হেল কমাণ্ডো – ৪

০৪.

খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্ট। আনোয়ারকে একজন কমিশনড অফিসার হিসেবে এখানে বদলি করা হয়েছে। ও এখন সেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট। ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে বিশ দিনের ছুটি নিয়ে দেশে এল আনোয়ার। দেশে ছুটিটা বেশ ফুর্তির সঙ্গে কাটিয়ে আবার প্লেনে করে লাহোর। লাহোর থেকে খারিয়াঁ স্টেশন পর্যন্ত এনে রিজার্ভেশন করল। জীবনে প্রথম চাকুরিস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করল আনোয়ার। খারিয়াঁ নামটা বিগড়ে দিল ওর মনকে। নামটা কেমন যেন বিদঘুঁটে মনে হচ্ছে। লাহোর স্টেশন থেকে কারিয়ার মোটামুটি অবস্থান জানা গেল। এসময়ে খারিয়াঁতে ভীষণ গরম পড়ে। ট্রেনে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে নিল সে। বিকেল তিনটার দিকে ট্রেন খারিয়াঁ স্টেশনে পৌঁছাল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা থেকে বের হয়ে এল আনোয়ার।

ছোট্ট স্টেশন খারিয়াঁ। স্টেশনে পা রাখতেই গরমের ঝাঁপটা এল লাগল যেন চোখে-মুখে। ক্ষণিকের মধ্যেই সারা শরীর ঘেমে উঠল ওর। কিন্তু তবুও পি.এম.এ.-র নিয়মানুযায়ী টাই পরে থাকতে হলো। স্টেশনের চারদিকে তাকিয়ে মনটা আরও বিগড়ে গেল। এ কোথায় বদলি হয়েছে সে? চারদিকে ধু-ধু প্রান্তর। মাঝে মাঝে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ঝোঁপঝাড়। সূর্যের প্রখরতায় ধূসর প্রান্তরের ঝিকিমিঝি চোখকে কেমন যেন ধাধিয়ে দেয়। মনে হচ্ছে, আলোর বিকিরণে যেন উজ্জ্বল পাথর থেকে দ্যুতি ঠিকরে বেরুচ্ছে। এই বৃক্ষহীন বিশাল মরু প্রান্তর ঘেঁষে সর্পিল রেল লাইন এগিয়ে গেছে। তারই একধারে স্টেশন খারিয়াঁ। স্টেশন বলতে ছোট্ট একটা বিল্ডিং। কয়েকটা স্টাফ কোয়ার্টার আর জলের অভাবে অযত্নে লালিত কিছু ঝোঁপঝাড়। স্টেশন থেকে উষর মরুর বুক চিরে এঁকেবেঁকে কোথায় হারিয়ে গেছে একটি অমসৃণ পায়ে চলা গ্রাম্য পথ ।

সেনাবাহিনীর কোন গাড়ি না দেখে একটি ঘোড়ায় টানা টাঙ্গায় মালপত্র চাপাল আনোয়ার। টাঙ্গা এগিয়ে চলল খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে। মাইলখানেক চলার পর টাঙ্গা পাকা রাস্তায় উঠল। এটাই উপমহাদেশের ইতিহাস-খ্যাত সেই গ্র্যাণ্ড ট্রাঙ্ক বা জি.টি. রোড। এই সড়কে বেশ কিছুদূর চলার পর টাঙ্গা বাঁক নিল ক্যান্টনমেন্টের দিকে।

খারিয়াঁ!–কোন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের এরকম নাম হলে বুঝি মানাত ভাল । অথবা বহুদিনের পরিত্যক্ত পোড়ো বাড়ির অথবা রাতের গভীরে অশরীরীদের ছোঁয়ায় হঠাৎ করে জেগে ওঠা কোন ভূতুড়ে মন্দিরের। কিন্তু আশ্চর্য! নামের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টের চেহারার কোন মিল নেই। খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্টকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অত্যাধুনিক ক্যান্টনমেন্টটি আমেরিকানদের হাতে তৈরি। একই ধরনের সমস্ত বিল্ডিং-দোতলা। প্রতিটি বিল্ডিং-এর সামনে কেয়ারী করা লন। ফুলে ফুলে ভরা। সুদৃশ্য অফিসার্স মেসগুলো একতলা । বিরাট ক্যান্টনমেন্টের মাঝখানে দুই মাইল লম্বা ও এক মাইল চওড়া নিখুঁত চতুষ্কোণ মাঠ। মাঠের চারপাশ দিয়ে চলে গেছে চওড়া মসৃণ পীচ ঢালা পথ। পথের দুধারে ফ্লুরোসেন্ট টিউব লাইট এবং একপাশে একের পর এক লম্বা হয়ে যাওয়া পাকা বেঞ্চের গ্যালারি। পথের দুপাশে সুশ্রী গাছের সারি।

ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ দেখে আনোয়ারের মনটা প্রফুল্লতায় ভরে উঠল। বিভিন্ন জায়গায় জিজ্ঞেস করে অবশেষে টাঙ্গা পৌঁছল ওর নতুন ইউনিট নাইনথ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়নে। ওর পরিচয় পেয়ে একজন হাবিলদার স্যালুট (জীবনের প্রথম) করে তাড়াতাড়ি টাঙ্গাটা আবাসিক ভবনের সামনে নিয়ে এল। ও টাঙ্গা থেকে নামতেই একটা গাড়ি এসে থামল পাশে। পরিচয় পেয়ে একজন পাঠান সেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট গাড়ি থেকে নেমে বলল, আই অ্যাম ভেরী সরি, আই ওয়েন্ট টু রিসিভ ইউ টু দ্য স্টেশন, পাইটলি লেট অ্যাণ্ড কামিং ব্যাক জাস্ট নাউ । প্লীজ, ডোন্ট মাইণ্ড। আনোয়ার বলল, নট অ্যাট অল। আই অ্যাম আনোয়ার হোসেন।

তাইমুর শাহ্, পাঠান সেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট নিজের পরিচয় দিল ।

কালবিলম্ব না করে তাইমুর শাহ্ কয়েকজন আর্দালীকে ডেকে মালপত্র আনোয়ারের নির্দিষ্ট রূমে পৌঁছে দিল। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য তাইমুর শাহ্ অনতিদূরে অফিসার্স মেস দেখিয়ে দিল ওকে। শেষে ওকে গোসল করে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেল তাইমুর শাহ্।

দোতলার নিচতলার একটা কামরা আনোয়ারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিপাটি করে সাজানো-গুছানো ডিসটেমপার করা ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা। ইজি চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে আরাম করে একটি সিগারেট ধরাল সে। ইতোমধ্যে মেস থেকে ঠাণ্ডা পানি, চা ও সিগারেট এল। মিনিট পনেরো পর নতুন আদালী এসে সমস্ত জিনিসপত্র পরিপাটি করে গুছিয়ে ফেলল। আনোয়ার বাথরূমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিল। অনেকক্ষণ ধরে ঠাণ্ডা জলে ভিজল ও। ক্রমেই দূর হয়ে গেল পথের ক্লান্তি।

ইউনিটে আনোয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করল একটা নতুন ধরনের জিনিস। নাইনথ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটেলিয়নের প্রত্যেকের ইউনিফরমের কলারে নীল রঙের পাইপিন। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে জানতে পারল, ১৮৫৭ সালে এই ইউনিট বৃটিশ রাজের পক্ষ হয়ে সিপাহী বিদ্রোহ দমনে বিশেষ কৃতিত্ব সহকারে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে নিহত জনৈক সুবেদার মেজরের স্মৃতি ও অন্তিম অনুরোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকল্পে বৃটিশ রাজের নির্দেশে তখন থেকে এই ইউনিট ইউনিফরমের কলারে নীল রংয়ের পাইপিন ব্যবহার করে আসছে। স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর জন্য ব্যাপারটা একটু অন্য রকম মনে হলেও পুরানো সেই ঐতিহ্য তখনও বর্তমান। কাজেই আনোয়ারের ইউনিফরমের কলারেও নীল রংয়ের পাইপিন লাগানো হলো।

সন্ধ্যার সময় তাইমুর শাহ্ এল আনোয়ারকে বিভিন্ন ব্যাচেলর অফিসারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। পরিচয় পর্বটা বেশ হাস্যকৌতুক ও উপভোগ্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো । কারণ প্রত্যেকটা অফিসার নিজের পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনামে পরিচিত হলো ওর সঙ্গে। ফলে প্রথম দিন থেকেই ওদের মধ্যে গড়ে উঠল এক সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

সন্ধ্যার পর আনোয়ার ও তাইমুর শাহ্ অফিসার্স মেসে গেল। তখনও কেউ সেখানে এসে পৌঁছেনি। চারদিকে গুমোট ভাব। বেশ কয়েকটা প্যাডেস্টাল ফ্যান গুমোট ভাবটাকে দূর করার জন্য বনবন করে ঘুরছে। ওরা লনে বসে কোল্ড ড্রিংকসের অর্ডার দিল। কোল্ড ড্রিংকস শেষে ওরা গেল মেস বিল্ডিংয়ের ভেতরে। মেসে ঢুকলেই একপাশে বাথরুম, একপাশে বার ও এন্ট্রি রূম। বার এবং এন্ট্রি রূমের সঙ্গে লাগানো ডাইনিং রুম। দামী আসবাবপত্রে সুসজ্জিত মেস বিল্ডিং। চারদিকে আভিজাত্যের জৌলুস। এন্ট্রি রূমে ইরানী কার্পেট বিছানো কার্পেটের ওপর দেয়ালের পাশ দিয়ে সারা ঘর জুড়ে বড় বড় সাইজের দুপ্রাপ্য চামড়ায় মোড়া সোফাসেট। ডাইনিং রূম এবং এন্ট্রি রূমে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ধরনের রুপোর তৈরি ভাস্কর্য। অপূর্ব সুন্দর। এন্ট্রি রূমের একদিকে ফায়ারপ্লেস, তার দুপাশে বড় সাইজের স্টেরিওগ্রাম ও টেলিভিশন। প্রতিটি ঘর মখমলের ভারী পর্দা দিয়ে ঘেরা। ১৮৯০ সালের মূল্য অনুযায়ী এন্ট্রি রূমে পাতা কার্পেটটার দাম ৩,২০০০০ টাকা। ডাইনিং রূমের বিশাল টেবিলটার দাম ২,৬০০.০০ টাকা এবং রুপোর তৈরি ভাস্কর্যগুলোর মূল্য ৩,৫০,০০০.০০ টাকা। পরিদর্শন শেষে ওরা আবার বেরিয়ে এল। লনে। লনে বসে কয়েকজন ব্যাচেলর অফিসার গল্প করছে। ওদের সঙ্গে নানা কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আনোয়ার ইউনিটের ইতিহাস জেনে নিল।

১৮৪৭ সালে বৃটিশ লেফটেন্যান্ট (পরবর্তীকালে লে. জেনারেল) ওয়াইল্ড এই ইউনিটের পত্তন করেন। এর তৎকালীন মাম ছিল পাঞ্জাম ইরেগুলার ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা পি.আই.এফ.এফ.। পি.আই.এফ. এফ-এর সদস্যদের বলা হত শিকার। তখন থেকে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের অফিসাররা পিফার বলে পরিচিত। প্রত্যেক অফিসারকে তাই বলে দেয়া হয় ওয়ান্স পিফার, অলয়েজ এ পিফার। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের পর এই ইউনিটের বর্তমান নাম নাইনথ ব্যাটেলিয়ান (ওয়াইল্ডস), দ্য ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টবা, সংক্ষেপে নাইন এফ. এফ. বা ওয়াইল্ডস ব্যাটেলিয়ন। রাত নটায় ডিনার সেরে আনোয়ার মেস থেকে ঘরে ফিরে এল ।

পরদিন জীবনের প্রথম অফিসারের ইউনিফরম পরে ইউনিটে গেল সে। ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কম্যাণ্ডিং অফিসার মেজর আকবর হুসাইনের সঙ্গে ইন্টারভিউ হলো। তিনি আনোয়ারকে বি কোম্পানীতে অফিসারের স্বল্পতা হেতু সরাসরি কোম্পানী কমাণ্ডার হিসাবে নিয়োগ করলেন। প্রায় পৌনে দুইশ সৈনিকের কমাণ্ডার হয়ে গেল আনোয়ার। বেলা প্রায় এগারোটার দিকে কোম্পানী অফিসে বিপাকে পড়ল সে। জনৈক প্লাটুন কমাণ্ডার (একজন জে.সি.ও.) তার অধীনস্থ একজন সিপাহীকে আনোয়ারের সম্মুখে হাজির করে তার বিরুদ্ধে আদেশ লংঘনের অভিযোগ করল । চাকুরি জীবনে অফিসের প্রথম দিন। তাই বেশ বিব্রত বোধ করল আনোয়ার। যদিও পি.এম.এ.-তে ল সম্বন্ধে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নেয়া হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন এই প্রথম। প্লাটুন কমাণ্ডারকে ঘণ্টাখানেক পর আসার নির্দেশ দিয়ে অ্যাডজুটেন্টের কাছে গেল আনোয়ার। সব শুনে অ্যাডজুটেন্ট বললেন, এ ধরনের অপরাধে চার্জশীট বানিয়ে কমাণ্ডিং আদালতে তার বিচার হওয়া উচিত। তবে প্রথম দিন বলে তুমি শাস্তি থেকে তাকে কিছুটা অব্যাহতি দিতে পারো।

অফিসে ফিরে এসে অভিযুক্ত সিপাহীকে সাত দিনের প্যাক ড্রিলের শাস্তি ও এ ধরনের অপরাধ আর না করার জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করে ছেড়ে দিল সে। বেলা প্রায় দুটো পর্যন্ত বিভিন্ন অফিশিয়াল চিঠিপত্র দেখে বাবুর্চিখানায় গিয়ে সৈনিকদের খাবার পরীক্ষা করে, সৈনিকদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট হলঘরগুলো পরিদর্শন করে শেষে কোম্পানী স্টোর পরীক্ষা করে মেসে ফিরে এল আনোয়ার। লাঞ্চের পর ঘণ্টাখানেক ঘুম। ঘুম থেকে উঠে বিকেলের চা। তারপর খেলার মাঠ। সন্ধ্যার পর আবার মেস । এই ছিল খারিয়াঁতে ওর প্রাত্যহিক জীবন।

তবে এর খানিকটা ব্যতিক্রমও ছিল বৈকি! সপ্তাহে দুদিন ডিনার নাইট, একদিন ক্লাব নাইট ও মাসে একদিন গেস্ট নাইট। এছাড়াও ছিল সপ্তাহে একদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নাইট ট্রেনিং। এই বিশেষ নাইটগুলো ছিল দারুণ জাঁকজমকপূর্ণ । খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্ট-জীবনে যথেষ্ট বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠত আনোয়ার। তখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে জি.টি. রোডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকত। পিণ্ডি ও লাহোরগামী বাসে যাতায়াতকারী, বেসামরিক যাত্রীদের তাকিয়ে দেখত সে। মনটা তখন হঠাৎ করে কেমন যেন আনমনা হয়ে যেত। মনে পড়ত দেশের কথা, মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন, আরও কত কি। সুশৃঙ্খল সৈনিক জীবনে কঠোরতম ব্যস্ত তার মাঝে কত কথাই না ভুলে থাকতে হত। এই ক্ষণিকের অবসরে দেশে রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো ভারাক্রান্ত করে তুলত ওর মনটাকে। বঙ্গোপসাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার স্মৃতি মনটাকে সবচেয়ে বেশি চঞ্চল করে তুলত।

খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্টের বাইরে যাওয়া শুরু হলো ওদের। ফায়ারিং রেঞ্জে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের যেমন পিস্তল, স্টেনগান, মিডিয়াম মেশিনগান, হেভী মেশিনগান, অটোমেটিক রাইফেলস রিকয়েললেস রাইফেল প্রভৃতির গুলি চালনার অনুশীলন শুরু হলো। রিকয়েললেস রাইফেল নামক এই ট্যাংক বিধ্বংসী গোলা নিক্ষেপকারী রাইফেলের ফায়ারিং অনুশীলন ছিল বেশ বিপজ্জনক। এই লম্বা ব্যারেলের রাইফেলগুলো জীপে হুক দিয়ে আটকানো থাকে। জীপে এবং মাটিতে রেখে এই রাইফেলগুলো ফায়ার করা যায়। রিকয়েলিং (পেছন দিকে ধাক্কা মারা) করে না বলে এর নাম রিকয়েললেস রাইফেল। রিকয়েলিং-এর পরিবর্তে ব্যারেলের বিশেষ ভাবে কাটা ফুটো দিয়ে প্রচণ্ড আগুনের হলকা বাইরে বেরিয়ে আসে। ফায়ারিং-এর সময় এই রাইফেলের পেছনের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে যে-কোন জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে এবং ১০০ গজের মধ্যে মানুষ বা কোন জীবন্ত প্রাণী। থাকলে মারাত্মকভাবে আহত হতে পারে। যে-কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রিকয়েললেস রাইফেলের ফায়ারিং এর সময় পেছনের দিকে প্রায় দেড়শো গজ জায়গা পরিষ্কার রাখা হয়।

আনোয়ার ফায়ার অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে গর্জে উঠত রাইফেলগুলো। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের দাঁতে দাঁত বাড়ি খেয়ে লাফিয়ে উঠত হৃৎপিণ্ড। শ্রবণশক্তিও সাংঘাতিকভাবে কমে যেত ওদের। কিন্তু শীতকালীন কালেকটিভ ট্রেনিং ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। একবার এই ট্রেনিং-এর জন্য ঠিক করা হলো চাকোয়াল বলে একটা জায়গা। ওদের সিক্সথ আরমার্ড ডিভিশন বিশাল কনভয় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল চাকোয়ালের উদ্দেশে। এক একটা আরমার্ড ডিভিশনের কনভয়ের মিছিলে বহু জীপ, একটনী ট্রাক, আড়াইটনী (দশ চাকার) ট্রাক, রিকয়েললেস রাইফেলবাহী জীপ, ট্রাকটরের পেছনে টানা কামান, ট্যাংকট্রান্সপোর্টারের ওপরে ওঠানো ট্যাংক, অ্যাম্বুলেন্স প্রভৃতি থাকে। কনভয়ের মিছিল চলল তিন দিন তিন রাত ধরে। এই কালেকটিভ ট্রেনিংয়ে প্রত্যেক অফিসারের জন্য সুন্দরভাবে খাটানো তাঁবুর বাসস্থান থাকত। এমন কি সঙ্গে থাকত সংলগ্ন বাথরূম পর্যন্ত। সব মিলিয়ে যাকে বলে জঙ্গল মে মঙ্গল।

ক্যান্টনমেন্টের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে বাইরের বৈচিত্র্যময় জীবন বেশ ভালই লাগত ওদের। এই ট্রেনিং শেষ হবার কিছুদিন পর ডিভিশন হেডকোয়ার্টার থেকে নির্দেশ এল প্রতিটি ইউনিটে একটি করে কমাণ্ডো প্লাটুন গড়ে তুলতে হবে। প্লাটুন কমাণ্ডার হবে একজন, জুনিয়র অফিসার। তার অধীনে থাকবে জুনিয়র কমিশণ্ড অফিসার (জেসিও), নন কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সিপাহী সহ চল্লিশ জনের একটি দল। এই কমাণ্ডো দলকে কঠিন ট্রেনিং নিতে হবে। কারণ ট্রেনিং শেষে প্রতিটি পদাতিক ইউনিটের কমাণ্ডো প্লাটুনগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। এই প্রতিযোগিতা তৎকালীন জি.ও.সি. মেজর জেনারেল জাঞ্জুয়া নিজে পর্যবেক্ষণ করবেন। শুরু হলো অফিসার বাছাইয়ের পালা। গুলি চালনা, দৌড় প্রভৃতি পরীক্ষায় প্রথম হলো আনোয়ার। তারপর শুরু হলো সৈনিক বাছাইয়ের পালা। প্রায় পৌনে আটশো সৈনিকের মধ্যে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে একজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, আটজন নন কমিশন্ড অফিসার ও বাকি সিপাহী নিয়ে ৪০ জনের একটি দল তৈরি করা হলো। এই দলের অধিনায়ক হলো আনোয়ারসেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট।  

শুরু হলো কঠিন অনুশীলন। আনোয়ার নিজের জন্য বেশকিছু বইপত্র ও প্রেসীজ জোগাড় করে শুরু করল পড়াশোনা। প্রতিদিন, সকালে আটদশ মাইল দৌড়, তিরিশ গজ দূর থেকে এক ফুট বাই এক ফুট টার্গেটে গুলি চালনা, পিঠে যুদ্ধকালীন সময়ের ভারী প্যাক নিয়ে দৌড়, শারীরিক দক্ষতা প্রভৃতি বিষয়ে ওর দল বেশ। সাফল্য দেখাল। তারপর শুরু হলো চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। গুলি চালনায় দক্ষতা দেখাল আনোয়ার। তিরিশ গজ দূরত্বের টার্গেটে পর পর পাঁচবার লক্ষ্যভেদ করল সে একই পয়েন্টে। এ ব্যাপারে ও ছিল একজন সফল আত্মবিশ্বাসী মার্কসম্যান। অন্যান্য প্রতিটি বিষয়ে ওর দল অধিকার করল প্রথম স্থান। ফলে আনোয়ারের এই কমাণ্ডো বাহিনী জি.ও.সি. মেজর জেনারেল জাঞ্জুয়ার ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করল। বলতে গেলে এখান থেকেই শুরু হলো ওর কমাণ্ডো জীবনের হাতেখড়ি। শুরু হলো রোমাঞ্চকর গেরিলা জীবন।

১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে সমাপ্তি ঘটল কালেকটিভ ট্রেনিং-এর। ঠিক এই সময় আনোয়ার হঠাৎ করে নির্দেশ পেল, অফিসার্স ওয়েপনস অ্যাণ্ড জুনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে তিন মাসের জন্য কোয়েটা যেতে হবে। প্রি-কোর্স বা এ ধরনের কোন প্রস্তুতি নেয়ার সময় নেই। কারণ এক সপ্তাহের মধ্যেই যেতে হবে।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে আনোয়ার রওনা হলো কোয়েটার পথে । তখন সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে বাস-ধর্মঘট চলছিল। ট্রেনে প্রচণ্ড ভীড়, রিজার্ভেশন পাওয়া গেল না। খারিয়াঁর মত ছোট্ট স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ মাত্র কয়েক মিনিট। লট বহর নিয়ে অত অল্প সময়ে ট্রেনে চড়া প্রায় অসম্ভব। তাই সে লাহোর স্টেশনে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু যাবে কিভাবে? বাস তো নেই। হঠাৎ করে একটা সুযোগ মিলে গেল। তখন লাহোরে চলছিল বিখ্যাত বার্ষিক জাতীয় গবাদি পশু প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল ওদের ইউনিটের বাদক দল। ব্যাপার্টি নিয়ে আসার জন্য একটা ট্রাক লাহোর যাচ্ছে। মালপত্র সমেত রাইফেল হাতে ট্রাকে করে আনোয়ার লাহোর স্টেশনে পৌঁছাল।

কিন্তু এ কি? চারদিকে অজস্র মানুষের ভীড়! বিশাল স্টেশনে তিল ধারণের জায়গা নেই। ট্রেন এলে একজন কুলির সহায়তায় কোনমতে দ্বিতীয় শ্রেণীর একটা কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়ল আনোয়ার। এতে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট কুপে। একটা ছোট কুপে কয়েকজন এয়ারফোর্স অফিসারের নামে রিজার্ভেশন করা। আনোয়ারের পরিচয় পেতেই ওরা সাদরে জায়গা করে দিল। প্রচণ্ড ভীড়ের দরুন এবং সময়ের অভাবে ওরাও আনোয়ারের মত। এয়ারকণ্ডিশনে রিজার্ভেশন করতে পারেনি। সারা রাস্তা সবাই তাস খেলে কাটিয়ে দিল। রাত প্রায় বারোটার দিকে ওকাড়া নামক স্টেশনে পৌঁছল ট্রেন। আনোয়ার ওকাড়া স্টেশনে নেমে কোয়েটাগামী ট্রেনে চাপল। রাত তখন সাড়ে বারোটা। এ ট্রেনেও কোন এ.সি. রিজার্ভেশন পাওয়া গেল না। অগত্যা প্রথম শ্রেণীর একটা বার্থ রিজার্ভেশন করল সে। ট্রেন ছাড়তেই দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে কম্বলের তলায় ঘুমিয়ে পড়ল আনোয়ার।

পরদিন সকালের দিকে ট্রেন জেকোকাবাদ স্টেশনে পৌঁছল । জেকোকাবাদ এক সময় ছিল পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান। তাই জেকোকাবাদ স্টেশন বাঙালীদের জন্য একটা আতঙ্ক বিশেষ। কিন্তু ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল আনোয়ার। চারদিকে গাঢ় সবুজ গাছপালা। প্রাণবন্ত পরিবেশ। অপূর্ব! পরে সে জেনেছিল, সরকারী প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় জলসেচ করে প্রচুর গাছপালা লাগানোর পর জেকোকাবাদের উষ্ণতা পূর্বের তুলনায় অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ট্রেন জেকোকাবাদ স্টেশন পার হবার পর শুরু হলো বেলুচিস্তানের দিগন্ত বিস্তৃত উষর পাথুরে প্রান্তর। মাঝে মাঝে দুএকটা আকাশচুম্বী পাহাড় চোখে পড়ে। জনমানবহীন এই বিশাল পাহাড়ী অঞ্চলে ছোট ছোট স্টেশনগুলো ঠিক যেন মরুদ্যানের মত। এই কঠোর প্রাকৃতিক অঞ্চলের অধিবাসীরা যে কঠোর স্বভাবের, ওদের চেহারা দেখেই তা বোঝা যায়।

সিবি নামের একটা স্টেশনে পৌঁছার পর ট্রেনের পেছনে আরও একটা ইঞ্জিন লাগানো হলো। এখান থেকে শুরু হয়েছে চড়াই। উঁচু উঁচু পাহাড় কেটে টানেল করে রেলপথ বসানো হয়েছে। টানেলগুলোর ভিতরে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। তাই দিনের বেলাতেও ট্রেনের প্রতিটি কামরায় লাইট জ্বালানো থাকে। এই বিশাল টানেলগুলোর কোন কোনটা লম্বায় প্রায় এক মাইলের মত। নিচ্ছিদ্র অন্ধকার টানেলগুলো যেন এক একটা অন্ধকূপ। টানেলে ট্রেন প্রবেশ করলেই প্রত্যেকটা যাত্রীর শরীর কেমন যেন শিউরে ওঠে। কারণ টানেলের মধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে রিলিফের কাজ প্রায় অসম্ভব।

সন্ধ্যার একটু আগে ট্রেন পৌঁছল কোয়েটা। ওখানে তখন প্রচণ্ড শীত। গরম পোশাকের ওপর ওভার কোট পরে ট্রেন থেকে নেমে এল আনোয়ার। মুটের মাথায় রোল করা বেডিং হোল্ডার। বাইরে অভ্যর্থনার জন্য টুপ বাস অপেক্ষা করছিল। তাতে চড়ে সোজা ইনফ্যান্ট্রি স্কুলে অফিসার্স মেস। তারপর অফিসার্স কোয়ার্টার-হান্না রোড অফিসার্স কোয়ার্টারগুলো প্রায় একই ধরনের। রাস্তা থেকে অনতিদূরে ছোট ছোট বাংলো আকারের অ্যাপার্টমেন্ট। প্রতিটায় চারটে বড় বড় ঘর। ঘরগুলোর সামনে লম্বা রেলিং ঘেরা করিডোর। প্রতিটা ঘরের পেছন দিকে একটা করে স্টোর-কাম-ড্রেসিং রূম ও অ্যাটাচ বাথ। প্রতিটা ঘর দুজন করে ট্রেইনী অফিসার থাকার মত আসবাবপত্রে সাজানো।

তেরো সপ্তাহের প্রশিক্ষণের মধ্যে প্রথম চার সপ্তাহ বিভিন্ন রকম হালকা ও ভারী অস্ত্রের প্রশিক্ষণ। বাকি নয় সপ্তাহ যুদ্ধকালীন কলা-কৌশলের প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণকালে একটা মজার ঘটনা ঘটল। প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের মধ্যে অনেকেই ছিল ধনীর দুলাল। কেউ হয়তো কোন করদ রাজ্যের রাজপুত্র, কেউ বিরাট শিল্পপতির পুত্র, কেউ হয়তো মস্ত ব্যবসাদারের ব্যাটা আবার কেউ বা গ্রাম্য জোতদারের ছেলে। এরা প্রত্যেকে প্রচুর টাকা ওড়ত। প্রতিমাসে এদের জন্য নিয়মিত টাকা আসত বাড়ি থেকে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন এমনি এক গ্রাম্য জোতদারের ছেলের (কমিশন্ড অফিসার) টাকার প্রয়োজন পড়ায় সে বাড়িতে টেলিগ্রাম পাঠাল: আব্বা, অস্ত্র-প্রশিক্ষণের জন্য মর্টার ও মেশিনগান কিনিতে হইবে। পনেরো হাজার টাকার দরকার। টেলিগ্রাম মানি অর্ডারে টাকাটা পাঠাইয়া দিবেন। সেই অশিক্ষিত ধনী জোতদার ছেলেকে মেশিনগান ও মর্টার কেনার জন্য টাকাটা ঠিকই পাঠিয়েছিলেন। এই ঘটনাটা জানার পর অন্যান্য অফিসারদের । মধ্যে সাংঘাতিক হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল।

কোয়েটার ঠাণ্ডার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে এল। চারদিকে গাছপালায় রঙিন ফুলের সমারোহ। গরম পোশাক ছেড়ে যুবক যুবতীরা হালকা পোশাকে রাস্তায় বের হয়ে এল। রাস্তার দুধারের আইল্যাণ্ডগুলোতে ফুটন্ত ফুল। গাছের নরম কচি কচি পাতাগুলো সবাইকে হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায়। যেদিকে চোখ যায় শুধু রঙিন ফুল আর অপরূপ নীল সবুজের ছড়াছড়ি। মসৃণ পিচঢালা পথগুলো কোথাও ঢালু হয়ে নিচে নেমে গিয়েছে, আবার কোথাও শুরু হয়েছে চড়াই। সব মিলিয়ে কোয়েটা এখন ভ্রমণকারীদের স্বর্গ ।

বিকেলে খেলাধুলোর পর আনোয়ার প্রায় প্রতিদিন শহর দেখতে বের হয়। প্রথমে যায় একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অথবা ফারাহ্ ক্যাফেতে। হালকা পানীয় নাস্তার পর ঘুরে ঘুরে দেখে শহর। ট্রেইনী অফিসারদের কাছে অভিজাত বিপনী কেন্দ্রগুলোর চাইতে লিয়াকত মার্কেটের আকর্ষণ ছিল বেশি। লিয়াকত মার্কেট শহরের প্রাণকেন্দ্র। বিদেশী স্মাগলড পণ্যের খোলা বাজার। যে কোন বিদেশী জিনিস কম দামে পাওয়া যেত সেখানে।

কোয়েটা শহর ঘুরে ঘুরে দেখার সময় এক ওয়ালীর দুই ছেলের সঙ্গে আনোয়ারের পরিচয় হলো। ওয়ালী পুত্রদ্বয়কে সব সময় একই রকমের দুটো মোটর সাইকেলে দেখা যেত। মোটর সাইকেল দুটোর সারা গায়ে তিরিশ চল্লিশটা করে রং-বেরং-এর বাল্ব জ্বলত । ওরা শহরের ব্যস্ততম এলাকা দিয়ে ঘণ্টায় সত্তর, আশি মাইল বেগে চালাত মোটর সাইকেল। কোয়েটাতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক মোটর সাইকেল প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিত ওরা।

একবার আনোয়ার ওদের একজনের মোটর সাইকেলের পেছনে চড়ে বসে। শহরের ব্যস্ততম এলাকা দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটে চলল রঙিন আলোয় সজ্জিত মোটর সাইকেল। বিভিন্ন গোলচত্বর ঘণ্টায় প্রায় ষাট মাইল বেগে অতিক্রম করছে ওরা। তখন নিজের অজান্তে আনোয়ার চালককে খামচে ধরেছিল। প্রতি মুহূর্তে ওর মনে হচ্ছিল, এই বুঝি রাস্তার সঙ্গে হাঁটু ঘষা খেলো। ভয়ে ভয়ে সেদিকে তাকিয়ে সে দেখতে পাচ্ছিল, মোটর সাইকেলের ডান দিকের ক্র্যাস গার্ড রাস্তার সঙ্গে প্রচণ্ড ঘষা খাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে ছিটকে উঠছে আগুনের ফুলকি। এই বিপজ্জনক চালকের পেছনে আনোয়ার আর কোনদিন মোটর সাইকেলে চড়েনি। ইতোমধ্যে কোয়েটার প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেল। আনোয়ার আবার ফিরে এল খারিয়াঁ ক্যান্টনমেন্টে। শুরু হলো কমাঙ্গে প্লাটুন নিয়ে প্রশিক্ষণ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *