1 of 2

হেমলকের নিমন্ত্রণ – ২৪

২৪

‘ধরার আশাটুকু না থাকলে
অধরা কখনই ধরা দেয় না।’

— হিপোক্রাটিস

***

সূর্য উঠতে এখনও অনেক দেরি।

এই কাক ডাকা ভোরে ক্রিতোদের বাড়ির কুয়ার পাড়ে সভা বসেছে। মায়েদের সভা। পুত্রদায়গ্রস্ত চার মা আলাপে বসেছেন। মায়েরা হলেন সক্রেটিস, ইউরিপিডিস, ক্রিতো আর চেরোফোনের মা। বিশেষ কারণে ক্রিতোর মা তিন বান্ধবীকে ডেকেছেন।

বৈঠক খুবই সংক্ষিপ্ত। তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। এখানে মেয়েরা খুব সকালেই একটু বাইরে আসতে পারে। দিনের আলো ফুটলে পুরুষরা বের হবে, তখন আর মেয়েরা বাইরে থাকতে পারবে না। তাই মেয়েদের সভা খুব ভোরেই হয়।

সভা খুব গুরুগম্ভীর পরিবেশে চলছে। ক্রিতোর মা ফিসফিস করে বললেন, খবর খারাপ। শুধু খারাপ নয়, ভয়াবহ খারাপ, মাথা নষ্ট হওয়ার মতো খারাপ।

সক্রেটিসের মা বললেন, কোন খবরের কথা বলছো?

‘মুখে আনা যায় না, এমন খারাপ খবর। আমাদের ছেলেরা নাকি আজেবাজে জায়গায় যায়।’

ইউরিপিডিসের মা বললেন, মানে? কোন জায়গায় যায়?

‘ঐ জায়গায় নামও মুখে আনা যাবে না। খুব খারাপ জায়গায় যায়।’

চেরোফোনের মা বললেন, বলো না, কোন জায়গায়?

‘কেরামিকাস। কেরামিকাসে যায়!’

শুনেই তিন মা জড়াজড়ি ধরে হাউমাউ কান্না শুরু করল। ছেলেগুলো এমন কাণ্ড করতে পারল? শুধু সক্রেটিসের মা কাঁদছেন না। তিনি জানেন সক্রেটিস আসপাশিয়ার কাছে যায়। অনেক দিন ধরেই যায়।

তিনি বললেন, তোমরা কেঁদো না। ওরা তো আমাদেরই ছেলে। আমরা ওদের চিনি। গেলেও, কোনো খারাপ কাজে যায় না।

ক্রিতোর মা ফোঁস করে উঠলেন, খারাপ কাজে যায় না তো কোন ভালো কাজটা কেরামেকাসে আছে?

বলেই আবার কান্না শুরু করলেন।

সক্রেটিসের মা বুঝলেন, সক্রেটিস আসপাশিয়ার কাছে জ্ঞানের জন্য যায়, একথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। হাসাহাসি করবে। একজন মেয়ে

জ্ঞানের কথা বলে— আর তা শুনতে বড় ঘরের ছেলেরা যায়, এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর হতেই পারে না।

সক্রেটিসের মা বললেন, সমস্যা আসলেই জটিল। কিন্তু কান্না না করে চলো সমাধান ভাবি।

‘সমাধান?’

‘হুঁম, সমাধান। সমাধান হলো বিয়ে। চলো, ওদের বিয়ে দিয়ে দিই। ঝামেলা শেষ।’

কথাটা সবার পছন্দ হলো। এটিই সমাধান। তো কোন বাড়িতে ভালো মেয়ে আছে, কোন ঘটক ভালো হবে— সব কিছুর দায়িত্ব নিলেন ক্রিতোর মা। আগামী এক মাসের মধ্যে চারটি রূপবতী মেয়ে আমাদের ঘরে আনার দায়িত্ব তার।

কাঁদতে কাঁদতে শুরু করা অতি সংক্ষিপ্ত বৈঠক হাসতে হাসতে শেষ হলো।

.

রাতে সক্রেটিস বাসায় ফিরলে মা বিয়ের কথা তুললেন।

মা আদর করে বললেন, সক্রেটিস, তুই তো সুন্দর জীবন চাস।

সক্রেটিস অবাক! ঘটনা কী? মা তার সাথে সুন্দর জীবনের আলাপ করছেন! মা তো জ্ঞানী হয়ে যাচ্ছেন।

সে খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ, মা। আমাদের সবারই দরকার সুন্দর জীবন মা বললেন, সুন্দর জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার একটি সুন্দর বউ।

সক্রেটিস বোঝার চেষ্টা করছে সুন্দর বউ কী জিনিস!

মা বললেন, বউ সুন্দর হলেই জীবন সুন্দর হবে।

সক্রেটিস এখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বলল, মা জননী, ঘটনাটা কী?

মা বললেন, ঘটনা হলো তোমাকে বিয়ে করতে হবে। বয়স হয়েছে। এথেন্সে এই বয়সেই ছেলেরা বিয়ে করে।

সক্রেটিস বলল, বিয়ে করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো— আমার শ্বশুর হওয়ার মতো লোক এথেন্সে নেই।

মা বললেন, শ্বশুরের দরকার নাই। শ্বশুরের মেয়ে হলেই হবে।

‘শ্বশুরের মেয়েও পাবা না। এথেন্সের সকল পিতা আমার নামে কাঁপাকাঁপি শুরু করে। এখানে কোনো বাবা আমাকে কন্যা দেবে না।’

‘সে ভাবনা আমার। তুই শুধু বিয়ের জন্য তৈরি হ।’

‘আমি তো বিয়ে করে ফেলেছি।’

মা কান্না শুরু করলেন, তুই কাকে বিয়ে করেছিস? আমি কিচ্ছু জানলাম না।

‘আমার বউয়ের নাম হলো জ্ঞান বেগম।’

এবার মা বুঝতে পারলেন। তিনি হেসে ফেললেন। বললেন, জ্ঞানকে বিয়ে করতে তো কেউ মানা করেনি। তুই দশটা জ্ঞান বিয়ে কর। সকাল- বিকাল বিয়ে কর। আমার দরকার একটি, কেবল একটি রক্ত-মাংসের মেয়ে।

‘ছিঃ মা, নিজের ছেলেকে কুবুদ্ধি দিও না। চরিত্র খারাপ করতে বল না।’ এবার মা ঝাড়ি মারতে শুরু করলেন। সারা জীবন জ্বালাইছিস। এখন ভালো কথা বলছি, বিয়ে কর। বিয়ের কথায় পোলাপান আনন্দে নাচে, আর তুই এটি নিয়াও ক্যাচাল করছিস। তোর বন্ধুরা সবাই বিয়ে করবে। ক্রিতোর পাত্রী ঠিক হয়ে গেছে। চেরোফোনের জন্যও মেয়ে দেখছে। সবাই বিয়ে করবে। শুধু তুই চিরকুমার থাকবি?

সক্রেটিসের বাবা বললেন, তুই তো একটি বলদ। মানুষ বাপের স্বভাব একটু হলেও পায়। তোর বাবা এখনও বিয়ে করতে চায়। আর তুই বিয়ে করবি না?

এবার মা তার বাবাকে কিলবিল করে ধরলেন, এত বড় সাহস! বুড়ো বয়সে ভীমরতি?

সক্রেটিস দেখল এই সুযোগ। মা তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। বাবাকে নিয়ে শুরু করেছেন। এই সুযোগেই কেটে পড়তে হবে। সে ভিজা বিড়ালের মতো নিঃশব্দে বের হয়ে গেল।

***

এথেন্সে বিয়ের মৌসুম চলছে। চারদিকে বিয়ে বিয়ে রব।

চেরোফোন ও ক্রিতো দুজনেরই বিয়ে ঠিক হয়েছে। ক্রিতোর বিয়েতে মহা ধুমধাম হবে। এথেন্সের সব মানুষকে দাওয়াত করা হবে। আনন্দী-দাসীরা নাচবে। থিবস নগর থেকে কিথারা বাজাতে যন্ত্রীদল আসবে। স্পার্টা থেকে অস্ত্র খেলা দেখাতে আসবে বর্গা বাহিনী। টানা সাত দিনের উৎসব।

ক্রিতোর পাত্রী অত্যধিক রূপবতী। তার মা তো মেয়েকে দেখেই একেবারে অজ্ঞান। এমন পাত্রী কিছুতেই হাতছাড়া করবেন না। ক্রিতো পাত্রীকে দেখেনি। এথেন্সে বিয়ের আগে বর-কনের দেখা হওয়ার নিয়ম নেই।

চেরোফোন এসব নিয়ম মানবে না। যেভাবেই হোক, সে পাত্রীর সাথে দেখা করবেই। পাত্রী পছন্দের জন্য তার তরিকা খুবই সোজা। পাত্রীকে শুধু দুটি বিষয় জানতে হবে— এক. গণতন্ত্র ও দুই. সক্রেটিস। গণতন্ত্রকে ভালোবাসতে হবে আর সক্রেটিসকে সম্মান করতে হবে। আর কোনো কিচ্ছু দরকার নেই। এই দুটি বিষয় চেরোফোন তার মাকে পই পই করে বলে দিয়েছে। মা বলেছেন, পাত্রী গণতন্ত্র আর সক্রেটিস দুটির কথাই জানে। কিন্তু মায়ের কথায় ভরসা হচ্ছে না। নিজে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে। সেজন্য চেরোফোন কয়েক দিন ধরে হবু শ্বশুরবাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু এখনও সুবিধা করতে পারেনি। কনের দেখা পায়নি।

আসপাশিয়া তাদের নিমন্ত্রণ করেছে। তারা এখন আসপাশিয়ার বাড়ি। এখানেও কথাবার্তার একটিই বিষয়। সেটি হলো বিয়ে।

আসপাশিয়া জিজ্ঞেস করল, চারদিকে এত এত সুখবর। বিয়ের গন্ধে এথেন্স শুধু ম ম নয়, একেবারে ব ব করছে। চারদিকে বিয়ের বাদ্য বেজে উঠেছে। মনে হচ্ছে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি কামনার দেবতা কিউপিডকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে সবাইকে বিয়ে দিতে। তো সক্রেটিসের সুখবর কবে? সক্রেটিস কবে বিয়ে করছে?

সক্রেটিস কিছুই বলছে না। তার চোখে মুক্ত পুরুষের মতো উদাসীন দৃষ্টি। মুখে হাসি বা কান্না কোনোটাই নেই।

ক্রিতো বলল, ওর মা এখনই বিয়ে দিতে চান। কিন্তু সক্রেটিসের সময় কোথায়! সে তো জ্ঞানের প্রেমিক। জ্ঞানপ্রেমীরা বিয়ে-শাদী করে না। সে নাকি বিয়ে করে ফেলেছে, তার বউয়ের নাম-শ্ৰীমতি জ্ঞান।

সক্রেটিস নিরাসক্ত ঋষি ঋষি মুখে বলল, ঠিক আছে, আমি এক্ষুনি বিয়ে করব। তোমাদের কাছে কি এমন কোনো মেয়ের সন্ধান আছে, যে শুধু জ্ঞান খেয়ে থাকবে, জ্ঞানকে কাপড় বানিয়ে পরবে, আর রাতে জ্ঞান মাথায় দিয়ে ঘুমাবে?

আসপাশিয়া বলল, আছে, আমার কাছে অমন মেয়ে আছে। মেয়েটি এখন বাবার বাড়িতে বসে সক্রেটিসের জন্য মালা গাঁথছে। ফুলের মালা নয়, জ্ঞানের মালা।

সকলে হো হো হেসে করে উঠল ।

সক্রেটিস বলল, আর বিয়ের আলাপ নয়, অন্য কিছু বলো।

চেরোফোন বলল, আমার মাথায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা এসেছে। গত কয়েক মাসে অনেক মহা মহা পণ্ডিত সক্রেটিসের কাছে হেরে গেল। এখন যে আসে, সেই সক্রেটিসের কাছে হেরে যায়। জ্ঞানের রাজ্যে সক্রেটিস সবার সেরা। সক্রেটিসই এখন নিঃসন্দেহে এথেন্সের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ

আসপাশিয়া বলল, আমিও একমত। এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ কথা বলতে আমি আর কাউকে শুনিনি। সক্রেটিস সত্যিই অসাধারণ। শুধু অসাধারণ নয়, একেবারে অনন্য সাধারণ।

ক্রিতো বলল, কিন্তু এথেন্সে কেউ মানতেই চায় না যে সক্রেটিস সেরা। আসপাশিয়া বলল, আমার মনে হয় সবাই জানে। কিন্তু স্বীকার করে না। চেরোফোন স্বর হালকা করে বলল, আমার একটি ভাবনা আছে। পেরিক্লিস সাহেব যদি একটি ঘোষণা দিয়ে দেন যে, সক্রেটিস এথেন্সের সেরা জ্ঞানী, তাহলে সবাই মেনে নেবে। আপনি কি তাকে একটু বলবেন?

সক্রেটিস তীব্রভাবে বলল, ছিঃ ছিঃ। কী বলছো তুমি?

সক্রেটিস ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। সে এতদিন জ্ঞানযুদ্ধের বিষয়টি মজা হিসেবে নিয়েছে। বন্ধুরা মজা পায়। তারও ভালো লাগে। কিন্তু এখন তো বিষয়টি একেবারে পেরিক্লিস পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা! সে আলোচনা থামাতে চাইছে।

সক্রেটিস আসপাশিয়াকে বলল, আমি জ্ঞানী নই। ওরা জ্ঞানী জ্ঞানী বলে বলে আমাকে জ্ঞানী হতে বাধ্য করছে।

আসপাশিয়া হাসছে। রহস্যময়ী হাসি। সক্রেটিসের মনে হলো আসপাশিয়া মনে করছে তারা বন্ধুরা যুক্তি করে সক্রেটিসের জন্য তদবির করতে এসেছে।

সে মরিয়া হয়ে বলল, আমি এখানে আলাপ করতে আসি। শিখতে আসি। আর ওরা পেরিক্লিসের কাছে তদবির করতে বলছে। ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা! উনি আমাকে ভুল ভাববেন। বড়োই লজ্জার ব্যাপার হবে।

আসপাশিয়া বলল, ভয় নেই, আমি পেরিক্লিসকে বলব না। কারণ সক্রেটিস যে এথেন্সের সেরা জ্ঞানী, একথা পেরিক্লিস বললেই লোকে মানবে না। সবাই বলবে, পেরিক্লিস কোনো একটি মতলবে সক্রেটিসের পক্ষ নিয়েছে।

সক্রেটিস বলল, কথা সত্য।

আসপাশিয়া বলল, এছাড়া আমি অনুরোধ করলেও পেরিক্লিস এমন কথা বলবেন না। সক্রেটিসের মতো অল্প বয়সের ছেলে সবার চেয়ে জ্ঞানী এমন ঘোষণা পেরিক্লিস কোনোদিনই দেবেন না। সত্য হলেও দেবেন না। এতে তার ভোট নষ্ট হবে।

সক্রেটিস বলল, তিনি কি চেরোফোনের মতো বোকা মানুষ? এই বুজরুকি আলাপ এখানেই বন্ধ করো। চলো, আমরা খাওয়া-দাওয়া শুরু করি।

আসপাশিয়া বলল, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। উপায় একটি আছে।

চেরোফোন লাফিয়ে উঠল, কী উপায়? তাড়াতাড়ি বলুন।

আসপাশিয়া বলল, সক্রেটিস যে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি, এটি মানুষকে দিয়ে স্বীকার করানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ডেলফির ওরাকল।

সবাই একসাথে বলল, ওরাকল?

আসপাশিয়া বলল, হ্যাঁ। ওরাকল যদি একবার বলেন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হলো সক্রেটিস, তাহলে আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি আর হতেই পারে না। সবাই জানে ওরাকল যা বলে, সেটি একেবারে দেবতা এপোলোর কথা। তার কথা অবিশ্বাস করার সাহস কারও নেই। এই উপায়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী হিসেবে সক্রেটিসের নাম ঘোষণা করা সম্ভব।

চেরোফোন লাফ দিয়ে উঠল। সে বলল, আমি কালই ডেলফিতে ওরাকলের কাছে যাব।

আসপাশিয়া বলল, তোমার বিয়ের পরেও যেতে পার। তাড়াহুড়া নেই।

‘না, আমি কালই যাব।’

সক্রেটিস বলল, পাগলামি কোরো না, চেরোফোন।

‘কোনো পাগলামি না। আমি কালই যাব। এমন সুন্দর বুদ্ধি আমার মাথায় এতদিন কেন যে আসেনি! আমার মাথা ভর্তি গোবর। আর আসপাশিয়ার মাথা ভর্তি বুদ্ধি। চিকন চিকন বুদ্ধি। পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমতী নারী সে। তার বুদ্ধিতেই চলব, আমি কালই ডেলফি যাব।’

ক্রিতো বলল, আমার বাবা তো বিয়ের আগে আমাকে কোথাও যেতে দেবে না। ক’দিন পরে তো তোমারও বিয়ে। চলো, বিয়ের অনুষ্ঠানের পরই যাই।

চেরোফোন বলল, বিয়ে করলে মাঝখানে আরেক নারী আসবে। সেই নারীর বুদ্ধি আসপাশিয়ার মতো চিকন নাও হতে পারে। তখন ঝামেলা হবে। তার আগেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে। কালই যাব।

ক্রিতো বলল, কিন্তু আমি তো কাল যেতে পারব না।

‘তুমি বিয়ে কর। আমি আর সক্রেটিস গেলেই হবে।’

সক্রেটিস বলল, আমি এসব পাগলামির মধ্যে নেই।

চেরোফোন বলল, ঠিক আছে, আমার কাউকে দরকার নেই। আমি একাই যাব। আর সেটি কালকেই।

ক্রিতো বলল, তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। যদি যেতেই চাও, তবে সক্রেটিসকে নিয়েই যেও।

আসপাশিয়া বলল, যাবে ভালো কথা। কিন্তু ওরাকলকে কী প্রশ্ন করবে? চেরোফোন বলল, প্রশ্ন করব— ‘পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ কে?’

‘তাহলে পিথিয়া অনেকের নাম বলবে। সেটি পিথাগোরাসের নাম হতে পারে, মহাজ্ঞানী সলোনের নাম হতে পারে। আরও অনেকের নাম বলতে পারে।’

‘এঁরা তো কেউ জীবিত নেই।’

‘তুমি তো প্রশ্নে সেটি স্পষ্ট করোনি।’

‘তাহলে প্রশ্ন করব— পৃথিবীর জীবিত মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? ‘তাতেও সমস্যা। তুমি তো সক্রেটিসের কথা জানতে চাও। প্রশ্নটার ভেতর সক্রেটিসের কথা বলো।’

‘কী বলব- সক্রেটিস কেমন জ্ঞানী?’

‘কাছাকাছি এসে গেছো। তুমি উত্তরে যা শুনতে চাও, সেটির মতো করে প্রশ্ন কোরো। তুমি তো ওরাকলের সাথে খোসগল্প করতে পারবে না। একটি মাত্র প্রশ্নের সুযোগ পাবে। তাই আরও পরিষ্কার করে প্রশ্নটা বোলো।’

একটু চিন্তা করে চেরোফোন বলল, ‘এত কিছু যখন বলছেন, তখন প্রশ্নটা বলে দেন না।’

আসপাশিয়া বলল, ঠিক আছে। যাওয়ার আগে বলে দেব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *