হেল কমাণ্ডো – ১২

১২.

মনসেরা। এটা কাকুলের কাছাকাছি একটা পাহাড়ী এলাকা। খটখটে পাথুরে পাহাড় সারা এলাকা জুড়ে । মাঝে মাঝে হলদে রংয়ের মাটি নজরে পড়ে। গভীর অগভীর পাহাড়ী খাদও রয়েছে এই এলাকায়। একটা পাকা রাস্তা পাহাড়ী এলাকার ভিতর দিয়ে কাকুল থেকে চলে এসেছে মনম্রেরা পর্যন্ত। একবার ট্রেনিংয়ের জন্য আনোয়ারদের যেতে হলো মনসেরাতে ।

অন্ধকার রাত। এলাকাটা একেবারে অচেনা। তার ওপর শত্রুরা আশপাশে ওঁৎ পেতে রয়েছে। যে-কোন মুহূর্তে ওরা হামলা, করে বসতে পারে। তাই সতর্ক ট্রেইনীদল। কোনরকম আলো না জ্বেলে ট্রেইনীরা অন্ধকারে পথ চলছে পাকা রাস্তার পাশ ঘেঁষে। আশপাশে কোন জনবসতি নেই। নীরব পরিবেশ। ওরা নিরাপদেই এগিয়ে চলেছে। সাবধান, হঠাৎ সামনের স্কাউট ইংগিত করল, শত্রু। মুহূর্তের মধ্যে রাইফেলের বোল্ড কক করার শব্দ ভেসে এল সম্মুখ হতে । আনোয়ার একলাফে রাস্তার একপাশে সরে গেল। সামনে একটা উঁচু ঢিবি। ও লাফিয়ে পড়ল ঢিবির ওপাশে। ঢিবির ঢালে শুয়ে পজিশন নিল। তাড়াহুড়োর জন্য প্রথমে বুঝতে পারেনি। পজিশন নেবার পর ও বুঝতে পারল, কোমর থেকে শরীরের নিম্নাংশ শূন্যে ঝুলছে। কী সর্বনাশ!  আনোয়ার ভাবল পায়ের নিচে হয়তো ছোটখাট একটা গর্ত রয়েছে। আস্তে আস্তে শরীর নিচে নামিয়ে দিতে শুরু করল সে। গর্তের ভিতর দাঁড়িয়ে ভালভাবে পজিশন নেয়া যাবে। দেহের প্রায় পেট পর্যন্ত নিচে নেমে গিয়েছে। তবুও মাটির কোন রকম নাগাল পেল না সে। এদিকে শরীরের অর্ধেকের বেশি শূন্যে ঝুলছে। স্বাভাবিকভাবেই শরীরের ওপরের অংশ নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। আনোয়ার ভাবল, এই বোধহয় গর্ত শেষ, মাটির নাগাল পাওয়া যাবে। এবারে সে পা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করল। তবুও মাটির নাগাল মিলল না। এদিকে শরীরের নিম্নমুখী পতন ক্রমশই বাড়ছে।

সন্দেহে দুলে উঠল ওর মন। পিছনে ভাল করে চাইতেই চক্ষুস্থির। খাদটির গভীর তলদেশ নজরে পড়ে না। আকাশে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের আলোটা ঘন কুয়াশার আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে। পাহাড়ী খাদটার মাঝেও ঘন কুয়াশার আস্তরণ। সেজন্য প্রথমে নজরে পড়েনি। ও গভীর পাহাড়ী খাদের ঢালে ঝুলছে। শরীরের অধিকাংশ অংশই শূন্যে ভাসমান।

আনোয়ারের কণ্ঠ চিরে চিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু শক্রর, ভয়ে চিৎকার দেয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করল ও। আত্মরক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল আনোয়ার। খাদে পড়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। হাতে শক্ত কোন কিছু পড়ল না। পায়ের নিচে মসৃণ ঢাল। ঢিবি থেকে ঢাল শুরু হয়ে পাহাড়ী খাদের কিনারায় মিশেছে। ঢিবির ঢালও মসৃণ। কোন শক্ত উদ্ভিদ বা গুল্মলতাও নেই। আত্মরক্ষার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো ওর।

প্রতি সেকেণ্ডে শরীর নিচে নেমে যাচ্ছে। পতন রোধের কোন উপায় নেই। আর মাত্র মিনিট খানেক। শরীর হঠাৎ করে সোজা হয়ে যাবে। ঢিবির ঢালের গা থেকে খসে যাবে হাত। প্রচণ্ড গতিতে ও আছড়ে পড়বে গভীর পাথুরে খাদের তলদেশে।

আনোয়ারের পাশে রয়েছে ক্যাপ্টেন আফজাল। ফিসফিস করে ওকে বলল, আফজাল, নিচে গভীর পাথুরে খাদ, আমি কিনারায় ঝুলছি। বাঁচাও। আফজাল দ্রুত এগুলো ওর দিকে। আনোয়ার পুনরায় চাপাস্বরে বলল, কুইক। ওর প্রায় সম্পূর্ণ শরীর শূন্যে ঝুলছে। শুধু মাত্র হাত দুটো মসৃণ ঢালে এখনও আটকে আছে। আর কয়েক সেকেণ্ডের ব্যবধান। তারপর পুতন।

আফজাল ক্রল করে এগিয়ে চলেছে ওর দিকে। ও শেষ ঝুঁকি নিল। পতন অনিবার্য দেখে ঢিবির ঢাল ছেড়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠল শূন্যে। শূন্যে লাফিয়ে উঠে হাত বাড়িয়ে দিল আফজালের দিকে। আফজাল ওর একহাত ধরে ফেলল। হাত ধরে সে-ও তখন খাদের কিনারায় ঝুলছে। ক্যাপ্টেন আফজাল বুঝতে পারল–ওর পক্ষে একা আনোয়ারের ভারী শরীর টেনে ওঠানো সম্ভব নয়। পাশে পজিশনরত একজন সৈনিককে সে ডাক দিল। তারপর ওরা দুজনে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করল আনোয়ারকে।

.

অ্যাসল্ট কোর্স, চেরাট। এই কোর্সের ব্যাপ্তি বিশাল। অথচ সময় মাত্র আট মিনিট। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেইনী, অফিসারকে বহু বাধা অতিক্রম করতে হবে। আনোয়ারসহ সমস্ত ট্রেইনী অফিসার পিঠে চল্লিশ পাউণ্ড ওজনের প্যাক, হাতে রাইফেল, পায়ে বুট পরা অবস্থায় এই কোর্সে অংশ নিল ।

টারজান-সুইং করে দড়ির সাহায্যে বিরাট গর্ত পার হওয়া, পনেরো ফুট উঁচুতে মাত্র ছয় ইঞ্চি চওড়া, বিশ ফুট লম্বা ব্রিজ পার হওয়া, দশ ফুট উঁচু দেয়াল ডিঙানো, মাটির ওপর বানানো তিরিশ ফুট লম্বা আঁকাবাঁকা টানেল ক্রল করে অতিক্রম করা এবং এই ধরনের অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে ওদের-মাত্র আট মিনিট সময়ের মধ্যে। এই বাধাগুলো একটার পর একটা সাজানো, দৈর্ঘ্যে প্রায় নয়শো গজ-আধ মাইলেরও ওপরে।

প্রথম দিকে ওরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারল না। কিন্তু ক্রমাগত অনুশীলনের পর আনোয়ার মাত্র ছয় মিনিটে এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে শুরু করল। অন্যান্য অফিসাররাও এই কোর্সে যথেষ্ট ভাল ফল দেখাচ্ছে। ওদের অ্যাসল্ট কোর্সে ভাল ফল দেখানোটা বোধহয় মেজর ভর্দগের সহ্য হলো না। তিনি মনে মনে ফন্দি আঁটলেন, কিভাবে ওদের বিপদের মাত্রা আরও বাড়ানো যায়।

একদিন সকালবেলা। কোর্স শুরু হয়েছে। আনোয়ার দড়ির সাহায্যে টারজান-সুইং করবে। ঠিক সেই মুহূর্তে কাছেই প্রচণ্ড আওয়াজে গর্জে উঠল টি.এন.টি.। হঠাৎ করে হাত থেকে দড়ি ফসকে দেয়াটাই ছিল এক্সপ্লোসিভ ফাটানোর উদ্দেশ্য। আনোয়ারের হাত থেকে দড়ি ফসকে গেলে হাসপাতালে যাওয়াটা ছিল অবধারিত। কিন্তু সৌভাগ্যবশত হাতটা দড়ি থেকে ফসকে গেল না। টারজান-সুইং করে গর্ত পার হয়ে গেল ও; প্রবেশ করল টানেলে।

টানেলের ভিতর উল্টো দিক থেকে বাতাস বইছে। হঠাৎ গর্জে উঠল স্মোক গ্রেনেড। বাতাসের টানে দ্রুত আচ্ছন্ন হলো গোটা টানেল। শ্বাস নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণভাবে কাশতে শুরু করল আনোয়ার। অতি কষ্টে ক্রল করে টানেল পার হলো সে।

সামনে কাঁটাতারের নেট। জালের নিচ দিয়ে ক্রল করে এগুচ্ছে আনোয়ার। গর্জে উঠল মেশিনগান, খুব কাছে। মাথার ওপর বুলেট বৃষ্টি। চমকে উঠল সে। ক্ৰলরত অবস্থায় মুখটা বাড়ি খেলো পাথুরে মাটিতে। দ্রুত নিজের অজান্তেই মাথাটা ওপরের দিকে উঠে গেল আবার। মাথার পেছনের অংশ জোরে ধাক্কা খেলো কাঁটাতারের নেটে। নেটের সংঘর্ষে মাথার পেছনের চামড়া চিরে গেল। এদিকে ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে। তবুও সে এগিয়ে চলল। পার হলো কাঁটাতার। শেষে মেজর ভগ সবার সামনে বললেন, জেন্টলম্যান, আমি নিঃসন্দেহে একটা দুষ্ট কাঁটা, তোমার ট্রেনিং দুঃসাধ্য করার জন্যই এসব করেছি। তবে জব্বর দেখিয়েছ তুমি। এভাবেই শেষ হলো চেরাটের অ্যাসল্ট কোর্স।

.

রাওয়ালপিণ্ডি । আর্মি এভিয়েশন বেজ। হেলিকপ্টার রেপেলিং অনুশীলনের জন্য কমাণ্ডোদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনোয়ার ও মেজর আজমসহ পঁয়ত্রিশজন কমান্ডো সৈনিক এতে অংশ নিল। আর্মি এভিয়েশন বেজ থেকে হেলিকপ্টার উড়ল আকাশে। মাত্র নব্বই ফুট উচ্চতায় উড়ছে কপ্টার। ওরা কয়েক সেকেণ্ড রেপেলিং করে মাটিতে নামল। মাটিতে নামা মাত্র পজিশন নিল সবাই। এরপর অন্য একটা কপ্টার থেকে পঁয়ত্রিশ পাউণ্ড ওজনের শেল নিক্ষেপকারী একটা ফিল্ডগান ওদের সুরক্ষিত পজিশনের মাঝামাঝি জায়গায় নামিয়ে দেয়া হলো। কিছুক্ষণ পর উড়ে এল আরও একটা যান্ত্রিক ফড়িং। নব্বই ফুট উচ্চতায় উড়তে থাকল এটা। শত্রুদের ধোঁকা দেয়ার জন্য ফড়িংটি উড়ছে আকাশে। এটা দেখে শক্ররা যেন মনে করে, বড় বড় গাছপালা বা এই জাতীয় কোন বাধার জন্য ল্যাণ্ড করতে অসুবিধা হচ্ছে কপ্টারের।

হেলিকপ্টার থেকে অতি সন্তর্পণে দড়ির মই নিচে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ওরা দড়ির মই বেয়ে দ্রুত উঠতে থাকল উপরে। ইতোমধ্যে আরও একটি কপ্টার উড়ে এলে ফিল্ডগানসহ ক্রুরা উঠে গেল তাতে।

উড়ন্ত কপ্টারে রেপেলিং করে চড়া সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ। বড় বড় কপ্টারগুলোর ওজন বাতাসে ভাসিয়ে রাখতে রোটর ব্লেডগুলো মাটির দিকে একটা বাতাসের কুশন তৈরি করে। ফলে বাতাসে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। সেজন্য সহজেই কপ্টারের ভারী ওজন বাতাসে ভেসে থাকে। রেপেলিং করে ওপরে ওঠার সময় ওদের এই প্রচণ্ড নিম্নমুখী বাতাসের চাপ ভেদ করে উঠতে হয়। প্রবল বাতাসের চাপ ওদের গতিরোধ করে। একে বাতাসের তীব্র চাপ, তার ওপর পিঠে ভারী ওজনের রূকস্যাক। ওদের শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ে। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ওরা সবাই কপ্টারে চড়ল। শেষে কপ্টার থেকে কেবলযুক্ত একটা আসন নামিয়ে দেয়া হলো নিচে। যুদ্ধে আহত সৈনিকদের উঠিয়ে নেয়ার জন্য। এইভাবে কয়েকদিন প্রচণ্ড অনুশীলন করল ওরা। তারপর শুরু হলো চূড়ান্ত প্রদর্শনী।

ইন্টারন্যাশনাল শো আঠারোটি বিদেশী রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদ ও অভ্যাগতদের ভীড়। সম্মানিত অভ্যাগত ও দর্শকদের মধ্যে রয়েছে বিপুল সংখ্যক মহিলাও। রাওয়ালপিণ্ডি আর্মি এভিয়েশন বেজ জমজমাট। অভ্যাগতদের সঙ্গে রয়েছে বহু গাড়ি। যুবক, যুবতী, অভ্যাগত প্রত্যেকের পোশাক পরিচ্ছদে আভিজাত্যের ছাপ। সবাই হেলিকপ্টার রেপেলিং দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ। তৎকালীন পাক সেনাবাহিনীতে এই ধরনের শো এটাই প্রথম। সেজন্য কপ্টার রেপেলিংটা দর্শকদের মাঝে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

আনোয়ার ও মেজর আজম পঁয়ত্রিশজন কমাণ্ডো সোলজার নিয়ে প্রস্তুত। বিশাল এয়ারফিল্ডের এক প্রান্তে ওদের কপ্টার অপেক্ষারত। কিছুক্ষণ পর ওয়্যারলেসে মেসেজ এল কপ্টার উড্ডয়নের। ওরা দ্রুত কপ্টারে চড়ে উড়ল আকাশে। দর্শকদের সামনে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে একই জায়গায় স্থির হয়ে উড়ছে যান্ত্রিক ফড়িংটা।

মেজর আজম ককপিটে। অলটিমিটারে নব্বই ফুট উচ্চতা মেইনটেইন করার নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। আনোয়ার দ্রুত দর্শকদের দিকের দরজা খুলে ফেলল। দরজার দুই কোনা শক্ত করে ধরে শরীর বাইরে ঝুলিয়ে দেখে নিল চারপাশ। প্রায় একশো ফুট লম্বা একটা নাইলনের দড়ি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে কপ্টার থেকে। দড়ির ওপরের মাথা কপ্টারের সঙ্গে মজবুত করে বাঁধা।

আনোয়ার সৈনিকদের রেপেলিং করে নিচে নামার নির্দেশ দিল। রেপেলিং করে চারজন সৈনিকের নিচে অবতরণের পর ও পেটের সঙ্গে আটকানো ডি-রিংয়ের (ডি আকৃতির) ভিতর বিশেষ কায়দায় নাইলনের দড়িটা গলিয়ে দিল। তারপর তৈরি হলো রেপেলিং-এর জন্য। ওর হাতে স্কিন গ্লাভস্। দ্রুত এগিয়ে গেল। আনোয়ার দরজার দিকে।

মুহূর্তে অদৃশ্য হলো ওর ভারী শরীরটা কপ্টারের বাইরে। মাটিতে অপেক্ষা করছে চারজন কমাণ্ডো সৈনিক। আনোয়ার নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিল, ওদের দ্রুত পজিশন নেয়ার জন্য। সৈনিকরা বৃত্তাকারে পজিশন নিল। এদিকে একের পর এক অবশিষ্ট সৈনিকরা রেপেলিং করে নিচে নেমে এল কপ্টার থেকে। মেজর আজম ওপর থেকে সৈনিকদের পজিশন পর্যবেক্ষণ করে ওকে রিপোর্ট পাঠালেন।

ওকে রিপোর্ট পাঠানোর পরপরই আকাশে উড়ে এল দ্বিতীয় যান্ত্রিক যান। ওদের পজিশন এলাকার মাঝামাঝি অবস্থানে ভাসছে যানটি। এটার পেটের সঙ্গে স্টীলের কেবল সংযুক্ত একটি ঝুলন্ত ফিল্ডগান। ধীরে ধীরে নামতে থাকল গানটি। মাটি স্পর্শ করতেই কপ্টার থেকে স্টীলের কেবল খুলে নেয়া হলো।

সৈনিকরা ফিল্ডগানটি বসাল ফায়ারিং পয়েন্টে। শুরু হলো ফায়ারিং। প্রচণ্ড গর্জনে কেঁপে উঠল রণাঙ্গন। পঁচিশ পাউণ্ড ওজনের শেল নিক্ষেপকারী ফিল্ডগান গজরাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু গোলা বেরুচ্ছে না। এটা ব্ল্যাংক ফায়ার। আনোয়ার স্বস্থানে তৈরি প্রতিপক্ষের হামলা মোকাবেলার জন্য। এলোপাতাড়ি ফায়ারিং করে ওরা একটা সুন্দর কাল্পনিক যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে ফেলল। হঠাৎ করে থেমে গেল ফায়ারিংয়ের আওয়াজ । চারদিকে নেমে এল শীতল নীরবতা।

একশো ফুট উচ্চতায় প্রথম কপ্টারটি শূন্যে ভাসছে। দ্বিতীয় কপ্টারটি নেমে এল ফিল্ডগানের কাছে। ইঞ্জিন বন্ধ হলো না এটার। স্টীলের কেবল দিয়ে ফিল্ডগান আটকানো হলো কপ্টারের সঙ্গে। ফিল্ডগানের ক্রুরা উঠে গেল ওপরে। গানসমেত দ্রুত আকাশে ভাসল যান্ত্রিক ফড়িংটি।

প্রথম কপ্টারের দরজায় মেজর আজম ও কয়েকজন কমাণ্ডো সৈনিক দাঁড়িয়ে রয়েছে। কপ্টারের নিচে একটা নাইলনের দড়ি ঝোলানো। রেপেলিং করে নিচ থেকে সৈনিকরা উঠে যাচ্ছে ওপরে। ওদের কভার দিচ্ছেন মেজর আজম ও কয়েকজন কমাণ্ডো সৈনিক। হাতে উদ্যত সাব-মেশিনগান। একে একে সমস্ত সৈনিকরা চড়ল কপ্টারে। তখনও আনোয়ার নিচে দাঁড়িয়ে। একাকী। সে একজন যুদ্ধাহত সৈনিককে পাহারা দিচ্ছে। উড়ন্ত কপ্টার থেকে কেবলযুক্ত একটা আসন নিচে নেমে এল। আহত সৈনিককে আসনে চড়িয়ে দিল আনোয়ার। যুদ্ধাহত সৈনিকসহ যন্ত্রচালিত আসন উঠে গেল ওপরে। এরপর আনোয়ার রেপেলিং করে কপ্টারে চড়ছে ধীরে ধীরে। পরক্ষণে কপ্টারসহ হারিয়ে গেল দূর আকাশে। পুরো দৃশ্যটা চিত্রায়িত হলে টিভি ক্যামেরায়। অফিসার্স মেসে বসে টেলিভিশনে দৃশ্যটা দেখল আনোয়ার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *