হেমলকের নিমন্ত্রণ – ৫

‘ঐশ্বর্য বা দাসত্ব কারও গৃহে থাকে না,
থাকে আত্মার ভেতরে।’

—জেনোফোন

***

শিকল পায়ে দাঁড়িয়ে আছে দলে দলে মানুষ।

জন্তুর মতো। সকলেই নেংটি পরা। তাদেরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অনেকে। শুধু দেখছে না, একেবারে গরু-ছাগলের মতো পরীক্ষা করছে। দরদামও করছে।

এটি এথেন্সের দাস বাজার। আগোরার পশ্চিম কোনায় প্রতি সোমবার ও বুধবার এই বাজার বসে। দেশ-বিদেশের দাস বেপারীরা হাজার হাজার দাস নিয়ে আসে এখানে। মানুষ বেচা কেনার জন্য এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজার হলো এথেন্সের এই দাস বাজার।

সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে দাসেরা। সবার মাথা ন্যাড়া। সবার গলায় লকেটের মতো ঝুলছে এক টুকরা কাঠ। কাঠের উপর বড় বড় করে লেখা দাসের দেশের নাম, বয়স, দাম। কী কাজ করতে পারে, সেই বিবরণ কাঠের উল্টা পিঠে। কিন্তু কোথাও নাম লেখা নেই।

কিছু বুদ্ধিমান বেপারী দাসদের পিঠে বড় করে নম্বর দিয়ে রেখেছে। সাদা কালির নম্বর পিঠে চকচক করছে। এই বেপারীরা ভালো ম্যানেজার। নাম্বারিং করলে হিসাব রাখতে সুবিধা হয়।

সক্রেটিস দাস বাজারে আসে না। সে ধনী নয়। তাকে কোনোরকমে মধ্যবিত্ত বলা যায়। দাস কেনার টাকা-পয়সা নেই। এই বাজারে ধনীরা আসে দাস কিনতে, আর গরিবরা আসে দাস হিসেবে বিক্রি হতে। এখানে মধ্যবিত্তের কোনো কারবার নেই। সেজন্য সক্রেটিস আসে না। সে এই বাজারের বিষয়-আশয় জানে না। আজ ক্রিতো তাকে জোর করে ধরে এনেছে। এখানে সক্রেটিস শুধু দেখনেওয়ালা। সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মারাত্মক মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বড় বড় চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে— তাকে সবাই চেনে, দাস বেপারীরাও চেনে। বেপারীরা জানে দাস কেনার যোগ্যতা সক্রেটিসের নেই। সে বিনা কাজে বাজারে ঘুরছে। তাই এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না। লজ্জা লাগছে। দাস বাজারের অলি-গলি ঘুরছে।

হঠাৎ পেছনে শোরগোল শোনা গেল। ধাক্কাধাক্কি, হুড়াহুড়ি শুরু হলো। সব মানুষ এক দিকে ছুটছে। তারা বলাবলি করছে, ‘এই সর্ সর্। আসছে, আসছে।’

ক্রিতো ভিড়ের দিকে জিজ্ঞেস করল, ঘটনা কী?

একজন বলল, ধুর্ মিয়া, খবর তো কিছুই রাখো না! ঘটনা হলো পেরিক্লিস। দাস বাজারে পেরিক্লিস আসছেন।

সক্রেটিস বলল, পেরিক্লিস আসছেন, সেটি ভালো খবর। কিন্তু লোকজন ধাক্কাধাক্কি করছে কেন?

ক্রিতো ব্যবসায়ীর ছেলে। সে বলল, পেরিক্লিস বিরাট ধনী লোক, তিনি অনেক দাস কিনবেন। সেজন্য দালালরা ছুটছে। কে কার আগে তাকে পটাতে পারে সেই উদ্দেশ্যে।

কথা শেষ হওয়ার আগেই তারা দেখল, ভিড়ের ঠেলায় তারা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আর পেছানোর উপায় নেই। তারা দাঁড়িয়ে রইল।

এথেন্সের গণতন্ত্রের এক নম্বর নেতা পেরিক্লিস আসছেন। তিনি সুপুরুষ, দীর্ঘদেহী। নাক, চোখ সব গ্রিক দেবতার মতো। বিরাট চওড়া কাঁধ। তবে শরীরের তুলনায় মাথাটা বেখাপ্পা রকমের বড়। তিনি বয়সে সক্রেটিসের অনেক বড়।

পেরিক্লিসের ঘোড়া থামল। এখানে খুব বেশি লোকের ঘোড়া নেই। লোকজন হেঁটেই চলাচল করে। দুই-একজন অতি সম্ভ্রান্ত মানুষ ঘোড়ায় চড়ে। পেরিক্লিস এথেন্সের সবচেয়ে অভিজাত বংশের সন্তান। সবচেয়ে ধনীও। চোখে মুখে বুদ্ধির ছাপ। ঝরনার মতো বক্তৃতা করেন। কুলকুল শব্দ হয় তার ভাষণে এমন ভাষণ এথেন্সে অন্য কেউ দিতে পারে না। যুদ্ধেও তিনি এক নম্বর।

পেরিক্লিসের চারপাশে অনেক মানুষ। তারা কথায় কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করছে। এরা জি-হুজুর পার্টি। পেরিক্লিস জি-হুজুরদের পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি কাজের লোক। কাজ শুরু করতে হবে। এই মুহূর্তের কাজ হলো দাস খরিদ করা।

ঠিক সামনের গলির মুখে কতগুলো সিরিয়ার দাস। যুদ্ধে হারিয়ে এদের পায়ে শিকল দিয়ে নিয়ে এসেছে। কদিন আগেও এরা ছিল মুক্ত মানুষ। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো এজিয়ান সাগরের তীরে এশিয়া মাইনরের (তুরস্ক) কাছে একটি জায়গায় এরা যুদ্ধে হেরে গেছে। বিজয়ীরা বন্দি করে বিক্রি করে দিয়েছে দাস বেপারীদের কাছে। বেপারীরা বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে সাগরের এপাড়ে এথেন্সে। সারা পৃথিবীতে এখন এথেন্সেই সবচেয়ে ধনী ক্রেতা আছে।

পেরিক্লিস তাকালেন সারি সারি দাসদের দিকে। তার সামনে একজন বিদেশি লোক কয়েকটি বাচ্চা নিয়ে এসেছে। একেবারেই কম বয়স। পেরিক্লিস বাচ্চাদের গলায় ঝুলানো কাঠের টুকরা দেখতে লাগলেন। দেশ— সিরিয়া, বয়স— ৯, দাম— ০৫ মিনা।

দাস বেপারী বলল, হুজুর, একেবারে কচি জিনিস। যে কাজ দেবেন, সেই কাজই পারবে। এই ওঠ, বলে সে একটি বাচ্চার পেছনে লাথি মারলেন।

ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। বেপারী আবার বলল, হুজুর, বাচ্চাগুলো জাহাজে করে ক্রিত দ্বীপে যাচ্ছিল। আমার লোকেরা সময়মতো ধরে ফেলেছে। এগুলো সব বড় ঘরের ছেলেমেয়ে। কোনো হেঁজিপেঁজি নয়। আপনার জন্য এগুলোই সবচেয়ে উপযুক্ত।

পেরিক্লিস বললেন, গান গাইতে জানে?

আকাশ থেকে পড়লো দাস বেপারী। এ আবার কেমন প্রশ্ন? দাসেরা গান গাইবে নাকি! গান গাওয়ানোর জন্য পেরিক্লিস দাস কিনতে এসেছেন?

বেপারী একটু ভেবে বলল, গলা তো মন্দ না। শিখাইলে গান-বাজনা সবই করতে পারব।

একথা বলেই বেপারী তার হাতের চাবুকটা মারলো বাচ্চাটির পিঠে। ছেলেটি তীব্র চিৎকার করে উঠল। চিৎকারে কী বলছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবু বেপারী বলল, দেখেন, হুজুর, দেখেন। কী মধুর গলা! কেমন সুরে সুরে চিৎকার করছে

মধুর গলা আরও ভালো করে বোঝানোর জন্য সে আবার চাবুক চালাল। এবার আর একটু জোরে। সুর আরও উঁচু হলো। এরপর পাশের ছেলেটিকে চাবুক মারলো। সেও চিৎকার করে গলার স্বরের পরীক্ষা দিল। পাশের মেয়েটি চাবুক দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তার জন্য চাবুক দরকার নেই। কিন্তু বেপারী চাবুক তুলে ফেলেছে। মেয়েটিকে আস্তে করে মারলো। পরের বাচ্চাদের আর চাবুক মারতে হলো না। তারা বুঝে গেছে কী করতে হবে। বাচ্চারা নিজে থেকেই চিৎকার করে মধুর গলার পরীক্ষা দিল।

চারপাশে শোরগোল পড়ে গেছে। দাস বাজারে এমন করে গলার স্বরের পরীক্ষা আগে কখনো হয়নি।

ভিড়ের সবাই পেরিক্লিসকে দেখছে। এই আনন্দ দেওয়ার কারণ তিনি। নতুন নতুন রকমের আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা আছে লোকটির। নিত্য নতুন চমক দিচ্ছেন। এথেন্সবাসী তার গুণে একেবারে মোহিত।

ভিড়ের মধ্য থেকে এক বৃদ্ধ বলল, আপনি ধন্য, বাবা পেরিক্লিস। এই হাতের উপর হাজার হাজার দাস বেচলাম-কিনলাম। কিন্তু বাপের জন্মে দাস বাজারে গানের এমন পরীক্ষা দেখিনি।

পেরিক্লিস একটু মুচকি হাসলেন।

তার বন্ধু বলল, সে কী গো! পেরিক্লিসের মতো সংগীতের এমন সমঝদার মানুষ এথেন্সে কোনোকালে জন্মেছে নাকি! শিল্পকলার নাম শুনলেই উনি একেবারে তন্ময় হয়ে যান। এথেন্সের সব বড় বড় চিত্রকর, সংগীত শিল্পী, ভাস্কর সবাই ওনার বন্ধু। আমাদের কত ভাগ্য যে, এমন শিল্পমনা একজন নেতা পেয়েছি।

পেরিক্লিস বেপারীকে বললেন, এই চারটা বাচ্চা আমি নেব।

বণিকের চোখ চকচক করে উঠল। সে বলল, হুজুর, শুধু এই চারটা নেবেন? ওই মেয়েটি এই ছেলেটির বোন। ভাইটার সাথে বোনকে না নিলে বোনটা কাঁদবে।

পেরিক্লিস বন্ধুর দিকে তাকালেন। বন্ধু বলল, কী যে বলো বেপারী, দাসের আবার ভাই-বোন কী? একসাথে থাকলে ফন্দি-ফিকির করবে। ঘোঁট পাকাবে। কাজে ফাঁকি দেবে। সকাল সকাল একসাথে চারটা দাস বেচতে পারছো। এতেই খুশি থাকো। বেশি লোভ ভালো না।

পেরিক্লিস ভিড়ের মানুষদের দিকে তাকালেন। তাদের চোখ দেখলেন। তারপর বললেন, দাসও তো মানুষ। দাও, ওর বোনকেও সাথে দাও। ভাই- বোন একসাথেই থাকবে।

সমবেত জনতা হৈ হৈ করে উঠল। পেরিক্লিস দয়ার সাগর। তিনি শুধু ধনী নন, শুধু শিল্পরসিক নন। তার মনে রহমও আছে। মানুষের চোখভরা প্রশংসা। পেরিক্লিস উপভোগ করছেন। কারও দিকে না তাকিয়ে তিনি বললেন, রুপার খনির কাজে গাফিলতি হচ্ছে। খনির জন্য আর কয়টা লোক হলে মন্দ হয় না।

এক বৃদ্ধ অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছিল। সে দাস বাজারের দালাল। সুযোগ পেয়ে সে বলল, বাবা। আপনি ধনী আর সরল বলে ওরা ঠকাচ্ছে। আপনি, এদিকে আসেন। ওই পাহাড়ের কোনায় জনা ত্রিশেক তাগড়া জোয়ান আসছে সিরিয়া থেকে। খনির কাজে খুবই ভালো হবে।

পাশ থেকে আরেক দালাল বলল, ধুর মিয়া, তুমি বেশি জানো! ইথিওপিয়া থেকে জোয়ান কালো মর্দ বসছে ওই পুব কোনায়। খনির জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছুই নাই। হুজুর, আপনি তাড়াতাড়ি চলেন। কালা আদমির বহুত চাহিদা।

সবার কথা রাখার চেষ্টা করেন বলেই পেরিক্লিস জনপ্রিয় নেতা। চট করে একে পক্ষ নেওয়া যাবে না।

তিনি বললেন, আচ্ছা, আমরা ইথিওপিয়ার দাস আগে দেখে আসি। তারপর সিরিয়ারগুলো দেখব। চাচা, আপনি নিজে আমার জন্য দশটা সিরিয়ার দাস বাছাই করে রাখেন। ফেরার সময় নিয়ে নেব।

ভিড়ের অনেকেই পেরিক্লিসের সাথে সাথে চলল। ইথিওপিয়ার কালো আদমি কিনতে দেখা ভাগ্যের ব্যাপার।

সক্রেটিসের জন্য পুরো বিষয়টাই একেবারে নতুন। তারও দেখতে ইচ্ছে করছে। সক্রেটিস আর ক্রিতোও ভিড়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলল।

যে বেপারী ইথিওপিয়ার দাস এনেছে, তার কাছে খবর চলে গেছে। পেরিক্লিস এসেছেন খনির জন্য দাস কিনতে। বেপারী কালো দাসদের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে রেখেছে। শক্তি পরীক্ষার চমৎকার বন্দোবস্ত। বিশাল বিশাল পাথর মাটিতে রাখা আছে। বেপারী সবচেয়ে তাগড়া জোয়ান এক দাসকে ইশারা করল। পেশিবহুল কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি পাথরটি তুলতে গেল। কিন্তু এক পা এগিয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।

পেরিক্লিসের বন্ধু বলল, তোমার মাল তো মাকাল ফল। হুদাই কালো তেলতেলা শরীর। কোনো কাজেরই না। শরীর কি বাতাস দিয়া ফুলাইছো নাকি?

জনতা হেসে উঠল। দাস বণিকের চোখ থমথমে। সে বলল, হুজুর, এইটা পাক্কা খেলোয়াড়। অভিনয় করছে। বুঝে গেছে, ওরে খনির কাজে দেবেন। তাই ইচ্ছা করে ফেলে দিয়েছে। এইবার দেখেন কী করি।

দাস বেপারী হঠাৎ একটি জ্বলন্ত লোহার গরম চিমনি ঠেসে ধরল কালো লোকটার পিঠে। আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো লোকটা। কিন্তু পরের বার সে অতি সহজে মোটা পাথরটি নিয়ে হেঁটে গেল। মনে হলো এই কাজ তার জন্য তেমন কিছুই নয়।

লোকজন বুঝল, বুদ্ধি আছে বেপারীর। মাথায় ঘিলু না থাকলে মানুষ বেচাকেনা করা যায় না।

পেরিক্লিস বিশ জন ইথিওপিয়ার এবং দশ জন সিরিয়ার দাস কিনলেন। বুড়ো দালাল বেপারীকে বলল, খোজা করছো তো?

বণিক বলল, একেবারে নতুন জিনিস। সময় হয়নি। হুজুর যখন কিনেছেন, তৈরি করেই দেব। হাজাম প্রস্তুত আছে। খোজাখানায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।

নতুন কেনা দাসদের খোজা করতে নিয়ে যাওয়া হলো। এরা আর সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। এদের কোনো যৌন চেতনা থাকবে না। পুরোপুরি জড়বস্তু করে ফেলতে হবে। না হলে পোষ মানবে না।

পেরিক্লিসের কয়েকজন দাসীও প্রয়োজন। কেমন দাসী দরকার সেটি তার স্ত্রী বলে দিয়েছেন। কিন্তু নারী কেনা-বেচার গলিতে যেতে তার অস্বস্তি হলো। একজন বয়স্ক দাসীকে পাঠালেন নতুন দাসী কিনতে। সে তিনজন দাসী কিনে নিয়ে এলো।

পেরিক্লিস দাসীদের জিজ্ঞেস করলেন, কিথারা যন্ত্র বাজাতে জানো?

তিনজন নারীই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এরা কিথারা চেনেই না।

কিথারা এথেন্সের খুব জনপ্রিয় বাদ্য। এখানের সব শিক্ষিত মানুষ কিথারা বাজায়।

পেরিক্লিসের বন্ধু বলল, আমি আগেই বলেছিলাম। আপনার ঘরে কী রকম মেয়ে দরকার, সেটি কিনতে আপনাকে নিজেকেই যেতে হবে। ওই বুড়ি পারবে না। চলেন, আমরাই যাই।

এক বেপারী বলল, আপনি এথেন্সের নেতা। আপনার আবার লজ্জা কী! কীভাবে মেয়ে বেচাকেনা হয়, সেটি সচক্ষে দেখাও আপনার দরকার।

সঙ্গীরা ভিড়ের দিকে হাঁক দিল, এইবার আপনারা কাজে যান। এখানে আর আপনাগো দরকার নেই।

নারী বিক্রির গলিতে ঢোকার বিধিনিষেধ আছে। শুধু ক্রেতা ছাড়া এখানে কেউ ঢুকতে পারে না। টাকা দেখিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। ছেলে-ছোকরাদের ঠেকানোর জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পেরিক্লিসের সাথে অনেকেই ঢুকে পড়ার সুযোগ নিতে চাইছে। পেরিক্লিস সেই সুযোগ দিতে পারেন না। শুধু চারজনকে নিয়ে তিনি ঢুকলেন দাসী বিক্রির গলিতে।

ক্রিতো আজ দাস কিনতেই এসেছে। তার কাছে টাকা আছে। দারোয়ানদের টাকা দেখিয়ে ক্রিতো আর সক্রেটিসও চলল নারী কেনার গলিতে।

বুড়ি দাসী পেরিক্লিসকে নিয়ে গেল একটি উঁচু ঢিবির সামনে। দীর্ঘ চুলের স্বল্পবসনা অনেকগুলো মেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এথেন্সের মানুষ নারীদের ব্যাপারে ভয়াবহ কট্টর। এখানে নারীরা থাকে পর্দার ভেতরে। শুধু দাসীরাই রাস্তায় বের হতে পারে। কিন্তু এটি তো মানুষ কেনাবেচার বাজার। বেচতে হলে দেখাতে হবে। কিনতে হলে পরীক্ষা করতে হবে। তাই অল্প কাপড়ে সারি সারি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে মেয়েদের।

এই মেয়েদের বাড়ি মিশরে। এরা যুদ্ধবন্দিদের স্ত্রী-কন্যা। যুদ্ধের পর বিজয়ী সেনারা ইচ্ছেমতো ভোগ করেছে। তারপর বিক্রি করেছে দাস বণিকের কাছে। বণিক কয়েক হাত ঘুরিয়ে এথেন্সে নিয়ে এসেছে। দাস বণিক এক- একজন মেয়েকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে শুরু করল।

পেরিক্লিস বাধা দিলেন। তিনি দেখতে আসেননি। গুণ যাচাই করতে এসেছেন। জিজ্ঞেস করলেন, এদের মধ্যে কে কে কিথারা বাজাতে জানে?

দাস বেপারী চারজনকে আলাদা করল।

মাত্র চারজন! অবাক হলেন পেরিক্লিস। এতগুলো মেয়ের মধ্যে মাত্র চারজন কিথারা বাজাতে জানে!

মোসাহেব বলল, ওইসব বর্বর দেশ সংগীতের মূল্য বোঝে না! ওরা মেয়েদের সংগীত-কলা শেখায় না।

পেরিক্লিস সংগীতের জন্য বেদনা অনুভব করলেন। মানুষ আজকাল সংগীতের মূল্য বোঝে না। তিনি প্রধান দাসীকে বললেন, এই চারজনকেই নিয়ে নাও। বেগমকে গিয়ে বলবে, আমার কোনো দোষ নেই। বাজারে মাত্র চারজনই ছিল।

পেরিক্লিস ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে গেলেন।

.

পেরিক্লিস চলে যেতেই সক্রেটিস আর ক্রিতোর খেয়াল হলো যে তারা তো দাস বাজারে এসেছে দাস কিনতে। পেরিক্লিসের আকর্ষণে সব ভুলে গিয়েছিল। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তারা দৌড় দিল। পুরুষ দাসের গলিতে যেতে হবে।

গলির মুখে ক্রিতোর পিতা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বললেন, আর দৌড়াতে হবে না। আমার দাস কেনা হয়ে গেছে। তোমাদের ছুটি। তোমরা যে কী করবে, সেটি আমি ভালো করেই জানতাম। দুইজনই তো প্রশ্ন রোগী। প্রশ্ন করা ছাড়া আর কিছু পার তোমরা?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *