোয়ার চেরাটে কমাণ্ডো কোর্স করতে এসেছে দেখে তিনি ভীষণ খুশি হলেন। কারণ দ্বিতীয়বার স্বেচ্ছায় কমাণ্ডো কোর্স করাটা প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তাই তিনি সবাইকে বলে দিলেন, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ওকে যেন অব্যাহতি দেয়া হয়।
মেজর ভর্দগ সবাইকে প্রথম দিনের উদ্বোধনী ভাষণে বললেন, আমি যখন আমেরিকায় ফ্রগম্যান ট্রেনিং-এর জন্য যাই, আমেরিকান ইন্সট্রাকটররা নিজেদেরকে মীন বাস্টার্ড বলে পরিচয় দিয়েছিল। আমার পরিচয় হচ্ছে, আমি একজন স্যাডিস্ট। এ-ট্রেনিং শেষে তোমরা প্যারা কমাণ্ডো বা এয়ার বোর্ন কমাণ্ডো বলে পরিচিত হবে, যেটা কোন কৌতুকের ব্যাপার নয়। সিনেমায় প্রদর্শিত কোন সস্তা দৃশ্যের মত নয় এ ট্রেনিং। অতএব কারও বেরিয়ে যাবার ইচ্ছা থাকলে এখনি যাও; নইলে আমি এমন অবস্থা করব, যাতে, যারা বেরিয়ে যাবার তারা যেতে বাধ্য হবে। এখানে যারা থাকবে, তাদেরকে হতে হবে মেশিনে পেষাই করা ময়দার মত।
পরদিন থেকে পুরোদমে ট্রেনিং শুরু হলো। প্রথমে মাইল দুয়েক দৌড়ে শরীর গরম করে বুকডন দেয়া আরম্ভ হয়। ক্রমাগত বুকডন দিতে দিতে বাজোয়ার মত দৈত্যও মাটিতে শুয়ে পড়ত। তারপর শুরু হত এয়ারবোর্ন পিটি। এই পিটি সবার শেষ শক্তিটুকুও নিংড়ে নিত। পিটি শেষে এক মাইল চড়াই অতিক্রম করে ওদের ফিরতে হত ঘরে । এরপর এল চার মাইল দৌড়ের পরীক্ষা। ট্রেইনী কমাণ্ডোদের পরনে কমপ্লিট ব্যাটল ড্রেস। পিঠে চল্লিশ পাউণ্ড ওজনের প্যাক। হাতে রাইফেল। দুর্গম পাথুরে পথ দুই হাজার ফুট ঢালু। ওদের এই ঢাল বেয়ে নেমে যেতে হবে দুই মাইল। আবার উত্রাই ভেঙে ফিরে আসতে হবে, সময় মাত্র চল্লিশ মিনিট।
আনোয়ার প্রথম দিন পঁয়ত্রিশ মিনিটে এই দূরত্ব অতিক্রম করল। এক্ষেত্রে এস.এস.জি.-র সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাব্বিশ মিনিট। এই রেকর্ডধারী হলেন প্যারাস্কুলের ভারপ্রাপ্ত বিখ্যাত অফিসার তারেক মাহমুদ, যিনি টি.এম. বা টক্কর মার নামে খ্যাত। অ্যাসল্ট কোর্সেও আনোয়ার বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলো। এরপর শুরু হলো ইভনিং ট্রেনিং। এ-ট্রেনিংয়ে ভয়ানক দুর্গম পথ ব্যবহার করতে হয়। রাতের অন্ধকারে ওদের তিন-চারটি উঁচু উঁচু চূড়া অতিক্রম করতে হবে। এগুলোর কোন কোনটা এক হাজার ফুটেরও বেশি উঁচু। অন্ধকার রাত বলেই এ-ধরনের দুর্গম চূড়া অতিক্রম করা সম্ভব। কেননা অন্ধকারে কোন দুর্গমতা চোখে পড়ে
এরপর পূর্বের জালোযাই রেস্ট হাউজ এলাকায় শুরু হলো কম্পাসমার্চ। অন্ধকার রাত। আনোয়ার ও ক্যাপ্টেন জিয়া কম্পাস মার্চে বেরিয়েছে। ওদের পিঠে প্রায় একশো পাউণ্ডের বোঝা, হাতে স্টিক। শত্রুর জীপ ওদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। জীপগুলো হেড লাইট নিভিয়ে লুকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে দপ করে আলো জ্বালে। তেমনি জ্বলে ওঠা আলোর সম্মুখে হঠাৎ করে পড়ে গেল ওরা দুজন। শত্রুর জীপ দ্রুত তেড়ে এল। ওরা প্রাণপণে ছুটতে শুরু করল। জীপ প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে আসছে। ওরাও শত্রুর দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার জন্য তীরবেগে ছুটে পালাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। হঠাৎ আনোয়ারের বুক ধড়াস করে উঠল। পায়ের তলায় মাটি নেই। সে দ্রুতবেগে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। চোখের পলকে ঘটে গেল ঘটনাটা। দড়াম করে আছড়ে পড়ল সে অন্ধকারে। খাদটা তিরিশ ফুট গভীর।
অনেক দিনের পুরানো বালি জমে পাথরের মত শক্ত হয়ে আছে। আনোয়ারের ভারী শরীরের প্রচণ্ড আঘাতে জমে থাকা শক্ত বালি চুর্ণ হয়ে গেল। একই সঙ্গে মাথাটাও হাঁটুর সঙ্গে জোরে ঠুকে গেল। জ্ঞান হারাল ও। ওর অচেতন দেহটা জমাট বাঁধা বালির ওপর চিৎ হয়ে পড়ে আছে। হাতের ছড়িটা ছিটকে গেছে দূরে। কতক্ষণ এভাবে কেটেছে জানা নেই। হঠাৎ জিয়ার গলা শুনতে পেল আনোয়ার। জিয়া ধীরে ধীরে ওর মাথা ঝাঁকাচ্ছে। এই সময় খাদের পাড়ে শত্রুর গলার আওয়াজ শোনা গেল। জিয়া কালবিলম্ব না করে শক্রদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলে উঠল, এখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাড়াতাড়ি সাহায্য পাঠাও।– আনোয়ারের জ্ঞান ফিরে আসছে। ওর কপালে ভীষণ ব্যথা। মাথাটাও দপ দপ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেজর ভর্দগ দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হলেন। আনোয়ারকে খাদ থেকে ওপরে ওঠানো হলো। ভগ জীপ চালিয়ে ওকে নিয়ে পৌঁছলেন নওশেরা সি.এম.এইচ.-এ। দুই-তিন দিন পর হঠাৎ আনোয়ার লক্ষ করল, ওর কেবিনে কোন সিস্টার আসছে না। অথচ পাশের কেবিনে সিস্টারদের রীতিমত যাতায়াত। ব্যাপার কি? আনোয়ার ঘটনাটা জনৈক মেডিক্যাল অফিসার (মেজর)-কে জানাল। ওর কথা শুনে মেডিক্যাল অফিসার একটু অবাক হলেন। এমন তো হবার কথা নয়। তিনি ব্যাপারটা দেখবেন বলে জানালেন।
পরদিন মেডিক্যাল অফিসার এসে আনোয়ারকে বললেন, কিছু মনে করবেন না, এরা জানতে পেরেছে, আপনি একজন গেরিলা অফিসার। তাছাড়া আপনার চেহারার এখন যে হাল তাতে সিস্টাররা আপনার কাছে আসতে ভয় পাচ্ছে। আনোয়ার কোথায় র্যাকুয়েল ওয়েলকে গার্লফ্রেণ্ড বানানোর স্বপ্ন দেখে, এখন সামান্য সিস্টাররা ওর কাছে আসতে ভয় পাচ্ছে? হায়রে মেডিক্যাল সিস্টার! চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে পড়ল সে। হাসপাতালে সাত-আটদিন কাটাবার পর হাঁপিয়ে উঠেছিল। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করল ছেড়ে দিতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নাছোড়বান্দা। এক থেকে দেড় মাস বিশ্রাম নিতেই হবে। মনে মনে হাসপাতাল থেকে পালানোর বুদ্ধি আঁটল আনোয়ার।
একদিন। রাত সাড়ে দশটার দিকে বেড়ানোর নাম করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এল সে। জি.টি, রোডে উঠে একটা টাঙ্গা ভাড়া করল। নওশেরা থেকে প্রায় আট-দশ মাইল দূরে পাব্বি পৌঁছে টাঙ্গা ছেড়ে দিল আনোয়ার। পাব্বি হলো জি. টি. রোড ও চেরাট রোডের সংযোগস্থল-সংক্ষেপে পাব্বিটি জংশন। জংশনে পৌঁছে ওর মনে পড়ল, সর্বনাশ! এত রাতে চেরাট যাওয়ার তো কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না! চেরাটগামী শেষ বাস রাত আটটার সময় ছেড়ে গেছে। এদিক ওদিক তাকাল আনোয়ার। রাত বেশ গম্ভীর হয়েছে। অনতিদূরে ছোট্ট একটা বাজার। সেখানে কয়েকটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে দেখা গেল। একটা ট্রাকের ঘুমন্ত ড্রাইভারকে জাগিয়ে চেরাট পর্যন্ত ভাড়া যাবার কথা বলতেই ড্রাইভার অবাক! চোখ রগড়ে ওর দিকে ভাল করে চাইল-বলে কি! ব্যাটা পাগল নাকি! একা একটা ট্রাক ভাড়া করে যাবে! তখন আনোয়ার নিজের পরিচয় সহ ড্রাইভারকে সমস্ত পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলল। এবারে চট করে রাজি হলো ড্রাইভার। রাত প্রায় দুটোয় পৌঁছল সে চেরাট ক্যান্টনমেন্টে।
কয়েকদিন পর শুরু হলো ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নতুন অনুশীলন। এক একটা অনুশীলন এলাকার দূরত্ব ক্যান্টনমেন্ট থেকে কমপক্ষে একশো পঞ্চাশ মাইল। রেইড ও অ্যামবুশ, অনুশীলন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অন্ধকার রাতে বড় বড় রেলওয়ে ব্রিজগুলো রেইড করতে হত ওদের। সন্তর্পণে ব্রিজের সুপার স্ট্রাকচার বেয়ে ওপরে উঠে এক্সপ্লোসিভ ফিট করতে হত। তাতে প্রাইমাকর্ড দিয়ে সংযোগ ঘটানোটা ছিল বিপজ্জনক। এই কাজের জন্য অ্যাকশন পার্টিকে সময় দেয়া হত মাত্র আট মিনিট। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সারতে না পারলে পুনরায় অ্যাকশনে যেতে হত ওদের।
রেইড ও অ্যামবুশের পর শুরু হলো রেলওয়ে টানেল হামলা। টানেল হামলা অনুশীলনও ছিল রীতিমত ভয়ানক। যে-কোন সময়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা। ট্রেইনী কমাণ্ডোদের রাতের অন্ধকারে সেন্ট্রিদের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে টানেলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হত। রেল লাইনের নিচে এক্সপ্লোসিভ, প্রাইমাকর্ড ও প্রেসার সুইচ লাগাতে হত। প্রেসার সুইচ থেকে প্রাইমাকর্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখত ওরা। যাতে সত্যিকারের বিস্ফোরণ না ঘটে। তারপর ওরা চুপি চুপি টানেল থেকে বেরিয়ে আসত। রেপেলিংটাও কম বিপজ্জনক ছিল না। প্রায় একশো বিশ ফুট খাড়া পাহাড়ের দেয়াল, দড়ির সাহায্যে নেমে আসতে হত ওদের। রেপেলিংয়ের সাহায্যে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত মাত্র পাঁচ-ছয় সেকেণ্ড ।
এরপর শুরু হলো হাত বাঁধা বন্দী অবস্থায় চলন্ত জীপ-ট্রাক বা চলন্ত ট্রেন থেকে পালানোর অনুশীলন। ট্রাক বা জীপ যখন কোন ব্রিজ অতিক্রম করছে, ঠিক তখন আচমকা পানিতে লাফিয়ে পালাতে হত । অথবা কোন কাঁটা ঝোঁপ বা জঙ্গল অতিক্রমের সময় পালাত ওরা। এভাবে বিভিন্ন বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ অনুশীলন একে একে শেষ করল ওরা। সময়ের তালে তালে আনোয়ার এগিয়ে চলল এক রোমাঞ্চকর জীবনের দিকে; যে জীবন মৃত্যুর শীতল স্পর্শ দিয়ে গড়া, পদে পদে নতুন শিহরণ, নতুন অভিজ্ঞতা।
এবারে দি লোন রেঞ্জার-একলা চলরে। ক্যাম্পবেলপুর থেকে শুরু হয়েছে বিস্তৃত মরু প্রান্তর। এই খটখটে শুকনো প্রান্তরে পদে পদে মৃত্যুর সম্ভাবনা। সারা প্রান্তর জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় খানা-খন্দক। আর রয়েছে মৃত্যু ফাঁদ-চোরাবালি, যার খপ্পরে পড়লে মৃত্যু অনিবার্য। এই বালি মানুষকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নেয়, চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় সে রহস্যময় চোরাবালির অভ্যন্তরে। এই এলাকার শুরুতেই ছোট ছোট কয়েকটি গ্রাম। রাতের অন্ধকারে গ্রামগুলো পাহারা দেয় কতগুলো ব্লাড হাউণ্ড, বুল টেরীয়ার। মানুষকে নিমেষে টুকরো টুকরো করে ফেলতে এদের জুড়ি নেই। রহস্যঘেরা বিপদ-সংকুল প্রান্তরের পাশ দিয়ে গ্রামগুলোর গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে চলে গেছে জি.টি. রোড। একদিন সন্ধ্যায় আনোয়ার ও আরও কয়েকজন লোন রেঞ্জারকে জি.টি. রোডের এই এলাকায় নিয়ে আসা হলো। ওরা সবাই নিরস্ত্র। প্রত্যেকের সঙ্গে রয়েছে একটা করে পানির বোতল, কিছু শুকনো ফলমূল ও সিগারেট-দেশলাই। আর রয়েছে মরুপ্রান্তরে চলার জন্য কম্পাস ও দিক নির্দেশক ডিগ্রী।
জি.টি. রোডের একটা অজানা মাইল স্টোন। এখান থেকে আনোয়ারকে ছেড়ে দেয়া হলো। ওকে অতিক্রম করতে হবে পঁয়তাল্লিশ হাজার গজপ্রায় ছাব্বিশ মাইল। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই এই দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে ওকে। নির্দিষ্ট সময় দূরত্ব অতিক্রম করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে না পারলে পানিশমেন্ট। শাস্তিস্বরূপ ওকে পুনরায় অজানা পথে চলতে হবে দশ মাইল। এই দুরত্বের জন্যও নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে। সঠিক দূরত্ব অতিক্রম করতে না পারলে আবারও খেসারত। এভাবে ক্রমাগত এগিয়ে যেতে হবে লোন রেঞ্জারকে অজানা গন্তব্যের দিকে।
সম্মুখে ধু-ধু প্রান্তর। গাছপালাহীন, নীরস, জনশূন্য পরিবেশ। হিমেল হাওয়া বইছে। মিটি মিটি তারাজ্বলা আকাশ। চাঁদ ঘন কুয়াশায় ঢাকা। কম্পাসে ডিগ্রী সেট করে লোন রেঞ্জার আনোয়ার এগিয়ে চলেছে অজানা গন্তব্যস্থলের দিকে। প্রতিটা পদক্ষেপ গুণতে হচ্ছে সঠিক দূরত্ব নির্ধারণের জন্য। মাঝে মাঝে দিক নির্দেশক তারাটাকে দেখে নিতে হচ্ছে। কিছুদূর অতিক্রম করার পর ঘন হয়ে এল কুয়াশা-খাটো হয়ে গেল দৃষ্টিসীমা। দূরে কোন কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। রাত গম্ভীর হয়ে এল। এই পরিবেশে হঠাৎ আনোয়ারের মনে হলো, সে যেন এক অশরীরী আত্মাতেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে অদৃশ্য ডাকিনীর ডাকে।
আনোয়ারের গা-টা একটু ছমছম করে উঠছিল। সঙ্গে সঙ্গে এই ভৌতিক চিন্তাটা সে মন থেকে দূর করে দিল। সে লোন রেঞ্জার; যে-কোন পরিস্থিতিতে তাকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে; যে কোনরকম ভয়কে জয় করতে হবে। সেজন্যই তো এই পরীক্ষা। সন্ধ্যা থেকে চলা শুরু হয়েছে। রাত এখন প্রায় পৌনে এগারোটা। বালির ওপর বসে পড়ল ও। কোমরের বেল্ট থেকে পানির বোতলটা খুলে পাশে রাখল। জ্যাকেটের পকেট থেকে শুকনো ফলমূল বের করে চিবাল কিছুক্ষণ। বোতলের কর্ক খুলে ঢক ঢক করে কয়েক চুমুক পানি খেয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল। তারপর এগিয়ে চলল মরু প্রান্তরের বুক চিরে অজানা গন্তব্যস্থলের দিকে ।
রাতের মরু প্রান্তর বেশ ঠাণ্ডা। তার ওপর হিমেল বাতাস। কুয়াশার সঙ্গে চাঁদের আলোর রহস্যময় লুকোচুরি। চারদিকে চাইল আনোয়ার। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু অখণ্ড নীরবতা। জীবন্ত প্রাণীর চিহ্নমাত্র নেই। সমস্ত পৃথিবী তন্দ্রাচ্ছন্ন। শুধু একটি জীবন্ত অস্তিত্ব হাঁটছে তো হাঁটছেই–লোন রেঞ্জার আনোয়ার।
মাঝে মাঝে ছোটখাট হোঁচট খাচ্ছে সে। বালিমাটি-~দ্রুত এগুনো যাচ্ছে না। তবুও অবিরাম চলতে হচ্ছে ওকে–সময়সীমা নির্দিষ্ট। রাত প্রায় একটার দিকে দূরে আনোয়ারের নজরে পড়ল কম্পাস নির্দেশিত পথে জমাট বাঁধা অন্ধকার। ঘন কুয়াশার জন্য পরিষ্কার করে বোঝা গেল না, পাহাড় না গাছপালা। কাছে যেতেই জমাট অন্ধকারটা মাঝারি আকারের একটা জঙ্গলে পরিণত হলো। ভিতরে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। আনোয়ার অতি সন্তর্পণে অন্ধকার জঙ্গলে প্রবেশ করল। শত্রুর ভয়ে হাতের ছোট্ট পেন টর্চ জ্বালতে পারছে না। ট্রেই কমান্ডোরা ঘুরে বেড়াচ্ছে মরু প্রান্তরের মাঝে। ওরা শত্রুর ভূমিকা পালন করছে। ওদের হাতে ধরা পড়ার কথা মনে হলেই ভয়ে গা-টা শিউরে ওঠে।
গাছের ফাঁক দিয়ে আবছা আবছা মরুভূমি দেখা যাচ্ছে সম্মুখে । আনোয়ার পা টিপে টিপে এগুচ্ছে কোনরকম শব্দ না করে। বলা যায় না, শত্রু এখানেও লুকিয়ে থাকতে পারে। পায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে লতানো গাছ পেঁচিয়ে যাচ্ছে। তাই ও অতি ধীরে ধীরে চলছে। অন্ধকার জায়গার প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে পৌঁছেছে আনোয়ার। হঠাৎ চমকে উঠল–পায়ের নিচে মাটি নেই। দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে সে। সঙ্গে সঙ্গে জালোযাই এলাকার কথা মনে পড়ল। তিরিশ ফুট গভীর খাদে পড়েছিল সেবার। এ যাত্রা এই প্রথম ভয়ে শরীর শিউরে উঠল ওর। সঙ্গীবিহীন গভীর রাতে নির্জন মরুপ্রান্তরে উদ্ধারের কোন আশা নেই। অর্থাৎ মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু না, এবারের মত মনে হয় বেঁচে গেল ও। তিন চার ফুট পতনের পর পায়ের তলায় ঠেকল শক্ত মাটি। আনোয়ার গর্তের মাঝে দাঁড়িয়ে পেন টর্চ জ্বালল। টর্চের আলোয়, ওর চক্ষু স্থির। গর্তের ভিতর একটা নর-কঙ্কাল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। কঙ্কালের মাথার খুলিটা ওর দিকে দাঁত খিঁচিয়ে তাকিয়ে আছে যেন। আনোয়ারের অনধিকার প্রবেশ ওর যেন সহ্য হচ্ছে না। গর্তের ভিতরে দাঁড়িয়ে আশপাশে ভাল করে তাকাতেই সে বুঝতে পারল, এটা একটা পুরানো পরিত্যক্ত গোরস্থান। এলাকাটা প্রায় পাথুরে। ও পড়েছে একটা পুরানো কবরের ভিতর।
কবরের ভিতরটা বেশ গরম মনে হলো ওর। মাথার ওপর, গাছপালার ছাউনি। জায়গাটা বিশ্রামের জন্য বেশ আরামদায়ক। কঙ্কালের হাড়গোড়গুলো একদিকে সরিয়ে রাখল আনোয়ার। তারপর কবরের এক কোনায় আরাম করে হেলান দিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর শুকনো ফলমূল খেয়ে বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি গিলল। তারপর একটা সিগারেটে তৃপ্তির সঙ্গে টান দিল। বাইরে হিমেল বাতাস। কবরটা কিন্তু বেশ গরম। একটু ভ্যাপসা গন্ধ নাকে লাগছে। কিন্তু সেদিকে আনোয়ারের খেয়াল নেই। দীর্ঘ পথ হেঁটেছে সে-যার-পর-নাই ক্লান্ত শরীর। একসময় নিজের অজান্তেই পশ্চিম পাকিস্তানের ধু-ধু মরু প্রান্তরের বুকে এক পরিত্যক্ত কবরের অভ্যন্তরে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল এই অকুতোভয় বাঙালী যুবক।
বেশ কিছুক্ষণ পর আনোয়ারের ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়ির দিকে চেয়ে চমকে উঠল সে। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। মনে পড়ল ইস্ট্রাকটরদের ভাবলেশহীন নিষ্ঠুর চেহারা । নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে না পারলেই…। তাড়াতাড়ি আনোয়ার জীর্ণ কবর থেকে মাথা বের করল, মুখে জ্বলন্ত সিগারেট। আশপাশটা ভাল করে দেখছে। মরু প্রান্তরের দিকে চোখ ফেরাতেই অবাক! শক খাওয়ার মত সারা শরীর চমকে উঠল ওর। একি! আশপাশে তো পনেরো বিশ মাইলের মধ্যে কোন লোকালয় থাকার কথা নয়। তবে? নিশ্চয়ই চোখের ভুল। চোখ রগড়ে নিল আনোয়ার। নাহ্, ঠিকই আছে। শরীরে জ্বলন্ত সিগারেট ঠেকাল, স্বপ্ন নয়। কিন্তু বাস্তব বলে ব্যাপারটা চিন্তাও করা যায় না। অথচ চোখের সামনে প্রান্তরের মাঝে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে সম্পূর্ণ নগ্ন এক সুন্দরী যুবতী। আকর্ষণীয় ফিগার। মাথা নিচু করে কি যেন খুঁজছে।
আনোয়ার ঢোক গিলে গলা ঝেড়ে নিল। চিৎকার করল যুবতীর উদ্দেশে, কোন হ্যায়? নিঃশব্দ খোলা প্রান্তরে ওর চিৎকার বহুদূরে হারিয়ে গেল। যুবতী আগের মতই নিঃশব্দে মাথা নিচু করে কি যেন খুঁজে চলেছে। আনোয়ার তিন-চারবার যুবতীর উদ্দেশে চিৎকার করল । নিশাচর যুবতী নিরুত্তর। উত্তর না পেয়ে ও একটা পাথর ছুঁড়ল সেই যুবতীর উদ্দেশে। সঙ্গে সঙ্গে ওর চারপাশে কুচি কুচি পাথর উড়ে এল। কয়েকটা ওর গায়েও পড়ল। তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে কবরের মধ্যে বসে পড়ল আনোয়ার।
হঠাৎ মনে হলো ওর, কবরবাসী কঙ্কালটাই জীবন্ত হয়ে যুবতীর ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে না তো? চিন্তাটা মাথায় আসতেই শরীরের রক্ত হিম হয়ে এল। দাঁতে দাঁত চাপল আনোয়ার। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকাল কঙ্কালের দিকে। জড়ো করা হাড়গোড়ের ভিতর থেকে কঙ্কালের মাথাটা উঁকি দিচ্ছে। মুখ ব্যাদান করে তাকিয়ে আছে আনোয়ারের দিকে। বাইরে নগ্ন যুবতী, সম্মুখে জীবন্ত কঙ্কালের হাড়গোেড়। ও বুঝতে পারল, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। না হলে যে-কোন মুহূর্তে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা। ও দ্রুত মাথাটা ঝাঁকি দিল। ক্ষণিকের জন্য ভৌতিক চিন্তাগুলো মাথা থেকে চলে গেল; সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় জেগে উঠল ইট্রাকটরদের ভাবলেশহীন নিষ্ঠুর চেহারা। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছুতে না পারলেই… 1 প্রচণ্ড রাগ হলো আনোয়ারের নিশাচর যুবতীর ওপর। রাগের মাথায় একটা সিগারেট ধরাল সে। ভাবছে, কোন অবস্থাতেই ভয় পেলে চলবে না। যুবতীর ভয়ে আর বসে থাকা যায় না। কমান্ডো স্টাইলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল ও। সম্মুখে তাকিয়ে দেখতে পেল, নিশাচরী উধাও। চারদিকে তাকিয়ে খুঁজল-নেই-কোথাও নেই। রহস্যময়ীর দেখা পাওয়া গেল না। আর।
ভাঙা কবর থেকে বেরিয়ে এল আনোয়ার। আবার এগিয়ে চলল, মরু-প্রান্তরের বুক চিরে কম্পাস নির্দেশিত পথে। নিশাচর যুবতী যেখানে হেঁটে বেড়াচ্ছিল, সেখানে পৌঁছে অবাক হলো সে। পেন-টর্চ জ্বেলে দেখল, বালির ওপর কোন পদচিহ্ন নেই। এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। ও দ্রুত এগুলো সম্মুখে । ১৯২১ সালের ম্যাপে ওর গন্তব্যস্থল দেখানো হয়েছে–চারদিকে গাছপালা বেষ্টিত উঁচু পাড়ওয়ালা একটা পুকুর। পথে আর কোন বিশ্রাম নিল না। এখন কিছুটা পুষিয়ে নিতে হবে। ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলল সামনের দিকে একটু বাঁকা হয়ে, দুহাতে বাতাস কেটে; অনেকটা ভারবাহী কমাপ্তোদের মত।
কুয়াশা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে। মাথার ওপর তারাজ্বলা আকাশ। চাঁদ অনেক আগেই ডুবে গেছে। কয়েকটা অচেনা পাখি উড়ে গেল। পাখিগুলোর ক্ষীণ রব কানে ভেসে এল ওর। চলতে চলতে ও সামনে দেখতে পেল গাছপালা ঘেরা একটা উঁচু জায়গা। পদক্ষেপ গণনা, কম্পাস ও তারার দিক নির্দেশে মনে ২চ্ছে, ওটাই ওর গন্তব্যস্থল।
হঠাৎ বাঁ দিক থেকে ওর কানে ভেসে এল হিংস্র কুকুরের চাপা গর্জন। ওর চলার গতি দ্রুততর হলো। গন্তব্যস্থল প্রায় সন্নিকটে। ওখানে কয়েকজন লোক থাকার কথা। হঠাৎ মনে হলো যদি ও ভুল পথে এসে থাকে তাহলে? যদি ওখানে পৌঁছে দেখে কোন লোক নেই; তখন? ঠিক এই সময় ডানপাশ থেকেও শুরু হলো কুকুরের প্রচণ্ড গর্জন। কুকুরগুলো দ্রুত এগিয়ে আসছে আনোয়ারের দিকে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগেই কুকুরগুলো পৌঁছে যাবে ওর কাছে। চোখের পলকে ওর দেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে হিংস্র জানোয়ারগুলো। আত্মরক্ষার কোন উপায় নেই। ও একাকী। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। হঠাৎ অসহায়ের মত মনে হলো নিজেকে। ওদিকে হিংস্র কুকুরগুলো তীক্ষ্ণ দাঁত বের করে দ্রুত এগিয়ে আসছে। কালবিলম্ব না করে সে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল উঁচু জায়গাটার দিকে।
কুকুরগুলো দুপাশ থেকে এগিয়ে আসছে, চোখে মারাত্মক চাহনি। তীক্ষ্ণ দাঁতগুলো বেরিয়ে আছে। আর মাত্র মিনিটখানেক। তাহলেই লোন-রেঞ্জারের নাগাল পাবে হিংস্র জানোয়ারগুলো। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে সে দৌড়চ্ছে। হঠাৎ করে বাঁচার প্রচণ্ড তাগিদ অনুভব করল সে। এধরনের মৃত্যু ও কোনমতেই মেনে নিতে পারবে না। ওর দেহ কুকুরের পেটে যাবে? নাহ্ কিছুতেই না। দৌড়াতে দৌড়াতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল আনোয়ার। সামনে কাঁটাভর্তি একটা বাবলা গাছ। কুকুরগুলো আর মাত্র কয়েক গজ দূরে। আনোয়ার বুট পায়ে তরতর করে ওঠা শুরু করল বাবলা গাছে। অথচ গাছে চড়ায় সে একেবারেই অনভিজ্ঞ। কুকুরগুলো গাছের নিচে পৌঁছে গেল। কয়েকটা লাফ দিল ওকে ধরার জন্য।
কিন্তু ততক্ষণে সে কুকুরগুলোর নাগালের বাইরে চলে এসেছে। ফুট দশেক উঠে একটা মোটা ডালে চেপে বসল আনোয়ার। নিচে তাকাতেই চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। প্রায় পনেরো বিশটা ব্লাড হাউণ্ড, বুল টেরীয়ার দাঁড়িয়ে আছে। আধো আঁধারে ওদের চোখগুলো জ্বলছে। ভাবখানা এই, একবার নিচে নেমে এসো বাছাধন, লোন-রেঞ্জার হবার মজা দেখাচ্ছি। লোন রেঞ্জার বাবাজী তখন বাবলা গাছের উঁচু ডালে চুপচাপ বসে আছে। মাঝে মাঝে কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছে।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। অন্ধকার ফিকে হয়ে আসতেই আনোয়ার গাছের ওপর থেকে দেখতে পেল কাছেই ছোট্ট একটা গ্রাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য কয়েকজন গ্রামবাসী মাঠে নেমেছে। ওদের হাতে পানি ভর্তি বদনা। গাছের নিচে এতগুলো কুকুর দেখে লোকগুলো কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এল। আনোয়ারকে গাছের ওপর দেখে ওরা থতমত খেয়ে গেল। আনোয়ার লোকগুলোকে নিজের পরিচয় দিল। ওরা জানাল, সামনে গাছপালার ভিতর সেনাবাহিনীর আরও লোক অপেক্ষা করছে। আনোয়ার বুঝল ওটাই ওর গন্তব্যস্থল। যাক বাঁচা গেল রাস্তা ভুল হয়নি তাহলে। ইতোমধ্যে গ্রামবাসীরা কুকুরগুলো সরিয়ে নিয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে এল সে।
গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেখতে পেল, উঁচু পাড় বেষ্টিত একটা খটখটে শুকনো নিচু জায়গা। দেখে মনে হয় না, কোনকালে এখানে পানি ছিল। অথচ ম্যাপে এটাকে পুকুর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে পানি থাকার কথা, সেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে একটা উজ। গাড়ির পাশে ছোট একটা তাবু টাঙানো। পাঁচজন ইন্সট্রাকটর এবং তাদের কয়েকজন সহযোগী তাঁবুর নিচে শুয়ে রয়েছে। আনোয়ার বুট খুলে ওদের পাতা বিছানার ওপর শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন আফজাল ও দানব সদৃশ ফ্লাইং অফিসার বাজোয়াও এসে পৌঁছাল। ওদের সবারই গন্তব্যস্থল একই ছিল। ওরা শুয়ে শুয়েই নাস্তা খেলো।
সূর্য ওঠার আগেই সবাই রওনা হলো চেরাটের উদ্দেশে। গভীর শ্রান্তিতে আনোয়ারের চোখ প্রায় বুজে আছে। এই সময় ও শুনতে পেল, ক্যাপ্টেন আফজালকে সারা রাস্তা কে যেন পাথরের কুচি ছুঁড়ে মেরেছে; রাস্তায় এক জায়গায় বাজোয়া শূন্যে একটা খাঁটিয়া নাচতে দেখেছে। এই ভয়াল অভিজ্ঞতা এখনও ওর কাছে রহস্যাবৃত। এগিয়ে চলেছে ডজ।
.