হেমলকের নিমন্ত্রণ – ৫১

৫১

‘যারা উত্তম— তারা নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে কথা বলে,
যারা মধ্যম- তারা যা ঘটছে, সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলে,
আর অধম- তারা শুধু অন্য মানুষকে নিয়ে কথা বলে, গুজব বানায়।’

—সক্রেটিস

***

ভয়ংকর রাগে ফুঁসছে এনিতাস।

সে সক্রেটিসকে শিক্ষা দিতে জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে, কিন্তু তার নিজের ছেলেই হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরের শত্রু বিভীষণ! সে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার ছেলে কী করে সক্রেটিসের ভক্ত হয়ে গেল! কোন জাদুবলে আদরের ছেলেটাকে পর্যন্ত বশ করে ফেলল ঐ ছেলেধরা সক্রেটিস।

এনিতাস অনেক কষ্টের পরে একটু সুখের মুখ দেখেছে। স্বৈরাচাররা তার সব সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল। এখন সবকিছু ফিরে পেয়েছে। অনেক নতুন নতুন সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সে গণতন্ত্রের নেতা হয়ে গেছে। এখন তার সুখের সময়। চামড়ার ট্যানারির ব্যবসাও রমরমা। ট্যানারি চালায় তার ছেলে। ছেলেটি খুবই বুঝদার। বাবা-মাকে ভক্তি করে, গুরুজনে মান্য করে। এই বয়সেই বাবার সংসারটা নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। এমন হীরের টুকরা ছেলে এথেন্সে দেখাই যায় না। সেই ছেলে হঠাৎ করে সক্রেটিস হতে চাইছে! এনিতাসের জন্য একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাত। ছেলেটাকে পর্যন্ত জাদুটোনা করে ফেলল!

সেদিন ভর দুপুরে ছেলে হঠাৎ বলল, বাবা, আমার আর এই কাজ ভালো লাগে না। আমি পড়াশুনা করব। জ্ঞানী হতে চাই।

এনিতাস বলল, পড়াশুনা করবি? খুবই ভালো কথা। তো একজন শিক্ষক দরকার। ভালো শিক্ষক তো এখন চোখেই পড়ে না। যে দু’এক আছে, তারা নাকি অনেক পয়সা নেয়। যাক, তুই পয়সা নিয়া ভাবিস না, একজন ভালো ওস্তাদ তালাশ করতে হবে।

ছেলে হেসে বলল, না বাবা, আমার ওস্তাদ পয়সা নেবে না।

‘পয়সা নেবে না? তো কী নেবে?’

‘কিছুই নেবে না।’

‘ধুর বলদ, এমন মানুষ পৃথিবীতে নাই।’

‘সত্যি বাবা, এই ওস্তাদ কোনো পয়সা নেয় না।’

‘তাই নাকি, কে এই বোকা ওস্তাদ?’

‘সক্রেটিস।’

ছেলের কথা শুনে এনিতাসের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। আমার ছেলে ব্যবসা বাদ দিয়ে সক্রেটিসের কাছে পড়াশুনা করতে চায়! এ পৃথিবীতে এনিতাস যে মানুষটিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে, সে হলো সক্রেটিস। আর তার ছেলে তাকেই বেছে নিয়েছে শিক্ষক হিসেবে। সক্রেটিস তার নিজের ছেলেকেও সম্মোহিত করে ফেলেছে। কী সাংঘাতিক! এতদিন ছিল গণতন্ত্রের শত্রু। এখন তো পরিবারেরও শত্রু হয়ে গেল।

এনিতাস ছেলেকে বলল, সক্রেটিসের নামও যদি তোমার মুখে কোনোদিন শুনি, তাহলে তোমার চামড়া তুলে ফেলব। আমার চামড়ার কারবার। আমি তোমার আর সক্রেটিস দুইজনের চামড়া দিয়া ব্যবসা করব।

‘কেন বাবা? সক্রেটিস তো খুব ভালো মানুষ। উনি নৌকায় করে এলসাস নদীতে ভেসে ভেসে গল্প করেন। নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে কী মিষ্টি করে কথা বলেন! প্রতিদিন আমাদের ট্যানারির পাশের নদী দিয়ে ছেলেদের নিয়ে ভেসে যান। এমন রসিক, এমন মজার মানুষ এথেন্সে আর কেউ নেই। আমি দেখি। মুগ্ধ হয়ে দেখি।’

এনিতাস বলল, তুই জানিস না, ও কোনো কাজ করে না। ওর সাথে যারা ঘোরে, সব বড়লোকের ছেলে। তাদের কাজ করার দরকার নেই। ও সেসব ছেলেদের কুবুদ্ধি দেয়। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছেলেদের তৈরি করে। ওর ছাত্র ছিল এলসিবিয়াডিস। ওর ছাত্র ছিল ত্রিশ একনায়কদের নেতা ক্রিটিয়াস, যে আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। রাস্তার ফকির বানিয়েছে। ও ঘরে ঘরে এলসিবিয়াডিস বানায়, ঘরে ঘরে ক্রিটিয়াস বানায়।

‘না, বাবা, উনি ভালো মানুষ। সুন্দর জীবনের কথা বলেন।’

ছেলেকে সজোরে একটি চড় দিল এনিতাস। বলল, তুই ওকে বেশি চিনিস? না আমি বেশি চিনি? আর কোনোদিন ওর নামও নিবি না। পড়াশোনার দরকার নেই। তুই মন দিয়ে চামড়ার ব্যবসা কর।

ছেলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।

কিছুদিনের মধ্যে দেখা গেল ছেলেটি চূড়ান্ত মাতাল হয়ে গেছে।[১২৯] কারও কথা শোনে না। বাবাকে আর একটুও মানে না। ব্যবসার ধারে-কাছেও যায় না। সারা এথেন্সের সবচেয়ে খারাপ ছেলেদের একজন হয়ে গেল এনিতাসের ছেলে।

ছেলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্যও এনিতাস দায়ী করল সক্রেটিসকে। সে কেঁদে কেঁদে বলে, সক্রেটিস আমার জীবনের নেমেসিস[১৩০]। সে আমার ছেলেকেও নষ্ট করেছে। আমি প্রতিশোধ নেব। কঠিন প্রতিশোধ। আজ থেকে আমি হলাম সক্রেটিসের জীবনের নেমেসিস। প্রতিজ্ঞা করছি তিন মাসের মধ্যে সক্রেটিসকে এথেন্স থেকে বিদায় করব। আর দেরি নয়। আমি এখনই মামলা করব। সে মানুষের সাথে কথা বলতে শুরু করল। গণতন্ত্রের নেতারা একমত যে সক্রেটিস একজন খারাপ মানুষ। তার বিচার করা উচিত। কিন্তু কেউই নিশ্চিত নয় যে, বিচারে তার শাস্তি হবেই। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া সক্রেটিস খুবই জনপ্রিয়। তরুণ ছেলেরা তাকে ভালোবাসে। যেনতেনভাবে তাকে মামলায় ফাঁসানো যাবে না। তার জন্য ভীষণ প্যাচের জাল বিছাতে হবে। জালটা ঠিকমতো ফেলে তারপর মামলা করতে হবে।

তারা দল বেঁধে মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে শুরু করল, সক্রেটিস আমাদের ছেলেদের এথিকস বা নৈতিকতার নামে বাজে জিনিস শেখাচ্ছে। বাবা-মাকে অপমান করতে শেখাচ্ছে। গুরুজনকে অপমান করতে শেখাচ্ছে। ও স্পার্টার চর। ও এথেন্সের ভালো ভালো ছেলেকে স্পার্টার চর বানাচ্ছে। আমাদের সোনার টুকরা বাচ্চাদের ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। দেবতাদের অপমান করতে বলছে। সক্রেটিসের মুখ বন্ধ করতে হবে। চিরতরে ওকে থামিয়ে দিতে হবে। এমন শাস্তি দিতে হবে যেন এথেন্সে আর কেউ কোনোদিন এই কাজ করতে সাহস না পায়।

ভয়ংকর গুজব শুরু হলো সক্রেটিসের নামে। মিডিয়া ট্রায়াল হিসেবে অনেক দিন ধরেই চলছে ‘মেঘ’ নাটক। ধীরে ধীরে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে সক্রেটিসের বিচার হওয়া দরকার। স্পার্টার কাছে হেরে যাওয়ার পর একনায়কদের অত্যাচারে জর্জরিত মানুষ কিছু দিন হলো গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। গত কয়েক বছর তাদের জীবনে অনেক কষ্ট গিয়েছে। সবার ঘরেই কেউ না কেউ মারা গেছে। এই দুর্ভোগের জন্য কাউকে দায়ী করতে পারলে মনের ঝাল মিটবে। মনের শান্তির জন্য একজন বলির পাঁঠা দরকার। আর সেটির জন্য এথেন্সের সবচেয়ে সহজ টার্গেট হলেন সক্রেটিস।

তারচেয়ে মজার কথা হলো, সক্রেটিসকে কোনোদিন কারও উপর প্রতিশোধ নেন না। তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দেয়। নিজে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যান, তবুও অন্যের ক্ষতি করেন না। হাসি মুখে বলেন জ্ঞান নেই বলে এমন করে, সঠিক ব্যাপারটা জানলে এমন করবে না। এই লোকের অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছাই নেই। তিনি ক্ষমা পুরুষ, সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তিনি নীলকণ্ঠ, বিষ নিজে খেয়ে সবাইকে সুখী রাখেন। এরকম ক্ষমা কুমারকে আঘাত করলে কোনো সমস্যা নেই। এর নামে মামলা করলে কোনো সমস্যা নেই।

মামলা একা করলে হবে না। কয়েকজন মিলে করতে হবে। এনিতাস আগোরায় গিয়ে খুঁজে বের করল একজন কবিকে। কবির নাম মেলিতাস।

সে মেলিতাসকে ডেকে চুপি চুপি বলল, শোনো কবি, তোমাদের দিন শেষ। সক্রেটিস ঠিক করেছে, কবিদের নির্বাসন দিয়ে দেবে।

মেলিতাস বলল, ‘মানে কী? সক্রেটিস কবিদের নির্বাসন দেবে কীভাবে? সে তো নেতা নয়।’

‘নেতা নয়, কিন্তু বাচ্চা ছেলেদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। যুবক ছেলেরা ক্ষেপে উঠছে। তুমি প্লেটোকে চেন?’

‘প্লেটোকে চেনে না, এমন কেউ এথেন্সে আছে?’

‘দেখো, প্লেটো ছেলেটা কত প্রতিভাবান। ছেলেটা কবি হতো, নাট্যকার হতো। কিন্তু সক্রেটিস তাকে এমন কানপড়া দিছে, সে আর কবিদের নামও শুনতে পারে না। সে বলে কবিদের নির্বাসন দেবে।’

‘তাই নাকি?’

‘তবে আর বলছি কী? তাই ওকে সরাতে হবে। ঝেঁটে ফেলতে হবে এথেন্স থেকে।

‘কীভাবে?’

‘মামলা করে।’

‘কে করবে মামলা?’

‘তুমি করবে।’

‘আমি?’

‘হ্যাঁ, তুমি। তোমার মতো বড় কবি কি এথেন্সে আর আছে? কবিদের বাঁচাতে হবে।’

‘আমি কি পারব? আমার ভয় লাগে। সক্রেটিসকে ছেলেরা অনেক পছন্দ করে। ওর সাথে কত ছেলেপেলে ঘোরে!’

‘ভয় পাচ্ছ কেন? তুমি তো একলা মামলা করবে না। আমি আছি তোমার সাথে। শুধু আমি একলা নই, সাথে আরেকজনকে নেব। সে হলো আমাদের বন্ধু লাইকন।’

‘বিখ্যাত বক্তা লাইকন? সে রাজি হবে?’

‘অবশ্যই রাজি হবে। এই মামলায় সক্রেটিসকে সাজা দিতে পারলে তিনজনই বিখ্যাত হয়ে যাব। সবাই বলবে, ওরা তিনজন এথেন্সকে বাঁচিয়েছে। ওরাই সবচেয়ে দেশপ্রেমিক। আমরা বিরাট নেতা হয়ে যাব। লোকে বুঝবে আমাদের ক্ষমতা। আমরা কী করতে পারি, সেটি জেনে যাবে। আমরা ভোটে দাঁড়াব, ভোটে জিতব। তিনজনে মিলে আগামী সপ্তাহেই মামলা করব।’

মেলিতাস বলল, তো মামলায় অভিযোগ হলো : সক্রেটিস কবিদের নির্বাসন দিতে চায়, তাই তো?

রাগে দাঁত কড়মড় করে উঠল এনিতাস। মেলিতাস তো একটি বোকাস্য বোকা, মহা বোকা! কিচ্ছু বোঝে না।

এনিতাস বলল, আরে কবিদের কথা আমি তোমার কাছে বললাম। এটি সক্রেটিস কোনোদিন বলেনি। প্লেটো বন্ধুদের সাথে আলাপে বলেছে। এসব অভিযোগে মামলা দিলে সক্রেটিসের কিছুই হবে না।

‘তাহলে অভিযোগটা কী?’

‘এমন কিছু বলতে হবে যাতে সারা এথেন্সের মানুষ ওর বিরুদ্ধে যায়। বলতে হবে, ও দেবতা মানে না। ও দেবতাদের নামে নিন্দা করে।’

‘এটি তো মিথ্যা। আমি তো সক্রেটিসকে দেবতাদের নিন্দা করতে শুনিনি। এমন ডাহা মিথ্যা কথা দিয়ে আমি মামলা করব না। আমি কবি। কবিরা মিথ্যা বলে না।’

এনিতাস বলল, আমরাও মিথ্যা বলব না। তুমি তো ঘটনাই জানো না। সেজন্য এমন মিথ্যা ভাবছো। ঘটনা হলো ওরা গোপনে গোপনে সিম্পোজিয়াম করে। সেখানে দেব-দেবীর নামে গালাগালি করে। বলে, আমরা যারা দেবতা মানি, তারা নাকি সবাই বোকা। ওরা হলো জ্ঞানী।

মেলিতাস তাকিয়ে রইল। সে ঠিক বিশ্বাস করছে বলে মনে হচ্ছে না। এনিতাস বলল, তুমিই তো বলেছ, সক্রেটিস তোমাকে অপমান করেছে। মেলিতাস বলল, হুঁম, আমি এক সন্ধ্যায় লিকাবিথোস পাহড়ের উপর গল্প করছি। সক্রেটিস এলো, সাথে তার বন্ধু ক্রিতো। আমাকে কত মানুষের সামনে অপমান করে গেল। আমি নাকি আমার কবিতাই বুঝি না! সেই থেকে ছেলেরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।

এনিতাস বলল, ছিঃ ছিঃ ছিঃ, তোমার মতো কবিকে নিয়ে বাচ্চা ছেলেরা হাসাহাসি করে? এর জন্য দায়ী কে?

‘সক্রেটিস।’

‘এই তো বুঝেছ। ও ছেলেদের নষ্ট করে ফেলছে। ও আমার নিজের ছেলেকেও নষ্ট করেছে। ওর জন্য আমার ছেলে মাতাল হয়ে গেছে। আচ্ছা, ওসব বাদ দাও। তুমি গত কয়েক বছরে এথেন্সের সবচেয়ে খারাপ কয়েকটা ছেলের নাম বলো।’

মেলিতাস চিন্তা করে বলল, সবচেয়ে খারাপ ছিল ক্রিটিয়াস। এরপর এলসিবিয়াডিস। এরপর …

তাকে আর বলতে দিল না এনিতাস। বলল, এতেই যথেষ্ট। তুমি বুদ্ধিমান লোক। তুমি সবচেয়ে খারাপ দুজন মানুষের নাম বললে, ক্রিটিয়াস আর এলসিবিয়াডিস। তুমি এথেন্সের যাকে ইচ্ছা জিজ্ঞেস করো, সবাই এই দুজনের নামই বলবে। এবার বলো— এদের নষ্ট করল কে? কে এদের শিক্ষক?

‘সক্রেটিস।’

‘তার মানে সক্রেটিস ছেলেদের নষ্ট করছে। আজ যারা গণতন্ত্রের বিরোধী, সবার গুরু হলেন সক্রেটিস। সে যদি থাকে, তাহলে ঘরে ঘরে জন্ম নেবে ক্রিটিয়াস। ঘরে ঘরে আসবে এলসিবিয়াডিস। তাই এটি বন্ধ করতে হবে। সক্রেটিসকে এথেন্স থেকে সরিয়ে দিতে হবে।’

মেলিতাস বলল, ঠিক আছে, এই মামলা আমি করব। সে যুবকদের নষ্ট কবিরা করছে। যুবক ছেলেরা আমার কবিতা নিয়ে হাসাহাসি করে, এটি সত্য। সত্য জিনিস নিয়ে মামলা করতে পারে।

এনিতাস বলল, এই তো বুঝেছ। তবে আমরা আদালতে কবিদের ব্যাপার বলব না। আদালতের মানুষ কি কবিতা পড়ে? একজন কবিকে নিয়ে হাসাহাসি করলে মানুষের কী আসে যায়? মানুষকে বলতে হবে, এথেন্সের সব যুবককে নষ্ট করছে সক্রেটিস। মানুষ যেন বোঝে সক্রেটিস এথেন্সে থাকলে তাদের নিজেদের ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাবে।

‘ঠিক আছে, মামলা হবে, তুমি ব্যবস্থা করো, আমি সাথে আছি।’

এনিতাস বলল, আর একটু আছে। শুধু এই একটি অভিযোগে শাস্তি কী হবে? বড়জোর জরিমানা। আর এই অভিযোগের জোরালো প্রমাণ নেই। আমরা বলব যে সক্রেটিস ছেলেদের নষ্ট করছে; আর অনেক ছেলে আদালতে দাঁড়িয়ে বলবে যে সক্রেটিস তাদের ভালো করছে। এতে শাস্তি হবে না। শাস্তির জন্য অন্য রকম অভিযোগ দরকার। কঠিন অভিযোগ। সেটি হলো— ‘সক্রেটিস দেবতা মানে না’। এটি প্রমাণ করা যাবে। আমি প্রমাণ করে দেব যে, ও যাদের সাথে মেশে, তারা দেবতা বিদ্বেষী মানুষ। এই অভিযোগে কাজ হবে। নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড।

‘মৃত্যুদণ্ড?’

‘হুঁম, এছাড়া আর কী?

‘এটি বেশি হয়ে যায়। সত্তর বছরের বুড়ো মানুষ সক্রেটিস। তাকে একেবারে জানে মেরে ফেলার দরকার কী?’

‘তোমাদের কবিদের নিয়ে এই এক বিপদ। তোমরা বড় নরম। এথেন্সকে বাঁচাতে নরম হলে হবে না। শক্ত হতে হবে। আর কথা নয়। চলো- লাইকনের কাছে যাই। তার বাড়ি অনেক দূরে। তাড়াতাড়ি পা চালাও।’

‘লাইকন মামলা করতে রাজি হবে?’

‘অবশ্যই হবে। তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে একনায়কেরা। সে ছেলে হত্যার প্রতিশোধ চায়। কঠিন প্রতিশোধ।’

‘কিন্তু প্রতিশোধ নেবে সক্রেটিসকে দিয়ে? সক্রেটিস তো একনায়ক ছিলেন না।’

‘সে নিজে একনায়ক নয়। কিন্তু একনায়কদের গুরু। প্রধান স্বৈরাচার ক্রিটিয়াসের শিক্ষক ছিল সক্রেটিস। এখন ক্রিটিয়াসকে পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে সক্রেটিসকে। ওকে দিয়েই প্রতিশোধ নেবে লাইকন। তোমার কী মনে হয়, লাইকন রাজি হবে না?’

মেলিতাস বলল, মনে হয় রাজি হবে। ছেলের মৃত্যু কেউ ভুলতে পারে না। সেটির কোনো রকম প্রতিশোধের কথা শুনলে, যে কেউ রাজি হবে। লাইকনও রাজি হবে।

এনিতাস বলল, লাইকনের ছেলে মারা গেছে। আর আমার ছেলে জীবিত থেকেও মৃত। সে এখন ঘোর মাতাল। মায়ের সাথে সারাদিন ঝগড়া করে। আজকে এরে মারে, কালকে ওরে ধরে। এই সবকিছুর জন্য দায়ী সক্রেটিস। ওকে আমি শাস্তি দেবই দেব। মামলা করবই।

‘কোন আদালতে মামলা করব? ফৌজদারি আদালতে?’

‘না, ধর্মীয় আদালতে। সরাসরি প্রতিশোধ নিতে সেটিই আসল জায়গা। পেরিক্লিসের বন্ধুদের সেখানেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সক্রেটিসকেও শাস্তি দেব।’

***

১২৯. সক্রেটিসের শিষ্য হতে না দেওয়ায় এনিতাসের ছেলে মাতাল হয়ে যায় এবং এনিতাস এজন্য সক্রেটিসকেই দায়ী করে, বিষয়টি Xenophon তার ‘Apology of Socrates to the Jury’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

১৩০. নেমেসিস (Nemesis), গ্রিক মিথোলজির প্রতিশোধের দেবী, যিনি ধ্বংসের কারণ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *